
ভয়াবহ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছেছে ৪৩ হাজার ৮৫৮ জনে। দুই দেশের অনেক এলাকায় স্থগিত করা হয়েছে উদ্ধারকাজ। স্বজনরাও ছেড়ে দিয়েছেন কাউকে জীবিত উদ্ধারের আশা। ভূমিকম্পের ১১ দিন পর এমন পরিস্থিতিতেও কোনো কোনো এলাকায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে জীবিত উদ্ধার হচ্ছে কেউ কেউ। গত বৃহস্পতিবার তুরস্কের কাহরামানমারাস প্রদেশে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের ধ্বংস্তূপ থেকে ১৭ বছর বয়সের এক কিশোরীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তার ঠিক ১০ ঘণ্টা পর ওই ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ৪২ বছর বয়সী এক নারীকে। তবে তার দুই সন্তান ও স্বামী এখনো নিখোঁজ। গতকাল শুক্রবার নেসলিহান কিলিচ নামের ওই নারীকে উদ্ধারের পর তার স্বজনরা আলজাজিরাকে জানিয়েছেন, তাকে জীবিত উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তার জন্য কবরও খুঁড়ে রাখা হয়েছিল।
কিলিচের দেবর সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তাদের জীবিত উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। উদ্ধারকারীদেরও কাজ বন্ধ করতে বলেছিলাম। কিন্তু তার ঠিক কিছু সময় পরেই ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে তার আর্তনাদ শোনা যায়। পরে দীর্ঘ চেষ্টায় উদ্ধার করা হয় তাকে। কিন্তু আমার ভাই ও তার দুই সন্তান এখনো নিখোঁজ।
গত বুধবারও কাহরামানমারাস থেকে উদ্ধার পেয়েছেন দুই নারী। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও মানুষকে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে। বহু পরিবার এখনো তাদের নিখোঁজ স্বজনদের লাশ উদ্ধারের অপেক্ষায় আছে। ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের নির্মাণকাজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ত্রুটিপূর্ণভাবে ভবন নির্মাণের কারণে ভূমিকম্পে হাজারো মানুষের মৃত্যুতে জনমনে ক্ষোভ বাড়ছে।
তুরস্কের আনতাকিয়া নগরীতে এক বাসিন্দা বলেন, আমার দুই সন্তান আছে। তারা দুজনই ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছে। ভূমিকম্পে ভবন ধসে ওই শহরে প্রায় ৬৫০ জন মানুষ মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে ভূমিকম্প থেকে বেঁচে গেলেও তুরস্কের কোনিয়ার শহরে আগুন লেগে মারা গেছে এক সিরীয় পরিবারের সাত সদস্য। তুরস্কের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে পাঁচজনই শিশু। আগুনে পুড়ে মৃত্যু হওয়া ওই শিশুদের বয়স ৪ থেকে ১৩ বছর।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সিরীয় ওই পরিবারটি তুরস্কের গাজিয়ানটেত প্রদেশের নুরদাগিতে থাকত। ভূমিকম্পে তুরস্কে যে কয়েকটি শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নুরদাগি সেগুলোর একটি। কয়েক দিন আগেই ওই পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে মধ্যাঞ্চলীয় শহর কোনিয়ায় স্থানান্তর করা হয়েছিল। একতলা ভবনটিতে ১৪ জন ছিল।
খবরে বলা হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর তদন্ত করা হয়েছে এবং একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় একজন বাসিন্দা মুহসিন চাকির আনাদোলুকে বলেন, আমরা আগুন দেখেছি কিন্তু কিছু করতে পারিনি। জানালা দিয়ে একটি মেয়েকে উদ্ধার করা হয়।
এদিকে ১১ দিন আগের ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতভর প্রথমবার সিরীয় সেনাদের সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স সংস্থাটির বরাতে বলছে, প্রাণঘাতী ওই ভূমিকম্পের পর সেখানে তারা বলেছে, সরকারি বাহিনী বিদ্রোহী অধ্যুষিত শহর আতারেবের উপকণ্ঠে গোলা ছুড়েছে। কাছাকাছি যুদ্ধক্ষেত্রে দুপক্ষের মধ্যে ভারী অস্ত্রশস্ত্র দিয়েও যুদ্ধ চলছে।
সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সরকারি বাহিনী নিয়ন্ত্রিত সারাকেবের কাছে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আরেক এলাকায়ও তুমুল লড়াই হয়েছে; আসাদ বাহিনী হামা প্রদেশের দুটি গ্রামের উপকণ্ঠে গোলা ছুড়েছে বলেও দাবি করেছে সিরিয়ান অবজারভেটরি। তবে রয়টার্স এসব দাবির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দাদের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
দেশটিতে ২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া সংঘাত এরই মধ্যে লাখো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, জনসংখ্যার অর্ধেককে পরিণত করেছে উদ্বাস্তুতে, লাখ লাখ মানুষকে বাধ্য করেছে অন্য দেশে শরণার্থী হতে। ভূমিকম্পের আগেই সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৪০ লাখের বেশি মানুষ ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল ছিল। ভূমিকম্পের পর পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে, সেখানে ঠিকভাবে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না অভিযোগ অনেক দাতা সংস্থার।
১৯ বছর আগে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে একই পরিবারের ১১ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি হয়। সেই ঘটনায় করা মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। ৫৭ সাক্ষীর মধ্যে জবানবন্দি দেওয়া বাকি আছে ৩৪ জনের। আসামিদের মধ্যে ২০-২২ জন গ্রেপ্তার হলেও এখন জামিনে আছেন। গ্রেপ্তার করা যায়নি অন্তত ১৫ জনকে।
এ অবস্থায় মামলার বাদী বিমল শীলের প্রশ্ন, তিনি আদালতের দুয়ারে ঘুরতে ঘুরতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দোষীদের শাস্তি দেখে মরতে চান।
২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর বাঁশখালী উপজেলার সাধনপুর গ্রামে তেজেন্দ্র লাল শীলের ঘরের বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে ‘গান পাউডার ছড়িয়ে’ আগুনে পুড়িয়ে নারী-শিশুসহ ১১ জনকে হত্যা করা হয়। তারা হলো তেজেন্দ্র লাল শীল (৭০), তার স্ত্রী বকুল শীল (৬০), ছেলে অনিল শীল (৪০), অনিলের স্ত্রী স্মৃতি শীল (৩২), অনিলের তিন সন্তান রুমি শীল (১২), সোনিয়া শীল (৭) ও চার দিন বয়সী কার্তিক শীল, তেজেন্দ্র শীলের ভাইয়ের মেয়ে বাবুটি শীল (২৫), প্রসাদী শীল (১৭), অ্যানি শীল (৭) এবং কক্সবাজার থেকে বেড়াতে আসা আত্মীয় দেবেন্দ্র শীল (৭২)।
এ ঘটনার পরদিন বাঁশখালী থানায় ৩৮ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। প্রধান আসামি করা হয় স্থানীয় কালিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রহমানকে। তিনি ওই সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।
জানা গেছে, সাত তদন্ত কর্মকর্তার হাত ঘুরে অষ্টম তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার হ্লা চিং প্রু ২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি আদালতে তিনটি ধারায় অভিযোগপত্র দেন। এ অভিযোগপত্রে কালিয়াপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আমিনুর রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়। যদিও আগের তিনটি অভিযোগপত্রে তার নাম রাখা হয়নি। ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ডাকাতির উদ্দেশ্যে অগ্নিসংযোগ, খুন ও লুটতরাজের অভিযোগে ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটিতে সম্পত্তি দখলের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত হত্যাকা-ের নতুন অভিযোগ আনে। ওই বছরের ১৯ এপ্রিল নতুন করে ওই ধারায় ৩৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠিত হয়। ২০১২ সালের ১২ মে চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ওই বছরের ২ অক্টোবর মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়। নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ২০১৩ সালের নভেম্বর আবার তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটি ফেরত আসে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিল উচ্চ আদালত। ২০১৯ সালের ২৩ জুন এ নির্দেশনার পর পেরিয়ে গেছে তিন বছরের বেশি সময়। নিষ্পত্তি তো দূরের কথা, মামলায় ৫৭ জন সাক্ষীর অর্ধেকেরই সাক্ষ্য শেষ করতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ। উচ্চ আদালতের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেও বিচারকাজ শেষ হয়নি। ফলে বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন মামলার বাদী বিমল শীল।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ চাঞ্চল্যকর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকসহ ৩৪ সাক্ষীকে হাজির করার জন্য পরোয়ানা জারি করেন। মামলার পরবর্তী ধার্য তারিখ ৬ মার্চ সাক্ষীদের হাজির করতে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক এইচএম শফিকুল ইসলাম।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ২৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। বাকি আছে ৩৪ জন। তবে এতজন সাক্ষীর সাক্ষ্যের প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন মামলার বাদী বিমল শীল। তিনি বলেন, ‘সাক্ষ্য দেওয়া ২৩ জনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীও আছেন। ৫৭ জন সবার সাক্ষীর সাক্ষ্য তো প্রয়োজন নেই। কারণ আসামিদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আছে। বিমল বলেন, ছয় মাস পর গত ১২ ফেব্রুয়ারি ছিল মামলার ধার্য তারিখ। কবে সাক্ষ্য শেষ হবে? আর কখন রায় হবে?’ তিনি বলেন, ‘আদালতে ঘুরতে ঘুরতে হার্টের অসুখ হয়ে গেছে। জেলা আদালতে এ পর্যন্ত চারজন পাবলিক প্রসিকিউটর বদল হয়েছে। কারও মধ্যে যেন আন্তরিকতা দেখছি না। সবাই শুধু আশ^স্ত করে যাচ্ছেন। আদালত সমন জারি করলেও পুলিশ বলছে পাইনি। জঘন্যতম এ হত্যাকান্ডে জড়িতদের শাস্তি দেখে আমি মরতে চাই।’
বিচার কার্যক্রম বিলম্বিত কেন হচ্ছে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) শেখ ইফতেখার সাইমুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ মামলায় তিনটি চার্জশিট আছে। কিছু সাক্ষীর নাম দিয়েছেন বাদী। সাক্ষীরা আদালতে না আসার কারণে বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। তবে বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সাক্ষীদের আগামী ধার্য (৬ মার্চ) তারিখে হাজির করার জন্য পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। সাক্ষীদের হাজির করাতে সামাজিক উদ্যোগ নিতে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদারের সঙ্গে কথা বলেছি। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ নেতা অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্তের সঙ্গে কথা বলব।’
সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা প্রসঙ্গে বাঁশখালী থানার ওসি কামাল উদ্দীন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এই থানায় আমি দায়িত্ব নিয়েছি এক বছর আগে। থানায় সমন আসার পর মামলার সাক্ষীদের আদালতে হাজির করানোর জন্য আমরা সচেষ্ট আছি। ১১ জনকে পুড়িয়ে মারার মামলায় সাক্ষীদের বিরুদ্ধে আদালত পরোয়ানা জারি করেছেন বলে গণমাধ্যমের সুত্রে জেনেছি। পরোয়ানাগুলো থানায় এলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে লেখক, প্রকাশক, পাঠক ও দর্শনার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল অমর একুশের বইমেলা। গতকাল শুক্রবার শিশুপ্রহর নির্ধারিত থাকায় সকাল থেকেই সব বয়সী বইপ্রেমীদের ঢল ছিল মেলায়। ১১টায় মেলা দর্শনাথীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। মেলার দুয়ার খোলার আগে থেকেই শিশু-কিশোরদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে প্রবেশপথে। সকাল থেকেই খুদে বইপ্রেমীদের আনাগোনায় মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই মেলায় পাঠক-দর্শনার্থীর সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। শাহবাগ থেকে টিএসসি হয়ে দোয়েল চত্বর আর গোটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যেন মানুষের মেলা বসেছিল। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ছিল উপচেপড়া ভিড়। দুপুরের পর দল বেঁধে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে বইপ্রেমীরা ভিড় জমাতে শুরু করেন মেলায়। এ দিন মেলার প্রায় প্রতিটি স্টলে সব বয়সী দর্শনার্থী ও ক্রেতার উপস্থিতি দেখা যায়। কেউ বই কিনছেন আবার কেউ নতুন বই দেখেছেন। আবার অনেকেই বিভিন্ন স্টলের সামনে লেখকদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছেন। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন অনেক তরুণ-তরুণী। এদিকে সকালের দিকটা ছিল শিশু-কিশোরদের আনাগোনায় মুখরিত। আর বিকেল থেকে রাত অবধি সময়টা ছিল বড়দের। এ সময়টাতে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
মেলায় ঘুরতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অতসী সেন বলেন, ‘এই কয়েক দিন ব্যস্ততার কারণে মেলায় আসতে পারিনি। আজ ছুটির দিনে মেলায় এলাম। কয়েকটি নতুন বই কিনেছি। তবে প্রচুর ভিড় আজকে মেলায়। অবশ্য এত মানুষ দেখেও ভালো লাগছে।’
প্রকাশকরা জানিয়েছেন, এবারের মেলা অন্যবারের চেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও পরিপাটি। পাঠকরা মেলায় এসে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। কয়েক দিনের তুলনায় আজ প্রচুর মানুষে এসেছে। বইয়ের বিক্রি অনেক ভালো হয়েছে। তবে একুশে ফেব্রুয়ারির পর থেকে বই বিক্রি আরও বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন তারা।
নতুন বই : গতকাল ছিল বইমেলার ১৭তম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলায় নতুন বই এসেছে ২৭৬টি। মেলায় বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ছিল শিশুপ্রহর।
শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতা : সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। ক-শাখায় প্রথম হয়েছে আরোহী বর্ণমালা, দ্বিতীয় হয়েছে অংকিতা সাহা রুদ্র এবং তৃতীয় হয়েছে জুমানা হোসেন। খ-শাখায় প্রথম হয়েছে সমৃদ্ধি সূচনা স্বর্গ, দ্বিতীয় হয়েছে আনিশা আমিন এবং তৃতীয় হয়েছে অদ্রিতা ভদ্র এবং গ-শাখায় প্রথম হয়েছে আদিবা সুলতানা, দ্বিতীয় হয়েছে তাজকিয়া তাহরীম শাশা এবং তৃতীয় হয়েছে সিমরিন শাহিন রূপকথা। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন আবৃত্তিশিল্পী গোলাম সারোয়ার, দেওয়ান সাঈদুল হাসান এবং ড. শাহদাৎ হোসেন নিপু। প্রধান অতিথি ছিলেন আবৃত্তিশিল্পী প্রজ্ঞা লাবণী।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মহীবুল আজিজ। আলোচনায় অংশ নেন অনিরুদ্ধ কাহালি ও মোহাম্মদ জয়নুদ্দীন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আকরম হোসেন।
প্রাবন্ধিক বলেন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ তার সমকালীন জাতীয়তাবাদী ঔপন্যাসিকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। যে তিনটি প্রধান উপন্যাস তিনি রেখে গেছেন, সেগুলোর মুখ্য অন্বেষা দেশ, দেশের সামগ্রিক চিত্র এবং পারিবারিক-সামাজিক, এমনকি রাষ্ট্রীয় পরিস্থিতির সূক্ষ্মতর বিশ্লেষণ। শুধু তা-ই নয়, এমন উপন্যাসও তার রয়েছে, যেখানে পাওয়া যায় দৈশিক বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশদ চিত্র। ওয়ালীউল্লাহর উপন্যাসের চরিত্র, সংলাপ, কাহিনী এবং বর্ণনার অন্তরালে নিহিত থাকে অন্তর্বাস্তবের এমন ইঙ্গিত, যা কখনো প্রত্যক্ষ এবং কখনো প্রতীকী।
আলোচকরা বলেন, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ তার সমকালীন সমাজচিত্র ও মানবচরিত্রকে গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তাই মানবজীবনের অনিশ্চয়তা, ভয়, অস্তিত্বের সংকট সবকিছুই তার রচনায় মূর্ত হয়ে উঠেছে। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর বর্ণনাশৈলী ও ভাষা উপস্থাপনা বিশেষভাবেই স্বতন্ত্র। বাংলা সাহিত্যের গল্প, উপন্যাস ও নাটক প্রতিটি ক্ষেত্রেই সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সৃষ্টিকর্ম যেমন ক্রমান্বয়ে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে, তেমনি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ হয়ে উঠছেন আরও বেশি সমসাময়িক।
সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ আকরম হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর সাহিত্যকে বিচার করা এখন সময়ের দাবি। তার সাহিত্য-বিশ্লেষণে তত্ত্বের শৈল্পিক ও নান্দনিক ব্যবহারের দিকে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন ফরিদ আহমদ দুলাল, ফেরদৌস নাহার, তপন বাগচী, জাহিদ মুস্তাফা, আফরোজা সোমা এবং আশরাফ জুয়েল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সুকান্ত গুপ্ত, রুবিনা আজাদ এবং মো. শওকত আলী। এ ছাড়া ছিল ফরিদ আহমদ দুলাল রচিত এবং নাট্যাঙ্গন নাট্যপরিবার নিবেদিত নাটক ‘উন্মোচন রহস্য’ এবং রুবিনা আজাদের পরিচালনায় ‘উদয় দিগঙ্গন’-এর শিল্পীদের পরিবেশনা।
আজকের সূচি : আজ ৫ ফাল্গুন ১৪২৯/১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার। অমর একুশে বইমেলার ১৮তম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতা : আজ সকাল ১০টায় বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠান : বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হবে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন গোলাম মুস্তাফা। আলোচনায় অংশ নেবেন মোহিত কামাল ও রাজীব কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সুব্রত বড়ুয়া।
এবারের বইমেলায় কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক আফসানা বেগমের দুটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি গল্পের বই ‘দহনদিনের বীণা’, প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশনী। মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধকে কীভাবে ধারণ করে মানুষ এ বিষয়ে লেখা বেশ কিছু গল্পের সংকলন বইটি।
উপন্যাস ‘অনন্তের কাছে’ প্রকাশ করেছে কথাপ্রকাশ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া দুজন তরুণ-তরুণীর সংলাপের মধ্য দিয়ে কাহিনী এগোয়। আলাপে আলাপে যে জটিলতার সৃষ্টি হয় কাহিনীর এক স্তরে এসে তার সমাধানও হয়। এ ছাড়া আফসানা বেগমের নতুন সংস্করণে যে অনুবাদ বই দুটো আসবে তার বিষয়বস্তু রোমান সাম্রাজ্যের পত্তন, উত্থান ও বিস্তৃতি। আইজ্যাক আসিমভ কল্পকাহিনী লেখার আদলে ইতিহাস লেখেন। এ বই দুটিও তার ব্যতিক্রম নয়।
বই প্রকাশ হলেও মেলায় এখনো যাওয়া হয়নি আফসানার। তিনি বলেন, ‘এখনো বইমেলায় যাইনি। ক্রেতা ও পাঠকের ভিড় আছে নিশ্চয়ই। শেষের দিকে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।’
পাঠকদের সম্পর্কে জানতে চাইলে দেশ রূপান্তরকে আফসানা বেগম বলেন, ‘বাংলাদেশে সাহিত্যের পাঠক ধীরে ধীরে কমেছে বলে আমার ধারণা। আগের দিনের মতো নিরবচ্ছিন্ন সময় কারও হাতে নেই যে বড় কোনো উপন্যাসে যখন-তখন ডুবে থাকবে। সমাজে নানারকম প্রতিযোগিতা লেগে আছে। এসব কিছুর মধ্যে মানুষ কল্পনা করার জায়গা হারিয়েছে। কল্পকাহিনী বা সাহিত্য মানুষকে ভাবায়, কল্পনা করায়। যেহেতু কল্পনা করার ফুরসত নেই, তাই মানুষ সাহিত্য থেকে দূরে সরে গেলে তাকে তেমন দোষ দেওয়া যাবে না। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও সহজলভ্যতা মানুষের দিন এবং রাত দখল করে নিয়েছে। এখন পৃথিবীর যেখানে যা ঘটছে তা চোখের সামনেই ঘটছে। তাই কল্পনার প্রয়োজনও পড়ছে না। এ কারণে অনেক সময় সাহিত্যের পাঠকরা কল্পকাহিনীর চেয়ে বেশি নন-ফিকশনের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে।’
পাঠকের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অচেনা পাঠক বইমেলায় বা কোনো সাহিত্যের অনুষ্ঠানে আমার লেখা নিয়ে কথা বলতে এলে, কখনো তার হাতে আমার বই থাকলে, একই সঙ্গে কৃতজ্ঞ ও বিব্রত বোধ করি। তাই সেরকম যে ঘটনাগুলো ঘটে সেসব বর্ণনা করাও আমার জন্য বিব্রতকর। পাঠক পড়ার পর আমাকে ব্যক্তিগতভাবে জানালে ভালোই লাগে। তবে না জানালেও আমার কোনো সমস্যা নেই। আবার পত্রিকার পাতায় রিভিউ দেখলে নিজের লেখাকে যখন আরেকজনের দৃষ্টিতে দেখতে পাই, সেটা আমার জন্য রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।’
আফসানা বেগমের উল্লেখযোগ্য বই ‘কোলাহল থামার পর’, ‘দিনগত কপটতা’, ‘প্রতিচ্ছায়া’, ‘বেদনার আমরা সন্তান’, ‘আমি অথবা আমার ছায়া’। অনুবাদ করেছেন নাদিন গর্ডিমার, উইলিয়াম ফকনার, হুলিও কোর্তাসার, অ্যালিস মানরো, আইজ্যাক আসিমভ, ফিদেল কাস্ত্রোসহ অন্যান্য লেখকের কালজয়ী রচনা।
‘কোলাহল থামার পর’ উপন্যাসের জন্য জেমকন সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন।
ইউটিউবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন গুগলের একেবারে প্রথম দিকের কর্মী সুসান ওজিস্কি। গত বৃহস্পতিবার ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্মটিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন। এখন তার স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নীল মোহন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় ২৫ বছর আগে ওজিস্কির বাড়ির গ্যারেজেই যাত্রা শুরু হয়েছিল গুগলের। ২০১৪ সালে তিনি ইউটিউবের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে আসেন। কিন্তু টিকটক, ফেইসবুকের রিলের মতো স্বল্পদৈর্ঘ্যরে ভিডিও এবং নেটফ্লিক্সের মতো অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলোর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়া ইউটিউবের বিজ্ঞাপনী আয় টানা দ্বিতীয় প্রান্তিকেও কমে যাওয়ার পর তার পদত্যাগের ঘোষণা এলো।
প্রযুক্তিজগতে অন্যতম প্রভাবশালী নারী হিসেবে বিবেচিত ওজিস্কি তার পদত্যাগের ঘোষণায় জানান, তিনি এখন পরিবার, স্বাস্থ্য এবং ব্যক্তিগত প্রকল্পগুলোর দিকে মনোযোগ দিতে চান। তবে গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেটের উপদেষ্টা পদে থাকার পরিকল্পনাও আছে তার। ইউটিউবের প্রধান নির্বাহী পদে আসার আগে ওজিস্কি গুগলের অ্যাড প্রোডাক্টসের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
রয়টার্স বলছে, নীল মোহনের বয়স ৪৯ বছর। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ডিগ্রি নেওয়া মোহনকে ২০১৫ সালে ইউটিউবের প্রধান পণ্য কর্মকর্তা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর আগে তিনি ছয় বছর ছিলেন ডাবলক্লিকে, ২০০৮ সালে ওই কোম্পানিটি কিনে নেয় গুগল। এরপর প্রায় আট বছর মোহন গুগলের ডিসপ্লে অ্যান্ড ভিডিও অ্যাডভার্টাইজিংয়ের জ্যেষ্ঠ ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।
বিএনপি নেতা, ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা খেতে পছন্দ করতেন ফল আর মুড়ি-চানাচুর মাখা। সংবাদ সংগ্রহের কাজে তার বাসায় ঢুকে বিপুল পরিমাণ খাবারের চক্করে পড়তে হয়েছে বহুবার। আরেক প্রয়াত রাজনীতিক কাজী জাফর আহমেদ পছন্দ করতেন রসমালাই খেতে। রাজনীতির উত্থান-পতনের খবর সংগ্রহ করার জন্য রাত-বিরেতে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু অথবা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বাড়িতে ঢুকে না খেয়ে ফিরেছেন এমন রাজনৈতিক সংবাদাতার সংখ্যা কম। তবে আরেক প্রয়াত রাজনীতিবিদ আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার দপ্তর অথবা বাড়িতে টোস্ট বিস্কুট আর চা সংবাদপত্রের রাজনৈতিক বিটের রিপোর্টারদের কাছে একদা আলোচনার বিষয় ছিল।
কোনো এক কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে উঠে গিয়ে হাজির হয়েছি তৎকালীন জাতীয় পার্টির নেতা কাজী জাফর আহমেদের বাড়ির দরজায়। জাতীয় পার্টি তখন ক্ষমতায় নেই। দলের মধ্যে ভাঙনের সুর বাজছে। দুদিন টেলিফোনে চেষ্টার পর তার কাছ থেকে সকালবেলা খানিকটা সময় আদায় করা সম্ভব হলো। কাজী জাফরের মন্তব্য প্রয়োজন রিপোর্ট লেখার জন্য। সাজানো বসার ঘরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বিরক্ত মুখে ঘরে ঢুকে চা আর রসমালাই পাঠানোর জন্য কাউকে নির্দেশ দিলেন। একটু পরে ট্রেতে করে রসমালাই পরিবেশন করা হলো আমাদের সামনে। সোফায় হেলান দিয়ে বসে কাজী জাফর আহমেদ আমার কী প্রশ্ন আছে জানতে চাইলেন। আমিও আচমকা বোকার মতো প্রশ্ন করে বসলাম, জাতীয় পার্টি ভাঙছে কেন? সকালবেলা আমার বেমক্কা প্রশ্ন শুনে মেজাজ হারালেন কাজী জাফর। আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, তোমাকে এই খবরটা কে দিল? তারপর রাগের মাথায় আমাকে বের হয়ে যেতে বললেন বাসা থেকে। হতভম্ব আমি ভাবছি কী করব। টেবিলে রাখা রসমালাইও অসহায় পড়ে আছে। অগত্যা চেয়ার ছেড়ে উঠে দরজা পর্যন্ত পৌঁছে যাই। হঠাৎ মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। কাজী জাফর আহমেদকে সাহস করে বলে ফেললাম, প্রবীণ সাংবাদিক আহমেদ হুমায়ূন তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। একটু থমকে গিয়ে কাজী জাফর আহমেদ জানতে চাইলেন, আমি কীভাবে আহমেদ হুমায়ূনকে চিনি? বললাম, তিনি আমার বাবা। চোখের পলকে ঘরের দৃশ্যপট বদলে গেল। আমার পিতার নেতৃত্বে কাজী জাফর আহমেদ ছাত্রজীবনে রাজনীতি করেছেন। বাবা তখন ঢাকা কলেজ শাখা ছাত্র ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে বাবার নামটা ব্যবহার না করলে সেদিন রসমালাই এবং সাক্ষাৎকার দুটোই হাতছাড়া হতো। সেদিন তিনি আমাকে যত্ন করে নিজের প্রিয় রসমালাই এবং অন্যান্য খাবার খাইয়েছিলেন। প্রথম আলো পত্রিকায় কাজ করার সময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে একটি রিপোর্টে কয়েকটি ঘটনার সঙ্গে সাদেক হোসেন খোকাসহ আরও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীর সম্পৃক্ততার কথা সাহস করে লিখে ফেললাম। কিন্তু সম্পাদক মতিউর রহমান তাদের বক্তব্য ছাড়া রিপোর্টটি প্রকাশ করবেন না। আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল সেদিন। এ রকম স্পর্শকাতর বিষয়ে কেউ তো কথা বলতে রাজি হবেন না! শেষে ফোন করলাম খোকা ভাইকে। বিষয়টা শুনে তিনি হাসলেন এবং সন্ধ্যায় তার বাসায় যেতে বললেন। আরেক বিপত্তিতে পড়লাম। খোকা ভাই রাজনৈতিক খবরাখবরের নির্ভরযোগ্য সোর্স ছিলেন আমার। শেষে না এই রিপোর্টের কারণে সম্পর্কটাই চুকে যায়! সেদিন সন্ধ্যায় খোকা ভাইয়ের বাসায় গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলাম। তিনি ড্রয়িংরুমে একটা সোফায় ঘুমিয়ে ছিলেন। ঘুম থেকে উঠে চা আর মুড়ি-চানাচুর মাখা দিতে বলে আমার মুখোমুখি হলেন। আমি প্রশ্নের বাদাম ধীরে ভাঙতেই তিনি হেসে বললেন, লিখে দাও, আমি এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। আমার আর কোনো বক্তব্য নেই। দিলখোলা ব্যক্তিত্ব সাদেক হোসেন খোকার বাসায় সেদিনও দীর্ঘ সময় কেটেছিল নানান কাহিনী শুনে। অবশ্য সবই ছিল অফ দ্য রেকর্ড। সেই প্রতিবেদন প্রথম আলোর প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছিল।
প্রয়াত রাজনীতিবিদ আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার দপ্তর বা বাসায় রিপোর্টারদের জন্য বরাবর বরাদ্দ ছিল লাল চা আর টোস্ট বিস্কুট। আমরা সাংবাদিকরা কখনো মজা করে বলতাম, মান্নান ভাইয়ের কমিউনিস্ট চা। সেই চা-বিস্কুট ধ্বংস করতে করতে আমার বহু সময় কেটেছে। ওই গল্পগুলো ছিল খুবই আকর্ষক। তার রাজনৈতিক জীবন, বিএনপির রাজনীতির অন্দরমহলের খোঁজখবর জানতে পেতাম। অবশ্য সেই খবরগুলো কখনোই সংবাদ আকারে প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি সংগত কারণেই।
আশির দশকে সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত ছিলাম বলে ছাত্র নেতাদের সঙ্গে সখ্য ছিল। তখন নিজেও আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছে স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। তখন মধুর ক্যানটিন, ডাকসু ভবন, হাকিম ভাইয়ের চায়ের দোকান আর টিএসসির মোড়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দেওয়াটা ছিল দায়িত্বের অংশ। সেসব আড্ডার মেন্যু ছিল চা আর বাদাম। রাতের বেলা তাদের সঙ্গে দেখা হলে ডেকে নিয়ে ভাত খাওয়াতেন। কলতাবাজার, নিমতলীর কিছু নির্দিষ্ট ভাতের রেস্তোরাঁ আর মেডিকেল কলেজের ক্যানটিন ছিল তাদের পুলিশের চোখ এড়াতে গেরিলা কায়দায় আচমকা ঢুকে ভাত খাওয়ার জায়গা। সেখানেই খেতে খেতে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় কখনো মিলে যেত রাজনৈতিক কর্মসূচির আগাম খবর।
প্রত্যক্ষ সাংবাদিকতা থেকে সরে এসেছি বহু বছর হয়ে গেল। এখন রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ি অথবা দপ্তরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তবুও কখনো সেই দিনগুলোর স্মৃতি সিনেমার দৃশ্যের মতো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারা, অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া এবং শরীরচর্চার অভাবের বেশির ভাগ মানুষেরই হার্ট খারাপ হচ্ছে। উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে 'খারাপ' কোলেস্টেরল— এ সব মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে রক্তের বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা যদি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যায়, তা হলে ওষুধ তো খেতেই হবে। সঙ্গে পছন্দের প্রায় সব খাবারেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে যাবে। তবে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, রোজকার খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই হার্টের যাবতীয় সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন।
বিরিয়ানি হোক বা পোলাও সঙ্গে মাটনের কোনো পদ ছাড়া জমে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা বলছেন, এ ধরনের 'লাল' মাংস খেলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাই খাসির বদলে মুরগির মাংস খাওয়া তুলনায় স্বাস্থ্যকর।
অনেক চেষ্টা করেও ভাজাভুজি খাবারের লোভ সামলাতে পারছেন না। এই অভ্যাসের ফলেই কিন্তু অজান্তেই বেশির ভাগ মানুষের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ভাজার বদলে যদি বেকড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করা যায়, তবে এই সমস্যা অনেকটাই ঠেকিয়ে রাখা যেতে পারে।
সকালের নাশতায় পাউরুটি খান অনেকেই। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, পাউরুটির ওপর মাখন দেওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হবে। শুধু পাউরুটি খেতে যদি সমস্যা হয়, তবে ডিম ফেটিয়ে তার মধ্যে পাউরুটি ডুবিয়ে, তা বেক করে নিন। স্বাদ এবং স্বাস্থ্য দুই-ই থাকবে।
মন খারাপ হলে মাঝে মধ্যেই আইসক্রিম খেয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ মন ভালো করতে এই টোটকা সত্যিই কার্যকর। কিন্তু সমস্যা হলো আইসক্রিম খাওয়ার অভ্যাসে রক্তে বাড়তে থাকে কোলেস্টেরল। পরবর্তীতে যা হৃদরোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
গরমে তেষ্টা মেটাতে বার বার ঠাণ্ডা পানীয়তে চুমুক দিচ্ছেন। কিন্তু এ পানীয়ে থাকা কৃত্রিম শর্করা যে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করছে, টের পেয়েছেন কী? পুষ্টিবিদেরা বলছেন, এই তেষ্টা মেটাতে এবং স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে নরম পানীয় না খেয়ে ফল থেকে তৈরি রস খেতে পারেন।
পাকিস্তানের প্রস্তাবিত হাইব্রিড মডেলে নয়, এশিয়া কাপ হবে একটি দেশে। আর সেটা শ্রীলংকা। পাকিস্তান তাতে অংশ না নিতে চাইলে তাদেরকে ছাড়াই হবে এশিয়া কাপ।
ভারতের তরফ থেকে পাকিস্তানকে এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে কলকাতাভিত্তিক ইংরেজি দৈনিক দা টেলিগ্রাফ।
বিসিসিআই সেক্রেটারি জয় শাহ যিনি এসিসিরও প্রেসিডেন্ট পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে বলেছেন, শ্রীলংকায় এশিয়া কাপ খেলতে রাজি আছে ভারতসহ চার পূর্ণ সদস্য। বিষয়টি নিয়ে এসিসির নির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে। পাকিস্তান রাজি না হলে ৫ দল নিয়েই হবে এশিয়া কাপ।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের ম্যাচ অন্য কোনো দেশে আয়োজনে পিসিবি চেয়ারম্যান নাজমা শেঠির দাবিও নাকচ করে দিয়েছেন জয় শাহ। টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, পাকিস্তানকে ভারতেই খেলতে হবে, না হলে না খেলবে। এ বার্তা পিসিবি এবং আইসিসির দুই কর্মকর্তা যারা সম্প্রতি পাকিস্তান সফর করেন তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছে বিসিসিআই।
গ্রীষ্মের তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা মানুষের। এমন অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছে না কেউ। তাই বলে গরমের ভয়ে ঘরে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হবে। আর কর্মজীবীদের অফিস ও অন্যান্য কর্মস্থলে। অনেকেরই এই গরমেও কাজের প্রয়োজনে সারাদিন কেটে যায় বাইরে ঘুরে ঘুরেই। গরমকে মোকাবিলা করতে সঙ্গে এই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো রাখলেই গরমের কাছে নিজেকে হার মানতে হবে না।
পানি পান
গরমের সময় শরীর থেকে স্বাভাবিক ভাবে অনেক বেশি ঘাম বের হয়ে থাকে। যার ফলে দেখা দিতে পারে পানি শূন্যতা। শরীরের মধ্যে যদি পানির পরিমাণ কমে যায় তাহলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। পানি শূন্যতা দূর করতে হলে প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে।
বিশুদ্ধ পানি খাওয়ার পাশাপাশি ফলের জুস কিংবা কচি ডাবের পানি খেতে পারেন। দেহের ত্বককে ভালো রাখতে পানি, শরবত বা জুস পানের বিকল্প নেই। গরমে সময় প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ লিটার বিশুদ্ধ পানি খেলে ডিহাইড্রেশন এবং পানি শূণ্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
খাবার স্যালাইন
গরমের সময় ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ বের হতে থাকে যার ফলে শরীর অনেক দুর্বল হয়ে যায়। এ থেকে মুক্তি পেতে খাবার স্যালাইন খেতে পারেন। বিকেল বেলা খাবার স্যালাইন খেলে অতিরিক্ত গরমেও শরীরে সতেজতা ফিরে আসে। আবার অনেকেই স্বাদযুক্ত স্যালাইন খান যেমন, টেস্টি স্যালাইন। ভুল করেও এসব খাবেন না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হলো ওরস্যালাইন । তবে আপনাদের মধ্যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা খাবার স্যালাইন খাওয়ার আগে ভালো কোনো ডাক্তারের মতামত নেওয়া উচিত।
রেড মিট পরিহার করুন
অতিরিক্ত গরমের সময় গরু-ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ গরমের সময় বা অতিরিক্ত গরমের সময় গরুর মাংস খেলে শরীরের তাপমাত্রা অনেকাংশে বেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরু-ছাগলের মাংস ছেড়ে মাছ খেতে পারেন। আর অতিরিক্ত গরমে অবশ্যই অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন।
সবুজ শাক সবজি
গরমের সময় শরীরকে সুস্থ রাখতে বেশি বেশি করে সবুজ শাক সবজি খেতে পারেন। সবুজ শাক সবজিতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন মিনারেল এবং খনিজ উপাদান থাকে। এতে করে অতিরিক্ত গরমেও শরীর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।তাছাড়াও খেতে পারেন তরমুজ যা শরীরে এনার্জি দিতে পারে।
টক জাতীয় ফল
প্রচুর গরমে সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে টক জাতীয় ফল খেতে পারেন। যেমন: কামরাঙ্গা, লেবু, তেতুল, আমরা ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে অতিরিক্ত টক ফল খাওয়া ঠিক নয়। যদি কারো এসিডিটির সমস্যা থেকে থাকে তবে টক জাতীয় ফল খাওয়া হতে বিরত থাকুন। টক জাতীয় ফল খালি পেটে খাওয়া যাবে না। এতে করে আরো বেশী অসুস্থ হয়ে পারতে পাবেন।
টক দই
অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে টক দই খেতে পারেন। যারা করা রোদে কাজ করেন বিশেষ করে তাদের জন্য অনেক উপকারী হলো টক দই। রোদের প্রচুর তাপ থেকে শরীরকে কিছুটা হলেও রক্ষা করবে টক দই। টক দই শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অনেকাংশে সাহায্য করে।
প্রতিদিন গোসল করুন
গরমের সময় প্রতিদিন এক বার করে হলেও গোসল করতে হবে। যদি পারেন তবে দিনে ২ বার গোসল করতে পারেন। গোসল করার ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকতে হবে। বাহির থেকে এসে সাথে সাথে গোসল করতে যাবেন না। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর গোসল করতে যাবেন। কারণ হঠাৎ করে গরম থেকে এসে গোসল করলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে।
ঘরেই অবস্থান করুন
অতিরিক্ত গরমে বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বাহিরে যাবেন না । যদিও বিভিন্ন কারণে বাহিরে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে রোদ থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে ছাতা ব্যবহার করতে পারেন। যতটুকু সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে থাকার চেষ্টা করুন।
শারীরিক পরিশ্রম কম করুন
গরমের সময় অনেকেই আছে অতিরিক্ত ব্যায়াম করে থাকেন এমনটি করা যাবে না কারণ অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি হয়ে থাকে।
পাতলা সুতি কাপড় পরিধান করা
গরমের সময় পাতলা সুতি কাপড় পরা দরকার। কারণ সাদা কাপড় তাপ শোষণ করতে পারে না বরং তাপের প্রতিফলন ঘটায় ও গরম কম লাগে।
পারফিউম ব্যবহারে সতর্ক থাকুন
অতিরিক্ত গরমে ঘামের গন্ধ থেকে বেচে থাকার জন্য অনেকেই সুগন্ধি ব্যবহার করে থাকে। তবে অতিরিক্ত গরমে পারফিউম ব্যবহার না করাটাই উত্তম কাজ। কারণ, পারফিউম গরম লাগা বৃদ্ধি করে দেয়।
যদিও ব্যবহার করতে হয় তাহলে হালকা গন্ধের সুগন্ধি ব্যবহার করতে পাবেন। বাজারে কিছু সুগন্ধি পাওয়া যায় যেগুলো ব্যবহার করলে ঠাণ্ডা লাগে। সেগুলো ব্যবহার করলে আরো ভালো হয়।
ধূমপান পরিত্যাগ করা
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কিনা ধূমপান করে থাকি। ধূমপান করলে শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে বেড়ে যায়। তাই প্রচন্ত গরমে সুস্থ থাকতে হলে ধূমপান পরিত্যাগ করতে হবে। যদিও এই অভ্যাসটি সহজে পরিত্যাগ করা যায় না। তাই যতটুকু পারেন ধূমপান কম করার চেষ্টা করুন।
চা কফি পরিত্যাগ করুন
চা, কফি বা অ্যালকোহল খেলে শরীরের তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। আর যদি অতিরিক্ত গরমে চা, কফি বা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন তাহলে শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পাবে যার ফলে হতে পারে হিটস্ট্রোক। তাই গরমের সময় চা কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া থেকে দূরে থাকতে হবে।
শান্ত থাকুন
মন মেজাজ গরম থাকলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। রাগের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত গরমের ফলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় আর দুই তাপমাত্রা এক সঙ্গে হলে কি অবস্থা হতে পারে একবার হলেও সেটা ভেবে দেখবেন।
বিশেষজ্ঞরা অতিরিক্ত গরমে শান্ত থাকার জন্য মতামত দিয়ে থাকে। বিশেষ করে যাদের হার্টের সমস্যা আছে তাদের জন্য শান্ত থাকাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রিয়াল মাদ্রিদের সংগে ১৪ বছরের সম্পর্ক চুকিয়ে ফেলছেন। ৪০ কোটি ইউরো চুক্তিতে সৌদি প্রো লিগের ক্লাব আলো ইত্তিহাদে যোগ দিচ্ছেন।
ক'দিন ধরে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল করিম বেনজেমাকে নিয়ে। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন -এমন কথাও চাউর হয় স্পেনের সংবাদ মাধ্যমে।
কিন্তু সব কিছুতে জল ঢাললেন ব্যালন ডি অর জয়ী। স্পেনের গণমাধ্যম মার্কার দেয়া মার্কা লিজেন্ড এওয়ার্ড নিতে গিয়ে বললেন, 'আমি যখন রিয়ালেই আছি তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে কেনো বলবো। ইন্টারনেটে যা প্রচার হচ্ছে তা ঠিক না। আমি এখানে ভালো আছি। শনিবার রিয়ালের ম্যাচ আছে, সব ফোকাস আমার সেই ম্যাচকে নিয়ে।'
ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে তাকে রিয়ালে আনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বেনজেমা বলেন, '২১ বছরের আমি এই ক্লাবে যোগ দিয়েছিলাম। এই ক্লাবে খেলার মতো আর কিছু হয় না, সান্তিয়াগো বার্নাবু দারুন এক জায়গা।'
রিয়ালের সংগে চুক্তির মেয়াদ এ মাসেই শেষ হচ্ছে বেনজেমার।
পলিথিন বা একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পলিথিনজাত মিনিপ্যাকের উৎপাদন, ব্যবহার ও এর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সবগুলোই সমস্যা। পলিথিন উৎপাদন ও এর অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের মাধ্যমে বাতাসে যেমন কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যায়, অন্যদিকে এর ব্যবহার প্রাণিকুল ও মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত। প্লাস্টিকের কণা এখন মানুষের রক্তে, মায়ের দুধে, সামুদ্রিক মাছে। শুধু ব্যবহার সম্পর্কিত সমস্যা না, পলিথিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও বেশি সমস্যাসংকুল। কারণ এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে মাটির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, কৃষির উৎপাদনশীলতা কমে যাচ্ছে, শহরের নর্দমা বন্ধ করে দিচ্ছে তা আবার রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে, জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে এবং সবশেষে শহরকে বসবাসের অনুপযোগী করে দিচ্ছে।
এতসব সত্ত্বেও পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ না করা বা বন্ধ করতে না পারার সংকট কোথায় সেটা বুঝতে আমাদের সমস্যা হয়। পলিথিন বন্ধে আইন আছে, নানা ধরনের প্যাকেজিংয়ে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে তাও অনেক দিন হলো। অন্যদিকে বেশ কিছুদিন ধরে পাটের ব্যাগ ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে কিন্তু তা সহসাই হচ্ছে না। ‘সোনালি ব্যাগ’ নিয়ে অনেক ঢাকঢোল পেটানো হয়েছে কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে সেই সোনালি স্বপ্ন কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে আসছে এতদিনে।
পলিথিনের ব্যবহার শহরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি যার অনেকটাই অভ্যাসগত কারণে। শহরের মানুষের পলিথিনের ওপর অভ্যস্ততা যেমন বেশি, তেমনি তারা ভুক্তভোগীও বেশি। রাস্তাঘাট, ড্রেন নোংরা হয়ে তো থাকেই, বাড়তি পাওনা দুর্গন্ধ, তৈরি হয় জলজট ও ডেঙ্গুর মতো রোগবালাই। বাসাবাড়িতে পলিথিনের ব্যবহার তো আছেই, পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, বেকারিজাত পণ্যের পলিথিনের ব্যবহার ও পলিথিনের মোড়ক যত্রতত্র নিক্ষেপই এই অবস্থার জন্য দায়ী। শুধু ঢাকা নয় অন্যান্য ছোট-বড় সব শহরে প্রায় একই অবস্থা। আর এগুলোই হচ্ছে পলিথিন নির্ভর অর্থনীতির অনুষঙ্গ কিন্তু এর অনর্থনীতি হচ্ছে পলিথিনের কারণে পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। সাধারণভাবে পলিথিন ব্যবহারের ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্যমান নির্ধারণ করা হয় না। তবে দূষণের মাত্রা এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে তাতে পলিথিনের অর্থনীতির থেকে এর ক্ষয়ক্ষতির অর্থনীতি যে অনেক বড় তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আসছে ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করা হবে। জলবায়ুর পরিবর্তনের পেছনে অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। অর্থমন্ত্রী তার এবারের বাজেট (২০২৩-২৪) বক্তৃতায় জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করার কথা বলেছেন, পরিবেশ সংরক্ষণে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ২০২৩ এর উল্লেখ করেছেন কিন্তু পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে দৃশ্যমান কোনো রূপকল্প এবারের বাজেটে উল্লেখ করতে সমর্থ হননি। এবারের পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে শামিল হই সকলে’। গত বছরের এই দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘একটাই পৃথিবী’। পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের যত্রতত্র ব্যবহার আমাদের এই একমাত্র পৃথিবীকে দূষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আইন হয়েছে ২০০২-এ এবং আজ ২০২৩ সাল, এই দীর্ঘ ২১ বছরেও এই আইনের বাস্তবায়ন করা যায়নি। যদিও এবারের বাজেট বক্তৃতায় প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার এর মূল্য সংযোজন কর বৃদ্ধি করে ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্ল্যাস্টিক সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। ধরেই নেওয়া যায় শুল্ক বৃদ্ধির এই হার কোনোভাবে পলিথিন নিরুৎসাহিত করার জায়গা থেকে না বরঞ্চ কিছুটা বাড়তি কর আদায়ের চিন্তা থেকে।
পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি সস্তা পলিথিনের ব্যবহার টেকসই ভোগের ধারণার জন্যও কোনোভাবে সহায়ক না। বরঞ্চ এটা এমন এক ধরনের মনস্তত্ত্ব তৈরি করে যা শুধু পরিবেশকেই ধ্বংস করে। যদিও বিশ্বব্যাপী টেকসই ভোগের ধারণার ওপর ভিত্তি করে এখন ‘সার্কুলার অর্থনীতির’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সার্কুলার অর্থনীতি শুধু অপচয় কমায় না, প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা, দূষণরোধ, বর্জ্য থেকে তৈরি পরিবেশদূষণ ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। তাই পরিবেশগত ঝুঁকি, কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে সার্কুলার অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই পৃথিবী গড়ে তোলা এবং এ সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট ২০৩০ সমূহ অর্জনে সার্কুলার অর্থনীতি অন্যতম হাতিয়ার।
সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা শহরে রাস্তায় কোনো পেট বোতল পড়ে থাকতে দেখা যায় না। এর কারণ হচ্ছে এখন পেট বোতলের প্রায় শতভাগ রিসাইকেল করা হয় এবং পেট বোতল সংগ্রহের জন্য অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে হলেও একটি সংগ্রহ-লাইন তৈরি হয়েছে। কিন্তু পলিথিনের ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার সার্কুলার ইকোনমির ধারণার সঙ্গেও একেবারে মানানসই না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রযুক্তিগতভাবে একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন রিসাইকেল করা অসম্ভব না হলেও এটি একটি জটিল এবং অর্থনৈতিকভাবে ব্যয়বহুল যে কারণে পেট বোতলের মতো রাস্তা থেকে পলিথিন সংগ্রহ করতে কাউকে দেখা যায় না উলটো রাস্তাঘাটে এখানে সেখানে পলিথিন পড়ে থাকে।
পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের অনর্থনীতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখন প্রথম দরকার এর ব্যবহার বন্ধ করা, এর ব্যবহারকে অনেক বেশি দামি করে ফেলতে হবে আর এর প্রতিফলন থাকতে হবে বাজেটে। দ্বিতীয়ত, সার্কুলার অর্থনৈতিক চর্চার উৎসাহিত করার জন্য পরিকল্পনা, দক্ষতা বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি, পলিথিনের বিকল্প সোনালি ব্যাগের মতো উদ্যোগগুলোকে সরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ ও বেসরকারি পর্যায় থেকে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ ও প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। সরকার প্রতি বছর বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশ দিবস পালন করে কিন্তু দিবস পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই হবে না এর উদ্যোগ কতটুকু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে তার ওপরও নজর দিতে হবে। তা নাহলে পলিথিনের অর্থনীতির নামে শুধু অনর্থনীতিকে বাড়িয়ে তোলা হবে, আর সেটা হবে টেকসই অর্থনীতি তৈরির সম্ভাবনার অপমৃত্যু।
লেখক : উন্নয়নকর্মী ও কলামিস্ট
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যকার ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ফাইনাল দেখতে কুমিল্লায় উড়ে গেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আজ বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে শুরু হয়েছে ম্যাচটি। সালাউদ্দিন ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা খানেক আগে কুমিল্লায় পৌঁছান।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে কুমিল্লায় পাড়ি দিতে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় লাগে। তবে সালাউদ্দিন দূরত্বটা পাড়ি দিয়েছেন হেলিকপ্টারে করে। যা আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
টাকার অভাবে কদিন আগে নারী ফুটবলারদের অলিম্পিক বাছাইয়ে পাঠায়নি বাফুফে। অথচ ঢাকা থেকে কুমিল্লায় যেতে বাফুফে সভাপতি বেছে নিলেন হেলিকপ্টার।
হেলিকপ্টারে ঢাকা থেকে কুমিল্লার এই যাত্রায় বাফুফে সভাপতির সঙ্গী হয়েছেন সংস্থার নারী উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ।