
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে তরুণ সমাজকে জ্ঞানার্জনে আত্মনিয়োগ করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ডে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। নবপ্রজন্ম জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করলেই কেবলমাত্র দেশ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় সংসদের শারদোৎসব সমন্বয় পর্ষদ আয়োজিত ‘শারদোৎসব’ এ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন।
শারদোৎসব অনুষ্ঠানে পঙ্কজ দেবনাথ এমপি এর উপস্থাপনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা উপস্থিত হয়ে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক, হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার এমপি, অসীম কুমার উকিল এমপি, মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি, খোদেজা নাসরিন আক্তার এমপি এবং সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে বিদ্যাচর্চার মাধ্যমে আমাদের জাতিগত উৎকর্ষ সাধনে উদ্যমী হতে হবে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে মেলবন্ধন আমরা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দেখতে পাই, সেটা অটুট রাখতে হবে।
স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের উপহার দিয়েছেন, উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা অর্জন করে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে তা সহায়ক হবে। তিনি বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে স্মার্ট গভর্ন্যান্স, স্মার্ট কমিউনিটি চর্চার মাধ্যমে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা মো. বদরুজ্জামান বাবু। গত ৫ ডিসেম্বর রাতে পরিবারের সাত সদস্যকে নিয়ে প্রাইভেটকারে ঘুরতে যান ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে। উদ্দেশ্য ছিল পদ্মার পাড়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাটে ইলিশ খেয়ে বাসায় ফেরা। সেখানে খাওয়া-দাওয়া শেষে গল্পগুজব করতে করতে সবাই খোশমেজাজে ফিরছিলেন বাসায়। কিন্তু দ্রুতই পরিবারটির এই আনন্দযাত্রা রূপ নেয় বিষাদে। রাত সোয়া ২টার দিকে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে কেরানীগঞ্জ সাউথ টাউন এলাকায় ডাকাত দলের কবলে পড়েন তারা। বদরুজ্জামান বাবুর ছেলে হৃদয়ের (১৬) গলায় চাকু ঠেকিয়ে অন্যদের মারপিট করে তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ১২-১৪ জনের ডাকাত দল। এ সময় পরিবারটির নারী সদস্যদের লাঞ্ছিতও করে ডাকাত দলের কয়েক সদস্য।
ওই রাতে সেখানে বাবুর গাড়ি ছাড়াও আরও চারটি গাড়িতে ডাকাতি হয়। এমনকি একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকেও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।
এর আগে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতেও এই সড়কে একাধিক গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সে সময় দুই যাত্রী গুরুতর আহত হন। তবে শুধু এই দুটি ঘটনাই নয়, সড়কটিতে রাতে অহরহই ঘটছে ঢাকাতির এমন ঘটনা। কখনো প্রাইভেটকারে যাত্রী তুলে ছিনতাই, কখনো গাড়ি থেকে যাত্রী নামার পর অস্ত্রের মুখে টাকা, মোবাইলফোন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করছেন কালেভদ্রে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পর থেকে রাজধানীর পোস্তগোলা সেতু থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরত্বের এই ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েটি অন্যতম বিনোদন স্পটে পরিণত হয়েছে। অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গভীর রাতে প্রাইভেটকারে ঘুরতে যান সড়কটিতে। চার লেনের এই মহাসড়কটিতেই ওঁৎ পেতে থাকে ডাকাতরা। গভীর রাতে চলন্ত প্রাইভেটকারে কখনো ঢিল মেরে আবার কখনো রাস্তা অবরোধ করে চলে ডাকাতি। শীতের সময় কুয়াশার মধ্যে এ সড়কে ডাকাতি বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। ডাকাত দলের কবলে পড়া ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করছেন না। গত দেড় মাসে ডাকাতির শিকার মাত্র তিনজন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাড়কটিতে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হাইওয়ে পুলিশের স্বল্পতা ও সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরার ব্যবস্থা না থাকায় ডাকাতরা সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি স্বীকারও করছেন ঢাকা জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রতি বছর শীতের প্রকোপ বাড়লেই কুয়াশা বাড়ে, আর এই সুযোগে বেশ কয়েকটি ডাকাত চক্র ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সুযোগ পেলেই ডাকাতি করে তারা। আশপাশের এলাকার অনেক বাসাবাড়িতেও তারা ডাকাতি করে। ডাকাতি-ছিনতাই রোধে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা গত বছরও এই ডাকাত চক্রের অনেককে গ্রেপ্তার করেছিলাম। তাদের অনেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। সর্বশেষ ১৪ জানুয়ারি ৯ ডাকাতকে গ্রেপ্তারও করেছে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে যে কোনো মূল্যে নিরাপদ রাখা হবে। জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে। পুরো সড়ক সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে আমরা প্রজেক্ট (প্রকল্প) হাতে নিয়েছি।’
ভুক্তভোগী বদরুজ্জামান বাবু ডাকাতির শিকার হওয়ার ভয়ংকর সেই রাতের বর্ণনা দিয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাতে আমার ব্যক্তিগত গাড়িটি নিজেই ড্রাইভ করছিলাম। স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, ভাগিনা ও বোনসহ মাওয়া ঘাটে ইলিশ খেয়ে বাসায় ফেরার পথে টোল প্লাজার কিছুটা দূরেই বেশ কিছু গাড়ি থেমে থাকতে দেখি। প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। কাছাকাছি গিয়ে দেখি কয়েকটি গাড়ি ফিরে যাচ্ছে। আমিও কিছু না বুঝেই গাড়ি ঘোরানোর চেষ্টা করি। কিন্তু এ সময় একটি পিক-আপ ভ্যান সড়কে আড়াআড়ি করে রেখে আমার গাড়ি থামায়। ১২ থেকে ১৪ জন লোক আমার গাড়িতে আঘাত করতে থাকে। তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। আমি বড় কোনো দুর্ঘটনার ভয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিই। এ সময় আমার ভাগনে ৯৯৯ (জাতীয় জরুরি সেবা)-এ ফোন দেওয়ার চেষ্টা করলে ফোনটি তারা কেড়ে নিয়ে বেদম পিটাতে থাকে তাকে।’
ডাকাত দলের এক সদস্য তার ১৪ বছর বয়সী ছেলের গলায় চাকু ঠেকায় জানিয়ে বদরুজ্জামান বাবু বলেন, ‘তারা (ডাকাতরা) বলে যা আছে সব দিয়ে দিতে। আমাদের কাছে থাকা ৪১ হাজার টাকা, সোনার চেইন, ৫টি মোবাইল ফোন সব দিয়ে দিলেও ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আমার বোন গাড়ি থেকে নেমে ছেলেকে তাদের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। পরে সোজা গাড়ি চালিয়ে ঘটনাস্থল ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় আমাদের। আমরা বাসায় ফিরে আসি। ভয়ে ওই ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগও করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই রাতে আমাদের গাড়িসহ আরও চারটি গাড়িতে ডাকাতি করে। একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকেও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। প্রতিটি গাড়িতে চার থেকে পাঁচ মিনিট ধরে ডাকাতি করে। কয়েকটি বাস এ সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও তারা লাইট ও বাসের দরজা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।’
ডাকাতির ওই ঘটনাস্থলটি পড়ে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকায়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহ জামান বলেন, ‘গত এক থেকে দেড় মাসে এই এলাকায় তিনটি ডাকাতির তথ্য আমরা পেয়েছি। এর বাইরেও ডাকাতির ঘটনা ঘটে, তবে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগই করতে চান না। ভুক্তভোগী বদরুজ্জামান বাবুও আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। পরবর্তী সময়ে আমরা একটি ডাকাত দলকে গ্রেপ্তার করলে সেই তথ্য গণমাধ্যমে দেখে তিনি এসে অভিযোগ করেন।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই এলাকাটির শীর্ষ ডাকাত শাওন। তার নেতৃত্বেই চলে ডাকাতি। তাকে ৫ থেকে ৬ বার গ্রেপ্তার করেছি। তবে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের ডাকাতি শুরু করে।’
ভুক্তভোগীরা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাসে নারী সদস্য বেশি থাকে সেগুলোকেই বেশি টার্গেট করে ডাকাতরা। তারা রাস্তার পাশে বসে দূর থেকে চলন্ত গাড়িতে ঢিল মারে। গাড়িতে ঢিল পড়ার পর চালক থেমে যান গাড়িটি দেখার জন্য, তখন ডাকাতরা গাড়ির সামনে গিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে চালক বা আরোহীদের মালামাল কেড়ে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে গাড়িতে থাকা কিশোরদের অপহরণের চেষ্টাও চালায় এসব ডাকাত, তাদের লক্ষ্য থাকে মুক্তিপণ আদায়ের। একটি গাড়িকে কৌশলে থামানোর পর ৩ থেকে ৪ মিনিটের মধ্যে শেষ করে ডাকাতির মিশন। টাকা-পয়সা দিতে না চাইলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে।
লোকসাহিত্য আমাদের জাতীয় সম্পদ। লোকজীবনের, লোকবিশ্বাসের, লোককথার অফুরান ভান্ডার। বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে ‘লোকায়ত’ শব্দটির অর্থ ‘লোকেষু আয়ত’ অর্থাৎ লোকে পরিব্যাপ্ত বিষয়। লোকসাহিত্য একাধারে জনগণের মধ্যে পরিব্যাপ্ত সাহিত্য এবং বস্তুবাদী চেতনার ধারক।
বাংলাদেশের আলপনাশিল্পের বিকাশ ও সমৃদ্ধি বাংলাদেশের নারীসমাজের হাতে। এ শিল্প বাংলাদেশের অতীত-আচার এবং লোকায়ত
কৃষি ও মাতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রত্যক্ষ উত্তরাধিকার। আলপনা, বিবিধ নকশা একান্তই নারীসমাজের সৃষ্টি। বাংলাদেশের মা-বোনের স্নেহ, ভালোবাসার আন্তরিক অভিব্যক্তি। আলপনা মানবজীবনকে আরও একটু সুন্দর, গভীর ও মধুময়, তাৎপর্যময় করতে প্রেরণা জোগায়।
বাংলাদেশের লোকায়ত শিল্পে মেয়েদের ভূমিকা নির্ণয়ে আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন বলেছেন ‘তাহারাই আমাদের শিল্পের জীবন রক্ষা করিয়াছেন, যাহা কিছু অভাব অভিযোগ তাহা স্নেহ দিয়া অতিমাত্রায় পূরণ করিতেন।’ তাই ‘রান্নাঘর ছিল তাহাদের শিল্পশালা, আলপনা শোভিত আঙিনা ছিল তাহাদের চিত্রশালা, নানারূপ কারুখচিত সামান্য দড়ির শিকা, মাটির হাঁড়ির রঞ্জিত চিত্রিত শোভা এ সকলের সহিত ভাঁড়ার ছিল তাহাদের চিত্রশালা, সামান্য শাড়ি ও ছেঁড়া কাপড়ের উপর কত চিত্র বিচিত্র কারুকার্য দেখাইয়া তাহারা যে কাঁথা ও বালিশের খোল, পানের বটুয়া তৈরী করিতেন, তাহাতে তাহাদের শয্যাগৃহ ছিল চিত্রশালা।’
বিশ্বকোষে বলা হয়েছে, ‘আলপনা’ শব্দটিই কৃষিকেন্দ্রিক জাদুবিশ্বাস-জাত। ‘আইল প্রস্তুত করা বা আইলপনা চিত্র দ্বারা সীমারেখা অঙ্কনের প্রথা থেকে আলপনা চিত্রের বিকাশ এবং দেশজ ‘আইলপনা’ শব্দের উৎপত্তি। তবে লোকসমাজে ও লোকপ্রচলনে আলপনা আঁকা কথাটি সচরাচর ব্যবহৃত হয় না, আলপনা দেওয়া কথাটাই ব্যবহৃত হয়।’
আলপনাচিত্রের পরিধি বহুদূর বিস্তৃত; এর বৈচিত্র্যও অফুরন্ত। এ সম্পর্কে প্রয়াত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বলেছিলেন ‘আলপনা যে কত রকমের তার হিসাব নিলে দেখা যায়, এখনকার আর্ট স্কুলের ছাত্রদের চেয়ে ঢের বেশি জিনিস মেয়েরা না শিখেই লিখছে এবং সৃষ্টিও করেছে।’
বাংলাদেশের নারীদের অঙ্গুলি-সঞ্চালন কৌশলে, পিঠালির রং আর মোটা ও সংরক্ষিত টানে মুদ্রিত হয় আলপনার চিত্রভাষা।
বাংলা লোকসাহিত্যে, লোককথায় ময়মনসিংহের আলপনাশিল্প বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, আলপনার মধ্য দিয়ে লোকসাহিত্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের রীতিনীতি ও সমাজব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। উদাহরণ: ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র কাজলরেখা পালায় কাজলরেখার আলপনার মধ্যে সেকালের রীতিনীতি ও প্রথার গ-ি-বহির্ভূত স্বাধীন শিল্পীমনের বিমল প্রকাশ ঘটেছে, যা পাঠককে চমকিত করে। লোকসাহিত্য সমালোচক ওয়াকিল আহমদ বলেছেন, আলপনার ভেতর দিয়ে বাঙালি ললনাদের ধর্মকর্মের বাইরেও স্বীয় চিত্তবৃত্তির বিকাশ ঘটেছে। তারা শিল্পের রূপ-পরিস্ফুরণের পথ দেখিয়েছে। আলপনায় তারই প্রমাণ পাওয়া যায়।
কাজলরেখার আলপনায় এরই প্রকাশ ঘটেছে
উত্তম সাইলের চাউল জলেতে ভিজাইয়া।
ধুইয়া মুছিয়া কন্যা লইল বাটিয়া।।
পিঠালি করিয়া কন্যা পরথমে আঁকিল।
বাপ আর মায়ের চরণ মনে গাঁথা ছিল।।
জোড়া টাইল আঁকে কন্যা আর ধানছড়া।
মাঝে মাঝে আঁকে কন্যা গিরলক্ষ্মীর পারা।।
সমুদ্র সাগর আঁকে চান্দ আর সুরুজে।
ভাঙ্গা মন্দির আঁকে কন্যা জঙ্গলার মাঝে।।
মেঝেতে শুইয়া আছে মরা সে কুমার।
কেবল নাই সে আঁকে কন্যা ছবি আপনার।।
সুইচ রাজার ছবি আঁকে পাত্র মিত্র লইয়া।
নিজেরে না আঁকে কন্যা রাখে ভাড়াইয়া।।
লোকসাহিত্যে আলপনার কথা এখানেই শেষ নয়। সুপ্রাচীনকাল থেকে আলপনা শুধু আমাদের লোকসাহিত্যে নয়, আমাদের লোকায়ত সমাজে বাঙালি নারীঐতিহ্যনির্ভর শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। সাধারণত আলপনা আঁকা হয় বৃত্তাকারে। চৌকো ত্রিকোনাকার অবয়বও থাকে।
আলপনার বৃত্তের কেন্দ্রে থাকে শতদল পদ্ম, প্রস্ফুটিত পদ্ম, শঙ্খপদ্ম, মঙ্গলপদ্ম, অষ্টদল পদ্ম, চরণপদ্ম, মীনপদ্ম, পূর্ণকু-, অষ্টকলসী, মঙ্গলকলসী, শাখা বিস্ফারিত কদম অথবা অন্যতর বৃক্ষকেন্দ্রের বৃত্তের চারপাশে শঙ্খলতা, কলসীলতা, কলমীলতা, কলা লতা, খুন্তিলতা, চালতালতা, দোপাটিলতা, চাঁপালতা, মোচালতা, শীষলতা প্রভৃতি বৃত্তাকারে সাজোনো হলে লতামঙ্গল হয়। এরকম পদ্মের চারদিকে বৃত্তাকারে সাজানো হলে পদ্মম-ল বা পদ্মচক্র হয়। এই কেন্দ্রের চিত্র অথবা ম-লকে ঘিরে থাকে বিভিন্ন পর্যায়ক্রমিক চিত্রলতা, পাতা, ফল, ফুল, মাছ, ধানছড়া, জীবজন্তু ও নানান গৃহস্থালি সরঞ্জাম। চৌকো আলপনায় কেন্দ্রের চিত্রের চারপাশের লতাম-ল অনেকটা চিত্রের ফ্রেমের কাজ করে।
আধুনিক চিত্রশিল্পীদের অনেকে আলপনার রূপ, চেতনা ও আঙ্গিককে জাতীয় চেতনা ও ঐতিহ্যের বাহক হিসেবে রূপায়িত করেন তাদের শিল্পে। দেশপ্রেমিক সমাজ ও সংস্কৃতিকর্মীরাও বাংলা নববর্ষে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে, স্বাধীনতা দিবসে ও বিজয় দিবসে জাতীয় ঐতিহ্য ও চেতনার প্রতীক হিসেবে রাস্তার মোড়ে মোড়ে রূপাংকিত করেন আলপনার ঐতিহ্যবাহী চিত্র।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক
ুধরফঁষধষধস@ুধযড়ড়.পড়স
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক বিষয়। শুরু থেকেই এর সমাধানের জন্য জোরালোভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও ভবিষ্যতে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা যাতে না আসে, সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র্যাব, আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা, আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ মিশনের মধ্যে নিয়মিতভাবে সমন্বয় সাধন করছে।’
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে ড. মোমেন বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরপরই আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। সে সময় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে কাজ করবে, সে ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা হয়। পরে তারই আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন সফর করে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করি। বৈঠকে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরি। ওই সফরে সিনেটর, কংগ্রেসম্যানসহ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক হয়। এতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তাদের সমর্থনের অনুরোধ করি। কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাস গঠনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করি।’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম সম্মেলন চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংগঠনবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল জে সিসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে র্যাবের ওপর দেশটির নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আলোচনা করেন বলেও জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, কাউন্সিলর ডেরেক এইচ চোলেটসহ দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু মানবাধিকার নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের গৃহীত উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
তিনি জানান, জাতিসংঘ সম্মেলন চলাকালে পররাষ্ট্র সচিব, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ককাসের তিনজন কো-চেয়ার কংগ্রেসম্যান জেরি কনোলি, কংগ্রেসম্যান স্টিভ জে চ্যাবট এবং কংগ্রেসম্যান ডেট ইভানসের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে ইউএস হাউজ কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান গ্রেগরি মিকসও অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ককাসের সদস্য স্টিভ চ্যাবট যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত হননি। ওয়াশিংটন ডিসির দূতাবাস বাংলাদেশ ককাসে আরেকজন সদস্য যুক্ত করার নিমিত্তে কাজ করে যাচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সঙ্গে সাক্ষাতে র্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচিত হয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ওই সময় ডোনাল্ড লু বর্তমান র্যাবের কার্যক্রমের বিশেষ প্রশংসা করেন।
ড. মোমেন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যাপারে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ নিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ইইউ’র অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রীরা এক বৈঠকে ভিসা সীমিতকরণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এতে বাংলাদেশের জন্যও একই পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে যেসব দেশ নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বা সহযোগিতামূলক আচরণ করছে না তাদের জন্য ভিসা সীমিতকরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর আগে এ ধরনের আচরণের জন্য গাম্বিয়ার প্রতি শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ইরাক, সেনেগাল ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে ইউরোপীয় কমিশন। যদিও ইইউ কর্মকর্তারা বলছেন, অভিবাসী প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে ঢাকা বেশ সহযোগিতামূলক আচরণ করেছে।
২০২১ সালের সর্বশেষ ইউরোস্টেটের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২১ শতাংশ অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে পেরেছে ইইউ। ইইউ’র এক কর্মকর্তা বলেন, এই পরিসংখ্যানের পরিমাণটা খুবই কম যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য অনেকটা অপ্রত্যাশিত।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য অভিবাসন একটি উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সংবেদনশীল বিষয়বস্তু। সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইউরোপে স্থায়ী অভিবাসন পাওয়া নাগরিকদের দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার চেয়েও অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো ও অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন মোকাবিলাকে গুরুত্ব দেয়।
ইউরোপীয় কমিশন সুপারিশ করেছে যে, গ্রহণযোগ্য ও সুপরিকল্পিত অভিবাসন ও আশ্রয়ের জন্য একটি সর্বজনীন ইউরোপীয় ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন যা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার লোক ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দারিদ্র্যপীড়িত ও যুদ্ধাঞ্চলগুলো থেকে ইউরোপে প্রবেশের একটি অন্যতম পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়াও প্রায় ৮০ লাখ ইউক্রেনীয় নাগরিক গত বছর ইউরোপে অভিবাসী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে।
ইইউ নীতিমালার সুবিধা ও সুযোগ ব্যবহার করে অঞ্চলটি থেকে অভিবাসীদের মূল দেশে ফেরত পাঠাতে কার্যকর প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে এক যৌথ বিবৃতিতে মন্তব্য করেন ইইউ অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রীরা।
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের উত্তর দিতে রুচিতে বাঁধে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তাদের ও সরকারের বক্তব্যের জবাব দেওয়া হবে রাজপথে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের এক যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ এবং ১০ দফা দাবি আদায়ে আগামী সপ্তাহে রাজধানীর চার স্থানে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালানো হচ্ছে। নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলছে। হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়ে নেতাকর্মীরা নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে গেলে নিম্ন আদালত তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এতে প্রমাণ হয় নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলছে। নির্যাতন নিপীড়ন ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘যারা দিনের ভোট রাতে করে যারা ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা দেয়, তাদের মুখে বিএনপির নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন নিয়ে কথা বলা মানায় না। তারা লজ্জা-শরমহীন।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবির আন্দোলন আরও বেশি সোচ্চার হবে, আরও বেশি বেগবান হবে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার, অত্যাচার, নির্যাতন ও গুলিবর্ষণ করে হত্যা করছে। দেশের জনগণের গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষাকে দমন করতে না পেরে তারা আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরবত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।