
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, এ দেশে সম্পূর্ণভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থা আওয়ামী লীগ চাপিয়ে দিচ্ছে, জনগণের কাছে তা খুব স্পষ্টভাবে এসে গেছে। আওয়ামী লীগ সবসময় একটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড পলিটিক্যাল পার্টি। তারা মুখে বলে একটা, কাজ করে আরেকটা।
গতকাল রবিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। এর আগে বিএনপি লিয়াজোঁ কমিটি ও ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনিসহ দলের অন্য নেতারা।
রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় নেতাকর্মীরা যাতে নির্বিঘেœ যেতে পারে সে জন্য সাতটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা ছিল। অন্যদিকে বিএনপির কর্মসূচি পালনে বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার আমাদের প্রোগ্রামের সময় তিন দিন আগে থেকে পরিবহন ধর্মঘট করিয়েছে, পুলিশকে নামিয়ে, রাস্তায় মোবাইল ফোন পর্যন্ত চেক করা হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশের ১৫ দিন আগে এখানে বিশেষ অভিযান চালিয়েছে। তাদের ভাষায় সেই অভিযান হচ্ছে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য, বেআইনি জিনিসগুলো প্রতিরোধের জন্য হোটেলে-রেস্টুরেন্টে-মেসে-ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার ছেলেপেলেকে ধরে নিয়ে যাওয়া। এটা তাদের কৌশল। তারা বিরোধী দলকে যেকোনো মূল্যে হোক বাধা প্রদান করবে, কোনোভাবে কর্মসূচি করতে দেবে না। অন্যদিকে তারা (সরকারি দল) তাদেরটা বলতেই থাকবে, করতেই থাকবে এবং সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সব যন্ত্রকে ব্যবহার করবে।’
যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ আন্দোলনে অবশ্যই মানুষের মধ্যে একটা আস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল এ দাবির (১০ দফা দাবি) সঙ্গে একমত হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করছেন। এটা (যুগপৎ আন্দোলন) নিঃসন্দেহে অনেক বড় মাত্রা যুক্ত করেছে এবং জনগণকে আশ্বস্ত করেছে।
পথযাত্রা কর্মসূচিকে বিএনপির মরণযাত্রা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কিশোর কুমারের একটা গান আছে না... মরণযাত্রা যেদিন যাবে। উনার (ওবায়দুল কাদের) সেটা মনে পড়েছে আরকি। উনি নিজের চিন্তা করছেন কি না আমি জানি না। আমরা পথযাত্রা কর্মসূচি নিয়ে এইটুকু বলতে পারি, এর মধ্য দিয়ে একটা নতুন মাত্রা সৃষ্টি হলো এবং জনগণের মধ্যে একটা আকাক্সক্ষা গণতন্ত্রকে ফিরে পাওয়ার জন্য রাজপথে নেমে আসার একটা নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।’
এ সময় ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, আগামী দিনে আন্দোলনকে কীভাবে আরও গতিশীল করা যায় তা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কথা বলেছি এবং একটি স্থির সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হয়েছি। সেই সিদ্ধান্তের কথা আমি বলতে চাই না। শুধু এটুকু বলতে চাই, এ টু জেড সব সরকারবিরোধী শক্তি আজ মনে মনে, অন্তরে অন্তরে সংকল্পবদ্ধ, ঐক্যবদ্ধ। আগামী ৪ তারিখে জোটের পক্ষ থেকে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বৈঠকে ১২ দলীয় জোটের কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনডিপির আবু তাহের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরাম, জাগপার রাশেদ প্রধান, ইসলামী ঐক্যজোটের আবুল কাশেম, মুসলিম লীগের তফাজ্জল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির লিয়াজোঁ ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান ও আবদুল আউয়াল মিন্টু এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
১২ দলের লিয়াজোঁ কমিটি গঠন : গণতন্ত্র মঞ্চের মতো ১২ দলের জন্য লিয়াজোঁ কমিটির গঠন করা হয়েছে। গতকালের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এ লিয়াজোঁ কমিটির প্রধান করা হয়েছে জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারকে। সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহিউদ্দিন ইকরাম, এনডিপির আবু তাহেরকে।
বৈঠকে থাকা একটি সূত্র জানায়, আগামী দিনে কী কর্মসূচি দেওয়া যায় তার পরামর্শ চেয়েছেন বিএনপি নেতারা। একটি লিখিত প্রস্তাব মোস্তফা জামাল হায়দার ও সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম এ সপ্তাহেই বিএনপির কাছে দেবেন।
‘জনগণের সার্বভৌমত্ব’ প্রতিষ্ঠা করতে আইনজীবীদের এগিয়ে আসার আহ্বান : এদিকে গতকাল বিকেলে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উদ্যোগে ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে সত্যিকার অর্থে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য জনগণের সার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এদেশ কারও পৈতৃক বা ব্যক্তি সম্পত্তি নয়, মানুষের সম্পত্তি। এখানে যা ইচ্ছা তাই করে কেউ পার পেয়ে যাবে, চলে যাবে তা হতে পারে না। আমাদেরকে সেখানে রুখে দাঁড়াতে হবে, দায়িত্ব পালন করতে হবে।
আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের ওপরে দেশের, জাতির অনেক আশা- আকাক্সক্ষা। আজকে জাতি চাচ্ছে, আপনারা এগিয়ে আসুন। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। এটা আমাদের প্রত্যাশা, জনগণের প্রত্যাশা। আমাকে, আমাদের নেতাকর্মীদের কারাগার থেকে আইনের মাধ্যমে বের করে নিয়ে আসার জন্য সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করেছেন, এখনো করে চলেছেন। সেজন্য আমি আপনাদের প্রতি কতৃজ্ঞ।’
বিএনপির দেওয়া ২৭ দফা রূপরেখাটি আইনজীবীদের আরও ভালোভাবে পর্যালোচনা করার আহ্বানও জানান বিএনপি মহাসচিব।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এজে মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে ও মহাসচিব কায়সার কামালের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ গত এক সপ্তাহ ধরে চরম বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছেছে। দিনের বেশিরভাগ সময় ধুলা ও ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকে পুরো শহর। যেখানে একিউআই স্কোর ৫১ থেকে ১০০ হলে বাতাসের মান নিরাপদ বলে ধরে নেওয়া হয়। সেখানে সপ্তাহজুড়ে ঢাকার একিউআই স্কোর ছিল ২০০ এর বেশি। যা খুবই অস্বাস্থক্যর বলে ধরে নেওয়া হয়।
গতকাল রবিবারও বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে ছিল ঢাকা। সকাল ৯টায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ছিল ২০৬। যা খুব অস্বাস্থ্যকর। ১০১ থেকে ২০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয়। ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকা একিউআই স্কোরকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর ৩০১ থেকে ৪০০ এর এর মধ্যে থাকা একিউআই ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
স্ট্যামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বায়ুমান সূচকের গড় হচ্ছে ২৮৬। গত বছর বায়ুর মান ছিল ২২১। যা এ-বছর ২৯ ভাগ বেশি। অন্যদিকে গত ৬ বছরের তুলনায় বায়ুদূষণ ১৭ ভাগ বেড়েছে। গত ছয় বছরে বায়ুদূষণের হার ছিল ২৪৪।
এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২৯ দিনের ভেতরে ২০ দিন বায়ুর মান ছিল খুবই অস্বাস্থ্যকর। এর মধ্যে ৯ দিন ছিল দুর্যোগপূর্ণ। ২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ঢাকায় জানুয়ারি মাসের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছেÑ এর আগে কোনো বছরেই এত বেশিদিন অস্বাস্থ্যকর বায়ু সেবন করতে হয়নি ঢাকাবাসীকে। ক্যাপসের তথ্য বলছে, ২০২২ সালে বায়ুদূষণের দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা ছিল ১ দিন, ২০২১ সালে ছিল ৭ দিন, ২০২০ সালে ৪ দিন, ২০১৯ সালে ৪ দিন, ২০১৮ সালে ৪ দিন আর ২০১৭ সালে ৫ দিন ছিল।
গতকাল রবিবার বিকেল ৪টায় রাজধানীর বাংলামোটরের আকাশ ছিল ধুলায় আচ্ছন্ন। দৃষ্টিসীমা নেমে আসে ৩০০ মিটারের নিচে। মোড়ে দাঁড়িয়ে অদূরের ফ্লাইওভারও দেখা যাচ্ছিল না। রাস্তার পাশের দোকান, পথচারীরা কিংবা যাত্রীরা মুখ চেপে অথবা মাস্ক পরে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
হাবিব নামের এক মোটর মেকানিক দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত এক মাসের বেশি সময় ধরে বাংলামোটর থেকে মগবাজারের রাস্তা ও ড্রেনের কাজ চলছে। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাস্তায় প্রচণ্ড ধুলা। দিনের অর্ধেক সময় কাজ করলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। চোখও জ্বলছে। যদি দ্রুত কাজ শেষ করে তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়।
মোটর পার্টস ব্যবসা ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, এই সড়কে সারা বছর খোঁড়াখুঁড়ি লেগেই থাকে। গত বর্ষায় তারা ড্রেনের কাজ শুরু করেছে। এখনো শেষ হয়নি। সারা দিন মুখ ঢেকে রাখতে হয়। কিছুদিন শ্বাসকষ্টে ভুগেছি। ডাক্তার দেখানোর পর এখন ঠিক আছি। এখন আবার নতুন করে চোখ জ্বালা করছে। পানিও বের হয়। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে হলেও এই কাজগুলো দ্রুত শেষ করা উচিত। শুধু বাংলামোটর বা পল্টনই নয় এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে, রাজধানীর তেজগাঁও, শাহবাগ, মিরপুর, গুলশান, ধানমন্ডি, আগারগাঁও, মতিঝিল ও সংসদ ভবন এলাকায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ি, উন্নয়ন প্রকল্পে ধীরগতি, সিটি করপোরেশনসহ সেবা সংস্থাগুলোর উদাসীনতায় নগরজুড়ে ধুলাবালুতে এমন দমবন্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে যানবাহন ও কল-কারখানার কালো ধোঁয়া। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, নির্বিচারে গাছপালা নিধনের কারণে নগরীতে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েই চলেছে।
রাজধানীতে কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব কাজের ধীরগতিতে এমনিতেই জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। অনেক এলাকায় চলছে সড়ক সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ। ভাঙাচোরা সড়ক আর চলমান নির্মাণকাজের মধ্যে চলাচলের সময় যানবাহনের চাকায় উড়ছে ধুলা, বালু। চলন্ত যানবাহনের পেছনে কুণ্ডলী পাকিয়ে বাতাসে উড়ছে তা, খেসারত দিতে হচ্ছে নগরবাসীকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছরও ঢাকার মানুষের একদিনের জন্যও ভালো বায়ু সেবন করার সৌভাগ্য হয়নি। চলতি বছরেও একই অবস্থা। বায়ুমান বেশিরভাগ সময় ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল। ঢাকা শহরে বিকেল ৪টার পর থেকে বায়ুদূষণের মান খারাপ হতে শুরু করে এবং রাত ১১টা থেকে ২টার মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছায়।
বায়ুদূষণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন ক্যাপস প্রধান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, নভেম্বর, ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি- শুষ্ক মৌসুমের এ চার মাসে বছরের ৬০ ভাগের বেশি বায়ুদূষণ হয়ে থাকে। এর মধ্যে আবার জানুয়ারিতে দূষণের পরিমাণ থাকে সবচেয়ে বেশি।
তিনি বলেন, অন্যান্য বছর জানুয়ারি মাসে যে পরিমাণ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ছিল তার মধ্যে চলতি বছরের মতো কখনই ছিল না। জানুয়ারি মাসে প্রায় ৩৩ শতাংশ দিন দুর্যোগপূর্ণ ছিল।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, পরিবেশ দূষণ রোধে ২০১৯ সালে হাইকোর্ট একটা রায় দিয়েছিল। কিন্তু তার কোনো বাস্তবায়ন আমরা দেখছি না। রাজধানীবাসীদের রক্ষা করতে আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। তবে সে জন্য সময় প্রয়োজন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপৎকালীন সময়ের জন্য সংশ্লিষ্টদের জরুরি কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যেসব এলাকায় দূষণের মাত্রা বেশি সেখানে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। যদিও সিটি করপোরেশন কিছু কিছু জায়গায় পানি দিচ্ছে কিন্তু সেটা অপর্যাপ্ত। এই মুহূর্তে ওয়াটার থেরাপি ছাড়া কোনো উপায় নেই।
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বেতন পাওয়ার মতো চাকরিও আছে পৃথিবীতে। আছে কেবল খাওয়ার চাকরিও। কোনো কাজ না করে কেবল ঘুমিয়ে বা খেয়ে মাস গেলে মেলে বিস্তর পয়সা। এবার একটি প্রতিষ্ঠান দিয়েছে অভিনব এক কাজের সুযোগ। ঘুমের আগে পনিরজাত খাবার খেলে মিলবে লাখ টাকা।
স্লিপ জাঙ্কি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে সম্প্রতি দেওয়া হয়েছে এ ঘোষণা। গেল সপ্তাহে প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছে, আপনি কি পনিরপ্রেমী? তাহলে ঘুমানোর আগে বিভিন্ন স্বাদের পনির খেয়ে ১ হাজার ডলার বা ১ লাখ টাকা জেতার সুযোগ আছে আপনারও।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ইউপিআইয়ের এক খবরে বলা হয়েছে, ম্যাট্রেস রিভিউ প্রতিষ্ঠান স্লিপ জাঙ্কি আসলে দুগ্ধজাত খাবার ঘুমে কেমন প্রভাব রাখে সে-সংক্রান্ত একটি গবেষণা করতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আগ্রহীরা এ কাজের জন্য আবেদন করতে পারবেন। গবেষণা চলবে তিন মাস ধরে। গবেষণার মাধ্যমে পাঁচজন ‘ডেইরি ড্রিমার’ খুঁজে বের করবে তারা। আর সেই সঙ্গে ঘুমানোর আগে পনির বা অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার খেলে মানুষ দুঃস্বপ্ন দেখে বলে যে প্রচলিত বিশ্বাস আছে তা ভাঙতে চায়।
স্লিপ জাঙ্কির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, তিন মাস ধরে অংশগ্রহণকারীদের ঘুমাতে যাওয়ার আগে পনির দিয়ে তৈরি খাবার খেতে হবে। এর মাধ্যমে আমরা দেখতে চাই ভালো ঘুমের ক্ষেত্রে পনিরজাত খাবার কতটুকু প্রভাব ফেলে বা অন্য খাবার কেমন প্রভাব রাখে, সেটি।
স্লিপ জাঙ্কি বলছে, বেছে নেওয়া পাঁচজন ডেইরি ড্রিমারকে তাদের ঘুমের ট্র্যাক করতে বলা হবে এবং তাদের ঘুমের গুণমান, সারা দিনের শক্তির স্তরের লিখিত মূল্যায়ন এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে বিভিন্ন পনির পণ্য খাওয়ার পরে স্বপ্ন এবং দুঃস্বপ্নের প্রতিবেদন দিতে বলা হবে।
জাঙ্কির মুখপাত্র ডরোথি চেম্বার্স বলেছেন, ‘আমরা আসলে দেখতে চাই রাতের ঘুমকে ধ্বংস করতে বিভিন্ন ধরনের পনির এবং অন্যান্য লক্ষণের মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না? এটি হয়তো অনিদ্রা রোগ থেকে মুক্তির একটা পথ বাতলে দিতে পারে।’
আবারও বির্তকে জড়িয়েছেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল। সরকারি জমি দখল, সংখ্যালঘুদের হুমকি ও মারধরসহ নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে সমালোচিত এ আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে এবার চৌকিদার পাঠিয়ে এক দম্পতিকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গতকাল রবিবার চেয়ারম্যান শ্যামলকে প্রধান আসামি করে গ্রাম পুলিশ সদস্যসহ দশ জনের নামে মামলা হয়েছে হাতীবান্ধা থানায়।
স্থানীয়রা জানান, গড্ডিমারী গ্রামের আলতাব হোসেনের ছেলে শাহ আলম বিভিন্ন সময় ফেইসবুকে চেয়ারম্যান শ্যামলের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে লেখালেখি করতেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত শনিবার ভোরে চেয়ারম্যান শ্যামল শাহ আলমকে ধরে নেওয়ার জন্য তার বাড়িতে ৮-১০ জন গ্রাম পুলিশের (চৌকিদার) সদস্য পাঠান। তারা শাহ আলমকে নির্যাতন ও মারধর করেন। এ সময় তারা শাহ আলমের স্ত্রী হাসিনা বেগমকেও বেধড়ক মারধর শুরু করেন। তবে স্থানীয়রা জড়ো হলে চৌকিদাররা চলে যান।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মশিয়ার রহমান বলেন, চৌকিদাররা শাহ আলমকে টেনেহিঁচড়ে অটোতে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। আমরা কারণ জানতে চাইলে কোনো জবাব না দিয়ে তাকে ফেলেই চলে যান চৌকিদাররা। পরে ওই দম্পতিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আল আকসা বলেন, আহতদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার শাহ আলম বলেন, শ্যামল চেয়ারম্যান আমার বাড়িতে চৌকিদার পাঠিয়ে আমাকে আর আমার স্ত্রীকে নির্যাতন ও মারধর করেছেন। হাসিনা বেগম বলেন, আমি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছি। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। হাতীবান্ধা থানার ওসি বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে অভিযুক্ত চৌকিদার পাভেল বলেন, আমরা শাহ আলমকে মারধর করিনি। শ্যামল স্যার তাকে পরিষদে নিয়ে আসতে বলেছিলেন তাই আমরা তার বাড়ি থেকে তাকে নিয়ে আসতে যাই।
আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম আসনের সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা। তিনি হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য। এর আগে তিনি এক মুক্তিযোদ্ধা সন্তানকে মারধর করে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বের করে দেন। তার বিরুদ্ধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সরকারি জমি দখলের অভিযোগও আছে। এছাড়া সংখ্যালঘুদের হুমকি-ধামকি, কটূক্তি, বেফাঁস বক্তব্য দিয়ে একাধিকবার বিতর্কে জড়ান তিনি। তবে এবারের বিষয়ে কথা বলতে চেয়ারম্যান শ্যামলের মোবাইল ফোনে একাধিক বার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ঠিকাদারদের হাতে মার খেলেন প্রকৌশলী। শুধু মেরেই ক্ষান্ত হননি ক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা। প্রকৌশলীর কক্ষটি ভাঙচুরও করেন এবং ভেঙে ফেলেন কক্ষের বাইরের নামফলকও। গতকাল রবিবার বিকেলে স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একটি প্রকল্পের পরিচালক মো. গোলাম ইয়াজদানীর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ২২০ কোটি টাকার ৩৭টি উন্নয়নকাজ তিনটি প্রতিষ্ঠানকে ভাগবাটোয়ারা করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে একদল ঠিকাদার এ কা- ঘটান।
এদিকে করপোরেশনের প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ে হামলার ঘটনার গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন বলে জানান খুলশী থানার ওসি সন্তোষ কুমার চাকমা। তিনি বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি। ভুক্তভোগীর অভিযোগ পেলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেল পৌনে ৪টার দিকে টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ে নিজের দপ্তরে আসেন প্রকল্প পরিচালক গোলাম ইয়াজদানী। এ সময় ২০-২২ জন ঠিকাদার অনুমতি না নিয়ে কক্ষে ঢুকে অতর্কিতভাবে তার ওপর চড়াও হন। ইয়াজদানীকে তারা কিলঘুষি মারতে থাকেন। এ সময় তাকে রক্ষা করতে এলে অফিস সহকারী তিলক দেও মারধরের শিকার হন।
তিলক দে সাংবাদিকদের বলেন, ‘স্যারের অনুমতি না নিয়ে ১০ থেকে ১২ জন লোক ঢুকে কথা বলার একপর্যায়ে স্যারকে মারধর করতে থাকে। তাকে উপর্যুপরি কিলঘুষি মারতে থাকেন কয়েকজন। স্যারের নামফলক ও টেবিলের কাচ ভেঙে ফেলে তারা। আমি স্যারকে রক্ষা করতে গেলে তারা আমাকেও বেধড়ক মারধর করে। প্রায় ১০-১২ মিনিট তান্ডব চালিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে তারা।’
গোলাম ইয়াজদানী সাংবাদিকদের কাছে দাবি করে বলেন, ‘তদবির করে সড়কের কাজ না পাওয়ায় কিছু ঠিকাদার (নাজিম, সুভাষ, শাহাব উদ্দিন, সঞ্জয় ভৌমিক কঙ্কন, হাবিব ও মোহাম্মদ ফেরদৌসের নেতৃত্বে অন্তত ১০-১২ জন) আমার কার্যালয়ে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। আমাকে কিলঘুষি মেরে আহত করেছে।’
প্রকৌশলীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ন্যক্কারজনক কাজ যারা ঘটিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সম্পদহানি ও কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় মামলা করা হবে। একই সঙ্গে এসব ঠিকাদারকে কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। সিটি করপোরেশন কারও “মামা বাড়ি” নয় যে চাইলেই কাজ দেওয়া হবে। কাজ না পেলে তারা (ঠিকাদার) আমাকে বলতে পারত অথবা অভিযোগ জানাতে পারত।’
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২ হাজার ৩৯২ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের আওতায় গত ডিসেম্বরে ২২০ কোটি টাকার ৩৭টি কাজের দরপত্র দেওয়া হয়। ইজিপি পদ্ধতিতে দেওয়া দরপত্রে চূড়ান্ত পর্যায়ে তিনজন ঠিকাদার পান ৩৪টি কাজ। এর মধ্যে ঠিকাদার রোকন উদ্দিনের ইকবাল ব্রাদার্স ২২টি, মো. আলাউদ্দিন মোল্লার দ্য কনস্ট্রাকশন ট্রেড আটটি এবং কাশেম কনস্ট্রাকশন চারটি কাজ পায়। এর বাইরে তিনটি কাজ পায় কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এক প্রতিষ্ঠানকে একাধিক কাজ না দেওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন রয়েছে। ইতিপূর্বে অনেক কাজ যথাসময়ে শেষ করতে না পারা এবং প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর এ অনুশাসন। নগরীর পোর্ট কানেকটিং সড়কসহ অতীতে একাধিক কাজ কয়েকজন ঠিকাদার পাওয়ায় এ নিয়ে নগরবাসীকে নজিরবিহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আর এতেই ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধে বলে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক ঠিকাদার ও প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইজিপি পদ্ধতিতে দরপত্র দেওয়া হলেও কাজ বরাদ্দের পুরো প্রক্রিয়াটিই প্রকল্পসংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে তাদের পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পেতে সুবিধা হয়।
হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে একজন ঠিকাদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা প্রকল্প পরিচালকের কক্ষে গিয়ে বলেছি কাজ যেহেতু দেননি আমাদের পে অর্ডার ফেরত দেন। তখন তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং তখন আমাদের সঙ্গে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। কিন্তু আমরা ভাঙচুর করিনি।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আদর, স্নেহ, ভালোবাসার পাশাপাশি শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রতিটি শিশুর একটা ব্যক্তিত্ব আছে এবং এই ব্যক্তিত্ব প্রকাশের সুযোগ তৈরি করে দিন।
গকাল রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা-২০২০ ও ২০২১’-এর পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে রাষ্ট্রপতি এ আহ্বান জানান।
শিশুরা যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে অবদান রাখতে পারে, এ লক্ষ্যে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যদেরও এগিয়ে আসার তাগিদ দেন আবদুল হামিদ ।
শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তারাই বহন করবে দেশের দায়িত্বভার। এজন্য শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, সৃজনশীল মেধাসম্পন্ন প্রজন্ম গড়তে সাহিত্য-সংস্কৃতির প্রভাব অপরিসীম। বিদ্যার্জনের পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্য ও ক্রীড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিশুদের সম্পৃক্ত করে তাদের মানসিক বিকাশের পথ সুগম করা জরুরি। তিনি বলেন, শুধু অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের শিশু নয় সকল স্তরের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে বৈষম্যহীন মনোভাব নিয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের খুব ভালোবাসতেন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, তিনি সময় পেলেই শিশুদের সঙ্গে মিশে যেতেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও শিশুদের উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক।
রাষ্ট্রপতি বলেন, শিশুদের আলোকিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার দায়িত্ব পরিবার থেকে শুরু করে বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ সমাজের প্রত্যেকের। শিশুর মেধা বিকশিত করতে প্রয়োজন উপযুক্ত পরিবেশ, পরিচর্যা ও অনুপ্রেরণা।
আবদুল হামিদ বলেন, দেশের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে থাকা কোমলমতি মেধাবী শিশুদের খুঁজে এনে সঠিক প্রশিক্ষণ ও পরিচর্যার মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিল্পী, আঁকিয়ে বা ক্রীড়াবিদ তৈরি করতে হবে যাতে তারা দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লেও সফলতা লাভ করতে পারে।
সরকারের নানামুখী কর্মকান্ডের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে অনুস্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে এবং বাংলাদেশের সংবিধানে সন্নিবেশিত মৌলিক অধিকার ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির আলোকে শিশুর সার্বিক অধিকার নিশ্চিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতীয় কর্মপরিকল্পনায় শিশুর স্বাস্থ্য-পুষ্টি, শিক্ষা-বিজ্ঞান প্রযুক্তি ইত্যাদিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়নের জন্যও রয়েছে নানা কর্মসূচি ও পরিকল্পনা। তিনি শিশুদের জন্য যেন গবেষণা ও চাহিদাভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে খেয়াল রাখারও নির্দেশ দেন, কেননা এ প্রক্রিয়ায় শিশুদের মতামতেরও প্রতিফলন ঘটাতে হবে।
অভিভাবকদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, শিশুদের সঠিক শিক্ষা যেমন ন্যায়নীতি, সত্য-মিথ্যার বিভেদ, সততা, দয়া, দেশপ্রেম, জীবপ্রেম ইত্যাদি প্রদানের মূল কাজ আপনাদের।
বর্তমান বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির যুগে শিশুদের নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন রাষ্ট্রপতি।
হামিদ বলেন, ‘এখন প্রত্যেক ঘরে শিশুদের হাতে মোবাইল, ল্যাপটপসহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক ডিভাইস, ফলে শিশুরা আজ মোবাইলে আসক্ত। তারা খেলার মাঠে বেশি যায় না, শিল্প-সাহিত্যচর্চা করে না, প্রকৃতি-পরিবেশ চেনে না।’ তিনি প্রযুক্তির ক্ষতিকর দিক থেকে সন্তানদের রক্ষা করে নিয়মিত লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুদের সৃজনশীল কাজে সম্পৃক্ত করতে অভিভাবকদের প্রতিও অনুরোধ করেন।
শিশুদের তিনি উপদেশ দিয়ে বলেন, দেশকে ভালোবাসতে হবে, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে উন্নত, সমৃদ্ধ, আধুনিক ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তোমরা সবসময় সচেষ্ট থাকবে।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ২০২০ এবং ২০২১ সালের জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় প্রায় সাড়ে ৬ লাখ শিশু অংশগ্রহণ করে। ৩০টি বিষয়ে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। বিজয়ী ৪৭৪ শিশু পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। ২০২২ সালের ৬ জন ও ২০২১ সালের ৬ জন মোট ১২ জন রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে।
অনুষ্ঠানে শিশুর উন্নয়ন, বিকাশ ও সুরক্ষা বিষয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ উপলক্ষে স্মারক গ্রন্থ ‘আলোর ফুল’ প্রকাশিত হয়।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল প্রমুখ।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।