
দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে স্কাউট প্রশিক্ষণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘আমার লক্ষ্য থাকবে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন স্কাউট প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়। সেই ব্যবস্থাটা নিতে হবে। তাহলেই আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সোনার বাংলা গড়া বা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার উপযুক্ত নাগরিক তৈরি হবে।’
গতকাল বুধবার সকালে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাকে ৩২তম এশিয়া প্যাসিফিক ও একাদশ জাতীয় স্কাউট জাম্বুরির সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন ২২ লাখ সদস্য আছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ লাখ স্কাউট সদস্য করা হবে। আমি চাই, আমাদের দেশটা আরও চমৎকারভাবে গড়ে উঠুক। যেখানে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এগুলোর কোনো স্থান হবে না। সাম্প্রদায়িকতা বা সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত থাকবে। আজকের শিশু যারা বড় হবে, তারা উদার মন নিয়ে বড় হবে। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। দেশকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং গঠন করার কাজ করবে।’
প্রধানমন্ত্রী স্কাউট ও স্কাউটারদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে সুপ্ত আছে আমাদের ভবিষ্য রাজনৈতিক নেতা, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, অর্থনীতিবিদ, প্রকৌশলী, কবি, সাহিত্যিক, প্রশাসক, শিক্ষক ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য। যারা দেশের সেবা করছে। তোমাদের মাঝ থেকেই সবাই উঠে আসবে। তোমাদের জ্ঞান, তোমাদের চেতনা, তোমরাই তো পারবে এ দেশকে আগামী দিনে এগিয়ে নিয়ে যেতে এবং তোমাদের মাঝ থেকে সেই নেতৃত্ব গড়ে উঠবে, আমি সেই আশা করি।’
এর আগে অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছালে বাংলাদেশ স্কাউটের প্রধান জাতীয় কমিশনার ও জাম্বুরির সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি ড. মো. মোজাম্মেল হক খান এবং বাংলাদেশ স্কাউটের সভাপতি মো. আবুল কালাম আজাদ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। পরে তাকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জ্ঞাপন, স্কার্ফ, ব্যাচ ও ওয়াগল প্রদান করা হয়। এ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্তকরণ, শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড বিতরণ ও এপিআর স্কাউট পতাকা হস্তান্তর করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারক প্রদান করা হয়। পরে তিনি স্কাউট সদস্যদের পরিবেশিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ‘২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি। এ সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনকালীন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের মার্যাদা পেয়েছে। এখানেই থেমে থাকলে চলবে না, বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজকের যে বাংলাদেশ ২০২২ সালে এসে আমরা দেখছি, তা কিন্তু এ রকম ছিল না, প্রতিনিয়ত সংঘাত, খুনোখুনি, অগ্নিসন্ত্রাস, দুর্নীতি, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা, নির্বাচন নিয়ে খেলা, নানা ঘাত-প্রতিঘাত আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। কাজেই আমি চাই আমাদের দেশের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত থাকুক। যেখানে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এদের কোনো স্থান থাকবে না। সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত থাকবে।’
শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘স্কাউটিং নতুন প্রজন্মকে নৈতিক ও জীবনধর্মী প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, আর তরুণদের মধ্যে আধুনিক, প্রগতিশীল, সৃজনশীল গুণাবলি বিকশিত হয়। ফলে স্কাউট সদস্যরা সেবার মন্ত্রে দীক্ষিত হচ্ছে এবং সচেতন ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলছে। তাই আমি চাই, স্কাউট আরও ব্যাপকভাবে গড়ে উঠুক।’
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সিমিন হোসেন রিমি এমপি, রুমানা আলী টুসি এমপি, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম, গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলমসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
দেশের স্কাউটকে শক্তিশালী করতে সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্কাউট আন্দোলনকে শক্তিশালী করতে আমরা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ স্কাউট সম্প্রসারণে স্কাউট শতাব্দী ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৪৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সিলেটের মৌলভীবাজার জেলায় স্কাউট ভবন নির্মাণ প্রকল্প, ৪৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে আঞ্চলিক স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র লালমাই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাব স্কাউটিং সম্প্রসারণে চতুর্থ পর্যায়ের প্রকল্পের বাস্তবায়ন হচ্ছে। আমরা ৩৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কাব দল গঠন এবং কাব স্কাউট প্রশিক্ষণের জন্য জাতীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র মৌচাকে ৯ একর ভূমি বরাদ্দ দিয়েছি। তবে এ ভূমিতে বনায়ন ঠিক রাখতে হবে। এ ভূমিতে বনায়ন ধ্বংস করা যাবে না, বেশি স্থাপনা করা যাবে না।’
ডিজিটাল বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড লাইন এবং স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি, ব্রডব্যান্ড লাইন আমরা গোটা দেশে ছড়িয়ে দিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষকে বিভিন্ন প্রযুক্তির শিক্ষা গ্রহণে উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা ইতিমধ্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্টস্ রোবটিক, ন্যানো টেকনোলজি এসব বিষয়ে যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে তার ব্যবস্থা নিয়েছি, জিডিটাল ডিভাইস যাতে ব্যবহার করতে পারে, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিতে পারে, সে জন্য কম্পিউটার ল্যাব প্রতিটি স্কুলে করে দিচ্ছি। তা ছাড়া ইকো পার্ক, হাইটেক পার্ক, ইনকিউবেশন সেন্টার বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় করে দিয়েছি, যাতে ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে আরও প্রশিক্ষণ নিতে পারে এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের গড়ে তুলেতে পারে।’
রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে যানবাহন ও যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ১১৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। অপরিকল্পিতাভাবে রেট শিডিউল দিয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার পর দেখা গেল ঠিকাদারের দেওয়া দর প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা কম। এর পুরোটাই বেঁচে গেছে। দেশের এ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও বেঁচে যাওয়া এই অর্থ ফেরত দিতে নারাজ রংপুর সিটি করপোরেশন। এ টাকা দিয়ে তারা নতুন যন্ত্রপাতি কিনতে চায়। এজন্য পরিকল্পনা কমিশনে আবেদনও করেছে তারা।
অবশ্য সংকটের এ সময়ে মন্ত্রণালয় অনুমোদন না দিলে নির্দিষ্ট কাজের মধ্যেই থাকবেন বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।
‘রংপুর সিটি করপোরেশনের জন্য যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদন পায় ২০২০ সালের শুরুতেই। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি মাত্র ৫০ শতাংশ। এ জন্য প্রকল্পের ব্যয় ৫ লাখ টাকা কমিয়ে আরও এক বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে রংপুর সিটি করপোরেশন।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশনের যন্ত্রপাতি কেনার প্রকল্পটিতে ঠিকাদারদের সঙ্গে যে চুক্তিমূল্য তা প্রকল্প প্রস্তাবে দেওয়া মূল্যের চেয়ে অনেক কম। ফলে বেঁচে গেছে ১২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। তবে তা মন্ত্রণালয়ে ফেরত না দিয়ে আরও ৯টি নতুন যন্ত্রপাতি কেনার আবেদন করেছে তারা। একইসঙ্গে ৫ লাখ ২১ হাজার টাকা ব্যয় কমিয়ে এক বছর সময় বাড়ানোর প্রথম সংশোধনী প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশে ঠিকাদার বা মন্ত্রণালয়গুলোর প্রকল্পে বেঁচে যাওয়া অর্থ ফেরত দেওয়ার তেমন একটা নজির নেই। তবে নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৭ মাস আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দির দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার উদাহরণ তৈরি করেছিল জাপানের তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালে এ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো মোট ৭৩৮ কোটি টাকা সরকারকে ফেরত দেওয়ার নজির রেখেছিল।
রংপুর সিটির বেঁচে যাওয়া অর্থ ফেরত না দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. আবু তালেব সরকার গতকাল বুধবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা যে টেন্ডার দিয়েছিলাম তাতে অর্থ ব্যয় কম হয়েছিল। সাচিবিক দপ্তর থেকে বলা হয়েছে এ টাকা ফেরত দেওয়া যাবে না, কারণ আমাদের যন্ত্রপাতির দরকার আছে। আমাদের বলা হয়েছে, প্রকল্পের সংশোধনী দিয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠান, যদি অনুমোদন হয় তবে পরবর্তী ব্যবস্থা। আর যদি অনুমোদন না হয়, তাহলে মূল প্রকল্প প্রস্তাবে যেভাবে আছে সে আলোকেই কাজ শেষ করা হবে।’
প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারকে যথারীতি ওয়ার্কঅর্ডার (কার্যাদেশ) দিয়েছিলাম, কিন্তু সে সময় তাদের কাছে ডলার সংকট থাকায় তারা ঠিক সময়ে ঋণপত্র খুলতে পারেনি। পরবর্তী সময়ে আবার কভিড মহামারীর কারণেও দেরি হয়েছে। আর ভৌত অগ্রগতি ৫০ শতাংশ হলেও, আর্থিক অগ্রগতি অনেক কম। নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এ সিটিতে, উনি খুব শিগগিরই অর্থছাড় করবেন বলে আশা করছি।’
অর্থনৈতিক এ সংকটের সময়ে নতুন যন্ত্রপাতি আমদানি করার যৌক্তিকতা কী? এ প্রশ্নের জবাবে আবু তালেব সরকার বলেন, ‘আমাদের কাছে লেস মানি (অব্যয়িত অর্থ) ছিল, সেজন্য তা ফেরত না দিয়ে নতুন করে যন্ত্রপাতি কেনার আবেদন করেছি। মন্ত্রণালয় অনুমোদন না দিলে কিছু করার নেই।’
প্রকল্পটির মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের যানবাহন ও যান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণ, সড়ক ও নর্দমা উন্নয়ন, সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যবস্থাকে দক্ষ ও কার্যকরকরণ, বর্জ্য পরিবহনের দক্ষতা বাড়ানো ও বর্গা ব্যবস্থাপনা সহজতরকরণ এবং পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটির সংশোধন প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য স্টিয়ারিং কমিটির সভায় পেশ করা হয়েছে।
সভায় প্রকল্প সংশোধনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে জানানো হয়, প্রাক্কলিত ব্যয়ের অব্যয়িত অর্থ দিয়ে নতুন খাত যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২টি স্কিড স্টিয়ার লোডার খাতে ২ কোটি ৪০ লাখ, ২টি হাইড্রোলিক বিম লিফটার খাতে ৩ কোটি ২০ লাখ, ২টি সার্চলাইট উইথ জেনারেটর ক্যারি অন দি ট্রাক চ্যাসিস মাউন্টেড ২ কোটি ৬০ লাখ, ১টি হুইল লোডার ৩ কোটি এবং ২টি মিনি ভাইব্রেটর রোলার খাতে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় সার্বিকভাবে ৫ লাখ ২১ হাজার টাকা কমেছে।
নতুন এ ৯টি যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাবের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলছেন, এতে প্রকল্পের উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হবে এবং প্রকল্পের মোট অনুমোদিত প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে প্রস্তাবিত সংশোধিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) খাতভিত্তিক ব্যয় এবং নতুন যন্ত্রপাতি কেনার যৌক্তিকতাসহ প্রকল্প সংশোধনের কারণ সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে বলেছে কমিশন।
মূল প্রকল্প প্রস্তাব ঘেঁটে জানা গেছে, রাস্তা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে রংপুর সিটি করপোরেশনের জন্য যানবাহন ও যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রকল্প হাতে নিয়েছিল পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
২০১০ সালে বিভাগ ঘোষণার পর ২০১২ সালের ২৮ জুন রংপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এই সিটির রাস্তাঘাট, ড্রেন ও ফুটপাতের অবস্থা খুবই খারাপ। এছাড়া বর্জ্য ও পয়ঃবর্জ্য ব্যবস্থাপনাও নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এরমধ্যে একটি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু রাস্তার উন্নয়ন করা হয়েছে এবং সম্প্রতি অনুমোদিত অন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বেশ কিছু রাস্তা, ফুটপাত ও ড্রেনের উন্নয়ন করা হচ্ছে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে একটি অ্যাসফল্ট মিক্সিং প্ল্যান্ট, দুটি রেডি মিক্স কংক্রিট ক্যারিয়ার, একটি পেভার ফিনিশার, একটি মোটর গ্রেডার, দুটি এক্সাভেটর, একটি ভেকুয়াম সেপটিক ট্যাংক ক্লিনার, ১০টি গারবেজ, একটি ড্রেন ক্লিনিং জেট অ্যান্ড সাকার মেশিন এবং টায়ার রোড রোলার করা হবে।
পাট ও পাটজাত পণ্যের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা খালেদা সুলতানা যখন কথা বলছিলেন, তখন খুশিতে তার চোখ-মুখ ঝলমল করছিল। বললেন, ‘আমাদের তৈরি পাটের পণ্য নিউইয়র্কে যাবে। এটি আমাদের জন্য দারুণ একটি সুযোগ। সেখানে সরাসরি মেলায় উপস্থিত থাকব। এক অন্য রকম মুহূর্ত হবে আমাদের জন্য।’ শুধু খালেদা নন, অনেক ত্যাগ আর কষ্টে স্বপ্নপূরণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছানোর কথা শোনালেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা প্রতিমা চক্রবর্তী, সামিউন নাহার, হাকিম আলী সরদার। তারা জানালেন নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা, লড়াই আর সংগ্রামের গল্প। সবার কণ্ঠে একই সুর, পাট ও প্রাকৃতিক আঁশ জাতীয় পণ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করে তোলা। কিছুদিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের তৈরি পাট ও প্রাকৃতিক আঁশ থেকে উৎপাদিত পণ্য। আগামী ৫ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্ক সিটিতে ‘এনওয়াই নাও উইন্টার শো’ নামে বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের ১৪টি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য প্রদর্শন করা হবে। এতে সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসআইডি), কানাডার ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অফিস (টিএফও) এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত অবহিত করতে গতকাল বুধবার রাজধানীর গুলশান-২-এর একটি হোটেলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস, এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মফিজুর রহমান, ইউএসএআইডির ইকোনমিক গ্রোথ অফিসের ভারপ্রাপ্ত অফিস পরিচালক জোসেফ লিজার্ড, ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ হর্টিকালচার অ্যাকটিভিটির উপদেষ্টা আনোয়ার ফারুকসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা।
তবে আমিন্ত্রত অতিথিদের অনেকের কণ্ঠে দুঃখবোধও ঝরেছে। তারা বলেন, একসময় পাটকে বলা হতো বাংলাদেশের সোনালি আঁশ। কিন্তু এখন আর পাটকে সোনালি আঁশ বলে না। উদ্যোক্তারা বললেন, পাটের সেই সুসময়টি তারা আবারও দেখতে চান। দেখাতে চান বিশ্ববাসীকে।
এই উদ্যোগের সহযোগীরা বলেন, পাটজাত পণ্য পরিবেশবান্ধব ও আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা ক্রমবর্ধমান। বাংলাদেশে প্রচুর পাট উৎপাদন হলেও পাটজাত পণ্য প্রস্তুতকারকদের মধ্যে বৈশি^ক বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও এর প্রয়োগের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। একই সঙ্গে পাটের উৎপাদনও কমছে। ফলে অনেক এসএমই উদ্যোক্তা পাটভিত্তিক পণ্য উৎপাদন করলেও বিশ^বাজারে তাদের প্রবেশাধিকার সীমিত। বাংলাদেশ হর্টিকালচার অ্যাকটিভিটির এই উদ্যোগের মাধ্যমে স্থানীয় এসএমই প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক বাজার উপযোগী পণ্য দেখার, এ-সম্পর্কে শেখার এবং পণ্যের ডিজাইন করা ছাড়াও আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরমে বাংলাদেশি পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ পাবেন। এটি হবে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় পাওয়া।
কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন উন্নতির দিকে যাচ্ছে। এ দেশের পার্টের তৈরি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে। এটি এ দেশের অর্থনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করছে। বহির্বিশে^ বাংলাদেশকে আরও ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে এটি ভূমিকা রাখবে এবং এটি একটি চমৎকার সুযোগ বলে মনে করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে এই আয়োজনে সহযোগিতা করছে। এর অংশীদার হতে পেরে আমরা গর্বিত।’
এসএমই ফাউন্ডেশনের এমডি মফিজুর রহমান বলেন, ‘এটি একটি নতুন যাত্রার শুরু। এই উদ্যোগের অংশ হতে পেরে আমরা খুবই খুশি। আমার মনে হয়, এটি বাংলাদেশের ভিতকে আরও সবল করবে এবং এ দেশকে আরও ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবে। এ দেশের পরিচিতি বাড়াবে। আমাদের এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ^ব্যাপী এ রকম ট্রেড শোতে আমরা দেখতে চাই। এ জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।’
জোসেফ লিজার্ড বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পাটপণ্য যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় যাচ্ছে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এই উদ্যোগ বাংলাদেশের বাজারব্যবস্থাকে আরও সুসংহত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি আশা করি, এই উদ্যোগের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, ফিড দ্য ফিউচার বাংলাদেশ হর্টিকালচার অ্যাকটিভিটি, কানাডার টিএফও ও এসএমই ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ যৌথভাবে আয়োজিত ‘কানাডিয়ান অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট অ্যাকসেস ফর দ্য এসএমই’ শীর্ষক তিন দিনব্যাপী রপ্তানি প্রস্তুতি কর্মশালার মাধ্যমে এই উদ্যোগের সূত্রপাত। পাটজাত পণ্য খাতের ৩৪টি এসএমই প্রতিষ্ঠান এই কর্মশালায় অংশ গ্রহণ করে। এর মধ্যে ১৪টিকে নিউইয়র্কে শীতকালীন বাণিজ্য প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এগুলো হলো এসিক্স ইন্টারন্যাশনাল, আদর্শলিপি, ডিজাইন বাই রুবিনা, গোল্ডেন জুট প্রোডাক্ট, জারম্যাটস লিমিটেড, জুট ল্যান্ড বাংলাদেশ, জুট মার্ট অ্যান্ড ক্রাফট, জুট মার্ট ইন্টারন্যাশনাল, কারুযোগ, প্রকৃতি, সামিস ওয়ার্ল্ড, সুতার কাব্য লিমিটেড, দ্য জুট ফাইবার বিডি এবং তুলিকা ইকো। নিউইয়র্কের মেলায় এসব প্রতিষ্ঠানের তৈরি পাটের হ্যান্ড ব্যাগ, ম্যাট, অন্যান্য ফ্যাশন পণ্যসহ বাড়ির সাজসজ্জা ও উপহারসামগ্রী প্রদর্শন করা হবে।
যে ১৪টি প্রতিষ্ঠান নিউইয়র্কের মেলায় অংশ নিতে যাচ্ছে, তাদের কয়েকটি গতকাল অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল।
সামিস ওয়ার্ল্ডের স্বত্বাধিকারী সামিউন নাহার বলেন, ‘বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যকে পরিচিত করতে আমাদের অফুরান চেষ্টা থাকবে। এ ধরনের সুযোগ আমাদের জন্য বিশাল প্রাপ্তি।’ জুট মার্ট অ্যান্ড ক্রাফটের প্রধান নির্বাহী খালেদা সুলতানা বলেন, ‘সহযোগীদের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, এই উদ্যোগ যেন শুধু এ বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। আমরা প্রতি বছরই যেন দেশের এই পণ্যকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে পারি।’ গোল্ডেন জুট প্রডাক্টের স্বত্বাধিকারী হাকিম আলী সরদার বলেন, ‘দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে, অনেক কষ্ট করে এ পর্যন্ত এসেছি। এখন আমার প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য মানুষ কাজ করে। এখন আমরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছি। এটি অবশ্যই গর্বের।’ জুট ল্যান্ড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রতিমা চক্রবর্তী বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য হবে একটি বিরল মুহূর্ত। বাংলাদেশের পাটশিল্পকে আমরা তুলে ধরতে চাই।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা আজ বৃহস্পতিবার। বিদ্যা, জ্ঞান, কলা ও শুদ্ধতার প্রতীক হিসেবে দেবী সরস্বতীর পূজা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
সনাতন শাস্ত্রমতে, চতুর্ভূজা ব্রহ্মার মুখ থেকে আভির্ভূতা শুভ্রবর্ণা বীনাধারিণী চন্দ্রের শোভাযুক্ত দেবীই হলেন সরস্বতী। বাংলা বর্ষের মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজার আয়োজন করা হয়। এ তিথি শ্রী পঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী নামে পরিচিত।
আজ সরস্বতী দেবীর পূজা, আরাধনা করে তার চরণে পুষ্পাঞ্জলী দেবেন ভক্তরা। অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে দূর করে আলোর পথ দেখাতে কল্যাণময়ী দেবীর পাদপদ্মে প্রণতি জানাবেন তারা। রাজধানীসহ সারদেশে মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্টানসহ পাড়া মহল্লায় অস্থায়ী মন্ডপে মহাসমারোহে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মন্দির ও ম-পগুলোকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।
সরস্বতী পূজায় অভ্র, আবীর, আমের মুকুল, দোয়াত কলম যবের শিষ এসব উপাচারের প্রয়োজন হয়। পূজার দিনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃতর্পণ (পূর্ব পুরুষদের স্মরণ করা) করা হবে। প্রত্যুষে পূজার্চ্চনা, আরাধানা, পুষ্পাঞ্জলী অনুষ্টিত হবে। এছাড়া দিনব্যাপী প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা আরতি ও আলোকসজ্জার আয়োজন করা হয়েছে। রাজধানীর ঢাকেশ^রী জাতীয় মন্দিরে নানা আয়োজনে সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছে ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি।
রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ, রমনা কালি মন্দির, সুপ্রিম কোর্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাষ্টিক সার্জারি ইনষ্টিটিউট, বিভিন্ন মন্দির ও অস্থায়ী মন্ডপে এ পুজার আয়োজন করা হয়েছে।
সরস্বতী পূজা উপলক্ষে আজ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে অবকাশ থাকবে বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সারা দেশে মহাসমারোহে সরস্বতী পূজা উদপাপিত হচ্ছে। নির্বিঘেœ পূজা আয়োজনে নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করতে প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।’
কোরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে রেকর্ড হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ২০২২ সালে ৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২১ সালের তুলনায় এটি ৩৮ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি।
গতকাল বুধবার ঢাকায় কোরিয়ান দূতাবাস কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যান সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
২০২১ সালে দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১০৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার, ২০২২ সাল শেষে ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬৭ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বেশি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউন বলেন, ২০২৩ সাল কোরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী।
কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যানমতে, কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ২২ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে ৬৭ কোটি ৮০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ থেকে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো ১০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। ২০১১ সালে ২০ কোটি ডলার এবং ২০১৩ সালে ৩০ কোটি ডলারে পৌঁছেছিল।
২০২১ সালে কোরিয়ার পণ্য বাংলাদেশে আমদানি করার আর্থিক পরিমাণ ছিল ১৬৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০২২ সালে তা বেড়ে ২৩৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার হয়েছে। এক বছরের ব্যবধানে কোরিয়া বাংলাদেশে ৪৪ দশমিক ১ শতাংশ বেশি রপ্তানি করেছে।
কোরিয়াতে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি আইটেমের মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, খেলাধুলার সরঞ্জাম ও অবকাশযাপনের সামগ্রী, ব্রোঞ্জস্ক্র্যাপ প্রভৃতি। দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ৮৩ দশমিক ২ শতাংশই তৈরি পোশাক। পোশাক রপ্তানিতে ২০২২ সালে ৫৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের রেকর্ড হয়েছে। এক বছরে বেড়েছে ২৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এ ছাড়া কাগজপণ্য এবং খাদ্যপণ্যের রপ্তানি যথাক্রমে ১৬৮ দশমিক ৬ শতাংশ ও ১৬৫ শতাংশ বেড়েছে। ব্রোঞ্জস্ক্র্যাপের রপ্তানি ১ কোটি ৭৭ লাখ ডলার।
বাংলাদেশে কোরিয়ার রপ্তানি ২০১১ সালে ছিল ১৬৩ কোটি ডলার। প্রায় এক দশক ধরে ১২০ কোটি ডলারে সীমাবদ্ধ ছিল। ২০২০ সালে কভিড মহামারী চলাকালে এটি নিম্নমুখী হয়ে ১০৩ কোটি ডলারে নেমে যায়। এক দশক স্থবিরতার পর ২০২১ সালে রপ্তানি আবার ১৬৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারে এসে পৌঁছায়। ২০২২ সালে রপ্তানি ২৩৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার বেড়ে রেকর্ড গড়েছে।
২০২১ ও ’২২ সালে বাংলাদেশে কোরিয়ার রপ্তানি বাড়ার প্রধান কারণ ছিল কোরিয়া থেকে বাংলাদেশের ডিজেল আমদানিবৃদ্ধি, যার হার ছিল ৭০৩.৮ শতাংশ। ২০২২ সালে যা ৯৭২ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালে কোরিয়া বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানি করে ৪৫০ শতাংশ বেশি। ১২ কোটি ১০ লাখ ডলারের ডিজেল আমদানি করেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে কোরিয়ার প্রধান রপ্তানিপণ্য হলো যন্ত্রপাতি, পেট্রো কেমিক্যালপণ্য, ইস্পাত ও কীটনাশক। এগুলো ২০২২ সালে কমেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর মূলত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের কারণে বাংলাদেশ সরকার আমদানিতে বিধিনিষধ আরোপ করার ফলে এমনটা হয়েছে বলে মনে করা হয়।
সম্প্রতি দেশের রিয়েল এস্টেট সেক্টরের অন্যতম সেরা আকর্ষণ প্রিমিয়াম মেগা গেটেড কমিউনিটি রূপায়ণ সিটি উত্তরা পরিদর্শন করেছে কুয়েতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল।
রাজধানীর উত্তরার ১২নং সেক্টরসংলগ্ন দিয়াবাড়িতে গড়ে ওঠা সর্বাধুনিক সুবিধা সন্নিবেশিত ও দৃষ্টিনন্দন আবাসন সিটি পরিদর্শন শেষে মুগ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কুয়েতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা।
প্রতিনিধিদলকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানান রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খাঁন মুকুল, রূপায়ণ গ্রুপের পরিচালক রোকেয়া বেগম নাসিমা এবং রূপায়ণ গ্রুপের উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন অবসরপ্রাপ্ত পিজে উল্লাহ।
রূপায়ণ সিটি উত্তরা পরিদর্শনে আসেন কুয়েত বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মুকাই আলী লুৎফর রহমান, বিজয়নগর উপজেলা চেয়ারম্যান নাসিমা মুকাই আলী, ইঞ্জিনিয়ার মোর্শেদ হোসেন, মুজিবর রহমান লিটন ও আতাউর রহমান, খালেদ আল মুতাইরি ও জেসিকা জুংগাওসহ অন্যরা।
এ সময় তারা বলেন, বাংলাদেশে আবাসন ব্যবসায় রূপায়ণ সিটি উত্তরা একটি অনন্য মাইলফলক। বাইরে থেকে বোঝাই যায় না ভেতরটা কত সুন্দর। রূপায়ণ সিটি উত্তরাকে তারা আন্তর্জাতিক মানের আবাসন প্রকল্পের সঙ্গে তুলনা করেন।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।