
ছুটির সকালে মর্নিংওয়াক করতে বের হন সালাম সাহেব। বাসা ফার্মগেট। হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলেন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সেচ ভবনের কাছে। হাঁটা শেষে ফুটপাতে টাটকা সবজির বাজারে চোখ আটকায় তার। অন্যান্য বাজারের চেয়ে সবজিগুলো বেশ তরতাজা। তাই মর্নিংওয়াক থেকেই শুক্রবারের বাজারটা সেরে ফেলেন এখান থেকেই।
এটা কোনো স্থায়ী বাজার নয়। সপ্তাহের এক দিন কয়েক ঘণ্টার জন্য বসে ‘কৃষকের বাজার’ নামে পরিচিত এ বাজার। এ বাজারের বিশেষত্ব এখানেই। এ বাজারে কৃষক সরাসরি তার পণ্য বিক্রি করতে আনতে পারেন। বাজারে পণ্য আনতে কাউকে কোনো খাজনা দিতে হয় না। উপরন্তু হাটে পণ্য আনতে এবং সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার বাবদ ১ হাজার করে টাকাও দেয় বাজার কর্র্তৃপক্ষ।
রাজধানীতে জনপ্রিয় হচ্ছে কৃষকের বাজার। দিন দিন বাড়ছে ক্রেতাদের আনাগোনা। প্রতিটি বাজারে বিক্রি বাড়ছে। বাড়ছে কৃষকের সংখ্যাও। এ বাজারগুলোতে গড়ে ৬০০-৮০০ ক্রেতা তাদের পছন্দ অনুযায়ী মাছ, মাংস, সবজিসহ অন্যান্য পণ্য কিনছেন।
কৃষকরা জানান, কয়েক ঘণ্টায় ১০-১২ লাখ টাকার লেনদেনও হচ্ছে এ বাজারে।
কৃষকরা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, প্রতি শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে কৃষকের বাজার শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিটি বাজারে কৃষক নিজেদের উৎপাদিত ফসল বৃহস্পতিবার রাত ৪টার আগেই নিজেদের নির্ধারিত জায়গায় বসে যান। ফজরের নামাজের পর ভোরে আলো পড়তে থাকলে বেচাবিক্রি শুরু হয়। সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বেচাকেনা চলে দেদার। তারপর কেনাবেচা কমতে থাকে। কৃষকের আনা পণ্যও কমতে থাকে। বেলা ৩টার মধ্যে সব পণ্য শেষ করে কৃষক বাড়ি ফেরেন। তারা বলেছেন, এ বাজার কর্র্তৃপক্ষ কৃষকের কাছ থেকে খাজনাবাবদ কোনো টাকা নেয় না। সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার ও মালামাল পরিবহনের জন্য ১ হাজার করে টাকাও দেয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রকল্পের আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, এমবাসি অব দ্য কিংডম অব দ্য নেদারল্যান্ডস, সিটি করপোরেশন এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে রাজধানীর ২০২১ সালের জুন মাসে প্রথম কৃষকের বাজার কর্মসূচি শুরু হয়েছিল মিরপুর ৬ নম্বরে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বাড়ানো হয়েছে বাজারের সংখ্যা। বর্তমানে ইস্কাটন গার্ডেন রোড রূপনগর, পল্লবী, কামরাঙ্গীরচর, টিকাটুলী, খিলগাঁও, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুরের আদাবর ও মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটি, আজিমপুর ও হাজারীবাগসহ ঢাকায় ১২টি, নারায়ণগঞ্জে দুটি ও গাজীপুরে দুটিসহ ১৬টি জায়গায় কৃষকের ও কৃষকের বাজার রয়েছে। এ ছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন ও হরটেক্স ফাউন্ডেশন এ বাজার পরিচালনা করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে বাজার চালু হয়।
জাতীয় সংসদ ভবনের উল্টো দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের সেচ ভবনের পাশ ঘেঁষে বসা কৃষকের বাজারে কথা হয় জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত হবিগঞ্জ মাধবপুরে কৃষক আবদুল বাসেত বদু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার সবজি শতভাগ নিরাপদ। জৈব সার ছাড়া অন্য কোনা সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। এখানে আমার বিক্রিও ভালো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমার সবজি খেয়েছেন।’
মুন্সীগঞ্জের কৃষক নুর ইসলাম বলেন, ‘এ বাজারে ৩০ জন কৃষক বসেন। সবাই সবার সেরাটাই এখানে নিয়ে আসে। কেউ ২০ হাজার টাকার সবজি নিয়ে এলে ২৫ হাজার বিক্রি হয়। কেউ আরও বেশি টাকার সবজি নিয়ে আসে। কারও সবজির সঙ্গে দামি ফলও থাকে। তাদের বিক্রি হয় আরও বেশি। সব মিলিয়ে গড়ে প্রতি কৃষক ৩০-৪০ হাজার বিক্রি হয়। সে হিসাবে এ বাজারে ১০-১২ লাখ টাকা লেনদেন হয়।’
ইস্কাটন গার্ডেনের কৃষকের বাজার ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, লাউ, বেগুন, বথুয়াশাক, লালশাক, মরিচ, পেঁপে, শিমসহ প্রায় ৫০ ধরনের সবজি পাওয়া যায়। এ ছাড়া দেশি মুরগি, দুধ, ডিমও আছে। এ বাজারের সাভারের হেমায়েতপুরের কৃষক শাজাহান মিয়া বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকেলে ক্ষেত থেকে সবজি সংগ্রহ করি। এমনকি গ্রামের অন্য কৃষকের বিক্রিযোগ্য সবজি ন্যায্য দাম দিয়ে নিয়ে আসি। বিক্রি ভালো হয়। বাজার এখানে ভালোই চলছে। লাভও হয় মোটামুটি। এখানে বসার জন্য টাকা লাগে না, সবজি পরিবহনের কোনো খরচ দিতে হয়। সকালের নাশতা এমনকি দুপুরের খাবারের জন্য ১০০০ টাকা দেয় বাজার কর্র্তৃপক্ষ। সেটাই আমাদের লাভ। আমাদের এখানে ন্যায্য দামে সবকিছু পাওয়া যায়।’
বাজার করতে আসা ক্রেতা আসিফা সুলতানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শুরুতে ৮ থেকে ১০ জন কৃষকের দোকান ছিল। এখন ২৫ থেকে ৩০ জন আসেন। এখানে সবজি থেকে শুরু করে নানা জাতের দেশি ফলও পাওয়া যায়। মৎস্য অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ মাছের দোকানও আছে। আগে কখনো বাজারে যায়নি। বাসার কাছে বাজার পেয়ে আসা। এখানে ন্যায্যমূল্যে সবকিছু পাওয়া যায়।’ মগবাজারের তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারের সবজির মান ভালো।’
কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ রকম কৃষকের বাজার যত বাড়বে, তত ভালো। যদি প্রতিদিন বসে তাহলে আরও ভালো। তবে বাজারে প্রকৃত কৃষক তার সবজি নিয়ে আসছে কি না সেটা নজরদারিতে রাখতে হবে। ক্রেতারা যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য পায় তাহলে কোনো কথাই থাকে না। এরকম বাজার বাড়লে অন্য বাজারে কোনো প্রভাব পড়ার কথা নয়।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ আরিফ মো. মোজাক্কের দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কৃষি বাজারে আমাদের কাজ শুধু প্রকৃত কৃষক নির্বাচন করে দেওয়া। সবার সবজির মান খুবই ভালো। এর বাইরে আমরা কোনো কাজ করি না। তবে আমাদের সঙ্গে অন্যান্য যে প্রতিষ্ঠান যুক্ত তারা বাজার বৃদ্ধির ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে।’
রাজধানীর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল বাশার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইস্কাটন গার্ডেনের বাজারে সাভারের বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষকের উৎপাদিত শাকসবজি, ফলমূল, দুধ-ডিম, হাঁস-মুরগি, মাছ আনা হয়। এ বাজার আমার এলাকায় সাড়া ফেলেছে। এখানে কৃষক ফ্রিতে সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার ও মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা করে থাকে বাজার কর্তৃপক্ষ।’
ভেতরে দল গোছানোর পাশাপাশি নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নিবন্ধন বাতিল হলেও একাদশ সংসদের মতো আগামী নির্বাচনেও অংশ নেবে দলটি। যদিও জামায়াতের নেতারা বলছেন, তাদের দল বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না।
জামায়াতের জোরেশোরে নির্বাচন প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে দলটির নেতারা দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, জামায়াত নির্বাচনমুখী একটি রাজনৈতিক দল। সব সময়ই মাঠপর্যায়ে প্রার্থী যাচাই-বাছাই চলে। ইতিমধ্যে তারা ১২০টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে।
জামায়াত আগামীতে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপির মতো কোনো দলের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হবে না দাবি করে ওই নেতারা বলেন, একক নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে জামায়াত অংশ নেবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে সক্রিয় থাকবে।
জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়।’ তিনি বলেন, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তারা আন্দোলন করছেন। এ আন্দোলনকে সফল করার পর নির্বাচনের প্রসঙ্গটি আসবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৃণমূলে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে বেশি ব্যস্ত রয়েছেন দলটির নেতারা। দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছেন নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর জামায়াতের এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। তবে তা আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নয়। কারণ বর্তমান সরকারের অধীনে বিগত দিনে যে দুটি সংসদ নির্বাচন হয়েছে তাতে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। আগামী নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনে হলে সে নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারবে না। সে জন্য আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না।’
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচির দুটিতে অংশ নিলেও পরে জামায়াত আর বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে নেই। বিএনপিও আপাতত জামায়াতের সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি অধ্যুষিত হিসেবে পরিচিত বগুড়ার সাতটি আসনের মধ্যে পাঁচটিতেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। অন্য দুটিতেও প্রস্তুতি শুরু করেছে জামায়াত। প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে বিভিন্ন আসনে জরিপ পরিচালনা করছে দলটি। জরিপের রিপোর্ট অনুযায়ী দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি দেশের বিভিন্ন আসনে প্রার্থী নির্বাচন করতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলায় আসন এবং প্রার্থীর নাম নির্বাচন করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের মাঠে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পাঁচ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ ইজ্জত উল্লাহ। আরও রয়েছেন দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আজাদ ও সাবেক শিবির সভাপতি ইয়াসিন আরাফাত। যেসব উপজেলায় দলটির চেয়ারম্যান কিংবা ভাইস চেয়ারম্যান আছে সেসব নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
১৯৮৬ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ৭৬টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছিল। ওই নির্বাচনে দলটি ১০টি আসনে বিজয়ী হয়। ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াত ১৮টি আসনে বিজয়ী হয়। এই নির্বাচনে দলটি ২২২ জন প্রার্থী দিয়েছিল।
১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত তিনটি আসনে জয়ী হয়। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে জামায়াত ১৭টি আসন পায়। মহিলা আসনগুলো থেকে চারটি আসনে জয়ী হয় তারা। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াত দুটি আসনে বিজয়ী হয়। ওই নির্বাচনে দলটি জোটগতভাবে ৩৯টি ও চারটিতে এককভাবে নির্বাচন করে।
২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বরে জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছিল। ২০০৯ সালে হাইকোর্টে দায়ের করা রিট মামলার রায়ে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। সে কারণে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে।
এদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে, নতুন নামে রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াত। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি (বিডিপি) নামে একটি দলের নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করা হয়েছে, যার সব নেতাই জামায়াতের। নতুন এ দলের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন ডেমরা থানা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম চান এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার কর্মপরিষদ সদস্য ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা মো. কাজী নিজামুল হক। আনোয়ারুল ইসলাম চান নির্বাচন কমিশনে আবেদন জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
নতুন দলের নামে নিবন্ধন চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান আকন্দ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। জামায়াতবিরোধী শক্তি এ ধরনের খবর প্রচার করছে।’
শেষ হয়ে আসছে প্রাণের বইমেলা। গতকাল ছিল মেলার শেষ শুক্রবার। বৃহস্পতিবার রাতে উড়ো চিঠিতে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম বইমেলায় হামলার হুমকি ছিল। তবে সবকিছু তোয়াক্কা না করেই গতকাল শুক্রবার বইমেলায় ছিল পাঠক-লেখকের উপচেপড়া ভিড় ছিল। এদিন পাঠকদের নতুন নতুন বই কিনতে দেখা গেছে। বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা মেলার চলমান ছয় ঘণ্টার পুরোটা জুড়েই ছিল বই বিক্রি। বেশিরভাগ পাঠকের হাতে ছিল এতদিন সংগ্রহ করা বিভিন্ন প্রকাশনীর নতুন বইয়ের ক্যাটালগ। আগেভাগে সংগ্রহ করে রাখা সেসব ক্যাটালগ থেকে বেছে তৈরি করা তালিকা ধরে কেনাকাটা শুরু করেছেন বইপ্রেমীরা। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় মেলা শেষ হওয়ার আগপর্যন্ত বইপ্রেমী পাঠকদের এ ভিড় ও বিক্রি থাকবে।
এদিকে অমর একুশে বইমেলায় বোমা হামলার হুমকির পর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক নূরুল হুদা গতকাল গণমাধ্যমে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসব বিষয় বন্ধের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা নিরাপত্তার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করেছি। শাহবাগ থানায় জিডি করা হয়েছে।
গতকাল মেলায় কথা হয় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জুনায়েদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি মেলায় এসে সংগ্রহ করেছেন বইয়ের ক্যাটালগ। সেখান থেকে বাছাইকৃত বই কিনতে ছুটে এসেছেন শুক্রবার ছুটির দিন। তিনি বলেন, আমি একটু বেছে বই কিনি। যেসব বইকে মানুষ ‘সিরিয়াস’ বই বলে, সেগুলোর প্রতি আমার ঝোঁক বেশি।
অবসর প্রকাশনা সংস্থার ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ রানা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজ (গতকাল) বইমেলার শেষ শুক্রবার। বইমেলায় লোকসমাগম অনেক বেশি। বিক্রিও সন্তোষজনক। এখন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত চলবে এমন বই বিক্রি, এমনটা আশা করছি।
বইমেলায় বোমা হামলার শঙ্কায় পাঠক মনে ভয় দেখা গিয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বোমা হামলার শঙ্কার বিষয়ে পাঠকদের মনে বিন্দুমাত্র আতঙ্কের ছাপ দেখা যায়নি। বরং শেষ মুহূর্তে পাঠকরা তালিকা ধরে ধরে বই কিনতে এসেছে। আজ (গতকাল) সকালে শুরুর দিকে এমন কয়েকজন পাঠককে দেখতে পেয়েছি। এমন পাঠকরা একটু নিরিবিলিতে বই কিনতে পছন্দ করে।
নতুন বই : গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার ২৪তম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। নতুন বই এসেছে ২৩৯টি। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল শিশুপ্রহর।
শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান : সকাল সাড়ে ১০টায় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, সভাপতিত্ব করেন নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার।
শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় ওয়াকিয়া নূর (প্রথম), আফফান আল হাসনাইন (দ্বিতীয়), রুজাইনাহ মারিফা (তৃতীয়); খ-শাখায় প্রত্যয় পাল রাজ (প্রথম), তাসনিয়াহ সিদ্দিক (দ্বিতীয়), শাফিন উদ্দিন আহম্মেদ (তৃতীয়); গ-শাখায় অর্নিলা ভৌমিক (প্রথম), আল মুমিনুর (দ্বিতীয়), জায়ীফা তাসনীম (তৃতীয়) স্থান লাভ করে।
শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় আরোহী বর্ণমালা (প্রথম), অংকিতা সাহা রুদ্র ((দ্বিতীয়), জুমানা হোসেন (তৃতীয়); খ-শাখায় সমৃদ্ধি সূচনা স্বর্গ (প্রথম), আনিশা আমিন (দ্বিতীয়), অদ্রিতা ভদ্র (তৃতীয়) এবং গ-শাখায় আদিবা সুলতানা (প্রথম), তাজকিয়া তাহরীম শাশা (দ্বিতীয়), সিমরিন শাহিন রূপকথা (তৃতীয়) স্থান লাভ করে।
শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতায় ক-শাখায় নীলান্তী নীলাম্বরী তিতির (প্রথম), অন্বেষা মজুমদার (দ্বিতীয়), সার্থক সাহা (তৃতীয়); খ-শাখায় রোদোসী নূর সিদ্দিকী (প্রথম), তানজিম বিন তাজ প্রত্যয় (দ্বিতীয়), মৈত্রেয়ী ঘোষ (তৃতীয়) স্থান লাভ করে।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় আধুনিকতা, উত্তর-আধুনিকতা ও পরবর্তীকালের সাহিত্যতত্ত্ব শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাসুদুজ্জামান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নিরঞ্জন অধিকারী, এজাজ ইউসুফী, বিপ্লব মোস্তাফিজ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাশিদ আসকারী।
প্রাবন্ধিক বলেন, বিশ্বে সাহিত্যতত্ত্ব নিয়ে রচিত গ্রন্থের সংখ্যা বিপুল। এর কারণ তত্ত্ব সম্পর্কে পৃথিবীর সব প্রান্তেই লেখক, পাঠক ও সমালোচকদের রয়েছে অনিঃশেষ আগ্রহ। মানবিক কর্মকান্ড যত বাড়ছে, নতুন নতুন বিষয়ের আবির্ভাব ঘটছে, তত্ত্বের পরিসরও তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তত্ত্বচর্চার মধ্য দিয়েই আত্মপরিচয়ের বিনির্মাণ, লৈঙ্গিক পার্থক্যের অপসারণ, নিম্নবর্গের মানুষকে আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা চলছে। বৈশ্বিকভাবে আজ অবধি যত তত্ত্বের আবির্ভাব ঘটেছে তার মধ্যে আধুনিকতা, উত্তর-আধুনিকতা, উত্তর-উপনিবেশবাদ খুবই শক্তিশালী প্রভাব বজায় রেখেছে।
আলোচকবৃন্দ বলেন, আধুনিকতা, উত্তর-আধুনিকতা এবং পরবর্তীকালের সাহিত্যতত্ত্বের পটভূমি অনেক বিস্তৃত। পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি ভাষার সাহিত্যে এসব তত্ত্ব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। রাজনৈতিক চিন্তা, সামাজিক চিন্তা ও সাহিত্যিক চিন্তা থেকেই মানবতাবাদী চিন্তক ও তাত্ত্বিকরা সময়োপযোগী তত্ত্বের বিকাশ ঘটান। আজ তত্ত্ব, তাত্ত্বিক বয়ান ও তাত্ত্বিক বিতর্কের কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে গেছে সাহিত্য ও সংস্কৃতি। সেই কারণে শুধু সাহিত্যকে কেন্দ্র করেই উদ্ভব ঘটেছে বিভিন্ন তত্ত্বের।
সভাপতির বক্তব্যে রাশিদ আসকারী বলেন, একুশ শতকে শিক্ষার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো সমালোচনামূলক ও বিশ্লেষণধর্মী মানসিকতা সৃষ্টি। এ জন্য গভীর ও তাৎপর্যপূর্ণ এসব তত্ত্বকে বিদ্যায়তনিক সীমার বাইরে এনে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। প্রতিটি বিষয়কেই তাত্ত্বিক চিন্তার আলোকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গ্রহণ করতে হবে।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি : আজ শনিবার, অমর একুশে বইমেলা ২৫তম দিন। মেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
শিশুপ্রহর : আজ বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মেলায় শিশুপ্রহর চলবে।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে কভিড-১৯ : ভাষার বৈশ্বিকতা ও বাংলাদেশের সাহিত্য এবং কভিড-১৯ : সংস্কৃতির সংকট ও রূপান্তর শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন হাকিম আরিফ এবং মোহাম্মদ শেখ সাদী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন পারভেজ হোসেন, হামীম কামরুল হক, কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী এবং আবুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন রফিকউল্লাহ খান।
বইয়ের টানে রাজধানীর মহাখালী থেকে অমর একুশে বইমেলায় এসেছেন ইতি আক্তার। তার প্রিয় লেখকদের তালিকায় রয়েছেন সৈয়দ শামসুল হক, আহমদ ছফা ও ড. আকবর আলি খান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন বইয়ের খোঁজে মেলায় ছুটে এসেছি।
গতকাল অমর একুশে বইমেলার শেষ শুক্রবারে মেলা প্রাঙ্গণে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে পাঠক ইতির আলাপ হলে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতেই বইমেলা নিয়ে একটি জঙ্গি সংগঠনের হুমকির কথা জানতে পেরেছি। এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কেমন বই চান জানতে চাইলে তিনি বলেন, মননশীল সৃজনশীল মানসম্মত বই চাই। মেলায় এ ধরনের বই তুলনামূলক কম বলে আমি মনে করি।
বইমেলা নিয়ে তিনি বলেন, মেলায় লেখকদের কাছ থেকে অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য একটা আলাদা অটোগ্রাফ চত্বর থাকলে ভালো হতো। সবাই সেখানে লাইন ধরে প্রিয় লেখকের কাছ থেকে অটোগ্রাফ নিতে পারত।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষক রায়হান রাইন কবিতা, গবেষণা, গল্প-উপন্যাস লেখায় সমান সক্রিয়। এবার বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে তার ৭৬ গল্প নিয়ে ‘কয়েকটি সাদা কাঠগোলাপ’। প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। ‘বাংলার সুফিয়ানা ও সহজিয়ানা’ নামে গবেষণার বই প্রকাশ করেছে বাতিঘর।
আপনার বইয়ের পাঠক কারা জনাতে চাইলে রায়হান রাইন বলেন, ‘আমার বই পড়েছেন এমন যাদের চিনি, তাদের প্রায় সবাই নিজেরাও লেখক। তবে গবেষণাধর্মী লেখাগুলো, বিশেষ করে বাংলার দর্শন নিয়ে বইগুলো অনেকেই পড়েন।যাদের মধ্যে শিক্ষক, গবেষক বা শিক্ষার্থীরা রয়েছেন। এর বাইরেও নিশ্চয়ই পড়েন কেউ কেউ।’
বাংলাদেশের সাহিত্যের পাঠক নিয়ে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে লেখক বলেন, ‘জেলা শহরগুলোর পাবলিক লাইব্রেরি এবং সৃজনশীল বইয়ের দোকানগুলোর অবস্থা দেখে মনে হয়, সাহিত্যের পাঠকের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সূত্রে দেখতে পাই, পাঠ্যপুস্তক পড়েন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যাও খুব কম। বেশির ভাগই নোটবই বা হাতে লেখা নোট পড়ে পরীক্ষা দেন। সামনে একটা নোটবই পড়া প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে দেখতে পাচ্ছি। তারা সাহিত্যিকদের নাম মুখস্থ করেন চাকরির পরীক্ষার প্রস্তু‘তি হিসেবে।’
রায়হান রাইন পাঠকের ওপর নিজের লেখার প্রভাব খেয়াল করে দেখেননি জানিয়ে বলেন, ‘পাঠকের ওপর লেখার কী প্রভাব পড়ছে, সেটা দেখতে পাওয়াও সহজ ব্যাপার না।’
পাঠকের সঙ্গে লেখক হিসেবে কোনো স্মৃতি? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম উপন্যাস একটা ঈদসংখ্যায় বেরিয়েছিল মিথুনের রাশিফল নামে, বছর দশেক আগে। সেটা পড়ে এক পাঠক ধরে নিয়েছিলেন, এর লেখক একজন বুড়ো মানুষ। আমার সঙ্গে তার দেখা হওয়ার পর তিনি সেটা বললেন। ভাবলাম, তার সঙ্গে দেখা না হয়ে গেলে, তার মনের ভেতর সেই সময় থেকেই আমাকে থাকতে হতো একজন বুড়ো মানুষ হয়ে। এই উপন্যাসের প্রুফ দেখা শেষ করে একজন প্রুফ রিডার ফোন করেছিলেন। পরে ফোন করেছেন অনেকেই। কিন্তু প্রুফ রিডারের কথা বলার ভঙ্গির মধ্যে এমন একটা কিছু ছিল, যেটা আমার মনে থেকে গেছে। ‘কথাপুষ্প: প্রজ্ঞাবানদের বলা গল্প’ নামের বইটা পড়ে এক পাঠক আমাকে খুঁজে বের করে বললেন, ‘আপনাকে ধন্যবাদ, আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন।’
রায়হান রাইনের জন্ম ১৯৭১ সালের ৮ মার্চ, সিরাজগঞ্জে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর করেছেন। তার আরও উপন্যাস: ‘আগুন ও ছায়া’; গল্পের বই: ‘আকাশের কৃপাপ্রার্থী তরু’, ‘পাতানো মায়ের পাহাড়’, ‘স্বপ্নের আমি ও অন্যরা’; কবিতার বই: ‘তুমি ও সবুজ ঘোড়া’, ‘একদিন সুবচনী হাঁস’। অনুবাদ করেছেন মনসুর আল-হাল্লাজের ‘কিতাব আল-তাওয়াসিন’ (২০১০), পাবলো নেরুদার ‘প্রশ্নপুস্তক’। এ ছাড়া সম্পাদনা করেছেন ‘বাংলার ধর্ম ও দর্শন’।
তার ‘আগুন ও ছায়া’ উপন্যাসটি ২০১৪ সালে ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই’ হিসেবে পুরস্কৃত হয়।
‘স্মৃতি যেন কোনো অবলুপ্ত স্থাপত্যের জলমগ্ন সিঁড়ি’। কোনো একটি কবিতায় পেয়েছিলাম এই লাইনটা। কোন কবির লেখা, কী নাম কিছুই আর মনে পড়ে না। কিন্তু আজও মাথায় গেঁথে আছে স্মৃতি। গেঁথে আছে লাইনটির গভীর ব্যঞ্জনার অনুরণন। কোথায় কোনো পুরনো পুকুরে নিঃশব্দে জলের সবুজ অতলে ডুবে আছে অসংখ্য সিঁড়ি। সিঁড়িগুলোতে লেগে আছে অসংখ্য গল্প, লেগে আছে হাসি, কথা আনন্দিত সময়ের ঘ্রাণ। এসবের পুরোটা হয়তো বোঝা যায় না, মনেও পড়ে না। তবু কিছু দৃশ্যের টিকে থাকাটুকু টের পাওয়া যায়। স্মৃতি আমার কাছে এমনই। তলিয়ে যাওয়া বহু দৃশ্য, কথা আর মানুষের মুখচ্ছবি মিলেমিশে একটা বড় অস্তিত্ব হয়ে বেঁচে থাকে মনের মধ্যে।
তখন সস্তা সিগ্রেটের প্যাকেট পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াই এই ঢাকা শহরে। লেখালেখি করার চেষ্টা আর সাংবাদিকতা আমাকে ঘুরিয়ে মারছে বিভিন্ন পত্রিকা অফিস আর সাহিত্যিকদের ডেরায়। কাজ করি সাপ্তাহিক বিচিত্রা (এখন লুপ্ত) অফিসে। আমার সাংবাদিকতার জীবনে প্রথম সম্পাদক সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং শিল্পী শাহাদত চৌধুরী। শুধু সাংবাদিকতার তালিম নিয়েছি তার কাছে বললে ভুল বলা হবে। জীবনের বহু বাঁক চিনিয়েছিলেন তিনি আমাকে। মনের মধ্যে সেই বয়সে তৈরি করে দিয়েছিলেন ভিন্নভাবে বেঁচে থাকার স্পর্ধা। বিচিত্রা অফিসে নিয়মিত যেতাম। মতিঝিলের প্রায় কেন্দ্রে সেই অফিসটা সারা দিন মানুষের কলাহলে মুখর থাকত। শাহাদত ভাইকে দেখতাম নিজের দপ্তরে বসে ভাবতে আর কাজ করতে। তার একটা অদ্ভুত মুদ্রাদোষ বা অভ্যাস ছিল। তখন পৃথিবীতে কম্পিউটারের আবির্ভাব ঘটেনি। আমাদের লেখালেখির কাজটা করতে হতো সস্তা, লালচে একধরনের নিউজপ্রিন্ট কাগজের প্যাডে। শাহাদত ভাই যখন কোনো গভীর চিন্তায় ডুবে যেতেন অথবা পত্রিকার জন্য প্রচ্ছদ প্রতিবেদনের পরিকল্পনা করতেন, তিনি সেই প্যাডের একটার পর একটা সিøপ গভীর মগ্নতায় ছিঁড়তে থাকতেন। বিস্ময়কর হলো, ছেঁড়া প্যাডের পৃষ্ঠাগুলো প্রায় একই মাপে আড়াআড়িভাবে ছিঁড়ে ফেলতেন তিনি অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে। দিন শেষে তার চেয়ারের পাশে ছেঁড়া কাগজের স্তূপ জমা হয়ে যেত। মনে আছে, একবার অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখা আনমনে প্যাডের সিøপ ভেবে ছিঁড়ে ফেলেছিলেন তিনি। আনু মুহাম্মদ আশির দশকে সাপ্তাহিক বিচিত্রার একজন বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করতেন।
প্রখ্যাত দুই সাংবাদিক প্রয়াত নির্মল সেন ছিলেন আদি দৈনিক বাংলা পত্রিকার অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর। একটি রাজনৈতিক দল এবং সাংবাদিকদের নেতাও ছিলেন। কখনো তাকে মাড় দেওয়া সাদা পায়জামা, পাঞ্জাবির বাইরে অন্য কোনো পোশাক পরিধান করতে দেখিনি। সেই শুভ্র পোশাকের মতো তার জীবনটাও ছিল পরিচ্ছন্ন। শুদ্ধাচারী, অকৃতদার নির্মল সেনের অভ্যাস ছিল গুনগুন করে গান গাওয়া। প্রায়ই দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সাব এডিটরদের বসার জায়গাটায় তাকে দেখেছি টেবিলে মৃদু তাল ঠুকে গান গাইতে। বেশির ভাগ সময় যে গানটা তিনি গাইতেন তা ছিল, ‘তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদির নাম...’।
এ রকম গানের সুর গুনগুন করতেন দেশের আরেক প্রখ্যাত প্রয়াত সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খান। আলোচিত উইকলি হলিডে পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন তিনি। সাধারণত ছুটির দিনে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সকালবেলা আগমন ঘটত এনায়েতুল্লাহ খানের। উজ্জ্বল রঙের পাঞ্জাবি পরতেন। একা হেঁটে যখন ক্লাবে ঢুকতেন দেখতাম গাড়ির চাবির রিংটা আঙুলে ঘোরাচ্ছেন আর গুনগুন করে গান গাইছেন। সাংবাদিক মহলে একবার গল্প প্রচলিত হয়েছিল, একজন উদীয়মান সাংবাদিক এনায়েতুল্লাহ খানের আঙুলে গাড়ির চাবি ঘোরানোর ভঙ্গিটি নকল করতে গিয়ে বিপদে পড়েছিলেন। তার আঙুল থেকে গাড়ির চাবি ছিটকে পড়ে যায় আশপাশের অন্ধকারে। আর তাতে ঘটেছিল মহা বিপত্তি। এনায়েতুল্লাহ খান ক্লাবে ঢুকে বিখ্যাত ডালপুরি আর চা অর্ডার করতেন। কখনো গভীর মনোযোগে পত্রিকা পড়তেন অথবা আমাদের মতো তরুণ সাংবাদিকদের ডেকে দেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে কথা বলতেন।
কবি রফিক আজাদ ছিলেন ভীষণ আড্ডাপ্রিয় মানুষ। আশির দশকে সাপ্তাহিক রোববার পত্রিকায় সম্পাদকের দপ্তরে বা নগরীর চেনা পানশালায় অথবা সাহিত্যিকদের তুমুল আড্ডায় তাকে দেখা যেত অন্যমনস্ক মুহূর্তে আঙুল দিয়ে নিজের গোঁফ টানতে। সেটাই ছিল রফিক ভাইয়ের একটি মুদ্রাদোষ বা বিশেষ স্বভাব। দুই প্রান্ত থেকে অনেকটা থার্ড ব্রাকেটের মতো নেমে আসা গোঁফ টানতে টানতে তাকে বহুদিন দেখেছি নির্জন পানশালার চেয়ারে একা বসে ভাবছেন। কী ভাবতেন রফিক ভাই তখন? হয়তো কবিতার কোনো চরণ।
ছোটখাটো দৈহিক আকৃতির মানুষ ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রয়াত অধ্যাপক নরেন বিশ্বাস। আমি তার সরাসরি ছাত্র ছিলাম। ছন্দ আর অলংকার শেখানোর ক্লাসে লেকচার দেওয়ার সময় কথার মাঝখানে গুঁজে দিতেন একটি প্রশ্ন, ‘তোমরা বুঝতে পেরেছ তো?’ কেমন সুরেলা ভঙ্গিতে একটু টেনে কথাটা বলতেন। তখন তার মুখ রসস্থ হয়ে থাকত পানের নির্যাসে। কিছুদিন পরে বুঝেছিলাম সেটা ছিল স্যারের মুদ্রাদোষ। অসংখ্য বাংলা কবিতা ও ছড়া তার কণ্ঠস্থ ছিল। প্রতিটি বর্ণের ওপর বাড়তি জোর দিয়ে ক্লাসে দরাজ গলায় কবিতা আবৃত্তি করতেন তিনি। আর ছন্দের বারান্দায় হারিয়ে যেতে যেতে আমাদের উদ্দেশে ছুড়ে দিতেন সেই প্রশ্নটা।
বাংলাদেশের সাহিত্যে দুই কৃতী কথাশিল্পী মাহমুদুল হক আর বুলবুল চৌধুরী। দুজনই আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছেন চিরকালের মতো। তারা ব্যক্তিগত জীবনে একে অপরের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সময়টা ছিল আশির দশকের মাঝামাঝি। মাহমুদুল হকের ‘জীবন আমার বোন’ অথবা ‘পাতালপুরী’ উপন্যাস পাঠ-পরবর্তী মুগ্ধতায় ভুগি। এই অনন্য কথাশিল্পীর ডাক নাম ছিল বটু। সবাই তাকে এ নামেই সম্বোধন করতেন। হঠাৎ একদিন অগ্রজ বন্ধু ও সাংবাদিক সৈয়দ শহীদ পরিচয় করিয়ে দেন বটু ভাইয়ের সঙ্গে। দেখি লেখালেখি থেকে প্রায় নির্বাসিত বটু ভাই বায়তুল মোকাররমের একটি জুয়েলারি দোকানে বসে আছেন। তিনি সেখানে বসে আংটির পাথরের ব্যবসা করেন। খুব অবাক হয়েছিলাম বটু ভাইয়ের হাতে বিভিন্ন ধরনের পাথর বসানো আংটি দেখে। ওই আংটিগুলোই একদা বটু ভাইয়ের সিগনেচার হয়ে ওঠে। বুলবুল চৌধুরীর যেমন ছিলেন দেখা হলেই বলা, ‘হ মিয়া, বহেন।’ কোনো আড্ডায় দেখা হলেই বুলবুল ভাই প্রথমেই এ কথাটা বলতেন। তার পর সময় গড়ালে কথার মাঝখানে অপ্রাসঙ্গিকভাবেও তিনি ‘হ মিয়া’ কথাটা বলতেন।
এই কৃতী মানুষদের কথার চলন বা বিশেষ অভ্যাসগুলোই ছিল তাদের মুদ্রাদোষ। সেই মুদ্রাদোষগুলো একটা সময়ে আমাদের জীবনকে ঋদ্ধ করেছিল বলেই মনে হয় এখন। কত আড্ডা আর আলোচনায় এ প্রসঙ্গগুলো ঘুরেফিরে আসে আজও। অন্য রকম এক হাওয়া তোলে মনের মধ্যে। এই শহরের জীবন প্রবাহ এখন সেই মুদ্রাদোষগুলোকেই হারিয়ে ফেলেছে যেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হলের আসন দখল করে রাখার বিরুদ্ধে অনশনরত ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম প্রত্যয়সহ তাকে সমর্থন দেওয়া কয়েকজনের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।তারা বলেন, ওই স্থানে গত বুধবার রাত থেকে অনশনে ছিলেন প্রত্যয়। তাকে মারধরের পর অ্যাম্বুলেন্সে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যায় হামলায় জড়িতরা। এ সময় প্রত্যয়ের দাবির সঙ্গে সংহতি জানানো প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ওপরও হামলা হয়।
জানা গেছে, তিন দাবিতে গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের সামনের খেলার মাঠে অনশনে বসেন প্রত্যয়। তিনি ওই হলের আবাসিক ছাত্র। তার অন্য দুটি দাবি ছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করা ও হলের গণরুমে অবস্থান করা বৈধ ছাত্রদের আসন নিশ্চিত করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী এবং নবীন শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। ওই সময় ক্যাম্পাসে লোডশেডিং চলছিল। হঠাৎ করেই প্রত্যয়সহ তার সঙ্গে থাকা অন্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
হামলায় জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচী, মার্কেটিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের সৃষ্টি, চারুকলা বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের মনিকা, বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের ৪৮তম ব্যাচের সুরসহ আরও কয়েকজন আহত হন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে, হামলায় ৩০ থেকে ৪০ জন অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের কয়েকজন হলেন ছাত্রলীগ নেতা ও রসায়ন বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গৌতম কুমার দাস, তুষার, ফেরদৌস, নোবেল, গোলাম রাব্বি, মুরসালিন, মুরাদ, সোহেল, তানভীর, রায়হান, রাহাত, সৌমিক, তারেক মীর, সজীব ও নাফিস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, আমরা যারা প্রত্যয়ের সঙ্গে ছিলাম তাদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়েছে। বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার পর প্রত্যয়কে দেখতে চিকিৎসক এসেছিলেন। তখন তারা অ্যাম্বুলেন্সের ওপর হামলা করে সেটি ফিরিয়ে দেয়। প্রক্টরকে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আসেননি। একাধিক ছাত্রীর দিকেও চড়াও হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মীর মশাররফ হোসেন হলের এক শিক্ষার্থী অসুস্থ এমন একটি ফোনকল পেয়ে তারা অ্যাম্বুলেন্স পাঠায়। তবে কে কল দিয়েছিল সে সম্পর্কে চিকিৎসা কেন্দ্রের কেউ বলতে পারেননি।
তবে যে ফোন নাম্বার থেকে কল দেওয়া হয়েছিল সেটিতে যোগাযোগ করে দেখা যায় নাম্বারটি শাখা ছাত্রলীগের নেতা গৌতম কুমার দাসের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ১৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব না। দরকার হলে আমি পদত্যাগ করব।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে রাতেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে তারা এ রাত পৌনে ১টায় প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান করছেন।
তবে অনশনরত শিক্ষার্থী সামিউলের ওপর হামলারে পেছনে ছাত্রলীগের কোনো হাত নেই বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেলের। তিনি বলেন, ‘আমি শুনেছি, মীর মশাররফ হোসেন হলের অনশনরত ওই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা হয়েছে। তবে সেটা সাধারণ শিক্ষার্থীরা করেছে। সেখানে ছাত্রলীগের একজনও জড়িত নয়।’
অসুস্হ সাবেক ফুটলার মোহাম্মদ মহসীনের পাশে দাড়িয়েছেন তার সাবেক সতীর্থরা। মোহামেডান ক্লাবের সাবেক ফুটবলার ও সোনালী অতীত ক্লাবের সদস্যরা বিকেলে বসে এই সিদ্ধান্ত নেন। পরে মহসীনের বাসায় যান তার সংগে দেখা করতে।সাবেক ফুটবলারদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গাফফার, জোসী, বাবলু, জনি, সাব্বির, রিয়াজ।
এসময় গাফফার জানান, মহসীনের চিকিৎসার জন্য বিসিবি সভাপতির উদ্যোগে বুধবার সকালে অসুস্হ ফুটবলারকে হাসপাতালে ভর্তি করবে।
হাসপাতাল থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়ে ফেরার পর মহসীন কানাডায় ফিরে যেতে চাইলে সাবেক ফুটবলাররা সহায়তা করবে। মহসীন কানাডা থেকে দেশে ফিরেছেন মায়ের পাশে থাকতে। প্রায় নব্বই ছুই ছুই মহসিনের মায়ের পায়ে ব্যথা। মহসীনের পাশাপাশি তার মায়ের চিকিৎসার ব্যাপারেও সাবেক ফুটবলাররা পাশে থাকবেন বলে জানান আবদুল গাফফার।
রাজধানীর বনানীর একটি রেস্তোরাঁ থেকে জামায়াতে ইসলামীর বনানী শাখার ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তাদের মধ্যে বনানী থানা জামায়াতের আমির তাজুল ইসলাম এবং সেক্রেটারি আব্দুর রাফি রয়েছেন।
বনানী থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ওয়ারলেস গেটে অবস্থিত নবাবী রেস্টুরেন্টে গোপন মিটিং করাকালে বনানী থানা জামায়াতে ইসলামী আমির তাজুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা রাফিসহ ১০ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
আটক ১০ জনের মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাও রয়েছেন।
প্রথম সেটে হেরে পিছিয়ে পড়েছিলেন। তবে পরের সেটেই ঘুরে দাঁড়ান। ৩ ঘণ্টা ৩৮ মিনিটের লড়াইয়ের পর কোয়ার্টার ফাইনালটা জিতে নিলেন নোভাক জকোভিচ। কারেন খাচানভকে ৪-৬, ৭-৬, ৬-২, ৬-৪ ব্যবধানে পরাজিত করে ফ্রেঞ্চ ওপেনের সেমিফাইনালে উঠলেন এই সার্বিয়ান।
কোয়ার্টার ফাইনালের শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল, দিনটা বোধহয় জকোভিচের নয়। তবে মাথা ঠান্ডা রেখেছিলেন তিনি। খাচানভ প্রথম সেট জিতে নেওয়ার পর দ্বিতীয় সেটেও সমানে সমানে লড়াই করেন। যদিও টাইব্রেকারে জোকোর সামনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি।
ম্যাচে সমতা ফেরানোর পর এক বার লকার রুমে ফিরে যান জোকোভিচ। তার পর শুধু কোর্টেই ফিরলেন না। নিজের চেনা ছন্দেও ফিরলেন। তৃতীয় এবং চতুর্থ সেটে আর শুরুর মতো লড়াই করতে পারলেন না প্রতিযোগিতার ১১ নম্বর বাছাই।
ফ্রেঞ্চ ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে মঙ্গলবার প্রতিযোগিতার প্রথম সেট হারলেন জোকোভিচ। হেরে যেতে পারেন এমন মনে না হলেও এ দিন ছন্দ পেতে কিছু সময় লেগেছে তার। ৩৬ বছরের জোকোভিচ কি সর্বোচ্চ পর্যায়ের টেনিসের ধকল আগের মতো সামলাতে পারছেন না আর?
এমন প্রশ্ন যখন উঁকি দিতে শুরু করছে, তখনই নিজের চেনা ছন্দে দেখা দিয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে খাচানভের বিরুদ্ধে সময় পেয়েছেন। সুযোগ পেয়েছেন। সেমিফাইনাল বা ফাইনালের প্রতিপক্ষরা কি ছন্দে ফেরার সময় বা সুযোগ দেবেন তাঁকে?
টেনিসপ্রেমীদের মনে এই প্রশ্ন রেখেই ফ্রেঞ্চ ওপেনের শেষ চারে পৌঁছে গেলেন দু’বারের চ্যাম্পিয়ন। পাশাপাশি কিছুটা হয়তো উদ্বেগেও রাখলেন। সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করার পর জোকার স্বীকারও করে নিয়েছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথম দু’টি সেট তার থেকে ভাল খেলেছেন রুশ প্রতিপক্ষ।
এদিকে ওপর কোয়ার্টার ফাইনালে জয় পেয়েছেন কার্লোস আলকারাজ। সিৎসিপাসের বিপক্ষে তিনি ৩-০ (৬-২, ৬-১, ৭-৬) সেটে জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছেন এই স্পেনিশ টেনিস তারকা।
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।