
জরায়ুমুখের ক্যানসার প্রতিরোধে ১০-১৫ বছর বয়সী মেয়েদের আগামী সেপ্টেম্বর থকে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি) প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘এটি সরকারি কার্যক্রম। রুটিন অনুযায়ী যে টিকা দেওয়া হয় এটাও সেভাবে দেওয়া হবে। ১০-১৫ বছর বয়সীদের দিলে সেটি কার্যকর হবে। এটি খুবই দামি টিকা হলেও বিনামূল্যে দেওয়া হবে। নারীদের জরায়ুমুখের ক্যানসার বাড়ছে। তাই স্ক্রিনিং বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর থেকে এই টিকা দেওয়ার কথা ভাবছি।’
গতকাল সোমবার দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই টিকা একটি করে ডোজ দেওয়া হবে। এই টিকা একবার নিলে তারা আজীবন এ রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। তবে বেশি বয়স হলে এই টিকার কার্যকারিতা কমে যায়। ব্রেস্ট ক্যানসারেও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছে। সেটি যাতে দ্রুত শনাক্ত করা যায়, সেজন্য যন্ত্রগুলো উপজেলা পর্যায়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।’
স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি ছয় জেলায় বিস্তৃত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে ১৫ লাখ পরিবার বছরে ৫০ হাজার টাকা সমপরিমাণ স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে পাবে। মানিকগঞ্জ, বরিশাল, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, কুড়িগ্রাম, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এ সেবা পাওয়া যাবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলায় এটি নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। ইউনিভার্সেল হেলথ কাভারেজের আওতায় এটি করা হচ্ছে।
নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতির বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নিপাহ ভাইরাস এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। এখানে নতুন কোনো রোগী আমরা সেভাবে পাচ্ছি না। কোনো মৃত্যু হয়নি। প্রস্তুতি হিসেবে বক্ষব্যাধি হাসপাতালে একটা ইউনিট করে দেওয়া হয়েছে। আইসিইউ তৈরি করা হয়েছে। নিপাহ বা এ ধরনের কোনো ভাইরাসে আক্রান্ত হলে এই ইউনিটে যাতে সঠিক চিকিৎসা পেতে পারে, সেজন্য সব ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য অনুবিভাগ) সৈয়দ মজিবুল হক, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. সাইদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের রঙিন দিন আজ। এই দিনটিতে প্রকৃতি যেভাবে সেজেছে, তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও দিনটি ব্যবসায়ীদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এদিনটিকে সামনে রেখে জমে ওঠে নানান ব্যবসা। ফুল, চকলেট, কেক, জুয়েলারি, পোশাক, স্মার্ট ডিভাইস থেকে শুরু করে ই-কমার্স কেনাকাটা চলে বেশ কিছুদিন ধরে। কারণ বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বড় উৎসবগুলোর একটি পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস। এই দিবসে বাণিজ্যের কোনো আনুষ্ঠানিক হিসাব না থাকলেও বিভিন্ন ব্যবসায়ী খাত থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে বাণিজ্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি হবে। প্রতি বছরই এ বাণিজ্য বাড়ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে ভালোবাসা দিবস ঘিরে বাণিজ্যের এমন চিত্র পাওয়া যায়। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ভালোবাসা দিবস ঘিরে সবকিছুর দাম বেশি। ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে জানিয়েছেন, চেষ্টা ছিল ক্রেতাদের পছন্দের পণ্য সাশ্রয়ী দামে সরবরাহের। ডলার সংকট ও জ্বালানির দাম বাড়ার প্রভাবে বিদেশি অনেক জিনিস বেশি দামে কিনতে হয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই দাম বেশি রাখতে হচ্ছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার অর্থনীতির কঠিন সংকটের মধ্যে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস পালিত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় চাহিদা থাকলেও আমদানিকৃত অনেক উপহারসামগ্রী দেশে আনতে পারেননি। পণ্যের কাঁচামালের দাম বেশি থাকায় দেশে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেশি। ন্যূনতম লাভ রেখে পণ্য বিক্রি করলেও গতবারের তুলনায় বেশি দাম রাখতে হয়েছে।
ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও ভালোবাসা দিবসে ভালো বাণিজ্য হচ্ছে। ভালোবাসা দিবসে ১০০ কোটি থেকে ১৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। অন্যান্য পণ্যের বিক্রিও কম নয়। সব মিলিয়ে সারা দেশে ভালোবাসা দিবস ঘিরে বাণিজ্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি হবে। এই বাণিজ্য সংকটে থাকা আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রায় প্রতি বছরই পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসে রমরমা বাণিজ্য হয়। বিভিন্নভাবে জানা যায়, শুধু ফুল বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা। এ দিবসে উপহারসামগ্রী দেওয়া একটা সাধারণ বিষয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য আয়োজন তো আছেই। সবকিছু নিয়েই ভালো বাণিজ্য হয় ভালোবাসা দিবস ঘিরে।
নব্বইয়ের দশকে এ দেশে ভালোবাসা দিবসের উদযাপন শুরু হয়। প্রতি বছরই এ দিবস উদযাপনের ব্যাপকতা বেড়েছে। প্রথম দিকে দেশে ভালোবাসা দিবস উদযাপনে ফুল দেওয়া-নেওয়ায় সীমাবদ্ধ ছিল। এরপর ধীরে ধীরে উপহার দেওয়া, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়া হয়। বছর দশেক ফুল, উপহার দেওয়া-নেওয়া, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়ার পাশাপাশি ভালোবাসা দিবস উদযাপন উপলক্ষে কিছুটা নিরিবিলি জায়গায় ঘুরতে যাওয়া শুরু হয়।
ফুল বিক্রি : ভালোবাসা দিবসে সবচেয়ে চাহিদা বাড়ে ফুলের। ফুল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার্স সোসাইটির (বিএফএস) তথ্যানুসারে, ভালোবাসা দিবসে গোলাপের চাহিদা অন্তত ৫০ লাখ। গত বছর বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনে ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল। এবার ব্যবসা আরও বাড়বে বলে দাবি করা হয়েছে। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে শুধু গদখালী এলাকায় প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে।
প্রতি বছরই ভালোবাসা দিবস ঘিরে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে ও প্রিয়জনকে ভালোবাসা জানাতে ফুলের কদর বাড়ছে। রাজধানীর অন্যতম বড় ফুলের বাজার শাহবাগের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবার এই বাজারে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার মতো ব্যবসা হবে বলে আশা তাদের।
হোটেল-রেস্তোরাঁ : এবারের ভালোবাসা দিবসে সাধারণ রেস্তোরাঁ থেকে রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোতেও রয়েছে বিশেষ আয়োজন। বাড়তি কাস্টমার সামলাতে অনেকে শুধু এ দিবসের জন্য বাড়তি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। রান্নার জন্য আগেই সব কেনাকাটা করে রেখেছে।
আরজি এস রেস্তোরাঁর মালিক আহনাফ জুবায়ের দেশ রূপান্তকে বলেন, ‘অন্য সময়ে বেলা ১১টায় রেস্তোরাঁ খুললেও ভালোবাসা দিবসে সকাল ৭টায় খোলা হবে। স্বাভাবিক সময়ে যেসব খাবার দেওয়া হয়, এদিন আরও নতুন নতুন পদ থাকবে। দাম অন্য সময়ের তুলনায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি। কারণ অন্য সময়ের তুলনায় মাংস, মুরগি, সবজি থেকে মসলাসহ সবকিছু বেশি দামে কিনতে হয়েছে। তাই ন্যূনতম লাভ রাখলেও অন্য বারের তুলনায় দাম বাড়বে।’
পাঁচতারকা হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন, ঢাকা রিজেন্সি, রেনেসন্স হোটেল, সিক্স সিজনস, আমারি, ইন্টারকন্টিনেন্টাল, সারিনা, লা মেরিডিয়ানসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরের নামী হোটেলে আগেই ভালোবাসা দিবস ঘিরে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
এসব হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যালকনি বার সাজিয়েছে বিভিন্ন প্যাকেজে। পুল ক্যাফেতে দুপুরে ও রাতে জনপ্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকার প্যাকেজ রয়েছে। নির্দিষ্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীরা পাবেন একটির সঙ্গে আরেকটি বিনা মূল্যে। ১৩, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ১০ হাজার টাকায় দম্পতিদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে, সঙ্গে বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে সকালের নাশতা। ভালোবাসা দিবসে রেস্তোরাঁয় বুফে দুপুরের খাবার ৪ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা, বুফে রাতের খাবার ৬ হাজার ৪৯০ টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা জনপ্রতি। র্যাফেল ড্রর আয়োজন রয়েছে। ভাগ্যবান বিজয়ী পাবেন সোনা, গহনা, হীরার আংটি, বিদেশ ভ্রদণের টিকিট। ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ডিলাক্স রুমের ভাড়া পড়বে ১৪ হাজার ২১৪ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা।
রিসোর্ট : অন্য সময়ে রাজধানীর আশপাশের এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন রিসোর্টে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একজনের জন্য খরচ করতে হতো ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। ভলোবাসা দিবস উপলক্ষে খরচ ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি। রিসোর্টগুলোতে থাকছে সাইকেলে চড়া, নৌকায় ঘোরা, সুইমিংপুলে গোসল, দুপুরের খাবার, সকাল ও সন্ধ্যায় হালকা নাশতা। রাতে থাকতে হলে সাধারণ রিসোর্টগুলো একটি দম্পতিকে দিতে হবে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে থাকা, খাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক কাজে অংশ নেওয়া যাবে। রাজধানীর আশপাশে ব্র্যাক সিডিএম, সারা, রূপকথা, শীতলক্ষ্যা, কুঠিরসহ বিভিন্ন রিসোর্ট রয়েছে। খরচ প্রায় একই ধরনের।
পোশাক : ভালোবাসা দিবসে ও পহেলা ফাল্গুনে নানা রঙের জামাকাপড় কেনার হিড়িক পড়েছে। পোশাকে হলুদ, বাসন্তী, কমলা, লাল রঙের প্রাধান্য থাকছে বেশি। ফ্যাশন হাউসের দাপট বেশি। ফ্যাশন হাউসগুলো নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক নিয়ে এসেছে। শাড়ি, ফতুয়া, পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হয়েছে। দাম ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার-৭ হাজার টাকা বা তার বেশি।
ই-কমার্স : ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে অনলাইন কেনাকাটা বেড়েছে কয়েকগুণ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি ই-কমার্স পণ্য ডেলিভারির অর্ডার পেয়েছে। শহরে এসব পণ্যের অর্ডার বেশি। তবে অন্যবারের তুলনায় এবারে বিভাগীয় ও জেলা শহর থেকেও অর্ডার এসেছে। পণ্যের অর্ডার বেশি থাকায় ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে শুক্রবারও পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অনলাইন ফ্লেবারের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা রাতুল মোয়াজ্জেম দেশ রূপান্তকে বলেন, ‘আগের চেয়ে ভালোবাসা দিবসের ব্যাপকতা বেড়েছে। তাই উপহারসামগ্রীর দেওয়ার হার বেশি।’
‘আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়।’ বই, বসন্ত, ভালোবাসা উৎসবের তিন রসায়নে চারিদিন রঙিন। হলুদ শাড়ির সঙ্গে খোঁপায় হলুদ গাঁদা ফুল হাতে রঙিন চুড়ি। বাসন্তি বসনে যেমন নারীরা তেমনি পুরুষরাও হলুদ, লাল পাঞ্জাবিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন মেলায়। পছন্দের লেখকের বই কিনেছেন তারা। একে অপরের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। প্রিয় মানুষকে বই উপহার দিয়েছেন। সব মিলিয়ে গতকাল সোমবার বইমেলা ছিল বাসন্তি রঙা।
আজ বসন্ত হলেও আগের নিয়ম মেনে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বের হয় বসন্ত শোভাযাত্রা। এ ছাড়াও পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসই ছিল বসন্তের রঙে রঙিন। সকাল থেকে তরুণ তরুণীদের উপস্থিতি ছিল ক্যাম্পাসে। দুপুর ৩টায় বইমেলার দুয়ার খুললে তারুণ্যের ঢল নামে তাতে। ধীরে ধীরে মেলায় বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উভয় অংশ কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় প্রবেশ করতে টিএসসি, বাংলা একাডেমি গেট, দোয়েল চত্বরসহ সব পথেই ছিল দীর্ঘ লাইন। শুধু দর্শনার্থীরাই নয়, হলুদ রঙে নিজেদের রাঙিয়ে তুলেছিলেন স্টলগুলোর বিক্রয়কর্মীরাও। উপচে পড়া ভিড়ের দিনে বই বিক্রিও ছিল চোখে পড়ার মতো। কথা হয় শ্রাবণ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে। তারা জানান, বিক্রি ভালো। তবে এ দিন বিক্রি বেশি হয়েছে প্রেমের কবিতা ও উপন্যাসের বই।
মেলায় ঘুরতে আসা ডেমরার সামছুল হক খান স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহজাবিন চিঠি দেশ রূপান্তরকে বলেন, মেলায় এসে খুবই ভালো লাগছে। যদিও অনেক ভিড় আজকে, তারপরও হলুদের সমারোহে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। নতুন কয়েকটি বই কিনেছি, আরও কয়েকটি কিনব।
নতুন বই : গতকাল সোমবার ছিল অমর একুশে বইমেলার ১৩তম দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। নতুন বই এসেছে ১০৫টি।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হারিসুল হক এবং অপূর্ব শর্মা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আবেদ খান।
প্রাবন্ধিক বলেন, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী দীর্ঘজীবী কর্মবীর ব্যক্তিত্ব। তার প্রধান পরিচয় সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে। উভয় ক্ষেত্রে তার হাতে ছিল কলম, যা অপূর্ব আলোর ঝলকানিতে জ্বলে উঠেছিল বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের পর। আবেগ ও উপলব্ধির মিশেল ঘটিয়ে তিনি এমন এক কবিতা লিখেছিলেন যা ছুঁয়ে গিয়েছিল জাতির অন্তর, আলতাফ মাহমুদের সুরে একুশের প্রভাতফেরিতে গীত হয়ে জুগিয়েছিল জাগরণের বাণীমন্ত্র। সেই থেকে তার কলম নানা সন্ধিক্ষণে সমাজের চিন্তাকে প্রভাবিত করেছে, মানুষকে আলোড়িত করেছে, বাঙালিকে করেছে জাতিচেতনায় সংহত।
আলোচকবৃন্দ বলেন, বাঙালির ভাষা আন্দোলন নিয়ে বহু গান রচিত হলেও সাংবাদিক, কবি, কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি সকল বাঙালির মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে।
পেশাগত জীবনে সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রাণের আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন লেখালেখিতে। আজীবন তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করেছেন এবং অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে আবেদ খান বলেন, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জীবন ও কর্ম অনেক বিস্তৃত। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের মহীরুহদের একজন। যে আদর্শ ও সৃজনশীলতা নিয়ে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সাংবাদিকতা করেছেন তা আমাদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শাহনাজ মুন্নী, তসিকুল ইসলাম, দন্ত্যস রওশন এবং মামুন রশীদ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন শাহনাজ মুন্নী, ওবায়েদ আকাশ, সাকিরা পারভীন, হানিফ খান এবং জিললুর রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী নাসিমা খান বকুল এবং জয়ন্ত রায়। এ ছাড়াও ছিল ঝর্ণা আলমগীরের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’, সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ঝুম্পার পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘জলতরঙ্গ ডান্স কোম্পানি’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন মো. খালেদ মাহমুদ মুন্না, অনন্যা আচার্য্য, কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়, মো. রেজওয়ানুল হক, ফারহানা শিরিন, শরণ বড়ুয়া এবং নাসিমা শাহীন ফ্যান্সী। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন সৌমিত্র মুখার্জি (তবলা), সুমন রেজা খান (কি-বোর্ড), অমিত দাস (গিটার) এবং মনির হোসেন (অক্টোপ্যাড)।
আজকের সময়সূচি : আজ ১ ফাল্গুন ১৪২৯/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ মঙ্গলবার। অমর একুশে বইমেলার ১৪তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ এবং বিদেশি সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জি এইচ হাবীব এবং শামসুদ্দিন চৌধুরী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সম্পদ বড়–য়া, রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মো. আবু জাফর এবং মাহবুবা রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ফকরুল আলম।
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মো. মিজানুর রহমান মিদুল। পড়ছেন বাংলা বিভাগে। বইমেলায় পছন্দের লেখকের বই সংগ্রহ করতে এসেছেন। জানতে চাইলে মিদুল বলেন, মেলায় প্রতি বছরই আসি বন্ধু, পরিবারের সদস্যসহ নানান সামাজিক গ্রুপের সঙ্গে।
গতকাল সন্ধ্যায় অমর একুশে বইমেলার ১৩তম দিনে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে আলাপ হলে তিনি বলেন, মেলায় তরুণ লেখকদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ থাকে, গল্প-উপন্যাস বেশি পড়ি। বরাবরের মতো এবারও উপন্যাস, থ্রিলার, সাহিত্য বগলদাবা করতে চাই।
মেলায় কীসের অভাব বোধ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার দৃষ্টিতে মেলায় একটি জিনিস মিস করি তা হলো একটি রিডিং স্পট। মেলায় একটা বিশাল জায়গায় যদি কিছু বেঞ্চ থাকত পাঠকরা বসে বই পড়ত। রিডিং স্পট থাকলে মেলার আয়োজন আরও অনেক ভালো হতো।
মেলার সজ্জা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবারের মেলা অনেক ভালো লাগছে। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার মেলার পরিধি কম। স্টলসংখ্যা বেশি। প্যাভিলিয়নগুলোর সাজসজ্জা এবার দারুণ। নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো। ওভার অল ভালোই লাগছে।
বইয়ের দাম নিয়ে একটা চাপা ক্ষোভ নিয়ে মিদুল বলেন, এবার অন্তত বইয়ের দাম নাগালের বাইরে। ছাত্রদের জন্য বই কেনাটা অনেক টাফ একটা বিষয়।
কোন ধরনের লেখা পড়তে চান জানতে চাইলে বলেন, শিক্ষণীয় বই চাই। উপন্যাস-গল্প পড়তে চাই। যে উপন্যাস-গল্প পড়ে একটি সুন্দর স্বাধীন পরিচ্ছন্ন, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
শাহাব আহমেদ পেশায় শিশু চিকিৎসক। তবে নেশা তার লেখালেখি। সুদূর মার্কিন মুলুকে যান্ত্রিক জীবনের অবসরে নেশায় বুঁদ হয়ে লেখেন আপন মনে। লেখালেখির অভ্যেসটা সেই ছাত্রজীবন থেকে। বিক্রমপুরে জন্ম। জীবনের প্রথম ১০ বছর কেটেছে গ্রাম ও পদ্মার নির্জন প্রতিবেশে; যেখানে জেলে, কুমার, কৃষক, ঋষি, বেলদার, বেদে ও চরবাসীদের জীবন নিবিড়ভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। তার পরে বেড়ে ওঠেন শীতলক্ষ্যা পাড়ের নারায়ণগঞ্জ শহরে। ঢাকায় কলেজ জীবন শেষে পাড়ি জমান তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে। তার পরের দীর্ঘ ১৪ বছর কেটেছে সেখানেই। এরপর কানাডা হয়ে বিগত ২২ বছর আছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
শাহাব আহমেদের পাঠকশ্রেণি কারা? জানতে চাইলে লেখক বলেন, ‘আমি লিখি তাদের জন্য, যারা তুলনামূলকভাবে সিরিয়াস লেখা পড়তে আগ্রহী। কারণ আমার লেখায় জন-জীবনের কাহিনীর সঙ্গে জড়াজড়ি করে আসে ইতিহাস, রাজনীতি, পৌরাণিক ঘটনা, মিথিক্যাল চরিত্র, উপকথা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিবরণ। পাঠক মানসিকভাবে অপ্রস্তুত থাকলে এই ধারার লেখা তাদের কাছে সহজবোধ্য নাও হতে পারে, যদিও আমি চেষ্টা করি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লিখতে।’
অনেক আগে থেকেই লেখালেখি শুরু হলেও পেশাগত ব্যস্ততায় নিজের লেখাগুলো মলাটবদ্ধ করা হয়নি খুব একটা। ২০০৬ সালে প্রকাশিত তার প্রথম বই ‘লেনিনগ্রাদের চিঠি’। সেই থেকে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা সর্বমোট ১০টি। এর মধ্যেই তার গ্রন্থগুলো পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। নিভৃতচারী এই লেখকের এবারের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত উপন্যাস ‘ধুতুরা জোছনার দিন’। যেখানে তিনি বিক্রমপুরের জন-জীবনকে ফুটিয়ে তুলেছেন একজন কিশোরের চোখ দিয়ে। এর ভাষায় রয়েছে পদ্মার জল আর পলি-কাদায় মেশানো-মাখানো অদ্ভুত কোমল নেশাধরা এক টান। আর এর বাঁকে বাঁকে প্রবহমান সময় ও জীবন। এ প্রসঙ্গে লেখক বলেন, ‘পাঠক এই উপন্যাসে বাংলাদেশের মানুষ, প্রকৃতি, খাল-বিল, নদী-নালা, ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারের পাশাপাশি এ দেশের রূপ, রস ও সোঁদা মাটির গন্ধের সন্ধান পাবেন।’
লেখকের এই বই থেকে তুলে আনা কয়েকটি বাক্যে তার ভাষার সৌকর্যের দৃষ্টান্ত মিলবে ‘দেখি নদীর পাড়ে আছড়ে পড়া ঢেউ আর স্রোত, তুমুল ঘূর্ণাবর্ত এবং গহিনের অন্তস্তল থেকে উঠে আসা বুদবুদের বাহার। হ্যাঁ, তারা জন্ম নেয়, পর মুহূর্তেই আবার অসীমে মিলিয়ে যায়। কেউ কোথাও নেই, বাতাসে মাথা নাড়ছে একগুচ্ছ শ্বেতদ্রোণ ফুল, দাঁতরাঙা পাতায় চিকচিক করছে বিন্দু বিন্দু শিশির এবং নিশিন্দার ঝোপে গুটি গুটি পা ফেলে হাঁটছে অপরূপ কিশোরী রোদ।’
কিংবা
‘মগ্নচৈতন্যে পদ্মা সতত বয় সৌষ্ঠবময়, স্বচ্ছ আকাশগঙ্গার সখী সে সমান্তরাল! শৈশবের দিনগুলো জোছনার দিন, কিন্তু জোছনার বিবরে অন্ধকার। আমি সেখানে হাঁটি, ধুতুরার বিষ আর বিষ থাকে না, অনাবিল সৌন্দর্যের হাসিমুখ হয়ে যায়। পৃথিবীর দিকে তাকাই দেখি নিরন্তর হাঁটছে ধুতুরা জোছনায় একাকার দিন।’
দীর্ঘদিন সোভিয়েত ইউনিয়নে বসবাস করার বিচিত্র ও সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি লিখেছেন দ্বৈত ভ্রমণ উপন্যাস ‘লেনিনগ্রাদ থেকে ককেশিয়া’ ও ‘ককেশিয়ার দিনরাত্রি’। যেখানে একজন বাঙালি ছাত্র শিশিরের রুশ নারী নাতালিয়ার প্রতি ভালোবাসার কাহিনীর ফাঁকে ফাঁকে এসেছে বিপ্লব-পূর্ব রাশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসের বাঁক ফেরানো ঘটনাবলি। সে দেশের কবি-সাহিত্যিক ও অন্যান্য মননশীল মানুষের ওপরে নিপীড়ন, নির্যাতনের পাশাপাশি সেখানকার জন-জীবনের চিত্র। বই দু’টি ২০২০ সালে শব্দঘর সাহিত্য পত্রিকার বর্ষসেরা ভ্রমণ সাহিত্য হিসেবে পুরস্কৃত হয়।
লেখকের ‘যত্র বয় কুরা নদী’ গ্রন্থে রয়েছে স্ট্যালিনের দেশ জর্জিয়ার অনবদ্য গল্প। এছাড়াও তিনি লিখেছেন ‘দশজন দিগম্বর একজন সাধক’ এবং ‘হিজল ও দ্রৌপদী মন’ নামে দুটি গল্পগ্রন্থ। বাংলা সাহিত্যে ব্যতিক্রমধর্মী লেখা ইবষষব’ং খবঃঃবৎং নিয়ে প্রকাশিত বই ‘তিথোনসের তানপুরা’ পাঠক মহলে ব্যাপক সমাদৃত।
শাহাব আহমেদের সবক’টি বই সারা বছর পাওয়া যায় রকমারিডটকমে। এছাড়া অমর একুশে বইমেলায় ‘ধুতুরা জোছনার দিন’ পাওয়া যাচ্ছে বিদ্যাপ্রকাশে।
মানিকগঞ্জের সিংগাইর পৌরসভার সাবেক মেয়র খোরশেদ আলম ভূইয়ার বিরুদ্ধে সরকারি রাস্তা কেটে সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে একটি পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী সিরাজুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানা ও বর্তমান মেয়রের কার্যালয়ে ধরনা দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে। যদিও পৌর বিএনপির বর্তমান সভাপতি ও দুই বারের সাবেক মেয়র খোরশেদ আলমের ভাষ্য, রাস্তার পাশে থাকা নিজের জমির মাটি কেটেই বেড়া দিয়েছেন তিনি।
গতকাল সোমবার পৌর এলাকার বিনোদপুর মহল্লায় গিয়ে দেখা যায়, সিরাজুল ইসলামের টিনের বাড়ির পাশের রাস্তা থেকে মাটি কেটে ফেলা হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে বাড়িটির সীমানা প্রাচীরও।রাস্তার পাশে দেওয়া হয়ে কাঁটাতারের বেড়া। ওই বাড়িতে যারা থাকেন তারা সরাসরি রাস্তায় যাওয়া-আসা করতে পারছেন না।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর আগে এখানে ২০ শতাংশ জমি কিনে টিনের ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিই। পরবর্তী সময়ে পৌরসভা থেকে প্ল্যান অনুমোদন নিয়ে বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করলে সাবেক মেয়র বাধা দেন। অজ্ঞাত কারণে গত ২৮ জানুয়ারি তিনি শতাধিক লোকজন ও ভেকু (এস্কেভেটর) দিয়ে আমার বাড়ির সামনে সরকারি রাস্তা কেটে ফেলেন ও বাড়ির সীমানা প্রাচীর গুঁড়িয়ে দেন। পরে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রুদ্ধ করে দেওয়া হয় বাড়িতে যাতায়াতের পথও। তার দাবি, শুধু রাস্তা বন্ধ করে দিয়েই থেমে যাননি তিনি। কেটে দেওয়া হয়েছে তার বাড়ির বিদ্যুতের লাইনটিও। অথচ এসব অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন জায়গার ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের লোকজন উল্টো আমাকেই শাসায়। সরকারদলীয় লোকজন তাকে প্রশ্রয় দেওয়ায় আমি বিচার পাচ্ছি না।
তবে অভিযুক্ত খোরশেদ আলম ভূইয়া বলেন, সরকারি রাস্তার উত্তর পাশে আমার ১০ শতাংশ জমি রয়েছে। আমার জায়গাতেই আমি মাটি কেটে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছি।
সিংগাইর পৌরসভার মেয়র আবু নাঈম মো. বাশার বলেন, প্রত্যেক নাগরিকের সরকারি রাস্তা দিয়ে চলাচলের অধিকার রয়েছে। সাবেক মেয়রের এমন কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাই।
মানিকগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সিংগাইর জোনাল অফিসের ডিজিএম সফিকুল ইসলাম বলেন, ওই জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে মিটার উল্টে ছিলÑ এমন সংবাদের ভিত্তিতে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সাবেক মেয়রের অভিযোগের ভিত্তিতে সংযোগ দেওয়া হয়নি। স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে।
সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিপন দেবনাথ বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। রাস্তার ঢাল কেটে ও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সাবেক মেয়র যে কাজটি করেছেন সেটা অবশ্যই দৃষ্টিকটু। আমি তাকে বেড়া সরিয়ে দিতে বলেছি।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ আর নির্বাচনী তাপের মধ্যেই আজ জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে। জাতীয় নির্বাচনের আগে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের তৃতীয় মেয়াদের শেষ বাজেট এটি। অনেক যোগ-বিয়োগ কষে বাজেট প্রণয়নের শেষ সময়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনী চমক হিসেবে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করতে সম্পূর্ণ নতুন পথে হেঁটেছেন। ভর্তুকি নাম দিয়ে বড় অঙ্কের ‘কর ছাড়’ দিয়েছেন। অথচ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে রাজস্ব জাল বিছিয়ে সাধারণ আয়ের মানুষকে আটকে ফেললেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো প্রস্তাবিত বাজেট সারসংক্ষেপ, ভর্তুকির নামে ‘কর ছাড়’কে বৈশি^ক মন্দা মোকাবিলার ঢাল হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের পরোক্ষ প্রভাবে বাজারে পণ্যের দাম কমার গতিরোধ করবে বলেও সরকারপ্রধানকে জানিয়েছেন।
তবে অর্থনীতির বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে ছোটদের কর পরিশোধে চেপে ধরলেও কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের ঠিকই খুশি করলেন অর্থমন্ত্রী। এ পদক্ষেপের ফলে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমায় খুব বেশি প্রভাব পড়বে এমন আশা করা কঠিন।
এনবিআরের সাবেক সদস্য কর-বিশ্লেষক ড. আমিনুল করিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে কর অব্যাহতি ও কর অবকাশ সুবিধা কমানোর চাপ আছে। এ শর্ত না মানলে ঋণের কিস্তি দেওয়া বন্ধ করা হতে পারে। অন্যদিকে নির্বাচনের আগের বাজেট হওয়ায় বড় মাপের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার চাপ আছে। বিভিন্নমুখী চাপে সরকার সব পক্ষকে খুশি করতেই আগামীতে কৌশলে কর ছাড় রাখছে ভর্তুকির নাম দিয়ে। অন্যদিকে সাধারণ আয়ের মানুষের ওপর কিন্তু ন্যূনতম কর ধার্য করার কথা শুনছি। অনেক মানুষকে রাজস্বের আওতায় আনার কথাও শুনেছি। এভাবে ছোটদের ওপর ঠিকই কর পরিশোধে চাপ বাড়াল।’
একই মত জানিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় মাপের ব্যবসায়ীদের অনেকে সরাসরি রাজনীতি করেন। অনেকে রাজনীতি না করলেও সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেন। এরা সমাজের প্রভাবশালী। বাজেট প্রণয়নকালেই এরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করে নিজেদের পক্ষে সুবিধামতো অনেক কিছু আদায় করে নেন। এবারও তাই হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কৌশলে বড় মাপের ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করা হয়েছে। এভাবে আইএমএফের জেরার মুখে বলার সুযোগ থাকছে যে কর ছাড় ও ভর্তুকি দুই হিসাব এক করেছি।’
সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকে আশায় আছেন এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী হয়তো জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে সূত্র কষবেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার এ বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় কোনো রক্ষাকবচ রাখলেন না। কৌশলী অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে দেওয়া কথা রেখেছেন। সাধারণ মানুষকে রাজস্ব জালে আটকে ফেলার ছক করেছেন। মূল বাজেটের আকার বাড়ানোর সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারের আয়ের হিসাবও বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এখানে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৫০ হাজার কোটি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছ থেকে চলতিবারের তুলনায় ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা করলেন। এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে ২০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে করবহির্ভূত খাত থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে। শেষ সময়ের হিসাবকষে শত সংকটের বাজেটে অর্থমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের খুশি করার চেষ্টা করেছেন।
আগামী বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী কর ছাড়সহ ২ লাখ ৮৯ হাজার ২২৮ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়ার প্রস্তাব করবেন। জাতীয় বাজেটে নিয়মিত ভর্তুকি হিসাবে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা রাখার কথা আছে। বাকিটা প্রত্যক্ষ কর ছাড় দিয়ে ভর্তুকি খাতে অন্তর্ভুক্তি হিসেবে রাখা হয়েছে। প্রত্যক্ষ কর ব্যয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতনসহ অন্য খাতে ৭৭ হাজার ২১৮ কোটি বা মোট কর ছাড়ের ক্ষুদ্রঋণ খাতে ১২ শতাংশ বা ১৫ হাজার ৩১৫ কোটি, প্রবাসী আয় খাতে ৯ শতাংশ বা ১১ হাজার ২৮৭ কোটি, বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে ৭ শতাংশ বা ৮ হাজার ৩৮০ কোটি, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক শিল্প খাতে ৪ শতাংশ বা ৪ হাজার ৬১২ কোটি, গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল ৩ শতাংশ বা ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি, পোলট্রি ও মৎস্য খাতে ২ শতাংশ বা ৩ হাজার ১২০ কোটি, আইটি এবং সফটওয়্যার খাতে ১ শতাংশ বা ১ হাজার ৪৭৭ কোটি এবং পুঁজিবাজার খাতে ১ শতাংশ বা ৯৬৬ কোটি টাকা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইস মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ যেন পুরনো বোতলে নতুন পানীয়। বড়দেরই বিভিন্ন কৌশলে সুবিধা দেওয়া হলো।’
অর্থমন্ত্রী রাজস্ব আদায়ের কৌশল হিসেবে বড় সুবিধা দিলেও ইটিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিলে কঠোরতা এনেছেন। ইটিআইএন না নিলে ৪০ ধরনের সেবা এবং রিটার্ন দাখিলের সিøপ না নিলে ৩৮ ধরনের সেবা দেওয়া হবে না। এতদিন ইটিআইএন নিয়েও অনেকে করযোগ্য আয় না থাকলে শুধু রিটার্ন দাখিল করেছে, একটি টাকার কর দিতে হয়নি। আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত অর্থ বিল বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ১ জুলাই থেকে করযোগ্য আয় না থাকলেও ২ হাজার টাকা ন্যূনতম কর দিতে হবে।
সাধারণ আয়ের অনেক করদাতা বলেছেন, খাবারের খরচ অনেক বেড়েছে। বাসা ভাড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা সবকিছুই এখন বেশি। এর মধ্যে সাধারণ আয়ের ওপর কর পরিশোধে চাপ দেওয়া হলে ভোগান্তি বাড়বে। সাধারণ মানুষকে কর পরিশোধে বাধ্য করলেও সম্পদশালীদের রাজস্ব ফাঁকি কমাতে, বকেয়া আদায়ে এবং অর্থ পাচার রোধে জোরালো কিছু রাখা হয়নি। এনবিআরের সক্ষমতা বাড়াতেও পুরনো পথেই হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী।
আগামী অর্থবছর থেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি হলে বেশি হারে জরিমানা দিতে হবে। বাজেটে আইন করে জরিমানার পরিমাণ প্রদেয় করের পরিমাণ দ্বিগুণ ৪ শতাংশ নির্ধারণে প্রস্তাব করা হয়েছে।
বড়রা সুবিধা দিয়ে রাজস্ব আদায়ে চাপ বাড়ানোয় জীবনযাত্রার অনেক খাতেই খরচ বাড়বে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি কমাতেও বাজেটে রাখা হয়নি কিছু। আন্তর্জাতিক পণ্যের বাজারের অস্থিরতা কবে কমবে তা নিয়ে রয়েছে অশ্চিয়তা। তাই গত মাস ছয়েক থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া চাল, ডাল, আট, ময়দা, ভোজ্য তেল, লবণ, চিনি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবারের দাম আপাতত কমছে না। চিকিৎসা, যাতায়াত, শিক্ষাসহ খাদ্যবহির্ভূত ব্যয়ও কমবে না। গত (নভেম্বর ২০২২-এপ্রিল ২০২৩) ছয় মাসের সাধারণ মূল্যস্ফীতির গড় হার ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
নির্ধারিত সময় পেরিয়েছে। ১০ জনের ব্রাজিল। তবুও এগিয়ে ২-০ গোলে। খেলা গড়ায় ইঞ্জুরি টাইমে। তখনই যেন বেড়ে যায় সেলেসাওদের গতি। মিনিট কয়েকের মুহূর্তে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০ গোলে। তবে প্রতিপক্ষ তিউনিশিয়াও কম যায় না। হাল ছাড়েনি তারা। শেষ মুহূর্ত অবধি লড়ে গেছে। তাতে আদায় করেছে একটি গোল। যদিও সেই গোল তাদের নিয়ে যেতে পারেনি পরের ধাপে।
যুব বিশ্বকাপে আন্দ্রে সান্তোসের জোড়া গোলে ম্যারাডোনার মাঠে উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার বিপক্ষে ৪-০ গোলের জয় পেয়েছে ব্রাজিল। এতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে সেলেসাওরা।
ডিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা মাল্টি পারপাস স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত শেষ ষোলোর খেলার পুরোটা সময় বলের দখলটা বেশি ছিল তিউনিশিয়ার পায়েই। আক্রমণের ধারও ছিল ভালো। গোলের সুযোগও অনেকগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। তবু ফিনিশারদের ছিল ব্যর্থতা। আর সেটা কাজে লাগিয়েছেন ব্রাজিলের যুবারা। শুরুটা অবশ্য তিউনিশিয়ার কল্যাণেই।
খেলার ১১ মিনিটে পেনালটি পেয়ে যায় ব্রাজিল যুবারা। সেখান থেকে গোল আদায় করে নেন মার্কোস লিওনার্দো। ৩১ মিনিটে এই লিওনার্দো ফের দলকে এগিয়ে দেন। তবে এবার আর তিনি গোল করেননি, তবে করিয়েছেন। তার পাস থেকে পায়ে বল নিয়ে তিউনিশিয়ার জালে জড়ান আন্দ্রে সান্তোস।
২-০ গোলের ব্যবধান পেয়ে হৈ হৈ করতে করতে বিরতিতে যেতে পারত ব্রাজিল। কিন্তু প্রথমার্ধের শেষ বাঁশিটা বাজার আগ মুহূর্তেই লাল কার্ড দেখেন রবার্ট রেনান। তার এমন কাণ্ডে ১০ জনের দলে পরিণত হয় ব্রাজিল।
তাতে অবশ্য পরের অর্ধের নির্ধারিত সময়ে কোনো ছাপ পড়তে দেখা যায়নি। ব্যবধানটা যে তখনও ২-০ তেই ছিল। তবে ৯১ মিনিটে ফের গোল আদায় করে ফেলে ব্রাজিল। এবার ম্যাথুস মার্টিনস। তার ৯ মিনিট পর আন্দ্রে সান্তোস নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেন। চার গোলে এগিয়ে থেকে ব্রাজিল যখন জয়ের অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখনই ১০৩ মিনিটের সময় প্রথম গোলটি হজম করে সেলেসাওরা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশেষ কোনো চাপ নেই, অর্থনৈতিক উন্নয়ন গতিশীল রাখতে এবারের বাজেটে থাকছে ধারাবাহিকতা।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) বিকেলে ঘোষিত হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে 'গরিববান্ধব' উল্লেখ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাইকে নিয়ে সবার জন্য বাজেট ঠিক করা হয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তার আকার বড় হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) রাজধানীর গুলশানের বাসা থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে যাত্রার প্রাক্কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাজেট সম্পর্কে এ মন্তব্য করেন তিনি।
বিকেলে জাতীয় সংসদে সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। নতুন অর্থবছরে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছে সরকার। সেখানে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী অর্থবছরে মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, এমন আশা করছেন অর্থমন্ত্রী।
বাজেটে ৫ লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট ঘাটতি হতে পারে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রবিবার (৪ জুন) থেকে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা শুরু হবে।
রোমাঞ্চকর ফাইনালে মোহামেডানকে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপ শিরোপা এনে দেওয়ার অন্যতম নায়ক আহসান আহমেদ বিপু। দীর্ঘদিন সাদা-কালোদের হয়ে খেলা এই গোলরক্ষক কাল দেশ রূপান্তরের শিহাব উদ্দিনকে জানালেন আবাহনীর বিপক্ষে উত্তেজনার ম্যাচে চাপ মাথায় নিয়ে নামা ও পেনাল্টি ভাগ্যে জয়ী হওয়ার পেছনের গল্প…
এত বড় ফাইনালে হঠাৎ করে বদলি হিসেবে নামলেন। এটা কি আপনার জন্য চাপ হয়েছিল?
বিপু : চাপ তো অবশ্যই। গোল আর গোল, ফাইনাল, প্রতিপক্ষ আবাহনী। মানসম্মানের ব্যাপার। এটা কিন্তু একটা ফাইনাল না শুধু, সম্মানেরও ব্যাপার। চাপ তো অবশ্যই ছিল।
তো এই চাপটা সামলালেন কীভাবে?
বিপু : সত্যি বলতে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস ছিল যে আমরা কামব্যাক করতে পারব। শুধু আমি একা না পুরো দল, হাফটাইমে যখন ২ গোল হয়, আমরা ডাগআউটে একজনও হতাশার কথা বলিনি। আমরা চরম বিশ্বাসী ছিলাম যে এখান থেকে ম্যাচ ঘুরানো সম্ভব। আমাদের অধিনায়ক দিয়াবাতে আত্মবিশ্বাসী ছিল যে ম্যাচে ফেরা সম্ভব।
কিন্তু নামার পরপরই তো একটা গোল হজম করলেন। তাতে কি চাপ বাড়েনি?
বিপু : না বাড়েনি কারণ গতকাল যে ৮টা গোল হয়েছিল তার মধ্যে সবচেয়ে সেরা গোল ছিল ওটা। গোলটা সত্যি বলব আমি নিজের ভুলে হজম করেছি। হাতেও লেগেছিল কিন্তু আটকাতে পারিনি।
পরে তো পেনাল্টি মানে ভাগ্য পরীক্ষাতেও নামতে হলো? তার মানে আপনার ওপর সবার বিশ্বাস ছিল?
বিপু : ওটা জানি না, এটুক বলতে পারি আমাদের কোচিং স্টাফ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিল। যেহেতু ফাইনাল, পেনাল্টির একটা সম্ভাবনা তো থাকেই। তো আমাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল, গোলরক্ষক কোচ কানন ভাই আমাদের নিয়ে পেনাল্টির আলাদা কাজ করেছিলেন। কিছু বিষয় যেমন শুট নেওয়ার আগ মুহূর্ত মানে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করা। আর নিজেও একটু চিন্তাভাবনা রেখেছিলাম। তো প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। চাপ নেওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি স্বাভাবিক ছিলাম। বেশি কিছু চিন্তা করিনি। এমন সময়গুলোতে বেশি চিন্তা করলে উল্টো চাপে পড়ে যেতে হয়।
পেনাল্টি নিয়ে প্রস্তুতির কথা বলছিলেন। আগে থেকেই কি পেনাল্টির প্রস্তুতি ছিল?
বিপু : সে রকম না। কারণ ফাইনালে আগে থেকেই তো বলা যায় না যে পেনাল্টি হবেই। তবে আমাকে খেলার আগে থেকেই মানে ফাইনালের আগেই বলা হয়েছিল যে খেলা যদি ড্রয়ের দিকে যায় তাহলে নামতে হতে পারে। সেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। তবে পেনাল্টির একটু আগে নামতে হয়েছিল আরকি।
পেনাল্টিতে দুটো সেভ করলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো। কী ভাবছিলেন ডাইভ দেওয়ার আগে?
বিপু : সত্যি বলছি আমার কোনো চিন্তাই ছিল না। হয়ে গেছে। আল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন, এখানে আমার কিছু নেই।
বিশ্বকাপ ফাইনালেও তো পেনাল্টি হয়েছিল। তা তো দেখেছেন। নিজের পেনাল্টি মুখোমুখি হওয়ার সময় ওই রকম কিছু মনে হচ্ছিল?
বিপু : না, ওরকম কিছু না। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আর মনে মনে ভাবছিলাম যে দলের জন্য কিছু করতেই হবে। আমি বলতে পারি এই দলটার মধ্যে সবচেয়ে পুরনো খেলোয়াড় কিন্তু আমি। আমি দীর্ঘদিন মোহামেডানে খেলেছি। মোহামেডান থেকে সুপার কাপ জিতেছি, স্বাধীনতা কাপ জিতেছি। তো ক্লাবের জন্য কিছু করার তাগিদটা ছিল।
পেনাল্টিতে প্রথম সেভ করার পর আপনার সাহস কি বেড়ে গিয়েছিল?
বিপু : সাহস তো বেড়েছেই। প্রথম সেভটা যখন করি তখন আমার টিম মেটরাও মানসিকভাবে এগিয়ে গেছে। এরপর আমাদের অধিনায়ক গোল করল। প্রথম গোল করা মানে মানসিকভাবে এগিয়ে থাকা। রাফায়েল কিন্তু আবাহনীর অনেক বড় ব্র্যান্ড। হতে পারে কলিনদ্রেস নামের বিচারে ভারী কিন্তু রাফায়েল এগিয়ে।
প্রথমটা তো সেভ করলেন দ্বিতীয় পেনাল্টি সেভের আগে কী ভাবনা হচ্ছিল আপনার। দ্বিতীয়টা সহজ হয় না কঠিন?
বিপু : ওটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কলিনদ্রেস একটু অপেক্ষা করছিল মারার সময় তাই আমিও ওয়েট করলাম। আর সফল হই। কলিনদ্রেসের শটটা কিন্তু যথেষ্ট পাওয়ারফুল ছিল। আমি সঠিক দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েছি। আর রাফায়েল একটু স্লো শট নেয় সবসময়। আর সবসময় একটু জার্ক করে বাঁদিকে শট নেয়, কাল নিয়েছিল ডানদিকে। আমি অপেক্ষা করায় সঠিক দিকে ডাইভ দিতে পেরেছি।
আচ্ছা আপনার পছন্দের গোলকিপার কে?
বিপু : পিওতর চেক।
বিশেষ কোনো কারণ আছে ওকে পছন্দ করার?
বিপু : ঠিক কেন সেটা বলতে পারব না। তবে ওর সেভগুলো আমার ভালো লাগে। এখন অনেক গোলরক্ষক থাকতে পারে, চেক আমার কাছে এখনো সেরা। বিশেষ করে একটা সেভ দেখেছিলাম ও মাটিতে পড়ে গিয়েও কীভাবে যেন হাত দিয়ে বল ফিরিয়েছিল। চেলসিতে থাকা অবস্থায় সম্ভবত। এছাড়া শুধু একটা না আরও অনেক সেভ করেছে সে। আর একটা ব্যাপার হলো তার ইনজুরির পরও যেভাবে সে খেলা চালিয়ে গেছে এটা আমাকে উজ্জীবিত করে। আমিও ইনজুরির পর খেলছি, ২০১৮-১৯ এ বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বসুন্ধরার সঙ্গে ফেডারেশন কাপের ম্যাচ খেলার সময় আমার হাত ভেঙেছিল। এখনো হাতে প্লেট লাগানো আছে।
নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
বিপু : আমার কোনো নিজস্ব লক্ষ্য নেই। আমি খেলে যেতে চাই। কোচরা জানেন আমাকে কোথায় খেলাবেন। জাতীয় দলে খেলার ইচ্ছা তো সবারই থাকে কিন্তু আমি সেই লক্ষ্য নিয়ে আগাতে চাই না। হলে এমনিতেই হবে।
অনেক বছর পর মোহামেডান শিরোপা জিতল। এই ধারা অব্যাহত রেখে সামনেরবার কী লক্ষ্য রাখছেন?
বিপু : গত বছর আমরা সেমিফাইনাল থেকে বাদ পড়ে গিয়েছিলাম সেখানে রেফারিংয়ের কিছু ব্যাপার ছিল আপনারা সবাই দেখেছেন। ইনশাআল্লাহ এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ফল তো আগের থেকে ভালো হচ্ছে। এটা বড় আত্মবিশ্বাসের কারণ।
দেশের ৬০টি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এতে দিনের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ আরও দুই দিন থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আজ বৃহস্পতিবার (১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, ঢাকা বিভাগের ১৩টি, খুলনার ১০টি, রাজশাহীর আটটি, বরিশালের ছয়, রংপুরের আটটি, সিলেটের চার ও ময়মনসিংহ বিভাগের চারটি জেলাসহ চট্টগ্রাম, সীতাকুণ্ড, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও ফেনী জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা বিস্তার লাভ করতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
আগামী দুই দিনে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে এবং বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।