
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘ঢাকা সফররত মার্কিন কূটনীতিক দেশের গণতন্ত্র নিয়ে সরকারকে পরিষ্কার বার্তা দিয়ে গেছেন। দেশে গণতন্ত্র নিম্নগামী থাকলে, সম্পর্কের অবনতি হবে, সহযোগিতা কমে আসবে।’ গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির স্বাধীনতা হলে তেল-গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এবং বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকনের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের উদ্যোগে আয়োজিত এ নাগরিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মার্কিন কূটনীতিকের প্রসঙ্গ তুলে আমীর খসরু আরও বলেন, ‘মার্কিন কূটনীতিক মানবাধিকার প্রশ্নে কোনো আপস নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ছাড়া কোনো গণতন্ত্র চলতে পারে না। এ কথাগুলো তিনি ঢাকায় বসে বলেছেন। কথাগুলো দেশের মানুষের জন্য কত অপমানকর!’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা তাদের পকেটে চলে গেছে। এ জন্য বাংলাদেশের মানুষ যেমন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছে, তেমনি বিশ্ববাসী, বিশ্ববিবেক প্রতিবাদ করছে। এ প্রতিবাদ বাংলাদেশে যেমন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, বিশ্ববাসীও জোর করে ক্ষমতায় যাওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করেছে।’
সরকারের কর্মকা-ে সমালোচনা করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘সরকার জনবিচ্ছিন্ন হয়ে রাষ্ট্রীয় ও দলীয় সন্ত্রাস ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে রয়েছে। পতন ঠেকাতে কখনো দুটোকেই তারা একত্রে ব্যবহার করছে। গুম-খুন-আক্রমণ-গ্রেপ্তার-ভয়ভীতি দেখানো ইত্যাদিই তাদের এখন ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রধান অস্ত্র।’
আওয়ামী লীগের অর্থনীতির মডেল লুটপাটের মডেল : দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার কথা তুলে ধরে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু বলেন, ‘দেশের বর্তমান অর্থনীতির যে মডেল বিরাজ করছে তাকে “আওয়ামী লীগের লুটপাটের মডেল” বলা যায়। দেশের সাধারণ আমদানিকারকরা আজকে ডলারের অভাবে এলসি খুলতে ও পণ্য আমদানি করতে পারছেন না। কিন্তু সরকারের ঘনিষ্ঠরা ডলার পাচ্ছে, তারাই এলসি খুলতে পারছে এবং তারাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।’
সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন কবির বেপারির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নাগরিক সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, কেন্দ্রীয় নেতা আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, জাগপার প্রেসিডিয়াম মেম্বার আসাদুর রহমান খান, তাঁতী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনির প্রমুখ।
তুরস্কে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিএনপির ত্রাণ : গতকাল বিকেলে তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিএনপি পক্ষ থেকে জরুরি ওষুধ ও শুকনো খাদ্যসামগ্রী ঢাকায় তুরস্ক দূতাবাসে পৌঁছে দিয়েছেন দলটির নেতারা। এ সময় আমীর খসরু ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটি সদস্য শামা ওবায়েদ এবং দলটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডাক্তার রফিকুল ইসলাম।
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস কোড বা আইএমডিজি কোড ঠিকমতো অনুসরণ না করা, ফায়ার লাইসেন্স হালনাগাদ না করা প্রভৃতি ত্রুটির কারণে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলোতে (অফডক) বিপজ্জনক পণ্য ও রাসায়নিক পণ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বা অক্সিডল বা পারহাইড্রল বা সুপারঅক্সল (এইচটুওটু) রপ্তানি নিয়ে বিপাকে পড়েছে ছয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন সিকদার বিপ্লব দেশ রূপান্তরকে জানান, একসময় ছয়-সাতটি ডিপোতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড হ্যান্ডলিং ও প্রক্রিয়াকরণ করা হতো। গত বছর ৪ জুন রাতে সীতাকু-ে বিএম কনটেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের কনটেইনারে বিস্ফোরণ ও আগুনের ঘটনার পর অন্য ডিপোগুলোতেও এ জাতীয় পণ্যের হ্যান্ডলিং বন্ধ থাকে। পরে সিসিটিএল নামের ডিপোকে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড হ্যান্ডলিংয়ের অনুমতি দেওয়া হলেও কয়েক দিন আগে তা স্থগিত করে কাস্টম হাউজ। এখন কোনো অফডকেই হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে না।
কাস্টমস সূত্র জানায়, বিপজ্জনক পণ্য (ডেঞ্জারাস গুডস) ও রাসায়নিক পণ্য সংরক্ষণ ও পরিচালনের ক্ষেত্রে আইএমডিজি নীতিমালা অনুসরণ না করা, ফায়ার লাইসেন্স হালনাগাদ না থাকা, আমদানি-রপ্তানির জন্য প্রক্রিয়াকৃত কনটেইনার একসঙ্গে সংরক্ষণের কারণে ঝুঁকি বিবেচনা করে চিটাগাং কনটেইনার ট্রান্সপোর্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিটিএল) বিপজ্জনক ও রাসায়নিক পণ্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ স্থগিত করেছে।
সিসিটিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো কাস্টমসের চিঠিতে বলা হয়, ওই ডিপোতে ডিজি কার্গো হ্যান্ডলিং সংক্রান্ত অনুশাসন ঠিকমতো মানা হচ্ছে না। সেখানে নির্দিষ্ট ডিজি জোন বা শেড নির্দিষ্ট করা নেই। আমদানি-রপ্তানির পণ্যের কনটেইনার ও রাসায়নিকের কনটেইনার যত্রতত্র একসঙ্গে রাখা হচ্ছে। হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, লিকুইড ক্লোরিন, কস্টিক সোডা ও ব্যাটারি জাতীয় বিপজ্জনক পণ্য হ্যান্ডলিং করা হচ্ছে না। যথাযথ ইক্যুইপমেন্ট ব্যবহার না করে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে শ্রমিক দিয়ে কনটেইনার লোড করা হচ্ছে। এটা বিপজ্জনক ও বিধিবদ্ধ অনুশাসনের পরিপন্থী কাজ। ডিপোতে অগ্নিনির্বাপণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনা ঘটলে তা মোকাবিলার প্রস্তুতি ও সক্ষমতা কোনোটাই নেই। ফায়ার লাইসেন্সের মেয়াদও উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
সিসিটিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু বক্কর কাস্টমসের চিঠির কথা নিশ্চিত করে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অনুমতির ভিত্তিতে আমরা এতদিন ডেঞ্জারাস গুডস ও রাসায়নিক পণ্য হ্যান্ডলিং করেছি। এখন কাস্টমসই বলছে ডিজি গুডস ও রাসায়নিক সংরক্ষণ কার্যক্রম স্থগিত রাখতে। চিঠি পাওয়ার পর আমরা এসব পণ্য হ্যান্ডলিং করছি না।’
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্র জানায়, বাংলাদেশের ছয়টি প্রতিষ্ঠান হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রপ্তানি করে থাকে। এগুলো হচ্ছে আল রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, সামুদা কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, এসএম কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, এইচপি কেমিক্যালস লিমিটেড, ইনফেনিয়া কেমিক্যাল ও তাসনিম কেমিক্যাল কমপ্লেক্স। তারা উৎপাদিত পণ্য ভিয়েতনাম, চীন, কোরিয়া, পাকিস্তান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করে। সিসিটিএলে বিপজ্জনক পণ্য হ্যান্ডলিং স্থগিত করার পর বিপাকে পড়েছে এসব প্রতিষ্ঠান।
আল রাজি কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের নির্বাহী পরিচালক মাইনুল আহসান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাছে দুই হাজার টন পণ্যের রপ্তানি-আদেশ রয়েছে। ৮০ টন পণ্যের প্রক্রিয়াকরণ শেষে কনটেইনার ভর্তি করা হয়েছে। এসব পণ্যের রপ্তানিমূল্য প্রায় ৩০ হাজার ডলার। এ অবস্থায় ডিপোতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রাখা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের রপ্তানি হুমকির মুখে পড়েছে। যথাসময়ে রপ্তানি করা না গেলে আমরা বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়ব।’
সামুদা কেমিক্যাল কমপ্লেক্সের মহাব্যবস্থাপক আকরাম উজ জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড রপ্তানিতে আমরা ভালো অবস্থান তৈরি করতে পেরেছি। ২০২২ সালে আমরা ৩৮ হাজার টন পণ্য রপ্তানি করেছি। আমাদের হাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রপ্তানি-আদেশ আছে। কিন্তু অফডকগুলোতে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড হ্যান্ডলিং বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব পণ্যের রপ্তানি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’
বেসরকারি কনটেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার চেয়ারম্যান নুরুল কাইয়ূম খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দেশে ডিপোগুলোতে ডেঞ্জারাস গুডস হ্যান্ডলিংয়ের কোনো নির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। যে যার মতো কাস্টমসের অনুমতি নিয়ে এ জাতীয় পণ্য হ্যান্ডলিং করছিল। বিএম ডিপোতে দুর্ঘটনার পর নিরাপত্তার প্রশ্ন সামনে আসায় কোনো কোনো ডিপো হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড হ্যান্ডলিং বন্ধ করে দিয়েছে। সিসিটিএলে এতদিন এ কার্যক্রম চললেও কাস্টমস তা স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ফলে একটি সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত হুমকির মুখে পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে দ্রুত নীতিমালা হওয়া প্রয়োজন। ওই নীতিমালা মেনে যারা ডিজি কার্গো হ্যান্ডলিং করতে চায়, তাদের সুযোগ দেওয়া উচিত।’
এক সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগি ও মুরগির ডিমের দাম আরও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। আর এক মাসের হিসাবে ভোক্তা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৭০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে ৯০ টাকা। ফার্মের মুরগির প্রতি হালি লাল ডিম বেড়েছে ৬ থেকে ৮ টাকা।
শীতকালীন সবজির দাম কিছুটা ওঠা-নামা করছে। এক মাসের ব্যবধানে শীতকালীন সবজির দাম পাইকারি বাজারে কেজিতে ৭-২০ টাকা কমলেও ভোক্তা পর্যায়ে কমেছে ৫-১০ টাকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, নিউ ইস্কাটন, ইস্কাটন গার্ডেন, শান্তিনগর, হাতিরপুল বাজার এলাকার পাইকারি, খুচরা ব্যবসায়ী, মুদি দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি, মহানগর হাঁস-মুরগি বাজারজাতকরণ সমবায় সমিতি লিমিটেড ও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, মুরগি ও মুরগির ডিমের দাম বৃদ্ধিতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের হাত নেই। দেশের বড় ব্যবসায়ীরাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের সারা দেশে প্রতিনিধি আছে। তারা বাজার পর্যবেক্ষণ করছে। চাহিদা বাড়লেই দাম বাড়িয়ে দেয়। চাহিদা কম থাকলে দাম কমিয়ে ডিম-মুরগি বিক্রি করে। তাদের নির্ধারিত দাম ক্ষুদ্র খামারিরা ডিলারের মাধ্যমে জেনে যায়।
খুচরা ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা জানিয়েছেন, চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝিতে
বাজারভেদে ১৫০-১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি এসে বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ২০০-২৪০ টাকায়। ২৬০ টাকার সোনালি মুরগি বিক্রি হয় ৩৫০ টাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫ জানুয়ারি পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতি ১০০ মুরগির ডিম ৯১০ টাকায় খামারিদের থেকে সংগ্রহ করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ৯৩০ টাকা বিক্রি করেন। এক মাসের ব্যবধানে সেটা গতকাল ১ হাজার ৫০ টাকায় কিনে ১ হাজার ৭০ টাকায় বিক্রি করেছেন। প্রতি ১০০ ডিমে পাইকারিতে দাম বেড়েছে ১৪০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতি পিস ডিম ১০ টাকা ৭০ পয়সা দিয়ে কিনে ভোক্তার কাছে ১২ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি করছে। অর্থাৎ ১ হালি ডিম ভোক্তার ৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে, যা এক মাস আগেও তারা ৪২ থেকে ৪৪ টাকায় কিনেছেন।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী আল আমিন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আল আমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডিমের দাম কমে গেলে আমাদেরও মাঝেমধ্যে লস (লোকসান) দিতে হয়। কিছু নির্দিষ্ট কাস্টমার আছে যাদের ডিম বাকিতে দিয়ে থাকি, তারা কিছু বেশি টাকায় ডিম কিনে নিয়ে যায়। বাকিতে ডিম নিয়ে তারাও ক্রেতাদের কাছে ডিম বেশি দরে বিক্রি করেন। যারা ভোক্তাদের কাছে ডিম বিক্রি করছেন তাদের যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে ডিমের দাম আরও কমে পেত ভোক্তারা।’
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি আমান উল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রমজান মাসের আগে ডিমের দাম কমার সুযোগ নেই। রোজা শুরু হলে ডিমের চাহিদা কম থাকবে। তখন ডিমের দাম কমবে। রোজার ঈদ শেষ হলে আবারও ডিমের বাজার বাড়বে।’
মুরগি ব্যবসায়ী হেলাল মিয়া বলেন, ‘গত ১৫ দিনে সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে ৭০-৮০ টাকা। দেশি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১০০ টাকার বেশি। এখন তেজগাঁও বাজারে মুরগিও আসছে কম। আমাদের কাছে থেকে কিনে যারা বিক্রি করছে তারা কেজিপ্রতি ৫০-৬০ টাকা লাভে বিক্রি করছে।’
কারওয়ান বাজারে গতকাল মানভেদে প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হয়েছে ১৫-৪০, লম্বা বেগুন ২০-৪০, ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারে ছোট একটি ১০-১৫, বড় আকারের কপি ১৫-২৫, আলু প্রতি কেজি ২০-৩০, মিষ্টিকুমড়া একটি ৪০-৫০, লাউ আকারভেদে প্রতিটি ৪০-৬৫, প্রতি কেজি মুলা ২০-৩০, জাতভেদে শিম ২০-৩৫, কাঁচকলা প্রতি হালি ১৫-২০, শসা কেজি ৩০-৫০ টাকা। গরুর মাংস ৭০০, খাসির মাংস ৮০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারে কথা হয় শেখ ফরিদ নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাজারে মুরগি, মুরগির ডিম ও মাছের দাম বাড়তি। শাক-সবজির দাম বিছুটা কম। দেড় কেজি গরু মাংস কিনেছি ৭০০ টাকা দরে। ১৫ দিন আগেও সেটা ২০ টাকা কম ছিল।’
আমির হোসেন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘নিউ ইস্কাটন বাজারে সোনালি মুরগি ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এভাবে যদি মুরগির দামও বাড়তে থাকে, তাহলে মাংস কিনে খাওয়া খুবই কঠিন হয়ে যাবে।’
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পের আঘাতে মৃত্যু ৪২ হাজার ছুঁইছুঁই করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তুরস্কে মারা গেছে ৩৬ হাজার ১৮৭ জন। আর সিরিয়ায় মৃত্যু হয়েছে ৫ হাজার ৮০০ জনের। লাখো আহতের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তি অনেকের অবস্থাই সংকটাপন্ন। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে এখনো অনেকে। তবে উদ্ধার কাজ গুটিয়ে আসছে। বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব উদ্ধারকর্মীরা তুরস্কে গিয়েছিলেন তারা নিজ নিজ দেশে ফিরতে শুরু করেছেন।
আল-জাজিরা বলছে, যারা বেঁচে গেছেন তাদের প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে গৃহহীন অবস্থা চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। তবে তুরস্ক সরকার ঘোষণা দিয়েছে, যত দ্রুত সম্ভব মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো ভেঙে ফেলে পুনর্নির্মাণকাজ শুরু করা হবে। তবে সিরিয়ায় ত্রাণ পাঠাতে আন্তর্জাতিক মহল দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ায় সেখানে নতুন করে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। সেখানে আগে মানুষের জন্য খাদ্য ও ওষুধপথ্য জরুরি।
তুরস্কের দক্ষিণের হাতাই প্রদেশের প্রায় অর্ধেক ভবন হয় ভূমিকম্পে ধসে গেছে অথবা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে সেগুলো আর বসবাসের উপযোগী নেই। তুরস্ক সরকার ক্ষতিগ্রস্ত ওই ভবনগুলো দ্রুত ভেঙে ফেলে পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু করার কথা বলেছে। দেশটির পরিবেশ ও নগরায়ণমন্ত্রী মুরাত কুরুম এক টুইটে বলেন, যেসব ভবন ভাঙা প্রয়োজনে আমরা দ্রুতই সেগুলো ভেঙে ফেলে নিরাপদ বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করব। এদিকে তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকেও নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। তবে কর্র্তৃপক্ষ তাদের বাড়িকে নিরাপদ বলে ঘোষণা করে সেক্ষেত্রে তারা বাড়ি ফিরতে পারবেন।
তুরস্কের চেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে প্রতিবেশী সিরিয়ায়। দীর্ঘ ১১ বছরের গৃহযুদ্ধে দেশটি আগেই ধ্বংস হয়েছিল। এখন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে ভূমিকম্প। গৃহযুদ্ধে দেশটি দুই ভাগে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিরিয়ার বেশির ভাগ অংশ প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বাহিনীর দখলে থাকলেও একটি অংশ এখনো বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে আন্তর্জাতিক মহলকে সেখানে ত্রাণ পাঠাতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়তে হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে তুরস্কের সঙ্গে একটিমাত্র সীমান্ত দিয়ে সিরিয়ায় ত্রাণ যাচ্ছিল। কিন্তু ত্রাণ কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না অভিযোগ তুলে কয়েক দিন ধরে জাতিসংঘ সেখানে ত্রাণ পাঠানো বন্ধ রেখেছে।
রয়টার্স জানায়, ভূমিকম্পের আট দিন পর মঙ্গলবার ত্রাণ প্রবেশে দ্বিতীয় আরেকটি সীমান্ত খোলার অনুমতি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট আসাদ।
সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অংশে উদ্ধার কাজ পরিচালনা করছে দাতব্য সংস্থা হোয়াইট হেলমেট। সেখানকার প্রধান রাইদ সালেহ বলেন, আমাদের সঙ্গে কী ঘটছে ... বিশ্বে এই প্রথম এমনটা হচ্ছে। কোথাও ভয়ংকর ভূমিকম্প হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘ সেখানে কোনো ধরনের সহায়তা পাঠাচ্ছে না। আমরা হাত দিয়ে একের পর এক পাথর সরিয়ে সেগুলো নিচে কিছুই পাচ্ছি না। অথচ, কংক্রিটের নিচে চাপা পড়া লোকজন আমাদের বের করুন! আমাদের বের করুন! বলে চিৎকার করছে। কিন্তু আমরা সেখান থেকে খালি হাতে ফিরছি। এ ক্ষেত্রে শুধু আপনার হাতই যথেষ্ট নয়।
ডাকাতের উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় চিন্তায় পড়েছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। সম্প্রতি ঢাকাসহ সারা দেশেই ডাকাতি বেড়েছে। প্রায় দিনেই বাসাবাড়ি ও যানবাহনে ডাকাতি হচ্ছে। বিশেষ করে যাত্রীবাহী বাসে। তারা যাত্রীদের সর্বস্ব লুট করে নিচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাসের চালকরা ও হেলপাররা এ কাজে জড়িত বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
ডাকাতদের কোনো তালিকা নেই পুলিশের কাছে। তালিকা করার জন্য পুলিশ সদর দপ্তর বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। ছবিসহ ডাকাত দলের সদস্যদের ডেটাবেজ করতে পুলিশের সবকটি ইউনিট ও জেলা পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কাজও শুরু করে দিয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
পুলিশসংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে জানায়, বিভিন্ন সময়ে ডাকাতির কারণে যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে তাদেরই ডেটাবেজের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এ জন্য মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, জেলা পুলিশ সুপার ও হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। ঢাকা রেঞ্জ পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ এ বিষয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে। ঢাকা রেঞ্জেই ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটে। এরপর রয়েছে খুলনা ও সিলেট রেঞ্জ। পিছিয়ে নেই চট্টগ্রাম রেঞ্জও।
গত ১৩ মাসে ঢাকা জেলায় ৪৬টি ডাকাতির মামলা হয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছে ২৩২ জন। তাদের ৯২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গতকাল ডিএমপির ক্রাইম কনফারেন্সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে জনগণের চলাচল ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নতি করার পাশাপাশি সারা দেশে ৮০টি বিশেষ প্যাট্রল ডিউটির ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে ছিনতাই, দস্যুতা ও ডাকাতি প্রতিরোধে যৌথ অভিযান অব্যাহত আছে। এটা আরও জোরালো করা হবে।
তিনি বলেন, হাইওয়ে পুলিশের পাঁচটি রিজিয়নের ৫৪টি স্থানে পুলিশ যাত্রীবাহী বাসের ভিডিও ধারণ করছে। চালক ও হেলপারদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ ও মহাসড়কসংলগ্ন এলাকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। মহাসড়কে যারা ডাকাতিতে সম্পৃক্ত তাদের তালিকা করার পাশাপাশি পেশাদার ডাকাতদের ডেটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কারণ বেশিরভাগ ডাকাতির ঘটনা হাইওয়েতেই ঘটছে।
সূত্র জানায়, সারা দেশে হাইওয়ে পুলিশের ৭৩টি থানা ও ফাঁড়ির মাধ্যমে একটি প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। গোপনে ডাকাতদের অবস্থান জানার চেষ্টা চলছে। নজরদারি বাড়ানো হয়েছে তাদের বাড়িতেও। ইনকোয়ারি সিøপের মাধ্যমে ডাকাতদের তথ্য জানার চেষ্টা চলছে। তাদের ছবিও জোগাড় করা হচ্ছে। ডাকাতরা কারাগারে না বাইরে তাও থাকবে ডেটাবেজে। ডাকাতি রোধে বাসের মালিক ও শ্রমিকদের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। স্টপেজের বাইরে যাতে যাত্রী তোলা না হয় সে জন্য কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত রুটের বাইরে যাতে কোনো বাস চলাচল না করে তা কঠোরভাবে মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। কারণ জামিনে বেরিয়ে আবারও অপরাধে জড়াচ্ছে ডাকাত দলের সদস্যরা।
সূত্র জানায়, দূরপাল্লার গাড়িতে ডেস্ক ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ওই ক্যামেরার মাধ্যমে গাড়ির যাত্রীদের মনিটরিং করা হবে। সেখানে একটি বিশেষ ডিভাইস থাকবে যেটি ৯৯৯ নম্বরের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। গাড়িটি কোনো বিপদে পড়লে ওই ডিভাইসে চাপ দিলেই সংকেত চলে যাবে ৯৯৯-এ। তখন স্থানীয় থানা বিপদেপড়া গাড়ির বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে পারবে। ওই ডিভাইসের মাধ্যমে গাড়ির অবস্থানও নির্ণয় করা যাবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিটি মেট্রোপলিটান ও রেঞ্জে ডাকাতদের সচিত্র ডেটাবেজ সংরক্ষণ করা হবে। কোনো ডাকাত জামিনে মুক্তি পেলে তার বিষয়ে সব ইউনিটকে বার্তা পাঠানো হবে। ডাকাতদের গতিবিধি নজরে রাখা হবেও সূত্র জানিয়েছে।
ডাকাতরা কখনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে আবার কখনো সরাসরি ডাকাতির ঘটনা ঘটাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই থানায় মামলা করে না। বিপুল অঙ্কের টাকা বা স্বর্ণালংকার ডাকাতির ঘটনায় শুধু মামলা হয়। আর ডাকাতির শিকার বেশিরভাগ লোক ছিনিয়ে নেওয়া মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ হারানোর জিডি করে। ফলে ডাকাতির প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না। সর্বশেষ গত রবিবার রাতে গাজীপুর-খুলনা রুটের রিসাত পরিবহনের একটি বাসে নৃশংস ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর আশুলিয়া থানার নবীনগর পুলিশ ফাঁড়িতে জিডি করে পরিবহন কর্তৃপক্ষ। আর কয়েকজন মোবাইল ফোন হারানোর জিডি করেছেন।
ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মাশরুকুর রহমান বলেন, ‘পেশাদার ডাকাতদের একটা ডেটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১৬১ ও ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে যাদের নাম এসেছে তাদের তথ্য যাচাই করে ডেটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এতে মহাসড়ক ও বাসাবাড়িতে ডাকাতি রোধ করা সম্ভব হবে। স্পর্শকাতর বা ডাকাতিপ্রবণ এলাকায় বসানো হচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরা।’
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ডাকাতি বেশি হচ্ছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায়। আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই, নবাবগঞ্জ ও দোহার থানায়ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ঢাকা রেঞ্জের শরীয়তপুর, মাদারীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা জেলা ও টাঙ্গাইলে বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সিলেট রেঞ্জের হবিগঞ্জ ও সিলেট জেলার কিছু এলাকায় ডাকাতি হয় বলে পুলিশের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। খুলনা রেঞ্জের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের পিরোজপুর, মেহেরপুরের কিছু এলাকা ও খুলনার ফুলতলা এলাকা ডাকাতিপ্রবণ। চট্টগ্রাম রেঞ্জের মধ্যে রয়েছে চকরিয়া ও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন গ্রাম যেখানে মহাসড়কে গাছ ফেলে ডাকাতির ঘটনা রয়েছে। এসব এলাকায় বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার ডাকাতদের নাম ডেটাবেজে রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঢাকা রেঞ্জের ধামরাই, আশুলিয়া এবং শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার কিছু এলাকায় ডাকাতরা নৌপথে ডাকাতি করে। এ কারণে নৌপুলিশকে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। ডাকাতির ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন। আমাদের কাছে পেশাদার ডাকাতদের তালিকা নেই। এ জন্য সম্প্রতি সব মেট্রোপলিটান পুলিশ কমিশনার, হাইওয়ে পুলিশপ্রধান ও জেলা এসপিদের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব তালিকা পাওয়ার পর ডেটাবেজ করা হবে। পুলিশ সদর দপ্তর বিষয়গুলোর সার্বিক মনিটরিং করবে। বাসচালক ও হেলপাররা ডাকাতির কাজে বেশি জড়িয়ে পড়ছে। ইতিমধ্যে তাদের তালিকা হয়েছে। পরিবহন নেতাদের সঙ্গে আমরা কথা বলব।
বাংলা সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিচরণ নেই। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ অথবা উপন্যাসে তিনি তুলে ধরেছেন প্রেম, দ্রোহ ও বিদ্রোহের কথা। মানুষের মনের ক্ষুধা মিটিয়েছেন বিদ্রোহী ও সাম্যবাদীর মতো কবিতা দিয়ে। শব্দের ঝঙ্কারে তিনি মোহ গড়ে তুলতেন পাঠকের মনে। মৃত্যুর বহু বছর পরও বাংলাদেশের জাতীয় এ কবির ভক্তের ভাটা পড়েনি। নজরুল এখনো তার ভক্তদের কাছে চিরতরুণ। সাহিত্যচর্চার পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতায়ও যুক্ত ছিলেন। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হতো ‘ধূমকেতু’ নামের পত্রিকা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বইমেলায় নজরুল ইনস্টিটিউটের স্টলে গিয়ে দেখা যায়, অনেক পাঠক-দর্শনার্থীর ভিড়। নজরুলের বিভিন্ন বই দেখার পাশাপাশি সেগুলো কিনছেনও অনেকেই। তবে বেশিরভাগ পাঠক কিনছেন ‘নজরুল সমগ্র’। এ ছাড়াও স্টলে পাওয়া যাচ্ছে আদি গ্রামোফোন রেকর্ড থেকে ধারণকৃত নজরুলের গাওয়া সংগীতের অডিও অ্যালবাম এবং বিখ্যাত নজরুল সংগীতশিল্পীদের অডিও অ্যালবাম। পাওয়া যাচ্ছে নজরুল-আবৃত্তির অ্যালবামও।
মেলায় আসা ঢাকা কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মির্জা আশিক ইলাহী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নজরুল বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষার বাতিঘর। তার লেখা আমাদের মনের ভেতরে লুকিয়ে থাকা বিপ্লবী চেতনাকে উজ্জীবিত করে। তাই নজরুল বাঙালির জন্য আজও প্রাসঙ্গিক। প্রতিবারের মতো এবারও তার কয়েকটি বই কিনলাম।’
গভর্নমেন্ট কলেজ অব অ্যাপ্লাইড হিউম্যান সায়েন্স শিক্ষার্থী মাহবুবা তানু বলেন, ‘নজরুলের সাম্যবাদী চেতনা আমাদের অহংকারমুক্ত করে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের কথা বলে নজরুলের লেখনী। বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে তিনি এখনো চিরতরুণ।’
স্টলের বিক্রয়কর্মীরা জানান, প্রতিদিন প্রচুর পাঠক আসছেন, বইও কিনছেন। অনেক তরুণ নজরুলের বই কিনছেন।
নতুন বই : গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার ১৬তম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ৩টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ৮৩টি।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হয় বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকেন্দ্রীকরণ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফরিদ আহমদ দুলাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মাহমুদ কামাল, নজিবুল ইসলাম এবং সাজ্জাদ আহসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অনীক মাহমুদ।
প্রাবন্ধিক বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেকসই করতে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নকে অর্থবহ করে তোলা যেমন জরুরি, তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের জীবনে সাংস্কৃতিক মুক্তি নিশ্চিত করাটাও অপরিহার্য। সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য আমাদের সমাজ-রাষ্ট্রের সব স্তরে সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রাকে সমন্বয় করতে হবে। দেশের মাঠপর্যায় থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়, কখনো কখনো রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে মাঠপর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে চিন্তা ও আকাক্সক্ষার স্বপ্নটি এবং সেখানেই বাংলা, ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকেন্দ্রীকরণের সৌন্দর্য লুক্কায়িত। ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকেন্দ্রীকরণ তখনই অর্থবহ হবে, যখন লোকবাংলার শুভ প্রবণতার চেতনা বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে লোকমানস থেকে নীতিনির্ধারকদের কাছে।
আলোচকরা বলেন, বিকেন্দ্রীকরণের একটি রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক দিক আছে। ভাষাগত দ্বান্দ্বিকতার মতো বিষয়গুলো সমাধা করার জন্য প্রশাসনিক উদ্যোগে সাংস্কৃতিক নীতিমালা প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি। ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিকেন্দ্রীকরণের জন্য দেশব্যাপী বিদ্যমান সাংস্কৃতিক অবকাঠামোগুলোকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে হবে। সামাজিক বিভেদের বদলে সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা ভাষা ও সংস্কৃতি বিকেন্দ্রীকরণের অন্যতম পূর্বশর্ত।
সভাপতির বক্তব্যে অনীক মাহমুদ বলেন, ‘জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে জাতির মূলশক্তিকে জাগ্রত করতে হবে। ভাষা-সাহিত্য ও সংস্কৃতিই একটি জাতির মূলশক্তি। সাংস্কৃতিক চর্চাকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে কেন্দ্রের সঙ্গে প্রান্তের মানুষদের সম্পৃক্ত করা সম্ভব।’
‘আজ লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন ইসরাইল খান, মাসুম রেজা, রিপন আহসান ঋতু এবং জুনান নাশিত। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন আমিনুর রহমান সুলতান, আয়শা ঝর্না, শিহাব শাহরিয়ার, অংকিতা আহমেদ রুবি, ফরিদুজ্জামান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সৈয়দ শহীদুল ইসলাম, জেসমিন বন্যা, নূরুননবী শান্ত। এ ছাড়া ছিল সিরাজুল মোস্তফার পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘মাইজভাণ্ডারী মরমী গোষ্ঠী’ এবং মো. আনোয়ার হোসেনের পরিচালনায় ‘আরশিনগর বাউল সংঘ’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন ফরিদা পারভীন, সেলিম চৌধুরী, সাধিকা সৃজনী তানিয়া, শ্যামল কুমার পাল, সনৎ কুমার বিশ্বাস, মেহেরুন আশরাফ, বাবু সরকার এবং মো. আরিফুর রহমান। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন চন্দন দত্ত (তবলা), রবিন্স চৌধুরী (কি-বোর্ড), গাজী আব্দুল হাকিম (বাঁশি), শেখ জালাল উদ্দীন (সেতার)।
আজকের বইমেলা : আজ ১৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার। অমর একুশে বইমেলার ১৭তম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
শিশুপ্রহর : আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর চলবে।
শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা : আজ সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হবে জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মহীবুল আজিজ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন অনিরুদ্ধ কাহালি ও মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সৈয়দ আকরম হোসেন।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনকে বলা হয় ‘লাশের সাক্ষ্য’। সেই প্রতিবেদনে প্রায়ই ভুল থাকছে। হত্যা হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা। দেশের মর্গগুলোর আধুনিকায়ন না হওয়া, চিকিৎসকদের অদক্ষতা এবং মর্গে আসার আগেই মরদেহের আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ভুলের অন্যতম কারণ। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য এরকমই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের বেশিরভাগ মর্গে মরদেহের ভিসেরা বা বিভিন্ন নমুনা সংরক্ষণের আধুনিক সুবিধাসংবলিত জায়গা নেই। এসব ধারণের জন্য কনটেইনার, প্রিজারভেটিভ বা রাসায়নিকের সরবরাহও প্রয়োজনের তুলনায় কম। অনেক সময় প্রিজারভেটিভ না থাকলে লবণ পানির সাহায্যে মর্গে লাশ সংরক্ষণ করা হয় এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল ল্যাবে যেসব স্যাম্পল বা নমুনা পাঠানো হয়, সেসব ভালোমানের ফরমালিন দিয়ে সংরক্ষিত করে পাঠানো হয় না। ফলে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও ভুলের আশঙ্কা বাড়ে। কখনো চিকিৎসক প্রভাবিত হয়েও ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেন।
ময়নাতদন্তসংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলেন, আমাদের দেশে আধুনিক মর্গ ব্যবস্থাপনা নেই। তাছাড়া লাশ মর্গে আসার আগেই অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে প্রথমে থানায় নেয়; তারপর থানা থেকে নেয় মেডিকেল কলেজে। এরপর অ্যাম্বুলেন্স, লেগুনা বা ট্রাকে বা ভ্যানে করে আনে মর্গে। এত আলামত নষ্ট হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। এসব কারণে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আসে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ময়নাতদন্তের ভুল প্রতিবেদনের প্রধান কারণ আধুনিক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক মর্গের অভাব। দ্বিতীয় কারণ, লাশ যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা সিন অব দ্য ক্রাইম (অপরাধের দৃশ্য) ভিজিট করি না। ফলে অনেক ইনফরমেশন ধরা পড়ে না। উন্নতবিশ্বে কোথাও অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে পুলিশ ওই স্থানকে হলুদ টেপ দিয়ে ঘিরে রাখে এবং সবার আগে ভিজিট করে একজন ফরেনসিক স্পেশালিস্ট। ওখান থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়ে মর্গে চলে আসে। মর্গে লাশ পাঠায় পুলিশ, পরে পোস্টমর্টেম করে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে মরদেহের ফাইন্ডিংস মিলিয়ে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। সেটাই সঠিক ও নির্ভরযোগ্য হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এমন হয় না।’
ময়নাতদন্ত কী : খুন বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর ভুক্তভোগীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার জন্য একজন ফরেনসিক চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞ মরদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ বা অঙ্গবিশেষের গভীর নিরীক্ষণ করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে মন্তব্যসহ যে প্রতিবেদন দেওয়া হয় তাই পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন। তদন্তকারী কর্মকর্তা যদি মনে করেন, ময়নাতদন্ত হওয়া জরুরি, তখন মৃতদেহ সিভিল সার্জন বা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
সম্প্রতি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা ও রেল দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কথা উল্লেখ থাকা ২২টি মামলা তদন্ত করে পিবিআই জানায়, এগুলো ছিল পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। ওই মামলাগুলোতে পুলিশের অন্যান্য সংস্থা তদন্ত করে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছিল।
পিবিআইপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হত্যা বা অপমৃত্যুর মামলার তদন্তে ময়নাতদন্তের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ময়নাতদন্ত মামলার রহস্য উদঘাটনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যদিকে ময়নাতদন্ত সঠিক না হলে তদন্ত ভিন্ন পথে মোড় নেয়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সাহায্য করে, ঘটনার রহস্য উদঘাটনে দারুণভাবে সহায়তা করে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিটফোর্ড বা স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মর্গে ২০২১ সালে ৭৪০টি, ২০২২ সালে ৬০০টি ও চলতি বছর ১৫ মে পর্যন্ত ১৪৫টি মরদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। গত ১৫ মে দুপুরে সেখানকার মর্গে গিয়ে দেখা গেছে জরাজীর্ণ দশা। দুটি মরদেহ পড়ে আছে পোস্টমর্টেমের অপেক্ষায়। মর্গ সহকারী নাম প্রকাশ না করে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘মর্গের লাশ রাখার একমাত্র ফ্রিজটি তিন বছর ধরে নষ্ট। ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় মালামালের সংকট সবসময়ই থাকে। নেই আধুনিক কোনো সুবিধা। তিনজন মর্গ সহকারীই বছরের পর বছর চুক্তিভিত্তিতে কাজ করছেন।’
জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য মর্গের দশা একই।
ময়নাতদন্ত সম্পর্কিত সমস্যা নিয়ে পিবিআইয়ের এক প্রতিবেদনে দেশের মর্গসংশ্লিষ্টদের ফরেনসিক বিষয়ে আধুনিক ও বিশ্বমানের প্রশিক্ষণের অভাব, বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক চিকিৎসকের তুলনায় লাশের সংখ্যা বেশি, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও হিমাগারসহ মানসম্মত অবকাঠামো না থাকাকে ভুল ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমের স্বল্পতা, জটিল ও চাঞ্চল্যকর মরদেহের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে বোর্ড গঠন করে ময়নাতদন্ত না করা, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা থাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত কাজে অংশ নিতে চান না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ময়নাতদন্ত বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন ও দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের মর্গগুলোতে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও আলোর ব্যবস্থাসহ আধুনিক অবকাঠামো ও বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ঘাটতি রয়েছে। অনেক জেলায় মর্গে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর নেই। অনেক জেলায় মর্গে পর্যাপ্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল নেই। বংশ পরম্পরায় মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডোমরা ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে কাজ করলেও তাদের কোনো মৌলিক প্রশিক্ষণ নেই। তাছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ ব্যস্ত মর্গগুলোতে মর্গ অ্যাসিস্ট্যান্টদের স্বল্পতা প্রকট। অনেক জায়গায় দেখা গেছে, লাশ সংরক্ষণের সুরক্ষিত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব। বিদেশি নাগরিক ও বিশেষ ক্ষেত্রে মরদেহ প্রচলিত নিয়মে হিমঘরে সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পড়ে। অল্পসংখ্যক মর্গে কুলিং বা ফ্রিজিং বা মর্চুয়ারি কুলার সিস্টেম থাকলেও অধিকাংশ সময় নষ্ট থাকে বলে গরমের সময় লাশে দ্রুত পচন ধরে।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর সম্ভাব্য সময়ের উল্লেখ থাকা জরুরি। মর্গে আধুনিক প্রযুক্তি না থাকায় অভিমত প্রদানে বিশেষজ্ঞদের সমস্যা হয়। পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ১ জুন রাজধানীর কলাবাগান থানা এলাকায় নিজ বাসা থেকে ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি খুন হয়েছিলেন। মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। খুনের ধরন মোটামুটি স্পষ্ট হলেও ঘটনার রহস্য উন্মোচনে খুনের ‘সম্ভাব্য সময়’ জানার জন্য পিবিআই ঢামেক ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকদের সুযোগ-সুবিধা কম হওয়ায় চিকিৎসা শিক্ষায় এ শাখাটি অবহেলিত এবং কম গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত। ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ফরেনসিক ডাক্তারের স্বল্পতা রয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া হয়েছে, সিএমএম আদালতের নির্দেশে ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের লালমোহন থানা এলাকা থেকে কামাল মাঝির (৪৫) ৩৮ মাসের পুরনো মরদেহ তুলে ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায়। সেখানে কর্মরতদের কারও এ ধরনের মরদেহের ময়নাতদন্তের অভিজ্ঞতা না থাকায় মরদেহটি ভোলা থেকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়া হয়। দায়িত্বরত প্রভাষক জানান, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপকের পদে কেউ কর্মরত নেই। তিনি মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনো মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পিবিআই মরদেহটি বরিশাল থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগে নিয়ে যায়।
হত্যা কেন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা হিসেবে আসে জানতে চাইলে ফরেনসিক চিকিৎসকরা জানান, কাউকে হত্যা করে রেললাইনে ফেলে রাখলে তার ওপর দিয়ে ট্রেন গিয়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত হয়ে হাড়গোড় বেরিয়ে দলিত হয়ে যায়। একে চিকিৎসাশাস্ত্রে মিউটিলেডেট লাশ বলে। ওইসব লাশের আলামত বোঝা যায় না। আগের আলামত নষ্ট হয়ে নতুন আলামত তৈরি হয়। তখন রেল দুর্ঘটনাই মনে হয়। এতে অনেক সময় চিকিৎসকরা মিসগাইডেড হয়।
ফরেনসিক বিভাগে চিকিৎসকের সংকট বিষয়ে এক চিকিৎসক বলেন, ‘আমি ঢাকায়ে আছি, অথচ আমাকে কক্সবাজার বা পঞ্চগড় গিয়ে স্বাক্ষর দিতে হচ্ছে। বাইরে যাওয়ার, বিশেষ করে একা, বিপদ আছে অনেক, সংক্ষুব্ধ পক্ষ হামলা চালাতে পারে। এজন্য অনেক চিকিৎসক এ বিভাগে থাকতে চান না। এখানে সুবিধাও অনেক কম। মফস্বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে মিসগাইড করে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে রিপোর্ট লেখানো হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
প্রথম সেট ২৫ মিনিট, দ্বিতীয়টি ২৮ মিনিটে জিতলেন কার্লোস আলকারাজ। মনে হচ্ছিল কোয়ালিফায়ার ফ্যাভিও কোবোলিকে বুঝি উড়িয়েই দিচ্ছেন শীর্ষ বাছাই।
না, তৃতীয় সেটতে প্রতিরোধ গড়লেন ইতালিয়ান। সময় গড়ালো ঘন্টায়। শেষপর্যন্ত জয় এসেছে ৬৬ মিনিটে। ৬-০, ৬-২, ৭-৫ গেমে প্রথম রাউন্ডের ম্যাচ জিতে রাফায়েল নাদালের উত্তরসুরি ক্লে কোর্টের সর্বোচ্চ আসর শুরু করলেন।
নাদালের চোটজনিত অনুপস্থিতিতে শীর্ষবাছাই আলকারাজ। ২০২১ এ তৃতীয় রাউন্ড, গতবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছিলেন। এবার আরো এগোলে সেমিফাইনালে নোভাক জকোভিচের সংগে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা।
সে দেখা যাবে। আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডে আলকারাজকে টপকাতে হবে জাপানের টি. দানিয়লেকে।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।
ফ্যাটি লিভার রোগটি এখন ঘরে ঘরে। প্রাথমিকভাবে এই রোগের লক্ষণ না বুঝতে পারলে, অনেক সমস্যাই দেখা দিতে পারে। চিকিৎসকরা জানান, এই রোগ থেকে বাঁচতে জীবনধারায় বদল আনতে হবে।
কোন কোন উপসর্গ দেখলে সতর্ক হবেন? শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া, হঠাৎ ভুঁড়ি বেড়ে যাওয়া, হলুদ রঙের দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব, ওজন অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া, সারাক্ষণ ক্লান্তিভাব— এই উপসর্গগুলি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। অনেকের ধারণা, মদ্যপান করলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কেবল মদ্যপান ছেড়ে দিলেই এই রোগের ঝুঁকি কমবে না। কম তেলমশলার খাবার খাওয়া, বাড়ির খাবারে অভ্যস্ত হওয়া, মদ ছেড়ে দেওয়া— এই অভ্যাসগুলিই লিভারকে ভাল রাখার অন্যতম উপায়। এই অসুখকে ঠেকিয়ে রাখতে ডায়েটের ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। তবে এগুলিই শেষ কথা নয়। লিভার ভাল রাখতে মেনে চলতে হয় আরও কিছু নিয়মকানুন। কিন্তু কী কী?
চিনির মাত্রা কমানো
সহজে রোগা হতে চেয়ে অনেকেই নিজের খুশি মতো ডায়েট প্ল্যান বানিয়ে নেন। চিনি বাদ দিয়ে দেদারে কৃত্রিম চিনির উপরেই ভরসা করেন। এতেই আসলে চরম ক্ষতি করছেন শরীরের। অতিরিক্ত চিনি খাওয়ার অভ্যাস আমাদের লিভারের ব্যাপক ক্ষতি করে। ফ্রুকটোজ হোক কিংবা কৃত্রিম চিনি, লিভারের অসুখ ডেকে আনে।
ব্যথার ওষুধ কম খান
বেশকিছু বেদনানাশক ওষুধ লিভারের ক্ষতি করে। কিছু প্যারাসিটামল বা কোলেস্টেরলের ওষুধও লিভারের প্রভূত ক্ষতি করে। ঘুম না হলে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খেতে শুরু করেন। এই অভ্যাসের কারণে লিভারের জটিল রোগে ভুগতে হতে পারে।
পানি বেশি করে খান
শরীর থেকে যতটা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। তাই বেশি করে পানি খেতে হবে। তবেই প্রস্রাবের সঙ্গে শরীরের টক্সিন পদার্থগুলি বেরিয়ে যাবে। দিনে কয়েক বার গরম পানিতে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি খান। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।
পর্যাপ্ত ঘুম
সারাদিন কর্মব্যস্ততা আর রাত জেগে মোবাইলে চোখ রেখে সিনেমা দেখা— সব মিলিয়ে ঘুমের সঙ্গে আপস। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ঘুমের অভাব হলে তার প্রভাব পড়ে লিভারের উপরেও।
ওজন কমান
শুধু সুন্দর দেখানোর জন্যই নয়, লিভার সুরক্ষিত রাখতে চাইলেও কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আমাদের শরীরে কার্বহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাটের সঠিক ভারসাম্য থাকা ভীষণ জরুরি। তবে ইদানিং বাড়ির খাবার নয়, বরং রেস্তোরাঁর খাবার, রেড মিট, বাইরের ভাজাভুজি, প্যাকেটজাত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি খেয়ে অভ্যস্ত। আর এর জেরেই শরীরে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা বাড়ছে। লিভারের পক্ষে এই ফ্যাট মোটেই ভাল নয়।
আইপিএলের পঞ্চম শিরোপা জিততে চেন্নাই সুপার কিংসের চাই ১৫ ওভারে ১৭১ রান। আহমেদাবাদে রাত ১২.৪০ মিনিটে শুরু হবে খেলা। গুজরাট টাইট্যান্সের ২১৪ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৩ বলে ৪ রান করার পর বৃ্স্টিতে বন্ধ হয় ফাইনাল। অর্থাৎ বাকি ১৪.৩ ওভারে আরো ১৬৭ রান চাই ধোনীর দলের।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।