
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে সন্ধ্যা নামতেই তৎপর হয়ে ওঠে কয়েকটি পক্ষ। সুযোগ বুঝে ‘লাইনম্যান’ মুঠোফোনে সংকেত দেন ‘লাইন ক্লিয়ার’। এরপর সীমান্তের দিকে এগোতে থাকেন ‘ভারীরা’। খেতের আল ধরে হামাগুড়ি দিয়ে শূন্যরেখার কাছে পৌঁছানোর পর সংকেত দিলে ওপার থেকে মালামাল ছুড়ে দেয় ভারতীয় পাচারকারীরা। দ্রুত সেগুলো সংগ্রহ করে ফিরে আসে তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা, চোরাচালানে জড়িত ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, এক যুগ আগেও মাধবপুর সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে পাচার হওয়া মালামালের তালিকায় গরু, লবণ, চিনি, সাইকেল, জিরা, কাপড়ের মতো পণ্যের প্রাধান্য ছিল। লাভ বেশি হওয়ায় এসব পণ্যের বদলে আসছে মাদক। যার বেশির ভাগই ফেনসিডিল। এ ছাড়া আছে ইয়াবা, গাঁজা, মদ ও নেশাজাতীয় ইনজেকশন। সেই সঙ্গে আসছে ভারতীয় মোবাইল ফোন এবং কসমেটিকস। সীমান্ত দিয়ে অবাধে মাদক আসায় একদিকে জেলায় বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা, অন্যদিকে মাদক পাচার করতে গিয়ে সীমান্ত এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে।
সম্প্রতি মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের মোহনপুর, আলীনগর, কালিকাপুর, চৌমুহনী ইউনিয়নের রামনগর, কমলপুর; বহড়া ইউনিয়নের শ্রীধরপুর, কৃষ্ণপুর; শাহজাহানপুর ইউনিয়নের বনগাঁও ও জালুয়াবাদ সীমান্ত এলাকা ঘুরে মাদক চোরাচালানের এ চিত্র পাওয়া গেছে।
সীমান্তের মাদক কারবারিদের বলা হয় মহাজন। মাদক আনার জন্য মহাজন যাদের নিয়োগ করেন, তাদের বলা হয় ‘ভারী’। সীমান্তের অবস্থা জানানোর জন্য ‘লাইনম্যান’ হিসেবে কাজ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্সরা। ‘লাইন ক্লিয়ার’ অর্থ হচ্ছে মাদক আনার সুবিধাজনক সময়।
হবিগঞ্জের স্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত সীমান্তে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ মাদক চোরাকারবারিরা আটক হয়েছে।
মাধবপুর থানার সূত্রমতে, উপজেলায় মাদকদ্রব্য পাচারের সবচেয়ে বড় রোড মোহনপুর, আলীনগর, কালিকাপুর, রামনগর, শ্রীধরপুর, জালুয়াবাদ, বনগাঁও সীমান্ত। এই চার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ১০০ ব্যক্তি মাদকসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ পণ্য চোরাচালানের কাজে যুক্ত বলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তাদের এক-তৃতীয়াংশই ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী। মহাজন রয়েছেন অর্ধশতাধিক। খুচরা বিক্রেতা হিসেবে নারী মাদক কারবারির সংখ্যাও বাড়ছে।
মাধবপুর সীমান্তের হবিগঞ্জ ৫৫ বিজিবির অধীনে রয়েছে ৪টি বিওপি (মনতলা, হরিণখোলা, রাজেন্দ্রপুর, তেলিয়াপাড়া)। বাকি ধর্মঘর ইউনিয়নের (ধর্মঘর বিওপি, হরষপুর বিওপি, বড়জ্বালা বিওপি) অংশ ২৫ বিজিবির অধীনে পড়েছে। বিজিবি ৫৫ ও ২৫ ব্যাটালিয়নের অধীনে রয়েছে ৭টি বিওপি ক্যাম্প।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহনপুর ও কালিকাপুর গ্রামের এক মাদক পাচারকারী বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই তাদের সজাগ থাকতে হয়। রাতের যেকোনো সময় ‘লাইন ক্লিয়ারের’ সংকেত আসে। অনেক সময় সংকেত আসতে ভোর হয়ে যায়। সংকেত পেলেই ছোটেন সীমান্তে। আত্মরক্ষার জন্য সঙ্গে থাকে টর্চলাইট, দা। ভারতীয়দের ছুড়ে দেওয়া মাদকদ্রব্য এনে পুকুরপাড়, ঝোপঝাড়ে, পরিত্যক্ত ঘরে রেখে দেন। পরে সুবিধাজনক সময়ে মহাজনের কাছে পৌঁছান। এক রাতে ১০০ বোতল ফেনসিডিল সীমান্ত থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে নিরাপদে সরিয়ে আনলে মহাজনের কাছ থেকে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত টাকা পাওয়া যায় বলে ‘ভারী’দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তারা বলছেন, ভারীদের কাছে মাল বুঝে পাওয়ার পর সবুজ সংকেত পেলে এজেন্টের মাধ্যমে ভারতীয় মাদক কারবারির টাকা পরিশোধ করেন বাংলাদেশের কারবারিরা।
সীমান্ত দিয়ে যত মাদক আসে, তার খুব কমই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
মাধবপুর থানার ওসি আব্দুল রাজ্জাক বলেন, ‘মাধবপুর সীমান্ত এলাকায় ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত থানা পুলিশের অভিযানে ৪০৮ জন আসামিকে বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্যসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮১৮ কেজি গাঁজা, ২১ হাজার ৫৯০ পিস ইয়াবা, ১৫২ বোতল বিদেশি মদ, ১৪৭ লিটার দেশি মদ, ১৬০টি বিয়ার ক্যান ও ১ হাজার ৯৫৪ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল জব্দ করি এবং ২৯৯টি মামলা করি। মাদক নির্মূলে মাধবপুর থানা পুলিশ জিরো টলারেন্স অবস্থানে আছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘মাদকের ব্যাপারে কোনো আপস নাই।’
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, মাদক পাচারকারীরা এলাকায় অনেক প্রভাবশালী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না বলে অভিযোগ রয়েছে। মোহনপুর সীমান্তের যুবক রহিম বলেন, ‘কাকে অভিযোগ দেব? অভিযোগ দিলে উল্টো মালসহ যদি ফাঁসায়া দেয়, এই ভয়ে এলাকার কেউ জোর গলায় কোনো প্রতিবাদে যায় না।’
মাদক ব্যবসার টাকার ভাগ আইনৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছেও যায় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ধর্মঘর সীমান্ত বিটে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন বলেন, সীমান্ত এলাকায় মাদক নির্মূলে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি মাদক নির্মূলে কাজ করছে পুলিশ।
বিজিবির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন সরাইল ২৫ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ আরমান আরিফ। সীমান্ত দিয়ে মাদক আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে বিজিবি। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।’
এ ব্যাপারে কথা হয় হবিগঞ্জ ৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমদাদুল বারী খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি, আমাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ৪টি বিওপি রয়েছে। মাদকের সঙ্গে আমাদের কোনো আপস নাই। মাদক নিয়ন্ত্রণে আমাদের সদস্যরা রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বিজিবির পক্ষ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।’
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জন্য ১৮তলা ভিতের ওপর ৫তলা নগর ভবন তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সিটি করপোরেশনের সরকারি কাজের চেয়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যই বেশি। এই ভবনের মাত্র কিছু অংশ সরকারি কাজের জন্য রেখে বেশির ভাগই ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো মসিকের প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এই প্রকল্পের কিছু খাতের অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর ব্যাখ্যা দিতে পারেননি মসিকের কর্মকর্তারা।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২৬৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২১৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ও মসিকের নিজস্ব অর্থায়ন ৫৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।
ডিপিপি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পে আরবরি কালচার খাতে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং সীমানাপ্রাচীর খাতে ৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। ৪০০ মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য এই প্রাক্কলন অত্যধিক বলছে পরিকল্পনা কমিশন; অর্থাৎ প্রতি মিটারে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ওয়ালের প্রতি মিটারে ব্যয় ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৫০ টাকা।
প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ৯৭ জনের জন্য ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরামর্শক নিয়োগের যৌক্তিকতা সম্পর্কে সিটি করপোরেশন জানায়, প্রকল্পের আওতায় ১৮তলা ভিতে আপাতত বেজমেন্ট এবং ৫তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হবে।
জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ভবনটি ভবিষ্যতে ১৮তলা হবে। বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় আমরা আপাতত ৫তলা করার প্রস্তাব দিয়েছি।’
৪০০ মিটারের ওয়ালে এত ব্যয়ের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশন আমাদের কিছু জিনিস রিভাইস করতে বলেছে। সেটি রিভাইস না হওয়া পর্যন্ত আমরা কিছু বলতে পারছি না।’
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, এনপিভি, বিসিআর ও আইআরআর-সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটি আর্থিকভাবে লাভজনক হলেও সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে এর সামঞ্জস্যতা নেই।
সিটি করপোরেশনের ২ দশমিক ২৯ একর নিজস্ব ভূমির ওপর ১৮তলা ভিতবিশিষ্ট প্রস্তাবিত নগর ভবনের আপাতত বেজমেন্ট এবং ৫তলা পর্যন্ত নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ভবনটি ৫তলার ওপর থেকে দুটি টাওয়ারে বিভক্ত হয়ে একটি টাওয়ার ১৮তলা পর্যন্ত এবং একটি টাওয়ার ১২তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারিত হবে। বেজমেন্ট এবং গ্রাউন্ডফ্লোরে প্রস্তাবিত ৩২৯টি গাড়ি পার্কিংয়ের মধ্যে ২০০টি পার্কিং স্পেস ভাড়া দেওয়া হবে। পেছনের টাওয়ারের ২য় থেকে ৫তলা পর্যন্ত কিছু স্পেস ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে। তা ছাড়া ৩য়তলায় প্রস্তাবিত কনফারেন্স রুম বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হবে এবং ১মতলায় ২ হাজার বর্গফুটের সেলস সেন্টার ভাড়া দেওয়া যাবে। বর্ণিত ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে আয় দেখানো হয়েছে।
১৮তলা ভিতবিশিষ্ট ভবনের ওপর ৫তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হলেও ডিপিপিতে এর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়নি, এটিকে ডিপিপিতে উল্লেখ করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
নগর ভবন ভাড়া দেওয়া প্রসঙ্গে ইউসুফ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের ভাড়া প্রসঙ্গে কিছু বিষয় সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। এটি নিয়ে আমরা আবার বসব। তবে সেলস সেন্টার ও কনফারেন্স রুম থাকবে। পরিকল্পনা কমিশন কর্মপরিবেশ নিয়ে কিছু ফিল করছে। তারা যেভাবে পরামর্শ দেবে, ঠিক সেভাবেই আমরা কাজ করব।’
পিইসি বলছে, প্রস্তাবিত নগর ভবনের নকশা পর্যালোচনাপূর্বক পুনরায় নকশা করতে হবে। পিইসিতে জানতে চাওয়া হয়, কনফারেন্স হল ভাড়া দিলে নগর ভবনের কর্মপরিবেশের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না। তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি মসিক।
ডিপিপিতে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জনবল অনুযায়ী প্রতি ফ্লোরে কক্ষসংখ্যা, কক্ষের আয়তন, কক্ষ ব্যবহারকারী কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি ফ্লোর প্ল্যানও দেওয়া হয়নি। পিইসির সভায় বলা হয়েছে, এসব বিষয় উল্লেখ করে ফ্লোর প্ল্যানসহ ধারণাগত ডিজাইন পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযোজন করতে হবে।
তা ছাড়া, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভাড়া দেওয়ার জন্য নির্ধারিত স্থানের বুকিং মানি বাবদ প্রথম বছর মোট বার্ষিক আয়ের ২৫ শতাংশ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ভাড়া বাবদ বর্তমানে যা পাওয়া যাবে বলে ধরা হয়েছে তা ৫ বছর পর পর ৫৫ শতাংশ করে বাড়বে। প্রকল্প প্রস্তাবে দেখা যায়, ২২ হাজার ১৫৯ দশমিক ১৬ বর্গমিটার নগর ভবন (নিচতলা থেকে ৫তলা) নির্মাণের জন্য ৯৬ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং নগর ভবন (সার স্ট্রাকচার) খাতে ৫ হাজার ৬০৬ দশমিক ৭৮ বর্গমিটারের জন্য ৮১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।
পিইসি সভায় বলা হয়, ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল, ১৬টি লিফট, ফায়ার ফাইটিং, এয়ার কন্ডিশন, সাব-স্টেশন, জেনারেটর ইত্যাদির জন্য যে প্রাক্কলনের প্রস্তাব করা হয়েছে তা অত্যধিক। এ ছাড়া এয়ার কন্ডিশনার, সাব-স্টেশন, জেনারেটর প্রভৃতি বর্গমিটার প্রতি ব্যয় প্রাক্কলন করা হলেও সংখ্যা ও স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করা হয়নি। এসব খাতের স্পেসিফিকেশনসহ বিস্তারিত ব্যয় পুনঃ পর্যালোচনাপূর্বক পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযোজনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পিইসি সভায় প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার যৌক্তিকতা সম্পর্কে মসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী জানান, বর্তমানে সিটি করপোরেশনকে ৮ লক্ষাধিক নাগরিকের বিভিন্ন সুবিধা দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন, ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে প্ল্যান অনুমোদন, সড়কবাতি, পানি সরবরাহ, টিকাদান, জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারিশান সনদ, বিবাহ সনদসহ অন্যান্য সেবা। তিনি জানান, পর্যাপ্ত অবকাঠামোর ব্যবস্থা না থাকায় সিটি করপোরেশনকে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মসিকের সাংগঠনিক কাঠামোতে মোট ১১টি বিভাগ নিয়ে ৬৩০ জন কর্মচারীর ব্যবস্থা রেখে সাংগঠনিক কাঠামো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং পরে অর্থ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে।
‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নগর ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের ওপর ২৫ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকঠামো বিভাগের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।
ছুটির দিনে শিশুদের উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ ছিল বইমেলা। শিশু প্রহরের পর বইমেলায় নামে জনস্রোত। গতকাল তুলনামূলক বেশি বই বিক্রিতে লেখক-প্রকাশকের মুখে ছিল হাসি। শুধু লেখক-প্রকাশক নয়, পাঠকরাও মেলায় এসে বেশ তৃপ্ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, টিএসসি থেকে মেলার গেট পর্যন্ত লম্বা লাইনে দাড়িয়েছিল দর্শনার্থী-পাঠকরা। ভেতরে গিয়েও দেখা যায়, স্টলগুলোর সামনে ভিড়। পাঠকরা বই দেখছেন, কিনছেন। ছুটির দিনেই মেলা যেন পেল তার চিরচেনা রূপ। সকালে শিশুপ্রহরে তাদের মাতিয়ে রেখেছে সিসিমপুরের হালুম, টুকটুকি, ইকরি।
এদিন ঢাকার বাইরে থেকেও অনেকে এসেছিলেন বইমেলায়। টাঙ্গাইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেলায় এসেছেন একদল শিক্ষার্থী। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে তারা প্রিয় লেখকদের বই কিনেছেন। নতুন কী বই কিনলেন জানতে চাইলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, হুমায়ূন আহমেদ, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, মাসুদ রানার বই ছাড়াও কবিতার বই কিনেছি।
অনন্যা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজকে সকাল থেকেই মেলায় প্রচুর মানুষ আসছেন। গত কয়েক দিনের তুলনায় আজকে সব থেকে বেশি বই বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
তবে শুক্রবার মেলা প্রাঙ্গণ ছিল ধূলিময়। অনেক দর্শনার্থীকে মাস্ক পরে ও নাকে হাত দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ছিটানো হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন মেলায় আগত দর্শনার্থীদের।
নতুন বই: গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার দশম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। নতুন বই এসেছে ২৬০টি। মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছিল।
শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা : অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল ৮:৩০টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে ক-শাখায় ১৯৫, খ-শাখায় ১৮৩ এবং গ-শাখায় ৬৮ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন শিল্পী হাশেম খান।
শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা : সকাল ৯:৩০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তেন শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই শতাধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন কাজী মদিনা, আন্জুমান আরা ও নূরুল হাসনাত জিলান।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ এবং জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : এস এম সুলতান’ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মলয় বালা ও সৈয়দ নিজার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুশান্তকুমার অধিকারী, ইমাম হোসেন সুমন, নাসির আলী মামুন ও নীরু শামসুন্নাহার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুনতাসীর মামুন।
আজকের সময়সূচি : আজ ২৮ মাঘ ১৪২৯/১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার। অমর একুশে বইমেলার ১১তম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
শিশুপ্রহর : আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর চলবে।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা : সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তেন শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : আশরাফ সিদ্দিকী এবং স্মরণ সাঈদ আহমদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইয়াসমিন আরা সাথী ও মাহফুজা হিলালী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন উদয়শংকর বিশ্বাস, শামস্ আল দীন, রীপা রায় ও আব্দুল হালিম প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন খুরশীদা বেগম।
সেবার বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায় কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সঙ্গে প্রথম পরিচয় হলো আমার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখন আমি। মাথার মধ্যে কবিতা লেখার ভূত। প্রতিদিন বড় একটা গাছের ডালে বসে সেই ভূত পা নাচায় আর আমি রাত্রিবেলা শহরের মাথায় ফুটে থাকা চাঁদ দেখে ভাবি, কবিতা লিখে একদিন তোমাকেও ছুঁয়ে দেব চাঁদ।
রুদ্রদাকে ক্যাম্পাসে দেখে আমার মনে হতো কবিদের যুবরাজকে দেখছি। দাড়িপূর্ণ মুখ, উজ্জ্বল দৃষ্টি আর ঝকঝকে হাসিতে মোড়া এমন কবির অবয়ব আজকাল অনুপস্থিত। মাঝেমধ্যে মনে হয়, এ ঢাকা শহরটা একদা কবিদের শহর ছিল। চায়ের দোকান, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বইমেলা, পত্রিকা অফিসে সাহিত্য সম্পাদকের দপ্তর, কবিতা উৎসব থেকে মিছিল কোথায় কবিরা নেই তখন! শহরের যেকোনো নরম নিভৃতিকেও চমকে দিতে পারত তখন কবিরা।
রুদ্রদার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়ের পর্দা উঠেছিল অমর একুশে বইমেলায়। পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল সিনিয়র বন্ধু প্রয়াত সাংবাদিক, গল্পকার মিনার মাহমুদ। তারা বন্ধু ছিলেন। আজও মনে পড়ে, মিনার ভাই খুব ক্যাজুয়ালি পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার স্বভাবসুলভ শ্লেষের হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলেছিলেন ও কবিতা করে। মিনার ভাই প্রকাশ্যে কবিদের প্রতি সবসময় টিপ্পনী কাটতেন এ কথাটা বলে। তখন একরোখা আর রাগী তরুণ আমি প্রথম পরিচয়েই রুদ্রদার তুমি সম্বোধনে ক্ষিপ্ত হয়েছিলাম। ভাবটা এমন ছিল, দুজনই তো কবি; প্রথম পরিচয়ে তুমি সম্বোধন করার কী আছে! মনে আছে আজও, রুদ্রদাকে বলেছিলাম, ‘আপনার সঙ্গে তো আমার এমন কোনো ঘনিষ্ঠতা নেই যে তুমি বলবেন আমাকে।’ সেদিন খুব বিস্মিত হয়ে হেসে ফেলেছিল রুদ্রদা। তার ঝকঝকে হাসি ছড়িয়ে পড়েছিল ফেব্রুয়ারির মরে আসা বিকেলে বাংলা একাডেমির মূল ভবনসংলগ্ন বইমেলার মাঠে। পরিচয়ের প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে আমাদের সম্পর্ক তারপর অনেকটা পথ হেঁটেছিল হাকিম চত্বর হয়ে মেডিকেল কলেজের মোড় ঘুরে নিমতলীর দিকে, নারিন্দা সুইপার কলোনির ম্লান বিকেলে অথবা তার প্রিয় পানশালা সাকুরায়। তার পাঞ্জাবির পকেটে বহুদিন হাসির গল্প হয়েই ছিল ঘটনাটা। রুদ্রদা ক্ষ্যাপাতো আমাকে মাঝেমধ্যে। তখন একবারের জন্য মনে হয়নি, ভোরবেলা কবি তারিক সুজাতের টেলিফোন আমাকে ডেকে তুলে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দেবে রুদ্রদার নিথর দেহের সামনে!
খুব বেশি সময় আগের কথা নয় কিন্তু। বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজের চারপাশ ঘিরে পর্দা উঠত অমর একুশে বইমেলার। মাঝখানে শুকিয়ে যাওয়া একটা পুকুর ঘিরে প্রকাশকদের স্টল। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে উতলা হতো বাতাসও। তখন বইমেলায় কত ঘটনা যে ঘটত! একবার শুনতে পেলাম, প্রাবন্ধিক আহমদ ছফা একটা ছুরি নিয়ে ঘুরছেন একজন কবিকে ছুরি মারবেন বলে। সেই কবির অপরাধ তার কবিতা হয় না। সেই কবিও প্রাণভয়ে পলাতক মেলা থেকে। পরে ছফা ভাইয়ের কাছেই জানা গেল, সেই ছুরি আসলে নেইল কাটারের সঙ্গে সংযুক্ত। কখনো কখনো ছফা ভাই অন্যদের সঙ্গে ভীষণ রসিকতা করতেন!
প্রয়াত কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার একদা বাংলা একাডেমির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। বইমেলায় প্রতিদিন বিকেল হতো মাইকে রশীদ ভাইয়ের কণ্ঠ শুনে। মেলায় প্রকাশিত হওয়া নতুন বইয়ের পরিচিতি দিতেন তিনি। আমরা নিয়মিত রশীদ হায়দার ভাইয়ের ভারী কণ্ঠস্বর নকল করে কথা বলতাম। মেলা প্রাঙ্গণে গোপন ধূমপায়ীদের রশীদ ভাই অনুসরণ করতেন গোয়েন্দা পুলিশের মতো। একাডেমির আনাচে-কানাচে ঝড়ের মতো আবির্ভূত রশীদ ভাইকে দেখে কতদিন পালিয়ে গেছি হাতের সদ্য প্রজ¦লিত সিগারেট ফেলে!
বইমেলায় সন্ধ্যা থেকেই প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক আর কবিদের আগমন ঘটত। চাপা জিন্সের প্যান্ট আর উজ্জ্বল রঙের টি-শার্ট পরিহিত রফিক আজাদ আসতেন হেলতে-দুলতে। মহাদেব সাহা যথারীতি পাজামা-পাঞ্জাবিতে শোভিত। কবি হেলাল হাফিজকে দেখতাম কাঁধে কাপড়ের ব্যাগ ঝুলিয়ে মগ্ন হয়ে হেঁটে যেতে। তখন বইমেলায় নিয়মিত আসতেন সত্তর এবং আশির দশকের উজ্জ্বল কবিদের দল। জাহিদ হায়দার, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, কামাল চৌধুরী, তুষার দাশ, ফরিদ কবির, মাহমুদ শফিক, মুজিবুল হক কবির, মোহন রায়হান প্রমুখ। কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের, গল্পকার ফারুক মঈনুদ্দিন, ইসহাক খান, মিনার মাহমুদ সন্ধ্যার পর নিয়মিত আড্ডা দিতেন মেলায়। ছোট ছোট জটলায় চাল ভাজার মতো মুচমুচে আড্ডার স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে আমাকে। মিনার মাহমুদ সেই আড্ডার নাম দিয়েছিলেন ‘খোঁচাখুঁচি’। সাহিত্য, রাজনীতি, ভালো লেখা, সিনেমা, সমাজ অর্থনীতি আর তীব্র পরচর্চা ঝড় তুলত। কোনো কোনো দিন চাঁদা তুলে ‘কঠোর পানীয়’ কিনে গোপনে তা গলাধঃকরণ করা হতো। মনে পড়ে, সেই উল্টোপাল্টা আলোর স্রোতে ভাসা সন্ধ্যাগুলোতে নিয়মিত সঙ্গ দিতেন সাংবাদিক খায়রুল আনোয়ার, সৈয়দ শহীদ।
প্রয়াত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ আশির দশকের মাঝামাঝি মেলায় এসে পাঠকদের বইতে স্বাক্ষর দিতে শুরু করলেন। একবার তার স্বাক্ষর নিতে উৎসাহী পাঠকদের ভিড়ের চাপে প্রতীক প্রকাশনীর স্টল প্রায় ভেঙে পড়েছিল। কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলনকে বিকেল থেকে দেখা যেত স্টলে বসে একমনে স্বাক্ষর দিয়ে চলেছেন পাঠকদের। স্বাক্ষর নিতে আসা পাঠকদের লম্বা লাইন সামলাতে তখন হিমশিম খেতে হতো ভলান্টিয়ারদের। এরকম দৃশ্য দেখে প্রয়াত ভাষাবিজ্ঞানী, কবি ড. হুমায়ুন আজাদের শ্লেষযুক্ত তীব্র উক্তিগুলো আজও যেন ফেব্রুয়ারির গা ছম ছম করা হাওয়ায় হুল ফোটায়।
তখন বইমেলার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বাইরের ফুটপাত, টিএসসির মোড় আর শাহবাগে আড্ডাগুলো সম্প্রসারিত হতো। পাঠকরা বই কিনে বাড়ি ফিরতেন আর আমাদের মতো কিছু লেখক হতে চাওয়া তরুণ সেই আড্ডাগুলোর ভেতরে নিজেদের আরও কিছুক্ষণ গুঁজে দিতে চাইতাম। রাত গভীর হতো। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গভীর অন্ধকার থেকে ভেসে আসত বনজ ঘ্রাণ। শীত করত কারও কারও। ঢাকা শহরের রাজপথে কমে যেত যানবাহন। বিচ্ছিন্ন রিকশা দাঁড়িয়ে থাকত বইমেলা থেকে শেষ সওয়ারি ধরার অপেক্ষায়।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শিরিনা খাতুনের প্রাইভেট কারের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের শৈলকুপার মদনডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। উম্মে রুকাইয়া (১১) নামে ওই স্কুলছাত্রীকে ধাক্কা দেওয়ার পর তার প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা না করে প্রাইভেট কারটি নিয়ে চালক ও শিক্ষক শিরিনা খাতুন দ্রুত পালিয়ে যান। এ শিক্ষকের দাবি, গাড়ির গতি বেশি থাকায় চালক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি। বিষয়টি তাকে মর্মাহত করেছে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে আরও আটজনের। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে প্রায় ৫০ জন। এর মধ্যে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ট্রাক্টরে পিষ্ট হয়ে কৃষি কর্মকর্তা, জয়পুরহাটের কালাইয়ে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী, নীলফামারীতে পিকআপের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে স্কুলের পিকনিকের বাস খাদে পড়ে দুজন, জামালপুরে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে পিকআপ ভ্যানের চালক, সাতক্ষীরায় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে কিশোর এবং খুলনায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন।
শৈলকুপায় নিহত উম্মে রুকাইয়া ত্রিবেনী ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মনোয়ার হোসেনের মেয়ে। সে শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
এলাকাবাসী জানায়, দুপুর ১২টার দিকে রুকাইয়া তার সহপাঠীর সঙ্গে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে একটি দ্রুতগামী প্রাইভেট কার তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রুকাইয়াকে। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে সন্ধ্যায় মারা যায়।
নিহতের চাচা ফিরোজ বলেন, ‘স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতির গাড়ি আমার ভাতিজিকে ধাক্কা দেয়। পরে গাড়িটিকে গাড়াগঞ্জ বাজারে আটক করা হয়। কিছুক্ষণ কথা বলার পর তিনি (শিরিনা খাতুন) গাড়ি নিয়ে দ্রুত চলে যান। রুকাইয়াকে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিরিনা খাতুন বলেন, ‘ঘটনাটি অনাকাক্সিক্ষত ছিল। গাড়ির গতি বেশি থাকায় ড্রাইভার কন্ট্রোল করতে পারেনি। বিষয়টি আমাকে মর্মাহত করেছে।’
শৈলকুপা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি সত্য। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।’
কোটচাঁদপুরে ট্রাক্টরে পিষ্ট কৃষি কর্মকর্তা : ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের তালসার এলাকায় ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক কৃষি কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে তালসার সড়কের ফুলবাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত এস কে লতিফুল কবির কোটচাঁদপুরের কুশনা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের বাদপুকুর গ্রামের তের আলীর ছেলে।
কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহাসীন আলী জানান, কৃষিমেলা উপলক্ষে উপজেলা অফিসে সভা ছিল। সভা শেষে মোটরসাইকেলে নিজের বাড়ি বাদপুকুরে ফিরছিলেন। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা স্থানীয় একটি ইটভাটার ট্রাক্টর তাকে চাপা দেয়। পরে এলাকার লোকজন উদ্ধার করে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জয়পুরহাটে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর মৃত্যু : জয়পুরহাটের কালাইয়ে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নজরুল ইসলাম (৭২) নামে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। ওই ঘটনায় মোটরসাইকেলটির চালক গুরুতর আহত হন। গতকাল দুপুরে জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কের হাজিপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নজরুল ইসলাম কালাই উপজেলার হাজিপাড়া গ্রামের মৃত নইমুদ্দিনের ছেলে।
গুরুতর আহত মোটরসাইকেল চালক শান্ত ইসলাম (২০) জেলার আক্কেলপুর উপজেলার ভান্ডারিপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ও পুলিশ জানায়, শান্ত মোটরসাইকেল চালিয়ে জয়পুরহাট থেকে বগুড়ার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে হাজিপাড়া মোড়ে রাস্তা পারাপারের সময় নজরুল ইসলামকে ধাক্কা দেয় ওই মোটরসাইকেলটি। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনায় দুর্ঘটনাস্থল থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা ছিনতাই : নীলফামারীতে পিকআপের ধাক্কায় তানভীর আহমেদ জনি (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ সময় কাজী আবদুর রাজ্জাক নামে আরও এক মোটরসাইকেল আরোহী আহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই এই নিহত ও আহতের কাছে থাকা সাড়ে ৯ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কের কাদিখোল এলাকার ইকু জুট মিলের ৫০০ গজ দূরে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, নিহত তানভীর আহমেদ জনি ইকু জুট মিলের হিসাবরক্ষক ও পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরের বাঘাচড়া গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে। আর আহত আবদুর রাজ্জাক (৩৮) ইকু জুট মিলের কম্পিউটার অপারেটর। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ভর্তি করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ইকু জুট মিলের স্বত্বাধিকারী সিদ্দিকুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, মিলের হিসাবরক্ষক জনি ও কম্পিউটার অপারেটর রাজ্জাক রাত ৯টার দিকে সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়ায় ইকু গ্রুপের অফিস থেকে ব্যাংক থেকে তুলে আনা মিলের কর্মচারীদের সাপ্তাহিক বেতনের সাড়ে ৯ লাখ টাকা একটি চটের বস্তায় ভরে মোটরসাইকেলে মিলের উদ্দেশে রওনা হন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইকু জুট মিলের ৫০০ গজ অদূরে পৌঁছলে পেছন দিক থেকে একটি পিকআপ ভ্যান তাদের মোটরসাইকেলে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান জনি। গুরুতর আহত হন রাজ্জাক। তখন পিকআপের পেছনে থাকা অন্য একটি মোটরসাইকেলে থাকা ছিনতাইকারীরা ওই টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়।
নীলফামারী সদর থানার ওসি আবদুর রউপ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পিকআপটি জব্দ করলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের পিকনিকের বাস খাদে : যশোরের বাঘারপাড়ার বাকড়ী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পিকনিকের বাস দুর্ঘটনায় পড়ে দুজন নিহত ও ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। পিকনিক শেষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে ফেরার পথে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত প্রায় ২০ জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে মারা যান বিদ্যালয়টির ল্যাব সহকারী সুদীপ্ত বিশ্বাস (৩৫)। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে নিহত হন বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস (৪৫)।
বাকড়ী বহুমুখী বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিশ্বজিৎ কুমার পাল জানান, তারা বৃহস্পতিবার সকালে তিনটি বাসে করে ১৫০ জন টুঙ্গিপাড়ায় পিকনিকে যান। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সদস্যরা ছিলেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পিকনিক শেষে ফেরার পথে ভাটিয়াপাড়া মোড়ে তাদের পিকনিকের বাসগুলোর একটি অন্য একটি বাসকে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। বাসটিতে ৫০ জন ছিলেন।
জামালপুরে বাস-পিকআপ ভ্যান সংঘর্ষে চালকের মৃত্যু : জামালপুর সদর উপজেলায় বাস-পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পিকআপ ভ্যানটির চালক মির্জা তৌফিক তানভির সৌরভ (৩৪) নিহত হন। এ সময় বাসের দুই যাত্রী আহত হয়েছেন। গতকাল সকালে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শরিফপুর ইউনিয়নের জয়রামপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সৌরভ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কিষ্টপুর গ্রামের মির্জা তপির ছেলে।
জামালপুর সদর থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ জানান, সকালে জামালপুর থেকে ঢাকাগামী রাজীব পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পিকআপ ভ্যানের চালক সৌরভ ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে।
সাতক্ষীরায় মোটরসাইকেল আরোহী এক কিশোর নিহত : সাতক্ষীরার গোপীনাথপুরে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক কিশোর নিহত ও দুই যুবক আহত হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ মো. ফকরুল আলম খান জানান, গতকাল দুপুরে সাতক্ষীরা থেকে খুলনার দিকে যাওয়ার সময় গোপীনাথপুর ঋষিপল্লীর সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে শেখ জুবায়ের হোসেন (১৫) নামে এক কিশোর ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সে সাতক্ষীরার ইটাগাছা গ্রামের শেখ কবিরুজ্জামানের ছেলে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন রশীদ ও তরিকুল নামে দুই যুবক।
খুলনায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত : খুলনায় ট্রাকের ধাক্কায় মিঠুন চৌধুরী নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে নগরীর রূপসা বাইপাস সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মিঠুন দীঘলিয়া উপজেলার লাখোহাটি গ্রামের নাসিম চৌধুরীর ছেলে। এ ঘটনায় একই এলাকার রেজাউল শেখের ছেলে মো. মামুন গুরুতর আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মোটরসাইকেলে মিঠুন ও মামুন আড়ংঘাটা সড়ক দিয়ে বাইপাস রোডে ওঠার চেষ্টা করে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামীর একটি ট্রাক মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে তারা রাস্তার ওপর ছিটকে পড়ে মাথায় আঘাত পান। আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিঠুনের মৃত্যু হয়। পরে আহত মামুনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
* প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন ইবি এবং সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর পূর্ণ হলো আজ শনিবার। আলোচিত এই হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় একের পর এক তদন্ত সংস্থা আর তদন্ত কর্মকর্তা বদলেছে। তবে রহস্যের জট খোলেনি। এখনো আসামি শনাক্তকরণ, জব্দ করা আলামত পরীক্ষা ও নিহতদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের পর্যায়েই আটকে আছে তদন্ত। যদিও র্যাবের পক্ষ থেকে বরাবরের মতো দাবি করা হচ্ছে, মামলার দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু অতীতের মতোই এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিটটি। উল্টো ৯৫ বার পেছানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ।
এমন পরিস্থিতিতে নিহতদের স্বজনরা বলছেন, দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা এ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ৪৮ ঘণ্টা ১১ বছরেও শেষ হলো না। আর কবে খুনিরা ধরা পড়বে? কবে রহস্যের জট খুলবে?
রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ৫৮/এ/২ বাড়ির পঞ্চমতলার এ-৪ ফ্ল্যাটে ১১ বছর আগে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার এক কর্মকর্তা। ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর। তবে এর দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাবকে। সেই থেকে ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, ‘১১ বছরেও কোনো অগ্রগতি নেই, আর কবে হবে। কোনো অগ্রগতি হবে না। আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছি। শুধু এতটুকু বলতে পারি, তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে কাজ করছেন না। আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছেন। অথচ প্রতি বছর তারা নিয়মমাফিকভাবে বলে আসছেন, দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই নয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আদালতও যেখানে বারবার সময় দিচ্ছেন, সেখানে আমাদের আর কী বলার আছে! তবে জট খোলার চেষ্টা না করলে জট খুলবে না, এটাই স্বাভাবিক।’
এ ব্যাপারে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যার বিচার যে পাইনি তা নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। এ বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বিচারের দাবি জানিয়ে যাবে। বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে ডিআরইউ নেতারা স্মারকলিপি দিয়েছে।’
এদিকে সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল শুক্রবার সকালে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে সাংবাদিকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম, বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, ডিইউজের সিনিয়র সহসভাপতি এমএ কুদ্দুস, সাংগঠনিক সম্পাদক জিহাদুর রহমান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জামিউল আহসান সিপু, মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রাশেদ আহমেদ, বার্তা সম্পাদক শাহ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ প্রমুখ।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত কোনো হত্যার ঘটনায় করা মামলার তদন্তে নেমে তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ খোঁজেন। এরপর আসামি শনাক্তকরণের চেষ্টা করেন, কোনো ধরনের ক্লু পেতে জব্দ করা আলামত পরীক্ষা ও হত্যার শিকার ব্যক্তির খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা করেন। এসব একটি মামলা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ের কার্যক্রম, ১১ বছর তদন্তের পরও সাগর-রুনি হত্যা মামলা ঠিক এমন প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। এখনো আসামি শনাক্তকরণ, জব্দ করা আলামত পরীক্ষা ও নিহতদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের চেষ্টায় রয়েছে তদন্ত সংস্থা।
র্যাব মামলার তদন্তে নেমে গ্রেপ্তার আট আসামি, নিহত দুজন এবং তাদের স্বজন মিলে ২১ জনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) পরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো হাতে পেয়েছে র্যাব। সেই প্রতিবেদন ও অপরাধচিত্রের প্রতিবেদন (ক্রাইম সিন রিপোর্ট) পর্যালোচনায় দুজনের ডিএনএর পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল পাওয়া গেছে। তবে এসব পরীক্ষায় সন্দেহভাজন খুনি শনাক্ত হয়নি। এ মামলায় গ্রেপ্তার আটজনের মধ্যে পাঁচজন রফিকুল, বকুল, সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুণ মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র রায় হত্যার সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তার দেখানো হয় সাগর-রুনির পারিবারিক বন্ধু তানভীর এবং তাদের বাসার নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও হুমায়ুন কবীরকে। সবাই হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন।
আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘মামলাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এ মামলা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। এর জন্য বিদেশে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নিয়েছি। বিদেশে ডিএনএ টেস্টের সহযোগিতা নিয়েছি। এখন পর্যন্ত তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করছি। প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করার জন্য একটু সময় লাগছে।’
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
নির্বাচনের রাজনীতি একটা বিজ্ঞান এখানে হিসাব খুব জটিল। ভুল হলে গরল। গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কার পরাজয় হয়েছে? বিশেষ করে জাহাঙ্গীর আলমের ভাষায় ‘এটি নৌকার নয় বরং ব্যক্তি আজমত উল্লার পরাজয়’ মন্তব্যটি আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অন্যদিকে নেটিজেনদের ঠাট্টা সুষ্ঠু ভোটের জন্য আমেরিকার চাপে প্রথম ‘বলি’ হলেন আজমত উল্লা। জাহাঙ্গীর ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন তাকে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, তাই মাকে প্রার্থী করে রাখেন। তার এ কৌশলী সিদ্ধান্তের কাছে আওয়ামী লীগ হেরেছে। বাংলাদেশে এতদিন উত্তরাধিকারের রাজনীতির সংস্কৃতিতে বাবা কিংবা মায়ের আসনে সন্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতেন। এবার তার উল্টোটা ঘটতে দেখা গেল।
আওয়ামী লীগ ভেবেছিল জাহাঙ্গীরের মা অখ্যাত। ছেলের মতো প্রভাব ফেলতে পারবেন না তিনি। হালকাভাবে নেওয়াটা আওয়ামী লীগের ভুল ছিল। বহুদিন ধরে তারা এ কাজটি করে আসছে। ‘প্রতিপক্ষকে কখনো দুর্বল ভাবতে নেই’, কথাটা দলটি ভুলে গেছে। প্রার্থী হওয়ার আগে জাহেদা খাতুনকে রাজনৈতিক-সামাজিকভাবে গাজীপুরের মানুষ চিনত না, নির্বাচন তো দূরের কথা কোনো রাজনৈতিক কমর্সূচিতে তিনি ছিলেন না। জাহাঙ্গীর তার সেই মায়ের পক্ষে আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটকে একাট্টা করেছেন। নীরব সমথর্কদের সংগঠিত করেছেন। তিনি তার মাকে নিয়ে সাধারণ ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে গেছেন, কান্নাকাটি করেছেন। সহানুভূতি আদায় করেছেন। আর আজমত উল্লা ভোটারদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন না, হয়তো নানাশক্তির ওপর তিনি নির্ভরশীল ছিলেন। প্রতিপক্ষকে খুব একটা হিসাবে ধরেননি। এটা ছিল ক্ষমতাসীনদের ভুল।
এটা ঠিক, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের কাছে এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার চ্যালেঞ্জ ছিল। সেই চ্যালেঞ্জকে অনেকটাই সামাল দিতে পেরেছে সরকার। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বিজয়ী হলেও সাধারণ মানুষকে আস্থায় নিয়ে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বৈতরণী পার হতে পারবে কি না সেই প্রশ্নটা এখন সামনে চলে এসেছে। আমার মনে হয়, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তিকর সতর্ক সংকেতও। আওয়ামী লীগের ভেতর আরেকটি আওয়ামী লীগ তৈরি হয়েছে, সেটাও প্রমাণ হয়েছে এ নির্বাচনে। এরা যে কখন আওয়ামী লীগের ভেতর প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, এটা দলটি ধারণা করতে পারেনি। এখন যারা আওয়ামী লীগ করেন তাদের বেশিরভাগই তা করেন স্বার্থসিদ্ধির জন্য, দলের আদর্শের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি খুব ক্ষীণ এটাও এ নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ছিল অতি আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলটির কারও কারও মধ্যে অহংকার এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস বিপজ্জনকভাবে পর্যায়ে চলে গেছে। তারা মনে করেন দল যাকে মনোনয়ন দেবে তাকে প্রভাব খাটিয়ে জিতিয়ে আনবে। গাজীপুরেও সেই প্রবণতা দেখা গেছে। যার কারণে যেভাবে গুরুত্ব সহকারে মাঠে কাজ করার দরকার ছিল, সেভাবে তারা গাজীপুরে কাজ করেননি। রাজনীতি হুমকি, ধমকের বিষয় নয়। একটি সমঝোতার কৌশল। এ চিরন্তন সত্যটা আওয়ামী লীগ ভুলেই গেছে। ভয় দেখিয়ে, প্রভাব খাটিয়ে রাজনীতিতে জয়ী হওয়া যায় না।
জাহাঙ্গীর ও তার মা যখন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেন, তখন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা ‘দমননীতির’ কৌশল নিয়েছিল। ভোটের আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা, দুদকে তলব, প্রচারের সময় গাড়ি ভাঙচুর, পেশিশক্তি প্রয়োগ সবই জনগণের মধ্যে জায়েদা খাতুনের পক্ষে এক ধরনের সহানুভূতি তৈরি করেছে। ভোটের দিন দেখা গেছে, নৌকার কার্ড গলায় ঝুলিয়ে তারা ঘড়ি মার্কায় ভোট দিয়েছেন।
গাজীপুরে পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললাম। তারা জানাল ব্যক্তি জাহাঙ্গীর আলমের ইমেজ ও তার উন্নয়ন কাজ নগরবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। তাদের ধারণা, তাকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে থমকে যাবে উন্নয়ন কাজ। নানা ষড়যন্ত্র ও প্রতিহিংসার শিকার হলেও জাহাঙ্গীরের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা অটুট।
জাহাঙ্গীর আলমের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনের কারণেই তার মায়ের বিজয় সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঋণখেলাপির দায়ে তার প্রার্থিতা বাতিল হবে এটা জানত জাহাঙ্গীর। তাই তার পক্ষে মা জায়েদা খাতুনকে তিনি মেয়র পদে দাঁড় করান। সাধারণ নারী ভোটারদের অকুণ্ঠ সমর্থন, শ্রমিকদের মধ্যে জাহাঙ্গীরের জনপ্রিয়তাও জায়েদা খাতুনের জয়ে ভূমিকা রাখে। এছাড়া নির্বাচনের প্রচারে কয়েক দফা হামলা, বাধা দেওয়ার বিষয়টি মানুষের নজর কেড়েছে। ফলে মানুষ অনেকটা বিরক্ত হয়েই আজমত উল্লা খানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। বিরোধী শিবিরের ভোটও পড়েছে জাহাঙ্গীরের মায়ের ব্যালটে। জায়েদা খাতুন যেসব আসনে এজেন্ট দিতে পারেননি, সেখানেও জিতেছেন তিনি। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় তারা ও তাদের শরিকরা জায়েদা খাতুনের প্রতীকে ভোট দিয়েছেন।
আজমত উল্লা মার্জিত, বিনয়ী ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে গাজীপুরের রাজনীতিতে পরিচিত হলেও তার বিরুদ্ধে জনবিচ্ছিন্নতার অভিযোগ রয়েছে। ভোটারদের সঙ্গে পর্যাপ্ত যোগাযোগের অভাব, দলীয় কোন্দল এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের উদাসীনতাও রয়েছে। জাহাঙ্গীরের তুলনায় নির্বাচনের প্রচারে নৌকার প্রার্থী তেমন একটা টাকা খরচ করেননি।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আওয়ামী লীগের বিভক্তি। সেই বিভক্তি নির্বাচনের আগে অতটা দেখা না গেলেও ভোটের দিন প্রকাশ পেয়েছে। প্রচারেও ছিল গাফিলতি। অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের কারণে ঢিলেমি ছিল প্রচারণায়। বড় বড় শোডাউন এবং রোড শো করলেও মানুষের দ্বারে দ্বারে যাননি। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একাধিক নেতা পরাজয়ের কারণ হিসেবে বলছেন, দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে ভেতরে ভেতরে দ্বন্দ্ব, গ্রুপিং। এতে আওয়ামী লীগের ভোট দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের একাংশ গোপনে ঘড়ির পক্ষে কাজ করেছে। নৌকার প্রার্থী তা আগে ধরতে পারেননি। ভোটের পর আজমত উল্লা বলেছেন, দলে থাকা বেইমানদের গাদ্দারিতে হেরেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামো ও নির্বাচনী ব্যবস্থাটি এমন জায়গায় চলে গেছে যে, কার চেয়ে কে কতটা যোগ্য ও ভালো মানুষ সেটি তার জয়-পরাজয় নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষ এখন ভোট দেয় কিছু পাওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং অনেক সময় ভোট দিয়ে তার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যে কারণে দেখা যায়, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকের বাইরে থাকা বিপুল ভোটারের অনেকেই সুযোগ পেলেই ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে নিরুৎসাহিত হন। আবার ক্ষমতাবানের কাছ থেকে তার কমিউনিটির অনেক মানুষ যেমন উপকৃত হন, তার বিপরীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বঞ্চিত এবং নানাভাবে নির্যাতিতও হন। ফলে তারা ভোটের সময় ‘দেখিয়ে দেওয়া’র অপেক্ষায় থাকেন। এ দেখিয়ে দেওয়ার ব্যাপারগুলো গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঘটেছে। মানুষের ক্ষোভের আঁচটা যে মাত্রায় ছড়িয়েছে, এর প্রভাবটা এ নির্বাচনে পড়েছে। প্রশ্ন হলো এ জয় কি তাহলে মানুষের ক্ষোভের বিস্ফোরণ?
বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ হয়েছিল আওয়ামী লীগই। দলের মধ্যে একটা অংশ তো বিরুদ্ধে ছিলই। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এখন নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের রাজনীতি, অভ্যন্তীরণ দ্বন্দ্ব, জনগণের মনোভাব ইত্যাদি সম্পর্কে দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে যে সঠিক তথ্য নেই, সেটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনগুলোতেও যদি এরকম অন্তঃকলহ থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য গাজীপুরের মতোই পরিণতি অপেক্ষা করছে।
লেখক: প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।