
দেখতে দেখতে ৩৮ পেরিয়ে ৩৯তম আসরে অমর একুশে বইমেলা ২০২৩। মাঝের দুই বছর করোনায় তেমন একটা জোয়ার না থাকলেও এবার পুরোদমে চলছে বইমেলা। গতকাল বুধবার মেলায় গবেষণামূলক বই এসেছে ১টি। এ নিয়ে এবারের মেলায় মোট ১১টি গবেষণামূলক বই এসেছে। তবে গবেষণামূলক বইয়ের ওপর পাঠকের আগ্রহ কম বলে দাবি প্রকাশনাগুলোর।
প্রকাশকরা বলছেন, এবারের মেলায় গবেষণামূলক বই তেমন একটা আসেনি। যা-ও এসেছে তা বিক্রি নেই। সিংহভাগ পাঠকই গবেষণামূলক বইয়ের বিষয় খবর নেন না।
ঐতিহ্যের ম্যানেজার কাজল খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত ‘আমাদের নজরুল’ নামের মাত্র একটি গবেষণামূলক বই এসেছে। মেলার ৮ম দিনে ৫-৭টি বই বিক্রি হয়েছে। তবে ২১ ফেব্রুয়ারির দিন থেকে নির্বাচিত বইয়ের পাঠক আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ইত্যাদি প্রকাশনীর ম্যানেজার আতাউর হোসেন সবুজও একই রকম মতামত জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের প্রকাশনী থেকে ৩টি গবেষণামূলক বই আসবে। ইতিমধ্যে “ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস”-এর ওপর একটি গবেষণামূলক বই এসেছে। বাকি দুটি “বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার” ওপর বই আসার কথা রয়েছে। তবে “ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস”-এর ওপর যে বইটি এসেছে তার বিক্রি একেবারে নেই বললেই চলে।’
জিনিয়াস পাবলিকেশনের বিক্রয়কর্মী স্বর্ণা বলেন, ‘আমাদের এবারে নতুন গবেষণামূলক বই আসেনি। তবে গতবারের সুফিবাদের ওপর লেখা “সুফিকোষ” বইটি থাকলেও এখনো বিক্রি হয়নি। পাঠকদের মাঝেও তেমন একটা আগ্রহ দেখা যায় না।’
অন্যপ্রকাশের ডিরেক্টর শিরাজুল কবির চৌধুরী বলেন, ‘এবারে “পরিবেশ বিপর্যয় ও সংরক্ষণ” নামে আমাদের একটি বই এসেছে। তবে তার বিক্রি কম। এসব বই যে পর্যায়ের পাঠক পড়েন, তারা এখনো মেলায় আসেননি বলে মনে করছি।’
নতুন বই : অমর একুশে বইমেলার ৮ম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ৩টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। গতকাল নতুন বই এসেছে ১১৪টি।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : ওস্তাদ আলি আকবর খান শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইম রানা। আলোচনায় অংশ নেন কমল খালিদ ও আলী এফ এম রেজওয়ান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শেখ সাদী খান। প্রাবন্ধিক বলেন, বাঙালি সংগীতকার ওস্তাদ আলি আকবর খান তার অনন্যসাধারণ বাদনশৈলী ও সৃজনকীর্তি এবং শিল্প-অবদানের জন্য বিশ্ববিখ্যাত হয়েছিলেন। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে ওস্তাদ আলি আকবর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থীদের সাহায্যার্থে ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে সংগীত পরিবেশন করেন। তার অজ¯্র অডিও অ্যালবাম রয়েছে। সংগীতের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি অজ¯্র পুরস্কার, সম্মাননা ও উপাধি লাভ করেছেন। তার সৃজনশীল কর্মের মধ্যে চলচ্চিত্রে সুরারোপ ও নতুন রাগ রচনা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।
আলোচকরা বলেন, শাস্ত্রসংগীতে আলাপই হচ্ছে রাগের প্রাণ। আলাপের ভেতরেই আলঙ্করিক প্রয়োগ থাকে। ওস্তাদ আলি আকবর খান বাদনশৈলীতে আলাপের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বিশেষ সাংগীতিক বোধসম্পন্ন শিল্পী ছিলেন। লোকসংগীতের নানা অনুষঙ্গকে তিনি যেভাবে শাস্ত্রীয় সংগীতের সঙ্গে সমন্বয় করে উপস্থাপন করেছেন, তা সারা বিশ্বে নন্দিত হয়েছে। তবে তিনি কেবল একজন সাধক ও শিল্পীই নন, এই শাস্ত্রটিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিদ্যায়তনিক ও সাংগঠনিক নানা পদক্ষেপও নিয়েছেন, প্রতিষ্ঠা করেছেন সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সভাপতির বক্তব্যে শেখ সাদী খান বলেন, সংগীত দিয়ে সারা বিশ্ব জয় করেছিলেন আলি আকবর খান। যন্ত্রবাদন ও সংগীত দ্বারা শিল্পী যখন মানুষকে মন্ত্রমুগ্ধ করে ফেলেন, তখন সংগীত হয়ে ওঠে জাদু। আলি আকবর খান ছিলেন তেমনি একজন সংগীতের জাদুকর।
গতকালের ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন হাবিব আনিসুর রহমান, গাজী আজিজুর রহমান, রাসেল রায়হান ও ইসমত শিল্পী।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মাকিদ হায়দার, জাহিদ হায়দার, স্মৃতি আক্তার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মো. শাহাদাৎ হোসেন, এনামুল হক বাবু ও চৈতালী হালদার। ফয়জুল্লাহ সাঈদের পরিচালনায় ছিল সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘শিল্পবৃত্ত’র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতি, আলম দেওয়ান, মমতা দাসী বাউল, মো. আবুল বাশার, ফারজানা আফরিন ইভা, পাগলা বাবলু, মো. আনোয়ার হোসেন এবং সন্ধ্যা রানী দত্ত। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন বেণু চক্রবর্তী (তবলা), আনোয়ার সাহাদাত রবিন (কিবোর্ড), সুমন কুমার শীল (দোতারা), মো. শহীদুল ইসলাম (বাঁশি)।
আজকের সময়সূচি : অমর একুশে বইমেলার ৯ম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হবে জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : কবীর চৌধুরী এবং জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : সাংবাদিক-সাহিত্যিক জহুর হোসেন চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আবদুস সেলিম ও জাহীদ রেজা নূর। আলোচনায় অংশ নেবেন কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, খায়রুল আলম সবুজ, মনজুরুল আহসান বুলবুল এবং মুস্তাফিজ শফি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন শফি আহমেদ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের তিন উপপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পর গতকাল বুধবার ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি শান্ত আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার মধ্যরাতে রেলস্টেশন চত্বরে এক সিনিয়রের সামনে আরেক জুনিয়র শিক্ষার্থীর ধূমপানকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে জড়ায় চবি ছাত্রলীগের তিনটি উপপক্ষ। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে সোহরাওয়ার্দী, শাহ আমানত ও শাহজালাল হলে। রাত ২টার দিকে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে জড়ানো বিবদমান শাখা ছাত্রলীগের এ তিন উপপক্ষ হলো সিক্সটি নাইন, চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার (সিএফসি) ও বিজয়।
দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে তিন উপপক্ষের অন্তত ৭-৮ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তারা চবির স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চবির সহকারী প্রক্টর শহীদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে জানান, মঙ্গলবার মধ্যরাতের সংঘর্ষের ঘটনায় আটজন আহত হয়েছেন। কেন এ সংঘর্ষ তা তারা খতিয়ে দেখছেন। দোষীদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল বুধবার বিকেলে হাটহাজারী থানার ওসি রুহুল আমীন জানান, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার রাতে ত্রিপক্ষীয় সংঘর্ষের পর গতকাল বুধবারের ক্যাম্পাস পরিস্থিতি পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আছে।
সংঘর্ষে জড়ানো সিক্সটি নাইন উপপক্ষের নেতা ও চবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম জানান, রেলস্টেশনে সিনিয়র শিক্ষার্থীর সামনে আরেক জুনিয়রের ধূমপান করা নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে সংঘর্ষ হয়েছে। ক্যাম্পাস পরিস্থিতি পুলিশ ও চবি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আছে। তিন পক্ষের সিনিয়র নেতারা বসে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। একই কথা বলেছেন সিএফসি উপপক্ষের নেতা ও চবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফ।
প্রসঙ্গত, চবি ছাত্রলীগ দুটি পক্ষে বিভক্ত। একটি পক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর ও আরেক পক্ষ সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দুই পক্ষের আবার ১১টি উপপক্ষ রয়েছে। এরমধ্যে বিবদমান বিজয় ও সিএফসি মহিবুল হাসানের এবং সিক্সটি নাইনসহ বাকি ৯টি নাছিরের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলাম শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বী। দেশবরেণ্য আহমেদ ছফা, সেলিনা হোসেন, হুমায়ুন আজাদ, অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের মতো সাহিত্যকদের বই পড়তে ভালোবাসেন।
পাঠক হিসেবে কোন ধরনের লেখা পছন্দ জানতে চাইলে রাব্বী দেশ রূপান্তরকে বলেন, রোমান্টিক উপন্যাস, নাটক, থ্রিলার গল্প পড়তে বেশি ভালো লাগে। জীবনের ব্যস্ততা রয়েছে। তবে সেই ব্যস্ততাকে পিছু ঠেলে বই পড়ি। হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত একটি মহান জাতি হিসেবে বাংলার মাটিকে চান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যেখানে বিদ্বান ও গুণিজনের যোগ্য স্থান দেওয়া হবে। সবাই একে অপরের প্রতি হবে শ্রদ্ধাশীল,পরস্পরের ব্যথায় হবে সহানুভূতিশীল ও সহমর্মী। সকালের সমন্বিত প্রয়াসে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে এমন একটি বাংলাদেশ চাই।
পছন্দের লেখকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়েছে কি না জানতে চাইলে ঢাবির এ শিক্ষার্থী বলেন, সৌভাগ্যক্রমে মেলায় এসেই পছন্দের লেখকদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। যাদের লেখা পড়ে আমাদের মনে স্বপ্নের দানা বাঁধে তাদের সঙ্গে দেখা হওয়া সৌভাগ্যের।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, মেলায় পাঠকদের উপস্থিতি বেশ ভালো। স্টল বিন্যাসের ক্ষেত্রে আরও সুসংগঠিত হতে পারত। তবে সবকিছু ছাপিয়ে মেলায় পর্যাপ্ত সুপেয় পানিপানের ব্যবস্থা, শৌচাগার সংকট পাঠকদের অস্বস্তিতে ফেলে।
বই কেনা হয়েছে কি না প্রশ্ন ছুড়তেই এ পাঠক ক্ষোভের সঙ্গেই বলেন, বইয়ের দাম তুলনার থেকেও অনেক বেশি। প্রাইভেট পড়িয়ে যে টাকা পাই তার থেকে একটু একটু করে টাকা জমানো হয় বই কিনতে। সেই হিসেবে ছাত্রদের জন্য বইয়ের দাম অনেক বেশি বলা যেতে পারে।
আসিফ নজরুল। একজন জনপ্রিয় লেখক, ঔপন্যাসিক ও কলামিস্ট। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপকও। গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ৯টি উপন্যাস ও ৪টি নন-ফিকশন গল্প লিখেছেন। এবারের বইমেলায় তার দুটি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে প্রথমা প্রকাশনী থেকে ‘সংবিধান বিতর্ক ১৯৭২’ ও শিখা প্রকাশনী থেকে ‘ক্যাম্পাসের যুবক’ বই দুটি প্রকাশিত হয়েছে।
গতকাল লেখক আসিফ নজরুলের সঙ্গে কথা হয় দেশ রূপান্তরের এই প্রতিবেদকের। নতুন দুটি বই সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে গণপরিষদে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। যারা সংবিধানটি রচনা করেছিলেন তারা কেমন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, সেটি আলোচনা করা হয়েছে। পাঠকরা এ বইটি সুন্দরভাবে গ্রহণ করেছেন। পুরনো একটা বই ছিল ‘ক্যাম্পাসের যুবক’, এটাও এবার নতুন করে মেলায় এসেছে। বইটি নব্বইয়ের দশকের আলোচিত উপন্যাস।
কোন ধরনের পাঠকের জন্য বই লেখেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো পাঠক শ্রেণি নির্দিষ্ট করে বই লিখি না। শুরুর দিকে ছাত্ররাজনীতিকেন্দ্রিক উপন্যাস লিখতাম, তখন মূলত তরুণরাই ছিল আমার বইয়ের পাঠক। এখনো যারা ইয়াং জেনারেশন আছে, তারা আমার বই কেনে। তবে আমার বই সব বয়সের মানুষই কিনে থাকে। আমি বিশ্বাস করি, বইয়ের মূলত ক্রেতা উচ্চ মধ্যবিত্তের ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিভিন্ন বয়সের মানুষ; তারাই আমার পাঠক।’
তরুণ প্রজন্মের বই বিমুখতা সম্পর্কে এই লেখক বলেন, ‘আমাদের দেশেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম রয়েছে এবং উন্নত দেশগুলোতেও আছে। ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোতে বইয়ের ক্রেতা উল্লেখযোগ্য হারে কমেনি। আমি আমার কথা বলি, আমার একটি বই “সমাপ্তির গল্প” প্রায় ১৮ বছর পর প্রথমা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। সেই বইটিরও চারটি এডিশন বের হয়েছিল। তো, মানুষ যদি না-ই পড়ত, তাহলে এত এডিশন বের করার কি প্রয়োজন ছিল? আমার কাছে মনে হয় ভালো কনটেন্ট থাকলে আর পাঠককে বোঝাতে পারলে কোনো সমস্যা হয় না।’
আসিফ নজরুলের অন্যতম জনপ্রিয় বই ‘পিএইচডির গল্প’। এ বইটি অনলাইন বই বিক্রির প্ল্যাটফর্ম রকমারি ডট কমের সর্বাধিক বিক্রীত বইয়ের তালিকায় রয়েছে। বইটি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমার সব থেকে জনপ্রিয় বই “পিএইচডির গল্পে”র প্রায় ৫ হাজার কপি ছাপা হয়েছে। আমার খুবই স্মৃতিবিজড়িত একটি লেখা। বইটিতে অনেক দুঃখের, আনন্দের ও অনুপ্রেরণার ঘটনা উল্লেখ করেছি। আমার পিএইচডির যাত্রার পুরোটাই এ বইটিতে ফুটে তুলেছি। এই বই অনেকেই মোটিভেশনাল বই হিসেবে গ্রহণ করছে।’
বাংলা সাহিত্যের ‘প্রথাবিরোধী’ লেখক সুবিমল মিশ্র (৮০) মারা গেছেন। গতকাল বুধবার ভোররাতে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্যে একটি যুগের অবসান হলো।
দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগে অসুস্থ ছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এই সাহিত্যিক। ৫০ বছরের সাহিত্যজীবনে কোনোদিন বাণিজ্যিক পত্রিকায় লেখেননি সুবিমল। বেশিরভাগ বই নিজের দায়িত্বে সম্পাদনা, প্রকাশ ও বিক্রয় করেছেন। তার মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বহু কবি, সাহিত্যিক শোক জানিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্টে তারা বলেছেন, প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার মহীরুহ ছিলেন সুবিমল। তার প্রয়াণ সার্বিকভাবে বাংলা সাহিত্যের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
১৯৬৭ সালে প্রকাশিত ‘হারান মাঝির বিধবা বৌ এর মড়া অথবা সোনার গান্ধীমূর্তি’ সুবিমল মিশ্রের লেখা এই ছোটগল্পটি বাংলা সাহিত্যজগতে প্রথম আলোড়ন ফেলে। কার্যত স্রোতের উলটো পথে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সে পথ ছিল একেবারেই তার নিজস্ব। তার সাহিত্যকর্ম দুই বাংলার মননশীল ‘লিটল ম্যাগাজিনে’ প্রকাশিত ও সমাদৃত হয়েছে একাধিকবার। তার প্রায় সব লেখাতেই রাজনৈতিক, সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতি দ্বিধাহীন বিশ্লেষণ ও মধ্যবিত্ত সমাজের অচ্ছুতপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ লক্ষ করা যায়।
রাষ্ট্রব্যবস্থা, তার শোষণ, সুবিধাভোগী শ্রেণির প্রতি ব্যঙ্গ, অবক্ষয়, দ্বন্দ্ব, লেখার কোলাজ এবং বিশেষভাবে নৈরাজ্য ইত্যাদি সুবিমলের লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তার প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘তেজস্ক্রিয় আবর্জনা’, ‘আসলে এটি রামায়ণ চামারের গল্প হয়ে উঠতে পারতো’, ‘হাড়মটমটি’, ‘ওয়ান পাইস ফাদার মাদার’, ‘চেটে চুষে চিবিয়ে গিলে’ ইত্যাদি।
প্রথম জীবনে শিক্ষকতা করতেন এই সাহিত্যিক। দক্ষিণ কলকাতার শম্পা মির্জানগরের বাসিন্দা তিনি। তার স্ত্রী এবং এক মেয়ে রয়েছে। নিজের লেখা গল্প, উপন্যাসকে অ্যান্টি-গল্প ও অ্যান্টি-উপন্যাস বলতেন সুবিমল মিশ্র। তার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলার সাহিত্যজগৎ।
মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার আড়ালে ‘এমএলএম’-এর আদলে ‘অনুদান বাণিজ্য’ পরিচালনা করে কয়েক হাজার গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এক প্রতারক চক্রের মূল হোতাসহ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে গত ৬ জানুয়ারি দেশ রূপান্তর পত্রিকায় এই প্রতারকদের কর্মকা- নিয়ে ‘এমএলএম আদলে অনুদান বাণিজ্য’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ পায়। এরপরই তদন্তে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন প্রতারক চক্রের মূল হোতা ‘বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার’ প্রেসিডেন্ট মির্জা আবদুল কাদের (৪৪), তার সহযোগী মির্জা নাসির উদ্দিন (২৫), মাহফুজুর রহমান (৫০), এ আর আব্দুল মোমেন (৪৯), মেহেদী হাসান (২৫), আমজাদ হোসেন (৩৪), মঞ্জুরুল হাসান খান (৩৫), আব্দুল বারিক (৩৮), রুহুল আমিন (২৫), মোছা. মুন্নি (৩০) ও নিলুফা ইসলাম নিপা (৩৪)। এ সময় অফিসে আটকে রাখা এক ভুক্তভোগীকেও উদ্ধার করা হয়।
গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে ‘মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার’ আড়ালে এমএলএম ব্যবসার নামে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিল। অভিযুক্তরা সমাজের নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তদের টার্গেট করে মাসিক ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে মাসিক ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সংস্থাটির দাতা সদস্য বানায়। এ জন্য অনুদান হিসেবে জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আদায় করত। চক্রটি এরই মধ্যে হাজারো মানুষের কাছে থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
চক্রটির মূল হোতা আব্দুল কাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, কাজের নামে দাতা সদস্যদের দিয়ে এমএলএমের আদলে নতুন দাতা সদস্য সংগ্রহের কাজ করাতেন আব্দুল কাদের। ভুক্তভোগীদের বলা হতো ৩০ হাজার টাকা দিয়ে দাতা সদস্য হওয়ার পর বেতন ১০ হাজার টাকা হবে। কাজ দেওয়া হতো সোর্স বা ইনফরমারের। এলাকায় বাল্যবিবাহ হলে, দরিদ্র পরিবার মেয়ে বিয়ে দিতে না পারলে এবং নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হলে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের জানাতে বলা হতো। এমন সহজ চাকরির আশায় ৩০ হাজার টাকা দিয়ে দাতা সদস্য হওয়ার পর তাদের জানানো হতো নতুন দাতা সদস্য আনতে হবে। নতুন সদস্য আনতে না পারলে বেতন হবে না। অথচ চক্রটি টাকা নেওয়ার আগে লোক সংগ্রহের বিষয়ে কিছুই বলত না।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, ভুক্তভোগীরা টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়ে বেতন না পেয়ে বাড্ডার অফিসে গেলে তাদের মামলা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ভয় দেখায় চক্রটি। অধিকাংশ সদস্যই সমাজের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ।
এদিকে দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ভুক্তভোগীদের বক্তব্যেও প্রতারণার বিষয়টি উঠে আসে। চাকরির আশায় গত বছর ১৫ নভেম্বর এ চক্রের খপ্পরে পরে ২০ হাজার টাকা দেন টাঙ্গাইলের কালিহাতীর বাসিন্দা রাশিদা আক্তার জানান, তাকে মাসে ১১ হাজার টাকা বেতনে চাকরির কথা বলে দাতা সদস্য বানানো হয়। চাকরি আশায় ঋণ করে টাকা দেন তিনি। তাকে বলা হয়েছিল টাঙ্গাইলের কালিহাতী থানা এলাকায় কোনো বাল্যবিবাহ হলে কর্মকর্তাদের জানাতে হবে। সদস্য হওয়ার তিন দিন পর তাকে বলা হয় অনুদান দেওয়ার জন্য লোক সংগ্রহ করতে হবে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।