
চট্টগ্রাম নগরের খুলশি থানা এলাকার ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান ড্রাইভিং লাইন্সেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ২০২১ সালের ৮ মার্চ। ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি তোলার ৩-৪ মাস পর তার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেই স্মার্ট কার্ড পাননি গত দুই বছরেও। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিআরটিএ, চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড না পেয়ে হতাশ হয়ে বাসায় ফেরেন মেহেদী। ‘আমার স্মার্ট কার্ড পাওয়ার কথা ছিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ৩-৪ মাস পরে। গত দুই বছরে বিআরটিএ কার্যালয়ে এসেছি অন্তত ২০-২৫ বার। আজও পাইনি ড্রাইভিং স্মার্ট কার্ড’ বলেন মেহেদী।
ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ডের বিড়ম্বনার শিকার শুধু মেহেদী নয়, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে স্মার্ট কার্ডের জন্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। লাইসেন্সপ্রত্যাশীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেল-২ এর সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার ঊর্মি বলেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ডের বর্তমান ভেন্ডর মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স লিমিটেড। সংস্থাটির হাতে এখনো প্রিন্ট হওয়ার বাকি আছে প্রায় ২০ হাজার স্মার্ট কার্ড। ইতিমধ্যে সংস্থাটির কাছ থেকে প্রিন্টেড পাঁচ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড এসেছে। কারিগরি ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে গ্রাহকদের কিছুটা ভোগান্তি হতে পারে।’
বিআরটিএ’র এই কর্মকর্তা জানান, ৬-৭ মাস আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ডের পূর্ববর্তী ভেন্ডর ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) লিমিটেড। সংস্থাটির প্রিন্ট করা ৮৪ হাজার স্মার্ট কার্ড বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে পাঠায়। ‘আমরা তখন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি এবং মাইকিং করেও লাইসেন্স গ্রহীতাদের পাইনি। ৮৪ হাজার থেকে এ পর্যন্ত ৬৯ হাজার স্মার্ট কার্ড গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করেছি। এখনো ১৫ হাজার স্মার্ট কার্ড পড়ে আছে আমাদের কার্যালয়ে।’
এদিকে সংস্থাটির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পূর্ববর্তী ভেন্ডর ‘বিএমটিএফ’ থেকে আসা ৮৪ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড বিআরটিএ’র হাতে আসে লাইসেন্স প্রত্যাশীদের তিন বছর ভোগানোর পর। এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড প্রিন্টের দায়িত্বে আছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স লিমিটেড’ (এমএসপি)।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের লাইসেন্স শাখায় গিয়ে দেখা যায়, দেড় থেকে দুই বছর ঘুরেও ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড মিলছে না বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। তাদের একজন আকবর হোসেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘২০২২ সালের মে মাসে ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। বিআরটিএ রসিদ দিয়েই গাড়ি চালাচ্ছি। গত ৮ মাসে ৭-৮ বার বিআরটিএ কার্যালয়ে এসেছি স্মার্ট কার্ডের জন্য। কার্ড সম্পন্ন হয়েছে বলে মোবাইলে মেসেজ আসার পর বিআরটিএ কার্যালয়ে এলে লাইসেন্স শাখার দায়িত্বপ্রাপ্তরা চেক করে বলেন, ‘স্মার্ট কার্ড আসেনি’। শুধু প্রাপ্তি রসিদের মেয়াদ বাড়াচ্ছে বিআরটিএ।’
বিআরটিএ সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও স্মার্ট কার্ড সরবরাহের জন্য ‘টাইগার আইটি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বিআরটিএ। ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে তাদের ১৫ লাখ কার্ড ছাপানোর কথা। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত চুক্তির তিন বছরের মধ্যেই সাড়ে ১৪ লাখের কাছাকাছি কার্ড ছাপিয়ে বিআরটিএকে সরবরাহ করে। চাহিদার কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই বেশি কার্ড ছাপাতে হয় তাদের। দিন দিন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পুরনো ঠিকাদার টাইগার আইটির সঙ্গে জটিলতা তৈরি হয় বিআরটিএ’র। ডুয়াল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট স্মার্ট কার্ডে ছাপা ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের জন্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে গত বছরের ২৯ জুলাই চুক্তি হয় বিআরটিএ’র। আগামী পাঁচ বছরে ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গত বছর ১৮ মে থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে। চট্টগ্রামে প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক শরীফুজ্জামান ভুঞা ড্রাইভিং স্মার্ট কার্ডের জন্য গ্রাহকদের ভোগান্তির কথা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে ভোগান্তির দিন শেষ হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রামে একদিনেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার সব কার্যক্রম শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
পরিবারের সঙ্গে অভিমান, প্রেমের সম্পর্কে টানাপড়েন, পারিবারিক কলহ, ইভটিজিং ও যৌন হয়রানি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যাপ্রবণ করে তুলছে। এ ছাড়া আপত্তিকর ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া, গেম খেলতে বাধা দেওয়া, পরীক্ষায় অকৃতকার্য, মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়াসহ পড়াশোনার চাপ অনুভব করায় কোনো কোনো শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। ২০২২ সালের সারা দেশে ৪৪৬ জন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। গড় হিসাবে যা দাঁড়ায় প্রতি মাসে প্রায় ৪৪.৩৩ জন।
সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে তৈরি করা এক সমীক্ষার এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা : সমাধান কোন পথে?’ শীর্ষক এই সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সমীক্ষামতে, মোট আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। আটটি বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিভাগে ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী।
আঁচল ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবণী জানান, দেশের দেড় শতাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহননের তথ্য নেওয়া হয়েছে তাদের এ সমীক্ষায়।
আত্মহত্যায় শীর্ষে ঢাকা : দেশের আটটি বিভাগে স্কুল ও কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিভাগে ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এরপর চট্টগ্রামে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ, খুলনায় ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সিলেটে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
আত্মহত্যায় নারীরা এগিয়ে : স্কুল এবং কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা এগিয়ে রয়েছে নারীরা। আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ৬৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। অন্যদিকে শুধু কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী ৫৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং পুরুষ ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ রয়েছে।
বয়ঃসন্ধিকালে ঝুঁকি বেশি : সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী সবচেয়ে বেশি ৪০৫ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করছে। যা মোট আত্মহত্যাকারীর ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ। তার মধ্যে নারী ৬৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী ৪৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ৪৬ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পুরুষ ৫৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নিতে প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয় বলেই এ বয়সে আত্মহত্যার হার বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
আত্মহত্যার পেছনের কারণ : সমীক্ষায় উঠে আসা বেশ সমীক্ষায় উঠে আসা বেশ কিছু কারণের মধ্যে দেখা যায়, মান-অভিমান তাদের সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে। ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ স্কুল ও কলেজশিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে অভিমান করে। এদের বড় অংশেরই অভিমান হয়েছে পরিবারের সঙ্গে। অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেÑ প্রেমঘটিত কারণে ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ, পারিবারিক কলহে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ, হতাশাগ্রস্ততায় ২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, মানসিক সমস্যায় ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, আর্থিক সমস্যা ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, উত্ত্যক্ত, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথে ধাবিত হয়েছে ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। তবে আত্মহত্যার পেছনে বেশ কিছু ভিন্ন কারণও উঠে এসেছে। যেমনÑ আপত্তিকর ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় ৪, শিক্ষক কর্র্তৃক অপমানিত হয়ে ৬, গেম খেলতে বাধা দেওয়ায় ৭, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ২৭, মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায় ১০, মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় ৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়াও পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না পাওয়া, পড়াশোনার চাপ অনুভব করা এবং পারিবারিক চাপে আত্মহত্যার কারণ রয়েছে।
পারিবারিক কলহেও আত্মহত্যা বাড়ছে : মামার বাড়ি যাওয়া নিয়ে ভাইবোনের মধ্যে কলহ, বাবাকে খাবার পৌঁছে দেওয়া নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে কলহ, পরীক্ষা দিতে না চাওয়ায় বাবা-মায়ের সঙ্গে কলহ, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ নিয়ে সন্তানের সঙ্গে কলহ ইত্যাদি বিভিন্ন পারিবারিক কলহে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ স্কুল ও কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার জন্য দায়ী। মোট আত্মহত্যাকারী স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারিবারিক কলহের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। শুধু কলেজগামী আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা করে ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী।
আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের মন সাধারণত ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়। এ বয়সে ছোট ছোট বিষয় তাদের আন্দোলিত করে। বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক বিকাশের সঙ্গে অনেকেই খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে তাদের প্রত্যাশার ক্ষেত্রে ছোটখাটো ঘাটতিও তাদের আত্মহত্যার মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।’
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, একজন শিশু বা কিশোরের আত্মহত্যার কারণ আমাদের কাছে যতই ঠুনকো হোক না কেন, তাদের কাছে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের আবেগের গুরুত্ব পাওয়ার অধিকার তারা রাখে।’
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট শাহরিনা ফেরদৌস বলেন, ‘২০২২ সালের এ জরিপে দেখা যাচ্ছে, ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা অনেক বেশি। অর্থাৎ তারা যে বয়ঃসন্ধিকালের সময়টি পার করছে এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং এ সময়ে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যতœ এবং সচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। কী কারণে তাদের সংখ্যা গত বছর এত বেশি ছিল তার কারণগুলো অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। বিশেষ করে তাদের পারিবারিক বন্ধন, ব্যক্তিগত চাহিদা, সামাজিক অবস্থান এসব বিষয় জানার প্রয়োজন রয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা মোকাবিলায় সংস্থাটি শিক্ষার্থীদের হতাশা, একাকিত্ব ও নেতিবাচক ভাবনা থেকে দূরে রাখতে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ বৃদ্ধি করা, মানসিক বিকাশ এবং তাদের সহানুভূতির সঙ্গে শুনতে ও বুঝতে অভিভাবকদের জন্য প্যারেন্টিং কার্যক্রম চালু করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষক-কর্মচারীদের আচরণ ও পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে কৌশলী ও সহানুভূতিশীল হতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, স্কুল, কলেজ পর্যায়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধী পোস্টার প্রদর্শন করা, প্রতিটি আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবারের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে ও দায় বৃদ্ধিতে তাদের আইনি বাধ্যবাধকতার অন্তর্ভুক্ত করা, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ট্রেনিং দেওয়াসহ ১১টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে সংস্থাটি।
সন্ধ্যার শরীর থেকে ঘুমের আয়োজনগুলো কুড়িয়ে নিতে নিতে শহরে রাত্রি আসে, ক্লান্তি ভিখারির মতো হাই তোলে এখানে-সেখানে। দোকানের বন্ধ শাটারের ওপর পথচারীর ছায়া আঁকাবাঁকা হয়ে মিলিয়ে যায়; গলিতে ঘুমের ডাকনাম মুখস্ত করতে করতে গ্যাসের ওষুধ খেয়ে তলিয়ে যায় পাড়া। সমস্ত কিছুর দখল নিতে রাত্রি এসে গেছে বলে অভিমানে শূন্য সদরঘাট ঘুমায় পাশে বুড়িগঙ্গা রেখে, বাহাদুর শাহ পার্কের মোড়ে বেশি রাতে যাত্রী ধরার স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঝিমায় পুরনো কুমিরের মতো ট্যাক্সি, ইংলিশ রোডের পতিতাপল্লীর সুফিয়ার ঘরে টেবিল ফ্যানটা এপাশ-ওপাশ করে অস্থিরতায়। বাসস্ট্যান্ডে জাগে নেশার চোখ, জাগে বাস মিস করা যাত্রী। জেগে থাকে ঝকমকে কিছু খাবার দোকান, হোটেলের লবি আর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। ম্লান আলোয় মধুমিতা সিনেমা হলের হোর্ডিংয়ে রিভলবার হাতে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে থাকে ক্লিন্ট ইস্টউড একা।
আশ্চর্য, কতকাল আগের রাত্রির বিবরণ বলে যাচ্ছি! মনের মধ্যে একই শহরের রাত্রি দুভাগে ভাগ হয়ে রাশপ্রিন্টের মতো অসংখ্য ছবি তুলে আনছে। বছর চল্লিশ আগের বা তার চেয়েও পুরনো হাফ গেরস্থ রাত্রি এই শহরে এভাবেই বেঁচে থাকত। কবি ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা নিউ ইয়র্ক শহরকে কবিতায় ডেকেছিলেন স্লিপলেস সিটি নামে। কোথায় কী? এই ঢাকাই তো এখন নির্ঘুম শহরের নাম; পাহারা দেয় রাত্রির শরীর। আলো ঝলমলে একটা ছিপ আছে এই রাতের কাছে যা দিয়ে শিকার করে রাত জাগতে চাওয়া অসংখ্য মাছ। তাই হয়তো পেছনে ফেলে আসা একটা শহরের জীবন, তার হৃদস্পন্দন, তার দিনরাত্রির কথা মনে মনে ভাবছি আমি। কড়া নেড়ে ঘুম থেকে তুলে দেখতে চাইছি তার রাতদুপুর, দেখতে চাইছি তার পালঙ্কে শয়ন।
রাতেরও একটা রাজনীতি আছে। সব শহরেই মনে হয় থাকে। যে শহরটায় আমি আজও বেঁচে আছি রাতেরবেলা তার একটা রাজনীতি ছিল; এখনো আছে। সেই রাজনীতিতে ক্ষুধা একটি চরিত্র; রাত জেগে থাকলে ক্ষুধা পায়। নিঃসঙ্গ ফুটপাতে হাঁটতে গিয়ে বাড়ানো হাত এগিয়ে আসে। সে হাতের মালিকের থাকবার জায়গা বলতে ফুটপাত, বাঁচা অথবা মরে যাওয়ার ঠিকানা একটা পুরো শহর। এই ক্ষুধা পাওয়া আর খাবার জোগাড় করতে ব্যর্থতার মাঝের রাজনীতিটুকু আজও আমাদের বোঝাই হলো না। সেই শহরে রাত জেগে বসে থাকত হাতেগোনা কয়েকটি রেস্তোরাঁ। এখন নগর-নিশীথ আগলায় কফির পেয়ালা। সে আগলানো অনেক বেশি ঝলমলে, মাদকতাময়।
একটা সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতির কুশীলবরা রাত নিঝুম হলে ক্যাম্পাসে ছড়ানো-ছিটানো আড্ডা ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসতেন শাহবাগ মোড়ে তখনকার পিজি হাসপাতাল সংলগ্ন বিখ্যাত রেস্তোরাঁ কহিনূরের সামনে। এক চিলতে সেই রেস্তোরাঁ খ্যাতিমান হয়েছিল শিঙাড়া আর চায়ের জন্য। আশির দশকের গোড়ার দিকে সামরিক স্বৈরাচারের বিষবাষ্প তখন বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। সেই শহরে তখন সান্ধ্যআইনও রাত্রির মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। রাজনীতি এবং সাংবাদিকতা বহুদিন আমাকে সংলগ্ন রেখেছে উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্যপটের সঙ্গে। ঘড়ির কাঁটায় সান্ধ্যআইনের সময় নিকটবর্তী জেনে কারও কাছ থেকে চিরকুট নিয়ে কোথাও পৌঁছে দেওয়া অথবা দুএকটি সংক্ষিপ্ত গোপন বার্তার বাহক হয়ে সেই সব রাত্রির গোপন সওয়ার হয়েছি আমিও। উত্তেজনা নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় হয়ে আমার সঙ্গে পথ চলেছে।
তখন আমি সাপ্তাহিক বিচিত্রার কনিষ্ঠ কর্মী। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) তৎকালীন সহসভাপতি প্রখ্যাত ছাত্রনেতা আখতারুজ্জামানের সাক্ষাৎকার নেওয়া প্রয়োজন ছাত্ররাজনীতি বিষয়ক প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের জন্য। ছাত্ররাজনীতি তখন সেই শহরের হাওয়াকে উত্তপ্ত করে রেখেছে। টিয়ার শেলের ঝাঁজালো ধোঁয়া, উচ্চকিত সেøাগান, রক্তপাত, আর মৃত্যু তখন নৈমিত্তিক ঘটনা। সাক্ষাৎকারের সময় ঠিক হলো গভীর রাতে। গোয়েন্দা পুলিশের চোখ এড়িয়ে আখতার ভাইও তখন প্রায় পলাতক জীবনযাপন করছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে আমাদের সাক্ষাতের একটা সময় স্থির হলো। কিন্তু ঝামেলা বাধালেন তখনকার স্বৈরাচারী শাসক জেনারেল এরশাদের তথাকথিত ছাত্র সংগঠন নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের সভাপতি রফিকুল হক হাফিজ। নাকের অপারেশন করাতে তিনি হাসপাতালে ভর্তি। তাই ওই এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের আনাগোনাও বেশি। আখতারুজ্জামানের কাছ থেকে বার্তা এলো সাক্ষাৎকার বাতিল। উনি হাসপাতাল চত্বরে আসতে পারবেন না। কী করা যায়! ওই প্রতিবেদনে আমি কাজ করছিলাম প্রয়াত সাংবাদিক মিনার মাহমুদের সঙ্গে। কয়েকজন ছাত্রনেতা সাপ্তাহিক বিচিত্রার অফিসে এসে সাক্ষাৎকার দিয়ে গেছেন তাদের নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরেই। আখতার ভাইয়ের সাক্ষাৎকার ছাড়া প্রতিবেদন পূর্ণাঙ্গ হবে না কারণ তিনি ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা। মিনার ভাই সাক্ষাৎকার যেভাবেই হোক পয়দা করো এ ধরনের একটা মন্তব্য আমার উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে হারিয়ে গেলেন। সেই শীতের সন্ধ্যার আয়ু ছিল সংক্ষিপ্ত। বিকেলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাতের কারণে খুব সম্ভবত সান্ধ্যআইন বলবৎ হওয়ারও সম্ভাবনা আছে। আখতার ভাইকে আমি কোথায় পাই? সেবার আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন ডাকসুর তখনকার সাহিত্য সম্পাদক আলী রীয়াজ। তিনিও তখন তাদের সিদ্ধেশ্বরীর বাড়িতে রাতে থাকেন না গ্রেপ্তারের ভয়ে। অগত্যা ল্যান্ড টেলিফোনের দ্বারস্থ হওয়া। নম্বর ঘুরিয়ে বাসদ কার্যালয়ে প্রায় ম্যাজিকের মতো পাওয়া গেল রীয়াজ ভাইকে। সমস্যার কথাটা খুলে বলতেই তিনি দায়িত্ব নিলেন সেই সাক্ষাৎকারের। গভীর রাতে আখতার ভাই আমাকে অফিসে ফোন করে বললেন তিনি সাক্ষাৎকারের পুরোটা ব্রিফ করে দিয়েছেন রীয়াজ ভাইকে। আমি যেন পরদিন সকালে লেখাটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করি। সেই রাতের শহরে পুলিশের চোখ এড়িয়ে সাক্ষাৎকার আমাদের হাতে আসার ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল।
এখন এই শহরে সন্ধ্যার চোখ এড়িয়ে কখন রাত্রি নামে বুঝে উঠতে পারি না। ইংলিশ রোডে সুফিয়ার ঘরে রাত্রিবেলা গ্রীষ্মের গুমোট ভেঙে টেবিলফ্যানটা অস্থির যাতনায় আর এপাশ-ওপাশ করে না, ঘরছাড়া এক কবি গভীর রাতে নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পতিতাপল্লীর কোনো ঘরে জড়ানো গলায় চিৎকার করে বলে ওঠে না নিষিদ্ধ এলাকা এত প্রসিদ্ধ কেন! সুইপার কলোনির প্রায়-অন্ধকার ঘরে আলোদান করতে ব্যর্থ ন্যাড়া বাল্ব আর কোনো কবিতা জাগিয়ে তোলে না মনে। দৃষ্টির সম্মুখ দিয়ে সময় ফুরিয়ে যায়। যেতে থাকে। শহরে রাত্রি নামে এখন। কিন্তু সে রাত্রি বড় স্বাদহীন, রাজনীতিহীন মনে হয় আমার।
জানুয়ারি মাসকে বলা হয় বছরের সবচেয়ে শীতলতম মাস। কিন্তু এ মাসের শেষ সপ্তাহে এসে পাওয়া যাচ্ছে উষ্ণতার আভাস। অর্থাৎ, বিদায় নিচ্ছে শীত। যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে শীতের বিদায়ের কথা বলছে না, কিন্তু উপাত্ত আর অনুভূত তাপমাত্রা বিদায়ের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। শীতের এমন আগাম বিদায়ে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শীতকালীন ফসলে।
আবহাওয়ার উপাত্ত নিয়ে কাজ করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এস এম কামরুল হাসান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবার তো ডিসেম্বরে শীতের দেখা পাওয়া যায়নি। জানুয়ারির প্রথম ২০ দিন ছিল শীতের আমেজ। এখন শীতে বিদায়ের ঘণ্টা। অর্থাৎ, ধীরে ধীরে শীত কমে যাবে, বাড়বে গরমের মাত্রা।’
একসময় নভেম্বর থেকে শুরু হলেও এখন শীত দেরিতে শুরু হতে হতে জানুয়ারিতে ঠেকেছে উল্লেখ করে কামরুল হাসান বলেন, ‘শীতের ব্যাপ্তি যে কমে আসছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর ব্যাপ্তি কমে আসায় শীতকালীন ফসলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তা থেকে উত্তরণে কাজ করছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।’
শীতের ব্যাপ্তি কমে যাওয়ায় কৃষিতে কী প্রভাব পড়ছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ দাউদ হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি ফসলের একটা নির্ধারিত তাপমাত্রার স্তর থাকে। শীতকালীন ফসলগুলোর জন্য (আলু, গম, ভুট্টা, সরিষা, টমেটো প্রভৃতি) তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ বা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে টানা প্রায় আড়াইমাস থাকতে হয়। এই সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সব ফসলের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন কমে আসবে।’
তাপমাত্রার সঙ্গে উৎপাদনের কী সম্পর্ক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ফসলটি দ্রুত পরিণত হয়ে যায়। তখন এর ফলন কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তী মৌসুমে ধীরে ধীরে কৃষক ওই ফসলের আবাদ থেকে সরে আসে। আর এ কারণে দেশে গমের উৎপাদন কমে গেছে।’
শীতকালীন ফসল সবচেয়ে বেশি হয় রাজশাহী এলাকায়। শীতের ব্যাপ্তি কমে যাওয়ায় সেই এলাকায় ফসলে কি পরিবর্তন এসেছে কিনা সে বিষয়ে কথা হয় রাজশাহী বিভাগীয় অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সামছুল ওয়াদুদের সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে শীতের ব্যাপ্তি কমে যাওয়ায় বিগত বছরগুলোতে গমের চাষ কমে গিয়েছিল। তবে এখন আটার দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার থেকে মানুষ গমের চাষ আবার শুরু করেছে। কিন্তু শীতের ব্যাপ্তি কম থাকায় গমসহ শীতকালীন ফসলগুলোতে ফলন কম হবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’ কৃষিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূূলত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আমন ধান ঘরে তোলার পর কৃষক শীতকালীন ফসলের চাষ করে থাকে। এক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গে একটু আগে চাষ হয় এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে একটু দেরিতে চাষ হয়। আর চাষের পর ৭৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ফলন ঘরে তোলা যায়। অর্থাৎ, গম, আলু, টমেটো কিংবা সরিষার জন্য কমপক্ষে ৯০ দিন সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু এখন ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকলে শীতকালীন ফসলগুলো দ্রুত পরিণত (যেমন- সরিষা পেকে যায়) হয়ে যায়। তখন আর ফলন ভালো হয় না। এসব ফসল উঠানোর পর কৃষকরা বোরো ধানের চাষ করে থাকে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার আবহাওয়ার উপাত্ত অনুযায়ী, দেশের ৪৩টি আবহাওয়া স্টেশনের মধ্যে ২৯টিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি বা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। অপরদিকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ছিল মাত্র ১৩টি স্টেশনে। এরমধ্যে ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল একটি স্টেশন তেঁতুলিয়ায়। অন্য একটি স্টেশন শ্রীমঙ্গলে ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্য সব স্টেশনে ১২ ডিগ্রির বেশি ছিল। এখন থেকে তাপমাত্রার এই ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।
উল্লেখ্য, দেশে নভেম্বর থেকে শীতকাল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ডিসেম্বরে শেষে শীতের দেখা পাওয়া যায়। আবার জানুয়ারি শেষ না হতেই শীতের বিদায় ঘণ্টা বেজে যায়। ফেব্রুয়ারিতে পুরোদমে গরম শুরু হয়ে যায়।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সবধরনের মাছের দাম বেড়েছে। সবজি বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। মুরগি সামান্য বাড়লেও গরু ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের দরেই। মুদি পণ্য আটায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। কেজিতে কমেছে ৪-৫ টাকা। ডিম কিছুটা বাড়লেও চাল বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কলাবাগান ও মোহাম্মদপুর বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ২৫০ টাকার চাষের কই এ সপ্তাহে ২৬০, ২০০-২১০ টাকার ছোট রুই মাছ ২২০, ৩২০-৩৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া বড় রুই মাছ ৩৪০ ও ২১০ টাকায় বিক্রি হওয়া মৃগেল মাছ ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘেরের পানি কমে যাওয়ায় শীতে মাছ কিছুটা কম ধরা পড়ে। এতে রাজধানীর বাজারগুলোতে চাহিদার তুলনায় মাছের আমদানি অনেকটা কমেছে এবং স্বাভাবিকভাবেই আমদানি কম হওয়ায় মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে।
কাওরান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সোহাগ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বাজারে মাছের সরবরাহও কম রয়েছে। ফলে নতুন করে সবধরনের মাছের কেজিপ্রতি ১০ টাকার বেশি বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি শিং মাছ ৪৫০-৫৩০, ছোট রুই ২২০, বড় রুই ৩৫০, চাষের কই মাছ ২৬০, দেশি কই মাছ ১ হাজার ২৫০, ১ কেজি সাইজের ইলিশ ১১০০-১২০০ ও ৫শ গ্রামের ইলিশ ৫৫০-৬০০ টাকা করে বিক্রি করছি।’
এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের মতো স্থিতিশীল রয়েছে সবজির দাম। প্রতি কেজি মুলা ৪০, ফুলকপি ৪০, টমেটো ৫০-৫৫, মরিচ ১০০-১২০, বেগুন ৪০-৬০, শালগম ৩০-৩৫, শসা ৪০-৪৫, প্রতি পিচ লাউ ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে স্থিতিশীল সবজির বাজারে মুদিপণ্যের মধ্যে ভোক্তার স্বস্তি মিলছে আটাতে। প্যাকেটজাত সবধরনের আটাতে কেজিপ্রতি কমেছে ৪-৫ টাকা করে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আটা ৫৩-৫৪ টাকা করে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। কাওরান বাজারের আটার পাইকারি ব্যবসায়ী ইব্রাহিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে আটার দাম অনেক কমেছে। এখন প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আটা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৫০ থেকে ২ হাজার ৭শ টাকা করে। এর মধ্যে চাকা ও ইউসুফের আটার বস্তা ২ হাজার ৭শ ও বসুন্ধরার আটা বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার টাকা।’
মোহাম্মদপুর এলাকার মা স্টোরের স্বত্বাধিকারী রাকিব দেশ রূপান্তরকে জানান, গত কয়েক দিন ধরেই সব কোম্পানি প্যাকেটজাত আটার দাম কমাতে শুরু করেছে। ১৫ টাকা কমে তীরের দুই কেজির আটা বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা, ১০ টাকা কমে সাধের দুই কেজি আটা বিক্রি করছি ১৩৫ টাকা, বসুন্ধরা ১৩৪ টাকা, পুষ্টি ১৪০ টাকা করে।
এ ছাড়া চালের বাজারে খবর নিয়ে জানা যায়, সবধরনের চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে মোটা জাতের চালের মধ্যে প্রতি কেজি স্বর্ণা ৫০-৫২, আটাশ ৫৪-৫৫, পাইজাম ৫২-৫৩, নাজির ৭০-৮২, মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরায় এসব চালের কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা বাড়তি দামে কিনতে দেখা গিয়েছে ক্রেতাদের।
কলাবাগান বাজারের মুদি দোকানি সাইম স্টোরের স্বত্বাধিকারী কাশেম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, চালের দাম আগের মতোই রয়েছে। বাড়ছেও না কমছেও না। তবে ডিমের দাম কিছুটা বাড়তির দিকে রয়েছে। প্রতি ডজন ব্রয়লার মুরগির ডিম কেনা অনুযায়ী ১৩০ টাকার নিচে বিক্রি করলে ডজনপ্রতি ১০ টাকা লস দিতে হবে। তা ছাড়াও হাঁসের ডিমের দামটাও অনেক বেশি। প্রতি ডজন দেশি হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা করে।
ডিমের মতো মাংসের বাজারের একই অবস্থা দেখা গিয়েছে। বাজার ভেদে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। পাকিস্তানি লাল ২৮০-৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫১০-৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগি ছাড়াও মাংসের মধ্যে গরু ৭০০, খাসি ১ হাজার ১০০ ও বকরির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা করে।
যানজটের শহর ঢাকায় উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ে চলাচলকারী মেট্রোরেল চালুর এক মাস পূর্ণ হলো আজ শনিবার। এরই মধ্যে মিরপুরের পল্লবীর একটি স্টেশন চালু হয়েছে। মিরপুরের বাকি স্টেশনগুলো পর্যায়ক্রমে খোলা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
এদিকে এখনো বেশিরভাগ মানুষ মেট্রোরেলে অনেকটা শখের বশেই চড়ছেন। যাত্রীরা বলছেন, স্বল্প দূরত্বের মাঝে চলাচলের কারণে এখনো সেভাবে সুফল মিলছে না। তবে ফার্মগেট পর্যন্ত চলাচল শুরু হলে সুফল মিলবে।
গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর থেকে সাধারণ মানুষের জন্য চলাচল উন্মুক্ত হওয়ার পর গত ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ দিনে ৯০ হাজার যাত্রী মেট্রোরেলে চলাচল করেছে। তাদের মধ্যে সিঙ্গেল জার্নি টিকিট বিক্রি হয়েছে ৮৩ হাজার। আর এমআরটি পাস বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ২৫০টি। এসব টিকিট বিক্রি থেকে মোট ৮৮ লাখ টাকা আয় হয়। পুরোদমে চালু হলে মেট্রোরেলকে দৈনিক ৩ কোটি কারও ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না মেট্রোরেলকে। যদিও গত এক মাসের আয়ের হিসাব এখনো তৈরি করতে পারেনি মেট্রোরেল কর্র্তৃপক্ষ। এ প্রসঙ্গে গতকাল শুক্রবার মেট্রোরেল পরিচালনায় সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই এক মাসে মেট্রোরেলে কত টাকা আয় হয়েছে, সেই সঙ্গে কত যাত্রী তা ব্যবহার করেছে তার হিসাব এখনো তৈরি হয়নি কিছু জটিলতায়।’
গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, এখনো বেশিরভাগ মানুষ মেট্রোরেলে অনেকটা শখের বশেই চলাচল করছেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন আসছে মেট্রোরেলে ঘুরতে। গতকাল সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেট্রোরেলে চড়ে ঘুরতে এসেছিলেন।
তাদেরই একজন মিরপুরের বাসিন্দা যুবায়ের রহমান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেলে উৎসুক যাত্রী এখন বেশি। উত্তরা থেকে আগারগাঁওয়ের পথে মাঝে পল্লবী স্টেশন চালু হয়েছে। কিন্তু আরও তো কয়েকটি স্টেশন আছে। সেগুলো তো চালু হয়নি। আর এই স্বল্প দূরত্বের মাঝে চলাচলে এখনো সেভাবে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ফার্মগেট পর্যন্ত চলাচল করলে আরও সুবিধা পাওয়া যেত।’
মো. নাইম নামে মেট্রোরেলে চড়া আরেক যাত্রী বলেন, ‘শুরুর দিকে টিকিট কাটতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল, এখন সেসব ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না। ভিড়ও কমেছে টিকিটের লাইনে। তবে চলাচলের সময় আরও বাড়াতে হবে।’
এদিকে ভাড়ার হার না কমালে মেট্রোরেল বেশি যাত্রী পাবে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শুরু থেকেই বলে এসেছি, মেট্রোরেলে যে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে সেটি কমাতে হবে। তা না হলে মেট্রোরেলে পিক-আওয়ারে যাত্রী পাওয়া গেলেও অন্য সময়ে যাত্রী মিলবে না। অনেকটা ফাঁকাই চলতে হবে মেট্রোকে। আর মেট্রোরেল যে যানজট নিরসনের জন্য করা হয়েছিল তার উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। যার ফলে অপারেশন (পরিচালনা) ব্যয় বেড়ে যাবে। আর সেই ভর্তুকির টাকা জনগণের কাছ থেকে নেওয়া হবে। তাই ভাড়া কমিয়ে যাত্রী না বাড়ালে এই মেট্রোরেলের যাত্রীদের কল্যাণে ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক সাইফুন নেওয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেট্রোরেলের যে সুবিধা সেটি এক মাসেই ভালোভাবে বোঝা যাবে না। পুরো কাজ শেষ হলে মেট্রোরেলের সুবিধা ধীরে ধীরে পাওয়া যাবে। তবে মেট্রোরেলে মাঝখানে যে স্টেশনগুলো এখনো চালু হয়নি, সেগুলোও খোলা প্রয়োজন। আর মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোর সামনের রাস্তায় যেন যানজট না লাগে সেটিও মনিটরিং করা দরকার। লোকজন যেন মেট্রোরেল থেকে নেমে কোনো ভোগান্তি ছাড়াই যার যার গন্তব্যে ভালোভাবে পৌঁছাতে পারে।’
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে অস্বস্তিতে ছিল বিশ্বের প্রায় সব দেশই। অধিকাংশ দেশই তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। প্রতিবেশী ভারত ও শ্রীলঙ্কার নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতির কথা প্রায় সবারই জানা, তারাও ইতিমধ্যে তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছে। তবে ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ। কোনোভাবেই নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না সরকার। ফলাফল ভোক্তা মূল্যসূচকে (সিপিআই) বা মূল্যস্ফীতিতে ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড। মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) সিপিআই ইনডেক্সে এ হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে।
গত ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করে সরকার। এ বাজেটের মূল কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আগামী অর্থবছরে সরকার কীভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজেট প্রস্তাবে কোনো পদক্ষেপ না থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পরাবাস্তব বাজেট। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা আসলে সম্ভব নয়। গত ১১ মাসে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগে ২০১১ সালের মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ২০ শতাংশ। সে হিসাবে মূল্যস্ফীতি ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে গড় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশ।
মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো, আগের বছরের মে মাসে যে পণ্য গড়ে ১০০ টাকা কিনতে হয়েছে, এ বছরের মে মাসে তা কিনতে হচ্ছে গড়ে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সায়। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, ধরুন আগের বছরের একই সময়ে ৫০০ টাকার একটি নোটে কোনো ব্যক্তি পাঁচটি পণ্য কিনতে পেরেছিলেন। এ বছরের একই সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় এখন একই টাকায় তিনটি পণ্য কিনতে পারছেন। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়।
খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১ বছরে বেড়েছে ১১.৩২ শতাংশ : ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ, অথচ এ বছরের মে মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। এ বছরের এপ্রিল মাসেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ০৪ শতাংশ।
খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে এক বছরে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ : বিবিএসের তথ্য বলছে, সদ্য শেষ হওয়া মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ হয়েছে। ২০২২ সালের মে মাসে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক ০৮ শতাংশ। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৬৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বা ৬৪ শতাংশ।
গ্রামের চেয়ে শহরের মূল্যস্ফীতি বেশি : এক বছর আগেও শহরের মূল্যস্ফীতি গ্রামের চেয়ে কম ছিল। কারণ গ্রামের চেয়ে শহরে পণ্য মজুদের আধুনিক ব্যবস্থা আছে। তবে সরকারি উদ্যোগে শহরের মতো গ্রামেও কিছু স্থানে খাদ্যগুদামের ব্যবস্থা তৈরি হওয়ায় এখন শহরের তুলনায় গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। মে মাসে শহর এলাকায় গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ, একই সময়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
বিশ্বে কমেছে মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশে বাড়ছে : গত শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট-পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। উদাহরণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, থাইল্যান্ডে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, গত এপ্রিলে তা নেমে এসেছে ২ দশমিক ৭ শতাংশে। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬৫ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে ২০২২ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেখান থেকে ৪৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে তারা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত অক্টোবর মাসের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখান থেকে ৩৪ শতাংশ কমিয়ে ৭ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে ইইউ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নীতি সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয়। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উল্টো গত বছর আগস্টে এক ঘোষণাতেই জ্বালানি তেলের দাম ৫১ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই মাসেই মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশ দেরিতে হলেও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। বর্তমানে এ সুদহার ৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে নীতি সুদহার বাড়িয়েও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে আভাস দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল দাবি করেছে, বিশে^র দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির যে হার, তা সামষ্টিক অর্থনীতির জন্য হুমকি। মূল্যস্ফীতির এই হার ১২ বছর বা এক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭-০৮ সালে বিশ্ববাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়তে বাড়তে ১৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
২০০৯ সালের প্রথম দিকে আওয়ামী লীগ সরকার যখন দায়িত্ব নেয়, তখনো মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপর ছিল। পরে অবশ্য তা কমতে কমতে সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে। দীর্ঘদিন ৫ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ঠিক এরকম এক সময়ে গত বছর ৫ আগস্ট সরকার জ্বালানি তেলের দাম ৪২ থেকে ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ায়। এর পরপরই বাড়ানো হয় সব ধরনের পরিবহন ভাড়া। এ দুইয়ের প্রভাবে বেড়ে যায় প্রায় সব পণ্যের দাম। ফলে পরের মাস আগস্টে মূল্যস্ফীতি এক লাফে বেড়ে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে।
যদিও সেপ্টেম্বর থেকে তা কমতে থাকে। ওই মাসে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ১০ শতাংশে আসে। জানুয়ারিতে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশে নেমে আসে। তবে রোজাকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকায় বাড়তে থাকে মূল্যস্ফীতি। ফেব্রুয়ারি মাসে তা বেড়ে হয় ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মার্চ মাসে হয় ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এপ্রিলে তা সামান্য কমে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমে এসেছিল।
মজুরি সূচক বেড়েছে : বিবিএসের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই মজুরি সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছে। অক্টোবরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা মে মাসে এসে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৩২ শতাংশে।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।