
তৈরি পোশাক পণ্য পরিবহনের পথে বিশেষ কায়দায় কার্টন খুলে মালামালের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ চুরি করে ঝুট কাপড় ঢুকিয়ে দিচ্ছে চোরচক্র। এসব চক্রের সঙ্গে জড়িত কাভার্ড ভ্যানের চালক ও সহকারীরা। প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের তৈরি পোশাক পণ্যসহ সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা চোরচক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য পেয়েছে র্যাব।
গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় পোশাক পণ্য চুরির একাধিক মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলো মো. রিপন ওরফে ছোট রিপন (৪৩), বিল্লাল হোসেন ওরফে ছোট বিল্লাল (৩৬), নাঈম ইসলাম (২৭), মো. আকাশ (২৬), মো. সুমন (৩০), মো. ফরিদ (৩৮) ও মো. মঞ্জুর হোসেন জিকু (৩৮)।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুর পাইকপাড়ায় র্যাব-৪-এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কারখানা থেকে পণ্য কাভার্ড ভ্যানে বোঝাই করে তেজগাঁওয়ে গিয়ে তেল নিয়ে পাম্পে গাইডের জন্য কিছুক্ষণ অবস্থান করে। গাইড নাঈম ওই স্থানে এসে মূলহোতা রিপনের নির্দেশ অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানাধীন লাঙ্গলবন্দে ভাই ভাই টিম্বার স’মিলের টিনশেড গোডাউনের উদ্দেশে রওনা করে। সেখানে পৌঁছানোর পর আগে থেকেই অপেক্ষারত বিল্লাল, ফরিদ ও মঞ্জুরসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন বিশেষ কৌশলে কাভার্ড ভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে পাশের ওয়ালের নাটবল্টু গ্যানিং মেশিনের সাহায্যে কেটে প্রত্যেকটি কার্টন গোডাউনে নেয়। সেখানে কার্টন থেকে পণ্য চুরির সময় র্যাব-৪ শুক্রবার ভোররাতে কাভার্ড ভ্যানটির চালক, সহকারী, স’মিল মালিক, শ্রমিকদের প্রধানসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। এর কিছু সময়ের মধ্যে চক্রের রিপন ও বিল্লাল চোরাই পণ্যগুলো নিতে এলে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। ২৬ হাজার ৯৯৫টি পোশাকপণ্যসহ একটি কাভার্ড ভ্যান উদ্ধার করা হয়। এসব পণ্যের দাম আনুমানিক ৫ কোটি টাকা।
গ্রেপ্তারদের বিষয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রহমান বলেন, রিপন চক্রের মূলহোতা। তিনি প্রথম জীবনে ১৯৯০ সালে ঢাকায় এসে সোয়েটার কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ২০০৯ সালে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে চলে যান। ২০১৭ সালে ফিরে এসে রেন্ট-এ-কার চালক হিসেবে কাজ করার সময় তৈরি পোশাক পণ্য চোরচক্রের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে বেশি লাভের আশায় রিপন নিজেই বিল্লাল, নাঈম, আকাশ, সুমন, ফরিদ, মঞ্জুরসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচ-সাতজনকে নিয়ে একটি সক্রিয় আন্তঃজেলা চোরচক্র তৈরি করে। গ্রেপ্তার হওয়া বিল্লাল মূলহোতা রিপনের প্রধান সহযোগী। মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে ঢাকা জজ কোর্ট এলাকায় চোরচক্রের মূলহোতা রিপনের সঙ্গে বিল্লালের পরিচয় হয়। বিল্লালের গ্রামের বাড়ি মুন্সীঞ্জের গজারিয়া এলাকায় এবং এই চুরির ঘটনাগুলো যেহেতু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী এলাকায় হয়ে থাকে তাই মূলহোতা রিপন আসামি বিল্লালকে গোডাউন ভাড়া করার কাজের প্রস্তাব দেয়। তখন থেকেই বিল্লাল গোডাউন ভাড়া করার বিষয়টি দেখে আসছে। রিপন পোশাক পণ্য চুরির জন্য যখন কোনো একটি কাভার্ড ভ্যান নির্ধারণ করে নাঈমকে অবগত করে, বিল্লাল ওই কাভার্ড ভ্যানটি ঢাকা থেকে পূর্ব নির্ধারিত গোডাউনে পৌঁছানো এবং পণ্য চুরির সময় গোডাউনের আশপাশে নজরদারিসহ সার্বিক দায়িত্বে থাকতেন। ফরিদ প্যাকেজিং করার কাজে অত্যন্ত দক্ষ হওয়ায় তিনি কার্টন থেকে মালামাল বের করে ফের কার্টন প্যাকেজিং করতেন। মঞ্জুর গোডাউনের মালিক এবং ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি, তার কাছে থাকা গ্যানিং মিশিন দিয়ে কাভার্ড ভ্যানের নাটবল্টু কেটে পণ্যভর্তি কার্টন বের করতে সাহায্য করতেন। অন্য আসামি চালক আকাশ ও তার সহকারী সুমন মূলহোতা রিপনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে তার কথামতো নির্ধারিত গোডাউনে গাড়ি নিয়ে যেতেন।
মালামাল চুরির কৌশল সম্পর্কে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে এক বা একাধিক পরিকল্পনাকারী থাকে যারা পোশাকপণ্য পরিবহনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাভার্ড ভ্যানের চালক ও সহকারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। পরে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে তাদের প্রলুব্ধ করে। অল্প সময়ে বেশি টাকা পাওয়ার আশায় চালক ও সহকারীরা চোরচক্রের প্রস্তাবে রাজি হয়ে চুরির কাজে সহায়তা করে। কাভার্ড ভ্যানে পণ্যবোঝাই করার সময় বন্দরে প্রদর্শনের জন্য গার্মেন্টে কারখানার পক্ষ থেকে পণ্যের নমুনা চালকের কাছে দেওয়া হয়ে থাকে। এ নমুনা পাওয়ার পরপরই চালক সুযোগ বুঝে ছবি তুলে মূলহোতার কাছে পাঠায়। মূলহোতা আগে থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী নির্জন জায়গায় তাদের ঠিক করে রাখা গোডাউন মালিকের সঙ্গে আঁতাত করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে গোডাউন ব্যবহার করে। গোডাউনে পণ্য চুরির জন্য কাভার্ড ভ্যান প্রবেশের আগেই কার্টন প্যাকেজিং ও লোড-আনলোড কাজে সিদ্ধহস্ত কয়েকজন সহযোগী সেখানে অবস্থান করে। দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময়ের মধ্যে মালামালের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বের করে নেয়। কার্টনের সেই খালি অংশ ভরতে ঝুট কাপড় ঢুকিয়ে দেয়। এরপর কাভার্ড ভ্যানটি বন্দরের উদ্দেশে রওনা করে গেলে চোরচক্রের নিজস্ব মিনি কাভার্ড ভ্যানে করে তাদের সুবিধামতো জায়গায় নিয়ে যায়।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গত বছর সেপ্টেম্বরে অবৈধ হুন্ডি চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। সে সময় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) একটি দল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বিকাশের এজেন্ট ফজলে রাব্বি (২৭) এবং হুন্ডির কারবার পরিচালনাকারী শামীমা আক্তার (৩২)। পরে আরও গ্রেপ্তার করা হয় এ চক্রের হুন্ডি এজেন্ট মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য পর্যালোচনায় এ হুন্ডি চক্রটির কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে সিপিসি। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চক্রটির সদস্য বিকাশ এজেন্ট প্রথমে হুন্ডি এজেন্টের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে বিকাশের ডিএসওর (ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসার) কাছ থেকে ই-মানিতে কনভার্ট (রূপান্তরিত) করে। পরে তা আবার হুন্ডি এজেন্টের দেওয়া নম্বরে সরবরাহ করে। দেশে থাকা হুন্ডি এজেন্ট ইতালিতে অবস্থান করা মূল এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে এ চক্রটি কাজ করে থাকে। তারা এ হুন্ডির কারবারকে নিয়ন্ত্রণ করতে আলাদা দুটি মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপ করেছে। মূলত এ অ্যাপের মাধ্যমে দেশে থাকা বিকাশ এজেন্টরা টাকা পাঠানোর নির্দেশনা পেয়ে থাকে।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, ইতালিতে চক্রটির অন্যতম তিন সদস্য রয়েছে। বাংলাদেশিরা বেশি সংখ্যায় আছেন এমন বিভিন্ন এলাকায় ছোট দোকানের মতো করে সেখানে বিকাশের লোগো ব্যবহার করে টাকা সংগ্রহ করে তারা। বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারকারীরা সরাসরি তাদের কোনো একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। ইতালিতে অবস্থান করা ওই বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার করতে পারলে বাংলাদেশের অর্থ পাচারকারীদের পরিচয় শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। তবে এ চক্রের মাধ্যমে অর্থ পাচারকারীদের শনাক্ত করতে এখন দেশে থাকা ওই চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তার ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা বিএফআইইউর (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) কাছ থেকে পাওয়া এমএফএসের তথ্যের ভিত্তিতে হুন্ডির সঙ্গে জড়িতদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছি। আমরা চাইলেই কাউকে হুট করে ধরে নিয়ে আসতে পারি না। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তিগত তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হুন্ডির সঙ্গে কারা জড়িত তা শনাক্তে কাজ করছি। এ ছাড়াও হুন্ডি ব্যবহার করে যারা অর্থ পাচার করেছে তাদের শনাক্তে আমরা যাবতীয় তথ্য পর্যালোচনা করছি। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাংকের পাশাপাশি খোলাবাজারেও ডলারের দর বেড়ে যায়। বছরের শুরুতে খোলাবাজারে প্রতি ডলার ৯০ টাকার আশপাশে থাকলেও তা বেড়ে ১১৯ টাকায় উঠেছিল। তখন বিষয়টি পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ওই সংকটের অন্যতম কারণ রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) কমে যাওয়া। মূলত ডিজিটাল হুন্ডির কারণে বৈধ পথে কমছে রেমিট্যান্স। হুন্ডি কারবারিরা এ জন্য এমএফএস প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিয়েছে। কিছু অসাধু এমএফএস এজেন্ট এ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও দেশে রেমিট্যান্স কমে যায়।
এসব এমএফএসদের চিহ্নিত করতে মোট চার লাখ এজেন্টের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিএফআইইউ। চারটি নির্দেশকের ভিত্তিতে গত বছর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত লেনদেন বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৮১ হাজার ৫০৫টি সন্দেহজনক লেনদেন চিহ্নিত করা হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৫ হাজার ৮৯ জনের এজেন্টশিপ বাতিল করা হয়। এর বাইরে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত আরও ৩৩০টি এজেন্টের এজেন্টশিপও বাতিল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এজেন্টশিপ বাতিল হওয়া ৫ হাজার ৪১৯ এজেন্টের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সিআইডিতে তথ্য দেওয়া হয়।
পুলিশের এ তদন্ত সংস্থা বিএফআইইউর এসব তথ্য পর্যালোচনা করে গত বছর সেপ্টেম্বরে অভিযান শুরু করে। এখন পর্যন্ত তারা অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে আলাদা ছয়টি মামলা করেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট ও সাইবার পুলিশ সেন্টার ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে চারজন হুন্ডি এজেন্ট, অন্যদের মধ্যে এমএফএসের ডিএসএস, ডিএসও এবং এজেন্ট রয়েছে।
তবে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার পর হুন্ডিকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও অর্থ পাচারের এ মাধ্যম ব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। হুন্ডির হোতাদের গ্রেপ্তার না করায় পাচারকারীরা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। যাদের মধ্যে বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জন, মাদক কেনাবেচা এবং সোনা চোরাচালানসহ বিভিন্ন অবৈধ কারবার পরিচালনাকারীও রয়েছেন।
সিআইডি বলছে, এটি প্রথম ধাপের অভিযান। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনার পর দ্বিতীয় ধাপের বা যারা এজেন্টদের কাছে নগদ টাকা সরবরাহ করেছে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এরপর তাদের তথ্যে মূল পাচারকারীদের ধরা হবে। কিন্তু এর আগে ২০১৮ সালে একইভাবে রেমিট্যান্সের অর্থ অবৈধভাবে বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডির অভিযোগে অভিযান চালিয়েছিল সিআইডি। সে সময় কয়েকটি মামলায় সারা দেশ থেকে সাতজন এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছিল তারা। তবে ওই অভিযানে শেষমেশ কোনো সুফল মেলেনি। মামলাগুলো তদন্তের ধারাবাহিকতায় চক্রের অন্যদের গ্রেপ্তার করে হুন্ডির কারবার থামানোর লক্ষ্য থাকলেও থেমে যায় সেই পরিকল্পনা।
এর কারণ হিসেবে সে সময়ে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই অভিযানে বিএফআইইউর দেওয়া বিকাশ এজেন্টদের তথ্য ২০১৩ ও ’১৪ সালের ছিল। ফলে ২০১৮ সালের এ তথ্যে অভিযান চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যায়। তখন যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের কাছ থেকে মূল পাচারকারীদের তথ্যও পাওয়া যায়নি। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা ছাড়াও অনেক এজেন্টকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তাদের কেউ তিন থেকে চার বছর আগের লেনদেনকারীদের তথ্য দিতে পারেনি।
তবে এবারের অভিযানেও চ্যালেঞ্জের কথা জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট অনেকেই। তারা বলছে, হুন্ডি চক্রের মূলহোতা যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের অধিকাংশই দেশের বাইরে অবস্থান করছে। ইন্টারপোলের নিয়ম অনুযায়ী তাদের ফিরিয়ে আনা জটিল। ফলে তাদের না আনতে পারলে অধিকাংশ অর্থ পাচারকারীর পরিচয় পাওয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হুন্ডি চক্রের বিরুদ্ধে সিআইডি সক্রিয় হওয়ায় বেশ বাহবা পাচ্ছে। কিন্তু এ হুন্ডির মূল সুবিধাভোগীদের মধ্যে অধিকাংশই ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে গত বছর ডলারের দাম বাড়ার পেছনে মানি এক্সচেঞ্জগুলোর কারসাজির অভিযোগ ওঠে। সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, দেশে অনুমোদিত ২৩৫টির বাইরে আরও প্রায় ৭০০ মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে। ওই সময় সিআইডি মানি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযানে নামার কথাও জানিয়েছিল।
এরপর বিএফআইইউ তথ্য নিয়ে মানি এক্সচেঞ্জ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে সিআইডি। পরে গত ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর পাঁচটি এলাকার বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জে অভিযান চালায় সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। তবে এমএফএসের মতোই চুনোপুঁটিদের গ্রেপ্তার করে তারা। গ্রেপ্তার ১৪ জনের মধ্যে একজন একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অন্যরা সবাই ভ্রাম্যমাণ মুদ্রা বিক্রেতা। তাদের আলাদা পাঁচটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় সিআইডি বাদী হয়ে করা এসব মামলায় ১৮ জনকে আসামি করা হয়।
তাদের গ্রেপ্তারের পর সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, অভিযানে অবৈধ পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জের মধ্যে তিনটির অফিস থাকলেও বাকি দুটি প্রতারণামূলক বা ভ্রাম্যমাণ। তারা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মানি এক্সচেঞ্জ (মুদ্রা বিনিময়) করতেন। ফোনে ফোনে যোগাযোগ করেই তারা বিভিন্ন দেশের মুদ্রা লেনদেন করতেন। তারা হুন্ডির সঙ্গেও জড়িত। দেশে এমন কমপক্ষে আরও এক হাজার অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জার রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অ্যাডাম কালিনিন (আসল নাম নয়), ত্রিশের কোঠার এক রাশান যুবক। চার মাসের বেশি সময় ধরে ঘরবাড়ি ছেড়ে থাকছেন জঙ্গলে। অনেকটা স্বেচ্ছা বনবাসে। গত বছর সেপ্টেম্বরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগের এক কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু কালিনিনের (আসল নাম নয়) কোনো ইচ্ছেই ছিল না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেওয়ার। তার মতো অনেকেই যারা যুদ্ধে যেতে চাননি তারা দেশ ছেড়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেটাও করেননি। সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ ঠেকানোর সেরা উপায় হিসেবে ধরে নিয়ে থাকতে শুরু করলেন জঙ্গলে। আর এ পরিকল্পনায় সফলও হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি বিবিসি সন্ধান পেয়েছে এই যুদ্ধবিরোধী বনবাসী যুবককে।
বিবিসি জানাচ্ছে, কালিনিন ছিলেন একজন আইটি স্পেশালিস্ট বা তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। শুরু থেকেই তিনি ছিলেন যুদ্ধবিরোধী। তিনি যে অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে থাকতেন তার দেয়ালে তিনি সেঁটে দিয়েছিলেন ‘যুদ্ধকে না বলুন’ লেখা এক পোস্টার। আর এ জন্য তাকে দু-সপ্তাহের জন্য জেল খাটতে হয়েছিল, দিতে হয়েছিল জরিমানাও। তাই রাশিয়া যখন ইউক্রেন যুদ্ধে আবার জয়ের ধারায় ফিরে আসার চেষ্টায় তিন লাখ সেনা নিয়োগের উদ্যোগ নিল তখন কালিনিন যুদ্ধে যোগ দেওয়ার ঝুঁকি নিতে পারেননি। তিনি তার স্ত্রীকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন জঙ্গলে। সেখানে এক তাঁবু খাটিয়ে থাকছেন প্রায় চার মাস ধরে। ইন্টারনেট পাওয়ার জন্য তিনি গাছের আগায় একটা অ্যান্টেনা বেঁধেছেন। বিদ্যুতের জন্য বসিয়েছেন সোলার প্যানেল। সেখান থেকেই শুরু করলেন অফিসের কাজ। কিছুদিন পর পর তার স্ত্রী কিছু খাবার দিয়ে যান।
বিবিসি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বনবাসের সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করতে তাকে সহ্য করতে হয়েছে প্রচণ্ড ঠান্ডা আবহাওযা। এক এক সময় তাপমাত্রা শূন্যের ১১ ডিগ্রি নিচে নেমে যেত। কিন্তু তার পরও তার মনে হয়েছিল, সেনাবাহিনীকে নিয়োগ ঠেকানোর জন্য এটাই ছিল সবচেয়ে ভালো উপায়। কারণ সব যোগাযোগের বাইরে থাকলে কর্র্তৃপক্ষ যুদ্ধে যেতে বাধ্য করতে পারবে না।
কালিনিন জানান, এই বনবাসী জীবনে তার স্ত্রীর ভূমিকা অনেক। নতুন বছর শুরুর সময় কয়েকদিনের জন্য জঙ্গলের ভেতর তাঁবুতে এসে থেকেছিলেন তার স্ত্রীও। প্রতি তিন সপ্তাহে একবার করে খাবার এবং অন্যান্য সামগ্রী একটা বিশেষ জায়গায় নামিয়ে দিয়ে যান। সেই দিনটায় সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দুজনের মুখোমুখি দেখা হয়। এরপর কালিনিন তার খাবারগুলো আরেকটি নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যান। রান্নার জন্য তিনি একটি লাকড়ির চুলো বানিয়ে নিয়েছেন।
রাশিয়াতে বরফের মধ্যে মাছ ধরার সময়ের জন্য যে সব বড় বড় তাঁবু ব্যবহার করা হয় সেরকম একটি তাঁবু দিয়েই জঙ্গলে নিজের ঘর বানিয়েছেন কালিনিন। প্রথম দিকে তিনি দুটি তাঁবু বানিয়েছিলেন। একটি থেকে আরেকটিতে যেতে পাঁচ মিনিট লাগত। একটাতে ছিল ইন্টারনেট সংযোগ। আর দ্বিতীয় তাঁবুটিতে তিনি ঘুমাতেন যেটা ছিল বনজঙ্গলে ঢাকা জায়গায়। তবে যখন শীতকাল শুরু হলো এবং আবহাওয়া ঠান্ডা হতে শুরু করল তখন তিনি একটা তাঁবুতেই থাকা ও কাজ করার ব্যবস্থা করলেন।
কালিনিন এখনো সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার ডাক পাননি। তবে পরিস্থিতি প্রতিদিনই বদলাচ্ছে এবং তার আশঙ্কা ভবিষ্যতে কোনো এক সময় হয়তো তার কাছেও ডাক আসতে পারে। সরকারি নীতি অনুযায়ী আইটি কর্মীরা সামরিক বাহিনীতে তালিকভুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধ্যকতা থেকে মুক্ত। কিন্তু রাশিয়াতে এমন অনেক খবর বেরিয়েছে যে অনেক ক্ষেত্রেই এ নিয়ম মানা হচ্ছে না।
কালিনিন বলেন, এটা একটা একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং তারা অত্যন্ত ক্ষমতাধর। গত ছয় মাসে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে অনেকগুলো আইন করা হয়েছে। এখন লোকে যদি যুদ্ধের বিরুদ্ধে মুখ খোলে তাহলে রাষ্ট্র তাদের পেছনে লাগবে।
কালিনিনের এই বনবাসী জীবন অনলাইনে তাকে একটা জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। টেলিগ্রাম অ্যাপে তিনি প্রায় প্রতিদিনই নানা রকম আপডেট দিচ্ছেন এবং তার ফলোয়ারের সংখ্যা এখন ১৭ হাজার। তিনি ভিডিও পোস্ট করেন, তার চারপাশের বনভূমির ছবি দেন, আরও থাকে তার প্রতিদিনের কাজকর্ম, কীভাবে তার ক্যাম্প সাজানো হয়েছে এই সব।
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ছড়ার ওপর নির্মাণাধীন গার্ডার ব্রিজের কাজ এক বছরে শেষ হওয়ার চুক্তি থাকলেও তিন বছরেও শেষ হয়নি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কাগজপত্রে ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন দেখালেও ব্রিজটির বাস্তবে মাত্র ১৮টি পিলার পাইলিংয়ের পর ঠিকাদার কাজ ফেলে রেখেছেন। এতে প্রায় তিন বছর ধরে ব্রিজের দুই পাশের মানুষজন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের উত্তর কানাইদেশি ভায়া কাউয়ারগলা সড়কের রাজকান্দি ফরেস্টসংলগ্ন লাউয়াছড়ার ওপর জরাজীর্ণ ব্রিটিশ আমলের একটি কাঠের সেতু ছিল। দীর্ঘদিন ধরে ওই ব্রিজ ব্যবহারের পর স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট বিভাগের গ্রামীণ অ্যাকসেস সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালে ২৫ মিটার দীর্ঘ একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এতে ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি টাকা।
২০২০ সালে ব্রিজ নির্মাণকাজের টেন্ডার পায় ইতি এন্টারপ্রাইজ নামে ভোলার এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রথমে বন বিভাগের বাধা থাকায় দুই মাস কাজ শুরু হতে বিলম্ব হয়। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি। কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় পরে আরও তিন মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু ১৮টি পিলার পাইলিং করেই গত তিন বছর ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে। এখন কোনো খোঁজ নেই ঠিকাদারের। বারবার তাগদা দেওয়ার পরও এলাকায় আসছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কেউ।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো মানুষ তো দূরের কথা, নির্মাণসামগ্রীর কিছুও আশপাশে নেই। শুধু ব্রিজ নির্মাণের দুই পাশে ৯টি করে মোট ১৮টি পিলার মাটির নিচে পাইলিং করে রাখা হয়েছে। বের হয়ে থাকা রডে ধরেছে মরিচা।
এলাকাবাসী জানান, ব্রিজটি তিন বছর ধরে ফেলে রাখায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। ওই সড়ক ব্যবহার করে আদমপুরে আসা যাওয়া করতেন স্থানীয়রা। কিন্তু ব্রিজটি সম্পন্ন না হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন তারা। ছড়ায় পানি থাকায় এপার-ওপার আসা যাওয়া করা সম্ভব হচ্ছে না।
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের দাবি, বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগদা দিয়েও কোনো ফল হচ্ছে না।
তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কমলগঞ্জ অফিস থেকে ঢাকা অফিসে আট মাস আগে এ গার্ডার ব্রিজটির কাজ বাস্তবায়ন ৪০ ভাগ দেখানো হয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকা অফিস থেকে বারবার ব্রিজটির কাজ সম্পন্নের তাগদা দেওয়া হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসবে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ জেলায় নতুন এসেছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগদার পরও কাজ না হওয়ায় প্রয়োজনে নতুন করে এ কাজের টেন্ডার দেব।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘সংবিধান অনুয়ায়ী নির্বাচন হবে। বিএনপি পূর্ণশক্তি নিয়ে নির্বাচনে আসুক আমরা সেটাই চাই। তবে বিএনপি কোনোরকম অপচেষ্টা করলে জনগণ তাদের সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে।’ গতকাল শনিবার দুপুরে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আজ রবিবার রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। আছে শুধু পাকিস্তানে। বিএনপি তো পাকিস্তানকে অনুকরণ করে। উন্নত দেশে ডিজিটাল মাধ্যমে ভোট হয় আমাদের দেশেও ডিজিটাল হয়েছে সেভাবেই ভোট হচ্ছে। আমরা ইভিএমএ ভোটের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু ইভিএম কিনতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন পৌনে ৯ হাজার কোটি টাকার একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এই সময়ে এত বড় প্রকল্প পাস করে ইভিএম কেনা অর্থনীতির জন্য, বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এটি সমীচীন নয়। এবং মানুষকে এই বিশ্বমন্দার মধ্যে এখন মানুষের অন্য কল্যাণগুলো আমাদের কাছে অগ্রাধিকার।
মন্ত্রী বলেন, নির্বাচন সরকারের অধীনে নয়, নির্বাচন কমিশনের অধীনে হয়। সরকারের কোনোট ক্ষমতা থাকে না। বিএনপির নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা’র মতো অবস্থা। ২০১৪ সালে তারা শুধু বর্জনই নয়, প্রতিহত করার অপচেষ্টা করেছিলÑ তা আর করতে দেওয়া হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রবিবার মাদ্রাসা মাঠ ও ঈদগাহ মাঠে সমাবেশ হবে। ২২০টি মাইক, ১২টি এলইডি স্ক্রিন থাকবে। সমাবেশকে ঘিরে তরুণ ও নারীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। সমাবেশের জন্য ৫ শতাধিক ভলান্টিয়ার রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, সকাল ৯টায় মাঠে নেতাকর্মীরা আসবেন। ৫ বছর পর প্রধানমন্ত্রী আসছেন। অনেক কাজ সমাপ্ত হয়ে গেছে। কিছু কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের আর কোনো চাওয়া নেই, রাজশাহীসহ সব জেলার লোকজন ধন্যবাদ জানাব।
ভারতের বিমান বাহিনীর দুটি যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ চলাকালে বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে এক পাইলট নিহত হয়েছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরÑ বিধ্বস্ত হওয়া জঙ্গিবিমান দুটির মধ্যে একটি রাশিয়ায় তৈরি সুখোই এসইউ-৩০ ও অপরটি ফ্রান্সে তৈরি মিরেজ-২০০০। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, মধ্য আকাশে দুই বিমানের সংঘর্ষের ফলে বিধ্বস্তের এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। প্রতিরক্ষা সূত্রের বরাতে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের মোরেনা শহরে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। আরেকটি রাজস্থানের ভরতপুর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে বিধ্বস্ত হয়েছে। দুটি যুদ্ধবিমানই রাজ্যের গোয়ালিওর বিমানবাহিনীর ঘাঁটি থেকে উড়েছিল। সুখোই বিমানটিতে দুজন পাইলট আর মিরেজ বিমানে একজন পাইলট ছিলেন। সুখোইয়ের দুই পাইলট সংঘর্ষের পর বিমান থেকে বের হয়ে আসেন। তাদের হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহান এক টুইটার পোস্টে বলেন, ‘মোরেনায় বিমানবাহিনীর সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান ও মিরেজ-২০০০ যুদ্ধবিমানের মধ্যে সংঘর্ষ হওয়ার খবরটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দ্রুত উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ তৎপরতা চালাতে বিমানবাহিনীকে সহযোগিতার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি।’
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।