
হঠাৎ করেই গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক বিপর্যয় ঘটে। এতে দেশে সচল থাকা ১৮ কোটি ৮ লাখ মোবাইল সিমের মধ্যে গ্রামীণফোনের ৭ কোটি ৯৩ লাখ গ্রাহকের অনেকের ফোনেই নেটওয়ার্ক ছিল না। ফলে বন্ধ ছিল কল ও ইন্টারনেট সেবা। এ ঘটনায় কেবল দুঃখ প্রকাশ করেই দায় সারছে কোম্পানিটি। অন্যদিকে এর ব্যাখ্যা চেয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা-বিটিআরসি।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিটিআরসির তরফ থেকে ব্যাখ্যা চেয়ে একটি জরুরি চিঠি পাঠানো হয় গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও)। বিটিআরসির পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগ) মো. গোলাম রাজ্জাক স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, গ্রাহকের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায় যে, দেশব্যাপী মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রাপ্তিতে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
দেশের শীর্ষ মোবাইল অপারেটর হিসেবে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সব শ্রেণির গ্রাহক চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। এ অবস্থায়, জাতীয় জরুরি অবস্থা বিবেচনায় গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক বিপর্যয়ের সঠিক কারণ ব্যাখ্যাসহ অতিদ্রুত নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
তবে গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশন খাইরুল বাশার সাংবাদিকদের জানান, ‘একই সময়ে উত্তরাঞ্চলের ৪টি ভিন্ন স্থানে ফাইবার কেব্ল কাটা পড়ার কারণে নেটওয়ার্কে বিঘেœর সৃষ্টি হয়। ফাইবার অপটিকস কেব্ল বিচ্ছিন্ন হয়ে সাময়িকভাবে কল করতে অসুবিধা হওয়ায় আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তবে দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক হয়েছে।’
গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক বিপর্যয়ের পর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন গ্রাহকরা। কথা বলার পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবাও পাওয়া যাচ্ছিল না। জরুরি যোগাযোগ করতে না পেরে এই সময়ে ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা। অনেকে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করতে না পেরে উদ্বেগের মধ্যে পড়েন, অনেকেরই ব্যবসায়িক যোগাযোগ বা পেশাগত দায়িত্ব পালনও বিঘিœত হয়।
এদিকে গ্রামীণফোনের ফাইবার কেব্ল বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে সারা দেশে নেটওয়ার্ক বিপর্যয় হয়েছে এই বক্তব্য বা দাবি যুক্তিসংগত নয় বলে মনে করে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘জিপির (গ্রামীণফোন) এই খোঁড়া যুক্তি মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। প্রথমত, যদি টাঙ্গাইল এবং সিরাজগঞ্জে ফাইবার কেব্ল বিচ্ছিন্ন হয় তাহলে সারা দেশে নেটওয়ার্ক বিপর্যয় হলো কেন? দ্বিতীয়ত, ওই ফাইবার যদি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিট অথবা ফাইবার অ্যাট হোমের হয়ে থাকে তাহলে অন্য অপারেটরদের একইভাবে নেটওয়ার্ক সমস্যায় পড়ার কথা, কিন্তু তা হয়নি। তৃতীয়ত, জিপি ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ফাইবার কানেকশনের মাধ্যমে গ্রাহকদের সার্ভিস দিয়ে থাকে। যদি ধরে নেই, ফাইবার কানেকশন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, তাহলে তারা মাইক্রোওয়েভ দিয়ে সার্ভিস দিতে পারত।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ধারণা গ্রামীণফোন সত্য গোপন করেছে। হতে পারে তাদের সুইচিং অপারেশনে বড় কোনো বিপর্যয় ঘটেছে। কমিশনের উচিত দ্রুত একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকৃত সত্য বের করা। সেইসঙ্গে গ্রাহকদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া জিপির দায়িত্ব।’
বাংলাদেশে ২০০০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত গত ২০ বছরে মাতৃমৃত্যু হার ৭২ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে। সর্বশেষ ২০২০ সালে গর্ভাবস্থা বা প্রসবজনিত জটিলতার কারণে প্রতি ১ লাখ নারীর মধ্যে মারা গেছেন ১২৩ জন। অথচ ২০০০ সালে এ সংখ্যা ছিল ৪৪১ জন। সে হিসাবে এই ২০ বছরে প্রতি ১ লাখ নারীর মধ্যে মৃত্যু কমেছে ৩১৮ জন।
এর আগে ২০০৫ সালে গর্ভাবস্থা বা প্রসবজনিত জটিলতার কারণে বাংলাদেশে প্রতি ১ লাখ নারীর মধ্যে মারা গেছে ৩৭৬ জন, ২০১০ সালে তা কমে ৩০১ জনে দাঁড়ায় ও ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল আরও কম ২১২ জন।
অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে মাতৃমৃত্যু কমার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। এই ২০ বছরে সবচেয়ে বেশি মাতৃমৃত্যু কমেছে ভুটানে ৭৯ দশমিক ৫ শতাংশ ও সবচেয়ে কম কমেছে মালদ্বীপে ৫১ দশমিক ৭ শতাংশ। এরপর ভারতে কমেছে ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ, নেপালে ৬৬ দশমিক ৫ শতাংশ, পাকিস্তানে ৬১ দশমিক ৮ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কায় ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ প্রকাশিত ‘মাতৃমৃত্যু প্রবণতা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যু পরিস্থিতির এ চিত্র পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে বিশ্ব মাতৃমৃত্যুর সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২০ বছরে বিশ্বে মাতৃমৃত্যুর সার্বিক হার এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। তবে এ সময় গর্ভাবস্থা বা প্রসবজনিত জটিলতার কারণে প্রতি ২ মিনিটে ১ জন নারীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০০০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মাতৃমৃত্যু হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। কিন্তু ২০১৬ থেকে ’২০ সাল পর্যন্ত এ হার স্থবির ছিল এবং কিছু অঞ্চলে বেড়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০ বছরের মধ্যে সামগ্রিক মাতৃমৃত্যুর হার ৩৪ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। ২০০০ সালে প্রতি ১ লাখ শিশু জন্মের সময় ৩৩৯ জন মাতৃমৃত্যু থেকে কমে ২০২০ সালে ২২৩ জন হয়েছে। সে হিসাবে ২০২০ সালে প্রতিদিন প্রায় ৮০০ জন নারী মারা গেছে বা প্রতি ২ মিনিটে প্রায় একজন মারা গেছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেন, ‘গর্ভাবস্থা অনেক প্রত্যাশার সময় হলেও দুঃখজনকভাবে এখনো বিশ্বজুড়ে লাখো মানুষের জন্য এটি মর্মান্তিকভাবে বিপজ্জনক অভিজ্ঞতা।’
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ’২০ সাল পর্যন্ত এ পাঁচ বছরে জাতিসংঘের আটটি অঞ্চলের মধ্যে মাত্র দুটি অঞ্চলে মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ৩৫ শতাংশ কমেছে এবং মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় কমেছে ১৬ শতাংশ।
অন্যদিকে এ পাঁচ বছরে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় মাতৃমৃত্যু হার ১৭ শতাংশ এবং লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ানে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। বাকি অঞ্চলগুলোতে এ হার স্থির ছিল।
এ সময় সব থেকে বেশি ৯৫ দশমিক ৫ শতাংশ মাতৃমৃত্যু কমেছে বেলারুশে। আর মাতৃমৃত্যু সব থেকে বেশি হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ভেনেজুয়েলায়। ২০০০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে সব থেকে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে, মধ্য আফ্রিকা, চাদ, কঙ্গো, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের মতো মারাত্মক মানবিক সংকটের সম্মুখীন দেশগুলোতে মাতৃমৃত্যুর হার বিশ্বব্যাপী গড়ের দ্বিগুণেরও বেশি ছিল।
প্রতিবেদন তৈরিকারী জেনি ক্রেসওয়েল বলেন, ইউরোপীয় দেশের মধ্যে গ্রিস ও সাইপ্রাসে মাতৃমৃত্যু ‘উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি’ হয়েছে। ২০২০ সালে মোট মাতৃমৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশ ছিল সাব-সাহারান আফ্রিকায়। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের তুলনায় সেখানে মাতৃমৃত্যুর হার ‘১৩৬ গুণ বেশি’।
প্রতিবেদনে মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে গুরুতর রক্তপাত, সংক্রমণ, অনিরাপদ গর্ভপাত থেকে জটিলতা এবং এইচআইভি/এইডসের মতো জটিলতা অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এসব জটিলতার অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
এ ব্যাপারে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের প্রধান নাতালিয়া কানেম বলেন, ‘আমরা পরিবার পরিকল্পনায় জরুরিভাবে বিনিয়োগ করে এবং ৯ লাখ ধাত্রীর বৈশ্বিক ঘাটতি পূরণ করার মাধ্যমে আরও ভালো কিছু করতে পারি এবং অবশ্যই করতে পারি।’
প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলে, প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর নারীদের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কম। বিশেষ করে তারা গর্ভধারণ করবে কি না, অথবা কখন গর্ভধারণ করবে, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা স্বাধীন সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারেন না; যাতে তারা নিজেদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পরিকল্পনা ও সন্তান লালনপালনের সময় নিতে পারেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিয়াজকে হত্যা করা হয়নি। তিনি আত্মহত্যাই করেছেন।
আলোচিত ওই ঘটনায় করা মামলার এজাহারে ‘তথ্যগত ভুলের’ বিষয়টি উল্লেখ করে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুস সালাম মিয়া প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন বলে দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক জাকির হোসেন।
সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ খালেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এজাহারে মামলার বাদী দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে যে তথ্য দিয়েছিলেন তা ভুল ছিল। আমাদের তদন্তে এসেছে হত্যা নয়, দিয়াজ আত্মহত্যাই করেছিলেন।’
২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট এলাকায় ভাড়া বাসার নিজ কক্ষ থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে হাটহাজারী থানা-পুলিশ। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। ঘটনার পর থেকে পরিবার ও তার অনুসারীরা দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন নির্মাণ কাজের দরপত্র নিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সূত্র ধরে পরিকল্পিতভাবে দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে।
পরদিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। ওই বছরের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেওয়া প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়। দিয়াজের পরিবার ওই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে।
এ ঘটনায় দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর ১০ জনকে আসামি করে আদালতে হত্যা মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আলমগীর টিপু, ছাত্রলীগ নেতা আবুল মনসুর জামশেদ, তাদের অনুসারী রাশেদুল আলম জিশান, আবু তোরাব পরশ, মনসুর আলম, আবদুল মালেক, মিজানুর রহমান, আরিফুল হক অপু ও মোহাম্মদ আরমান।
পরে দিয়াজের মা জাহেদা আমিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দিয়াজের লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্তের আদেশ দেন। ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর লাশ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ। ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দিয়াজের শরীরে আঘাতজনিত জখমের মাধ্যমে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে।’
সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় গত বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা অবধি কমপক্ষে আটজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় মা-মেয়েসহ অন্তত ৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা সকলেই ওই অটোরিকশার আরোহী ছিলেন। একই দিন রাজধানী ঢাকায় বাসচাপায় নিহত হয়েছেন মোটরসাইকলে আরোহী এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, মাগুরায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে এক শিক্ষকের। এ ছাড়া সাতক্ষীরায় মোটরসাইকেলে ট্রাকচাপায় নিহত হয়েছেন পুলিশের এক সদস্য।
দেশ রূপান্তরের নিজস্ব প্রতিবেদক ও সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যে বিস্তারিত
বগুড়া প্রতিনিধি জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শাজাহানপুর উপজেলার মাদলা সুজাবাদ এলাকার দ্বিতীয় বাইপাস সড়কে (ওয়াইমোড়) বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মা ও মেয়েসহ পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। নিহতরা হলেন জেলার গাবতলী উপজেলার কদমতলী এলাকার আব্দুল গণির ছেলে ও সিএনজিচালক হযরত আলী (৩৫), ধুনট উপজেলার বেড়েরবাড়ী গ্রামের কাপড় ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানী (৬০), গাবতলী উপজেলার কালাইহাটা গ্রামের শাহানা আকতার (৩১) ও তার মেয়ে কেয়া মণি (৭) এবং আনুমানিক ৪০ বছরের এক পুরুষ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গাইবান্ধা থেকে ঢাকাগামী একটি বাস বগুড়ার দ্বিতীয় বাইপাস দিয়ে যাচ্ছিল। অন্যদিকে শহর থেকে পাঁচ যাত্রী নিয়ে বাগবাড়ী অভিমুখে যাচ্ছিল একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা। পথে তিনমাথা মোড় (ওয়াই মোড়) এলাকায় পৌঁছলে সিএনজি অটোরিকশাটি রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসটির সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় প্রায় ৫০ গজ দূরে সিএনজিটিকে টেনে আনে বাসটি। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হতাহতদের উদ্ধার করে শজিমেক হাসপাতালে পাঠায়।
ঘটনাস্থলে জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আফসানা ইয়াসমিন জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে সরকারিভাবে আর্থিক সহযোগিতা ২০ হাজার করে টাকা দেওয়া হবে।
এদিকে মাগুরা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলার মহম্মদপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় বোরহান উদ্দিন (৩৫) নামে এক স্কুলশিক্ষক নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে উপজেলার রামপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত বোরহান উদ্দিন রাজাপুর ইউনিয়নের নিত্যনন্দপুর গ্রামের মাহফুজুর রহমানের ছেলে। আর হরেকৃষ্ণপুর বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।
মহম্মদপুর থানার ওসি অসিত কুমার রায় জানান, তার মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে গাছে ধাক্কা খায়। এতে সড়কের ওপর ছিটকে পড়ে মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ছুটিতে বাড়ি এসে বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেলে চালিয়ে বাজারে যাওয়ার পথে ইটভাটায় মাটি বহনকারী ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ইমরান হোসেন (২৫) নামে এক পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু হয়েছে। তিনি পুলিশের কনস্টেবল পদে রাঙ্গামাটির তবলছড়ি থানায় কর্মরত ছিলেন।
কলারোয়া থানার ওসি নাসির উদ্দীন মৃধা বলেন, মাটি বহনকারী ট্রাকের ধাক্কায় ইমরান হোসেন নামে এক কনস্টেবল মারা গেছেন। তার মোটরসাইকেলে থাকা গুরুতর আহত নয়ন হোসেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় বাসের নিচে চাপা পড়ে ওমর ফারুক পলক (২৪) নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় জুয়েল রানা নামে আরেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তারা বাংলাদেশ ইসলামিক ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। নিহত ওমর ফারুক মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
পলকের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার উত্তর ইদুখালী এলাকায়। তার বাবার নাম মমিনুল হক। তিনি যাত্রাবাড়ীর কাজলায় মামার বাসায় থাকতেন।
পাইকারি বাজারে ডিমের দাম গত তিন দিনের তুলনায় কমেছে। প্রতি হালিতে ডিমে দাম কমেছে ৫ টাকা। পাইকারি বাজারে দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। অবশ্য পাইকারি বাজার কাছাকাছি খুচরা বিক্রেতাদের কাছে থেকে প্রতি হালি ডিম ২-৩ টাকা কমে পাচ্ছেন ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, খুচরায় ডিমের দাম কমতে আরও তিন-চার দিন লাগতে পারে।
অন্যদিকে ব্রয়লার, সোনালি মুরগি, গরু ও খাসির মাংসে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজি ও মাছের দাম ৫ থেকে ২৫ টাকা মধ্যেই ওঠানামা করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে তেজগাঁও, কারওয়ান বাজার, নিউ ইস্কাটন, ইস্কাটন গার্ডেন, শান্তিনগর, হাতিরপুল, সেগুনবাগিচা কাঁচা বাজার এলাকার পাইকারি ও খুচরা বাজার, মুদি দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
এক মাসের হিসাবে ভোক্তা পর্যায়ে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৭০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে ৯০ টাকা। ফার্মের মুরগির প্রতি হালি লাল ডিমের দাম বেড়েছিল ৬-৮ টাকা। সেটা এখন ২-৩ টাকা কমে পাওয়া যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি পাইকারি ব্যবসায়ীরা প্রতি ১০০ মুরগির ডিম ১ হাজার ৭০ টাকায় বিক্রি করেছেন। সেটা তিন দিনের ব্যবধানে গত মঙ্গলবার থেকে ৯৪০-৯৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। সে হিসাবে খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতি পিস ডিম ৯ টাকা ৫০ পয়সা দিয়ে কিনছেন। খুচরা ব্যবসায়ীর দোকানে আগের ডিম থাকায় ভোক্তার কাছে ১১ টাকা ২৫ পয়সায় বিক্রি করছেন। অর্থাৎ এক হালি ডিম ভোক্তার ৪৫ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো খুচরা ব্যবসায়ী এখনো ৫০ টাকা হালি দরে ডিম বিক্রি করছেন।
তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী আল আমিন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আল আমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডিমের দাম কমে গেছে। আমাদেরও প্রতিদিন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। আমরা ডিম কম দামে বিক্রি করলেও ভোক্তারা এখনো সেই সুফল পাচ্ছেন না। তারা আরও তিন-চার দিন পর এই কম দামে ডিম কিনতে পারবে।’
গতকালও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে কেজি ২২০-২৪০ টাকা দরে। সোনালি মুরগি বিক্রি হয় ৩৫০ টাকা কেজি। গতকাল পাইকারি বাজারে ব্রয়লার ২০০ ও সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা কেজিতে দরে বিক্রি হয়েছে।
তেজগাঁওয়ের মুরগি ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, ‘গত ১৫ দিনে সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে ৭০-৮০ টাকা। সেটা এখনো একই রকম রয়েছে। কবে নাগাদ দাম কমতে পারে সেটা বলা যাচ্ছে না। এখন মুরগিও কম বিক্রি হচ্ছে।’
কারওয়ান বাজারে গতকাল মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচা পেপে বিক্রি হয়েছে ৩০, কাঁচা মরিচ ১২০, টমেটো ২৫-৪০, লম্বা বেগুন ৬০, গোল সাদা বেগুন ৮০, গোল লাল বেগুন ৭০, ফুলকপি ও বাঁধাকপি আকারে ছোট একটি ১০-১৫, বড় আকারের কপি ২৫-৩০, আলু প্রতি কেজি ২৫-৩০, মিষ্টিকুমড়া একটি ছোট ৪০-৫০, লাউ আকারভেদে প্রতিটি ৫০-৭০, প্রতি কেজি মুলা ২৫-৩০, জাতভেদে শিম ৩০-৪০, কাঁচকলা প্রতি হালি মানভেদে ২০-৩০, শসা ও খিরা প্রতি কেজি ৩০-৪০, করলা ১২০-১৪০, বরবটি ১০০, মটরশুঁটি ১০০, ঢেঁড়স ৬০, ব্রকলি ২০-২৫, কচুর লতি ১০০, সিমের বিচি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল বড় সাইজের প্রতি কেজি ৩৫০, পাঙ্গাশ ২০০, তেলাপিয়া ১৮০-২৫০, মিরর কাপ ২৮০, ট্যাংরা ও গুলশা ৪৫০, সরপুঁটি ১৮০-২৫০, চিংড়ি জাতভেদে ৪৫০-৬০০, পাবদা মাঝারি ৩৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়ে। গরুর মাংস ৭০০, খাসির মাংস ৯০০-১০৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কারওয়ান বাজারে চাল ব্যবসায়ী নিউ বরিশাল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শহিদুল ইসলাম জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় মোটা চালের ৫০ কেজির বস্তায় ১০-২০ টাকা বেড়েছে। গতকাল গুটি স্বর্ণা ৪৭-৪৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। নাজির ৭২-৭৩, আটাশ ৫৩-৫৪, মিনিকেট নাম দিয়ে বিক্রি করা চাল ৭০-৭২, আমন লাল চাল ৫৮, চিনিগুঁড়া চাল ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি করেছেন।
রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জের ধরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক এক চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার মিঠাবো এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা ওই বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় এবং ফাঁকা গুলি ছুড়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
তবে ছাত্রলীগের দাবি, এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
আওয়ামী লীগ নেতা ও ভুলতা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আবু দাউদ মোল্লা বলেন, ‘রূপগঞ্জে আওয়ামী লীগের রাজনীতি দুই ভাগে বিভক্ত। তাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তানজিন আহমেদ খান রিয়াজের নেতৃত্বে রাশেদ, আলামিন, আলিফ, আলিনুর, মাসুদ, শরীফসহ ৩৫-৪০ জনের একটি দল অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মোটরসাইকেলে করে আমার মিঠাবোর বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। পরে অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং একপর্যায়ে ৫-৬ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। এরপর তারা বাড়িতে ঢুকে আমার স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগমের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আলমারির চাবি কেড়ে নেয়। পরে আলমারিতে থাকা ১১ লাখ টাকা ও আট ভরি স্বর্ণ লুট করে। এ সময় টেলিভিশনসহ ঘরে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং হত্যার হুমকি দিয়ে বীরদর্পে চলে যায় তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি তো নৌকার রাজনীতি করি। আরেকটি পক্ষের সঙ্গে রাজনীতি করি বলে পরিকল্পিতভাবে এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করছি।’
আবু দাউদ মোল্লার স্ত্রী হোসনেয়ারা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী হাটাবো বাজারে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। সন্ত্রাসীরা হত্যার উদ্দেশ্যেই এ হামলা চালিয়েছে। বর্তমানে আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রূপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তানজিন আহমেদ খান রিয়াজ বলেন, ‘আমরা হাটাবোর একটি প্রোগ্রামে মিছিল দিয়ে শোডাউন করতে করতে যাচ্ছিলাম। আবু দাউদ মোল্লার বাড়ির সামনে আমরা থেমেছিলাম এবং সঙ্গে সঙ্গে স্থান ত্যাগ করেছি। কোনো গুলি, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মতো ঘটনা ঘটেনি। ছাত্রলীগকে কলঙ্কিত করার জন্য এ ধরনের ঘটনা সাজানো হয়েছে।’
রূপগঞ্জ থানার ওসি এএফএম সায়েদ বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রেকর্ড গড়ে সেঞ্চুরি করেছেন মুশফিকুর রহিম। যে ইনিংসটি চোখে লেগে আছে ওপেনার লিটন দাসের। মুশফিকের এদিনের মতো ইনিংস বাংলাদেশের আর কোনো ক্রিকেটারে ব্যাটেই দেখেননি বলে মন্তব্যও করেছেন তিনি।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায় বাংলাদেশ ইনিংসের পরই। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ। যা নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
ছয় নম্বরে খেলতে নেমে মুশফিক ৬০ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ১৪ চার ও ২ ছক্কায়। ম্যাচ শেষে দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন লিটন। এ সময় মুশফিকের ইনিংস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি যতদিন খেলছি, বাংলাদেশের কোনো খেলোয়াড়ই এভাবে শেষের দিকে গিয়ে ১০০ করেনি।’
মুশফিকে মুদ্ধ লিটন বলে যান, ‘যখন দল থেকে কেউ এরকম একটা সেঞ্চুরি করে, দেখলে অনেক ভালো লাগে। সিনিয়ররা কেউ করলে তো আরও ভালো লাগে। মুশফিক ভাইয়ের শুধু আজকের ইনিংস না, শেষ ম্যাচের ইনিংসটা যদি দেখেন, আমার মনে হয় অসাধারণ ছিল।’
‘যদিও রান বেশি নয়, ৪০ বা এরকম ছিল (২৬ বলে ৪৪)। এটাই কিন্তু বড় ভূমিকা রাখে তিন শর বেশি রান করতে। আজকের ইনিংসটা তো ম্যাচের চিত্র বদলে দিয়েছে।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল টাইগাররা। এ ম্যাচের আগ পর্যন্ত সেটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল রেকর্ড ১৮৩ রানের ব্যবধানে। রানের হিসেবে যা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। সুবাদে ১-০ তে সিরিজে এগিয়ে তামিম ইকবালের দল।
একই ভেন্যুতে আগামী বৃহস্পতিবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।