
আদালত অবমাননার রুল দেওয়ার পরও এফিডেভিট (হলফনামা) করে এর জবাব না দেওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতি (ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার) সভাপতিসহ তিন আইনজীবীর প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে সেখানে আইনজীবীদের আদালত বর্জন কর্মসূচি এবং আইনজীবীরা বিচারপ্রার্থীদের হুমকি দিয়ে বের করে দেওয়ার ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীরা শক্তি প্রয়োগ করে দেশের লিগ্যাল ইতিহাসে কালো দাগ সৃষ্টি করেছেন। রুলের জবাব না দিলে আদালত অবমাননার এ মামলা আনকন্টেস্টে (একতরফা) আদেশ হবে বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট।
বিচারক ও আইনজীবীদের টানাপড়েনের জের ধরে এক মাসের বেশি সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে অস্থিরতা চলছে। এর মধ্যে কয়েক ধাপে আদালত বর্জন কর্মসূচি পালন করেছেন আইনজীবীরা। সম্প্রতি আইনজীবীদের আদালত বর্জনের কারণে সেখানকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ আসামিরা নিজেরাই মামলার শুনানি করেন। গতকাল মঙ্গলবার থেকে জেলা ও দায়রা আদালতে বিচারকাজ চললেও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ বর্জন কর্মসূচি অ্যব্যাহত রেখেছেন আইনজীবীরা।
গত ২ জানুয়ারি জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ ফারুক ও আদালতের কর্মচারীদের সঙ্গে আইনজীবীদের অশালীন আচরণ, গালাগাল, হুমকি ও এজলাসে হট্টগোলের অভিযোগ আসে সুপ্রিম কোর্টে। প্রধান বিচারপতি অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টকে বলেন। এরপর ৫ জানুয়ারি এক আদেশে জেলা বারের সভাপতি মো. তানভীর ভূঞাসহ তিন আইনজীবীকে তলব করে কেন তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে রুল দেয় হাইকোর্ট। ১৭ জানুয়ারি শুনানি নিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি (গতকাল) আবারও তিন আইনজীবীকে হাজির হতে নির্দেশ দেয় আদালত। এর ধারাবাহিকতায় বিষয়টি শুনানিতে আসে।
গতকাল তাদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির, সম্পাদক আবদুন নূর দুলাল ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
শুনানিকালে অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন ফকির হাইকোর্টকে বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার ও আদালতের বিষয়টি শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে এগোচ্ছে। আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আদালত তখন উষ্মা প্রকাশ করে বলে, ‘সমাধান কিছুই হয়নি। আমরা সবই দেখছি। এটার কনসিকোয়েন্স (পরিণতি) কিন্তু সবাইকে ভোগ করতে হবে।’
আদালত আরও বলে, ‘এক মাস হয়ে গেছে। রুলের জবাবে এফিডেভিট দেননি। দিলে দেন, না দিলে না দেন। তবে যদি জবাব না দেন তাহলে এ মামলা একতরফা নিষ্পত্তি হয়ে যাবে। আমরা আমাদের মতো এগোব।’
হাইকোর্ট বলে, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া বার (আইনজীবী সমিতি) দেশের আইনজীবী সমাজে কলঙ্কের সৃষ্টি করেছে। আদালতের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অচল করে রেখেছে। কোর্ট বর্জন করেছে, বিচারপ্রার্থীরা গেলে তাদের হুমকি দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। বারের প্রেসিডেন্ট হোন আর যেই হোন, কেউই কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে নয়। বার কাউন্সিল কিছু না করলে আমরা এখান থেকেই সিদ্ধান্ত নেব। এ আইনজীবীরা কোর্টে প্র্যাকটিস করার যোগ্য কি না সেটাও আমরা দেখব।’
শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি পরিস্থিতির উন্নতিতে এক মাস সময়ের আরজি জানালে হাইকোর্ট আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী তুষার কান্তি রায় দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আইনজীবীদের ভূমিকা এবং এক মাসের বেশি সময় পার হলেও আদালত অবমাননার রুলের জবাব না দেওয়ার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। ২৬ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী শুনানির তারিখ রেখে তাদের ওইদিন আবারও আদালতে হাজির থাকতে বলেছেন হাইকোর্ট।’
অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা আগামী ধার্য তারিখের আগেই রুলের জবাব দেব।’
কোনো কাজই হয়নি। কিন্তু সময় গুনে গুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। মেয়াদ শেষে এবার প্রকল্পটির সংশোধনীর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। কাজ শেষ করার জন্য ব্যয় কিছুটা কমিয়ে সময় আরও দেড় বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। দুই পৌরসভার ব্যয় এক পৌরসভাতেই করতে চায় সংস্থাটি। তাই প্রকল্পের ব্যয় কিছুটা কমিয়ে অনুমোদন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।
প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছিল সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও কুলাউড়া পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য। ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৪৬ কোটি টাকা। কিন্তু ২০২০ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জমি অধিগ্রহণ করতে না পারার অজুহাতে কোনো কাজই করেনি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। তবে এ সংশোধনীতে গোলাপগঞ্জ পৌরসভাকে বাদ দিলেও নামমাত্র ২৭ লাখ টাকা ব্যয় কমিয়েছে সংস্থাটি। বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুই পৌরসভার জন্য নেওয়া প্রকল্পের ব্যয় শুধু এক পৌরসভাতেই খরচের আবদার করা হয়েছে এ সংশোধনীতে।
জমি অধিগ্রহণের জটিলতা ছিল শুধু গোলাপগঞ্জ পৌরসভায়। কুলাউড়া পৌরসভায় এ জটিলতা না থাকলেও কোনো কাজই করেননি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এর কোনো স্পষ্ট জবাবও দিতে পারেননি প্রকল্প পরিচালক। তবে পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, প্রকল্পটি নিয়ে তাদেরও অসন্তোষ রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান দেশ রূপান্তরকে জানান, আমি দুই পৌরসভার প্রাক্কলিত ব্যয় এক পৌরসভায় অনুমোদনের বিপক্ষে। তবে সব পক্ষের সম্মানের ভিত্তিতে এক পৌরসভা অর্থাৎ কুলাউড়ার জন্য ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্তে এসেছে কমিশন।
জমি জটিলতা নিয়ে এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, এর আগে ২০০ পৌরসভার উন্নয়নের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছিল। এ দুই পৌরসভা তারই অংশ। কিন্তু এ পৌরসভায় জায়গাটা কার তা নিয়ে সমস্যা ছিল। সেখানে নতুন মেয়র আসায় উনি জমি দিতে রাজি হননি। তিনি বলেন, এ প্রকল্পের সমস্যা হলো তারা প্রকল্পে পানির সংকট মেটানোর জন্য পৌরসভা থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরের নদী থেকে পানি আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সেখানে পানি থাকে বড়জোর ৬ থেকে ৭ মাস।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুই পৌরসভার উন্নয়নে মোট ৩০টির মতো খাত যুক্ত থাকলেও কাজ হয়েছে মাত্র তিনটি খাতের। তার মধ্যে নিজেদের পণ্য ও সেবার ব্যবহার শীর্ষক খাতে ৪৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের স্থানে প্রায় ১৩ লাখ টাকা ব্যয় করেছে তারা। আর দ্বিতীয় কাজটি হলো চারটি পাবলিক টয়লেট নির্মাণ। এ কাজটি শেষ করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল। এতে প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে ৬ লাখ টাকা কমে ৬২ লাখ টাকায় কাজ শেষ করা হয়েছে। তৃতীয়ত, এক কিলোমিটারের সেকেন্ডারি আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করেছে সংস্থাটি, ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা। যদিও প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ কোটি টাকা।
মাত্র তিন খাতে ২ কোটি ২৮ লাখ টাকার কাজ শেষ করেই মেয়াদ শেষ করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। সংশোধিত প্রকল্পটিতে অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পরিকল্পনা কমিশন। যেমন, যেখানে তারা ১ কিলোমিটারের আরসিসি ড্রেন বানাতে খরচ হয়েছে দেড় কোটি টাকা, সংশোধনী প্রস্তাবে নতুন করে ৫ কিলোমিটারের একই কাজের জন্য ১০ কোটির প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথম ডিপিপিতে না থাকলেও সংশোধনীতে কেন যুক্ত করা হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।
প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব বিশ্লেষণে দেখা যায়, এতে মূল প্রকল্প প্রস্তাবে ১ হাজার ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগসহ খরচ ধরা হয়েছিল দেড় কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধনীতে ২ হাজার ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগসহ ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। ঘরের সংখ্যা এক হাজার বাড়লেও টাকার অঙ্ক কমেছে ২২ লাখ টাকা!
শুধু তাই নয়, মূল ডিপিপিতে নলকূপ, উৎপাদক নলকূপ ও সাব-মার্সিবল পাম্পসহ গভীর নলকূপ, ওভারহেড ট্যাংক স্থাপনের বিষয়টি উল্লেখ না থাকলেও দ্বিতীয় সংশোধনীতে তা উল্লেখ করায় প্রশ্ন তুলেছে কমিশন।
জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলের সিলেট সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শেখ সাদী রহমতুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে জানান, মন্ত্রণালয়ের পিএসসি বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছিলেন এক মাসের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ করতে পারবেন কিনা, কিন্তু এক মাসের মধ্যে ওই জমি পৌরসভার নামে নিবন্ধন করে দিতে পারেননি। পরে এ পৌরসভাকে বাদ দিয়েছে পিএসসি। দুই পৌরসভার ব্যয় এক পৌরসভায় প্রস্তাব করার যৌক্তিকতা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমরা আবেদন করেছি। এখন সেটি পরিকল্পনা কমিশনের ব্যাপার। তারা সেটি নাও দিতে পারে। কয়েকটি খাতের ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটির কিছুই হয়নি। এটার কাজ নতুন করে আরম্ভ হচ্ছে। কাজ আরম্ভ হলে পরে এটি নিয়ে তথ্য জানাতে পারব।
নারী নির্যাতন মামলার আসামিকে না ছাড়ায় এবার থানায় ঢুকে নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের সামনে এক পুলিশ কর্মকর্তাকে মারধর করেছেন কোটালীপাড়া পৌর মেয়রের আপন ভাগ্নে। মারধর করার সময় সেখানে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। মারধর করে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ ওই অভিযুক্ত ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত রবিবার দুপুরে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থানায়।
এ ঘটনায় আহত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ জিয়াউল হক বাদী হয়ে অভিযুক্ত শফিকুল ইসলাম সুজন (২৫) ও তার সহযোগী পৌর মেয়রের আরেক নিকটাত্মীয় রাসেল শেখকে (২৫) আসামি করে একটি মামলা করেছেন। এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে দুজনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে কোটালীপাড়া থানার ওসি জিল্লুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে হওয়া একটি মামলার আসামি তানজিলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয়। নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কের সামনে বসিয়ে রেখে আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন এসআই জিয়াউল হক। এ সময় অভিযুক্ত সুজন ও রাসেল হেল্প ডেস্কের সামনে এসে ওই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে আসামিকে ছেড়ে দিতে বলেন। কিন্তু এসআই জিয়াউল হক তাদের তদবির নাকচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা জিয়াউল হককে মারধর করে। তাদের মারধরে পুলিশ কর্মকর্তা সামান্য আহত হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিক হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপর থানার ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেছে দেখা যায়, তারা শুরু থেকেই পুলিশ কর্মকর্তার ওপর চড়াও হয়েছিলেন। একপর্যায়ে তারা পরিদর্শকের (তদন্ত) কক্ষের সামনে এসআইকে জিয়াউল হককে মারধর করেন।
এ প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘হামলাকারী সুজন কোটালীপাড়া পৌর মেয়র কামালউদ্দিন শেখের আপন ভাগ্নে। আমরা মেয়রকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। মেয়র পুলিশকে জানিয়েছেন যে, হামলাকারী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
থানায় করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার আসামি তানজিলুর নারী ও শিশু হেল্প ডেস্কে বসেছিলেন। এ সময় হেল্প ডেস্কের পাশের জানালা দিয়ে আসামির সঙ্গে সুজন ও রাসেল দীর্ঘ সময় কথা বলেন। দুপুর আড়াইটার দিকে তারা থানার ভেতর প্রবেশ করে হেল্প ডেস্কের সামনে আসেন। একপর্যায়ে তারা এসআই জিয়াউল হককে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এসআই জিয়াউলের শার্ট ছিঁড়ে ফেলেন। পরে তাকে উদ্ধার করে কোটালীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে পুলিশ।
জানা গেছে, এ ঘটনার পর বিষয়টি পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন পুলিশের ঊর্ধ্বতনরা। পরে আসামিপক্ষের উপস্থিতিতে থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হয়। সেখানে দেখা যায়, প্রথম পর্যায়ে সুজন জানালা দিয়ে কথা বলছিলেন ওই আসামির সঙ্গে। দীর্ঘসময় ধরে আলাপের কারণে তাকে চলে যেতে বলা হয়। এরপর তিনি পৌর মেয়রের ভাগ্নে পরিচয় দিয়ে থানায় প্রবেশ করেন এবং আসামি তানজিলকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেন। এ সময় এসআই জিয়াউল হক অপারগতা জানালে তিন দফা তাকে বেধড়ক মারধর করেন সুজন ও রাসেল। ফুটেজে দেখার পর সুজনের পরিবারের সদস্যরা থানা থেকে বেরিয়ে যান এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে সায় দিয়ে যান। এরপর গত সোমবার এসআই জিয়াউল হক বাদী হয়ে মামলা করেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপরাধ) মাশরুকুর রমান খালেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অপরাধীর কোনো দল নেই। সে যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। এ ক্ষেত্রেও সেটিই হয়েছে।’
জানতে চাইলে সুজনের পরিবারের সদস্যরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে জানান, কয়েক বছর আগে একটি দুর্ঘটনার পর থেকে সুজন অনেকটাই মানসিক ভারসাম্যহীন। মাঝেমধ্যেই সে উল্টোপাল্টা কাজ করে বসে।
দেশে গত ১০ বছরে শিশু ক্যানসার রোগী বেড়েছে ৫ গুণ। প্রতি বছর নতুন করে ক্যানসার শনাক্ত হচ্ছে ১০ হাজার শিশুর। কিন্তু সে অনুপাতে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসাব্যবস্থা বাড়েনি। সরকারি পর্যায়ে সারা দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৪৭ জন। আবার যেটুকু চিকিৎসাব্যবস্থা রয়েছে, তাও ঢাকাকেন্দ্রিক। ঢাকার বাইরে শিশু ক্যানসারের চিকিৎসা নেই বললেই চলে।
চিকিৎসাব্যবস্থার এসব প্রতুলতার কারণে ও মানুষের সচেতনতার অভাবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শিশুদের ক্যানসার থেকে সেরে ওঠার হারও অনেক কম। উন্নত দেশে যেখানে ৯০ শতাংশের বেশি শিশু ব্লাড ক্যানসার রোগী ভালো হয়, সেখানে বাংলাদেশে এর পরিমাণ মাত্র ৪০-৫০ শতাংশ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালসহ ক্যানসার চিকিৎসা হয় এমন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে দেশের শিশু ক্যানসার রোগ ও চিকিৎসাব্যবস্থার এই চিত্র পাওয়া গেছে।
এমন অবস্থায় দেশে সরকারি পর্যায়ে শিশু ক্যানসার রোগের চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের শিশু রক্তরোগ ও ক্যানসার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহ মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গীর কবীর। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশে শিশু ক্যানসার রোগের চিকিৎসা আছে। কিন্তু রোগীর তুলনায় চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা কম। বিছানা কম, ডাক্তার কম। অথচ রোগী বাড়ছে। তাই সরকারি পর্যায়ে চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। বড় বড় মেডিকেল কলেজগুলোতে পূর্ণাঙ্গ বিভাগ চালু করতে হবে। ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
আজ বিশ্ব শিশু ক্যানসার দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে।
চিকিৎসা মূলত ঢাকাকেন্দ্রিক: চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকার পাঁচটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ক্যানসার রোগের বিভাগ আছে ও চিকিৎসা হচ্ছে। এসব হাসপাতালে শয্যা আছে ১৪৬টি। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩০টি, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে (মিটফোর্ড হাসপাতাল) ১৫টি, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ৩০টি ও জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ৪০টি বেড রয়েছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নতুন বিভাগ খোলা হলেও এখনো কোনো চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে, ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন অধ্যাপক, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন বিশেষজ্ঞ আছেন। কিন্তু তিনি মেডিকেল অফিসার হিসেবে আছেন। বাকি বিভাগীয় হাসপাতালগুলোর শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগ আছে শুধু কাগজে-কলমে। এর মধ্যে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন শিশু ক্যানসার চিকিৎসক আছেন। তবে তিনি শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগে নয়, অন্য বিভাগে কাজ করছেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগে সংকটাপন্ন রোগী রাখা হয় না। রংপুর ও সিলেটে বিভাগীয় হাসপাতালের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগে কোনো চিকিৎসকই নেই।
এ ব্যাপারে জাতীয় ক্যানসার হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. শাহ মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, এখানে বাচ্চাদের জন্য ৪০টি বিছানা আছে। সারা দেশের রোগী বিবেচনায় এটা খুবই কম। শিশুদের ক্যানসারের চিকিৎসায় মূলত কেমোথেরাপি নিতে হয়। সরকারি হাসপাতালে ৯০ শতাংশ ওষুধ সরবরাহ আছে। কেমোথেরাপির ব্যবস্থা আছে। তবে এই ওষুধ খুবই ব্যয়বহুল। তাই বেসরকারি পর্যায়ে চিকিৎসা কঠিন। সে জন্য আমাদের হাসপাতালে চাপ বেশি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এটিএম আতিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ক্যানসার কোনো সাধারণ রোগ নয়। সারা দেশে এখন সরকারি পর্যায়ে ৪৭ ক্যানসার বিশেষজ্ঞ আছেন। ১৯৯৩ সালে ছিল একজন। প্রতি বছর বিএসএমএমইউ থেকে চারজন করে বিশেষজ্ঞ তৈরি হচ্ছেন। শিশু ক্যানসারের চিকিৎসা সরকারি পর্যায়ে খরচ কম। বর্তমানে সরকার অনেক ওষুধ বিনামূল্যে দিচ্ছে। অনেক ওষুধ দেশেই তৈরি হচ্ছে। মানুষের সচেতনতা ও মনের ইচ্ছা যাদের আছে, তারা ভালো হয়ে যাচ্ছে। বিএসএমএমইউতে শিশু ক্যানসারের ননপেয়িং বেড ৩১টি। এ ছাড়া তারা সাধারণ বেডেও ভর্তি হতে পারে। রোগীর যে চাপ ১০০ বেড হলে ভালো হয়।
রোগী বেড়েছে ৫ গুণ: অধ্যাপক ডা. শাহ মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, প্রতি বছর সারা দেশে ৮-১০ হাজার নতুন রোগী পাওয়া যায়। আমাদের হাসপাতালে গত বছরে ২০২২ সালে নতুন রোগী দেখেছি ৯শ’র কিছু বেশি। নতুন ও পুরাতন রোগী মিলিয়ে চিকিৎসা দিয়েছি সাড়ে ১২ হাজার রোগী। নতুন রোগী কোনো বছরে গড়ে ১ হাজার, কোনো বছর ১১শ’, কোনো বছর ১২শ’এরকমই আসছে। সে হিসাবে বাংলাদেশে শিশু ক্যানসার রোগী বাড়ছে। ২০০৭ সালে দুই-তিন দিন পর একটা নতুন রোগী আসত। আর এখন প্রতিদিনই ৩-৪টি নতুন রোগী আসে। গড়ে ৫টা রোগী পাই। গত ১০ বছরে সে হিসাবে ৫ গুণ রোগী বেড়েছে। গত ৫ বছরে দ্বিগুণ বা তিনগুণ হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. এটিএম আতিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিশ্বে প্রতি বছর ৪ লাখ শিশু নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের দেশে এই সংখ্যা ৬-৮ হাজার। বিএসএমএমইউতে প্রতি মাসে প্রায় ১০০ নতুন রোগী ভর্তি হয়। এই হাসপাতালে ১৯৯৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে ১০ হাজার শিশু বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার থেকে সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে।
কেন শিশুরা ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে: অধ্যাপক ডা. শাহ মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, শিশুদের ক্যানসারের বেশিরভাগ কারণই জেনেটিক বা বংশগত ত্রুটি। যখন মায়ের পেটে একটা ভ্রুণ তৈরি হয়, তখন ভ্রুণ তৈরি হওয়ার সময়ই কোনো একটা সমস্যা হয়। সেই সমস্যা থেকে যায় এবং সেখান থেকে ওই শিশুর ক্যানসার উৎপত্তি হয়। ৯৫ শতাংশ ক্যানসারই হয় জেনেটিক কারণ থেকে। এটা জানা যায় না। কিছু কারণ জিন পরীক্ষা করে বের করা হয়েছে। সেগুলো চিকিৎসার আওতায় থাকে।
অবশ্য শিশু ক্যানসার বাড়ার কারণ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের দূষণকে দায়ী করেছেন অধ্যাপক ডা. এটিএম আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশেও শিশু ক্যানসার রোগী বাড়ছে। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার, অপ্রয়োজনীয় এক্স-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফি, ইলেকট্রনিকসামগ্রীর ব্যবহার বেড়ে যাচ্ছে। সে কারণে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাচ্ছে। এসব দূষণ কমানো না গেলে বাড়তেই থাকবে। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে বাংলাদেশে ৭০-৮০ শতাংশ রোগী ভালো হয়ে যায়। কিন্তু যারা দেরি করে আসে, তাদের রোগ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
লক্ষণ ও উপসর্গ: এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. শাহ মোহাম্মদ রাশেদ জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, শিশুদের ক্যানসার আগে থেকেই কোনোভাবে বোঝা যায় না। বড়দের ক্যানসারের মতো না। ছোটবেলায় শিশুর চোখ বিড়ালের চোখের মতো জ্বললে, সেখান থেকে চোখের ক্যানসার হতে পারে। অবহেলা করলে সেই ক্যানসার ব্রেনে ছড়িয়ে যায়। তখনই যদি চোখের চিকিৎসকের কাছে যায়, চিকিৎসক বুঝে যাবে এটা চোখের ক্যানসার। তখন তাকে চোখের অপারেশন করে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবে কেমোথেরাপি দেওয়ার জন্য। পেটের মধ্যে কোনো চাকা দেখা দিলে ও ব্যথা না থাকলেও বুঝতে হবে কিডনি বড় হয়ে গেছে। সেখান থেকে কিডনির ক্যানসার হতে পারে। অথবা শরীরের যেকোনো জায়গায় টিউমারের মতো দেখা গেলে, কোনো আঘাত পায়নি অথচ একটা জায়গায় ফুলে গেছে, এটাও একটা ক্যানসারের লক্ষণ। দাঁত ব্রাশ করতে গিয়ে দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ছে। অথবা গায়ের চামড়া মধ্যে মশার কামড়ের মতো লাল লাল দাগ উঠেছে, অথবা প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাচ্ছে, অথবা অনেক দিন জ্বর, কোনো ওষুধ খেয়েই জ্বর কমছে না, বাচ্চার ওজন কমে যাচ্ছে, বাচ্চার গায়ের রং ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে, এই ধরনের উপসর্গ ক্যানসারের লক্ষণ। আবার ঘাড়ের দু’পাশের গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া ক্যানসারের লক্ষণ। এরকম হলে অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে।
যেহেতু শিশু ক্যানসারের চিকিৎসক নেই, তাই উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে যেতে হবে। সেখানে শিশুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। তারাও এসব উপসর্গের প্রাথমিকভাবে ধরতে পারেন। তখন তারা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন।
দিনাজপুর শহরের ঈদগাহ বস্তির ৬৬ বছর বয়সী আফরোজা সরকারের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল পবিত্র হজব্রত পালন করার। আগামী ২২ ফেব্র“য়ারি হজ পালনের জন্য টাকা জমা করার কথা রয়েছে। কিন্তু তার পাসপোর্টটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় নবায়ন করার প্রয়োজন হয়। সেই মোতাবেক তিনি পাসপোর্ট নবায়ন করার জন্য হাজির হন দিনাজপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে। কিন্তু সেখানে গিয়ে আকাশ থেকে পড়ার মতো অবস্থা হলো তার। কারণ তিনি বর্তমানে সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থান করছেন। ইতিপূর্বে তার পাসপোর্ট নবায়নও হয়ে গিয়েছে। তার স্বাক্ষর, ঠিকানাসহ সব ধরনের কাগজপত্র জালিয়াতি করে তার নামের পাসপোর্টটি নবায়ন করে অজ্ঞাত এক নারী সৌদি আরবের জেদ্দায় অবস্থান করছেন।
গত রবিবার সকালে পাসপোর্ট নবায়ন করতে গেলে জাল পাসপোর্ট ব্যবহার করে অজ্ঞাত ব্যক্তির জেদ্দায় অবস্থানের কথা জানতে পারেন আফরোজা সরকার। এ ঘটনায় গত সোমবার দিনাজপুর কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন আফরোজা সরকারের ছেলে আসফাক হোসেন সরকার।
আফরোজা সরকার বলেন, ‘অনেক দিনের ইচ্ছা হজে যাওয়ার। মাঝে তো আমার স্বামী মারা গেল। তারপর আমারও চোখের সমস্যা ধরা পড়ল। চোখের চিকিৎসা করতে করোনার আগে চেন্নাইতে গিয়েছিলাম। এখন ছেলে বলল হজের জন্য নিবন্ধন করতে। পাসপোর্ট চেক করে দেখি মেয়াদ শেষ। ইমারজেন্সি পাসপোর্ট করার জন্য আমার ছেলে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছে। এখন পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখি আমার নাম ছবি ব্যবহার করে অন্য কে জানি সৌদি আরবের জেদ্দায় চলে গেছে। এখন তো আমি হজে যেতে পারব কি না আল্লাহই ভালো জানেন।’
আফরোজা সরকারের ছেলে আসফাক হোসেন সরকার বলেন, ‘আমার মায়ের আগের পাসপোর্টও আমার কাছে। তাহলে কীভাবে আরেকজন ব্যক্তি আমার মায়ের পাসপোর্ট ব্যবহার করে জেদ্দায় থাকতে পারে। কীভাবেই বা আমার মায়ের ছবি স্বাক্ষর ছাড়াই পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারে সেটা বুঝছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগের ওই পাসপোর্টটা ২০১৭ সালের ২৫ জানুয়ারি ইস্যু হয়েছিল যার মেয়াদ ২০২২ সালের ২৪ জানুয়ারি শেষ হয়ে যায়। পাসপোর্ট নম্বর ছিল ইঘ০২০৯৪৩৮। নবায়ন করা জাল পাসপোর্টের নম্বর হলো ঊঔ০৪১৮৮৪২। এই পাসপোর্ট নবায়ন করা হয়েছে ২০২১ সালের ২২ জুলাই যার মেয়াদ শেষ হবে ২০২৬ সালের ২১ জুলাইতে। এখন তো আমাদের ঢাকা পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে বলছেন- এখানে যারা আছেন। কিন্তু আমরা তো দিনাজপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট করেছি, তাহলে ঢাকায় যাব কেন। তারা কীভাবে পাসপোর্ট পেল, এখানে অবশ্যই এই পাসপোর্ট অফিসের অবহেলা আছে।’
এ বিষয়ে দিনাজপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আজিজুল হক বলেন, ‘উনাদের একাধিক পাসপোর্ট ছিল যার কোনো একটা দিয়ে কেউ পাসপোর্ট নবায়ন করেছে। আগের তো এমআরপি পাসপোর্ট ছিল যেটা পুরাতন পাসপোর্ট জমা দিলে ওই তথ্য অনুযায়ী পাসপোর্ট নবায়ন করা যেত। এটা তেমন কিছু না। আমাদের এখানে বলার কিছুই নেই। তারা ঢাকা অফিসে যোগাযোগ করছে। এটা নিয়ে হেড অফিসের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
একাধিক পাসপোর্টের বিষয়ে আফরোজা সরকারের ছেলে আসফাক হোসেন সরকার বলেন, ‘আমার মায়ের একাধিক পাসপোর্ট নেই। ২০১৭ সালেই শুধু একটাই পাসপোর্ট করা হয়েছিল যা দিয়ে আমার মায়ের চোখের চিকিৎসা করাতে ভারতে গিয়েছিলেন। পুরাতন পাসপোর্টও আমার কাছে।’
নিজেকে জঙ্গি দলের সদস্য দাবি করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আত্মসমর্পণের আকুতি জানিয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করেন এক যুবক। ওই কল পেয়ে তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে রাজধানীর উত্তরখান থানা পুলিশ। পরে ওই যুবককে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর উত্তরখান থানা এলাকায় এমন ঘটনা ঘটেছে।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর পরিদর্শক আনোয়ার সাত্তার জানান, গত বছর ২৭ ডিসেম্বর তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে কুমিল্লা থেকে ঘর ছেড়েছিলেন এই যুবক। টাকা-পয়সা চুরি করে তিনি নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ায় যোগ দিয়েছিলেন। এরপর ঢাকার বসুন্ধরা, উত্তরখান ও দক্ষিণখানের বিভিন্ন মেসে অবস্থান করেন। প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য তার কক্সবাজার যাওয়ার কথা ছিল। একপর্যায়ে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পেরে পালিয়ে যান। পরে উত্তরখান থানা এলাকায় এক ব্যক্তির কাছে আশ্রয় নেন। তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাচ্ছিলেন। তবে তার দলের সদস্যদের হাতে ধরা পড়লে খুন হতে পারেন বলে ভয় পাচ্ছিলেন। তিনি আইনের কাছে আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি গতকাল বেলা পৌনে ১২টায় ৯৯৯-এ কল করেন।
কলটি রিসিভ করেন ৯৯৯-এর কলটেকার কনস্টেবল জয় বিশ্বাস। তিনি তাৎক্ষণিক পুলিশের উত্তরখান জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইয়াসির আরাফাতকে বিষয়টি জানান। এরপর উত্তরখান থানা পুলিশের একটি দল উত্তরখানের কোটবাড়ী আটিপাড়া এলাকায় যায়। তারা ২৬ বছর বয়সী ওই যুবককে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গতকাল রাতে উত্তরখান থানার ওসি আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ওই যুবক নিজেকে জঙ্গি বলে দাবি করেছে। সে অনেক বিষয়ে তথ্য দিয়েছে। তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। পরে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।