
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর পূর্ণ হলো আজ শনিবার। আলোচিত এই হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় একের পর এক তদন্ত সংস্থা আর তদন্ত কর্মকর্তা বদলেছে। তবে রহস্যের জট খোলেনি। এখনো আসামি শনাক্তকরণ, জব্দ করা আলামত পরীক্ষা ও নিহতদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের পর্যায়েই আটকে আছে তদন্ত। যদিও র্যাবের পক্ষ থেকে বরাবরের মতো দাবি করা হচ্ছে, মামলার দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু অতীতের মতোই এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি পুলিশের বিশেষায়িত এই ইউনিটটি। উল্টো ৯৫ বার পেছানো হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ।
এমন পরিস্থিতিতে নিহতদের স্বজনরা বলছেন, দেশজুড়ে আলোড়ন তোলা এ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ৪৮ ঘণ্টা ১১ বছরেও শেষ হলো না। আর কবে খুনিরা ধরা পড়বে? কবে রহস্যের জট খুলবে?
রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ৫৮/এ/২ বাড়ির পঞ্চমতলার এ-৪ ফ্ল্যাটে ১১ বছর আগে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের আইনের আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সাগর-রুনি হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলী রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। প্রথমে মামলাটির তদন্ত করেন শেরেবাংলা নগর থানার এক কর্মকর্তা। ১৬ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্তভার পড়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের পরিদর্শক মো. রবিউল আলমের ওপর। তবে এর দুই মাস পর হাইকোর্টের আদেশে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় র্যাবকে। সেই থেকে ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো মামলার দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি।
মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বলেন, ‘১১ বছরেও কোনো অগ্রগতি নেই, আর কবে হবে। কোনো অগ্রগতি হবে না। আমরা আশা ছেড়ে দিয়েছি। শুধু এতটুকু বলতে পারি, তদন্ত কর্মকর্তা এ বিষয়ে কাজ করছেন না। আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছেন। অথচ প্রতি বছর তারা নিয়মমাফিকভাবে বলে আসছেন, দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কিছুই নয়।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আদালতও যেখানে বারবার সময় দিচ্ছেন, সেখানে আমাদের আর কী বলার আছে! তবে জট খোলার চেষ্টা না করলে জট খুলবে না, এটাই স্বাভাবিক।’
এ ব্যাপারে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যার বিচার যে পাইনি তা নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। এ বিচার না পাওয়া পর্যন্ত ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি বিচারের দাবি জানিয়ে যাবে। বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের কাছে ডিআরইউ নেতারা স্মারকলিপি দিয়েছে।’
এদিকে সাগর-রুনি হত্যার বিচারের দাবিতে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গতকাল শুক্রবার সকালে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সমাবেশ শেষে সাংবাদিকরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক খায়রুল আলম, বিএফইউজের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল, ডিইউজের সিনিয়র সহসভাপতি এমএ কুদ্দুস, সাংগঠনিক সম্পাদক জিহাদুর রহমান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মুরসালিন নোমানী, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জামিউল আহসান সিপু, মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক রাশেদ আহমেদ, বার্তা সম্পাদক শাহ মুহাম্মদ মুতাসিম বিল্লাহ প্রমুখ।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত কোনো হত্যার ঘটনায় করা মামলার তদন্তে নেমে তদন্ত কর্মকর্তা প্রথমে হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ খোঁজেন। এরপর আসামি শনাক্তকরণের চেষ্টা করেন, কোনো ধরনের ক্লু পেতে জব্দ করা আলামত পরীক্ষা ও হত্যার শিকার ব্যক্তির খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা করেন। এসব একটি মামলা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ের কার্যক্রম, ১১ বছর তদন্তের পরও সাগর-রুনি হত্যা মামলা ঠিক এমন প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। এখনো আসামি শনাক্তকরণ, জব্দ করা আলামত পরীক্ষা ও নিহতদের খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ উদ্ধারের চেষ্টায় রয়েছে তদন্ত সংস্থা।
র্যাব মামলার তদন্তে নেমে গ্রেপ্তার আট আসামি, নিহত দুজন এবং তাদের স্বজন মিলে ২১ জনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড (ডিএনএ) পরীক্ষার প্রতিবেদনগুলো হাতে পেয়েছে র্যাব। সেই প্রতিবেদন ও অপরাধচিত্রের প্রতিবেদন (ক্রাইম সিন রিপোর্ট) পর্যালোচনায় দুজনের ডিএনএর পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল পাওয়া গেছে। তবে এসব পরীক্ষায় সন্দেহভাজন খুনি শনাক্ত হয়নি। এ মামলায় গ্রেপ্তার আটজনের মধ্যে পাঁচজন রফিকুল, বকুল, সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুণ মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র রায় হত্যার সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তার দেখানো হয় সাগর-রুনির পারিবারিক বন্ধু তানভীর এবং তাদের বাসার নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও হুমায়ুন কবীরকে। সবাই হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন।
আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘মামলাটি অত্যন্ত সংবেদনশীল। এ মামলা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছি। এর জন্য বিদেশে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নিয়েছি। বিদেশে ডিএনএ টেস্টের সহযোগিতা নিয়েছি। এখন পর্যন্ত তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করছি। প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করার জন্য একটু সময় লাগছে।’
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জন্য ১৮তলা ভিতের ওপর ৫তলা নগর ভবন তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সিটি করপোরেশনের সরকারি কাজের চেয়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যই বেশি। এই ভবনের মাত্র কিছু অংশ সরকারি কাজের জন্য রেখে বেশির ভাগই ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো মসিকের প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এই প্রকল্পের কিছু খাতের অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর ব্যাখ্যা দিতে পারেননি মসিকের কর্মকর্তারা।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২৬৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২১৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ও মসিকের নিজস্ব অর্থায়ন ৫৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।
ডিপিপি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পে আরবরি কালচার খাতে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং সীমানাপ্রাচীর খাতে ৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। ৪০০ মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য এই প্রাক্কলন অত্যধিক বলছে পরিকল্পনা কমিশন; অর্থাৎ প্রতি মিটারে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ওয়ালের প্রতি মিটারে ব্যয় ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৫০ টাকা।
প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ৯৭ জনের জন্য ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরামর্শক নিয়োগের যৌক্তিকতা সম্পর্কে সিটি করপোরেশন জানায়, প্রকল্পের আওতায় ১৮তলা ভিতে আপাতত বেজমেন্ট এবং ৫তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হবে।
জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ভবনটি ভবিষ্যতে ১৮তলা হবে। বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় আমরা আপাতত ৫তলা করার প্রস্তাব দিয়েছি।’
৪০০ মিটারের ওয়ালে এত ব্যয়ের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশন আমাদের কিছু জিনিস রিভাইস করতে বলেছে। সেটি রিভাইস না হওয়া পর্যন্ত আমরা কিছু বলতে পারছি না।’
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, এনপিভি, বিসিআর ও আইআরআর-সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটি আর্থিকভাবে লাভজনক হলেও সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে এর সামঞ্জস্যতা নেই।
সিটি করপোরেশনের ২ দশমিক ২৯ একর নিজস্ব ভূমির ওপর ১৮তলা ভিতবিশিষ্ট প্রস্তাবিত নগর ভবনের আপাতত বেজমেন্ট এবং ৫তলা পর্যন্ত নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ভবনটি ৫তলার ওপর থেকে দুটি টাওয়ারে বিভক্ত হয়ে একটি টাওয়ার ১৮তলা পর্যন্ত এবং একটি টাওয়ার ১২তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারিত হবে। বেজমেন্ট এবং গ্রাউন্ডফ্লোরে প্রস্তাবিত ৩২৯টি গাড়ি পার্কিংয়ের মধ্যে ২০০টি পার্কিং স্পেস ভাড়া দেওয়া হবে। পেছনের টাওয়ারের ২য় থেকে ৫তলা পর্যন্ত কিছু স্পেস ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে। তা ছাড়া ৩য়তলায় প্রস্তাবিত কনফারেন্স রুম বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হবে এবং ১মতলায় ২ হাজার বর্গফুটের সেলস সেন্টার ভাড়া দেওয়া যাবে। বর্ণিত ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে আয় দেখানো হয়েছে।
১৮তলা ভিতবিশিষ্ট ভবনের ওপর ৫তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হলেও ডিপিপিতে এর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়নি, এটিকে ডিপিপিতে উল্লেখ করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
নগর ভবন ভাড়া দেওয়া প্রসঙ্গে ইউসুফ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের ভাড়া প্রসঙ্গে কিছু বিষয় সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। এটি নিয়ে আমরা আবার বসব। তবে সেলস সেন্টার ও কনফারেন্স রুম থাকবে। পরিকল্পনা কমিশন কর্মপরিবেশ নিয়ে কিছু ফিল করছে। তারা যেভাবে পরামর্শ দেবে, ঠিক সেভাবেই আমরা কাজ করব।’
পিইসি বলছে, প্রস্তাবিত নগর ভবনের নকশা পর্যালোচনাপূর্বক পুনরায় নকশা করতে হবে। পিইসিতে জানতে চাওয়া হয়, কনফারেন্স হল ভাড়া দিলে নগর ভবনের কর্মপরিবেশের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না। তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি মসিক।
ডিপিপিতে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জনবল অনুযায়ী প্রতি ফ্লোরে কক্ষসংখ্যা, কক্ষের আয়তন, কক্ষ ব্যবহারকারী কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি ফ্লোর প্ল্যানও দেওয়া হয়নি। পিইসির সভায় বলা হয়েছে, এসব বিষয় উল্লেখ করে ফ্লোর প্ল্যানসহ ধারণাগত ডিজাইন পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযোজন করতে হবে।
তা ছাড়া, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভাড়া দেওয়ার জন্য নির্ধারিত স্থানের বুকিং মানি বাবদ প্রথম বছর মোট বার্ষিক আয়ের ২৫ শতাংশ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ভাড়া বাবদ বর্তমানে যা পাওয়া যাবে বলে ধরা হয়েছে তা ৫ বছর পর পর ৫৫ শতাংশ করে বাড়বে। প্রকল্প প্রস্তাবে দেখা যায়, ২২ হাজার ১৫৯ দশমিক ১৬ বর্গমিটার নগর ভবন (নিচতলা থেকে ৫তলা) নির্মাণের জন্য ৯৬ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং নগর ভবন (সার স্ট্রাকচার) খাতে ৫ হাজার ৬০৬ দশমিক ৭৮ বর্গমিটারের জন্য ৮১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।
পিইসি সভায় বলা হয়, ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল, ১৬টি লিফট, ফায়ার ফাইটিং, এয়ার কন্ডিশন, সাব-স্টেশন, জেনারেটর ইত্যাদির জন্য যে প্রাক্কলনের প্রস্তাব করা হয়েছে তা অত্যধিক। এ ছাড়া এয়ার কন্ডিশনার, সাব-স্টেশন, জেনারেটর প্রভৃতি বর্গমিটার প্রতি ব্যয় প্রাক্কলন করা হলেও সংখ্যা ও স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করা হয়নি। এসব খাতের স্পেসিফিকেশনসহ বিস্তারিত ব্যয় পুনঃ পর্যালোচনাপূর্বক পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযোজনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পিইসি সভায় প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার যৌক্তিকতা সম্পর্কে মসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী জানান, বর্তমানে সিটি করপোরেশনকে ৮ লক্ষাধিক নাগরিকের বিভিন্ন সুবিধা দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন, ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে প্ল্যান অনুমোদন, সড়কবাতি, পানি সরবরাহ, টিকাদান, জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারিশান সনদ, বিবাহ সনদসহ অন্যান্য সেবা। তিনি জানান, পর্যাপ্ত অবকাঠামোর ব্যবস্থা না থাকায় সিটি করপোরেশনকে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মসিকের সাংগঠনিক কাঠামোতে মোট ১১টি বিভাগ নিয়ে ৬৩০ জন কর্মচারীর ব্যবস্থা রেখে সাংগঠনিক কাঠামো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং পরে অর্থ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে।
‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নগর ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের ওপর ২৫ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকঠামো বিভাগের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।
ছুটির দিনে শিশুদের উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ ছিল বইমেলা। শিশু প্রহরের পর বইমেলায় নামে জনস্রোত। গতকাল তুলনামূলক বেশি বই বিক্রিতে লেখক-প্রকাশকের মুখে ছিল হাসি। শুধু লেখক-প্রকাশক নয়, পাঠকরাও মেলায় এসে বেশ তৃপ্ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, টিএসসি থেকে মেলার গেট পর্যন্ত লম্বা লাইনে দাড়িয়েছিল দর্শনার্থী-পাঠকরা। ভেতরে গিয়েও দেখা যায়, স্টলগুলোর সামনে ভিড়। পাঠকরা বই দেখছেন, কিনছেন। ছুটির দিনেই মেলা যেন পেল তার চিরচেনা রূপ। সকালে শিশুপ্রহরে তাদের মাতিয়ে রেখেছে সিসিমপুরের হালুম, টুকটুকি, ইকরি।
এদিন ঢাকার বাইরে থেকেও অনেকে এসেছিলেন বইমেলায়। টাঙ্গাইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেলায় এসেছেন একদল শিক্ষার্থী। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে তারা প্রিয় লেখকদের বই কিনেছেন। নতুন কী বই কিনলেন জানতে চাইলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, হুমায়ূন আহমেদ, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, মাসুদ রানার বই ছাড়াও কবিতার বই কিনেছি।
অনন্যা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজকে সকাল থেকেই মেলায় প্রচুর মানুষ আসছেন। গত কয়েক দিনের তুলনায় আজকে সব থেকে বেশি বই বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
তবে শুক্রবার মেলা প্রাঙ্গণ ছিল ধূলিময়। অনেক দর্শনার্থীকে মাস্ক পরে ও নাকে হাত দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ছিটানো হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন মেলায় আগত দর্শনার্থীদের।
নতুন বই: গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার দশম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। নতুন বই এসেছে ২৬০টি। মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছিল।
শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা : অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল ৮:৩০টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে ক-শাখায় ১৯৫, খ-শাখায় ১৮৩ এবং গ-শাখায় ৬৮ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন শিল্পী হাশেম খান।
শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা : সকাল ৯:৩০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তেন শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই শতাধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন কাজী মদিনা, আন্জুমান আরা ও নূরুল হাসনাত জিলান।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ এবং জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : এস এম সুলতান’ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মলয় বালা ও সৈয়দ নিজার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুশান্তকুমার অধিকারী, ইমাম হোসেন সুমন, নাসির আলী মামুন ও নীরু শামসুন্নাহার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুনতাসীর মামুন।
আজকের সময়সূচি : আজ ২৮ মাঘ ১৪২৯/১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার। অমর একুশে বইমেলার ১১তম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
শিশুপ্রহর : আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর চলবে।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা : সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তেন শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : আশরাফ সিদ্দিকী এবং স্মরণ সাঈদ আহমদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইয়াসমিন আরা সাথী ও মাহফুজা হিলালী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন উদয়শংকর বিশ্বাস, শামস্ আল দীন, রীপা রায় ও আব্দুল হালিম প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন খুরশীদা বেগম।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে সন্ধ্যা নামতেই তৎপর হয়ে ওঠে কয়েকটি পক্ষ। সুযোগ বুঝে ‘লাইনম্যান’ মুঠোফোনে সংকেত দেন ‘লাইন ক্লিয়ার’। এরপর সীমান্তের দিকে এগোতে থাকেন ‘ভারীরা’। খেতের আল ধরে হামাগুড়ি দিয়ে শূন্যরেখার কাছে পৌঁছানোর পর সংকেত দিলে ওপার থেকে মালামাল ছুড়ে দেয় ভারতীয় পাচারকারীরা। দ্রুত সেগুলো সংগ্রহ করে ফিরে আসে তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা, চোরাচালানে জড়িত ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, এক যুগ আগেও মাধবপুর সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে পাচার হওয়া মালামালের তালিকায় গরু, লবণ, চিনি, সাইকেল, জিরা, কাপড়ের মতো পণ্যের প্রাধান্য ছিল। লাভ বেশি হওয়ায় এসব পণ্যের বদলে আসছে মাদক। যার বেশির ভাগই ফেনসিডিল। এ ছাড়া আছে ইয়াবা, গাঁজা, মদ ও নেশাজাতীয় ইনজেকশন। সেই সঙ্গে আসছে ভারতীয় মোবাইল ফোন এবং কসমেটিকস। সীমান্ত দিয়ে অবাধে মাদক আসায় একদিকে জেলায় বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা, অন্যদিকে মাদক পাচার করতে গিয়ে সীমান্ত এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে।
সম্প্রতি মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের মোহনপুর, আলীনগর, কালিকাপুর, চৌমুহনী ইউনিয়নের রামনগর, কমলপুর; বহড়া ইউনিয়নের শ্রীধরপুর, কৃষ্ণপুর; শাহজাহানপুর ইউনিয়নের বনগাঁও ও জালুয়াবাদ সীমান্ত এলাকা ঘুরে মাদক চোরাচালানের এ চিত্র পাওয়া গেছে।
সীমান্তের মাদক কারবারিদের বলা হয় মহাজন। মাদক আনার জন্য মহাজন যাদের নিয়োগ করেন, তাদের বলা হয় ‘ভারী’। সীমান্তের অবস্থা জানানোর জন্য ‘লাইনম্যান’ হিসেবে কাজ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্সরা। ‘লাইন ক্লিয়ার’ অর্থ হচ্ছে মাদক আনার সুবিধাজনক সময়।
হবিগঞ্জের স্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত সীমান্তে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ মাদক চোরাকারবারিরা আটক হয়েছে।
মাধবপুর থানার সূত্রমতে, উপজেলায় মাদকদ্রব্য পাচারের সবচেয়ে বড় রোড মোহনপুর, আলীনগর, কালিকাপুর, রামনগর, শ্রীধরপুর, জালুয়াবাদ, বনগাঁও সীমান্ত। এই চার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ১০০ ব্যক্তি মাদকসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ পণ্য চোরাচালানের কাজে যুক্ত বলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তাদের এক-তৃতীয়াংশই ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী। মহাজন রয়েছেন অর্ধশতাধিক। খুচরা বিক্রেতা হিসেবে নারী মাদক কারবারির সংখ্যাও বাড়ছে।
মাধবপুর সীমান্তের হবিগঞ্জ ৫৫ বিজিবির অধীনে রয়েছে ৪টি বিওপি (মনতলা, হরিণখোলা, রাজেন্দ্রপুর, তেলিয়াপাড়া)। বাকি ধর্মঘর ইউনিয়নের (ধর্মঘর বিওপি, হরষপুর বিওপি, বড়জ্বালা বিওপি) অংশ ২৫ বিজিবির অধীনে পড়েছে। বিজিবি ৫৫ ও ২৫ ব্যাটালিয়নের অধীনে রয়েছে ৭টি বিওপি ক্যাম্প।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহনপুর ও কালিকাপুর গ্রামের এক মাদক পাচারকারী বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই তাদের সজাগ থাকতে হয়। রাতের যেকোনো সময় ‘লাইন ক্লিয়ারের’ সংকেত আসে। অনেক সময় সংকেত আসতে ভোর হয়ে যায়। সংকেত পেলেই ছোটেন সীমান্তে। আত্মরক্ষার জন্য সঙ্গে থাকে টর্চলাইট, দা। ভারতীয়দের ছুড়ে দেওয়া মাদকদ্রব্য এনে পুকুরপাড়, ঝোপঝাড়ে, পরিত্যক্ত ঘরে রেখে দেন। পরে সুবিধাজনক সময়ে মহাজনের কাছে পৌঁছান। এক রাতে ১০০ বোতল ফেনসিডিল সীমান্ত থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে নিরাপদে সরিয়ে আনলে মহাজনের কাছ থেকে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত টাকা পাওয়া যায় বলে ‘ভারী’দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তারা বলছেন, ভারীদের কাছে মাল বুঝে পাওয়ার পর সবুজ সংকেত পেলে এজেন্টের মাধ্যমে ভারতীয় মাদক কারবারির টাকা পরিশোধ করেন বাংলাদেশের কারবারিরা।
সীমান্ত দিয়ে যত মাদক আসে, তার খুব কমই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
মাধবপুর থানার ওসি আব্দুল রাজ্জাক বলেন, ‘মাধবপুর সীমান্ত এলাকায় ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত থানা পুলিশের অভিযানে ৪০৮ জন আসামিকে বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্যসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮১৮ কেজি গাঁজা, ২১ হাজার ৫৯০ পিস ইয়াবা, ১৫২ বোতল বিদেশি মদ, ১৪৭ লিটার দেশি মদ, ১৬০টি বিয়ার ক্যান ও ১ হাজার ৯৫৪ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল জব্দ করি এবং ২৯৯টি মামলা করি। মাদক নির্মূলে মাধবপুর থানা পুলিশ জিরো টলারেন্স অবস্থানে আছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘মাদকের ব্যাপারে কোনো আপস নাই।’
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, মাদক পাচারকারীরা এলাকায় অনেক প্রভাবশালী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না বলে অভিযোগ রয়েছে। মোহনপুর সীমান্তের যুবক রহিম বলেন, ‘কাকে অভিযোগ দেব? অভিযোগ দিলে উল্টো মালসহ যদি ফাঁসায়া দেয়, এই ভয়ে এলাকার কেউ জোর গলায় কোনো প্রতিবাদে যায় না।’
মাদক ব্যবসার টাকার ভাগ আইনৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছেও যায় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ধর্মঘর সীমান্ত বিটে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন বলেন, সীমান্ত এলাকায় মাদক নির্মূলে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি মাদক নির্মূলে কাজ করছে পুলিশ।
বিজিবির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন সরাইল ২৫ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ আরমান আরিফ। সীমান্ত দিয়ে মাদক আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে বিজিবি। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।’
এ ব্যাপারে কথা হয় হবিগঞ্জ ৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমদাদুল বারী খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি, আমাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ৪টি বিওপি রয়েছে। মাদকের সঙ্গে আমাদের কোনো আপস নাই। মাদক নিয়ন্ত্রণে আমাদের সদস্যরা রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বিজিবির পক্ষ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।’
সেবার বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায় কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সঙ্গে প্রথম পরিচয় হলো আমার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখন আমি। মাথার মধ্যে কবিতা লেখার ভূত। প্রতিদিন বড় একটা গাছের ডালে বসে সেই ভূত পা নাচায় আর আমি রাত্রিবেলা শহরের মাথায় ফুটে থাকা চাঁদ দেখে ভাবি, কবিতা লিখে একদিন তোমাকেও ছুঁয়ে দেব চাঁদ।
রুদ্রদাকে ক্যাম্পাসে দেখে আমার মনে হতো কবিদের যুবরাজকে দেখছি। দাড়িপূর্ণ মুখ, উজ্জ্বল দৃষ্টি আর ঝকঝকে হাসিতে মোড়া এমন কবির অবয়ব আজকাল অনুপস্থিত। মাঝেমধ্যে মনে হয়, এ ঢাকা শহরটা একদা কবিদের শহর ছিল। চায়ের দোকান, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বইমেলা, পত্রিকা অফিসে সাহিত্য সম্পাদকের দপ্তর, কবিতা উৎসব থেকে মিছিল কোথায় কবিরা নেই তখন! শহরের যেকোনো নরম নিভৃতিকেও চমকে দিতে পারত তখন কবিরা।
রুদ্রদার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়ের পর্দা উঠেছিল অমর একুশে বইমেলায়। পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল সিনিয়র বন্ধু প্রয়াত সাংবাদিক, গল্পকার মিনার মাহমুদ। তারা বন্ধু ছিলেন। আজও মনে পড়ে, মিনার ভাই খুব ক্যাজুয়ালি পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার স্বভাবসুলভ শ্লেষের হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলেছিলেন ও কবিতা করে। মিনার ভাই প্রকাশ্যে কবিদের প্রতি সবসময় টিপ্পনী কাটতেন এ কথাটা বলে। তখন একরোখা আর রাগী তরুণ আমি প্রথম পরিচয়েই রুদ্রদার তুমি সম্বোধনে ক্ষিপ্ত হয়েছিলাম। ভাবটা এমন ছিল, দুজনই তো কবি; প্রথম পরিচয়ে তুমি সম্বোধন করার কী আছে! মনে আছে আজও, রুদ্রদাকে বলেছিলাম, ‘আপনার সঙ্গে তো আমার এমন কোনো ঘনিষ্ঠতা নেই যে তুমি বলবেন আমাকে।’ সেদিন খুব বিস্মিত হয়ে হেসে ফেলেছিল রুদ্রদা। তার ঝকঝকে হাসি ছড়িয়ে পড়েছিল ফেব্রুয়ারির মরে আসা বিকেলে বাংলা একাডেমির মূল ভবনসংলগ্ন বইমেলার মাঠে। পরিচয়ের প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে আমাদের সম্পর্ক তারপর অনেকটা পথ হেঁটেছিল হাকিম চত্বর হয়ে মেডিকেল কলেজের মোড় ঘুরে নিমতলীর দিকে, নারিন্দা সুইপার কলোনির ম্লান বিকেলে অথবা তার প্রিয় পানশালা সাকুরায়। তার পাঞ্জাবির পকেটে বহুদিন হাসির গল্প হয়েই ছিল ঘটনাটা। রুদ্রদা ক্ষ্যাপাতো আমাকে মাঝেমধ্যে। তখন একবারের জন্য মনে হয়নি, ভোরবেলা কবি তারিক সুজাতের টেলিফোন আমাকে ডেকে তুলে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দেবে রুদ্রদার নিথর দেহের সামনে!
খুব বেশি সময় আগের কথা নয় কিন্তু। বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজের চারপাশ ঘিরে পর্দা উঠত অমর একুশে বইমেলার। মাঝখানে শুকিয়ে যাওয়া একটা পুকুর ঘিরে প্রকাশকদের স্টল। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে উতলা হতো বাতাসও। তখন বইমেলায় কত ঘটনা যে ঘটত! একবার শুনতে পেলাম, প্রাবন্ধিক আহমদ ছফা একটা ছুরি নিয়ে ঘুরছেন একজন কবিকে ছুরি মারবেন বলে। সেই কবির অপরাধ তার কবিতা হয় না। সেই কবিও প্রাণভয়ে পলাতক মেলা থেকে। পরে ছফা ভাইয়ের কাছেই জানা গেল, সেই ছুরি আসলে নেইল কাটারের সঙ্গে সংযুক্ত। কখনো কখনো ছফা ভাই অন্যদের সঙ্গে ভীষণ রসিকতা করতেন!
প্রয়াত কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার একদা বাংলা একাডেমির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। বইমেলায় প্রতিদিন বিকেল হতো মাইকে রশীদ ভাইয়ের কণ্ঠ শুনে। মেলায় প্রকাশিত হওয়া নতুন বইয়ের পরিচিতি দিতেন তিনি। আমরা নিয়মিত রশীদ হায়দার ভাইয়ের ভারী কণ্ঠস্বর নকল করে কথা বলতাম। মেলা প্রাঙ্গণে গোপন ধূমপায়ীদের রশীদ ভাই অনুসরণ করতেন গোয়েন্দা পুলিশের মতো। একাডেমির আনাচে-কানাচে ঝড়ের মতো আবির্ভূত রশীদ ভাইকে দেখে কতদিন পালিয়ে গেছি হাতের সদ্য প্রজ¦লিত সিগারেট ফেলে!
বইমেলায় সন্ধ্যা থেকেই প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক আর কবিদের আগমন ঘটত। চাপা জিন্সের প্যান্ট আর উজ্জ্বল রঙের টি-শার্ট পরিহিত রফিক আজাদ আসতেন হেলতে-দুলতে। মহাদেব সাহা যথারীতি পাজামা-পাঞ্জাবিতে শোভিত। কবি হেলাল হাফিজকে দেখতাম কাঁধে কাপড়ের ব্যাগ ঝুলিয়ে মগ্ন হয়ে হেঁটে যেতে। তখন বইমেলায় নিয়মিত আসতেন সত্তর এবং আশির দশকের উজ্জ্বল কবিদের দল। জাহিদ হায়দার, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, কামাল চৌধুরী, তুষার দাশ, ফরিদ কবির, মাহমুদ শফিক, মুজিবুল হক কবির, মোহন রায়হান প্রমুখ। কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের, গল্পকার ফারুক মঈনুদ্দিন, ইসহাক খান, মিনার মাহমুদ সন্ধ্যার পর নিয়মিত আড্ডা দিতেন মেলায়। ছোট ছোট জটলায় চাল ভাজার মতো মুচমুচে আড্ডার স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে আমাকে। মিনার মাহমুদ সেই আড্ডার নাম দিয়েছিলেন ‘খোঁচাখুঁচি’। সাহিত্য, রাজনীতি, ভালো লেখা, সিনেমা, সমাজ অর্থনীতি আর তীব্র পরচর্চা ঝড় তুলত। কোনো কোনো দিন চাঁদা তুলে ‘কঠোর পানীয়’ কিনে গোপনে তা গলাধঃকরণ করা হতো। মনে পড়ে, সেই উল্টোপাল্টা আলোর স্রোতে ভাসা সন্ধ্যাগুলোতে নিয়মিত সঙ্গ দিতেন সাংবাদিক খায়রুল আনোয়ার, সৈয়দ শহীদ।
প্রয়াত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ আশির দশকের মাঝামাঝি মেলায় এসে পাঠকদের বইতে স্বাক্ষর দিতে শুরু করলেন। একবার তার স্বাক্ষর নিতে উৎসাহী পাঠকদের ভিড়ের চাপে প্রতীক প্রকাশনীর স্টল প্রায় ভেঙে পড়েছিল। কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলনকে বিকেল থেকে দেখা যেত স্টলে বসে একমনে স্বাক্ষর দিয়ে চলেছেন পাঠকদের। স্বাক্ষর নিতে আসা পাঠকদের লম্বা লাইন সামলাতে তখন হিমশিম খেতে হতো ভলান্টিয়ারদের। এরকম দৃশ্য দেখে প্রয়াত ভাষাবিজ্ঞানী, কবি ড. হুমায়ুন আজাদের শ্লেষযুক্ত তীব্র উক্তিগুলো আজও যেন ফেব্রুয়ারির গা ছম ছম করা হাওয়ায় হুল ফোটায়।
তখন বইমেলার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বাইরের ফুটপাত, টিএসসির মোড় আর শাহবাগে আড্ডাগুলো সম্প্রসারিত হতো। পাঠকরা বই কিনে বাড়ি ফিরতেন আর আমাদের মতো কিছু লেখক হতে চাওয়া তরুণ সেই আড্ডাগুলোর ভেতরে নিজেদের আরও কিছুক্ষণ গুঁজে দিতে চাইতাম। রাত গভীর হতো। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গভীর অন্ধকার থেকে ভেসে আসত বনজ ঘ্রাণ। শীত করত কারও কারও। ঢাকা শহরের রাজপথে কমে যেত যানবাহন। বিচ্ছিন্ন রিকশা দাঁড়িয়ে থাকত বইমেলা থেকে শেষ সওয়ারি ধরার অপেক্ষায়।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শিরিনা খাতুনের প্রাইভেট কারের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের শৈলকুপার মদনডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। উম্মে রুকাইয়া (১১) নামে ওই স্কুলছাত্রীকে ধাক্কা দেওয়ার পর তার প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা না করে প্রাইভেট কারটি নিয়ে চালক ও শিক্ষক শিরিনা খাতুন দ্রুত পালিয়ে যান। এ শিক্ষকের দাবি, গাড়ির গতি বেশি থাকায় চালক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি। বিষয়টি তাকে মর্মাহত করেছে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে আরও আটজনের। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে প্রায় ৫০ জন। এর মধ্যে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ট্রাক্টরে পিষ্ট হয়ে কৃষি কর্মকর্তা, জয়পুরহাটের কালাইয়ে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী, নীলফামারীতে পিকআপের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে স্কুলের পিকনিকের বাস খাদে পড়ে দুজন, জামালপুরে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে পিকআপ ভ্যানের চালক, সাতক্ষীরায় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে কিশোর এবং খুলনায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন।
শৈলকুপায় নিহত উম্মে রুকাইয়া ত্রিবেনী ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মনোয়ার হোসেনের মেয়ে। সে শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
এলাকাবাসী জানায়, দুপুর ১২টার দিকে রুকাইয়া তার সহপাঠীর সঙ্গে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে একটি দ্রুতগামী প্রাইভেট কার তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রুকাইয়াকে। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে সন্ধ্যায় মারা যায়।
নিহতের চাচা ফিরোজ বলেন, ‘স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতির গাড়ি আমার ভাতিজিকে ধাক্কা দেয়। পরে গাড়িটিকে গাড়াগঞ্জ বাজারে আটক করা হয়। কিছুক্ষণ কথা বলার পর তিনি (শিরিনা খাতুন) গাড়ি নিয়ে দ্রুত চলে যান। রুকাইয়াকে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিরিনা খাতুন বলেন, ‘ঘটনাটি অনাকাক্সিক্ষত ছিল। গাড়ির গতি বেশি থাকায় ড্রাইভার কন্ট্রোল করতে পারেনি। বিষয়টি আমাকে মর্মাহত করেছে।’
শৈলকুপা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি সত্য। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।’
কোটচাঁদপুরে ট্রাক্টরে পিষ্ট কৃষি কর্মকর্তা : ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের তালসার এলাকায় ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক কৃষি কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে তালসার সড়কের ফুলবাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত এস কে লতিফুল কবির কোটচাঁদপুরের কুশনা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের বাদপুকুর গ্রামের তের আলীর ছেলে।
কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহাসীন আলী জানান, কৃষিমেলা উপলক্ষে উপজেলা অফিসে সভা ছিল। সভা শেষে মোটরসাইকেলে নিজের বাড়ি বাদপুকুরে ফিরছিলেন। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা স্থানীয় একটি ইটভাটার ট্রাক্টর তাকে চাপা দেয়। পরে এলাকার লোকজন উদ্ধার করে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জয়পুরহাটে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর মৃত্যু : জয়পুরহাটের কালাইয়ে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নজরুল ইসলাম (৭২) নামে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। ওই ঘটনায় মোটরসাইকেলটির চালক গুরুতর আহত হন। গতকাল দুপুরে জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কের হাজিপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নজরুল ইসলাম কালাই উপজেলার হাজিপাড়া গ্রামের মৃত নইমুদ্দিনের ছেলে।
গুরুতর আহত মোটরসাইকেল চালক শান্ত ইসলাম (২০) জেলার আক্কেলপুর উপজেলার ভান্ডারিপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ও পুলিশ জানায়, শান্ত মোটরসাইকেল চালিয়ে জয়পুরহাট থেকে বগুড়ার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে হাজিপাড়া মোড়ে রাস্তা পারাপারের সময় নজরুল ইসলামকে ধাক্কা দেয় ওই মোটরসাইকেলটি। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনায় দুর্ঘটনাস্থল থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা ছিনতাই : নীলফামারীতে পিকআপের ধাক্কায় তানভীর আহমেদ জনি (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ সময় কাজী আবদুর রাজ্জাক নামে আরও এক মোটরসাইকেল আরোহী আহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই এই নিহত ও আহতের কাছে থাকা সাড়ে ৯ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কের কাদিখোল এলাকার ইকু জুট মিলের ৫০০ গজ দূরে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, নিহত তানভীর আহমেদ জনি ইকু জুট মিলের হিসাবরক্ষক ও পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরের বাঘাচড়া গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে। আর আহত আবদুর রাজ্জাক (৩৮) ইকু জুট মিলের কম্পিউটার অপারেটর। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ভর্তি করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ইকু জুট মিলের স্বত্বাধিকারী সিদ্দিকুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, মিলের হিসাবরক্ষক জনি ও কম্পিউটার অপারেটর রাজ্জাক রাত ৯টার দিকে সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়ায় ইকু গ্রুপের অফিস থেকে ব্যাংক থেকে তুলে আনা মিলের কর্মচারীদের সাপ্তাহিক বেতনের সাড়ে ৯ লাখ টাকা একটি চটের বস্তায় ভরে মোটরসাইকেলে মিলের উদ্দেশে রওনা হন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইকু জুট মিলের ৫০০ গজ অদূরে পৌঁছলে পেছন দিক থেকে একটি পিকআপ ভ্যান তাদের মোটরসাইকেলে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান জনি। গুরুতর আহত হন রাজ্জাক। তখন পিকআপের পেছনে থাকা অন্য একটি মোটরসাইকেলে থাকা ছিনতাইকারীরা ওই টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়।
নীলফামারী সদর থানার ওসি আবদুর রউপ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পিকআপটি জব্দ করলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের পিকনিকের বাস খাদে : যশোরের বাঘারপাড়ার বাকড়ী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পিকনিকের বাস দুর্ঘটনায় পড়ে দুজন নিহত ও ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। পিকনিক শেষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে ফেরার পথে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত প্রায় ২০ জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে মারা যান বিদ্যালয়টির ল্যাব সহকারী সুদীপ্ত বিশ্বাস (৩৫)। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে নিহত হন বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস (৪৫)।
বাকড়ী বহুমুখী বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিশ্বজিৎ কুমার পাল জানান, তারা বৃহস্পতিবার সকালে তিনটি বাসে করে ১৫০ জন টুঙ্গিপাড়ায় পিকনিকে যান। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সদস্যরা ছিলেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পিকনিক শেষে ফেরার পথে ভাটিয়াপাড়া মোড়ে তাদের পিকনিকের বাসগুলোর একটি অন্য একটি বাসকে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। বাসটিতে ৫০ জন ছিলেন।
জামালপুরে বাস-পিকআপ ভ্যান সংঘর্ষে চালকের মৃত্যু : জামালপুর সদর উপজেলায় বাস-পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পিকআপ ভ্যানটির চালক মির্জা তৌফিক তানভির সৌরভ (৩৪) নিহত হন। এ সময় বাসের দুই যাত্রী আহত হয়েছেন। গতকাল সকালে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শরিফপুর ইউনিয়নের জয়রামপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সৌরভ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কিষ্টপুর গ্রামের মির্জা তপির ছেলে।
জামালপুর সদর থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ জানান, সকালে জামালপুর থেকে ঢাকাগামী রাজীব পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পিকআপ ভ্যানের চালক সৌরভ ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে।
সাতক্ষীরায় মোটরসাইকেল আরোহী এক কিশোর নিহত : সাতক্ষীরার গোপীনাথপুরে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক কিশোর নিহত ও দুই যুবক আহত হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ মো. ফকরুল আলম খান জানান, গতকাল দুপুরে সাতক্ষীরা থেকে খুলনার দিকে যাওয়ার সময় গোপীনাথপুর ঋষিপল্লীর সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে শেখ জুবায়ের হোসেন (১৫) নামে এক কিশোর ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সে সাতক্ষীরার ইটাগাছা গ্রামের শেখ কবিরুজ্জামানের ছেলে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন রশীদ ও তরিকুল নামে দুই যুবক।
খুলনায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত : খুলনায় ট্রাকের ধাক্কায় মিঠুন চৌধুরী নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে নগরীর রূপসা বাইপাস সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মিঠুন দীঘলিয়া উপজেলার লাখোহাটি গ্রামের নাসিম চৌধুরীর ছেলে। এ ঘটনায় একই এলাকার রেজাউল শেখের ছেলে মো. মামুন গুরুতর আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মোটরসাইকেলে মিঠুন ও মামুন আড়ংঘাটা সড়ক দিয়ে বাইপাস রোডে ওঠার চেষ্টা করে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামীর একটি ট্রাক মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে তারা রাস্তার ওপর ছিটকে পড়ে মাথায় আঘাত পান। আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিঠুনের মৃত্যু হয়। পরে আহত মামুনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
* প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন ইবি এবং সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
গাজীপুরের টঙ্গীর বিসিক শিল্পনগরীতে ৩৬০ টাকা বেতনে কর্মজীবন শুরু করা আসাদুর রহমান কিরণ এখন গাজীপুর মহানগরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন দল বদলে ক্ষমতার পাশাপাশি প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র মতে, কিরণ এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। তার এত সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে রয়েছে দখলবাজি, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি ও অনিয়ম।
কিরণের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ ৩১টি দপ্তরে যে অভিযোগ জমা পড়েছে, তাতে ডিগবাজি দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসা এই ভারপ্রাপ্ত মেয়রের ৬০০ কোটি টাকার দুর্নীতি-অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য হাইকোর্ট দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) নির্দেশ দিয়েছে।
২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর নির্বাচিত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। নগরীর ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আসাদুর রহমান কিরণ তখন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পান।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি।
৩১ দপ্তরে অভিযোগ : গত বছর ২০ জুলাই ৩১টি দপ্তরে সচেতন নাগরিক, বাংলাদেশের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন মো. নজরুল ইসলাম। লিখিত অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে, দুদক, স্থানীয় সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়েছে। তুলে ধরা হয়েছে গত বছর জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি পালন না করেও সিটি করপোরেশনের তহবিল থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন কিরণ।
জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার অভিযোগপত্রে ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের দুর্নীতি ও অনিয়ম চিত্র তুলে ধরেছি।’
কিরণের অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র : ভারপ্রাপ্ত মেয়রের চেয়ারে বসে কিরণ দুর্নীতি-লুটপাট, কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েন। দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নজর পড়ে পুবাইলের চিরুলিয়ায় অর্পিত সম্পত্তির ওপর। ২৩ বিঘা জমি নিজের কবজায় নেন কিরণ। এর জন্য ভুয়া জমির মালিক বানান একজনকে। এ জমি নিজের করায়ত্তে নিতে সিটি করপোরেশনের ১৮ লাখ টাকা কর ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। জানাজানি হয়ে গেলে কিছুদিন আগে কর পরিশোধ করেন। তবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় জমির মালিক হওয়ায় ওই জমির খাজনা এখনো দিতে পারেননি কিরণ।
পোশাকশিল্প কারখানার সবচেয়ে বড় নগরী গাজীপুর। সিটি করপোরেশনের আয়ের সবচেয়ে বড় মাধ্যম শিল্প ও হোল্ডিং ট্যাক্স। আর সেখানেই অনিয়মের বড় ক্ষেত্র তৈরি করেছেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তিন/পাঁচ কোটি টাকার বকেয়া হোল্ডিং, শিল্প ট্যাক্স অর্ধেকে নামিয়ে এনে করপোরেশনের কোষাগারে মাত্র ৫০ লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি টাকা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে রেহাই দিয়ে দেন করদাতাদের। কিরণের এই কৌশলে বেঁচে যান কর ফাঁকি দেওয়া শিল্প-মালিকরা। কিন্তু রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র। নগরের আটটি জোনে করের টাকা আত্মসাৎ করার অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিরণ ২০১৬-১৭ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় একটি টেন্ডার আহ্বান করেন। টেন্ডার নম্বর : জিসিসি/জেড। ওই টেন্ডারের কাজের অগ্রগতি না থাকায় জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে ওই টেন্ডারের কোনো বিল পরিশোধ করতে পারেননি কিরণ। ২০২১ সালে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেন। ওই সময়ের বিভিন্ন ঠিকাদারকে ডেকে তাদের কাছ থেকে কাজের হিসাব করে তার কমিশন আদায় করেন কিরণ। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কিছু চিত্র সিটি করপোরেশনের চেক রেজিস্ট্রার বই ঘেঁটেও পাওয়া গেছে।
উত্তরায় ‘অস্থায়ী কার্যালয়’ : উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডে ১০ নম্বর বাড়ির ছয়তলায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের একটি ‘কার্যালয়’ করেছেন কিরণ। উত্তরার এ কার্যালয়ে বসে ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি। লেনদেন-দরবার সবই হয় এ বাড়িতে বসেই। পার্সেন্টেজ ছাড়া যেমন ঠিকাদারদের কাজের বিল পরিশোধ করা হয় না, তেমনি পার্সেন্টেজ ছাড়া ঠিকাদারি কাজও পান না কেউই। কোন কাজ কে পাবে, কে পাবে না, কে কত পার্সেন্ট কমিশন দেবে এসব হিসাব ও মধ্যরাতের প্রমোদ-ফুর্তির যে ব্যয় হয় সিটি করপোরেশনের এলআর ফান্ড থেকে নির্বাহ করা হয়। শিল্পাঞ্চল-সমৃদ্ধ গাজীপুর নগরীর অধিকাংশ ব্যবসায়ী-ঠিকাদার ‘১০ পার্সেন্ট’ হিসাবেও কিরণকে চিনে-জানে।
বর্তমানে গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা সারা জীবন রাজনীতি করেছি দলের জন্য। অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি কিন্তু মূল্যায়ন পাইনি। একটি কাজের জন্য আমি ছয় মাস ঘুরছি। কিন্তু কিরণ আমাকে কাজ দিচ্ছেন না। কারণ আমার কাছ থেকে পার্সেন্টেজ নিতে পারবেন না।’
শুধু কী তা-ই, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজনের নামে গত বছর ১৭ মার্চ কোনো আয়োজন না করেই কিরণ সিটি করপোরেশনের খরচের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৭৬ জন কাউন্সিলর এবং কিছু কর্মকর্তার সিলেটে পিকনিক আয়োজন করার নামে করপোরেশনের তহবিল থেকে ৫০ লাখ টাকা খরচ বাবদ দেখিয়ে আত্মসাৎ করার অভিযোগও আছে।
কিরণের সম্পদ : টঙ্গীর পাগাড়, ঢাকার আশুলিয়া এবং গাজীপুরে নিজ নামে, স্ত্রী, শ্যালক ও শ্যালিকার নামে ১১২ বিঘা জমির মালিক কিরণ। টঙ্গীর পাগাড়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কিছু জমি রয়েছে, যা নয়ছয় ও ভয়ভীতি দেখিয়ে দলিল করে নিয়েছেন তিনি। নজরুল ইসলামের অভিযোগ অনুযায়ী, উত্তরায় ১১ নম্বর সেক্টরে ৭ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িটি সাততলা। এটি নির্মাণ করতে কমপক্ষে ১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। একই এলাকার ৭ নম্বর সেক্টরে ১৮ নম্বর রোডে ৯৫ নম্বর বাড়ি রয়েছে। বারোতলা নির্মাণাধীন ওই ভবনের আনুমানিক মূল্য ৩৫ কোটি টাকা। গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে ফ্ল্যাটের তথ্যও পাওয়া গেছে। ২ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে সাত কোটি টাকা।
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলায় স্ত্রী ও নিজের নামে অন্তত ২০০ বিঘা জমির ওপর ভারপ্রাপ্ত মেয়রের কারখানা রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি টাকা হতে পারে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে টঙ্গীতে তিনটি কারখানা আছে তার। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ৩০০ কোটি কোটি টাকা।
কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত কয়েকশ কোটি টাকা যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি নিজের ও স্ত্রীর নামে যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক শহরে বাড়ি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে। কিরণ দ্বৈত নাগরিক বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।
হাইকোর্টের আদেশ : গত বছরের ২০ জুলাই দুদকে জমা পড়া অভিযোগ লাল ফিতায় আটকে গেলে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন হয়। গত বছর ২১ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালত কিরণের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে। হাইকোর্ট চার মাসের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে সময় বেঁধে দেন। একই সঙ্গে গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদকের নিষ্ক্রিয়তা ও ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে আদালত।
রাজনীতিতে উত্থান : প্রিন্টিং প্রেস কারখানায় বাইন্ডার-ম্যান হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন আসাদুর রহমান কিরণ। ১৯৮৪-৮৫ সালে এলিট প্রিন্টিং প্রেস নামে ওই কারখানায় চাকরি করা কিরণ ১৯৮৬ সালে রাজনীতিতে আসেন। ওই সময় তিনি জাতীয় পার্টির যুব সংগঠন যুব সংহতির টঙ্গীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় গাজীপুর নিয়ন্ত্রণ করতেন হাসান উদ্দিন সরকার। তিনি জাতীয় পার্টি ও পরে বিএনপির রাজনীতিতেও যুক্ত হন। ওই সময়ের সবচেয়ে ক্ষমতাধর হাসান উদ্দিন সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা ও তার ঘনিষ্ঠ পরিচিতি লাভ করে শুরু করেন জমি দখল। টঙ্গী, পাগাড় মৌজায় হিন্দু-খ্রিস্টানের মালিকানায় থাকা জমি দখল করে নেন তিনি। পরে প্লট বানিয়ে চড়া দামে বিক্রি করেন। তবে প্রিন্টিং প্রেসের শ্রমিক কিরণ ওই সময় টঙ্গীর বিসিক এলাকায় শ্রমিক নেতা হিসেবেও আধিপত্য বিস্তার করেন। হিন্দু-খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কেউ জমি দিতে না চাইলে রাজনৈতিক চাপ ও সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে উচ্ছেদ করতেন। পাগাড় শিল্পাঞ্চল এলাকা হওয়ায় ওই এলাকায় টার্গেট করে জমি দখল করেন কিরণ। টঙ্গী পৌরসভা হিসেবে প্রথম ভোটে ৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে কমিশনারও নির্বাচিত হন। তত দিনে ক্ষমতা-সম্পদ ও অঢেল অর্থের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর গুরু পাল্টে কিরণ হয়ে যান সাবেক পৌর মেয়র গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লার ‘মাইম্যান’। এই সুযোগে ক্ষমতা আরও পাকাপোক্ত হয়ে ওঠে কিরণের। ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আজমত উল্লা মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী অধ্যাপক আবদুল মান্নানের কাছে পরাজিত হন। কিরণ মূলত দুর্নীতি-অনিয়ম শেখেন তখন থেকেই। বিএনপি নেতা মান্নান মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হলে তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পান। গাজীপুরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আসন্ন নির্বাচন কেন্দ্র করে আজমত উল্লার সঙ্গেও সুসম্পর্ক নেই কিরণের।
গাজীপুরের মাওনা এলাকার আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘চেয়ার ছুঁয়েই কিরণ স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট, ভূমিদখলসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি। দলীয় লোককে সরিয়ে রেখেছেন, সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। কারণ, কিরণ আওয়ামী লীগ নয়, মূলত সুবিধাবাদী।’
ভারপ্রাপ্ত মেয়রের বিষয়ে জানতে চাইলে আজমত উল্লা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কিরণ অন্য দল থেকে আওয়ামী লীগে এসেছেন সত্যি, তবে তিনি দলের জন্য কাজ করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের যে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে সেটা তো প্রমাণ হয়নি এখনো। প্রমাণ হলে তখন মন্তব্য করা যাবে।’
অর্থনৈতিক সংকট আর রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে নতুন বছরে নতুন শুরুর আশা ছিল শ্রীলঙ্কার। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সংকটের অভিঘাত এখনো সইতে হচ্ছে দেশটির। বিদেশি সহায়তার পরও হু হু করে বাড়ছে দেশটির মূল্যস্ফীতি। গেল ফেব্রুয়ারি মাসে মুদ্রাস্ফীতির হার ৫০ শতাংশের ওপরে ছিল। অথচ শ্রমিক-চাকরিজীবীদের বেতন বাড়েনি। অনেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাজ হারানো লোকের সংখ্যাও কম না। এ পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার তরুণদের অনেকেই দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। দেশটির সরকারি সূত্র অনুযায়ী, ২০২২ সালেই ৩ লাখের বেশি মানুষ বাইরের দেশে কাজ খুঁজতে গিয়েছে। আর চলতি বছর প্রথম দিনেই দেশ ছেড়েছে আরও ৭৩ হাজার মানুষ। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, দেশটি তার বিভিন্ন শিল্প খাতের প্রয়োজনীয় লোকবলই পাচ্ছে না। বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে চললে উৎপাদন কমে গিয়ে আরেক দফা সংকটে পড়তে পারে দ্বীপরাষ্ট্রটি।
ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে দেশটির ব্যবসায়ীদের বরাতে বলা হয়েছে, তারা কর্মী সংকটে ভুগছেন, যাদের মধ্যে ম্যানেজার পদও রয়েছে। খালি থাকা ম্যানেজার পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়ার জন্য তাদের আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। কোম্পানিগুলো সাধারণত ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদেরই নিয়োগ দিত এবং এ বয়সের তরুণরাই চাকরি ছেড়ে নতুন চাকরিতে যোগ দিতেন। তবে এখন চল্লিশ এবং পঞ্চাশ বছর বয়সীরাও চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
জানুয়ারি মাসে প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে আইএমএফ-এর ঋণ প্যাকেজের শর্ত হিসেবে বেশ কয়েক দফা কর বাড়িয়েছেন। বর্তমানে দেশটিতে আয়করের হার ৩৬ শতাংশ। এর সঙ্গে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি জনগণকে ফেলেছে ভীষণ চাপে। দ্বিমুখী এই চাপে দেশ ছাড়ছেন নাগরিকরা। দেশটির বিরোধী দল ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার পার্টির ভাষ্য, সরকার অতিরিক্ত করের বোঝা চাপানোয় দলে দলে দেশ ছাড়ছেন মানুষ।
সাময়িকীটি বলছে, শত শত ডাক্তার ইতিমধ্যেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, যার মধ্যে গত বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসেই গিয়েছেন ৪৭৭ জন। এভাবে এগোতে থাকলে গ্রামীণ অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার সংকট দেখা যাবে।
এদিকে শ্রীলঙ্কান সরকারও এই দেশ ছেড়ে পালানোকে উৎসাহিত করছে। প্রথমত, সরকারি খাতে বেতনের বোঝা কমানোর জন্য এবং দ্বিতীয়ত, বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্সের আশায়। গত জুন মাসে সরকার মাসে ১০০-৫০০ ডলার রেমিট্যান্স পাঠানোর শর্তে দেশটির ডাক্তারদের পাঁচ বছরের জন্য ছুটি দেওয়ার ঘোষণাও দেয়।
ইকোনমিস্ট বলছে, দেশটির প্রবাসী নিয়োগ মন্ত্রী মনুশা নানায়াক্কার বিভিন্নভাবে শ্রীলঙ্কান কর্মীদের দেশের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করছেন। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরির সুযোগের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন। চলো বিদেশে যাই- নামের এক ইউটিউব চ্যানেল থেকে জনগণের কাছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বিদেশে চাকরির সুযোগ প্রচার করা হচ্ছে। তাতে বলা হচ্ছে, নার্সিং, কেয়ার-গিভিংসহ অন্যান্য সেবামূলক কাজেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে শ্রীলঙ্কান সরকার, যাতে করে কাতার, কুয়েত, সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে তারা কাজের ব্যবস্থা করতে পারে। আর এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে আশানুরূপ ফলাফল পাচ্ছে শ্রীলঙ্কান সরকার। গত চার মাসে রেমিট্যান্সের হার বেশ খানিকটা বেড়েছে। তবে এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে বড় মেধাবীরা দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন, যাদের দেশ পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজন।
নানায়াক্কার জানিয়েছেন সেবা এবং উৎপাদন খাতে ইতিমধ্যেই কর্মী সংকট দেখা গিয়েছে। এটি প্রতিরোধের জন্য কিছু কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘লয়্যালটি বোনাস’ ঘোষণা করেছে, অর্থাৎ চাকরি না ছাড়লে অতিরিক্ত বেতন দেওয়া হবে।
কুমিল্লার মুরাদনগরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তায় ইটের প্রাচীর তুলে প্রতিবেশী দুই পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী দুই সহোদরের বিরুদ্ধে। আর শুধু তাই নয় মাইনুদ্দিন ও শফিকুল ইসলাম নামে ওই দুই সহোদরের তোলা প্রাচীরের কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে একটি মাদ্রাসাও। ফলে নিরুপায় হয়ে মই দিয়ে ৭ ফুট উঁচু সীমানা প্রাচীর পার হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে মাদ্রাসাটির শতাধিক শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীকে, যা তাদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। অন্যদিকে প্রাচীরে আটকে পড়া দুটি পরিবারের শিক্ষার্থীরাও মই দিয়ে প্রাচীর টপকে তাদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এছাড়াও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে পরিবার দুটি। এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার রামচন্দ্রপুর উত্তর বাখরাবাদ গ্রামে।
এদিকে প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী বলছে, প্রত্যেকেরই যার যার বাড়ির নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রয়োজন রয়েছে, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও প্রতিবেশীদের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে তা কারও কাম্য নয়।
জানা গেছে, উত্তর বাখরাবাদ গ্রামের প্রভাবশালী মাইনুদ্দিনের বাড়ির পাশে কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় রাবেয়া বসরী মাদ্রাসা। তার পাশে বসবাস দুটি পরিবারের। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও পরিবার দুটির সদস্যদের চলাচলের একমাত্র রাস্তা ছিল মাইনুদ্দিন ও শফিকুলের জমির ওপর দিয়ে। কিন্তু তিনি হঠাৎই তার বাড়ির চারপাশে ইটের সীমানা দেয়াল তুলে দেন। এতে বাধ্য হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতিদিন মাদ্রাসায় যেতে হচ্ছে বাঁশের মই বেয়ে প্রতিবেশীদের দেয়াল টপকে। আবার তাদের বাড়ি ফিরতেও হয় দেয়াল বেয়ে। এরই মধ্যে পা ফসকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে অনেকেই।
ভুক্তভোগী রাবেয়া বসরী মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা হাফেজ নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বি চাপিতলা গ্রামের মরহুম হাজি আব্দুর রহমান ২০১৮ সালে ছাত্র-ছাত্রীদের যাতায়াতের জন্য রাস্তাটি মৌখিকভাবে দিয়ে যান। কিন্তু তার মৃত্যুর পর ছেলে মাইনুদ্দিন ও তার ভাই শফিকুল ইসলাম মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও প্রতিবেশীদের যাতায়াতের রাস্তাটি বন্ধ করে দেন। সমাধান চেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল সরকারের কাছে বেশ কয়েকবার গেলেও তিনি দুই বছর ধরে আমাকে ঘুরাচ্ছেন। দুই বছর আগে বাড়িসহ জমি কেনার প্রস্তাব দেন তারা। কিনতে রাজি না হওয়ায় সীমানা প্রচীর নির্মাণ করে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেন।’ এ ব্যপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান হাফেজ নজরুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও রামচন্দ্রপুর রামকান্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক কবির আহমেদ ভূঁইয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে বসবাস করছি এবং বসবাসের শুরু থেকেই ওই সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করে আসছি। হঠাৎ করে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেওয়ায় আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি।’
তবে সীমানা প্রাচীর নির্মাণকারী মাইনুদ্দিন বলেন, ‘প্রাচীর নির্মাণ করে আমি কোনো অপরাধ করিনি। আমার জমিতে আমি প্রাচীর নির্মাণ করেছি। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রামচন্দ্রপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেশ কয়েকবার আমি চেষ্টা করেছি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার। কিন্তু জমির মালিক মাইনুদ্দিন তার জমির ওপর দিয়ে সড়ক দিতে রাজি হচ্ছেন না।’
সার্বিক বিষয়ে মুরাদনগরের ইউএনও মো. আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জনী বলেন, ‘অবরুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি আমি জেনেছি। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করে দেওয়ার জন্য। এর পরও ভুক্তভোগীরা আদালতের সহযোগিতা নিতে পারেন।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।