
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীতে দেড় বছর আগে মাইক্রোবাসের ধাক্কায় নিহত হন দুই মোটরসাইকেল আরোহী শাহান শাহ আলম বিপ্লব (৩৪) ও মো. মনির হোসেন (৩৪)। অন্য দুর্ঘটনার মতো এ ঘটনাতেও একটি মামলা হয়। তদন্ত শেষে এটিকে সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখ করে মাইক্রোবাস মালিককে আসামি করে আদালতে চার্জশিটও (অভিযোগপত্র) জমা দেয় হাইওয়ে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে এখন জানা যাচ্ছে, এটি ছিল পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আর এর কারণ ছিল এলাকার আধিপত্য নিয়ে বিরোধ। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের তদন্তে পাওয়া তথ্য জানান পিবিআই প্রধান বনোজ কুমার মজুমদার।
পিবিআই বলছে, যেকোনো দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে যানবাহনের চালক পালিয়ে গেলেও যাত্রীরা পালিয়ে যান না। কিন্তু নরসিংদীর ওই কথিত দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে মাইক্রোবাসের কোনো যাত্রীকে পাওয়া না যাওয়ায় প্রথমেই সন্দেহ হয় তদন্তকারীদের। এরপর মাইক্রোবাসটির চালককে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নয়জনের সংশ্লিষ্টতার কথা। যাদের চারজনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলো মো. মাসুম মিয়া, সোহাগ মিয়া, মাসুদ মিয়া ও মামুন মিয়া। এর মধ্যে তিনজন এ জোড়া খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বাকিদেরও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আদালতে এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পিবিআই।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ২০২১ সালের ১২ আগস্ট সন্ধ্যায় নরসিংদীর শিবপুর থানা এলাকায় মহাসড়কের ওপর মাইক্রোবাসের ধাক্কায় ওই দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হন। এ ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে হওয়া মামলায় মাইক্রোবাস মালিক মাসুম মিয়াকে (৪১) অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় হাইওয়ে পুলিশ। তবে নিহত বিপ্লবের ভাই সোহাগ মিয়া এতে নারাজি দেন এবং আদালতে আরেকটি সিআর মামলা করেন। নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে হাইওয়ে পুলিশের মামলাটির সঙ্গে সিআর মামলাটিকে যুক্ত করে অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় নরসিংদী পিবিআইকে। পরে পিবিআইয়ের তদন্তে হত্যাকাণ্ডের রহস্য বেরিয়ে আসে।
পিবিআই প্রধান আরও বলেন, নিহত শাহান শাহ আলম বিপ্লব এলাকার একাধিক হত্যা মামলার আসামি এবং মনির হোসেন ছিলেন তার দেহরক্ষী। বিপ্লব এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করলেও তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পেত না। বিপ্লবের এক সময়কার ডিশ লাইনের ব্যবসার অংশীদার মামুন মিয়াই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। আগে দুবার হত্যার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন মামুন। সবশেষে সড়ক দুর্ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দিতে মাইক্রোবাস চাপা দিয়ে হত্যা করা হয় বিপ্লব ও তার দেহরক্ষীকে। মামলার তদন্তে নেমে পিবিআই জানতে পারে, ২০১৯ সালে দুলাল গাজী নামে একজনকে রায়পুরার লোচনপুর বাজারে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। যার প্রধান আসামি ছিলেন বিপ্লব। ঘটনাটি বাজারের মধ্যে প্রকাশ্যে ঘটলেও বিপ্লবের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। বিপ্লবের বিরুদ্ধে চারটি হত্যাসহ ১০টি মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। কিন্তু তিনি ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তার ভয়ে কেউ কোনো মামলার সাক্ষী দিতে চাননি। এমন পরিস্থিতিতে দুলাল গাজী হত্যা মামলায় পিবিআইয়ের হাতে গ্রেপ্তার হন বিপ্লব।
বিপ্লব কারাগার থেকে জামিনে বের হলে ওই মামলার সাক্ষীদের মধ্যে দুজন জুয়েল (২২) ও নাঈমকে (২৩) এলাকায় ‘ডাকাত’ বলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এমনকি পিবিআইয়ের যে কর্মকর্তা বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করেছিলেন তার বিরুদ্ধে পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ করেন বিপ্লব। পরে অভিযোগটি জেলা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিপ্লব ও তার সঙ্গীদের এমন কর্মকাণ্ডে এলাকার অনেকে ক্ষিপ্ত হন। এর মধ্যে একসময় বিপ্লবের সঙ্গে ডিশ লাইনের ব্যবসা করা মামুন মিয়া তার সহযোগীদের নিয়ে বিপ্লবকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন।
গ্রেপ্তারদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পিবিআই জানায়, পরপর তিনবার বিপ্লবকে হত্যার চেষ্টা করে তৃতীয়বার সফল হয় তারা। সর্বশেষ ঘটনার দিন প্রথমে লোচনপুর থেকে তারা দল বেঁধে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ নরসিংদী রওনা হয়। পথে বারৈচা থেকে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস সংগ্রহ করে। আর তথ্য সংগ্রহ করে দেওয়ার জন্য মোটরসাইকেলে করে সোহাগ ও ফয়সাল নরসিংদীতে আসেন। অন্যরা নরসিংদী শহরের ভেলানগর জেলখানা এলাকায় অবস্থান করতে থাকেন। সোহাগ ও ফয়সাল বিপ্লবের সার্বক্ষণিক মুভমেন্ট (চলাচল) অনুসরণ করে জানাতে থাকেন।
পিবিআই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে করা বিপ্লবের অভিযোগটির তদন্তে সেদিন বিপ্লবকে জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয়ে ডাকা হয়। এসপি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে বিপ্লব মনিরের মোটরসাইকেলে উঠে বসেন। বিপ্লব ও মনির মোটরসাইকেলে করে মহাসড়কে উঠলে সোহাগ তাৎক্ষণিক তথ্য জানিয়ে দিলে হত্যার উদ্দেশ্যে অবস্থানরত আসামিরা তাদের অনুসরণ করতে থাকেন। প্রথমে একবার পেছন থেকে আঘাত করে ব্যর্থ হয়ে সামনে গিয়ে আবার অবস্থান নেন। একপর্যায়ে বিপ্লবের মোটরসাইকেলটি তাদের মাইক্রোবাস অতিক্রম করার সময় পেছন থেকে পরিকল্পিতভাবে ধাক্কা দেয় এবং ঘটনাস্থলেই বিপ্লব ও মনির নিহত হন। এ সময় মাইক্রোবাসটি তাদের ধারণার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে ঘটনাস্থলে মাইক্রোবাসটি রেখেই পালিয়ে যায় তারা। এ জোড়া হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে অর্থদাতা হিসেবে ওমর ফারুক মোল্লা নামে এক প্রবাসীর নাম উঠে এসেছে। তার সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
এক প্রশ্নের জবাবে পিবিআই প্রধান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার মামলাটির তদন্তে নেমে পিবিআই জানতে পারে কথিত দুর্ঘটনার আগে মাইক্রোবাসে যাত্রী ছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার পর যাত্রীদের কাউকে পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনা হলে চালক পালিয়ে গেলেও যাত্রীদের পালানোর কথা নয়। যেটি হাইওয়ে পুলিশের প্রথম তদন্তে নজরে আসেনি। বিষয়টি খটকা লাগলে এর পেছনের কারণ অনুসন্ধানে নামে পিবিআই। এরপর জানা যায়, ঘটনাটি মহাসড়কে ঘটলেও এর পেছনে ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। তদন্তের একপর্যায়ে প্রথমে মাইক্রোবাস মালিক মাসুম মিয়াকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যে বাকি তিনজন মামুন, সোহাগ ও মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আগামীকাল শনিবার ৪৮ বছরে পা দিচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। মাত্র ১২টি থানা ও সাড়ে ৬ হাজার জনবল নিয়ে ১৯৭৬ সালে গঠিত হয় ডিএমপি। বর্তমানে থানা হয়েছে ৫০টি। জনবলও বেড়েছে অনেক। জনবল প্রায় ৩২ হাজারের মতো। বাড়ানো হয়েছে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও। দেওয়া হচ্ছে পদোন্নতি। আনা হয়েছে আমূল পরিবর্তন। তবে সে হিসেবে সেবার মান বাড়ছে না। এখনো থানাগুলোতে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না নগরবাসী।
সেবার মান আরও বাড়তে ঢেলে সাজানো হচ্ছে ডিএমপিকে। এরই অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে ১৩ থানায় ওসি পদে রদবদল করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্তত অর্ধশত সহকারী পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার, উপপুলিশ কমিশনার, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার পদেও রদবদল করা হয়েছে। সম্প্রতি ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মীর রেজাউল আলমকে অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি দেওয়ায় সেখানে দেখা যেতে পারে ড. খন্দকার মুহিদ উদ্দিনকে। আরও রদবদল আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘থানাগুলোতে সেবার মান বাড়াতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি। ভালো কাজ করার জন্য পুলিশের প্রত্যেক সদস্যকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। পুলিশকে জনবান্ধব করা হচ্ছে। থানায় গিয়ে কোনো নগরবাসী হয়রানির শিকার হওয়ার প্রমাণ মিললে, কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে শাস্তিও দেওয়া হয়েছে।’
জানা গেছে, আগামীকাল ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সচিব ও পুলিশ প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দুই মাসে থানাগুলোতে যেসব গুরুত্বপূর্ণ মামলা বা জিডি (সাধারণ ডায়েরি) হয়েছে, কমিশনারের নির্দেশে সেসব মামলা-জিডি ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রত্যেক বাদীর সঙ্গে কথা বলেছেন ডিএমপি সদর দপ্তরের বিশেষ টিমের সদস্যরা। তাদের কাছে পুলিশের ঘুষ দাবি, দুর্ব্যবহার কিংবা মামলা নিতে হয়রানির কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। জিডির বিষয়ে অনেকের কাছ থেকে নেতিবাচক বক্তব্য পাওয়া গেছে; বিশেষ করে গাড়ি চুরির ঘটনায় অনলাইনে জিডি করার পরামর্শ দিচ্ছেন অনেক ওসি। সে ক্ষেত্রে অনলাইনে ডিজি করার পর তা আবার পাঠানো হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগে। গাড়ির বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা অপরাধের তথ্য আছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে; যা বাদীর কাছে হয়রানি বলে অনেকে মনে করছেন। কারণ গাড়ি হারানো বা চুরির ঘটনায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না হওয়ায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় হাজার মামলা ও সাধারণ ডায়েরির বাদীর সঙ্গে কথা বলেছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ৫০ থানায় দিনে অন্তত ৩০০ জিডি হচ্ছে। এসবের মধ্য থেকে গুরুত্ব বুঝে প্রতিদিন অন্তত ১০০ জিডির তথ্য নেওয়া হয়েছে। থানাপ্রতি দিনে দুজন জিডিকারীর সঙ্গে কথা হয়েছে। ওই সব মামলা বা জিডির বাদীর কাছ থেকেই বেরিয়ে এসেছে, কোন ওসি কার কার কাছ থেকে কত টাকা ঘুষ নিয়েছেন। কার সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন। জিডি বা মামলার বাদীর সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি জানতে পেরে কোনো কোনো থানা জিডির বা মামলার কপিতে বাদী নম্বর ইচ্ছে করে ‘ভুল’ লেখেন। পুরো নম্বর ঠিক থাকলেও একটি বা দুটি ডিজিট ভুল লেখা হয়। যাতে সদর দপ্তর থেকে ওই নম্বরে ফোন করা হলে প্রকৃত বাদীকে পাওয়া যায় না। এ বিষয়টিও ধরা পড়েছে। ওই সব পুলিশ কর্মকর্তাকেও সতর্ক করা হয়েছে। একই সঙ্গে মিরপুর মডেল, ওয়ারী, ভাটারা, ভাষানটেক, উত্তরা পশ্চিম, বিমানবন্দর ও নিউমার্কেট থানার ওসিকে বদলি করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে নতুন ওসি হিসেবে যোগ দিয়েছেন আবার অনেককে এক থানা থেকে অন্য থানায় আনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, থানায় দুই ধরনের মামলা হয়। এক ধরনের মামলায় পুলিশ বাদী হয়। পাবলিক বাদী হয়ে অন্য ধরনের মামলা করে। পুলিশ বাদী হয়ে যেসব মামলা করে, সেসব ক্ষেত্রে ঘুষ লেনদেন হয়নি। তাই এ ক্ষেত্রে বাদীর সঙ্গে কথা বলা হয়নি। তবে পাবলিক বাদী হয়ে যেসব মামলা করেছে, সেসব ক্ষেত্রে প্রত্যেকের সঙ্গে ডিএমপি সদর দপ্তরের টিম কথা বলেছে। ডিএমপির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, জরুরি সমস্যা নিয়ে অনেক সেবাপ্রার্থী থানায় আসেন। কখনো কখনো ডিউটি অফিসাররা ওই সব সমস্যার সমাধান দিতে পারেন না। তাই সংশ্লিষ্ট ডিউটি অফিসার থানার ওসির শরণাপন্ন হন। তখন ওসি বলেন, ‘ওই লোককে একটু বসতে বলেন। আমি থানায় আসছি।’ কিন্তু ওই লোক তিন ঘণ্টা থানায় বসে থাকলেও ওসি থানায় আসেননি। এ কারণে থানায় আসা লোকটি ভোগান্তিতে পড়েন। তবে ওই সব ডিউটি অফিসারকে ৫০০-১০০০ টাকা দিয়ে দিলে ভুক্তভোগী লোকটির কাজ হয়ে যায়। তখন আর কষ্ট করে থানায় বসে থাকতে হয় না। তবে গুরুত্বপূর্ণ মামলার ক্ষেত্রে এখন এটি হচ্ছে না। জিডির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট থানাগুলোতে এ কাজটি এখনো হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ডিএমপি কমিশনার যোগ দেওয়ার পর থেকে প্রতিটি ক্রাইম কনফারেন্স পুলিশের মানসিকতার পরিবর্তনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধ করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ঢাকায় ঘুরেফিরে একই স্থানে যারা দায়িত্ব পালন করে আসছেন, তাদের একটি তালিকা করা হয়েছে। নতুন কমিশনার দায়িত্ব পাওয়ার পর কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছেন।
ডিএমপির সূত্রমতে, ডিএমপি কমিশনারের বিশেষ সহকারীর নেতৃত্বে পাঁচ-ছয়জনের একটি টিম থানার কর্মকা- নিয়ে কাজ করছেন। যেসব থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর, তাদের বিষয়টি ডিএমপি কমিশনারকে অবগত করা হচ্ছে। নতুন কমিশনার তুলনামূলক নতুনদের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে। তার এমন মনোভাব সমর্থন করছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।
সম্প্রতি পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পাঁচজন অতিরিক্ত উপকমিশনার, ক্রাইম জোনের চারজন এবং অন্তত ২৭ জন সরকারী কমিশনার ও ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক পদেও বড় ধরনের রদবদল করা হয়েছে।
ডিএমপির দায়িত্বশীল অপর এক কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) মীর রেজাউল আলমকে পদোন্নতি দিয়ে অতিরিক্ত আইজিপি করা হয়েছে। এই পদে আসতে পারেন উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ড. খন্দকার মুহিদউদ্দিন। বর্তমানে তিনি ডিএমপিতে সংযুক্ত আছেন। এর আগে তিনি লালবাগ জোনের ডিসিসহ ডিএমপির বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের পর তাকে জেলার এসপি হিসেবে পাঠানো হয়। তিনি দক্ষতার সঙ্গে ওই মামলার তদন্ত শেষ এবং সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি প্রায় তিন বছর খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাচ্ছে সরকার।
এ ছাড়া ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উচ্চপর্যায়েও রদবদলের আভাস পাওয়া গেছে। ৮টি ক্রাইম জোনের ডিসি পর্যায়ে কিছু স্থানে বদলের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘পুলিশকে সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। থানা ও জনবল বাড়ানো হয়েছে। তবে আমরা যেভাবে আশা করেছিলাম, সেভাবে নগরবাসী সেবা পাচ্ছে না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি।’
নগরবাসীর অভিযোগ, জনবল, আধুনিক সরঞ্জাম, তথ্যপ্রযুক্তিসহ সব জায়গায় ডিএমপির সক্ষমতা বাড়লেও নাগরিক প্রত্যাশা পূরণে রয়েছে বিশাল ঘাটতি। থানা পুলিশের বিরুদ্ধে প্রায়ই হয়রানি, দেরিতে সাড়া দেওয়া, মামলা না নেওয়া, মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো, তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করাসহ নানান অভিযোগ আছে।
তবে ডিএমপি মনে করছে, এত বড় একটি শহরে অপরাধের মাত্রা হিসাব করলে তেমন কোনো অপরাধই হচ্ছে না। দুই-একটি চুরি-ছিনতাই ঘটছে, তা অল্প সময়ের মধ্যেই আসামিদের পাকড়াও করা যাচ্ছে।
বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম সমাবর্তনে যোগ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, গবেষণার জন্য আমরা উৎসাহ দিচ্ছি। যত বেশি গবেষণা হবে তত বেশি বরাদ্দ দেওয়া হবে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের দত্তপাড়া এলাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রতিনিধি হিসেবে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ভারতের হিমাচল প্রদেশের শোলিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক অতুল খোসলা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খান। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম লুৎফর রহমান, আইন বিভাগের গ্র্যাজুয়েট সাইফুল ইসলাম।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে বইগুলোর মধ্যে ভুল থাকতে পারে। আমরা বলেছি কোথাও কোনো ভুল থাকলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে তা সংশোধন করব। কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের অসত্য অপপ্রচার বা গুজবে কান না দিয়ে কোন বইতে কী আছে বা নেই তার সত্যতা যাচাই করার জন্য এনসিটিবির ওয়েবসাইট দেখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
দীপু মনি বলেন, গবেষণাকে যদি বাণিজ্যিকীকরণে না নেওয়া যায়, তা যদি শিল্পকে সহায়তা না করে নতুন মান অর্জনের ক্ষেত্রে, তাহলে কিন্তু সেই গবেষণার মূল্য থাকবে না।
স্বাগত বক্তব্যে ড. সবুর খান বলেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষাব্যবস্থায় উদ্ভাবনকে অনুঘটক মনে করেছে এবং এর একাডেমিক সিস্টেমের সম্পূর্ণ ডিজিটাল রূপান্তর নিশ্চিত করেছে।
সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক অতুল খোসলা বলেন, আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী জীবন চলে না। মাঝে মাঝে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারেন এবং জীবন যথেষ্ট মসৃণ নৌযান নাও হতে পারে। আপনি কীভাবে উভয় পরিস্থিতি পরিচালনা করবেন তা আপনার সাফল্যের প্রকৃত স্তর নির্ধারণ করবে।
এবারের সমাবর্তনে ৬ হাজার ১৬৪ জন গ্র্যাজুয়েটকে ডিগ্রি দেওয়া হয়। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী কৃতিত্বপূর্ণ ফল অর্জনকারী ১২ জন গ্র্যাজুয়েটকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ‘স্বর্ণপদক’ হস্তান্তর করেন।
মাধ্যমিকে ভালো ফল করে ভালো কলেজে ভর্তি হওয়ার পরও উচ্চ মাধ্যমিকে অবনতি বা ফেল করার ঘটনা ঘটছে। চট্টগ্রামের প্রাচীন বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম কলেজ ছাড়াও সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ, সরকারি কমার্স কলেজ, সিটি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজসহ অসংখ্য সেরা কলেজে জিপিএ ৫ না পাওয়ার পাশাপাশি ফেলের চিত্র রয়েছে।
শুধু চট্টগ্রাম মহানগর নয়, চট্টগ্রাম বোর্ডের আওতাধীন প্রায় সব সেরা কলেজেই একই চিত্র দেখা যাচ্ছে।
চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, চট্টগ্রামের অন্যতম প্রাচীন বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এবার ১০১১ জন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফেল করেছে দুই জন এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮৬০ জন। অথচ এখানে ভর্তি হওয়া সব শিক্ষার্থী এসএসসিতে ‘গোল্ডেন’ জিপিএ ৫ পাওয়া।
এ নিয়ে গতকাল দুপুরে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের এখানে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে ‘গোল্ডেন’ জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাই ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এ ছাড়া মানবিক বিভাগে যারা ভর্তি হয়েছে তাদের সবাই এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছিল।’
তাহলে তাদের ফলাফলে অবনমন কেন হলো? এই প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোজাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘এসএসসি ও এইচএসসির মধ্যে সিলেবাসগত একটি পার্থক্য রয়েছে। দুই বছরে এই সিলেবাস শেষ করা তাদের জন্য কঠিন। আর এরসঙ্গে যুক্ত হয়েছে কলেজের উন্মুক্ত জীবনযাপন পদ্ধতি। ফলে যারা মনোযোগী থাকে না তাদের ফল নিম্নমুখী হয়।’
ফল নিম্নমুখী হওয়ার তালিকায় শুধু চট্টগ্রাম কলেজই নয়, রয়েছে চট্টগ্রামের সেরা কলেজগুলোর মধ্যে অন্যতম সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজও। এ কলেজ থেকে ১৬৬৭ জন পরীক্ষা দিয়ে ফেল করেছে ১৬ জন এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৩৩৪ জন, সরকারি সিটি কলেজে ১৯৭১ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেছে ৪২ জন এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ১১৬৯ জন, সরকারি কমার্স কলেজে ৮৭৩ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২ জন ফেল করেছে এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬৯৪ জন, সরকারি মহিলা কলেজে ১২৮৪ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জন ফেল করেছে এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭৬১ জন। এসব কলেজে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরাই ভর্তির সুযোগ পেয়েছিল।
এইচএসসিতে খারাপ করার বিষয়ে সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এইচএসসির ব্যাপক সিলেবাসের জন্য যে সময় পাওয়া যায় এতে এসএসসির ফলাফলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন। আর স্কুল থেকে কলেজে আসার পর শিক্ষার্থীরা অভিভাবকের কথা যেমন সঠিকভাবে মেনে চলে না তেমনিভাবে উন্মুক্ত জীবনের গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয়। যথারীতি ফলের অবনমন হয়ে থাকে।’
তবে এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষেরও দায় রয়েছে বলে জানান শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিকান্দার খান। ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক সিকান্দার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা তাদের সাবজেক্ট চয়েজে (বিষয় নির্বাচন) হয়তো ভুল করতে পারে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং অভিভাবকদেরও দায়িত্ব রয়েছে। সকলে সঠিকভাবে নজর দিলে হয়তো ফলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব।’
এবারের (২০২২ সালের) এইচএসসি পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয় গত বুধবার। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাস করেছে ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী। গত বছর এই হার ছিল ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। পাসের হার যেমন কমেছে তেমনিভাবে জিপিএ ৫ কমেছে এবার। গত বছর ১৩ হাজার ৭২০ জন জিপিএ ৫ পেলেও এবার তা ১২ হাজার ৬৭০-এ নেমে এসেছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরীতে পাসের হার ৮৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ, মহানগর বাদে জেলায় পাসের হার ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ, কক্সবাজারে পাসের হার ৭৪ দশমিক ৯২ শতাংশ, রাঙ্গামাটিতে ৭৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ, খাগড়াছড়িতে ৬৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ ও বান্দরবানে ৮১ দশমিক ২০ শতাংশ।
স্বাধীনতার পর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ৫১ বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে ৯ হাজার ৪৬৯ কোটি ডলার বা ৯৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে পাইপলাইনে পড়ে আছে ৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এ অর্থ নিয়মিত ছাড় করতে পারলে বাংলাদেশকে নতুন ঋণের জন্য হাঁসফাঁস করতে হতো না।
সবচেয়ে বেশি ঋণ নেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ খাতের জন্য; মোট ঋণের ১৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। বিদ্যুতের পর রয়েছে যোগাযোগ খাত, ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। সবচেয়ে কম ঋণ নেওয়া হয়েছে ধর্মীয় সংস্কৃতি, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা ও জননিরাপত্তা খাতে।
সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রকাশিত ‘ফ্লো অব এক্সটার্নাল রিসোর্সেস ইনটু বাংলাদেশ ২০২১-২২’ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ৯৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। বিদ্যুৎ খাতের জন্যই নেওয়া হয়েছে ১ হাজার ৮৪৩ কোটি ডলার বা ১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণ নেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতের জন্য। ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৬২১ কোটি ডলার বা ১৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি। তৃতীয় সর্বোচ্চ ঋণ নেওয়া হয়েছে সরকারি সাধারণ সেবা খাতের জন্য। ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ২৯২ কোটি ডলার বা প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ মোট বিদেশি ঋণের ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
শিক্ষা খাতের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে ৭৬৬ কোটি ডলার, স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য ৬৫৮ কোটি ডলার। এ ছাড়া হাউজিং খাতের জন্য সরকার অর্থছাড় করতে পেরেছে ৬৪৭ কোটি ডলার।
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের এ সংকটকালে বৈদেশিক ঋণ পাইপলাইনে আছে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে পাইপলাইনে থাকা ঋণের মাত্র ২২ শতাংশ অর্থছাড় করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। এ ঋণের অর্থছাড় নিয়মিত করতে পারলে নতুন করে ঋণের জন্য হাত পাততে হতো না বাংলাদেশকে।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে গত অর্থবছর পর্যন্ত ১৫৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি এসেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ৯৪ বিলিয়ন ডলার ছাড় করাতে পেরেছে।
প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতি, প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ও প্রকল্প পরিচালকদের অদক্ষতায় বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে নিয়মিত অর্থছাড় করাতে পারে না বাংলাদেশ।
ইআরডির তথ্য-বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বিশ্বব্যাংকের আইডিএ প্রোগ্রাম। স্বাধীনতার পর থেকে গত অর্থবছরের শেষ পর্যন্ত আইডিএ থেকে ২ হাজার ৪৪৩ কোটি ৬২ লাখ বা প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। গত অর্থবছরের শেষ নাগাদ এডিবি থেকে ১ হাজার ৯৯৮ কোটি ডলার বা প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় অবস্থানে আছে জাপান, এর থেকে ঋণ এসেছে ১ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার বা প্রায় সাড়ে ১৪ বিলিয়ন ডলার। চতুর্থ অবস্থানে আছে চীন, এর থেকে সরকার ৬৯৫ কোটি বা প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়েছে।
৫০ বছরে শীর্ষ ২০ উন্নয়ন সহযোগীর মধ্যে রাশিয়ার কাছ থেকে ৫৭৮ কোটি ডলার, জাতিসংঘ থেকে ২২৯ কোটি ডলার, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১২৯ কোটি ডলার, যুক্তরাজ্য থেকে ২২২ কোটি ডলার, কানাডা থেকে ৮৮ কোটি ডলার, জার্মানি থেকে ১৫৮ কোটি ডলার, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ১২২ কোটি ডলার, ভারত থেকে ১৫৪ কোটি ডলার এবং ইউনিসেফ থেকে ১৫১ কোটি ডলার ঋণ-সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ।
প্রেমের গল্প পড়তে পছন্দ করেন সরকারি তিতুমীর কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিব মোর্তাজা। বইমেলার নবম দিনে তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার এক লেখক বন্ধুর অনুরোধে মেলায় এসেছি। অনেক তরুণের বই দেখলাম। গল্পের বই আমাকে বেশি টানে। পাশাপাশি কবিতা পড়ি।’ কোন কোন লেখকের লেখা পছন্দ করেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, হুমায়ুন আজাদ, জীবনানন্দ দাশ আমার প্রিয় লেখক।
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।