
শেষ হয়ে আসছে প্রাণের বইমেলা। গতকাল ছিল মেলার শেষ শুক্রবার। বৃহস্পতিবার রাতে উড়ো চিঠিতে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বইমেলায় হামলার হুমকি ছিল। তবে সবকিছু তোয়াক্কা না করেই গতকাল শুক্রবার বইমেলায় ছিল পাঠক-লেখকের উপচেপড়া ভিড় ছিল। এদিন পাঠকদের নতুন নতুন বই কিনতে দেখা গেছে। বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা মেলার চলমান ছয় ঘণ্টার পুরোটা জুড়েই ছিল বই বিক্রি। বেশিরভাগ পাঠকের হাতে ছিল এতদিন সংগ্রহ করা বিভিন্ন প্রকাশনীর নতুন বইয়ের ক্যাটালগ। আগেভাগে সংগ্রহ করে রাখা সেসব ক্যাটালগ থেকে বেছে তৈরি করা তালিকা ধরে কেনাকাটা শুরু করেছেন বইপ্রেমীরা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় মেলা শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত বইপ্রেমী পাঠকদের এ ভিড় ও বিক্রি থাকবে।
এদিকে অমর একুশে বইমেলায় বোমা হামলার হুমকির পর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নূরুল হুদা গতকাল গণমাধ্যমে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসব বিষয় বন্ধের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করেছি। শাহবাগ থানায় জিডি করা হয়েছে।
গতকাল মেলায় কথা হয় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জুনায়েদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি মেলায় এসে সংগ্রহ করেছেন বইয়ের ক্যাটালগ। সেখান থেকে বাছাইকৃত বই কিনতে ছুটে এসেছেন শুক্রবার ছুটির দিন। তিনি বলেন, আমি একটু বেছে বই কিনি। যেসব বইকে মানুষ ‘সিরিয়াস’ বই বলে, সেগুলোর প্রতি আমার ঝোঁক বেশি।
অবসর প্রকাশনা সংস্থার ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ রানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজ (গতকাল) বইমেলার শেষ শুক্রবার। বইমেলায় লোকসমাগম অনেক বেশি। বিক্রিও সন্তোষজনক। এখন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত চলবে এমন বই বিক্রি, এমনটা আশা করছি।
বইমেলায় বোমা হামলার শঙ্কায় পাঠক মনে ভয় দেখা গিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বোমা হামলার শঙ্কার বিষয়ে পাঠকদের মনে বিন্দুমাত্র আতঙ্কের ছাপ দেখা যায়নি। বরং শেষ মুহূর্তে পাঠকরা তালিকা ধরে ধরে বই কিনতে এসেছে। আজ (গতকাল) সকালে শুরুর দিকে এমন কয়েকজন পাঠককে দেখতে পেয়েছি। এমন পাঠকরা একটু নিরিবিলিতে বই কিনতে পছন্দ করে।
নতুন বই : গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার ২৪তম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। নতুন বই এসেছে ২৩৯টি। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল শিশুপ্রহর।
শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান : সকাল সাড়ে ১০টায় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, সভাপতিত্ব করেন নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার।
শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় ওয়াকিয়া নূর (প্রথম), আফফান আল হাসনাইন (দ্বিতীয়), রুজাইনাহ মারিফা (তৃতীয়); খ-শাখায় প্রত্যয় পাল রাজ (প্রথম), তাসনিয়াহ সিদ্দিক (দ্বিতীয়), শাফিন উদ্দিন আহম্মেদ (তৃতীয়); গ-শাখায় অর্নিলা ভৌমিক (প্রথম), আল মুমিনুর (দ্বিতীয়), জায়ীফা তাসনীম (তৃতীয়) স্থান লাভ করে।
শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় আরোহী বর্ণমালা (প্রথম), অংকিতা সাহা রুদ্র ((দ্বিতীয়), জুমানা হোসেন (তৃতীয়); খ-শাখায় সমৃদ্ধি সূচনা স্বর্গ (প্রথম), আনিশা আমিন (দ্বিতীয়), অদ্রিতা ভদ্র (তৃতীয়) এবং গ-শাখায় আদিবা সুলতানা (প্রথম), তাজকিয়া তাহরীম শাশা (দ্বিতীয়), সিমরিন শাহিন রূপকথা (তৃতীয়) স্থান লাভ করে।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় নীলান্তী নীলাম্বরী তিতির (প্রথম), অন্বেষা মজুমদার (দ্বিতীয়), সার্থক সাহা (তৃতীয়); খ-শাখায় রোদোসী নূর সিদ্দিকী (প্রথম), তানজিম বিন তাজ প্রত্যয় (দ্বিতীয়), মৈত্রেয়ী ঘোষ (তৃতীয়) স্থান লাভ করে।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আধুনিকতা, উত্তর-আধুনিকতা ও পরবর্তীকালের সাহিত্যতত্ত্ব শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাসুদুজ্জামান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নিরঞ্জন অধিকারী, এজাজ ইউসুফী, বিপ্লব মোস্তাফিজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাশিদ আসকারী।
প্রাবন্ধিক বলেন, বিশ্বে সাহিত্যতত্ত্ব নিয়ে রচিত গ্রন্থের সংখ্যা বিপুল। এর কারণ তত্ত্ব সম্পর্কে পৃথিবীর সব প্রান্তেই লেখক, পাঠক ও সমালোচকদের রয়েছে অনিঃশেষ আগ্রহ। মানবিক কর্মকান্ড যত বাড়ছে, নতুন নতুন বিষয়ের আবির্ভাব ঘটছে, তত্ত্বের পরিসরও তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তত্ত্বচর্চার মধ্য দিয়েই আত্মপরিচয়ের বিনির্মাণ, লৈঙ্গিক পার্থক্যের অপসারণ, নিম্নবর্গের মানুষকে আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা চলছে। বৈশ্বিকভাবে আজ অবধি যত তত্ত্বের আবির্ভাব ঘটেছে তার মধ্যে আধুনিকতা, উত্তর-আধুনিকতা, উত্তর-উপনিবেশবাদ খুবই শক্তিশালী প্রভাব বজায় রেখেছে।
আলোচকবৃন্দ বলেন, আধুনিকতা, উত্তর-আধুনিকতা এবং পরবর্তীকালের সাহিত্যতত্ত্বের পটভূমি অনেক বিস্তৃত। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি ভাষার সাহিত্যে এসব তত্ত্ব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক চিন্তা, সামাজিক চিন্তা ও সাহিত্যিক চিন্তা থেকেই মানবতাবাদী চিন্তক ও তাত্ত্বিকরা সময়োপযোগী তত্ত্বের বিকাশ ঘটান। আজ তত্ত্ব, তাত্ত্বিক বয়ান ও তাত্ত্বিক বিতর্কের কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে গেছে সাহিত্য ও সংস্কৃতি। সেই কারণে শুধু সাহিত্যকে কেন্দ্র করেই উদ্ভব ঘটেছে বিভিন্ন তত্ত্বের।
সভাপতির বক্তব্যে রাশিদ আসকারী বলেন, একুশ শতকে শিক্ষার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো সমালোচনামূলক ও বিশ্লেষণধর্মী মানসিকতা সৃষ্টি। এ জন্য গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ এসব তত্ত্বকে বিদ্যায়তনিক সীমার বাইরে এনে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রতিটি বিষয়কেই তাত্ত্বিক চিন্তার আলোকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গ্রহণ করতে হবে।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি : আজ শনিবার, অমর একুশে বইমেলা ২৫তম দিন। মেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
শিশুপ্রহর : আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর চলবে।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে কভিড-১৯ : ভাষার বৈশ্বিকতা ও বাংলাদেশের সাহিত্য এবং কভিড-১৯ : সংস্কৃতির সংকট ও রূপান্তর শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন হাকিম আরিফ এবং মোহাম্মদ শেখ সাদী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন পারভেজ হোসেন, হামীম কামরুল হক, কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী এবং আবুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রফিকউল্লাহ খান।
ভেতরে দল গোছানোর পাশাপাশি নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নিবন্ধন বাতিল হলেও একাদশ সংসদের মতো আগামী নির্বাচনেও অংশ নেবে দলটি। যদিও জামায়াতের নেতারা বলছেন, তাদের দল বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না।
জামায়াতের জোরেশোরে নির্বাচন প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে দলটির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, জামায়াত নির্বাচনমুখী একটি রাজনৈতিক দল। সব সময়ই মাঠপর্যায়ে প্রার্থী যাচাই-বাছাই চলে। ইতিমধ্যে তারা ১২০টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।
জামায়াত আগামীতে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির মতো কোনো দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবে না দাবি করে ওই নেতারা বলেন, একক নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে জামায়াত অংশ নেবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় থাকবে।
জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়।’ তিনি বলেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন। এ আন্দোলনকে সফল করার পর নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আসবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৃণমূলে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে বেশি ব্যস্ত রয়েছেন দলটির নেতারা। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছেন নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর জামায়াতের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে তা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নয়। কারণ বর্তমান সরকারের অধীনে বিগত দিনে যে দুটি সংসদ নির্বাচন হয়েছে তাতে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। আগামী নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনে হলে সে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না। সে জন্য আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না।’
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচির দুটিতে অংশ নিলেও পরে জামায়াত আর বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে নেই। বিএনপিও আপাতত জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত বগুড়ার সাতটি আসনের মধ্যে পাঁচটিতেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। অন্য দুটিতেও প্রস্তুতি শুরু করেছে জামায়াত। প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে বিভিন্ন আসনে জরিপ পরিচালনা করছে দলটি। জরিপের রিপোর্ট অনুযায়ী দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি দেশের বিভিন্ন আসনে প্রার্থী নির্বাচন করতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় আসন এবং প্রার্থীর নাম নির্বাচন করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মাঠে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পাঁচ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ ইজ্জত উল্লাহ। আরও রয়েছেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ ও সাবেক শিবির সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত। যেসব উপজেলায় দলটির চেয়ারম্যান কিংবা ভাইস চেয়ারম্যান আছে সেসব নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ৭৬টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। ওই নির্বাচনে দলটি ১০টি আসনে বিজয়ী হয়। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াত ১৮টি আসনে বিজয়ী হয়। এই নির্বাচনে দলটি ২২২ জন প্রার্থী দিয়েছিল।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত তিনটি আসনে জয়ী হয়। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে জামায়াত ১৭টি আসন পায়। মহিলা আসনগুলো থেকে চারটি আসনে জয়ী হয় তারা। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত দুটি আসনে বিজয়ী হয়। ওই নির্বাচনে দলটি জোটগতভাবে ৩৯টি ও চারটিতে এককভাবে নির্বাচন করে।
২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বরে জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালে হাইকোর্টে দায়ের করা রিট মামলার রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। সে কারণে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে।
এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে, নতুন নামে রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াত। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামে একটি দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা হয়েছে, যার সব নেতাই জামায়াতের। নতুন এ দলের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন ডেমরা থানা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চান এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার কর্মপরিষদ সদস্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা মো. কাজী নিজামুল হক। আনোয়ারুল ইসলাম চান নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
নতুন দলের নামে নিবন্ধন চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান আকন্দ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। জামায়াতবিরোধী শক্তি এ ধরনের খবর প্রচার করছে।’
বইয়ের টানে রাজধানীর মহাখালী থেকে অমর একুশে বইমেলায় এসেছেন ইতি আক্তার। তার প্রিয় লেখকদের তালিকায় রয়েছেন সৈয়দ শামসুল হক, আহমদ ছফা ও ড. আকবর আলি খান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন বইয়ের খোঁজে মেলায় ছুটে এসেছি।
গতকাল অমর একুশে বইমেলার শেষ শুক্রবারে মেলা প্রাঙ্গণে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে পাঠক ইতির আলাপ হলে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতেই বইমেলা নিয়ে একটি জঙ্গি সংগঠনের হুমকির কথা জানতে পেরেছি। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কেমন বই চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, মননশীল সৃজনশীল মানসম্মত বই চাই। মেলায় এ ধরনের বই তুলনামূলক কম বলে আমি মনে করি।
বইমেলা নিয়ে তিনি বলেন, মেলায় লেখকদের কাছ থেকে অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য একটা আলাদা অটোগ্রাফ চত্বর থাকলে ভালো হতো। সবাই সেখানে লাইন ধরে প্রিয় লেখকের কাছ থেকে অটোগ্রাফ নিতে পারত।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক রায়হান রাইন কবিতা, গবেষণা, গল্প-উপন্যাস লেখায় সমান সক্রিয়। এবার বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে তার ৭৬ গল্প নিয়ে ‘কয়েকটি সাদা কাঠগোলাপ’। প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। ‘বাংলার সুফিয়ানা ও সহজিয়ানা’ নামে গবেষণার বই প্রকাশ করেছে বাতিঘর।
আপনার বইয়ের পাঠক কারা জনাতে চাইলে রায়হান রাইন বলেন, ‘আমার বই পড়েছেন এমন যাদের চিনি, তাদের প্রায় সবাই নিজেরাও লেখক। তবে গবেষণাধর্মী লেখাগুলো, বিশেষ করে বাংলার দর্শন নিয়ে বইগুলো অনেকেই পড়েন।যাদের মধ্যে শিক্ষক, গবেষক বা শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। এর বাইরেও নিশ্চয়ই পড়েন কেউ কেউ।’
বাংলাদেশের সাহিত্যের পাঠক নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে লেখক বলেন, ‘জেলা শহরগুলোর পাবলিক লাইব্রেরি এবং সৃজনশীল বইয়ের দোকানগুলোর অবস্থা দেখে মনে হয়, সাহিত্যের পাঠকের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সূত্রে দেখতে পাই, পাঠ্যপুস্তক পড়েন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও খুব কম। বেশির ভাগই নোটবই বা হাতে লেখা নোট পড়ে পরীক্ষা দেন। সামনে একটা নোটবই পড়া প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। তারা সাহিত্যিকদের নাম মুখস্থ করেন চাকরির পরীক্ষার প্রস্তু‘তি হিসেবে।’
রায়হান রাইন পাঠকের ওপর নিজের লেখার প্রভাব খেয়াল করে দেখেননি জানিয়ে বলেন, ‘পাঠকের ওপর লেখার কী প্রভাব পড়ছে, সেটা দেখতে পাওয়াও সহজ ব্যাপার না।’
পাঠকের সঙ্গে লেখক হিসেবে কোনো স্মৃতি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম উপন্যাস একটা ঈদসংখ্যায় বেরিয়েছিল মিথুনের রাশিফল নামে, বছর দশেক আগে। সেটা পড়ে এক পাঠক ধরে নিয়েছিলেন, এর লেখক একজন বুড়ো মানুষ। আমার সঙ্গে তার দেখা হওয়ার পর তিনি সেটা বললেন। ভাবলাম, তার সঙ্গে দেখা না হয়ে গেলে, তার মনের ভেতর সেই সময় থেকেই আমাকে থাকতে হতো একজন বুড়ো মানুষ হয়ে। এই উপন্যাসের প্রুফ দেখা শেষ করে একজন প্রুফ রিডার ফোন করেছিলেন। পরে ফোন করেছেন অনেকেই। কিন্তু প্রুফ রিডারের কথা বলার ভঙ্গির মধ্যে এমন একটা কিছু ছিল, যেটা আমার মনে থেকে গেছে। ‘কথাপুষ্প: প্রজ্ঞাবানদের বলা গল্প’ নামের বইটা পড়ে এক পাঠক আমাকে খুঁজে বের করে বললেন, ‘আপনাকে ধন্যবাদ, আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।’
রায়হান রাইনের জন্ম ১৯৭১ সালের ৮ মার্চ, সিরাজগঞ্জে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর করেছেন। তার আরও উপন্যাস: ‘আগুন ও ছায়া’; গল্পের বই: ‘আকাশের কৃপাপ্রার্থী তরু’, ‘পাতানো মায়ের পাহাড়’, ‘স্বপ্নের আমি ও অন্যরা’; কবিতার বই: ‘তুমি ও সবুজ ঘোড়া’, ‘একদিন সুবচনী হাঁস’। অনুবাদ করেছেন মনসুর আল-হাল্লাজের ‘কিতাব আল-তাওয়াসিন’ (২০১০), পাবলো নেরুদার ‘প্রশ্নপুস্তক’। এ ছাড়া সম্পাদনা করেছেন ‘বাংলার ধর্ম ও দর্শন’।
তার ‘আগুন ও ছায়া’ উপন্যাসটি ২০১৪ সালে ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই’ হিসেবে পুরস্কৃত হয়।
‘স্মৃতি যেন কোনো অবলুপ্ত স্থাপত্যের জলমগ্ন সিঁড়ি’। কোনো একটি কবিতায় পেয়েছিলাম এই লাইনটা। কোন কবির লেখা, কী নাম কিছুই আর মনে পড়ে না। কিন্তু আজও মাথায় গেঁথে আছে স্মৃতি। গেঁথে আছে লাইনটির গভীর ব্যঞ্জনার অনুরণন। কোথায় কোনো পুরনো পুকুরে নিঃশব্দে জলের সবুজ অতলে ডুবে আছে অসংখ্য সিঁড়ি। সিঁড়িগুলোতে লেগে আছে অসংখ্য গল্প, লেগে আছে হাসি, কথা আনন্দিত সময়ের ঘ্রাণ। এসবের পুরোটা হয়তো বোঝা যায় না, মনেও পড়ে না। তবু কিছু দৃশ্যের টিকে থাকাটুকু টের পাওয়া যায়। স্মৃতি আমার কাছে এমনই। তলিয়ে যাওয়া বহু দৃশ্য, কথা আর মানুষের মুখচ্ছবি মিলেমিশে একটা বড় অস্তিত্ব হয়ে বেঁচে থাকে মনের মধ্যে।
তখন সস্তা সিগ্রেটের প্যাকেট পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াই এই ঢাকা শহরে। লেখালেখি করার চেষ্টা আর সাংবাদিকতা আমাকে ঘুরিয়ে মারছে বিভিন্ন পত্রিকা অফিস আর সাহিত্যিকদের ডেরায়। কাজ করি সাপ্তাহিক বিচিত্রা (এখন লুপ্ত) অফিসে। আমার সাংবাদিকতার জীবনে প্রথম সম্পাদক সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং শিল্পী শাহাদত চৌধুরী। শুধু সাংবাদিকতার তালিম নিয়েছি তার কাছে বললে ভুল বলা হবে। জীবনের বহু বাঁক চিনিয়েছিলেন তিনি আমাকে। মনের মধ্যে সেই বয়সে তৈরি করে দিয়েছিলেন ভিন্নভাবে বেঁচে থাকার স্পর্ধা। বিচিত্রা অফিসে নিয়মিত যেতাম। মতিঝিলের প্রায় কেন্দ্রে সেই অফিসটা সারা দিন মানুষের কলাহলে মুখর থাকত। শাহাদত ভাইকে দেখতাম নিজের দপ্তরে বসে ভাবতে আর কাজ করতে। তার একটা অদ্ভুত মুদ্রাদোষ বা অভ্যাস ছিল। তখন পৃথিবীতে কম্পিউটারের আবির্ভাব ঘটেনি। আমাদের লেখালেখির কাজটা করতে হতো সস্তা, লালচে একধরনের নিউজপ্রিন্ট কাগজের প্যাডে। শাহাদত ভাই যখন কোনো গভীর চিন্তায় ডুবে যেতেন অথবা পত্রিকার জন্য প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের পরিকল্পনা করতেন, তিনি সেই প্যাডের একটার পর একটা সিøপ গভীর মগ্নতায় ছিঁড়তে থাকতেন। বিস্ময়কর হলো, ছেঁড়া প্যাডের পৃষ্ঠাগুলো প্রায় একই মাপে আড়াআড়িভাবে ছিঁড়ে ফেলতেন তিনি অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে। দিন শেষে তার চেয়ারের পাশে ছেঁড়া কাগজের স্তূপ জমা হয়ে যেত। মনে আছে, একবার অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা আনমনে প্যাডের সিøপ ভেবে ছিঁড়ে ফেলেছিলেন তিনি। আনু মুহাম্মদ আশির দশকে সাপ্তাহিক বিচিত্রার একজন বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করতেন।
প্রখ্যাত দুই সাংবাদিক প্রয়াত নির্মল সেন ছিলেন আদি দৈনিক বাংলা পত্রিকার অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর। একটি রাজনৈতিক দল এবং সাংবাদিকদের নেতাও ছিলেন। কখনো তাকে মাড় দেওয়া সাদা পায়জামা, পাঞ্জাবির বাইরে অন্য কোনো পোশাক পরিধান করতে দেখিনি। সেই শুভ্র পোশাকের মতো তার জীবনটাও ছিল পরিচ্ছন্ন। শুদ্ধাচারী, অকৃতদার নির্মল সেনের অভ্যাস ছিল গুনগুন করে গান গাওয়া। প্রায়ই দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সাব এডিটরদের বসার জায়গাটায় তাকে দেখেছি টেবিলে মৃদু তাল ঠুকে গান গাইতে। বেশির ভাগ সময় যে গানটা তিনি গাইতেন তা ছিল, ‘তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদির নাম...’।
এ রকম গানের সুর গুনগুন করতেন দেশের আরেক প্রখ্যাত প্রয়াত সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খান। আলোচিত উইকলি হলিডে পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি। সাধারণত ছুটির দিনে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সকালবেলা আগমন ঘটত এনায়েতুল্লাহ খানের। উজ্জ্বল রঙের পাঞ্জাবি পরতেন। একা হেঁটে যখন ক্লাবে ঢুকতেন দেখতাম গাড়ির চাবির রিংটা আঙুলে ঘোরাচ্ছেন আর গুনগুন করে গান গাইছেন। সাংবাদিক মহলে একবার গল্প প্রচলিত হয়েছিল, একজন উদীয়মান সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খানের আঙুলে গাড়ির চাবি ঘোরানোর ভঙ্গিটি নকল করতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলেন। তার আঙুল থেকে গাড়ির চাবি ছিটকে পড়ে যায় আশপাশের অন্ধকারে। আর তাতে ঘটেছিল মহা বিপত্তি। এনায়েতুল্লাহ খান ক্লাবে ঢুকে বিখ্যাত ডালপুরি আর চা অর্ডার করতেন। কখনো গভীর মনোযোগে পত্রিকা পড়তেন অথবা আমাদের মতো তরুণ সাংবাদিকদের ডেকে দেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে কথা বলতেন।
কবি রফিক আজাদ ছিলেন ভীষণ আড্ডাপ্রিয় মানুষ। আশির দশকে সাপ্তাহিক রোববার পত্রিকায় সম্পাদকের দপ্তরে বা নগরীর চেনা পানশালায় অথবা সাহিত্যিকদের তুমুল আড্ডায় তাকে দেখা যেত অন্যমনস্ক মুহূর্তে আঙুল দিয়ে নিজের গোঁফ টানতে। সেটাই ছিল রফিক ভাইয়ের একটি মুদ্রাদোষ বা বিশেষ স্বভাব। দুই প্রান্ত থেকে অনেকটা থার্ড ব্রাকেটের মতো নেমে আসা গোঁফ টানতে টানতে তাকে বহুদিন দেখেছি নির্জন পানশালার চেয়ারে একা বসে ভাবছেন। কী ভাবতেন রফিক ভাই তখন? হয়তো কবিতার কোনো চরণ।
ছোটখাটো দৈহিক আকৃতির মানুষ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস। আমি তার সরাসরি ছাত্র ছিলাম। ছন্দ আর অলংকার শেখানোর ক্লাসে লেকচার দেওয়ার সময় কথার মাঝখানে গুঁজে দিতেন একটি প্রশ্ন, ‘তোমরা বুঝতে পেরেছ তো?’ কেমন সুরেলা ভঙ্গিতে একটু টেনে কথাটা বলতেন। তখন তার মুখ রসস্থ হয়ে থাকত পানের নির্যাসে। কিছুদিন পরে বুঝেছিলাম সেটা ছিল স্যারের মুদ্রাদোষ। অসংখ্য বাংলা কবিতা ও ছড়া তার কণ্ঠস্থ ছিল। প্রতিটি বর্ণের ওপর বাড়তি জোর দিয়ে ক্লাসে দরাজ গলায় কবিতা আবৃত্তি করতেন তিনি। আর ছন্দের বারান্দায় হারিয়ে যেতে যেতে আমাদের উদ্দেশে ছুড়ে দিতেন সেই প্রশ্নটা।
বাংলাদেশের সাহিত্যে দুই কৃতী কথাশিল্পী মাহমুদুল হক আর বুলবুল চৌধুরী। দুজনই আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছেন চিরকালের মতো। তারা ব্যক্তিগত জীবনে একে অপরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সময়টা ছিল আশির দশকের মাঝামাঝি। মাহমুদুল হকের ‘জীবন আমার বোন’ অথবা ‘পাতালপুরী’ উপন্যাস পাঠ-পরবর্তী মুগ্ধতায় ভুগি। এই অনন্য কথাশিল্পীর ডাক নাম ছিল বটু। সবাই তাকে এ নামেই সম্বোধন করতেন। হঠাৎ একদিন অগ্রজ বন্ধু ও সাংবাদিক সৈয়দ শহীদ পরিচয় করিয়ে দেন বটু ভাইয়ের সঙ্গে। দেখি লেখালেখি থেকে প্রায় নির্বাসিত বটু ভাই বায়তুল মোকাররমের একটি জুয়েলারি দোকানে বসে আছেন। তিনি সেখানে বসে আংটির পাথরের ব্যবসা করেন। খুব অবাক হয়েছিলাম বটু ভাইয়ের হাতে বিভিন্ন ধরনের পাথর বসানো আংটি দেখে। ওই আংটিগুলোই একদা বটু ভাইয়ের সিগনেচার হয়ে ওঠে। বুলবুল চৌধুরীর যেমন ছিলেন দেখা হলেই বলা, ‘হ মিয়া, বহেন।’ কোনো আড্ডায় দেখা হলেই বুলবুল ভাই প্রথমেই এ কথাটা বলতেন। তার পর সময় গড়ালে কথার মাঝখানে অপ্রাসঙ্গিকভাবেও তিনি ‘হ মিয়া’ কথাটা বলতেন।
এই কৃতী মানুষদের কথার চলন বা বিশেষ অভ্যাসগুলোই ছিল তাদের মুদ্রাদোষ। সেই মুদ্রাদোষগুলো একটা সময়ে আমাদের জীবনকে ঋদ্ধ করেছিল বলেই মনে হয় এখন। কত আড্ডা আর আলোচনায় এ প্রসঙ্গগুলো ঘুরেফিরে আসে আজও। অন্য রকম এক হাওয়া তোলে মনের মধ্যে। এই শহরের জীবন প্রবাহ এখন সেই মুদ্রাদোষগুলোকেই হারিয়ে ফেলেছে যেন।
ছুটির সকালে মর্নিংওয়াক করতে বের হন সালাম সাহেব। বাসা ফার্মগেট। হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলেন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সেচ ভবনের কাছে। হাঁটা শেষে ফুটপাতে টাটকা সবজির বাজারে চোখ আটকায় তার। অন্যান্য বাজারের চেয়ে সবজিগুলো বেশ তরতাজা। তাই মর্নিংওয়াক থেকেই শুক্রবারের বাজারটা সেরে ফেলেন এখান থেকেই।
এটা কোনো স্থায়ী বাজার নয়। সপ্তাহের এক দিন কয়েক ঘণ্টার জন্য বসে ‘কৃষকের বাজার’ নামে পরিচিত এ বাজার। এ বাজারের বিশেষত্ব এখানেই। এ বাজারে কৃষক সরাসরি তার পণ্য বিক্রি করতে আনতে পারেন। বাজারে পণ্য আনতে কাউকে কোনো খাজনা দিতে হয় না। উপরন্তু হাটে পণ্য আনতে এবং সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার বাবদ ১ হাজার করে টাকাও দেয় বাজার কর্র্তৃপক্ষ।
রাজধানীতে জনপ্রিয় হচ্ছে কৃষকের বাজার। দিন দিন বাড়ছে ক্রেতাদের আনাগোনা। প্রতিটি বাজারে বিক্রি বাড়ছে। বাড়ছে কৃষকের সংখ্যাও। এ বাজারগুলোতে গড়ে ৬০০-৮০০ ক্রেতা তাদের পছন্দ অনুযায়ী মাছ, মাংস, সবজিসহ অন্যান্য পণ্য কিনছেন।
কৃষকরা জানান, কয়েক ঘণ্টায় ১০-১২ লাখ টাকার লেনদেনও হচ্ছে এ বাজারে।
কৃষকরা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, প্রতি শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে কৃষকের বাজার শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিটি বাজারে কৃষক নিজেদের উৎপাদিত ফসল বৃহস্পতিবার রাত ৪টার আগেই নিজেদের নির্ধারিত জায়গায় বসে যান। ফজরের নামাজের পর ভোরে আলো পড়তে থাকলে বেচাবিক্রি শুরু হয়। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলে দেদার। তারপর কেনাবেচা কমতে থাকে। কৃষকের আনা পণ্যও কমতে থাকে। বেলা ৩টার মধ্যে সব পণ্য শেষ করে কৃষক বাড়ি ফেরেন। তারা বলেছেন, এ বাজার কর্র্তৃপক্ষ কৃষকের কাছ থেকে খাজনাবাবদ কোনো টাকা নেয় না। সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার ও মালামাল পরিবহনের জন্য ১ হাজার করে টাকাও দেয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, এমবাসি অব দ্য কিংডম অব দ্য নেদারল্যান্ডস, সিটি করপোরেশন এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে রাজধানীর ২০২১ সালের জুন মাসে প্রথম কৃষকের বাজার কর্মসূচি শুরু হয়েছিল মিরপুর ৬ নম্বরে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়েছে বাজারের সংখ্যা। বর্তমানে ইস্কাটন গার্ডেন রোড রূপনগর, পল্লবী, কামরাঙ্গীরচর, টিকাটুলী, খিলগাঁও, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুরের আদাবর ও মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি, আজিমপুর ও হাজারীবাগসহ ঢাকায় ১২টি, নারায়ণগঞ্জে দুটি ও গাজীপুরে দুটিসহ ১৬টি জায়গায় কৃষকের ও কৃষকের বাজার রয়েছে। এ ছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ও হরটেক্স ফাউন্ডেশন এ বাজার পরিচালনা করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে বাজার চালু হয়।
জাতীয় সংসদ ভবনের উল্টো দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সেচ ভবনের পাশ ঘেঁষে বসা কৃষকের বাজারে কথা হয় জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত হবিগঞ্জ মাধবপুরে কৃষক আবদুল বাসেত বদু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার সবজি শতভাগ নিরাপদ। জৈব সার ছাড়া অন্য কোনা সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। এখানে আমার বিক্রিও ভালো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমার সবজি খেয়েছেন।’
মুন্সীগঞ্জের কৃষক নুর ইসলাম বলেন, ‘এ বাজারে ৩০ জন কৃষক বসেন। সবাই সবার সেরাটাই এখানে নিয়ে আসে। কেউ ২০ হাজার টাকার সবজি নিয়ে এলে ২৫ হাজার বিক্রি হয়। কেউ আরও বেশি টাকার সবজি নিয়ে আসে। কারও সবজির সঙ্গে দামি ফলও থাকে। তাদের বিক্রি হয় আরও বেশি। সব মিলিয়ে গড়ে প্রতি কৃষক ৩০-৪০ হাজার বিক্রি হয়। সে হিসাবে এ বাজারে ১০-১২ লাখ টাকা লেনদেন হয়।’
ইস্কাটন গার্ডেনের কৃষকের বাজার ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, লাউ, বেগুন, বথুয়াশাক, লালশাক, মরিচ, পেঁপে, শিমসহ প্রায় ৫০ ধরনের সবজি পাওয়া যায়। এ ছাড়া দেশি মুরগি, দুধ, ডিমও আছে। এ বাজারের সাভারের হেমায়েতপুরের কৃষক শাজাহান মিয়া বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করি। এমনকি গ্রামের অন্য কৃষকের বিক্রিযোগ্য সবজি ন্যায্য দাম দিয়ে নিয়ে আসি। বিক্রি ভালো হয়। বাজার এখানে ভালোই চলছে। লাভও হয় মোটামুটি। এখানে বসার জন্য টাকা লাগে না, সবজি পরিবহনের কোনো খরচ দিতে হয়। সকালের নাশতা এমনকি দুপুরের খাবারের জন্য ১০০০ টাকা দেয় বাজার কর্র্তৃপক্ষ। সেটাই আমাদের লাভ। আমাদের এখানে ন্যায্য দামে সবকিছু পাওয়া যায়।’
বাজার করতে আসা ক্রেতা আসিফা সুলতানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শুরুতে ৮ থেকে ১০ জন কৃষকের দোকান ছিল। এখন ২৫ থেকে ৩০ জন আসেন। এখানে সবজি থেকে শুরু করে নানা জাতের দেশি ফলও পাওয়া যায়। মৎস্য অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ মাছের দোকানও আছে। আগে কখনো বাজারে যায়নি। বাসার কাছে বাজার পেয়ে আসা। এখানে ন্যায্যমূল্যে সবকিছু পাওয়া যায়।’ মগবাজারের তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারের সবজির মান ভালো।’
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ রকম কৃষকের বাজার যত বাড়বে, তত ভালো। যদি প্রতিদিন বসে তাহলে আরও ভালো। তবে বাজারে প্রকৃত কৃষক তার সবজি নিয়ে আসছে কি না সেটা নজরদারিতে রাখতে হবে। ক্রেতারা যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য পায় তাহলে কোনো কথাই থাকে না। এরকম বাজার বাড়লে অন্য বাজারে কোনো প্রভাব পড়ার কথা নয়।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ আরিফ মো. মোজাক্কের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কৃষি বাজারে আমাদের কাজ শুধু প্রকৃত কৃষক নির্বাচন করে দেওয়া। সবার সবজির মান খুবই ভালো। এর বাইরে আমরা কোনো কাজ করি না। তবে আমাদের সঙ্গে অন্যান্য যে প্রতিষ্ঠান যুক্ত তারা বাজার বৃদ্ধির ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে।’
রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল বাশার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইস্কাটন গার্ডেনের বাজারে সাভারের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকের উৎপাদিত শাকসবজি, ফলমূল, দুধ-ডিম, হাঁস-মুরগি, মাছ আনা হয়। এ বাজার আমার এলাকায় সাড়া ফেলেছে। এখানে কৃষক ফ্রিতে সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার ও মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা করে থাকে বাজার কর্তৃপক্ষ।’
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
সফররত চীনের ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা, কানেকটিভিটি, ইন্দো-প্যাসিফিক ও বৈশ্বিক উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনলাইন জুয়া এবং মাদক পাচারের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষমতা তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। আর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও চীনের পররাষ্ট্র সচিবপর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ওয়েইডংয়ের দুই দদফা বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন চীনা ভাইস মিনিস্টার। তবে বৈঠক শেষে ঢাকা কিংবা চীন কোনো পক্ষই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেনি।
বৈঠক শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা থেকে পররাষ্ট্র সচিব ও চীনা ভাইস মিনিস্টার প্রতিনিধিদল নিয়ে বের হন। সেখান থেকে ওয়েইডং যান পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে। সেখানে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তরের সামনে চীনের একটি প্রতিনিধিদল পদ্মা সেতু নিয়ে ভাইস মিনিস্টারকে চায়নিজ ভাষায় বিস্তারিত ব্রিফ করেন। ব্রিফ শেষে গাড়ি নিয়ে পদ্মা সেতুতে ওঠেন ওয়েইডং এবং তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধিদল। সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনতো।
রোহিঙ্গা ইস্যু : বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব উঠেছে। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে মধ্যস্থতাকারী দেশ হিসেবে কাজ করে আসছে চীন। ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডংয়ের সফর মূলত গত ১৮ এপ্রিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ-চীন বৈঠকের ফলোআপ। একই সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, নিরপেক্ষ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ইতিমধ্যে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সমঝোতা করাতে পেরেছে চীন। এরপর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রমাণ করতে পারলে সেটি চীনের জন্য ভালো একটি অর্জন হবে। সেজন্য চীনের বিশেষ আগ্রহ আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া তারা এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা চায়।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বৈঠকে ভাইস মিনিস্টার উল্লেখ করেন, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ ও মিয়ানমার এবং সমগ্র অঞ্চলের জন্য উপকার হবে। পাইলট প্রজেক্টের প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের সুবিধার্থে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নিজ নিজ প্রতিনিধিদের মিয়ানমারে “যান এবং দেখুন” এবং বাংলাদেশে “আসুন এবং কথা বলুন” সফরের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে চীনা পক্ষ।’
জিডিআই : বৈঠকে চীনের নতুন বৈশ্বিক উদ্যোগ গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভে (জিডিআই) বাংলাদেশকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গত বছরের আগস্টে চীনের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ঢাকা সফরের সময় জিডিআই বিষয়ে বাংলাদেশকে অবহিত করেন। জিডিআই উদ্যোগে বাংলাদেশ যুক্ত হোক, চীন এটি চায় এবং এ বিষয়ে তারা বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় আলোচনা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, উভয় পক্ষ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের পৃষ্ঠপোষকতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সংযোগে বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। উভয় পক্ষ বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে নিয়মিত স্টাফপর্যায়ের আলোচনা ও বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছে।
দুই দেশের মধ্যে সফর করার প্রস্তাব : উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফরে চীনের আগ্রহের বিষয়টি নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেছিলেন। এরপর আর কোনো উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক সফর হয়নি। এ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে বেইজিং কর্র্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, সান ওয়েইডংকে গত নভেম্বরে এশিয়াবিষয়ক ভাইস মিনিস্টার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর আগে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকায় ভাইস মিনিস্টার হিসেবে এটি তার প্রথম সফর। তবে ১০ বছর আগে তিনি ভিন্ন পদে বাংলাদেশ সফর করেছেন।
আজ রবিবার চীনের ভাইস মিনিস্টার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। গত শুক্রবার রাতে প্রতিনিধিদল নিয়ে ঢাকায় পৌঁছান চীনের ভাইস মিনিস্টার ওয়েইডং। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক অনুবিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান এবং ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে চীনা ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং উল্লেখ করেন, তিনি ১০ বছর পর বাংলাদেশ সফর করছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অর্জন দেখে খুবই মুগ্ধ। উভয় প্রতিনিধিদল পারস্পরিক স্বার্থ এবং বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছে। চীনা পক্ষ ‘এক চীননীতি’তে অব্যাহত সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের প্রতি তাদের কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা সাম্প্রতিক উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক বৈঠক বিনিময় স্মরণ করেছেন, যা সহযোগিতার কৌশলগত অংশীদারত্বকে আরও গভীর করেছে।
এতে আরও বলা হয়, বৈঠকে কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় চীনের টিকা সহায়তার জন্য বাংলাদেশ আবারও ধন্যবাদ জানিয়েছে। উভয় পক্ষ বাংলাদেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে। এ সময় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগের মতো মেগা প্রকল্পের আসন্ন উদ্বোধনকে স্বাগত জানায় চীন।
উভয় পক্ষই বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে কয়েকটি অতিরিক্ত প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছে। এ ছাড়া গত বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া ৯৮ শতাংশ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা ব্যবহার করে চীনে রপ্তানি বাড়ানোর উপায় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনা পক্ষ গ্রীষ্মকালীন ফল আমদানিতে বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল, পেয়ারা এবং হিমায়িত খাবার আমদানিতে আগ্রহী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা কমাতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধার আওতায় শাকসবজি, ওষুধ, কাঁচা চামড়া, ফুটওয়্যার, পোশাক ইত্যাদির মতো অন্যান্য রপ্তানি আইটেম অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, চীনা ভাইস মিনিস্টার চট্টগ্রামে চীনা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনা কোম্পানির বিনিয়োগে উৎসাহিত করার আশ্বাস দেন। তারা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-গুয়াংঝু সরাসরি ফ্লাইট আবার চালুর জন্য চীনা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে সময়মতো আলোচনার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা-সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে উভয় পক্ষ নিয়মিত কনস্যুলার পরামর্শ চালু করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং বায়োটেকনোলজিতে উদ্ভাবনের বিষয়ে চীনের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এতে আরও বলা হয়, জননিরাপত্তা ইস্যুতে সংলাপ আয়োজনে দুই পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আবহাওয়া স্যাটেলাইটের তথ্য শেয়ার করার জন্য বাংলাদেশ চীনকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। চীনা পক্ষ বাংলাদেশ থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই এবং স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।