
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, আন্দোলন নিয়ে বিএনপির দম ফুরিয়েছে, সে কারণে নীরব পদযাত্রা কর্মসূচি দিয়েছে তারা। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজশাহীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপিকে পুরাতন হয়ে যাওয়া গাড়ির সঙ্গে তুলনা করেন তথ্যমন্ত্রী।
তথ্যমন্ত্রী গতকাল বিকেলে আগামী রবিবার প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহীতে আগমন উপলক্ষে জনসভা মাঠ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন বিএনপিকে শীতের পাখির মতো দেখা যাচ্ছে। কয়েক দিন বিরতি দিয়ে একটি প্রোগ্রাম করে। গাড়ি যখন পুরাতন হয়ে যায় তখন ওইটা চলে না। তখন কদিন পরপর ওইটাকে স্টার্ট দিতে হয়। বিএনপির কয়েক দিন পরপর কর্মসূচি হচ্ছে ওই পুরনো গাড়ির মতো। যেটা চলে না সেটার স্টার্ট দেওয়ার মতো। এখন দেখলাম গাড়ির যেমন দম ফুরিয়ে যায়, বিএনপিরও তেমন দম ফুরিয়ে গেছে। এ জন্য তারা নীরব পদযাত্রা করবে। আমাদের সঙ্গে অন্য দলের পার্থক্য আওয়ামী লীগ সবসময়ই মানুষের পাশে থাকে। জনগণের সঙ্গে থাকে। আমরা জনগণের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব।’ ড. হাছান বলেন, ‘এটা নির্বাচনের বছর। এক বছরেরও কম সময়ে মধ্যে দেশে সাধারণ নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে বিভিন্ন জনসভায় এরই মধ্যে ভোট চাওয়া শুরু করেছেন। আমরাও দলের কর্মী হিসেবে ভোট চাইছি। আমরা সারা বছর মানুষের কাছে থাকি। শুধু এখন ভোট চাইছি তা নয়। আমরা গত ১৪ বছর মানুষের সঙ্গে থেকেছি। মানুষের খোঁজখবর রেখেছি। মানুষের সুখে-দুঃখে শুধু আওয়ামী লীগকেই পাওয়া গেছে। দুর্যোগকালে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কাউকে পাওয়া যায় না।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর জনসভায় বেশ কিছু উন্নয়ন কর্মকান্ডের উদ্বোধন করবেন। এরই মধ্যে জনসভার সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। এ মাঠের চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি লোক হবে। পুরো শহর জুড়েই সেদিন জনসভা হবে।’
তথ্যমন্ত্রীর মাঠ পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ দারাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা।
পরিবারের সঙ্গে অভিমান, প্রেমের সম্পর্কে টানাপড়েন, পারিবারিক কলহ, ইভটিজিং ও যৌন হয়রানি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যাপ্রবণ করে তুলছে। এ ছাড়া আপত্তিকর ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া, গেম খেলতে বাধা দেওয়া, পরীক্ষায় অকৃতকার্য, মোবাইল ফোন ও মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়াসহ পড়াশোনার চাপ অনুভব করায় কোনো কোনো শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। ২০২২ সালের সারা দেশে ৪৪৬ জন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৮৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। গড় হিসাবে যা দাঁড়ায় প্রতি মাসে প্রায় ৪৪.৩৩ জন।
সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের গণমাধ্যমের প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে তৈরি করা এক সমীক্ষার এমন তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল শুক্রবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘স্কুল ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা : সমাধান কোন পথে?’ শীর্ষক এই সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সমীক্ষামতে, মোট আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। আটটি বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিভাগে ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী।
আঁচল ফাউন্ডেশনের রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস ইউনিটের টিম লিডার ফারজানা আক্তার লাবণী জানান, দেশের দেড় শতাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকা এবং অনলাইন পোর্টাল থেকে শিক্ষার্থীদের আত্মহননের তথ্য নেওয়া হয়েছে তাদের এ সমীক্ষায়।
আত্মহত্যায় শীর্ষে ঢাকা : দেশের আটটি বিভাগে স্কুল ও কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছে ঢাকা বিভাগে ২৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এরপর চট্টগ্রামে ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ৮১ শতাংশ, খুলনায় ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ, রংপুরে ৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বরিশালে ৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং সিলেটে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে।
আত্মহত্যায় নারীরা এগিয়ে : স্কুল এবং কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা এগিয়ে রয়েছে নারীরা। আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ৬৩ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ। শুধু স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ৬৫ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। অন্যদিকে শুধু কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে নারী ৫৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং পুরুষ ৪০ দশমিক ৫৬ শতাংশ রয়েছে।
বয়ঃসন্ধিকালে ঝুঁকি বেশি : সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী সবচেয়ে বেশি ৪০৫ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করছে। যা মোট আত্মহত্যাকারীর ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ। তার মধ্যে নারী ৬৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং পুরুষ ৩৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী ৪৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে নারী ৪৬ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং পুরুষ ৫৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ। বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানিয়ে নিতে প্রতিকূল পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয় বলেই এ বয়সে আত্মহত্যার হার বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
আত্মহত্যার পেছনের কারণ : সমীক্ষায় উঠে আসা বেশ সমীক্ষায় উঠে আসা বেশ কিছু কারণের মধ্যে দেখা যায়, মান-অভিমান তাদের সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যাপ্রবণ করে তোলে। ২৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ স্কুল ও কলেজশিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে অভিমান করে। এদের বড় অংশেরই অভিমান হয়েছে পরিবারের সঙ্গে। অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেÑ প্রেমঘটিত কারণে ২৩ দশমিক ৩২ শতাংশ, পারিবারিক কলহে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ, হতাশাগ্রস্ততায় ২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, মানসিক সমস্যায় ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, আর্থিক সমস্যা ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, উত্ত্যক্ত, ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথে ধাবিত হয়েছে ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। তবে আত্মহত্যার পেছনে বেশ কিছু ভিন্ন কারণও উঠে এসেছে। যেমনÑ আপত্তিকর ছবি ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ায় ৪, শিক্ষক কর্র্তৃক অপমানিত হয়ে ৬, গেম খেলতে বাধা দেওয়ায় ৭, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে ২৭, মোবাইল ফোন কিনে না দেওয়ায় ১০, মোটরসাইকেল কিনে না দেওয়ায় ৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়াও পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল না পাওয়া, পড়াশোনার চাপ অনুভব করা এবং পারিবারিক চাপে আত্মহত্যার কারণ রয়েছে।
পারিবারিক কলহেও আত্মহত্যা বাড়ছে : মামার বাড়ি যাওয়া নিয়ে ভাইবোনের মধ্যে কলহ, বাবাকে খাবার পৌঁছে দেওয়া নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে কলহ, পরীক্ষা দিতে না চাওয়ায় বাবা-মায়ের সঙ্গে কলহ, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ নিয়ে সন্তানের সঙ্গে কলহ ইত্যাদি বিভিন্ন পারিবারিক কলহে ৩ দশমিক ১৪ শতাংশ স্কুল ও কলেজপড়–য়া শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার জন্য দায়ী। মোট আত্মহত্যাকারী স্কুলগামী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারিবারিক কলহের কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় ২ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। শুধু কলেজগামী আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা করে ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী।
আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের মন সাধারণত ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়। এ বয়সে ছোট ছোট বিষয় তাদের আন্দোলিত করে। বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক বিকাশের সঙ্গে অনেকেই খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে তাদের প্রত্যাশার ক্ষেত্রে ছোটখাটো ঘাটতিও তাদের আত্মহত্যার মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে।’
শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, একজন শিশু বা কিশোরের আত্মহত্যার কারণ আমাদের কাছে যতই ঠুনকো হোক না কেন, তাদের কাছে এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের আবেগের গুরুত্ব পাওয়ার অধিকার তারা রাখে।’
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট শাহরিনা ফেরদৌস বলেন, ‘২০২২ সালের এ জরিপে দেখা যাচ্ছে, ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা অনেক বেশি। অর্থাৎ তারা যে বয়ঃসন্ধিকালের সময়টি পার করছে এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং এ সময়ে কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যতœ এবং সচেতনতা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। কী কারণে তাদের সংখ্যা গত বছর এত বেশি ছিল তার কারণগুলো অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। বিশেষ করে তাদের পারিবারিক বন্ধন, ব্যক্তিগত চাহিদা, সামাজিক অবস্থান এসব বিষয় জানার প্রয়োজন রয়েছে।’
শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা মোকাবিলায় সংস্থাটি শিক্ষার্থীদের হতাশা, একাকিত্ব ও নেতিবাচক ভাবনা থেকে দূরে রাখতে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার সুযোগ বৃদ্ধি করা, মানসিক বিকাশ এবং তাদের সহানুভূতির সঙ্গে শুনতে ও বুঝতে অভিভাবকদের জন্য প্যারেন্টিং কার্যক্রম চালু করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষক-কর্মচারীদের আচরণ ও পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে কৌশলী ও সহানুভূতিশীল হতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, স্কুল, কলেজ পর্যায়ে আত্মহত্যা প্রতিরোধী পোস্টার প্রদর্শন করা, প্রতিটি আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবারের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে ও দায় বৃদ্ধিতে তাদের আইনি বাধ্যবাধকতার অন্তর্ভুক্ত করা, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ট্রেনিং দেওয়াসহ ১১টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে সংস্থাটি।
সন্ধ্যার শরীর থেকে ঘুমের আয়োজনগুলো কুড়িয়ে নিতে নিতে শহরে রাত্রি আসে, ক্লান্তি ভিখারির মতো হাই তোলে এখানে-সেখানে। দোকানের বন্ধ শাটারের ওপর পথচারীর ছায়া আঁকাবাঁকা হয়ে মিলিয়ে যায়; গলিতে ঘুমের ডাকনাম মুখস্ত করতে করতে গ্যাসের ওষুধ খেয়ে তলিয়ে যায় পাড়া। সমস্ত কিছুর দখল নিতে রাত্রি এসে গেছে বলে অভিমানে শূন্য সদরঘাট ঘুমায় পাশে বুড়িগঙ্গা রেখে, বাহাদুর শাহ পার্কের মোড়ে বেশি রাতে যাত্রী ধরার স্বপ্ন দেখতে দেখতে ঝিমায় পুরনো কুমিরের মতো ট্যাক্সি, ইংলিশ রোডের পতিতাপল্লীর সুফিয়ার ঘরে টেবিল ফ্যানটা এপাশ-ওপাশ করে অস্থিরতায়। বাসস্ট্যান্ডে জাগে নেশার চোখ, জাগে বাস মিস করা যাত্রী। জেগে থাকে ঝকমকে কিছু খাবার দোকান, হোটেলের লবি আর হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। ম্লান আলোয় মধুমিতা সিনেমা হলের হোর্ডিংয়ে রিভলবার হাতে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে থাকে ক্লিন্ট ইস্টউড একা।
আশ্চর্য, কতকাল আগের রাত্রির বিবরণ বলে যাচ্ছি! মনের মধ্যে একই শহরের রাত্রি দুভাগে ভাগ হয়ে রাশপ্রিন্টের মতো অসংখ্য ছবি তুলে আনছে। বছর চল্লিশ আগের বা তার চেয়েও পুরনো হাফ গেরস্থ রাত্রি এই শহরে এভাবেই বেঁচে থাকত। কবি ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা নিউ ইয়র্ক শহরকে কবিতায় ডেকেছিলেন স্লিপলেস সিটি নামে। কোথায় কী? এই ঢাকাই তো এখন নির্ঘুম শহরের নাম; পাহারা দেয় রাত্রির শরীর। আলো ঝলমলে একটা ছিপ আছে এই রাতের কাছে যা দিয়ে শিকার করে রাত জাগতে চাওয়া অসংখ্য মাছ। তাই হয়তো পেছনে ফেলে আসা একটা শহরের জীবন, তার হৃদস্পন্দন, তার দিনরাত্রির কথা মনে মনে ভাবছি আমি। কড়া নেড়ে ঘুম থেকে তুলে দেখতে চাইছি তার রাতদুপুর, দেখতে চাইছি তার পালঙ্কে শয়ন।
রাতেরও একটা রাজনীতি আছে। সব শহরেই মনে হয় থাকে। যে শহরটায় আমি আজও বেঁচে আছি রাতেরবেলা তার একটা রাজনীতি ছিল; এখনো আছে। সেই রাজনীতিতে ক্ষুধা একটি চরিত্র; রাত জেগে থাকলে ক্ষুধা পায়। নিঃসঙ্গ ফুটপাতে হাঁটতে গিয়ে বাড়ানো হাত এগিয়ে আসে। সে হাতের মালিকের থাকবার জায়গা বলতে ফুটপাত, বাঁচা অথবা মরে যাওয়ার ঠিকানা একটা পুরো শহর। এই ক্ষুধা পাওয়া আর খাবার জোগাড় করতে ব্যর্থতার মাঝের রাজনীতিটুকু আজও আমাদের বোঝাই হলো না। সেই শহরে রাত জেগে বসে থাকত হাতেগোনা কয়েকটি রেস্তোরাঁ। এখন নগর-নিশীথ আগলায় কফির পেয়ালা। সে আগলানো অনেক বেশি ঝলমলে, মাদকতাময়।
একটা সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতির কুশীলবরা রাত নিঝুম হলে ক্যাম্পাসে ছড়ানো-ছিটানো আড্ডা ছেড়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে আসতেন শাহবাগ মোড়ে তখনকার পিজি হাসপাতাল সংলগ্ন বিখ্যাত রেস্তোরাঁ কহিনূরের সামনে। এক চিলতে সেই রেস্তোরাঁ খ্যাতিমান হয়েছিল শিঙাড়া আর চায়ের জন্য। আশির দশকের গোড়ার দিকে সামরিক স্বৈরাচারের বিষবাষ্প তখন বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। সেই শহরে তখন সান্ধ্যআইনও রাত্রির মানচিত্রে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। রাজনীতি এবং সাংবাদিকতা বহুদিন আমাকে সংলগ্ন রেখেছে উত্তেজনাপূর্ণ দৃশ্যপটের সঙ্গে। ঘড়ির কাঁটায় সান্ধ্যআইনের সময় নিকটবর্তী জেনে কারও কাছ থেকে চিরকুট নিয়ে কোথাও পৌঁছে দেওয়া অথবা দুএকটি সংক্ষিপ্ত গোপন বার্তার বাহক হয়ে সেই সব রাত্রির গোপন সওয়ার হয়েছি আমিও। উত্তেজনা নিষিদ্ধ সম্পাদকীয় হয়ে আমার সঙ্গে পথ চলেছে।
তখন আমি সাপ্তাহিক বিচিত্রার কনিষ্ঠ কর্মী। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) তৎকালীন সহসভাপতি প্রখ্যাত ছাত্রনেতা আখতারুজ্জামানের সাক্ষাৎকার নেওয়া প্রয়োজন ছাত্ররাজনীতি বিষয়ক প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের জন্য। ছাত্ররাজনীতি তখন সেই শহরের হাওয়াকে উত্তপ্ত করে রেখেছে। টিয়ার শেলের ঝাঁজালো ধোঁয়া, উচ্চকিত সেøাগান, রক্তপাত, আর মৃত্যু তখন নৈমিত্তিক ঘটনা। সাক্ষাৎকারের সময় ঠিক হলো গভীর রাতে। গোয়েন্দা পুলিশের চোখ এড়িয়ে আখতার ভাইও তখন প্রায় পলাতক জীবনযাপন করছেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে আমাদের সাক্ষাতের একটা সময় স্থির হলো। কিন্তু ঝামেলা বাধালেন তখনকার স্বৈরাচারী শাসক জেনারেল এরশাদের তথাকথিত ছাত্র সংগঠন নতুন বাংলা ছাত্র সমাজের সভাপতি রফিকুল হক হাফিজ। নাকের অপারেশন করাতে তিনি হাসপাতালে ভর্তি। তাই ওই এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশের আনাগোনাও বেশি। আখতারুজ্জামানের কাছ থেকে বার্তা এলো সাক্ষাৎকার বাতিল। উনি হাসপাতাল চত্বরে আসতে পারবেন না। কী করা যায়! ওই প্রতিবেদনে আমি কাজ করছিলাম প্রয়াত সাংবাদিক মিনার মাহমুদের সঙ্গে। কয়েকজন ছাত্রনেতা সাপ্তাহিক বিচিত্রার অফিসে এসে সাক্ষাৎকার দিয়ে গেছেন তাদের নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরেই। আখতার ভাইয়ের সাক্ষাৎকার ছাড়া প্রতিবেদন পূর্ণাঙ্গ হবে না কারণ তিনি ছিলেন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা। মিনার ভাই সাক্ষাৎকার যেভাবেই হোক পয়দা করো এ ধরনের একটা মন্তব্য আমার উদ্দেশ্যে ছুড়ে দিয়ে সন্ধ্যার অন্ধকারে হারিয়ে গেলেন। সেই শীতের সন্ধ্যার আয়ু ছিল সংক্ষিপ্ত। বিকেলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘাতের কারণে খুব সম্ভবত সান্ধ্যআইন বলবৎ হওয়ারও সম্ভাবনা আছে। আখতার ভাইকে আমি কোথায় পাই? সেবার আমাকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন ডাকসুর তখনকার সাহিত্য সম্পাদক আলী রীয়াজ। তিনিও তখন তাদের সিদ্ধেশ্বরীর বাড়িতে রাতে থাকেন না গ্রেপ্তারের ভয়ে। অগত্যা ল্যান্ড টেলিফোনের দ্বারস্থ হওয়া। নম্বর ঘুরিয়ে বাসদ কার্যালয়ে প্রায় ম্যাজিকের মতো পাওয়া গেল রীয়াজ ভাইকে। সমস্যার কথাটা খুলে বলতেই তিনি দায়িত্ব নিলেন সেই সাক্ষাৎকারের। গভীর রাতে আখতার ভাই আমাকে অফিসে ফোন করে বললেন তিনি সাক্ষাৎকারের পুরোটা ব্রিফ করে দিয়েছেন রীয়াজ ভাইকে। আমি যেন পরদিন সকালে লেখাটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করি। সেই রাতের শহরে পুলিশের চোখ এড়িয়ে সাক্ষাৎকার আমাদের হাতে আসার ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছিল।
এখন এই শহরে সন্ধ্যার চোখ এড়িয়ে কখন রাত্রি নামে বুঝে উঠতে পারি না। ইংলিশ রোডে সুফিয়ার ঘরে রাত্রিবেলা গ্রীষ্মের গুমোট ভেঙে টেবিলফ্যানটা অস্থির যাতনায় আর এপাশ-ওপাশ করে না, ঘরছাড়া এক কবি গভীর রাতে নেশায় আচ্ছন্ন হয়ে পতিতাপল্লীর কোনো ঘরে জড়ানো গলায় চিৎকার করে বলে ওঠে না নিষিদ্ধ এলাকা এত প্রসিদ্ধ কেন! সুইপার কলোনির প্রায়-অন্ধকার ঘরে আলোদান করতে ব্যর্থ ন্যাড়া বাল্ব আর কোনো কবিতা জাগিয়ে তোলে না মনে। দৃষ্টির সম্মুখ দিয়ে সময় ফুরিয়ে যায়। যেতে থাকে। শহরে রাত্রি নামে এখন। কিন্তু সে রাত্রি বড় স্বাদহীন, রাজনীতিহীন মনে হয় আমার।
জানুয়ারি মাসকে বলা হয় বছরের সবচেয়ে শীতলতম মাস। কিন্তু এ মাসের শেষ সপ্তাহে এসে পাওয়া যাচ্ছে উষ্ণতার আভাস। অর্থাৎ, বিদায় নিচ্ছে শীত। যদিও আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে শীতের বিদায়ের কথা বলছে না, কিন্তু উপাত্ত আর অনুভূত তাপমাত্রা বিদায়ের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। শীতের এমন আগাম বিদায়ে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শীতকালীন ফসলে।
আবহাওয়ার উপাত্ত নিয়ে কাজ করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এস এম কামরুল হাসান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবার তো ডিসেম্বরে শীতের দেখা পাওয়া যায়নি। জানুয়ারির প্রথম ২০ দিন ছিল শীতের আমেজ। এখন শীতে বিদায়ের ঘণ্টা। অর্থাৎ, ধীরে ধীরে শীত কমে যাবে, বাড়বে গরমের মাত্রা।’
একসময় নভেম্বর থেকে শুরু হলেও এখন শীত দেরিতে শুরু হতে হতে জানুয়ারিতে ঠেকেছে উল্লেখ করে কামরুল হাসান বলেন, ‘শীতের ব্যাপ্তি যে কমে আসছে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর ব্যাপ্তি কমে আসায় শীতকালীন ফসলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তা থেকে উত্তরণে কাজ করছে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট।’
শীতের ব্যাপ্তি কমে যাওয়ায় কৃষিতে কী প্রভাব পড়ছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ দাউদ হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি ফসলের একটা নির্ধারিত তাপমাত্রার স্তর থাকে। শীতকালীন ফসলগুলোর জন্য (আলু, গম, ভুট্টা, সরিষা, টমেটো প্রভৃতি) তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ বা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে টানা প্রায় আড়াইমাস থাকতে হয়। এই সময়ের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে সব ফসলের হেক্টরপ্রতি উৎপাদন কমে আসবে।’
তাপমাত্রার সঙ্গে উৎপাদনের কী সম্পর্ক জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ফসলটি দ্রুত পরিণত হয়ে যায়। তখন এর ফলন কমে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তী মৌসুমে ধীরে ধীরে কৃষক ওই ফসলের আবাদ থেকে সরে আসে। আর এ কারণে দেশে গমের উৎপাদন কমে গেছে।’
শীতকালীন ফসল সবচেয়ে বেশি হয় রাজশাহী এলাকায়। শীতের ব্যাপ্তি কমে যাওয়ায় সেই এলাকায় ফসলে কি পরিবর্তন এসেছে কিনা সে বিষয়ে কথা হয় রাজশাহী বিভাগীয় অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ সামছুল ওয়াদুদের সঙ্গে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এটা ঠিক যে শীতের ব্যাপ্তি কমে যাওয়ায় বিগত বছরগুলোতে গমের চাষ কমে গিয়েছিল। তবে এখন আটার দাম বেড়ে যাওয়ায় এবার থেকে মানুষ গমের চাষ আবার শুরু করেছে। কিন্তু শীতের ব্যাপ্তি কম থাকায় গমসহ শীতকালীন ফসলগুলোতে ফলন কম হবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’ কৃষিবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মূূলত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আমন ধান ঘরে তোলার পর কৃষক শীতকালীন ফসলের চাষ করে থাকে। এক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গে একটু আগে চাষ হয় এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে একটু দেরিতে চাষ হয়। আর চাষের পর ৭৫ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে ফলন ঘরে তোলা যায়। অর্থাৎ, গম, আলু, টমেটো কিংবা সরিষার জন্য কমপক্ষে ৯০ দিন সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু এখন ফেব্রুয়ারিতে তাপমাত্রা আরও বাড়তে থাকলে শীতকালীন ফসলগুলো দ্রুত পরিণত (যেমন- সরিষা পেকে যায়) হয়ে যায়। তখন আর ফলন ভালো হয় না। এসব ফসল উঠানোর পর কৃষকরা বোরো ধানের চাষ করে থাকে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার আবহাওয়ার উপাত্ত অনুযায়ী, দেশের ৪৩টি আবহাওয়া স্টেশনের মধ্যে ২৯টিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি বা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। অপরদিকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ছিল মাত্র ১৩টি স্টেশনে। এরমধ্যে ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল একটি স্টেশন তেঁতুলিয়ায়। অন্য একটি স্টেশন শ্রীমঙ্গলে ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্য সব স্টেশনে ১২ ডিগ্রির বেশি ছিল। এখন থেকে তাপমাত্রার এই ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলে জানাচ্ছেন আবহাওয়াবিদরা।
উল্লেখ্য, দেশে নভেম্বর থেকে শীতকাল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ডিসেম্বরে শেষে শীতের দেখা পাওয়া যায়। আবার জানুয়ারি শেষ না হতেই শীতের বিদায় ঘণ্টা বেজে যায়। ফেব্রুয়ারিতে পুরোদমে গরম শুরু হয়ে যায়।
সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে সবধরনের মাছের দাম বেড়েছে। সবজি বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। মুরগি সামান্য বাড়লেও গরু ও খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে গত সপ্তাহের দরেই। মুদি পণ্য আটায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। কেজিতে কমেছে ৪-৫ টাকা। ডিম কিছুটা বাড়লেও চাল বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, কলাবাগান ও মোহাম্মদপুর বাজার ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে ২৫০ টাকার চাষের কই এ সপ্তাহে ২৬০, ২০০-২১০ টাকার ছোট রুই মাছ ২২০, ৩২০-৩৩০ টাকায় বিক্রি হওয়া বড় রুই মাছ ৩৪০ ও ২১০ টাকায় বিক্রি হওয়া মৃগেল মাছ ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘেরের পানি কমে যাওয়ায় শীতে মাছ কিছুটা কম ধরা পড়ে। এতে রাজধানীর বাজারগুলোতে চাহিদার তুলনায় মাছের আমদানি অনেকটা কমেছে এবং স্বাভাবিকভাবেই আমদানি কম হওয়ায় মাছের দাম কিছুটা বেড়েছে।
কাওরান বাজারের মাছ ব্যবসায়ী সোহাগ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় বাজারে মাছের সরবরাহও কম রয়েছে। ফলে নতুন করে সবধরনের মাছের কেজিপ্রতি ১০ টাকার বেশি বেড়েছে। বর্তমানে প্রতি কেজি শিং মাছ ৪৫০-৫৩০, ছোট রুই ২২০, বড় রুই ৩৫০, চাষের কই মাছ ২৬০, দেশি কই মাছ ১ হাজার ২৫০, ১ কেজি সাইজের ইলিশ ১১০০-১২০০ ও ৫শ গ্রামের ইলিশ ৫৫০-৬০০ টাকা করে বিক্রি করছি।’
এদিকে সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের মতো স্থিতিশীল রয়েছে সবজির দাম। প্রতি কেজি মুলা ৪০, ফুলকপি ৪০, টমেটো ৫০-৫৫, মরিচ ১০০-১২০, বেগুন ৪০-৬০, শালগম ৩০-৩৫, শসা ৪০-৪৫, প্রতি পিচ লাউ ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে স্থিতিশীল সবজির বাজারে মুদিপণ্যের মধ্যে ভোক্তার স্বস্তি মিলছে আটাতে। প্যাকেটজাত সবধরনের আটাতে কেজিপ্রতি কমেছে ৪-৫ টাকা করে। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আটা ৫৩-৫৪ টাকা করে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। কাওরান বাজারের আটার পাইকারি ব্যবসায়ী ইব্রাহিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহে আটার দাম অনেক কমেছে। এখন প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) আটা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬৫০ থেকে ২ হাজার ৭শ টাকা করে। এর মধ্যে চাকা ও ইউসুফের আটার বস্তা ২ হাজার ৭শ ও বসুন্ধরার আটা বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার টাকা।’
মোহাম্মদপুর এলাকার মা স্টোরের স্বত্বাধিকারী রাকিব দেশ রূপান্তরকে জানান, গত কয়েক দিন ধরেই সব কোম্পানি প্যাকেটজাত আটার দাম কমাতে শুরু করেছে। ১৫ টাকা কমে তীরের দুই কেজির আটা বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা, ১০ টাকা কমে সাধের দুই কেজি আটা বিক্রি করছি ১৩৫ টাকা, বসুন্ধরা ১৩৪ টাকা, পুষ্টি ১৪০ টাকা করে।
এ ছাড়া চালের বাজারে খবর নিয়ে জানা যায়, সবধরনের চাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে। পাইকারিতে মোটা জাতের চালের মধ্যে প্রতি কেজি স্বর্ণা ৫০-৫২, আটাশ ৫৪-৫৫, পাইজাম ৫২-৫৩, নাজির ৭০-৮২, মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবে খুচরায় এসব চালের কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা বাড়তি দামে কিনতে দেখা গিয়েছে ক্রেতাদের।
কলাবাগান বাজারের মুদি দোকানি সাইম স্টোরের স্বত্বাধিকারী কাশেম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, চালের দাম আগের মতোই রয়েছে। বাড়ছেও না কমছেও না। তবে ডিমের দাম কিছুটা বাড়তির দিকে রয়েছে। প্রতি ডজন ব্রয়লার মুরগির ডিম কেনা অনুযায়ী ১৩০ টাকার নিচে বিক্রি করলে ডজনপ্রতি ১০ টাকা লস দিতে হবে। তা ছাড়াও হাঁসের ডিমের দামটাও অনেক বেশি। প্রতি ডজন দেশি হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা করে।
ডিমের মতো মাংসের বাজারের একই অবস্থা দেখা গিয়েছে। বাজার ভেদে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। পাকিস্তানি লাল ২৮০-৩০০ টাকা ও দেশি মুরগি ৫১০-৫৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মুরগি ছাড়াও মাংসের মধ্যে গরু ৭০০, খাসি ১ হাজার ১০০ ও বকরির মাংসের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা করে।
চট্টগ্রাম নগরের খুলশি থানা এলাকার ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান ড্রাইভিং লাইন্সেস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন ২০২১ সালের ৮ মার্চ। ফিঙ্গার প্রিন্ট ও ছবি তোলার ৩-৪ মাস পর তার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেই স্মার্ট কার্ড পাননি গত দুই বছরেও। বৃহস্পতিবার দুপুরে বিআরটিএ, চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড না পেয়ে হতাশ হয়ে বাসায় ফেরেন মেহেদী। ‘আমার স্মার্ট কার্ড পাওয়ার কথা ছিল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার ৩-৪ মাস পরে। গত দুই বছরে বিআরটিএ কার্যালয়ে এসেছি অন্তত ২০-২৫ বার। আজও পাইনি ড্রাইভিং স্মার্ট কার্ড’ বলেন মেহেদী।
ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ডের বিড়ম্বনার শিকার শুধু মেহেদী নয়, প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ বিআরটিএ কার্যালয়ে গিয়ে স্মার্ট কার্ডের জন্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। লাইসেন্সপ্রত্যাশীদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করে বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেল-২ এর সহকারী পরিচালক রায়হানা আক্তার ঊর্মি বলেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ডের বর্তমান ভেন্ডর মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স লিমিটেড। সংস্থাটির হাতে এখনো প্রিন্ট হওয়ার বাকি আছে প্রায় ২০ হাজার স্মার্ট কার্ড। ইতিমধ্যে সংস্থাটির কাছ থেকে প্রিন্টেড পাঁচ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড এসেছে। কারিগরি ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে গ্রাহকদের কিছুটা ভোগান্তি হতে পারে।’
বিআরটিএ’র এই কর্মকর্তা জানান, ৬-৭ মাস আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ডের পূর্ববর্তী ভেন্ডর ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস্ ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) লিমিটেড। সংস্থাটির প্রিন্ট করা ৮৪ হাজার স্মার্ট কার্ড বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে পাঠায়। ‘আমরা তখন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি এবং মাইকিং করেও লাইসেন্স গ্রহীতাদের পাইনি। ৮৪ হাজার থেকে এ পর্যন্ত ৬৯ হাজার স্মার্ট কার্ড গ্রাহকদের মধ্যে বিতরণ করেছি। এখনো ১৫ হাজার স্মার্ট কার্ড পড়ে আছে আমাদের কার্যালয়ে।’
এদিকে সংস্থাটির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, পূর্ববর্তী ভেন্ডর ‘বিএমটিএফ’ থেকে আসা ৮৪ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড বিআরটিএ’র হাতে আসে লাইসেন্স প্রত্যাশীদের তিন বছর ভোগানোর পর। এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড প্রিন্টের দায়িত্বে আছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স লিমিটেড’ (এমএসপি)।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের লাইসেন্স শাখায় গিয়ে দেখা যায়, দেড় থেকে দুই বছর ঘুরেও ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড মিলছে না বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। তাদের একজন আকবর হোসেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘২০২২ সালের মে মাসে ড্রাইভিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। বিআরটিএ রসিদ দিয়েই গাড়ি চালাচ্ছি। গত ৮ মাসে ৭-৮ বার বিআরটিএ কার্যালয়ে এসেছি স্মার্ট কার্ডের জন্য। কার্ড সম্পন্ন হয়েছে বলে মোবাইলে মেসেজ আসার পর বিআরটিএ কার্যালয়ে এলে লাইসেন্স শাখার দায়িত্বপ্রাপ্তরা চেক করে বলেন, ‘স্মার্ট কার্ড আসেনি’। শুধু প্রাপ্তি রসিদের মেয়াদ বাড়াচ্ছে বিআরটিএ।’
বিআরটিএ সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও স্মার্ট কার্ড সরবরাহের জন্য ‘টাইগার আইটি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বিআরটিএ। ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে তাদের ১৫ লাখ কার্ড ছাপানোর কথা। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত চুক্তির তিন বছরের মধ্যেই সাড়ে ১৪ লাখের কাছাকাছি কার্ড ছাপিয়ে বিআরটিএকে সরবরাহ করে। চাহিদার কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই বেশি কার্ড ছাপাতে হয় তাদের। দিন দিন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পুরনো ঠিকাদার টাইগার আইটির সঙ্গে জটিলতা তৈরি হয় বিআরটিএ’র। ডুয়াল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট স্মার্ট কার্ডে ছাপা ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের জন্য ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে গত বছরের ২৯ জুলাই চুক্তি হয় বিআরটিএ’র। আগামী পাঁচ বছরে ৪০ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ে গত বছর ১৮ মে থেকে কার্যক্রম শুরু করেছে। চট্টগ্রামে প্রতিদিন দেড়শ থেকে দুইশ মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম কার্যালয়ের পরিচালক শরীফুজ্জামান ভুঞা ড্রাইভিং স্মার্ট কার্ডের জন্য গ্রাহকদের ভোগান্তির কথা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে ভোগান্তির দিন শেষ হচ্ছে। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে চট্টগ্রামে একদিনেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার সব কার্যক্রম শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।