
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া বাংলাদেশ সম্পূর্ণ হয় না। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই শব্দের দুটি রূপ। তিনি আমাদের স্বাধীনতা ও স্বপ্ন দিয়ে গেছেন বলেই আজ আমরা দেশকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছি।
গতকাল শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমীতে ‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট’ বইয়ের আলোচনায় যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধু যেমন, তার উত্তরসূরি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তেমন উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যেভাবে চলেছেন এবং দেশ পরিচালনা করেছেন, ঠিক সেভাবেই একই পথে তার কন্যা দেশ পরিচালনা করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন হচ্ছে।’
এ সময় গণহত্যা নিয়ে দেশের জ্ঞানীগুণী ও তরুণ প্রজন্মকে আরও অধিক গবেষণার আহ্বান জানান ড. মোমেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিয়মনীতি মেনে চলেছেন। বঙ্গবন্ধু ৫৫ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারী কারা এবং কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে সেটা আমরা জানি। আমাদের স্বাধীনতা বাই চান্স এসেছে, এমন কথা আমাদের শুনতে হতো না।’
পরিবারের সঙ্গে অভিমান, প্রেমের সম্পর্কে টানাপড়েন, পারিবারিক কলহ, ইভটিজিং ও যৌন হয়রানি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যাপ্রবণ করে তুলছে। এ ছাড়া আপত্তিকর ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া, গেম খেলতে বাধা দেওয়া, পরীক্ষায় অকৃতকার্য, মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়াসহ পড়াশোনার চাপ অনুভব করায় কোনো কোনো শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। ২০২২ সালের সারা দেশে ৪৪৬ জন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। গড় হিসাবে যা দাঁড়ায় প্রতি মাসে প্রায় ৪৪.৩৩ জন।
সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে তৈরি করা এক সমীক্ষার এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা : সমাধান কোন পথে?’ শীর্ষক এই সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সমীক্ষামতে, মোট আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। আটটি বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিভাগে ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী।
আঁচল ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবণী জানান, দেশের দেড় শতাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহননের তথ্য নেওয়া হয়েছে তাদের এ সমীক্ষায়।
আত্মহত্যায় শীর্ষে ঢাকা : দেশের আটটি বিভাগে স্কুল ও কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিভাগে ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এরপর চট্টগ্রামে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ, খুলনায় ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সিলেটে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
আত্মহত্যায় নারীরা এগিয়ে : স্কুল এবং কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা এগিয়ে রয়েছে নারীরা। আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ৬৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। অন্যদিকে শুধু কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী ৫৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং পুরুষ ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ রয়েছে।
বয়ঃসন্ধিকালে ঝুঁকি বেশি : সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী সবচেয়ে বেশি ৪০৫ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করছে। যা মোট আত্মহত্যাকারীর ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ। তার মধ্যে নারী ৬৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী ৪৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ৪৬ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পুরুষ ৫৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নিতে প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয় বলেই এ বয়সে আত্মহত্যার হার বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
আত্মহত্যার পেছনের কারণ : সমীক্ষায় উঠে আসা বেশ সমীক্ষায় উঠে আসা বেশ কিছু কারণের মধ্যে দেখা যায়, মান-অভিমান তাদের সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে। ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ স্কুল ও কলেজশিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে অভিমান করে। এদের বড় অংশেরই অভিমান হয়েছে পরিবারের সঙ্গে। অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেÑ প্রেমঘটিত কারণে ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ, পারিবারিক কলহে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ, হতাশাগ্রস্ততায় ২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, মানসিক সমস্যায় ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, আর্থিক সমস্যা ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, উত্ত্যক্ত, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথে ধাবিত হয়েছে ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। তবে আত্মহত্যার পেছনে বেশ কিছু ভিন্ন কারণও উঠে এসেছে। যেমনÑ আপত্তিকর ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় ৪, শিক্ষক কর্র্তৃক অপমানিত হয়ে ৬, গেম খেলতে বাধা দেওয়ায় ৭, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ২৭, মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায় ১০, মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় ৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়াও পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না পাওয়া, পড়াশোনার চাপ অনুভব করা এবং পারিবারিক চাপে আত্মহত্যার কারণ রয়েছে।
পারিবারিক কলহেও আত্মহত্যা বাড়ছে : মামার বাড়ি যাওয়া নিয়ে ভাইবোনের মধ্যে কলহ, বাবাকে খাবার পৌঁছে দেওয়া নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে কলহ, পরীক্ষা দিতে না চাওয়ায় বাবা-মায়ের সঙ্গে কলহ, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ নিয়ে সন্তানের সঙ্গে কলহ ইত্যাদি বিভিন্ন পারিবারিক কলহে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ স্কুল ও কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার জন্য দায়ী। মোট আত্মহত্যাকারী স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারিবারিক কলহের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। শুধু কলেজগামী আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা করে ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী।
আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের মন সাধারণত ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়। এ বয়সে ছোট ছোট বিষয় তাদের আন্দোলিত করে। বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক বিকাশের সঙ্গে অনেকেই খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে তাদের প্রত্যাশার ক্ষেত্রে ছোটখাটো ঘাটতিও তাদের আত্মহত্যার মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।’
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, একজন শিশু বা কিশোরের আত্মহত্যার কারণ আমাদের কাছে যতই ঠুনকো হোক না কেন, তাদের কাছে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের আবেগের গুরুত্ব পাওয়ার অধিকার তারা রাখে।’
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট শাহরিনা ফেরদৌস বলেন, ‘২০২২ সালের এ জরিপে দেখা যাচ্ছে, ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা অনেক বেশি। অর্থাৎ তারা যে বয়ঃসন্ধিকালের সময়টি পার করছে এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং এ সময়ে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যতœ এবং সচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। কী কারণে তাদের সংখ্যা গত বছর এত বেশি ছিল তার কারণগুলো অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। বিশেষ করে তাদের পারিবারিক বন্ধন, ব্যক্তিগত চাহিদা, সামাজিক অবস্থান এসব বিষয় জানার প্রয়োজন রয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা মোকাবিলায় সংস্থাটি শিক্ষার্থীদের হতাশা, একাকিত্ব ও নেতিবাচক ভাবনা থেকে দূরে রাখতে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ বৃদ্ধি করা, মানসিক বিকাশ এবং তাদের সহানুভূতির সঙ্গে শুনতে ও বুঝতে অভিভাবকদের জন্য প্যারেন্টিং কার্যক্রম চালু করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষক-কর্মচারীদের আচরণ ও পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে কৌশলী ও সহানুভূতিশীল হতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, স্কুল, কলেজ পর্যায়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধী পোস্টার প্রদর্শন করা, প্রতিটি আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবারের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে ও দায় বৃদ্ধিতে তাদের আইনি বাধ্যবাধকতার অন্তর্ভুক্ত করা, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ট্রেনিং দেওয়াসহ ১১টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে সংস্থাটি।
সন্ধ্যার শরীর থেকে ঘুমের আয়োজনগুলো কুড়িয়ে নিতে নিতে শহরে রাত্রি আসে, ক্লান্তি ভিখারির মতো হাই তোলে এখানে-সেখানে। দোকানের বন্ধ শাটারের ওপর পথচারীর ছায়া আঁকাবাঁকা হয়ে মিলিয়ে যায়; গলিতে ঘুমের ডাকনাম মুখস্ত করতে করতে গ্যাসের ওষুধ খেয়ে তলিয়ে যায় পাড়া। সমস্ত কিছুর দখল নিতে রাত্রি এসে গেছে বলে অভিমানে শূন্য সদরঘাট ঘুমায় পাশে বুড়িগঙ্গা রেখে, বাহাদুর শাহ পার্কের মোড়ে বেশি রাতে যাত্রী ধরার স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঝিমায় পুরনো কুমিরের মতো ট্যাক্সি, ইংলিশ রোডের পতিতাপল্লীর সুফিয়ার ঘরে টেবিল ফ্যানটা এপাশ-ওপাশ করে অস্থিরতায়। বাসস্ট্যান্ডে জাগে নেশার চোখ, জাগে বাস মিস করা যাত্রী। জেগে থাকে ঝকমকে কিছু খাবার দোকান, হোটেলের লবি আর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। ম্লান আলোয় মধুমিতা সিনেমা হলের হোর্ডিংয়ে রিভলবার হাতে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে থাকে ক্লিন্ট ইস্টউড একা।
আশ্চর্য, কতকাল আগের রাত্রির বিবরণ বলে যাচ্ছি! মনের মধ্যে একই শহরের রাত্রি দুভাগে ভাগ হয়ে রাশপ্রিন্টের মতো অসংখ্য ছবি তুলে আনছে। বছর চল্লিশ আগের বা তার চেয়েও পুরনো হাফ গেরস্থ রাত্রি এই শহরে এভাবেই বেঁচে থাকত। কবি ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা নিউ ইয়র্ক শহরকে কবিতায় ডেকেছিলেন স্লিপলেস সিটি নামে। কোথায় কী? এই ঢাকাই তো এখন নির্ঘুম শহরের নাম; পাহারা দেয় রাত্রির শরীর। আলো ঝলমলে একটা ছিপ আছে এই রাতের কাছে যা দিয়ে শিকার করে রাত জাগতে চাওয়া অসংখ্য মাছ। তাই হয়তো পেছনে ফেলে আসা একটা শহরের জীবন, তার হৃদস্পন্দন, তার দিনরাত্রির কথা মনে মনে ভাবছি আমি। কড়া নেড়ে ঘুম থেকে তুলে দেখতে চাইছি তার রাতদুপুর, দেখতে চাইছি তার পালঙ্কে শয়ন।
রাতেরও একটা রাজনীতি আছে। সব শহরেই মনে হয় থাকে। যে শহরটায় আমি আজও বেঁচে আছি রাতেরবেলা তার একটা রাজনীতি ছিল; এখনো আছে। সেই রাজনীতিতে ক্ষুধা একটি চরিত্র; রাত জেগে থাকলে ক্ষুধা পায়। নিঃসঙ্গ ফুটপাতে হাঁটতে গিয়ে বাড়ানো হাত এগিয়ে আসে। সে হাতের মালিকের থাকবার জায়গা বলতে ফুটপাত, বাঁচা অথবা মরে যাওয়ার ঠিকানা একটা পুরো শহর। এই ক্ষুধা পাওয়া আর খাবার জোগাড় করতে ব্যর্থতার মাঝের রাজনীতিটুকু আজও আমাদের বোঝাই হলো না। সেই শহরে রাত জেগে বসে থাকত হাতেগোনা কয়েকটি রেস্তোরাঁ। এখন নগর-নিশীথ আগলায় কফির পেয়ালা। সে আগলানো অনেক বেশি ঝলমলে, মাদকতাময়।
একটা সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতির কুশীলবরা রাত নিঝুম হলে ক্যাম্পাসে ছড়ানো-ছিটানো আড্ডা ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসতেন শাহবাগ মোড়ে তখনকার পিজি হাসপাতাল সংলগ্ন বিখ্যাত রেস্তোরাঁ কহিনূরের সামনে। এক চিলতে সেই রেস্তোরাঁ খ্যাতিমান হয়েছিল শিঙাড়া আর চায়ের জন্য। আশির দশকের গোড়ার দিকে সামরিক স্বৈরাচারের বিষবাষ্প তখন বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। সেই শহরে তখন সান্ধ্যআইনও রাত্রির মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। রাজনীতি এবং সাংবাদিকতা বহুদিন আমাকে সংলগ্ন রেখেছে উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্যপটের সঙ্গে। ঘড়ির কাঁটায় সান্ধ্যআইনের সময় নিকটবর্তী জেনে কারও কাছ থেকে চিরকুট নিয়ে কোথাও পৌঁছে দেওয়া অথবা দুএকটি সংক্ষিপ্ত গোপন বার্তার বাহক হয়ে সেই সব রাত্রির গোপন সওয়ার হয়েছি আমিও। উত্তেজনা নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় হয়ে আমার সঙ্গে পথ চলেছে।
তখন আমি সাপ্তাহিক বিচিত্রার কনিষ্ঠ কর্মী। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) তৎকালীন সহসভাপতি প্রখ্যাত ছাত্রনেতা আখতারুজ্জামানের সাক্ষাৎকার নেওয়া প্রয়োজন ছাত্ররাজনীতি বিষয়ক প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের জন্য। ছাত্ররাজনীতি তখন সেই শহরের হাওয়াকে উত্তপ্ত করে রেখেছে। টিয়ার শেলের ঝাঁজালো ধোঁয়া, উচ্চকিত সেøাগান, রক্তপাত, আর মৃত্যু তখন নৈমিত্তিক ঘটনা। সাক্ষাৎকারের সময় ঠিক হলো গভীর রাতে। গোয়েন্দা পুলিশের চোখ এড়িয়ে আখতার ভাইও তখন প্রায় পলাতক জীবনযাপন করছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে আমাদের সাক্ষাতের একটা সময় স্থির হলো। কিন্তু ঝামেলা বাধালেন তখনকার স্বৈরাচারী শাসক জেনারেল এরশাদের তথাকথিত ছাত্র সংগঠন নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের সভাপতি রফিকুল হক হাফিজ। নাকের অপারেশন করাতে তিনি হাসপাতালে ভর্তি। তাই ওই এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের আনাগোনাও বেশি। আখতারুজ্জামানের কাছ থেকে বার্তা এলো সাক্ষাৎকার বাতিল। উনি হাসপাতাল চত্বরে আসতে পারবেন না। কী করা যায়! ওই প্রতিবেদনে আমি কাজ করছিলাম প্রয়াত সাংবাদিক মিনার মাহমুদের সঙ্গে। কয়েকজন ছাত্রনেতা সাপ্তাহিক বিচিত্রার অফিসে এসে সাক্ষাৎকার দিয়ে গেছেন তাদের নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরেই। আখতার ভাইয়ের সাক্ষাৎকার ছাড়া প্রতিবেদন পূর্ণাঙ্গ হবে না কারণ তিনি ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা। মিনার ভাই সাক্ষাৎকার যেভাবেই হোক পয়দা করো এ ধরনের একটা মন্তব্য আমার উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে হারিয়ে গেলেন। সেই শীতের সন্ধ্যার আয়ু ছিল সংক্ষিপ্ত। বিকেলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাতের কারণে খুব সম্ভবত সান্ধ্যআইন বলবৎ হওয়ারও সম্ভাবনা আছে। আখতার ভাইকে আমি কোথায় পাই? সেবার আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন ডাকসুর তখনকার সাহিত্য সম্পাদক আলী রীয়াজ। তিনিও তখন তাদের সিদ্ধেশ্বরীর বাড়িতে রাতে থাকেন না গ্রেপ্তারের ভয়ে। অগত্যা ল্যান্ড টেলিফোনের দ্বারস্থ হওয়া। নম্বর ঘুরিয়ে বাসদ কার্যালয়ে প্রায় ম্যাজিকের মতো পাওয়া গেল রীয়াজ ভাইকে। সমস্যার কথাটা খুলে বলতেই তিনি দায়িত্ব নিলেন সেই সাক্ষাৎকারের। গভীর রাতে আখতার ভাই আমাকে অফিসে ফোন করে বললেন তিনি সাক্ষাৎকারের পুরোটা ব্রিফ করে দিয়েছেন রীয়াজ ভাইকে। আমি যেন পরদিন সকালে লেখাটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করি। সেই রাতের শহরে পুলিশের চোখ এড়িয়ে সাক্ষাৎকার আমাদের হাতে আসার ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল।
এখন এই শহরে সন্ধ্যার চোখ এড়িয়ে কখন রাত্রি নামে বুঝে উঠতে পারি না। ইংলিশ রোডে সুফিয়ার ঘরে রাত্রিবেলা গ্রীষ্মের গুমোট ভেঙে টেবিলফ্যানটা অস্থির যাতনায় আর এপাশ-ওপাশ করে না, ঘরছাড়া এক কবি গভীর রাতে নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পতিতাপল্লীর কোনো ঘরে জড়ানো গলায় চিৎকার করে বলে ওঠে না নিষিদ্ধ এলাকা এত প্রসিদ্ধ কেন! সুইপার কলোনির প্রায়-অন্ধকার ঘরে আলোদান করতে ব্যর্থ ন্যাড়া বাল্ব আর কোনো কবিতা জাগিয়ে তোলে না মনে। দৃষ্টির সম্মুখ দিয়ে সময় ফুরিয়ে যায়। যেতে থাকে। শহরে রাত্রি নামে এখন। কিন্তু সে রাত্রি বড় স্বাদহীন, রাজনীতিহীন মনে হয় আমার।
জানুয়ারি মাসকে বলা হয় বছরের সবচেয়ে শীতলতম মাস। কিন্তু এ মাসের শেষ সপ্তাহে এসে পাওয়া যাচ্ছে উষ্ণতার আভাস। অর্থাৎ, বিদায় নিচ্ছে শীত। যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে শীতের বিদায়ের কথা বলছে না, কিন্তু উপাত্ত আর অনুভূত তাপমাত্রা বিদায়ের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। শীতের এমন আগাম বিদায়ে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শীতকালীন ফসলে।
আবহাওয়ার উপাত্ত নিয়ে কাজ করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এস এম কামরুল হাসান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবার তো ডিসেম্বরে শীতের দেখা পাওয়া যায়নি। জানুয়ারির প্রথম ২০ দিন ছিল শীতের আমেজ। এখন শীতে বিদায়ের ঘণ্টা। অর্থাৎ, ধীরে ধীরে শীত কমে যাবে, বাড়বে গরমের মাত্রা।’
একসময় নভেম্বর থেকে শুরু হলেও এখন শীত দেরিতে শুরু হতে হতে জানুয়ারিতে ঠেকেছে উল্লেখ করে কামরুল হাসান বলেন, ‘শীতের ব্যাপ্তি যে কমে আসছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর ব্যাপ্তি কমে আসায় শীতকালীন ফসলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তা থেকে উত্তরণে কাজ করছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।’
শীতের ব্যাপ্তি কমে যাওয়ায় কৃষিতে কী প্রভাব পড়ছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ দাউদ হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি ফসলের একটা নির্ধারিত তাপমাত্রার স্তর থাকে। শীতকালীন ফসলগুলোর জন্য (আলু, গম, ভুট্টা, সরিষা, টমেটো প্রভৃতি) তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ বা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে টানা প্রায় আড়াইমাস থাকতে হয়। এই সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সব ফসলের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন কমে আসবে।’
তাপমাত্রার সঙ্গে উৎপাদনের কী সম্পর্ক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ফসলটি দ্রুত পরিণত হয়ে যায়। তখন এর ফলন কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তী মৌসুমে ধীরে ধীরে কৃষক ওই ফসলের আবাদ থেকে সরে আসে। আর এ কারণে দেশে গমের উৎপাদন কমে গেছে।’
শীতকালীন ফসল সবচেয়ে বেশি হয় রাজশাহী এলাকায়। শীতের ব্যাপ্তি কমে যাওয়ায় সেই এলাকায় ফসলে কি পরিবর্তন এসেছে কিনা সে বিষয়ে কথা হয় রাজশাহী বিভাগীয় অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সামছুল ওয়াদুদের সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে শীতের ব্যাপ্তি কমে যাওয়ায় বিগত বছরগুলোতে গমের চাষ কমে গিয়েছিল। তবে এখন আটার দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার থেকে মানুষ গমের চাষ আবার শুরু করেছে। কিন্তু শীতের ব্যাপ্তি কম থাকায় গমসহ শীতকালীন ফসলগুলোতে ফলন কম হবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’ কৃষিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূূলত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আমন ধান ঘরে তোলার পর কৃষক শীতকালীন ফসলের চাষ করে থাকে। এক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গে একটু আগে চাষ হয় এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে একটু দেরিতে চাষ হয়। আর চাষের পর ৭৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ফলন ঘরে তোলা যায়। অর্থাৎ, গম, আলু, টমেটো কিংবা সরিষার জন্য কমপক্ষে ৯০ দিন সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু এখন ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকলে শীতকালীন ফসলগুলো দ্রুত পরিণত (যেমন- সরিষা পেকে যায়) হয়ে যায়। তখন আর ফলন ভালো হয় না। এসব ফসল উঠানোর পর কৃষকরা বোরো ধানের চাষ করে থাকে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার আবহাওয়ার উপাত্ত অনুযায়ী, দেশের ৪৩টি আবহাওয়া স্টেশনের মধ্যে ২৯টিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি বা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। অপরদিকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ছিল মাত্র ১৩টি স্টেশনে। এরমধ্যে ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল একটি স্টেশন তেঁতুলিয়ায়। অন্য একটি স্টেশন শ্রীমঙ্গলে ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্য সব স্টেশনে ১২ ডিগ্রির বেশি ছিল। এখন থেকে তাপমাত্রার এই ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।
উল্লেখ্য, দেশে নভেম্বর থেকে শীতকাল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ডিসেম্বরে শেষে শীতের দেখা পাওয়া যায়। আবার জানুয়ারি শেষ না হতেই শীতের বিদায় ঘণ্টা বেজে যায়। ফেব্রুয়ারিতে পুরোদমে গরম শুরু হয়ে যায়।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সবধরনের মাছের দাম বেড়েছে। সবজি বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। মুরগি সামান্য বাড়লেও গরু ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের দরেই। মুদি পণ্য আটায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। কেজিতে কমেছে ৪-৫ টাকা। ডিম কিছুটা বাড়লেও চাল বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কলাবাগান ও মোহাম্মদপুর বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ২৫০ টাকার চাষের কই এ সপ্তাহে ২৬০, ২০০-২১০ টাকার ছোট রুই মাছ ২২০, ৩২০-৩৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া বড় রুই মাছ ৩৪০ ও ২১০ টাকায় বিক্রি হওয়া মৃগেল মাছ ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘেরের পানি কমে যাওয়ায় শীতে মাছ কিছুটা কম ধরা পড়ে। এতে রাজধানীর বাজারগুলোতে চাহিদার তুলনায় মাছের আমদানি অনেকটা কমেছে এবং স্বাভাবিকভাবেই আমদানি কম হওয়ায় মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে।
কাওরান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সোহাগ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বাজারে মাছের সরবরাহও কম রয়েছে। ফলে নতুন করে সবধরনের মাছের কেজিপ্রতি ১০ টাকার বেশি বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি শিং মাছ ৪৫০-৫৩০, ছোট রুই ২২০, বড় রুই ৩৫০, চাষের কই মাছ ২৬০, দেশি কই মাছ ১ হাজার ২৫০, ১ কেজি সাইজের ইলিশ ১১০০-১২০০ ও ৫শ গ্রামের ইলিশ ৫৫০-৬০০ টাকা করে বিক্রি করছি।’
এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের মতো স্থিতিশীল রয়েছে সবজির দাম। প্রতি কেজি মুলা ৪০, ফুলকপি ৪০, টমেটো ৫০-৫৫, মরিচ ১০০-১২০, বেগুন ৪০-৬০, শালগম ৩০-৩৫, শসা ৪০-৪৫, প্রতি পিচ লাউ ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে স্থিতিশীল সবজির বাজারে মুদিপণ্যের মধ্যে ভোক্তার স্বস্তি মিলছে আটাতে। প্যাকেটজাত সবধরনের আটাতে কেজিপ্রতি কমেছে ৪-৫ টাকা করে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আটা ৫৩-৫৪ টাকা করে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। কাওরান বাজারের আটার পাইকারি ব্যবসায়ী ইব্রাহিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে আটার দাম অনেক কমেছে। এখন প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আটা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৫০ থেকে ২ হাজার ৭শ টাকা করে। এর মধ্যে চাকা ও ইউসুফের আটার বস্তা ২ হাজার ৭শ ও বসুন্ধরার আটা বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার টাকা।’
মোহাম্মদপুর এলাকার মা স্টোরের স্বত্বাধিকারী রাকিব দেশ রূপান্তরকে জানান, গত কয়েক দিন ধরেই সব কোম্পানি প্যাকেটজাত আটার দাম কমাতে শুরু করেছে। ১৫ টাকা কমে তীরের দুই কেজির আটা বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা, ১০ টাকা কমে সাধের দুই কেজি আটা বিক্রি করছি ১৩৫ টাকা, বসুন্ধরা ১৩৪ টাকা, পুষ্টি ১৪০ টাকা করে।
এ ছাড়া চালের বাজারে খবর নিয়ে জানা যায়, সবধরনের চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে মোটা জাতের চালের মধ্যে প্রতি কেজি স্বর্ণা ৫০-৫২, আটাশ ৫৪-৫৫, পাইজাম ৫২-৫৩, নাজির ৭০-৮২, মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরায় এসব চালের কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা বাড়তি দামে কিনতে দেখা গিয়েছে ক্রেতাদের।
কলাবাগান বাজারের মুদি দোকানি সাইম স্টোরের স্বত্বাধিকারী কাশেম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, চালের দাম আগের মতোই রয়েছে। বাড়ছেও না কমছেও না। তবে ডিমের দাম কিছুটা বাড়তির দিকে রয়েছে। প্রতি ডজন ব্রয়লার মুরগির ডিম কেনা অনুযায়ী ১৩০ টাকার নিচে বিক্রি করলে ডজনপ্রতি ১০ টাকা লস দিতে হবে। তা ছাড়াও হাঁসের ডিমের দামটাও অনেক বেশি। প্রতি ডজন দেশি হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা করে।
ডিমের মতো মাংসের বাজারের একই অবস্থা দেখা গিয়েছে। বাজার ভেদে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। পাকিস্তানি লাল ২৮০-৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫১০-৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগি ছাড়াও মাংসের মধ্যে গরু ৭০০, খাসি ১ হাজার ১০০ ও বকরির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা করে।
চট্টগ্রাম নগরের খুলশি থানা এলাকার ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান ড্রাইভিং লাইন্সেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ২০২১ সালের ৮ মার্চ। ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি তোলার ৩-৪ মাস পর তার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেই স্মার্ট কার্ড পাননি গত দুই বছরেও। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিআরটিএ, চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড না পেয়ে হতাশ হয়ে বাসায় ফেরেন মেহেদী। ‘আমার স্মার্ট কার্ড পাওয়ার কথা ছিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ৩-৪ মাস পরে। গত দুই বছরে বিআরটিএ কার্যালয়ে এসেছি অন্তত ২০-২৫ বার। আজও পাইনি ড্রাইভিং স্মার্ট কার্ড’ বলেন মেহেদী।
ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ডের বিড়ম্বনার শিকার শুধু মেহেদী নয়, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে স্মার্ট কার্ডের জন্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। লাইসেন্সপ্রত্যাশীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেল-২ এর সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার ঊর্মি বলেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ডের বর্তমান ভেন্ডর মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স লিমিটেড। সংস্থাটির হাতে এখনো প্রিন্ট হওয়ার বাকি আছে প্রায় ২০ হাজার স্মার্ট কার্ড। ইতিমধ্যে সংস্থাটির কাছ থেকে প্রিন্টেড পাঁচ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড এসেছে। কারিগরি ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে গ্রাহকদের কিছুটা ভোগান্তি হতে পারে।’
বিআরটিএ’র এই কর্মকর্তা জানান, ৬-৭ মাস আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ডের পূর্ববর্তী ভেন্ডর ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) লিমিটেড। সংস্থাটির প্রিন্ট করা ৮৪ হাজার স্মার্ট কার্ড বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে পাঠায়। ‘আমরা তখন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি এবং মাইকিং করেও লাইসেন্স গ্রহীতাদের পাইনি। ৮৪ হাজার থেকে এ পর্যন্ত ৬৯ হাজার স্মার্ট কার্ড গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করেছি। এখনো ১৫ হাজার স্মার্ট কার্ড পড়ে আছে আমাদের কার্যালয়ে।’
এদিকে সংস্থাটির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পূর্ববর্তী ভেন্ডর ‘বিএমটিএফ’ থেকে আসা ৮৪ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড বিআরটিএ’র হাতে আসে লাইসেন্স প্রত্যাশীদের তিন বছর ভোগানোর পর। এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড প্রিন্টের দায়িত্বে আছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স লিমিটেড’ (এমএসপি)।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের লাইসেন্স শাখায় গিয়ে দেখা যায়, দেড় থেকে দুই বছর ঘুরেও ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড মিলছে না বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। তাদের একজন আকবর হোসেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘২০২২ সালের মে মাসে ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। বিআরটিএ রসিদ দিয়েই গাড়ি চালাচ্ছি। গত ৮ মাসে ৭-৮ বার বিআরটিএ কার্যালয়ে এসেছি স্মার্ট কার্ডের জন্য। কার্ড সম্পন্ন হয়েছে বলে মোবাইলে মেসেজ আসার পর বিআরটিএ কার্যালয়ে এলে লাইসেন্স শাখার দায়িত্বপ্রাপ্তরা চেক করে বলেন, ‘স্মার্ট কার্ড আসেনি’। শুধু প্রাপ্তি রসিদের মেয়াদ বাড়াচ্ছে বিআরটিএ।’
বিআরটিএ সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও স্মার্ট কার্ড সরবরাহের জন্য ‘টাইগার আইটি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বিআরটিএ। ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে তাদের ১৫ লাখ কার্ড ছাপানোর কথা। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত চুক্তির তিন বছরের মধ্যেই সাড়ে ১৪ লাখের কাছাকাছি কার্ড ছাপিয়ে বিআরটিএকে সরবরাহ করে। চাহিদার কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই বেশি কার্ড ছাপাতে হয় তাদের। দিন দিন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পুরনো ঠিকাদার টাইগার আইটির সঙ্গে জটিলতা তৈরি হয় বিআরটিএ’র। ডুয়াল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট স্মার্ট কার্ডে ছাপা ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের জন্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে গত বছরের ২৯ জুলাই চুক্তি হয় বিআরটিএ’র। আগামী পাঁচ বছরে ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গত বছর ১৮ মে থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে। চট্টগ্রামে প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক শরীফুজ্জামান ভুঞা ড্রাইভিং স্মার্ট কার্ডের জন্য গ্রাহকদের ভোগান্তির কথা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে ভোগান্তির দিন শেষ হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রামে একদিনেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার সব কার্যক্রম শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের পালন করা সাড়ে ২১ মণ ওজনের গরু উপহার দিতে চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাউনা গ্রামের সাধারণ কৃষক বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান। তাদের এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে উপহারের এই গরু গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপহারের গরু গ্রহণে সম্মতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন এবং এই বিরল ভালোবাসার জন্য বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
হাসান জাহিদ তুষার জানান, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এই গরু বুলবুল আহমেদের নিজ বাড়িতেই থাকবে এবং সেখানেই কোরবানি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরবানির গরুর মাংস স্থানীয় দরিদ্র-অসহায় জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গরুটি ক্রস ব্রাহমা প্রজাতির। এতে আনুমানিক ৮০০ কেজি মাংস হতে পারে বলে জানিয়েছেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল জানান, ২০২০ সালে নেত্রকোনা জেলা থেকে আড়াই লাখ টাকায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য তিনি এই গরু কেনেন। গরু কেনার পর কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত পাগলা মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা মানতও করছিলেন তিনি যেন তার গরুটি সুস্থ থাকে।
তিনি আরও জানান, তিনি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত তার স্ত্রী ইসরাত জাহান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই গরু কেনেন। তারা গত তিন বছর গরুটির নিবিড় পরিচর্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেগ ও ভালবাসা থেকে তারা এই গরু ক্রয় ও লালন পালন করেছেন বলে জানান।
উপহার হিসেবে তার গরুটি গ্রহণ করার সম্মতি দেওয়ায় বুলবুল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বুলবুল আহমেদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের আগুন তরুণদের বুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্র তৈরি করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’। স্বাধীনতার পর তিনি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বাঁধভাঙা ঢেউ তুলেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সবকিছু থেকে দূরে আড়ালে চলে যান। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। সেই রহস্য নায়ক সিরাজুল আলম খান চলে গেলেন চিররহস্যের দেশে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার কিছু পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১ জুন নেওয়া হয় আইসিইউতে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক (নুর)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন সংগঠন।
প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ ও নাট্য পরিচালক সাকিল সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষে রাতে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুনরায় জানাজা শেষে বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে রাজনীতির এ নায়ককে।
১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া এ কিংবদন্তি রাজনীতিককে বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে সিরাজুল আলম খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় ১৯৬২ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এ ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনো নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে খ্যাতি পান। অনুসারী সবাই তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
মূলত নব্বইয়ের দশকে সিরাজুল আলম খান কখনো জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। নব্বই পর্যন্ত একাধিকবার জেল-জুলুম খেটেছেন তিনি।
দাদা ভাইয়ের মৃত্যুত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, গণফোরাম একাংশে সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
বেশ ক'দিন তীব্র তাপদাহের পর গতকাল রাজধানী ঢাকাজুড়ে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা এসেছে কমে, পরিচ্ছন্ন হয়েছে পরিবেশ। তবুও আজ সকালে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে ঢাকা। বৃষ্টিধোয়া রাজধানী ঢাকা আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ১৫৫ স্কোর নিয়ে দূষণের তালিকায় চতুর্থ।
আজ শনিবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় বাতাসের স্কোর ছিল ১৫৫। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়। একই সময়ে একিউআই স্কোর ১৬৮ নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, স্কোর ১৫৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েলের তেলআবিব। আর পঞ্চম স্থানে আছে চীনের শেংডু, স্কোর ১৪৯।
একইসময়ে ১৩৮ স্কোর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেনেসবার্গ। ১৩২ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। অষ্টম নেপালের কাঠমান্ডু, স্কোর ১২৭। ১১৮ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট আর ১১৭ স্কোর নিয়ে দশম সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
তথ্যমতে, একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে 'ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় ১২ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মো. রহুল আমিন (৫৬) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৯ জুন) শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় মামলা করলে তাকে আটক করা হয়।
আটক মো. রহুল আমিন উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে।
ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বরুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষককে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মার্চ ভোর আনুমানিক ৬টায় দিকে উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামে ১২ বছরের শিশুকে গোয়ালঘরের পেছনে ধর্ষণ করেন মো. রহুল আমিন। এবিষয়ে এতোদিন জানাজানি না হলেও ৪ জুন (রোববার) হঠাৎ শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে পরিবারের লোকজন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে পল্লী চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষা করে কর্তবরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসা জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হন। তারপর ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে বিষয়টি জানান। ভুক্তভোগী শিশুটি এখন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’