
বইমেলার লিটল ম্যাগ চত্বর একটি অধিকতর প্রাণবন্ত জায়গা। একসময়ের পাঠক, লেখক আড্ডায় মুখর থাকা লিটল ম্যাগ চত্বর এখন অনেকটা নি®প্রাণ। গতকাল শনিবার ছুটির দিনে মেলা প্রাঙ্গণ পাঠকদের পদচারণায় মুখর থাকলেও এই চত্বরটি ছিল ফাঁকা। কারণ হিসেবে লিটল ম্যাগের সম্পাদক-প্রকাশকরা বলছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শেষ প্রান্তে লিটল ম্যাগ চত্বর হওয়ায় পাঠকদের আনাগোনা কম। গুটি কয়েক দর্শনার্থী এলেও বিক্রিতে ভাটা। অধিকাংশ স্টলে গেল ১১ দিনে গড়ে ৪-২০টি ম্যাগ বা বইয়ের বেশি বিক্রি হয়নি।
‘ভিন্ন চোখের’ স্টলের বিক্রয়কর্মী সাইফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, মেলার এগারতম দিন পার করছি। এখন পর্যন্ত মাত্র ৪টি বই বিক্রি হয়েছে।
‘বাংলাদেশ খ্রিস্টান লেখক ফোরামের’ স্টলে খবর নিয়ে জানা যায়, মেলার অর্ধেক সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত এই স্টলে একটি বইও বিক্রি হয়নি।
জাসিন্তা এ্যানি ম্যান্ডেস বলেন, আমাদের স্টলের এখানে কেউ আসেই না। অন্যান্য স্টলে দুএকজন পাঠক এলে তাদের বইগুলো হাতে নিয়ে দেখেন। কিন্তু আমাদের স্টল একেবারে শেষ প্রান্তে হওয়ায় কোনো পাঠক এই দিকে আসছেন না।
পাঠকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, প্রতিবছর লিটল ম্যাগ মুক্তমঞ্চের কাছাকাছি থেকেছে। কিন্তু এবার একদম শেষ প্রান্তে হওয়ায় তা খুঁজে পেতে কষ্ট হয়।
মিরপুর থেকে আসা আওলাদ নামের এক পাঠক বলেন, ‘লিটল ম্যাগ’ চত্বর খুঁজে পেতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। মেলার শেষ প্রান্তে হওয়ায় এদিকে আসতেও মন চায় না।
‘লিটল ম্যাগ’ প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, চার সারিতে বিন্যস্ত ১৬০টি স্টল। টিএসসি থেকে বইমেলায় প্রবেশের পরই হাতের বামের সারি থেকে প্রথম চত্বরে ১৫টি, দ্বিতীয় চত্বরে ৯টি তৃতীয় চত্বরে ৬টি ও সর্বশেষ চত্বরে ৪টিসহ মোট ৩৪টি স্টল ফাঁকা রয়েছে।
চার বছর ধরে লিটল ম্যাগের সঙ্গে কাজ করা ‘স্বপ্ন পাঠ’ প্রকাশনীর রিয়া তামান্না প্রাপ্তি বলেন, এমনিতেই লিটল ম্যাগ বারবার স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে পাঠকদের খুঁজে পেতে অসুবিধে হয়। এর মধ্যে এবার মেলার শেষ প্রান্তে লিটল ম্যাগাজিন চত্বর হওয়ায় অবস্থা খুবই খারাপ। বিক্রি নেই দেখে অনেকে স্টল বিকেলে দুএক ঘণ্টা থেকে সন্ধ্যার আগেই বন্ধ করে দেন।
নতুন বই : গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার ১১তম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। নতুন বই এসেছে ১৯১টি। মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা : সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তেন শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে দু’শতাধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : আশরাফ সিদ্দিকী এবং স্মরণ : সাঈদ আহমদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইয়াসমিন আরা সাথী এবং মাহফুজা হিলালী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন উদয়শংকর বিশ্বাস, শামস্ আল দীন, রীপা রায় এবং আব্দুল হালিম প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুরশীদা বেগম।
প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, ড. আশরাফ সিদ্দিকী ছিলেন প্রথিতযশা লোকসংস্কৃতি সংগ্রাহক এবং বিশ্লেষক। তিনি বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের ফোকলোর চর্চায় ভিন্নতার অনুসন্ধান করেছেন। ফোকলোরের নানা অনুষঙ্গ বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে জনসম্মুখে প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে সাঈদ আহমদ ছিলেন বাঙালি হয়েও একজন বিশ্বমানব। বাংলা এবং ভারতীয় সংস্কৃতি তো বটেই বিশ্বের প্রতিটি দেশের সংস্কৃতির প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ। তার সব থেকে বড় অবদান, তিনি বিদেশি সাহিত্য আঙ্গিককে দেশে এনেছিলেন এবং দেশের সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতিকে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশে যারা ফোকলোর চর্চায় উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন আশরাফ সিদ্দিকী তাদের মধ্যে একজন। ফোকলোর গবেষণায় কিংবদন্তি, লোককাহিনী ও উৎসব-আচার সম্পর্কে তার বিস্তর আগ্রহ ছিল। তিনি কেবল লোকসংস্কৃতি গবেষকই ছিলেন না, বাংলা সাহিত্যের জীবনঘনিষ্ঠ ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, কবি, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদও ছিলেন। অন্যদিকে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সাঈদ আহমদ এদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক অনন্য নাম। চাকরির সুবাদে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন এবং বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্বসংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।
সভাপতির বক্তব্যে খুরশীদা বেগম বলেন, বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের বরেণ্য দুজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. আশরাফ সিদ্দিকী এবং সাঈদ আহমদ। তাদের জীবন, কর্ম ও আদর্শ আমাদের তরুণ সমাজকে পথ দেখাবে। এই গুণী ব্যক্তিদের স্মরণ করা আমাদের জন্য একান্ত জরুরি।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মুর্শিদা বিনতে রহমান, রমজান মাহমুদ, ইশরাত তানিয়া এবং কবির কল্লোল।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি হারিসুল হক, রিশাদ হুদা, শেলী সেলিনা, আসাদউল্লাহ এবং জরিনা আখতার।
আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী গোলাম সারোয়ার, মো. মাসকুরে সাত্তার, বেলায়েত হোসেন এবং সায়েরা হাবীব। এ ছাড়াও ছিল জাহাঙ্গীর চৌধুরীর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘উদ্ভাস আবৃত্তি সংগঠন’ এবং অমিত হিমেলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সমস্বর’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন রওশন আলম, অনাবিল ইহসান, মামুনুল হক সিদ্দীক, জুলি শারমিলী, ফারহানা আক্তার, মো. রবিউল হক, আরতি রানী সেন এবং জয় চক্রবর্তী। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন প্রিয়ব্রত চৌধুরী (তবলা), ইফতেখার হোসেন সোহেল (কি-বোর্ড), শেখ আবু জাফর (বাঁশি), অরূপ কুমার শীল (দোতরা)।
আজকের সময়সূচি : অমর একুশে বইমেলার ১২তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : হাসান হাফিজুর রহমান এবং স্মরণ : হাবীবুল্লাহ সিরাজী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মিনার মনসুর এবং শেখ মো. কাবেদুল ইসলাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শোয়াইব জিবরান, শাহাদাৎ হোসেন নিপু, রুবেল আনছার এবং ওবায়েদ আকাশ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন এএইচএম লোকমান।
ডলার সংকটের কারণে এলসি বা ঋণপত্র খুলতে পারছে না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এতে দেশে চাহিদা অনুযায়ী শিল্পের কাঁচামাল আসছে না। কাঁচামালের সংকটে ছোট-বড় সব খাতের ব্যবসায়ীরাই সমস্যায় পড়েছে। কমেছে উৎপাদন। এর সঙ্গে জ্বালানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এতে লোকসানে পড়েছে প্রায় সব শিল্প উদ্যোক্তা। বিপাকে পড়েছে শিল্প খাত। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ারও হিসাব কষছে।
এস কে আরপি ইলেট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম হতাশা প্রকাশ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমার কারখানা মুন্সীগঞ্জের বিসিক শিল্প নগরীতে। কারখানায় কাজ করে দুই শতাধিক কর্মী। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে আছে আরও দুইশ কর্মী আছে। গত পাঁচ-ছয় মাস থেকে এলসি খুলতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আমার মজুদ কাঁচামালও শেষ। গত ডিসেম্বর থেকে উৎপাদন প্রায় বন্ধ। প্রতি মাসে লোকসান দিচ্ছি ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। এ অবস্থা চলতে থাকলেও ব্যবসা বন্ধ করে দেব।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি ও বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডলার সংকটের কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছে না। এতে দেশে চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল আসছে না। কাঁচামালের সংকটে ছোট-বড় সব খাতের ব্যবসায়ীরাই সমস্যায় পড়েছে। উৎপাদন কমে গিয়েছে। উৎপাদন না থাকলেও শ্রমিক কর্মচারীদের বেতনসহ সব খরচই করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে জ¦ালানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে উৎপাদন খরচ বেড়ছে। এভাবে বিপাকে পড়েছে শিল্প খাত। শিল্পের স্বাভাবিক ধারা বজায় রাখতে কাঁচামাল আমদানি বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এখনই পদক্ষেপ নেওয়া।
রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করা হয় ‘ব্যাক টু ব্যাক’ এলসির মাধ্যমে। এলসি খোলার পর বিভিন্ন দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে দেশে পণ্য পৌঁছাতে তিন থেকে চার মাস বা তার বেশি সময় লাগে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবেও দেখা গেছে এলসি খোলায় নেতিবাচক ধারা। বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের নিজস্ব কোনো ডলারের উৎস নেই। ব্যাংকই তাদের ভরসা। কিন্তু ব্যাংক এখন ডলারের জোগান দিতে পারছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বলা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে সার্বিকভাবে আমদানির এলসি খোলা কমেছে ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর মধ্যে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি কমেছে ২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ এলসি ও আমদানি দুটোই কমেছে। এলসি খোলা কমায় আগামীতে আমদানিও কমে যাবে।
শিল্প খাতের কিছু অর্ধেক তৈরি পণ্য আমদানি করে দেশে পূর্ণাঙ্গ পণ্য উৎপাদন করা হয়। এ ধরনের কাঁচামালকে বলা হয় মধ্যবর্তী কাঁচামাল। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে শিল্পের এ ধরনের কাঁচামালের এলসি কমেছে ৩৩ দশমিক ১৮ শতাংশ, আমদানি কমেছে ১৭ দশমিক ০২ শতাংশ। নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য শিল্পের যন্ত্রপাতির এলসি কমেছে ৬৫ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। দুটোই কমার অর্থ হলো সীমিত আকারে কিছু যন্ত্রপাতি এলেও শিল্প করতে আগ্রহী কমেছে।
অন্যান্য শিল্পের যন্ত্রপাতি এলসি কমেছে ৪১ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ২১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতের ৯৬ শতাংশ কাঁচামালই আমদানি করা হয়। এ খাতে গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলা কমেছে ৩২ দশমিক ৮২ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে আমদানি কমেছে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি এলসি খোলা কমেছে ২২ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। ফলে ওষুধ খাতেও উৎপাদন কমার আশঙ্কা রয়েছে।
রাসায়নিক ও এ জাতীয় পণ্য আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। অন্যান্য কাঁচামালের এলসি কমেছে ৩৬ দশমিক ০৯ শতাংশ। শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামালের সিমেন্টের এলসি খোলা কমেছে ৪৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আমদানি কমেছে ৩৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ক্লিংকার ও লাইম স্টোন এলসি কমেছে ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এতে নির্মাণ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আগামীতে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও বাড়বে।
বিপি শিট এলসি ৬৯ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং আমদানি ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ, টিন প্লেটের এলসি ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ এবং আমদানি ৫৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমেছে। পুরনো জাহাজ আমদানি এলসি ৬৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং আমদানি ৬৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ, লোহা ও ইস্পাত আমদানির এলসি ২৮ দশমিক ০২ শতাংশ কমেছে। লৌহবহির্ভূত বিভিন্ন খনিজ ধাতুর এলসি ৬৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং আমদানি ৬৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ কমেছে। পেপার ও পেপার বোর্ড আমদানির এলসি ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ। অন্যান্য আমদানির এলসি ৩১ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
অনেক বড় উদ্যোক্তা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাঁচামাল আমদানি করে সেগুলো ছোট উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন। খোলাবাজার থেকে পণ্য কিনে যেসব ছোট উদ্যোক্তা শিল্প চালাতেন, তারাও এখন কাঁচামাল সংকটে ভুগছেন।
এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে জানা যায়, এরই মধ্যে ছোট ও মাঝারি খাতের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাঁচামালের চলমান সংকটের সমাধানে সহায়তার আবেদন করেছে।
হালকা প্রকৌশল শিল্প খাতের ওপর নির্ভরশীল এদেশের শিল্প খাত। বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ সমিতির সদস্যসংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। সারা দেশে আরও অর্ধলক্ষাধিক প্রতিষ্ঠান আছে এ খাতে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে নাটবল্টু, খুচরা যন্ত্রাংশ, যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়। দেশের সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানেই হালকা শিল্প খাতে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার হয়। হালকা শিল্প খাতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল ইস্পাত পণ্য, অ্যালুমিনিয়াম, বেয়ারিংসহ বিভিন্ন ধরনের খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়। ডলার সংকটে এসব কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খুলতে মাসের পর মাস ব্যাংকে ঘুরলেও কাজ হচ্ছে না। হালকা শিল্প খাত ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। এতে অধিকাংশ বড় শিল্পও সংকটে পড়েছে।
ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, এরই মধ্যে হালকা প্রকৌশল খাতের অনেক কারখানায় কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। অনেক কারখানা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অচিরেই কাঁচামালের স্বাভাবিক আমদানি নিশ্চিত করা না হলে এ খাতের ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়বে।
এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, শিল্পের উপকরণ আমদানি কমার প্রধান কারণ ডলার সংকট। ডলারের সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে চলমান সমস্যার সমাধান কঠিন হবে।
সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার বিচার সম্ভব নয় জানিয়ে রুনির ভাই নওশের রোমান বলেছেন, ‘তদন্তে বিন্দুমাত্র অগ্রগতি নেই। ১১ বছরেও যেহেতু বিচার পাইনি, তাই আমরা বিচার চাইতেও এখন লজ্জা পাই। বিচার চাইব কার কাছে।’
সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের ১১ বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল শনিবার। তাদের খুনের বিচার দাবিতে আয়োজিত দিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীর অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন রুনির ভাই রোমান।
হত্যাকা-ের বিচার ও দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য অভিনবভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছে তাদের পরিবার। ‘সাগর-রুনি ক্রাইম সিন ডু নট ক্রস’ শিরোনামে গতকাল বেলা ১১টা থেকে দিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে। চলে রাত ৮টা পর্যন্ত।
রুনির ভাই নওশের আলম রোমানদের বাড়িতেই (ফ্ল্যাট বি ২-১, কালিন্দী, ৩৬ ইন্দিরা রোড, ঢাকা) ১০ জন শিল্পীর আঁকা চিত্রকর্ম ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে সাগর-রুনির ব্যবহার করা জিনিসপত্র, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও তাদের ছবি নিয়ে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। যে তিনটি কক্ষে প্রদর্শনী চলছে, তার একটিতে দম্পতি খুন হওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া খবর। সেই সময়কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ প্রধানের বক্তব্য টিভি স্ক্রিনে প্রচার করা হয়। সেদিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন (প্রয়াত) বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে। খুনের দুদিন পর পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহামুদ খন্দকারও বলেছিলেন, তদন্তের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। কক্ষটির এক কোণে রাখা পারিবারিক অনেক ছবি। আরও রয়েছে সাগরের লেখা কয়েকটি বই। সেখানে একটি ফ্রেমে বাঁধাই করা মাকে নিয়ে মাহিরের আঁকা একটি ছবি। সেখানে মাহির লিখেছে, ‘আই লাভ ইউ মা’।
এই সময় মাহির সরওয়ার মেঘ বলেন, ‘সব সময় বাবা-মাকে মনে পড়ে। সপ্তাহে একবার তাদের কবরের পাশে যাওয়ার চেষ্টা করি। আমি বাবা-মা হত্যার বিচার চাই।’
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে নিজ বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। তাদের হত্যাকারী এখনো শনাক্ত হয়নি। হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার কথা বলা হলেও এর কোনো কূলকিনারা নেই। রোমান বলেন, ঘণ্টা, মাস, বছর পেরিয়ে কত কী যে হলো, শুধু প্রাপ্তির খাতায় নিদারুণ শূন্যতা। আদালতের ধুলোপড়া বারান্দায় পড়ে রইল তদন্তের ব্যর্থতা।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) স্থায়ী সদস্য সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের তদন্ত প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত জমা না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা বলেছেন, সাগর-রুনির হত্যার পর থেকে সাংবাদিক সমাজ দোষীদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবিতে সোচ্চার রয়েছে। এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ডিআরইউ ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচার ডিআরইউ চত্বরে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার ১১তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। ডিআরইউ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মুরসালিন নোমানী। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল। ডিআরইউ সভাপতি বলেন, সাগর-রুনি হত্যার পর ডিআরইউ সব সাংবাদিক সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং এই হত্যার প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধভাবে সব কর্মসূচি পালন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কিন্তু এই হত্যার বিচার এখনো হয়নি। এই হত্যার তদন্ত করছে র্যাব। র্যাব আদালতের কাছে ৯৫ বার সময় চেয়েছে। আদালত তাদের সময় দিয়েছে। কিন্তু র্যাব যদি না পারে তাহলে উনারা আদালতকে বলুক যে তারা পারছে না।
সাংবাদিক হত্যার বিচার হচ্ছে না উল্লেখ করে নোমানী বলেন, সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির ক্ষেত্রে যারাই যখন ক্ষমতায় থাকুক না কেন সবার আচরণ অভিন্ন। অন্য সব হত্যার বিচার হলেও সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না।
প্রতিবাদ সমাবেশে র্যাবকে উদ্দেশ্য করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে তদন্ত প্রতিবেদন যদি দাখিল করেন তাহলে র্যাবের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করব। নিজেদের এলিট ফোর্স বলেন। আর সাগর-রুনির হত্যার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৯৫ বার সময় নেন! আর এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় যে, সাগর-রুনির হত্যার প্রতিবেদন দাখিলে র্যাবের সদিচ্ছার অভাব আছে। আমি প্রত্যাশা করি, র্যাবের বোধোদয় হবে এবং তারা স্বচ্ছ প্রতিবেদন দাখিল করবে।
ডিআরইউর সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন, সাগর-রুনি হত্যার বিচার না হওয়ার কারণে আরও ৫৪ জন সাংবাদিক হত্যা হয়েছে। সুতরাং যদি সাগর-রুনির হত্যার বিচার হতো তাহলে এসব সাংবাদিক হত্যা হতো না।
আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচারের দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাংবাদিক ইউনিয়ন এই কর্মসূচি পালন করে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিনা আমান তানজুম। পড়ছেন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগে। বইমেলায় এসেছেন পছন্দের লেখকের বই সংগ্রহ করতে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর বইমেলার জন্য অপেক্ষা করি। আড্ডা দিই। ঘুরি-ফিরি, পছন্দের প্রিয় লেখকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। জীবনমুখী লেখাই বেশি পছন্দ।’
গতকাল সন্ধ্যায় অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে এই পাঠকের আলাপ হলে তিনি এসব কথা বলেন। বইমেলায় এসে কেমন লাগছে জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতি বছর মেলায় একটা ভিন্ন রকম আমেজ থাকে। এবারও আছে। নতুন বইয়ের গন্ধ সব সময় অন্য রকম টানে।’
পাঠক হিসেবে কোন লেখকের বই পছন্দ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুরনো অনেক লেখকের পাশাপাশি নতুন লেখকদের বইগুলো আমাকে টানে; বিশেষ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মামুনুর রশীদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হকদের ভক্ত অনেক আগে থেকেই। সব সময়ই তারা আমার কাছে নতুন। তাই এবারও তাদের বই কিনব। তবে নতুনদের মধ্যে সাদাত মাহমুদকে বেশি ভালো লাগে।’
বইমেলা মানেই লেখক-পাঠকের সম্পর্ক উন্নয়নের জায়গা বলে মনে করেন তানজিনা আমান তানজুম। এই পাঠক বলেন, ‘বইমেলায় ভালো বইয়ের পাশাপাশি অনেক মানহীন বইও ছাপা হয়। কোনো রকম সম্পাদনা ছাড়াই মলাটবন্দি হয়ে আসে। যেখানে অসংখ্য ভুল বানান থাকে। বাক্যবিন্যাসও থাকে যাচ্ছেতাই, এ ধরনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ নিম্নমানের লেখায় সমৃদ্ধ অগণিত অসম্পাদিত বই আমাদের পীড়া দেয়, অস্বস্তি জাগায় মনে।’ এ বিষয়ে প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট সবার বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।
লেখক ও ক্রীড়া সাংবাদিক নাজমুল হক তপন। ভালো লাগা থেকে লেখালেখি শুরু। তার প্রথম বই ‘মাঠের আলোয় ভাসি’ ২০০৮ সালে সময় প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। এবারের বইমেলায় লেকচার পাবলিকেশন থেকে ‘মেসির রূপকথা’ নামে একটি নতুন বই বেরিয়েছে।
নতুন বইটি সম্পর্কে তিনি বলেন, মেসিকে নিয়ে খুব কম গল্প প্রচলিত আছে। ১৩ বছর বয়সে মেসি স্পেনে চলে যায়। তারপরও তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব বেশি আর জানা যায়নি। তবে মেসির শৈশব কিন্তু খুবই বর্ণাঢ্য ছিল। তাদের পূর্বপুরুষ ইতালি থেকে আর্জেন্টিনা গিয়েছিল। খেলাধুলার ক্ষেত্রে তার দাদি খুব সহযোগিতা করেছেন তাকে। তিনিই প্রথম মেসিকে মাঠে নিয়ে যান। ছোটবেলায় মেসির চকলেট প্রীতি ছিল। তাই তাকে বলা হতো যত গোল দেবে তত চকলেট পাবে। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় হওয়ার পর মানুষের জন্য তার যে মহানুভবতা সেগুলো আমার এই বইটিতে তুলে ধরেছি।
কাদের জন্য বই লিখেন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করি সব বয়সী পাঠকদের জন্য লিখতে। তবে এটা নির্ভর করে বইয়ের ওপর। আমার প্রতিটি বই আলাদা আলাদা বয়সের মানুষকে আকৃষ্ট করে। গুনগুন বেগুনি নামে শিশুদের জন্য একটি বই লিখেছি আবার নারী ক্রিকেটারদের স্ট্রাগল নিয়ে আরেকটি বই আছে। আমার আরেকটি বই আছে ঠিকুজি। এটি ৭১-এর যুদ্ধশিশুদের নিয়ে লেখা। আমি চেষ্টা করেছি তাদের কষ্টের কথাগুলো এই বইতে তুলে ধরতে।
তরুণ সমাজের বই বিমুখতার বিষয়টি সম্পর্কে লেখকের মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরা যখন তরুণ ছিলাম তখন জন্মদিনে মানুষকে বই উপহার দিতাম, এখন সেটা দেখা যায় না। কেন দেখা যাচ্ছে না? কারণ হলো বিশ্বায়নের একটা প্রভাব আমাদের ওপর পড়েছে। এখন আমরা মুভি দেখছি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দেখছি, যার ফলে বই খুব একটা পড়ছি না। তারপরও অনেকেই তো বই পড়ছে। অনেক সময় দেখি তরুণদের দোষ দিয়ে বলা হয়, তারা বই পড়ে না। এটা তো শুধু তাদের একার দোষ নয়। বর্তমান পরিস্থিতি তাদের বই বিমুখ করেছে।
তুরস্ক-সিরিয়ায় স্মরণকালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জানিয়েছেন তার দেশে ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৮৪৮ জনে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৫৫৩ জনে ঠেকেছে। সব মিলিয়ে দুই দেশে এখন পর্যন্ত ২৫ হাজার ৪০১ জনের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে। তবে জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সমন্বয়কারী মার্টিন গ্রিফিথসের মতে, ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা আদতে দ্বিগুণের বেশি হতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এখনই প্রাণহানির প্রকৃত সংখ্যা বলা কঠিন, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়াদের হিসাবে আনলে আমার মতে এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে।’
তুরস্ক-সিরিয়ার সর্বত্র এখন লাশের গন্ধ। যারা জীবিত তারাও আছেন তীব্র শীতে খোলা আকাশের নিচে, কারণ যে ভবনগুলো অবশিষ্ট আছে সেগুলোও ধসে পড়তে পারে এমন শঙ্কা রয়েছে তুর্কিদের মাঝে। কারণ আফটার শক বা ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পনের ভয় এখনো কাটেনি। হাসপাতালে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের চিকিৎসা চলছে। ১০ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
এদিকে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে ধূলিসাৎ তুরস্ক-সিরিয়ার ধ্বংস্তূপের নিচ থেকে এখনো উদ্ধার হচ্ছে জীবিত মানুষ, মানবিক বিপর্যয়ে আশার আলো বলতে রয়েছে এসব অলৌকিকভাবে বেঁচে থাকার ঘটনা। প্রাণঘাতী ভূমিকম্প আঘাত হানার পঞ্চম দিনেও ধ্বংসস্তূপের নিচে মিলছে প্রাণের স্পন্দন। উদ্ধারকারীদের প্রাণপণ চেষ্টায় এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবিত লোকজনের সন্ধান মিলছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, সোমবার আঘাত হানা ভূমিকম্পের পর
ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তুরস্কে গতকাল শনিবারও এক কিশোরকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়ার পাঁচ দিনের বেশি সময় পর তাকে উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকারী কর্মীরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কের হতায়ে প্রদেশের ধ্বংসস্তূপের নিচে ১২৮ ঘণ্টা পর জীবিত এক কিশোরের সন্ধান মিলেছে। উদ্ধারকারীরা ১৩ বছর বয়সী ওই কিশোরকে ধ্বংসাবশেষ থেকে উদ্ধার করেছেন। ১২৯ ঘণ্টা পর গাজিয়ানতেপের একটি ধসে পড়া ভবন থেকে একই পরিবারের পাঁচজনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকারীরা। গাজিয়ানতেপ প্রদেশের নারদাগ এলাকায় উদ্ধারকারীরা প্রথমে এক মা ও তার কন্যাকে ধ্বংসস্তূপ থেকে বের করে নিয়ে আসে। এরপর উদ্ধারকারীরা বাবার কাছে পৌঁছায়। এ সময় তিনি আরও এক কন্যা ও ছেলেকে উদ্ধারের আহ্বান জানান।
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে সোমবারের ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত একটি অঞ্চলে শনিবার উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা করেন দেশি-বিদেশি উদ্ধারকর্মীরা। শনিবার সকালের দিকে আরদা ক্যান ও ভুন নামের ওই কিশোরকে ধসে পড়া একটি ভবনের নিচ থেকে স্ট্রেচারে করে উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে, একই দিনে অর্থাৎ শনিবার তুরস্কের কাহরামানমারাস প্রদেশের ধসে যাওয়া একটি বাড়ির ধ্বংসাবশেষের নিচ থেকে ৭০ বছর বয়সী মেনেকসে তাবাক নামের এক নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আনাদোলুর প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, ওই নারীকে উদ্ধারের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
অনেকেই এখনো প্রিয়জনকে জীবিত উদ্ধারের আশায় ধ্বংসস্তূপের সামনে অবস্থান করছেন। সোনার জামির এবং সেভদা নূর জামির শনিবার একটি ধসে পড়া ভবনের সামনে বসে ছিলেন। যে বাড়িতে তাদের বাবা-মা এবং দাদা-দাদি বসবাস করতেন। বিবিসি প্রকাশ করেছে ১৯ বছর বয়সী তরুণী সেইদা এবং তার জানালায় টাঙানো রঙিন প্রজাপতি প্রিন্টপর্দার ছবি। ধসের ভবন থেকে সেইদা উদ্ধার হবে এই আশায় ভবনের সামনেই আছেন তার স্বজনরা।
তুরস্কে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকেতাই। দেশটির ভূমিকম্প দুর্গত এলাকায় ৩১ হাজার উদ্ধারকর্মী কাজ করছেন বলেও জানান তিনি। তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলের ১০টি প্রদেশে ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর লক্ষ্যে আর্মেনিয়ার সঙ্গে সীমান্ত ক্রসিং খুলে দেওয়া হয়েছে। শনিবার তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে সীমান্ত খুলে দেওয়ার এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, আর্মেনিয়া থেকে মানবিক সহায়তা বহনকারী পাঁচটি ট্রাক তুরস্কের ইগদির প্রদেশের অ্যালিকান সীমান্ত অতিক্রম করেছে। এর আগে, সর্বশেষ ১৯৮৮ সালে আর্মেনিয়ায় ভয়াবহ এক ভূমিকম্প আঘাত হানার পর এই সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় তুরস্কের রেড ক্রিসেন্ট আর্মেনিয়ায় ভূমিকম্পে বেঁচে যাওয়া মানুষকে মানবিক সহায়তা দিতে এই সীমান্ত ব্যবহার করেছিল।
বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে নতুন এক সংকট সামলাচ্ছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, তুরস্কে উপদ্রুত এলাকায় শুরু হয়েছে লুটপাটের ঘটনা। এরদোয়ান হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, জরুরি অবস্থা জারি আছে, লুটতরাজকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
সিরিয়ায় বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে উদ্ধারকাজ শেষ বলে জানিয়েছে মানবিক সহায়তা সংস্থা হোয়াইট হেলমেট। সমাপ্তি ঘোষণা করে শুক্রবার এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে হোয়াইট হেলমেটের কেন্দ্রীয় কমান্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা (স্থানীয় সময়) সোমবার থেকে এ পর্যন্ত সিরিয়ার উত্তর ও উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে অনুসন্ধান চালিয়ে মোট ২ হাজার ১৬৬ জনের মরদেহ এবং ২ হাজার ৯৫০ জনকে জীবিত ও আহত অবস্থায় উদ্ধার করতে পেরেছি।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
বাংলাদেশের রাজনীতির ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিত সিরাজুল আলম খান (দাদা ভাই) আর নেই। ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
আজ শুক্রবার (৯ জুন) বিকাল আড়াইটার দিকে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন।
তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট এবং ফুসফুসে সংক্রমণসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
গত ২০ মে সিরাজুল আলম খানকে বার্ধক্যজনিত কারণে ঢাকা মেডিকেলর নতুন ভবনের কেবিনে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাত ৯টা ২০ মিনিটে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।
এর আগে গত ৭ মে থেকে রাজধানীর শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। ২০ মে তাকে ঢাকা মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে অসুস্থ হয়ে কিছুদিন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।
স্বাধীনতালগ্নে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এই ছাত্রনেতারা।
স্বাধীন হওয়ার পরপরই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে সিরাজুল আলম খানের বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। সিরাজুল আলম খানের অনুসারী ছাত্রলীগ ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করে। তিনি কখনও মূল নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে পরিচিত। তাকে সবাই ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকেন।
সিরাজুল আলম খান কখনও জনসম্মুখে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। তার দীর্ঘ ৫১ বছরের রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্যের।
আজ থেকে ছেষট্টি বছর আগে ধ্বনি ও ভাষাবিজ্ঞানী অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই (১৯১৯-১৯৬৯) ১৩৬৪’র ফাল্গুন-চৈত্র সংখ্যা ‘সমকাল’ পত্রিকায় ‘তোষামোদের ভাষা’ এবং একই পত্রিকার ১৩৬৫’র জ্যৈষ্ঠ সংখ্যায় ‘রাজনীতির ভাষা’ শিরোনামে দুটি প্রবন্ধ লেখেন। প্রবন্ধ দুটি ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত তার ‘তোষামোদ ও রাজনীতির ভাষা’ গ্রন্থভুক্ত হয়। সেকাল এবং একালে রাজনীতির ভাষা ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তনের ধারা সন্ধান শনাক্ত করতে এই লেখা। প্রথমে সাধু স্বীকৃতি (ডিসক্লেমার) দিয়ে রাখা ভালো যে রাজনীতি ও এর ভাষা প্রক্রিয়া প্রকরণ নিয়ে এ রচনা নিছক একাডেমিক ও নির্মোহ- নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে রচিত, এর সঙ্গে কলাম লেখকের নিজস্ব বোধ বিশ্বাস চিন্তা চেতনা কিংবা কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো কালের কোনো সংগঠনের প্রতি অনুরাগ কিংবা বিরাগের সংশ্লিষ্টতা নেই। কেননা অনেক দেশে রাজনীতি নিয়ে আলাপ-আলোচনার মধ্যেও রাজনীতির গন্ধ খোঁজার সংস্কৃতি আগেও যেমন ছিল বর্তমানেও তা আরও বড় করে বলবৎকরণের বড় বড় আইন বিদ্যমান আছে। সেসব দেশ ও সমাজে মুক্তবুদ্ধি চর্চা নানান ঘেরাটোপের মধ্যে আছে।
ভাষার গঠনপ্রকৃতি ও আঙ্গিক ইত্যাদির মধ্যে নিয়মশৃঙ্খলাজনিত যে নানা খুঁটিনাটি ভাগ আছে সেটা ধরা পড়ে সমাজের ভাষার ব্যবহার থেকে। অধ্যাপক হাইয়ের মতে, ‘সমাজ জীবন গড়ে তোলার জন্যই মানুষের ভাষার উদ্ভব বলে সমাজ জীবনে ভাষার ব্যবহারের বেলায় তার সত্যকার স্বরূপটি ধরা পড়ে। ভাষার কাজ হলো পারস্পরিক সমঝোতা তা কমপক্ষে দুজনের মধ্যেই হোক কিংবা বহুজনের মধ্যেই হোক দুটো মানুষ যখন কথা বলে তখন একসঙ্গে নির্দিষ্ট কতগুলো বিষয়েই তারা আলাপ-আলোচনা করে... তখন বিষয়োপযোগী ভাষাই সে ব্যবহার করে। সমাজ জীবনের নির্দিষ্ট পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত ক্ষেত্রোপযোগী যেসব শব্দের হার গাঁথা হয়, তা-ই ভাষাকে তার সামগ্রিক রূপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে নানা ভাগে ভাগ করে দেয়। এ কারণেই সমাজ জীবনের বিচিত্র পরিবেশে ভাষারও বিচিত্র প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। সে নিরিখেই সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের অন্যান্য বিষয়ের মতো রাজনীতির ভাষারও বিভিন্ন দেশ ও রাষ্ট্রে বিভিন্ন রকমের প্রচলিত শাসনব্যবস্থার সুবিধার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সমাজ নিজ নিজ ভাষায় উপযোগী শব্দ সৃষ্টি করে নেয়। এসব শব্দ একদিনে সৃষ্টি হয় না রাষ্ট্রের শাসনযন্ত্র যাদের হাতে থাকে, প্রয়োজনের তাগিদে তারা কিছু শব্দ এবং এর প্রকাশ প্রক্রিয়া বা ভঙ্গি সৃষ্টি করিয়ে নেন।’
চিন্তা থেকে যেমন কাজের উৎপত্তি, নিয়ত বা পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে যেমন কাজের গতিপ্রকৃতি তেমনি রাজনীতির ভাষা খোদ রাজনীতির চরিত্র-নীতি ও প্রকৃতি অনুযায়ী উৎসারিত-উচ্চারিত হয়ে থাকে। রাজনীতির সংস্কৃতি-রুচি চাহিদা ও উদ্দেশ্য বিধেয় অনুযায়ী রাজনীতির ভাষার রূপ পরিগ্রহ করে।
খোদ ‘রাজনীতি’র ধারণার বিবর্তন ও ব্যবহারিক তাৎপর্যে পরিবর্তন-পর্যালোচনায় দেখা যায় কৌটিল্য (খ্রি.পূর্ব ৩৭৬-২৮৩) এর মতে রাজনীতি হচ্ছে নিজ সমাজ পোষণ তোষণ কিংবা শত্রু মোকাবিলায় রাজার ক্ষমতা ধরে রাখা বা প্রয়োগ করার কৌশল। কৌটিল্য বিশ্বাস করতেন রাজার দায়িত্ব বা লক্ষ্য হচ্ছে বহু বৈষয়িক সম্পদ অর্জন, ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দাম্ভিক আনন্দলাভ ও বিলাস উপভোগ করা, আর এ জন্য রাজা যেকোনোভাবে সম্পদ ও প্রতিপত্তি অর্জনে সচেষ্ট হবে, সৈন্য পুষবে নিজের নিরাপত্তা বিধান এবং অন্য রাজ্য দখল করে সাম্রাজ্যের আকার বাড়ানোর কাজে। প্রজাকল্যাণ সাধন এবং নিজের ক্ষমতা সংরক্ষণে রাজাকে কূট-কৌশলী হতে হয়। কৌটিল্যের মতে রাজনীতি হচ্ছে একই সঙ্গে সেরা কৌশল বিজ্ঞান (সুপার সায়েন্স) ও সেরা কলা (সুপার আর্ট)। কৌটিল্যের অর্ধশতাব্দী পর প্লেটো (খ্রি.পূ ৪২৮-৩৪৮) মনে করতেন সমাজে চাওয়া পাওয়ার সব ধরনের প্রয়াস-প্রচেষ্টা, বাদ-বিসংবাদ, প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণ নিরসনে সমন্বয় সাধনই হচ্ছে রাজনীতি। এ ব্যাপারে ন্যায়নীতিনির্ভরতা, যৌক্তিতা, সুশাসন বা নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারলে সব পক্ষ একটি ঐক্যবদ্ধ বা সমন্বিত শক্তি হিসেবে বিকাশ লাভ করবে। ঐকবদ্ধ করাই সৎ বা সফল রাজনীতি, কাউকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে বিচ্ছিন্নতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি রাজনীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়।
প্লেটোর শিষ্য অ্যারিস্টটল (খ্রি.পূর্ব ৩৮৪-৩২২) যদিও তার গুরুর অনুসারী ছিলেন তথাপি তার মতে রাজনীতি is highly critical of the ideal constitution set forth in Plato’s Republic on the grounds that it overvalues political unity, it embraces a system of communism that is impractical and inimical to human nature, and it neglects the happiness. সমসাময়িক আরেক পন্ডিত সক্রেটিসও (৪৭০-৩৯৯) ভাবতেন ভিন্নভাবে- the purpose of politics was not to capture power, nor it was an art hwo to remain in power. Political ethics make good and proper citizens. Both public and private persons must learn the art of political ethics. ম্যাকিয়াভেলি (১৪৫৯-১৫২৭) মনে করতেন for a ruler, it was better to be widely feared than to be greatly loved; a loved ruler retains authority by obligation, while a feared leader rules by fear of punishment.
রাজনীতির ভাষায় শব্দ একটি বড় অনুষঙ্গ। সময়ের অবসরে সৃষ্ট ও বহুল উচ্চারিত বা ব্যবহৃত এসব শব্দের ব্যঞ্জনায় সমকালীন সমাজ ও রাজনীতির চিত্র ও চারিত্র ফুটে ওঠে। সরকার বা রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য এক এক দেশে বহু রকম রাজনৈতিক চিন্তাধারার বিকাশ দেখতে পাওয়া যায়। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার জন্য তাবৎ দেশে দল-মত নির্বিশেষে প্রত্যেকটি দলই দেশের অধিবাসীদের কাছে তাদের আদর্শ ও কর্মসূচি নিয়ে উপস্থিত হয় আর সাধারণকে তাদের মতে দীক্ষিত করার জন্য ভাষার সাহায্যেই জোর প্রচারণা চালায়। অন্যকথায়, ভাষা রাজনীতিকদের হাতের পুতুল হয়ে ওঠে। সে ভাষা দিয়ে তারা নিজের বক্তব্য যেমন প্রচার করিয়ে নেন, তেমনি প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অপপ্রয়োগ করতেও কুণ্ঠিত হন না।
আমাদের দেশে রাজনীতিকরা দলীয় প্রয়োজনে ভাষার যে ব্যবহার করেছেন, তা দেখানোর আগে দুনিয়ার কয়েকটি বড় বড় রাষ্ট্র রাজনৈতিক প্রয়োজনে ভাষার কী ব্যবহার করেছে তার দু একটি দৃষ্টান্ত অধ্যাপক আবদুল হাইয়ের রচনা থেকেই দেখা যাক ‘১৯৩৩ সালের অক্টোবর মাসে জার্মানিতে হিটলার ক্ষমতাসীন হওয়ার কয়েকমাস পরেই দেখা যায় গোয়েবলসের নেতৃত্বাধীনে ‘রাইখ সংস্কৃতি সংসদ’ গড়ে উঠছে। এ সংস্কৃতি সংসদের বিভাগ ছিল সাতটি-সাহিত্য, সংবাদপত্র, রেডিও, শিল্প, সংগীত, থিয়েটার এবং সিনেমা। সমগ্র জাতির চিন্তাধারা রাইখ নেতৃত্বের অনুগামী করে তোলার জন্য সাতটি বিভাগই একযোগে প্রচারণার কাজ করতে শুরু দিল। যারা এর কিছুদিন আগে জনমত প্রধানত রক্ষণশীল ও শ্রমিক দলকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে গেছে। একদল যখন ক্ষমতাসীন হয়, অন্যদল রাষ্ট্রের কল্যাণে তাদের গঠনমূলক সমালোচনা করে। সেজন্য সরকারি দলের অস্তিত্বের যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সরকার সমর্থিত বিরোধী দলের। সমগ্র জাতিকে এ দুই দল আপনাপন মতে দীক্ষিত করে তুলবার জন্য খবরের কাগজ, সভা-সমিতি ও ভাষা ব্যবহারের অন্য পন্থাগুলোকে অবলম্বন করে জোর প্রচারণা চালায়। জনমত যাদের প্রচারণায় অধিক পরিমাণে সাড়া দেয়, তারাই শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে পায়।’
পশ্চিমের উদার মতাবলম্বী দেশ নিচয়ে রাজনৈতিক মতামত প্রকাশে যে ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তা অবারিত নয়। সেখানে ব্যক্তিবিশেষ কি পার্টিবিশেষ যা খুশি বা যেমন খুশি তেমন করে ভাষা প্রয়োগ করতে পারে না। সে সব দেশে রাজনৈতিক মতামতের স্বাধীনতা আছে কিন্তু সে স্বাধীনতা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য নয় বা রাষ্ট্রের স্বার্থ বা অস্তিত্ব বিপন্ন হতে পারে, এমন অন্তর্ঘাতী কোনো কাজ করার জন্য নয়। রাষ্ট্রের মঙ্গলের জন্য বহুমুখী করে তোলাই এবং মতামতের পার্থক্য সত্ত্বেও নির্দিষ্ট কতকগুলো কর্মসূচির ভিত্তিতে কাজ করে যাওয়ার জন্য তাদের একত্র করার এই ব্যক্তিস্বাধীনতার প্রধান লক্ষ্য। পক্ষান্তরে উন্নয়নশীল অনেক দেশে স্বৈরতন্ত্রে ত্যক্তবিরক্ত ও বেগতিক হয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেরাই নিজেদের শত্রু বনে যায়। দেশে মানবাধিকারের সংকট মোকাবিলা করতে না পেরে বিদেশের কাছে নালিশ দিতে বাধ্য হয়। বিদেশিরাও এই সুযোগে স্বৈরতন্ত্র বা ক্ষমতাসীনকে শক্তিশালী ক্ষমতা প্রয়োগের ব্যাপারে দরকষাকষির মাধ্যমে গোটা দেশ ও সমাজকে রীতিমতো জিম্মি করে ফেলে।
সাড়ে ছয় দশক আগে ঔপনিবেশিক পরিবেশে অধ্যাপক আবদুল হাই যা দেখেছিলেন, আজ স্বাধীন সার্বভৌম পরিবেশেও তার অবস্থানে তেমন হেরফের ঘটেনি বরং বিপর্যস্ততার মাত্রা ও গতি বেড়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। পরিশেষে এ ব্যাপারে অধ্যাপক হাইকে উদ্ধৃত করা যায় :
‘রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করবার জন্য তাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য অনুসারে জনমত গড়তে গিয়ে দেশের ভাষাকে তাদের প্রচারমুখী আদর্শের বাহন করে তোলে। রাজনৈতিক দলের আদর্শ যদি উন্নত না হয়, লক্ষ্য যদি অভ্রান্ত না থাকে এবং দেশের বৃহত্তর কল্যাণের দিকে নজর না দিয়ে আদর্শগত ও আর্থিক ব্যবস্থাজনিত কর্মসূচি যদি তারা তৈরি না করে কিংবা রাজনৈতিক দর্শন অনুসারে দলের শিক্ষাব্যবস্থার কোনো রাজনৈতিক দল তাদের না থাকে, তাহলে যেন-তেন প্রকারে ক্ষমতাসীন হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো কলহ-কোন্দলে লিপ্ত হয় ফলে রাজনীতির ভাষা শালীনতা হারায়। আদর্শগত সংগ্রাম বা নীতি প্রচারের বাহন না হয়ে ভাষা তখন কবিয়ালদের খেউড় গানের বাহনের মতো হয়ে ওঠে এবং ভাষার মানও অচিন্তনীয়ভাবে নিচে নেমে যায়। আমাদের অতীত রাজনৈতিক জীবনের দুর্গতির মধ্যে আমাদের নেতাদের ভাষা ব্যবহারের রূপ ও ধরনই আমাদের এ উক্তির সমর্থন করে।’
লেখক: কলাম লেখক ও উন্নয়ন অর্থনীতির বিশ্লেষক
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।