
প্রায় এক বছর পর পুলিশে সাড়ে ৫ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর এই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারক চক্র। পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। কিছু ক্ষেত্রে নেওয়া হচ্ছে চেক ও খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর।
সম্প্রতি দুটি জেলা থেকে চক্রের ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে খালি স্ট্যাম্প ও স্বাক্ষর করা চেকের কপি। নগদ টাকা উদ্ধারের ঘটনাও রয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতারকরা ১৫-১৬ লাখ টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিচ্ছে চাকরিপ্রার্থীদের। এভাবে চক্রের সদস্যরা ১০-১২ জনের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিচ্ছেন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রার্থী আগাম টাকা দিতে রাজি না হলে তাদের কাছ থেকে স্ট্যাম্প ও চেক নিয়ে রাখছেন।
এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা প্রতারক ঠেকানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। কয়েক দিন আগে এ বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাঠে নামানো হয়েছে আইজিপির বিশেষ মনিটরিং সেলের সদস্যদের। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের কোনো কর্মকর্তা বা সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
জানা গেছে, পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ তদবির-বাণিজ্য ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয় পুলিশ সদর দপ্তর। পুলিশের সব কটি রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও পুলিশ সুপারদের কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন আইজিপি। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে একজন পুলিশ সুপার ও একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে তদারক টিম গঠন করা হয়। নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টিমগুলো দেশের ৬৪ জেলায় সফর করছে। আর্থিক লেনদেনে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার করার নির্দেশনা দিয়ে সরকারি ফি ১০৩ টাকার বেশি কোনো প্রার্থীর কাছ থেকে না নিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে নানা অনিয়ম হয়ে থাকে প্রায়ই। ঘুষ লেনদেনই হয় বেশি। কনস্টেবল নিয়োগের অধিকর্তা হলেন জেলার পুলিশ সুপার। প্রায় প্রতিটি জেলায় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, মন্ত্রী-এমপিসহ আমলাদেরও তদবির থাকে। তা ছাড়া এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্যও নিয়োগে তদবির করেন। এই সবকিছুর নেপথ্যেই থাকে আর্থিক লেনদেন। অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করতেই পুলিশ সদর দপ্তর কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমেও দেওয়া হয় বেশ কিছু নির্দেশনা। দালাল ও অসাধু চক্রের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার না হতে চাকরিপ্রত্যাশীদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে সচেতনতামূলক সংবাদ। কনস্টেবল নিয়োগ কার্যক্রম শুরুর আগেই আইজিপি সব রেঞ্জের ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের পুলিশ সদর দপ্তরে ডেকে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নিয়োগ-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কঠোর নির্দেশনা দেন।
নজরদারিতে দায়িত্ব পালন করে পুলিশ ইন্টারনাল ওভারসাইট, রেঞ্জ ডিআইজির নজরদারি কমিটি, পুলিশ সদর দপ্তরের একজন পুলিশ সুপার (এসপি) ও একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সমন্বয়ে গঠিত ৬৪টি বিশেষ টিম।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. মনজুর রহমান বলেন, ‘সারা দেশের ৬৪ জেলায় প্রথম ধাপে সাড়ে ৫ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিছু জেলায় আবেদন জমা পড়ছে। আর এই সুযোগে সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রতারক চক্র। তাদের বিষয়ে কাজ করছে গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যে দুটি জেলায় কয়েকজন প্রতারক ধরা পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে পুলিশে চাকরি হয় না। যোগ্যতার নিরিখেই যোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পাবেন। এ বিষয়ে আইজিপি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০১৮ সালে ১০ হাজার পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে নিয়োগে রাজনীতিবিদরা কোটার জন্য পুলিশ সুপারদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। বিষয়টি গোপন প্রতিবেদনের মাধ্যমে সরকারের উচ্চপর্যায়ে পৌঁছালে সেই নিয়োগ-প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়। চলতি বছরের শুরুতে সারা দেশে সাড়ে ৫ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে কোন জেলায় কতজন নিয়োগ পাবেন এবং আবেদেন প্রক্রিয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রকাশ করা হয়। কোনো কোনো জেলায় প্রার্থীর সংখ্যা ১০ হাজারও ছাড়িয়েছে। ধাপে ধাপে সব জেলায় নিয়োগ শেষ করা হবে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, প্রতারক চক্রের সদস্যরা খুব চতুর। তারা ১০-১২ জনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রাখে। এর মধ্যে যদি কেউ যোগ্যতার ভিত্তিতে টিকে যান তাহলে তাকে বলা হয়, ‘অমুক স্যারের মাধ্যমে তোমার চাকরিটা হয়েছে। এখন বাকি টাকা পরিশোধ করো, না হলে বাদ পড়ে যাবা।’ তখন না বুঝেই অনেকে টাকা দিয়ে দেন। বিষয়টা অনেকটা ঝড়ে বক পড়ার মতো অবস্থা। তিনি বলেন, এ ধরনের একাধিক চক্র বিভিন্ন সময় সক্রিয় থাকে। তাদের তালিকাও রয়েছে। তাদের ওপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। তালিকায় রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও পুলিশের আত্মীয় পরিচয়দানকারী লোকজনও রয়েছেন।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ বলেন, প্রতারণার জন্য ইতিমধ্যে চাঁদপুর জেলায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লিখিত পরীক্ষার সময় একজনকে ধরা হয়েছে। সে মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের কথা আমাদের কাছে স্বীকার করেছে।
মাদারীপুর পুলিশ সুপার মাসুদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ১১ ফেব্রুয়ারি মাদারীপুর পুলিশ লাইনস মাঠে রিক্রুট কনস্টেবল নিয়োগের মাঠপর্যায়ে শারীরিক মাপ ও কাগজপত্র বাছাই পরীক্ষা হয়। এ সময় তারা জানতে পারেন প্রতারক চক্রের সদস্যরা মাদারীপুর পোস্ট অফিসের সামনে টাকা লেনদেন করছে। চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে সাকিব আকন নামে এক চাকরিপ্রত্যাশীর পরিবারের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নিচ্ছে তারা। বিষয়টি জানান পর তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে সদর উপজেলার ব্রাহ্মন্দী গ্রামের ইউনুস আলী বেপারি ও হোগলপাতিয়া গ্রামের রিপন হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। প্রাথমিকভাবে তারা অবৈধ টাকার বিনিময়ে চাকরির প্রলোভন দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। এর আগেও তারা বিভিন্ন জায়গায় চাকরি দেওয়ার কথা বলে অবৈধ লেনদেন করেছে বলেও জানা গেছে। তাদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এবার মাদারীপুর জেলায় ৪৫ জন কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হবে। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছিল। তারই ফলে প্রতারকদের আটক করতে সক্ষম হয়েছেন।
জানা গেছে, মাদারীপুরের ঘটনার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে প্রতারণার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তারা হলেন রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানার দাশপুকুর মহল্লার মারুফ শাহরিয়ার, বরিশাল সদরের মঙ্গলহাটা এলাকার শাহাদত হোসেন ও গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চাতৈনভিটি গ্রামের আব্দুল আজিজ। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে নেওয়া ৩২টি স্বাক্ষর করা ফাঁকা চেকবই, প্রায় ৫৬ লাখ টাকার অঙ্ক বসানো স্বাক্ষর করা ১০টি চেক, ৫০টি স্বাক্ষর করা ফাঁকা নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, তিনটি স্মার্ট মোবাইল ফোন এবং একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে রাজশাহীর পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, সারা দেশে এখন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রতারক চক্রটি প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিল। বিষয়টি জানতে পেরে এদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরা এখনো চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়নি। কিন্তু ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্প নিয়েছে স্বাক্ষর করিয়ে। এই ফাঁকা চেক ও স্ট্যাম্প দিয়ে জিম্মি করে পরে টাকা আদায় ছিল তাদের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, রাজশাহীতে কনস্টেবল পদে আবেদন পড়েছিল ১৮ হাজার। এর মধ্যে শারীরিক পরীক্ষার জন্য ডাক পড়েছিল সাড়ে ৩ হাজার জনের। সাতটি পর্বে শারীরিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে তাদের। এতে উত্তীর্ণরা ১৫ ফেব্রুয়ারি লিখিত পরীক্ষা দিয়েছে। এরপর মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। এত সব পরীক্ষার পর যোগ্য প্রার্থীদেরই চাকরি দেওয়া হবে। কোনো তদবির কাজে আসবে না।
তিনি বলেন, ডিবি পুলিশ প্রথমে মারুফ শাহরিয়ারকে আটক করে। তার মেস থেকে দুটি চেক, ৫৩টি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ও একটি স্মার্টফোন জব্দ করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের আরেক সদস্য শাহাদত হোসেনকে আটক করা হয়। তার ভাড়া বাসা থেকে ২০টি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ২০টি চেক ও একটি স্মার্টফোন জব্দ করা হয়। পরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বাড়ি থেকে চক্রের আরেক সদস্য আজিজকে আটক করা হয়। তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ২৭টি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, ২০টি চেক, একটি মোবাইল ফোন।
র্যাংগস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আবদুর রউফ চৌধুরী (৮৬) গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গুলশানের নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি ১ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে গেছেন। গতকাল শনিবার বাদ আসর গুলশানের আজাদ মসজিদে তার জানাজা হয়। সেখানে রাজনীতিবিদ, শিল্পপতিসহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা অংশ নেন। জানাজা শেষে তার মরদেহ নেওয়া হয় বিক্রমপুরের পৈতৃক বাড়িতে। সেখানে বাদ এশা পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। তারা ছেলে রোমো রউফ চৌধুরী বর্তমানে ব্যাংক এশিয়ার চেয়ারম্যান। এ ছাড়া দুই মেয়ে হলেন রোমানা রউফ চৌধুরী ও সোহানা রউফ চৌধুরী।
এদিকে রউফ চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী খাঁন মুকুলসহ বিভিন্ন শিল্প গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা। এ ছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমে শোকবাণী পাঠিয়েছেন।
রউফ চৌধুরী ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের মূল কোম্পানি মিডিয়া ওয়ার্ল্ড লিমিটেডেরও একজন পরিচালক ছিলেন। ‘সকালের খবর’ নামে একটি বাংলা দৈনিক বের করেছিলেন। তিনি ব্যাংক এশিয়ার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান। তার হাত ধরে দেশে গড়ে উঠেছে ৫০টির মতো প্রতিষ্ঠান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে স্নাতক করেছেন। অটোমোবাইল, টেলিকম, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং পেট্রোলিয়ামসহ বিভিন্ন শিল্পে বিস্তৃত অভিজ্ঞতা ছিল তার। বাংলাদেশে তিনি দুটি আমেরিকান ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির রেসিডেন্ট ম্যানেজার ছিলেন। যমুনা অয়েল কোম্পানির সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন রউফ চৌধুরী। এর মাধ্যমে দেশে পেট্রোলিয়াম পণ্যের বাজার উন্নয়নে দীর্ঘ ১৫ বছর অবদান রাখার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
এ ছাড়া, ৩৫ কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত র্যাংগস এবং সি রিসোর্সেস গ্রুপ- কোম্পানি দুটি তার গতিশীল নেতৃত্বেই গড়ে উঠেছে। তার নেতৃত্বে অল্প সময়ের মধ্যেই কোম্পানি দুটি বিরাট সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়।
রউফ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেছেন, ‘তার জীবন, আদর্শ এবং কর্ম আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। আমি রউফ চৌধুরীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। আল্লাহপাক তাকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি মরহুমের পরিবার যেন এই অপূরণীয় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে।’
গণতন্ত্র নিয়ে তামাশা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কখনো বরদাস্ত করবে না। আগামী নির্বাচনে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও বাংলার মানুষের ভাগ্য বদলের প্রতীক ও উন্নয়নের প্রতীক নৌকা মার্কার বিজয় যেন আমরা নিশ্চিত করতে পারি সেই লক্ষ্যে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। অতীতের ন্যায় ২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তি তৈরি করতে চাই।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ঘোষিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের ‘বিশেষ কর্মী সভা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেলে নগরীর খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের কর্মী সভায় এ সব কথা বলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান উপস্থিত হলেও তিনি ছিলেন দর্শক সারিতে। মঞ্চে অতিথির আসনে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও নারায়ণগঞ্জ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা। কর্মী সভায় শুধু বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ওয়ালি আসিফ ইনান।
সভার আগে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে এক প্রতিক্রিয়ায় দেশ রূপান্তরকে এমপি শামীম ওসমান বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে আমরা মঞ্চে নয়, দর্শক সারিতে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেছি। আর দর্শক সারিতে থেকে দেখতে চাই, বর্তমান প্রজন্ম ছাত্রলীগ ও তরুণরা কীভাবে আগামীতে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এগিয়ে যাবে। আমরা মূলত আজকে দর্শক।
কর্মী সভায় সাদ্দাম হোসেন বলেন, সংবাদ উপস্থাপন করা গণমাধ্যমে দায়িত্ব। এখন সম্পাদকীয় নীতিমালা রয়েছে। যদি তাদের নীতিমালা হয় চরিত্র নিয়ে লেখা, ছাত্রলীগের নেতিবাচক নিউজ উপস্থাপন করে মার্কেট ভ্যালু বাড়ানো। কিংবা রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি করা। কিংবা অন্য কারও প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়ন করা। এটি কোন ভাবেই বাংলাদেশ ছাত্র সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ আমরা দেখি ছাত্রলীগ যদি ১০০টি ভালো কাজ করে একটি নিউজ হয় না, আর ছাত্রলীগ যদি একটি খারাপ কাজ করে তাহলে ১০০টি নিউজ হয়। এ ব্যাপারে আমরা গণমাধ্যমের সঠিক দায়িত্বশীল ভূমিকা দেখতে চাই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের লড়াই এখনো শেষ হয়নি। আমাদের অনেক লড়াই এখনো বাকি রয়েছে। এই লড়াইয়ের শেষ আমাদের দেখতে হবে। আমরা টানা তিনবার ক্ষমতায় আছি। এটি নিয়ে আত্মতৃপ্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা জাতির পিতার হত্যাকারী, যারা আমাদের নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করেছে তারা এখনো রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় রয়েছে। অনেকেই গণতন্ত্রের বেশ ধরে রাজনীতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছে। এখন আমরা দেখতে পারছি, দুর্নীতিবাজদের পুনর্বাসন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। খুনি, কিলার ও দ-প্রাপ্ত আসামিদের রাজনীতির কথা বলে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আজকে আমরা ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে বলতে চাই, গণতন্ত্রের বেশ ধরে দুর্নীতিবাজদের পুনর্বাসনের রাজনীতিকে ছাত্রসমাজ কখনোই গ্রহণ করবে না কখনোই আপস করবে না। যাদের কাছে বাংলার মানুষের ভোটাধিকারের চেয়ে বাংলার মানুষের লাশ গুরুত্বপূর্ণ তাদের সঙ্গে ছাত্রসমাজ আপসে কখনোই করবে না।
সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের নেতৃত্বে আগামীতে বাংলাদেশকে পথ দেখাবে। এই নারায়ণগঞ্জ শেখ হাসিনার গণজোয়ারের রাজধানী থাকবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান বলেন, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের জন্মস্থান। এ নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে জেলার ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা কাজ শুরু করবে। এই নারায়ণগঞ্জ থেকেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে বাজারে মাইকিং করে দোকানে ঢুকে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস সরকারকে (৫৩) গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় দেশীগ্রাম ইউনিয়নের ভোগলমান চারমাথা বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আবদুল কুদ্দুস দেশীগ্রাম ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান। এ ছাড়া তিনি দেশীগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি। সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন।
হামলাকারীরা পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টির সদস্য ছিল বলে জানিয়েছেন নিহতের ছেলে মো. রুহুল আমীন বলেন।
একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, সন্ধ্যা ৭টার দিকে দিকে ২০-২৫ জন নিজেদের পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির সদস্য দাবি করে ভোগলমান চারমাথা বাজারে ঢোকে। তারা হ্যান্ডমাইক দিয়ে বাজারের সব লোকজনকে বাজার ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে পুরো এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এরপর ছেলের কীটনাশকের দোকানে বসে থাকা আব্দুল কুদ্দুস সরকারকে কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েক রাউন্ড গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা এলাকা ত্যাগ করে। খবর পেয়ে তাড়াশ থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। এ ঘটনার পর পুরো এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে দেশীগ্রাম ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান জ্ঞানেন্দ্রনাথ বসাক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আব্দুল কুদ্দুস বাজারে ছেলের কীটনাশকের দোকানে বসে ছিলেন। এ সময় দুর্বৃত্তরা হঠাৎ হামলা চালিয়ে তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।’
তাড়াশ থানার ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, আব্দুল কুদ্দুসের বুকে গুলি করা হয়।
উল্লাপাড়া-তাড়াশ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অমৃত সূত্রধর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খবর পেয়ে তাড়াশ থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তবে হামলাকারীরা সর্বহারা পার্টির সদস্য ছিল কিনা সে বিষয়ে পুলিশ কিছুই বলেনি।
জামালপুর সদর উপজেলার বটতলা উচ্চবিদ্যালয় ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শহীদ মিনারের বেদিতে মঞ্চ বানিয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান করেছে বিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। গতকাল শনিবার জামালপুর-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মো. মোজাফফর হোসেনসহ অতিথিদের সবাই জুতা পায়ে ওই মঞ্চে ওঠেন। ভাষার মাসে এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন অনেকেই।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিদ্যালয়ের মাঠে শহীদ মিনারের বেদিতে মঞ্চ বানানো হয়। আর মূল শহীদ মিনার কাপড় দিয়ে পেছনে ঢেকে রাখা হয়। অতিথিদের সামনে দেওয়া হয় বিশাল টেবিল এবং বসার জন্য চেয়ার। পাশেই বক্তব্য দেওয়ার জন্য ছিল মাইকের স্ট্যান্ড। বেলা ১টার দিকে প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য মোজাফফর হোসেনসহ সব অতিথি একে একে জুতা পায়ে মঞ্চে উঠে চেয়ারে বসেন। বেদিতে দাঁড়িয়ে থাকা অন্যান্য লোকজনকেও জুতা পায়ে দেখা যায়। অনুষ্ঠানটি সাড়ে ৩টার দিকে শেষ হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক ও বটতলা উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. শফিকুল আলম।
অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামালপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. আব্দুল জলিল, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক এ কে আজাদ বাদল ও সদস্য মো. আবুল খায়ের খোকা মাস্টার, বাঁশচড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল আলীম, সহসভাপতি মো. মাহামুদুল হাসান বাচ্চু, মো. শাহজাহান আলী, মো. সরোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মো.আব্দুল লতিফ প্রমুখ।
শহীদ মিনারে এভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় ক্ষুব্ধ অনেকেই। এ প্রসঙ্গে জামালপুরের ভাষা ও মুক্তিসংগ্রাম গবেষণা কেন্দ্রের সদস্য জাহাঙ্গীর সেলিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ছাড়া অন্য কোনো অনুষ্ঠান করা যাবে না। জুতা নিয়ে শহীদ মিনারে পদচারণ করা ভাষাশহীদদের প্রতি অবমাননা এবং আইন অমান্য করা। যারা এ ধরনের আচরণ করবে, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া উচিত।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের সহকারী পরিদর্শক ও বটতলা উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. শফিকুল আলম বলেন, ‘অনুষ্ঠানে আমি ছিলাম। স্কুল কর্র্তৃপক্ষ সেখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আর সবাই তো সেখানে জুতা পায়ে দিয়ে উঠেছে, তাই আমিও উঠেছি।’
বটতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হুদা বলেন, ‘প্রতি বছরই সেখানে অনুষ্ঠান করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় সেখানে করা হয়েছে। প্রধান অতিথিরাই যদি ওঠে, তাহলে আর কী।’
এদিকে সংসদ সদস্য মো. মোজাফফর হোসেনের দাবি, অনুষ্ঠানের মঞ্চ যে শহীদ মিনার, সেটা বুঝতে পারেননি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সেটা যে শহীদ মিনার, আমি বুঝতেই পারিনি। আমি ভেবেছি সেটা একটি ভাঙা মঞ্চ। কেউ যদি আমাকে বলত, সেটা শহীদ মিনার, তাহলে আমি জুতা নিয়ে উঠতাম না। প্রয়োজনে আমি সেখান থেকে নেমে যেতাম।’
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা ক্ষমতায় আছি। ক্ষমতাসীন দল হিসেবে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আমাদের এখানে একটি দল আছে যারা আন্দোলনের কথা বলে আতঙ্ক ছড়ায়। তারা আন্দোলনের নামে আগুনসন্ত্রাস করে, ভাঙচুর চালায়। মানুষকে পুড়িয়ে মারে, পেট্রল বোমা দিয়ে মেরে ফেলতে চায়। এ কারণে আমরা জনগণের পাহারাদার।
গতকাল শনিবার দুপুরে গাজীপুরের কালীগঞ্জে স্থানীয় উলুখোলা এলাকার একটি রিসোর্টে অভিনয়শিল্পী সংঘের সাধারণ সভায় যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সেখানে অভিনয়শিল্পী সংঘের অভিনেতাদের ইক্যুইটি দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশগ্রহণ করেছেন নাটক ও চলচ্চিত্রের পাঁচ শতাধিক অভিনয়শিল্পী।
গতকাল দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এসময় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে সম্মাননা স্মারক ও ক্রেস্ট তুলে দেন অভিনেত্রী জয়া আহসান। পরে কনভেনশন হলে প্রয়াত শিল্পীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোমবাতি প্রজ্বালন করা হয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সংস্কৃতি কোনো নিয়ন্ত্রণের বিষয় নয়। সেই সংস্কৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার এই আইনটি বাতিল করেছে।
বাংলাদেশের নাটকের প্রশংসা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, পশ্চিমবঙ্গের নাটক থেকে গুণে মানে সংলাপে অভিনয়ে আমাদের নাটক অনেক সমৃদ্ধ। আমাদের শিল্পীরা অনেক বেশি ভালো অভিনয় করেন।
এসময় অভিনয়শিল্পী সংঘের সভাপতি আহসান হাবিব নাসিমের সভাপতিত্বে ও অভিনয়শিল্পী রওনক হাসানের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন অভিনেতা আমিরুল হক চৌধুরী, সহিদুল ইসলাম সাচ্চু, ডলি জহুর, দিলারা জাহান, মামুনুর রশীদ, তারিক রহমান খান প্রমুখ।
শিল্পীরা তাদের বক্তব্য বলেন, আমাদের দেশে শিল্পীদের জন্য অ্যাক্টরস স্কুল নেই, এটি খুবই প্রয়োজন। আজকাল অপসংস্কৃতি ইউটিউবে অবাধে চলছে। এই অপসংস্কৃতি দূর করতে হবে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ না করলে আমাদের রুচির দুর্ভিক্ষ ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকবে।
দিনব্যাপী ওই অনুষ্ঠান অভিনয়শিল্পীদের উপস্থিতিতে মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। ছোটপর্দার প্রায় সব অভিনেতা উপস্থিত হয়েছেন। কেউ ছবি তুলেছেন, স্মৃতিচারণ করেছেন। পরিবারের ছোট সদস্যদের নিয়ে আয়োজন করেছেন চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
আগের ইনিংসের মতোই ব্যর্থ উসমান খাজা। পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। প্রথম ইনিংসের দুই সেঞ্চুরিয়ানও ফিরে গেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে তাই খুব একটা সুবিধাজনক অবস্থায় নেই অস্ট্রেলিয়া। তবুও তৃতীয় দিন শেষে এগিয়ে আছে তারা।
ওভালে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে ২৯৬ রানে আটকে দেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ১২৩ রান করে অসিরা। এগিয়ে আছে ২৯৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ের শুরুটা ভালো করেছে ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছে তারা।
দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও উসমান খাজা ফেরেন ২৪ রানের মধ্যেই। মারনাস লাবুশান ও স্টিভেন স্মিথের ৬২ রানের জুটি ভাঙেন রবীন্দ্র জাদেজা, পরে ট্রাভিস হেডকেও ফেরান এই স্পিনার। টেস্ট ক্যারিয়ারে অষ্টমবারের মতো স্মিথকে আউট করেছেন জাদেজা।
তৃতীয় দিন শেষে মারনাস লাবুশানের সঙ্গে অপরাজিত আছেন ক্যামেরুন গ্রিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া: ৪৬৯ ও ৪৪ ওভারে ১২৩/৪ (লাবুশেন ৪১*, স্মিথ ৩৪; জাদেজা ২/২৫, উমেশ ১/২১)ভারত ১ম ইনিংস: ৬৯.৪ ওভারে ২৯৬ (রাহানে ৮৯, শার্দূল ৫১, জাদেজা ৪৮; কামিন্স ৩/৮৩, গ্রিন ২/৪৪, বোল্যান্ড ২/৫৯)।
আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিজের পালন করা সাড়ে ২১ মণ ওজনের গরু উপহার দিতে চেয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার চরকাউনা গ্রামের সাধারণ কৃষক বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রী ইসরাত জাহান। তাদের এই ভালোবাসার প্রতি সম্মান জানিয়ে উপহারের এই গরু গ্রহণে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
শুক্রবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী উপহারের গরু গ্রহণে সম্মতি দেন।
প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী খুশি হয়েছেন এবং এই বিরল ভালোবাসার জন্য বুলবুল আহমেদ ও তার স্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন।
হাসান জাহিদ তুষার জানান, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা এই গরু বুলবুল আহমেদের নিজ বাড়িতেই থাকবে এবং সেখানেই কোরবানি হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোরবানির গরুর মাংস স্থানীয় দরিদ্র-অসহায় জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
গরুটি ক্রস ব্রাহমা প্রজাতির। এতে আনুমানিক ৮০০ কেজি মাংস হতে পারে বলে জানিয়েছেন বুলবুল আহমেদ। বুলবুল জানান, ২০২০ সালে নেত্রকোনা জেলা থেকে আড়াই লাখ টাকায় প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য তিনি এই গরু কেনেন। গরু কেনার পর কিশোরগঞ্জের বিখ্যাত পাগলা মসজিদে পাঁচ হাজার টাকা মানতও করছিলেন তিনি যেন তার গরুটি সুস্থ থাকে।
তিনি আরও জানান, তিনি ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে মাঠকর্মী হিসেবে কর্মরত তার স্ত্রী ইসরাত জাহান আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার প্রকল্প থেকে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য এই গরু কেনেন। তারা গত তিন বছর গরুটির নিবিড় পরিচর্যা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আবেগ ও ভালবাসা থেকে তারা এই গরু ক্রয় ও লালন পালন করেছেন বলে জানান।
উপহার হিসেবে তার গরুটি গ্রহণ করার সম্মতি দেওয়ায় বুলবুল আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। বুলবুল আহমেদ কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের আগুন তরুণদের বুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্র তৈরি করতে গড়ে তুলেছিলেন ‘নিউক্লিয়াস’। স্বাধীনতার পর তিনি সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের বাঁধভাঙা ঢেউ তুলেছিলেন। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে সবকিছু থেকে দূরে আড়ালে চলে যান। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছিল রহস্য। সেই রহস্য নায়ক সিরাজুল আলম খান চলে গেলেন চিররহস্যের দেশে।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম এ সংগঠক গতকাল শুক্রবার দুপুর আড়াইটার কিছু পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক।
সিরাজুল আলম খানের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল দেশ রূপান্তরকে বলেন, অসুস্থ অবস্থায় তাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে গত ১ জুন নেওয়া হয় আইসিইউতে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন সিরাজুল আলম খানের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলীপুর গ্রামে, ১৯৪১ সালের ৬ জানুয়ারি। তার বাবা খোরশেদ আলম খান ছিলেন স্কুল পরিদর্শক। মা সৈয়দা জাকিয়া খাতুন গৃহিণী ছিলেন। ছয় ভাই ও তিন বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সিরাজুল আলম খান।
১৯৬১ সালে ছাত্রলীগের সহসাধারণ সম্পাদক হন সিরাজুল আলম খান। ১৯৬৩ সালে তিনি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠন করেন।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না), জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক (নুর)।
সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। তার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি। শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন সংগঠন।
প্রয়াত সিরাজুল আলম খানের ঘনিষ্ঠ ও নাট্য পরিচালক সাকিল সৈকত দেশ রূপান্তরকে বলেন, সিরাজুল আলম খানের মরদেহ বিকেলে হাসপাতাল থেকে মোহাম্মদপুরের আল-মারকাজুলে নেওয়া হয়েছে। সেখানে গোসল শেষে রাতে শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। আজ শনিবার সকাল ১০টায় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে জানাজা শেষে নোয়াখালীতে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পুনরায় জানাজা শেষে বেগমগঞ্জের আলীপুরে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে রাজনীতির এ নায়ককে।
১৯৪১ সালে জন্ম নেওয়া এ কিংবদন্তি রাজনীতিককে বিগত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত হাসপাতালে যেতে হয়েছে। দেশে এবং বিদেশে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।
জন্মের কয়েক বছর পর পিতার চাকরির সুবাদে সিরাজুল আলম খুলনায় চলে যান। ১৯৫৬ সালে খুলনা জিলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ১৯৫৮ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অনার্স ডিগ্রি অর্জনের পর কনভোকেশন মুভমেন্টে অংশ নেওয়ার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালনায় ১৯৬২ ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বা স্বাধীনতার ‘নিউক্লিয়াস’ গঠিত হয়। পরে ছাত্র-তরুণদের আন্দোলন সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তারা। বঙ্গবন্ধুরও ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে ছিলেন এ ছাত্রনেতারা। ছয় দফার সমর্থনে জনমত গঠনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল আলম খান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা বাতিল ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে প্রধান ভূমিকা পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিরোধের জের ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভেঙে দুই ভাগ হয়। এরপর ১৯৭২ সালে সিরাজুল আলম খানের উদ্যোগে রাজনৈতিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ প্রতিষ্ঠা হয়। তিনি কখনো নেতৃত্বে না এলেও জাসদ নেতাদের পরামর্শ দিয়ে তাদের ‘তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে খ্যাতি পান। অনুসারী সবাই তাকে ‘দাদা ভাই’ নামেই ডাকতেন।
মূলত নব্বইয়ের দশকে সিরাজুল আলম খান কখনো জনসমক্ষে আসতেন না এবং বক্তৃতা-বিবৃতি দিতেন না; আড়ালে থেকে তৎপরতা চালাতেন বলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘রহস্য পুরুষ’ হিসেবে পরিচিতি পান। নব্বই পর্যন্ত একাধিকবার জেল-জুলুম খেটেছেন তিনি।
দাদা ভাইয়ের মৃত্যুত গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের চেয়ারপারসন অধ্যাপক আলতাফুন্নেসা, গণফোরাম একাংশে সভাপতি মোস্তফা মোহসিন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
বেশ ক'দিন তীব্র তাপদাহের পর গতকাল রাজধানী ঢাকাজুড়ে হয়েছে স্বস্তির বৃষ্টি। এতে তাপমাত্রা এসেছে কমে, পরিচ্ছন্ন হয়েছে পরিবেশ। তবুও আজ সকালে বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষ পাঁচে আছে ঢাকা। বৃষ্টিধোয়া রাজধানী ঢাকা আজ সকাল সাড়ে ৮টায় ১৫৫ স্কোর নিয়ে দূষণের তালিকায় চতুর্থ।
আজ শনিবার (১০ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় বায়ুমানের সূচক (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকায় বাতাসের স্কোর ছিল ১৫৫। বায়ুর মান বিচারে এ মাত্রাকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলা হয়। একই সময়ে একিউআই স্কোর ১৬৮ নিয়ে প্রথম অবস্থানে আছে পাকিস্তানের লাহোর। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভিয়েতনামের হ্যানয়, স্কোর ১৫৬। তৃতীয় স্থানে রয়েছে ইসরায়েলের তেলআবিব। আর পঞ্চম স্থানে আছে চীনের শেংডু, স্কোর ১৪৯।
একইসময়ে ১৩৮ স্কোর নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহেনেসবার্গ। ১৩২ স্কোর নিয়ে সপ্তম স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই। অষ্টম নেপালের কাঠমান্ডু, স্কোর ১২৭। ১১৮ স্কোর নিয়ে নবম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েট আর ১১৭ স্কোর নিয়ে দশম সৌদি আরবের রিয়াদ।
সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার দূষিত বাতাসের শহরের এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই স্কোর একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের কোনো ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে কি না, তা জানায়।
তথ্যমতে, একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত 'অস্বাস্থ্যকর' হিসেবে বিবেচিত হয়। একইভাবে একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ এর মধ্যে থাকলে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' এবং স্কোর ৩০১ থেকে ৪০০ এর মধ্যে থাকলে 'ঝুঁকিপূর্ণ' বলে বিবেচিত হয়।
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলায় ১২ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে মো. রহুল আমিন (৫৬) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৯ জুন) শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় মামলা করলে তাকে আটক করা হয়।
আটক মো. রহুল আমিন উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামের মৃত আব্দুল হকের ছেলে।
ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বরুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, ধর্ষণের শিকার শিশুটির বাবা বাদী হয়ে বরুড়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ধর্ষককে আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মার্চ ভোর আনুমানিক ৬টায় দিকে উপজেলার ঝলম ইউনিয়নের বেওলাইন গ্রামে ১২ বছরের শিশুকে গোয়ালঘরের পেছনে ধর্ষণ করেন মো. রহুল আমিন। এবিষয়ে এতোদিন জানাজানি না হলেও ৪ জুন (রোববার) হঠাৎ শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে পরিবারের লোকজন স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে পল্লী চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পর পরীক্ষা করে কর্তবরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসা জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হন। তারপর ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে বিষয়টি জানান। ভুক্তভোগী শিশুটি এখন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’