
অবৈধ অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে উদ্যোগ নিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গতকাল বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে ইইউ’র অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রীরা এক বৈঠকে ভিসা সীমিতকরণসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছেন। এতে বাংলাদেশের জন্যও একই পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে যেসব দেশ নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে বা সহযোগিতামূলক আচরণ করছে না তাদের জন্য ভিসা সীমিতকরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর আগে এ ধরনের আচরণের জন্য গাম্বিয়ার প্রতি শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে ইরাক, সেনেগাল ও বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও একই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেছে ইউরোপীয় কমিশন। যদিও ইইউ কর্মকর্তারা বলছেন, অভিবাসী প্রত্যাবর্তনের ক্ষেত্রে ঢাকা বেশ সহযোগিতামূলক আচরণ করেছে।
২০২১ সালের সর্বশেষ ইউরোস্টেটের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ২১ শতাংশ অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে পেরেছে ইইউ। ইইউ’র এক কর্মকর্তা বলেন, এই পরিসংখ্যানের পরিমাণটা খুবই কম যা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য অনেকটা অপ্রত্যাশিত।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য অভিবাসন একটি উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সংবেদনশীল বিষয়বস্তু। সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইউরোপে স্থায়ী অভিবাসন পাওয়া নাগরিকদের দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ার চেয়েও অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো ও অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন মোকাবিলাকে গুরুত্ব দেয়।
ইউরোপীয় কমিশন সুপারিশ করেছে যে, গ্রহণযোগ্য ও সুপরিকল্পিত অভিবাসন ও আশ্রয়ের জন্য একটি সর্বজনীন ইউরোপীয় ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন যা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার লোক ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করেছে। মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দারিদ্র্যপীড়িত ও যুদ্ধাঞ্চলগুলো থেকে ইউরোপে প্রবেশের একটি অন্যতম পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এছাড়াও প্রায় ৮০ লাখ ইউক্রেনীয় নাগরিক গত বছর ইউরোপে অভিবাসী হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে।
ইইউ নীতিমালার সুবিধা ও সুযোগ ব্যবহার করে অঞ্চলটি থেকে অভিবাসীদের মূল দেশে ফেরত পাঠাতে কার্যকর প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে এক যৌথ বিবৃতিতে মন্তব্য করেন ইইউ অভিবাসনবিষয়ক মন্ত্রীরা।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা মো. বদরুজ্জামান বাবু। গত ৫ ডিসেম্বর রাতে পরিবারের সাত সদস্যকে নিয়ে প্রাইভেটকারে ঘুরতে যান ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে। উদ্দেশ্য ছিল পদ্মার পাড়ে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাটে ইলিশ খেয়ে বাসায় ফেরা। সেখানে খাওয়া-দাওয়া শেষে গল্পগুজব করতে করতে সবাই খোশমেজাজে ফিরছিলেন বাসায়। কিন্তু দ্রুতই পরিবারটির এই আনন্দযাত্রা রূপ নেয় বিষাদে। রাত সোয়া ২টার দিকে বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েতে কেরানীগঞ্জ সাউথ টাউন এলাকায় ডাকাত দলের কবলে পড়েন তারা। বদরুজ্জামান বাবুর ছেলে হৃদয়ের (১৬) গলায় চাকু ঠেকিয়ে অন্যদের মারপিট করে তাদের কাছে থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ১২-১৪ জনের ডাকাত দল। এ সময় পরিবারটির নারী সদস্যদের লাঞ্ছিতও করে ডাকাত দলের কয়েক সদস্য।
ওই রাতে সেখানে বাবুর গাড়ি ছাড়াও আরও চারটি গাড়িতে ডাকাতি হয়। এমনকি একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকেও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।
এর আগে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতেও এই সড়কে একাধিক গাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সে সময় দুই যাত্রী গুরুতর আহত হন। তবে শুধু এই দুটি ঘটনাই নয়, সড়কটিতে রাতে অহরহই ঘটছে ঢাকাতির এমন ঘটনা। কখনো প্রাইভেটকারে যাত্রী তুলে ছিনতাই, কখনো গাড়ি থেকে যাত্রী নামার পর অস্ত্রের মুখে টাকা, মোবাইলফোন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করছেন কালেভদ্রে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পর থেকে রাজধানীর পোস্তগোলা সেতু থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরত্বের এই ঢাকা-মাওয়া বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়েটি অন্যতম বিনোদন স্পটে পরিণত হয়েছে। অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গভীর রাতে প্রাইভেটকারে ঘুরতে যান সড়কটিতে। চার লেনের এই মহাসড়কটিতেই ওঁৎ পেতে থাকে ডাকাতরা। গভীর রাতে চলন্ত প্রাইভেটকারে কখনো ঢিল মেরে আবার কখনো রাস্তা অবরোধ করে চলে ডাকাতি। শীতের সময় কুয়াশার মধ্যে এ সড়কে ডাকাতি বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। ডাকাত দলের কবলে পড়া ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করছেন না। গত দেড় মাসে ডাকাতির শিকার মাত্র তিনজন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় অভিযোগ করেছেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাড়কটিতে নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। হাইওয়ে পুলিশের স্বল্পতা ও সিসি (ক্লোজ সার্কিট) ক্যামেরার ব্যবস্থা না থাকায় ডাকাতরা সহজেই পার পেয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি স্বীকারও করছেন ঢাকা জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রতি বছর শীতের প্রকোপ বাড়লেই কুয়াশা বাড়ে, আর এই সুযোগে বেশ কয়েকটি ডাকাত চক্র ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে সক্রিয় হয়ে ওঠে। সুযোগ পেলেই ডাকাতি করে তারা। আশপাশের এলাকার অনেক বাসাবাড়িতেও তারা ডাকাতি করে। ডাকাতি-ছিনতাই রোধে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। হাইওয়ে পুলিশ ও জেলা পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা গত বছরও এই ডাকাত চক্রের অনেককে গ্রেপ্তার করেছিলাম। তাদের অনেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে। এ বিষয়ে আমরা সতর্ক আছি। সর্বশেষ ১৪ জানুয়ারি ৯ ডাকাতকে গ্রেপ্তারও করেছে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ে যে কোনো মূল্যে নিরাপদ রাখা হবে। জেলা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে। পুরো সড়ক সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে আমরা প্রজেক্ট (প্রকল্প) হাতে নিয়েছি।’
ভুক্তভোগী বদরুজ্জামান বাবু ডাকাতির শিকার হওয়ার ভয়ংকর সেই রাতের বর্ণনা দিয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রাতে আমার ব্যক্তিগত গাড়িটি নিজেই ড্রাইভ করছিলাম। স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, ভাগিনা ও বোনসহ মাওয়া ঘাটে ইলিশ খেয়ে বাসায় ফেরার পথে টোল প্লাজার কিছুটা দূরেই বেশ কিছু গাড়ি থেমে থাকতে দেখি। প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছে। কাছাকাছি গিয়ে দেখি কয়েকটি গাড়ি ফিরে যাচ্ছে। আমিও কিছু না বুঝেই গাড়ি ঘোরানোর চেষ্টা করি। কিন্তু এ সময় একটি পিক-আপ ভ্যান সড়কে আড়াআড়ি করে রেখে আমার গাড়ি থামায়। ১২ থেকে ১৪ জন লোক আমার গাড়িতে আঘাত করতে থাকে। তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র ছিল। আমি বড় কোনো দুর্ঘটনার ভয়ে গাড়ির দরজা খুলে দিই। এ সময় আমার ভাগনে ৯৯৯ (জাতীয় জরুরি সেবা)-এ ফোন দেওয়ার চেষ্টা করলে ফোনটি তারা কেড়ে নিয়ে বেদম পিটাতে থাকে তাকে।’
ডাকাত দলের এক সদস্য তার ১৪ বছর বয়সী ছেলের গলায় চাকু ঠেকায় জানিয়ে বদরুজ্জামান বাবু বলেন, ‘তারা (ডাকাতরা) বলে যা আছে সব দিয়ে দিতে। আমাদের কাছে থাকা ৪১ হাজার টাকা, সোনার চেইন, ৫টি মোবাইল ফোন সব দিয়ে দিলেও ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় আমার বোন গাড়ি থেকে নেমে ছেলেকে তাদের থেকে ছাড়িয়ে নেয়। পরে সোজা গাড়ি চালিয়ে ঘটনাস্থল ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় আমাদের। আমরা বাসায় ফিরে আসি। ভয়ে ওই ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগও করিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই রাতে আমাদের গাড়িসহ আরও চারটি গাড়িতে ডাকাতি করে। একটি অ্যাম্বুলেন্স থেকেও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়। প্রতিটি গাড়িতে চার থেকে পাঁচ মিনিট ধরে ডাকাতি করে। কয়েকটি বাস এ সময় ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও তারা লাইট ও বাসের দরজা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে।’
ডাকাতির ওই ঘটনাস্থলটি পড়ে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকায়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহ জামান বলেন, ‘গত এক থেকে দেড় মাসে এই এলাকায় তিনটি ডাকাতির তথ্য আমরা পেয়েছি। এর বাইরেও ডাকাতির ঘটনা ঘটে, তবে ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগই করতে চান না। ভুক্তভোগী বদরুজ্জামান বাবুও আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। পরবর্তী সময়ে আমরা একটি ডাকাত দলকে গ্রেপ্তার করলে সেই তথ্য গণমাধ্যমে দেখে তিনি এসে অভিযোগ করেন।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এই এলাকাটির শীর্ষ ডাকাত শাওন। তার নেতৃত্বেই চলে ডাকাতি। তাকে ৫ থেকে ৬ বার গ্রেপ্তার করেছি। তবে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের ডাকাতি শুরু করে।’
ভুক্তভোগীরা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব প্রাইভেটকার বা মাইক্রোবাসে নারী সদস্য বেশি থাকে সেগুলোকেই বেশি টার্গেট করে ডাকাতরা। তারা রাস্তার পাশে বসে দূর থেকে চলন্ত গাড়িতে ঢিল মারে। গাড়িতে ঢিল পড়ার পর চালক থেমে যান গাড়িটি দেখার জন্য, তখন ডাকাতরা গাড়ির সামনে গিয়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে চালক বা আরোহীদের মালামাল কেড়ে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে গাড়িতে থাকা কিশোরদের অপহরণের চেষ্টাও চালায় এসব ডাকাত, তাদের লক্ষ্য থাকে মুক্তিপণ আদায়ের। একটি গাড়িকে কৌশলে থামানোর পর ৩ থেকে ৪ মিনিটের মধ্যে শেষ করে ডাকাতির মিশন। টাকা-পয়সা দিতে না চাইলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে।
লোকসাহিত্য আমাদের জাতীয় সম্পদ। লোকজীবনের, লোকবিশ্বাসের, লোককথার অফুরান ভান্ডার। বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি ও ঐতিহ্যে ‘লোকায়ত’ শব্দটির অর্থ ‘লোকেষু আয়ত’ অর্থাৎ লোকে পরিব্যাপ্ত বিষয়। লোকসাহিত্য একাধারে জনগণের মধ্যে পরিব্যাপ্ত সাহিত্য এবং বস্তুবাদী চেতনার ধারক।
বাংলাদেশের আলপনাশিল্পের বিকাশ ও সমৃদ্ধি বাংলাদেশের নারীসমাজের হাতে। এ শিল্প বাংলাদেশের অতীত-আচার এবং লোকায়ত
কৃষি ও মাতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রত্যক্ষ উত্তরাধিকার। আলপনা, বিবিধ নকশা একান্তই নারীসমাজের সৃষ্টি। বাংলাদেশের মা-বোনের স্নেহ, ভালোবাসার আন্তরিক অভিব্যক্তি। আলপনা মানবজীবনকে আরও একটু সুন্দর, গভীর ও মধুময়, তাৎপর্যময় করতে প্রেরণা জোগায়।
বাংলাদেশের লোকায়ত শিল্পে মেয়েদের ভূমিকা নির্ণয়ে আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন বলেছেন ‘তাহারাই আমাদের শিল্পের জীবন রক্ষা করিয়াছেন, যাহা কিছু অভাব অভিযোগ তাহা স্নেহ দিয়া অতিমাত্রায় পূরণ করিতেন।’ তাই ‘রান্নাঘর ছিল তাহাদের শিল্পশালা, আলপনা শোভিত আঙিনা ছিল তাহাদের চিত্রশালা, নানারূপ কারুখচিত সামান্য দড়ির শিকা, মাটির হাঁড়ির রঞ্জিত চিত্রিত শোভা এ সকলের সহিত ভাঁড়ার ছিল তাহাদের চিত্রশালা, সামান্য শাড়ি ও ছেঁড়া কাপড়ের উপর কত চিত্র বিচিত্র কারুকার্য দেখাইয়া তাহারা যে কাঁথা ও বালিশের খোল, পানের বটুয়া তৈরী করিতেন, তাহাতে তাহাদের শয্যাগৃহ ছিল চিত্রশালা।’
বিশ্বকোষে বলা হয়েছে, ‘আলপনা’ শব্দটিই কৃষিকেন্দ্রিক জাদুবিশ্বাস-জাত। ‘আইল প্রস্তুত করা বা আইলপনা চিত্র দ্বারা সীমারেখা অঙ্কনের প্রথা থেকে আলপনা চিত্রের বিকাশ এবং দেশজ ‘আইলপনা’ শব্দের উৎপত্তি। তবে লোকসমাজে ও লোকপ্রচলনে আলপনা আঁকা কথাটি সচরাচর ব্যবহৃত হয় না, আলপনা দেওয়া কথাটাই ব্যবহৃত হয়।’
আলপনাচিত্রের পরিধি বহুদূর বিস্তৃত; এর বৈচিত্র্যও অফুরন্ত। এ সম্পর্কে প্রয়াত শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বলেছিলেন ‘আলপনা যে কত রকমের তার হিসাব নিলে দেখা যায়, এখনকার আর্ট স্কুলের ছাত্রদের চেয়ে ঢের বেশি জিনিস মেয়েরা না শিখেই লিখছে এবং সৃষ্টিও করেছে।’
বাংলাদেশের নারীদের অঙ্গুলি-সঞ্চালন কৌশলে, পিঠালির রং আর মোটা ও সংরক্ষিত টানে মুদ্রিত হয় আলপনার চিত্রভাষা।
বাংলা লোকসাহিত্যে, লোককথায় ময়মনসিংহের আলপনাশিল্প বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, আলপনার মধ্য দিয়ে লোকসাহিত্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ের রীতিনীতি ও সমাজব্যবস্থার পরিচয় পাওয়া যায়। উদাহরণ: ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র কাজলরেখা পালায় কাজলরেখার আলপনার মধ্যে সেকালের রীতিনীতি ও প্রথার গ-ি-বহির্ভূত স্বাধীন শিল্পীমনের বিমল প্রকাশ ঘটেছে, যা পাঠককে চমকিত করে। লোকসাহিত্য সমালোচক ওয়াকিল আহমদ বলেছেন, আলপনার ভেতর দিয়ে বাঙালি ললনাদের ধর্মকর্মের বাইরেও স্বীয় চিত্তবৃত্তির বিকাশ ঘটেছে। তারা শিল্পের রূপ-পরিস্ফুরণের পথ দেখিয়েছে। আলপনায় তারই প্রমাণ পাওয়া যায়।
কাজলরেখার আলপনায় এরই প্রকাশ ঘটেছে
উত্তম সাইলের চাউল জলেতে ভিজাইয়া।
ধুইয়া মুছিয়া কন্যা লইল বাটিয়া।।
পিঠালি করিয়া কন্যা পরথমে আঁকিল।
বাপ আর মায়ের চরণ মনে গাঁথা ছিল।।
জোড়া টাইল আঁকে কন্যা আর ধানছড়া।
মাঝে মাঝে আঁকে কন্যা গিরলক্ষ্মীর পারা।।
সমুদ্র সাগর আঁকে চান্দ আর সুরুজে।
ভাঙ্গা মন্দির আঁকে কন্যা জঙ্গলার মাঝে।।
মেঝেতে শুইয়া আছে মরা সে কুমার।
কেবল নাই সে আঁকে কন্যা ছবি আপনার।।
সুইচ রাজার ছবি আঁকে পাত্র মিত্র লইয়া।
নিজেরে না আঁকে কন্যা রাখে ভাড়াইয়া।।
লোকসাহিত্যে আলপনার কথা এখানেই শেষ নয়। সুপ্রাচীনকাল থেকে আলপনা শুধু আমাদের লোকসাহিত্যে নয়, আমাদের লোকায়ত সমাজে বাঙালি নারীঐতিহ্যনির্ভর শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। সাধারণত আলপনা আঁকা হয় বৃত্তাকারে। চৌকো ত্রিকোনাকার অবয়বও থাকে।
আলপনার বৃত্তের কেন্দ্রে থাকে শতদল পদ্ম, প্রস্ফুটিত পদ্ম, শঙ্খপদ্ম, মঙ্গলপদ্ম, অষ্টদল পদ্ম, চরণপদ্ম, মীনপদ্ম, পূর্ণকু-, অষ্টকলসী, মঙ্গলকলসী, শাখা বিস্ফারিত কদম অথবা অন্যতর বৃক্ষকেন্দ্রের বৃত্তের চারপাশে শঙ্খলতা, কলসীলতা, কলমীলতা, কলা লতা, খুন্তিলতা, চালতালতা, দোপাটিলতা, চাঁপালতা, মোচালতা, শীষলতা প্রভৃতি বৃত্তাকারে সাজোনো হলে লতামঙ্গল হয়। এরকম পদ্মের চারদিকে বৃত্তাকারে সাজানো হলে পদ্মম-ল বা পদ্মচক্র হয়। এই কেন্দ্রের চিত্র অথবা ম-লকে ঘিরে থাকে বিভিন্ন পর্যায়ক্রমিক চিত্রলতা, পাতা, ফল, ফুল, মাছ, ধানছড়া, জীবজন্তু ও নানান গৃহস্থালি সরঞ্জাম। চৌকো আলপনায় কেন্দ্রের চিত্রের চারপাশের লতাম-ল অনেকটা চিত্রের ফ্রেমের কাজ করে।
আধুনিক চিত্রশিল্পীদের অনেকে আলপনার রূপ, চেতনা ও আঙ্গিককে জাতীয় চেতনা ও ঐতিহ্যের বাহক হিসেবে রূপায়িত করেন তাদের শিল্পে। দেশপ্রেমিক সমাজ ও সংস্কৃতিকর্মীরাও বাংলা নববর্ষে, একুশে ফেব্রুয়ারিতে, স্বাধীনতা দিবসে ও বিজয় দিবসে জাতীয় ঐতিহ্য ও চেতনার প্রতীক হিসেবে রাস্তার মোড়ে মোড়ে রূপাংকিত করেন আলপনার ঐতিহ্যবাহী চিত্র।
লেখক: শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক
ুধরফঁষধষধস@ুধযড়ড়.পড়স
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক বিষয়। শুরু থেকেই এর সমাধানের জন্য জোরালোভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তরে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও ভবিষ্যতে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা যাতে না আসে, সে ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অন্যান্য সংস্থা একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র্যাব, আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা, আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ মিশনের মধ্যে নিয়মিতভাবে সমন্বয় সাধন করছে।’
র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে ড. মোমেন বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরপরই আমি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলি। সে সময় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে কাজ করবে, সে ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা হয়। পরে তারই আমন্ত্রণে ওয়াশিংটন সফর করে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করি। বৈঠকে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নয়ন নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরি। ওই সফরে সিনেটর, কংগ্রেসম্যানসহ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক হয়। এতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তাদের সমর্থনের অনুরোধ করি। কংগ্রেসনাল বাংলাদেশ ককাস গঠনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করি।’
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম সম্মেলন চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংগঠনবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিশেল জে সিসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে র্যাবের ওপর দেশটির নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আলোচনা করেন বলেও জানান তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু, কাউন্সিলর ডেরেক এইচ চোলেটসহ দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সে সময় সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু মানবাধিকার নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের গৃহীত উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
তিনি জানান, জাতিসংঘ সম্মেলন চলাকালে পররাষ্ট্র সচিব, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ককাসের তিনজন কো-চেয়ার কংগ্রেসম্যান জেরি কনোলি, কংগ্রেসম্যান স্টিভ জে চ্যাবট এবং কংগ্রেসম্যান ডেট ইভানসের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে ইউএস হাউজ কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান গ্রেগরি মিকসও অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ ককাসের সদস্য স্টিভ চ্যাবট যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে নির্বাচিত হননি। ওয়াশিংটন ডিসির দূতাবাস বাংলাদেশ ককাসে আরেকজন সদস্য যুক্ত করার নিমিত্তে কাজ করে যাচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সঙ্গে সাক্ষাতে র্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচিত হয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ওই সময় ডোনাল্ড লু বর্তমান র্যাবের কার্যক্রমের বিশেষ প্রশংসা করেন।
ড. মোমেন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ওয়াশিংটন ডিসির বাংলাদেশ দূতাবাস আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ব্যাপারে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেছেন, সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে তরুণ সমাজকে জ্ঞানার্জনে আত্মনিয়োগ করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক ডেভিডেন্ডে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। নবপ্রজন্ম জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করলেই কেবলমাত্র দেশ এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে সক্ষম হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় সংসদের শারদোৎসব সমন্বয় পর্ষদ আয়োজিত ‘শারদোৎসব’ এ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন।
শারদোৎসব অনুষ্ঠানে পঙ্কজ দেবনাথ এমপি এর উপস্থাপনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা উপস্থিত হয়ে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।
এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক, হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, সাবেক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার এমপি, অসীম কুমার উকিল এমপি, মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি, খোদেজা নাসরিন আক্তার এমপি এবং সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে বিদ্যাচর্চার মাধ্যমে আমাদের জাতিগত উৎকর্ষ সাধনে উদ্যমী হতে হবে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে মেলবন্ধন আমরা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দেখতে পাই, সেটা অটুট রাখতে হবে।
স্পিকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের উপহার দিয়েছেন, উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা অর্জন করে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে তা সহায়ক হবে। তিনি বলেন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে স্মার্ট গভর্ন্যান্স, স্মার্ট কমিউনিটি চর্চার মাধ্যমে জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও বৈষম্যমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের উত্তর দিতে রুচিতে বাঁধে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, তাদের ও সরকারের বক্তব্যের জবাব দেওয়া হবে রাজপথে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতাদের এক যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। ওই সংবাদ সম্মেলন থেকে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ এবং ১০ দফা দাবি আদায়ে আগামী সপ্তাহে রাজধানীর চার স্থানে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালানো হচ্ছে। নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলছে। হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিয়ে নেতাকর্মীরা নিম্ন আদালতে হাজিরা দিতে গেলে নিম্ন আদালত তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। এতে প্রমাণ হয় নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলছে। নির্যাতন নিপীড়ন ভয়াবহ পর্যায়ে নিয়ে গেছে সরকার।’
তিনি বলেন, ‘যারা দিনের ভোট রাতে করে যারা ১৫৪ জনকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা দেয়, তাদের মুখে বিএনপির নেতৃত্ব ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন নিয়ে কথা বলা মানায় না। তারা লজ্জা-শরমহীন।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবির আন্দোলন আরও বেশি সোচ্চার হবে, আরও বেশি বেগবান হবে।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গণতন্ত্রকামী আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার, অত্যাচার, নির্যাতন ও গুলিবর্ষণ করে হত্যা করছে। দেশের জনগণের গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষাকে দমন করতে না পেরে তারা আরও হিংস্র হয়ে উঠেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর শরবত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশেষ কোনো চাপ নেই, অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীল রাখতে এবারের বাজেটে থাকছে ধারাবাহিকতা।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে ঘোষিত হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে 'গরিববান্ধব' উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে সবার জন্য বাজেট ঠিক করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আকার বড় হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে যাত্রার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাজেট সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিকেলে জাতীয় সংসদে সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রবিবার (৪ জুন) থেকে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।