
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে আবার সংঘর্ষ হয়েছে। রামদা, কিরিচ-দা নিয়ে গত সোমবার রাতে আবাসিক হলের কক্ষ দখল নিয়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্রলীগের বিজয় গ্রুপের দুই অংশ আলাওল হলের একটি কক্ষ নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। এতে ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহত নেতাকর্মীদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ চলে। পরে প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সোমবার রাত ১০টার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে আলাওল হলের একটি কক্ষ দখল নিয়ে তর্কাতর্কির জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষ রামদা, কিরিচ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে একে অপরের ওপর চড়াও এবং ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ১২ জন আহত হন।
চবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করছেন। তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
চবি চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক শুভাশিস চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে জানান, দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির ঘটনায় আহত ১২ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। একজনের আঘাত গুরুতর। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী হলের বিজয় গ্রুপের নেতা ও সহসভাপতি নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আলাওল হলে আমাদের পক্ষের ৫৭টি কক্ষ রয়েছে। ইলিয়াসের অনুসারীরা আলাওল হলের একটি কক্ষের তালা ভেঙে দখলে নিয়েছে। কক্ষ ফেরত চাইতে গেলে ইচ্ছাকৃতভাবে তার (ইলিয়াস) অনুসারীরা আমাদের ওপর হামলা করে। এরপর আমরা প্রতিহত করেছি।
বিজয় গ্রুপের নেতা মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, ‘আমরা ফুল দেওয়ার জন্য শহীদ মিনার যাচ্ছিলাম। হঠাৎ সোহরাওয়ার্দী হলের নেতাকর্মীরা আমাদের গতিরোধ করে হামলা করে। আমাদের নেতা এস এম ফয়সাল ও অনিক দাসকে কুপিয়ে জখম করে তারা।
গত বছর ৩১ জুলাই নেতৃত্ব এবং পদ পাওয়াকে কেন্দ্র করে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে বিজয় গ্রুপ। এক পক্ষ আলাওল। আরেক পক্ষ এ এফ রহমান হলের দখলে। আরেক পক্ষ সোহরাওয়ার্দী হলে। সোহরাওয়ার্দী হলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম ও পদবঞ্চিত দেলোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন নেতা। আলাওল এবং এ এফ রহমান হলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ।
বৈশ্বিক মন্দা ও ডলার সংকটের কারণে বিদেশি ফলের দাম যতটা বাড়ার কথা বিক্রি হচ্ছে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে। মৌসুমি আমদানিকারক, মধ্যস্বত্বভোগী এবং আড়তদার দাম বৃদ্ধির এ কারসাজিতে জড়িত। এতে পকেট ভারী হচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীদের আর ভোগান্তিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ।
আমদানি হওয়া তাজা ফলের বড় অংশই হচ্ছে আপেল, কমলা, মাল্টা, আঙুর ও নাশপাতি। বিদেশি ফলের সিংহভাগ আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই। ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রায় পাঁচ লাখ টন তাজা ফল আমদানি হয়। তার আগের অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৫ লাখ ৮৪ হাজার টন ফল। ডলার সংকট ও বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে বিদায়ী অর্থবছরের শেষ হিসেবে বিদেশি ফল আমদানি প্রায় ১৪ শতাংশ কমেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি ফলের বাজার বাদামতলী। ১৯ কেজির এক কার্টন আমদানি করা ফুজি চায়না আপেল এ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৬০০ টাকা দরে। এ আপেল পাইকাররা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন ৩ হাজার ৯০০ থেকে ৪ হাজার ১০০ টাকায়। আর ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে তার চেয়েও বেশি দামে। বাজারে এক কেজি আপেল এখন বিভিন্ন মানভেদে ২৬০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সুপারশপ বা বিশেষায়িত দোকানগুলোতে দাম আরও বেশি। গ্রিন আপেল কেজিপ্রতি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। যা তেলের দাম বাড়ার আগে ছিল ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা। ফুজি আপেল কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, যা আগে ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে। মাল্টার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২১০ টাকা, যা আগে ছিল ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। কমলা বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এবং বিদেশি ফল আমদানিকারক দেশের অন্যতম প্রতিষ্ঠান সাথী ফ্রুটস লিমিটেডের মালিক সিরাজুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডলার সংকটের কারণে গত প্রায় ছয় মাস ধরে নিয়মিত ফল আমদানিকারকদের বেশিরভাগ এলসি খোলার সুযোগ পায়নি। অথচ এতদিন যাদের ফল আমদানিতে দেখিনি এমন মুষ্টিমেয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে বিদেশি ফল ঠিকই আমদানি করেছে। আমদানি করা এসব ফল মজুদ রেখে চাহিদার তুলনায় কম পরিমাণে সরবরাহ করছে। কোনো বিদেশি ফলের দাম দুই-তিনগুণ বা তার বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। বিদেশি ফলের দাম বেশি হওয়ার কারণে দেশি ফলের দামও অনেকে বাড়িয়ে বিক্রি করছে।’
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৈশ্বিক মন্দা এবং ডলার সংকট চলছে। এসবের কারণে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে পণ্য সংগ্রহ করতে বাধ্য হচ্ছেন। ন্যূনতম লাভে পণ্য বিক্রি করলেও দাম আগের চেয়ে বেশি হচ্ছে। তবে কিছু ব্যবসায়ী এ অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে অনেক পণ্যের দাম যতটা বাড়ার কথা তার চেয়ে বেশি বাড়িয়ে বিক্রি করছেন। এফবিসিসিআই এ অন্যায়কে সমর্থন করে না।’
ডলার সংকটের কারণে বিভিন্ন ব্যাংকের পক্ষে ঢালাওভাবে এলসি খোলার অনুমতি দেওয়া সম্ভব হয় না। সরকার বিলাসজাত খাদ্য হিসেবে বিদেশি ফল আমদানিতে এলসি খোলায় কড়াকড়ি করতে নির্দেশ দেয়। সম্প্রতি সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘এখন ডলার সেভ করা দরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে যেটা অপরিহার্য, সেটাতেই আমরা বেশি জোর দিচ্ছি। বিদেশি মুদ্রায় অতিরিক্ত চাপ না পড়ে এ জন্য বিদেশি ফল আমদানিতে এলসি একটু সীমিত করা হয়েছে। সময় ভালো হলেই আবার খুলে দেওয়া হবে।’
তবে সরকারের এ কড়াকড়ির মধ্যে ফল আমদানি কমলেও থেমে থাকেনি। মুষ্টিমেয় প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি কিছু ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশি ফল আমদানি করেছেন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, মৌসুমি আমদানিকাররা আমদানি করা ফলের সবটা বাজারে ছাড়েননি। মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে এবং আড়তদারের কাছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করেছেন। অনেকে আবার সরাসরি পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছেন। অনেকে নিজস্ব এজেন্টের মাধ্যমে খুচরা পর্যায়েও সরবরাহ করছেন। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত ক্রেতার কাছে বিদেশি ফল স্বাভাবিক দামের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে ফলপট্টিতে অসুস্থ মায়ের জন্য ফল কিনতে আসা মজিবুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার অসুস্থ মাকে ডাক্তার ডালিম, আপেল, মাল্টা খেতে বলেছেন। কিনতে এসেছিলাম। কিন্তু আমার ৪০ বছরের জীবনে বিদেশি ফলের এত বেশি দাম দেখিনি। এক ধরনের ফলও কিনতে পারিনি। দেশি ফলের এখন সিজন নয়। যা বিক্রি হচ্ছে তার দামও বেশি। পরিবারের অন্যরা না খেলেও চলে, অসুস্থ মায়ের জন্যও ফল কেনা সম্ভব হলো না।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অতীতেও দেখা গেছে ব্যাংক তার পুরনো বড় গ্রাহকদের কিছু সুবিধা দিয়ে ধরে রাখে। কিন্তু আমাদের আপত্তি হলো সুবিধা নিয়ে কে বা কারা সাধারণ ক্রেতাকে জিম্মি করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করে কষ্টে ফেলছে। এসব তদন্ত করে দেখা উচিত। তবে নিয়মিত ব্যবসায়ীদের অনেকে জ¦ালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বৃদ্ধির বেশি দিতে হচ্ছে বলেও বিদেশি ফলের দাম কিছুটা বেশি রাখতে বাধ্য হচ্ছে। তবে তার সংখ্যা অল্প।’
সাথী ফ্রুটস লিমিটেডের মালিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বহু বছর থেকে বিদেশি ফল আমদানি করছি। বিদেশি ফল বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজারের একটি বাদামতলীতে বিদেশি ফল আমদানিতে এবারে অনেক নতুন মুখ দেখছি যাদের এতদিন দেখিনি। আমি ভোক্তা অধিকারসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে বিষয়গুলো বলেছি।’
বাংলাদেশে অন্যতম ফল রপ্তানিকারক দেশ চীন। দেশটির ব্যবসায়ীরা ইংরেজি বছরের প্রথম ১৫ দিন ছুটি কাটান। এ সময় ফল রপ্তানি বন্ধ থাকে। প্রতি বছরের মতো এবারও রপ্তানি প্রায় বন্ধ রেখেছিলেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে আপেলের চাহিদা বেশি থাকলেও অন্যতম আপেল আমদানিকারক দেশ ভারতে এখন এটির পিক সিজন না। এসব কারণেও বাংলাদেশের নিয়মিত বিদেশে ফল আমদানিকারকরা ১৫ দিন আগে এলসি খুলতে পারলেও চাহিদামতো বিদেশি ফল সংগ্রহে সমস্যায় পড়েছেন। বাংলাদেশের বিদেশি ফল আমদানিকারকরা নিউজল্যান্ড, চীন, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বিদেশি ফল আমদানির বিষয় চূড়ান্ত করেছেন। এসব দেশ থেকে বাংলাদেশে আনার জন্য গত শুক্রবার জাহাজে বিদেশি ফল তোলা শুরু হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট খাতের নিয়মিত আমদানিকারকরা জানান, রমজানের আগে বা প্রথম ভাগে এসব বিদেশি ফলভর্তি জাহাজ দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তারা আশা করেছেন এসব বিদেশি ফল দেশের বাজারে ছাড়া হলে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, দাম কমবে।
২০২১ সালে আমদানির হিসাব অনুযায়ী, দেশের মানুষ প্রতিদিন গড়ে ১৬ লাখ ৮৮ হাজার কেজি বিদেশি ফল খায়। আর খুচরা মূল্যে প্রতিদিন ফল বেচাকেনা হচ্ছে কমবেশি ২৭ কোটি টাকার। ধারণা করা হয়, দেশে খুচরা পর্যায়ে বছরে ফলের বাজারের আকার প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।
অমর একুশে বইমেলার ২১তম দিন ছিল গতকাল মঙ্গলবার। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে গতকাল মেলা শুরু হয় সকাল ৮টায়। ফলে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে সকাল থেকেই মেলায় আসতে শুরু করেন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা। সন্ধ্যা নাগাদ মেলা হয়ে ওঠে মানুষের অরণ্য। দিনভর সাদা-কালো পোশাকের নারী-শিশু, তরুণ-তরুণীর উচ্ছ্বাস আর উল্লাসে মেতেছিল মেলা প্রাঙ্গণ। তবে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের মধ্যে বই কেনার চেয়ে সেলফি তোলায় আগ্রহ ছিল বেশি। বিক্রেতারা হতাশা প্রকাশ করলেও এমন দিনে মেলায় আসাকে স্মরণীয় রাখতে উচ্ছ্বসিত ছিলেন দর্শনার্থীরা।
গতকাল সন্ধ্যায় অমর একুশে বইমেলায় গিয়ে দেখা যায়, গতকাল বইমেলা প্রাঙ্গণ ছিল লোকে-লোকারণ্য। মেলায় আসা অধিকাংশ দর্শক নিজেদের সেলফিবন্দি করতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। দলবদ্ধ হয়ে ফুড কর্নারে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন।
রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে আসা সজল বলেন, ‘বইমেলা আমাদের কাছে এক আবেগের নাম। বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় এসে আনন্দ ভাগাভাগি করা যায়। কর্মজীবনে প্রবেশ করলে এ সময় পাব না। যতটা সম্ভব সময়গুলোকে ফ্রেমে আটকে রাখছি।’
মিরপুর থেকে আসা প্রীতুল নামে একজন বলেন, ‘বান্ধবীরা মিলে কালো শাড়ি পরে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। এরপর বইমেলায় এসেছি, যদিও এখানে আসার কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। তবে এসে খুব ভালো লাগছে এবং ভাবছি কয়েকটা বই কিনেই যাব।’
এদিকে প্রকাশকরা বলছেন, মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মেলায় যে পরিমাণ লোকের সমাগম হয়েছে সেই পরিমাণ বই বিক্রি হচ্ছে না। যে পরিমাণে বই বিক্রি হচ্ছে তা স্বাভাবিক দিনের মতোই। শোভা প্রকাশের প্রকাশক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বইমেলায় আমার অভিজ্ঞতার ২৪ বছরে দেখে আসছি মাতৃভাষা দিবসের ছুটিতে তেমন বই বিক্রি হয় না। যে কয়টি বই বিক্রি হয় তা সপ্তাহের অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মতোই।
পাঠকের মধ্যে বুঝে বই কেনার সংস্কৃতি এখনো গড়ে ওঠেনি দাবি করে তিনি বলেন, ‘এবারের মেলায় সিরিয়াস পাঠক খুবই কম এসেছেন। যারা বই কিনছেন তাদের মধ্যে বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন থাকছে না।’
অন্বেষা প্রকাশের বিক্রয়কর্মী মামুন বলেন, ‘বইমেলা এখন মানুষের জন্য বিনোদনের স্থান হয়ে উঠেছে। বই কেনার থেকে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরতে আসছেন অধিকাংশ দর্শক। খুব কম পাঠক আসছেন। গত একুশ দিনে দেখেছি, মানুষ মেলায় আসছেন, ঘুরছেন, ছবি তুলছেন। কিন্তু বই কিনছেন খুব কম।’
মেলায় লোকে-লোকারণ্য দেখে লেখক সৈয়দ আহসান কবীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রাণের বইমেলায় মানুষের সমাগম ইতিবাচক। তবে যে পরিমাণে পাঠক আসছেন সে পরিমাণে বই বিক্রি হলে অন্তত শব্দযোদ্ধাদের উদ্দেশ্য সার্থক হতো।’
নতুন বই : গতকাল অমর একুশে বইমেলার ২১তম দিনে নতুন বই এসেছে ৩০৩টি।
শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার নেতৃত্বে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। সকাল ৮টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। স্বরচিত কবিতা পাঠে প্রায় ১৫০ জন কবি কবিতা আবৃত্তি করেন। সভাপতিত্ব করেন কবি জাহিদুল হক।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে হয় অমর একুশে বক্তৃতা। স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির সচিব এএইচএম লোকমান। অমর একুশে বক্তৃতার বক্তা ছিলেন প্রখ্যাত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। বিদেশ সফরজনিত অনুপস্থিতিতে তার লিখিত বক্তৃতা পাঠ করেন তার মেয়ে ত্রপা মজুমদার। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন মাসউদ আহমাদ, তানভীর সালেহীন ইমন, মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন ও শামীম আজাদ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন সুজন বড়ুয়া, নভেরা হোসেন, রিমঝিম আহমেদ, মতিন রায়হান, নাজমুল হেলাল, সালমা বেগ, ইমরুল ইউসুফ, ইসমত শিল্পী, মায়াবী কাজল, গিয়াসউদ্দিন চাষা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, রূপা চক্রবর্তী, আহ্কামউল্লাহ। ছিল ফকির সিরাজের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, শিবু রায়, কল্যাণী ঘোষ, মহাদেব ঘোষ, আবদুল হালিম খান, স্বর্ণময়ী মণ্ডল এবং সোমা দাস। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন গৌতম মজুমদার (তবলা), মো. মোস্তাফিজুর রহমান ডাবলু (কি-বোর্ড), আনসার আলী (বাঁশি) এবং মো. ফারুক (অক্টোপ্যাড)।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি : আজ বুধবার অমর একুশে বইমেলার ২২তম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা ও ছড়া এবং জন্মশতবর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত লোকায়ত সাহিত্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মতিন রায়হান ও সুমন কুমার দাশ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন তারিক সুজাত, তপন বাগচী, মোস্তাক আহমাদ দীন এবং অনুপম হীরা মণ্ডল। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কামাল চৌধুরী।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিতু সাহা। পড়ছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। বইমেলায় এসেছেন তার প্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বই সংগ্রহ করতে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রতি বছর বইমেলার জন্য অপেক্ষা করি। এবার মেলায় প্রিয় লেখকের বইসহ অন্য লেখকদের বই কিনছি। মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাসধর্মী বই পড়তে পছন্দ করি।’
এবারের বইমেলা কেমন লাগছে জানতে চাইলে রিতু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রতি বছর মেলায় একটা ভিন্নরকম আমেজ থাকে। এবারও আছে। অন্যবারের চেয়ে মেলা এবার আলাদা। স্টল বিন্যাসটা খুবই চমৎকার।’
পাঠক হিসেবে কোন লেখকের বই পছন্দ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার প্রিয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। তার বই আমার বেশি পছন্দ। এ ছাড়াও অন্যান্য লেখকের বই পড়ি। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের ও ইতিহাসধর্মী বই পড়তে বেশি ভালোবাসি।’
এ পাঠক আরও বলেন, ‘বইমেলায় ভালো বইয়ের পাশাপাশি অনেক মানহীন বইও ছাপা হয়। নিম্নমানের লেখায় সমৃদ্ধ অগণিত অসম্পাদিত বই আমাদের কষ্ট দেয়। এ বিষয়ে প্রকাশকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’
কথাসাহিত্যিক পাপড়ি রহমানের একটি বই এসেছে এবারের বইমেলায়। বইয়ের নাম ‘আমার একলা পথের সাথি’। প্রকাশক বেঙ্গল পাবলিকেশনস।
লেখক জানান, এটি তার আত্মজীবনীমূলক জার্নাল। ঢাকা শহরের বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝে একজন লেখকের জার্নি। সবকিছু পাশ কাটিয়ে একজন লেখক কীভাবে লেখক হয়ে উঠে সেসব নিয়ে বইটি।
আপনার পাঠক কারা জানতে চাইলে পাপড়ি রহমান বলেন, ‘আমার পাঠক সবাই নন। যারা আমার বই পড়েন তারা ভালো সাহিত্যের খোঁজখবর রাখা পাঠক। অর্থাৎ সাহিত্যের সমঝদার যাকে বলে। দেখে-শুনে-বুঝে বইপাঠ করে এরাই আমার পাঠক।’
চলতি বইমেলায় পাঠক উপস্থিতি বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বইমেলায় পাঠক কম, দর্শক বেশি। খাওয়াদাওয়া, আড্ডাবাজি ও ঘোরাঘুরি বেশি। এখানে সিরিয়াস সাহিত্যের পাঠক কম। হালকা বা চটুল বইয়ের পাঠক বেশি। সিরিয়াস বই কিছু লেখক কেনে ও পড়ে। সিরিয়াস লেখা লেখেও কমসংখ্যক লেখক। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। সত্যিকার ভালো বইয়ের খবর বেশিরভাগ পাঠক পান না। কিন্তু থাকা দরকার ছিল।’
আপনার লেখালেখির প্রভাব পাঠকদের ওপর দেখতে পান কি না জানতে চাইলে পাপড়ি বলেন, ‘আমার বেশিরভাগ লেখা প্রান্তিক জনজীবন নিয়ে, এ ক্ষেত্রে ওই মানুষদের মতো কেউ হতে চাইবে কেন? তবে আমার লেখার প্রভাব আমি অনেক নতুন লেখককের মাঝেই দেখি। আমার নিজস্ব পারিবারিক কিছু শব্দ বহুজনের লেখায় আমি দেখেছি। এটাকে আমি ভালোভাবে নিই। আরেকটা বিষয়, যারা আমার লেখা পছন্দ করেন, তারা সাগ্রহে আমার বই সংগ্রহে রাখেন। তারা আমাকে পড়বেনই, সেটা যেভাবেই হোক না কেন।’
পাঠকের সঙ্গে লেখক হিসেবে বলার মতো স্মৃতি বা ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বইমেলা ২০২৩-এর দিন কয়েক আগের ঘটনা, এক মেয়ে প্রায় দৌড়ে এসে বলল, “আপনি পাপড়ি রহমান না?” আমি কিছুটা অবাক হয়ে হ্যাঁ বললাম। তার উজ্জ্বল আঁখি দুটি আরও উজ্জ্বল হলো। বলল, “আপনার লেখা আমার খুব ভালো লাগে। আপনাকে আমি একটু ছুঁয়ে দেখতে চাই”। আমি বললাম, অবশ্যই। সে আমায় জড়িয়ে ধরল। নাম বলল বিপাশা। বলল, “আমি আপনার ফেইসবুকে অ্যাড আছি”। নতুন বইয়ের স্টল নাম্বার শুনেই ফের সে দৌড় দিল।’
এ লেখক আরও বলেন, ‘নেত্রকোনায় খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কার আনতে গিয়ে এক পাঠকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। যিনি আমার “হাওয়াকলের গাড়ি” গল্পটির কথা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না! বারবার বলছিলেন। এরকম বহু ঘটনা রয়েছে।’
পাপড়ি রহমানের জন্ম টাঙ্গাইলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে করেছেন স্নাতকোত্তর। তার গল্পগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘অষ্টরম্ভা’, ‘ধূলিচিত্রিত দৃশ্যাবলি’, ‘মৃদুমানুষের মোশন-পিকচার’ প্রভৃতি। উপন্যাস যথাক্রমে ‘পোড়া নদীর স্বপ্নপূরণ’, ‘বয়ন’ ও ‘পালাটিয়া’ সাড়া জাগিয়েছে পাঠকমহলে। চলতি বছর খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার পান এ কথাসাহিত্যিক।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে প্রথম বর্ষের ছাত্রীকে নির্যাতনের পর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের ঘটনার এক সপ্তাহ পার হয়েছে। কিন্তু এখনো ওই ঘটনাসংশ্লিষ্ট সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার করতে পারেনি হল
কর্র্তৃপক্ষ। মনিটর সচল থাকলেও বায়োসের ব্যাটারি নষ্ট বলে জানা গেছে। এতে ফুটেজ সংগ্রহ নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব টেকনিশিয়ান দিয়ে এ ফুটেজ উদ্ধার সম্ভব নয় বলে দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহসানুল আম্বিয়া।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার পরে হল কর্র্তৃপক্ষ সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধারের জন্য আমাদের শরণাপন্ন হয়। তাৎক্ষণিক আমরা দুজন টেকনিশিয়ান পাঠাই। কিন্তু তারা ফুটেজ উদ্ধারে ব্যর্থ হয়। মূলত বায়োসের ব্যাটারি নষ্ট হওয়ার কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। বাইরে থেকে টেকনিশিয়ার আনলে হয়তো এটি সম্ভব হবে। তবে হল কর্র্তৃপক্ষ আমাকে এখনো বাইরে থেকে টেকনিশিয়ান আনার বিষয়ে কিছু জানায়নি।’
এ বিষয়ে হলটির প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘হলের প্রধান ফটক, অফিস ও করিডরসহ ১২টি জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। টেকনিক্যাল ত্রুটির কারণে আমরা এখনো ফুটেজ সংগ্রহ করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারাও উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা বাইরে থেকে টেকনিশিয়ান আনার ব্যবস্থা করছি।’ কতদিনের মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ উদ্ধার সম্ভব হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুব দ্রুতই আমরা এ কাজটি করব।’
হলে ৭ ঘণ্টা ধরে অবস্থান তদন্ত কমিটির : ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ৭ ঘণ্টা অবস্থান করেছে তদন্ত কমিটি। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি, বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি এবং হল কর্র্তৃপক্ষ গঠিত তদন্ত কমিটি গতকাল সকাল ১০টার দিকে হলে ঢোকে। পরে বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি ও হলের তদন্ত কমিটি বের হয়। হলের সংশ্লিষ্ট ছাত্রীদের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন সহকারী প্রক্টরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।
হলটির শাখা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা সকাল ১০টার পর হলে প্রবেশ করেন। তারা হল প্রভোস্টের কক্ষে বসে কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন। বেলা ১১টার দিকে দেশরতœ শেখ হাসিনা হলে প্রবেশ করেন হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা। তারাও প্রভোস্টের কার্যালয়ে অবস্থান করে। হলের ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে কতজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে এটা আমি জানি না।’
এ বিষয়ে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. আমজাদ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি আমার কাছে জানতে চায়। আমি যা জানি তা তাদের কাছে বলেছি।’
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রেবা ম-ল বলেন, ‘আমি তদন্তের স্বার্থে আজও দেশরতœ শেখ হাসিনা হলের মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি আমরা গভীরভাবে পর্যালোচনা ও ক্রস চেকিং করছি। তদন্তের স্বার্থে আর কিছু বলতে চাই না।’
এর আগে ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে তাকে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী ও তার অনুসারীরা নির্যাতন চালিয়েছেন। নির্যাতনের সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল এবং এ ঘটনা কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
ভাড়া করা বিমানে উড়িয়ে নিয়েও মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম ম্যাচে একাদশে রাখল না দিল্লি ক্যাপিটালস। আসরে তাদের শুরুটাও ভালো হলো না। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল মোস্তাফিজবিহীন দিল্লি।
ঘরের মাঠে ৫০ রানের জয়ে আসর শুরু করল লক্ষ্ণৌ। ১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিল্লি থামে ৯ উইকেটে ১৪৩ রানে। ৪ ওভারে মাত্র ১৪ রান খরচায় ৫ উইকেট নিয়ে লক্ষ্ণৌয়ের জয়ের নায়ক মার্ক উড।
এদিন দিল্লির ব্যাটিং ছিল পুরো ফ্লপ। দলের অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার ৪৮ বলে ৫৬ রান করেছেন। পাশাপাশি রাইলি রোশো ২০ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। কিন্তু বাকিরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ। ফলে যা হরার তাই হলো ম্যাচের ফল।
এর আগে স্বাগতিক দলের হয়ে ঝড় তোলেন কাইল মেয়ার্স। এই ক্যারিবীয়ান ৩৮ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলেন। ২টি চারের সঙ্গে হাঁকান ৭টি ছক্কা। এ ছাড়া নিকোলস পুরান ২১ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেন। সুবাদে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৯৩ রানের পুঁজি গড়ে লক্ষ্ণৌ।
গত অক্টোবরের পর আর্সেনালের জার্সিতে প্রথম গোলের দেখা পেলেন গাব্রিয়েল জেসুস। তার আবার জোড়া গোল। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের জ্বলে ওঠার দিনে লিডস ইউনাইটেডকে উড়িয়ে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে ফের আট পয়েন্টে এগিয়ে গেল আর্সেনাল।
ঘরের মাঠে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৪-১ গোলে জিতে আর্সেনাল। স্পট কিকে দলকে প্রথম এগিয়ে দেন জেসুস। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বেন হোয়াইট ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। এর খানিক পরই জোড়া গোল পূর্ণ করেন জেসুস।
এরপর লিডস একটি গোল শোধ করলেও গ্রানিত জাকার গোলে বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।
আন্তর্জাতিক বিরতি থেকে ফেরার পর এটিই প্রথম ম্যাচ ছিল আর্সেনালের। বিরতিতে যাওয়ার আগে নিজেদের মাঠে একই ব্যবধানে তারা হারিয়েছিল ক্রিস্টাল প্যালেসকে।
এই জয়ে ২৯ ম্যাচে ৭২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থান আরও মজবুত করল গানাররা। ২০০৩-০৪ মৌসুমের পর প্রথমবার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্সেনাল। তাদের সঙ্গে গত লিগের চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ব্যবধান ৮।
গানারদের চেয়ে এক ম্যাচ কম খেলে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে সিটি। একই দিন তারাও নিজেদের মাঠে লিভারপুলকে উড়িয়ে দিয়েছে ৪-১ গোলে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। একাধারে উপস্থাপিকা, নায়িকা এবং সংগীতশিল্পীও। সিনেমার বাইরে তিনটি গান প্রকাশ পেয়েছে তার। সে ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদে নতুন গান নিয়ে আসছেন তিনি।
গানের শিরোনাম ‘বুঝি না তো তাই’। বাঁধনের লেখা এ গানটির সংগীতায়োজন করেছেন বলিউড র্যাপার মুমজি স্ট্রেঞ্জার। গানে কণ্ঠ দিয়েছেন ফারিয়া। বাবা যাদবের কোরিওগ্রাফিতে ভিডিওতে অংশ নিয়েছেন ফারিয়া ও মুমজি। আসছে ঈদে উন্মুক্ত হবে গানটি। গানটি প্রকাশ করবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ভেঙ্কটেশ ফিল্মস।
সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে গানটির টিজার, যা দর্শকমহলে প্রশংসা কুড়াচ্ছে। এরমধ্যে সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুকে গান ভিডিওর দৃশ্যের একটি ছবি পোস্ট করেন এ গায়িকা। সেখানে ক্যাপশনে লিখেন, মাই হাইট ইজ ৫' ৩'' বাট অ্যাটিচিউড ৬' ১''।
গানটি প্রসঙ্গে নুসরাত ফারিয়া জানিয়েছিলেন, ‘নতুন এ গানটি বেশ আনন্দের সঙ্গে করেছি। আমার আগের তিনটি গানের মতো এটিও বেশ মজার। আমার বিশ্বাস এটি সবার পছন্দ হবে।’
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ‘পটাকা’ গানের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ঘরানার গানে প্রথম আত্মপ্রকাশ করেন নুসরাত ফারিয়া। এরপর ২০২০ ও ২০২১ সালে প্রকাশ পায় ‘আমি চাই থাকতে’ ও ‘হাবিবি’। আসছে ঈদুল ফিতরে এ অভিনেত্রী গায়িকা হিসাবে চতুর্থবার হাজির হচ্ছেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে।
দেশে ইতিমধ্যে কিছু এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ফাইভজি ইন্টারনেট সেবা চালু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটক। অন্য অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক একই সেবা চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সব মোবাইল অপারেটরই দেশের বেশিরভাগ স্থানে ফোরজি সেবা চালু করেছে। আর সে হিসেবেই তারা ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু গ্রাহকরা ফোরজি ইন্টারনেট কিনলেও দেশের অনেক এলাকায় টুজি-থ্রিজি’র সেবা পাচ্ছেন। তারা অপারেটর কোম্পানিগুলোকে এ ব্যাপারে বারবার অভিযোগ জানালেও এর সুরাহা হচ্ছে না।
জানা গেছে, রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে মোটামুটিভাবে গ্রাহকরা ফোরজি সেবা পাচ্ছেন। তবে এসব এলাকায়ও অনেক সময় ফোরজি থাকে না, থ্রিজিতে নেমে আসে নেটওয়ার্ক। তবে জেলা পর্যায়ে বেশিরভাগ সময়েই থাকে থ্রিজি। আর মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে বেশিরভাগ সময় সেই থ্রিজিও থাকে না, তখন টুজি নেটওয়ার্কই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। ফলে ইন্টারনেট প্যাকেজ যথাযথভাবে থাকার পর তা কাজ করে না, বাফারিং হয়। এতে গ্রাহকরা ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো সারা দেশের ব্যবসা একত্রে হিসাব না করে এলাকাভিত্তিক ব্যবসার হিসাব-নিকাশ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা দেখেন, কোন এলাকায় তাদের গ্রাহক সংখ্যা কত, সেখানে কত সিমে ইন্টারনেট চালু আছে। যদি দেখা যায়, তাদের হিসাব মতে তা সন্তোষজনক আছে তাহলে সেখানে ফোরজি সেবা চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা বহাল রাখে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক টাওয়ার নির্মাণ করে। কিন্তু যদি দেখে সন্তোষজনক গ্রাহক নেই তাহলে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় না, এতে সেই এলাকায় ফোরজি পাওয়া যায় না। অথচ শহর এলাকাগুলোতে তারা বেশি ব্যবসা করলেও সেটাকে হিসাবে ধরে না। কিন্তু মফস্বল এলাকা থেকে কল বাবদ প্রয়োজনের বেশি ব্যবসা হলেও তা ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করে না।
মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ফেসবুক পেইজে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিযোগ জানান গ্রাহকরা। অভিযোগ অনুযায়ী, অপারেটরদের মধ্যে টেলিটকের নেটওয়ার্কই বেশি দুর্বল। টেলিটকের ফেসবুক পেজের এক পোস্টে মো. ফয়জুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই, নেটওয়ার্ক পাই না সকাল থেকে। মিরপুর-২ নম্বরে বাসা স্টেডিয়ামের পশ্চিম পাশে। আর আমার গ্রামের কথা না হয় বাদ দিলাম।’ আরাফাত আলী লেখেন, ‘২জিবি নেট কিনলে দেড় জিবি নষ্ট হয়। মেয়াদ ১৫ দিন তাও ফুরাতে পারি না। তাহলে বুঝেন নেটওয়ার্ক কত ভালো।’ কার্জন চাকমা লেখেন, ‘পাহাড়ি এলাকায় ফোরজি নিশ্চিত করুন। আমাদের পার্বত্য এলাকাগুলোতে টেলিটকের গ্রাহক সবচেয়ে বেশি, কিন্তু শুধু থ্রিজি-টুজিতে সীমাবদ্ধ।’ রাসেল আহমেদ লেখেন, ‘গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাংগা গ্রামে থ্রিজি নেটওয়ার্ক তো নেই-ই। মাঝেমধ্যে টুজি’ও নেই। বুঝুন অবস্থাটা। আমাদের থ্রিজি সেবা দেওয়ার চেষ্টা করুন।’
টেলিটকের মহাব্যবস্থাপক (সিস্টেম অপারেশন) নুরুল মাবুদ চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ফাইভজি রেডিনেস প্রজেক্ট শুরু করেছি। যা শেষ হতে এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় লাগতে পারে। এর ফলে আমাদের কাভারেজ এলাকাগুলোতে ফোরজি সেবা নিশ্চিত হবে। এছাড়া আমাদের কাভারেজ বাড়ানোরও বড় পরিকল্পনা রয়েছে।’
বাংলালিংকের পেজের একটি পোস্টে মাহাদী হাসান তালহা লেখেন, ‘আমার এলাকায় আপনাদের সিম ব্যবহার করতে হলে ফোন গাছের ডালে বেঁধে লাউডস্পিকার দিয়ে কথা বলা লাগে। এত্তো ফাস্ট কেন আপনাদের নেটওয়ার্ক।’ আকরাম হোসাইন লেখেন, ‘ভাই আপনাদের সবই ঠিক, তবে নেটওয়ার্ক সেøা।’
বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অফিসার তৈমুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ফোরজি সেবার জন্য ২৩০০ মেগাহার্জের স্পেকটার্ম প্রয়োজন হয়। কিন্তু টুজিতে তা লাগে মাত্র ৯০০ মেগাহার্জ। আমরা ইতিমধ্যে ৯৫ শতাংশ কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা নিশ্চিত করেছি। তবে আমাদের আরও বেশি সাইট লাগবে। যদি সব অপারেটর মিলে আমরা টাওয়ার শেয়ার করতে পারি, তাহলে সব গ্রাহকের কাছে ভালো সেবা পৌঁছে দেওয়া সহজ হবে।’
রবির পেজে এক পোস্টে তানভীর আহমেদ লেখেন, ‘কলাপাড়া থানা শহরে যদি থ্রিজি নেটওয়ার্ক না পাওয়া যায়, এরচেয়ে দুঃখজনক কিছুই হতে পারে না।’ এইচএমএম ইসমাঈল লেখেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার চম্পকনগর ইউনিয়নে রবি সিমের থ্রিজি নেই। অথচ অনেক বছর আগে রবি টাওয়ার বসানো হয়েছে। আমরা রবি সিম দিয়ে ইন্টারনেট চালাতে অক্ষম।’
রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলটরি অফিসার শাহেদ আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কাভারেজ এলাকায় ফোরজি সেবা রয়েছে। তবে দেখা যায়, অনেক ফোন ফোরজি সাপোর্ট করে না। আর কাভারেজ এলাকা থেকে যতদূরে যাওয়া যাবে, নেটওয়ার্ক তত কমতে থাকবে। এছাড়া আমাদের কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কের কাজ চলছে। পাশাপাশি নতুন কিছু টাওয়ার তৈরির কাজও আমাদের চলছে।’
গ্রামীণের পেইজে একটি পোস্টে রহিদুল ইসলাম লেখেন, ‘ভাই আমি যখন গ্রামে যাই তখন নেটওয়ার্কের ঝামেলা হয়।’ সাইদুর রহমান লেখেন, ‘এমন সার্ভিস হলে চলবে? কলরেট, ইন্টারনেটের দাম তো ঠিকই বেশি আপনাদের, বাকি সব অপারেটরদের থেকে।’
গত বছরের ২৮ এপ্রিল টেলিকম অপারেটররা বহুল প্রতীক্ষিত ‘আনলিমিটেড’ ও ‘মেয়াদবিহীন’ ইন্টারনেট ডাটা প্যাক চালু করেছে। তবে এতে গ্রাহকদের খুব বেশি সুবিধা হচ্ছে না। কারণ এজন্য প্যাকেজের দাম বাড়িয়েছে অপারেটররা। আর মেয়াদহীন ইন্টারনেট পেতে প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ চালু করতে হবে। কিন্তু গ্রাহকের সব সময় একই ধরনের ইন্টারনেট প্যাকেজ নেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অব্যবহৃতই থেকে যাচ্ছে গ্রাহকের কেনা ইন্টারনেট। এছাড়া মেয়াদবিহীন হিসেবে মোবাইল অপারেটররা যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে গ্রাহকদের।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানায়, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে সচল সিমের সংখ্যা ১৮ কোটি ২০ লাখ ৬১ হাজার। এরমধ্যে গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটি ৯০ লাখ ৯৫ হাজার, রবির ৫ কোটি ৫০ লাখ ১৪ হাজার, বাংলালিংকের ৪ কোটি ৮৫ হাজার এবং টেলিটকের ৬০ লাখ ৬৭ হাজার। আর গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশে মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৫০ লাখ। এরমধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ কোটি ৩০ লাখ ১৩ হাজার এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি ও পিএসটিএন)-এর মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ১১ লাখ ৮৭ হাজার গ্রাহক।