
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সবধরনের মাছের দাম বেড়েছে। সবজি বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। মুরগি সামান্য বাড়লেও গরু ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের দরেই। মুদি পণ্য আটায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। কেজিতে কমেছে ৪-৫ টাকা। ডিম কিছুটা বাড়লেও চাল বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কলাবাগান ও মোহাম্মদপুর বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ২৫০ টাকার চাষের কই এ সপ্তাহে ২৬০, ২০০-২১০ টাকার ছোট রুই মাছ ২২০, ৩২০-৩৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া বড় রুই মাছ ৩৪০ ও ২১০ টাকায় বিক্রি হওয়া মৃগেল মাছ ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘেরের পানি কমে যাওয়ায় শীতে মাছ কিছুটা কম ধরা পড়ে। এতে রাজধানীর বাজারগুলোতে চাহিদার তুলনায় মাছের আমদানি অনেকটা কমেছে এবং স্বাভাবিকভাবেই আমদানি কম হওয়ায় মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে।
কাওরান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সোহাগ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বাজারে মাছের সরবরাহও কম রয়েছে। ফলে নতুন করে সবধরনের মাছের কেজিপ্রতি ১০ টাকার বেশি বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি শিং মাছ ৪৫০-৫৩০, ছোট রুই ২২০, বড় রুই ৩৫০, চাষের কই মাছ ২৬০, দেশি কই মাছ ১ হাজার ২৫০, ১ কেজি সাইজের ইলিশ ১১০০-১২০০ ও ৫শ গ্রামের ইলিশ ৫৫০-৬০০ টাকা করে বিক্রি করছি।’
এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের মতো স্থিতিশীল রয়েছে সবজির দাম। প্রতি কেজি মুলা ৪০, ফুলকপি ৪০, টমেটো ৫০-৫৫, মরিচ ১০০-১২০, বেগুন ৪০-৬০, শালগম ৩০-৩৫, শসা ৪০-৪৫, প্রতি পিচ লাউ ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে স্থিতিশীল সবজির বাজারে মুদিপণ্যের মধ্যে ভোক্তার স্বস্তি মিলছে আটাতে। প্যাকেটজাত সবধরনের আটাতে কেজিপ্রতি কমেছে ৪-৫ টাকা করে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আটা ৫৩-৫৪ টাকা করে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। কাওরান বাজারের আটার পাইকারি ব্যবসায়ী ইব্রাহিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে আটার দাম অনেক কমেছে। এখন প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আটা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৫০ থেকে ২ হাজার ৭শ টাকা করে। এর মধ্যে চাকা ও ইউসুফের আটার বস্তা ২ হাজার ৭শ ও বসুন্ধরার আটা বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার টাকা।’
মোহাম্মদপুর এলাকার মা স্টোরের স্বত্বাধিকারী রাকিব দেশ রূপান্তরকে জানান, গত কয়েক দিন ধরেই সব কোম্পানি প্যাকেটজাত আটার দাম কমাতে শুরু করেছে। ১৫ টাকা কমে তীরের দুই কেজির আটা বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা, ১০ টাকা কমে সাধের দুই কেজি আটা বিক্রি করছি ১৩৫ টাকা, বসুন্ধরা ১৩৪ টাকা, পুষ্টি ১৪০ টাকা করে।
এ ছাড়া চালের বাজারে খবর নিয়ে জানা যায়, সবধরনের চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে মোটা জাতের চালের মধ্যে প্রতি কেজি স্বর্ণা ৫০-৫২, আটাশ ৫৪-৫৫, পাইজাম ৫২-৫৩, নাজির ৭০-৮২, মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরায় এসব চালের কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা বাড়তি দামে কিনতে দেখা গিয়েছে ক্রেতাদের।
কলাবাগান বাজারের মুদি দোকানি সাইম স্টোরের স্বত্বাধিকারী কাশেম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, চালের দাম আগের মতোই রয়েছে। বাড়ছেও না কমছেও না। তবে ডিমের দাম কিছুটা বাড়তির দিকে রয়েছে। প্রতি ডজন ব্রয়লার মুরগির ডিম কেনা অনুযায়ী ১৩০ টাকার নিচে বিক্রি করলে ডজনপ্রতি ১০ টাকা লস দিতে হবে। তা ছাড়াও হাঁসের ডিমের দামটাও অনেক বেশি। প্রতি ডজন দেশি হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা করে।
ডিমের মতো মাংসের বাজারের একই অবস্থা দেখা গিয়েছে। বাজার ভেদে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। পাকিস্তানি লাল ২৮০-৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫১০-৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগি ছাড়াও মাংসের মধ্যে গরু ৭০০, খাসি ১ হাজার ১০০ ও বকরির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা করে।
পরিবারের সঙ্গে অভিমান, প্রেমের সম্পর্কে টানাপড়েন, পারিবারিক কলহ, ইভটিজিং ও যৌন হয়রানি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যাপ্রবণ করে তুলছে। এ ছাড়া আপত্তিকর ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া, গেম খেলতে বাধা দেওয়া, পরীক্ষায় অকৃতকার্য, মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়াসহ পড়াশোনার চাপ অনুভব করায় কোনো কোনো শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। ২০২২ সালের সারা দেশে ৪৪৬ জন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। গড় হিসাবে যা দাঁড়ায় প্রতি মাসে প্রায় ৪৪.৩৩ জন।
সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে তৈরি করা এক সমীক্ষার এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা : সমাধান কোন পথে?’ শীর্ষক এই সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সমীক্ষামতে, মোট আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। আটটি বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিভাগে ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী।
আঁচল ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবণী জানান, দেশের দেড় শতাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহননের তথ্য নেওয়া হয়েছে তাদের এ সমীক্ষায়।
আত্মহত্যায় শীর্ষে ঢাকা : দেশের আটটি বিভাগে স্কুল ও কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিভাগে ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এরপর চট্টগ্রামে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ, খুলনায় ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সিলেটে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
আত্মহত্যায় নারীরা এগিয়ে : স্কুল এবং কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা এগিয়ে রয়েছে নারীরা। আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ৬৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। অন্যদিকে শুধু কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী ৫৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং পুরুষ ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ রয়েছে।
বয়ঃসন্ধিকালে ঝুঁকি বেশি : সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী সবচেয়ে বেশি ৪০৫ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করছে। যা মোট আত্মহত্যাকারীর ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ। তার মধ্যে নারী ৬৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী ৪৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ৪৬ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পুরুষ ৫৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নিতে প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয় বলেই এ বয়সে আত্মহত্যার হার বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
আত্মহত্যার পেছনের কারণ : সমীক্ষায় উঠে আসা বেশ সমীক্ষায় উঠে আসা বেশ কিছু কারণের মধ্যে দেখা যায়, মান-অভিমান তাদের সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে। ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ স্কুল ও কলেজশিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে অভিমান করে। এদের বড় অংশেরই অভিমান হয়েছে পরিবারের সঙ্গে। অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেÑ প্রেমঘটিত কারণে ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ, পারিবারিক কলহে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ, হতাশাগ্রস্ততায় ২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, মানসিক সমস্যায় ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, আর্থিক সমস্যা ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, উত্ত্যক্ত, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথে ধাবিত হয়েছে ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। তবে আত্মহত্যার পেছনে বেশ কিছু ভিন্ন কারণও উঠে এসেছে। যেমনÑ আপত্তিকর ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় ৪, শিক্ষক কর্র্তৃক অপমানিত হয়ে ৬, গেম খেলতে বাধা দেওয়ায় ৭, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ২৭, মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায় ১০, মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় ৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়াও পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না পাওয়া, পড়াশোনার চাপ অনুভব করা এবং পারিবারিক চাপে আত্মহত্যার কারণ রয়েছে।
পারিবারিক কলহেও আত্মহত্যা বাড়ছে : মামার বাড়ি যাওয়া নিয়ে ভাইবোনের মধ্যে কলহ, বাবাকে খাবার পৌঁছে দেওয়া নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে কলহ, পরীক্ষা দিতে না চাওয়ায় বাবা-মায়ের সঙ্গে কলহ, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ নিয়ে সন্তানের সঙ্গে কলহ ইত্যাদি বিভিন্ন পারিবারিক কলহে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ স্কুল ও কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার জন্য দায়ী। মোট আত্মহত্যাকারী স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারিবারিক কলহের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। শুধু কলেজগামী আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা করে ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী।
আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের মন সাধারণত ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়। এ বয়সে ছোট ছোট বিষয় তাদের আন্দোলিত করে। বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক বিকাশের সঙ্গে অনেকেই খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে তাদের প্রত্যাশার ক্ষেত্রে ছোটখাটো ঘাটতিও তাদের আত্মহত্যার মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।’
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, একজন শিশু বা কিশোরের আত্মহত্যার কারণ আমাদের কাছে যতই ঠুনকো হোক না কেন, তাদের কাছে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের আবেগের গুরুত্ব পাওয়ার অধিকার তারা রাখে।’
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট শাহরিনা ফেরদৌস বলেন, ‘২০২২ সালের এ জরিপে দেখা যাচ্ছে, ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা অনেক বেশি। অর্থাৎ তারা যে বয়ঃসন্ধিকালের সময়টি পার করছে এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং এ সময়ে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যতœ এবং সচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। কী কারণে তাদের সংখ্যা গত বছর এত বেশি ছিল তার কারণগুলো অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। বিশেষ করে তাদের পারিবারিক বন্ধন, ব্যক্তিগত চাহিদা, সামাজিক অবস্থান এসব বিষয় জানার প্রয়োজন রয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা মোকাবিলায় সংস্থাটি শিক্ষার্থীদের হতাশা, একাকিত্ব ও নেতিবাচক ভাবনা থেকে দূরে রাখতে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ বৃদ্ধি করা, মানসিক বিকাশ এবং তাদের সহানুভূতির সঙ্গে শুনতে ও বুঝতে অভিভাবকদের জন্য প্যারেন্টিং কার্যক্রম চালু করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষক-কর্মচারীদের আচরণ ও পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে কৌশলী ও সহানুভূতিশীল হতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, স্কুল, কলেজ পর্যায়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধী পোস্টার প্রদর্শন করা, প্রতিটি আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবারের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে ও দায় বৃদ্ধিতে তাদের আইনি বাধ্যবাধকতার অন্তর্ভুক্ত করা, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ট্রেনিং দেওয়াসহ ১১টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে সংস্থাটি।
সন্ধ্যার শরীর থেকে ঘুমের আয়োজনগুলো কুড়িয়ে নিতে নিতে শহরে রাত্রি আসে, ক্লান্তি ভিখারির মতো হাই তোলে এখানে-সেখানে। দোকানের বন্ধ শাটারের ওপর পথচারীর ছায়া আঁকাবাঁকা হয়ে মিলিয়ে যায়; গলিতে ঘুমের ডাকনাম মুখস্ত করতে করতে গ্যাসের ওষুধ খেয়ে তলিয়ে যায় পাড়া। সমস্ত কিছুর দখল নিতে রাত্রি এসে গেছে বলে অভিমানে শূন্য সদরঘাট ঘুমায় পাশে বুড়িগঙ্গা রেখে, বাহাদুর শাহ পার্কের মোড়ে বেশি রাতে যাত্রী ধরার স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঝিমায় পুরনো কুমিরের মতো ট্যাক্সি, ইংলিশ রোডের পতিতাপল্লীর সুফিয়ার ঘরে টেবিল ফ্যানটা এপাশ-ওপাশ করে অস্থিরতায়। বাসস্ট্যান্ডে জাগে নেশার চোখ, জাগে বাস মিস করা যাত্রী। জেগে থাকে ঝকমকে কিছু খাবার দোকান, হোটেলের লবি আর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। ম্লান আলোয় মধুমিতা সিনেমা হলের হোর্ডিংয়ে রিভলবার হাতে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে থাকে ক্লিন্ট ইস্টউড একা।
আশ্চর্য, কতকাল আগের রাত্রির বিবরণ বলে যাচ্ছি! মনের মধ্যে একই শহরের রাত্রি দুভাগে ভাগ হয়ে রাশপ্রিন্টের মতো অসংখ্য ছবি তুলে আনছে। বছর চল্লিশ আগের বা তার চেয়েও পুরনো হাফ গেরস্থ রাত্রি এই শহরে এভাবেই বেঁচে থাকত। কবি ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা নিউ ইয়র্ক শহরকে কবিতায় ডেকেছিলেন স্লিপলেস সিটি নামে। কোথায় কী? এই ঢাকাই তো এখন নির্ঘুম শহরের নাম; পাহারা দেয় রাত্রির শরীর। আলো ঝলমলে একটা ছিপ আছে এই রাতের কাছে যা দিয়ে শিকার করে রাত জাগতে চাওয়া অসংখ্য মাছ। তাই হয়তো পেছনে ফেলে আসা একটা শহরের জীবন, তার হৃদস্পন্দন, তার দিনরাত্রির কথা মনে মনে ভাবছি আমি। কড়া নেড়ে ঘুম থেকে তুলে দেখতে চাইছি তার রাতদুপুর, দেখতে চাইছি তার পালঙ্কে শয়ন।
রাতেরও একটা রাজনীতি আছে। সব শহরেই মনে হয় থাকে। যে শহরটায় আমি আজও বেঁচে আছি রাতেরবেলা তার একটা রাজনীতি ছিল; এখনো আছে। সেই রাজনীতিতে ক্ষুধা একটি চরিত্র; রাত জেগে থাকলে ক্ষুধা পায়। নিঃসঙ্গ ফুটপাতে হাঁটতে গিয়ে বাড়ানো হাত এগিয়ে আসে। সে হাতের মালিকের থাকবার জায়গা বলতে ফুটপাত, বাঁচা অথবা মরে যাওয়ার ঠিকানা একটা পুরো শহর। এই ক্ষুধা পাওয়া আর খাবার জোগাড় করতে ব্যর্থতার মাঝের রাজনীতিটুকু আজও আমাদের বোঝাই হলো না। সেই শহরে রাত জেগে বসে থাকত হাতেগোনা কয়েকটি রেস্তোরাঁ। এখন নগর-নিশীথ আগলায় কফির পেয়ালা। সে আগলানো অনেক বেশি ঝলমলে, মাদকতাময়।
একটা সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতির কুশীলবরা রাত নিঝুম হলে ক্যাম্পাসে ছড়ানো-ছিটানো আড্ডা ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসতেন শাহবাগ মোড়ে তখনকার পিজি হাসপাতাল সংলগ্ন বিখ্যাত রেস্তোরাঁ কহিনূরের সামনে। এক চিলতে সেই রেস্তোরাঁ খ্যাতিমান হয়েছিল শিঙাড়া আর চায়ের জন্য। আশির দশকের গোড়ার দিকে সামরিক স্বৈরাচারের বিষবাষ্প তখন বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। সেই শহরে তখন সান্ধ্যআইনও রাত্রির মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। রাজনীতি এবং সাংবাদিকতা বহুদিন আমাকে সংলগ্ন রেখেছে উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্যপটের সঙ্গে। ঘড়ির কাঁটায় সান্ধ্যআইনের সময় নিকটবর্তী জেনে কারও কাছ থেকে চিরকুট নিয়ে কোথাও পৌঁছে দেওয়া অথবা দুএকটি সংক্ষিপ্ত গোপন বার্তার বাহক হয়ে সেই সব রাত্রির গোপন সওয়ার হয়েছি আমিও। উত্তেজনা নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় হয়ে আমার সঙ্গে পথ চলেছে।
তখন আমি সাপ্তাহিক বিচিত্রার কনিষ্ঠ কর্মী। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) তৎকালীন সহসভাপতি প্রখ্যাত ছাত্রনেতা আখতারুজ্জামানের সাক্ষাৎকার নেওয়া প্রয়োজন ছাত্ররাজনীতি বিষয়ক প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের জন্য। ছাত্ররাজনীতি তখন সেই শহরের হাওয়াকে উত্তপ্ত করে রেখেছে। টিয়ার শেলের ঝাঁজালো ধোঁয়া, উচ্চকিত সেøাগান, রক্তপাত, আর মৃত্যু তখন নৈমিত্তিক ঘটনা। সাক্ষাৎকারের সময় ঠিক হলো গভীর রাতে। গোয়েন্দা পুলিশের চোখ এড়িয়ে আখতার ভাইও তখন প্রায় পলাতক জীবনযাপন করছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে আমাদের সাক্ষাতের একটা সময় স্থির হলো। কিন্তু ঝামেলা বাধালেন তখনকার স্বৈরাচারী শাসক জেনারেল এরশাদের তথাকথিত ছাত্র সংগঠন নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের সভাপতি রফিকুল হক হাফিজ। নাকের অপারেশন করাতে তিনি হাসপাতালে ভর্তি। তাই ওই এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের আনাগোনাও বেশি। আখতারুজ্জামানের কাছ থেকে বার্তা এলো সাক্ষাৎকার বাতিল। উনি হাসপাতাল চত্বরে আসতে পারবেন না। কী করা যায়! ওই প্রতিবেদনে আমি কাজ করছিলাম প্রয়াত সাংবাদিক মিনার মাহমুদের সঙ্গে। কয়েকজন ছাত্রনেতা সাপ্তাহিক বিচিত্রার অফিসে এসে সাক্ষাৎকার দিয়ে গেছেন তাদের নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরেই। আখতার ভাইয়ের সাক্ষাৎকার ছাড়া প্রতিবেদন পূর্ণাঙ্গ হবে না কারণ তিনি ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা। মিনার ভাই সাক্ষাৎকার যেভাবেই হোক পয়দা করো এ ধরনের একটা মন্তব্য আমার উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে হারিয়ে গেলেন। সেই শীতের সন্ধ্যার আয়ু ছিল সংক্ষিপ্ত। বিকেলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাতের কারণে খুব সম্ভবত সান্ধ্যআইন বলবৎ হওয়ারও সম্ভাবনা আছে। আখতার ভাইকে আমি কোথায় পাই? সেবার আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন ডাকসুর তখনকার সাহিত্য সম্পাদক আলী রীয়াজ। তিনিও তখন তাদের সিদ্ধেশ্বরীর বাড়িতে রাতে থাকেন না গ্রেপ্তারের ভয়ে। অগত্যা ল্যান্ড টেলিফোনের দ্বারস্থ হওয়া। নম্বর ঘুরিয়ে বাসদ কার্যালয়ে প্রায় ম্যাজিকের মতো পাওয়া গেল রীয়াজ ভাইকে। সমস্যার কথাটা খুলে বলতেই তিনি দায়িত্ব নিলেন সেই সাক্ষাৎকারের। গভীর রাতে আখতার ভাই আমাকে অফিসে ফোন করে বললেন তিনি সাক্ষাৎকারের পুরোটা ব্রিফ করে দিয়েছেন রীয়াজ ভাইকে। আমি যেন পরদিন সকালে লেখাটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করি। সেই রাতের শহরে পুলিশের চোখ এড়িয়ে সাক্ষাৎকার আমাদের হাতে আসার ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল।
এখন এই শহরে সন্ধ্যার চোখ এড়িয়ে কখন রাত্রি নামে বুঝে উঠতে পারি না। ইংলিশ রোডে সুফিয়ার ঘরে রাত্রিবেলা গ্রীষ্মের গুমোট ভেঙে টেবিলফ্যানটা অস্থির যাতনায় আর এপাশ-ওপাশ করে না, ঘরছাড়া এক কবি গভীর রাতে নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পতিতাপল্লীর কোনো ঘরে জড়ানো গলায় চিৎকার করে বলে ওঠে না নিষিদ্ধ এলাকা এত প্রসিদ্ধ কেন! সুইপার কলোনির প্রায়-অন্ধকার ঘরে আলোদান করতে ব্যর্থ ন্যাড়া বাল্ব আর কোনো কবিতা জাগিয়ে তোলে না মনে। দৃষ্টির সম্মুখ দিয়ে সময় ফুরিয়ে যায়। যেতে থাকে। শহরে রাত্রি নামে এখন। কিন্তু সে রাত্রি বড় স্বাদহীন, রাজনীতিহীন মনে হয় আমার।
জানুয়ারি মাসকে বলা হয় বছরের সবচেয়ে শীতলতম মাস। কিন্তু এ মাসের শেষ সপ্তাহে এসে পাওয়া যাচ্ছে উষ্ণতার আভাস। অর্থাৎ, বিদায় নিচ্ছে শীত। যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে শীতের বিদায়ের কথা বলছে না, কিন্তু উপাত্ত আর অনুভূত তাপমাত্রা বিদায়ের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। শীতের এমন আগাম বিদায়ে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শীতকালীন ফসলে।
আবহাওয়ার উপাত্ত নিয়ে কাজ করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এস এম কামরুল হাসান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবার তো ডিসেম্বরে শীতের দেখা পাওয়া যায়নি। জানুয়ারির প্রথম ২০ দিন ছিল শীতের আমেজ। এখন শীতে বিদায়ের ঘণ্টা। অর্থাৎ, ধীরে ধীরে শীত কমে যাবে, বাড়বে গরমের মাত্রা।’
একসময় নভেম্বর থেকে শুরু হলেও এখন শীত দেরিতে শুরু হতে হতে জানুয়ারিতে ঠেকেছে উল্লেখ করে কামরুল হাসান বলেন, ‘শীতের ব্যাপ্তি যে কমে আসছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর ব্যাপ্তি কমে আসায় শীতকালীন ফসলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তা থেকে উত্তরণে কাজ করছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।’
শীতের ব্যাপ্তি কমে যাওয়ায় কৃষিতে কী প্রভাব পড়ছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ দাউদ হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি ফসলের একটা নির্ধারিত তাপমাত্রার স্তর থাকে। শীতকালীন ফসলগুলোর জন্য (আলু, গম, ভুট্টা, সরিষা, টমেটো প্রভৃতি) তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ বা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে টানা প্রায় আড়াইমাস থাকতে হয়। এই সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সব ফসলের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন কমে আসবে।’
তাপমাত্রার সঙ্গে উৎপাদনের কী সম্পর্ক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ফসলটি দ্রুত পরিণত হয়ে যায়। তখন এর ফলন কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তী মৌসুমে ধীরে ধীরে কৃষক ওই ফসলের আবাদ থেকে সরে আসে। আর এ কারণে দেশে গমের উৎপাদন কমে গেছে।’
শীতকালীন ফসল সবচেয়ে বেশি হয় রাজশাহী এলাকায়। শীতের ব্যাপ্তি কমে যাওয়ায় সেই এলাকায় ফসলে কি পরিবর্তন এসেছে কিনা সে বিষয়ে কথা হয় রাজশাহী বিভাগীয় অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সামছুল ওয়াদুদের সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে শীতের ব্যাপ্তি কমে যাওয়ায় বিগত বছরগুলোতে গমের চাষ কমে গিয়েছিল। তবে এখন আটার দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার থেকে মানুষ গমের চাষ আবার শুরু করেছে। কিন্তু শীতের ব্যাপ্তি কম থাকায় গমসহ শীতকালীন ফসলগুলোতে ফলন কম হবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’ কৃষিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূূলত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আমন ধান ঘরে তোলার পর কৃষক শীতকালীন ফসলের চাষ করে থাকে। এক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গে একটু আগে চাষ হয় এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে একটু দেরিতে চাষ হয়। আর চাষের পর ৭৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ফলন ঘরে তোলা যায়। অর্থাৎ, গম, আলু, টমেটো কিংবা সরিষার জন্য কমপক্ষে ৯০ দিন সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু এখন ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকলে শীতকালীন ফসলগুলো দ্রুত পরিণত (যেমন- সরিষা পেকে যায়) হয়ে যায়। তখন আর ফলন ভালো হয় না। এসব ফসল উঠানোর পর কৃষকরা বোরো ধানের চাষ করে থাকে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার আবহাওয়ার উপাত্ত অনুযায়ী, দেশের ৪৩টি আবহাওয়া স্টেশনের মধ্যে ২৯টিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি বা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। অপরদিকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ছিল মাত্র ১৩টি স্টেশনে। এরমধ্যে ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল একটি স্টেশন তেঁতুলিয়ায়। অন্য একটি স্টেশন শ্রীমঙ্গলে ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্য সব স্টেশনে ১২ ডিগ্রির বেশি ছিল। এখন থেকে তাপমাত্রার এই ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।
উল্লেখ্য, দেশে নভেম্বর থেকে শীতকাল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ডিসেম্বরে শেষে শীতের দেখা পাওয়া যায়। আবার জানুয়ারি শেষ না হতেই শীতের বিদায় ঘণ্টা বেজে যায়। ফেব্রুয়ারিতে পুরোদমে গরম শুরু হয়ে যায়।
চট্টগ্রাম নগরের খুলশি থানা এলাকার ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান ড্রাইভিং লাইন্সেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ২০২১ সালের ৮ মার্চ। ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি তোলার ৩-৪ মাস পর তার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেই স্মার্ট কার্ড পাননি গত দুই বছরেও। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিআরটিএ, চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড না পেয়ে হতাশ হয়ে বাসায় ফেরেন মেহেদী। ‘আমার স্মার্ট কার্ড পাওয়ার কথা ছিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ৩-৪ মাস পরে। গত দুই বছরে বিআরটিএ কার্যালয়ে এসেছি অন্তত ২০-২৫ বার। আজও পাইনি ড্রাইভিং স্মার্ট কার্ড’ বলেন মেহেদী।
ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ডের বিড়ম্বনার শিকার শুধু মেহেদী নয়, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে স্মার্ট কার্ডের জন্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। লাইসেন্সপ্রত্যাশীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেল-২ এর সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার ঊর্মি বলেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ডের বর্তমান ভেন্ডর মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স লিমিটেড। সংস্থাটির হাতে এখনো প্রিন্ট হওয়ার বাকি আছে প্রায় ২০ হাজার স্মার্ট কার্ড। ইতিমধ্যে সংস্থাটির কাছ থেকে প্রিন্টেড পাঁচ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড এসেছে। কারিগরি ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে গ্রাহকদের কিছুটা ভোগান্তি হতে পারে।’
বিআরটিএ’র এই কর্মকর্তা জানান, ৬-৭ মাস আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ডের পূর্ববর্তী ভেন্ডর ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) লিমিটেড। সংস্থাটির প্রিন্ট করা ৮৪ হাজার স্মার্ট কার্ড বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে পাঠায়। ‘আমরা তখন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি এবং মাইকিং করেও লাইসেন্স গ্রহীতাদের পাইনি। ৮৪ হাজার থেকে এ পর্যন্ত ৬৯ হাজার স্মার্ট কার্ড গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করেছি। এখনো ১৫ হাজার স্মার্ট কার্ড পড়ে আছে আমাদের কার্যালয়ে।’
এদিকে সংস্থাটির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পূর্ববর্তী ভেন্ডর ‘বিএমটিএফ’ থেকে আসা ৮৪ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড বিআরটিএ’র হাতে আসে লাইসেন্স প্রত্যাশীদের তিন বছর ভোগানোর পর। এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড প্রিন্টের দায়িত্বে আছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স লিমিটেড’ (এমএসপি)।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের লাইসেন্স শাখায় গিয়ে দেখা যায়, দেড় থেকে দুই বছর ঘুরেও ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড মিলছে না বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। তাদের একজন আকবর হোসেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘২০২২ সালের মে মাসে ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। বিআরটিএ রসিদ দিয়েই গাড়ি চালাচ্ছি। গত ৮ মাসে ৭-৮ বার বিআরটিএ কার্যালয়ে এসেছি স্মার্ট কার্ডের জন্য। কার্ড সম্পন্ন হয়েছে বলে মোবাইলে মেসেজ আসার পর বিআরটিএ কার্যালয়ে এলে লাইসেন্স শাখার দায়িত্বপ্রাপ্তরা চেক করে বলেন, ‘স্মার্ট কার্ড আসেনি’। শুধু প্রাপ্তি রসিদের মেয়াদ বাড়াচ্ছে বিআরটিএ।’
বিআরটিএ সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও স্মার্ট কার্ড সরবরাহের জন্য ‘টাইগার আইটি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বিআরটিএ। ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে তাদের ১৫ লাখ কার্ড ছাপানোর কথা। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত চুক্তির তিন বছরের মধ্যেই সাড়ে ১৪ লাখের কাছাকাছি কার্ড ছাপিয়ে বিআরটিএকে সরবরাহ করে। চাহিদার কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই বেশি কার্ড ছাপাতে হয় তাদের। দিন দিন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পুরনো ঠিকাদার টাইগার আইটির সঙ্গে জটিলতা তৈরি হয় বিআরটিএ’র। ডুয়াল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট স্মার্ট কার্ডে ছাপা ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের জন্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে গত বছরের ২৯ জুলাই চুক্তি হয় বিআরটিএ’র। আগামী পাঁচ বছরে ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গত বছর ১৮ মে থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে। চট্টগ্রামে প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক শরীফুজ্জামান ভুঞা ড্রাইভিং স্মার্ট কার্ডের জন্য গ্রাহকদের ভোগান্তির কথা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে ভোগান্তির দিন শেষ হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রামে একদিনেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার সব কার্যক্রম শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
যানজটের শহর ঢাকায় উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে চলাচলকারী মেট্রোরেল চালুর এক মাস পূর্ণ হলো আজ শনিবার। এরই মধ্যে মিরপুরের পল্লবীর একটি স্টেশন চালু হয়েছে। মিরপুরের বাকি স্টেশনগুলো পর্যায়ক্রমে খোলা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
এদিকে এখনো বেশিরভাগ মানুষ মেট্রোরেলে অনেকটা শখের বশেই চড়ছেন। যাত্রীরা বলছেন, স্বল্প দূরত্বের মাঝে চলাচলের কারণে এখনো সেভাবে সুফল মিলছে না। তবে ফার্মগেট পর্যন্ত চলাচল শুরু হলে সুফল মিলবে।
গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর থেকে সাধারণ মানুষের জন্য চলাচল উন্মুক্ত হওয়ার পর গত ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ দিনে ৯০ হাজার যাত্রী মেট্রোরেলে চলাচল করেছে। তাদের মধ্যে সিঙ্গেল জার্নি টিকিট বিক্রি হয়েছে ৮৩ হাজার। আর এমআরটি পাস বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ২৫০টি। এসব টিকিট বিক্রি থেকে মোট ৮৮ লাখ টাকা আয় হয়। পুরোদমে চালু হলে মেট্রোরেলকে দৈনিক ৩ কোটি কারও ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না মেট্রোরেলকে। যদিও গত এক মাসের আয়ের হিসাব এখনো তৈরি করতে পারেনি মেট্রোরেল কর্র্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে গতকাল শুক্রবার মেট্রোরেল পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই এক মাসে মেট্রোরেলে কত টাকা আয় হয়েছে, সেই সঙ্গে কত যাত্রী তা ব্যবহার করেছে তার হিসাব এখনো তৈরি হয়নি কিছু জটিলতায়।’
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, এখনো বেশিরভাগ মানুষ মেট্রোরেলে অনেকটা শখের বশেই চলাচল করছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসছে মেট্রোরেলে ঘুরতে। গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেট্রোরেলে চড়ে ঘুরতে এসেছিলেন।
তাদেরই একজন মিরপুরের বাসিন্দা যুবায়ের রহমান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেলে উৎসুক যাত্রী এখন বেশি। উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ের পথে মাঝে পল্লবী স্টেশন চালু হয়েছে। কিন্তু আরও তো কয়েকটি স্টেশন আছে। সেগুলো তো চালু হয়নি। আর এই স্বল্প দূরত্বের মাঝে চলাচলে এখনো সেভাবে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ফার্মগেট পর্যন্ত চলাচল করলে আরও সুবিধা পাওয়া যেত।’
মো. নাইম নামে মেট্রোরেলে চড়া আরেক যাত্রী বলেন, ‘শুরুর দিকে টিকিট কাটতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল, এখন সেসব ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না। ভিড়ও কমেছে টিকিটের লাইনে। তবে চলাচলের সময় আরও বাড়াতে হবে।’
এদিকে ভাড়ার হার না কমালে মেট্রোরেল বেশি যাত্রী পাবে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শুরু থেকেই বলে এসেছি, মেট্রোরেলে যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি কমাতে হবে। তা না হলে মেট্রোরেলে পিক-আওয়ারে যাত্রী পাওয়া গেলেও অন্য সময়ে যাত্রী মিলবে না। অনেকটা ফাঁকাই চলতে হবে মেট্রোকে। আর মেট্রোরেল যে যানজট নিরসনের জন্য করা হয়েছিল তার উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। যার ফলে অপারেশন (পরিচালনা) ব্যয় বেড়ে যাবে। আর সেই ভর্তুকির টাকা জনগণের কাছ থেকে নেওয়া হবে। তাই ভাড়া কমিয়ে যাত্রী না বাড়ালে এই মেট্রোরেলের যাত্রীদের কল্যাণে ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক সাইফুন নেওয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের যে সুবিধা সেটি এক মাসেই ভালোভাবে বোঝা যাবে না। পুরো কাজ শেষ হলে মেট্রোরেলের সুবিধা ধীরে ধীরে পাওয়া যাবে। তবে মেট্রোরেলে মাঝখানে যে স্টেশনগুলো এখনো চালু হয়নি, সেগুলোও খোলা প্রয়োজন। আর মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোর সামনের রাস্তায় যেন যানজট না লাগে সেটিও মনিটরিং করা দরকার। লোকজন যেন মেট্রোরেল থেকে নেমে কোনো ভোগান্তি ছাড়াই যার যার গন্তব্যে ভালোভাবে পৌঁছাতে পারে।’
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।