
কথাসাহিত্যিক মশিউল আলমের জন্ম ১৯৬৬ সালে, জয়পুরহাটে। মস্কোর পাত্রিস লুমুম্বা গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর দেশে ফিরে সাংবাদিকতা শুরু করেন। লেখালেখি শুরু করেন আশির দশকে।
এবারের বইমেলার তার দুটো অনুবাদের বই প্রকাশিত হয়েছে। দুটোই ফিওদর দস্তয়েভস্কির উপন্যাসের অনুবাদ। একটি ‘তলকুঠুরির কড়চা’। এ উপন্যাস ইংরেজি অনুবাদে ‘নোটস ফ্রম আন্ডারগ্রাউন্ড’ নামে বহুল পরিচিত। অন্যটা ‘নিরীহ’, এটি ইংরেজিতে পরিচিত ‘দ্য মিক ওয়ান’ এবং ‘আ জেন্টল ক্রিয়েচার’ নামে। তিনি দুটি উপন্যাসই অনুবাদ করেছেন মূল রুশ থেকে। দুটি উপন্যাসই মনস্তাত্ত্বিক। দুটি বইয়েরই প্রকাশক মওলা ব্রাদার্স।
মশিউল আলম জানান, সাহিত্যপ্রেমীরা তার মূল পাঠক। বর্তমানে তার পাঠক বেড়েছে আগের তুলনায়। চলতি বইমেলার পাঠক বিষয়ে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বইমেলায় যত মানুষকে ঘুরে বেড়াতে দেখি, তত মানুষকে বই কিনতে দেখি না। ক্রেতা খুবই কম চোখে পড়েছে আমার। সাধারণভাবে বাংলাদেশে শিক্ষিত জনসংখ্যার তুলনায় সাহিত্যের পাঠক খুবই কম। ইদানীং আরও কমে যাচ্ছে।’
তবে তিনি পাঠকদের ওপর তার লেখার কোনো প্রভাব আছে বলে মনে করেন না। পাঠকদের নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মশিউল আলম বলেন, ‘কয়েকবার এমন হয়েছে, কোনো সংবাদপত্রের সাহিত্য পাতায় আমার গল্প ছাপা হয়েছে, একাধিক পাঠক আমাকে ফোন করে জানতে চেয়েছেন, গল্পে আমি যে ঘটনা বর্ণনা করেছি, তা সত্য কি না, কবে ঘটল সেই ঘটনা। আমার একটা গল্পের ঘটনা ছিল ঢাকার সোবহানবাগের। এক পাঠক আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, “আমরা তো সোবহানবাগেই থাকি, এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, আমরা কিছুই জানতে পারলাম না!” আমার এ ধরনের পাঠকদের বোঝাতে খুব কষ্ট হয়েছে যে, আমি যে গল্প লিখেছি তা আমার কল্পিত কাহিনী, বাস্তবে ঘটেনি। একজন পাঠক আমাকে এমন কথাও বলেছিলেন, যে ঘটনা সত্য নয়, তা লিখে খবরের কাগজে ছাপিয়ে দেওয়া খুবই দায়িত্বহীন কাজ হয়েছে।’
‘আমার গল্প-উপন্যাস সম্পর্কে পাঠকদের এই একটা জিজ্ঞাসার মুখোমুখি আমি বারবার হই; ঘটনা সত্য কি না। এটা বেশ মজার ব্যাপার। একটু হতাশার ব্যাপারও বটে; কারণ এ পাঠকদের ফিকশন সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। আসলে তারা সাহিত্যের পাঠক নন’ যোগ করেন এ কথাসাহিত্যিক।
মশিউল আলমের লেখা উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘তনুশ্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় রাত’, ‘ঘোড়ামাসুদ’, ‘জুবোফস্কি বুলভার’, ‘মাংসের কারবার’, ‘পাকিস্তান’, ‘দ্বিতীয় খুনের কাহিনি’, ‘যেভাবে নাই হয়ে গেলাম’, ‘দুধ’। তার গল্প ‘দুধ’ ইংরেজিতে ‘মিল্ক’ নামে অনূদিত হয়ে শ্রীলঙ্কাভিত্তিক হিমাল সাউদেশিয়ান শর্ট স্টোরি কমপিটিশন ২০১৯-এ শ্রেষ্ঠ গল্প হিসেবে পুরস্কৃত হয়। এ ছাড়া ‘দ্য মিট মার্কেট অ্যান্ড আদার স্টোরিজ’ নামে তার ইংরেজিতে প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ ২০২০ সালের আমেরিকান পেন/হাইম ট্রান্সলেশন ফান্ড গ্র্যান্টস লাভ করে।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে চড়া দামে খাবার সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ কারসাজির প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। এখানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ৩৫০ টাকা কেজিতে সরবরাহ করা হয়। রোগীদের সব খাবারই চড়া দামে সরবরাহ করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালে বাজারের দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে রোগীদের খাবার সরবরাহ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা তছরুপ করা হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, খাবারের মূল্যতালিকা দরপত্র কমিটির মাধ্যমে ঠিক করা হয়েছে।
জামালপুর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে জেলার সাত উপজেলা এবং কুড়িগ্রামের রৌমারী, রাজিবপুর ও পাশের শেরপুর জেলার রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। সব সরকারি হাসপাতালের মতো এ হাসপাতালের অন্তঃবিভাগেও ভর্তি রোগীদের তিন বেলা খাবার (পথ্য) সরবরাহ করে সরকার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারের মাধ্যমে এ খাবার সরবরাহ করে থাকে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে হাসপাতালের অন্তঃবিভাগে ভর্তি রোগীদের খাবারের (পথ্য) তালিকায় সকালের নাশতায় পাউরুটি, সাগর কলা, ফার্মের মুরগির ডিম, চিড়া, চিনি, দুধ ও বিস্কুট দেওয়া হয়। দুপুরে ও রাতের খাবারে ভাত, খাসির মাংস, ডিম, রুই/কাতলা মাছ, ফার্মের মুরগির মাংস, গ্রাস কার্প মাছ ও বিভিন্ন সবজি থাকে। রুটিন অনুযায়ী একেক দিন একেক ধরনের খাবার রোগীদের দেওয়া হয়।
গত বছর ১ নভেম্বর কার্যকর হওয়া ডায়েট স্কেলের তালিকা থেকে জানা যায়, হাসপাতালে সরবরাহ করা প্রতি কেজি ফার্মের মুরগি ৩৫০, প্রতিটি ডিম ১৬, প্রতিটি সাগর কলা ১১ টাকা ৫০ পয়সা, দুধ প্রতি লিটার ৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি এলাচ ২ হাজার ৬০০, ভাত ৮৫, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ২৩০, প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০, প্রতি কেজি মসুরের ডাল ১৭০, প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৫০ ও প্রতি কেজি রুই/কাতলা মাছ ৪৫০ টাকা ধরা হয়েছে। ছোটখাটো অন্যান্য পণ্যের দামও বাজারের দামের চেয়ে বেশি ধরা হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভর্তি রোগীদের খাবার সরবরাহের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাসুম এন্টারপ্রাইজকে নির্বাচিত করেছে। নির্ধারিত দাম গত বছর ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের জন্য সরবরাহ করা খাবারের দাম বাজারের দামের চেয়ে অনেক বেশি। হাসপাতালে সরবরাহ করা প্রতিটি খাবার (পথ্য) শহরের বাজারে অনেক কম দামে পাওয়া যায়। হাসপাতালের তালিকায় থাকা পণ্য বাজারের দামের চেয়ে বেশি দাম ধরে দরপত্র নির্ধারণ করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কারসাজিতে প্রতি বছরই খাবারের দামে এমন অনিয়ম করা হয়। হাসপাতালের খাবারের মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচার এ অনিয়মের জন্য দায়ী। অনিয়ম বন্ধ করে সরকারি টাকা তছরুপের হাত থেকে রক্ষা করা ও ন্যায্যমূল্যে মানসম্মত খাবার সরবরাহ করার দাবি জানায় স্থানীয়রা।
গত মঙ্গলবার সকালে পৌর শহরের স্টেশন বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী মো. সুরুজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে তিনি দেশ রূপান্তরকে জানান, এখন খুচরা বাজারে ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কয়েক দিন আগে প্রতি কেজি ১৩০-১৫০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। ব্রয়লার মুরগি কখনো ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়নি।
স্টেশন বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ী রাজীব সাহা দেশ রূপান্তরকে জানান, খুচরা বাজারে এখন মোটা চাল ৫৫, তেল ১৮৫ টাকা লিটার, প্রতিটি ডিম ১১ আর ডাল (মোটা) প্রতি কেজি ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি এলাচ ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজার এখন ঠিকঠাক আছে। কোনো সমস্যা নেই। হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঁচ দিন আগে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছেন মাদারগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালিয়ার সোলাইমান হোসেন। তার স্বজনরা বাড়ি থেকে খাবার দিয়ে যান। তা-ই তিনি খান। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাসপাতালে যে খাবার দেওয়া হয় তার মান খারাপ। খাওয়া যায় না। যে পরিমাণ খাবার দেওয়া হয় তা দিয়ে হয়ও না। পরিমাণে কম।’
পুরুষ সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে কথা হয় মেলান্দহ উপজেলার ঝাউগড়ার হারুন অর রশিদের সঙ্গে। খাবারের বিষয়ে তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেওয়া হয় তা দিয়ে হয় না। তাই বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসতে হয়।’
মাদারগঞ্জের ঝাড়কাটার হামিদা বেগম শারীরিক দুর্বলতা ও পায়ের গিঁটে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছেন মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার খাবার আমি খাইতে পারি না। এই খাবার অনেকেই খায় না। বাড়ি থাইক্যা খাবার নিয়ে আসতে হয়।’
জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহে অনিয়ম আমরা প্রতি বছরই লক্ষ করি। মূল্যতালিকায় যেসব পণ্য কখনোই দেওয়া হয় না, সেসবের দাম বাজারের দামের চেয়ে অনেক কম দেখানো দেয়। আর যেসব পণ্য/খাবার নিয়মিত দিতে হয়, সেগুলোর দাম বাজারের দামের চেয়ে অনেক বেশি ধরা হয়।’
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাসপাতালের খাবারের মূল্যতালিকা দরপত্র কমিটির মাধ্যমে নির্ধারিত। নির্ধারিত ঠিকাদারকে আমরা খাবার সরবরাহের অনুমোদন দিয়েছি।’
দিন যতই অতিবাহিত হচ্ছে বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলার আকর্ষণ ততই বাড়ছে। প্রতিদিন শতাধিক নতুন বই আসছে মেলায়। দর্শনার্থী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বিক্রিও। প্রতিবারের মতো এবারও পাঠকদের আগ্রহের শীর্ষে গল্প-উপন্যাস। প্রকাশকরা জানিয়েছেন, গত ১৫ দিনে মেলায় বেশি বিক্রি হয়েছে গল্প-উপন্যাসের বই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাঠকদের চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে গল্প-উপন্যাসের বইয়ে স্টল সাজিয়েছেন প্রকাশকরা। বরাবরের মতো এবারও হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, ইমদাদুল হক মিলন, সাদাত হোসাইনসহ জনপ্রিয় লেখকদের বই বিক্রির শীর্ষে রয়েছে। অনন্যা প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মীরা জানান, অন্যান্য বইয়ের তুলনায় উপন্যাস ও গল্পের বই বেশি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে হুমায়ূন আহমেদের বই এখনো বেশি বিক্রি হচ্ছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিনা আমান তানজুম দেশ রূপান্তরকে বলেন, উপন্যাস বেশি পড়া হয়। উপন্যাসে বিভিন্ন ধরনের জীবনগাথা থাকে; সেগুলো আমাকে নাড়া দেয়। তাই উপন্যাস বেশি পড়া হয়।
এদিকে বই দেখা ও কেনা ছাড়াও মেলা প্রাঙ্গণ নগরবাসীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত স্থান ছাড়াও টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বরের রাস্তায় হাজারো মানুষের আড্ডায় গতকাল বুধবার বইমেলা হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত। যতই দিন যাচ্ছে, মেলায় বইপ্রেমীদের ভিড় ততই বেড়ে চলেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে নতুন বইয়ের সংখ্যাও। নতুন বইয়ের টানেই হোক কিংবা মেলার টানেÑবইপ্রেমীরা মেলায় আসছেন। মেলা শুরু হওয়ার পর বাংলা একাডেমি চিত্র বদলে গেছে।
নতুন বই : গতকাল ছিল বইমেলার ১৫তম দিন। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। গতকাল নতুন বই এসেছে ৮৪টি।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হয় ‘বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শহীদ ইকবাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হাফিজ রশিদ খান, অনিকেত শামীম এবং সরকার আশরাফ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সাজ্জাদ আরেফিন।
প্রাবন্ধিক বলেন, লিটল ম্যাগাজিন একটা চিরনতুন প্ল্যাটফর্ম। সময়ের সেবা না করে সময়কে সৃষ্টি করার চেষ্টাÑ এসবই লিটল ম্যাগাজিনের মূল বৈশিষ্ট্য। লিটল ম্যাগাজিনের দিগ¦লয় চলিষ্ণু ও ক্রমবর্ধমান। এর ধারণা-বৈশিষ্ট্য কিংবা পন্থা ও পরিণাম অনতিক্রান্ত নয়, ক্রমবিকশিত ও পরিবর্তিত। আর তা নিশ্চয়ই এদেশের মৃত্তিকা ও সংস্কৃতিকে অনুরুদ্ধ করেই পরিচালিত ও বিকিরিত। পরিচর্যার পথটিও সে লক্ষ্যেই নির্ধারিত।
আলোচকরা বলেন, প্রচলিত ও গতানুগতিক সাহিত্যচর্চার বাইরে নতুন চিন্তাচেতনাকে ধারণ করে যে পত্রিকা, সেটাই লিটল ম্যাগাজিন। নতুন ও তরুণ লেখকরাই লিটল ম্যাগাজিনের ধারক। প্রাতিষ্ঠানিকতার বাইরে থেকে প্রতিষ্ঠান-বিরোধিতার একটি মাধ্যম লিটল ম্যাগাজিন। আধুনিক ও প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার স্ফুরণ ঘটে এই পত্রিকায়। প্রচলিত ধারণাকে অস্বীকার করে নতুন কিছু বিনির্মাণ করতে চায় বলে লিটল ম্যাগাজিন সবসময়ই স্পর্ধিত এক চর্চার নাম।
সভাপতির বক্তব্যে সাজ্জাদ আরেফিন বলেন, সাহিত্য আন্দোলনকে বেগবান করতে প্রথাবিরোধী তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে লিটল ম্যাগাজিনের গৌরবকে সমুজ্জ্বল রাখতে হবে। লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের গতিময়তা ফিরিয়ে আনার জন্য তরুণদের উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে হবে।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন দিলারা হাফিজ, হাকিম আরিফ, আঁখি সিদ্দিকা ও জয় শাহরিয়ার।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন মোহাম্মদ সাদিক, কামরুল হাসান, সাজ্জাদ আরেফিন, টিমুনী খান, কৌমুদী নার্গিস। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী আফতাব আহমেদ মাহাবুব, পলি পারভীন, কাজী মদীনা। এ ছাড়া ছিল সুলতানা আক্তারের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘স্কেচ একাডেমি অব ফাইন আর্টস’ এবং দীপ্তি রাজবংশীর পরিচালনায় ‘বাংলাদেশ লোকসংগীত পরিষদ’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন লীনা তাপসী খান, ফাতেমা-তুজ-জোহরা, খায়রুল আনাম শাকিল, সুমন মজুমদার, মাহবুবা রহমান, সম্পা দাস, ডা. তাপস বোস, শহীদ কবীর পলাশ, আফরিদা জাহিন জয়ীতা। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন কাজী মো. ইমতিয়াজ সুলতান (তবলা), সুমন রেজা খান (কি-বোর্ড), মো. মনিরুজ্জামান (বাঁশি), ফিরোজ খান (সেতার)।
আজকের সময়সূচি : আজ ৩ ফাল্গুন ১৪২৯/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, বৃহস্পতিবার। অমর একুশে বইমেলার ১৬তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হবে ‘বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকেন্দ্রীকরণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ফরিদ আহমেদ দুলাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মাহমুদ কামাল, হেনরী স্বপন, নজিবুল ইসলাম এবং সাজ্জাদ আহসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অনীক মাহমুদ।
গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্সেসের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সাহিদা সুলতানা বিনু। পড়ছেন বস্ত্র পরিচ্ছেদ ও বয়নশিল্প বিষয়ে। বইমেলায় এসেছেন বন্ধুদের সঙ্গে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যার দিকে বইমেলা প্রাঙ্গণে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় বিনুর। তিনি বলেন, ‘পাঠ্যবই পড়ার পাশাপাশি ভ্রমণকাহিনী পড়তেই বেশি ভালো লাগে।’
মেলায় কার সঙ্গে এসেছেন জানতে চাইলে বিনু বলেন, ‘মেলায় আসা হয় পরিবারের সঙ্গে। তবে এবারের বইমেলায় বন্ধুদের সঙ্গে এসেছি।’
মেলায় এসে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেলার পরিবেশ ভালো লাগছে। কিন্তু প্রবেশপথে দীর্ঘ লাইন ও ধুলোর জন্য কিছুটা সমস্যা হয়েছে।’ কেমন লেখা পড়তে চান জানতে চাইলে বিনু বলেন, ‘সব সময় নির্বাচিত লেখা বেশি পড়া হয়। এবারের মেলায় অনেক তরুণ লেখকের বই বেরিয়েছে। তবে সব লেখকের লেখা পড়া যায় না। যে লেখক তার লেখায় চরিত্র ও গল্প ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন, এমন লেখকের লেখা পড়তে চাই। অর্থাৎ একটি সার্থক উপন্যাস পড়তে চাই।’
বইয়ের দাম নিয়ে কিছুটা অখুশি এই পাঠক বলেন, ‘বইয়ের দাম অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশি। অনেক স্টল ঘুরেছি। বই দেখেছি। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় চিন্তায় পড়ে গেছি, পছন্দের বইগুলো সংগ্রহ করতে পারব কি না!’
বই কেনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনো কেনা হয়নি। স্টল ঘুরে দেখছি। পছন্দসই বই পেলে কিনব। তবে লেখক সাদাত হোসাইনের ‘শঙ্খচূড়” উপন্যাসটি বন্ধুর কাছ থেকে উপহার পেয়েছি।’
ঢাকা জেলার সাতটি থানায় গত সাড়ে ১৩ মাসে ৪৬টি ডাকাতির মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে ২৩২ ডাকাত। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ৯২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এরপরও দমছে না ডাকাতরা। ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায়। ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) কার্যালয় সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে একাধিক সূত্র বলছে, বেশিরভাগ ডাকাতির ঘটনা ঘটছে মহাসড়কে। কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে আবার কখনো সরাসরি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই থানায় মামলা করছে না। মোটা অঙ্কের টাকা বা স্বর্ণালংকার ডাকাতির ঘটনায় শুধু মামলা হচ্ছে। আর ডাকাতির শিকার বেশিরভাগই তাদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ হারানোর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। ফলে ডাকাতির প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না। যার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত গত রবিবার রাতে গাজীপুর-খুলনা রুটে চলা রিসাত পরিবহন (প্রা.) লিমিটেডের একটি বাসে নৃশংস ডাকাতির ঘটনা। এ ঘটনার পর আশুলিয়া থানাধীন নবীনগর পুলিশ ফাঁড়িতে জিডি করে পরিবহন কর্তৃপক্ষ। আর ভুক্তভোগীদের কয়েকজন মোবাইল ফোন হারানোর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
নাম প্রকাশ না করে ঢাকা জেলার এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে কেরানীগঞ্জ মডেল ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা এলাকায়। এ ছাড়াও আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই, নবাবগঞ্জ ও দোহার থানা এলাকায় তুলনামূলক কম ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতির ঘটনায় তারাও উদ্বিগ্ন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) আসাদুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সড়কের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছি। টহল পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তারাও টহল বাড়িয়েছেন। একই সঙ্গে যেন নিñিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা যার সে লক্ষ্যে সিসি (ক্লোজ সার্কিট) টিভি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি।’ আগের চেয়ে ডাকাতি অনেকটাই কমে এসেছে বলেও দাবি করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
ঢাকা জেলা এসপির কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা জেলা পুলিশের অধীনে রয়েছে সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, কেরানীগঞ্জ মডেল, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহার থানা। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ডাকাতির মামলা হয়েছে ৪২টি। এসব মামালায় গ্রেপ্তার হয়েছে ২১৩ ডাকাত যাদের ৯২ জন অপরাধ স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। আর চলতি বছরের দেড় মাসে চারটি ডাকাতির মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হয়েছে ১৯ ডাকাত, যাদের ৯ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
ঢাকা জেলা পুলিশের দায়িত্বশীলরা বলছেন, মহাসড়কের একটা বড় এলাকা ফাঁকা স্থানে। আশপাশে কোনো বাড়িঘর থাকে না। আর সড়কের সব এলাকা পুলিশ দিয়ে পাহারা দেওয়া সম্ভব হয় না। এ সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে ডাকাতরা। তবে যেসব স্থানে ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে সেসব স্থানে টহল পুলিশ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হয়েছে আট ডাকাত। এ ডাকাতচক্রটি গত ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা-নবাবগঞ্জ রোডের কোনাখোলায় নবকলি নামক একটি বাস থামিয়ে র্যাব পরিচয়ে আনোয়ার হোসেন খোকন ও নাহিদ নামে দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। পরে তাদের মারধর করে কাছে থাকা স্বর্ণ বিক্রির ৭১ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে দেয়।
ভুক্তভোগী দুই স্বর্ণ ব্যবসায়ী দেশ রূপান্তরকে জানান, তাঁতীবাজারে স্বর্ণ বিক্রি করে নাহিদ ৪০ লাখ ও খোকন ৩১ লাখ টাকা নিয়ে দোহারে যাওয়ার উদ্দেশে নবকলি বাসে ওঠেন। কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন কোনাখোলা এলাকায় পৌঁছলে একটি সাদা হাইয়েস মাইক্রোবাস জোর করে বাসটি থামায়। র্যাবের পোশাক পরে বাসে উঠেই তারা যাত্রীদের বলে, ‘আপনারা কেউ ঘাবড়াবেন না। দুজন আসামি আছে বাসে। তাদের গ্রেপ্তার করতে এসেছি’। এরপরই নাহিদ ও খোকনকে নিয়ে টাকার ব্যাগসহ বাস থেকে নামিয়ে মাইক্রোতে তোলে তারা। দুজনকে বেঁধে ইলেকট্রিক শক দেয় ও মারধর করে এবং অস্ত্র ঠেকিয়ে ৭১ লাখ টাকা নিয়ে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের নিমতলা এলাকায় মহাসড়কের পাশে ফেলে দেয়।
এ চক্রই গত ১৭ জানুয়ারি গোবিন্দ চন্দ্র দাস, লিটন চন্দ্র দাস ও বাপন চন্দ্র দাস নামের তিন ব্যক্তির কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা দামের রুপার অলংকার তৈরির কাঁচামাল ডাকাতি করে। ওই তিনজন তাঁতীবাজার থেকে অটোরিকশায় করে কেরানীগঞ্জে যাওয়ার পথে শাক্তা জামিয়া আরাবিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার সামনে র্যাব পরিচয় দেওয়া ওই ডাকাতচক্রের কবলে পড়েন।
সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ বলছে, চক্রগুলো ডাকাতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদ গড়ে তুলেছে। তাদের রয়েছে বড় সিন্ডিকেটও। ফলে গ্রেপ্তার করলেও জামিনে মুক্ত হতে বেশি বেগ পেতে হয় না তাদের। আর জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের ডাকাতি শুরু করে।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ওসি মামুন-অর-রশিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হলেও এদের নিজস্ব চক্র জামিন করিয়ে ফেলে। এরপর আবার ডাকাতিতে ফিরে আসে।’ তিনি বলেন, ‘এরা ডাকাতিকে সহজ পেশা মনে করে। কেননা পুলিশ বা র্যাবের পোশাক পরে তারা সহজেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে।’
মোহাম্মদ হাসান। কাজ করতেন গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায় আসবাব তৈরির একটি কারখানায়। আট বছর আগে কারখানার ভেতর তাকে হত্যা করা হয়। থানায় মামলা হলে পুলিশ তদন্ত করে। এরপর তদন্ত করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এ সংস্থাটিও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে জানায়, হাসানকে কে মেরেছে, তা শনাক্ত করা যায়নি। পরে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করার নির্দেশ দেয়।
এক বছর তদন্ত করে পিবিআই মাদক সেবনে নিষেধ করায় এলাকার আট বখাটে মিলে তাকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজানোর চেষ্টা করে। এমনকি ঘাতকরা এলাকায় প্রকাশ্য থেকে অপরাধ করলেও থানা পুলিশ ও সিআইডি তাদের কিছুই করেনি। ঘটনার মূল অভিযুক্তসহ তিনজনকে আইনের আওতায় এনেছে পিবিআই।
পিবিআই সূত্র জানায়, মো. হাসান (৪৫) খুনের ঘটনায় জড়িত আজিজুল ইসলাম, হুমায়ুন কবির ওরফে রোমান ও জাফর ইকবালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা পেশাদার মাদক কারবারি এবং একাধিক মামলার আসামি। হত্যাকা-ে আটজন জড়িত। মাদক সেবনে বাধা দেওয়ার জের ধরে অভিযুক্তরা ফার্নিচার কারখানার ভেতরেই হাসানকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে যায়। ৫ বছর ৭ মাস থানা পুলিশ ও সিআইডি আসামি শনাক্ত না করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। ২০২১ সালে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। এরপর আদালতে সাক্ষ্য ও মামলায় বিভিন্ন আলামতের সূত্র ধরে জড়িতদের চিহ্নিত করে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই গাজীপুর জেলার পুলিশ পরিদর্শক হাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি রাতে টঙ্গীর দত্তপাড়ায় হাজি মো. মাঈন উদ্দিন মিয়ার আসবাব কারখানার পূর্ব পাশের কক্ষ থেকে হাসানের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। হাসান ওই কারখানায় ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করতেন। খুনের পরের দিন তার ভাই মো. বাবু তালুকদার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে টঙ্গী থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন রাত ৯টায় ওই ফার্নিচার কারখানায় হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তার কোনো খোঁজ না পেয়ে কারখানার মালিকসহ অন্যরা কারখানার ভেতর থেকে হাসানের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করেন। পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদনে তার নাক, মুখ, বুকসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত ও ক্ষতের চিহ্ন থাকা ও রক্তক্ষরণের কথা উল্লেখ করে।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, থানা পুলিশ ৩ বছর ২ মাস ২০ দিন তদন্ত করার পর ওই সময় পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলাটি সিআইডি গাজীপুরে ন্যস্ত করা হয়। ২০১৮ সালের ২ মার্চ থেকে ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সিআইডি তদন্ত করে আসামি শনাক্ত করা যায়নি বলে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। ২০২১ সালে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য গাজীপুরের পিবিআইকে নির্দেশ দেয়।
তদন্তকারী কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান বলেন, গত সোমবার রাতভর গাজীপুর ও টঙ্গীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন মঙ্গলবার গ্রেপ্তার তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
যেভাবে খুন করা হয় : প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুল, রোমান ও জাফর জানায়, তারা টঙ্গীর বিভিন্ন স্থানে মাদক বিক্রি ও সেবন করত। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে প্রায় ৮-১০ জনের একটি গ্রুপ ছিল। যারা টঙ্গী এলাকার বিভিন্ন স্থানে মাদকের আড্ডা বসাত। সবাই মিলে মাদক সেবন করত। ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারি বিকেলে তারা আরও ৬-৭ জন সহযোগী মিলে হাসানের কর্মস্থল ওই আসবাব কারখানায় মাদক সেবনের জন্য যায়। হাসান ভেতরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেন। এক মাস আগেও একই কারণে তাদের সঙ্গে হাসানের বাগ্্বিত-া হয়েছিল। পরে তারা কারখানায় ঢুকে হাসানকে গালিগালাজ করে এবং মাদক সেবন করতে শুরু করে। একপর্যায়ে হাসানকে মারপিট করতে থাকে। এ সময় তারা কারখানার ভেতরে থাকা স্ক্রু-ড্রাইভার, হাতুড়িসহ ফার্নিচার তৈরির অন্যান্য ধারালো সরঞ্জাম দিয়ে হাসানের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কোপায়। হাসপাতালের নেওয়ার পর তিনি মারা যান।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
সফররত চীনের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা, কানেকটিভিটি, ইন্দো-প্যাসিফিক ও বৈশ্বিক উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনলাইন জুয়া এবং মাদক পাচারের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও চীনের পররাষ্ট্র সচিবপর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ওয়েইডংয়ের দুই দদফা বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন চীনা ভাইস মিনিস্টার। তবে বৈঠক শেষে ঢাকা কিংবা চীন কোনো পক্ষই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেনি।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা থেকে পররাষ্ট্র সচিব ও চীনা ভাইস মিনিস্টার প্রতিনিধিদল নিয়ে বের হন। সেখান থেকে ওয়েইডং যান পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে। সেখানে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরের সামনে চীনের একটি প্রতিনিধিদল পদ্মা সেতু নিয়ে ভাইস মিনিস্টারকে চায়নিজ ভাষায় বিস্তারিত ব্রিফ করেন। ব্রিফ শেষে গাড়ি নিয়ে পদ্মা সেতুতে ওঠেন ওয়েইডং এবং তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধিদল। সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনতো।
রোহিঙ্গা ইস্যু : বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব উঠেছে। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে কাজ করে আসছে চীন। ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডংয়ের সফর মূলত গত ১৮ এপ্রিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-চীন বৈঠকের ফলোআপ। একই সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ইতিমধ্যে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সমঝোতা করাতে পেরেছে চীন। এরপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রমাণ করতে পারলে সেটি চীনের জন্য ভালো একটি অর্জন হবে। সেজন্য চীনের বিশেষ আগ্রহ আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া তারা এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা চায়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বৈঠকে ভাইস মিনিস্টার উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য উপকার হবে। পাইলট প্রজেক্টের প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নিজ নিজ প্রতিনিধিদের মিয়ানমারে “যান এবং দেখুন” এবং বাংলাদেশে “আসুন এবং কথা বলুন” সফরের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে চীনা পক্ষ।’
জিডিআই : বৈঠকে চীনের নতুন বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে (জিডিআই) বাংলাদেশকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকা সফরের সময় জিডিআই বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করেন। জিডিআই উদ্যোগে বাংলাদেশ যুক্ত হোক, চীন এটি চায় এবং এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় পক্ষ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগে বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় পক্ষ বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে নিয়মিত স্টাফপর্যায়ের আলোচনা ও বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে।
দুই দেশের মধ্যে সফর করার প্রস্তাব : উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফরে চীনের আগ্রহের বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেছিলেন। এরপর আর কোনো উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফর হয়নি। এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে বেইজিং কর্র্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, সান ওয়েইডংকে গত নভেম্বরে এশিয়াবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর আগে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকায় ভাইস মিনিস্টার হিসেবে এটি তার প্রথম সফর। তবে ১০ বছর আগে তিনি ভিন্ন পদে বাংলাদেশ সফর করেছেন।
আজ রবিবার চীনের ভাইস মিনিস্টার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। গত শুক্রবার রাতে প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকায় পৌঁছান চীনের ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডং। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান এবং ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে চীনা ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং উল্লেখ করেন, তিনি ১০ বছর পর বাংলাদেশ সফর করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অর্জন দেখে খুবই মুগ্ধ। উভয় প্রতিনিধিদল পারস্পরিক স্বার্থ এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। চীনা পক্ষ ‘এক চীননীতি’তে অব্যাহত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক বৈঠক বিনিময় স্মরণ করেছেন, যা সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও গভীর করেছে।
এতে আরও বলা হয়, বৈঠকে কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় চীনের টিকা সহায়তার জন্য বাংলাদেশ আবারও ধন্যবাদ জানিয়েছে। উভয় পক্ষ বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। এ সময় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগের মতো মেগা প্রকল্পের আসন্ন উদ্বোধনকে স্বাগত জানায় চীন।
উভয় পক্ষই বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে কয়েকটি অতিরিক্ত প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে। এ ছাড়া গত বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে চীনে রপ্তানি বাড়ানোর উপায় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনা পক্ষ গ্রীষ্মকালীন ফল আমদানিতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা এবং হিমায়িত খাবার আমদানিতে আগ্রহী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার আওতায় শাকসবজি, ওষুধ, কাঁচা চামড়া, ফুটওয়্যার, পোশাক ইত্যাদির মতো অন্যান্য রপ্তানি আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চীনা ভাইস মিনিস্টার চট্টগ্রামে চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা কোম্পানির বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আশ্বাস দেন। তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-গুয়াংঝু সরাসরি ফ্লাইট আবার চালুর জন্য চীনা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে সময়মতো আলোচনার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে উভয় পক্ষ নিয়মিত কনস্যুলার পরামর্শ চালু করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং বায়োটেকনোলজিতে উদ্ভাবনের বিষয়ে চীনের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এতে আরও বলা হয়, জননিরাপত্তা ইস্যুতে সংলাপ আয়োজনে দুই পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আবহাওয়া স্যাটেলাইটের তথ্য শেয়ার করার জন্য বাংলাদেশ চীনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। চীনা পক্ষ বাংলাদেশ থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।