
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক বিষয়। শুরু থেকেই এর সমাধানের জন্য জোরালোভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও ভবিষ্যতে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা যাতে না আসে, সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র্যাব, আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা, আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ মিশনের মধ্যে নিয়মিতভাবে সমন্বয় সাধন করছে।’
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে ড. মোমেন বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরপরই আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। সে সময় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে কাজ করবে, সে ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা হয়। পরে তারই আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন সফর করে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করি। বৈঠকে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরি। ওই সফরে সিনেটর, কংগ্রেসম্যানসহ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক হয়। এতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তাদের সমর্থনের অনুরোধ করি। কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাস গঠনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করি।’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম সম্মেলন চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংগঠনবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল জে সিসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে র্যাবের ওপর দেশটির নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আলোচনা করেন বলেও জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, কাউন্সিলর ডেরেক এইচ চোলেটসহ দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু মানবাধিকার নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের গৃহীত উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
তিনি জানান, জাতিসংঘ সম্মেলন চলাকালে পররাষ্ট্র সচিব, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ককাসের তিনজন কো-চেয়ার কংগ্রেসম্যান জেরি কনোলি, কংগ্রেসম্যান স্টিভ জে চ্যাবট এবং কংগ্রেসম্যান ডেট ইভানসের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে ইউএস হাউজ কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান গ্রেগরি মিকসও অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ককাসের সদস্য স্টিভ চ্যাবট যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত হননি। ওয়াশিংটন ডিসির দূতাবাস বাংলাদেশ ককাসে আরেকজন সদস্য যুক্ত করার নিমিত্তে কাজ করে যাচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সঙ্গে সাক্ষাতে র্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচিত হয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ওই সময় ডোনাল্ড লু বর্তমান র্যাবের কার্যক্রমের বিশেষ প্রশংসা করেন।
ড. মোমেন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যাপারে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা মো. বদরুজ্জামান বাবু। গত ৫ ডিসেম্বর রাতে পরিবারের সাত সদস্যকে নিয়ে প্রাইভেটকারে ঘুরতে যান ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে। উদ্দেশ্য ছিল পদ্মার পাড়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাটে ইলিশ খেয়ে বাসায় ফেরা। সেখানে খাওয়া-দাওয়া শেষে গল্পগুজব করতে করতে সবাই খোশমেজাজে ফিরছিলেন বাসায়। কিন্তু দ্রুতই পরিবারটির এই আনন্দযাত্রা রূপ নেয় বিষাদে। রাত সোয়া ২টার দিকে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে কেরানীগঞ্জ সাউথ টাউন এলাকায় ডাকাত দলের কবলে পড়েন তারা। বদরুজ্জামান বাবুর ছেলে হৃদয়ের (১৬) গলায় চাকু ঠেকিয়ে অন্যদের মারপিট করে তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ১২-১৪ জনের ডাকাত দল। এ সময় পরিবারটির নারী সদস্যদের লাঞ্ছিতও করে ডাকাত দলের কয়েক সদস্য।
ওই রাতে সেখানে বাবুর গাড়ি ছাড়াও আরও চারটি গাড়িতে ডাকাতি হয়। এমনকি একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকেও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।
এর আগে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতেও এই সড়কে একাধিক গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সে সময় দুই যাত্রী গুরুতর আহত হন। তবে শুধু এই দুটি ঘটনাই নয়, সড়কটিতে রাতে অহরহই ঘটছে ঢাকাতির এমন ঘটনা। কখনো প্রাইভেটকারে যাত্রী তুলে ছিনতাই, কখনো গাড়ি থেকে যাত্রী নামার পর অস্ত্রের মুখে টাকা, মোবাইলফোন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করছেন কালেভদ্রে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পর থেকে রাজধানীর পোস্তগোলা সেতু থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরত্বের এই ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েটি অন্যতম বিনোদন স্পটে পরিণত হয়েছে। অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গভীর রাতে প্রাইভেটকারে ঘুরতে যান সড়কটিতে। চার লেনের এই মহাসড়কটিতেই ওঁৎ পেতে থাকে ডাকাতরা। গভীর রাতে চলন্ত প্রাইভেটকারে কখনো ঢিল মেরে আবার কখনো রাস্তা অবরোধ করে চলে ডাকাতি। শীতের সময় কুয়াশার মধ্যে এ সড়কে ডাকাতি বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। ডাকাত দলের কবলে পড়া ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করছেন না। গত দেড় মাসে ডাকাতির শিকার মাত্র তিনজন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাড়কটিতে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হাইওয়ে পুলিশের স্বল্পতা ও সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরার ব্যবস্থা না থাকায় ডাকাতরা সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি স্বীকারও করছেন ঢাকা জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রতি বছর শীতের প্রকোপ বাড়লেই কুয়াশা বাড়ে, আর এই সুযোগে বেশ কয়েকটি ডাকাত চক্র ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সুযোগ পেলেই ডাকাতি করে তারা। আশপাশের এলাকার অনেক বাসাবাড়িতেও তারা ডাকাতি করে। ডাকাতি-ছিনতাই রোধে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা গত বছরও এই ডাকাত চক্রের অনেককে গ্রেপ্তার করেছিলাম। তাদের অনেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। সর্বশেষ ১৪ জানুয়ারি ৯ ডাকাতকে গ্রেপ্তারও করেছে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে যে কোনো মূল্যে নিরাপদ রাখা হবে। জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে। পুরো সড়ক সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে আমরা প্রজেক্ট (প্রকল্প) হাতে নিয়েছি।’
ভুক্তভোগী বদরুজ্জামান বাবু ডাকাতির শিকার হওয়ার ভয়ংকর সেই রাতের বর্ণনা দিয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাতে আমার ব্যক্তিগত গাড়িটি নিজেই ড্রাইভ করছিলাম। স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, ভাগিনা ও বোনসহ মাওয়া ঘাটে ইলিশ খেয়ে বাসায় ফেরার পথে টোল প্লাজার কিছুটা দূরেই বেশ কিছু গাড়ি থেমে থাকতে দেখি। প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। কাছাকাছি গিয়ে দেখি কয়েকটি গাড়ি ফিরে যাচ্ছে। আমিও কিছু না বুঝেই গাড়ি ঘোরানোর চেষ্টা করি। কিন্তু এ সময় একটি পিক-আপ ভ্যান সড়কে আড়াআড়ি করে রেখে আমার গাড়ি থামায়। ১২ থেকে ১৪ জন লোক আমার গাড়িতে আঘাত করতে থাকে। তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। আমি বড় কোনো দুর্ঘটনার ভয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিই। এ সময় আমার ভাগনে ৯৯৯ (জাতীয় জরুরি সেবা)-এ ফোন দেওয়ার চেষ্টা করলে ফোনটি তারা কেড়ে নিয়ে বেদম পিটাতে থাকে তাকে।’
ডাকাত দলের এক সদস্য তার ১৪ বছর বয়সী ছেলের গলায় চাকু ঠেকায় জানিয়ে বদরুজ্জামান বাবু বলেন, ‘তারা (ডাকাতরা) বলে যা আছে সব দিয়ে দিতে। আমাদের কাছে থাকা ৪১ হাজার টাকা, সোনার চেইন, ৫টি মোবাইল ফোন সব দিয়ে দিলেও ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আমার বোন গাড়ি থেকে নেমে ছেলেকে তাদের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। পরে সোজা গাড়ি চালিয়ে ঘটনাস্থল ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় আমাদের। আমরা বাসায় ফিরে আসি। ভয়ে ওই ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগও করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই রাতে আমাদের গাড়িসহ আরও চারটি গাড়িতে ডাকাতি করে। একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকেও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। প্রতিটি গাড়িতে চার থেকে পাঁচ মিনিট ধরে ডাকাতি করে। কয়েকটি বাস এ সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও তারা লাইট ও বাসের দরজা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।’
ডাকাতির ওই ঘটনাস্থলটি পড়ে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকায়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহ জামান বলেন, ‘গত এক থেকে দেড় মাসে এই এলাকায় তিনটি ডাকাতির তথ্য আমরা পেয়েছি। এর বাইরেও ডাকাতির ঘটনা ঘটে, তবে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগই করতে চান না। ভুক্তভোগী বদরুজ্জামান বাবুও আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। পরবর্তী সময়ে আমরা একটি ডাকাত দলকে গ্রেপ্তার করলে সেই তথ্য গণমাধ্যমে দেখে তিনি এসে অভিযোগ করেন।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই এলাকাটির শীর্ষ ডাকাত শাওন। তার নেতৃত্বেই চলে ডাকাতি। তাকে ৫ থেকে ৬ বার গ্রেপ্তার করেছি। তবে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের ডাকাতি শুরু করে।’
ভুক্তভোগীরা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাসে নারী সদস্য বেশি থাকে সেগুলোকেই বেশি টার্গেট করে ডাকাতরা। তারা রাস্তার পাশে বসে দূর থেকে চলন্ত গাড়িতে ঢিল মারে। গাড়িতে ঢিল পড়ার পর চালক থেমে যান গাড়িটি দেখার জন্য, তখন ডাকাতরা গাড়ির সামনে গিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে চালক বা আরোহীদের মালামাল কেড়ে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে গাড়িতে থাকা কিশোরদের অপহরণের চেষ্টাও চালায় এসব ডাকাত, তাদের লক্ষ্য থাকে মুক্তিপণ আদায়ের। একটি গাড়িকে কৌশলে থামানোর পর ৩ থেকে ৪ মিনিটের মধ্যে শেষ করে ডাকাতির মিশন। টাকা-পয়সা দিতে না চাইলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে।
লোকসাহিত্য আমাদের জাতীয় সম্পদ। লোকজীবনের, লোকবিশ্বাসের, লোককথার অফুরান ভান্ডার। বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে ‘লোকায়ত’ শব্দটির অর্থ ‘লোকেষু আয়ত’ অর্থাৎ লোকে পরিব্যাপ্ত বিষয়। লোকসাহিত্য একাধারে জনগণের মধ্যে পরিব্যাপ্ত সাহিত্য এবং বস্তুবাদী চেতনার ধারক।
বাংলাদেশের আলপনাশিল্পের বিকাশ ও সমৃদ্ধি বাংলাদেশের নারীসমাজের হাতে। এ শিল্প বাংলাদেশের অতীত-আচার এবং লোকায়ত
কৃষি ও মাতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রত্যক্ষ উত্তরাধিকার। আলপনা, বিবিধ নকশা একান্তই নারীসমাজের সৃষ্টি। বাংলাদেশের মা-বোনের স্নেহ, ভালোবাসার আন্তরিক অভিব্যক্তি। আলপনা মানবজীবনকে আরও একটু সুন্দর, গভীর ও মধুময়, তাৎপর্যময় করতে প্রেরণা জোগায়।
বাংলাদেশের লোকায়ত শিল্পে মেয়েদের ভূমিকা নির্ণয়ে আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন বলেছেন ‘তাহারাই আমাদের শিল্পের জীবন রক্ষা করিয়াছেন, যাহা কিছু অভাব অভিযোগ তাহা স্নেহ দিয়া অতিমাত্রায় পূরণ করিতেন।’ তাই ‘রান্নাঘর ছিল তাহাদের শিল্পশালা, আলপনা শোভিত আঙিনা ছিল তাহাদের চিত্রশালা, নানারূপ কারুখচিত সামান্য দড়ির শিকা, মাটির হাঁড়ির রঞ্জিত চিত্রিত শোভা এ সকলের সহিত ভাঁড়ার ছিল তাহাদের চিত্রশালা, সামান্য শাড়ি ও ছেঁড়া কাপড়ের উপর কত চিত্র বিচিত্র কারুকার্য দেখাইয়া তাহারা যে কাঁথা ও বালিশের খোল, পানের বটুয়া তৈরী করিতেন, তাহাতে তাহাদের শয্যাগৃহ ছিল চিত্রশালা।’
বিশ্বকোষে বলা হয়েছে, ‘আলপনা’ শব্দটিই কৃষিকেন্দ্রিক জাদুবিশ্বাস-জাত। ‘আইল প্রস্তুত করা বা আইলপনা চিত্র দ্বারা সীমারেখা অঙ্কনের প্রথা থেকে আলপনা চিত্রের বিকাশ এবং দেশজ ‘আইলপনা’ শব্দের উৎপত্তি। তবে লোকসমাজে ও লোকপ্রচলনে আলপনা আঁকা কথাটি সচরাচর ব্যবহৃত হয় না, আলপনা দেওয়া কথাটাই ব্যবহৃত হয়।’
আলপনাচিত্রের পরিধি বহুদূর বিস্তৃত; এর বৈচিত্র্যও অফুরন্ত। এ সম্পর্কে প্রয়াত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বলেছিলেন ‘আলপনা যে কত রকমের তার হিসাব নিলে দেখা যায়, এখনকার আর্ট স্কুলের ছাত্রদের চেয়ে ঢের বেশি জিনিস মেয়েরা না শিখেই লিখছে এবং সৃষ্টিও করেছে।’
বাংলাদেশের নারীদের অঙ্গুলি-সঞ্চালন কৌশলে, পিঠালির রং আর মোটা ও সংরক্ষিত টানে মুদ্রিত হয় আলপনার চিত্রভাষা।
বাংলা লোকসাহিত্যে, লোককথায় ময়মনসিংহের আলপনাশিল্প বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, আলপনার মধ্য দিয়ে লোকসাহিত্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের রীতিনীতি ও সমাজব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। উদাহরণ: ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র কাজলরেখা পালায় কাজলরেখার আলপনার মধ্যে সেকালের রীতিনীতি ও প্রথার গ-ি-বহির্ভূত স্বাধীন শিল্পীমনের বিমল প্রকাশ ঘটেছে, যা পাঠককে চমকিত করে। লোকসাহিত্য সমালোচক ওয়াকিল আহমদ বলেছেন, আলপনার ভেতর দিয়ে বাঙালি ললনাদের ধর্মকর্মের বাইরেও স্বীয় চিত্তবৃত্তির বিকাশ ঘটেছে। তারা শিল্পের রূপ-পরিস্ফুরণের পথ দেখিয়েছে। আলপনায় তারই প্রমাণ পাওয়া যায়।
কাজলরেখার আলপনায় এরই প্রকাশ ঘটেছে
উত্তম সাইলের চাউল জলেতে ভিজাইয়া।
ধুইয়া মুছিয়া কন্যা লইল বাটিয়া।।
পিঠালি করিয়া কন্যা পরথমে আঁকিল।
বাপ আর মায়ের চরণ মনে গাঁথা ছিল।।
জোড়া টাইল আঁকে কন্যা আর ধানছড়া।
মাঝে মাঝে আঁকে কন্যা গিরলক্ষ্মীর পারা।।
সমুদ্র সাগর আঁকে চান্দ আর সুরুজে।
ভাঙ্গা মন্দির আঁকে কন্যা জঙ্গলার মাঝে।।
মেঝেতে শুইয়া আছে মরা সে কুমার।
কেবল নাই সে আঁকে কন্যা ছবি আপনার।।
সুইচ রাজার ছবি আঁকে পাত্র মিত্র লইয়া।
নিজেরে না আঁকে কন্যা রাখে ভাড়াইয়া।।
লোকসাহিত্যে আলপনার কথা এখানেই শেষ নয়। সুপ্রাচীনকাল থেকে আলপনা শুধু আমাদের লোকসাহিত্যে নয়, আমাদের লোকায়ত সমাজে বাঙালি নারীঐতিহ্যনির্ভর শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। সাধারণত আলপনা আঁকা হয় বৃত্তাকারে। চৌকো ত্রিকোনাকার অবয়বও থাকে।
আলপনার বৃত্তের কেন্দ্রে থাকে শতদল পদ্ম, প্রস্ফুটিত পদ্ম, শঙ্খপদ্ম, মঙ্গলপদ্ম, অষ্টদল পদ্ম, চরণপদ্ম, মীনপদ্ম, পূর্ণকু-, অষ্টকলসী, মঙ্গলকলসী, শাখা বিস্ফারিত কদম অথবা অন্যতর বৃক্ষকেন্দ্রের বৃত্তের চারপাশে শঙ্খলতা, কলসীলতা, কলমীলতা, কলা লতা, খুন্তিলতা, চালতালতা, দোপাটিলতা, চাঁপালতা, মোচালতা, শীষলতা প্রভৃতি বৃত্তাকারে সাজোনো হলে লতামঙ্গল হয়। এরকম পদ্মের চারদিকে বৃত্তাকারে সাজানো হলে পদ্মম-ল বা পদ্মচক্র হয়। এই কেন্দ্রের চিত্র অথবা ম-লকে ঘিরে থাকে বিভিন্ন পর্যায়ক্রমিক চিত্রলতা, পাতা, ফল, ফুল, মাছ, ধানছড়া, জীবজন্তু ও নানান গৃহস্থালি সরঞ্জাম। চৌকো আলপনায় কেন্দ্রের চিত্রের চারপাশের লতাম-ল অনেকটা চিত্রের ফ্রেমের কাজ করে।
আধুনিক চিত্রশিল্পীদের অনেকে আলপনার রূপ, চেতনা ও আঙ্গিককে জাতীয় চেতনা ও ঐতিহ্যের বাহক হিসেবে রূপায়িত করেন তাদের শিল্পে। দেশপ্রেমিক সমাজ ও সংস্কৃতিকর্মীরাও বাংলা নববর্ষে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে, স্বাধীনতা দিবসে ও বিজয় দিবসে জাতীয় ঐতিহ্য ও চেতনার প্রতীক হিসেবে রাস্তার মোড়ে মোড়ে রূপাংকিত করেন আলপনার ঐতিহ্যবাহী চিত্র।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক
ুধরফঁষধষধস@ুধযড়ড়.পড়স
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে তরুণ সমাজকে জ্ঞানার্জনে আত্মনিয়োগ করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ডে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। নবপ্রজন্ম জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করলেই কেবলমাত্র দেশ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় সংসদের শারদোৎসব সমন্বয় পর্ষদ আয়োজিত ‘শারদোৎসব’ এ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন।
শারদোৎসব অনুষ্ঠানে পঙ্কজ দেবনাথ এমপি এর উপস্থাপনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা উপস্থিত হয়ে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক, হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার এমপি, অসীম কুমার উকিল এমপি, মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি, খোদেজা নাসরিন আক্তার এমপি এবং সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে বিদ্যাচর্চার মাধ্যমে আমাদের জাতিগত উৎকর্ষ সাধনে উদ্যমী হতে হবে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে মেলবন্ধন আমরা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দেখতে পাই, সেটা অটুট রাখতে হবে।
স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের উপহার দিয়েছেন, উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা অর্জন করে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে তা সহায়ক হবে। তিনি বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে স্মার্ট গভর্ন্যান্স, স্মার্ট কমিউনিটি চর্চার মাধ্যমে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ নিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ইইউ’র অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রীরা এক বৈঠকে ভিসা সীমিতকরণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এতে বাংলাদেশের জন্যও একই পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে যেসব দেশ নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বা সহযোগিতামূলক আচরণ করছে না তাদের জন্য ভিসা সীমিতকরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর আগে এ ধরনের আচরণের জন্য গাম্বিয়ার প্রতি শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ইরাক, সেনেগাল ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে ইউরোপীয় কমিশন। যদিও ইইউ কর্মকর্তারা বলছেন, অভিবাসী প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে ঢাকা বেশ সহযোগিতামূলক আচরণ করেছে।
২০২১ সালের সর্বশেষ ইউরোস্টেটের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২১ শতাংশ অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে পেরেছে ইইউ। ইইউ’র এক কর্মকর্তা বলেন, এই পরিসংখ্যানের পরিমাণটা খুবই কম যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য অনেকটা অপ্রত্যাশিত।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য অভিবাসন একটি উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সংবেদনশীল বিষয়বস্তু। সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইউরোপে স্থায়ী অভিবাসন পাওয়া নাগরিকদের দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার চেয়েও অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো ও অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন মোকাবিলাকে গুরুত্ব দেয়।
ইউরোপীয় কমিশন সুপারিশ করেছে যে, গ্রহণযোগ্য ও সুপরিকল্পিত অভিবাসন ও আশ্রয়ের জন্য একটি সর্বজনীন ইউরোপীয় ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন যা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার লোক ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দারিদ্র্যপীড়িত ও যুদ্ধাঞ্চলগুলো থেকে ইউরোপে প্রবেশের একটি অন্যতম পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়াও প্রায় ৮০ লাখ ইউক্রেনীয় নাগরিক গত বছর ইউরোপে অভিবাসী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে।
ইইউ নীতিমালার সুবিধা ও সুযোগ ব্যবহার করে অঞ্চলটি থেকে অভিবাসীদের মূল দেশে ফেরত পাঠাতে কার্যকর প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে এক যৌথ বিবৃতিতে মন্তব্য করেন ইইউ অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রীরা।
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের উত্তর দিতে রুচিতে বাঁধে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তাদের ও সরকারের বক্তব্যের জবাব দেওয়া হবে রাজপথে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের এক যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ এবং ১০ দফা দাবি আদায়ে আগামী সপ্তাহে রাজধানীর চার স্থানে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালানো হচ্ছে। নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলছে। হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়ে নেতাকর্মীরা নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে গেলে নিম্ন আদালত তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এতে প্রমাণ হয় নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলছে। নির্যাতন নিপীড়ন ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘যারা দিনের ভোট রাতে করে যারা ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা দেয়, তাদের মুখে বিএনপির নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন নিয়ে কথা বলা মানায় না। তারা লজ্জা-শরমহীন।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবির আন্দোলন আরও বেশি সোচ্চার হবে, আরও বেশি বেগবান হবে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার, অত্যাচার, নির্যাতন ও গুলিবর্ষণ করে হত্যা করছে। দেশের জনগণের গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষাকে দমন করতে না পেরে তারা আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরবত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের পালন করা সাড়ে ২১ মণ ওজনের গরু উপহার দিতে চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাউনা গ্রামের সাধারণ কৃষক বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান। তাদের এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে উপহারের এই গরু গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপহারের গরু গ্রহণে সম্মতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন এবং এই বিরল ভালোবাসার জন্য বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
হাসান জাহিদ তুষার জানান, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এই গরু বুলবুল আহমেদের নিজ বাড়িতেই থাকবে এবং সেখানেই কোরবানি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরবানির গরুর মাংস স্থানীয় দরিদ্র-অসহায় জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গরুটি ক্রস ব্রাহমা প্রজাতির। এতে আনুমানিক ৮০০ কেজি মাংস হতে পারে বলে জানিয়েছেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল জানান, ২০২০ সালে নেত্রকোনা জেলা থেকে আড়াই লাখ টাকায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য তিনি এই গরু কেনেন। গরু কেনার পর কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত পাগলা মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা মানতও করছিলেন তিনি যেন তার গরুটি সুস্থ থাকে।
তিনি আরও জানান, তিনি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত তার স্ত্রী ইসরাত জাহান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই গরু কেনেন। তারা গত তিন বছর গরুটির নিবিড় পরিচর্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেগ ও ভালবাসা থেকে তারা এই গরু ক্রয় ও লালন পালন করেছেন বলে জানান।
উপহার হিসেবে তার গরুটি গ্রহণ করার সম্মতি দেওয়ায় বুলবুল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বুলবুল আহমেদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
বেশ ক'দিন তীব্র তাপদাহের পর গতকাল রাজধানী ঢাকাজুড়ে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা এসেছে কমে, পরিচ্ছন্ন হয়েছে পরিবেশ। তবুও আজ সকালে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে ঢাকা। বৃষ্টিধোয়া রাজধানী ঢাকা আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ১৫৫ স্কোর নিয়ে দূষণের তালিকায় চতুর্থ।
আজ শনিবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় বাতাসের স্কোর ছিল ১৫৫। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়। একই সময়ে একিউআই স্কোর ১৬৮ নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, স্কোর ১৫৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েলের তেলআবিব। আর পঞ্চম স্থানে আছে চীনের শেংডু, স্কোর ১৪৯।
একইসময়ে ১৩৮ স্কোর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেনেসবার্গ। ১৩২ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। অষ্টম নেপালের কাঠমান্ডু, স্কোর ১২৭। ১১৮ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট আর ১১৭ স্কোর নিয়ে দশম সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
তথ্যমতে, একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে 'ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়।
ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের আগুন তরুণদের বুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্র তৈরি করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’। স্বাধীনতার পর তিনি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বাঁধভাঙা ঢেউ তুলেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সবকিছু থেকে দূরে আড়ালে চলে যান। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। সেই রহস্য নায়ক সিরাজুল আলম খান চলে গেলেন চিররহস্যের দেশে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার কিছু পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১ জুন নেওয়া হয় আইসিইউতে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক (নুর)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন সংগঠন।
প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ ও নাট্য পরিচালক সাকিল সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষে রাতে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুনরায় জানাজা শেষে বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে রাজনীতির এ নায়ককে।
১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া এ কিংবদন্তি রাজনীতিককে বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে সিরাজুল আলম খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় ১৯৬২ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এ ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনো নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে খ্যাতি পান। অনুসারী সবাই তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
মূলত নব্বইয়ের দশকে সিরাজুল আলম খান কখনো জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। নব্বই পর্যন্ত একাধিকবার জেল-জুলুম খেটেছেন তিনি।
দাদা ভাইয়ের মৃত্যুত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, গণফোরাম একাংশে সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
ব্রাজিলের সান্তোস থেকে বার্সেলোনায় খেলতে এসেছিলেন নেইমার। তখন কাতালানদের মধ্যমণি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। দুই দেশের রাজনৈতিক বিরোধ চরমে। তবু সেসবকে পাশ কাটিয়ে দুজনে হয়ে ওঠেন বন্ধু।
ক্যাম্প ন্যু ছেড়ে নেইমার পাড়ি জমিয়েছিলেন প্যারিসে। তবুও বন্ধুত্ব ছিল অটুট। তার টানেই মেসিকে যখন বার্সা ছেড়ে দেয়, তখন এই ব্রাজিলিয়ান পার্ক দে প্রিন্সেসে ভেড়াতে মধ্যস্ততা করেন।
পিএসজির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে মেসির। কিংবদন্তি এই ফুটবলার এবার ফুটবল ছেড়ে যাচ্ছেন সকার খেলতে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়ে মাঠ মাতাবেন তিনি।
মেসি নিজে সেই ঘোষণা দেওয়ার আগ পর্যন্ত তার দলবদল নিয়ে চলছিল নানা নাটকীয়তা। সেই সব রহস্যময় দিনগুলোতে নেইমার কি জানতেন মেসির ঠিকানা হতে চলেছে কোনটা?
এক সাক্ষাৎকারে নেইমার বলেছেন, 'আমি জানতাম মেসি মায়ামিতে যাবে (হাসি)।'
তারপর নেইমার যোগ করেন, 'মেসি আমার সেরা বন্ধুদের একজন। সে আমাকে দারুণ সব মুহূর্ত উপহার দিয়েছে। আমি তার সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়েছি এটা আমার সৌভাগ্য। আমি জানতাম সে মায়ামিতে যাচ্ছে, এ নিয়ে আমার সঙ্গে তার কথাও হয়েছে। শহর ও জীবনযাত্রার কারণে মেসি সেখানে দারুণ সময় কাটাবে, এটা তাকে বলেছিলাম। আমি নিশ্চিত তার পদচারণায় দেশটির লিগে আসবে আমুল পরিবর্তন।'
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’