
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চড়া দামে খাবার সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ কারসাজির প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এখানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ৩৫০ টাকা কেজিতে সরবরাহ করা হয়। রোগীদের সব খাবারই চড়া দামে সরবরাহ করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালে বাজারের দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে রোগীদের খাবার সরবরাহ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা তছরুপ করা হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, খাবারের মূল্যতালিকা দরপত্র কমিটির মাধ্যমে ঠিক করা হয়েছে।
জামালপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে জেলার সাত উপজেলা এবং কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজিবপুর ও পাশের শেরপুর জেলার রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। সব সরকারি হাসপাতালের মতো এ হাসপাতালের অন্তঃবিভাগেও ভর্তি রোগীদের তিন বেলা খাবার (পথ্য) সরবরাহ করে সরকার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের মাধ্যমে এ খাবার সরবরাহ করে থাকে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে হাসপাতালের অন্তঃবিভাগে ভর্তি রোগীদের খাবারের (পথ্য) তালিকায় সকালের নাশতায় পাউরুটি, সাগর কলা, ফার্মের মুরগির ডিম, চিড়া, চিনি, দুধ ও বিস্কুট দেওয়া হয়। দুপুরে ও রাতের খাবারে ভাত, খাসির মাংস, ডিম, রুই/কাতলা মাছ, ফার্মের মুরগির মাংস, গ্রাস কার্প মাছ ও বিভিন্ন সবজি থাকে। রুটিন অনুযায়ী একেক দিন একেক ধরনের খাবার রোগীদের দেওয়া হয়।
গত বছর ১ নভেম্বর কার্যকর হওয়া ডায়েট স্কেলের তালিকা থেকে জানা যায়, হাসপাতালে সরবরাহ করা প্রতি কেজি ফার্মের মুরগি ৩৫০, প্রতিটি ডিম ১৬, প্রতিটি সাগর কলা ১১ টাকা ৫০ পয়সা, দুধ প্রতি লিটার ৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি এলাচ ২ হাজার ৬০০, ভাত ৮৫, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ২৩০, প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০, প্রতি কেজি মসুরের ডাল ১৭০, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৫০ ও প্রতি কেজি রুই/কাতলা মাছ ৪৫০ টাকা ধরা হয়েছে। ছোটখাটো অন্যান্য পণ্যের দামও বাজারের দামের চেয়ে বেশি ধরা হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভর্তি রোগীদের খাবার সরবরাহের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাসুম এন্টারপ্রাইজকে নির্বাচিত করেছে। নির্ধারিত দাম গত বছর ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য সরবরাহ করা খাবারের দাম বাজারের দামের চেয়ে অনেক বেশি। হাসপাতালে সরবরাহ করা প্রতিটি খাবার (পথ্য) শহরের বাজারে অনেক কম দামে পাওয়া যায়। হাসপাতালের তালিকায় থাকা পণ্য বাজারের দামের চেয়ে বেশি দাম ধরে দরপত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কারসাজিতে প্রতি বছরই খাবারের দামে এমন অনিয়ম করা হয়। হাসপাতালের খাবারের মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচার এ অনিয়মের জন্য দায়ী। অনিয়ম বন্ধ করে সরকারি টাকা তছরুপের হাত থেকে রক্ষা করা ও ন্যায্যমূল্যে মানসম্মত খাবার সরবরাহ করার দাবি জানায় স্থানীয়রা।
গত মঙ্গলবার সকালে পৌর শহরের স্টেশন বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মো. সুরুজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, এখন খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কয়েক দিন আগে প্রতি কেজি ১৩০-১৫০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। ব্রয়লার মুরগি কখনো ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়নি।
স্টেশন বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ী রাজীব সাহা দেশ রূপান্তরকে জানান, খুচরা বাজারে এখন মোটা চাল ৫৫, তেল ১৮৫ টাকা লিটার, প্রতিটি ডিম ১১ আর ডাল (মোটা) প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি এলাচ ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার এখন ঠিকঠাক আছে। কোনো সমস্যা নেই। হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঁচ দিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছেন মাদারগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়ার সোলাইমান হোসেন। তার স্বজনরা বাড়ি থেকে খাবার দিয়ে যান। তা-ই তিনি খান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাসপাতালে যে খাবার দেওয়া হয় তার মান খারাপ। খাওয়া যায় না। যে পরিমাণ খাবার দেওয়া হয় তা দিয়ে হয়ও না। পরিমাণে কম।’
পুরুষ সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে কথা হয় মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়ার হারুন অর রশিদের সঙ্গে। খাবারের বিষয়ে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেওয়া হয় তা দিয়ে হয় না। তাই বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসতে হয়।’
মাদারগঞ্জের ঝাড়কাটার হামিদা বেগম শারীরিক দুর্বলতা ও পায়ের গিঁটে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার খাবার আমি খাইতে পারি না। এই খাবার অনেকেই খায় না। বাড়ি থাইক্যা খাবার নিয়ে আসতে হয়।’
জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহে অনিয়ম আমরা প্রতি বছরই লক্ষ করি। মূল্যতালিকায় যেসব পণ্য কখনোই দেওয়া হয় না, সেসবের দাম বাজারের দামের চেয়ে অনেক কম দেখানো দেয়। আর যেসব পণ্য/খাবার নিয়মিত দিতে হয়, সেগুলোর দাম বাজারের দামের চেয়ে অনেক বেশি ধরা হয়।’
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাসপাতালের খাবারের মূল্যতালিকা দরপত্র কমিটির মাধ্যমে নির্ধারিত। নির্ধারিত ঠিকাদারকে আমরা খাবার সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছি।’
দিন যতই অতিবাহিত হচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলার আকর্ষণ ততই বাড়ছে। প্রতিদিন শতাধিক নতুন বই আসছে মেলায়। দর্শনার্থী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিক্রিও। প্রতিবারের মতো এবারও পাঠকদের আগ্রহের শীর্ষে গল্প-উপন্যাস। প্রকাশকরা জানিয়েছেন, গত ১৫ দিনে মেলায় বেশি বিক্রি হয়েছে গল্প-উপন্যাসের বই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাঠকদের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে গল্প-উপন্যাসের বইয়ে স্টল সাজিয়েছেন প্রকাশকরা। বরাবরের মতো এবারও হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, ইমদাদুল হক মিলন, সাদাত হোসাইনসহ জনপ্রিয় লেখকদের বই বিক্রির শীর্ষে রয়েছে। অনন্যা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীরা জানান, অন্যান্য বইয়ের তুলনায় উপন্যাস ও গল্পের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে হুমায়ূন আহমেদের বই এখনো বেশি বিক্রি হচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিনা আমান তানজুম দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপন্যাস বেশি পড়া হয়। উপন্যাসে বিভিন্ন ধরনের জীবনগাথা থাকে; সেগুলো আমাকে নাড়া দেয়। তাই উপন্যাস বেশি পড়া হয়।
এদিকে বই দেখা ও কেনা ছাড়াও মেলা প্রাঙ্গণ নগরবাসীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত স্থান ছাড়াও টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বরের রাস্তায় হাজারো মানুষের আড্ডায় গতকাল বুধবার বইমেলা হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। যতই দিন যাচ্ছে, মেলায় বইপ্রেমীদের ভিড় ততই বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে নতুন বইয়ের সংখ্যাও। নতুন বইয়ের টানেই হোক কিংবা মেলার টানেÑবইপ্রেমীরা মেলায় আসছেন। মেলা শুরু হওয়ার পর বাংলা একাডেমি চিত্র বদলে গেছে।
নতুন বই : গতকাল ছিল বইমেলার ১৫তম দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। গতকাল নতুন বই এসেছে ৮৪টি।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হয় ‘বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শহীদ ইকবাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হাফিজ রশিদ খান, অনিকেত শামীম এবং সরকার আশরাফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাজ্জাদ আরেফিন।
প্রাবন্ধিক বলেন, লিটল ম্যাগাজিন একটা চিরনতুন প্ল্যাটফর্ম। সময়ের সেবা না করে সময়কে সৃষ্টি করার চেষ্টাÑ এসবই লিটল ম্যাগাজিনের মূল বৈশিষ্ট্য। লিটল ম্যাগাজিনের দিগ¦লয় চলিষ্ণু ও ক্রমবর্ধমান। এর ধারণা-বৈশিষ্ট্য কিংবা পন্থা ও পরিণাম অনতিক্রান্ত নয়, ক্রমবিকশিত ও পরিবর্তিত। আর তা নিশ্চয়ই এদেশের মৃত্তিকা ও সংস্কৃতিকে অনুরুদ্ধ করেই পরিচালিত ও বিকিরিত। পরিচর্যার পথটিও সে লক্ষ্যেই নির্ধারিত।
আলোচকরা বলেন, প্রচলিত ও গতানুগতিক সাহিত্যচর্চার বাইরে নতুন চিন্তাচেতনাকে ধারণ করে যে পত্রিকা, সেটাই লিটল ম্যাগাজিন। নতুন ও তরুণ লেখকরাই লিটল ম্যাগাজিনের ধারক। প্রাতিষ্ঠানিকতার বাইরে থেকে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার একটি মাধ্যম লিটল ম্যাগাজিন। আধুনিক ও প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার স্ফুরণ ঘটে এই পত্রিকায়। প্রচলিত ধারণাকে অস্বীকার করে নতুন কিছু বিনির্মাণ করতে চায় বলে লিটল ম্যাগাজিন সবসময়ই স্পর্ধিত এক চর্চার নাম।
সভাপতির বক্তব্যে সাজ্জাদ আরেফিন বলেন, সাহিত্য আন্দোলনকে বেগবান করতে প্রথাবিরোধী তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে লিটল ম্যাগাজিনের গৌরবকে সমুজ্জ্বল রাখতে হবে। লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের গতিময়তা ফিরিয়ে আনার জন্য তরুণদের উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে হবে।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন দিলারা হাফিজ, হাকিম আরিফ, আঁখি সিদ্দিকা ও জয় শাহরিয়ার।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন মোহাম্মদ সাদিক, কামরুল হাসান, সাজ্জাদ আরেফিন, টিমুনী খান, কৌমুদী নার্গিস। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আফতাব আহমেদ মাহাবুব, পলি পারভীন, কাজী মদীনা। এ ছাড়া ছিল সুলতানা আক্তারের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘স্কেচ একাডেমি অব ফাইন আর্টস’ এবং দীপ্তি রাজবংশীর পরিচালনায় ‘বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদ’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন লীনা তাপসী খান, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, খায়রুল আনাম শাকিল, সুমন মজুমদার, মাহবুবা রহমান, সম্পা দাস, ডা. তাপস বোস, শহীদ কবীর পলাশ, আফরিদা জাহিন জয়ীতা। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন কাজী মো. ইমতিয়াজ সুলতান (তবলা), সুমন রেজা খান (কি-বোর্ড), মো. মনিরুজ্জামান (বাঁশি), ফিরোজ খান (সেতার)।
আজকের সময়সূচি : আজ ৩ ফাল্গুন ১৪২৯/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার। অমর একুশে বইমেলার ১৬তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হবে ‘বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকেন্দ্রীকরণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ফরিদ আহমেদ দুলাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মাহমুদ কামাল, হেনরী স্বপন, নজিবুল ইসলাম এবং সাজ্জাদ আহসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অনীক মাহমুদ।
গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সেসের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সাহিদা সুলতানা বিনু। পড়ছেন বস্ত্র পরিচ্ছেদ ও বয়নশিল্প বিষয়ে। বইমেলায় এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যার দিকে বইমেলা প্রাঙ্গণে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় বিনুর। তিনি বলেন, ‘পাঠ্যবই পড়ার পাশাপাশি ভ্রমণকাহিনী পড়তেই বেশি ভালো লাগে।’
মেলায় কার সঙ্গে এসেছেন জানতে চাইলে বিনু বলেন, ‘মেলায় আসা হয় পরিবারের সঙ্গে। তবে এবারের বইমেলায় বন্ধুদের সঙ্গে এসেছি।’
মেলায় এসে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেলার পরিবেশ ভালো লাগছে। কিন্তু প্রবেশপথে দীর্ঘ লাইন ও ধুলোর জন্য কিছুটা সমস্যা হয়েছে।’ কেমন লেখা পড়তে চান জানতে চাইলে বিনু বলেন, ‘সব সময় নির্বাচিত লেখা বেশি পড়া হয়। এবারের মেলায় অনেক তরুণ লেখকের বই বেরিয়েছে। তবে সব লেখকের লেখা পড়া যায় না। যে লেখক তার লেখায় চরিত্র ও গল্প ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন, এমন লেখকের লেখা পড়তে চাই। অর্থাৎ একটি সার্থক উপন্যাস পড়তে চাই।’
বইয়ের দাম নিয়ে কিছুটা অখুশি এই পাঠক বলেন, ‘বইয়ের দাম অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশি। অনেক স্টল ঘুরেছি। বই দেখেছি। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় চিন্তায় পড়ে গেছি, পছন্দের বইগুলো সংগ্রহ করতে পারব কি না!’
বই কেনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো কেনা হয়নি। স্টল ঘুরে দেখছি। পছন্দসই বই পেলে কিনব। তবে লেখক সাদাত হোসাইনের ‘শঙ্খচূড়” উপন্যাসটি বন্ধুর কাছ থেকে উপহার পেয়েছি।’
কথাসাহিত্যিক মশিউল আলমের জন্ম ১৯৬৬ সালে, জয়পুরহাটে। মস্কোর পাত্রিস লুমুম্বা গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর দেশে ফিরে সাংবাদিকতা শুরু করেন। লেখালেখি শুরু করেন আশির দশকে।
এবারের বইমেলার তার দুটো অনুবাদের বই প্রকাশিত হয়েছে। দুটোই ফিওদর দস্তয়েভস্কির উপন্যাসের অনুবাদ। একটি ‘তলকুঠুরির কড়চা’। এ উপন্যাস ইংরেজি অনুবাদে ‘নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ড’ নামে বহুল পরিচিত। অন্যটা ‘নিরীহ’, এটি ইংরেজিতে পরিচিত ‘দ্য মিক ওয়ান’ এবং ‘আ জেন্টল ক্রিয়েচার’ নামে। তিনি দুটি উপন্যাসই অনুবাদ করেছেন মূল রুশ থেকে। দুটি উপন্যাসই মনস্তাত্ত্বিক। দুটি বইয়েরই প্রকাশক মওলা ব্রাদার্স।
মশিউল আলম জানান, সাহিত্যপ্রেমীরা তার মূল পাঠক। বর্তমানে তার পাঠক বেড়েছে আগের তুলনায়। চলতি বইমেলার পাঠক বিষয়ে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বইমেলায় যত মানুষকে ঘুরে বেড়াতে দেখি, তত মানুষকে বই কিনতে দেখি না। ক্রেতা খুবই কম চোখে পড়েছে আমার। সাধারণভাবে বাংলাদেশে শিক্ষিত জনসংখ্যার তুলনায় সাহিত্যের পাঠক খুবই কম। ইদানীং আরও কমে যাচ্ছে।’
তবে তিনি পাঠকদের ওপর তার লেখার কোনো প্রভাব আছে বলে মনে করেন না। পাঠকদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মশিউল আলম বলেন, ‘কয়েকবার এমন হয়েছে, কোনো সংবাদপত্রের সাহিত্য পাতায় আমার গল্প ছাপা হয়েছে, একাধিক পাঠক আমাকে ফোন করে জানতে চেয়েছেন, গল্পে আমি যে ঘটনা বর্ণনা করেছি, তা সত্য কি না, কবে ঘটল সেই ঘটনা। আমার একটা গল্পের ঘটনা ছিল ঢাকার সোবহানবাগের। এক পাঠক আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, “আমরা তো সোবহানবাগেই থাকি, এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, আমরা কিছুই জানতে পারলাম না!” আমার এ ধরনের পাঠকদের বোঝাতে খুব কষ্ট হয়েছে যে, আমি যে গল্প লিখেছি তা আমার কল্পিত কাহিনী, বাস্তবে ঘটেনি। একজন পাঠক আমাকে এমন কথাও বলেছিলেন, যে ঘটনা সত্য নয়, তা লিখে খবরের কাগজে ছাপিয়ে দেওয়া খুবই দায়িত্বহীন কাজ হয়েছে।’
‘আমার গল্প-উপন্যাস সম্পর্কে পাঠকদের এই একটা জিজ্ঞাসার মুখোমুখি আমি বারবার হই; ঘটনা সত্য কি না। এটা বেশ মজার ব্যাপার। একটু হতাশার ব্যাপারও বটে; কারণ এ পাঠকদের ফিকশন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। আসলে তারা সাহিত্যের পাঠক নন’ যোগ করেন এ কথাসাহিত্যিক।
মশিউল আলমের লেখা উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘তনুশ্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় রাত’, ‘ঘোড়ামাসুদ’, ‘জুবোফস্কি বুলভার’, ‘মাংসের কারবার’, ‘পাকিস্তান’, ‘দ্বিতীয় খুনের কাহিনি’, ‘যেভাবে নাই হয়ে গেলাম’, ‘দুধ’। তার গল্প ‘দুধ’ ইংরেজিতে ‘মিল্ক’ নামে অনূদিত হয়ে শ্রীলঙ্কাভিত্তিক হিমাল সাউদেশিয়ান শর্ট স্টোরি কমপিটিশন ২০১৯-এ শ্রেষ্ঠ গল্প হিসেবে পুরস্কৃত হয়। এ ছাড়া ‘দ্য মিট মার্কেট অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’ নামে তার ইংরেজিতে প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ২০২০ সালের আমেরিকান পেন/হাইম ট্রান্সলেশন ফান্ড গ্র্যান্টস লাভ করে।
ঢাকা জেলার সাতটি থানায় গত সাড়ে ১৩ মাসে ৪৬টি ডাকাতির মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ২৩২ ডাকাত। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ৯২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এরপরও দমছে না ডাকাতরা। ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায়। ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয় সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে একাধিক সূত্র বলছে, বেশিরভাগ ডাকাতির ঘটনা ঘটছে মহাসড়কে। কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে আবার কখনো সরাসরি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই থানায় মামলা করছে না। মোটা অঙ্কের টাকা বা স্বর্ণালংকার ডাকাতির ঘটনায় শুধু মামলা হচ্ছে। আর ডাকাতির শিকার বেশিরভাগই তাদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ হারানোর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। ফলে ডাকাতির প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না। যার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত গত রবিবার রাতে গাজীপুর-খুলনা রুটে চলা রিসাত পরিবহন (প্রা.) লিমিটেডের একটি বাসে নৃশংস ডাকাতির ঘটনা। এ ঘটনার পর আশুলিয়া থানাধীন নবীনগর পুলিশ ফাঁড়িতে জিডি করে পরিবহন কর্তৃপক্ষ। আর ভুক্তভোগীদের কয়েকজন মোবাইল ফোন হারানোর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
নাম প্রকাশ না করে ঢাকা জেলার এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে কেরানীগঞ্জ মডেল ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকায়। এ ছাড়াও আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই, নবাবগঞ্জ ও দোহার থানা এলাকায় তুলনামূলক কম ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতির ঘটনায় তারাও উদ্বিগ্ন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সড়কের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছি। টহল পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তারাও টহল বাড়িয়েছেন। একই সঙ্গে যেন নিñিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা যার সে লক্ষ্যে সিসি (ক্লোজ সার্কিট) টিভি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি।’ আগের চেয়ে ডাকাতি অনেকটাই কমে এসেছে বলেও দাবি করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
ঢাকা জেলা এসপির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা জেলা পুলিশের অধীনে রয়েছে সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, কেরানীগঞ্জ মডেল, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহার থানা। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডাকাতির মামলা হয়েছে ৪২টি। এসব মামালায় গ্রেপ্তার হয়েছে ২১৩ ডাকাত যাদের ৯২ জন অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। আর চলতি বছরের দেড় মাসে চারটি ডাকাতির মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছে ১৯ ডাকাত, যাদের ৯ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
ঢাকা জেলা পুলিশের দায়িত্বশীলরা বলছেন, মহাসড়কের একটা বড় এলাকা ফাঁকা স্থানে। আশপাশে কোনো বাড়িঘর থাকে না। আর সড়কের সব এলাকা পুলিশ দিয়ে পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না। এ সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে ডাকাতরা। তবে যেসব স্থানে ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে সেসব স্থানে টহল পুলিশ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হয়েছে আট ডাকাত। এ ডাকাতচক্রটি গত ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা-নবাবগঞ্জ রোডের কোনাখোলায় নবকলি নামক একটি বাস থামিয়ে র্যাব পরিচয়ে আনোয়ার হোসেন খোকন ও নাহিদ নামে দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরে তাদের মারধর করে কাছে থাকা স্বর্ণ বিক্রির ৭১ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়।
ভুক্তভোগী দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে জানান, তাঁতীবাজারে স্বর্ণ বিক্রি করে নাহিদ ৪০ লাখ ও খোকন ৩১ লাখ টাকা নিয়ে দোহারে যাওয়ার উদ্দেশে নবকলি বাসে ওঠেন। কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন কোনাখোলা এলাকায় পৌঁছলে একটি সাদা হাইয়েস মাইক্রোবাস জোর করে বাসটি থামায়। র্যাবের পোশাক পরে বাসে উঠেই তারা যাত্রীদের বলে, ‘আপনারা কেউ ঘাবড়াবেন না। দুজন আসামি আছে বাসে। তাদের গ্রেপ্তার করতে এসেছি’। এরপরই নাহিদ ও খোকনকে নিয়ে টাকার ব্যাগসহ বাস থেকে নামিয়ে মাইক্রোতে তোলে তারা। দুজনকে বেঁধে ইলেকট্রিক শক দেয় ও মারধর করে এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে ৭১ লাখ টাকা নিয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের নিমতলা এলাকায় মহাসড়কের পাশে ফেলে দেয়।
এ চক্রই গত ১৭ জানুয়ারি গোবিন্দ চন্দ্র দাস, লিটন চন্দ্র দাস ও বাপন চন্দ্র দাস নামের তিন ব্যক্তির কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা দামের রুপার অলংকার তৈরির কাঁচামাল ডাকাতি করে। ওই তিনজন তাঁতীবাজার থেকে অটোরিকশায় করে কেরানীগঞ্জে যাওয়ার পথে শাক্তা জামিয়া আরাবিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার সামনে র্যাব পরিচয় দেওয়া ওই ডাকাতচক্রের কবলে পড়েন।
সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ বলছে, চক্রগুলো ডাকাতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছে। তাদের রয়েছে বড় সিন্ডিকেটও। ফলে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে মুক্ত হতে বেশি বেগ পেতে হয় না তাদের। আর জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের ডাকাতি শুরু করে।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মামুন-অর-রশিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলেও এদের নিজস্ব চক্র জামিন করিয়ে ফেলে। এরপর আবার ডাকাতিতে ফিরে আসে।’ তিনি বলেন, ‘এরা ডাকাতিকে সহজ পেশা মনে করে। কেননা পুলিশ বা র্যাবের পোশাক পরে তারা সহজেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে।’
মোহাম্মদ হাসান। কাজ করতেন গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় আসবাব তৈরির একটি কারখানায়। আট বছর আগে কারখানার ভেতর তাকে হত্যা করা হয়। থানায় মামলা হলে পুলিশ তদন্ত করে। এরপর তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ সংস্থাটিও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে জানায়, হাসানকে কে মেরেছে, তা শনাক্ত করা যায়নি। পরে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করার নির্দেশ দেয়।
এক বছর তদন্ত করে পিবিআই মাদক সেবনে নিষেধ করায় এলাকার আট বখাটে মিলে তাকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজানোর চেষ্টা করে। এমনকি ঘাতকরা এলাকায় প্রকাশ্য থেকে অপরাধ করলেও থানা পুলিশ ও সিআইডি তাদের কিছুই করেনি। ঘটনার মূল অভিযুক্তসহ তিনজনকে আইনের আওতায় এনেছে পিবিআই।
পিবিআই সূত্র জানায়, মো. হাসান (৪৫) খুনের ঘটনায় জড়িত আজিজুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির ওরফে রোমান ও জাফর ইকবালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা পেশাদার মাদক কারবারি এবং একাধিক মামলার আসামি। হত্যাকা-ে আটজন জড়িত। মাদক সেবনে বাধা দেওয়ার জের ধরে অভিযুক্তরা ফার্নিচার কারখানার ভেতরেই হাসানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে যায়। ৫ বছর ৭ মাস থানা পুলিশ ও সিআইডি আসামি শনাক্ত না করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। ২০২১ সালে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। এরপর আদালতে সাক্ষ্য ও মামলায় বিভিন্ন আলামতের সূত্র ধরে জড়িতদের চিহ্নিত করে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই গাজীপুর জেলার পুলিশ পরিদর্শক হাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি রাতে টঙ্গীর দত্তপাড়ায় হাজি মো. মাঈন উদ্দিন মিয়ার আসবাব কারখানার পূর্ব পাশের কক্ষ থেকে হাসানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। হাসান ওই কারখানায় ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন। খুনের পরের দিন তার ভাই মো. বাবু তালুকদার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে টঙ্গী থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন রাত ৯টায় ওই ফার্নিচার কারখানায় হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তার কোনো খোঁজ না পেয়ে কারখানার মালিকসহ অন্যরা কারখানার ভেতর থেকে হাসানের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেন। পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদনে তার নাক, মুখ, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত ও ক্ষতের চিহ্ন থাকা ও রক্তক্ষরণের কথা উল্লেখ করে।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, থানা পুলিশ ৩ বছর ২ মাস ২০ দিন তদন্ত করার পর ওই সময় পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলাটি সিআইডি গাজীপুরে ন্যস্ত করা হয়। ২০১৮ সালের ২ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিআইডি তদন্ত করে আসামি শনাক্ত করা যায়নি বলে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। ২০২১ সালে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য গাজীপুরের পিবিআইকে নির্দেশ দেয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, গত সোমবার রাতভর গাজীপুর ও টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন মঙ্গলবার গ্রেপ্তার তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
যেভাবে খুন করা হয় : প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল, রোমান ও জাফর জানায়, তারা টঙ্গীর বিভিন্ন স্থানে মাদক বিক্রি ও সেবন করত। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে প্রায় ৮-১০ জনের একটি গ্রুপ ছিল। যারা টঙ্গী এলাকার বিভিন্ন স্থানে মাদকের আড্ডা বসাত। সবাই মিলে মাদক সেবন করত। ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেলে তারা আরও ৬-৭ জন সহযোগী মিলে হাসানের কর্মস্থল ওই আসবাব কারখানায় মাদক সেবনের জন্য যায়। হাসান ভেতরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। এক মাস আগেও একই কারণে তাদের সঙ্গে হাসানের বাগ্্বিত-া হয়েছিল। পরে তারা কারখানায় ঢুকে হাসানকে গালিগালাজ করে এবং মাদক সেবন করতে শুরু করে। একপর্যায়ে হাসানকে মারপিট করতে থাকে। এ সময় তারা কারখানার ভেতরে থাকা স্ক্রু-ড্রাইভার, হাতুড়িসহ ফার্নিচার তৈরির অন্যান্য ধারালো সরঞ্জাম দিয়ে হাসানের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কোপায়। হাসপাতালের নেওয়ার পর তিনি মারা যান।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
প্রথম সেটে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলেন। তবে পরের সেটেই ঘুরে দাঁড়ান। ৩ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের লড়াইয়ের পর কোয়ার্টার ফাইনালটা জিতে নিলেন নোভাক জকোভিচ। কারেন খাচানভকে ৪-৬, ৭-৬, ৬-২, ৬-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন এই সার্বিয়ান।
কোয়ার্টার ফাইনালের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, দিনটা বোধহয় জকোভিচের নয়। তবে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন তিনি। খাচানভ প্রথম সেট জিতে নেওয়ার পর দ্বিতীয় সেটেও সমানে সমানে লড়াই করেন। যদিও টাইব্রেকারে জোকোর সামনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।
ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর এক বার লকার রুমে ফিরে যান জোকোভিচ। তার পর শুধু কোর্টেই ফিরলেন না। নিজের চেনা ছন্দেও ফিরলেন। তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে আর শুরুর মতো লড়াই করতে পারলেন না প্রতিযোগিতার ১১ নম্বর বাছাই।
ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে মঙ্গলবার প্রতিযোগিতার প্রথম সেট হারলেন জোকোভিচ। হেরে যেতে পারেন এমন মনে না হলেও এ দিন ছন্দ পেতে কিছু সময় লেগেছে তার। ৩৬ বছরের জোকোভিচ কি সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসের ধকল আগের মতো সামলাতে পারছেন না আর?
এমন প্রশ্ন যখন উঁকি দিতে শুরু করছে, তখনই নিজের চেনা ছন্দে দেখা দিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে খাচানভের বিরুদ্ধে সময় পেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন। সেমিফাইনাল বা ফাইনালের প্রতিপক্ষরা কি ছন্দে ফেরার সময় বা সুযোগ দেবেন তাঁকে?
টেনিসপ্রেমীদের মনে এই প্রশ্ন রেখেই ফ্রেঞ্চ ওপেনের শেষ চারে পৌঁছে গেলেন দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। পাশাপাশি কিছুটা হয়তো উদ্বেগেও রাখলেন। সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করার পর জোকার স্বীকারও করে নিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম দু’টি সেট তার থেকে ভাল খেলেছেন রুশ প্রতিপক্ষ।
এদিকে ওপর কোয়ার্টার ফাইনালে জয় পেয়েছেন কার্লোস আলকারাজ। সিৎসিপাসের বিপক্ষে তিনি ৩-০ (৬-২, ৬-১, ৭-৬) সেটে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছেন এই স্পেনিশ টেনিস তারকা।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।