
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনার এক সপ্তাহ পার হয়েছে। কিন্তু এখনো ওই ঘটনাসংশ্লিষ্ট সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করতে পারেনি হল
কর্র্তৃপক্ষ। মনিটর সচল থাকলেও বায়োসের ব্যাটারি নষ্ট বলে জানা গেছে। এতে ফুটেজ সংগ্রহ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব টেকনিশিয়ান দিয়ে এ ফুটেজ উদ্ধার সম্ভব নয় বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহসানুল আম্বিয়া।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পরে হল কর্র্তৃপক্ষ সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধারের জন্য আমাদের শরণাপন্ন হয়। তাৎক্ষণিক আমরা দুজন টেকনিশিয়ান পাঠাই। কিন্তু তারা ফুটেজ উদ্ধারে ব্যর্থ হয়। মূলত বায়োসের ব্যাটারি নষ্ট হওয়ার কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। বাইরে থেকে টেকনিশিয়ার আনলে হয়তো এটি সম্ভব হবে। তবে হল কর্র্তৃপক্ষ আমাকে এখনো বাইরে থেকে টেকনিশিয়ান আনার বিষয়ে কিছু জানায়নি।’
এ বিষয়ে হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হলের প্রধান ফটক, অফিস ও করিডরসহ ১২টি জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে আমরা এখনো ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারাও উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা বাইরে থেকে টেকনিশিয়ান আনার ব্যবস্থা করছি।’ কতদিনের মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার সম্ভব হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুতই আমরা এ কাজটি করব।’
হলে ৭ ঘণ্টা ধরে অবস্থান তদন্ত কমিটির : ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ৭ ঘণ্টা অবস্থান করেছে তদন্ত কমিটি। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি এবং হল কর্র্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল সকাল ১০টার দিকে হলে ঢোকে। পরে বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি ও হলের তদন্ত কমিটি বের হয়। হলের সংশ্লিষ্ট ছাত্রীদের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন সহকারী প্রক্টরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
হলটির শাখা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা সকাল ১০টার পর হলে প্রবেশ করেন। তারা হল প্রভোস্টের কক্ষে বসে কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন। বেলা ১১টার দিকে দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে প্রবেশ করেন হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তারাও প্রভোস্টের কার্যালয়ে অবস্থান করে। হলের ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে কতজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে এটা আমি জানি না।’
এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি আমার কাছে জানতে চায়। আমি যা জানি তা তাদের কাছে বলেছি।’
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা ম-ল বলেন, ‘আমি তদন্তের স্বার্থে আজও দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি আমরা গভীরভাবে পর্যালোচনা ও ক্রস চেকিং করছি। তদন্তের স্বার্থে আর কিছু বলতে চাই না।’
এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে তাকে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তার অনুসারীরা নির্যাতন চালিয়েছেন। নির্যাতনের সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
বৈশ্বিক মন্দা ও ডলার সংকটের কারণে বিদেশি ফলের দাম যতটা বাড়ার কথা বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে। মৌসুমি আমদানিকারক, মধ্যস্বত্বভোগী এবং আড়তদার দাম বৃদ্ধির এ কারসাজিতে জড়িত। এতে পকেট ভারী হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের আর ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
আমদানি হওয়া তাজা ফলের বড় অংশই হচ্ছে আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙুর ও নাশপাতি। বিদেশি ফলের সিংহভাগ আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই। ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ টন তাজা ফল আমদানি হয়। তার আগের অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৫ লাখ ৮৪ হাজার টন ফল। ডলার সংকট ও বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে বিদায়ী অর্থবছরের শেষ হিসেবে বিদেশি ফল আমদানি প্রায় ১৪ শতাংশ কমেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ফলের বাজার বাদামতলী। ১৯ কেজির এক কার্টন আমদানি করা ফুজি চায়না আপেল এ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা দরে। এ আপেল পাইকাররা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার ১০০ টাকায়। আর ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে তার চেয়েও বেশি দামে। বাজারে এক কেজি আপেল এখন বিভিন্ন মানভেদে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সুপারশপ বা বিশেষায়িত দোকানগুলোতে দাম আরও বেশি। গ্রিন আপেল কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। যা তেলের দাম বাড়ার আগে ছিল ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা। ফুজি আপেল কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, যা আগে ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। মাল্টার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২১০ টাকা, যা আগে ছিল ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং বিদেশি ফল আমদানিকারক দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান সাথী ফ্রুটস লিমিটেডের মালিক সিরাজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে গত প্রায় ছয় মাস ধরে নিয়মিত ফল আমদানিকারকদের বেশিরভাগ এলসি খোলার সুযোগ পায়নি। অথচ এতদিন যাদের ফল আমদানিতে দেখিনি এমন মুষ্টিমেয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে বিদেশি ফল ঠিকই আমদানি করেছে। আমদানি করা এসব ফল মজুদ রেখে চাহিদার তুলনায় কম পরিমাণে সরবরাহ করছে। কোনো বিদেশি ফলের দাম দুই-তিনগুণ বা তার বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। বিদেশি ফলের দাম বেশি হওয়ার কারণে দেশি ফলের দামও অনেকে বাড়িয়ে বিক্রি করছে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৈশ্বিক মন্দা এবং ডলার সংকট চলছে। এসবের কারণে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে পণ্য সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ন্যূনতম লাভে পণ্য বিক্রি করলেও দাম আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে। তবে কিছু ব্যবসায়ী এ অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে অনেক পণ্যের দাম যতটা বাড়ার কথা তার চেয়ে বেশি বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। এফবিসিসিআই এ অন্যায়কে সমর্থন করে না।’
ডলার সংকটের কারণে বিভিন্ন ব্যাংকের পক্ষে ঢালাওভাবে এলসি খোলার অনুমতি দেওয়া সম্ভব হয় না। সরকার বিলাসজাত খাদ্য হিসেবে বিদেশি ফল আমদানিতে এলসি খোলায় কড়াকড়ি করতে নির্দেশ দেয়। সম্প্রতি সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘এখন ডলার সেভ করা দরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে যেটা অপরিহার্য, সেটাতেই আমরা বেশি জোর দিচ্ছি। বিদেশি মুদ্রায় অতিরিক্ত চাপ না পড়ে এ জন্য বিদেশি ফল আমদানিতে এলসি একটু সীমিত করা হয়েছে। সময় ভালো হলেই আবার খুলে দেওয়া হবে।’
তবে সরকারের এ কড়াকড়ির মধ্যে ফল আমদানি কমলেও থেমে থাকেনি। মুষ্টিমেয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি কিছু ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশি ফল আমদানি করেছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, মৌসুমি আমদানিকাররা আমদানি করা ফলের সবটা বাজারে ছাড়েননি। মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে এবং আড়তদারের কাছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করেছেন। অনেকে আবার সরাসরি পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছেন। অনেকে নিজস্ব এজেন্টের মাধ্যমে খুচরা পর্যায়েও সরবরাহ করছেন। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত ক্রেতার কাছে বিদেশি ফল স্বাভাবিক দামের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে ফলপট্টিতে অসুস্থ মায়ের জন্য ফল কিনতে আসা মজিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার অসুস্থ মাকে ডাক্তার ডালিম, আপেল, মাল্টা খেতে বলেছেন। কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু আমার ৪০ বছরের জীবনে বিদেশি ফলের এত বেশি দাম দেখিনি। এক ধরনের ফলও কিনতে পারিনি। দেশি ফলের এখন সিজন নয়। যা বিক্রি হচ্ছে তার দামও বেশি। পরিবারের অন্যরা না খেলেও চলে, অসুস্থ মায়ের জন্যও ফল কেনা সম্ভব হলো না।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অতীতেও দেখা গেছে ব্যাংক তার পুরনো বড় গ্রাহকদের কিছু সুবিধা দিয়ে ধরে রাখে। কিন্তু আমাদের আপত্তি হলো সুবিধা নিয়ে কে বা কারা সাধারণ ক্রেতাকে জিম্মি করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে কষ্টে ফেলছে। এসব তদন্ত করে দেখা উচিত। তবে নিয়মিত ব্যবসায়ীদের অনেকে জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বৃদ্ধির বেশি দিতে হচ্ছে বলেও বিদেশি ফলের দাম কিছুটা বেশি রাখতে বাধ্য হচ্ছে। তবে তার সংখ্যা অল্প।’
সাথী ফ্রুটস লিমিটেডের মালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বহু বছর থেকে বিদেশি ফল আমদানি করছি। বিদেশি ফল বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজারের একটি বাদামতলীতে বিদেশি ফল আমদানিতে এবারে অনেক নতুন মুখ দেখছি যাদের এতদিন দেখিনি। আমি ভোক্তা অধিকারসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে বিষয়গুলো বলেছি।’
বাংলাদেশে অন্যতম ফল রপ্তানিকারক দেশ চীন। দেশটির ব্যবসায়ীরা ইংরেজি বছরের প্রথম ১৫ দিন ছুটি কাটান। এ সময় ফল রপ্তানি বন্ধ থাকে। প্রতি বছরের মতো এবারও রপ্তানি প্রায় বন্ধ রেখেছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে আপেলের চাহিদা বেশি থাকলেও অন্যতম আপেল আমদানিকারক দেশ ভারতে এখন এটির পিক সিজন না। এসব কারণেও বাংলাদেশের নিয়মিত বিদেশে ফল আমদানিকারকরা ১৫ দিন আগে এলসি খুলতে পারলেও চাহিদামতো বিদেশি ফল সংগ্রহে সমস্যায় পড়েছেন। বাংলাদেশের বিদেশি ফল আমদানিকারকরা নিউজল্যান্ড, চীন, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিদেশি ফল আমদানির বিষয় চূড়ান্ত করেছেন। এসব দেশ থেকে বাংলাদেশে আনার জন্য গত শুক্রবার জাহাজে বিদেশি ফল তোলা শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট খাতের নিয়মিত আমদানিকারকরা জানান, রমজানের আগে বা প্রথম ভাগে এসব বিদেশি ফলভর্তি জাহাজ দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তারা আশা করেছেন এসব বিদেশি ফল দেশের বাজারে ছাড়া হলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, দাম কমবে।
২০২১ সালে আমদানির হিসাব অনুযায়ী, দেশের মানুষ প্রতিদিন গড়ে ১৬ লাখ ৮৮ হাজার কেজি বিদেশি ফল খায়। আর খুচরা মূল্যে প্রতিদিন ফল বেচাকেনা হচ্ছে কমবেশি ২৭ কোটি টাকার। ধারণা করা হয়, দেশে খুচরা পর্যায়ে বছরে ফলের বাজারের আকার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
অমর একুশে বইমেলার ২১তম দিন ছিল গতকাল মঙ্গলবার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে গতকাল মেলা শুরু হয় সকাল ৮টায়। ফলে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে সকাল থেকেই মেলায় আসতে শুরু করেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। সন্ধ্যা নাগাদ মেলা হয়ে ওঠে মানুষের অরণ্য। দিনভর সাদা-কালো পোশাকের নারী-শিশু, তরুণ-তরুণীর উচ্ছ্বাস আর উল্লাসে মেতেছিল মেলা প্রাঙ্গণ। তবে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে বই কেনার চেয়ে সেলফি তোলায় আগ্রহ ছিল বেশি। বিক্রেতারা হতাশা প্রকাশ করলেও এমন দিনে মেলায় আসাকে স্মরণীয় রাখতে উচ্ছ্বসিত ছিলেন দর্শনার্থীরা।
গতকাল সন্ধ্যায় অমর একুশে বইমেলায় গিয়ে দেখা যায়, গতকাল বইমেলা প্রাঙ্গণ ছিল লোকে-লোকারণ্য। মেলায় আসা অধিকাংশ দর্শক নিজেদের সেলফিবন্দি করতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। দলবদ্ধ হয়ে ফুড কর্নারে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন।
রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে আসা সজল বলেন, ‘বইমেলা আমাদের কাছে এক আবেগের নাম। বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় এসে আনন্দ ভাগাভাগি করা যায়। কর্মজীবনে প্রবেশ করলে এ সময় পাব না। যতটা সম্ভব সময়গুলোকে ফ্রেমে আটকে রাখছি।’
মিরপুর থেকে আসা প্রীতুল নামে একজন বলেন, ‘বান্ধবীরা মিলে কালো শাড়ি পরে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। এরপর বইমেলায় এসেছি, যদিও এখানে আসার কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। তবে এসে খুব ভালো লাগছে এবং ভাবছি কয়েকটা বই কিনেই যাব।’
এদিকে প্রকাশকরা বলছেন, মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মেলায় যে পরিমাণ লোকের সমাগম হয়েছে সেই পরিমাণ বই বিক্রি হচ্ছে না। যে পরিমাণে বই বিক্রি হচ্ছে তা স্বাভাবিক দিনের মতোই। শোভা প্রকাশের প্রকাশক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বইমেলায় আমার অভিজ্ঞতার ২৪ বছরে দেখে আসছি মাতৃভাষা দিবসের ছুটিতে তেমন বই বিক্রি হয় না। যে কয়টি বই বিক্রি হয় তা সপ্তাহের অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মতোই।
পাঠকের মধ্যে বুঝে বই কেনার সংস্কৃতি এখনো গড়ে ওঠেনি দাবি করে তিনি বলেন, ‘এবারের মেলায় সিরিয়াস পাঠক খুবই কম এসেছেন। যারা বই কিনছেন তাদের মধ্যে বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকছে না।’
অন্বেষা প্রকাশের বিক্রয়কর্মী মামুন বলেন, ‘বইমেলা এখন মানুষের জন্য বিনোদনের স্থান হয়ে উঠেছে। বই কেনার থেকে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরতে আসছেন অধিকাংশ দর্শক। খুব কম পাঠক আসছেন। গত একুশ দিনে দেখেছি, মানুষ মেলায় আসছেন, ঘুরছেন, ছবি তুলছেন। কিন্তু বই কিনছেন খুব কম।’
মেলায় লোকে-লোকারণ্য দেখে লেখক সৈয়দ আহসান কবীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রাণের বইমেলায় মানুষের সমাগম ইতিবাচক। তবে যে পরিমাণে পাঠক আসছেন সে পরিমাণে বই বিক্রি হলে অন্তত শব্দযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য সার্থক হতো।’
নতুন বই : গতকাল অমর একুশে বইমেলার ২১তম দিনে নতুন বই এসেছে ৩০৩টি।
শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল ৮টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। স্বরচিত কবিতা পাঠে প্রায় ১৫০ জন কবি কবিতা আবৃত্তি করেন। সভাপতিত্ব করেন কবি জাহিদুল হক।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হয় অমর একুশে বক্তৃতা। স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির সচিব এএইচএম লোকমান। অমর একুশে বক্তৃতার বক্তা ছিলেন প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। বিদেশ সফরজনিত অনুপস্থিতিতে তার লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেন তার মেয়ে ত্রপা মজুমদার। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মাসউদ আহমাদ, তানভীর সালেহীন ইমন, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও শামীম আজাদ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন সুজন বড়ুয়া, নভেরা হোসেন, রিমঝিম আহমেদ, মতিন রায়হান, নাজমুল হেলাল, সালমা বেগ, ইমরুল ইউসুফ, ইসমত শিল্পী, মায়াবী কাজল, গিয়াসউদ্দিন চাষা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, রূপা চক্রবর্তী, আহ্কামউল্লাহ। ছিল ফকির সিরাজের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, শিবু রায়, কল্যাণী ঘোষ, মহাদেব ঘোষ, আবদুল হালিম খান, স্বর্ণময়ী মণ্ডল এবং সোমা দাস। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন গৌতম মজুমদার (তবলা), মো. মোস্তাফিজুর রহমান ডাবলু (কি-বোর্ড), আনসার আলী (বাঁশি) এবং মো. ফারুক (অক্টোপ্যাড)।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি : আজ বুধবার অমর একুশে বইমেলার ২২তম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা ও ছড়া এবং জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত লোকায়ত সাহিত্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মতিন রায়হান ও সুমন কুমার দাশ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন তারিক সুজাত, তপন বাগচী, মোস্তাক আহমাদ দীন এবং অনুপম হীরা মণ্ডল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কামাল চৌধুরী।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিতু সাহা। পড়ছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। বইমেলায় এসেছেন তার প্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সংগ্রহ করতে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর বইমেলার জন্য অপেক্ষা করি। এবার মেলায় প্রিয় লেখকের বইসহ অন্য লেখকদের বই কিনছি। মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসধর্মী বই পড়তে পছন্দ করি।’
এবারের বইমেলা কেমন লাগছে জানতে চাইলে রিতু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতি বছর মেলায় একটা ভিন্নরকম আমেজ থাকে। এবারও আছে। অন্যবারের চেয়ে মেলা এবার আলাদা। স্টল বিন্যাসটা খুবই চমৎকার।’
পাঠক হিসেবে কোন লেখকের বই পছন্দ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার প্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তার বই আমার বেশি পছন্দ। এ ছাড়াও অন্যান্য লেখকের বই পড়ি। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের ও ইতিহাসধর্মী বই পড়তে বেশি ভালোবাসি।’
এ পাঠক আরও বলেন, ‘বইমেলায় ভালো বইয়ের পাশাপাশি অনেক মানহীন বইও ছাপা হয়। নিম্নমানের লেখায় সমৃদ্ধ অগণিত অসম্পাদিত বই আমাদের কষ্ট দেয়। এ বিষয়ে প্রকাশকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’
কথাসাহিত্যিক পাপড়ি রহমানের একটি বই এসেছে এবারের বইমেলায়। বইয়ের নাম ‘আমার একলা পথের সাথি’। প্রকাশক বেঙ্গল পাবলিকেশনস।
লেখক জানান, এটি তার আত্মজীবনীমূলক জার্নাল। ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝে একজন লেখকের জার্নি। সবকিছু পাশ কাটিয়ে একজন লেখক কীভাবে লেখক হয়ে উঠে সেসব নিয়ে বইটি।
আপনার পাঠক কারা জানতে চাইলে পাপড়ি রহমান বলেন, ‘আমার পাঠক সবাই নন। যারা আমার বই পড়েন তারা ভালো সাহিত্যের খোঁজখবর রাখা পাঠক। অর্থাৎ সাহিত্যের সমঝদার যাকে বলে। দেখে-শুনে-বুঝে বইপাঠ করে এরাই আমার পাঠক।’
চলতি বইমেলায় পাঠক উপস্থিতি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বইমেলায় পাঠক কম, দর্শক বেশি। খাওয়াদাওয়া, আড্ডাবাজি ও ঘোরাঘুরি বেশি। এখানে সিরিয়াস সাহিত্যের পাঠক কম। হালকা বা চটুল বইয়ের পাঠক বেশি। সিরিয়াস বই কিছু লেখক কেনে ও পড়ে। সিরিয়াস লেখা লেখেও কমসংখ্যক লেখক। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। সত্যিকার ভালো বইয়ের খবর বেশিরভাগ পাঠক পান না। কিন্তু থাকা দরকার ছিল।’
আপনার লেখালেখির প্রভাব পাঠকদের ওপর দেখতে পান কি না জানতে চাইলে পাপড়ি বলেন, ‘আমার বেশিরভাগ লেখা প্রান্তিক জনজীবন নিয়ে, এ ক্ষেত্রে ওই মানুষদের মতো কেউ হতে চাইবে কেন? তবে আমার লেখার প্রভাব আমি অনেক নতুন লেখককের মাঝেই দেখি। আমার নিজস্ব পারিবারিক কিছু শব্দ বহুজনের লেখায় আমি দেখেছি। এটাকে আমি ভালোভাবে নিই। আরেকটা বিষয়, যারা আমার লেখা পছন্দ করেন, তারা সাগ্রহে আমার বই সংগ্রহে রাখেন। তারা আমাকে পড়বেনই, সেটা যেভাবেই হোক না কেন।’
পাঠকের সঙ্গে লেখক হিসেবে বলার মতো স্মৃতি বা ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বইমেলা ২০২৩-এর দিন কয়েক আগের ঘটনা, এক মেয়ে প্রায় দৌড়ে এসে বলল, “আপনি পাপড়ি রহমান না?” আমি কিছুটা অবাক হয়ে হ্যাঁ বললাম। তার উজ্জ্বল আঁখি দুটি আরও উজ্জ্বল হলো। বলল, “আপনার লেখা আমার খুব ভালো লাগে। আপনাকে আমি একটু ছুঁয়ে দেখতে চাই”। আমি বললাম, অবশ্যই। সে আমায় জড়িয়ে ধরল। নাম বলল বিপাশা। বলল, “আমি আপনার ফেইসবুকে অ্যাড আছি”। নতুন বইয়ের স্টল নাম্বার শুনেই ফের সে দৌড় দিল।’
এ লেখক আরও বলেন, ‘নেত্রকোনায় খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কার আনতে গিয়ে এক পাঠকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। যিনি আমার “হাওয়াকলের গাড়ি” গল্পটির কথা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না! বারবার বলছিলেন। এরকম বহু ঘটনা রয়েছে।’
পাপড়ি রহমানের জন্ম টাঙ্গাইলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে করেছেন স্নাতকোত্তর। তার গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘অষ্টরম্ভা’, ‘ধূলিচিত্রিত দৃশ্যাবলি’, ‘মৃদুমানুষের মোশন-পিকচার’ প্রভৃতি। উপন্যাস যথাক্রমে ‘পোড়া নদীর স্বপ্নপূরণ’, ‘বয়ন’ ও ‘পালাটিয়া’ সাড়া জাগিয়েছে পাঠকমহলে। চলতি বছর খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার পান এ কথাসাহিত্যিক।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে চরম বিশৃঙ্খলা, সমন্বয়হীনতা এবং বিভিন্ন সংগঠনের পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ কর্মসূচিতে অসৌজন্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষের বরাবরে বারবার বিষয়টি জানানো হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। মহান ভাষা দিবসেও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মতো পবিত্র স্থানকেও দলবাজির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেেেছ।’ গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রতি বছর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচিতে সমন্বয় ও শৃঙ্খলা বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু এ বছর উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপি’র শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচির সময়সূচি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে অনুরোধ করিয়ে পেছানো হয়। আওয়ামী লীগ রহস্যজনক কারণে তাদের প্রভাতফেরির সময় ও রুট পরিবর্তন করে বিএনপি’র পূর্বঘোষিত প্রভাতফেরিকে প্রলম্বিত করে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ঢাবি কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততার কারণে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সংগঠনকে প্রভাতফেরির লাইনে না দাঁড়ালেও তাদের বিএনপির আগে যেতে দেওয়া হয়। এর ফলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনে বিএনপিসহ অন্যান্য সংগঠনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয়। শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে ৫/৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।’
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনকালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। পুষ্পার্ঘ্য নিবেদনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে ঢাবি প্রক্টোরিয়াল টিম কর্তৃক ন্যক্কারজনক হামলার শিকার হতে হয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনসহ অন্য নেতাদের।’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের মতোই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চলে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। আর এ কারণেই শিক্ষার্থীসহ জনগণের সেবা ও নিরাপত্তা দেওয়াই এইসব প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। কিন্তু রাষ্ট্র যেমন অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত ঠিক তেমনি ঢাবিও তাদের লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে। আর তাই তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন দূরের কথা, তাদের দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে গেলে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী ও জনগণের ওপর তারা পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের মতো বর্বরোচিত কায়দায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।’
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
মার্চে ঘরের মাঠে দুটি প্রীতি ম্যাচের পর আন্তর্জাতিক ফুটবলে দেখা যায়নি আর্জেন্টিনাকে। তিন মাস পর আগামী মাসে তারা খেলবে আরও দুটি প্রীতি ম্যাচ। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের জন্য ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করেছেন লিওনেল স্কালোনি। তবে ঘোষিত সেই দলে নেই লাউতারো মার্তিনেজ।
আর্জেন্টিনার ক্রীড়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম টিওয়াইসি স্পোর্টস ও ওলে তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গোড়ালির চোটের কারণে মার্তিনেজ চিকিৎসাধীন আছেন। তাই তাকে জাতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হয়নি।
চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে ইন্টার মিলানের হয়ে গোল করেছিলেন। ফাইনালেও তাকে ইতালিয়ান ক্লাবটির হয়ে খেলতে দেখা যেতে পারে। তারপরই তিনি মাঠের বাইরে চলে যাবেন। ঐ সময়ে তিনি বিশ্রামে থাকবেন। আর তাই কোচ স্কালোনি তাকে দলে রাখবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার শিরোপা জয়ের অন্যতম সদস্য মার্তিনেজ। তবে পুরো টুর্নামেন্টে তিনি ব্যাথানাশক ঔষধ খেয়ে খেলছিলেন।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ও ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা।
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের মদনপুর গ্রামে স্ত্রীকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে পলাশ হোসেন (২৮) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন।
শনিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পলাশ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে।
স্থানীয়রা জানায়, নিহত পলাশ হোসেনের চাচাতো ভাই সুমন প্রায়ই পলাশের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করত। শনিবার সন্ধ্যায় আবারো উত্ত্যক্ত করে। পলাশ বাড়িতে এলে বিষয়টি তাকে জানায় তার স্ত্রী। এ ঘটনায় পলাশ তার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বিষয়টির প্রতিবাদ করতে গেলে উভয়ের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সুমন ছুরি দিয়ে পলাশকে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ মারা যায়।
মহেশপুর থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। নিহত পলাশ পেশায় ভ্যানচালক ছিলেন, সঙ্গে কৃষিকাজও করত।
রেফারির বাঁশি বাজার তিন মিনিটের মধ্যেই রিয়াল মাদ্রিদের জালে জড়ায় বল। রাফা মিরের দুর্দান্ত এক গোলে লিড পায় সেভিয়া। তবে শেষ অবধি তারা ধরে রাখতে পারেনি সে হাসি। রদ্রিগোর জোড়া গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে রিয়াল।
রাতে লা-লিগার ম্যাচে সেভিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। খেলার তৃতীয় মিনিটেই লিড পেয়েছিল সেভিয়া। তবে ২৯ মিনিটে রদ্রিগো সমতায় ফেরান রিয়ালকে। সমতা নিয়ে বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর ফের বাড়ে আক্রমণের ধার। যার ফলে ৬৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের দেখা পায় রিয়াল। এবারও নায়ক রদ্রিগোই। এবারেরটি অবশ্য টনি ক্রুসের সহায়তায়। পরে আর কোনো গোল না হওয়ায় ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মাদ্রিদের ক্লাবটি।
তবে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে লাল কার্ড দেখে আকুনা। হারের আগে সেভিয়ার আর্জেন্টাইন এই ডিফেন্ডারের ভুলে ১০ জনের দল নিয়ে খেলতে হয় রিয়ালকে।
শুরুতে গোল হজম করলেও ৬৭ শতাংশ সময় নিজেদের দখলে বল রেখেছিল রিয়াল। ছয়বার আক্রমণে গিয়েছিল তারা, যার মধ্যে তিনটি শট ছিল গোলবার লক্ষ্য করে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
সংলাপে রাজনৈতিক সংকট দূর হওয়ার নজির তৈরি হয়নি এখনো। তবুও নানা সময়ে সংকট নিরসনে রাজনীতিতে সংলাপ করা নিয়ে আলোচনা হয়। সংলাপের আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে দেশের বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভিন্ন মেরুতে অবস্থান থাকায় আবারও রাজনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় আলোচনায় এসেছে ‘সংলাপ’। যদিও প্রধান দুই দলের নেতারা সংলাপে অনীহা প্রকাশ করে আসছেন। আবার আড়ালে আলাপে দুই দলের আগ্রহও দেখা গেছে।
অন্তরালের সংলাপ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার আড়ালে আলাপের মূল কারণ হলো বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বড় একটি অংশ বয়স্ক হয়ে গেছেন। তাদের অনেকের এবারের পরে নির্বাচন করার সক্ষমতা আর থাকবে না। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকতে গিয়ে সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়েছে। এ সময় সংসদ সদস্য হয়ে মর্যাদা নিয়ে চলতে চান তারা। বিএনপির ওই অংশের সঙ্গে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাও রয়েছেন যারা নির্বাচনে যেতে চান। ফলে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী বিএনপির সেই সব নেতা আড়ালে আলাপে থাকতে রাজি আছেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক দেখতে চাওয়া বিদেশি শক্তিগুলোর সরকারের ওপর চাপ থাকায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে চায় আওয়ামী লীগ। ফলে প্রকাশ্যে সংলাপের আগ্রহ না দেখিয়ে আড়ালের আলাপে আগ্রহী দলটির নেতারা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বে না। অন্যদিকে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে কোনোভাবেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যাবে না। দুই দলই নিজেদের এমন অনড় অবস্থান দেখাচ্ছে। দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থানে সৃষ্ট সংকট সমাধানে বিদেশি তৎপরতা বেশ আগে থেকেই শুরু হয়েছে। নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে শুরু করেছে বিদেশি সেই তৎপরতায়ও গতি এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিএনপি কাউকেই কাছাকাছি অবস্থানে, অর্থাৎ এক মেরুতে আনতে পারেনি এখনো। তবে বিদেশি প্রভাবশালী দেশগুলোর প্রতিনিধিরা সংকট নিরসনে দুই দলকেই সংলাপে বসার জন্য বলছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা সংলাপের মধ্য দিয়ে সমস্যা সমাধানের রাস্তা ঠিক করতে দুই দলকেই তাগিদ দিয়েছেন। বিদেশিদের অবস্থান হলো আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক দেখতে চান তারা। সে জন্য রাস্তা তৈরি করতে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলই সংলাপে অনীহা দেখিয়ে আসছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশ্যে অনীহার কথা জানিয়েছেন। বিএনপিও প্রায় প্রতিদিনই অনীহা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখছে।
তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও সংলাপে সমাধান আসেনি। এবারও সংলাপে সমাধান আসার সম্ভাবনা কম। যদি সংলাপের আগেই এজেন্ডা নির্ধারণ করে সংলাপে বসে, সেই সংলাপ সফল হওয়ার পথ থাকে না।
দুই দলের একাধিক সূত্র দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, প্রকাশ্যে সংলাপ না করে এবার আড়ালে সংলাপ হতে পারে। অনেকটা হঠাৎ করেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে যেতে পারে-বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়ে বসতে পারেন।’ তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকেরা সংকট নিরসনে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন। ওই সব বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলেরই অবস্থান জানতে চেয়েছেন তারা। একই সঙ্গে দুই দলকে তারা এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে ভিন্নমত থাকলেও স্থিতিশীলতা ও সুশাসনের স্বার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়া জরুরি। এ কারণে নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার আবশ্যকতা রয়েছে। এই সমঝোতার জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ, কিংবা উভয় পন্থায় দুই দলের মধ্যে ‘আলাপ’ হওয়া দরকার, তা সেটা সংলাপ বা আলোচনা যে নামেই করা হোক না কেন। এদিকে কূটনীতিকদের কাছে আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, বিএনপি কোনো ধরনের সংলাপে আগ্রহী নয়। ২০১৪ সালের নির্বাচন কেন্দ্র করে বিএনপির আচরণ বিদেশিদের কাছে তুলে ধরে সংলাপে বিএনপির অনীহার কথা জানান।
ক্ষমতাসীন দলের নেতারা দাবি করছেন, রাজনীতিতে কোনো কিছু আদায় করতে হলে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতাসীনদের বাধ্য করতে হয়। কিন্তু সেটা বিএনপি পারছে না। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। সেখানে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিএনপিকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিএনপি এখন সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারবে বলে মনে করছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মাঠে আওয়ামী লীগের অবস্থান আছে। জনগণ সরকারের সঙ্গে আছে। আর তাদের সঙ্গে জনগণই নেই। তাই তো খালেদা জিয়াকে এখনো মুক্ত করতে পারেনি।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘যেকোনো সমস্যার সমাধান সংলাপের মাধ্যমেই পাওয়া সম্ভব। সংলাপে বসলে হয়তো শতভাগ পাব না। তবে গিভ অ্যান্ড টেক তো কিছু হবেই। গণতন্ত্রে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই।’
তবে দলটির সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য বলেন, ‘সংলাপ চলছে। মিডিয়ায়, টক শোতে, মাঠে মঞ্চে। এক দল আরেক দলকে উদ্দেশ্য করে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তাও এক ধরনের সংলাপ। এসব অনেকেই সংলাপ বলে টের না পেলেও মূলত এটাও সংলাপ।’
আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সংলাপের ব্যাপারে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের তেমন কোনো পরামর্শ দেননি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা তাদের (কূটনীতিক) বলেছি সংলাপের উদ্যোগ আমরা নিয়ে কী করব? তাদের (বিএনপি) যদি কোনো দাবি থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলতে পারে। নির্বাচন কমিশন যদি সুপারিশ করে, সেটা অবশ্যই সরকারের কাছে আসবে। সরকার দেখবে তখন।’
সংলাপ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এ ধরনের কোনো ভাবনা আমাদের নাই।’
সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি। আর আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনকালীন এই সরকারই থাকবে এবং তাদের অধীনে নির্বাচনে হবে। নিরপেক্ষ বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ অবস্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সংকট সমাধানে কূটনীতিকদের দূতিয়ালি চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক বিএনপি। সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাতিসংঘসহ বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থার দূতসহ বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। ওই বৈঠকগুলোতে কেন এই সরকারের অধীনে, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যেতে চায় না তা ব্যাখ্যা করেছে দলটি। বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে যাবে না, সেটিও স্পষ্ট করেছে। একই সঙ্গে কূটনীতিকদের বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের আহ্বান আসলে তাতে সাড়া দেবে বিএনপি। আর এই সংকট মোকাবিলায় কূটনীতিকদের ‘রোল প্লে’ (ভূমিকা রাখা) করার সুযোগ আছে বলে মনে করেন দলটির নেতারা। তাদের মতে, প্রকাশ্যে না হলেও পর্র্দার অন্তরালে সংলাপ হতে পারে। কূটনীতিকদের দৌড়ঝাঁপের কারণে রাজনৈতিক অঙ্গনেও গুঞ্জন রয়েছে ভেতর-ভেতর সংলাপ হচ্ছে।
সর্বশেষ ১৮ মে গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে মার্কিন দূতাবাসের পলিটিক্যাল চিফ ব্রান্ডন স্ক্যাট, পলিটিক্যাল অফিসার ম্যাথিউ বে, পলিটিক্যাল কনস্যুলার ডেনিয়েল শেরির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ।
জানতে চাইলে শামা ওবায়েদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকগুলোতে তারা আমাদের অবস্থান জানতে চান। আমরাও আমাদের অবস্থান তুলে ধরি। সর্বশেষ তারা জানতে চেয়েছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে আপনাদের অবস্থান কী। আমরা বলেছি, আন্দোলন চলছে, সেটা আমরা কন্টিনিউ (চালিয়ে যাব) করব। তারা অন্য পক্ষের (ক্ষমতাসীনদের) কথাও শুনছেন। এ অবস্থায় তারা কী করছে (দূতিয়ালি), নাকি অন্য কিছু হচ্ছে সেটা তাদের বিষয়। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আরেকটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক, মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত হোক, সে ব্যাপারে তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকুক।’
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক সংলাপের ব্যাপারে কূটনীতিকেরা কোনো বৈঠকেই আমাদের কিছু বলেনি।’
তবে বৈঠকগুলোতে থাকা দলের আরেক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা একাধিকবার সরকারের সঙ্গে সংলাপ করেছি। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনের সংলাপে পর চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের তিন মাস পর নতুন নির্বাচন দেওয়ার কথা বলে তারা প্রতারণা করেছে। তাই এজেন্ডা ছাড়া কোনো সংলাপে আমরা যাচ্ছি না। কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে আমরা বলেছি, আনুষ্ঠানিক সংলাপের বিষয়ে আমরা ইতিবাচক। কিন্তু সেটি হতে হবে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা কী হবে তা নিয়ে।’
ওই নেতার আরও বলেন, ‘সরকার এখন বিভিন্ন চাপে আছে। আন্তর্জাতিক চাপ তো আগে থেকেই আছে। এখন নতুন করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বেড়েছে। এসব চাপ সামাল দিতে তারা সংলাপের নামে নানা কথা বলবে। কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনায় সরকারের মনোভাবে কিছু হলেও আঁচ করা যায়। হয়তো কয়েক দিন পর সরকার আনুষ্ঠানিক সংলাপের জন্য আমন্ত্রণও জানাতে পারে।’
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে বর্তমানে তার মাসিক বেতন প্রায় ৩৪ হাজার। বাবার আর্থিক অবস্থাও অসচ্চল। কিন্তু তার আছে বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, দামি জমিসহ অন্যান্য সম্পত্তি। সবমিলে তিনি অন্তত ১০ কোটি টাকার মালিক। দেশের ভেতরে যাতায়াত করেন বিমানে। ইচ্ছে হলে বিদেশেও যান। মাত্র ২৬ বছরে এত স্বল্প বেতনে চাকরি করেও সম্পদের বিশাল পাহাড় গড়ে সবাইকে তাজ্জব লাগিয়ে দিয়েছেন রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী মুহাম্মদ এয়াকুব। একই সঙ্গে তিনি সিবিএর সাধারণ সম্পাদক এবং গ্যাস অ্যান্ড অয়েলস ফেডারেশনের মহাসচিব। তার বিরুদ্ধে রয়েছে নিয়োগ-পদোন্নতি নিয়ে বাণিজ্য, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে বিভিন্ন সময়ে ভুয়া অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু তা প্রমাণ হয়নি। আমি নিয়মিত আয়কর দাখিল করি। কোথাও অসামঞ্জস্য থাকলে সেটা আরও আগে ধরা পড়ত। আমি দুর্নীতিবাজ না। তবে আবার সুফিও না। সিবিএর নেতা হয়ে মসজিদের ইমাম সাহেবও হওয়া যাবে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচবার প্রত্যক্ষ ভোটে এবং তিনবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত। আমি খুব গরিব ঘরের সন্তান। কিন্তু বেতন-ভাতা ভালো। এর বাইরে প্রতি বছর ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা কোম্পানির লভ্যাংশ পাই। মাছ চাষের জন্য তিনটি পুকুর আছে। গরু পালন করি। দুই ভাই বিদেশে থাকে। এসব টাকা দিয়েই বাড়ি কিনেছি। যমুনা অয়েলের একজন ক্লিনারেরও তো বাড়ি আছে। আমি সিবিএর নেতা। আমার একটা বাড়ি থাকা কি অন্যায়?’
এয়াকুব বলেন, ‘আমি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নেই। মানুষ আজ পড়লে কাল ভুলে যাবে। হয়তো কিছু সম্মানহানি হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেও দেশ ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে আজ আমি কেরানি। কমার্স কলেজ থেকে মাস্টার্স পাস করেছি। চাইলে আজ থেকে ১০ বছর আগেই কর্মকর্তা হতে পারতাম। কিন্তু সিবিএর নেতা হওয়া একটা নেশা।’
চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার বেঙ্গুরা গ্রামের এয়াকুব ১৯৯৪ সালে যমুনা অয়েল কোম্পানিতে অস্থায়ী পদে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে চাকরি শুরু করেন। মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানের টাইপিস্ট পদে তার চাকরি স্থায়ী হয়। দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভিডেন্টফান্ড ও অন্যান্য খাতে টাকা কর্তন শেষে মাস শেষে তিনি বেতন পান ৩৩ হাজার ৯০৩ টাকা।
জানা গেছে, এত দিন ৪২ হাজার টাকার ভাড়া বাড়িতে থাকতেন এয়াকুব। সম্প্রতি ভাড়া বাসা ছেড়ে চট্টগ্রাম নগরীর অভিজাত এলাকা লালখান বাজারে তিনটি ফ্ল্যাট কিনেছেন, যার আয়তন প্রায় সাড়ে চার হাজার বর্গফুট। দুটো ইউনিটে তিনি নিজে থাকেন, অন্যটি ভাড়া দিয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, তিনটি ফ্ল্যাটের আনুমানিক মূল্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার মতো হবে। অভিজাত ফ্ল্যাট দুটি দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিষয়টি জানতে চাইলে এয়াকুব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ এবং নিজের জমানো টাকা দিয়ে চার হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনেছি।
আরও জানা গেছে, নিজস্ব ফ্ল্যাট ছাড়াও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এক্সেল রোডে এয়াকুবের ৪ কাঠা জমিতে টিনশেডের ঘর আছে। ১০টি পরিবারের কাছে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। দুদকের অনুসন্ধানেও এর প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। এয়াকুবের জমি ও ঘরসহ বর্তমানে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা হতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে তিনি অস্বীকার করে বলেছেন, ওই সম্পত্তির মালিক তিনি নন। জমিটি প্রথমে বায়না করলেও পরে আর কেনেননি।
এর বাইরে পতেঙ্গা, বেঙ্গুরাসহ বিভিন্ন স্থানে এয়াকুবের নামে-বেনামে জমি ও অন্যান্য সম্পদ থাকার তথ্য এসেছে দেশ রূপান্তরের কাছে।
দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এয়াকুব একটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। তবে দেশ রূপান্তরের কাছে তার দাবি, এই গাড়ির মালিক তার পরিচিত। কিন্তু গাড়িটি তার নয়।
অভিযোগ উঠেছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির ঠিকাদারের শ্রমিক মো. আবদুল নুর ও মো. হাসান ফয়সালের সহযোগিতায় সিবিএ নেতা এয়াকুব কোম্পানির ডিপোতে চাকরি দেওয়ার নামে ৮ জনের কাছ থেকে কুরিয়ার সার্ভিস ও বিকাশের মাধ্যমে ২০১৯ সালে কয়েক দফায় ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তাদের কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। ওই টাকাও ফেরত পাননি কেউই। সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে কর্মরত তৎকালীন কর্মচারী তোতা মিয়ার মাধ্যমে এয়াকুবকে ওই টাকা পাঠানো হয়। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর একাধিক রসিদ দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে।
চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে তোতা মিয়া ও চাকরি প্রার্থীদের নানা রকম ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে এয়াকুবসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানায় ২০১৯ সালের ১৯ জুলাই সাধারণ ডায়েরি করেন মো. তোতা মিয়া।
এয়াকুব দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে মিথ্যে অভিযোগ করা হয়েছিল। তিনি কোনো ধরনের অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত নন। বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় অভিযোগকারী আমার কাছে এবং কোম্পানির দায়িত্বশীলদের কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে দেশ রূপান্তর। তাদের অভিযোগ, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিবিএ নেতা এয়াকুব তোতা মিয়াকে ডেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার নির্দেশ দেন। ওই সময় টাকা ফেরত দেওয়ার শর্তে একটা মীমাংসা করা হলেও পরে ওই টাকা ফেরত দেয়নি এয়াকুব। তবে এয়াকুবের দাবি, তিনি কাউকে চাপ প্রয়োগ করেননি। অভিযোগটি মিথ্যে প্রমাণিত হওয়ায় তোতা মিয়া তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যমুনা অয়েলের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অভিযোগ করেন, সিবিএর কিছু নেতা নানা রকম অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেন না।
এ বিষয়ে জানতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গিয়াস উদ্দীন আনচারীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করে, খুদে বার্তা পাঠিয়েও তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। কোম্পানির ঢাকা কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি দুদকের এক প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যমুনা অয়েল কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, ক্যাজুয়াল ও কন্ট্রাক্টর ক্যাজুয়াল নিয়োগ, ফার্নেস অয়েল, বিটুমিনসহ বিভিন্ন খাতে এয়াকুব মাসোহারা নেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মচারী জানিয়েছেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় প্রধান তেল স্থাপনা ও দেশের সব ডিপো থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায়েরও মৌখিক অভিযোগ পেয়েছে দুদক। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে বদলিসহ নানা রকম শাস্তি দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মচারী।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন রেকর্ডপত্র এবং সরেজমিন তথ্য পর্যালোচনা করে এয়াকুবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক ও গ্রহণযোগ্য হওয়ায় তা প্রকাশ্যে অনুসন্ধান করা দরকার। তার ওই সুপারিশ আমলে নিয়ে কমিশন আজ রবিবার সকালে চট্টগ্রাম কার্যালয়ে শুনানিতে হাজির হতে সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।