
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী কুশ কুমার কুশল। গ্রামের বাড়ি খুলনায়। সুন্দর সাবলীল ভাষায় লেখা নতুন গল্পের খোঁজে বইমেলায় এসেছেন।
কুমার কুশলের সঙ্গে কথা হলে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, বইমেলা মানেই পাঠক-লেখকের মনের ভাব আদান-প্রদানের স্থল। অনেকেই বই লেখেন প্রকাশও পায়। কিন্তু পাঠক হিসেবে আমাদের সতর্ক থেকে বই ক্রয় করতে হবে।
মেলার পরিবেশ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের মেলার পরিবেশ খুব চমৎকার। মেলায় প্রবেশ করেই মন ভালো হয়ে গেছে। পাঠকদের অংশগ্রহণ দেখে মনে হচ্ছে আগামীতে বাংলা সাহিত্যের নতুন জোয়ার আসছে। বইপ্রেমী বাড়ছে। মেলাকে আরও সুন্দর ও রঙিন করতে সবাইকে বই পড়ার আহ্বান জানিয়ে এই পাঠক বলেন, পাঠক আকৃষ্ট করতে লেখকদের ভালো বই লিখতে হবে। যদিও বাস্তবতা হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতি আমাদের ব্যস্ততার জন্য বই পড়ার সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
বইয়ের মূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে কুশল জানান, বর্তমান সময়ে বাজারে সব নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে সেদিক থেকে আমি বলব বইয়ের দাম ঠিক আছে।
বইমেলায় আগত বন্ধুদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, মেলায় যারা আসছেন আপনারা সবাই ভালো লেখকের গল্প বা ভালো ইতিহাসের বই কিনবেন। এ ছাড়া ভালো কোনো কিছু আকৃষ্ট করে এমন বই কিনবেন। নতুন লেখকদের উৎসাহ জোগাতে তাদের বই কিনুন। যেন তারা আরও ভালো কিছু লেখা আমাদের উপহার দিতে পারেন।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জন্য ১৮তলা ভিতের ওপর ৫তলা নগর ভবন তৈরির প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সিটি করপোরেশনের সরকারি কাজের চেয়ে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যই বেশি। এই ভবনের মাত্র কিছু অংশ সরকারি কাজের জন্য রেখে বেশির ভাগই ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো মসিকের প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় এই প্রকল্পের কিছু খাতের অস্বাভাবিক ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তোলার পর ব্যাখ্যা দিতে পারেননি মসিকের কর্মকর্তারা।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ২৬৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ২১৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ও মসিকের নিজস্ব অর্থায়ন ৫৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।
ডিপিপি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পে আরবরি কালচার খাতে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং সীমানাপ্রাচীর খাতে ৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। ৪০০ মিটার সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের জন্য এই প্রাক্কলন অত্যধিক বলছে পরিকল্পনা কমিশন; অর্থাৎ প্রতি মিটারে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে ওয়ালের প্রতি মিটারে ব্যয় ১ লাখ ১৯ হাজার ৭৫০ টাকা।
প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ৯৭ জনের জন্য ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। পরামর্শক নিয়োগের যৌক্তিকতা সম্পর্কে সিটি করপোরেশন জানায়, প্রকল্পের আওতায় ১৮তলা ভিতে আপাতত বেজমেন্ট এবং ৫তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এটির ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হবে।
জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ভবনটি ভবিষ্যতে ১৮তলা হবে। বর্তমান আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় আমরা আপাতত ৫তলা করার প্রস্তাব দিয়েছি।’
৪০০ মিটারের ওয়ালে এত ব্যয়ের যৌক্তিকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশন আমাদের কিছু জিনিস রিভাইস করতে বলেছে। সেটি রিভাইস না হওয়া পর্যন্ত আমরা কিছু বলতে পারছি না।’
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, এনপিভি, বিসিআর ও আইআরআর-সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটি আর্থিকভাবে লাভজনক হলেও সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদনে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে এর সামঞ্জস্যতা নেই।
সিটি করপোরেশনের ২ দশমিক ২৯ একর নিজস্ব ভূমির ওপর ১৮তলা ভিতবিশিষ্ট প্রস্তাবিত নগর ভবনের আপাতত বেজমেন্ট এবং ৫তলা পর্যন্ত নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ভবনটি ৫তলার ওপর থেকে দুটি টাওয়ারে বিভক্ত হয়ে একটি টাওয়ার ১৮তলা পর্যন্ত এবং একটি টাওয়ার ১২তলা পর্যন্ত ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারিত হবে। বেজমেন্ট এবং গ্রাউন্ডফ্লোরে প্রস্তাবিত ৩২৯টি গাড়ি পার্কিংয়ের মধ্যে ২০০টি পার্কিং স্পেস ভাড়া দেওয়া হবে। পেছনের টাওয়ারের ২য় থেকে ৫তলা পর্যন্ত কিছু স্পেস ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে। তা ছাড়া ৩য়তলায় প্রস্তাবিত কনফারেন্স রুম বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেওয়া হবে এবং ১মতলায় ২ হাজার বর্গফুটের সেলস সেন্টার ভাড়া দেওয়া যাবে। বর্ণিত ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে আয় দেখানো হয়েছে।
১৮তলা ভিতবিশিষ্ট ভবনের ওপর ৫তলা ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হলেও ডিপিপিতে এর প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়নি, এটিকে ডিপিপিতে উল্লেখ করতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন।
নগর ভবন ভাড়া দেওয়া প্রসঙ্গে ইউসুফ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের ভাড়া প্রসঙ্গে কিছু বিষয় সংশোধনের কথা বলা হয়েছে। এটি নিয়ে আমরা আবার বসব। তবে সেলস সেন্টার ও কনফারেন্স রুম থাকবে। পরিকল্পনা কমিশন কর্মপরিবেশ নিয়ে কিছু ফিল করছে। তারা যেভাবে পরামর্শ দেবে, ঠিক সেভাবেই আমরা কাজ করব।’
পিইসি বলছে, প্রস্তাবিত নগর ভবনের নকশা পর্যালোচনাপূর্বক পুনরায় নকশা করতে হবে। পিইসিতে জানতে চাওয়া হয়, কনফারেন্স হল ভাড়া দিলে নগর ভবনের কর্মপরিবেশের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না। তার কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারেনি মসিক।
ডিপিপিতে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জনবল অনুযায়ী প্রতি ফ্লোরে কক্ষসংখ্যা, কক্ষের আয়তন, কক্ষ ব্যবহারকারী কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি ফ্লোর প্ল্যানও দেওয়া হয়নি। পিইসির সভায় বলা হয়েছে, এসব বিষয় উল্লেখ করে ফ্লোর প্ল্যানসহ ধারণাগত ডিজাইন পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযোজন করতে হবে।
তা ছাড়া, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ভাড়া দেওয়ার জন্য নির্ধারিত স্থানের বুকিং মানি বাবদ প্রথম বছর মোট বার্ষিক আয়ের ২৫ শতাংশ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ভাড়া বাবদ বর্তমানে যা পাওয়া যাবে বলে ধরা হয়েছে তা ৫ বছর পর পর ৫৫ শতাংশ করে বাড়বে। প্রকল্প প্রস্তাবে দেখা যায়, ২২ হাজার ১৫৯ দশমিক ১৬ বর্গমিটার নগর ভবন (নিচতলা থেকে ৫তলা) নির্মাণের জন্য ৯৬ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং নগর ভবন (সার স্ট্রাকচার) খাতে ৫ হাজার ৬০৬ দশমিক ৭৮ বর্গমিটারের জন্য ৮১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।
পিইসি সভায় বলা হয়, ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল, ১৬টি লিফট, ফায়ার ফাইটিং, এয়ার কন্ডিশন, সাব-স্টেশন, জেনারেটর ইত্যাদির জন্য যে প্রাক্কলনের প্রস্তাব করা হয়েছে তা অত্যধিক। এ ছাড়া এয়ার কন্ডিশনার, সাব-স্টেশন, জেনারেটর প্রভৃতি বর্গমিটার প্রতি ব্যয় প্রাক্কলন করা হলেও সংখ্যা ও স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করা হয়নি। এসব খাতের স্পেসিফিকেশনসহ বিস্তারিত ব্যয় পুনঃ পর্যালোচনাপূর্বক পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযোজনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
পিইসি সভায় প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার যৌক্তিকতা সম্পর্কে মসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী জানান, বর্তমানে সিটি করপোরেশনকে ৮ লক্ষাধিক নাগরিকের বিভিন্ন সুবিধা দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে অবকাঠামো উন্নয়ন, ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে প্ল্যান অনুমোদন, সড়কবাতি, পানি সরবরাহ, টিকাদান, জন্মসনদ, মৃত্যুসনদ, ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারিশান সনদ, বিবাহ সনদসহ অন্যান্য সেবা। তিনি জানান, পর্যাপ্ত অবকাঠামোর ব্যবস্থা না থাকায় সিটি করপোরেশনকে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। মসিকের সাংগঠনিক কাঠামোতে মোট ১১টি বিভাগ নিয়ে ৬৩০ জন কর্মচারীর ব্যবস্থা রেখে সাংগঠনিক কাঠামো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং পরে অর্থ বিভাগ অনুমোদন দিয়েছে।
‘ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের নগর ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের ওপর ২৫ জানুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকঠামো বিভাগের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।
ছুটির দিনে শিশুদের উচ্ছ্বাসে পরিপূর্ণ ছিল বইমেলা। শিশু প্রহরের পর বইমেলায় নামে জনস্রোত। গতকাল তুলনামূলক বেশি বই বিক্রিতে লেখক-প্রকাশকের মুখে ছিল হাসি। শুধু লেখক-প্রকাশক নয়, পাঠকরাও মেলায় এসে বেশ তৃপ্ত।
সরেজমিনে দেখা যায়, টিএসসি থেকে মেলার গেট পর্যন্ত লম্বা লাইনে দাড়িয়েছিল দর্শনার্থী-পাঠকরা। ভেতরে গিয়েও দেখা যায়, স্টলগুলোর সামনে ভিড়। পাঠকরা বই দেখছেন, কিনছেন। ছুটির দিনেই মেলা যেন পেল তার চিরচেনা রূপ। সকালে শিশুপ্রহরে তাদের মাতিয়ে রেখেছে সিসিমপুরের হালুম, টুকটুকি, ইকরি।
এদিন ঢাকার বাইরে থেকেও অনেকে এসেছিলেন বইমেলায়। টাঙ্গাইল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেলায় এসেছেন একদল শিক্ষার্থী। মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে তারা প্রিয় লেখকদের বই কিনেছেন। নতুন কী বই কিনলেন জানতে চাইলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, হুমায়ূন আহমেদ, মুহাম্মদ জাফর ইকবাল, মাসুদ রানার বই ছাড়াও কবিতার বই কিনেছি।
অনন্যা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজকে সকাল থেকেই মেলায় প্রচুর মানুষ আসছেন। গত কয়েক দিনের তুলনায় আজকে সব থেকে বেশি বই বিক্রি হবে বলে আশা করছি।
তবে শুক্রবার মেলা প্রাঙ্গণ ছিল ধূলিময়। অনেক দর্শনার্থীকে মাস্ক পরে ও নাকে হাত দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ছিটানো হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন মেলায় আগত দর্শনার্থীদের।
নতুন বই: গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার দশম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। নতুন বই এসেছে ২৬০টি। মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছিল।
শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা : অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে সকাল ৮:৩০টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এতে ক-শাখায় ১৯৫, খ-শাখায় ১৮৩ এবং গ-শাখায় ৬৮ প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন শিল্পী হাশেম খান।
শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা : সকাল ৯:৩০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তেন শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে দুই শতাধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন কাজী মদিনা, আন্জুমান আরা ও নূরুল হাসনাত জিলান।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : শিল্পী সফিউদ্দীন আহমেদ এবং জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : এস এম সুলতান’ শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মলয় বালা ও সৈয়দ নিজার। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুশান্তকুমার অধিকারী, ইমাম হোসেন সুমন, নাসির আলী মামুন ও নীরু শামসুন্নাহার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মুনতাসীর মামুন।
আজকের সময়সূচি : আজ ২৮ মাঘ ১৪২৯/১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার। অমর একুশে বইমেলার ১১তম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
শিশুপ্রহর : আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর চলবে।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা : সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তেন শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : আশরাফ সিদ্দিকী এবং স্মরণ সাঈদ আহমদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ইয়াসমিন আরা সাথী ও মাহফুজা হিলালী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন উদয়শংকর বিশ্বাস, শামস্ আল দীন, রীপা রায় ও আব্দুল হালিম প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন খুরশীদা বেগম।
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে সন্ধ্যা নামতেই তৎপর হয়ে ওঠে কয়েকটি পক্ষ। সুযোগ বুঝে ‘লাইনম্যান’ মুঠোফোনে সংকেত দেন ‘লাইন ক্লিয়ার’। এরপর সীমান্তের দিকে এগোতে থাকেন ‘ভারীরা’। খেতের আল ধরে হামাগুড়ি দিয়ে শূন্যরেখার কাছে পৌঁছানোর পর সংকেত দিলে ওপার থেকে মালামাল ছুড়ে দেয় ভারতীয় পাচারকারীরা। দ্রুত সেগুলো সংগ্রহ করে ফিরে আসে তারা।
স্থানীয় বাসিন্দা, চোরাচালানে জড়িত ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, এক যুগ আগেও মাধবপুর সীমান্ত এলাকাগুলো দিয়ে পাচার হওয়া মালামালের তালিকায় গরু, লবণ, চিনি, সাইকেল, জিরা, কাপড়ের মতো পণ্যের প্রাধান্য ছিল। লাভ বেশি হওয়ায় এসব পণ্যের বদলে আসছে মাদক। যার বেশির ভাগই ফেনসিডিল। এ ছাড়া আছে ইয়াবা, গাঁজা, মদ ও নেশাজাতীয় ইনজেকশন। সেই সঙ্গে আসছে ভারতীয় মোবাইল ফোন এবং কসমেটিকস। সীমান্ত দিয়ে অবাধে মাদক আসায় একদিকে জেলায় বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা, অন্যদিকে মাদক পাচার করতে গিয়ে সীমান্ত এলাকায় অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে।
সম্প্রতি মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নের মোহনপুর, আলীনগর, কালিকাপুর, চৌমুহনী ইউনিয়নের রামনগর, কমলপুর; বহড়া ইউনিয়নের শ্রীধরপুর, কৃষ্ণপুর; শাহজাহানপুর ইউনিয়নের বনগাঁও ও জালুয়াবাদ সীমান্ত এলাকা ঘুরে মাদক চোরাচালানের এ চিত্র পাওয়া গেছে।
সীমান্তের মাদক কারবারিদের বলা হয় মহাজন। মাদক আনার জন্য মহাজন যাদের নিয়োগ করেন, তাদের বলা হয় ‘ভারী’। সীমান্তের অবস্থা জানানোর জন্য ‘লাইনম্যান’ হিসেবে কাজ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্সরা। ‘লাইন ক্লিয়ার’ অর্থ হচ্ছে মাদক আনার সুবিধাজনক সময়।
হবিগঞ্জের স্থানীয় কয়েকটি সংবাদপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত সীমান্তে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, ডিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে বিভিন্ন সময় বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ মাদক চোরাকারবারিরা আটক হয়েছে।
মাধবপুর থানার সূত্রমতে, উপজেলায় মাদকদ্রব্য পাচারের সবচেয়ে বড় রোড মোহনপুর, আলীনগর, কালিকাপুর, রামনগর, শ্রীধরপুর, জালুয়াবাদ, বনগাঁও সীমান্ত। এই চার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ১০০ ব্যক্তি মাদকসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ পণ্য চোরাচালানের কাজে যুক্ত বলে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তাদের এক-তৃতীয়াংশই ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী। মহাজন রয়েছেন অর্ধশতাধিক। খুচরা বিক্রেতা হিসেবে নারী মাদক কারবারির সংখ্যাও বাড়ছে।
মাধবপুর সীমান্তের হবিগঞ্জ ৫৫ বিজিবির অধীনে রয়েছে ৪টি বিওপি (মনতলা, হরিণখোলা, রাজেন্দ্রপুর, তেলিয়াপাড়া)। বাকি ধর্মঘর ইউনিয়নের (ধর্মঘর বিওপি, হরষপুর বিওপি, বড়জ্বালা বিওপি) অংশ ২৫ বিজিবির অধীনে পড়েছে। বিজিবি ৫৫ ও ২৫ ব্যাটালিয়নের অধীনে রয়েছে ৭টি বিওপি ক্যাম্প।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোহনপুর ও কালিকাপুর গ্রামের এক মাদক পাচারকারী বলেন, সন্ধ্যার পর থেকেই তাদের সজাগ থাকতে হয়। রাতের যেকোনো সময় ‘লাইন ক্লিয়ারের’ সংকেত আসে। অনেক সময় সংকেত আসতে ভোর হয়ে যায়। সংকেত পেলেই ছোটেন সীমান্তে। আত্মরক্ষার জন্য সঙ্গে থাকে টর্চলাইট, দা। ভারতীয়দের ছুড়ে দেওয়া মাদকদ্রব্য এনে পুকুরপাড়, ঝোপঝাড়ে, পরিত্যক্ত ঘরে রেখে দেন। পরে সুবিধাজনক সময়ে মহাজনের কাছে পৌঁছান। এক রাতে ১০০ বোতল ফেনসিডিল সীমান্ত থেকে ৫০০ মিটার দূরত্বে নিরাপদে সরিয়ে আনলে মহাজনের কাছ থেকে তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার পর্যন্ত টাকা পাওয়া যায় বলে ‘ভারী’দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। তারা বলছেন, ভারীদের কাছে মাল বুঝে পাওয়ার পর সবুজ সংকেত পেলে এজেন্টের মাধ্যমে ভারতীয় মাদক কারবারির টাকা পরিশোধ করেন বাংলাদেশের কারবারিরা।
সীমান্ত দিয়ে যত মাদক আসে, তার খুব কমই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
মাধবপুর থানার ওসি আব্দুল রাজ্জাক বলেন, ‘মাধবপুর সীমান্ত এলাকায় ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত থানা পুলিশের অভিযানে ৪০৮ জন আসামিকে বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্যসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮১৮ কেজি গাঁজা, ২১ হাজার ৫৯০ পিস ইয়াবা, ১৫২ বোতল বিদেশি মদ, ১৪৭ লিটার দেশি মদ, ১৬০টি বিয়ার ক্যান ও ১ হাজার ৯৫৪ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল জব্দ করি এবং ২৯৯টি মামলা করি। মাদক নির্মূলে মাধবপুর থানা পুলিশ জিরো টলারেন্স অবস্থানে আছে জানিয়ে ওসি বলেন, ‘মাদকের ব্যাপারে কোনো আপস নাই।’
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, মাদক পাচারকারীরা এলাকায় অনেক প্রভাবশালী। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলে না বলে অভিযোগ রয়েছে। মোহনপুর সীমান্তের যুবক রহিম বলেন, ‘কাকে অভিযোগ দেব? অভিযোগ দিলে উল্টো মালসহ যদি ফাঁসায়া দেয়, এই ভয়ে এলাকার কেউ জোর গলায় কোনো প্রতিবাদে যায় না।’
মাদক ব্যবসার টাকার ভাগ আইনৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছেও যায় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ধর্মঘর সীমান্ত বিটে দায়িত্বরত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন বলেন, সীমান্ত এলাকায় মাদক নির্মূলে পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি মাদক নির্মূলে কাজ করছে পুলিশ।
বিজিবির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন সরাইল ২৫ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ আরমান আরিফ। সীমান্ত দিয়ে মাদক আসার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে বিজিবি। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।’
এ ব্যাপারে কথা হয় হবিগঞ্জ ৫৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমদাদুল বারী খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি, আমাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ৪টি বিওপি রয়েছে। মাদকের সঙ্গে আমাদের কোনো আপস নাই। মাদক নিয়ন্ত্রণে আমাদের সদস্যরা রাত-দিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বিজিবির পক্ষ থেকে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি।’
সেবার বাংলা একাডেমির অমর একুশে বইমেলায় কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সঙ্গে প্রথম পরিচয় হলো আমার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তখন আমি। মাথার মধ্যে কবিতা লেখার ভূত। প্রতিদিন বড় একটা গাছের ডালে বসে সেই ভূত পা নাচায় আর আমি রাত্রিবেলা শহরের মাথায় ফুটে থাকা চাঁদ দেখে ভাবি, কবিতা লিখে একদিন তোমাকেও ছুঁয়ে দেব চাঁদ।
রুদ্রদাকে ক্যাম্পাসে দেখে আমার মনে হতো কবিদের যুবরাজকে দেখছি। দাড়িপূর্ণ মুখ, উজ্জ্বল দৃষ্টি আর ঝকঝকে হাসিতে মোড়া এমন কবির অবয়ব আজকাল অনুপস্থিত। মাঝেমধ্যে মনে হয়, এ ঢাকা শহরটা একদা কবিদের শহর ছিল। চায়ের দোকান, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বইমেলা, পত্রিকা অফিসে সাহিত্য সম্পাদকের দপ্তর, কবিতা উৎসব থেকে মিছিল কোথায় কবিরা নেই তখন! শহরের যেকোনো নরম নিভৃতিকেও চমকে দিতে পারত তখন কবিরা।
রুদ্রদার সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়ের পর্দা উঠেছিল অমর একুশে বইমেলায়। পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল সিনিয়র বন্ধু প্রয়াত সাংবাদিক, গল্পকার মিনার মাহমুদ। তারা বন্ধু ছিলেন। আজও মনে পড়ে, মিনার ভাই খুব ক্যাজুয়ালি পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার স্বভাবসুলভ শ্লেষের হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলেছিলেন ও কবিতা করে। মিনার ভাই প্রকাশ্যে কবিদের প্রতি সবসময় টিপ্পনী কাটতেন এ কথাটা বলে। তখন একরোখা আর রাগী তরুণ আমি প্রথম পরিচয়েই রুদ্রদার তুমি সম্বোধনে ক্ষিপ্ত হয়েছিলাম। ভাবটা এমন ছিল, দুজনই তো কবি; প্রথম পরিচয়ে তুমি সম্বোধন করার কী আছে! মনে আছে আজও, রুদ্রদাকে বলেছিলাম, ‘আপনার সঙ্গে তো আমার এমন কোনো ঘনিষ্ঠতা নেই যে তুমি বলবেন আমাকে।’ সেদিন খুব বিস্মিত হয়ে হেসে ফেলেছিল রুদ্রদা। তার ঝকঝকে হাসি ছড়িয়ে পড়েছিল ফেব্রুয়ারির মরে আসা বিকেলে বাংলা একাডেমির মূল ভবনসংলগ্ন বইমেলার মাঠে। পরিচয়ের প্রথম ধাক্কা কাটিয়ে আমাদের সম্পর্ক তারপর অনেকটা পথ হেঁটেছিল হাকিম চত্বর হয়ে মেডিকেল কলেজের মোড় ঘুরে নিমতলীর দিকে, নারিন্দা সুইপার কলোনির ম্লান বিকেলে অথবা তার প্রিয় পানশালা সাকুরায়। তার পাঞ্জাবির পকেটে বহুদিন হাসির গল্প হয়েই ছিল ঘটনাটা। রুদ্রদা ক্ষ্যাপাতো আমাকে মাঝেমধ্যে। তখন একবারের জন্য মনে হয়নি, ভোরবেলা কবি তারিক সুজাতের টেলিফোন আমাকে ডেকে তুলে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দেবে রুদ্রদার নিথর দেহের সামনে!
খুব বেশি সময় আগের কথা নয় কিন্তু। বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজের চারপাশ ঘিরে পর্দা উঠত অমর একুশে বইমেলার। মাঝখানে শুকিয়ে যাওয়া একটা পুকুর ঘিরে প্রকাশকদের স্টল। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে উতলা হতো বাতাসও। তখন বইমেলায় কত ঘটনা যে ঘটত! একবার শুনতে পেলাম, প্রাবন্ধিক আহমদ ছফা একটা ছুরি নিয়ে ঘুরছেন একজন কবিকে ছুরি মারবেন বলে। সেই কবির অপরাধ তার কবিতা হয় না। সেই কবিও প্রাণভয়ে পলাতক মেলা থেকে। পরে ছফা ভাইয়ের কাছেই জানা গেল, সেই ছুরি আসলে নেইল কাটারের সঙ্গে সংযুক্ত। কখনো কখনো ছফা ভাই অন্যদের সঙ্গে ভীষণ রসিকতা করতেন!
প্রয়াত কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার একদা বাংলা একাডেমির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। বইমেলায় প্রতিদিন বিকেল হতো মাইকে রশীদ ভাইয়ের কণ্ঠ শুনে। মেলায় প্রকাশিত হওয়া নতুন বইয়ের পরিচিতি দিতেন তিনি। আমরা নিয়মিত রশীদ হায়দার ভাইয়ের ভারী কণ্ঠস্বর নকল করে কথা বলতাম। মেলা প্রাঙ্গণে গোপন ধূমপায়ীদের রশীদ ভাই অনুসরণ করতেন গোয়েন্দা পুলিশের মতো। একাডেমির আনাচে-কানাচে ঝড়ের মতো আবির্ভূত রশীদ ভাইকে দেখে কতদিন পালিয়ে গেছি হাতের সদ্য প্রজ¦লিত সিগারেট ফেলে!
বইমেলায় সন্ধ্যা থেকেই প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক আর কবিদের আগমন ঘটত। চাপা জিন্সের প্যান্ট আর উজ্জ্বল রঙের টি-শার্ট পরিহিত রফিক আজাদ আসতেন হেলতে-দুলতে। মহাদেব সাহা যথারীতি পাজামা-পাঞ্জাবিতে শোভিত। কবি হেলাল হাফিজকে দেখতাম কাঁধে কাপড়ের ব্যাগ ঝুলিয়ে মগ্ন হয়ে হেঁটে যেতে। তখন বইমেলায় নিয়মিত আসতেন সত্তর এবং আশির দশকের উজ্জ্বল কবিদের দল। জাহিদ হায়দার, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, কামাল চৌধুরী, তুষার দাশ, ফরিদ কবির, মাহমুদ শফিক, মুজিবুল হক কবির, মোহন রায়হান প্রমুখ। কথাশিল্পী মঈনুল আহসান সাবের, গল্পকার ফারুক মঈনুদ্দিন, ইসহাক খান, মিনার মাহমুদ সন্ধ্যার পর নিয়মিত আড্ডা দিতেন মেলায়। ছোট ছোট জটলায় চাল ভাজার মতো মুচমুচে আড্ডার স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে আমাকে। মিনার মাহমুদ সেই আড্ডার নাম দিয়েছিলেন ‘খোঁচাখুঁচি’। সাহিত্য, রাজনীতি, ভালো লেখা, সিনেমা, সমাজ অর্থনীতি আর তীব্র পরচর্চা ঝড় তুলত। কোনো কোনো দিন চাঁদা তুলে ‘কঠোর পানীয়’ কিনে গোপনে তা গলাধঃকরণ করা হতো। মনে পড়ে, সেই উল্টোপাল্টা আলোর স্রোতে ভাসা সন্ধ্যাগুলোতে নিয়মিত সঙ্গ দিতেন সাংবাদিক খায়রুল আনোয়ার, সৈয়দ শহীদ।
প্রয়াত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ আশির দশকের মাঝামাঝি মেলায় এসে পাঠকদের বইতে স্বাক্ষর দিতে শুরু করলেন। একবার তার স্বাক্ষর নিতে উৎসাহী পাঠকদের ভিড়ের চাপে প্রতীক প্রকাশনীর স্টল প্রায় ভেঙে পড়েছিল। কথাশিল্পী ইমদাদুল হক মিলনকে বিকেল থেকে দেখা যেত স্টলে বসে একমনে স্বাক্ষর দিয়ে চলেছেন পাঠকদের। স্বাক্ষর নিতে আসা পাঠকদের লম্বা লাইন সামলাতে তখন হিমশিম খেতে হতো ভলান্টিয়ারদের। এরকম দৃশ্য দেখে প্রয়াত ভাষাবিজ্ঞানী, কবি ড. হুমায়ুন আজাদের শ্লেষযুক্ত তীব্র উক্তিগুলো আজও যেন ফেব্রুয়ারির গা ছম ছম করা হাওয়ায় হুল ফোটায়।
তখন বইমেলার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার পরও বাইরের ফুটপাত, টিএসসির মোড় আর শাহবাগে আড্ডাগুলো সম্প্রসারিত হতো। পাঠকরা বই কিনে বাড়ি ফিরতেন আর আমাদের মতো কিছু লেখক হতে চাওয়া তরুণ সেই আড্ডাগুলোর ভেতরে নিজেদের আরও কিছুক্ষণ গুঁজে দিতে চাইতাম। রাত গভীর হতো। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গভীর অন্ধকার থেকে ভেসে আসত বনজ ঘ্রাণ। শীত করত কারও কারও। ঢাকা শহরের রাজপথে কমে যেত যানবাহন। বিচ্ছিন্ন রিকশা দাঁড়িয়ে থাকত বইমেলা থেকে শেষ সওয়ারি ধরার অপেক্ষায়।
কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শিরিনা খাতুনের প্রাইভেট কারের ধাক্কায় এক স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহের শৈলকুপার মদনডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। উম্মে রুকাইয়া (১১) নামে ওই স্কুলছাত্রীকে ধাক্কা দেওয়ার পর তার প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা না করে প্রাইভেট কারটি নিয়ে চালক ও শিক্ষক শিরিনা খাতুন দ্রুত পালিয়ে যান। এ শিক্ষকের দাবি, গাড়ির গতি বেশি থাকায় চালক নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি। বিষয়টি তাকে মর্মাহত করেছে।
এদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গত বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে গতকাল শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে আরও আটজনের। এসব ঘটনায় আহত হয়েছে প্রায় ৫০ জন। এর মধ্যে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে ট্রাক্টরে পিষ্ট হয়ে কৃষি কর্মকর্তা, জয়পুরহাটের কালাইয়ে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারী, নীলফামারীতে পিকআপের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে স্কুলের পিকনিকের বাস খাদে পড়ে দুজন, জামালপুরে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে পিকআপ ভ্যানের চালক, সাতক্ষীরায় দুই মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে কিশোর এবং খুলনায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত হয়েছেন।
শৈলকুপায় নিহত উম্মে রুকাইয়া ত্রিবেনী ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মনোয়ার হোসেনের মেয়ে। সে শ্রীরামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
এলাকাবাসী জানায়, দুপুর ১২টার দিকে রুকাইয়া তার সহপাঠীর সঙ্গে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল। পথে একটি দ্রুতগামী প্রাইভেট কার তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রুকাইয়াকে। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে সন্ধ্যায় মারা যায়।
নিহতের চাচা ফিরোজ বলেন, ‘স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতির গাড়ি আমার ভাতিজিকে ধাক্কা দেয়। পরে গাড়িটিকে গাড়াগঞ্জ বাজারে আটক করা হয়। কিছুক্ষণ কথা বলার পর তিনি (শিরিনা খাতুন) গাড়ি নিয়ে দ্রুত চলে যান। রুকাইয়াকে জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিরিনা খাতুন বলেন, ‘ঘটনাটি অনাকাক্সিক্ষত ছিল। গাড়ির গতি বেশি থাকায় ড্রাইভার কন্ট্রোল করতে পারেনি। বিষয়টি আমাকে মর্মাহত করেছে।’
শৈলকুপা থানার ওসি আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি সত্য। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।’
কোটচাঁদপুরে ট্রাক্টরে পিষ্ট কৃষি কর্মকর্তা : ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের তালসার এলাকায় ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক কৃষি কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে তালসার সড়কের ফুলবাড়িতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত এস কে লতিফুল কবির কোটচাঁদপুরের কুশনা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের বাদপুকুর গ্রামের তের আলীর ছেলে।
কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহাসীন আলী জানান, কৃষিমেলা উপলক্ষে উপজেলা অফিসে সভা ছিল। সভা শেষে মোটরসাইকেলে নিজের বাড়ি বাদপুকুরে ফিরছিলেন। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা স্থানীয় একটি ইটভাটার ট্রাক্টর তাকে চাপা দেয়। পরে এলাকার লোকজন উদ্ধার করে কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
জয়পুরহাটে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় পথচারীর মৃত্যু : জয়পুরহাটের কালাইয়ে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় নজরুল ইসলাম (৭২) নামে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। ওই ঘটনায় মোটরসাইকেলটির চালক গুরুতর আহত হন। গতকাল দুপুরে জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কের হাজিপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নজরুল ইসলাম কালাই উপজেলার হাজিপাড়া গ্রামের মৃত নইমুদ্দিনের ছেলে।
গুরুতর আহত মোটরসাইকেল চালক শান্ত ইসলাম (২০) জেলার আক্কেলপুর উপজেলার ভান্ডারিপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ও পুলিশ জানায়, শান্ত মোটরসাইকেল চালিয়ে জয়পুরহাট থেকে বগুড়ার দিকে যাচ্ছিলেন। পথে হাজিপাড়া মোড়ে রাস্তা পারাপারের সময় নজরুল ইসলামকে ধাক্কা দেয় ওই মোটরসাইকেলটি। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনায় দুর্ঘটনাস্থল থেকে সাড়ে ৯ লাখ টাকা ছিনতাই : নীলফামারীতে পিকআপের ধাক্কায় তানভীর আহমেদ জনি (৩৫) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। এ সময় কাজী আবদুর রাজ্জাক নামে আরও এক মোটরসাইকেল আরোহী আহত হন। দুর্ঘটনার পরপরই এই নিহত ও আহতের কাছে থাকা সাড়ে ৯ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়কের কাদিখোল এলাকার ইকু জুট মিলের ৫০০ গজ দূরে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, নিহত তানভীর আহমেদ জনি ইকু জুট মিলের হিসাবরক্ষক ও পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরের বাঘাচড়া গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে। আর আহত আবদুর রাজ্জাক (৩৮) ইকু জুট মিলের কম্পিউটার অপারেটর। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় ভর্তি করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
ইকু জুট মিলের স্বত্বাধিকারী সিদ্দিকুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, মিলের হিসাবরক্ষক জনি ও কম্পিউটার অপারেটর রাজ্জাক রাত ৯টার দিকে সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়ায় ইকু গ্রুপের অফিস থেকে ব্যাংক থেকে তুলে আনা মিলের কর্মচারীদের সাপ্তাহিক বেতনের সাড়ে ৯ লাখ টাকা একটি চটের বস্তায় ভরে মোটরসাইকেলে মিলের উদ্দেশে রওনা হন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ইকু জুট মিলের ৫০০ গজ অদূরে পৌঁছলে পেছন দিক থেকে একটি পিকআপ ভ্যান তাদের মোটরসাইকেলে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান জনি। গুরুতর আহত হন রাজ্জাক। তখন পিকআপের পেছনে থাকা অন্য একটি মোটরসাইকেলে থাকা ছিনতাইকারীরা ওই টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়।
নীলফামারী সদর থানার ওসি আবদুর রউপ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পিকআপটি জব্দ করলেও চালক ও হেলপার পালিয়ে যায়।
বিদ্যালয়ের পিকনিকের বাস খাদে : যশোরের বাঘারপাড়ার বাকড়ী বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পিকনিকের বাস দুর্ঘটনায় পড়ে দুজন নিহত ও ৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। পিকনিক শেষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া থেকে ফেরার পথে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত প্রায় ২০ জনকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে মারা যান বিদ্যালয়টির ল্যাব সহকারী সুদীপ্ত বিশ্বাস (৩৫)। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে নিহত হন বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস (৪৫)।
বাকড়ী বহুমুখী বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বিশ্বজিৎ কুমার পাল জানান, তারা বৃহস্পতিবার সকালে তিনটি বাসে করে ১৫০ জন টুঙ্গিপাড়ায় পিকনিকে যান। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সদস্যরা ছিলেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই নবম ও দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। পিকনিক শেষে ফেরার পথে ভাটিয়াপাড়া মোড়ে তাদের পিকনিকের বাসগুলোর একটি অন্য একটি বাসকে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। বাসটিতে ৫০ জন ছিলেন।
জামালপুরে বাস-পিকআপ ভ্যান সংঘর্ষে চালকের মৃত্যু : জামালপুর সদর উপজেলায় বাস-পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে পিকআপ ভ্যানটির চালক মির্জা তৌফিক তানভির সৌরভ (৩৪) নিহত হন। এ সময় বাসের দুই যাত্রী আহত হয়েছেন। গতকাল সকালে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শরিফপুর ইউনিয়নের জয়রামপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সৌরভ ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কিষ্টপুর গ্রামের মির্জা তপির ছেলে।
জামালপুর সদর থানার ওসি কাজী শাহনেওয়াজ জানান, সকালে জামালপুর থেকে ঢাকাগামী রাজীব পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা পিকআপ ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে পিকআপ ভ্যানের চালক সৌরভ ঘটনাস্থলেই মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে।
সাতক্ষীরায় মোটরসাইকেল আরোহী এক কিশোর নিহত : সাতক্ষীরার গোপীনাথপুরে দুটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক কিশোর নিহত ও দুই যুবক আহত হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর থানার ওসি আবু জিহাদ মো. ফকরুল আলম খান জানান, গতকাল দুপুরে সাতক্ষীরা থেকে খুলনার দিকে যাওয়ার সময় গোপীনাথপুর ঋষিপল্লীর সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে শেখ জুবায়ের হোসেন (১৫) নামে এক কিশোর ঘটনাস্থলেই মারা যায়। সে সাতক্ষীরার ইটাগাছা গ্রামের শেখ কবিরুজ্জামানের ছেলে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন রশীদ ও তরিকুল নামে দুই যুবক।
খুলনায় ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল চালক নিহত : খুলনায় ট্রাকের ধাক্কায় মিঠুন চৌধুরী নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে নগরীর রূপসা বাইপাস সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মিঠুন দীঘলিয়া উপজেলার লাখোহাটি গ্রামের নাসিম চৌধুরীর ছেলে। এ ঘটনায় একই এলাকার রেজাউল শেখের ছেলে মো. মামুন গুরুতর আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মোটরসাইকেলে মিঠুন ও মামুন আড়ংঘাটা সড়ক দিয়ে বাইপাস রোডে ওঠার চেষ্টা করে। এ সময় বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগামীর একটি ট্রাক মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে তারা রাস্তার ওপর ছিটকে পড়ে মাথায় আঘাত পান। আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিঠুনের মৃত্যু হয়। পরে আহত মামুনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
* প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন ইবি এবং সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধি ও সংবাদদাতারা
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা আজ শুক্রবার। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান।
‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শুক্রবার (৯ জুন) বিএবি’র উদ্যোগে ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন ও বাণিজ্য পারস্পরিক আস্থার সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-বিধান, মেট্রোলজি, নিরপেক্ষ ও স্বীকৃত সাযুজ্য নিরূপণ ব্যবস্থা একটি দেশের গুণগত মান অবকাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি, যা ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রমকে সহজতর করার পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণে অ্যাক্রেডিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় মান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ভোক্তা ও উৎপাদকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটেশন বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ প্রেক্ষিতে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য-‘অ্যাক্রেডিটেশন : সাপোটিং দ্যা ফিউচার অব গ্লোবাল ট্রেড’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএবি অ্যাক্রেডিটেশন সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।
মাত্র এক বছরেই পাল্টে গেছে বাংলাদেশের চিত্র। শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়ে ঋণদাতা হিসেবে গর্ব করা দেশের মানুষের এখন নাকাল দশা। বিদেশি মুদ্রা বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে সরকার জরুরি অনেক পণ্য আমদানি করতে পারছে না। এতে সরবরাহজনিত সংকট তৈরি হয়ে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম।
একই কারণে জ¦ালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। গরম আর লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত মানুষ। হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বাধ্য হয়ে সরকার অনেক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে। বিদ্যুতের পাশাপাশি গ্যাস সংকটে শিল্পোৎপাদন কমে ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। এটিও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ।
এমন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনামন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, নিত্যপণ্য আর বিদ্যুতে ভয়াবহ সংকটে আছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ মে মাসের মূল্যস্ফীতি গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সংগতি না মেলায় ধার করে চলতে হচ্ছে অনেককে। এখন গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে খরচ করতে হচ্ছে বেশি। যেটি কয়েক মাস আগেও গ্রামে বেশি ছিল। ব্যয়ের চাপ সামলাতে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শুধু আমদানি পণ্যে নয়, দেশে উৎপাদিত পণ্য ঘিরেও নানান সিন্ডিকেট সক্রিয়। এসব সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সব পণ্য। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এক বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চমূল্যে পণ্য কিনতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশে^র প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
২০২১ সালের আগস্টে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। করোনায় আমদানি কমে যাওয়ায় এবং অনেক ঋণপত্রে (এলসি) নিষ্পত্তি ছয় মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে দেওয়ায় রিজার্ভ ওই পরিমাণে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ সব পণ্যের দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এক বছরের মধ্যে ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমে আসে। বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের চাপ এবং আমদানির পুরনো দায় পরিশোধের চাপে বেসামাল হয়ে পড়ে সরকার।
ফলে ২০২১ সালে যেখানে শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়েছিল বাংলাদেশ ২০২২ সালে সেই বাংলাদেশকেই ডলার ধারের জন্য আন্তর্জাতিক পরিম-লে হাত পাততে হয়েছে। নানা রকম শর্ত মেনে আইএমএফের কাছ থেকে ধার নিতে হয় বাংলাদেশকে। সংস্থাটির কাছ থেকে সাড়ে তিন বছরের কিস্তিতে ৪৭০ কোটি ডলার ধারের প্রথম কিস্তি পেলেও দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং আইএমএফের শর্তের কারণে রিজার্ভ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে গিয়ে আমদানি সীমিত করে আনতে হয়েছে। অনেক আমদানির বিলও বকেয়া পড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে নেমেছে যে, এখন জরুরি প্রয়োজনের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা, এলএনজির মতো জ¦ালানিও আনতে পারছে না।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সর্বশেষ হিসাব বলছে, শিল্পের অবদান কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে জিডিপিতে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশে। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
সামগ্রিক এই সংকটের বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ¦ালানি সংকট সমাধানে যেগুলো ডেফার্ড পেমেন্ট আছে সেগুলো দিতে হবে। সেগুলো দিয়ে যে সাপ্লাই চেইন বন্ধ আছে সেগুলোকে সচল করতে হবে। এটাকে প্রথম অগ্রাধিকার দিতে হবে। দরকার হলে অন্য জায়গায় যে প্রকল্পগুলো আছে সেসব প্রকল্পে ধীরে যেতে হবে। প্রকল্পের টাকা এখানে নিয়ে আসতে হবে। কারণ আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে। ডলার খরচের ক্ষেত্রে জ¦ালানিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এখন জ¦ালানি না কিনে যদি রিজার্ভ বাড়ানোর চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে রপ্তানিকারকরা রপ্তানি করতে পারছেন না। কারণ তারা উৎপাদন করতে পারছেন না। তখন রপ্তানি আয়ও কমে যাবে। তখন রিজার্ভে অন্য সমস্যা আসবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদ্ধতি কী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোস্তাফিজ বলেন, বাজারে খুব দ্রুত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজস্ব নীতি এবং মুদ্রানীতি দুটোই ব্যবহার করতে হবে। এখন টাকার সরবরাহ যা আছে তা কমাতে হবে। সুদহারকে বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। আর যেসব জায়গায় প্রয়োজন আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। পেঁয়াজের বাজারে কী হলো সেটি তো দেখা গেছে। উৎপাদন কত, চাহিদা কত এগুলো ঠিক মতো পর্যালোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সময়মতো আমদানি করলে তো এটি এতটা বাড়ত না।
তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির এমন পরিস্থিতিতে ফ্যামিলি কার্ড বাড়াতে হবে। খোলাবাজারে বিক্রি করে কিছুটা সামাল দিতে হবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।