
দিন যতই অতিবাহিত হচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলার আকর্ষণ ততই বাড়ছে। প্রতিদিন শতাধিক নতুন বই আসছে মেলায়। দর্শনার্থী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিক্রিও। প্রতিবারের মতো এবারও পাঠকদের আগ্রহের শীর্ষে গল্প-উপন্যাস। প্রকাশকরা জানিয়েছেন, গত ১৫ দিনে মেলায় বেশি বিক্রি হয়েছে গল্প-উপন্যাসের বই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাঠকদের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে গল্প-উপন্যাসের বইয়ে স্টল সাজিয়েছেন প্রকাশকরা। বরাবরের মতো এবারও হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, ইমদাদুল হক মিলন, সাদাত হোসাইনসহ জনপ্রিয় লেখকদের বই বিক্রির শীর্ষে রয়েছে। অনন্যা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীরা জানান, অন্যান্য বইয়ের তুলনায় উপন্যাস ও গল্পের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে হুমায়ূন আহমেদের বই এখনো বেশি বিক্রি হচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিনা আমান তানজুম দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপন্যাস বেশি পড়া হয়। উপন্যাসে বিভিন্ন ধরনের জীবনগাথা থাকে; সেগুলো আমাকে নাড়া দেয়। তাই উপন্যাস বেশি পড়া হয়।
এদিকে বই দেখা ও কেনা ছাড়াও মেলা প্রাঙ্গণ নগরবাসীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত স্থান ছাড়াও টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বরের রাস্তায় হাজারো মানুষের আড্ডায় গতকাল বুধবার বইমেলা হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। যতই দিন যাচ্ছে, মেলায় বইপ্রেমীদের ভিড় ততই বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে নতুন বইয়ের সংখ্যাও। নতুন বইয়ের টানেই হোক কিংবা মেলার টানেÑবইপ্রেমীরা মেলায় আসছেন। মেলা শুরু হওয়ার পর বাংলা একাডেমি চিত্র বদলে গেছে।
নতুন বই : গতকাল ছিল বইমেলার ১৫তম দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। গতকাল নতুন বই এসেছে ৮৪টি।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হয় ‘বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শহীদ ইকবাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হাফিজ রশিদ খান, অনিকেত শামীম এবং সরকার আশরাফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাজ্জাদ আরেফিন।
প্রাবন্ধিক বলেন, লিটল ম্যাগাজিন একটা চিরনতুন প্ল্যাটফর্ম। সময়ের সেবা না করে সময়কে সৃষ্টি করার চেষ্টাÑ এসবই লিটল ম্যাগাজিনের মূল বৈশিষ্ট্য। লিটল ম্যাগাজিনের দিগ¦লয় চলিষ্ণু ও ক্রমবর্ধমান। এর ধারণা-বৈশিষ্ট্য কিংবা পন্থা ও পরিণাম অনতিক্রান্ত নয়, ক্রমবিকশিত ও পরিবর্তিত। আর তা নিশ্চয়ই এদেশের মৃত্তিকা ও সংস্কৃতিকে অনুরুদ্ধ করেই পরিচালিত ও বিকিরিত। পরিচর্যার পথটিও সে লক্ষ্যেই নির্ধারিত।
আলোচকরা বলেন, প্রচলিত ও গতানুগতিক সাহিত্যচর্চার বাইরে নতুন চিন্তাচেতনাকে ধারণ করে যে পত্রিকা, সেটাই লিটল ম্যাগাজিন। নতুন ও তরুণ লেখকরাই লিটল ম্যাগাজিনের ধারক। প্রাতিষ্ঠানিকতার বাইরে থেকে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার একটি মাধ্যম লিটল ম্যাগাজিন। আধুনিক ও প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার স্ফুরণ ঘটে এই পত্রিকায়। প্রচলিত ধারণাকে অস্বীকার করে নতুন কিছু বিনির্মাণ করতে চায় বলে লিটল ম্যাগাজিন সবসময়ই স্পর্ধিত এক চর্চার নাম।
সভাপতির বক্তব্যে সাজ্জাদ আরেফিন বলেন, সাহিত্য আন্দোলনকে বেগবান করতে প্রথাবিরোধী তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে লিটল ম্যাগাজিনের গৌরবকে সমুজ্জ্বল রাখতে হবে। লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের গতিময়তা ফিরিয়ে আনার জন্য তরুণদের উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে হবে।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন দিলারা হাফিজ, হাকিম আরিফ, আঁখি সিদ্দিকা ও জয় শাহরিয়ার।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন মোহাম্মদ সাদিক, কামরুল হাসান, সাজ্জাদ আরেফিন, টিমুনী খান, কৌমুদী নার্গিস। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আফতাব আহমেদ মাহাবুব, পলি পারভীন, কাজী মদীনা। এ ছাড়া ছিল সুলতানা আক্তারের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘স্কেচ একাডেমি অব ফাইন আর্টস’ এবং দীপ্তি রাজবংশীর পরিচালনায় ‘বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদ’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন লীনা তাপসী খান, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, খায়রুল আনাম শাকিল, সুমন মজুমদার, মাহবুবা রহমান, সম্পা দাস, ডা. তাপস বোস, শহীদ কবীর পলাশ, আফরিদা জাহিন জয়ীতা। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন কাজী মো. ইমতিয়াজ সুলতান (তবলা), সুমন রেজা খান (কি-বোর্ড), মো. মনিরুজ্জামান (বাঁশি), ফিরোজ খান (সেতার)।
আজকের সময়সূচি : আজ ৩ ফাল্গুন ১৪২৯/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার। অমর একুশে বইমেলার ১৬তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হবে ‘বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকেন্দ্রীকরণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ফরিদ আহমেদ দুলাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মাহমুদ কামাল, হেনরী স্বপন, নজিবুল ইসলাম এবং সাজ্জাদ আহসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অনীক মাহমুদ।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চড়া দামে খাবার সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ কারসাজির প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এখানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ৩৫০ টাকা কেজিতে সরবরাহ করা হয়। রোগীদের সব খাবারই চড়া দামে সরবরাহ করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালে বাজারের দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে রোগীদের খাবার সরবরাহ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা তছরুপ করা হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, খাবারের মূল্যতালিকা দরপত্র কমিটির মাধ্যমে ঠিক করা হয়েছে।
জামালপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে জেলার সাত উপজেলা এবং কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজিবপুর ও পাশের শেরপুর জেলার রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। সব সরকারি হাসপাতালের মতো এ হাসপাতালের অন্তঃবিভাগেও ভর্তি রোগীদের তিন বেলা খাবার (পথ্য) সরবরাহ করে সরকার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের মাধ্যমে এ খাবার সরবরাহ করে থাকে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে হাসপাতালের অন্তঃবিভাগে ভর্তি রোগীদের খাবারের (পথ্য) তালিকায় সকালের নাশতায় পাউরুটি, সাগর কলা, ফার্মের মুরগির ডিম, চিড়া, চিনি, দুধ ও বিস্কুট দেওয়া হয়। দুপুরে ও রাতের খাবারে ভাত, খাসির মাংস, ডিম, রুই/কাতলা মাছ, ফার্মের মুরগির মাংস, গ্রাস কার্প মাছ ও বিভিন্ন সবজি থাকে। রুটিন অনুযায়ী একেক দিন একেক ধরনের খাবার রোগীদের দেওয়া হয়।
গত বছর ১ নভেম্বর কার্যকর হওয়া ডায়েট স্কেলের তালিকা থেকে জানা যায়, হাসপাতালে সরবরাহ করা প্রতি কেজি ফার্মের মুরগি ৩৫০, প্রতিটি ডিম ১৬, প্রতিটি সাগর কলা ১১ টাকা ৫০ পয়সা, দুধ প্রতি লিটার ৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি এলাচ ২ হাজার ৬০০, ভাত ৮৫, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ২৩০, প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০, প্রতি কেজি মসুরের ডাল ১৭০, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৫০ ও প্রতি কেজি রুই/কাতলা মাছ ৪৫০ টাকা ধরা হয়েছে। ছোটখাটো অন্যান্য পণ্যের দামও বাজারের দামের চেয়ে বেশি ধরা হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভর্তি রোগীদের খাবার সরবরাহের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাসুম এন্টারপ্রাইজকে নির্বাচিত করেছে। নির্ধারিত দাম গত বছর ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য সরবরাহ করা খাবারের দাম বাজারের দামের চেয়ে অনেক বেশি। হাসপাতালে সরবরাহ করা প্রতিটি খাবার (পথ্য) শহরের বাজারে অনেক কম দামে পাওয়া যায়। হাসপাতালের তালিকায় থাকা পণ্য বাজারের দামের চেয়ে বেশি দাম ধরে দরপত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কারসাজিতে প্রতি বছরই খাবারের দামে এমন অনিয়ম করা হয়। হাসপাতালের খাবারের মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচার এ অনিয়মের জন্য দায়ী। অনিয়ম বন্ধ করে সরকারি টাকা তছরুপের হাত থেকে রক্ষা করা ও ন্যায্যমূল্যে মানসম্মত খাবার সরবরাহ করার দাবি জানায় স্থানীয়রা।
গত মঙ্গলবার সকালে পৌর শহরের স্টেশন বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মো. সুরুজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, এখন খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কয়েক দিন আগে প্রতি কেজি ১৩০-১৫০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। ব্রয়লার মুরগি কখনো ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়নি।
স্টেশন বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ী রাজীব সাহা দেশ রূপান্তরকে জানান, খুচরা বাজারে এখন মোটা চাল ৫৫, তেল ১৮৫ টাকা লিটার, প্রতিটি ডিম ১১ আর ডাল (মোটা) প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি এলাচ ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার এখন ঠিকঠাক আছে। কোনো সমস্যা নেই। হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঁচ দিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছেন মাদারগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়ার সোলাইমান হোসেন। তার স্বজনরা বাড়ি থেকে খাবার দিয়ে যান। তা-ই তিনি খান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাসপাতালে যে খাবার দেওয়া হয় তার মান খারাপ। খাওয়া যায় না। যে পরিমাণ খাবার দেওয়া হয় তা দিয়ে হয়ও না। পরিমাণে কম।’
পুরুষ সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে কথা হয় মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়ার হারুন অর রশিদের সঙ্গে। খাবারের বিষয়ে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেওয়া হয় তা দিয়ে হয় না। তাই বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসতে হয়।’
মাদারগঞ্জের ঝাড়কাটার হামিদা বেগম শারীরিক দুর্বলতা ও পায়ের গিঁটে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার খাবার আমি খাইতে পারি না। এই খাবার অনেকেই খায় না। বাড়ি থাইক্যা খাবার নিয়ে আসতে হয়।’
জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহে অনিয়ম আমরা প্রতি বছরই লক্ষ করি। মূল্যতালিকায় যেসব পণ্য কখনোই দেওয়া হয় না, সেসবের দাম বাজারের দামের চেয়ে অনেক কম দেখানো দেয়। আর যেসব পণ্য/খাবার নিয়মিত দিতে হয়, সেগুলোর দাম বাজারের দামের চেয়ে অনেক বেশি ধরা হয়।’
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাসপাতালের খাবারের মূল্যতালিকা দরপত্র কমিটির মাধ্যমে নির্ধারিত। নির্ধারিত ঠিকাদারকে আমরা খাবার সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছি।’
গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সেসের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সাহিদা সুলতানা বিনু। পড়ছেন বস্ত্র পরিচ্ছেদ ও বয়নশিল্প বিষয়ে। বইমেলায় এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যার দিকে বইমেলা প্রাঙ্গণে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় বিনুর। তিনি বলেন, ‘পাঠ্যবই পড়ার পাশাপাশি ভ্রমণকাহিনী পড়তেই বেশি ভালো লাগে।’
মেলায় কার সঙ্গে এসেছেন জানতে চাইলে বিনু বলেন, ‘মেলায় আসা হয় পরিবারের সঙ্গে। তবে এবারের বইমেলায় বন্ধুদের সঙ্গে এসেছি।’
মেলায় এসে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেলার পরিবেশ ভালো লাগছে। কিন্তু প্রবেশপথে দীর্ঘ লাইন ও ধুলোর জন্য কিছুটা সমস্যা হয়েছে।’ কেমন লেখা পড়তে চান জানতে চাইলে বিনু বলেন, ‘সব সময় নির্বাচিত লেখা বেশি পড়া হয়। এবারের মেলায় অনেক তরুণ লেখকের বই বেরিয়েছে। তবে সব লেখকের লেখা পড়া যায় না। যে লেখক তার লেখায় চরিত্র ও গল্প ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন, এমন লেখকের লেখা পড়তে চাই। অর্থাৎ একটি সার্থক উপন্যাস পড়তে চাই।’
বইয়ের দাম নিয়ে কিছুটা অখুশি এই পাঠক বলেন, ‘বইয়ের দাম অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশি। অনেক স্টল ঘুরেছি। বই দেখেছি। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় চিন্তায় পড়ে গেছি, পছন্দের বইগুলো সংগ্রহ করতে পারব কি না!’
বই কেনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো কেনা হয়নি। স্টল ঘুরে দেখছি। পছন্দসই বই পেলে কিনব। তবে লেখক সাদাত হোসাইনের ‘শঙ্খচূড়” উপন্যাসটি বন্ধুর কাছ থেকে উপহার পেয়েছি।’
কথাসাহিত্যিক মশিউল আলমের জন্ম ১৯৬৬ সালে, জয়পুরহাটে। মস্কোর পাত্রিস লুমুম্বা গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর দেশে ফিরে সাংবাদিকতা শুরু করেন। লেখালেখি শুরু করেন আশির দশকে।
এবারের বইমেলার তার দুটো অনুবাদের বই প্রকাশিত হয়েছে। দুটোই ফিওদর দস্তয়েভস্কির উপন্যাসের অনুবাদ। একটি ‘তলকুঠুরির কড়চা’। এ উপন্যাস ইংরেজি অনুবাদে ‘নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ড’ নামে বহুল পরিচিত। অন্যটা ‘নিরীহ’, এটি ইংরেজিতে পরিচিত ‘দ্য মিক ওয়ান’ এবং ‘আ জেন্টল ক্রিয়েচার’ নামে। তিনি দুটি উপন্যাসই অনুবাদ করেছেন মূল রুশ থেকে। দুটি উপন্যাসই মনস্তাত্ত্বিক। দুটি বইয়েরই প্রকাশক মওলা ব্রাদার্স।
মশিউল আলম জানান, সাহিত্যপ্রেমীরা তার মূল পাঠক। বর্তমানে তার পাঠক বেড়েছে আগের তুলনায়। চলতি বইমেলার পাঠক বিষয়ে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বইমেলায় যত মানুষকে ঘুরে বেড়াতে দেখি, তত মানুষকে বই কিনতে দেখি না। ক্রেতা খুবই কম চোখে পড়েছে আমার। সাধারণভাবে বাংলাদেশে শিক্ষিত জনসংখ্যার তুলনায় সাহিত্যের পাঠক খুবই কম। ইদানীং আরও কমে যাচ্ছে।’
তবে তিনি পাঠকদের ওপর তার লেখার কোনো প্রভাব আছে বলে মনে করেন না। পাঠকদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মশিউল আলম বলেন, ‘কয়েকবার এমন হয়েছে, কোনো সংবাদপত্রের সাহিত্য পাতায় আমার গল্প ছাপা হয়েছে, একাধিক পাঠক আমাকে ফোন করে জানতে চেয়েছেন, গল্পে আমি যে ঘটনা বর্ণনা করেছি, তা সত্য কি না, কবে ঘটল সেই ঘটনা। আমার একটা গল্পের ঘটনা ছিল ঢাকার সোবহানবাগের। এক পাঠক আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, “আমরা তো সোবহানবাগেই থাকি, এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, আমরা কিছুই জানতে পারলাম না!” আমার এ ধরনের পাঠকদের বোঝাতে খুব কষ্ট হয়েছে যে, আমি যে গল্প লিখেছি তা আমার কল্পিত কাহিনী, বাস্তবে ঘটেনি। একজন পাঠক আমাকে এমন কথাও বলেছিলেন, যে ঘটনা সত্য নয়, তা লিখে খবরের কাগজে ছাপিয়ে দেওয়া খুবই দায়িত্বহীন কাজ হয়েছে।’
‘আমার গল্প-উপন্যাস সম্পর্কে পাঠকদের এই একটা জিজ্ঞাসার মুখোমুখি আমি বারবার হই; ঘটনা সত্য কি না। এটা বেশ মজার ব্যাপার। একটু হতাশার ব্যাপারও বটে; কারণ এ পাঠকদের ফিকশন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। আসলে তারা সাহিত্যের পাঠক নন’ যোগ করেন এ কথাসাহিত্যিক।
মশিউল আলমের লেখা উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘তনুশ্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় রাত’, ‘ঘোড়ামাসুদ’, ‘জুবোফস্কি বুলভার’, ‘মাংসের কারবার’, ‘পাকিস্তান’, ‘দ্বিতীয় খুনের কাহিনি’, ‘যেভাবে নাই হয়ে গেলাম’, ‘দুধ’। তার গল্প ‘দুধ’ ইংরেজিতে ‘মিল্ক’ নামে অনূদিত হয়ে শ্রীলঙ্কাভিত্তিক হিমাল সাউদেশিয়ান শর্ট স্টোরি কমপিটিশন ২০১৯-এ শ্রেষ্ঠ গল্প হিসেবে পুরস্কৃত হয়। এ ছাড়া ‘দ্য মিট মার্কেট অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’ নামে তার ইংরেজিতে প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ২০২০ সালের আমেরিকান পেন/হাইম ট্রান্সলেশন ফান্ড গ্র্যান্টস লাভ করে।
ঢাকা জেলার সাতটি থানায় গত সাড়ে ১৩ মাসে ৪৬টি ডাকাতির মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ২৩২ ডাকাত। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ৯২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এরপরও দমছে না ডাকাতরা। ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায়। ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয় সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে একাধিক সূত্র বলছে, বেশিরভাগ ডাকাতির ঘটনা ঘটছে মহাসড়কে। কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে আবার কখনো সরাসরি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই থানায় মামলা করছে না। মোটা অঙ্কের টাকা বা স্বর্ণালংকার ডাকাতির ঘটনায় শুধু মামলা হচ্ছে। আর ডাকাতির শিকার বেশিরভাগই তাদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ হারানোর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। ফলে ডাকাতির প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না। যার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত গত রবিবার রাতে গাজীপুর-খুলনা রুটে চলা রিসাত পরিবহন (প্রা.) লিমিটেডের একটি বাসে নৃশংস ডাকাতির ঘটনা। এ ঘটনার পর আশুলিয়া থানাধীন নবীনগর পুলিশ ফাঁড়িতে জিডি করে পরিবহন কর্তৃপক্ষ। আর ভুক্তভোগীদের কয়েকজন মোবাইল ফোন হারানোর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
নাম প্রকাশ না করে ঢাকা জেলার এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে কেরানীগঞ্জ মডেল ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকায়। এ ছাড়াও আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই, নবাবগঞ্জ ও দোহার থানা এলাকায় তুলনামূলক কম ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতির ঘটনায় তারাও উদ্বিগ্ন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সড়কের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছি। টহল পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তারাও টহল বাড়িয়েছেন। একই সঙ্গে যেন নিñিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা যার সে লক্ষ্যে সিসি (ক্লোজ সার্কিট) টিভি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি।’ আগের চেয়ে ডাকাতি অনেকটাই কমে এসেছে বলেও দাবি করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
ঢাকা জেলা এসপির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা জেলা পুলিশের অধীনে রয়েছে সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, কেরানীগঞ্জ মডেল, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহার থানা। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডাকাতির মামলা হয়েছে ৪২টি। এসব মামালায় গ্রেপ্তার হয়েছে ২১৩ ডাকাত যাদের ৯২ জন অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। আর চলতি বছরের দেড় মাসে চারটি ডাকাতির মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছে ১৯ ডাকাত, যাদের ৯ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
ঢাকা জেলা পুলিশের দায়িত্বশীলরা বলছেন, মহাসড়কের একটা বড় এলাকা ফাঁকা স্থানে। আশপাশে কোনো বাড়িঘর থাকে না। আর সড়কের সব এলাকা পুলিশ দিয়ে পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না। এ সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে ডাকাতরা। তবে যেসব স্থানে ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে সেসব স্থানে টহল পুলিশ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হয়েছে আট ডাকাত। এ ডাকাতচক্রটি গত ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা-নবাবগঞ্জ রোডের কোনাখোলায় নবকলি নামক একটি বাস থামিয়ে র্যাব পরিচয়ে আনোয়ার হোসেন খোকন ও নাহিদ নামে দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরে তাদের মারধর করে কাছে থাকা স্বর্ণ বিক্রির ৭১ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়।
ভুক্তভোগী দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে জানান, তাঁতীবাজারে স্বর্ণ বিক্রি করে নাহিদ ৪০ লাখ ও খোকন ৩১ লাখ টাকা নিয়ে দোহারে যাওয়ার উদ্দেশে নবকলি বাসে ওঠেন। কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন কোনাখোলা এলাকায় পৌঁছলে একটি সাদা হাইয়েস মাইক্রোবাস জোর করে বাসটি থামায়। র্যাবের পোশাক পরে বাসে উঠেই তারা যাত্রীদের বলে, ‘আপনারা কেউ ঘাবড়াবেন না। দুজন আসামি আছে বাসে। তাদের গ্রেপ্তার করতে এসেছি’। এরপরই নাহিদ ও খোকনকে নিয়ে টাকার ব্যাগসহ বাস থেকে নামিয়ে মাইক্রোতে তোলে তারা। দুজনকে বেঁধে ইলেকট্রিক শক দেয় ও মারধর করে এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে ৭১ লাখ টাকা নিয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের নিমতলা এলাকায় মহাসড়কের পাশে ফেলে দেয়।
এ চক্রই গত ১৭ জানুয়ারি গোবিন্দ চন্দ্র দাস, লিটন চন্দ্র দাস ও বাপন চন্দ্র দাস নামের তিন ব্যক্তির কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা দামের রুপার অলংকার তৈরির কাঁচামাল ডাকাতি করে। ওই তিনজন তাঁতীবাজার থেকে অটোরিকশায় করে কেরানীগঞ্জে যাওয়ার পথে শাক্তা জামিয়া আরাবিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার সামনে র্যাব পরিচয় দেওয়া ওই ডাকাতচক্রের কবলে পড়েন।
সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ বলছে, চক্রগুলো ডাকাতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছে। তাদের রয়েছে বড় সিন্ডিকেটও। ফলে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে মুক্ত হতে বেশি বেগ পেতে হয় না তাদের। আর জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের ডাকাতি শুরু করে।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মামুন-অর-রশিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলেও এদের নিজস্ব চক্র জামিন করিয়ে ফেলে। এরপর আবার ডাকাতিতে ফিরে আসে।’ তিনি বলেন, ‘এরা ডাকাতিকে সহজ পেশা মনে করে। কেননা পুলিশ বা র্যাবের পোশাক পরে তারা সহজেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে।’
মোহাম্মদ হাসান। কাজ করতেন গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় আসবাব তৈরির একটি কারখানায়। আট বছর আগে কারখানার ভেতর তাকে হত্যা করা হয়। থানায় মামলা হলে পুলিশ তদন্ত করে। এরপর তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ সংস্থাটিও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে জানায়, হাসানকে কে মেরেছে, তা শনাক্ত করা যায়নি। পরে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করার নির্দেশ দেয়।
এক বছর তদন্ত করে পিবিআই মাদক সেবনে নিষেধ করায় এলাকার আট বখাটে মিলে তাকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজানোর চেষ্টা করে। এমনকি ঘাতকরা এলাকায় প্রকাশ্য থেকে অপরাধ করলেও থানা পুলিশ ও সিআইডি তাদের কিছুই করেনি। ঘটনার মূল অভিযুক্তসহ তিনজনকে আইনের আওতায় এনেছে পিবিআই।
পিবিআই সূত্র জানায়, মো. হাসান (৪৫) খুনের ঘটনায় জড়িত আজিজুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির ওরফে রোমান ও জাফর ইকবালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা পেশাদার মাদক কারবারি এবং একাধিক মামলার আসামি। হত্যাকা-ে আটজন জড়িত। মাদক সেবনে বাধা দেওয়ার জের ধরে অভিযুক্তরা ফার্নিচার কারখানার ভেতরেই হাসানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে যায়। ৫ বছর ৭ মাস থানা পুলিশ ও সিআইডি আসামি শনাক্ত না করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। ২০২১ সালে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। এরপর আদালতে সাক্ষ্য ও মামলায় বিভিন্ন আলামতের সূত্র ধরে জড়িতদের চিহ্নিত করে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই গাজীপুর জেলার পুলিশ পরিদর্শক হাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি রাতে টঙ্গীর দত্তপাড়ায় হাজি মো. মাঈন উদ্দিন মিয়ার আসবাব কারখানার পূর্ব পাশের কক্ষ থেকে হাসানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। হাসান ওই কারখানায় ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন। খুনের পরের দিন তার ভাই মো. বাবু তালুকদার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে টঙ্গী থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন রাত ৯টায় ওই ফার্নিচার কারখানায় হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তার কোনো খোঁজ না পেয়ে কারখানার মালিকসহ অন্যরা কারখানার ভেতর থেকে হাসানের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেন। পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদনে তার নাক, মুখ, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত ও ক্ষতের চিহ্ন থাকা ও রক্তক্ষরণের কথা উল্লেখ করে।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, থানা পুলিশ ৩ বছর ২ মাস ২০ দিন তদন্ত করার পর ওই সময় পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলাটি সিআইডি গাজীপুরে ন্যস্ত করা হয়। ২০১৮ সালের ২ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিআইডি তদন্ত করে আসামি শনাক্ত করা যায়নি বলে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। ২০২১ সালে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য গাজীপুরের পিবিআইকে নির্দেশ দেয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, গত সোমবার রাতভর গাজীপুর ও টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন মঙ্গলবার গ্রেপ্তার তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
যেভাবে খুন করা হয় : প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল, রোমান ও জাফর জানায়, তারা টঙ্গীর বিভিন্ন স্থানে মাদক বিক্রি ও সেবন করত। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে প্রায় ৮-১০ জনের একটি গ্রুপ ছিল। যারা টঙ্গী এলাকার বিভিন্ন স্থানে মাদকের আড্ডা বসাত। সবাই মিলে মাদক সেবন করত। ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেলে তারা আরও ৬-৭ জন সহযোগী মিলে হাসানের কর্মস্থল ওই আসবাব কারখানায় মাদক সেবনের জন্য যায়। হাসান ভেতরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। এক মাস আগেও একই কারণে তাদের সঙ্গে হাসানের বাগ্্বিত-া হয়েছিল। পরে তারা কারখানায় ঢুকে হাসানকে গালিগালাজ করে এবং মাদক সেবন করতে শুরু করে। একপর্যায়ে হাসানকে মারপিট করতে থাকে। এ সময় তারা কারখানার ভেতরে থাকা স্ক্রু-ড্রাইভার, হাতুড়িসহ ফার্নিচার তৈরির অন্যান্য ধারালো সরঞ্জাম দিয়ে হাসানের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কোপায়। হাসপাতালের নেওয়ার পর তিনি মারা যান।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।