
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী আফরিন ফারিয়া। শেষ সময়ে নির্বাচিত লেখকের বই কিনতে বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় এসেছেন। জানতে চাইলে ফারিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাস আমার খুব পছন্দ! তার লেখা উপন্যাসগুলো আমাকে খুব উজ্জীবিত করে!
গতকাল শনিবার বিকেলে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে এ পাঠকের আলাপ হলে তিনি এসব কথা বলেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভ্রমণ সাহিত্য আমার ভালো লাগে। নতুন নতুন অনেক কিছু শেখা যায়। যেগুলো লেখকরা নিজের ভাষায় নিজের ভঙ্গিতে প্রকাশ করে পড়ার তৃপ্তিটা বাড়িয়ে দেয়।
মেলার শেষ সময়ে এসে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেলা তো মেলাই, এখানে খারাপ লাগার কোনো প্রশ্নই আসে না। বরঞ্চ ক্রমে ক্রমে ভালোলাগাটা আসলে বাড়তে থাকবে প্রতি বছর। বই যারা ভালোবাসে তাদের জন্য এই জায়গাটা বরাবরের মতো ভালোলাগার জায়গা।
মেলার স্পেস নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, যদিও মেলার স্থান যথেষ্ট, তারপরও যদি জায়গাটা আরেকটু প্রসারিত করা যেত তাহলে আরও কিছু নতুন স্টল হয়তো বসতে পারত আর আমরাও আরও নতুন কিছু বই পেতাম।
পড়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়কে প্রাধান্য দেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকের লেখা পড়া হয়। তবে কিছু না কিছু আমি নতুন করে শিখি। যথেষ্ট সরল আবরণে লেখা হলে তা পড়ে বেশি আনন্দ পাওয়া যায়। কঠিন বাস্তবতার কাহিনী সুন্দর করে উপস্থাপন করলে শেষ না হওয়া অবধি বই রেখে ওঠা যায় না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ৩০৯ প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৪১ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি চিহ্নিত করেছে। বড়মাপের এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগেরই ভ্যাট রিটার্নে দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেন ও প্রকৃত অডিটের তথ্যের মিল পাওয়া যায়নি। পণ্য বেচাকেনা, উৎপাদন, লাভ-লোকসানসহ আয়-ব্যয়ের সব হিসাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে।
এসব প্রতিষ্ঠান একাধিক অডিট রিপোর্ট তৈরি করেছে। প্রকৃত অডিট রিপোর্ট গোপন রেখে মিথ্যা হিসাব দিয়ে তৈরি অডিট রিপোর্টের সঙ্গে মিলিয়ে ভ্যাট রিটার্ন দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যাংকিং লেনদেনে রয়েছে প্রকৃত হিসাব।
সম্প্রতি ভ্যাট গোয়েন্দাদের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে ফাঁকির এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গত অর্থবছরের (২০২১-২২) ভ্যাট পরিশোধের তথ্য খতিয়ে দেখে গোয়েন্দারা ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভ্যাট ফাঁকির অর্থ জরিমানাসহ পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাওনা পরিশোধ না করলে প্রচলিত রাজস্ব আইনে মামলা করা হবে। প্রয়োজনে হিসাব জব্দ করা হবে। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ের লাইসেন্স স্থগিত করা হবে।
এ ছাড়া এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের গত পাঁচ করবর্ষের আয়কর নথি তলব করবে। আয়কর নথি থেকে আয়-ব্যয় ও সম্পদের হিসাব খতিয়ে দেখে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য আছে কিনা এবং আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ যাচাই করা হবে। আয়কর ফাঁকি ধরা পড়লে জরিমানাসহ পরিশোধ করতে বলা হবে। এক্ষেত্রেও সময়মতো রাজস্ব পরিশোধ না করলে প্রচলিত রাজস্ব আইনে মামলা করা হবে এবং হিসাব জব্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুর রউফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার লেনদেন আছে। তারা ভালো মুনাফা করেছে। অথচ বেচাকেনাসহ ভ্যাটসংক্রান্ত হিসাবে লোকসানের কথা বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে থাকে। ভ্যাট রিটার্নের সঙ্গে মিলিয়ে মিথ্যা অডিট রিপোর্ট তৈরি করে। আবার প্রকৃত হিসাব দিয়েও আলাদা অডিট রিপোর্ট তৈরি করে। এভাবে রাজস্ব ফাঁকিবাজ প্রতিষ্ঠানের একাধিক অডিট রিপোর্ট থাকে। তদন্ত করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। ভ্যাট রিটার্নের সঙ্গে ব্যাংক লেনদেন এবং প্রকৃত অডিট রিপোর্ট মেলে না।
ভ্যাট গোয়েন্দাদের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, কোটি টাকা বা তার বেশি ব্যাংকিং লেনদেন হয় এমন প্রতিষ্ঠানের গত এক অর্থবছরের ভ্যাট পরিশোধের তথ্য খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গোয়েন্দারা। প্রথম ধাপে এক হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব প্রতিষ্ঠানের অডিট ও ব্যাংকিং লেনদেনের সঙ্গে ভ্যাট রিটার্নের তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য মিলিয়ে দেখা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০৯ প্রতিষ্ঠানের হিসাবেই গরমিল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগের ভ্যাট রিটার্নের তথ্যের সঙ্গে ব্যাংক লেনদেন ও প্রকৃত অডিটের তথ্যের মিল পাওয়া যায়নি। কিছু প্রতিষ্ঠান উৎসে ভ্যাটের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাবে মিথ্যা তথ্য দিয়েও ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান কড়ায় গন্ডায় ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করেও সরকারি কোষাগারে একটি অর্থও জমা দেয়নি। সব মিলিয়ে রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ১ হাজার ৪১ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরেও (২০২০-২০২১) একইভাবে ২৩৩টি প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করা হয়েছে।
তদন্তে মেসার্স আলপনা সোয়েটার লিমিটেডের ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ৩ কোটি ৫৬ হাজার টাকা, জনতা ফেব্রিক্স, টংমুর ইলেকট্রনিক্সের ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, জানশন জুতা ফ্যাক্টরি লিমিটেডের ৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, রুহিতা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ৪ কোটি ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, আনিকা ফেব্রিক্স লিমিটেডের ৯৯ লাখ ৪ হাজার টাকা, মেসার্স রাব্বানী এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ৬ কোটি ১১ লাখ টাকা, মেসার্স ওরিয়ন কোম্পানি লিমিটেডের ৮ কোটি টাকা, মেসার্স নূর অপটিক্স লিমিটেডের ৫৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, স্বপ্ননীড় আবাসিক কোম্পানি লিমিটেডের ১৫ কোটি টাকা, আদ্রিতা আবাসন প্রকল্প লিমিটেডের ৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, জয়িতা সোয়েটার লিমিটেডের ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকাসহ প্রায় তিনশ প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ভ্যাট ফাঁকির ৩০৯ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় সিগারেট, সিরামিক, মোবাইল, অটোমোবাইল, তৈরি পোশাক খাত ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান, জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ ভাঙা, ওষুধ, ইলেট্রনিক্স, কোমল পানীয়, ব্যাংক, সিরামিক, টয়লেট সোপ, প্রাকৃতিক গ্যাস, আবাসন, ইলেট্রনিক্স, জুতা-স্যান্ডেল, খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী, পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান, ওষুধ বিক্রয়কারী, ডায়াগস্টিক ও ক্লিনিক বেশি।
অনলাইন ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। এর আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল সাড়ে সাত লাখ। এনবিআর থেকে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। পরে ধাপে ধাপে সব ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে ভ্যাট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভ্যাট পরিশোধ করে থাকে। আর এখানেই বিপত্তি। অনেক প্রতিষ্ঠান ভালো বেচাকেনা করলেও এখনো অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন নেয়নি।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, অনলাইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাট রিটার্নের তথ্যের সঙ্গে প্রকৃত অডিটের ও ব্যাংক লেনদেনের বিবরণ মিলিয়ে দেখা হলে ভ্যাট ফাঁকি কমে যাবে। এজন্য অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ, রিটার্ন ও অডিট জমা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কোনো গরমিল পাওয়া গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ের লাইসেন্স স্থগিত হয়ে যাবে। এতে এনবিআর কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কিছুই করার থাকবে না। ভবিষ্যতে এনবিআর সে পথেই যাচ্ছে। তবে যাওয়ার গতি আরও বাড়াতে হবে।
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির শেষ ছুটির দিন গতকাল শনিবার অমর একুশে বইমেলায় বইপাগল পাঠক-লেখকদের পদচারণে মুখরিত ছিল। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে চিরচেনা রূপ ফিরে পায় অমর একুশে বইমেলা। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই মেলায় প্রবেশের সব পথে ছিল দীর্ঘ লাইন। সকালের শিশুপ্রহরে শিশুসহ সব বয়সী মানুষের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। তবে অপেক্ষার মধ্যেও বইপ্রেমীদের কোনো বিরক্তি ছিল না, ছিল না কোনো ক্লান্তি। লেখক-পাঠকের আনাগোনায় মুখর হয়ে ওঠে মেলার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন স্টল ঘুরে নিজেদের পছন্দের বই কিনতে দেখা গেছে পাঠকদের। বিক্রেতারা বলেছেন, মেলার শুরু থেকেই পাঠকদের আনাগোনা থাকলেও শেষ ছুটির দিনে ভিড় বেশি। তাই বিক্রিও হচ্ছে প্রত্যাশা অনুয়ায়ী।
দেশ পাবলিকেন্সের স্বত্বাধিকারী অচিন্ত্য চয়ন বলেন, ‘এবারের মেলা আগের মেলার চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। করোনার পরে আমরা সুন্দর একটি মেলা করলাম। মেলায় এবার প্রচুর দর্শনার্থী এসেছিল এবং তারা বই কিনছেন। আমরা এবারের মেলায় সন্তুষ্ট।’
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বইমেলায় গতকাল ছিল শেষ শিশুপ্রহর। দিনের শুরুতে মেলা সত্যিই অন্য রকম ছিল খুদে পাঠকদের কারণে। বড়দের ভিড় ও ধাক্কাধাক্কি নেই। মা-বাবার হাত ধরে মনের খুশিতে শিশুদের ঘুরে বেড়ানো। বায়না ধরে বই কেনা। বিকেলে ছুটির দিনে যেমন বরাবর হয়, যা প্রত্যাশা থাকে, তার ব্যতিক্রম হয়নি। চারদিকে মানুষ আর মানুষ। বড় প্যাভিলিয়ন থেকে শুরু করে ছোট ছোট স্টল সর্বত্রই বইপ্রেমীদের ঢল। সবাই বইয়ের ব্যাগ হাতে নিয়ে বের হচ্ছেন।
বই কিনছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমন রহমান। তিনি বলেন, ‘বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। ভালোবাসা আর প্রাণের টানে আমরা প্রতিবছরই বইমেলায় ছুটে আসি পছন্দসই বই কিনতে। মেলা আর মাত্র দুই দিন আছে, তাই এখন পছন্দের বইগুলো কিনছি।’
নতুন বই : গতকাল ছিল বইমেলার ২৫তম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। নতুন বই এসেছে ১৮৫টি। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল শিশুপ্রহর।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কোভিড-১৯: ভাষার বৈশ্বিকতা ও বাংলাদেশের সাহিত্য এবং কোভিড-১৯: সংস্কৃতির সংকট ও রূপান্তর’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাকিম আরিফ এবং মোহাম্মদ শেখ সাদী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন পারভেজ হোসেন, হামীম কামরুল হক, কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী এবং আবুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রফিকউল্লাহ খান।
প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, ২০২০ সালে বৈশ্বিক বিস্তৃতিতে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ এমনই এক অতিমারি রোগ, যা মানুষের সৃজনশীলতাকে নানামাত্রায় স্পর্শ করেছে। এই অতিমারির কারণে বাংলা ভাষাসহ সারা বিশ্বের ভাষাসমূহে নতুন শব্দমালা ও পরিভাষার উদ্ভব ঘটেছে। পাশাপাশি কভিডকালীন বন্দি সময়ে বাংলা সাহিত্যে কভিডকেন্দ্রিক সাহিত্যকর্ম রচিত হয়েছে। অতিমারির সময়টিতে আমাদের জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন সংস্কার। ফলে ধীরে ধীরে সংস্কৃতিও রূপান্তরিত হচ্ছে।
আলোচকরা বলেন, কোভিডকাল আমাদের জীবনে নতুন অভিজ্ঞতার সঞ্চার করেছে, আমাদের চিন্তায় এবং জীবনযাত্রায় এনেছে পরিবর্তন। এ সময় আর্থসামাজিক ক্ষেত্রের মতো শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিও অতিক্রম করেছে সংকটময় মুহূর্ত। করোনা আমাদের মনে যে প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে, তা থেকে সারা বিশ্বের সাহিত্যে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যও এর ব্যতিক্রম নয়। সমকালীন বাস্তবতার ভাষ্যকার শিল্পী ও সাহিত্যিকরা তাদের সাহিত্যে করোনার নানামুখী অভিঘাতকে চিত্রিত করেছেন। করোনার ভয়াল অভিঘাতে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও জীবন-সংস্কৃতি যেমন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে, তেমনি ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলার নানা পথ আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে রফিকউল্লাহ খান বলেন, ‘করোনার সংকটময় কালে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও মুখোমুখি হয়েছে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির। সে-সময় আমরা বিচ্ছিন্নতার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি, আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি নানাভাবে রূপান্তরিত হয়েছে। তথাপি বাংলাদেশের মানুষ সাহসিকতার সঙ্গেই করোনা সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে।’
আজকের অনুষ্ঠানসূচি : ২৬ ফেব্রুয়ারি রবিবার, অমর একুশে বইমেলার ২৬তম দিন। মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্থানীয় সাহিত্যের বৈভব ও জেলা সাহিত্যমেলা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাইমন জাকারিয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মুন্সি আবু সাইফ, সাহেদ মন্তাজ এবং মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মুহম্মদ নূরুল হুদা।
বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের একজন ফেরদৌসি লিনু হক। তিনি লেখালেখি করেন লিনু হক নামে। এবারের বইমেলায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার দুটো বই প্রকাশিত হয়েছে। একটি ‘অবরুদ্ধ নগরের গেরিলা ৭১’, প্রকাশ করেছে অঙ্কুর প্রকাশনী। অপর বইটি ‘মুক্তিযুদ্ধের মানচিত্রে বাংলার নারী’, প্রকাশক অণিমা গ্রন্থ বিলাস।
নিজের বই বিষয়ে লিনু হক বলেন, ‘আমার বই যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে। মুক্তিযুদ্ধে আগ্রহীরা আমার বইয়ের পাঠক। আমি মূলত লিখি আগামী প্রজন্মের জন্য। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শেকড়। আমরা ক্রমাগত শেকড় থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। শেকড়বিহীন মানুষ শূন্য লতার মতো। একসময় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। প্রজন্মকে শেকড়ে ফিরিয়ে নেওয়া আমার লেখার উদ্দেশ্য।’
নিজের লেখা বই নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘একজন নতুন লেখক হিসেবে আমার প্রথম বইয়ের প্রচুর পাঠ-আলোচনা দেখেছি। আমি অন্তর্জালে লেখালেখি করি। লাইক-শেয়ার যত না দেখি, তার চেয়ে শুনেছি বেশি, “আপনার লেখা সবাই পড়ে”, আমি তার প্রমাণও পেয়েছি।’
লিনু হক বলেন, ‘আমার জন্ম পঞ্চাশের দশকে ঢাকার আজিমপুর কলোনিতে। বড় হওয়ার পর ঢাকায় আমাদের বাড়ি নিয়ে আমি একটি স্মৃতি লেখা লিখেছিলাম। প্রথমে অন্তর্জালে, পরে পেন্সিলে। অন্তর্জালে অনেকে এবং পেন্সিলে এক হাজারের বেশি মানুষ পড়েছে, প্রচুর মন্তব্য করেছে, অনেক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া মানুষকে খুঁজে পেয়েছি। দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ যারা এ স্মৃতির সঙ্গে জড়িত, তাদের মন্তব্য আমার কিছু ধূসর স্মৃতিকে উজ্জ্বল করে দিয়েছে। এটা আমার কাছে একটা বড় ঘটনা, বড় প্রাপ্তি।’
ঢাকার আজিমপুরের সরকারি কলোনিতে ১৯৫৭ সালের ১৫ জুন জন্ম লিনু হকের। স্কুলে যখন পড়েন, তখন উত্তাল ষাটের দশক। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন লিনু হক। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন সংগ্রামে। যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়া, তথ্য দেওয়া, দেয়াল লিখন, লিফলেট বিতরণ, পাকিস্তানি শাসকের দালালদের হুমকি দিয়ে চিঠি দেওয়াসহ নানাভাবে তিনি মুক্তিসংগ্রামে যুক্ত ছিলেন।
‘মেয়ে বিচ্ছু আজিমপুরের মুক্তিযোদ্ধা কাহিনী’ তার আলোচিত বই।
চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়নি ২০ বছরেও। পঞ্চম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। পাঁচ বছরে মামলার ৮২ জন সাক্ষীর মধ্যে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে মাত্র ৪ জনের। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় চার বছরে মামলার তারিখ পড়েছে ২৩টি।
মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর বা সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মামলা পরিচালনায় বাদীর সহযোগিতা মিলছে না।’
আদালত সূত্র জানাচ্ছে, চাঞ্চল্যকর এ মামলা পরিচালনায় বাদীপক্ষের এখন কোনো আইনজীবী নেই। মামলা পরিচালনা করছে রাষ্ট্রপক্ষ। তাদের (রাষ্ট্রপক্ষ) অভিযোগ, জামাল উদ্দিন হত্যা মামলাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে বাদী নিহত জামাল উদ্দিনের ছেলে চৌধুরী ফরমান রেজা লিটনের অনীহা দেখা যাচ্ছে। তাকে একাধিকবার আদালত থেকে সমন জারি করেও সাক্ষ্য দিতে আনা যাচ্ছে না।
গত দুদিন এই প্রতিবেদক বাদীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বাদীর পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, বছরের বেশির ভাগ সময় চৌধুরী ফরমান রেজা লিটন দেশের বাইরে থাকেন। মামলা পরিচালনায় তাদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে। পরিবারের দাবি, জামাল উদ্দিন খুনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ অনোয়ারার বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম এবং তার ভাই মারুফ নিজামকে অব্যাহতির সুপারিশ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অভিযোগপত্র দেওয়ার পর থেকে হত্যাকারীদের বিচারের আশা এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছেন তারা।
আদালত সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন হত্যার প্রধান আসামি ফটিকছড়ি কাঞ্চনপুরের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী। তিনি ২০ বছর ধরে পালিয়ে ছিলেন। গত জানুয়ারি মাসে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
১৬ আসামির মধ্যে সাতজন জামিনে আছেন। একজন কারাগারে। ছয়জন পলাতক। বাকি দুজন মারা গেছেন।
২০০৩ সালের ২৪ জুলাই ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন নগরের চকবাজার এলাকায় তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চান্দগাঁওয়ের বাসায় যাওয়ার সময় অপহৃত হন।
জানা গেছে, জামাল উদ্দিন অপহরণের ঘটনাকে সাজানো নাটক বলে মন্তব্য করে পুলিশ প্রথমে মামলা নেয়নি। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই বছর পর অপহরণের ‘অন্যতম হোতা’ আনোয়ারা সদর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন সদস্য মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার দুই বছর পর ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট ফটিকছড়ি উপজেলার পাহাড়ি এলাকা থেকে জামাল উদ্দিনের কঙ্কাল উদ্ধার করে র্যাব। এর আগে প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী অপহরণকারী চক্রকে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকাও দেয় পরিবার। কিন্তু জামাল উদ্দিনকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।
জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যা মামলাটি করা হয় নগরের চান্দগাঁও থানায়। তার পরিবারের অভিযোগ, ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা জামালকে হত্যা করেছে। ৯ পুলিশ কর্মকর্তা ৩ বছর ধরে মামলাটি তদন্ত করেন। ২০০৬ সালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্রে সরওয়ার জামাল নিজাম ও তার ভাই মারুফ নিজামসহ ২৪ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।
মামলার অন্যতম আসামি মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জামাল উদ্দিনকে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও হত্যার পর লাশ গুমের ঘটনায় জড়িতদের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়। ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি সুলতান ড্রাইভার জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছিলেন, জামাল উদ্দিনকে কাঞ্চননগরের গহিন পাহাড়ে নিয়ে যান তিনি। গুলি করে হত্যার আগ পর্যন্ত তিনি, কালা মাহবুব, লম্বা মাহবুব ও টেংরা ওসমান জামাল উদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন।
সিআইডির তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিহত জামাল উদ্দিন ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি। সে সময় সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারা থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি। মনোনয়ন ঠেকাতে এবং কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। টাকা পেতে দেরি হওয়ায় খুন করা হয় তাকে।
সিআইডির অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে বাদী আদালতে নারাজি আবেদন করেন। অন্যদিকে মামলার আসামি কালা মাহবুবকে রাজসাক্ষী করায় আপত্তি জানিয়ে মারুফ নিজাম উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেন ২০০৭ সালে। ২০১১ সালে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন আসামিরা। আবেদনটি খারিজের আদেশ চট্টগ্রাম আদালতে এসে পৌঁছায় ২০১৬ সালে। ২০১৭ সালে আদালত সিআইডির অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এবং বাদীর নারাজি আবেদন খারিজ করে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামের একটি আদালত আসামিদের মধ্যে অভিযোগ গঠন করে।
২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর নগরের চকবাজার এলাকার এক দোকানদার সর্বশেষ এ মামলায় সাক্ষ্য দেন চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। মামলাটি বিচারের জন্য ২০১৯ সালের মে মাসে পঞ্চম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে আসে।
বাদী চৌধুরী ফরমান রেজা লিটন কয়েক মাস আগে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমার বাবা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীদের আইনের আওতায় আনতে বছরের পর বছর আইনি লড়াই চালিয়েছি। কিন্তু তা আনা হয়নি। বিচারের আশা করে লাভ কী।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) সোহরাওয়ার্দী ও আলাওল হল থেকে ধারালো অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় থানায় মামলা বা কোনো সমঝোতা হয়নি। ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাতে হল দুটিতে এক ঘণ্টা অভিযানে ৬টি রামদা, রড ও লাঠিসোঁটা উদ্ধার করে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডি।
জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল আমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিত্যক্ত অবস্থায় হল থেকে ধারালো অস্ত্র, রড ও লাঠিসোঁটা উদ্ধার হয়েছে। কেউ আটক হয়নি। তাই মামলা হয়নি।’ একই বিষয়ে বক্তব্য জানতে চবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর রবিউল হোসেন ভূঁইয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এর আগে গত শুক্রবার বিকেলে হলের কক্ষ দখল নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের পর গতকালও ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতি দেখা গেছে।
গতকাল বিকেলে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা গেছে, সোহরাওয়ার্দী, আলাওল ও এফ রহমান হলের সামনে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে দুই প্লাটুন পুলিশ। এ সময় চবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে হল দুটির সামনে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
তবে হাটহাজারী থানার দায়িত্বশীল এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, হলের কক্ষ দখল নিয়ে তিন দিনের ব্যবধানে দুই দফা সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়া ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে গতকাল বিকেল পর্যন্ত কোনো সমঝোতা হয়নি। চবি প্রশাসনও থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি।
এদিকে সংঘর্ষের জন্য এক পক্ষ আরেক পক্ষকে দায়ী করছে। চবি শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াছ তার প্রতিপক্ষের ৮-১০ জনের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, আলাওল ও এ এফ রহমান হলে থাকা তার কর্মীদের ডেকে সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্ররা একাধিকবার হুমকি দিয়েছেন। জুনিয়র ছাত্রদের আটকে রেখে র্যাগ দিয়েছেন, সেøজিং করছেন। তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ইলিয়াছের অভিযোগ ভিত্তিহীন, বানোয়াট বলে মন্তব্য করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে হলের কক্ষ দখল নিয়ে সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে সংঘর্ষে জড়ান শাখা ছাত্রলীগের ‘বিজয়’ গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের উপ আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক নয়ন মোদক আহত হন। জানা গেছে, গত বছরের ৩১ জুলাই কমিটিতে পদ পাওয়া নিয়ে বিজয় গ্রুপ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।