
ছুটির দিনে শিশুদের উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ ছিল বইমেলা। শিশু প্রহরের পর বইমেলায় নামে জনস্রোত। গতকাল তুলনামূলক বেশি বই বিক্রিতে লেখক-প্রকাশকের মুখে ছিল হাসি। শুধু লেখক-প্রকাশক নয়, পাঠকরাও মেলায় এসে বেশ তৃপ্ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, টিএসসি থেকে মেলার গেট পর্যন্ত লম্বা লাইনে দাড়িয়েছিল দর্শনার্থী-পাঠকরা। ভেতরে গিয়েও দেখা যায়, স্টলগুলোর সামনে ভিড়। পাঠকরা বই দেখছেন, কিনছেন। ছুটির দিনেই মেলা যেন পেল তার চিরচেনা রূপ। সকালে শিশুপ্রহরে তাদের মাতিয়ে রেখেছে সিসিমপুরের হালুম, টুকটুকি, ইকরি।
এদিন ঢাকার বাইরে থেকেও অনেকে এসেছিলেন বইমেলায়। টাঙ্গাইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেলায় এসেছেন একদল শিক্ষার্থী। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে তারা প্রিয় লেখকদের বই কিনেছেন। নতুন কী বই কিনলেন জানতে চাইলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, হুমায়ূন আহমেদ, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, মাসুদ রানার বই ছাড়াও কবিতার বই কিনেছি।
অনন্যা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজকে সকাল থেকেই মেলায় প্রচুর মানুষ আসছেন। গত কয়েক দিনের তুলনায় আজকে সব থেকে বেশি বই বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
তবে শুক্রবার মেলা প্রাঙ্গণ ছিল ধূলিময়। অনেক দর্শনার্থীকে মাস্ক পরে ও নাকে হাত দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ছিটানো হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন মেলায় আগত দর্শনার্থীদের।
নতুন বই: গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার দশম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। নতুন বই এসেছে ২৬০টি। মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছিল।
শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা : অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল ৮:৩০টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে ক-শাখায় ১৯৫, খ-শাখায় ১৮৩ এবং গ-শাখায় ৬৮ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন শিল্পী হাশেম খান।
শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা : সকাল ৯:৩০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তেন শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই শতাধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন কাজী মদিনা, আন্জুমান আরা ও নূরুল হাসনাত জিলান।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ এবং জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : এস এম সুলতান’ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মলয় বালা ও সৈয়দ নিজার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুশান্তকুমার অধিকারী, ইমাম হোসেন সুমন, নাসির আলী মামুন ও নীরু শামসুন্নাহার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুনতাসীর মামুন।
আজকের সময়সূচি : আজ ২৮ মাঘ ১৪২৯/১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার। অমর একুশে বইমেলার ১১তম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
শিশুপ্রহর : আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর চলবে।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা : সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তেন শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : আশরাফ সিদ্দিকী এবং স্মরণ সাঈদ আহমদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইয়াসমিন আরা সাথী ও মাহফুজা হিলালী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন উদয়শংকর বিশ্বাস, শামস্ আল দীন, রীপা রায় ও আব্দুল হালিম প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন খুরশীদা বেগম।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জন্য ১৮তলা ভিতের ওপর ৫তলা নগর ভবন তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সিটি করপোরেশনের সরকারি কাজের চেয়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যই বেশি। এই ভবনের মাত্র কিছু অংশ সরকারি কাজের জন্য রেখে বেশির ভাগই ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো মসিকের প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এই প্রকল্পের কিছু খাতের অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর ব্যাখ্যা দিতে পারেননি মসিকের কর্মকর্তারা।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২৬৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২১৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ও মসিকের নিজস্ব অর্থায়ন ৫৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।
ডিপিপি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পে আরবরি কালচার খাতে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং সীমানাপ্রাচীর খাতে ৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। ৪০০ মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য এই প্রাক্কলন অত্যধিক বলছে পরিকল্পনা কমিশন; অর্থাৎ প্রতি মিটারে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ওয়ালের প্রতি মিটারে ব্যয় ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৫০ টাকা।
প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ৯৭ জনের জন্য ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরামর্শক নিয়োগের যৌক্তিকতা সম্পর্কে সিটি করপোরেশন জানায়, প্রকল্পের আওতায় ১৮তলা ভিতে আপাতত বেজমেন্ট এবং ৫তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হবে।
জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ভবনটি ভবিষ্যতে ১৮তলা হবে। বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় আমরা আপাতত ৫তলা করার প্রস্তাব দিয়েছি।’
৪০০ মিটারের ওয়ালে এত ব্যয়ের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশন আমাদের কিছু জিনিস রিভাইস করতে বলেছে। সেটি রিভাইস না হওয়া পর্যন্ত আমরা কিছু বলতে পারছি না।’
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, এনপিভি, বিসিআর ও আইআরআর-সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটি আর্থিকভাবে লাভজনক হলেও সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে এর সামঞ্জস্যতা নেই।
সিটি করপোরেশনের ২ দশমিক ২৯ একর নিজস্ব ভূমির ওপর ১৮তলা ভিতবিশিষ্ট প্রস্তাবিত নগর ভবনের আপাতত বেজমেন্ট এবং ৫তলা পর্যন্ত নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ভবনটি ৫তলার ওপর থেকে দুটি টাওয়ারে বিভক্ত হয়ে একটি টাওয়ার ১৮তলা পর্যন্ত এবং একটি টাওয়ার ১২তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারিত হবে। বেজমেন্ট এবং গ্রাউন্ডফ্লোরে প্রস্তাবিত ৩২৯টি গাড়ি পার্কিংয়ের মধ্যে ২০০টি পার্কিং স্পেস ভাড়া দেওয়া হবে। পেছনের টাওয়ারের ২য় থেকে ৫তলা পর্যন্ত কিছু স্পেস ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে। তা ছাড়া ৩য়তলায় প্রস্তাবিত কনফারেন্স রুম বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হবে এবং ১মতলায় ২ হাজার বর্গফুটের সেলস সেন্টার ভাড়া দেওয়া যাবে। বর্ণিত ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে আয় দেখানো হয়েছে।
১৮তলা ভিতবিশিষ্ট ভবনের ওপর ৫তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হলেও ডিপিপিতে এর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়নি, এটিকে ডিপিপিতে উল্লেখ করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
নগর ভবন ভাড়া দেওয়া প্রসঙ্গে ইউসুফ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের ভাড়া প্রসঙ্গে কিছু বিষয় সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। এটি নিয়ে আমরা আবার বসব। তবে সেলস সেন্টার ও কনফারেন্স রুম থাকবে। পরিকল্পনা কমিশন কর্মপরিবেশ নিয়ে কিছু ফিল করছে। তারা যেভাবে পরামর্শ দেবে, ঠিক সেভাবেই আমরা কাজ করব।’
পিইসি বলছে, প্রস্তাবিত নগর ভবনের নকশা পর্যালোচনাপূর্বক পুনরায় নকশা করতে হবে। পিইসিতে জানতে চাওয়া হয়, কনফারেন্স হল ভাড়া দিলে নগর ভবনের কর্মপরিবেশের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না। তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি মসিক।
ডিপিপিতে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জনবল অনুযায়ী প্রতি ফ্লোরে কক্ষসংখ্যা, কক্ষের আয়তন, কক্ষ ব্যবহারকারী কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি ফ্লোর প্ল্যানও দেওয়া হয়নি। পিইসির সভায় বলা হয়েছে, এসব বিষয় উল্লেখ করে ফ্লোর প্ল্যানসহ ধারণাগত ডিজাইন পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযোজন করতে হবে।
তা ছাড়া, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভাড়া দেওয়ার জন্য নির্ধারিত স্থানের বুকিং মানি বাবদ প্রথম বছর মোট বার্ষিক আয়ের ২৫ শতাংশ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ভাড়া বাবদ বর্তমানে যা পাওয়া যাবে বলে ধরা হয়েছে তা ৫ বছর পর পর ৫৫ শতাংশ করে বাড়বে। প্রকল্প প্রস্তাবে দেখা যায়, ২২ হাজার ১৫৯ দশমিক ১৬ বর্গমিটার নগর ভবন (নিচতলা থেকে ৫তলা) নির্মাণের জন্য ৯৬ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং নগর ভবন (সার স্ট্রাকচার) খাতে ৫ হাজার ৬০৬ দশমিক ৭৮ বর্গমিটারের জন্য ৮১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।
পিইসি সভায় বলা হয়, ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল, ১৬টি লিফট, ফায়ার ফাইটিং, এয়ার কন্ডিশন, সাব-স্টেশন, জেনারেটর ইত্যাদির জন্য যে প্রাক্কলনের প্রস্তাব করা হয়েছে তা অত্যধিক। এ ছাড়া এয়ার কন্ডিশনার, সাব-স্টেশন, জেনারেটর প্রভৃতি বর্গমিটার প্রতি ব্যয় প্রাক্কলন করা হলেও সংখ্যা ও স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করা হয়নি। এসব খাতের স্পেসিফিকেশনসহ বিস্তারিত ব্যয় পুনঃ পর্যালোচনাপূর্বক পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযোজনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পিইসি সভায় প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার যৌক্তিকতা সম্পর্কে মসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী জানান, বর্তমানে সিটি করপোরেশনকে ৮ লক্ষাধিক নাগরিকের বিভিন্ন সুবিধা দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন, ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে প্ল্যান অনুমোদন, সড়কবাতি, পানি সরবরাহ, টিকাদান, জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারিশান সনদ, বিবাহ সনদসহ অন্যান্য সেবা। তিনি জানান, পর্যাপ্ত অবকাঠামোর ব্যবস্থা না থাকায় সিটি করপোরেশনকে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মসিকের সাংগঠনিক কাঠামোতে মোট ১১টি বিভাগ নিয়ে ৬৩০ জন কর্মচারীর ব্যবস্থা রেখে সাংগঠনিক কাঠামো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং পরে অর্থ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে।
‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নগর ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের ওপর ২৫ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকঠামো বিভাগের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে সন্ধ্যা নামতেই তৎপর হয়ে ওঠে কয়েকটি পক্ষ। সুযোগ বুঝে ‘লাইনম্যান’ মুঠোফোনে সংকেত দেন ‘লাইন ক্লিয়ার’। এরপর সীমান্তের দিকে এগোতে থাকেন ‘ভারীরা’। খেতের আল ধরে হামাগুড়ি দিয়ে শূন্যরেখার কাছে পৌঁছানোর পর সংকেত দিলে ওপার থেকে মালামাল ছুড়ে দেয় ভারতীয় পাচারকারীরা। দ্রুত সেগুলো সংগ্রহ করে ফিরে আসে তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা, চোরাচালানে জড়িত ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, এক যুগ আগেও মাধবপুর সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে পাচার হওয়া মালামালের তালিকায় গরু, লবণ, চিনি, সাইকেল, জিরা, কাপড়ের মতো পণ্যের প্রাধান্য ছিল। লাভ বেশি হওয়ায় এসব পণ্যের বদলে আসছে মাদক। যার বেশির ভাগই ফেনসিডিল। এ ছাড়া আছে ইয়াবা, গাঁজা, মদ ও নেশাজাতীয় ইনজেকশন। সেই সঙ্গে আসছে ভারতীয় মোবাইল ফোন এবং কসমেটিকস। সীমান্ত দিয়ে অবাধে মাদক আসায় একদিকে জেলায় বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা, অন্যদিকে মাদক পাচার করতে গিয়ে সীমান্ত এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে।
সম্প্রতি মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের মোহনপুর, আলীনগর, কালিকাপুর, চৌমুহনী ইউনিয়নের রামনগর, কমলপুর; বহড়া ইউনিয়নের শ্রীধরপুর, কৃষ্ণপুর; শাহজাহানপুর ইউনিয়নের বনগাঁও ও জালুয়াবাদ সীমান্ত এলাকা ঘুরে মাদক চোরাচালানের এ চিত্র পাওয়া গেছে।
সীমান্তের মাদক কারবারিদের বলা হয় মহাজন। মাদক আনার জন্য মহাজন যাদের নিয়োগ করেন, তাদের বলা হয় ‘ভারী’। সীমান্তের অবস্থা জানানোর জন্য ‘লাইনম্যান’ হিসেবে কাজ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্সরা। ‘লাইন ক্লিয়ার’ অর্থ হচ্ছে মাদক আনার সুবিধাজনক সময়।
হবিগঞ্জের স্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত সীমান্তে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ মাদক চোরাকারবারিরা আটক হয়েছে।
মাধবপুর থানার সূত্রমতে, উপজেলায় মাদকদ্রব্য পাচারের সবচেয়ে বড় রোড মোহনপুর, আলীনগর, কালিকাপুর, রামনগর, শ্রীধরপুর, জালুয়াবাদ, বনগাঁও সীমান্ত। এই চার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ১০০ ব্যক্তি মাদকসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ পণ্য চোরাচালানের কাজে যুক্ত বলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তাদের এক-তৃতীয়াংশই ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী। মহাজন রয়েছেন অর্ধশতাধিক। খুচরা বিক্রেতা হিসেবে নারী মাদক কারবারির সংখ্যাও বাড়ছে।
মাধবপুর সীমান্তের হবিগঞ্জ ৫৫ বিজিবির অধীনে রয়েছে ৪টি বিওপি (মনতলা, হরিণখোলা, রাজেন্দ্রপুর, তেলিয়াপাড়া)। বাকি ধর্মঘর ইউনিয়নের (ধর্মঘর বিওপি, হরষপুর বিওপি, বড়জ্বালা বিওপি) অংশ ২৫ বিজিবির অধীনে পড়েছে। বিজিবি ৫৫ ও ২৫ ব্যাটালিয়নের অধীনে রয়েছে ৭টি বিওপি ক্যাম্প।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহনপুর ও কালিকাপুর গ্রামের এক মাদক পাচারকারী বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই তাদের সজাগ থাকতে হয়। রাতের যেকোনো সময় ‘লাইন ক্লিয়ারের’ সংকেত আসে। অনেক সময় সংকেত আসতে ভোর হয়ে যায়। সংকেত পেলেই ছোটেন সীমান্তে। আত্মরক্ষার জন্য সঙ্গে থাকে টর্চলাইট, দা। ভারতীয়দের ছুড়ে দেওয়া মাদকদ্রব্য এনে পুকুরপাড়, ঝোপঝাড়ে, পরিত্যক্ত ঘরে রেখে দেন। পরে সুবিধাজনক সময়ে মহাজনের কাছে পৌঁছান। এক রাতে ১০০ বোতল ফেনসিডিল সীমান্ত থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে নিরাপদে সরিয়ে আনলে মহাজনের কাছ থেকে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত টাকা পাওয়া যায় বলে ‘ভারী’দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তারা বলছেন, ভারীদের কাছে মাল বুঝে পাওয়ার পর সবুজ সংকেত পেলে এজেন্টের মাধ্যমে ভারতীয় মাদক কারবারির টাকা পরিশোধ করেন বাংলাদেশের কারবারিরা।
সীমান্ত দিয়ে যত মাদক আসে, তার খুব কমই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
মাধবপুর থানার ওসি আব্দুল রাজ্জাক বলেন, ‘মাধবপুর সীমান্ত এলাকায় ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত থানা পুলিশের অভিযানে ৪০৮ জন আসামিকে বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্যসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮১৮ কেজি গাঁজা, ২১ হাজার ৫৯০ পিস ইয়াবা, ১৫২ বোতল বিদেশি মদ, ১৪৭ লিটার দেশি মদ, ১৬০টি বিয়ার ক্যান ও ১ হাজার ৯৫৪ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল জব্দ করি এবং ২৯৯টি মামলা করি। মাদক নির্মূলে মাধবপুর থানা পুলিশ জিরো টলারেন্স অবস্থানে আছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘মাদকের ব্যাপারে কোনো আপস নাই।’
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, মাদক পাচারকারীরা এলাকায় অনেক প্রভাবশালী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না বলে অভিযোগ রয়েছে। মোহনপুর সীমান্তের যুবক রহিম বলেন, ‘কাকে অভিযোগ দেব? অভিযোগ দিলে উল্টো মালসহ যদি ফাঁসায়া দেয়, এই ভয়ে এলাকার কেউ জোর গলায় কোনো প্রতিবাদে যায় না।’
মাদক ব্যবসার টাকার ভাগ আইনৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছেও যায় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ধর্মঘর সীমান্ত বিটে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন বলেন, সীমান্ত এলাকায় মাদক নির্মূলে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি মাদক নির্মূলে কাজ করছে পুলিশ।
বিজিবির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন সরাইল ২৫ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ আরমান আরিফ। সীমান্ত দিয়ে মাদক আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে বিজিবি। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।’
এ ব্যাপারে কথা হয় হবিগঞ্জ ৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমদাদুল বারী খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি, আমাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ৪টি বিওপি রয়েছে। মাদকের সঙ্গে আমাদের কোনো আপস নাই। মাদক নিয়ন্ত্রণে আমাদের সদস্যরা রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বিজিবির পক্ষ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।’
সেবার বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায় কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সঙ্গে প্রথম পরিচয় হলো আমার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখন আমি। মাথার মধ্যে কবিতা লেখার ভূত। প্রতিদিন বড় একটা গাছের ডালে বসে সেই ভূত পা নাচায় আর আমি রাত্রিবেলা শহরের মাথায় ফুটে থাকা চাঁদ দেখে ভাবি, কবিতা লিখে একদিন তোমাকেও ছুঁয়ে দেব চাঁদ।
রুদ্রদাকে ক্যাম্পাসে দেখে আমার মনে হতো কবিদের যুবরাজকে দেখছি। দাড়িপূর্ণ মুখ, উজ্জ্বল দৃষ্টি আর ঝকঝকে হাসিতে মোড়া এমন কবির অবয়ব আজকাল অনুপস্থিত। মাঝেমধ্যে মনে হয়, এ ঢাকা শহরটা একদা কবিদের শহর ছিল। চায়ের দোকান, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বইমেলা, পত্রিকা অফিসে সাহিত্য সম্পাদকের দপ্তর, কবিতা উৎসব থেকে মিছিল কোথায় কবিরা নেই তখন! শহরের যেকোনো নরম নিভৃতিকেও চমকে দিতে পারত তখন কবিরা।
রুদ্রদার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়ের পর্দা উঠেছিল অমর একুশে বইমেলায়। পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল সিনিয়র বন্ধু প্রয়াত সাংবাদিক, গল্পকার মিনার মাহমুদ। তারা বন্ধু ছিলেন। আজও মনে পড়ে, মিনার ভাই খুব ক্যাজুয়ালি পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার স্বভাবসুলভ শ্লেষের হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলেছিলেন ও কবিতা করে। মিনার ভাই প্রকাশ্যে কবিদের প্রতি সবসময় টিপ্পনী কাটতেন এ কথাটা বলে। তখন একরোখা আর রাগী তরুণ আমি প্রথম পরিচয়েই রুদ্রদার তুমি সম্বোধনে ক্ষিপ্ত হয়েছিলাম। ভাবটা এমন ছিল, দুজনই তো কবি; প্রথম পরিচয়ে তুমি সম্বোধন করার কী আছে! মনে আছে আজও, রুদ্রদাকে বলেছিলাম, ‘আপনার সঙ্গে তো আমার এমন কোনো ঘনিষ্ঠতা নেই যে তুমি বলবেন আমাকে।’ সেদিন খুব বিস্মিত হয়ে হেসে ফেলেছিল রুদ্রদা। তার ঝকঝকে হাসি ছড়িয়ে পড়েছিল ফেব্রুয়ারির মরে আসা বিকেলে বাংলা একাডেমির মূল ভবনসংলগ্ন বইমেলার মাঠে। পরিচয়ের প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে আমাদের সম্পর্ক তারপর অনেকটা পথ হেঁটেছিল হাকিম চত্বর হয়ে মেডিকেল কলেজের মোড় ঘুরে নিমতলীর দিকে, নারিন্দা সুইপার কলোনির ম্লান বিকেলে অথবা তার প্রিয় পানশালা সাকুরায়। তার পাঞ্জাবির পকেটে বহুদিন হাসির গল্প হয়েই ছিল ঘটনাটা। রুদ্রদা ক্ষ্যাপাতো আমাকে মাঝেমধ্যে। তখন একবারের জন্য মনে হয়নি, ভোরবেলা কবি তারিক সুজাতের টেলিফোন আমাকে ডেকে তুলে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দেবে রুদ্রদার নিথর দেহের সামনে!
খুব বেশি সময় আগের কথা নয় কিন্তু। বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজের চারপাশ ঘিরে পর্দা উঠত অমর একুশে বইমেলার। মাঝখানে শুকিয়ে যাওয়া একটা পুকুর ঘিরে প্রকাশকদের স্টল। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে উতলা হতো বাতাসও। তখন বইমেলায় কত ঘটনা যে ঘটত! একবার শুনতে পেলাম, প্রাবন্ধিক আহমদ ছফা একটা ছুরি নিয়ে ঘুরছেন একজন কবিকে ছুরি মারবেন বলে। সেই কবির অপরাধ তার কবিতা হয় না। সেই কবিও প্রাণভয়ে পলাতক মেলা থেকে। পরে ছফা ভাইয়ের কাছেই জানা গেল, সেই ছুরি আসলে নেইল কাটারের সঙ্গে সংযুক্ত। কখনো কখনো ছফা ভাই অন্যদের সঙ্গে ভীষণ রসিকতা করতেন!
প্রয়াত কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার একদা বাংলা একাডেমির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। বইমেলায় প্রতিদিন বিকেল হতো মাইকে রশীদ ভাইয়ের কণ্ঠ শুনে। মেলায় প্রকাশিত হওয়া নতুন বইয়ের পরিচিতি দিতেন তিনি। আমরা নিয়মিত রশীদ হায়দার ভাইয়ের ভারী কণ্ঠস্বর নকল করে কথা বলতাম। মেলা প্রাঙ্গণে গোপন ধূমপায়ীদের রশীদ ভাই অনুসরণ করতেন গোয়েন্দা পুলিশের মতো। একাডেমির আনাচে-কানাচে ঝড়ের মতো আবির্ভূত রশীদ ভাইকে দেখে কতদিন পালিয়ে গেছি হাতের সদ্য প্রজ¦লিত সিগারেট ফেলে!
বইমেলায় সন্ধ্যা থেকেই প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক আর কবিদের আগমন ঘটত। চাপা জিন্সের প্যান্ট আর উজ্জ্বল রঙের টি-শার্ট পরিহিত রফিক আজাদ আসতেন হেলতে-দুলতে। মহাদেব সাহা যথারীতি পাজামা-পাঞ্জাবিতে শোভিত। কবি হেলাল হাফিজকে দেখতাম কাঁধে কাপড়ের ব্যাগ ঝুলিয়ে মগ্ন হয়ে হেঁটে যেতে। তখন বইমেলায় নিয়মিত আসতেন সত্তর এবং আশির দশকের উজ্জ্বল কবিদের দল। জাহিদ হায়দার, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, কামাল চৌধুরী, তুষার দাশ, ফরিদ কবির, মাহমুদ শফিক, মুজিবুল হক কবির, মোহন রায়হান প্রমুখ। কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের, গল্পকার ফারুক মঈনুদ্দিন, ইসহাক খান, মিনার মাহমুদ সন্ধ্যার পর নিয়মিত আড্ডা দিতেন মেলায়। ছোট ছোট জটলায় চাল ভাজার মতো মুচমুচে আড্ডার স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে আমাকে। মিনার মাহমুদ সেই আড্ডার নাম দিয়েছিলেন ‘খোঁচাখুঁচি’। সাহিত্য, রাজনীতি, ভালো লেখা, সিনেমা, সমাজ অর্থনীতি আর তীব্র পরচর্চা ঝড় তুলত। কোনো কোনো দিন চাঁদা তুলে ‘কঠোর পানীয়’ কিনে গোপনে তা গলাধঃকরণ করা হতো। মনে পড়ে, সেই উল্টোপাল্টা আলোর স্রোতে ভাসা সন্ধ্যাগুলোতে নিয়মিত সঙ্গ দিতেন সাংবাদিক খায়রুল আনোয়ার, সৈয়দ শহীদ।
প্রয়াত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ আশির দশকের মাঝামাঝি মেলায় এসে পাঠকদের বইতে স্বাক্ষর দিতে শুরু করলেন। একবার তার স্বাক্ষর নিতে উৎসাহী পাঠকদের ভিড়ের চাপে প্রতীক প্রকাশনীর স্টল প্রায় ভেঙে পড়েছিল। কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলনকে বিকেল থেকে দেখা যেত স্টলে বসে একমনে স্বাক্ষর দিয়ে চলেছেন পাঠকদের। স্বাক্ষর নিতে আসা পাঠকদের লম্বা লাইন সামলাতে তখন হিমশিম খেতে হতো ভলান্টিয়ারদের। এরকম দৃশ্য দেখে প্রয়াত ভাষাবিজ্ঞানী, কবি ড. হুমায়ুন আজাদের শ্লেষযুক্ত তীব্র উক্তিগুলো আজও যেন ফেব্রুয়ারির গা ছম ছম করা হাওয়ায় হুল ফোটায়।
তখন বইমেলার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বাইরের ফুটপাত, টিএসসির মোড় আর শাহবাগে আড্ডাগুলো সম্প্রসারিত হতো। পাঠকরা বই কিনে বাড়ি ফিরতেন আর আমাদের মতো কিছু লেখক হতে চাওয়া তরুণ সেই আড্ডাগুলোর ভেতরে নিজেদের আরও কিছুক্ষণ গুঁজে দিতে চাইতাম। রাত গভীর হতো। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গভীর অন্ধকার থেকে ভেসে আসত বনজ ঘ্রাণ। শীত করত কারও কারও। ঢাকা শহরের রাজপথে কমে যেত যানবাহন। বিচ্ছিন্ন রিকশা দাঁড়িয়ে থাকত বইমেলা থেকে শেষ সওয়ারি ধরার অপেক্ষায়।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শিরিনা খাতুনের প্রাইভেট কারের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের শৈলকুপার মদনডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। উম্মে রুকাইয়া (১১) নামে ওই স্কুলছাত্রীকে ধাক্কা দেওয়ার পর তার প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা না করে প্রাইভেট কারটি নিয়ে চালক ও শিক্ষক শিরিনা খাতুন দ্রুত পালিয়ে যান। এ শিক্ষকের দাবি, গাড়ির গতি বেশি থাকায় চালক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি। বিষয়টি তাকে মর্মাহত করেছে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে আরও আটজনের। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে প্রায় ৫০ জন। এর মধ্যে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ট্রাক্টরে পিষ্ট হয়ে কৃষি কর্মকর্তা, জয়পুরহাটের কালাইয়ে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী, নীলফামারীতে পিকআপের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে স্কুলের পিকনিকের বাস খাদে পড়ে দুজন, জামালপুরে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে পিকআপ ভ্যানের চালক, সাতক্ষীরায় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে কিশোর এবং খুলনায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন।
শৈলকুপায় নিহত উম্মে রুকাইয়া ত্রিবেনী ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মনোয়ার হোসেনের মেয়ে। সে শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
এলাকাবাসী জানায়, দুপুর ১২টার দিকে রুকাইয়া তার সহপাঠীর সঙ্গে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে একটি দ্রুতগামী প্রাইভেট কার তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রুকাইয়াকে। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে সন্ধ্যায় মারা যায়।
নিহতের চাচা ফিরোজ বলেন, ‘স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতির গাড়ি আমার ভাতিজিকে ধাক্কা দেয়। পরে গাড়িটিকে গাড়াগঞ্জ বাজারে আটক করা হয়। কিছুক্ষণ কথা বলার পর তিনি (শিরিনা খাতুন) গাড়ি নিয়ে দ্রুত চলে যান। রুকাইয়াকে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিরিনা খাতুন বলেন, ‘ঘটনাটি অনাকাক্সিক্ষত ছিল। গাড়ির গতি বেশি থাকায় ড্রাইভার কন্ট্রোল করতে পারেনি। বিষয়টি আমাকে মর্মাহত করেছে।’
শৈলকুপা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি সত্য। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।’
কোটচাঁদপুরে ট্রাক্টরে পিষ্ট কৃষি কর্মকর্তা : ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের তালসার এলাকায় ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক কৃষি কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে তালসার সড়কের ফুলবাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত এস কে লতিফুল কবির কোটচাঁদপুরের কুশনা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের বাদপুকুর গ্রামের তের আলীর ছেলে।
কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহাসীন আলী জানান, কৃষিমেলা উপলক্ষে উপজেলা অফিসে সভা ছিল। সভা শেষে মোটরসাইকেলে নিজের বাড়ি বাদপুকুরে ফিরছিলেন। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা স্থানীয় একটি ইটভাটার ট্রাক্টর তাকে চাপা দেয়। পরে এলাকার লোকজন উদ্ধার করে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জয়পুরহাটে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর মৃত্যু : জয়পুরহাটের কালাইয়ে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নজরুল ইসলাম (৭২) নামে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। ওই ঘটনায় মোটরসাইকেলটির চালক গুরুতর আহত হন। গতকাল দুপুরে জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কের হাজিপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নজরুল ইসলাম কালাই উপজেলার হাজিপাড়া গ্রামের মৃত নইমুদ্দিনের ছেলে।
গুরুতর আহত মোটরসাইকেল চালক শান্ত ইসলাম (২০) জেলার আক্কেলপুর উপজেলার ভান্ডারিপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ও পুলিশ জানায়, শান্ত মোটরসাইকেল চালিয়ে জয়পুরহাট থেকে বগুড়ার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে হাজিপাড়া মোড়ে রাস্তা পারাপারের সময় নজরুল ইসলামকে ধাক্কা দেয় ওই মোটরসাইকেলটি। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনায় দুর্ঘটনাস্থল থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা ছিনতাই : নীলফামারীতে পিকআপের ধাক্কায় তানভীর আহমেদ জনি (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ সময় কাজী আবদুর রাজ্জাক নামে আরও এক মোটরসাইকেল আরোহী আহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই এই নিহত ও আহতের কাছে থাকা সাড়ে ৯ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কের কাদিখোল এলাকার ইকু জুট মিলের ৫০০ গজ দূরে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, নিহত তানভীর আহমেদ জনি ইকু জুট মিলের হিসাবরক্ষক ও পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরের বাঘাচড়া গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে। আর আহত আবদুর রাজ্জাক (৩৮) ইকু জুট মিলের কম্পিউটার অপারেটর। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ভর্তি করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ইকু জুট মিলের স্বত্বাধিকারী সিদ্দিকুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, মিলের হিসাবরক্ষক জনি ও কম্পিউটার অপারেটর রাজ্জাক রাত ৯টার দিকে সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়ায় ইকু গ্রুপের অফিস থেকে ব্যাংক থেকে তুলে আনা মিলের কর্মচারীদের সাপ্তাহিক বেতনের সাড়ে ৯ লাখ টাকা একটি চটের বস্তায় ভরে মোটরসাইকেলে মিলের উদ্দেশে রওনা হন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইকু জুট মিলের ৫০০ গজ অদূরে পৌঁছলে পেছন দিক থেকে একটি পিকআপ ভ্যান তাদের মোটরসাইকেলে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান জনি। গুরুতর আহত হন রাজ্জাক। তখন পিকআপের পেছনে থাকা অন্য একটি মোটরসাইকেলে থাকা ছিনতাইকারীরা ওই টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়।
নীলফামারী সদর থানার ওসি আবদুর রউপ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পিকআপটি জব্দ করলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের পিকনিকের বাস খাদে : যশোরের বাঘারপাড়ার বাকড়ী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পিকনিকের বাস দুর্ঘটনায় পড়ে দুজন নিহত ও ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। পিকনিক শেষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে ফেরার পথে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত প্রায় ২০ জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে মারা যান বিদ্যালয়টির ল্যাব সহকারী সুদীপ্ত বিশ্বাস (৩৫)। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে নিহত হন বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস (৪৫)।
বাকড়ী বহুমুখী বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিশ্বজিৎ কুমার পাল জানান, তারা বৃহস্পতিবার সকালে তিনটি বাসে করে ১৫০ জন টুঙ্গিপাড়ায় পিকনিকে যান। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সদস্যরা ছিলেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পিকনিক শেষে ফেরার পথে ভাটিয়াপাড়া মোড়ে তাদের পিকনিকের বাসগুলোর একটি অন্য একটি বাসকে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। বাসটিতে ৫০ জন ছিলেন।
জামালপুরে বাস-পিকআপ ভ্যান সংঘর্ষে চালকের মৃত্যু : জামালপুর সদর উপজেলায় বাস-পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পিকআপ ভ্যানটির চালক মির্জা তৌফিক তানভির সৌরভ (৩৪) নিহত হন। এ সময় বাসের দুই যাত্রী আহত হয়েছেন। গতকাল সকালে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শরিফপুর ইউনিয়নের জয়রামপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সৌরভ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কিষ্টপুর গ্রামের মির্জা তপির ছেলে।
জামালপুর সদর থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ জানান, সকালে জামালপুর থেকে ঢাকাগামী রাজীব পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পিকআপ ভ্যানের চালক সৌরভ ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে।
সাতক্ষীরায় মোটরসাইকেল আরোহী এক কিশোর নিহত : সাতক্ষীরার গোপীনাথপুরে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক কিশোর নিহত ও দুই যুবক আহত হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ মো. ফকরুল আলম খান জানান, গতকাল দুপুরে সাতক্ষীরা থেকে খুলনার দিকে যাওয়ার সময় গোপীনাথপুর ঋষিপল্লীর সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে শেখ জুবায়ের হোসেন (১৫) নামে এক কিশোর ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সে সাতক্ষীরার ইটাগাছা গ্রামের শেখ কবিরুজ্জামানের ছেলে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন রশীদ ও তরিকুল নামে দুই যুবক।
খুলনায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত : খুলনায় ট্রাকের ধাক্কায় মিঠুন চৌধুরী নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে নগরীর রূপসা বাইপাস সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মিঠুন দীঘলিয়া উপজেলার লাখোহাটি গ্রামের নাসিম চৌধুরীর ছেলে। এ ঘটনায় একই এলাকার রেজাউল শেখের ছেলে মো. মামুন গুরুতর আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মোটরসাইকেলে মিঠুন ও মামুন আড়ংঘাটা সড়ক দিয়ে বাইপাস রোডে ওঠার চেষ্টা করে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামীর একটি ট্রাক মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে তারা রাস্তার ওপর ছিটকে পড়ে মাথায় আঘাত পান। আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিঠুনের মৃত্যু হয়। পরে আহত মামুনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
* প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন ইবি এবং সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর পূর্ণ হলো আজ শনিবার। আলোচিত এই হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় একের পর এক তদন্ত সংস্থা আর তদন্ত কর্মকর্তা বদলেছে। তবে রহস্যের জট খোলেনি। এখনো আসামি শনাক্তকরণ, জব্দ করা আলামত পরীক্ষা ও নিহতদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের পর্যায়েই আটকে আছে তদন্ত। যদিও র্যাবের পক্ষ থেকে বরাবরের মতো দাবি করা হচ্ছে, মামলার দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু অতীতের মতোই এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিটটি। উল্টো ৯৫ বার পেছানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ।
এমন পরিস্থিতিতে নিহতদের স্বজনরা বলছেন, দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা এ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ৪৮ ঘণ্টা ১১ বছরেও শেষ হলো না। আর কবে খুনিরা ধরা পড়বে? কবে রহস্যের জট খুলবে?
রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ৫৮/এ/২ বাড়ির পঞ্চমতলার এ-৪ ফ্ল্যাটে ১১ বছর আগে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার এক কর্মকর্তা। ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর। তবে এর দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাবকে। সেই থেকে ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, ‘১১ বছরেও কোনো অগ্রগতি নেই, আর কবে হবে। কোনো অগ্রগতি হবে না। আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছি। শুধু এতটুকু বলতে পারি, তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে কাজ করছেন না। আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছেন। অথচ প্রতি বছর তারা নিয়মমাফিকভাবে বলে আসছেন, দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই নয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আদালতও যেখানে বারবার সময় দিচ্ছেন, সেখানে আমাদের আর কী বলার আছে! তবে জট খোলার চেষ্টা না করলে জট খুলবে না, এটাই স্বাভাবিক।’
এ ব্যাপারে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যার বিচার যে পাইনি তা নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। এ বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বিচারের দাবি জানিয়ে যাবে। বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে ডিআরইউ নেতারা স্মারকলিপি দিয়েছে।’
এদিকে সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল শুক্রবার সকালে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে সাংবাদিকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম, বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, ডিইউজের সিনিয়র সহসভাপতি এমএ কুদ্দুস, সাংগঠনিক সম্পাদক জিহাদুর রহমান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জামিউল আহসান সিপু, মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রাশেদ আহমেদ, বার্তা সম্পাদক শাহ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ প্রমুখ।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত কোনো হত্যার ঘটনায় করা মামলার তদন্তে নেমে তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ খোঁজেন। এরপর আসামি শনাক্তকরণের চেষ্টা করেন, কোনো ধরনের ক্লু পেতে জব্দ করা আলামত পরীক্ষা ও হত্যার শিকার ব্যক্তির খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা করেন। এসব একটি মামলা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ের কার্যক্রম, ১১ বছর তদন্তের পরও সাগর-রুনি হত্যা মামলা ঠিক এমন প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। এখনো আসামি শনাক্তকরণ, জব্দ করা আলামত পরীক্ষা ও নিহতদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের চেষ্টায় রয়েছে তদন্ত সংস্থা।
র্যাব মামলার তদন্তে নেমে গ্রেপ্তার আট আসামি, নিহত দুজন এবং তাদের স্বজন মিলে ২১ জনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) পরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো হাতে পেয়েছে র্যাব। সেই প্রতিবেদন ও অপরাধচিত্রের প্রতিবেদন (ক্রাইম সিন রিপোর্ট) পর্যালোচনায় দুজনের ডিএনএর পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল পাওয়া গেছে। তবে এসব পরীক্ষায় সন্দেহভাজন খুনি শনাক্ত হয়নি। এ মামলায় গ্রেপ্তার আটজনের মধ্যে পাঁচজন রফিকুল, বকুল, সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুণ মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র রায় হত্যার সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তার দেখানো হয় সাগর-রুনির পারিবারিক বন্ধু তানভীর এবং তাদের বাসার নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও হুমায়ুন কবীরকে। সবাই হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন।
আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘মামলাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এ মামলা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। এর জন্য বিদেশে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নিয়েছি। বিদেশে ডিএনএ টেস্টের সহযোগিতা নিয়েছি। এখন পর্যন্ত তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করছি। প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করার জন্য একটু সময় লাগছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরোর কাছে একটি অপরাধী চক্রের প্রধানের গ্রেপ্তারে অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রিও ডি জেনেইরোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সাও গনসালো শহরের শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা সালগেইরোতে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী।
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পারার মাদক-নেতা অভিযুক্ত লিওনার্দো কোস্তা আরাউজো সালগেইরোতে লুকিয়ে আছে- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে আরাউজোও আছেন। পারার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় তার হাত আছে বলেও অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, আরাউজোকে গ্রেপ্তারে বৃহস্পতিবার চালানো এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হয়।
রিও শহরের পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। শহরটির গভর্নর ক্লডিও কাস্টো সোশালে এক পোস্টে লেখেন, আমরা আমাদের এই শহরকে অন্য কোনো এলাকা থেকে আসা দুর্বৃত্তদের অভয়াশ্রম হতে দেব না।
এ ঘটনায় অপরাধী চক্রের স্থানীয় তিনজন সোর্সও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
সার কারখানা ও বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করে প্রয়োজনে সিএনজি স্টেশন বন্ধ রেখে আমদানিকৃত গ্যাসের ওপর ভর দিয়ে রমজান এবং গ্রীষ্মে গ্যাসের চাহিদা পূরণের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এরপরও গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটে ভুগতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তাদের মতে, এভাবে গ্যাস বন্ধ কিংবা সীমিত করে জোড়াতালি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টার ফলে রমজান এবং গ্রীষ্মে গ্রাহকরা যেমন ঠিকমতো গ্যাস পাবে না, তেমনি গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়বে। সার কারখানায় গ্যাসের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কৃষিতে।
গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে বাড়তে এপ্রিল-জুন পর্যন্ত সর্বোচ্চ হয়। রমজান, সেচ মৌসুম ও গ্রীষ্মকালে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে পরিকল্পনা করেছে পেট্রোবাংলা। পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ২৭০০ থেকে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রে থেকে প্রায় ২২০০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং বাকি গ্যাসের চাহিদা পূরণ হবে আমদানিকৃত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি দিয়ে।
বর্তমানে দেশে দৈনিক প্রায় ২৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২১৮০ মিলিয়ন ঘনফুট দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে এবং বাকি গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও খোলা বাজার থেকে আমদানিকৃত এলএনজির মাধ্যমে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বর্তমানে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৭০০ থেকে ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর বিপরীতে ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট সরবরাহ করা হলে ঘাটতি থাকবে। যার প্রভাব পড়বে শিল্পকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অন্যান্য খাতে।’
তিনি বলেন, ‘আমদানিকৃত এলএনজির ওপর নির্ভর করে যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে তা ভুল। কারণ কদিন আগেও বিশ^বাজারে এলএনজির দাম ৩০ ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। এখন সেটা অনেক কমলেও যেকোনো পরিস্থিতিতে হঠাৎ করেই দাম বাড়তে পারে। তখন গ্যাসের সংকট আরও বাড়বে।’
‘সংকটের মুখে পড়ে সরকার ২০২৫ সাল নাগাদ ৪৬টি কূপ খননের উদ্যোগ নিয়েছে। এটা প্রশংসনীয়। আরও আগেই এ কাজ করা দরকার ছিল। অন্তত ২০১৮ সাল থেকে যখন আমদানি শুরু হয় তখন থেকেও যদি অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হতো তাহলে এতদিনে অনেক গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আজকের এ ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না’ যোগ করেন তিনি।
বদরূল ইমাম বলেন, এলএনজি আমদানিতে যতবেশি নজর দেওয়া হয়েছে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ততটায় অবহেলিত রয়েছে। প্রতি বছর অন্তত ৫ থেকে ৭টা কূপ খনন করা গেলে সংকট অনেকটাই কাটানো সম্ভব হবে।
সূত্রমতে, বিশ^বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশ কিছুদিন ধরে খোলাবাজার থেকে এলএনজি আমদানি বন্ধ ছিল। দাম কমতে থাকায় গত ফেব্রুয়ারিতে খোলাবাজার থেকে প্রতিদিন ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আনা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে গড়ে প্রতিদিন ২৬০০ থেকে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। চলতি মাস থেকে এলএনজি সরবরাহ বৃদ্ধি করায় গ্যাসের সরবরাহও বেড়ে গেছে। এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট, মে মাসে ৩০০ মিলিয়ন এবং জুনে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি খোলাবাজার থেকে আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ সময়ে দেশীয় গ্যাস এবং দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও খোলাবাজার থেকে আমদানিকৃত এলএনজির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে পেট্রোবাংলার। তবে এর মধ্যে যদি কোনো কারণে খোলাবাজারে এলএনজির দাম বেড়ে যায় তাহলে গ্যাস সরবরাহ আরও কমবে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, গ্যাস সরবরাহে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পকারখানায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ জন্য বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে গেলে বাসাবাড়ি ও সার কারখানায় গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে গ্যাসের চাপ কমানো অথবা সরবরাহ বন্ধ করা হবে দিনের কিছু সময়ের জন্য। বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদার সময় প্রয়োজনে সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখা হবে। তবে রমজানে সাহরি ও ইফতার তৈরিতে প্রয়োজনীয় গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে মানুষের ভোগান্তি অনেক বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া তারাবি নামাজের সময় বিদ্যুতের লোডশেডিং হলে সেই ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে।
এ প্রসঙ্গে বদরূল ইমাম বলেন, ‘এটা একটা জোড়াতালির পরিকল্পনা। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়বে। বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ সীমিত করা নাগরিক হিসেবে সমর্থনযোগ্য নয়। এতে এলপিজির দামও আরও বেড়ে যাবে। মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে।
বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, গত বছর বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ উৎপাদনে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয়েছে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এ বছর বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। আমদানিকৃত ও দেশীয় বিদ্যুতের মাধ্যমে এ চাহিদা পূরণ করা হবে। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফার্নেস অয়েল ও অন্যান্য জ¦ালানির পাশাপাশি প্রতিদিন অন্তত ১৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১২০০ থেকে ১৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের জোগান দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে পেট্রোবাংলার। ফলে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা দুরূহ হয়ে যাবে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। অন্যদিকে ডলার সংকটের কারণে কয়লা ও অন্যান্য জ¦ালানি আমদানি ব্যাহত হওয়ায় অন্যান্য কেন্দ্রগুলো থেকেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে কি না, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। সবমিলে এ বছর অন্তত দুই থেকে আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম মনে করেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি সরবরাহ করতে সরকারের ডলার খরচের যে সক্ষমতা দরকার তা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। জ্বালানি খাতে সরকারের ভুলনীতি আর অন্যায্য ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয়ের কারণে দাম বেড়েই চলেছে। সেই ব্যয় মেটাতে এখন বিদ্যুৎ জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি করে ভর্তুকি সমন্বয় করতে চাইছে। এ পরিস্থিতিতে উচ্চদামে বিদেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করে চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করা অসম্ভব ব্যাপার।’
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।