
রাজধানীর গুলশানে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত শান্ত সুমন নামে এক যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
সুমন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের ছাত্র এবং গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক।
গুলশান থানার ওসি বি এম ফরমান আলী জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গুলশানে একটি মাইক্রোবাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী শান্ত গুরুতর জখম হন। পরে তাকে সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শনিবার সন্ধ্যায় তিনি মারা গেছেন। মাইক্রোবাসচালক আবদুল কুদ্দুস পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
এদিকে বিভিন্ন স্থানে সড়কে প্রাণ হারিয়ে শিশুসহ সাতজন। এর মধ্যে বগুড়ায় গত শুক্রবার রাতে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই বন্ধু প্রাণ হারিয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে তাদের আরেক বন্ধু। গতকাল শনিবার ঝিনাইদহে ট্রাকের চাপায় এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছে। নাটোরের বড়াইগ্রামে ঢাকাগামী শিক্ষা সফরের বাসচাপায় এক শ্রমিক নিহত হয়। মোংলা-খুলনা মহাসড়কের বাবুরবাড়ী এলাকায় প্রাইভেট কারচাপায় একজন নিহত হয়েছে। কুষ্টিয়ার খোকসায় ইঞ্জিনচালিত গাড়ির ধাক্কায় এক শ্রমিক প্রাণ হারান। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে যাত্রীবাহী বাস ও বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে এক শিশু নিহত হয়েছে। বিস্তারিত নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিনিধি ও সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে:
বগুড়ায় দুই বন্ধু নিহত : বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় সেতুর সঙ্গে ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধু নিহত হয়েছে। তারা হলেন তানজিদ (২৪) ও রিফাত (২২)। এ ঘটনায় মোটরসাইকেলে থাকা আরেক আরোহী মেজবাহ (২২) আহত হন। তাকে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের বাড়ি শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের চকপোতা গ্রামে।
ঝিনাইদহে ট্রাকচাপায় বৃদ্ধ নিহত : ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মোকাররমপুর এলাকায় ট্রাকচাপায় সিদ্দিকুর রহমান (৭১) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। গতকাল বেলা ৩টার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত সিদ্দিকুর রহমান ওই উপজেলার নাগিরহাট গ্রামের বাসিন্দা ও সাবেক গ্রাম পুলিশ ছিলেন।
নাটোরে বাসচাপায় শ্রমিক নিহত: নাটোরের বড়াইগ্রামে ঢাকাগামী শিক্ষা সফরের বাসচাপায় বেলাল হোসেন (৪৫) নামে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের বনপাড়া পাটোয়ারী ফিলিং স্টেশন এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। তিনি পেশায় একজন ডায়নামা মিস্ত্রি ছিলেন।
মোংলায় প্রাইভেটকার চাপায় নিহত ১ : মোংলা-খুলনা মহাসড়কের বাবুরবাড়ী এলাকায় প্রাইভেটকার চাপায় একজন নিহত হয়েছে। তার নাম ভুষন মন্ডল (৫২) । গতকাল বিকেলের এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছে আরও চারজন।
কুষ্টিয়ায় গাড়ির ধাক্কায় শ্রমিক নিহত : কুষ্টিয়ার খোকসায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ইটভাটার গাড়ির ধাক্কায় একজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। তার নাম জনি মোল্লা (৩২)। গতকাল সকালে ওসমানপুর ইউনিয়নের রমানাথপুর আরশেদ মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা মিজু আরাফ ব্রিকস নামের ইটভাটা ভাঙচুর করেছে। নিহত জনি মোল্লা ওসমানপুর ইউনিয়নের রমানাথপুর আজিল এলাকার টিপু মোল্লার ছেলে (৩২)। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি ছিলেন।
বেগমগঞ্জে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে শিশু নিহত : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে যাত্রীবাহী বাস ও বরযাত্রীবাহী মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে এক শিশু নিহত হয়েছে। তার নাম জোসনা আক্তার (১১)। গতকাল বিকেলে উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের সরুরগো পোল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ৬ জন।
ডলার সংকটের কারণে এলসি বা ঋণপত্র খুলতে পারছে না সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এতে দেশে চাহিদা অনুযায়ী শিল্পের কাঁচামাল আসছে না। কাঁচামালের সংকটে ছোট-বড় সব খাতের ব্যবসায়ীরাই সমস্যায় পড়েছে। কমেছে উৎপাদন। এর সঙ্গে জ্বালানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এতে লোকসানে পড়েছে প্রায় সব শিল্প উদ্যোক্তা। বিপাকে পড়েছে শিল্প খাত। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ারও হিসাব কষছে।
এস কে আরপি ইলেট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম হতাশা প্রকাশ করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমার কারখানা মুন্সীগঞ্জের বিসিক শিল্প নগরীতে। কারখানায় কাজ করে দুই শতাধিক কর্মী। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে আছে আরও দুইশ কর্মী আছে। গত পাঁচ-ছয় মাস থেকে এলসি খুলতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। আমার মজুদ কাঁচামালও শেষ। গত ডিসেম্বর থেকে উৎপাদন প্রায় বন্ধ। প্রতি মাসে লোকসান দিচ্ছি ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা। এ অবস্থা চলতে থাকলেও ব্যবসা বন্ধ করে দেব।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি ও বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডলার সংকটের কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছে না। এতে দেশে চাহিদা অনুযায়ী কাঁচামাল আসছে না। কাঁচামালের সংকটে ছোট-বড় সব খাতের ব্যবসায়ীরাই সমস্যায় পড়েছে। উৎপাদন কমে গিয়েছে। উৎপাদন না থাকলেও শ্রমিক কর্মচারীদের বেতনসহ সব খরচই করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে জ¦ালানির খরচ বেড়ে যাওয়ায় সার্বিকভাবে উৎপাদন খরচ বেড়ছে। এভাবে বিপাকে পড়েছে শিল্প খাত। শিল্পের স্বাভাবিক ধারা বজায় রাখতে কাঁচামাল আমদানি বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এখনই পদক্ষেপ নেওয়া।
রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল আমদানি করা হয় ‘ব্যাক টু ব্যাক’ এলসির মাধ্যমে। এলসি খোলার পর বিভিন্ন দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে দেশে পণ্য পৌঁছাতে তিন থেকে চার মাস বা তার বেশি সময় লাগে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবেও দেখা গেছে এলসি খোলায় নেতিবাচক ধারা। বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের নিজস্ব কোনো ডলারের উৎস নেই। ব্যাংকই তাদের ভরসা। কিন্তু ব্যাংক এখন ডলারের জোগান দিতে পারছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে বলা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে সার্বিকভাবে আমদানির এলসি খোলা কমেছে ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। এর মধ্যে শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি কমেছে ২৭ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অর্থাৎ এলসি ও আমদানি দুটোই কমেছে। এলসি খোলা কমায় আগামীতে আমদানিও কমে যাবে।
শিল্প খাতের কিছু অর্ধেক তৈরি পণ্য আমদানি করে দেশে পূর্ণাঙ্গ পণ্য উৎপাদন করা হয়। এ ধরনের কাঁচামালকে বলা হয় মধ্যবর্তী কাঁচামাল। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে শিল্পের এ ধরনের কাঁচামালের এলসি কমেছে ৩৩ দশমিক ১৮ শতাংশ, আমদানি কমেছে ১৭ দশমিক ০২ শতাংশ। নতুন শিল্প স্থাপনের জন্য শিল্পের যন্ত্রপাতির এলসি কমেছে ৬৫ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ। দুটোই কমার অর্থ হলো সীমিত আকারে কিছু যন্ত্রপাতি এলেও শিল্প করতে আগ্রহী কমেছে।
অন্যান্য শিল্পের যন্ত্রপাতি এলসি কমেছে ৪১ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ২১ দশমিক ৫৮ শতাংশ। তৈরি পোশাক খাতের ৯৬ শতাংশ কাঁচামালই আমদানি করা হয়। এ খাতে গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলা কমেছে ৩২ দশমিক ৮২ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে আমদানি কমেছে ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল আমদানি এলসি খোলা কমেছে ২২ দশমিক ৪১ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। ফলে ওষুধ খাতেও উৎপাদন কমার আশঙ্কা রয়েছে।
রাসায়নিক ও এ জাতীয় পণ্য আমদানির এলসি খোলা কমেছে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। অন্যান্য কাঁচামালের এলসি কমেছে ৩৬ দশমিক ০৯ শতাংশ। শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামালের সিমেন্টের এলসি খোলা কমেছে ৪৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আমদানি কমেছে ৩৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ক্লিংকার ও লাইম স্টোন এলসি কমেছে ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এতে নির্মাণ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আগামীতে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও বাড়বে।
বিপি শিট এলসি ৬৯ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং আমদানি ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ, টিন প্লেটের এলসি ৭৬ দশমিক ১২ শতাংশ এবং আমদানি ৫৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমেছে। পুরনো জাহাজ আমদানি এলসি ৬৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ এবং আমদানি ৬৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ, লোহা ও ইস্পাত আমদানির এলসি ২৮ দশমিক ০২ শতাংশ কমেছে। লৌহবহির্ভূত বিভিন্ন খনিজ ধাতুর এলসি ৬৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ এবং আমদানি ৬৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ কমেছে। পেপার ও পেপার বোর্ড আমদানির এলসি ২৩ দশমিক ২১ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ। অন্যান্য আমদানির এলসি ৩১ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং আমদানি কমেছে ৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
অনেক বড় উদ্যোক্তা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাঁচামাল আমদানি করে সেগুলো ছোট উদ্যোক্তাদের কাছে বিক্রি করেন। খোলাবাজার থেকে পণ্য কিনে যেসব ছোট উদ্যোক্তা শিল্প চালাতেন, তারাও এখন কাঁচামাল সংকটে ভুগছেন।
এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে জানা যায়, এরই মধ্যে ছোট ও মাঝারি খাতের অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাঁচামালের চলমান সংকটের সমাধানে সহায়তার আবেদন করেছে।
হালকা প্রকৌশল শিল্প খাতের ওপর নির্ভরশীল এদেশের শিল্প খাত। বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ সমিতির সদস্যসংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। সারা দেশে আরও অর্ধলক্ষাধিক প্রতিষ্ঠান আছে এ খাতে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে নাটবল্টু, খুচরা যন্ত্রাংশ, যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়। দেশের সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানেই হালকা শিল্প খাতে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহার হয়। হালকা শিল্প খাতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল ইস্পাত পণ্য, অ্যালুমিনিয়াম, বেয়ারিংসহ বিভিন্ন ধরনের খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি করা হয়। ডলার সংকটে এসব কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র খুলতে মাসের পর মাস ব্যাংকে ঘুরলেও কাজ হচ্ছে না। হালকা শিল্প খাত ভয়াবহ সংকটে পড়েছে। এতে অধিকাংশ বড় শিল্পও সংকটে পড়েছে।
ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, এরই মধ্যে হালকা প্রকৌশল খাতের অনেক কারখানায় কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। অনেক কারখানা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অচিরেই কাঁচামালের স্বাভাবিক আমদানি নিশ্চিত করা না হলে এ খাতের ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়বে।
এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, শিল্পের উপকরণ আমদানি কমার প্রধান কারণ ডলার সংকট। ডলারের সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে চলমান সমস্যার সমাধান কঠিন হবে।
বইমেলার লিটল ম্যাগ চত্বর একটি অধিকতর প্রাণবন্ত জায়গা। একসময়ের পাঠক, লেখক আড্ডায় মুখর থাকা লিটল ম্যাগ চত্বর এখন অনেকটা নি®প্রাণ। গতকাল শনিবার ছুটির দিনে মেলা প্রাঙ্গণ পাঠকদের পদচারণায় মুখর থাকলেও এই চত্বরটি ছিল ফাঁকা। কারণ হিসেবে লিটল ম্যাগের সম্পাদক-প্রকাশকরা বলছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শেষ প্রান্তে লিটল ম্যাগ চত্বর হওয়ায় পাঠকদের আনাগোনা কম। গুটি কয়েক দর্শনার্থী এলেও বিক্রিতে ভাটা। অধিকাংশ স্টলে গেল ১১ দিনে গড়ে ৪-২০টি ম্যাগ বা বইয়ের বেশি বিক্রি হয়নি।
‘ভিন্ন চোখের’ স্টলের বিক্রয়কর্মী সাইফুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, মেলার এগারতম দিন পার করছি। এখন পর্যন্ত মাত্র ৪টি বই বিক্রি হয়েছে।
‘বাংলাদেশ খ্রিস্টান লেখক ফোরামের’ স্টলে খবর নিয়ে জানা যায়, মেলার অর্ধেক সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত এই স্টলে একটি বইও বিক্রি হয়নি।
জাসিন্তা এ্যানি ম্যান্ডেস বলেন, আমাদের স্টলের এখানে কেউ আসেই না। অন্যান্য স্টলে দুএকজন পাঠক এলে তাদের বইগুলো হাতে নিয়ে দেখেন। কিন্তু আমাদের স্টল একেবারে শেষ প্রান্তে হওয়ায় কোনো পাঠক এই দিকে আসছেন না।
পাঠকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, প্রতিবছর লিটল ম্যাগ মুক্তমঞ্চের কাছাকাছি থেকেছে। কিন্তু এবার একদম শেষ প্রান্তে হওয়ায় তা খুঁজে পেতে কষ্ট হয়।
মিরপুর থেকে আসা আওলাদ নামের এক পাঠক বলেন, ‘লিটল ম্যাগ’ চত্বর খুঁজে পেতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। মেলার শেষ প্রান্তে হওয়ায় এদিকে আসতেও মন চায় না।
‘লিটল ম্যাগ’ প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, চার সারিতে বিন্যস্ত ১৬০টি স্টল। টিএসসি থেকে বইমেলায় প্রবেশের পরই হাতের বামের সারি থেকে প্রথম চত্বরে ১৫টি, দ্বিতীয় চত্বরে ৯টি তৃতীয় চত্বরে ৬টি ও সর্বশেষ চত্বরে ৪টিসহ মোট ৩৪টি স্টল ফাঁকা রয়েছে।
চার বছর ধরে লিটল ম্যাগের সঙ্গে কাজ করা ‘স্বপ্ন পাঠ’ প্রকাশনীর রিয়া তামান্না প্রাপ্তি বলেন, এমনিতেই লিটল ম্যাগ বারবার স্থানান্তরিত হওয়ার ফলে পাঠকদের খুঁজে পেতে অসুবিধে হয়। এর মধ্যে এবার মেলার শেষ প্রান্তে লিটল ম্যাগাজিন চত্বর হওয়ায় অবস্থা খুবই খারাপ। বিক্রি নেই দেখে অনেকে স্টল বিকেলে দুএক ঘণ্টা থেকে সন্ধ্যার আগেই বন্ধ করে দেন।
নতুন বই : গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার ১১তম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। নতুন বই এসেছে ১৯১টি। মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা : সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তেন শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এতে দু’শতাধিক প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করে।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : আশরাফ সিদ্দিকী এবং স্মরণ : সাঈদ আহমদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইয়াসমিন আরা সাথী এবং মাহফুজা হিলালী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন উদয়শংকর বিশ্বাস, শামস্ আল দীন, রীপা রায় এবং আব্দুল হালিম প্রামাণিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন খুরশীদা বেগম।
প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, ড. আশরাফ সিদ্দিকী ছিলেন প্রথিতযশা লোকসংস্কৃতি সংগ্রাহক এবং বিশ্লেষক। তিনি বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের ফোকলোর চর্চায় ভিন্নতার অনুসন্ধান করেছেন। ফোকলোরের নানা অনুষঙ্গ বিজ্ঞানসম্মতভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে জনসম্মুখে প্রকাশ করেছেন। অপরদিকে সাঈদ আহমদ ছিলেন বাঙালি হয়েও একজন বিশ্বমানব। বাংলা এবং ভারতীয় সংস্কৃতি তো বটেই বিশ্বের প্রতিটি দেশের সংস্কৃতির প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ। তার সব থেকে বড় অবদান, তিনি বিদেশি সাহিত্য আঙ্গিককে দেশে এনেছিলেন এবং দেশের সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতিকে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন।
আলোচকরা বলেন, বাংলাদেশে যারা ফোকলোর চর্চায় উচ্চ শিক্ষাগ্রহণ করেছিলেন আশরাফ সিদ্দিকী তাদের মধ্যে একজন। ফোকলোর গবেষণায় কিংবদন্তি, লোককাহিনী ও উৎসব-আচার সম্পর্কে তার বিস্তর আগ্রহ ছিল। তিনি কেবল লোকসংস্কৃতি গবেষকই ছিলেন না, বাংলা সাহিত্যের জীবনঘনিষ্ঠ ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, কবি, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদও ছিলেন। অন্যদিকে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী সাঈদ আহমদ এদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এক অনন্য নাম। চাকরির সুবাদে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন এবং বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্বসংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।
সভাপতির বক্তব্যে খুরশীদা বেগম বলেন, বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতের বরেণ্য দুজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ড. আশরাফ সিদ্দিকী এবং সাঈদ আহমদ। তাদের জীবন, কর্ম ও আদর্শ আমাদের তরুণ সমাজকে পথ দেখাবে। এই গুণী ব্যক্তিদের স্মরণ করা আমাদের জন্য একান্ত জরুরি।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মুর্শিদা বিনতে রহমান, রমজান মাহমুদ, ইশরাত তানিয়া এবং কবির কল্লোল।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি হারিসুল হক, রিশাদ হুদা, শেলী সেলিনা, আসাদউল্লাহ এবং জরিনা আখতার।
আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী গোলাম সারোয়ার, মো. মাসকুরে সাত্তার, বেলায়েত হোসেন এবং সায়েরা হাবীব। এ ছাড়াও ছিল জাহাঙ্গীর চৌধুরীর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘উদ্ভাস আবৃত্তি সংগঠন’ এবং অমিত হিমেলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সমস্বর’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন রওশন আলম, অনাবিল ইহসান, মামুনুল হক সিদ্দীক, জুলি শারমিলী, ফারহানা আক্তার, মো. রবিউল হক, আরতি রানী সেন এবং জয় চক্রবর্তী। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন প্রিয়ব্রত চৌধুরী (তবলা), ইফতেখার হোসেন সোহেল (কি-বোর্ড), শেখ আবু জাফর (বাঁশি), অরূপ কুমার শীল (দোতরা)।
আজকের সময়সূচি : অমর একুশে বইমেলার ১২তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : হাসান হাফিজুর রহমান এবং স্মরণ : হাবীবুল্লাহ সিরাজী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মিনার মনসুর এবং শেখ মো. কাবেদুল ইসলাম। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শোয়াইব জিবরান, শাহাদাৎ হোসেন নিপু, রুবেল আনছার এবং ওবায়েদ আকাশ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন এএইচএম লোকমান।
সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যার বিচার সম্ভব নয় জানিয়ে রুনির ভাই নওশের রোমান বলেছেন, ‘তদন্তে বিন্দুমাত্র অগ্রগতি নেই। ১১ বছরেও যেহেতু বিচার পাইনি, তাই আমরা বিচার চাইতেও এখন লজ্জা পাই। বিচার চাইব কার কাছে।’
সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের ১১ বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল শনিবার। তাদের খুনের বিচার দাবিতে আয়োজিত দিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীর অনুষ্ঠানে এই কথা বলেন রুনির ভাই রোমান।
হত্যাকা-ের বিচার ও দোষীদের আইনের আওতায় আনার জন্য অভিনবভাবে প্রতিবাদ জানাচ্ছে তাদের পরিবার। ‘সাগর-রুনি ক্রাইম সিন ডু নট ক্রস’ শিরোনামে গতকাল বেলা ১১টা থেকে দিনব্যাপী চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে। চলে রাত ৮টা পর্যন্ত।
রুনির ভাই নওশের আলম রোমানদের বাড়িতেই (ফ্ল্যাট বি ২-১, কালিন্দী, ৩৬ ইন্দিরা রোড, ঢাকা) ১০ জন শিল্পীর আঁকা চিত্রকর্ম ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে সাগর-রুনির ব্যবহার করা জিনিসপত্র, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও তাদের ছবি নিয়ে এ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। যে তিনটি কক্ষে প্রদর্শনী চলছে, তার একটিতে দম্পতি খুন হওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া খবর। সেই সময়কার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশ প্রধানের বক্তব্য টিভি স্ক্রিনে প্রচার করা হয়। সেদিন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন (প্রয়াত) বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে। খুনের দুদিন পর পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহামুদ খন্দকারও বলেছিলেন, তদন্তের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। কক্ষটির এক কোণে রাখা পারিবারিক অনেক ছবি। আরও রয়েছে সাগরের লেখা কয়েকটি বই। সেখানে একটি ফ্রেমে বাঁধাই করা মাকে নিয়ে মাহিরের আঁকা একটি ছবি। সেখানে মাহির লিখেছে, ‘আই লাভ ইউ মা’।
এই সময় মাহির সরওয়ার মেঘ বলেন, ‘সব সময় বাবা-মাকে মনে পড়ে। সপ্তাহে একবার তাদের কবরের পাশে যাওয়ার চেষ্টা করি। আমি বাবা-মা হত্যার বিচার চাই।’
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে নিজ বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি। তাদের হত্যাকারী এখনো শনাক্ত হয়নি। হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার কথা বলা হলেও এর কোনো কূলকিনারা নেই। রোমান বলেন, ঘণ্টা, মাস, বছর পেরিয়ে কত কী যে হলো, শুধু প্রাপ্তির খাতায় নিদারুণ শূন্যতা। আদালতের ধুলোপড়া বারান্দায় পড়ে রইল তদন্তের ব্যর্থতা।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) স্থায়ী সদস্য সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের তদন্ত প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত জমা না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা বলেছেন, সাগর-রুনির হত্যার পর থেকে সাংবাদিক সমাজ দোষীদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবিতে সোচ্চার রয়েছে। এই নির্মম হত্যাকান্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ডিআরইউ ধারাবাহিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচার ডিআরইউ চত্বরে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার ১১তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। ডিআরইউ আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মুরসালিন নোমানী। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল। ডিআরইউ সভাপতি বলেন, সাগর-রুনি হত্যার পর ডিআরইউ সব সাংবাদিক সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করেছে এবং এই হত্যার প্রতিবাদে ঐক্যবদ্ধভাবে সব কর্মসূচি পালন করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। কিন্তু এই হত্যার বিচার এখনো হয়নি। এই হত্যার তদন্ত করছে র্যাব। র্যাব আদালতের কাছে ৯৫ বার সময় চেয়েছে। আদালত তাদের সময় দিয়েছে। কিন্তু র্যাব যদি না পারে তাহলে উনারা আদালতকে বলুক যে তারা পারছে না।
সাংবাদিক হত্যার বিচার হচ্ছে না উল্লেখ করে নোমানী বলেন, সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির ক্ষেত্রে যারাই যখন ক্ষমতায় থাকুক না কেন সবার আচরণ অভিন্ন। অন্য সব হত্যার বিচার হলেও সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না।
প্রতিবাদ সমাবেশে র্যাবকে উদ্দেশ্য করে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী বলেন, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে তদন্ত প্রতিবেদন যদি দাখিল করেন তাহলে র্যাবের বিরুদ্ধে আমরা আন্দোলন করব। নিজেদের এলিট ফোর্স বলেন। আর সাগর-রুনির হত্যার প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৯৫ বার সময় নেন! আর এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় যে, সাগর-রুনির হত্যার প্রতিবেদন দাখিলে র্যাবের সদিচ্ছার অভাব আছে। আমি প্রত্যাশা করি, র্যাবের বোধোদয় হবে এবং তারা স্বচ্ছ প্রতিবেদন দাখিল করবে।
ডিআরইউর সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন, সাগর-রুনি হত্যার বিচার না হওয়ার কারণে আরও ৫৪ জন সাংবাদিক হত্যা হয়েছে। সুতরাং যদি সাগর-রুনির হত্যার বিচার হতো তাহলে এসব সাংবাদিক হত্যা হতো না।
আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচারের দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাংবাদিক ইউনিয়ন এই কর্মসূচি পালন করে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিনা আমান তানজুম। পড়ছেন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগে। বইমেলায় এসেছেন পছন্দের লেখকের বই সংগ্রহ করতে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর বইমেলার জন্য অপেক্ষা করি। আড্ডা দিই। ঘুরি-ফিরি, পছন্দের প্রিয় লেখকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। জীবনমুখী লেখাই বেশি পছন্দ।’
গতকাল সন্ধ্যায় অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে এই পাঠকের আলাপ হলে তিনি এসব কথা বলেন। বইমেলায় এসে কেমন লাগছে জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতি বছর মেলায় একটা ভিন্ন রকম আমেজ থাকে। এবারও আছে। নতুন বইয়ের গন্ধ সব সময় অন্য রকম টানে।’
পাঠক হিসেবে কোন লেখকের বই পছন্দ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুরনো অনেক লেখকের পাশাপাশি নতুন লেখকদের বইগুলো আমাকে টানে; বিশেষ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, মামুনুর রশীদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হকদের ভক্ত অনেক আগে থেকেই। সব সময়ই তারা আমার কাছে নতুন। তাই এবারও তাদের বই কিনব। তবে নতুনদের মধ্যে সাদাত মাহমুদকে বেশি ভালো লাগে।’
বইমেলা মানেই লেখক-পাঠকের সম্পর্ক উন্নয়নের জায়গা বলে মনে করেন তানজিনা আমান তানজুম। এই পাঠক বলেন, ‘বইমেলায় ভালো বইয়ের পাশাপাশি অনেক মানহীন বইও ছাপা হয়। কোনো রকম সম্পাদনা ছাড়াই মলাটবন্দি হয়ে আসে। যেখানে অসংখ্য ভুল বানান থাকে। বাক্যবিন্যাসও থাকে যাচ্ছেতাই, এ ধরনের অসামঞ্জস্যপূর্ণ নিম্নমানের লেখায় সমৃদ্ধ অগণিত অসম্পাদিত বই আমাদের পীড়া দেয়, অস্বস্তি জাগায় মনে।’ এ বিষয়ে প্রকাশক ও সংশ্লিষ্ট সবার বিশেষভাবে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।
লেখক ও ক্রীড়া সাংবাদিক নাজমুল হক তপন। ভালো লাগা থেকে লেখালেখি শুরু। তার প্রথম বই ‘মাঠের আলোয় ভাসি’ ২০০৮ সালে সময় প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। এবারের বইমেলায় লেকচার পাবলিকেশন থেকে ‘মেসির রূপকথা’ নামে একটি নতুন বই বেরিয়েছে।
নতুন বইটি সম্পর্কে তিনি বলেন, মেসিকে নিয়ে খুব কম গল্প প্রচলিত আছে। ১৩ বছর বয়সে মেসি স্পেনে চলে যায়। তারপরও তার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব বেশি আর জানা যায়নি। তবে মেসির শৈশব কিন্তু খুবই বর্ণাঢ্য ছিল। তাদের পূর্বপুরুষ ইতালি থেকে আর্জেন্টিনা গিয়েছিল। খেলাধুলার ক্ষেত্রে তার দাদি খুব সহযোগিতা করেছেন তাকে। তিনিই প্রথম মেসিকে মাঠে নিয়ে যান। ছোটবেলায় মেসির চকলেট প্রীতি ছিল। তাই তাকে বলা হতো যত গোল দেবে তত চকলেট পাবে। এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড় হওয়ার পর মানুষের জন্য তার যে মহানুভবতা সেগুলো আমার এই বইটিতে তুলে ধরেছি।
কাদের জন্য বই লিখেন জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করি সব বয়সী পাঠকদের জন্য লিখতে। তবে এটা নির্ভর করে বইয়ের ওপর। আমার প্রতিটি বই আলাদা আলাদা বয়সের মানুষকে আকৃষ্ট করে। গুনগুন বেগুনি নামে শিশুদের জন্য একটি বই লিখেছি আবার নারী ক্রিকেটারদের স্ট্রাগল নিয়ে আরেকটি বই আছে। আমার আরেকটি বই আছে ঠিকুজি। এটি ৭১-এর যুদ্ধশিশুদের নিয়ে লেখা। আমি চেষ্টা করেছি তাদের কষ্টের কথাগুলো এই বইতে তুলে ধরতে।
তরুণ সমাজের বই বিমুখতার বিষয়টি সম্পর্কে লেখকের মতামত জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমরা যখন তরুণ ছিলাম তখন জন্মদিনে মানুষকে বই উপহার দিতাম, এখন সেটা দেখা যায় না। কেন দেখা যাচ্ছে না? কারণ হলো বিশ্বায়নের একটা প্রভাব আমাদের ওপর পড়েছে। এখন আমরা মুভি দেখছি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দেখছি, যার ফলে বই খুব একটা পড়ছি না। তারপরও অনেকেই তো বই পড়ছে। অনেক সময় দেখি তরুণদের দোষ দিয়ে বলা হয়, তারা বই পড়ে না। এটা তো শুধু তাদের একার দোষ নয়। বর্তমান পরিস্থিতি তাদের বই বিমুখ করেছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।