
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরনের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্বিপাকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে র্যাব-১৩ সর্বদা আন্তরিক। গতকাল মঙ্গলবার র্যাব-১৩ এর আয়োজনে লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধার গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানীতে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প তিস্তা ব্যারাজসংলগ্ন এলাকায় অসহায় শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যখনই দুর্যোগ আসে তখন সবাই একসঙ্গে ঘুরে দাঁড়ায়। আজকে আপনারা শীতে কষ্ট পাচ্ছেন। সেইজন্য র্যাববাহিনী আপনাদের কষ্টের কথা স্মরণ করে শীতবস্ত্র নিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ডিসি ইউএনওর নেতৃত্বে আপনারা শীতবস্ত্র পেয়েছেন। প্রয়োজনে আরও পাবেন।
তিস্তার পানি বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আপনারা বলেন তিস্তায় পানি প্রবাহ নেই। তিস্তায় পানি প্রবাহ না হলেও এই অঞ্চলে যাতে ফসল হয় সে জন্য প্রধানমন্ত্রী যা যা করা দরকার, তাই করছেন। আমরা মনে করি আপনারা আরও ভালো থাকবেন, আরও সুস্থ থাকবেন। তিনি বলেন, আজকে আমরা সব চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করে একটি সুন্দর পরিস্থিতিতে এসেছি। আমাদের চ্যালেঞ্জও তাই। কিন্তু আমাদের দক্ষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আমাদের দক্ষ প্রশাসন তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে সাহসিকতা দিয়ে দেশপ্রেম দিয়ে জনগণের আজকে যে জায়গাটায় নিয়ে এসেছেন সেজন্য তাদের আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. মোতাহার হোসাইন এমপি, র্যাব ফোর্সেসের মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি এম খুরশীদ হোসেন বিপিএম (বার), পিপিএম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল মো. কামরুল হাসান, পিপিএম, লালমনিরহাট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান প্রমুখ।
ছিলেন দুর্ধর্ষ ডাকাত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। সেখানেই পরিচয় হয় জঙ্গিদের সঙ্গে। কারাগার থেকে বের হয়ে জড়িয়ে পড়েন জঙ্গিবাদে। এরপর হয়েছেন নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান। তার নাম মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর।
গত সোমবার ভোরে কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পসংলগ্ন ইয়াহিয়া গার্ডেনের গহিন বনাঞ্চল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার হন সংগঠনটির বোমাবিশেষজ্ঞ আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলম। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় বিদেশি পিস্তলসহ আগ্নেয়াস্ত্র ও নগদ ২ লাখ ৫৭ হাজার টাকা এবং পার্বত্য অঞ্চলে সামরিক প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ ও চাঞ্চল্যকর ভিডিও কন্টেন্ট। সেই ভিডিও কনটেন্টে জঙ্গি প্রশিক্ষণের নানা বিষয় ধারণ করা হয়েছে। দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণরতরা দীর্ঘদিন ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে জঙ্গি প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বিস্তারিত জানান। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার মাসুকুর রহমান রনবীর ২০০৭ সালের আগে পোস্ট অফিসে চাকরি করতেন। ডাকাতির এক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর কারাগারে থাকাকালে জঙ্গিদের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং জেএমবির আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। জেল থেকে বের হওয়ার পর তিনি বিভিন্ন সময়ে কারাগারে থাকা জেএমবি সদস্য ও তাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন। ২০১৭ সালে জামাতুল আনসারের সূরা সদস্য এবং অর্থ ও মিডিয়া শাখার প্রধান রাকিবের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হিসেবে জামাতুল আনসারে যোগদান করেন। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে সিলেট থেকে চার তরুণের নিখোঁজের ঘটনায় তিনি জড়িত ছিলেন। বিভিন্ন প্রশিক্ষণ শেষে নিখোঁজ ওই চার তরুণকে তিনি সামরিক শাখায় নিযুক্ত করেন। প্রায় এক বছর আগে সংগঠনের সামরিক শাখাপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার সামরিক কার্যক্রমের দুটি শাখা ছিল, যার একটি পাহাড়ে এবং অপরটি সমতলে। সমতলে সামরিক শাখার কার্যক্রম তার নেতৃত্বে পরিচালিত হতো।
গ্রেপ্তার আবুল বাশার মৃধা সম্পর্কে খন্দকার আল মঈন বলেন, হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা শেষে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন আবুল বাশার। তার সাংগঠনিক নাম আলম। বিভিন্ন সময় নিখোঁজ ৫৫ জনের তালিকায় আবুল বাশারের নাম রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। হুজি সংগঠনে থাকাকালে ঝালকাঠির নলসিটি এলাকায় সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রমের জন্য দায়ের করা নাশকতার মামলায় ২০১৩ সাল থেকে প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগ করেন। ২০১৬-১৭ সালের দিকে জামাতুল আনসারের আমির মাহমুদের মাধ্যমে জামাতুল আনসারে যোগ দেন। পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বাড়ি ছাড়েন এবং দুই মাস সমতলের বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ নেন। পরে তিনি রনবীর ও রাকিবের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য পার্বত্য অঞ্চলে যান।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গত বছরের ২০ অক্টোবর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র্যাব-৭ বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সমতল থেকে পাহাড়ে আত্মগোপনে থাকা সাত জঙ্গি এবং তাদের সহায়তাকারী তিনজন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পরদিন গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে বিলাইছড়ি থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা হয়। গ্রেপ্তার সাত আসামির মধ্যে নব্য জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সামরিক শাখার উপপ্রধান সৈয়দ মারুফ আহমেদ মানিক ছিলেন। মারুফ আহমেদ রিমান্ডে সংগঠনটির সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমানের বিভিন্ন কার্যক্রম এবং সম্ভাব্য অবস্থান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানান।
নতুন জঙ্গি সংগঠনের সন্ধানের বিষয়ে তিনি বলেন, গত বছরের ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে আটজন তরুণ নিখোঁজ হয়। নিখোঁজদের পরিবার কুমিল্লার কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। ওই আট তরুণের মধ্যে পালিয়ে আসা নিলয়কে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে গোয়েন্দারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় এবং নিলয়কে ডি-র্যাডিক্যালাইজেশন সেলের মাধ্যমে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিলয়ের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে গত ৫ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া রিফাতসহ নতুন জঙ্গি সংগঠনের সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, যাদের জিজ্ঞাসাবাদে দেশে একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়, যার নাম ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’।
কমান্ডার মঈন বলেন, র্যাবের গোয়েন্দা শাখা এবং বিভিন্ন ব্যাটালিয়ন গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করে কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া আট তরুণের মধ্যে চারজনসহ নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র ৩৮ জন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সক্রিয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া ২০২১ সাল থেকে এই জঙ্গি সংগঠনকে সহায়তা দেওয়া এবং সামরিক প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কেএনএফের ১৪ নেতা ও সদস্যকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ে গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা জানতে পারে, জামাতুল আনসারের আমির মো. আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ নামের এক ব্যক্তি। যার নেতৃত্বে উগ্রবাদী সংগঠনটি পরিচালিত হচ্ছে। এ ছাড়াও উগ্রবাদী এই সংগঠনে ছয়জন সূরা সদস্য রয়েছেন যারা দাওয়াতি, সামরিক, অর্থ, মিডিয়া ও উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন। এই নতুন জঙ্গি সংগঠনের ৫৫ সদস্যকে পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফের প্রধান নাথান বম, সামরিক কমান্ডার কথিত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ভাংচুং লিয়ান বম এবং অপর আরেক নেতা মিডিয়া শাখা প্রধান কথিত লে. কর্নেল লালজং মুই ওরফে মাওয়াইয়া এবং কথিত লে. কর্নেল লাল মুন ঠিয়াল ওরফে চির চির ময়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে পার্বত্য চট্টগ্রামে সামরিক প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে।
কারাগারে গিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠনে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন রনবীর। এর আগেও অনেকে কারাগারে গিয়ে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। কারাগার কি তবে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধকরণের নিরাপদ জায়গা? এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো কার্যক্রম বা নজরদারি রয়েছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও কারা কর্র্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। রনবীর জিজ্ঞাসাবাদে কারাগারে থাকাকালেই জামাতুল আনসারে উদ্বুদ্ধ হওয়ার কথা বলেছেন। এরকম অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। ২০০৫-০৬ সালের দিকে এটি বেশি হয়েছে। নতুন করে কারাগারে যাতে এই সুযোগ তৈরি না হয়, সেজন্য কারা কর্র্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
রাজধানীর মগবাজারে বিস্ফোরণে এক প্রকৌশলীসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ বলছে, ড্রাম থেকে বিস্ফোরকদ্রব্য ফেলে দেওয়ার সময় বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। আগে থেকেই ড্রামের ভেতরে কেউ বিস্ফোরক রেখে দিয়েছিল এবং অসাবধানতাবশত তা ফেলে দেওয়ার সময় বিস্ফোরণ ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিস্ফোরণে আহতরা হলেন মগবাজারের অগ্রণী অ্যাপার্টমেন্টের প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম (৩৬), ডিপিডিসির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক মো. তারেক (২০), মো. শাহিন (৩০), আবুল কালাম (২৫) এবং দোকান কর্মচারী আতিকুল ইসলাম (১৫)। তাদের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান এবং ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার হারুন-অর রশীদ। পরিদর্শন শেষে মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ড্রাম থেকে বিস্ফোরকদ্রব্য ফেলে দেওয়ার সময় বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, আগে থেকেই ড্রামের ভেতরে কেউ বিস্ফোরক রেখে দিয়েছিল। অসাবধানতাবশত ফেলে দেওয়ার কারণে বিস্ফোরণটি ঘটে। বিস্ফোরক কে রেখেছিল বা কীভাবে এখানে এসেছে সেটা উদঘাটনের জন্য কাজ করছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে কোনো কিছু সন্দেহ করছি না। ধারণা করছি কেউ হয়তো বিস্ফোরক রেখে গিয়েছিল। তবে মোটিভ জানতে পারলে আমরা এটা বের করতে পারব।’
আর ডিএমপির ডিবিপ্রধান হারুন-অর রশীদ বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে অসংখ্য স্প্রিন্টার পাওয়া গেছে। কী উদ্দেশ্যে বিস্ফোরক এখানে রাখা হয়েছিল আমরা সেটা বের করার জন্য কাজ করছি। বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে এসেছিল, তারা স্প্রিন্টারগুলো আলামত হিসেবে নিয়ে গেছে। একটা ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে এটা কেন রাখা হয়েছিল, সেটা আমরা বের করার চেষ্টা করছি।’
বিস্ফোরণে আহতদের মধ্যে চারজন আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে দোকান কর্মচারী আতিকুল ইসলামের অবস্থা গুরুতর। তাকে প্রথমে মগবাজারের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বার্ন ইনস্টিটিউট নেওয়া হলে সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢামেক হাসপাতালে।
আতিকুল হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার তেঘুরিয়া গ্রামের আলী আমজাদের ছেলে। শান্তিনগর এলাকায় থেকে ওয়ারলেস গেটের একটি ভাঙ্গারির দোকানে কাজ করে। ওই ভাঙ্গারির দোকান মালিকের বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিস্ফোরণের ঘটনাস্থল ফার্স্ট ফার্মা ও আমাদের ভাঙ্গারির দোকানের মধ্যে দূরত্ব ২০-৩০ গজ। সকালে আতিকুলকে ফার্মেসির কেউ বলেছিল, দোকানের সামনে থাকা ড্রামটি নিয়ে যেতে। এ জন্য সে ড্রামটি আনার জন্য গিয়েছিল। ড্রামটি ধরতেই বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে তার পুরো শরীরেই আঘাত লেগেছে। বিশেষ করে তার ডান পা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ডান পায়ের দুটি আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।’
আহত প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানান, ওয়ারলেস গেটের উজ্জ্বল হোটেলের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। তখন তিনি রাস্তায় পড়ে যান। পরে তার শরীর থেকে রক্ত ঝরতে দেখেন।
শিগগিরই আবার চাঁদের মাটিতে পা রাখতে চলেছে মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ইতিমধ্যে চাঁদের বুকে মানুষ পাঠানোর অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে। এ জন্য পৃথিবীতেই চাঁদের পৃষ্ঠের মতো পরিবেশ পেতে বেছে নেওয়া হয়েছে স্পেনের একটি দ্বীপকে। ইউরোপীয় দেশটির লান্সারোটে দ্বীপে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের যৌথ চন্দ্রাভিযানের প্রশিক্ষণ চলছে। এই দ্বীপের সঙ্গে চাঁদ ও মঙ্গলগ্রহের উপরিভাগের অনেক মিল রয়েছে। দ্বীপটি বেছে নিতে ভবিষ্যতে মঙ্গলযাত্রার কথাও মাথায় রাখা হয়েছে।
এ মহড়ায় মহাকাশচারীদের সবসময় পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের সঙ্গে বেতার যোগাযোগ চালু রাখতে হবে। বিজ্ঞানীরা তাদের আরও দক্ষতার সঙ্গে নির্দিষ্ট পাথর খুঁজতে সাহায্য করবেন। ৫০ বছর আগে অ্যাপোলো মিশনের সময় এ রকম মহড়া সম্ভব ছিল না। চাঁদে পৌঁছানোর পর তাদের যা সন্ধান করতে হবে, লান্সারোটের মাটিতেই বারবার তা অনুশীলন করা হচ্ছে।
মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন জার্মানির মহাকাশচারী আলেক্সান্ডার গেয়ার্স্ট। এ মহড়ার গুরুত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর বুকে সর্বত্র স্যাটেলাইট রিসিভার রয়েছে। আমরা সব জায়গায় যোগাযোগের সুবিধায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। চাঁদের বুকে সর্বত্র সেই সুযোগ নেই। আমাদের নিজস্ব নেভিগেশন ও যোগাযোগ প্রণালি সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। সেগুলো পরীক্ষা করে দেখতে হবে। প্রশিক্ষণের সময়ে গোটা প্রণালি পরীক্ষা করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।’ গেয়ার্স্ট সব মিলিয়ে প্রায় এক বছর মহাকাশে কাটিয়েছেন। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন আইএসএসের কমান্ডার হিসেবে শেষবার তিনি মহাকাশে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি একশরও বেশি পরীক্ষা চালিয়েছেন। এবার আরও বড় দায়িত্ব পেতে পারেন তিনি। চাঁদের বুকে স্টেশন গড়ে তোলার দায়িত্ব পেতে পারেন গেয়ার্স্ট। তিনি মনে করেন, ‘অ্যান্টার্কটিকার মতো চাঁদের বুকেও গবেষণা স্টেশন গড়ে তোলা একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ আমরা বেশি কিছু সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারব না। আমাদের টেকসই পদ্ধতিতে জীবনযাপন করা শিখতে হবে। চাঁদের নিজস্ব সম্পদ ব্যবহার করতে হবে। হয়তো পানির মধ্যে বিভাজন ঘটিয়ে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য বাতাস ও জ¦ালানি তৈরি করতে হবে। অনেক কাজ আছে, আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
এই প্রথমবারের মতো মা থেকে সন্তানের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসের অ্যান্টিবডি পেয়েছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। প্রতিষ্ঠানটি গবেষণায় দেখেছে, নবজাতক সন্তান মায়ের কাছ থেকে নিপাহ ভাইরাসের হিউমোরাল অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পায়। এ গবেষণা প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তি থেকে অন্যজনে সম্ভাব্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রবাহের নতুন তথ্য প্রদান করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ গবেষণার তথ্য জানায় আইসিডিডিআর,বি। গবেষণাটি সম্প্রতি ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে বলে জানানো হয়।
এ ব্যাপারে এই গবেষণার প্রধান গবেষক ও আইসিডিডিআর,বির ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের ইমার্জিং ইনফেকশন্স শাখার সহকারী বিজ্ঞানী ডা. সৈয়দ মইনুদ্দীন সাত্তার গতকাল রাতে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মায়ের শরীরে নিপাহ ভাইরাসের অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে এবং মা থেকে সেই অ্যান্টিবডি প্রসব করা শিশুর শরীরে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এমন তথ্য বাংলাদেশেই প্রথম পাওয়া গেল। কারণ এখন পর্যন্ত কোথাও এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ পায়নি। আমরাই প্রথম এমন তথ্য দিলাম। তাছাড়া বাংলাদেশ ও ভারত ছাড়া বিশ্বের কোথাও এখন আর নিপাহ ভাইরাসের কেস নেই।’
আইসিডিডিআর,বি জানায়, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ফরিদপুর জেলায় পাঁচ বছরের কমবয়সী এক মেয়ে এবং তার মা নিপাহ ভাইরাসে সংক্রমিত হন। তারা দুজনই খেজুরের কাঁচা রস পান করেছিলেন। তাদের মধ্যে শিশুটি মারা যায় এবং মা গুরুতর স্নায়বিক জটিলতার শিকার হন। ২০২১ সালের নভেম্বরে তিনি আবার গর্ভধারণ করেন এবং প্রসবের আগে তাকে জাতীয় নিপাহ সার্ভেইল্যান্সের অধীনে নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। ২০২১ সালের আগস্টে তিনি একটি সুস্থ ছেলে শিশুর জন্ম দেন। রুটিন সারভাইভার ফলোআপের অংশ হিসেবে নবজাতকের দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং ভার্টিকেল ট্রান্সমিশন বা মা থেকে শিশুতে সংক্রমণের সম্ভাবনা বাদ দেওয়ার জন্য রেফারেন্স ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়েছিল।
আইসিডিডিআর,বি আরও জানায়, যদিও পরীক্ষা করে র্যাপিড ও পিসিআর টেস্টে নিপাহ সংক্রমণ পাওয়া যায়নি, কিন্তু অ্যান্টি-নিপাহ আইজিজির একটি উচ্চ টাইটার দেখতে পাওয়া যায়। এভাবেই প্রথমবারের মতো নিশ্চিত হওয়া যায় যে, মা থেকে সন্তানের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসের হিউমোরাল অ্যান্টিবডি পৌঁছে।
এ গবেষণার প্রধান গবেষক ও আইসিডিডিআর,বির ইনফেকশাস ডিজিজেস ডিভিশনের ইমার্জিং ইনফেকশন্স শাখার সহকারী বিজ্ঞানী ডা. সৈয়দ মইনুদ্দীন সাত্তার গবেষণা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের জানামতে এ গবেষণাই প্রথম নিপাহ ভাইরাসভিত্তিক ইমিউন প্রপার্টিজের ভার্টিকেল ট্রান্সফার বা মা থেকে শিশুতে পরিবাহিত হওয়ার প্রমাণ নিশ্চিত করে। ভাইরাস নিউট্রিলাইজেশনের কার্যকারিতা এবং নবজাতকের সুরক্ষার সম্ভাব্যতার বিষয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন। এটি নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে গর্ভবতী ও কমবয়সী নারীদের জন্য টিকা আবিষ্কারের ক্ষেত্রে একটি রেফারেন্স হিসেবেও কাজ করবে বলে আমি আশাবাদী।’
মানুষকে খেজুরের কাঁচা রস খেতে নিষেধ করেছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা মানুষের মধ্যে আবারও খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার প্রবণতা লক্ষ করছি এবং সেই উৎসবের খবর ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। অথচ আমরা সবাইকে খেজুরের কাঁচা রস পান করতে নিষেধ করছি, রস সংগ্রহে যত সতর্কতাই অবলম্বন করা হয়ে থাকুক এটি অনিরাপদ।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার আনুমানিক ৪০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ হার ৭১ শতাংশ। এ ছাড়াও নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পরবর্তী সময়ে গুরুতর স্নায়ুবিক জটিলতা দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং গর্ভবতী নারীদের গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এ জটিলতা আরও খারাপ হয়।
নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে আইসিডিডিআর,বি জানায়, নিপাহ ভাইরাস একটি জুনোটিক ভাইরাস (অর্থাৎ এটি প্রাণী থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়) এবং এটি দূষিত খাদ্য অথবা সরাসরি মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে। টেরোপাস জেনাসের ফলখেকো বাদুড় এ ভাইরাসের প্রাকৃতিক ধারক এবং মহামারী সৃষ্টিতে সক্ষম রোগের মধ্যে এটি একটি। বাংলাদেশে ২০০১ সালে প্রথম এই ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এবং তখন থেকে এই জনবহুল দেশে প্রায় প্রতি বছরই অনেক মানুষ মারা যায়। আইসিডিডিআর,বির তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ বছরের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৩৩১ জন মানুষ নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে ও মারা গেছে ২৩৬ জন।
লস অ্যাঞ্জেলেসে চান্দ্র নববর্ষের অনুষ্ঠানে গুলিতে ১০ জনের প্রাণহানির মাত্র দুদিনের মাথায় ফের রক্তাক্ত হলো যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া। গত সোমবার এ অঙ্গরাজ্যের সান ফ্রান্সিসকো থেকে প্রায় ৩০ মাইল দক্ষিণের উপকূলীয় শহর হাফ মুন বের পৃথক দুটি এলাকায় বন্দুকধারীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন ৭ জন। পুলিশ জানিয়েছে এ হামলার সন্দেহভাজন ব্যক্তি আত্মসমর্পণ করেছেন। সন্দেহভাজন হামলাকারী হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তির নাম ঝাও চুনলি। তার বয়স ৬৭ বছর। তিনি হাফ মুন বে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা।
স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও ফুটেজে জানা যায়, হামলার প্রায় দুই ঘণ্টা পর ওই সন্দেহভাজন ব্যক্তি স্যান মাটেওর শেরিফের কার্যালয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সময় বেলা ২টা ২২ মিনিটের দিকে একটি মাশরুম খামার থেকে চারজনের লাশ উদ্ধার হয়। পরে পার্শ্ববর্তী একটি ট্রাক ভাড়া দেওয়ার প্রতিষ্ঠান থেকে আরও তিনজনের লাশ উদ্ধার হয়। এ হামলার উদ্দেশ্য কী ছিল, সে সম্পর্কে তদন্তকারীরা এখনো কিছু উল্লেখ করেননি। স্যান মাটেওর কাউন্টি শেরিফ ক্রিস্টিনা করপাস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ওই সন্দেহভাজন ব্যক্তি বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে নিজে গাড়ি চালিয়ে স্থানীয় একটি পুলিশ স্টেশনে পৌঁছান। সেখানে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’
রাজপথে খালি পায়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিচ্ছে এক পথশিশু। পেছনে বিক্ষুব্ধ মিছিল। শিশুটির পরনে চার পকেটের হাফপ্যান্ট; গেঞ্জিটা কোমরে বাঁধা। কণ্ঠে স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনার হুঙ্কার। দৃঢ় চোয়ালে অগ্নিস্পর্ধী সাহসিকতার বহিঃপ্রকাশ। পাঁজরগুলো যেন শরীরের ভেতর থেকে তীরের ফলার মতো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা অপ্রতিরোধ্য শিশুটি সেদিন সবার নজর কাড়ে। ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সকালে বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের এ প্রতিবাদী মুহূর্তটি ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদার।
সেই সময়ে দৈনিক সংবাদের নিজস্ব সংবাদচিত্রী ছিলেন তিনি। ছবিটি ফ্রেমবন্দি করে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি ইতিহাসের মূর্ত সাক্ষীর আলোকচিত্রী। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের আইকনিক আলোকচিত্র হিসেবে ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে এ ছবি। ছবিটি আমাদের সংগ্রামী অতীতকে স্মরণ করিয়ে দে য়। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র শিশুটির চোখ-মুখের ভাষা মানুষকে মনে করিয়ে দেয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের কথা। ছবিটির দৃশ্য-ভাষা এতই শক্তিশালী যে, এখনো মানুষের মনে শিহরন জাগায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান জানায়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : ছাত্রসমাজের ১১ দফা মুক্তিসনদকে সামনে নিয়ে ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি দাবানলের মতো জ্বলে উঠে পূর্ব বাংলা ও তার রাজধানী ঢাকা। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ জানুয়ারি কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে ঢাকার রাজপথে নামে জনতার ঢল। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালাকেও ম্লান করে দেয় সেদিনের জনসমুদ্রের বিক্ষুব্ধ ঊর্মিদল। অধিকার-সচেতন জনতার হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে অত্যাচারীর আসন। সেই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য গর্জে উঠে স্বৈরাচারের বন্দুক। বুলেটের আঘাতে রাজপথে ঝরে পড়ে কয়েকটি প্রাণ। শহীদের লাশ নিয়ে রাজপথে মিছিলের ঢল নামে। রাত ৮টায় কারফিউ জারির মাধ্যমে জনতাকে নিবৃত্ত করার সর্বশেষ প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়ে রাতের নৈঃশব্দ্যকে প্রকম্পিত করে মুক্তিপাগল জনতা। এর কয়েক দিন পর জনতার অদম্য আন্দোলনের মুখে অত্যাচারী সরকারকে পালাতে হয়। সমাধি রচিত হয় আইয়ুব-মোনায়েমের রাজত্বের।
সেদিন ছিল আধাবেলা হরতাল। ঢাকায় সেক্রেটারিয়েটের ভেতর থেকে পুলিশ দুই দফা গুলিবর্ষণ করে। প্রথম দফা গুলিবর্ষণ সকাল ১১টা ৫ মিনিটে। দুপুরে দ্বিতীয় দফা। গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক ও নোয়াখালীর নান্দিয়াপাড়া হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সৈয়দ রুস্তম আলী। প্রেস ট্রাস্ট অফিসের সামনে পুলিশের গুলিতে আরও একজন নিহত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ-ইপিআরের গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জে আহত হয় ২১ জন। পরদিন সব দৈনিক পত্রিকা হতাহতদের নাম, বাবার নাম, বয়স, পেশা, কার-কোথায় গুলি লেগেছে, কীভাবে ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ ছাপায়। বেশিরভাগ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শহীদ মতিউর ও রুস্তমের মৃত মুখের ছবি ছাপা হয়। সেদিন কোনো পত্রিকায় কোনো পথশিশুর মৃত্যুর খবর ছাপা হয়নি।
আইকনিক ফটো : রশীদ তালুকদারের তোলা পথশিশুর ছবিটি প্রথম ছাপা হয় ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি দৈনিক সংবাদের বিশেষ ক্রোড়পত্রে। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক ঘটনার লেখনীর সঙ্গে ছবিটি দৈনিক সংবাদ প্রকাশ করে। রশীদ তালুকদার ১৯৭৫ সালে সংবাদ ছেড়ে ইত্তেফাকে যোগদান দেন। এরপর ইত্তেফাকও ছবিটি প্রতি বছর প্রকাশ করে। অনেক দিন এ ছবির নেপথ্য ঘটনার অনুসন্ধান হয়নি। কোনো পত্রিকায় ছবিটি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন, ফিচার, প্রবন্ধ-নিবন্ধও লেখা হয়নি। রশীদ তালুকদারও এই ছবি সম্পর্কে কোথাও কিছু লিখে যাননি। দীর্ঘ ৫৪ বছর শিশুটির কথা অজানাই রয়ে গেছে। খোঁজ মেলেনি বলে সবাই ধরে নিয়েছে শিশুটি সেদিন বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে শিশুটির পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটির নাম মো. হোসেন আলী। সেই সূত্রেই পাওয়া যায় হোসেন আলীর খোঁজ।
হোসেন আলীর কথা : ৬৪ বছর বয়সী হোসেন আলী বলেছেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটি তিনিই। তার বক্তব্য, ‘ঊনসত্তরে আমার বয়স আছিল দশ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমারে ডাকতেন পালোয়ান বইলা। ওই দিন জগন্নাথ কলেজের দিক থাইক্যা ছাত্রলীগের একটা মিছিল আইতেছিল। আমি তখন ফুলবাড়িয়া ইস্টিশনে থাকি। “জেলের তালা ভাঙবো, মুজিব ভাইকে আনবো” স্লোগান শুইন্যা আমিও যোগ দিলাম ওই মিছিলে। মিছিলে আমার মতো কয়েকটি শিশুও আছিল। রেগওলা (স্ট্রাইপ) হাফশার্ট গায়ে ছেলেডা আমার পেছনে আছিল। মিছিল পলাশী ব্যারাক হইয়া শাহবাগের দিকে আইলো। আমি কিন্তু মিছিলের সামনে। গরমে ঘামাইয়া গেছি। তাই গেঞ্জিটা খুইলা কোমরে বাঁধলাম। শাহবাগের সামনে আইসা দেখি, রেডিও অফিসের সামনে ইপিআর পজিশন লইয়া আছে। দুইবার মাইকিং করছে “চল যাও, চল যাও”। কে কার কথা শুনে? আমি জয় বাংলা বলে স্লোগান দিচ্ছি। তিন-চারজন ছবি তুলতাছে। তিনবার বলার পর দেখি বন্দুক রেডি করতাছে। সাথে সাথে একটা গুলির আওয়াজ পাইলাম। দৌড়াইয়া তারের ঘের দেওয়া রেসকোর্স ময়দানে ঢুকলাম। এরপর মন্দির, হাইকোর্ট, সেক্রেটারিয়েট হয়ে জিন্নাহ অ্যাভিনিউর রুচিতা হোটেলে আইলাম। কাঙালি হিসেবে আমারে তখন জিন্নাহ অ্যাভিনিউর অনেকে চিনতো। একদিন কয়েকজন আমারে পত্রিকার ছবি দেখাইয়া কইলো ‘তোরে তো পাঞ্জাবিরা মাইরালাইবো।’
হোসেন আলী বলেন, ‘আমি বহুদিন বহু লোকরে কইছি ওই শিশুটা আমি। আমি তো কাঙাল মানুষ, তাই আমার কথা কেউ শোনে না, পাত্তা দেয় না। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড মহিউদ্দীন ভাই তো এখনো বাঁইচা আছে। আমারে তাগো কাছে লইয়া যান।’ বুকে একটা কালো দাগ দেখিয়ে বললেন, ‘আসল ছবিটার সঙ্গে মিলাইয়া দ্যাখেন। সবকিছু পরিষ্কার হইয়া যাইবো।’ হোসেন আলীর ছেলে উজ্জ্বল হোসেন বাবু বলেন, ‘ছোটবেলা বেলা থেকে বাবার মুখে এই কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। বাবার চুলের শেপটা দেখেন, মিল পাবেন।’
হোসেন আলীর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দিতে। মফিজ উদ্দিন ও ফাতেমা বেগমের একমাত্র সন্তান তিনি। পথশিশু পরিচয়ে শৈশব কাটে ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় থাকতেন আওয়ামী লীগ অফিসের নিচে। ৭৭ সালে ২২ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শুরু করেন টোকানো কাগজের ব্যবসা। আটাশির বন্যায় দোকান তলিয়ে গেলে আবার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। অনেক দিন রিকশা চালিয়েছেন। এখন আট হাজার টাকা বেতনে নৈশপ্রহরীর চাকরি নিয়েছেন। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বেকার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মান্ডার কদমতলী এলাকার ঝিলপাড়ে।
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে : ছবিটি কেমন করে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই গল্প বলেন ভারতের পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী টি কাশীনাথ। বাহাত্তরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ফেয়ারে অংশ নেয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের ছবির নেগেটিভগুলো ফটোসাংবাদিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিল্লিতে যান ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ জহিরুল হক। বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি লিখে দেন। জহিরুল হক সেই চিঠি পৌঁছান ভারতের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর হাতে। তথ্যমন্ত্রী ফটোগ্রাফি বিভাগের পরিচালক টি কাশীনাথকে ডেকে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করতে বলেন। কাশীনাথের তত্ত্বাবধানে ২০ ফুট বাই ৩০ ফুট সাইজে ছবিগুলো পরিবর্ধিত (এনলার্জ) করা হয়। রশীদ তালুকদারের তোলা ঊনসত্তরের পথশিশুর ছবি ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবিটি প্রদর্শন করা হয় স্টলের প্রবেশমুখে। ছবি দুটি দেখার জন্য মেলায় আসা লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বাংলাদেশের স্টলের সামনের ভিড় সরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতেও বাধ্য হয়। বাংলাদেশের শিল্পকলার এই চমকপদ তথ্যটি অনেক দিন এ দেশের মানুষের অজানা ছিল। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) রিসোর্স পারসন হিসেবে টি কাশীনাথ বাংলাদেশে এসে এ গল্পটি করেন।
নীরব অভিমান : ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদারের তোলা ছবিগুলো আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। ১৯৫৯ সালে রশীদ তালুকদারের কর্মজীবন শুরু। বাষট্টিতে দৈনিক সংবাদে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার আগে তিন বছর ৮০ টাকা বেতনে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন পিআইডিতে। সংবাদে কাজ করেছেন টানা ১৩ বছর। এরপর তিনি যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার ঘটনা প্রভৃতির অসংখ্য ছবি তুলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অল রোভস প্রোগ্রামে প্রতি বছর বিশ্বের একজন সেরা ফটোসাংবাদিককে পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এ পদক পান রশীদ তালুকদার। তার তোলা ছবি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এনসাইক্লোপিডিয়ায় যুক্ত হয়েছে। এত কিছুর পরও আমাদের রাষ্ট্র তাকে ঠিক বুঝে উঠতে সক্ষম হয়নি। রাষ্ট্রের অন্যমনস্কতায় নীরব অভিমানে ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর ৭২ বছর বয়সে পরলোকে চলে গেলেন বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণকালের এই রূপকার।
লেখক : দেশ রূপান্তরের আলোকচিত্র সম্পাদক
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গড়ে উঠছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। এই সমুদ্রবন্দরে প্রবেশ করতে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ নীল পানির চ্যানেল (জাহাজ চলাচলের পথ) দেখে মনে হবে যেন উন্নত কোনো দেশের বন্দর। এই নীল জলরাশির তীরেই গড়ে উঠবে উপমহাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। কিন্তু এই নীল পানি দেখে আশাবাদী হওয়ার বদলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (চবক) কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। যার কারণ হলো কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত চ্যানেলের জন্য খরচ হওয়া প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার দায় পড়তে যাচ্ছে চবকের কাঁধে।
গত রবিবার মাতারবাড়ী ঘুরে দেখা যায়, ৩৫০ মিটার চওড়া ও ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল নির্মাণের কাজ শেষ। কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় জেটি নির্মাণও হয়ে গেছে, সেই জেটিতে ইতিমধ্যে ১১২টি জাহাজ ভিড়েছেও। কিন্তু চ্যানেলের জন্য চবককে পরিশোধ করতে হবে ৯ হাজার ৩৫০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) ঋণ হিসেবে রয়েছে ৭ হাজার ৯২২ কোটি ১৬ লাখ এবং বাংলাদেশ সরকারের ১ হাজার ৪২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এই টাকা কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় খরচ করা হয়েছিল। আর কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্যই চ্যানেলটি নির্মাণ হয়েছিল। এখন যেহেতু এই চ্যানেলকে ব্যবহার করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠছে, তাই তা নির্মাণের সব খরচ চবককে পরিশোধ করতে হবে বলে গত ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিবকে প্রধান করে একটি সাব কমিটি গঠন করা হয়, যে কমিটি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাছ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের কাছে চ্যানেলটি ও তা নির্মাণের ব্যয় হস্তান্তরের পদ্ধতি নির্ধারণ করবে।
কিন্তু এই টাকা পরিশোধ নিয়ে বিপাকে পড়েছে চবক। এ বিষয়ে বন্দর কর্র্তৃপক্ষের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মধ্যে জাইকার ৭ হাজার ৯২২ কোটি ১৬ লাখ ঋণের পরিশোধ শুরু হবে আগামী বছর থেকে। সেই হিসাবে প্রথম বছরে পরিশোধ করতে হবে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা এবং পরবর্তী বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। শুধু কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় ঋণ নয়, মাতারবাড়ী বন্দর নির্মাণের জন্য জাইকা থেকে ৬ হাজার ৭৪২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছে চবক। এই টাকার বিপরীতে ২০২৯ সালে জাইকাকে দিতে হবে ১ হাজার ৮১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা, পরে প্রতি বছর ঋণ ও সুদ বাবদ দিতে হবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া মাতারবাড়ী বন্দরের ড্রেজিং বাবদ বছরে খরচ হবে প্রায় ৫০ কোটি এবং এই বন্দর পরিচালনায় প্রতি বছর ভর্তুকি দিতে হবে প্রায় ৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে শুধু ঋণ শোধ বাবদ চবককে পরিশোধ করতে হবে ৪ হাজার ৪২৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মধ্যে আগামী বছর লাগবে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা পর্যায়ক্রমে ২০২৬ সাল থেকে প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া বে টার্মিনালের ব্রেক ওয়াটার ও চ্যানেল নির্মাণের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে চবক। অন্যদিকে চবকের বার্ষিক গড় আয় প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। তাহলে চবক এত টাকা কীভাবে পরিশোধ করবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চবকের দাবি, চ্যানেল নির্মাণের খরচ যাতে তাদের কাঁধে দেওয়া না হয়। কিন্তু এই টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে জানিয়েছেন কয়লাবিদ্যুৎ (কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড সিপিজিসিবিএল) প্রকল্পের পরিচালক আবুল কালাম আজাদ। এ প্রসঙ্গে তিনি গতকাল সোমবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই চ্যানেল কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নিমির্ত হয়েছে। এখন যেহেতু বন্দর কর্র্তৃপক্ষ চ্যানেল ব্যবহার করবে, তাহলে তো তাদের টাকা দিতেই হবে। আর এই টাকা তো ৪০ বছরে পরিশোধ করতে হবে।’
উল্লেখ্য, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। জাইকার অর্থায়নে সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে মাতারবাড়ী পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, ১৬ মিটার ড্রাফট (গভীরতা) এবং ২৫০ মিটার চওড়া চ্যানেল নির্মাণ হয় বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায়। কয়লাবিদ্যুতের চ্যানেলের ওপর ভিত্তি করে গভীর সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলা যায় বলে জাইকা একটি প্রস্তাবনা দেয়। সেই প্রস্তাবনা ও পরে সমীক্ষার পর ‘মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়। আর এরই আওতায় চ্যানেলের প্রশস্ততা ১০০ মিটার বাড়ানোর পাশাপাশি গভীরতাও ১৮ মিটারে উন্নীত করা হয়। এ জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ ১৩ হাজার টাকার বাজেট একনেক থেকে অনুমোদন করে। এর মধ্যে জাইকার ঋণ ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ ৫ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষের (নিজস্ব তহবিল) ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ ৯৪ হাজার টাকা এবং বাংলাদেশ সরকারের ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। মাতারবাড়ীতে ৩৫০ মিটার দীর্ঘ ও ১৬ মিটার ড্রাফটের (জাহাজের গভীরতা) জাহাজ ভিড়তে পারবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরে ২০০ মিটার দীর্ঘ ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে। মাতারবাড়ী চালু হলে এর সঙ্গে চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রাবন্দরের নেটওয়ার্ক আরও বাড়বে। ফলে গভীর সমুদ্রবন্দরের অভাব পূরণ করবে মাতারবাড়ী বন্দর।
আর কখনো রাজনীতিতে জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। মুচলেকা দিয়ে এ কথা বলেছে তারা। সংগঠনটির নেতারা আরও বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের অংশও হবেন না তারা। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রকাশ্য বা গোপন কোনো সম্পর্কেই জড়াবে না হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতে ইসলাম বেশ কিছু শর্তও দিয়েছে। শর্তে তারা বলেছে, হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ যেসব নেতা কারাবন্দি রয়েছেন তাদের সবাইকে ছেড়ে দিতে হবে এবং মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে হবে। আওয়ামী লীগ ও হেফাজতে ইসলাম গত বছর ১৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে এ মুচলেকা দেয় এবং এসব শর্ত বা দাবি জানায়।
আগে হেফাজত নেতারা তিন মন্ত্রীর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেন। তারপর দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে মুচলেকা দেন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা হেফাজতের মুচলেকা দেওয়ার কথা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন। সরকারের সহযোগী হিসেবে থাকার অঙ্গীকার করেছে হেফাজত।
১৪ দলের অন্যতম শরিক তরিকত ফেডারেশনের নেতা নজিবুল বশর মাইজভা-ারী দেশ রূপান্তরকে বলেন, হেফাজতে ইসলামের চেয়ারম্যান তাকে জানিয়েছেন তারা কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়; তারা রাজনীতি করবে না। কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে তারা জোটবদ্ধও হবে না।
হেফাজতে ইসলাম আরও কিছু শর্ত দিয়েছে, যেমন কাদিয়ানি সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর বৃহত্তম বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশকে (বেফাক) সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে থেকে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও তাদের মুক্তির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে মামুনুল হক এবং আরও কয়েকজনকে এখনই মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে সরকারি মহল। একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মামুনুলকে ছাড়তে হবে, যা সময়সাপেক্ষ।
সূত্রে আরও জানা গেছে, কাদিয়ানি সম্প্রদায় বিষয়ে হেফাজতের দাবি আপাতত আমলে নেওয়া হয়নি। কারণ, তাদের অমুসলিম ঘোষণা করা হলে বিদেশি চাপ আসবে। যে চাপ সামলানো প্রায় অসম্ভব। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন ঝামেলায় জড়ানো যাবে না বলে হেফাজত নেতাদের বলা হয়েছে। বেফাক ইস্যুতেও আপাতত কোনো উদ্যোগ নিতে চায় না সরকার। বেফাককে সরকারি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি মানাও আপাতত অসম্ভব, জানিয়েছে সরকার। তবে হেফাজত নেতাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে, অন্য শর্তগুলো নিয়ে তাদের সঙ্গে আরও বৈঠক হবে।
হেফাজত নেতাদের বলা হয়েছে, ধর্মীয় বিভিন্ন অপপ্রচার চলছে সরকারের বিরুদ্ধে; এসব ব্যাপারে কথা বলতে হবে তাদের। জামায়াতবিরোধী অবস্থান নিয়ে কাজ করতে হবে হেফাজতকে। হেফাজত নেতারা বলেছেন, জামায়াত ইস্যুতে তারা কোনো ছাড় দেবে না। জামায়াতকে তারা ইসলামের ধারক-বাহক মনে করে না।
বলা যায়, হেফাজতের সঙ্গে সরকারের রাজনৈতিক বোঝাপড়া হয়েছে। এটা একটা ‘পলিটিক্যাল ডিল অর আন্ডারস্ট্যান্ডিং’। জানা গেছে, এ সমঝোতার ভিত্তিতেই হেফাজতের বিরুদ্ধে ২০৩টি মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে এবং নেতারা জামিন পেতে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে পুলিশকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। হেফাজত ইসলামী বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে সরকার।
২০১৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় এখনো তদন্ত হচ্ছে ২০৩টি মামলার। অনেক দিন ধরেই তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু সুরাহা করতে পারছে না তদন্তকারী সংস্থাগুলো। হেফাজত নেতাকর্মীদের অনেকে কারাগারেও আছেন। তবে বেশিরভাগ আসামি প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন।
পুলিশের পাশাপাশি হেফাজত নেতারা মামলাগুলো নিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত। তারা এগুলোর নিষ্পত্তি চান। এ নিয়ে কয়েক দফা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন হেফাজত নেতারা। সর্বশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে হয়েছে। বৈঠকে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির অনুরোধ জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীও তাদের অনুরোধ বিবেচনায় নিয়ে সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা পেয়ে পুলিশও কাজ শুরু করে দিয়েছে। গত এক মাসে অন্তত ১০ জন নেতা জামিন পেয়েছেন। তারা যেকোনো সময় কারামুক্ত হবেন। তবে মামুনুল হক আপাতত মুক্ত হচ্ছেন না।
হেফাজত নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তারা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারাও ‘সবুজ সংকেত’ দিয়েছেন। তারা বলেন, এসবের জন্যই সরকারের সঙ্গে সমঝোতায় গিয়েছি আমরা। তবে সমঝোতার কথা সবিস্তারে প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, হেফাজতের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে মৌখিক নির্দেশনা পাওয়া গেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা আছে আমাদের। হেফাজত নেতারা সরকারের অঙ্গীকার করেছে, তারা রাজনৈতিক কর্মকা- চালাবেন না। শুধু ইসলাম নিয়ে কথা বলবেন। জামায়াতে ইসলামীর কর্মকা-ের সমালেচনাও করবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারকদের আশ্বস্ত করেছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।
নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন তদন্তকারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পুলিশ সদর দপ্তর নির্দেশনা এসেছে। আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। মামলাগুলোর অনেক আসামি জামিনে আছে, কেউ কেউ জামিন ছাড়াই প্রকাশ্যে ঘুরছে। দীর্ঘদিন ধরে মামলাগুলোর নিষ্পত্তি না হওয়ায় সমালোচনাও হচ্ছে সবখানে। এগুলোর দ্রুত সুরাহা চাচ্ছি আমরাও।
সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন চলাকালে কথিত নাস্তিক ব্লগারদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল হেফাজতে ইসলাম। ওই বছরের ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ করে তারা। একপর্যায়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। সে সময় হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থকের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে যানবাহন ভাঙচুর করে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয়। সহিংসতায় হতাহতের ঘটনাও ঘটে।
২০২১ সালের মার্চ মাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসেন। তার সফরের বিরোধিতা করে মাঠে নামে হেফাজতে ইসলাম। ২৬ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ এলাকায় বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় তাদের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কিশোরগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সংঘর্ষে ১৯ জনের মৃত্যু হয় এবং পুলিশসহ সহস্রাধিক হেফাজত নেতাকর্মী আহত হয়। হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয় সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায়। এসব ঘটনায় সারা দেশে ১৫৪টি মামলা হয়। ওইসব মামলার কোনোটাতেই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি।
হেফাজত ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মাসখানেক আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা বৈঠক করেছি। বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রায় সবাই ছিলেন। বৈঠকে আমরা বলেছি, আমরা কোনো ধরনের রাজনীতি করি না। ইসলাম নিয়ে কাজ করি। একটি মহল আমাদের নামে অপবাদ দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছি, আমরা রাজনীতি করছি না, আর করবও না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেশ রূপান্তরকে বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। আমরাও চাচ্ছি মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হোক। হেফাজতের কেন্দ্রীয় এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সরকারপ্রধানের সঙ্গে আমরা গত ১৭ ডিসেম্বর বৈঠক করেছি। তাতে সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়। প্রায় ১ ঘণ্টা ১০ মিনিট বৈঠক হয়েছে। অনেক কথা হয়েছে। আমাদের শর্তও তাকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, সমঝোতা ছাড়া কোনো কিছুরই সমাধান হয় না। আমরা চাই না সরকারের সঙ্গে আমাদের ভুল বোঝাবুঝি হোক। আমরা কথা বলেছি। সরকারপ্রধান ইতিবাচক হিসেবে বিষয়টি আমলে নিয়েছেন।
রাজপথে খালি পায়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত উঁচিয়ে স্লোগান দিচ্ছে এক পথশিশু। পেছনে বিক্ষুব্ধ মিছিল। শিশুটির পরনে চার পকেটের হাফপ্যান্ট; গেঞ্জিটা কোমরে বাঁধা। কণ্ঠে স্বৈরতন্ত্রের কবর রচনার হুঙ্কার। দৃঢ় চোয়ালে অগ্নিস্পর্ধী সাহসিকতার বহিঃপ্রকাশ। পাঁজরগুলো যেন শরীরের ভেতর থেকে তীরের ফলার মতো বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। মিছিলের অগ্রভাগে থাকা অপ্রতিরোধ্য শিশুটি সেদিন সবার নজর কাড়ে। ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সকালে বাংলাদেশের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলনের এ প্রতিবাদী মুহূর্তটি ক্যামেরায় বন্দি করেছিলেন প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদার।
সেই সময়ে দৈনিক সংবাদের নিজস্ব সংবাদচিত্রী ছিলেন তিনি। ছবিটি ফ্রেমবন্দি করে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি ইতিহাসের মূর্ত সাক্ষীর আলোকচিত্রী। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের আইকনিক আলোকচিত্র হিসেবে ইতিহাসের অংশ হয়ে ওঠে এ ছবি। ছবিটি আমাদের সংগ্রামী অতীতকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এর কেন্দ্রীয় চরিত্র শিশুটির চোখ-মুখের ভাষা মানুষকে মনে করিয়ে দেয় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর নিপীড়নের কথা। ছবিটির দৃশ্য-ভাষা এতই শক্তিশালী যে, এখনো মানুষের মনে শিহরন জাগায়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আহ্বান জানায়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট : ছাত্রসমাজের ১১ দফা মুক্তিসনদকে সামনে নিয়ে ঊনসত্তরের ২০ জানুয়ারি দাবানলের মতো জ্বলে উঠে পূর্ব বাংলা ও তার রাজধানী ঢাকা। এর ধারাবাহিকতায় ২৪ জানুয়ারি কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে ঢাকার রাজপথে নামে জনতার ঢল। বঙ্গোপসাগরের উত্তাল তরঙ্গমালাকেও ম্লান করে দেয় সেদিনের জনসমুদ্রের বিক্ষুব্ধ ঊর্মিদল। অধিকার-সচেতন জনতার হুঙ্কারে কেঁপে ওঠে অত্যাচারীর আসন। সেই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য গর্জে উঠে স্বৈরাচারের বন্দুক। বুলেটের আঘাতে রাজপথে ঝরে পড়ে কয়েকটি প্রাণ। শহীদের লাশ নিয়ে রাজপথে মিছিলের ঢল নামে। রাত ৮টায় কারফিউ জারির মাধ্যমে জনতাকে নিবৃত্ত করার সর্বশেষ প্রয়াসকে ব্যর্থ করে দিয়ে রাতের নৈঃশব্দ্যকে প্রকম্পিত করে মুক্তিপাগল জনতা। এর কয়েক দিন পর জনতার অদম্য আন্দোলনের মুখে অত্যাচারী সরকারকে পালাতে হয়। সমাধি রচিত হয় আইয়ুব-মোনায়েমের রাজত্বের।
সেদিন ছিল আধাবেলা হরতাল। ঢাকায় সেক্রেটারিয়েটের ভেতর থেকে পুলিশ দুই দফা গুলিবর্ষণ করে। প্রথম দফা গুলিবর্ষণ সকাল ১১টা ৫ মিনিটে। দুপুরে দ্বিতীয় দফা। গুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় নবকুমার ইনস্টিটিউশনের নবম শ্রেণির ছাত্র মতিউর রহমান মল্লিক ও নোয়াখালীর নান্দিয়াপাড়া হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সৈয়দ রুস্তম আলী। প্রেস ট্রাস্ট অফিসের সামনে পুলিশের গুলিতে আরও একজন নিহত হয়। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ-ইপিআরের গুলিবর্ষণ ও লাঠিচার্জে আহত হয় ২১ জন। পরদিন সব দৈনিক পত্রিকা হতাহতদের নাম, বাবার নাম, বয়স, পেশা, কার-কোথায় গুলি লেগেছে, কীভাবে ঘটনা ঘটেছে তার বিস্তারিত বিবরণ ছাপায়। বেশিরভাগ পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় শহীদ মতিউর ও রুস্তমের মৃত মুখের ছবি ছাপা হয়। সেদিন কোনো পত্রিকায় কোনো পথশিশুর মৃত্যুর খবর ছাপা হয়নি।
আইকনিক ফটো : রশীদ তালুকদারের তোলা পথশিশুর ছবিটি প্রথম ছাপা হয় ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি দৈনিক সংবাদের বিশেষ ক্রোড়পত্রে। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি ঊনসত্তরের ঐতিহাসিক ঘটনার লেখনীর সঙ্গে ছবিটি দৈনিক সংবাদ প্রকাশ করে। রশীদ তালুকদার ১৯৭৫ সালে সংবাদ ছেড়ে ইত্তেফাকে যোগদান দেন। এরপর ইত্তেফাকও ছবিটি প্রতি বছর প্রকাশ করে। অনেক দিন এ ছবির নেপথ্য ঘটনার অনুসন্ধান হয়নি। কোনো পত্রিকায় ছবিটি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন, ফিচার, প্রবন্ধ-নিবন্ধও লেখা হয়নি। রশীদ তালুকদারও এই ছবি সম্পর্কে কোথাও কিছু লিখে যাননি। দীর্ঘ ৫৪ বছর শিশুটির কথা অজানাই রয়ে গেছে। খোঁজ মেলেনি বলে সবাই ধরে নিয়েছে শিশুটি সেদিন বুলেটবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তার ভেরিফায়েড ফেইসবুক পেজে শিশুটির পরিচয় তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটির নাম মো. হোসেন আলী। সেই সূত্রেই পাওয়া যায় হোসেন আলীর খোঁজ।
হোসেন আলীর কথা : ৬৪ বছর বয়সী হোসেন আলী বলেছেন, মিছিলের অগ্রভাগে থাকা শিশুটি তিনিই। তার বক্তব্য, ‘ঊনসত্তরে আমার বয়স আছিল দশ বছর। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমারে ডাকতেন পালোয়ান বইলা। ওই দিন জগন্নাথ কলেজের দিক থাইক্যা ছাত্রলীগের একটা মিছিল আইতেছিল। আমি তখন ফুলবাড়িয়া ইস্টিশনে থাকি। “জেলের তালা ভাঙবো, মুজিব ভাইকে আনবো” স্লোগান শুইন্যা আমিও যোগ দিলাম ওই মিছিলে। মিছিলে আমার মতো কয়েকটি শিশুও আছিল। রেগওলা (স্ট্রাইপ) হাফশার্ট গায়ে ছেলেডা আমার পেছনে আছিল। মিছিল পলাশী ব্যারাক হইয়া শাহবাগের দিকে আইলো। আমি কিন্তু মিছিলের সামনে। গরমে ঘামাইয়া গেছি। তাই গেঞ্জিটা খুইলা কোমরে বাঁধলাম। শাহবাগের সামনে আইসা দেখি, রেডিও অফিসের সামনে ইপিআর পজিশন লইয়া আছে। দুইবার মাইকিং করছে “চল যাও, চল যাও”। কে কার কথা শুনে? আমি জয় বাংলা বলে স্লোগান দিচ্ছি। তিন-চারজন ছবি তুলতাছে। তিনবার বলার পর দেখি বন্দুক রেডি করতাছে। সাথে সাথে একটা গুলির আওয়াজ পাইলাম। দৌড়াইয়া তারের ঘের দেওয়া রেসকোর্স ময়দানে ঢুকলাম। এরপর মন্দির, হাইকোর্ট, সেক্রেটারিয়েট হয়ে জিন্নাহ অ্যাভিনিউর রুচিতা হোটেলে আইলাম। কাঙালি হিসেবে আমারে তখন জিন্নাহ অ্যাভিনিউর অনেকে চিনতো। একদিন কয়েকজন আমারে পত্রিকার ছবি দেখাইয়া কইলো ‘তোরে তো পাঞ্জাবিরা মাইরালাইবো।’
হোসেন আলী বলেন, ‘আমি বহুদিন বহু লোকরে কইছি ওই শিশুটা আমি। আমি তো কাঙাল মানুষ, তাই আমার কথা কেউ শোনে না, পাত্তা দেয় না। আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোজাফ্ফর হোসেন পল্টু, বঙ্গবন্ধুর বডিগার্ড মহিউদ্দীন ভাই তো এখনো বাঁইচা আছে। আমারে তাগো কাছে লইয়া যান।’ বুকে একটা কালো দাগ দেখিয়ে বললেন, ‘আসল ছবিটার সঙ্গে মিলাইয়া দ্যাখেন। সবকিছু পরিষ্কার হইয়া যাইবো।’ হোসেন আলীর ছেলে উজ্জ্বল হোসেন বাবু বলেন, ‘ছোটবেলা বেলা থেকে বাবার মুখে এই কথা শুনে শুনে বড় হয়েছি। বাবার চুলের শেপটা দেখেন, মিল পাবেন।’
হোসেন আলীর গ্রামের বাড়ি নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার চান্দেরকান্দিতে। মফিজ উদ্দিন ও ফাতেমা বেগমের একমাত্র সন্তান তিনি। পথশিশু পরিচয়ে শৈশব কাটে ফুলবাড়িয়া টার্মিনালে। মুক্তিযুদ্ধের সময় থাকতেন আওয়ামী লীগ অফিসের নিচে। ৭৭ সালে ২২ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শুরু করেন টোকানো কাগজের ব্যবসা। আটাশির বন্যায় দোকান তলিয়ে গেলে আবার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। অনেক দিন রিকশা চালিয়েছেন। এখন আট হাজার টাকা বেতনে নৈশপ্রহরীর চাকরি নিয়েছেন। তিন মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। বেকার ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন মান্ডার কদমতলী এলাকার ঝিলপাড়ে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে : ছবিটি কেমন করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে সেই গল্প বলেন ভারতের পদ্মশ্রী খেতাবপ্রাপ্ত আলোকচিত্রী টি কাশীনাথ। বাহাত্তরে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ফেয়ারে অংশ নেয় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে গণঅভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের ছবির নেগেটিভগুলো ফটোসাংবাদিকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দিল্লিতে যান ফটোসাংবাদিক মোহাম্মদ জহিরুল হক। বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে একটি চিঠি লিখে দেন। জহিরুল হক সেই চিঠি পৌঁছান ভারতের তৎকালীন তথ্যমন্ত্রীর হাতে। তথ্যমন্ত্রী ফটোগ্রাফি বিভাগের পরিচালক টি কাশীনাথকে ডেকে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করতে বলেন। কাশীনাথের তত্ত্বাবধানে ২০ ফুট বাই ৩০ ফুট সাইজে ছবিগুলো পরিবর্ধিত (এনলার্জ) করা হয়। রশীদ তালুকদারের তোলা ঊনসত্তরের পথশিশুর ছবি ও বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ছবিটি প্রদর্শন করা হয় স্টলের প্রবেশমুখে। ছবি দুটি দেখার জন্য মেলায় আসা লোকজন হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বাংলাদেশের স্টলের সামনের ভিড় সরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করতেও বাধ্য হয়। বাংলাদেশের শিল্পকলার এই চমকপদ তথ্যটি অনেক দিন এ দেশের মানুষের অজানা ছিল। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) রিসোর্স পারসন হিসেবে টি কাশীনাথ বাংলাদেশে এসে এ গল্পটি করেন।
নীরব অভিমান : ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোতে প্রথিতযশা আলোকচিত্রী রশীদ তালুকদারের তোলা ছবিগুলো আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। ১৯৫৯ সালে রশীদ তালুকদারের কর্মজীবন শুরু। বাষট্টিতে দৈনিক সংবাদে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করার আগে তিন বছর ৮০ টাকা বেতনে ফটো টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন পিআইডিতে। সংবাদে কাজ করেছেন টানা ১৩ বছর। এরপর তিনি যোগ দেন দৈনিক ইত্তেফাকে। বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ও গণহত্যার ঘটনা প্রভৃতির অসংখ্য ছবি তুলে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটির অল রোভস প্রোগ্রামে প্রতি বছর বিশ্বের একজন সেরা ফটোসাংবাদিককে পাইওনিয়ার ফটোগ্রাফার অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ২০১০ সালে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এ পদক পান রশীদ তালুকদার। তার তোলা ছবি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া এনসাইক্লোপিডিয়ায় যুক্ত হয়েছে। এত কিছুর পরও আমাদের রাষ্ট্র তাকে ঠিক বুঝে উঠতে সক্ষম হয়নি। রাষ্ট্রের অন্যমনস্কতায় নীরব অভিমানে ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর ৭২ বছর বয়সে পরলোকে চলে গেলেন বাংলাদেশের ইতিহাস নির্মাণকালের এই রূপকার।
লেখক : দেশ রূপান্তরের আলোকচিত্র সম্পাদক
নাগরিকত্ব বিষয়ক জটিলতার জেরে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে দেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ ও পার্লামেন্টে আসন হারিয়েছেন নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী রবি লামিছানে। শুক্রবারের রায়ে আদালত জানিয়েছে, এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকত্বও নেই তার।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র বিমল পৌদেল বার্তা সংস্থা এএফপিকে এ সম্পর্কে বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চের রায় অনুযায়ী, ২০২২ সালের জাতীয় নির্বাচনে নাগরিকত্ব বিষয়ক আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে রবি লামিছানের বিরুদ্ধে। এ কারণে এখন থেকে আর পার্লামেন্টের সদস্য নন তিনি।’
নেপালের এক সময়ের জনপ্রিয় টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব রবি লামিছানে দেশটির রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ইনডিপেনডেন্ট পার্টির শীর্ষ নেতা। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর নেপালের পার্লামেন্ট প্রতিনিধিসভার নির্বাচনে তার দল ২০টি আসনে জয়ী হয়েছে। তারপর গত ডিসেম্বরে ক্ষমতাসীন জোট সরকারে নিজের দলসহ যোগ দিয়ে নেপালের উপপ্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হন লামিছান।
যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিত্ব ছিল লামিছানের; কিন্তু নেপালের সংবিধানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় ২০১৮ সালে মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। শুক্রবারের রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নিয়ম অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর নেপালের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার কথা ছিল লামিছানের; কিন্তু তা করেননি তিনি। ফলে এই মুহূর্তে নেপালের নাগরিকও নন লামিছান। এদিকে, শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর লামিছানের প্রতিক্রিয়া জানতে তার মন্ত্রণালয়ের দপ্তরে গিয়েছিলেন সাংবাদিকরা; কিন্তু লামিছানে তাদের বলেন, ‘যেহেতু এই মুহূর্তে আমি কোনো দেশেরই নাগরিক নই, তাই আদালতের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো মন্তব্য করা আমার পক্ষে উচিত নয়, সম্ভবও নয়।’