
শ্রীলঙ্কার লিবারেশন টাইগারস অব তামিল ইলমের (এলটিটিই) প্রতিষ্ঠাতা প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ বেঁচে আছেন বলে দাবি করেছেন ভারতের তামিলনাড়ুর এক প্রবীণ রাজনীতিক। প্রায় ১৪ বছর আগে শ্রীলঙ্কার সরকার প্রভাকরণকে মৃত ঘোষণা করলেও গতকাল সোমবার তামিলনাড়ুর প্রবীণ রাজনীতিবিদ পাজা নেদুমারান দাবি করেন, এলটিটিই প্রধান জীবিত ও সুস্থ আছেন। শিগগিরই তিনি জনসমক্ষে আসবেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এলটিটিইর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন প্রভাকরণ। দ্বীপ দেশটিতে তামিল জাতিগোষ্ঠীর জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক গেরিলা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন তিনি। মুল্লিবৈকালে সেনাবাহিনীর এক অভিযানের পর ২০০৯ সালের ১৮ মে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে একটি মরদেহের কয়েকটি ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হয়। তখন অনেকেই বলেছিলেন, এসব ছবি ও ভিডিও আসল নয়, জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা। তবে কারও কারও ভাষ্য ছিল, একটি চুক্তির অংশ হিসেবে আত্মসমর্পণ করতে এলে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেই ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এনডিটিভি বলছে, ওয়ার্ল্ড তামিলস কনফেডারেশনের সভাপতি নেদুমারান গতকাল থানজাবুরে সাংবাদিকদের বলেন, এলটিটিই প্রধান প্রভাকরণ জীবিত। শিগগিরই তিনি জনসমক্ষে আসবেন। বিশ্ববাসীর কাছে এই ঘোষণা দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। তামিল ইলমের জন্য তিনি তার পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন।
এতদিন পর এমন ঘোষণার কারণ জানতে চাইলে নেদুমারান বলেন, শ্রীলঙ্কায় সিংহল গণবিক্ষোভের পর রাজাপাকসে সরকারের পতন একটি অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তার জনসমক্ষে আসার জন্য এটিই মোক্ষম সময়। অবশ্য প্রভাকরণ বর্তমানে কোথায় অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি নেদুমারান।
১৯৯১ সালের ২১ মে ভারতের দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুর শ্রীপেরুমবুদুরে এক আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন প্রভাকরণ। তার বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কায় আরও কিছু হত্যাকাণ্ডেরও অভিযোগ রয়েছে। এলটিটিই একটি নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী চূড়ান্ত অভিযান চালিয়ে এলটিটিইকে পরাজিত করে। যদিও অভিযোগ ওঠে, ওই অভিযানে ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছিল।
যদিও শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী এমন দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেছে। সেনাবহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার রবি হেরাথের বলেছেন, যে ব্যক্তির কথা বলা হচ্ছে, তিনি যে জীবিত তার কোনো প্রমাণ নেই। সুতরাং যেই রাজনীতিবিদ এমন দাবি করছেন তার কাছেই জানতে চাওয়া উচিত এমন বিবৃতির ভিত্তি ঠিক কী? তিনি বলেন, প্রভাকরণ যে মৃত তা প্রমাণ করার জন্য ডিএনএ সার্টিফিকেটসহ যাবতীয় তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। তবে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি সাবরি জানিয়েছেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের রঙিন দিন আজ। এই দিনটিতে প্রকৃতি যেভাবে সেজেছে, তেমনি বাণিজ্যিকভাবেও দিনটি ব্যবসায়ীদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এদিনটিকে সামনে রেখে জমে ওঠে নানান ব্যবসা। ফুল, চকলেট, কেক, জুয়েলারি, পোশাক, স্মার্ট ডিভাইস থেকে শুরু করে ই-কমার্স কেনাকাটা চলে বেশ কিছুদিন ধরে। কারণ বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বড় উৎসবগুলোর একটি পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস। এই দিবসে বাণিজ্যের কোনো আনুষ্ঠানিক হিসাব না থাকলেও বিভিন্ন ব্যবসায়ী খাত থেকে পাওয়া তথ্যানুসারে বাণিজ্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি হবে। প্রতি বছরই এ বাণিজ্য বাড়ছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এবং খোঁজ নিয়ে ভালোবাসা দিবস ঘিরে বাণিজ্যের এমন চিত্র পাওয়া যায়। তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ভালোবাসা দিবস ঘিরে সবকিছুর দাম বেশি। ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করে জানিয়েছেন, চেষ্টা ছিল ক্রেতাদের পছন্দের পণ্য সাশ্রয়ী দামে সরবরাহের। ডলার সংকট ও জ্বালানির দাম বাড়ার প্রভাবে বিদেশি অনেক জিনিস বেশি দামে কিনতে হয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই দাম বেশি রাখতে হচ্ছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার অর্থনীতির কঠিন সংকটের মধ্যে পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস পালিত হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ডলার সংকটে এলসি খুলতে না পারায় চাহিদা থাকলেও আমদানিকৃত অনেক উপহারসামগ্রী দেশে আনতে পারেননি। পণ্যের কাঁচামালের দাম বেশি থাকায় দেশে উৎপাদিত পণ্যের দামও বেশি। ন্যূনতম লাভ রেখে পণ্য বিক্রি করলেও গতবারের তুলনায় বেশি দাম রাখতে হয়েছে।
ব্যবসায়ী এই নেতা বলেন, ‘অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও ভালোবাসা দিবসে ভালো বাণিজ্য হচ্ছে। ভালোবাসা দিবসে ১০০ কোটি থেকে ১৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। অন্যান্য পণ্যের বিক্রিও কম নয়। সব মিলিয়ে সারা দেশে ভালোবাসা দিবস ঘিরে বাণিজ্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি হবে। এই বাণিজ্য সংকটে থাকা আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রায় প্রতি বছরই পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসে রমরমা বাণিজ্য হয়। বিভিন্নভাবে জানা যায়, শুধু ফুল বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা। এ দিবসে উপহারসামগ্রী দেওয়া একটা সাধারণ বিষয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য আয়োজন তো আছেই। সবকিছু নিয়েই ভালো বাণিজ্য হয় ভালোবাসা দিবস ঘিরে।
নব্বইয়ের দশকে এ দেশে ভালোবাসা দিবসের উদযাপন শুরু হয়। প্রতি বছরই এ দিবস উদযাপনের ব্যাপকতা বেড়েছে। প্রথম দিকে দেশে ভালোবাসা দিবস উদযাপনে ফুল দেওয়া-নেওয়ায় সীমাবদ্ধ ছিল। এরপর ধীরে ধীরে উপহার দেওয়া, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়া-দাওয়া হয়। বছর দশেক ফুল, উপহার দেওয়া-নেওয়া, হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাওয়ার পাশাপাশি ভালোবাসা দিবস উদযাপন উপলক্ষে কিছুটা নিরিবিলি জায়গায় ঘুরতে যাওয়া শুরু হয়।
ফুল বিক্রি : ভালোবাসা দিবসে সবচেয়ে চাহিদা বাড়ে ফুলের। ফুল ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার্স সোসাইটির (বিএফএস) তথ্যানুসারে, ভালোবাসা দিবসে গোলাপের চাহিদা অন্তত ৫০ লাখ। গত বছর বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যেও ভালোবাসা দিবস ও পহেলা ফাল্গুনে ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছিল। এবার ব্যবসা আরও বাড়বে বলে দাবি করা হয়েছে। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে শুধু গদখালী এলাকায় প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে।
প্রতি বছরই ভালোবাসা দিবস ঘিরে ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে ও প্রিয়জনকে ভালোবাসা জানাতে ফুলের কদর বাড়ছে। রাজধানীর অন্যতম বড় ফুলের বাজার শাহবাগের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবার এই বাজারে ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকার মতো ব্যবসা হবে বলে আশা তাদের।
হোটেল-রেস্তোরাঁ : এবারের ভালোবাসা দিবসে সাধারণ রেস্তোরাঁ থেকে রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোতেও রয়েছে বিশেষ আয়োজন। বাড়তি কাস্টমার সামলাতে অনেকে শুধু এ দিবসের জন্য বাড়তি কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। রান্নার জন্য আগেই সব কেনাকাটা করে রেখেছে।
আরজি এস রেস্তোরাঁর মালিক আহনাফ জুবায়ের দেশ রূপান্তকে বলেন, ‘অন্য সময়ে বেলা ১১টায় রেস্তোরাঁ খুললেও ভালোবাসা দিবসে সকাল ৭টায় খোলা হবে। স্বাভাবিক সময়ে যেসব খাবার দেওয়া হয়, এদিন আরও নতুন নতুন পদ থাকবে। দাম অন্য সময়ের তুলনায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি। কারণ অন্য সময়ের তুলনায় মাংস, মুরগি, সবজি থেকে মসলাসহ সবকিছু বেশি দামে কিনতে হয়েছে। তাই ন্যূনতম লাভ রাখলেও অন্য বারের তুলনায় দাম বাড়বে।’
পাঁচতারকা হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন, ঢাকা রিজেন্সি, রেনেসন্স হোটেল, সিক্স সিজনস, আমারি, ইন্টারকন্টিনেন্টাল, সারিনা, লা মেরিডিয়ানসহ বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরের নামী হোটেলে আগেই ভালোবাসা দিবস ঘিরে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
এসব হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যালকনি বার সাজিয়েছে বিভিন্ন প্যাকেজে। পুল ক্যাফেতে দুপুরে ও রাতে জনপ্রতি তিন থেকে চার হাজার টাকার প্যাকেজ রয়েছে। নির্দিষ্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীরা পাবেন একটির সঙ্গে আরেকটি বিনা মূল্যে। ১৩, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ১০ হাজার টাকায় দম্পতিদের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে, সঙ্গে বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে সকালের নাশতা। ভালোবাসা দিবসে রেস্তোরাঁয় বুফে দুপুরের খাবার ৪ হাজার ৭৫০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা, বুফে রাতের খাবার ৬ হাজার ৪৯০ টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা জনপ্রতি। র্যাফেল ড্রর আয়োজন রয়েছে। ভাগ্যবান বিজয়ী পাবেন সোনা, গহনা, হীরার আংটি, বিদেশ ভ্রদণের টিকিট। ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি ডিলাক্স রুমের ভাড়া পড়বে ১৪ হাজার ২১৪ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা।
রিসোর্ট : অন্য সময়ে রাজধানীর আশপাশের এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন রিসোর্টে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একজনের জন্য খরচ করতে হতো ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। ভলোবাসা দিবস উপলক্ষে খরচ ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বেশি। রিসোর্টগুলোতে থাকছে সাইকেলে চড়া, নৌকায় ঘোরা, সুইমিংপুলে গোসল, দুপুরের খাবার, সকাল ও সন্ধ্যায় হালকা নাশতা। রাতে থাকতে হলে সাধারণ রিসোর্টগুলো একটি দম্পতিকে দিতে হবে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে থাকা, খাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক কাজে অংশ নেওয়া যাবে। রাজধানীর আশপাশে ব্র্যাক সিডিএম, সারা, রূপকথা, শীতলক্ষ্যা, কুঠিরসহ বিভিন্ন রিসোর্ট রয়েছে। খরচ প্রায় একই ধরনের।
পোশাক : ভালোবাসা দিবসে ও পহেলা ফাল্গুনে নানা রঙের জামাকাপড় কেনার হিড়িক পড়েছে। পোশাকে হলুদ, বাসন্তী, কমলা, লাল রঙের প্রাধান্য থাকছে বেশি। ফ্যাশন হাউসের দাপট বেশি। ফ্যাশন হাউসগুলো নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক নিয়ে এসেছে। শাড়ি, ফতুয়া, পাঞ্জাবি বেশি বিক্রি হয়েছে। দাম ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার-৭ হাজার টাকা বা তার বেশি।
ই-কমার্স : ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে অনলাইন কেনাকাটা বেড়েছে কয়েকগুণ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি ই-কমার্স পণ্য ডেলিভারির অর্ডার পেয়েছে। শহরে এসব পণ্যের অর্ডার বেশি। তবে অন্যবারের তুলনায় এবারে বিভাগীয় ও জেলা শহর থেকেও অর্ডার এসেছে। পণ্যের অর্ডার বেশি থাকায় ভ্যালেন্টাইনস ডে উপলক্ষে শুক্রবারও পণ্য ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে।
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অনলাইন ফ্লেবারের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা রাতুল মোয়াজ্জেম দেশ রূপান্তকে বলেন, ‘আগের চেয়ে ভালোবাসা দিবসের ব্যাপকতা বেড়েছে। তাই উপহারসামগ্রীর দেওয়ার হার বেশি।’
‘আহা আজি এ বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়।’ বই, বসন্ত, ভালোবাসা উৎসবের তিন রসায়নে চারিদিন রঙিন। হলুদ শাড়ির সঙ্গে খোঁপায় হলুদ গাঁদা ফুল হাতে রঙিন চুড়ি। বাসন্তি বসনে যেমন নারীরা তেমনি পুরুষরাও হলুদ, লাল পাঞ্জাবিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন মেলায়। পছন্দের লেখকের বই কিনেছেন তারা। একে অপরের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন। প্রিয় মানুষকে বই উপহার দিয়েছেন। সব মিলিয়ে গতকাল সোমবার বইমেলা ছিল বাসন্তি রঙা।
আজ বসন্ত হলেও আগের নিয়ম মেনে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে বের হয় বসন্ত শোভাযাত্রা। এ ছাড়াও পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসই ছিল বসন্তের রঙে রঙিন। সকাল থেকে তরুণ তরুণীদের উপস্থিতি ছিল ক্যাম্পাসে। দুপুর ৩টায় বইমেলার দুয়ার খুললে তারুণ্যের ঢল নামে তাতে। ধীরে ধীরে মেলায় বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উভয় অংশ কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় প্রবেশ করতে টিএসসি, বাংলা একাডেমি গেট, দোয়েল চত্বরসহ সব পথেই ছিল দীর্ঘ লাইন। শুধু দর্শনার্থীরাই নয়, হলুদ রঙে নিজেদের রাঙিয়ে তুলেছিলেন স্টলগুলোর বিক্রয়কর্মীরাও। উপচে পড়া ভিড়ের দিনে বই বিক্রিও ছিল চোখে পড়ার মতো। কথা হয় শ্রাবণ প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে। তারা জানান, বিক্রি ভালো। তবে এ দিন বিক্রি বেশি হয়েছে প্রেমের কবিতা ও উপন্যাসের বই।
মেলায় ঘুরতে আসা ডেমরার সামছুল হক খান স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেহজাবিন চিঠি দেশ রূপান্তরকে বলেন, মেলায় এসে খুবই ভালো লাগছে। যদিও অনেক ভিড় আজকে, তারপরও হলুদের সমারোহে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। নতুন কয়েকটি বই কিনেছি, আরও কয়েকটি কিনব।
নতুন বই : গতকাল সোমবার ছিল অমর একুশে বইমেলার ১৩তম দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। নতুন বই এসেছে ১০৫টি।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হারিসুল হক এবং অপূর্ব শর্মা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আবেদ খান।
প্রাবন্ধিক বলেন, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী দীর্ঘজীবী কর্মবীর ব্যক্তিত্ব। তার প্রধান পরিচয় সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে। উভয় ক্ষেত্রে তার হাতে ছিল কলম, যা অপূর্ব আলোর ঝলকানিতে জ্বলে উঠেছিল বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের পর। আবেগ ও উপলব্ধির মিশেল ঘটিয়ে তিনি এমন এক কবিতা লিখেছিলেন যা ছুঁয়ে গিয়েছিল জাতির অন্তর, আলতাফ মাহমুদের সুরে একুশের প্রভাতফেরিতে গীত হয়ে জুগিয়েছিল জাগরণের বাণীমন্ত্র। সেই থেকে তার কলম নানা সন্ধিক্ষণে সমাজের চিন্তাকে প্রভাবিত করেছে, মানুষকে আলোড়িত করেছে, বাঙালিকে করেছে জাতিচেতনায় সংহত।
আলোচকবৃন্দ বলেন, বাঙালির ভাষা আন্দোলন নিয়ে বহু গান রচিত হলেও সাংবাদিক, কবি, কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী রচিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি সকল বাঙালির মনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছে।
পেশাগত জীবনে সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী প্রাণের আনন্দ খুঁজে পেয়েছিলেন লেখালেখিতে। আজীবন তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করেছেন এবং অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন।
সভাপতির বক্তব্যে আবেদ খান বলেন, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর জীবন ও কর্ম অনেক বিস্তৃত। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতের মহীরুহদের একজন। যে আদর্শ ও সৃজনশীলতা নিয়ে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী সাংবাদিকতা করেছেন তা আমাদের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে।
আজ লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন শাহনাজ মুন্নী, তসিকুল ইসলাম, দন্ত্যস রওশন এবং মামুন রশীদ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন শাহনাজ মুন্নী, ওবায়েদ আকাশ, সাকিরা পারভীন, হানিফ খান এবং জিললুর রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী নাসিমা খান বকুল এবং জয়ন্ত রায়। এ ছাড়াও ছিল ঝর্ণা আলমগীরের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’, সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ঝুম্পার পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘জলতরঙ্গ ডান্স কোম্পানি’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন মো. খালেদ মাহমুদ মুন্না, অনন্যা আচার্য্য, কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়, মো. রেজওয়ানুল হক, ফারহানা শিরিন, শরণ বড়ুয়া এবং নাসিমা শাহীন ফ্যান্সী। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন সৌমিত্র মুখার্জি (তবলা), সুমন রেজা খান (কি-বোর্ড), অমিত দাস (গিটার) এবং মনির হোসেন (অক্টোপ্যাড)।
আজকের সময়সূচি : আজ ১ ফাল্গুন ১৪২৯/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ মঙ্গলবার। অমর একুশে বইমেলার ১৪তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ এবং বিদেশি সাহিত্যের বাংলা অনুবাদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জি এইচ হাবীব এবং শামসুদ্দিন চৌধুরী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন সম্পদ বড়–য়া, রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক মো. আবু জাফর এবং মাহবুবা রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন ফকরুল আলম।
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মো. মিজানুর রহমান মিদুল। পড়ছেন বাংলা বিভাগে। বইমেলায় পছন্দের লেখকের বই সংগ্রহ করতে এসেছেন। জানতে চাইলে মিদুল বলেন, মেলায় প্রতি বছরই আসি বন্ধু, পরিবারের সদস্যসহ নানান সামাজিক গ্রুপের সঙ্গে।
গতকাল সন্ধ্যায় অমর একুশে বইমেলার ১৩তম দিনে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে আলাপ হলে তিনি বলেন, মেলায় তরুণ লেখকদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ থাকে, গল্প-উপন্যাস বেশি পড়ি। বরাবরের মতো এবারও উপন্যাস, থ্রিলার, সাহিত্য বগলদাবা করতে চাই।
মেলায় কীসের অভাব বোধ করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার দৃষ্টিতে মেলায় একটি জিনিস মিস করি তা হলো একটি রিডিং স্পট। মেলায় একটা বিশাল জায়গায় যদি কিছু বেঞ্চ থাকত পাঠকরা বসে বই পড়ত। রিডিং স্পট থাকলে মেলার আয়োজন আরও অনেক ভালো হতো।
মেলার সজ্জা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এবারের মেলা অনেক ভালো লাগছে। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার মেলার পরিধি কম। স্টলসংখ্যা বেশি। প্যাভিলিয়নগুলোর সাজসজ্জা এবার দারুণ। নিরাপত্তাব্যবস্থা ভালো। ওভার অল ভালোই লাগছে।
বইয়ের দাম নিয়ে একটা চাপা ক্ষোভ নিয়ে মিদুল বলেন, এবার অন্তত বইয়ের দাম নাগালের বাইরে। ছাত্রদের জন্য বই কেনাটা অনেক টাফ একটা বিষয়।
কোন ধরনের লেখা পড়তে চান জানতে চাইলে বলেন, শিক্ষণীয় বই চাই। উপন্যাস-গল্প পড়তে চাই। যে উপন্যাস-গল্প পড়ে একটি সুন্দর স্বাধীন পরিচ্ছন্ন, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।
শাহাব আহমেদ পেশায় শিশু চিকিৎসক। তবে নেশা তার লেখালেখি। সুদূর মার্কিন মুলুকে যান্ত্রিক জীবনের অবসরে নেশায় বুঁদ হয়ে লেখেন আপন মনে। লেখালেখির অভ্যেসটা সেই ছাত্রজীবন থেকে। বিক্রমপুরে জন্ম। জীবনের প্রথম ১০ বছর কেটেছে গ্রাম ও পদ্মার নির্জন প্রতিবেশে; যেখানে জেলে, কুমার, কৃষক, ঋষি, বেলদার, বেদে ও চরবাসীদের জীবন নিবিড়ভাবে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। তার পরে বেড়ে ওঠেন শীতলক্ষ্যা পাড়ের নারায়ণগঞ্জ শহরে। ঢাকায় কলেজ জীবন শেষে পাড়ি জমান তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে। তার পরের দীর্ঘ ১৪ বছর কেটেছে সেখানেই। এরপর কানাডা হয়ে বিগত ২২ বছর আছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
শাহাব আহমেদের পাঠকশ্রেণি কারা? জানতে চাইলে লেখক বলেন, ‘আমি লিখি তাদের জন্য, যারা তুলনামূলকভাবে সিরিয়াস লেখা পড়তে আগ্রহী। কারণ আমার লেখায় জন-জীবনের কাহিনীর সঙ্গে জড়াজড়ি করে আসে ইতিহাস, রাজনীতি, পৌরাণিক ঘটনা, মিথিক্যাল চরিত্র, উপকথা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিবরণ। পাঠক মানসিকভাবে অপ্রস্তুত থাকলে এই ধারার লেখা তাদের কাছে সহজবোধ্য নাও হতে পারে, যদিও আমি চেষ্টা করি সহজ ও সাবলীল ভাষায় লিখতে।’
অনেক আগে থেকেই লেখালেখি শুরু হলেও পেশাগত ব্যস্ততায় নিজের লেখাগুলো মলাটবদ্ধ করা হয়নি খুব একটা। ২০০৬ সালে প্রকাশিত তার প্রথম বই ‘লেনিনগ্রাদের চিঠি’। সেই থেকে প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা সর্বমোট ১০টি। এর মধ্যেই তার গ্রন্থগুলো পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। নিভৃতচারী এই লেখকের এবারের অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত উপন্যাস ‘ধুতুরা জোছনার দিন’। যেখানে তিনি বিক্রমপুরের জন-জীবনকে ফুটিয়ে তুলেছেন একজন কিশোরের চোখ দিয়ে। এর ভাষায় রয়েছে পদ্মার জল আর পলি-কাদায় মেশানো-মাখানো অদ্ভুত কোমল নেশাধরা এক টান। আর এর বাঁকে বাঁকে প্রবহমান সময় ও জীবন। এ প্রসঙ্গে লেখক বলেন, ‘পাঠক এই উপন্যাসে বাংলাদেশের মানুষ, প্রকৃতি, খাল-বিল, নদী-নালা, ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক উত্তরাধিকারের পাশাপাশি এ দেশের রূপ, রস ও সোঁদা মাটির গন্ধের সন্ধান পাবেন।’
লেখকের এই বই থেকে তুলে আনা কয়েকটি বাক্যে তার ভাষার সৌকর্যের দৃষ্টান্ত মিলবে ‘দেখি নদীর পাড়ে আছড়ে পড়া ঢেউ আর স্রোত, তুমুল ঘূর্ণাবর্ত এবং গহিনের অন্তস্তল থেকে উঠে আসা বুদবুদের বাহার। হ্যাঁ, তারা জন্ম নেয়, পর মুহূর্তেই আবার অসীমে মিলিয়ে যায়। কেউ কোথাও নেই, বাতাসে মাথা নাড়ছে একগুচ্ছ শ্বেতদ্রোণ ফুল, দাঁতরাঙা পাতায় চিকচিক করছে বিন্দু বিন্দু শিশির এবং নিশিন্দার ঝোপে গুটি গুটি পা ফেলে হাঁটছে অপরূপ কিশোরী রোদ।’
কিংবা
‘মগ্নচৈতন্যে পদ্মা সতত বয় সৌষ্ঠবময়, স্বচ্ছ আকাশগঙ্গার সখী সে সমান্তরাল! শৈশবের দিনগুলো জোছনার দিন, কিন্তু জোছনার বিবরে অন্ধকার। আমি সেখানে হাঁটি, ধুতুরার বিষ আর বিষ থাকে না, অনাবিল সৌন্দর্যের হাসিমুখ হয়ে যায়। পৃথিবীর দিকে তাকাই দেখি নিরন্তর হাঁটছে ধুতুরা জোছনায় একাকার দিন।’
দীর্ঘদিন সোভিয়েত ইউনিয়নে বসবাস করার বিচিত্র ও সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি লিখেছেন দ্বৈত ভ্রমণ উপন্যাস ‘লেনিনগ্রাদ থেকে ককেশিয়া’ ও ‘ককেশিয়ার দিনরাত্রি’। যেখানে একজন বাঙালি ছাত্র শিশিরের রুশ নারী নাতালিয়ার প্রতি ভালোবাসার কাহিনীর ফাঁকে ফাঁকে এসেছে বিপ্লব-পূর্ব রাশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসের বাঁক ফেরানো ঘটনাবলি। সে দেশের কবি-সাহিত্যিক ও অন্যান্য মননশীল মানুষের ওপরে নিপীড়ন, নির্যাতনের পাশাপাশি সেখানকার জন-জীবনের চিত্র। বই দু’টি ২০২০ সালে শব্দঘর সাহিত্য পত্রিকার বর্ষসেরা ভ্রমণ সাহিত্য হিসেবে পুরস্কৃত হয়।
লেখকের ‘যত্র বয় কুরা নদী’ গ্রন্থে রয়েছে স্ট্যালিনের দেশ জর্জিয়ার অনবদ্য গল্প। এছাড়াও তিনি লিখেছেন ‘দশজন দিগম্বর একজন সাধক’ এবং ‘হিজল ও দ্রৌপদী মন’ নামে দুটি গল্পগ্রন্থ। বাংলা সাহিত্যে ব্যতিক্রমধর্মী লেখা ইবষষব’ং খবঃঃবৎং নিয়ে প্রকাশিত বই ‘তিথোনসের তানপুরা’ পাঠক মহলে ব্যাপক সমাদৃত।
শাহাব আহমেদের সবক’টি বই সারা বছর পাওয়া যায় রকমারিডটকমে। এছাড়া অমর একুশে বইমেলায় ‘ধুতুরা জোছনার দিন’ পাওয়া যাচ্ছে বিদ্যাপ্রকাশে।
মানিকগঞ্জের সিংগাইর পৌরসভার সাবেক মেয়র খোরশেদ আলম ভূইয়ার বিরুদ্ধে সরকারি রাস্তা কেটে সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে একটি পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী সিরাজুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার, থানা ও বর্তমান মেয়রের কার্যালয়ে ধরনা দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে। যদিও পৌর বিএনপির বর্তমান সভাপতি ও দুই বারের সাবেক মেয়র খোরশেদ আলমের ভাষ্য, রাস্তার পাশে থাকা নিজের জমির মাটি কেটেই বেড়া দিয়েছেন তিনি।
গতকাল সোমবার পৌর এলাকার বিনোদপুর মহল্লায় গিয়ে দেখা যায়, সিরাজুল ইসলামের টিনের বাড়ির পাশের রাস্তা থেকে মাটি কেটে ফেলা হয়েছে। ভেঙে ফেলা হয়েছে বাড়িটির সীমানা প্রাচীরও।রাস্তার পাশে দেওয়া হয়ে কাঁটাতারের বেড়া। ওই বাড়িতে যারা থাকেন তারা সরাসরি রাস্তায় যাওয়া-আসা করতে পারছেন না।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর আগে এখানে ২০ শতাংশ জমি কিনে টিনের ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিই। পরবর্তী সময়ে পৌরসভা থেকে প্ল্যান অনুমোদন নিয়ে বিল্ডিংয়ের কাজ শুরু করলে সাবেক মেয়র বাধা দেন। অজ্ঞাত কারণে গত ২৮ জানুয়ারি তিনি শতাধিক লোকজন ও ভেকু (এস্কেভেটর) দিয়ে আমার বাড়ির সামনে সরকারি রাস্তা কেটে ফেলেন ও বাড়ির সীমানা প্রাচীর গুঁড়িয়ে দেন। পরে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে রুদ্ধ করে দেওয়া হয় বাড়িতে যাতায়াতের পথও। তার দাবি, শুধু রাস্তা বন্ধ করে দিয়েই থেমে যাননি তিনি। কেটে দেওয়া হয়েছে তার বাড়ির বিদ্যুতের লাইনটিও। অথচ এসব অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন জায়গার ধরনা দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।
সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রশাসনের লোকজন উল্টো আমাকেই শাসায়। সরকারদলীয় লোকজন তাকে প্রশ্রয় দেওয়ায় আমি বিচার পাচ্ছি না।
তবে অভিযুক্ত খোরশেদ আলম ভূইয়া বলেন, সরকারি রাস্তার উত্তর পাশে আমার ১০ শতাংশ জমি রয়েছে। আমার জায়গাতেই আমি মাটি কেটে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছি।
সিংগাইর পৌরসভার মেয়র আবু নাঈম মো. বাশার বলেন, প্রত্যেক নাগরিকের সরকারি রাস্তা দিয়ে চলাচলের অধিকার রয়েছে। সাবেক মেয়রের এমন কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাই।
মানিকগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সিংগাইর জোনাল অফিসের ডিজিএম সফিকুল ইসলাম বলেন, ওই জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে মিটার উল্টে ছিলÑ এমন সংবাদের ভিত্তিতে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে সাবেক মেয়রের অভিযোগের ভিত্তিতে সংযোগ দেওয়া হয়নি। স্থানীয়ভাবে নিষ্পত্তির কথা বলা হয়েছে।
সিংগাইর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিপন দেবনাথ বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। রাস্তার ঢাল কেটে ও কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সাবেক মেয়র যে কাজটি করেছেন সেটা অবশ্যই দৃষ্টিকটু। আমি তাকে বেড়া সরিয়ে দিতে বলেছি।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলছেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন হামলা করে। ওই সময় গুলি ও ককটেলে অন্তত পাঁচজন আহত হন।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থীর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল নিয়ে তার নির্বাচনী কার্যালয়ে গুলিবর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অন্তত ১৫ নেতাকর্মীকে আহত করেছে।
সংঘর্ষের পর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষুব্ধরা। পরে রাত সাড়ে ১০টায় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আগামী ১২ জুন তারাকান্দা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চার প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফজলুল হক, বিদ্রোহী প্রার্থী এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক নুরুজ্জামান সরকার, জাতীয় পার্টির এম এ মাসুদ তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের রফিকুল ইসলাম মণ্ডল।
বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উপজেলা সদর বাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান করছিল। রাত ৮টার দিকে তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে উপজেলা সদরে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয়ের কাছে যেতেই ককটেল ও গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা।
স্থানীরা জানান, এ সময় চারদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় আহতদের উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে আহতদের কারো নাম সংগ্রহ করা যায়নি।
এদিকে ঘটনার পরপর ময়মনসিংহ-শেরপুর সড়কের তারাকান্দার মধুপুর বাজার এলাকায় সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিদ্রোহী প্রার্থী নুরুজ্জামানের সর্মথকরা। সড়কের দুই পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশ রাত সাড়ে ১০টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
নুরুজ্জামান সরকার বলেন, আমার নেতাকর্মীরা নির্বাচনী কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ককটেল, দেশীয় অস্ত্র ও নাইট শুটারগান দিয়ে আমাকে মারার জন্য হামলা করে। অন্তত ১৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফজলুল হক দাবি করেন, তারাকান্দা উত্তর বাজার থেকে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করলে সেই মিছিলে অতর্কিতে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গুলিবর্ষণ করে হামলা করে বিদ্রোহী প্রার্থীর লোকজন। এ সময় তার অন্তত পাঁচ নেতাকর্মী আহত হন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, তারাকান্দা থেকে গুলিবিদ্ধসহ আটজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তারা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তারাকান্দা থানার ওসি মো. আবুল খায়ের বলেন, সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছে এমন তথ্য আছে আমাদের কাছে। ককটেল বিস্ফোরণ হয়েছে সত্য কিন্তু গুলির বিষয়টি যাচাই করতে হবে। ঘটনার পর সড়ক অবরোধ করলে পরিস্থিতি শান্ত করে সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ঘটনাস্থলসহ আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১১ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এ খাতে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ১২ হাজার ৬৯৬ হাজার কোটি টাকা বেশি।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রস্তাব করেন। সামাজিক সুরক্ষা খাতে প্রস্তাবিত এ বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫২ শতাংশ।
এ খাতে বয়স্ক ভাতাভোগীর সংখ্যা ১ লাখ এবং মাসিক ভাতার হার ১০০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরের হিসাবে এ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫৭ লাখ ১ হাজার। আর মাসিক ভাতা ৫০০ টাকা।
বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারী ভাতাভোগীর সংখ্যাও ১ লাখ বাড়িয়ে ২৫ লাখ ৭৫ হাজার এবং মাসিক ভাতা ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৫৫০ টাকা করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার বাড়িয়ে ২৯ লাখ প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মাসিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ১৫০ টাকা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৯০০ ও ৯৫০ টাকা এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০ টাকা বাড়িয়ে ৯৫০ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
প্রস্তাবিত বাজেটে হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬৫ বাড়িয়ে ৬ হাজার ৮৮০ করা হচ্ছে। এ জনগোষ্ঠীর বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৩ হাজার ২০ বাড়িয়ে ৫ হাজার ৬২০ করা হচ্ছে।
অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ হাজার ৯৩০ বাড়ানো হয়েছে এবং বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৯ হাজার ৫০ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ৪ হাজার ৩৮০ জন বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সামাজিক সুরক্ষা আরও রয়েছে মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি। এতে উপকারভোগীর সংখ্যা ৫০ হাজার বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াও অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কার্যক্রমে উপকারভোগীর ভাতার হার দৈনিক ২০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
আগামী অর্থবছর থেকে সর্বজনীন পেনশন চালুর কথা জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন পাস হয়েছে। আশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা সম্ভব হবে। শিগগির একটি পেনশন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে এবং জনবল নিয়োগের মাধ্যমে এ কর্তৃপক্ষকে কার্যকর করা হবে।’
অর্থমন্ত্রী জানান, প্রস্তাবিত স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের অধিক বয়স্ক সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর পর্যন্ত চাঁদা দেওয়ার মাধ্যমে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।