
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কথায় কথায় বলে, আজও বলেছে (আওয়ামী লীগ নেতারা) আমাদের গণতন্ত্র আমাদের মতো করে করব। গণতন্ত্র এখন তাদের হয়ে গেছে। কোন গণতন্ত্র? সেই মুজিববাদের গণতন্ত্র, বাকশালের, একদলীয় শাসনব্যবস্থার গণতন্ত্র। না, এদেশের মানুষ তা হতে দেবে না। সত্যিকার অর্থে জনগণের গণতন্ত্র এবং মুক্ত বাংলাদেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের আন্দোলন, সংগ্রাম শুরু হয়েছে। অবশ্যই এই সংগ্রামে আমরা জয়ী হব এবং গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
গতকাল রবিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে শহীদ আসাদ পরিষদের উদ্যোগে ‘৬৯ সালে শহীদ আসাদুজ্জামান ৫৪তম শাহাদাত দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। ১৯৬৯ সালের ২০ জানুয়ারি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ছাত্রনেতা মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। শহীদ আসাদের আত্মত্যাগ ও বর্তমান আন্দোলনের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে শহীদ আসাদের আত্মত্যাগকে ছড়িয়ে দিতে হবেÑ কীভাবে একজন মানুষ দেশের মানুষকে ভালোবাসলে, দেশকে ভালোবাসলে, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে উঠলে আত্মত্যাগ করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করে না। কোনো দুর্ঘটনার জন্য নয়, একেবারে পুরোপুরি সচেতনভাবে লড়াই-সংগ্রাম করে মিছিলের মধ্যেই মানুষটি প্রাণ দিয়েছিলেন। এবারও আন্দোলনে আমাদের ১৫ জন কর্মী পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিয়েছেন রাস্তায়। সেজন্য আমি অনেক বেশি আশাবাদী। আজ আন্দোলনে শুধুমাত্র আমরা নই, আমাদের সঙ্গে কিন্তু সব দল আছেÑ যারা দেশকে ভালোবাসে। রাজনৈতিক মুক্তির জন্য আমাদের আরও বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এদের পরাজিত করতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, অনেকে বলেন রাশিয়া, ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য, কভিডের জন্য দাম বেড়েছে। আর যে চুরিটা, ডাকাতিটা করেছেন সেটার পার্থক্য হিসাব করেন। গ্যাসের চুরিটা বন্ধ করলে দামটা কমিয়ে নিয়ে আসা যেত।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, মানুষের মধ্যে লড়াই করার একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছে। ১০ ডিসেম্বরের পর আমরা যুগপতের কথা বলেছি। সমস্ত রাজনৈতিক দল এখন কোনো না কোনোভাবে, কোনো না কোনো ফরমেটে কমন একটা লক্ষ্যে একসঙ্গে লড়াই করছে। এটা একটা বিজয়ের চিহ্ন তো বটে। এখন বিরোধী দল আন্দোলন করে আর ওরা (আওয়ামী লীগ) পাহারা দেয়। একসময় পাহারা দেওয়ার লাঠিও হাতে থাকবে। আবার এক সময় দেখবেন পাহারা দেওয়ার মানুষও সব উদার হয়ে যাবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সাধারণ মানুষ আজ নাভিশ্বাস অবস্থায় আছে। তারা আবার দিন গুনছেন কবে, সেই দিন কবে আসবে। কবে আরেকটি ২৪ জানুয়ারি তৈরি হবে। ঢাকাসহ সারা দেশের রাজপথ জনতার উত্তাল ঢেউয়ে প্রকম্পিত হবে।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহর সভাপতিত্বে ও হাবিবুর রহমান রিজুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ আসাদের ছোট ভাই নুরুজ্জামান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এদিকে গতকাল রবিবার বিকেলে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু স্বাধীন দেশে আমরা গণতন্ত্র হারিয়ে ফেলেছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে প্রয়োজন অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন। সুষ্ঠু নির্বাচনে দরকার নির্বাচনকালীন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার। এ লক্ষ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা আন্দোলনে রয়েছি। হয় আমরা মরব, না হয় দাবি আদায় করব। সুতরাং আগামীতে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত।
মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানের সঞ্চালনায় এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বকেয়া টাকা না পাওয়ায় জাতীয় কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউট হাসপাতালে (নিকডু) ডায়ালাইসিসের উপকরণ সরবরাহে অনীহা প্রকাশ করেছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্যানডোর। প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যেই হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষকে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয়েছে, বকেয়া টাকা পরিশোধ না করলে যেকোনো সময় কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে স্যানডো ও হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ পরিচালিত একমাত্র ডায়ালাইসিস সেন্টারটি চালু রাখা সম্ভব হবে না।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, গতকাল রবিবার হঠাৎ করেই ডায়ালাইসিস সেন্টারে ডায়ালাইসিসের কাঁচামাল সংকট দেখা দেয়। রোগীরা সেন্টারে এলে স্যানডোর কর্র্তৃপক্ষ ডায়ালাইসিসের জন্য কাঁচামালের সংকটের কথা জানিয়ে অপেক্ষা করতে বলে। এতে দীর্ঘ অপেক্ষার ভোগান্তিতে পড়েন সেবা নিতে আসা রোগীরা। এখানে ডায়ালাইসিস করতে আসা রোগীদের তারিখ ও সময় পূর্বনির্ধারিত থাকে। সে অনুযায়ী গতকালও রোগীরা হাসপাতালে আসে। কিন্তু সকাল ৮টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ডায়ালাইসিস বন্ধ রাখে। পরে অবশ্য চালু করেছে।
হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সাপ্তাহিক ছুটি ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু থাকে। সরকারের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্পের আওতায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান স্যানডোর পরিচালনা করে ডায়ালাইসিস সেন্টারটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিডনি হাসপাতালের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, দীর্ঘদিন সরকার স্যানডোকে বকেয়া টাকা পরিশোধ না করায় এখন প্রতিষ্ঠানটি আর ডায়ালাইসিসের কাঁচামাল ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ করতে চাইছে না। এ নিয়ে গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এ ব্যাপারে স্যানডোর হিসাবরক্ষক নাজমুল হাসান গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, কিডনি হাসপাতালের কাছে আমাদের ৩১ কোটি টাকা পাওনা। এসব টাকা না পেলে হাসপাতালকে ডায়ালাইসিসের কাঁচামাল সরবরাহ করা যাবে না। আমরা আমাদের এমন আশঙ্কার কথা হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কারণ আমরা যেসব সোর্স থেকে কাঁচামাল আনি তারাও বাকিতে আর মাল দিচ্ছে না। বেশি দাম দিয়ে নগদে কিনতে হচ্ছে। এটা খুব কঠিন। এত বড় প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতিদিন এভাবে নগদ টাকায় কাঁচামাল কিনে সরবরাহ করা সম্ভব না। সেই উদ্বেগটাই হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমরা বলেছি, এভাবে নগদে কিনে আর বেশিদিন কাঁচামাল সরবরাহ করা যাবে না।
স্যানডোর এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষকে বলেছি, কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে তারা যেন রোগীর সেবার দিক বিবেচনায় রেখে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়ে রাখেন। বিষয়টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। বলেছি, পাওনা টাকা না দিলে সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। তবে গতকাল পর্যন্ত পাওনা পরিশোধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (ডেপুটি পরিচালক) ডা. আকতারুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। গতকাল রাতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বিষয়টি জেনেছেন। তিনি বিষয়টি মন্ত্রণালয়কেও অবহিত করেছেন। তিনি এমনও বলেছেন, স্যানডোরের চুক্তি হাসপাতালের সঙ্গে নয়, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। তারা সেখানে যোগাযোগ করুক। ডায়ালাইসিস বন্ধ করা কোনো সমাধান নয়।
এর আগে গত বছর জাতীয় কিডনি অ্যান্ড ইউরোলজি ইনস্টিটিউট (নিকডু) ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কোনো ধরনের ঘোষণা ছাড়াই সেবা বন্ধ করে দিয়েছিল স্যানডোর। পরে পাওনা টাকা পরিশোধ করলে প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় কাঁচামাল সরবরাহ ও ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু করে।
গুপ্তধনের প্রতি আগ্রহ-কৌতূহল আছে বিশ্বজুড়ে। বহু মানুষ এই গুপ্তধনের খোঁজে বন-পাহাড়-সমুদ্র আর পুরনো স্থাপনায় চষে বেড়ান। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে হাজারো গল্প-নাটক-সিনেমা। আর এবার এই অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের জন্য নেদারল্যান্ডসের ন্যাশনাল আর্কাইভ প্রকাশ করেছে গুপ্তধনের ম্যাপ!
সম্প্রতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালীন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নথি প্রকাশ করেছে নেদারল্যান্ডসের ন্যাশনাল আর্কাইভ। এর মধ্যে রয়েছে গুপ্তধনের ম্যাপও। তাদের দাবি, দেশটির একটি ব্যাংক লুটের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন এ গুপ্তধন লুকিয়ে রেখেছিল নাৎসি বাহিনী। ৭৮ বছর আগের সে ম্যাপ দেখেই এখন লুকিয়ে রাখা ধনসম্পদ খুঁজছেন নেদারল্যান্ডসের অনেকে।
মূলত ‘অ্যানুয়াল ওপেন এক্সেস ডে’ উপলক্ষে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন অনেক নথি প্রকাশ করেছে ন্যাশনাল আর্কাইভ। এর মধ্যে প্রকাশিত ওই ম্যাপ দেখে এখন বহু মানুষ বেরিয়ে পড়েছে এই গুপ্তধনের খোঁজে। তেমনই একজন হলেন জান হেনজেন। তিনি বলেন, অনেকের মতো গুপ্তধনের খবর আমাকেও পুলকিত করেছে। এই অঞ্চলে ৩০ বছর ধরে আমি গুপ্তধন অনুসন্ধান করে আসছি। রোমান সাম্রাজ্যের অনেক প্রতœতত্ত্ব খুঁজে পেয়েছি। তবে এতদিন এটা জানতাম না যে নাৎসিরা এখানে ধনসম্পদ লুকিয়ে রেখেছে। এখন জার্মানদের সেই গুপ্তধন খোঁজার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি।
নেদারল্যান্ডসের ন্যাশনাল আর্কাইভের তথ্যমতে, যুদ্ধের সময় হীরা, রুপা, সোনা, রুবিসহ নানা মূল্যবান জিনিস চারটি বাক্সে ভরে লুকিয়ে রেখেছে জার্মানরা। ১৯৪৪ সালে আর্নহেল যুদ্ধে একটি ব্যাংকে হামলা চালিয়ে এসব লুট করেছিল তারা। দ্য ডাচ ন্যাশনাল আর্কাইভের কো-অর্ডিনেটর অ্যানেট ওয়াল্কেন্স বলেন, নথিপত্র অনুযায়ী ব্রেসলেট, ঘড়ি, নেকলেস, রৌপ্য ও স্বর্ণের মুদ্রা, মূল্যবান পাথর, হীরাসহ অনেক গুপ্তধন লুকানো আছে। মানচিত্রে জায়গাটির বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়েছে। ১৯৪৫ সালে মুক্ত হওয়ার পর জার্মান সৈনিকের কাছ থেকে এই মানচিত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল। এতদিন এটি সংরক্ষণ করে রেখেছিল ন্যাশনাল আর্কাইভ। ৭৮ বছর পর সেটিই প্রকাশ করল তারা। দীর্ঘ এ সময়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকেও কয়েকবার গুপ্তধন খোঁজার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এখনো তার সন্ধান মেলেনি।
রাজধানী ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় রূপগঞ্জ উপজেলায় গড়ে উঠেছে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় এক হাজার শিল্প কারখানা। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ কাজের সন্ধানে এ উপজেলায় আসেন। উপজেলায় উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে অপরাধও। বেড়েছে মাদকের বাণিজ্য। এই মাদক সেবনের টাকা জোগাড়ে উপজেলায় যাত্রীবেশে বেড়েছে ছিনতাই, হত্যাসহ নানা অপরাধ। আর সেই সঙ্গে বেড়েছে ইজিবাইক ও অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা। এ উপজেলায় পাঁচ বছরে ১৭ জন ইজিবাইকচালক খুন হয়েছেস। এ ছাড়া ১৮৮টি ইজিবাইক ও অটোরিকশা ছিনতাই হয়েছে বলে থানা পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), পিবিআই ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ প্রকাশের সূত্রে জানা গেছে।
ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক মহাসড়কগুলোতে চালানো নিষেধ। এগুলো এলাকার বিভিন্ন শাখা- উপশাখা রাস্তায় চলাচল করে। এ কারণে ইজিবাইকের কোনো নম্বরপ্লেট অথবা কোনো কাগজপত্র থাকে না। কাগজপত্র না থাকায় খুব সহজে বিক্রি করা যায় বলেই ছিনতাইকারীরা ইজিবাইক ছিনতাইয়ে আগ্রহ বেশি। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে একই ক্লু উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে লাইসেন্স ও নম্বরপ্লেট না থাকার কারণেই একের পর এক খুন ও ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন তারা। হত্যার পর খুব সহজেই এসব ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার রং পরিবর্তন করে আবার রাস্তায় নামানো হচ্ছে।
ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উপজেলার রূপসী, মৈকুলী, ভুলতা, বিশ^রোড ও কাঞ্চন এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় ১০-১২টি গ্যারেজ। এসব গ্যারেজে ছিনতাই হওয়া ইজিবাইক ও অটোরিকশা রং পাল্টে ক্রয়-বিক্রয় চলে। অটোরিকশা ছিনতাইয়ের জন্য গড়ে উঠেছে ৭টি চক্র। এই চক্রের সদস্যরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। এসব হত্যাকা-ের নেপথ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক কারণ। এই চক্রের সদস্যরা মাদক কিনে দেওয়ার কথা বলে মাদক সেবীদের এ কাজে জড়াচ্ছে।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৮ মে নোয়াপাড়া এলাকার ইজিবাইকচালক কুরবান আলী ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হন। একই বছরের ১১ জানুয়ারি পরশি এলাকার মজুরউদ্দিন ও ২৩ মার্চ পশ্চিমগাঁও এলাকার আমির হোসেন বাবু খুন হন। ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল ৩০০ ফুট সড়কে যাত্রীবেশে ইমন মিয়া নামে এক চালককে পিটিয়ে তার ইজিবাইকটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ২০২০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলার ভায়েলা এলাকায় সোবহান মিয়া নামে এক চালককে গলা কেটে তার ইজিবাইক ছিনতাই করে নিয়ে যায় ছিনতাইকারী চক্র। সর্বশেষ ১৭ জানুয়ারি সাইদুর নামে একজনের অটোরিকশা যাত্রীবেশে ছিনতাইকারী ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
উপজেলার ইছাছালী এলাকার সাইদুর রহমান। অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চলত তার। ১৭ জানুয়ারি ভোরে যাত্রীবেশে একদল ছিনতাইকারী তার ইজিবাইকটি ছিনিয়ে যায়। শেষ সম্বল ইজিবাইকটি ছিনতাই হওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপদেই আছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘স্যার, আমার শেষ সম্বল রিক্সাডা ছিনতাইকারীরা লইয়া গেল। অহন আমি সংসার কেমনে চালামু। পোলাপাইনের লেহাপড়া তো দূরের কথা, তিনবেলা খামু কেমনে, অইডা অই জানি না।’
নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপপরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, নারায়ণগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই এখন ভয়ংকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইজিবাইক ছিনতাইয়ে চালককে খুনের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে তারা চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন। তারা জানতে পেরেছেন, প্রতিটি থানা এলাকাতেই ভিন্ন ভিন্ন ছিনতাইকারী গ্রুপ রয়েছে। এসব গ্রুপ তিনটি দলে বিভক্ত। প্রথম দলের সদস্যরা একজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালককে টার্গেট করে তার সব খোঁজখবর নেয়। তার বাসা-বাড়ি ও গাড়ির গ্যারেজের অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ নেয়। সংগ্রহ করে চালকের মোবাইল ফোন নম্বর। এসব তারা দ্বিতীয় দলকে বুঝিয়ে দেয়। এই দলের সদস্যরা গাড়ির গ্যারেজের আশপাশে অবস্থান নেয়। দিনভর গাড়ি চালিয়ে চালক রাতে গাড়ি গ্যারেজে জমা দিতে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীরা যাত্রীবেশে গাড়িতে চড়ে এবং লোভনীয় ভাড়া দেওয়ার কথা বলে নির্জন এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে চালকের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ^াসরোধ করে কিংবা ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। লাশ রাস্তার পাশে ফেলে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায়। গাড়িটি তৃতীয় দলের হাতে পৌঁছে দিয়ে তারা তাদের কাজ শেষ করে। তৃতীয় দলের সদস্যরা গাড়ির রংসহ আনুষঙ্গিক কিছু সাজসরঞ্জাম পরিবর্তন করে তা বিক্রি করে দেয়। গাড়ি বিক্রির অর্ধেক টাকা নেয় খুনিরা। বাকি টাকা অন্যরা সমানভাবে ভাগ করে নেয়। প্রতিটি ঘটনা সফলভাবে শেষ হওয়ার পরপরই তারা দ্বিতীয় মিশন শুরু করে। তিনি আরও বলেন, ইজিবাইক ছিনতাইয়ের পর এগুলো গ্যারেজে বিক্রি করা হয়। যে এরিয়া থেকে ছিনতাই করবে, সেই এরিয়ায় বিক্রি করবে না। যেমন রূপগঞ্জে ছিনতাই হওয়া ইজিবাইক বিক্রি করা হয় সোনারগাঁ কিংবা ফতুল্লায়।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) এসপি মো. মনিরুল ইসলাম পিপিএম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইজিবাইক ছিনতাইয়ের বিষয়টা গুরুত্বসহকারে দেখছি। বেশ কিছু কাজ করেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি চালকদের সচেতন হতে হবে। রাত ১০টার পর নির্জন জায়গায় যাওয়া ঠিক না। ইজিবাইকগুলোতে জিপিএস লাগানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে জিপিএসের মাধ্যমে গাড়ির লোকেশন জানা যাবে। এরই মাঝে ইজিবাইক মামলার ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছি। বেশ কিছু ইজিবাইক ছিনতাইয়ের ঘটনায় হত্যা মামলা শনাক্ত করেছি। আমরা গ্যারেজ সিলগালা করেছি।’
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ এ এফ এম সায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইজিবাইক ছিনতাই রোধে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। সংবাদপত্রসহ বিভিন্ন মাধ্যমে চালকদের সচেতন করছি। আশা করছি এটা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। রাত ৯-১০টার পর চালকরা যাতে অতিরিক্ত ভাড়া পাওয়ার আশায় নির্জন স্থানে না যায়, সে ব্যাপারে তাদের সচেতন হতে হবে।’
২০১৫ সাল থেকে নিখোঁজ ছিলেন টাঙ্গাইল কালিহাতীর আবদুল কুদ্দুছ খাঁর মেয়ে পারুল আক্তার। মেয়ের সন্ধানে পারুলের স্বামী ও স্বজনদের আসামি করে একের পর এক মামলা করেছেন তিনি। ওইসব মামলায় জেলে রয়েছে পারুলের স্বামী নাসির উদ্দিন বাবু। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পারুলের কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। অবশেষে পারুলের কথা বলা একটি মোবাইল ফোন নম্বরের দুটি ডিজিট ‘৩৭’-এর সূত্র ধরে সাত বছর পর নিখোঁজের জট উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা জেলা।
পিবিআইয়ের ভাষ্য, পরিবারের অসম্মতিতে ঘর ছেড়ে পালিয়ে নাসিরকে বিয়ে করেন পারুল। এতে সামাজিকভাবে অপদস্থ হন পারুলের বাবা। সেই ক্ষোভ থেকে পারুলকে কৌশলে জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে একটি নদীর পাশে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেন বাবা আবদুল কুদ্দুছ ও তার এক বন্ধু। একই ক্ষোভে পারুলের স্বামী নাসিরকে ফাঁসাতে মামলা করেন তিনি। গত শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে নিলে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন। পরে গতকাল রবিবার কুদ্দুছের বন্ধুকেও গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
গতকাল দুপুর ১২টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, পারুল নিখোঁজের পর তার স্বামী নাসির থানায় যে জিডি করেন তার সঙ্গে থাকা কাগজ ঘেঁটে একটি অস্পষ্ট মোবাইল ফোন নম্বর পাওয়া যায়। যার শুধু শেষ দুটি ডিজিট ৩৭ বোঝা যায়। এ নম্বরের ব্যক্তির সঙ্গে নিখোঁজের আগে পারুল সর্বশেষ কথা বলেছিলেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, নম্বরটি ছিল পারুলের বাবা কুদ্দুছের। সেই সূত্র ধরেই পারুল নিখোঁজের রহস্য উদঘাটন হয়।
পিবিআই সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার শুরু ২০১২ সালে। সেই বছর কুদ্দুছ খাঁর মেয়ে পারুল টাঙ্গাইলের কালিহাতীর একই এলাকার নাসির উদ্দিন ওরফে বাবুকে ভালোবেসে ঢাকায় পালিয়ে এসে বিয়ে করেন। এ ঘটনায় কুদ্দুছ ২০১২ সালে কালিহাতী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। উভয়ের পরিবার বিয়ে মেনে না নেওয়ায় তারা ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়ায় বসবাস শুরু করেন। চাকরি নেন পোশাক কারখানায়। বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই তাদের পারিবারিক অশান্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে পারুল তার বাবাকে ফোন করে পারিবারিক অশান্তির কথা জানান। বাবা মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন, একই সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করায় অপমান বোধ ও প্রচ- রাগও ছিল। একপর্যায়ে ভালো ছেলে দেখে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে উন্নত জীবনযাপনের লোভ দেখান মেয়েকে। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই পারুলের স্বামী নাসির তার নানিকে দেখতে গ্রামে যান। সেই সুযোগে ১৯ জুলাই পারুল বাবার দেওয়া আশ্বাসে তাকে ফোন করে টাঙ্গাইলে যান। একই দিন পারুলের স্বামী নাসির ঢাকায় ফিরে স্ত্রীকে বাসায় না পেয়ে শ্বশুর কুদ্দুছ খাঁর বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় জিডি করেন। জিডিতে পারুলকে বাবার বাড়ি পালিয়ে যেতে প্ররোচনার অভিযোগ তোলা হয়। এদিকে ওই বছর ৪ আগস্ট পারুলের স্বামী ও পরিবারের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইলের আদালতে মামলা করেন কুদ্দুছ।
পারুল নিখোঁজের মামলার ঘটনাটি প্রথমে কালিহাতী থানা পুলিশ তদন্ত করে প্রেম করে বিয়ে করার সংশ্লিষ্টতা পায়। কিন্তু পারুলকে না পাওয়ায় ঘটনাস্থল তাদের এখতিয়ারবহির্ভূত এলাকা (ঢাকায়) মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করে। বাদীর বারবার নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইলের ডিবি পুলিশ, পিবিআই টাঙ্গাইল, সিআইডি টাঙ্গাইল তদন্ত করে একই রিপোর্ট দেয় আদালতে। সবশেষে আদালত জুডিশিয়াল তদন্ত করে রিপোর্ট দেয় যে, বাদী ঢাকার আদালতে মামলা করলে প্রতিকার পেতে পারে। গত বছর ২৭ নভেম্বর কুদ্দুছ খাঁ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন আদালতে তদন্তের রেফারেন্সসহ নারী নির্যাতন দমন আইনে যৌতুকের জন্য মারধর করে হত্যা মামলার আবেদন করেন। ওই বছরের ৩০ নভেম্বর আদালত আশুলিয়া থানাকে মামলা রুজু এবং পিবিআই ঢাকা জেলাকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। আশুলিয়া থানায় ১১ ডিসেম্বর ২০২২ মামলা করা হলে পিবিআই, ঢাকা জেলা তদন্ত শুরু করে।
হত্যাকান্ডের বিবরণ দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পিবিআই প্রধান বলেন, ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই কুদ্দুছ তার মেয়েকে নিজ বাড়িতে না নিয়ে বন্ধু মোকাদ্দেছ ওরফে মোকা ম-লের বাড়ি ভূঞাপুরে নিয়ে যান। সেখান থেকে মোকাদ্দেছ ভবিষ্যতে পারুলকে প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং কিছুদিন নাসিরের কাছ থেকে লুকিয়ে থাকতে হবে এই আশ্বাস দিয়ে জয়পুরহাটের উদ্দেশে রওনা দেন। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি এলাকায় একটি নদীর পাশে নির্জন জায়গায় রাতের অন্ধকারে পারুলকে তার বাবা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে মোকাদ্দেছের সহযোগিতায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে। লাশ নদীতে ফেলে দিয়ে টাঙ্গাইলে চলে আসে তারা। কুদ্দুছ ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।
তিনি বলেন, কুদ্দুছের দেওয়া তথ্য যাচাই করার জন্য পিবিআই জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানা থেকে ২০১৫ সালের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। ওই সময় সেখান থেকে অজ্ঞাতপরিচয় একটি লাশ উদ্ধারের তথ্য পাওয়া যায়। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পাঁচবিবি থানায় হওয়া মামলার আলামত, সুরতহালের বর্ণনা এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এর সঙ্গে আ. কুদ্দুছের বর্ণনার মিল পাওয়া যায়। ঘটনায় জড়িত কুদ্দুছের বন্ধু মোকাদ্দেছও তার সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে। তাকেও গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।
রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে ফিল্মি কায়দায় ছিনতাইয়ের চেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে আরিয়ান আহমেদ জয় (২৩) র্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনার রাতে র্যাব-১-এর সদস্য আল মোমেনের নেতৃত্বে ছিনতাইয়ে অংশ নেয় তারা। রাজধানীর বনানী থানায় ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলামের করা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বনানী থানার ওসি নুরে আজম মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে র্যাব সদস্য মোমেনকে প্রচলিত আইনে বিচারের সুযোগ না থাকায় তাকে র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্য দুজনকে আদালতের মাধ্যমে এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এ ঘটনায় জড়িত আরও একজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিমানবন্দর এলাকা থেকে এ চক্রটি ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলামকে টার্গেট করে। চক্রটির ধারণা ছিল গাড়িতে বিদেশ থেকে আনা মূল্যবান জিনিস রয়েছে। ভুক্তভোগী শহিদুলের সবকিছু ছিনিয়ে নিতে ফ্লাইওভারের ওপর গাড়ি থামিয়ে তাদের নিজেদের গাড়িতে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে ছিনতাই চক্রটি। ভাড়ার প্রাইভেট কারচালকও ছিনতাই চক্রের সদস্য। তারা দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দর এলাকার আশপাশ থেকে টার্গেট করে ছিনতাই করে আসছিল।
উল্লেখ্য, মানিকগঞ্জের সিংগাইর থেকে শহিদুল ইসলাম তার ভাগনে মো. রিয়াজকে সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার রাতে একটি ভাড়ার প্রাইভেট কারে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান। সেখানে তার বিদেশফেরত এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন। রাত পৌনে ১টার দিকে ওই প্রাইভেট কারেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন তারা। বনানী থানাধীন আমতলী ট্রাফিক বক্সের ওপর বরাবর মহাখালী ফ্লাইওভারে রাত সোয়া ২টার দিকে আকস্মিকভাবে একটি প্রাইভেট কার তাদের গতিরোধ করে। ওই প্রাইভেট কার থেকে তিন ব্যক্তি নেমে তাদের প্রাইভেট কারের কাছে এসে পিস্তল দেখিয়ে সঙ্গে থাকা সব মালামাল নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। তখন তারা পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন আরিয়ান আহমেদ জয় নামের একজনকে আটক করে। অন্য দুজন তাদের প্রাইভেট কার নিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলে বনানী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে জয়কে হেফাজতে নেয়। পরে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে, তার সহযোগীদের নাম আল মোমেন, মো. ফরহাদ হোসেন ও জালাল। বনানী থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোমেন ও ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে।
অভিযুক্ত মোমেন (২৬) র্যাবের সদস্য। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন সৈনিক তিনি। বর্তমানে প্রেষণে র্যাব-১, উত্তরা, ঢাকায় কর্মরত। তার সৈনিক নম্বর-১০০৭৫৪৩। আল মোমেনকে সামরিক আদালতে বিচার তথা কোর্ট মার্শাল করার জন্য থানা পুলিশের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সংস্থায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মাহফুজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, গ্রেপ্তারদের সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত এক দিনের রিমান্ড দিয়েছে। এ চক্রে আরও যারা জড়িত আছে তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আগে কোনো মামলা হয়েছে কি না সেটা জানার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।