
বিএনপি নেতা, ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা খেতে পছন্দ করতেন ফল আর মুড়ি-চানাচুর মাখা। সংবাদ সংগ্রহের কাজে তার বাসায় ঢুকে বিপুল পরিমাণ খাবারের চক্করে পড়তে হয়েছে বহুবার। আরেক প্রয়াত রাজনীতিক কাজী জাফর আহমেদ পছন্দ করতেন রসমালাই খেতে। রাজনীতির উত্থান-পতনের খবর সংগ্রহ করার জন্য রাত-বিরেতে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু অথবা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বাড়িতে ঢুকে না খেয়ে ফিরেছেন এমন রাজনৈতিক সংবাদাতার সংখ্যা কম। তবে আরেক প্রয়াত রাজনীতিবিদ আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার দপ্তর অথবা বাড়িতে টোস্ট বিস্কুট আর চা সংবাদপত্রের রাজনৈতিক বিটের রিপোর্টারদের কাছে একদা আলোচনার বিষয় ছিল।
কোনো এক কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে হাজির হয়েছি তৎকালীন জাতীয় পার্টির নেতা কাজী জাফর আহমেদের বাড়ির দরজায়। জাতীয় পার্টি তখন ক্ষমতায় নেই। দলের মধ্যে ভাঙনের সুর বাজছে। দুদিন টেলিফোনে চেষ্টার পর তার কাছ থেকে সকালবেলা খানিকটা সময় আদায় করা সম্ভব হলো। কাজী জাফরের মন্তব্য প্রয়োজন রিপোর্ট লেখার জন্য। সাজানো বসার ঘরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বিরক্ত মুখে ঘরে ঢুকে চা আর রসমালাই পাঠানোর জন্য কাউকে নির্দেশ দিলেন। একটু পরে ট্রেতে করে রসমালাই পরিবেশন করা হলো আমাদের সামনে। সোফায় হেলান দিয়ে বসে কাজী জাফর আহমেদ আমার কী প্রশ্ন আছে জানতে চাইলেন। আমিও আচমকা বোকার মতো প্রশ্ন করে বসলাম, জাতীয় পার্টি ভাঙছে কেন? সকালবেলা আমার বেমক্কা প্রশ্ন শুনে মেজাজ হারালেন কাজী জাফর। আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, তোমাকে এই খবরটা কে দিল? তারপর রাগের মাথায় আমাকে বের হয়ে যেতে বললেন বাসা থেকে। হতভম্ব আমি ভাবছি কী করব। টেবিলে রাখা রসমালাইও অসহায় পড়ে আছে। অগত্যা চেয়ার ছেড়ে উঠে দরজা পর্যন্ত পৌঁছে যাই। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। কাজী জাফর আহমেদকে সাহস করে বলে ফেললাম, প্রবীণ সাংবাদিক আহমেদ হুমায়ূন তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। একটু থমকে গিয়ে কাজী জাফর আহমেদ জানতে চাইলেন, আমি কীভাবে আহমেদ হুমায়ূনকে চিনি? বললাম, তিনি আমার বাবা। চোখের পলকে ঘরের দৃশ্যপট বদলে গেল। আমার পিতার নেতৃত্বে কাজী জাফর আহমেদ ছাত্রজীবনে রাজনীতি করেছেন। বাবা তখন ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্র ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে বাবার নামটা ব্যবহার না করলে সেদিন রসমালাই এবং সাক্ষাৎকার দুটোই হাতছাড়া হতো। সেদিন তিনি আমাকে যত্ন করে নিজের প্রিয় রসমালাই এবং অন্যান্য খাবার খাইয়েছিলেন। প্রথম আলো পত্রিকায় কাজ করার সময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে একটি রিপোর্টে কয়েকটি ঘটনার সঙ্গে সাদেক হোসেন খোকাসহ আরও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীর সম্পৃক্ততার কথা সাহস করে লিখে ফেললাম। কিন্তু সম্পাদক মতিউর রহমান তাদের বক্তব্য ছাড়া রিপোর্টটি প্রকাশ করবেন না। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল সেদিন। এ রকম স্পর্শকাতর বিষয়ে কেউ তো কথা বলতে রাজি হবেন না! শেষে ফোন করলাম খোকা ভাইকে। বিষয়টা শুনে তিনি হাসলেন এবং সন্ধ্যায় তার বাসায় যেতে বললেন। আরেক বিপত্তিতে পড়লাম। খোকা ভাই রাজনৈতিক খবরাখবরের নির্ভরযোগ্য সোর্স ছিলেন আমার। শেষে না এই রিপোর্টের কারণে সম্পর্কটাই চুকে যায়! সেদিন সন্ধ্যায় খোকা ভাইয়ের বাসায় গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম। তিনি ড্রয়িংরুমে একটা সোফায় ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুম থেকে উঠে চা আর মুড়ি-চানাচুর মাখা দিতে বলে আমার মুখোমুখি হলেন। আমি প্রশ্নের বাদাম ধীরে ভাঙতেই তিনি হেসে বললেন, লিখে দাও, আমি এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমার আর কোনো বক্তব্য নেই। দিলখোলা ব্যক্তিত্ব সাদেক হোসেন খোকার বাসায় সেদিনও দীর্ঘ সময় কেটেছিল নানান কাহিনী শুনে। অবশ্য সবই ছিল অফ দ্য রেকর্ড। সেই প্রতিবেদন প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছিল।
প্রয়াত রাজনীতিবিদ আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার দপ্তর বা বাসায় রিপোর্টারদের জন্য বরাবর বরাদ্দ ছিল লাল চা আর টোস্ট বিস্কুট। আমরা সাংবাদিকরা কখনো মজা করে বলতাম, মান্নান ভাইয়ের কমিউনিস্ট চা। সেই চা-বিস্কুট ধ্বংস করতে করতে আমার বহু সময় কেটেছে। ওই গল্পগুলো ছিল খুবই আকর্ষক। তার রাজনৈতিক জীবন, বিএনপির রাজনীতির অন্দরমহলের খোঁজখবর জানতে পেতাম। অবশ্য সেই খবরগুলো কখনোই সংবাদ আকারে প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি সংগত কারণেই।
আশির দশকে সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত ছিলাম বলে ছাত্র নেতাদের সঙ্গে সখ্য ছিল। তখন নিজেও আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। তখন মধুর ক্যানটিন, ডাকসু ভবন, হাকিম ভাইয়ের চায়ের দোকান আর টিএসসির মোড়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দেওয়াটা ছিল দায়িত্বের অংশ। সেসব আড্ডার মেন্যু ছিল চা আর বাদাম। রাতের বেলা তাদের সঙ্গে দেখা হলে ডেকে নিয়ে ভাত খাওয়াতেন। কলতাবাজার, নিমতলীর কিছু নির্দিষ্ট ভাতের রেস্তোরাঁ আর মেডিকেল কলেজের ক্যানটিন ছিল তাদের পুলিশের চোখ এড়াতে গেরিলা কায়দায় আচমকা ঢুকে ভাত খাওয়ার জায়গা। সেখানেই খেতে খেতে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় কখনো মিলে যেত রাজনৈতিক কর্মসূচির আগাম খবর।
প্রত্যক্ষ সাংবাদিকতা থেকে সরে এসেছি বহু বছর হয়ে গেল। এখন রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি অথবা দপ্তরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তবুও কখনো সেই দিনগুলোর স্মৃতি সিনেমার দৃশ্যের মতো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
১৯ বছর আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে একই পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়। সেই ঘটনায় করা মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। ৫৭ সাক্ষীর মধ্যে জবানবন্দি দেওয়া বাকি আছে ৩৪ জনের। আসামিদের মধ্যে ২০-২২ জন গ্রেপ্তার হলেও এখন জামিনে আছেন। গ্রেপ্তার করা যায়নি অন্তত ১৫ জনকে।
এ অবস্থায় মামলার বাদী বিমল শীলের প্রশ্ন, তিনি আদালতের দুয়ারে ঘুরতে ঘুরতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দোষীদের শাস্তি দেখে মরতে চান।
২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর গ্রামে তেজেন্দ্র লাল শীলের ঘরের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে ‘গান পাউডার ছড়িয়ে’ আগুনে পুড়িয়ে নারী-শিশুসহ ১১ জনকে হত্যা করা হয়। তারা হলো তেজেন্দ্র লাল শীল (৭০), তার স্ত্রী বকুল শীল (৬০), ছেলে অনিল শীল (৪০), অনিলের স্ত্রী স্মৃতি শীল (৩২), অনিলের তিন সন্তান রুমি শীল (১২), সোনিয়া শীল (৭) ও চার দিন বয়সী কার্তিক শীল, তেজেন্দ্র শীলের ভাইয়ের মেয়ে বাবুটি শীল (২৫), প্রসাদী শীল (১৭), অ্যানি শীল (৭) এবং কক্সবাজার থেকে বেড়াতে আসা আত্মীয় দেবেন্দ্র শীল (৭২)।
এ ঘটনার পরদিন বাঁশখালী থানায় ৩৮ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। প্রধান আসামি করা হয় স্থানীয় কালিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রহমানকে। তিনি ওই সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
জানা গেছে, সাত তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে অষ্টম তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার হ্লা চিং প্রু ২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি আদালতে তিনটি ধারায় অভিযোগপত্র দেন। এ অভিযোগপত্রে কালিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়। যদিও আগের তিনটি অভিযোগপত্রে তার নাম রাখা হয়নি। ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ডাকাতির উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগ, খুন ও লুটতরাজের অভিযোগে ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটিতে সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত হত্যাকা-ের নতুন অভিযোগ আনে। ওই বছরের ১৯ এপ্রিল নতুন করে ওই ধারায় ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হয়। ২০১২ সালের ১২ মে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ওই বছরের ২ অক্টোবর মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ২০১৩ সালের নভেম্বর আবার তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটি ফেরত আসে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত। ২০১৯ সালের ২৩ জুন এ নির্দেশনার পর পেরিয়ে গেছে তিন বছরের বেশি সময়। নিষ্পত্তি তো দূরের কথা, মামলায় ৫৭ জন সাক্ষীর অর্ধেকেরই সাক্ষ্য শেষ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। উচ্চ আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেও বিচারকাজ শেষ হয়নি। ফলে বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন মামলার বাদী বিমল শীল।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকসহ ৩৪ সাক্ষীকে হাজির করার জন্য পরোয়ানা জারি করেন। মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ ৬ মার্চ সাক্ষীদের হাজির করতে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক এইচএম শফিকুল ইসলাম।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ২৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বাকি আছে ৩৪ জন। তবে এতজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন মামলার বাদী বিমল শীল। তিনি বলেন, ‘সাক্ষ্য দেওয়া ২৩ জনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীও আছেন। ৫৭ জন সবার সাক্ষীর সাক্ষ্য তো প্রয়োজন নেই। কারণ আসামিদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আছে। বিমল বলেন, ছয় মাস পর গত ১২ ফেব্রুয়ারি ছিল মামলার ধার্য তারিখ। কবে সাক্ষ্য শেষ হবে? আর কখন রায় হবে?’ তিনি বলেন, ‘আদালতে ঘুরতে ঘুরতে হার্টের অসুখ হয়ে গেছে। জেলা আদালতে এ পর্যন্ত চারজন পাবলিক প্রসিকিউটর বদল হয়েছে। কারও মধ্যে যেন আন্তরিকতা দেখছি না। সবাই শুধু আশ^স্ত করে যাচ্ছেন। আদালত সমন জারি করলেও পুলিশ বলছে পাইনি। জঘন্যতম এ হত্যাকান্ডে জড়িতদের শাস্তি দেখে আমি মরতে চাই।’
বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত কেন হচ্ছে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শেখ ইফতেখার সাইমুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ মামলায় তিনটি চার্জশিট আছে। কিছু সাক্ষীর নাম দিয়েছেন বাদী। সাক্ষীরা আদালতে না আসার কারণে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। তবে বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সাক্ষীদের আগামী ধার্য (৬ মার্চ) তারিখে হাজির করার জন্য পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। সাক্ষীদের হাজির করাতে সামাজিক উদ্যোগ নিতে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদারের সঙ্গে কথা বলেছি। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেতা অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্তের সঙ্গে কথা বলব।’
সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা প্রসঙ্গে বাঁশখালী থানার ওসি কামাল উদ্দীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই থানায় আমি দায়িত্ব নিয়েছি এক বছর আগে। থানায় সমন আসার পর মামলার সাক্ষীদের আদালতে হাজির করানোর জন্য আমরা সচেষ্ট আছি। ১১ জনকে পুড়িয়ে মারার মামলায় সাক্ষীদের বিরুদ্ধে আদালত পরোয়ানা জারি করেছেন বলে গণমাধ্যমের সুত্রে জেনেছি। পরোয়ানাগুলো থানায় এলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে লেখক, প্রকাশক, পাঠক ও দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল অমর একুশের বইমেলা। গতকাল শুক্রবার শিশুপ্রহর নির্ধারিত থাকায় সকাল থেকেই সব বয়সী বইপ্রেমীদের ঢল ছিল মেলায়। ১১টায় মেলা দর্শনাথীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। মেলার দুয়ার খোলার আগে থেকেই শিশু-কিশোরদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে প্রবেশপথে। সকাল থেকেই খুদে বইপ্রেমীদের আনাগোনায় মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই মেলায় পাঠক-দর্শনার্থীর সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। শাহবাগ থেকে টিএসসি হয়ে দোয়েল চত্বর আর গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেন মানুষের মেলা বসেছিল। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ছিল উপচেপড়া ভিড়। দুপুরের পর দল বেঁধে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে বইপ্রেমীরা ভিড় জমাতে শুরু করেন মেলায়। এ দিন মেলার প্রায় প্রতিটি স্টলে সব বয়সী দর্শনার্থী ও ক্রেতার উপস্থিতি দেখা যায়। কেউ বই কিনছেন আবার কেউ নতুন বই দেখেছেন। আবার অনেকেই বিভিন্ন স্টলের সামনে লেখকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন অনেক তরুণ-তরুণী। এদিকে সকালের দিকটা ছিল শিশু-কিশোরদের আনাগোনায় মুখরিত। আর বিকেল থেকে রাত অবধি সময়টা ছিল বড়দের। এ সময়টাতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
মেলায় ঘুরতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অতসী সেন বলেন, ‘এই কয়েক দিন ব্যস্ততার কারণে মেলায় আসতে পারিনি। আজ ছুটির দিনে মেলায় এলাম। কয়েকটি নতুন বই কিনেছি। তবে প্রচুর ভিড় আজকে মেলায়। অবশ্য এত মানুষ দেখেও ভালো লাগছে।’
প্রকাশকরা জানিয়েছেন, এবারের মেলা অন্যবারের চেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও পরিপাটি। পাঠকরা মেলায় এসে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। কয়েক দিনের তুলনায় আজ প্রচুর মানুষে এসেছে। বইয়ের বিক্রি অনেক ভালো হয়েছে। তবে একুশে ফেব্রুয়ারির পর থেকে বই বিক্রি আরও বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তারা।
নতুন বই : গতকাল ছিল বইমেলার ১৭তম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলায় নতুন বই এসেছে ২৭৬টি। মেলায় বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর।
শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা : সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ক-শাখায় প্রথম হয়েছে আরোহী বর্ণমালা, দ্বিতীয় হয়েছে অংকিতা সাহা রুদ্র এবং তৃতীয় হয়েছে জুমানা হোসেন। খ-শাখায় প্রথম হয়েছে সমৃদ্ধি সূচনা স্বর্গ, দ্বিতীয় হয়েছে আনিশা আমিন এবং তৃতীয় হয়েছে অদ্রিতা ভদ্র এবং গ-শাখায় প্রথম হয়েছে আদিবা সুলতানা, দ্বিতীয় হয়েছে তাজকিয়া তাহরীম শাশা এবং তৃতীয় হয়েছে সিমরিন শাহিন রূপকথা। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন আবৃত্তিশিল্পী গোলাম সারোয়ার, দেওয়ান সাঈদুল হাসান এবং ড. শাহদাৎ হোসেন নিপু। প্রধান অতিথি ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী প্রজ্ঞা লাবণী।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মহীবুল আজিজ। আলোচনায় অংশ নেন অনিরুদ্ধ কাহালি ও মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আকরম হোসেন।
প্রাবন্ধিক বলেন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ তার সমকালীন জাতীয়তাবাদী ঔপন্যাসিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। যে তিনটি প্রধান উপন্যাস তিনি রেখে গেছেন, সেগুলোর মুখ্য অন্বেষা দেশ, দেশের সামগ্রিক চিত্র এবং পারিবারিক-সামাজিক, এমনকি রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতির সূক্ষ্মতর বিশ্লেষণ। শুধু তা-ই নয়, এমন উপন্যাসও তার রয়েছে, যেখানে পাওয়া যায় দৈশিক বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশদ চিত্র। ওয়ালীউল্লাহর উপন্যাসের চরিত্র, সংলাপ, কাহিনী এবং বর্ণনার অন্তরালে নিহিত থাকে অন্তর্বাস্তবের এমন ইঙ্গিত, যা কখনো প্রত্যক্ষ এবং কখনো প্রতীকী।
আলোচকরা বলেন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ তার সমকালীন সমাজচিত্র ও মানবচরিত্রকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তাই মানবজীবনের অনিশ্চয়তা, ভয়, অস্তিত্বের সংকট সবকিছুই তার রচনায় মূর্ত হয়ে উঠেছে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর বর্ণনাশৈলী ও ভাষা উপস্থাপনা বিশেষভাবেই স্বতন্ত্র। বাংলা সাহিত্যের গল্প, উপন্যাস ও নাটক প্রতিটি ক্ষেত্রেই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সৃষ্টিকর্ম যেমন ক্রমান্বয়ে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, তেমনি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ হয়ে উঠছেন আরও বেশি সমসাময়িক।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আকরম হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যকে বিচার করা এখন সময়ের দাবি। তার সাহিত্য-বিশ্লেষণে তত্ত্বের শৈল্পিক ও নান্দনিক ব্যবহারের দিকে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন ফরিদ আহমদ দুলাল, ফেরদৌস নাহার, তপন বাগচী, জাহিদ মুস্তাফা, আফরোজা সোমা এবং আশরাফ জুয়েল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সুকান্ত গুপ্ত, রুবিনা আজাদ এবং মো. শওকত আলী। এ ছাড়া ছিল ফরিদ আহমদ দুলাল রচিত এবং নাট্যাঙ্গন নাট্যপরিবার নিবেদিত নাটক ‘উন্মোচন রহস্য’ এবং রুবিনা আজাদের পরিচালনায় ‘উদয় দিগঙ্গন’-এর শিল্পীদের পরিবেশনা।
আজকের সূচি : আজ ৫ ফাল্গুন ১৪২৯/১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার। অমর একুশে বইমেলার ১৮তম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা : আজ সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হবে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন গোলাম মুস্তাফা। আলোচনায় অংশ নেবেন মোহিত কামাল ও রাজীব কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সুব্রত বড়ুয়া।
এবারের বইমেলায় কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক আফসানা বেগমের দুটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি গল্পের বই ‘দহনদিনের বীণা’, প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশনী। মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধকে কীভাবে ধারণ করে মানুষ এ বিষয়ে লেখা বেশ কিছু গল্পের সংকলন বইটি।
উপন্যাস ‘অনন্তের কাছে’ প্রকাশ করেছে কথাপ্রকাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া দুজন তরুণ-তরুণীর সংলাপের মধ্য দিয়ে কাহিনী এগোয়। আলাপে আলাপে যে জটিলতার সৃষ্টি হয় কাহিনীর এক স্তরে এসে তার সমাধানও হয়। এ ছাড়া আফসানা বেগমের নতুন সংস্করণে যে অনুবাদ বই দুটো আসবে তার বিষয়বস্তু রোমান সাম্রাজ্যের পত্তন, উত্থান ও বিস্তৃতি। আইজ্যাক আসিমভ কল্পকাহিনী লেখার আদলে ইতিহাস লেখেন। এ বই দুটিও তার ব্যতিক্রম নয়।
বই প্রকাশ হলেও মেলায় এখনো যাওয়া হয়নি আফসানার। তিনি বলেন, ‘এখনো বইমেলায় যাইনি। ক্রেতা ও পাঠকের ভিড় আছে নিশ্চয়ই। শেষের দিকে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।’
পাঠকদের সম্পর্কে জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে আফসানা বেগম বলেন, ‘বাংলাদেশে সাহিত্যের পাঠক ধীরে ধীরে কমেছে বলে আমার ধারণা। আগের দিনের মতো নিরবচ্ছিন্ন সময় কারও হাতে নেই যে বড় কোনো উপন্যাসে যখন-তখন ডুবে থাকবে। সমাজে নানারকম প্রতিযোগিতা লেগে আছে। এসব কিছুর মধ্যে মানুষ কল্পনা করার জায়গা হারিয়েছে। কল্পকাহিনী বা সাহিত্য মানুষকে ভাবায়, কল্পনা করায়। যেহেতু কল্পনা করার ফুরসত নেই, তাই মানুষ সাহিত্য থেকে দূরে সরে গেলে তাকে তেমন দোষ দেওয়া যাবে না। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও সহজলভ্যতা মানুষের দিন এবং রাত দখল করে নিয়েছে। এখন পৃথিবীর যেখানে যা ঘটছে তা চোখের সামনেই ঘটছে। তাই কল্পনার প্রয়োজনও পড়ছে না। এ কারণে অনেক সময় সাহিত্যের পাঠকরা কল্পকাহিনীর চেয়ে বেশি নন-ফিকশনের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে।’
পাঠকের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অচেনা পাঠক বইমেলায় বা কোনো সাহিত্যের অনুষ্ঠানে আমার লেখা নিয়ে কথা বলতে এলে, কখনো তার হাতে আমার বই থাকলে, একই সঙ্গে কৃতজ্ঞ ও বিব্রত বোধ করি। তাই সেরকম যে ঘটনাগুলো ঘটে সেসব বর্ণনা করাও আমার জন্য বিব্রতকর। পাঠক পড়ার পর আমাকে ব্যক্তিগতভাবে জানালে ভালোই লাগে। তবে না জানালেও আমার কোনো সমস্যা নেই। আবার পত্রিকার পাতায় রিভিউ দেখলে নিজের লেখাকে যখন আরেকজনের দৃষ্টিতে দেখতে পাই, সেটা আমার জন্য রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।’
আফসানা বেগমের উল্লেখযোগ্য বই ‘কোলাহল থামার পর’, ‘দিনগত কপটতা’, ‘প্রতিচ্ছায়া’, ‘বেদনার আমরা সন্তান’, ‘আমি অথবা আমার ছায়া’। অনুবাদ করেছেন নাদিন গর্ডিমার, উইলিয়াম ফকনার, হুলিও কোর্তাসার, অ্যালিস মানরো, আইজ্যাক আসিমভ, ফিদেল কাস্ত্রোসহ অন্যান্য লেখকের কালজয়ী রচনা।
‘কোলাহল থামার পর’ উপন্যাসের জন্য জেমকন সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।
ইউটিউবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন গুগলের একেবারে প্রথম দিকের কর্মী সুসান ওজিস্কি। গত বৃহস্পতিবার ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন। এখন তার স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নীল মোহন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ২৫ বছর আগে ওজিস্কির বাড়ির গ্যারেজেই যাত্রা শুরু হয়েছিল গুগলের। ২০১৪ সালে তিনি ইউটিউবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে আসেন। কিন্তু টিকটক, ফেইসবুকের রিলের মতো স্বল্পদৈর্ঘ্যরে ভিডিও এবং নেটফ্লিক্সের মতো অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়া ইউটিউবের বিজ্ঞাপনী আয় টানা দ্বিতীয় প্রান্তিকেও কমে যাওয়ার পর তার পদত্যাগের ঘোষণা এলো।
প্রযুক্তিজগতে অন্যতম প্রভাবশালী নারী হিসেবে বিবেচিত ওজিস্কি তার পদত্যাগের ঘোষণায় জানান, তিনি এখন পরিবার, স্বাস্থ্য এবং ব্যক্তিগত প্রকল্পগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে চান। তবে গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের উপদেষ্টা পদে থাকার পরিকল্পনাও আছে তার। ইউটিউবের প্রধান নির্বাহী পদে আসার আগে ওজিস্কি গুগলের অ্যাড প্রোডাক্টসের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
রয়টার্স বলছে, নীল মোহনের বয়স ৪৯ বছর। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ডিগ্রি নেওয়া মোহনকে ২০১৫ সালে ইউটিউবের প্রধান পণ্য কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে তিনি ছয় বছর ছিলেন ডাবলক্লিকে, ২০০৮ সালে ওই কোম্পানিটি কিনে নেয় গুগল। এরপর প্রায় আট বছর মোহন গুগলের ডিসপ্লে অ্যান্ড ভিডিও অ্যাডভার্টাইজিংয়ের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছেছে ৪৩ হাজার ৮৫৮ জনে। দুই দেশের অনেক এলাকায় স্থগিত করা হয়েছে উদ্ধারকাজ। স্বজনরাও ছেড়ে দিয়েছেন কাউকে জীবিত উদ্ধারের আশা। ভূমিকম্পের ১১ দিন পর এমন পরিস্থিতিতেও কোনো কোনো এলাকায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার হচ্ছে কেউ কেউ। গত বৃহস্পতিবার তুরস্কের কাহরামানমারাস প্রদেশে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ধ্বংস্তূপ থেকে ১৭ বছর বয়সের এক কিশোরীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তার ঠিক ১০ ঘণ্টা পর ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৪২ বছর বয়সী এক নারীকে। তবে তার দুই সন্তান ও স্বামী এখনো নিখোঁজ। গতকাল শুক্রবার নেসলিহান কিলিচ নামের ওই নারীকে উদ্ধারের পর তার স্বজনরা আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, তাকে জীবিত উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তার জন্য কবরও খুঁড়ে রাখা হয়েছিল।
কিলিচের দেবর সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তাদের জীবিত উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। উদ্ধারকারীদেরও কাজ বন্ধ করতে বলেছিলাম। কিন্তু তার ঠিক কিছু সময় পরেই ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তার আর্তনাদ শোনা যায়। পরে দীর্ঘ চেষ্টায় উদ্ধার করা হয় তাকে। কিন্তু আমার ভাই ও তার দুই সন্তান এখনো নিখোঁজ।
গত বুধবারও কাহরামানমারাস থেকে উদ্ধার পেয়েছেন দুই নারী। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও মানুষকে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে। বহু পরিবার এখনো তাদের নিখোঁজ স্বজনদের লাশ উদ্ধারের অপেক্ষায় আছে। ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের নির্মাণকাজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণভাবে ভবন নির্মাণের কারণে ভূমিকম্পে হাজারো মানুষের মৃত্যুতে জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে।
তুরস্কের আনতাকিয়া নগরীতে এক বাসিন্দা বলেন, আমার দুই সন্তান আছে। তারা দুজনই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে। ভূমিকম্পে ভবন ধসে ওই শহরে প্রায় ৬৫০ জন মানুষ মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে ভূমিকম্প থেকে বেঁচে গেলেও তুরস্কের কোনিয়ার শহরে আগুন লেগে মারা গেছে এক সিরীয় পরিবারের সাত সদস্য। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে পাঁচজনই শিশু। আগুনে পুড়ে মৃত্যু হওয়া ওই শিশুদের বয়স ৪ থেকে ১৩ বছর।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সিরীয় ওই পরিবারটি তুরস্কের গাজিয়ানটেত প্রদেশের নুরদাগিতে থাকত। ভূমিকম্পে তুরস্কে যে কয়েকটি শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নুরদাগি সেগুলোর একটি। কয়েক দিন আগেই ওই পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে মধ্যাঞ্চলীয় শহর কোনিয়ায় স্থানান্তর করা হয়েছিল। একতলা ভবনটিতে ১৪ জন ছিল।
খবরে বলা হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর তদন্ত করা হয়েছে এবং একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় একজন বাসিন্দা মুহসিন চাকির আনাদোলুকে বলেন, আমরা আগুন দেখেছি কিন্তু কিছু করতে পারিনি। জানালা দিয়ে একটি মেয়েকে উদ্ধার করা হয়।
এদিকে ১১ দিন আগের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতভর প্রথমবার সিরীয় সেনাদের সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স সংস্থাটির বরাতে বলছে, প্রাণঘাতী ওই ভূমিকম্পের পর সেখানে তারা বলেছে, সরকারি বাহিনী বিদ্রোহী অধ্যুষিত শহর আতারেবের উপকণ্ঠে গোলা ছুড়েছে। কাছাকাছি যুদ্ধক্ষেত্রে দুপক্ষের মধ্যে ভারী অস্ত্রশস্ত্র দিয়েও যুদ্ধ চলছে।
সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সরকারি বাহিনী নিয়ন্ত্রিত সারাকেবের কাছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আরেক এলাকায়ও তুমুল লড়াই হয়েছে; আসাদ বাহিনী হামা প্রদেশের দুটি গ্রামের উপকণ্ঠে গোলা ছুড়েছে বলেও দাবি করেছে সিরিয়ান অবজারভেটরি। তবে রয়টার্স এসব দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
দেশটিতে ২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া সংঘাত এরই মধ্যে লাখো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, জনসংখ্যার অর্ধেককে পরিণত করেছে উদ্বাস্তুতে, লাখ লাখ মানুষকে বাধ্য করেছে অন্য দেশে শরণার্থী হতে। ভূমিকম্পের আগেই সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৪০ লাখের বেশি মানুষ ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল ছিল। ভূমিকম্পের পর পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে, সেখানে ঠিকভাবে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না অভিযোগ অনেক দাতা সংস্থার।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।