
মহাকাশে মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে চাঁদের পরই মঙ্গলগ্রহ। মঙ্গল নিয়ে মাতামাতিতে এবার যুক্ত হলো লালগ্রহের অদ্ভুত কিছু ছবি। পৃথিবী থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থিত মঙ্গলগ্রহে পানির অস্তিত্ব খুঁজে পেতে সেখানে মার্স রিকনাইসেন্স অরবিটার নামের একটি মহাকাশযান পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। এই যানটিতে যুক্ত আছে হাইরাইজ নামের একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা। এই ক্যামেরায় ধরা পড়েছে অদ্ভুত এক ছবি। যেটি দেখতে অনেকটা ভালুকের মুখের মতো। গত ডিসেম্বরে ছবিটি তোলা হয়।
মঙ্গলপৃষ্ঠে তোলা ফাটলবেষ্টিত বৃত্তাকার গঠনটি দেখতে একটি মাথার মতো। গঠনটির ভেতরে থাকা দুটি গর্তের দিকে তাকালে মনে হবে এগুলো চোখ। আর ভঙ্গুর একটি স্তম্ভ দেখতে নাকের মতো। খুব সম্ভবত এই স্তম্ভটি তৈরি হয়েছে আগ্নেয়গিরি অথবা কাদার মধ্যে ফাটল ধরার কারণে। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এ ক্যামেরাটি বল এরোস্পেসের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়। গত ২৫ জানুয়ারি অদ্ভুত এ ছবিটি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ।
এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে নাসার মহাকাশ পর্যবেক্ষণ যান সূর্যের একটি ছবি প্রকাশ করে। ওই ছবি দেখলে মনে হবে যেন সূর্য হাসছে। মূলত সৌরমুকুটের ঘন কালো দুটি গর্তের কারণে এমনটি দেখা গিয়েছিল। এছাড়া গত বছরের মার্চে মঙ্গলগ্রহে একটি কিউরিসিটি রোভার পাথরের একটি ছবি প্রকাশ করে। পাথরটির দিকে তাকালে মনে হবে এটি যেন সমুদ্র তলদেশের কিছু কিংবা একটি ফুল।
হাইরাইজ নামক ক্যামেরাটি ২০০৬ (শেষ পৃষ্ঠার পর) সাল থেকে মঙ্গলগ্রহের বিভিন্ন ছবি তুলে সেগুলো পৃথিবীতে পাঠাচ্ছে। ওই বছর মঙ্গলগ্রহ প্রদক্ষিণ শুরু করে মার্স রিকনাইসেন্স অরবিটার। এরসঙ্গে যুক্ত উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরাটি মঙ্গলপৃষ্ঠের ছবি তোলার জন্য বানানো হয়। এটি ৩ মিটার ছোট বস্তুরও ছবি তুলতে পারে। এই অরবিটার দক্ষিণ মেরুর ১৬৯ মাইল ওপর থেকে উত্তর মেরুর ২০০ মাইল ওপর দিয়ে প্রতি ১১২ মিনিটে একবার মঙ্গলগ্রহ প্রদক্ষিণ করে। মহাকাশযানটিতে থাকা প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে নাসা মঙ্গলপৃষ্ঠ, সেখানকার আবহাওয়া এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এগুলো কীভাবে পরিবর্তিত হয় সে সম্পর্কে গবেষণা করছে।
অবশেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে ‘নিখোঁজ’ স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির বহিষ্কৃত আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদের সন্ধান চেয়ে তার স্ত্রী রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আসিফের স্ত্রী মেহেরুন নিছা মেহেরীন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে উপনির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর আবেদন জানান। ওই আবেদনে আসিফের সন্ধানের পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানানো হয়।
রিটার্নিং কর্মকর্তাকে দেওয়া আবেদনে আবু আসিফ আহমেদের স্ত্রী মেহেরুন নিছা মেহেরীন উল্লেখ করেন, আমার (শেষ পৃষ্ঠার পর) স্বামী আবু আসিফ আহমেদ প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে আশুগঞ্জ সরাইল নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আমরা আবু আসিফের মোটর গাড়ি প্রতীকের পক্ষে নির্বাচনী এলাকার সাধারণ ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছিলাম। কিন্তু গত ২৭ জানুয়ারি বিকেলে আমার স্বামী বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়ে এখন পর্যন্ত ফিরে আসেনি। এর পর থেকে আজ পর্যন্ত তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওইদিন আমি ঢাকায় ছিলাম। বাসার লোকজন জানায়, শুক্রবার বিকেলে তিনি মোবাইল ফোন বাসায় রেখে বেরিয়ে আর বাসায় ফেরেননি। তিনি কোথায় এবং কী অবস্থায় আছেন আমরা তা বুঝতে পারছি না।
এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি আমার স্বামী আবু আসিফের নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান আবু মুসা মিয়াকে ডিবি পুলিশ উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে জানতে পারি গ্রাম্য ঝগড়ার মীমাংসিত ঘটনার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এরই মধ্যে আমাদের বাড়িতে পুলিশের পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকধারী লোকজন এসে অযথা তল্লাশি করে হয়রানি করেছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, প্রচারণার ক্ষেত্রেও আমরা কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাইনি। ভোটকেন্দ্রে যাদের এজেন্ট দেব তাদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক ও উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহগীর আলম বলেন, ‘এখন থেকে এক ঘণ্টা আগে আমরা আসিফের নিখোঁজের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আমরা এ বিষয়ে কাজ করছি।’
জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতির ঘটনায় এবার গ্রেপ্তার হয়েছেন রোহিঙ্গাদের এনআইডি কা-ে জড়িত সেই জয়নাল আবেদীন। সোমবার রাতে তাকে চট্টগ্রাম নগরের লালদীঘি এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, চট্টগ্রামের (সিটিইউ) অতিরিক্ত উপকমিশনার আসিফ মহিউদ্দিন। সিএমপির এই কর্মকর্তার দাবি, জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতির ঘটনায় এর আগে গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে জয়নাল আবেদীনের নাম উঠে এসেছে।
গ্রেপ্তারের পর জালিয়াত চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ করে এযাবৎ ৫০টি জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন জয়নাল। তার কাছ থেকে আলামত হিসেবে মুঠোফোন সেট জব্দ করা হয়েছে। এই জয়নাল আবেদীন নির্বাচন কমিশন, চট্টগ্রাম অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করতেন।
গ্রেপ্তারের পর তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। জয়নালের বিরুদ্ধে এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) জালিয়াতির অভিযোগে নগরের কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা রয়েছে। এ নিয়ে জন্মনিবন্ধন সনদ জালিয়াতির অভিযোগে নগরের বিভিন্ন জায়গা থেকে এক নারীসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করল সিটিইউ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি ভুয়া এনআইডি করে দেওয়ার অভিযোগে ২০১৯ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন জয়নাল। এরপর তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। গ্রেপ্তারের পরে আদালতের স্বীকারোক্তিতে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন অফিসের সার্ভারে ঢুকে তিনি একাই ১ হাজার ৮৪০ রোহিঙ্গাকে ভুয়া এনআইডি বানিয়ে দিয়েছেন।
এর আগে গত বুধবার নগরের ইপিজেড এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১১ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রাকিব হোসেন হিমেল ও মনি দেবীকে। তাদের কাছ থেকে জন্মনিবন্ধন তৈরিতে ব্যবহৃত দুটি কম্পিউটার, দুটি প্রিন্টার ও একটি মুঠোফোন সেট জব্দ করে সিটিইউ। এর আগে গত সোমবার রাতে জালিয়াত চক্রের চার সদস্যকে নগরের পতেঙ্গা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সিটিইউ। তারা হলো মোস্তাকিম, দেলোয়ার হোসাইন সাইমন, মো. আব্দুর রহমান আরিফ ও ১৬ বছরের এক কিশোর। গ্রেপ্তারের পর আদালতের জবানবন্দিতে তারা এযাবৎ ৫ হাজার জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করেছে বলে স্বীকার করেছে।
মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় প্রায় ৩ কোটি ৩ লাখ ডলারের বেশি রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে। এছাড়া মেলায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ২৭তম বাণিজ্যমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আহমেদ বাবু। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যৈষ্ঠ অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এবারের বাণিজ্যমেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ৩৩১টি প্যাভিলিয়ন, স্টল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় শতকরা ৪০ শতাংশ বেশি। মেলায় ভারত, হংকং, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও নেপালের মোট ১৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিকস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্সস, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহ সামগ্রী, চামড়া/আর্টিফিশিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারি ওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্প, হোম ডেকর, ফার্নিচার ইত্যাদি পণ্য মেলায় প্রদর্শন করা হয়েছে।
মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন ক্যাটাগরির সেরা প্যাভিলিয়ন, স্টল ও প্রতিষ্ঠানকে ট্রফি প্রদানের মাধ্যমে স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। প্রথম পুরস্কার হিসেবে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১০টি সেরা প্যাভিলিয়ন ও স্টলকে গোল্ড কালার ট্রফি দেওয়া হবে। দ্বিতীয় পুরস্কার হিসেবে সিলভার কালার ট্রফি দেওয়া হবে প্রদান করা হবে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১৩টি প্যাভিলিয়ন ও স্টলকে। তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ব্রোঞ্জ কালার ট্রফি দেওয়া হবে বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১১টি প্যাভিলিয়ন ও স্টলকে।
আলোচিত ক্যাসিনো কারবারিরা, যারা দেশের বাইরে পালিয়ে আছেন তারা দেশে আসার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ইতিমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আলোচিত সাবেক কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ দেশে এসেছেন। কয়েকদিনের মধ্যে আদালতে আত্মসমর্পণ করার কথা রয়েছে তার। তাছাড়া কারাগারে যারা আছেন তারাও বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। অভিযোগ উঠেছে, ক্যাসিনো কারবারিদের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো অনুসন্ধানও থমকে আছে।
এদিকে, ক্যাসিনোর শীর্ষ কারবারিদের সহযোগীরা গোপন ডেরা থেকেও বেরিয়ে আসছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এলাকায় শোডাউন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পুলিশ ও দুদক কমকর্তারা বলছেন, যাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে এবং জামিনে নেই তাদের আইনের আওতায় আনা হবেই। পাশাপাশি দুদকে আসা অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে অনুসন্ধান চলছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ রূপান্তরকে জানান, দুদিন আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ ও তার স্ত্রী ফারহানা আহমেদ বৈশাখী সিঙ্গাপ্রু থেকে ঢাকায় এসেছেন। তারা অজ্ঞাত স্থানে অবস্থান করছেন। বিষয়টি সাঈদের ঘনিষ্ঠ লোকজন ও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা জানেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা ও সাঈদের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তি দেশ রূপান্তরকে জানান, হাইকমান্ড থেকে সিগন্যাল পাওয়ার পরই সাঈদ ও তার স্ত্রী দেশে এসেছেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন করার সময় পুলিশ কর্মকর্তারা প্রথমে তাদের আটকে দিয়েছিলেন। পরে সিগন্যাল পেয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে সাঈদ আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন বলে তারা জেনেছেন।
পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, অনেক ক্যাসিনো কারবারি প্রকাশ্য আসছেন। সামনে সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই মূলত তারা সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। কারাগারে যারা আটক আছেন তারাও জামিন নিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তথ্য পেয়েছি, তাদের সহযোগীরাও এলাকায় ফিরছেন।’
তবে তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
২০১৯ সালে ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর আগেই পরিবার নিয়ে সিঙ্গাপুর পালিয়ে যান কাউন্সিলর সাঈদ। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিতে দেশে ফিরে আসার চেষ্টা চালিয়েছিলেন তিনি। তবে সাঈদের স্ত্রী দেশে এসে নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরে যান। পরে তিনিও দেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুর পাড়ি দেন। যুবলীগের কয়েকজন নেতার নিয়ন্ত্রণেই মূলত ঢাকার বিভিন্ন ক্লাব ও ভবনে বিদেশের আদলে অবৈধ ক্যাসিনো গড়ে উঠতে থাকে। কাউন্সিলর সাঈদও ক্যাসিনোকা-ে জড়িত ছিলেন। হঠাৎ করেই ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানো হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, যুবলীগ নেতার পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি করা জি কে শামীম, আরেক যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূইয়াসহ অন্তত ত্রিশ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়। সিঙ্গাপুরে সুপরিচিত ক্যাসিনো বে’তে শীর্ষ কারবারিদের অবাধ চলাচল ছিল। সম্রাট ও খালেদ মাহমুদ ভূইয়া ও সাঈদ সিঙ্গাপুরের নিয়মিত যাতায়াত করতেন। তাদের মধ্যে এখনো কয়েকজন কারাগারে আটক আছেন। সম্রাট জামিনে কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন। কেউ কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছেন। আবার কেউ দেশের ভেতরেই ঘাপটি মেরে আছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান শিথিল হওয়ায় সুযোগে অভিযুক্তরা সক্রিয় হয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। তারা একটি প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথ্য পেয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গতকাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ক্যাসিনো কারবারে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তারা জামিনে না থাকলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এমনকি তাদের ধরতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। যারা প্রকাশ্য আসার চেষ্টা করছেন তাদের নজরদারির মধ্যেই রাখা আছে। বিদেশ থেকে কেউ দেশে এলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিমানবন্দরসহ সীমান্ত এলাকায় আমাদের নজরদারি আছে।’
সূত্র জানায়, গত এক মাস ধরে শীর্ষ ক্যাসিনো কারবারিদের অনেককেই এলাকায় ফিরে আসতে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে খিলগাঁওয়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী রইছ উদ্দিন, শাহাদত হোসেন সাধু, ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা গলাকাটা কবীর, শাজাহানপুরের পল্টি রিপন, কানা সেলিম, রিডি সামাদ, শাজাহানপুর থানা ছাত্রলীগের নেতা রাজু, আমিনুল ওরফে মাস্তান আমিনুলসহ অন্তত শতাধিক সহযোগী প্রকাশ্য চলাফেরা করছেন। মালিবাগ ও মৌচাক এলাকার সৈনিক ক্লাবের মালিক হিসেবে পরিচিত জসিম উদ্দিন ও এ টি এম গোলাম কিবরিয়া, ঢাকা গোল্ডেন ক্লাবের সভাপতি আওয়াল পাটোয়ারী ও আবুল কাশেম,ফু-ওয়াং ক্লাবের মালিক নূরুল ইসলাম, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী আলীস হোসেন প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছেন।
দুদক সূত্র জানায়, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চালানোর পর ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী এবং বিদেশে অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্যাসিনো কারবারে জড়িত অন্তত ৭০ জনের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। কিন্তু কয়েক মাস পর অনুসন্ধান অনেকট স্থবির হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ ওঠে। এমনকি কয়েকজনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়। তবে যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি সম্রাট, খালেদ আহমেদ ভূইয়া, জিকে শামীমসহ শীর্ষ ২৪ জনের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা দায়ের করে সংস্থাটি। তারমধ্যে ১২ মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়। তাদের ৫৮২ কোটি টাকার সম্পদও জব্দ করে দুদক। সাবেক কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ, তারেকুজ্জামান রাজীব, এনামুল হক আরমান, সেলিম প্রধান, জাকির হোসেন, কাজী আনিছুর রহমান ও সুমি রহমান, রুপন ভূঁইয়া, শফিকুল আলম ফিরোজ, লোকমান হোসেন ভুইয়া, পাগলা মিজানের বিরুদ্ধে এখনো তদন্ত চলছে। তারাসহ অন্যরা নিজেদের রক্ষা করতে দেনদরবার চালাচ্ছেন বলে দুদকের এক কর্মকর্তা জানান। ওই কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ক্যাসিনো কারবারিদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলমান আছে। কাউকে কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। এমনকি হচ্ছেও না।
বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান বলেছেন, ‘দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। এই উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা। রূপগঞ্জে মেট্রোরেল হলে ২ ঘণ্টার রাস্তা দশ মিনিটেই পৌঁছানো যাবে। শুধু রূপগঞ্জই নয়, সারা দেশের মানুষ উপকৃত হবে।’
গতকাল মঙ্গলবার বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার রূপগঞ্জের পূর্বাচলে মেট্রোরেলের ডিপো উদ্বোধন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষে লাখো সমর্থক সমাগমের লক্ষ্যে এই সভার আয়োজন করা হয়।
রূপগঞ্জের নির্যাতিত আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের যদি কাউকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা-হামলা দিয়ে হয়রানি করা হয় তা আমি (শেষ পৃষ্ঠার পর) দেখব। যদি এমন ঘটনার কেউ শিকার হন আমাকে জানাবেন। প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে আপনারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন উপলক্ষে আমরা রূপগঞ্জের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সমর্থকরা সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের হাত ধরে আমরা রূপগঞ্জের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা একাত্মতা ঘোষণা করেছি।’
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক লিয়াকত হোসেন, এশিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান হারুন উর রশিদ, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের রাজনৈতিক পিএস আবু সাঈদ, দাউদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আফাজ উদ্দিন খানসহ রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
প্রথম সেটে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলেন। তবে পরের সেটেই ঘুরে দাঁড়ান। ৩ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের লড়াইয়ের পর কোয়ার্টার ফাইনালটা জিতে নিলেন নোভাক জকোভিচ। কারেন খাচানভকে ৪-৬, ৭-৬, ৬-২, ৬-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন এই সার্বিয়ান।
কোয়ার্টার ফাইনালের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, দিনটা বোধহয় জকোভিচের নয়। তবে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন তিনি। খাচানভ প্রথম সেট জিতে নেওয়ার পর দ্বিতীয় সেটেও সমানে সমানে লড়াই করেন। যদিও টাইব্রেকারে জোকোর সামনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।
ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর এক বার লকার রুমে ফিরে যান জোকোভিচ। তার পর শুধু কোর্টেই ফিরলেন না। নিজের চেনা ছন্দেও ফিরলেন। তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে আর শুরুর মতো লড়াই করতে পারলেন না প্রতিযোগিতার ১১ নম্বর বাছাই।
ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে মঙ্গলবার প্রতিযোগিতার প্রথম সেট হারলেন জোকোভিচ। হেরে যেতে পারেন এমন মনে না হলেও এ দিন ছন্দ পেতে কিছু সময় লেগেছে তার। ৩৬ বছরের জোকোভিচ কি সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসের ধকল আগের মতো সামলাতে পারছেন না আর?
এমন প্রশ্ন যখন উঁকি দিতে শুরু করছে, তখনই নিজের চেনা ছন্দে দেখা দিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে খাচানভের বিরুদ্ধে সময় পেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন। সেমিফাইনাল বা ফাইনালের প্রতিপক্ষরা কি ছন্দে ফেরার সময় বা সুযোগ দেবেন তাঁকে?
টেনিসপ্রেমীদের মনে এই প্রশ্ন রেখেই ফ্রেঞ্চ ওপেনের শেষ চারে পৌঁছে গেলেন দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। পাশাপাশি কিছুটা হয়তো উদ্বেগেও রাখলেন। সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করার পর জোকার স্বীকারও করে নিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম দু’টি সেট তার থেকে ভাল খেলেছেন রুশ প্রতিপক্ষ।
এদিকে ওপর কোয়ার্টার ফাইনালে জয় পেয়েছেন কার্লোস আলকারাজ। সিৎসিপাসের বিপক্ষে তিনি ৩-০ (৬-২, ৬-১, ৭-৬) সেটে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছেন এই স্পেনিশ টেনিস তারকা।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।