
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ছড়ার ওপর নির্মাণাধীন গার্ডার ব্রিজের কাজ এক বছরে শেষ হওয়ার চুক্তি থাকলেও তিন বছরেও শেষ হয়নি। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কাগজপত্রে ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন দেখালেও ব্রিজটির বাস্তবে মাত্র ১৮টি পিলার পাইলিংয়ের পর ঠিকাদার কাজ ফেলে রেখেছেন। এতে প্রায় তিন বছর ধরে ব্রিজের দুই পাশের মানুষজন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের উত্তর কানাইদেশি ভায়া কাউয়ারগলা সড়কের রাজকান্দি ফরেস্টসংলগ্ন লাউয়াছড়ার ওপর জরাজীর্ণ ব্রিটিশ আমলের একটি কাঠের সেতু ছিল। দীর্ঘদিন ধরে ওই ব্রিজ ব্যবহারের পর স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট বিভাগের গ্রামীণ অ্যাকসেস সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২০ সালে ২৫ মিটার দীর্ঘ একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এতে ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি টাকা।
২০২০ সালে ব্রিজ নির্মাণকাজের টেন্ডার পায় ইতি এন্টারপ্রাইজ নামে ভোলার এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রথমে বন বিভাগের বাধা থাকায় দুই মাস কাজ শুরু হতে বিলম্ব হয়। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের ৪ জানুয়ারি। কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় পরে আরও তিন মাস সময় বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু ১৮টি পিলার পাইলিং করেই গত তিন বছর ধরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজ বন্ধ রেখেছে। এখন কোনো খোঁজ নেই ঠিকাদারের। বারবার তাগদা দেওয়ার পরও এলাকায় আসছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কেউ।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনো মানুষ তো দূরের কথা, নির্মাণসামগ্রীর কিছুও আশপাশে নেই। শুধু ব্রিজ নির্মাণের দুই পাশে ৯টি করে মোট ১৮টি পিলার মাটির নিচে পাইলিং করে রাখা হয়েছে। বের হয়ে থাকা রডে ধরেছে মরিচা।
এলাকাবাসী জানান, ব্রিজটি তিন বছর ধরে ফেলে রাখায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। ওই সড়ক ব্যবহার করে আদমপুরে আসা যাওয়া করতেন স্থানীয়রা। কিন্তু ব্রিজটি সম্পন্ন না হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন তারা। ছড়ায় পানি থাকায় এপার-ওপার আসা যাওয়া করা সম্ভব হচ্ছে না।
কমলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের দাবি, বারবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগদা দিয়েও কোনো ফল হচ্ছে না।
তবে বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কমলগঞ্জ অফিস থেকে ঢাকা অফিসে আট মাস আগে এ গার্ডার ব্রিজটির কাজ বাস্তবায়ন ৪০ ভাগ দেখানো হয়েছে। এ ছাড়াও ঢাকা অফিস থেকে বারবার ব্রিজটির কাজ সম্পন্নের তাগদা দেওয়া হলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসবে কোনো পাত্তাই দিচ্ছে না।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আব্দুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ জেলায় নতুন এসেছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বারবার তাগদার পরও কাজ না হওয়ায় প্রয়োজনে নতুন করে এ কাজের টেন্ডার দেব।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) গত বছর সেপ্টেম্বরে অবৈধ হুন্ডি চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। সে সময় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের (সিপিসি) একটি দল রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বিকাশের এজেন্ট ফজলে রাব্বি (২৭) এবং হুন্ডির কারবার পরিচালনাকারী শামীমা আক্তার (৩২)। পরে আরও গ্রেপ্তার করা হয় এ চক্রের হুন্ডি এজেন্ট মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য পর্যালোচনায় এ হুন্ডি চক্রটির কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছে সিপিসি। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চক্রটির সদস্য বিকাশ এজেন্ট প্রথমে হুন্ডি এজেন্টের কাছ থেকে নগদ টাকা নিয়ে বিকাশের ডিএসওর (ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসার) কাছ থেকে ই-মানিতে কনভার্ট (রূপান্তরিত) করে। পরে তা আবার হুন্ডি এজেন্টের দেওয়া নম্বরে সরবরাহ করে। দেশে থাকা হুন্ডি এজেন্ট ইতালিতে অবস্থান করা মূল এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে এ চক্রটি কাজ করে থাকে। তারা এ হুন্ডির কারবারকে নিয়ন্ত্রণ করতে আলাদা দুটি মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপ করেছে। মূলত এ অ্যাপের মাধ্যমে দেশে থাকা বিকাশ এজেন্টরা টাকা পাঠানোর নির্দেশনা পেয়ে থাকে।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, ইতালিতে চক্রটির অন্যতম তিন সদস্য রয়েছে। বাংলাদেশিরা বেশি সংখ্যায় আছেন এমন বিভিন্ন এলাকায় ছোট দোকানের মতো করে সেখানে বিকাশের লোগো ব্যবহার করে টাকা সংগ্রহ করে তারা। বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারকারীরা সরাসরি তাদের কোনো একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। ইতালিতে অবস্থান করা ওই বাংলাদেশিদের গ্রেপ্তার করতে পারলে বাংলাদেশের অর্থ পাচারকারীদের পরিচয় শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। তবে এ চক্রের মাধ্যমে অর্থ পাচারকারীদের শনাক্ত করতে এখন দেশে থাকা ওই চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তার ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য তথ্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সিআইডির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা বিএফআইইউর (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট) কাছ থেকে পাওয়া এমএফএসের তথ্যের ভিত্তিতে হুন্ডির সঙ্গে জড়িতদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছি। আমরা চাইলেই কাউকে হুট করে ধরে নিয়ে আসতে পারি না। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তিগত তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হুন্ডির সঙ্গে কারা জড়িত তা শনাক্তে কাজ করছি। এ ছাড়াও হুন্ডি ব্যবহার করে যারা অর্থ পাচার করেছে তাদের শনাক্তে আমরা যাবতীয় তথ্য পর্যালোচনা করছি। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে ব্যাংকের পাশাপাশি খোলাবাজারেও ডলারের দর বেড়ে যায়। বছরের শুরুতে খোলাবাজারে প্রতি ডলার ৯০ টাকার আশপাশে থাকলেও তা বেড়ে ১১৯ টাকায় উঠেছিল। তখন বিষয়টি পর্যালোচনা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ওই সংকটের অন্যতম কারণ রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) কমে যাওয়া। মূলত ডিজিটাল হুন্ডির কারণে বৈধ পথে কমছে রেমিট্যান্স। হুন্ডি কারবারিরা এ জন্য এমএফএস প্ল্যাটফর্মকে বেছে নিয়েছে। কিছু অসাধু এমএফএস এজেন্ট এ অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এর ফলে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও দেশে রেমিট্যান্স কমে যায়।
এসব এমএফএসদের চিহ্নিত করতে মোট চার লাখ এজেন্টের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিএফআইইউ। চারটি নির্দেশকের ভিত্তিতে গত বছর এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত লেনদেন বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৮১ হাজার ৫০৫টি সন্দেহজনক লেনদেন চিহ্নিত করা হয়। এরপর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৫ হাজার ৮৯ জনের এজেন্টশিপ বাতিল করা হয়। এর বাইরে অধিকতর ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত আরও ৩৩০টি এজেন্টের এজেন্টশিপও বাতিল করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এজেন্টশিপ বাতিল হওয়া ৫ হাজার ৪১৯ এজেন্টের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সিআইডিতে তথ্য দেওয়া হয়।
পুলিশের এ তদন্ত সংস্থা বিএফআইইউর এসব তথ্য পর্যালোচনা করে গত বছর সেপ্টেম্বরে অভিযান শুরু করে। এখন পর্যন্ত তারা অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে আলাদা ছয়টি মামলা করেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট ও সাইবার পুলিশ সেন্টার ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে চারজন হুন্ডি এজেন্ট, অন্যদের মধ্যে এমএফএসের ডিএসএস, ডিএসও এবং এজেন্ট রয়েছে।
তবে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার পর হুন্ডিকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও অর্থ পাচারের এ মাধ্যম ব্যবহার করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। হুন্ডির হোতাদের গ্রেপ্তার না করায় পাচারকারীরা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। যাদের মধ্যে বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জন, মাদক কেনাবেচা এবং সোনা চোরাচালানসহ বিভিন্ন অবৈধ কারবার পরিচালনাকারীও রয়েছেন।
সিআইডি বলছে, এটি প্রথম ধাপের অভিযান। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনার পর দ্বিতীয় ধাপের বা যারা এজেন্টদের কাছে নগদ টাকা সরবরাহ করেছে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এরপর তাদের তথ্যে মূল পাচারকারীদের ধরা হবে। কিন্তু এর আগে ২০১৮ সালে একইভাবে রেমিট্যান্সের অর্থ অবৈধভাবে বিকাশের মাধ্যমে হুন্ডির অভিযোগে অভিযান চালিয়েছিল সিআইডি। সে সময় কয়েকটি মামলায় সারা দেশ থেকে সাতজন এজেন্টকে গ্রেপ্তার করেছিল তারা। তবে ওই অভিযানে শেষমেশ কোনো সুফল মেলেনি। মামলাগুলো তদন্তের ধারাবাহিকতায় চক্রের অন্যদের গ্রেপ্তার করে হুন্ডির কারবার থামানোর লক্ষ্য থাকলেও থেমে যায় সেই পরিকল্পনা।
এর কারণ হিসেবে সে সময়ে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই অভিযানে বিএফআইইউর দেওয়া বিকাশ এজেন্টদের তথ্য ২০১৩ ও ’১৪ সালের ছিল। ফলে ২০১৮ সালের এ তথ্যে অভিযান চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যায়। তখন যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের কাছ থেকে মূল পাচারকারীদের তথ্যও পাওয়া যায়নি। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা ছাড়াও অনেক এজেন্টকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। তাদের কেউ তিন থেকে চার বছর আগের লেনদেনকারীদের তথ্য দিতে পারেনি।
তবে এবারের অভিযানেও চ্যালেঞ্জের কথা জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট অনেকেই। তারা বলছে, হুন্ডি চক্রের মূলহোতা যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের অধিকাংশই দেশের বাইরে অবস্থান করছে। ইন্টারপোলের নিয়ম অনুযায়ী তাদের ফিরিয়ে আনা জটিল। ফলে তাদের না আনতে পারলে অধিকাংশ অর্থ পাচারকারীর পরিচয় পাওয়া যাবে না।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হুন্ডি চক্রের বিরুদ্ধে সিআইডি সক্রিয় হওয়ায় বেশ বাহবা পাচ্ছে। কিন্তু এ হুন্ডির মূল সুবিধাভোগীদের মধ্যে অধিকাংশই ক্ষমতাধর ব্যক্তি। তাদের সঙ্গে পেরে ওঠা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে। পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে গত বছর ডলারের দাম বাড়ার পেছনে মানি এক্সচেঞ্জগুলোর কারসাজির অভিযোগ ওঠে। সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, দেশে অনুমোদিত ২৩৫টির বাইরে আরও প্রায় ৭০০ মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম চালাচ্ছে। ওই সময় সিআইডি মানি এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে অভিযানে নামার কথাও জানিয়েছিল।
এরপর বিএফআইইউ তথ্য নিয়ে মানি এক্সচেঞ্জ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করে সিআইডি। পরে গত ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর পাঁচটি এলাকার বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জে অভিযান চালায় সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। তবে এমএফএসের মতোই চুনোপুঁটিদের গ্রেপ্তার করে তারা। গ্রেপ্তার ১৪ জনের মধ্যে একজন একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, অন্যরা সবাই ভ্রাম্যমাণ মুদ্রা বিক্রেতা। তাদের আলাদা পাঁচটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় সিআইডি বাদী হয়ে করা এসব মামলায় ১৮ জনকে আসামি করা হয়।
তাদের গ্রেপ্তারের পর সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, অভিযানে অবৈধ পাঁচটি মানি এক্সচেঞ্জের মধ্যে তিনটির অফিস থাকলেও বাকি দুটি প্রতারণামূলক বা ভ্রাম্যমাণ। তারা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে মানি এক্সচেঞ্জ (মুদ্রা বিনিময়) করতেন। ফোনে ফোনে যোগাযোগ করেই তারা বিভিন্ন দেশের মুদ্রা লেনদেন করতেন। তারা হুন্ডির সঙ্গেও জড়িত। দেশে এমন কমপক্ষে আরও এক হাজার অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জার রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অ্যাডাম কালিনিন (আসল নাম নয়), ত্রিশের কোঠার এক রাশান যুবক। চার মাসের বেশি সময় ধরে ঘরবাড়ি ছেড়ে থাকছেন জঙ্গলে। অনেকটা স্বেচ্ছা বনবাসে। গত বছর সেপ্টেম্বরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগের এক কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু কালিনিনের (আসল নাম নয়) কোনো ইচ্ছেই ছিল না রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেওয়ার। তার মতো অনেকেই যারা যুদ্ধে যেতে চাননি তারা দেশ ছেড়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেটাও করেননি। সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ ঠেকানোর সেরা উপায় হিসেবে ধরে নিয়ে থাকতে শুরু করলেন জঙ্গলে। আর এ পরিকল্পনায় সফলও হয়েছেন তিনি। সম্প্রতি বিবিসি সন্ধান পেয়েছে এই যুদ্ধবিরোধী বনবাসী যুবককে।
বিবিসি জানাচ্ছে, কালিনিন ছিলেন একজন আইটি স্পেশালিস্ট বা তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। শুরু থেকেই তিনি ছিলেন যুদ্ধবিরোধী। তিনি যে অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে থাকতেন তার দেয়ালে তিনি সেঁটে দিয়েছিলেন ‘যুদ্ধকে না বলুন’ লেখা এক পোস্টার। আর এ জন্য তাকে দু-সপ্তাহের জন্য জেল খাটতে হয়েছিল, দিতে হয়েছিল জরিমানাও। তাই রাশিয়া যখন ইউক্রেন যুদ্ধে আবার জয়ের ধারায় ফিরে আসার চেষ্টায় তিন লাখ সেনা নিয়োগের উদ্যোগ নিল তখন কালিনিন যুদ্ধে যোগ দেওয়ার ঝুঁকি নিতে পারেননি। তিনি তার স্ত্রীকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন জঙ্গলে। সেখানে এক তাঁবু খাটিয়ে থাকছেন প্রায় চার মাস ধরে। ইন্টারনেট পাওয়ার জন্য তিনি গাছের আগায় একটা অ্যান্টেনা বেঁধেছেন। বিদ্যুতের জন্য বসিয়েছেন সোলার প্যানেল। সেখান থেকেই শুরু করলেন অফিসের কাজ। কিছুদিন পর পর তার স্ত্রী কিছু খাবার দিয়ে যান।
বিবিসি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বনবাসের সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়ন করতে তাকে সহ্য করতে হয়েছে প্রচণ্ড ঠান্ডা আবহাওযা। এক এক সময় তাপমাত্রা শূন্যের ১১ ডিগ্রি নিচে নেমে যেত। কিন্তু তার পরও তার মনে হয়েছিল, সেনাবাহিনীকে নিয়োগ ঠেকানোর জন্য এটাই ছিল সবচেয়ে ভালো উপায়। কারণ সব যোগাযোগের বাইরে থাকলে কর্র্তৃপক্ষ যুদ্ধে যেতে বাধ্য করতে পারবে না।
কালিনিন জানান, এই বনবাসী জীবনে তার স্ত্রীর ভূমিকা অনেক। নতুন বছর শুরুর সময় কয়েকদিনের জন্য জঙ্গলের ভেতর তাঁবুতে এসে থেকেছিলেন তার স্ত্রীও। প্রতি তিন সপ্তাহে একবার করে খাবার এবং অন্যান্য সামগ্রী একটা বিশেষ জায়গায় নামিয়ে দিয়ে যান। সেই দিনটায় সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দুজনের মুখোমুখি দেখা হয়। এরপর কালিনিন তার খাবারগুলো আরেকটি নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যান। রান্নার জন্য তিনি একটি লাকড়ির চুলো বানিয়ে নিয়েছেন।
রাশিয়াতে বরফের মধ্যে মাছ ধরার সময়ের জন্য যে সব বড় বড় তাঁবু ব্যবহার করা হয় সেরকম একটি তাঁবু দিয়েই জঙ্গলে নিজের ঘর বানিয়েছেন কালিনিন। প্রথম দিকে তিনি দুটি তাঁবু বানিয়েছিলেন। একটি থেকে আরেকটিতে যেতে পাঁচ মিনিট লাগত। একটাতে ছিল ইন্টারনেট সংযোগ। আর দ্বিতীয় তাঁবুটিতে তিনি ঘুমাতেন যেটা ছিল বনজঙ্গলে ঢাকা জায়গায়। তবে যখন শীতকাল শুরু হলো এবং আবহাওয়া ঠান্ডা হতে শুরু করল তখন তিনি একটা তাঁবুতেই থাকা ও কাজ করার ব্যবস্থা করলেন।
কালিনিন এখনো সামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার ডাক পাননি। তবে পরিস্থিতি প্রতিদিনই বদলাচ্ছে এবং তার আশঙ্কা ভবিষ্যতে কোনো এক সময় হয়তো তার কাছেও ডাক আসতে পারে। সরকারি নীতি অনুযায়ী আইটি কর্মীরা সামরিক বাহিনীতে তালিকভুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধ্যকতা থেকে মুক্ত। কিন্তু রাশিয়াতে এমন অনেক খবর বেরিয়েছে যে অনেক ক্ষেত্রেই এ নিয়ম মানা হচ্ছে না।
কালিনিন বলেন, এটা একটা একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং তারা অত্যন্ত ক্ষমতাধর। গত ছয় মাসে অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে অনেকগুলো আইন করা হয়েছে। এখন লোকে যদি যুদ্ধের বিরুদ্ধে মুখ খোলে তাহলে রাষ্ট্র তাদের পেছনে লাগবে।
কালিনিনের এই বনবাসী জীবন অনলাইনে তাকে একটা জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে। টেলিগ্রাম অ্যাপে তিনি প্রায় প্রতিদিনই নানা রকম আপডেট দিচ্ছেন এবং তার ফলোয়ারের সংখ্যা এখন ১৭ হাজার। তিনি ভিডিও পোস্ট করেন, তার চারপাশের বনভূমির ছবি দেন, আরও থাকে তার প্রতিদিনের কাজকর্ম, কীভাবে তার ক্যাম্প সাজানো হয়েছে এই সব।
তৈরি পোশাক পণ্য পরিবহনের পথে বিশেষ কায়দায় কার্টন খুলে মালামালের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ চুরি করে ঝুট কাপড় ঢুকিয়ে দিচ্ছে চোরচক্র। এসব চক্রের সঙ্গে জড়িত কাভার্ড ভ্যানের চালক ও সহকারীরা। প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের তৈরি পোশাক পণ্যসহ সংঘবদ্ধ আন্তঃজেলা চোরচক্রের সাত সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এমন তথ্য পেয়েছে র্যাব।
গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় পোশাক পণ্য চুরির একাধিক মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তাররা হলো মো. রিপন ওরফে ছোট রিপন (৪৩), বিল্লাল হোসেন ওরফে ছোট বিল্লাল (৩৬), নাঈম ইসলাম (২৭), মো. আকাশ (২৬), মো. সুমন (৩০), মো. ফরিদ (৩৮) ও মো. মঞ্জুর হোসেন জিকু (৩৮)।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর মিরপুর পাইকপাড়ায় র্যাব-৪-এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে কারখানা থেকে পণ্য কাভার্ড ভ্যানে বোঝাই করে তেজগাঁওয়ে গিয়ে তেল নিয়ে পাম্পে গাইডের জন্য কিছুক্ষণ অবস্থান করে। গাইড নাঈম ওই স্থানে এসে মূলহোতা রিপনের নির্দেশ অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানাধীন লাঙ্গলবন্দে ভাই ভাই টিম্বার স’মিলের টিনশেড গোডাউনের উদ্দেশে রওনা করে। সেখানে পৌঁছানোর পর আগে থেকেই অপেক্ষারত বিল্লাল, ফরিদ ও মঞ্জুরসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন বিশেষ কৌশলে কাভার্ড ভ্যানের সিলগালা তালা না খুলে পাশের ওয়ালের নাটবল্টু গ্যানিং মেশিনের সাহায্যে কেটে প্রত্যেকটি কার্টন গোডাউনে নেয়। সেখানে কার্টন থেকে পণ্য চুরির সময় র্যাব-৪ শুক্রবার ভোররাতে কাভার্ড ভ্যানটির চালক, সহকারী, স’মিল মালিক, শ্রমিকদের প্রধানসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে। এর কিছু সময়ের মধ্যে চক্রের রিপন ও বিল্লাল চোরাই পণ্যগুলো নিতে এলে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। ২৬ হাজার ৯৯৫টি পোশাকপণ্যসহ একটি কাভার্ড ভ্যান উদ্ধার করা হয়। এসব পণ্যের দাম আনুমানিক ৫ কোটি টাকা।
গ্রেপ্তারদের বিষয়ে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রহমান বলেন, রিপন চক্রের মূলহোতা। তিনি প্রথম জীবনে ১৯৯০ সালে ঢাকায় এসে সোয়েটার কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। ২০০৯ সালে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে চলে যান। ২০১৭ সালে ফিরে এসে রেন্ট-এ-কার চালক হিসেবে কাজ করার সময় তৈরি পোশাক পণ্য চোরচক্রের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তাদের সহযোগী হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে বেশি লাভের আশায় রিপন নিজেই বিল্লাল, নাঈম, আকাশ, সুমন, ফরিদ, মঞ্জুরসহ অজ্ঞাতনামা পাঁচ-সাতজনকে নিয়ে একটি সক্রিয় আন্তঃজেলা চোরচক্র তৈরি করে। গ্রেপ্তার হওয়া বিল্লাল মূলহোতা রিপনের প্রধান সহযোগী। মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে ঢাকা জজ কোর্ট এলাকায় চোরচক্রের মূলহোতা রিপনের সঙ্গে বিল্লালের পরিচয় হয়। বিল্লালের গ্রামের বাড়ি মুন্সীঞ্জের গজারিয়া এলাকায় এবং এই চুরির ঘটনাগুলো যেহেতু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী এলাকায় হয়ে থাকে তাই মূলহোতা রিপন আসামি বিল্লালকে গোডাউন ভাড়া করার কাজের প্রস্তাব দেয়। তখন থেকেই বিল্লাল গোডাউন ভাড়া করার বিষয়টি দেখে আসছে। রিপন পোশাক পণ্য চুরির জন্য যখন কোনো একটি কাভার্ড ভ্যান নির্ধারণ করে নাঈমকে অবগত করে, বিল্লাল ওই কাভার্ড ভ্যানটি ঢাকা থেকে পূর্ব নির্ধারিত গোডাউনে পৌঁছানো এবং পণ্য চুরির সময় গোডাউনের আশপাশে নজরদারিসহ সার্বিক দায়িত্বে থাকতেন। ফরিদ প্যাকেজিং করার কাজে অত্যন্ত দক্ষ হওয়ায় তিনি কার্টন থেকে মালামাল বের করে ফের কার্টন প্যাকেজিং করতেন। মঞ্জুর গোডাউনের মালিক এবং ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি, তার কাছে থাকা গ্যানিং মিশিন দিয়ে কাভার্ড ভ্যানের নাটবল্টু কেটে পণ্যভর্তি কার্টন বের করতে সাহায্য করতেন। অন্য আসামি চালক আকাশ ও তার সহকারী সুমন মূলহোতা রিপনের প্রস্তাবে রাজি হয়ে তার কথামতো নির্ধারিত গোডাউনে গাড়ি নিয়ে যেতেন।
মালামাল চুরির কৌশল সম্পর্কে র্যাব কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে এক বা একাধিক পরিকল্পনাকারী থাকে যারা পোশাকপণ্য পরিবহনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাভার্ড ভ্যানের চালক ও সহকারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে। পরে বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে তাদের প্রলুব্ধ করে। অল্প সময়ে বেশি টাকা পাওয়ার আশায় চালক ও সহকারীরা চোরচক্রের প্রস্তাবে রাজি হয়ে চুরির কাজে সহায়তা করে। কাভার্ড ভ্যানে পণ্যবোঝাই করার সময় বন্দরে প্রদর্শনের জন্য গার্মেন্টে কারখানার পক্ষ থেকে পণ্যের নমুনা চালকের কাছে দেওয়া হয়ে থাকে। এ নমুনা পাওয়ার পরপরই চালক সুযোগ বুঝে ছবি তুলে মূলহোতার কাছে পাঠায়। মূলহোতা আগে থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী নির্জন জায়গায় তাদের ঠিক করে রাখা গোডাউন মালিকের সঙ্গে আঁতাত করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে গোডাউন ব্যবহার করে। গোডাউনে পণ্য চুরির জন্য কাভার্ড ভ্যান প্রবেশের আগেই কার্টন প্যাকেজিং ও লোড-আনলোড কাজে সিদ্ধহস্ত কয়েকজন সহযোগী সেখানে অবস্থান করে। দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময়ের মধ্যে মালামালের ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বের করে নেয়। কার্টনের সেই খালি অংশ ভরতে ঝুট কাপড় ঢুকিয়ে দেয়। এরপর কাভার্ড ভ্যানটি বন্দরের উদ্দেশে রওনা করে গেলে চোরচক্রের নিজস্ব মিনি কাভার্ড ভ্যানে করে তাদের সুবিধামতো জায়গায় নিয়ে যায়।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘সংবিধান অনুয়ায়ী নির্বাচন হবে। বিএনপি পূর্ণশক্তি নিয়ে নির্বাচনে আসুক আমরা সেটাই চাই। তবে বিএনপি কোনোরকম অপচেষ্টা করলে জনগণ তাদের সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে।’ গতকাল শনিবার দুপুরে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আজ রবিবার রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভা নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। আছে শুধু পাকিস্তানে। বিএনপি তো পাকিস্তানকে অনুকরণ করে। উন্নত দেশে ডিজিটাল মাধ্যমে ভোট হয় আমাদের দেশেও ডিজিটাল হয়েছে সেভাবেই ভোট হচ্ছে। আমরা ইভিএমএ ভোটের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু ইভিএম কিনতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন পৌনে ৯ হাজার কোটি টাকার একটি প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এই সময়ে এত বড় প্রকল্প পাস করে ইভিএম কেনা অর্থনীতির জন্য, বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এটি সমীচীন নয়। এবং মানুষকে এই বিশ্বমন্দার মধ্যে এখন মানুষের অন্য কল্যাণগুলো আমাদের কাছে অগ্রাধিকার।
মন্ত্রী বলেন, নির্বাচন সরকারের অধীনে নয়, নির্বাচন কমিশনের অধীনে হয়। সরকারের কোনোট ক্ষমতা থাকে না। বিএনপির নাচতে না জানলে উঠান বাঁকা’র মতো অবস্থা। ২০১৪ সালে তারা শুধু বর্জনই নয়, প্রতিহত করার অপচেষ্টা করেছিলÑ তা আর করতে দেওয়া হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রবিবার মাদ্রাসা মাঠ ও ঈদগাহ মাঠে সমাবেশ হবে। ২২০টি মাইক, ১২টি এলইডি স্ক্রিন থাকবে। সমাবেশকে ঘিরে তরুণ ও নারীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। সমাবেশের জন্য ৫ শতাধিক ভলান্টিয়ার রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, সকাল ৯টায় মাঠে নেতাকর্মীরা আসবেন। ৫ বছর পর প্রধানমন্ত্রী আসছেন। অনেক কাজ সমাপ্ত হয়ে গেছে। কিছু কাজ শুরু হয়ে গেছে। আমাদের আর কোনো চাওয়া নেই, রাজশাহীসহ সব জেলার লোকজন ধন্যবাদ জানাব।
ভারতের বিমান বাহিনীর দুটি যুদ্ধবিমান প্রশিক্ষণ চলাকালে বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে এক পাইলট নিহত হয়েছেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরÑ বিধ্বস্ত হওয়া জঙ্গিবিমান দুটির মধ্যে একটি রাশিয়ায় তৈরি সুখোই এসইউ-৩০ ও অপরটি ফ্রান্সে তৈরি মিরেজ-২০০০। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, মধ্য আকাশে দুই বিমানের সংঘর্ষের ফলে বিধ্বস্তের এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। প্রতিরক্ষা সূত্রের বরাতে এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের মোরেনা শহরে একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। আরেকটি রাজস্থানের ভরতপুর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে বিধ্বস্ত হয়েছে। দুটি যুদ্ধবিমানই রাজ্যের গোয়ালিওর বিমানবাহিনীর ঘাঁটি থেকে উড়েছিল। সুখোই বিমানটিতে দুজন পাইলট আর মিরেজ বিমানে একজন পাইলট ছিলেন। সুখোইয়ের দুই পাইলট সংঘর্ষের পর বিমান থেকে বের হয়ে আসেন। তাদের হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ চৌহান এক টুইটার পোস্টে বলেন, ‘মোরেনায় বিমানবাহিনীর সুখোই-৩০ যুদ্ধবিমান ও মিরেজ-২০০০ যুদ্ধবিমানের মধ্যে সংঘর্ষ হওয়ার খবরটি অত্যন্ত দুঃখজনক। দ্রুত উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ তৎপরতা চালাতে বিমানবাহিনীকে সহযোগিতার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি।’
এবার অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ।
বুধবার কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২২-২৩ হিসাববছরের নয় মাসের (জুলাই-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে লভ্যাংশের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এর আগে ১ জুন কোম্পানিটি ২০২১-২২ হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে।
কোম্পানি সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে পণ্য বিক্রি করে আয় হয়েছে ৭৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। উৎপাদন, পরিচালনসহ অন্যান্য ব্যয় সমন্বয়ের পর কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এতে করে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় বা (ইপিএস) দাঁড়ায় ৮৭ পয়সার কিছুটা বেশি।
তবে এফআরসির বিধান অনুযায়ী, শেয়ার মানি ডিপোজিটের বিপরীতে নতুন ইস্যু করা শেয়ার বিবেচনায় নয় মাসে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৫৮ পয়সা। এই আয় থেকেই শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী নগদ লভ্যাংশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রায় ছয় বছর বন্ধ থাকার পর জাপানি বিনিয়োগ ও ব্যবস্থাপনায় ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। জাপানি প্রতিষ্ঠান মিনোরি বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে উৎপাদনে ফেরে মৃতপ্রায় এমারেল্ড। উৎপাদিত রাইস ব্র্যান অয়েল বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৪৫ কোটি টাকা নতুন বিনিয়োগ ও নতুন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এমারেল্ডে প্রাণ ফিরিয়ে আনে মিনোরি।
রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় কোম্পানিটির প্রধান উদ্যোক্তা বিদেশে পালিয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এমারেল্ড অয়েলের। এ কারণে ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে টানা পাঁচ বছর শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি। মিনোরির তত্ত্বাবধানে এখন লভ্যাংশ দেওয়া শুরু করেছে কোম্পানিটি।
মিনোরির নতুন বিনিয়োগের বিপরীতে গত ১০ এপ্রিল এমারেল্ড অয়েলের আরও ৩ কোটি ১৫ লাখ ৫৮ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে এসইসি, যা মিনোরি বাংলাদেশের নামে ইস্যু করা হবে। এর আগে বাজার থেকে এমারেল্ড অয়েলের ৪৬ লাখ শেয়ার কেনে মিনোরি বাংলাদেশ। নতুন শেয়ার যুক্ত হলে এমারেল্ড অয়েলের পরিশোধিত মূলধন ৯১ কোটি ২৭ লাখ টাকায় উন্নীত হবে।
লিওনেল মেসি ঘোষণা দিলেন, 'আমি ইন্টার মিয়ামিতে যাচ্ছি।'
'বিশ্বকাপ জেতার পর এবং বার্সেলোনাতে না যেতে পেরে আমি যুক্তরাষ্ট্রের সকার লিগে খেলতে যাচ্ছি ফুটবলকে ভিন্নভাবে উপভোগ করার জন্য।'
কিছুক্ষণ আগে স্প্যানিশ গণমাধ্যমে দেয়া বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক।
বিস্তারিত আসছে...
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।