
পুরান ঢাকার বাসিন্দা মো. বদরুজ্জামান বাবু। গত ৫ ডিসেম্বর রাতে পরিবারের সাত সদস্যকে নিয়ে প্রাইভেটকারে ঘুরতে যান ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে। উদ্দেশ্য ছিল পদ্মার পাড়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাটে ইলিশ খেয়ে বাসায় ফেরা। সেখানে খাওয়া-দাওয়া শেষে গল্পগুজব করতে করতে সবাই খোশমেজাজে ফিরছিলেন বাসায়। কিন্তু দ্রুতই পরিবারটির এই আনন্দযাত্রা রূপ নেয় বিষাদে। রাত সোয়া ২টার দিকে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে কেরানীগঞ্জ সাউথ টাউন এলাকায় ডাকাত দলের কবলে পড়েন তারা। বদরুজ্জামান বাবুর ছেলে হৃদয়ের (১৬) গলায় চাকু ঠেকিয়ে অন্যদের মারপিট করে তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ১২-১৪ জনের ডাকাত দল। এ সময় পরিবারটির নারী সদস্যদের লাঞ্ছিতও করে ডাকাত দলের কয়েক সদস্য।
ওই রাতে সেখানে বাবুর গাড়ি ছাড়াও আরও চারটি গাড়িতে ডাকাতি হয়। এমনকি একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকেও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।
এর আগে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতেও এই সড়কে একাধিক গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সে সময় দুই যাত্রী গুরুতর আহত হন। তবে শুধু এই দুটি ঘটনাই নয়, সড়কটিতে রাতে অহরহই ঘটছে ঢাকাতির এমন ঘটনা। কখনো প্রাইভেটকারে যাত্রী তুলে ছিনতাই, কখনো গাড়ি থেকে যাত্রী নামার পর অস্ত্রের মুখে টাকা, মোবাইলফোন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করছেন কালেভদ্রে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পর থেকে রাজধানীর পোস্তগোলা সেতু থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরত্বের এই ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েটি অন্যতম বিনোদন স্পটে পরিণত হয়েছে। অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গভীর রাতে প্রাইভেটকারে ঘুরতে যান সড়কটিতে। চার লেনের এই মহাসড়কটিতেই ওঁৎ পেতে থাকে ডাকাতরা। গভীর রাতে চলন্ত প্রাইভেটকারে কখনো ঢিল মেরে আবার কখনো রাস্তা অবরোধ করে চলে ডাকাতি। শীতের সময় কুয়াশার মধ্যে এ সড়কে ডাকাতি বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। ডাকাত দলের কবলে পড়া ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করছেন না। গত দেড় মাসে ডাকাতির শিকার মাত্র তিনজন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাড়কটিতে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হাইওয়ে পুলিশের স্বল্পতা ও সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরার ব্যবস্থা না থাকায় ডাকাতরা সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি স্বীকারও করছেন ঢাকা জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রতি বছর শীতের প্রকোপ বাড়লেই কুয়াশা বাড়ে, আর এই সুযোগে বেশ কয়েকটি ডাকাত চক্র ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সুযোগ পেলেই ডাকাতি করে তারা। আশপাশের এলাকার অনেক বাসাবাড়িতেও তারা ডাকাতি করে। ডাকাতি-ছিনতাই রোধে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা গত বছরও এই ডাকাত চক্রের অনেককে গ্রেপ্তার করেছিলাম। তাদের অনেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। সর্বশেষ ১৪ জানুয়ারি ৯ ডাকাতকে গ্রেপ্তারও করেছে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে যে কোনো মূল্যে নিরাপদ রাখা হবে। জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে। পুরো সড়ক সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে আমরা প্রজেক্ট (প্রকল্প) হাতে নিয়েছি।’
ভুক্তভোগী বদরুজ্জামান বাবু ডাকাতির শিকার হওয়ার ভয়ংকর সেই রাতের বর্ণনা দিয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাতে আমার ব্যক্তিগত গাড়িটি নিজেই ড্রাইভ করছিলাম। স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, ভাগিনা ও বোনসহ মাওয়া ঘাটে ইলিশ খেয়ে বাসায় ফেরার পথে টোল প্লাজার কিছুটা দূরেই বেশ কিছু গাড়ি থেমে থাকতে দেখি। প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। কাছাকাছি গিয়ে দেখি কয়েকটি গাড়ি ফিরে যাচ্ছে। আমিও কিছু না বুঝেই গাড়ি ঘোরানোর চেষ্টা করি। কিন্তু এ সময় একটি পিক-আপ ভ্যান সড়কে আড়াআড়ি করে রেখে আমার গাড়ি থামায়। ১২ থেকে ১৪ জন লোক আমার গাড়িতে আঘাত করতে থাকে। তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। আমি বড় কোনো দুর্ঘটনার ভয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিই। এ সময় আমার ভাগনে ৯৯৯ (জাতীয় জরুরি সেবা)-এ ফোন দেওয়ার চেষ্টা করলে ফোনটি তারা কেড়ে নিয়ে বেদম পিটাতে থাকে তাকে।’
ডাকাত দলের এক সদস্য তার ১৪ বছর বয়সী ছেলের গলায় চাকু ঠেকায় জানিয়ে বদরুজ্জামান বাবু বলেন, ‘তারা (ডাকাতরা) বলে যা আছে সব দিয়ে দিতে। আমাদের কাছে থাকা ৪১ হাজার টাকা, সোনার চেইন, ৫টি মোবাইল ফোন সব দিয়ে দিলেও ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আমার বোন গাড়ি থেকে নেমে ছেলেকে তাদের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। পরে সোজা গাড়ি চালিয়ে ঘটনাস্থল ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় আমাদের। আমরা বাসায় ফিরে আসি। ভয়ে ওই ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগও করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই রাতে আমাদের গাড়িসহ আরও চারটি গাড়িতে ডাকাতি করে। একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকেও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। প্রতিটি গাড়িতে চার থেকে পাঁচ মিনিট ধরে ডাকাতি করে। কয়েকটি বাস এ সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও তারা লাইট ও বাসের দরজা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।’
ডাকাতির ওই ঘটনাস্থলটি পড়ে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকায়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহ জামান বলেন, ‘গত এক থেকে দেড় মাসে এই এলাকায় তিনটি ডাকাতির তথ্য আমরা পেয়েছি। এর বাইরেও ডাকাতির ঘটনা ঘটে, তবে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগই করতে চান না। ভুক্তভোগী বদরুজ্জামান বাবুও আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। পরবর্তী সময়ে আমরা একটি ডাকাত দলকে গ্রেপ্তার করলে সেই তথ্য গণমাধ্যমে দেখে তিনি এসে অভিযোগ করেন।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই এলাকাটির শীর্ষ ডাকাত শাওন। তার নেতৃত্বেই চলে ডাকাতি। তাকে ৫ থেকে ৬ বার গ্রেপ্তার করেছি। তবে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের ডাকাতি শুরু করে।’
ভুক্তভোগীরা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাসে নারী সদস্য বেশি থাকে সেগুলোকেই বেশি টার্গেট করে ডাকাতরা। তারা রাস্তার পাশে বসে দূর থেকে চলন্ত গাড়িতে ঢিল মারে। গাড়িতে ঢিল পড়ার পর চালক থেমে যান গাড়িটি দেখার জন্য, তখন ডাকাতরা গাড়ির সামনে গিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে চালক বা আরোহীদের মালামাল কেড়ে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে গাড়িতে থাকা কিশোরদের অপহরণের চেষ্টাও চালায় এসব ডাকাত, তাদের লক্ষ্য থাকে মুক্তিপণ আদায়ের। একটি গাড়িকে কৌশলে থামানোর পর ৩ থেকে ৪ মিনিটের মধ্যে শেষ করে ডাকাতির মিশন। টাকা-পয়সা দিতে না চাইলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে।
লোকসাহিত্য আমাদের জাতীয় সম্পদ। লোকজীবনের, লোকবিশ্বাসের, লোককথার অফুরান ভান্ডার। বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে ‘লোকায়ত’ শব্দটির অর্থ ‘লোকেষু আয়ত’ অর্থাৎ লোকে পরিব্যাপ্ত বিষয়। লোকসাহিত্য একাধারে জনগণের মধ্যে পরিব্যাপ্ত সাহিত্য এবং বস্তুবাদী চেতনার ধারক।
বাংলাদেশের আলপনাশিল্পের বিকাশ ও সমৃদ্ধি বাংলাদেশের নারীসমাজের হাতে। এ শিল্প বাংলাদেশের অতীত-আচার এবং লোকায়ত
কৃষি ও মাতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রত্যক্ষ উত্তরাধিকার। আলপনা, বিবিধ নকশা একান্তই নারীসমাজের সৃষ্টি। বাংলাদেশের মা-বোনের স্নেহ, ভালোবাসার আন্তরিক অভিব্যক্তি। আলপনা মানবজীবনকে আরও একটু সুন্দর, গভীর ও মধুময়, তাৎপর্যময় করতে প্রেরণা জোগায়।
বাংলাদেশের লোকায়ত শিল্পে মেয়েদের ভূমিকা নির্ণয়ে আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন বলেছেন ‘তাহারাই আমাদের শিল্পের জীবন রক্ষা করিয়াছেন, যাহা কিছু অভাব অভিযোগ তাহা স্নেহ দিয়া অতিমাত্রায় পূরণ করিতেন।’ তাই ‘রান্নাঘর ছিল তাহাদের শিল্পশালা, আলপনা শোভিত আঙিনা ছিল তাহাদের চিত্রশালা, নানারূপ কারুখচিত সামান্য দড়ির শিকা, মাটির হাঁড়ির রঞ্জিত চিত্রিত শোভা এ সকলের সহিত ভাঁড়ার ছিল তাহাদের চিত্রশালা, সামান্য শাড়ি ও ছেঁড়া কাপড়ের উপর কত চিত্র বিচিত্র কারুকার্য দেখাইয়া তাহারা যে কাঁথা ও বালিশের খোল, পানের বটুয়া তৈরী করিতেন, তাহাতে তাহাদের শয্যাগৃহ ছিল চিত্রশালা।’
বিশ্বকোষে বলা হয়েছে, ‘আলপনা’ শব্দটিই কৃষিকেন্দ্রিক জাদুবিশ্বাস-জাত। ‘আইল প্রস্তুত করা বা আইলপনা চিত্র দ্বারা সীমারেখা অঙ্কনের প্রথা থেকে আলপনা চিত্রের বিকাশ এবং দেশজ ‘আইলপনা’ শব্দের উৎপত্তি। তবে লোকসমাজে ও লোকপ্রচলনে আলপনা আঁকা কথাটি সচরাচর ব্যবহৃত হয় না, আলপনা দেওয়া কথাটাই ব্যবহৃত হয়।’
আলপনাচিত্রের পরিধি বহুদূর বিস্তৃত; এর বৈচিত্র্যও অফুরন্ত। এ সম্পর্কে প্রয়াত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বলেছিলেন ‘আলপনা যে কত রকমের তার হিসাব নিলে দেখা যায়, এখনকার আর্ট স্কুলের ছাত্রদের চেয়ে ঢের বেশি জিনিস মেয়েরা না শিখেই লিখছে এবং সৃষ্টিও করেছে।’
বাংলাদেশের নারীদের অঙ্গুলি-সঞ্চালন কৌশলে, পিঠালির রং আর মোটা ও সংরক্ষিত টানে মুদ্রিত হয় আলপনার চিত্রভাষা।
বাংলা লোকসাহিত্যে, লোককথায় ময়মনসিংহের আলপনাশিল্প বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, আলপনার মধ্য দিয়ে লোকসাহিত্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের রীতিনীতি ও সমাজব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। উদাহরণ: ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র কাজলরেখা পালায় কাজলরেখার আলপনার মধ্যে সেকালের রীতিনীতি ও প্রথার গ-ি-বহির্ভূত স্বাধীন শিল্পীমনের বিমল প্রকাশ ঘটেছে, যা পাঠককে চমকিত করে। লোকসাহিত্য সমালোচক ওয়াকিল আহমদ বলেছেন, আলপনার ভেতর দিয়ে বাঙালি ললনাদের ধর্মকর্মের বাইরেও স্বীয় চিত্তবৃত্তির বিকাশ ঘটেছে। তারা শিল্পের রূপ-পরিস্ফুরণের পথ দেখিয়েছে। আলপনায় তারই প্রমাণ পাওয়া যায়।
কাজলরেখার আলপনায় এরই প্রকাশ ঘটেছে
উত্তম সাইলের চাউল জলেতে ভিজাইয়া।
ধুইয়া মুছিয়া কন্যা লইল বাটিয়া।।
পিঠালি করিয়া কন্যা পরথমে আঁকিল।
বাপ আর মায়ের চরণ মনে গাঁথা ছিল।।
জোড়া টাইল আঁকে কন্যা আর ধানছড়া।
মাঝে মাঝে আঁকে কন্যা গিরলক্ষ্মীর পারা।।
সমুদ্র সাগর আঁকে চান্দ আর সুরুজে।
ভাঙ্গা মন্দির আঁকে কন্যা জঙ্গলার মাঝে।।
মেঝেতে শুইয়া আছে মরা সে কুমার।
কেবল নাই সে আঁকে কন্যা ছবি আপনার।।
সুইচ রাজার ছবি আঁকে পাত্র মিত্র লইয়া।
নিজেরে না আঁকে কন্যা রাখে ভাড়াইয়া।।
লোকসাহিত্যে আলপনার কথা এখানেই শেষ নয়। সুপ্রাচীনকাল থেকে আলপনা শুধু আমাদের লোকসাহিত্যে নয়, আমাদের লোকায়ত সমাজে বাঙালি নারীঐতিহ্যনির্ভর শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। সাধারণত আলপনা আঁকা হয় বৃত্তাকারে। চৌকো ত্রিকোনাকার অবয়বও থাকে।
আলপনার বৃত্তের কেন্দ্রে থাকে শতদল পদ্ম, প্রস্ফুটিত পদ্ম, শঙ্খপদ্ম, মঙ্গলপদ্ম, অষ্টদল পদ্ম, চরণপদ্ম, মীনপদ্ম, পূর্ণকু-, অষ্টকলসী, মঙ্গলকলসী, শাখা বিস্ফারিত কদম অথবা অন্যতর বৃক্ষকেন্দ্রের বৃত্তের চারপাশে শঙ্খলতা, কলসীলতা, কলমীলতা, কলা লতা, খুন্তিলতা, চালতালতা, দোপাটিলতা, চাঁপালতা, মোচালতা, শীষলতা প্রভৃতি বৃত্তাকারে সাজোনো হলে লতামঙ্গল হয়। এরকম পদ্মের চারদিকে বৃত্তাকারে সাজানো হলে পদ্মম-ল বা পদ্মচক্র হয়। এই কেন্দ্রের চিত্র অথবা ম-লকে ঘিরে থাকে বিভিন্ন পর্যায়ক্রমিক চিত্রলতা, পাতা, ফল, ফুল, মাছ, ধানছড়া, জীবজন্তু ও নানান গৃহস্থালি সরঞ্জাম। চৌকো আলপনায় কেন্দ্রের চিত্রের চারপাশের লতাম-ল অনেকটা চিত্রের ফ্রেমের কাজ করে।
আধুনিক চিত্রশিল্পীদের অনেকে আলপনার রূপ, চেতনা ও আঙ্গিককে জাতীয় চেতনা ও ঐতিহ্যের বাহক হিসেবে রূপায়িত করেন তাদের শিল্পে। দেশপ্রেমিক সমাজ ও সংস্কৃতিকর্মীরাও বাংলা নববর্ষে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে, স্বাধীনতা দিবসে ও বিজয় দিবসে জাতীয় ঐতিহ্য ও চেতনার প্রতীক হিসেবে রাস্তার মোড়ে মোড়ে রূপাংকিত করেন আলপনার ঐতিহ্যবাহী চিত্র।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক
ুধরফঁষধষধস@ুধযড়ড়.পড়স
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক বিষয়। শুরু থেকেই এর সমাধানের জন্য জোরালোভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও ভবিষ্যতে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা যাতে না আসে, সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র্যাব, আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা, আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ মিশনের মধ্যে নিয়মিতভাবে সমন্বয় সাধন করছে।’
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে ড. মোমেন বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরপরই আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। সে সময় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে কাজ করবে, সে ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা হয়। পরে তারই আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন সফর করে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করি। বৈঠকে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরি। ওই সফরে সিনেটর, কংগ্রেসম্যানসহ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক হয়। এতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তাদের সমর্থনের অনুরোধ করি। কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাস গঠনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করি।’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম সম্মেলন চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংগঠনবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল জে সিসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে র্যাবের ওপর দেশটির নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আলোচনা করেন বলেও জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, কাউন্সিলর ডেরেক এইচ চোলেটসহ দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু মানবাধিকার নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের গৃহীত উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
তিনি জানান, জাতিসংঘ সম্মেলন চলাকালে পররাষ্ট্র সচিব, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ককাসের তিনজন কো-চেয়ার কংগ্রেসম্যান জেরি কনোলি, কংগ্রেসম্যান স্টিভ জে চ্যাবট এবং কংগ্রেসম্যান ডেট ইভানসের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে ইউএস হাউজ কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান গ্রেগরি মিকসও অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ককাসের সদস্য স্টিভ চ্যাবট যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত হননি। ওয়াশিংটন ডিসির দূতাবাস বাংলাদেশ ককাসে আরেকজন সদস্য যুক্ত করার নিমিত্তে কাজ করে যাচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সঙ্গে সাক্ষাতে র্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচিত হয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ওই সময় ডোনাল্ড লু বর্তমান র্যাবের কার্যক্রমের বিশেষ প্রশংসা করেন।
ড. মোমেন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যাপারে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে তরুণ সমাজকে জ্ঞানার্জনে আত্মনিয়োগ করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ডে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। নবপ্রজন্ম জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করলেই কেবলমাত্র দেশ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় সংসদের শারদোৎসব সমন্বয় পর্ষদ আয়োজিত ‘শারদোৎসব’ এ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন।
শারদোৎসব অনুষ্ঠানে পঙ্কজ দেবনাথ এমপি এর উপস্থাপনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা উপস্থিত হয়ে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক, হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার এমপি, অসীম কুমার উকিল এমপি, মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি, খোদেজা নাসরিন আক্তার এমপি এবং সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে বিদ্যাচর্চার মাধ্যমে আমাদের জাতিগত উৎকর্ষ সাধনে উদ্যমী হতে হবে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে মেলবন্ধন আমরা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দেখতে পাই, সেটা অটুট রাখতে হবে।
স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের উপহার দিয়েছেন, উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা অর্জন করে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে তা সহায়ক হবে। তিনি বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে স্মার্ট গভর্ন্যান্স, স্মার্ট কমিউনিটি চর্চার মাধ্যমে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ নিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ইইউ’র অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রীরা এক বৈঠকে ভিসা সীমিতকরণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এতে বাংলাদেশের জন্যও একই পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে যেসব দেশ নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বা সহযোগিতামূলক আচরণ করছে না তাদের জন্য ভিসা সীমিতকরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর আগে এ ধরনের আচরণের জন্য গাম্বিয়ার প্রতি শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ইরাক, সেনেগাল ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে ইউরোপীয় কমিশন। যদিও ইইউ কর্মকর্তারা বলছেন, অভিবাসী প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে ঢাকা বেশ সহযোগিতামূলক আচরণ করেছে।
২০২১ সালের সর্বশেষ ইউরোস্টেটের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২১ শতাংশ অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে পেরেছে ইইউ। ইইউ’র এক কর্মকর্তা বলেন, এই পরিসংখ্যানের পরিমাণটা খুবই কম যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য অনেকটা অপ্রত্যাশিত।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য অভিবাসন একটি উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সংবেদনশীল বিষয়বস্তু। সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইউরোপে স্থায়ী অভিবাসন পাওয়া নাগরিকদের দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার চেয়েও অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো ও অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন মোকাবিলাকে গুরুত্ব দেয়।
ইউরোপীয় কমিশন সুপারিশ করেছে যে, গ্রহণযোগ্য ও সুপরিকল্পিত অভিবাসন ও আশ্রয়ের জন্য একটি সর্বজনীন ইউরোপীয় ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন যা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার লোক ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দারিদ্র্যপীড়িত ও যুদ্ধাঞ্চলগুলো থেকে ইউরোপে প্রবেশের একটি অন্যতম পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়াও প্রায় ৮০ লাখ ইউক্রেনীয় নাগরিক গত বছর ইউরোপে অভিবাসী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে।
ইইউ নীতিমালার সুবিধা ও সুযোগ ব্যবহার করে অঞ্চলটি থেকে অভিবাসীদের মূল দেশে ফেরত পাঠাতে কার্যকর প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে এক যৌথ বিবৃতিতে মন্তব্য করেন ইইউ অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রীরা।
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের উত্তর দিতে রুচিতে বাঁধে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তাদের ও সরকারের বক্তব্যের জবাব দেওয়া হবে রাজপথে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের এক যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ এবং ১০ দফা দাবি আদায়ে আগামী সপ্তাহে রাজধানীর চার স্থানে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালানো হচ্ছে। নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলছে। হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়ে নেতাকর্মীরা নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে গেলে নিম্ন আদালত তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এতে প্রমাণ হয় নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলছে। নির্যাতন নিপীড়ন ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘যারা দিনের ভোট রাতে করে যারা ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা দেয়, তাদের মুখে বিএনপির নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন নিয়ে কথা বলা মানায় না। তারা লজ্জা-শরমহীন।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবির আন্দোলন আরও বেশি সোচ্চার হবে, আরও বেশি বেগবান হবে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার, অত্যাচার, নির্যাতন ও গুলিবর্ষণ করে হত্যা করছে। দেশের জনগণের গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষাকে দমন করতে না পেরে তারা আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরবত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।