
ছুটির দিনে শিশুদের উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ ছিল বইমেলা। শিশু প্রহরের পর বইমেলায় নামে জনস্রোত। গতকাল তুলনামূলক বেশি বই বিক্রিতে লেখক-প্রকাশকের মুখে ছিল হাসি। শুধু লেখক-প্রকাশক নয়, পাঠকরাও মেলায় এসে বেশ তৃপ্ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, টিএসসি থেকে মেলার গেট পর্যন্ত লম্বা লাইনে দাড়িয়েছিল দর্শনার্থী-পাঠকরা। ভেতরে গিয়েও দেখা যায়, স্টলগুলোর সামনে ভিড়। পাঠকরা বই দেখছেন, কিনছেন। ছুটির দিনেই মেলা যেন পেল তার চিরচেনা রূপ। সকালে শিশুপ্রহরে তাদের মাতিয়ে রেখেছে সিসিমপুরের হালুম, টুকটুকি, ইকরি।
এদিন ঢাকার বাইরে থেকেও অনেকে এসেছিলেন বইমেলায়। টাঙ্গাইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেলায় এসেছেন একদল শিক্ষার্থী। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে তারা প্রিয় লেখকদের বই কিনেছেন। নতুন কী বই কিনলেন জানতে চাইলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, হুমায়ূন আহমেদ, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, মাসুদ রানার বই ছাড়াও কবিতার বই কিনেছি।
অনন্যা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজকে সকাল থেকেই মেলায় প্রচুর মানুষ আসছেন। গত কয়েক দিনের তুলনায় আজকে সব থেকে বেশি বই বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
তবে শুক্রবার মেলা প্রাঙ্গণ ছিল ধূলিময়। অনেক দর্শনার্থীকে মাস্ক পরে ও নাকে হাত দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ছিটানো হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন মেলায় আগত দর্শনার্থীদের।
নতুন বই: গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার দশম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। নতুন বই এসেছে ২৬০টি। মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছিল।
শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা : অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল ৮:৩০টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে ক-শাখায় ১৯৫, খ-শাখায় ১৮৩ এবং গ-শাখায় ৬৮ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন শিল্পী হাশেম খান।
শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা : সকাল ৯:৩০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তেন শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই শতাধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন কাজী মদিনা, আন্জুমান আরা ও নূরুল হাসনাত জিলান।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ এবং জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : এস এম সুলতান’ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মলয় বালা ও সৈয়দ নিজার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুশান্তকুমার অধিকারী, ইমাম হোসেন সুমন, নাসির আলী মামুন ও নীরু শামসুন্নাহার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুনতাসীর মামুন।
আজকের সময়সূচি : আজ ২৮ মাঘ ১৪২৯/১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার। অমর একুশে বইমেলার ১১তম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
শিশুপ্রহর : আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর চলবে।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা : সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তেন শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : আশরাফ সিদ্দিকী এবং স্মরণ সাঈদ আহমদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইয়াসমিন আরা সাথী ও মাহফুজা হিলালী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন উদয়শংকর বিশ্বাস, শামস্ আল দীন, রীপা রায় ও আব্দুল হালিম প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন খুরশীদা বেগম।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জন্য ১৮তলা ভিতের ওপর ৫তলা নগর ভবন তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সিটি করপোরেশনের সরকারি কাজের চেয়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যই বেশি। এই ভবনের মাত্র কিছু অংশ সরকারি কাজের জন্য রেখে বেশির ভাগই ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো মসিকের প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এই প্রকল্পের কিছু খাতের অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর ব্যাখ্যা দিতে পারেননি মসিকের কর্মকর্তারা।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২৬৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২১৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ও মসিকের নিজস্ব অর্থায়ন ৫৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।
ডিপিপি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পে আরবরি কালচার খাতে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং সীমানাপ্রাচীর খাতে ৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। ৪০০ মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য এই প্রাক্কলন অত্যধিক বলছে পরিকল্পনা কমিশন; অর্থাৎ প্রতি মিটারে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ওয়ালের প্রতি মিটারে ব্যয় ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৫০ টাকা।
প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ৯৭ জনের জন্য ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরামর্শক নিয়োগের যৌক্তিকতা সম্পর্কে সিটি করপোরেশন জানায়, প্রকল্পের আওতায় ১৮তলা ভিতে আপাতত বেজমেন্ট এবং ৫তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হবে।
জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ভবনটি ভবিষ্যতে ১৮তলা হবে। বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় আমরা আপাতত ৫তলা করার প্রস্তাব দিয়েছি।’
৪০০ মিটারের ওয়ালে এত ব্যয়ের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশন আমাদের কিছু জিনিস রিভাইস করতে বলেছে। সেটি রিভাইস না হওয়া পর্যন্ত আমরা কিছু বলতে পারছি না।’
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, এনপিভি, বিসিআর ও আইআরআর-সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটি আর্থিকভাবে লাভজনক হলেও সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে এর সামঞ্জস্যতা নেই।
সিটি করপোরেশনের ২ দশমিক ২৯ একর নিজস্ব ভূমির ওপর ১৮তলা ভিতবিশিষ্ট প্রস্তাবিত নগর ভবনের আপাতত বেজমেন্ট এবং ৫তলা পর্যন্ত নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ভবনটি ৫তলার ওপর থেকে দুটি টাওয়ারে বিভক্ত হয়ে একটি টাওয়ার ১৮তলা পর্যন্ত এবং একটি টাওয়ার ১২তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারিত হবে। বেজমেন্ট এবং গ্রাউন্ডফ্লোরে প্রস্তাবিত ৩২৯টি গাড়ি পার্কিংয়ের মধ্যে ২০০টি পার্কিং স্পেস ভাড়া দেওয়া হবে। পেছনের টাওয়ারের ২য় থেকে ৫তলা পর্যন্ত কিছু স্পেস ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে। তা ছাড়া ৩য়তলায় প্রস্তাবিত কনফারেন্স রুম বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হবে এবং ১মতলায় ২ হাজার বর্গফুটের সেলস সেন্টার ভাড়া দেওয়া যাবে। বর্ণিত ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে আয় দেখানো হয়েছে।
১৮তলা ভিতবিশিষ্ট ভবনের ওপর ৫তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হলেও ডিপিপিতে এর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়নি, এটিকে ডিপিপিতে উল্লেখ করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
নগর ভবন ভাড়া দেওয়া প্রসঙ্গে ইউসুফ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের ভাড়া প্রসঙ্গে কিছু বিষয় সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। এটি নিয়ে আমরা আবার বসব। তবে সেলস সেন্টার ও কনফারেন্স রুম থাকবে। পরিকল্পনা কমিশন কর্মপরিবেশ নিয়ে কিছু ফিল করছে। তারা যেভাবে পরামর্শ দেবে, ঠিক সেভাবেই আমরা কাজ করব।’
পিইসি বলছে, প্রস্তাবিত নগর ভবনের নকশা পর্যালোচনাপূর্বক পুনরায় নকশা করতে হবে। পিইসিতে জানতে চাওয়া হয়, কনফারেন্স হল ভাড়া দিলে নগর ভবনের কর্মপরিবেশের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না। তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি মসিক।
ডিপিপিতে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জনবল অনুযায়ী প্রতি ফ্লোরে কক্ষসংখ্যা, কক্ষের আয়তন, কক্ষ ব্যবহারকারী কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি ফ্লোর প্ল্যানও দেওয়া হয়নি। পিইসির সভায় বলা হয়েছে, এসব বিষয় উল্লেখ করে ফ্লোর প্ল্যানসহ ধারণাগত ডিজাইন পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযোজন করতে হবে।
তা ছাড়া, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভাড়া দেওয়ার জন্য নির্ধারিত স্থানের বুকিং মানি বাবদ প্রথম বছর মোট বার্ষিক আয়ের ২৫ শতাংশ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ভাড়া বাবদ বর্তমানে যা পাওয়া যাবে বলে ধরা হয়েছে তা ৫ বছর পর পর ৫৫ শতাংশ করে বাড়বে। প্রকল্প প্রস্তাবে দেখা যায়, ২২ হাজার ১৫৯ দশমিক ১৬ বর্গমিটার নগর ভবন (নিচতলা থেকে ৫তলা) নির্মাণের জন্য ৯৬ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং নগর ভবন (সার স্ট্রাকচার) খাতে ৫ হাজার ৬০৬ দশমিক ৭৮ বর্গমিটারের জন্য ৮১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।
পিইসি সভায় বলা হয়, ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল, ১৬টি লিফট, ফায়ার ফাইটিং, এয়ার কন্ডিশন, সাব-স্টেশন, জেনারেটর ইত্যাদির জন্য যে প্রাক্কলনের প্রস্তাব করা হয়েছে তা অত্যধিক। এ ছাড়া এয়ার কন্ডিশনার, সাব-স্টেশন, জেনারেটর প্রভৃতি বর্গমিটার প্রতি ব্যয় প্রাক্কলন করা হলেও সংখ্যা ও স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করা হয়নি। এসব খাতের স্পেসিফিকেশনসহ বিস্তারিত ব্যয় পুনঃ পর্যালোচনাপূর্বক পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযোজনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পিইসি সভায় প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার যৌক্তিকতা সম্পর্কে মসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী জানান, বর্তমানে সিটি করপোরেশনকে ৮ লক্ষাধিক নাগরিকের বিভিন্ন সুবিধা দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন, ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে প্ল্যান অনুমোদন, সড়কবাতি, পানি সরবরাহ, টিকাদান, জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারিশান সনদ, বিবাহ সনদসহ অন্যান্য সেবা। তিনি জানান, পর্যাপ্ত অবকাঠামোর ব্যবস্থা না থাকায় সিটি করপোরেশনকে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মসিকের সাংগঠনিক কাঠামোতে মোট ১১টি বিভাগ নিয়ে ৬৩০ জন কর্মচারীর ব্যবস্থা রেখে সাংগঠনিক কাঠামো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং পরে অর্থ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে।
‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নগর ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের ওপর ২৫ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকঠামো বিভাগের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে সন্ধ্যা নামতেই তৎপর হয়ে ওঠে কয়েকটি পক্ষ। সুযোগ বুঝে ‘লাইনম্যান’ মুঠোফোনে সংকেত দেন ‘লাইন ক্লিয়ার’। এরপর সীমান্তের দিকে এগোতে থাকেন ‘ভারীরা’। খেতের আল ধরে হামাগুড়ি দিয়ে শূন্যরেখার কাছে পৌঁছানোর পর সংকেত দিলে ওপার থেকে মালামাল ছুড়ে দেয় ভারতীয় পাচারকারীরা। দ্রুত সেগুলো সংগ্রহ করে ফিরে আসে তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা, চোরাচালানে জড়িত ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, এক যুগ আগেও মাধবপুর সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে পাচার হওয়া মালামালের তালিকায় গরু, লবণ, চিনি, সাইকেল, জিরা, কাপড়ের মতো পণ্যের প্রাধান্য ছিল। লাভ বেশি হওয়ায় এসব পণ্যের বদলে আসছে মাদক। যার বেশির ভাগই ফেনসিডিল। এ ছাড়া আছে ইয়াবা, গাঁজা, মদ ও নেশাজাতীয় ইনজেকশন। সেই সঙ্গে আসছে ভারতীয় মোবাইল ফোন এবং কসমেটিকস। সীমান্ত দিয়ে অবাধে মাদক আসায় একদিকে জেলায় বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা, অন্যদিকে মাদক পাচার করতে গিয়ে সীমান্ত এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে।
সম্প্রতি মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের মোহনপুর, আলীনগর, কালিকাপুর, চৌমুহনী ইউনিয়নের রামনগর, কমলপুর; বহড়া ইউনিয়নের শ্রীধরপুর, কৃষ্ণপুর; শাহজাহানপুর ইউনিয়নের বনগাঁও ও জালুয়াবাদ সীমান্ত এলাকা ঘুরে মাদক চোরাচালানের এ চিত্র পাওয়া গেছে।
সীমান্তের মাদক কারবারিদের বলা হয় মহাজন। মাদক আনার জন্য মহাজন যাদের নিয়োগ করেন, তাদের বলা হয় ‘ভারী’। সীমান্তের অবস্থা জানানোর জন্য ‘লাইনম্যান’ হিসেবে কাজ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্সরা। ‘লাইন ক্লিয়ার’ অর্থ হচ্ছে মাদক আনার সুবিধাজনক সময়।
হবিগঞ্জের স্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত সীমান্তে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ মাদক চোরাকারবারিরা আটক হয়েছে।
মাধবপুর থানার সূত্রমতে, উপজেলায় মাদকদ্রব্য পাচারের সবচেয়ে বড় রোড মোহনপুর, আলীনগর, কালিকাপুর, রামনগর, শ্রীধরপুর, জালুয়াবাদ, বনগাঁও সীমান্ত। এই চার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ১০০ ব্যক্তি মাদকসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ পণ্য চোরাচালানের কাজে যুক্ত বলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তাদের এক-তৃতীয়াংশই ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী। মহাজন রয়েছেন অর্ধশতাধিক। খুচরা বিক্রেতা হিসেবে নারী মাদক কারবারির সংখ্যাও বাড়ছে।
মাধবপুর সীমান্তের হবিগঞ্জ ৫৫ বিজিবির অধীনে রয়েছে ৪টি বিওপি (মনতলা, হরিণখোলা, রাজেন্দ্রপুর, তেলিয়াপাড়া)। বাকি ধর্মঘর ইউনিয়নের (ধর্মঘর বিওপি, হরষপুর বিওপি, বড়জ্বালা বিওপি) অংশ ২৫ বিজিবির অধীনে পড়েছে। বিজিবি ৫৫ ও ২৫ ব্যাটালিয়নের অধীনে রয়েছে ৭টি বিওপি ক্যাম্প।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহনপুর ও কালিকাপুর গ্রামের এক মাদক পাচারকারী বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই তাদের সজাগ থাকতে হয়। রাতের যেকোনো সময় ‘লাইন ক্লিয়ারের’ সংকেত আসে। অনেক সময় সংকেত আসতে ভোর হয়ে যায়। সংকেত পেলেই ছোটেন সীমান্তে। আত্মরক্ষার জন্য সঙ্গে থাকে টর্চলাইট, দা। ভারতীয়দের ছুড়ে দেওয়া মাদকদ্রব্য এনে পুকুরপাড়, ঝোপঝাড়ে, পরিত্যক্ত ঘরে রেখে দেন। পরে সুবিধাজনক সময়ে মহাজনের কাছে পৌঁছান। এক রাতে ১০০ বোতল ফেনসিডিল সীমান্ত থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে নিরাপদে সরিয়ে আনলে মহাজনের কাছ থেকে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত টাকা পাওয়া যায় বলে ‘ভারী’দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তারা বলছেন, ভারীদের কাছে মাল বুঝে পাওয়ার পর সবুজ সংকেত পেলে এজেন্টের মাধ্যমে ভারতীয় মাদক কারবারির টাকা পরিশোধ করেন বাংলাদেশের কারবারিরা।
সীমান্ত দিয়ে যত মাদক আসে, তার খুব কমই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
মাধবপুর থানার ওসি আব্দুল রাজ্জাক বলেন, ‘মাধবপুর সীমান্ত এলাকায় ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত থানা পুলিশের অভিযানে ৪০৮ জন আসামিকে বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্যসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮১৮ কেজি গাঁজা, ২১ হাজার ৫৯০ পিস ইয়াবা, ১৫২ বোতল বিদেশি মদ, ১৪৭ লিটার দেশি মদ, ১৬০টি বিয়ার ক্যান ও ১ হাজার ৯৫৪ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল জব্দ করি এবং ২৯৯টি মামলা করি। মাদক নির্মূলে মাধবপুর থানা পুলিশ জিরো টলারেন্স অবস্থানে আছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘মাদকের ব্যাপারে কোনো আপস নাই।’
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, মাদক পাচারকারীরা এলাকায় অনেক প্রভাবশালী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না বলে অভিযোগ রয়েছে। মোহনপুর সীমান্তের যুবক রহিম বলেন, ‘কাকে অভিযোগ দেব? অভিযোগ দিলে উল্টো মালসহ যদি ফাঁসায়া দেয়, এই ভয়ে এলাকার কেউ জোর গলায় কোনো প্রতিবাদে যায় না।’
মাদক ব্যবসার টাকার ভাগ আইনৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছেও যায় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ধর্মঘর সীমান্ত বিটে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন বলেন, সীমান্ত এলাকায় মাদক নির্মূলে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি মাদক নির্মূলে কাজ করছে পুলিশ।
বিজিবির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন সরাইল ২৫ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ আরমান আরিফ। সীমান্ত দিয়ে মাদক আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে বিজিবি। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।’
এ ব্যাপারে কথা হয় হবিগঞ্জ ৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমদাদুল বারী খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি, আমাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ৪টি বিওপি রয়েছে। মাদকের সঙ্গে আমাদের কোনো আপস নাই। মাদক নিয়ন্ত্রণে আমাদের সদস্যরা রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বিজিবির পক্ষ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।’
সেবার বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায় কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সঙ্গে প্রথম পরিচয় হলো আমার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখন আমি। মাথার মধ্যে কবিতা লেখার ভূত। প্রতিদিন বড় একটা গাছের ডালে বসে সেই ভূত পা নাচায় আর আমি রাত্রিবেলা শহরের মাথায় ফুটে থাকা চাঁদ দেখে ভাবি, কবিতা লিখে একদিন তোমাকেও ছুঁয়ে দেব চাঁদ।
রুদ্রদাকে ক্যাম্পাসে দেখে আমার মনে হতো কবিদের যুবরাজকে দেখছি। দাড়িপূর্ণ মুখ, উজ্জ্বল দৃষ্টি আর ঝকঝকে হাসিতে মোড়া এমন কবির অবয়ব আজকাল অনুপস্থিত। মাঝেমধ্যে মনে হয়, এ ঢাকা শহরটা একদা কবিদের শহর ছিল। চায়ের দোকান, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বইমেলা, পত্রিকা অফিসে সাহিত্য সম্পাদকের দপ্তর, কবিতা উৎসব থেকে মিছিল কোথায় কবিরা নেই তখন! শহরের যেকোনো নরম নিভৃতিকেও চমকে দিতে পারত তখন কবিরা।
রুদ্রদার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়ের পর্দা উঠেছিল অমর একুশে বইমেলায়। পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল সিনিয়র বন্ধু প্রয়াত সাংবাদিক, গল্পকার মিনার মাহমুদ। তারা বন্ধু ছিলেন। আজও মনে পড়ে, মিনার ভাই খুব ক্যাজুয়ালি পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার স্বভাবসুলভ শ্লেষের হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলেছিলেন ও কবিতা করে। মিনার ভাই প্রকাশ্যে কবিদের প্রতি সবসময় টিপ্পনী কাটতেন এ কথাটা বলে। তখন একরোখা আর রাগী তরুণ আমি প্রথম পরিচয়েই রুদ্রদার তুমি সম্বোধনে ক্ষিপ্ত হয়েছিলাম। ভাবটা এমন ছিল, দুজনই তো কবি; প্রথম পরিচয়ে তুমি সম্বোধন করার কী আছে! মনে আছে আজও, রুদ্রদাকে বলেছিলাম, ‘আপনার সঙ্গে তো আমার এমন কোনো ঘনিষ্ঠতা নেই যে তুমি বলবেন আমাকে।’ সেদিন খুব বিস্মিত হয়ে হেসে ফেলেছিল রুদ্রদা। তার ঝকঝকে হাসি ছড়িয়ে পড়েছিল ফেব্রুয়ারির মরে আসা বিকেলে বাংলা একাডেমির মূল ভবনসংলগ্ন বইমেলার মাঠে। পরিচয়ের প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে আমাদের সম্পর্ক তারপর অনেকটা পথ হেঁটেছিল হাকিম চত্বর হয়ে মেডিকেল কলেজের মোড় ঘুরে নিমতলীর দিকে, নারিন্দা সুইপার কলোনির ম্লান বিকেলে অথবা তার প্রিয় পানশালা সাকুরায়। তার পাঞ্জাবির পকেটে বহুদিন হাসির গল্প হয়েই ছিল ঘটনাটা। রুদ্রদা ক্ষ্যাপাতো আমাকে মাঝেমধ্যে। তখন একবারের জন্য মনে হয়নি, ভোরবেলা কবি তারিক সুজাতের টেলিফোন আমাকে ডেকে তুলে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দেবে রুদ্রদার নিথর দেহের সামনে!
খুব বেশি সময় আগের কথা নয় কিন্তু। বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজের চারপাশ ঘিরে পর্দা উঠত অমর একুশে বইমেলার। মাঝখানে শুকিয়ে যাওয়া একটা পুকুর ঘিরে প্রকাশকদের স্টল। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে উতলা হতো বাতাসও। তখন বইমেলায় কত ঘটনা যে ঘটত! একবার শুনতে পেলাম, প্রাবন্ধিক আহমদ ছফা একটা ছুরি নিয়ে ঘুরছেন একজন কবিকে ছুরি মারবেন বলে। সেই কবির অপরাধ তার কবিতা হয় না। সেই কবিও প্রাণভয়ে পলাতক মেলা থেকে। পরে ছফা ভাইয়ের কাছেই জানা গেল, সেই ছুরি আসলে নেইল কাটারের সঙ্গে সংযুক্ত। কখনো কখনো ছফা ভাই অন্যদের সঙ্গে ভীষণ রসিকতা করতেন!
প্রয়াত কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার একদা বাংলা একাডেমির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। বইমেলায় প্রতিদিন বিকেল হতো মাইকে রশীদ ভাইয়ের কণ্ঠ শুনে। মেলায় প্রকাশিত হওয়া নতুন বইয়ের পরিচিতি দিতেন তিনি। আমরা নিয়মিত রশীদ হায়দার ভাইয়ের ভারী কণ্ঠস্বর নকল করে কথা বলতাম। মেলা প্রাঙ্গণে গোপন ধূমপায়ীদের রশীদ ভাই অনুসরণ করতেন গোয়েন্দা পুলিশের মতো। একাডেমির আনাচে-কানাচে ঝড়ের মতো আবির্ভূত রশীদ ভাইকে দেখে কতদিন পালিয়ে গেছি হাতের সদ্য প্রজ¦লিত সিগারেট ফেলে!
বইমেলায় সন্ধ্যা থেকেই প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক আর কবিদের আগমন ঘটত। চাপা জিন্সের প্যান্ট আর উজ্জ্বল রঙের টি-শার্ট পরিহিত রফিক আজাদ আসতেন হেলতে-দুলতে। মহাদেব সাহা যথারীতি পাজামা-পাঞ্জাবিতে শোভিত। কবি হেলাল হাফিজকে দেখতাম কাঁধে কাপড়ের ব্যাগ ঝুলিয়ে মগ্ন হয়ে হেঁটে যেতে। তখন বইমেলায় নিয়মিত আসতেন সত্তর এবং আশির দশকের উজ্জ্বল কবিদের দল। জাহিদ হায়দার, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, কামাল চৌধুরী, তুষার দাশ, ফরিদ কবির, মাহমুদ শফিক, মুজিবুল হক কবির, মোহন রায়হান প্রমুখ। কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের, গল্পকার ফারুক মঈনুদ্দিন, ইসহাক খান, মিনার মাহমুদ সন্ধ্যার পর নিয়মিত আড্ডা দিতেন মেলায়। ছোট ছোট জটলায় চাল ভাজার মতো মুচমুচে আড্ডার স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে আমাকে। মিনার মাহমুদ সেই আড্ডার নাম দিয়েছিলেন ‘খোঁচাখুঁচি’। সাহিত্য, রাজনীতি, ভালো লেখা, সিনেমা, সমাজ অর্থনীতি আর তীব্র পরচর্চা ঝড় তুলত। কোনো কোনো দিন চাঁদা তুলে ‘কঠোর পানীয়’ কিনে গোপনে তা গলাধঃকরণ করা হতো। মনে পড়ে, সেই উল্টোপাল্টা আলোর স্রোতে ভাসা সন্ধ্যাগুলোতে নিয়মিত সঙ্গ দিতেন সাংবাদিক খায়রুল আনোয়ার, সৈয়দ শহীদ।
প্রয়াত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ আশির দশকের মাঝামাঝি মেলায় এসে পাঠকদের বইতে স্বাক্ষর দিতে শুরু করলেন। একবার তার স্বাক্ষর নিতে উৎসাহী পাঠকদের ভিড়ের চাপে প্রতীক প্রকাশনীর স্টল প্রায় ভেঙে পড়েছিল। কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলনকে বিকেল থেকে দেখা যেত স্টলে বসে একমনে স্বাক্ষর দিয়ে চলেছেন পাঠকদের। স্বাক্ষর নিতে আসা পাঠকদের লম্বা লাইন সামলাতে তখন হিমশিম খেতে হতো ভলান্টিয়ারদের। এরকম দৃশ্য দেখে প্রয়াত ভাষাবিজ্ঞানী, কবি ড. হুমায়ুন আজাদের শ্লেষযুক্ত তীব্র উক্তিগুলো আজও যেন ফেব্রুয়ারির গা ছম ছম করা হাওয়ায় হুল ফোটায়।
তখন বইমেলার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বাইরের ফুটপাত, টিএসসির মোড় আর শাহবাগে আড্ডাগুলো সম্প্রসারিত হতো। পাঠকরা বই কিনে বাড়ি ফিরতেন আর আমাদের মতো কিছু লেখক হতে চাওয়া তরুণ সেই আড্ডাগুলোর ভেতরে নিজেদের আরও কিছুক্ষণ গুঁজে দিতে চাইতাম। রাত গভীর হতো। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গভীর অন্ধকার থেকে ভেসে আসত বনজ ঘ্রাণ। শীত করত কারও কারও। ঢাকা শহরের রাজপথে কমে যেত যানবাহন। বিচ্ছিন্ন রিকশা দাঁড়িয়ে থাকত বইমেলা থেকে শেষ সওয়ারি ধরার অপেক্ষায়।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শিরিনা খাতুনের প্রাইভেট কারের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের শৈলকুপার মদনডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। উম্মে রুকাইয়া (১১) নামে ওই স্কুলছাত্রীকে ধাক্কা দেওয়ার পর তার প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা না করে প্রাইভেট কারটি নিয়ে চালক ও শিক্ষক শিরিনা খাতুন দ্রুত পালিয়ে যান। এ শিক্ষকের দাবি, গাড়ির গতি বেশি থাকায় চালক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি। বিষয়টি তাকে মর্মাহত করেছে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে আরও আটজনের। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে প্রায় ৫০ জন। এর মধ্যে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ট্রাক্টরে পিষ্ট হয়ে কৃষি কর্মকর্তা, জয়পুরহাটের কালাইয়ে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী, নীলফামারীতে পিকআপের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে স্কুলের পিকনিকের বাস খাদে পড়ে দুজন, জামালপুরে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে পিকআপ ভ্যানের চালক, সাতক্ষীরায় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে কিশোর এবং খুলনায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন।
শৈলকুপায় নিহত উম্মে রুকাইয়া ত্রিবেনী ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মনোয়ার হোসেনের মেয়ে। সে শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
এলাকাবাসী জানায়, দুপুর ১২টার দিকে রুকাইয়া তার সহপাঠীর সঙ্গে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে একটি দ্রুতগামী প্রাইভেট কার তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রুকাইয়াকে। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে সন্ধ্যায় মারা যায়।
নিহতের চাচা ফিরোজ বলেন, ‘স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতির গাড়ি আমার ভাতিজিকে ধাক্কা দেয়। পরে গাড়িটিকে গাড়াগঞ্জ বাজারে আটক করা হয়। কিছুক্ষণ কথা বলার পর তিনি (শিরিনা খাতুন) গাড়ি নিয়ে দ্রুত চলে যান। রুকাইয়াকে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিরিনা খাতুন বলেন, ‘ঘটনাটি অনাকাক্সিক্ষত ছিল। গাড়ির গতি বেশি থাকায় ড্রাইভার কন্ট্রোল করতে পারেনি। বিষয়টি আমাকে মর্মাহত করেছে।’
শৈলকুপা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি সত্য। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।’
কোটচাঁদপুরে ট্রাক্টরে পিষ্ট কৃষি কর্মকর্তা : ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের তালসার এলাকায় ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক কৃষি কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে তালসার সড়কের ফুলবাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত এস কে লতিফুল কবির কোটচাঁদপুরের কুশনা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের বাদপুকুর গ্রামের তের আলীর ছেলে।
কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহাসীন আলী জানান, কৃষিমেলা উপলক্ষে উপজেলা অফিসে সভা ছিল। সভা শেষে মোটরসাইকেলে নিজের বাড়ি বাদপুকুরে ফিরছিলেন। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা স্থানীয় একটি ইটভাটার ট্রাক্টর তাকে চাপা দেয়। পরে এলাকার লোকজন উদ্ধার করে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জয়পুরহাটে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর মৃত্যু : জয়পুরহাটের কালাইয়ে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নজরুল ইসলাম (৭২) নামে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। ওই ঘটনায় মোটরসাইকেলটির চালক গুরুতর আহত হন। গতকাল দুপুরে জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কের হাজিপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নজরুল ইসলাম কালাই উপজেলার হাজিপাড়া গ্রামের মৃত নইমুদ্দিনের ছেলে।
গুরুতর আহত মোটরসাইকেল চালক শান্ত ইসলাম (২০) জেলার আক্কেলপুর উপজেলার ভান্ডারিপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ও পুলিশ জানায়, শান্ত মোটরসাইকেল চালিয়ে জয়পুরহাট থেকে বগুড়ার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে হাজিপাড়া মোড়ে রাস্তা পারাপারের সময় নজরুল ইসলামকে ধাক্কা দেয় ওই মোটরসাইকেলটি। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনায় দুর্ঘটনাস্থল থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা ছিনতাই : নীলফামারীতে পিকআপের ধাক্কায় তানভীর আহমেদ জনি (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ সময় কাজী আবদুর রাজ্জাক নামে আরও এক মোটরসাইকেল আরোহী আহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই এই নিহত ও আহতের কাছে থাকা সাড়ে ৯ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কের কাদিখোল এলাকার ইকু জুট মিলের ৫০০ গজ দূরে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, নিহত তানভীর আহমেদ জনি ইকু জুট মিলের হিসাবরক্ষক ও পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরের বাঘাচড়া গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে। আর আহত আবদুর রাজ্জাক (৩৮) ইকু জুট মিলের কম্পিউটার অপারেটর। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ভর্তি করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ইকু জুট মিলের স্বত্বাধিকারী সিদ্দিকুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, মিলের হিসাবরক্ষক জনি ও কম্পিউটার অপারেটর রাজ্জাক রাত ৯টার দিকে সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়ায় ইকু গ্রুপের অফিস থেকে ব্যাংক থেকে তুলে আনা মিলের কর্মচারীদের সাপ্তাহিক বেতনের সাড়ে ৯ লাখ টাকা একটি চটের বস্তায় ভরে মোটরসাইকেলে মিলের উদ্দেশে রওনা হন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইকু জুট মিলের ৫০০ গজ অদূরে পৌঁছলে পেছন দিক থেকে একটি পিকআপ ভ্যান তাদের মোটরসাইকেলে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান জনি। গুরুতর আহত হন রাজ্জাক। তখন পিকআপের পেছনে থাকা অন্য একটি মোটরসাইকেলে থাকা ছিনতাইকারীরা ওই টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়।
নীলফামারী সদর থানার ওসি আবদুর রউপ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পিকআপটি জব্দ করলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের পিকনিকের বাস খাদে : যশোরের বাঘারপাড়ার বাকড়ী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পিকনিকের বাস দুর্ঘটনায় পড়ে দুজন নিহত ও ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। পিকনিক শেষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে ফেরার পথে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত প্রায় ২০ জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে মারা যান বিদ্যালয়টির ল্যাব সহকারী সুদীপ্ত বিশ্বাস (৩৫)। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে নিহত হন বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস (৪৫)।
বাকড়ী বহুমুখী বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিশ্বজিৎ কুমার পাল জানান, তারা বৃহস্পতিবার সকালে তিনটি বাসে করে ১৫০ জন টুঙ্গিপাড়ায় পিকনিকে যান। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সদস্যরা ছিলেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পিকনিক শেষে ফেরার পথে ভাটিয়াপাড়া মোড়ে তাদের পিকনিকের বাসগুলোর একটি অন্য একটি বাসকে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। বাসটিতে ৫০ জন ছিলেন।
জামালপুরে বাস-পিকআপ ভ্যান সংঘর্ষে চালকের মৃত্যু : জামালপুর সদর উপজেলায় বাস-পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পিকআপ ভ্যানটির চালক মির্জা তৌফিক তানভির সৌরভ (৩৪) নিহত হন। এ সময় বাসের দুই যাত্রী আহত হয়েছেন। গতকাল সকালে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শরিফপুর ইউনিয়নের জয়রামপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সৌরভ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কিষ্টপুর গ্রামের মির্জা তপির ছেলে।
জামালপুর সদর থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ জানান, সকালে জামালপুর থেকে ঢাকাগামী রাজীব পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পিকআপ ভ্যানের চালক সৌরভ ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে।
সাতক্ষীরায় মোটরসাইকেল আরোহী এক কিশোর নিহত : সাতক্ষীরার গোপীনাথপুরে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক কিশোর নিহত ও দুই যুবক আহত হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ মো. ফকরুল আলম খান জানান, গতকাল দুপুরে সাতক্ষীরা থেকে খুলনার দিকে যাওয়ার সময় গোপীনাথপুর ঋষিপল্লীর সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে শেখ জুবায়ের হোসেন (১৫) নামে এক কিশোর ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সে সাতক্ষীরার ইটাগাছা গ্রামের শেখ কবিরুজ্জামানের ছেলে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন রশীদ ও তরিকুল নামে দুই যুবক।
খুলনায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত : খুলনায় ট্রাকের ধাক্কায় মিঠুন চৌধুরী নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে নগরীর রূপসা বাইপাস সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মিঠুন দীঘলিয়া উপজেলার লাখোহাটি গ্রামের নাসিম চৌধুরীর ছেলে। এ ঘটনায় একই এলাকার রেজাউল শেখের ছেলে মো. মামুন গুরুতর আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মোটরসাইকেলে মিঠুন ও মামুন আড়ংঘাটা সড়ক দিয়ে বাইপাস রোডে ওঠার চেষ্টা করে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামীর একটি ট্রাক মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে তারা রাস্তার ওপর ছিটকে পড়ে মাথায় আঘাত পান। আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিঠুনের মৃত্যু হয়। পরে আহত মামুনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
* প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন ইবি এবং সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর পূর্ণ হলো আজ শনিবার। আলোচিত এই হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় একের পর এক তদন্ত সংস্থা আর তদন্ত কর্মকর্তা বদলেছে। তবে রহস্যের জট খোলেনি। এখনো আসামি শনাক্তকরণ, জব্দ করা আলামত পরীক্ষা ও নিহতদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের পর্যায়েই আটকে আছে তদন্ত। যদিও র্যাবের পক্ষ থেকে বরাবরের মতো দাবি করা হচ্ছে, মামলার দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু অতীতের মতোই এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিটটি। উল্টো ৯৫ বার পেছানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ।
এমন পরিস্থিতিতে নিহতদের স্বজনরা বলছেন, দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা এ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ৪৮ ঘণ্টা ১১ বছরেও শেষ হলো না। আর কবে খুনিরা ধরা পড়বে? কবে রহস্যের জট খুলবে?
রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ৫৮/এ/২ বাড়ির পঞ্চমতলার এ-৪ ফ্ল্যাটে ১১ বছর আগে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার এক কর্মকর্তা। ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর। তবে এর দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাবকে। সেই থেকে ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, ‘১১ বছরেও কোনো অগ্রগতি নেই, আর কবে হবে। কোনো অগ্রগতি হবে না। আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছি। শুধু এতটুকু বলতে পারি, তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে কাজ করছেন না। আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছেন। অথচ প্রতি বছর তারা নিয়মমাফিকভাবে বলে আসছেন, দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই নয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আদালতও যেখানে বারবার সময় দিচ্ছেন, সেখানে আমাদের আর কী বলার আছে! তবে জট খোলার চেষ্টা না করলে জট খুলবে না, এটাই স্বাভাবিক।’
এ ব্যাপারে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যার বিচার যে পাইনি তা নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। এ বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বিচারের দাবি জানিয়ে যাবে। বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে ডিআরইউ নেতারা স্মারকলিপি দিয়েছে।’
এদিকে সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল শুক্রবার সকালে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে সাংবাদিকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম, বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, ডিইউজের সিনিয়র সহসভাপতি এমএ কুদ্দুস, সাংগঠনিক সম্পাদক জিহাদুর রহমান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জামিউল আহসান সিপু, মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রাশেদ আহমেদ, বার্তা সম্পাদক শাহ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ প্রমুখ।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত কোনো হত্যার ঘটনায় করা মামলার তদন্তে নেমে তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ খোঁজেন। এরপর আসামি শনাক্তকরণের চেষ্টা করেন, কোনো ধরনের ক্লু পেতে জব্দ করা আলামত পরীক্ষা ও হত্যার শিকার ব্যক্তির খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা করেন। এসব একটি মামলা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ের কার্যক্রম, ১১ বছর তদন্তের পরও সাগর-রুনি হত্যা মামলা ঠিক এমন প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। এখনো আসামি শনাক্তকরণ, জব্দ করা আলামত পরীক্ষা ও নিহতদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের চেষ্টায় রয়েছে তদন্ত সংস্থা।
র্যাব মামলার তদন্তে নেমে গ্রেপ্তার আট আসামি, নিহত দুজন এবং তাদের স্বজন মিলে ২১ জনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) পরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো হাতে পেয়েছে র্যাব। সেই প্রতিবেদন ও অপরাধচিত্রের প্রতিবেদন (ক্রাইম সিন রিপোর্ট) পর্যালোচনায় দুজনের ডিএনএর পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল পাওয়া গেছে। তবে এসব পরীক্ষায় সন্দেহভাজন খুনি শনাক্ত হয়নি। এ মামলায় গ্রেপ্তার আটজনের মধ্যে পাঁচজন রফিকুল, বকুল, সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুণ মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র রায় হত্যার সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তার দেখানো হয় সাগর-রুনির পারিবারিক বন্ধু তানভীর এবং তাদের বাসার নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও হুমায়ুন কবীরকে। সবাই হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন।
আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘মামলাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এ মামলা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। এর জন্য বিদেশে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নিয়েছি। বিদেশে ডিএনএ টেস্টের সহযোগিতা নিয়েছি। এখন পর্যন্ত তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করছি। প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করার জন্য একটু সময় লাগছে।’
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
আজ ৯ জুন (শুক্রবার)। ভাগ্যরেখা অনুযায়ী আপনার আজকের দিনটি কেমন কাটতে পারে? ব্যক্তি, পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে কী বলছে জ্যোতিষশাস্ত্র? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে যারা দিনের শুরুতেই কিছুটা ধারণা নিয়ে রাখতে চান তারা একবার পড়ে নিতে পারেন আজকের রাশিফল।
মেষ : ২১ মার্চ-২০ এপ্রিল
জাতক এ সপ্তাহে শত বছরের পুরনো কেনো বস্তুর সন্ধান লাভ করবেন। কষ্টিপাথরের মূর্তি, অলংকার বা কোনো অমূল্য ধর্ম গ্রন্থের সন্ধান পেতে পারেন।
বৃষ : ২১ এপ্রিল-২০ মে
জাতকের এ সময়টায় সন্তান, স্ত্রী অথবা বন্ধু-বান্ধবীর কারণে প্রভূত ক্ষতি হতে পারে। মূল্যবান দ্রব্যাদির বিষয়ে একটু সাবধান হোন।
মিথুন : ২১ মে-২০ জুন
আপনার এ সপ্তাহে অর্থ ভাগ্য ভালো। জাতকের মঙ্গল লগ্ন কোনো প্রতিযোগিতামূলক জীবিকায় প্রলুব্ধ করবে। যেমন, নেভি, আর্মি বা বৈমানিক ইত্যাদি।
কর্কট : ২১ জুন-২০ জুলাই
জাতকের হঠাৎ কোনো দলিল-দস্তাবেজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লোভ নয়, মালিককে ফিরিয়ে দেওয়াই মানুষের কাজ।
সিংহ : ২১ জুলাই-২০ আগস্ট
মঙ্গল ও রবির অবস্থানগত কারণে সিংহের ক্রোধ জাগ্রত হতে পারে। মেয়েরা রাগ করে বিপথে যাবেন না। অযথা আপনার অমূল্য বাচ্চাদানি বিনষ্ট হবে।
কন্যা : ২১ আগস্ট-২২ সেপ্টেম্বর
জাতকের এ সপ্তাহটা শুভ। তবে অযথা প্রশাসনের বিরুদ্ধ কোনো কাজে জড়াবেন না।
তুলা : ২৩ সেপ্টেম্বর-২২ অক্টোবর
জাতকের গ্রহগণ সৌভাগ্যের দ্বার মেলে ধরবে। সহসা দয়িতার কারণে অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে।
বৃশ্চিক : ২৩ অক্টোবর-২০ নভেম্বর
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ইন্দ্রিয় তাড়নায় জাতক অবৈধকর্মে লিপ্ত হতে পারেন। অনুঢ়ারা অর্থোপার্জনে আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতা লাভ করবেন।
ধনু : ২১ নভেম্বর-২০ ডিসেম্বর
জাতকের অর্থ ও বন্ধু জুটবে। বিদেশ ভ্রমণ যোগ বিদ্যমান। তবে ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
মকর : ২১ ডিসেম্বর-১৯ জানুয়ারি
জাতকের জন্মকু-ুলীতে শনি কেন্দ্রস্থ হওয়ার ফলে, ক্রোধ বিপদ ডেকে আনবে। দুর্ঘটনায় রক্তপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব ক্রোধ সম্বরণ করুন।
কুম্ভ : ২০ জানুয়ারি-১৮ ফেব্রুয়ারি
জাতক জীবনে প্রতিপত্তি লাভ করবেন। সৃষ্টিশীল কাজে সুনামের যোগ রয়েছে। রাজদ্বারে স্বীকৃতি পাবেন।
মীন : ১৯ ফেব্রুয়ারি-২০ মার্চ
জাতক অপরিচিত নারী দ্বারা প্রলোভনের শিকার হতে পারেন। নিজেকে যতই স্মার্ট ভাবুন না কেন, পথিনারী বিবর্জিতা, ভ্রমণে নারীসঙ্গ পরিহার করুন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা আজ শুক্রবার। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান।
‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শুক্রবার (৯ জুন) বিএবি’র উদ্যোগে ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন ও বাণিজ্য পারস্পরিক আস্থার সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-বিধান, মেট্রোলজি, নিরপেক্ষ ও স্বীকৃত সাযুজ্য নিরূপণ ব্যবস্থা একটি দেশের গুণগত মান অবকাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি, যা ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রমকে সহজতর করার পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণে অ্যাক্রেডিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় মান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ভোক্তা ও উৎপাদকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটেশন বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ প্রেক্ষিতে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য-‘অ্যাক্রেডিটেশন : সাপোটিং দ্যা ফিউচার অব গ্লোবাল ট্রেড’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএবি অ্যাক্রেডিটেশন সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।