
বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিদ্রোহের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে বিএনপি যুক্ত ছিল। তিনি বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব ঠিকই বলেছেন যে বিডিআর বিদ্রোহ ছিল দেশের বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্র এবং সেই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও বিএনপি যুক্ত ছিল বললে তার কথাটি সম্পূর্ণ হতো।’
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর মতিঝিলে সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে রাঙ্গুনিয়া সমিতির মেজবান-মিলনমেলায় প্রধান অতিথির বক্তৃতা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। খবর বাসস।
ড. হাছান আরও বলেন, ‘আমি প্রশ্ন রাখতে চাইÑবিডিআর বিদ্রোহের দিন ভোররাতে কেন বেগম জিয়া তার বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন এবং তখন তো আমরা ক্ষমতায়, আমরা জানি, সে দিন এবং তার আগের দিন বেগম জিয়া কতবার তারেক রহমানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। সেসব রেকর্ড আমাদের কাছে আছে।’
গণতান্ত্রিকভাবে বিপুল গণরায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই বিএনপি দেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল এবং সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিডিআর বিদ্রোহ ঘটানো হয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সেই সঙ্গে ড. হাছান বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের অধিকাংশই আওয়ামী পরিবারের সদস্য।’
এ ঘটনার বিচারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের কার্যকলাপ ও ঘটনা পরম্পরায় তাদের নেপথ্য ভূমিকা স্পষ্ট হলেও প্রত্যক্ষ প্রমাণের অভাবে মামলা হয়নি, ঠিক যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যার পটভূমি রচনাকারী অনেক ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধেও প্রত্যক্ষ প্রমাণের অভাবে এখনো মামলা করা যায়নি।’
রাঙ্গুনিয়া সমিতির সভাপতি মো. ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকাস্থ চট্টগ্রাম সমিতির সভাপতি জয়নাল আবেদীন জামাল, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন হিরু, রাঙ্গুনিয়া সমিতির উপদেষ্টা গিয়াস উদ্দিন খান, আবু সালেহ প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বিএনপি ভারতবর্ষে অশান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি নিজেরা সন্ত্রাসী দল, আর দশ ট্রাক অস্ত্র পাচার করে ভারতবর্ষেও তারা অশান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিল। যে কথাটি আমরা এতদিন বলে আসছিলাম। বিএনপির মন্ত্রী-এমপি, হাওয়া ভবন ও তারেক রহমান যে অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত ছিল এটি অনুপচেটিয়ার সাম্প্রতিক বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে।’
গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে উন্নয়ন সমন্বয় সভার আগে তিনি জানান, ভারতীয় সন্ত্রাসী অনুপচেটিয়া সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া দশ ট্রাক অস্ত্র খালাসের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ৩০৯ প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৪১ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি চিহ্নিত করেছে। বড়মাপের এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগেরই ভ্যাট রিটার্নে দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ব্যাংকিং লেনদেন ও প্রকৃত অডিটের তথ্যের মিল পাওয়া যায়নি। পণ্য বেচাকেনা, উৎপাদন, লাভ-লোকসানসহ আয়-ব্যয়ের সব হিসাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে।
এসব প্রতিষ্ঠান একাধিক অডিট রিপোর্ট তৈরি করেছে। প্রকৃত অডিট রিপোর্ট গোপন রেখে মিথ্যা হিসাব দিয়ে তৈরি অডিট রিপোর্টের সঙ্গে মিলিয়ে ভ্যাট রিটার্ন দেওয়া হয়েছে। তবে ব্যাংকিং লেনদেনে রয়েছে প্রকৃত হিসাব।
সম্প্রতি ভ্যাট গোয়েন্দাদের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে ফাঁকির এসব তথ্য পাওয়া গেছে। গত অর্থবছরের (২০২১-২২) ভ্যাট পরিশোধের তথ্য খতিয়ে দেখে গোয়েন্দারা ভ্যাট ফাঁকির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভ্যাট ফাঁকির অর্থ জরিমানাসহ পরিশোধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাওনা পরিশোধ না করলে প্রচলিত রাজস্ব আইনে মামলা করা হবে। প্রয়োজনে হিসাব জব্দ করা হবে। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ের লাইসেন্স স্থগিত করা হবে।
এ ছাড়া এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের গত পাঁচ করবর্ষের আয়কর নথি তলব করবে। আয়কর নথি থেকে আয়-ব্যয় ও সম্পদের হিসাব খতিয়ে দেখে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য আছে কিনা এবং আয় ও সম্পদ বৃদ্ধির পরিমাণ যাচাই করা হবে। আয়কর ফাঁকি ধরা পড়লে জরিমানাসহ পরিশোধ করতে বলা হবে। এক্ষেত্রেও সময়মতো রাজস্ব পরিশোধ না করলে প্রচলিত রাজস্ব আইনে মামলা করা হবে এবং হিসাব জব্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবদুর রউফ দেশ রূপান্তরকে বলেন, অনেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার লেনদেন আছে। তারা ভালো মুনাফা করেছে। অথচ বেচাকেনাসহ ভ্যাটসংক্রান্ত হিসাবে লোকসানের কথা বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে থাকে। ভ্যাট রিটার্নের সঙ্গে মিলিয়ে মিথ্যা অডিট রিপোর্ট তৈরি করে। আবার প্রকৃত হিসাব দিয়েও আলাদা অডিট রিপোর্ট তৈরি করে। এভাবে রাজস্ব ফাঁকিবাজ প্রতিষ্ঠানের একাধিক অডিট রিপোর্ট থাকে। তদন্ত করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসে। ভ্যাট রিটার্নের সঙ্গে ব্যাংক লেনদেন এবং প্রকৃত অডিট রিপোর্ট মেলে না।
ভ্যাট গোয়েন্দাদের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, কোটি টাকা বা তার বেশি ব্যাংকিং লেনদেন হয় এমন প্রতিষ্ঠানের গত এক অর্থবছরের ভ্যাট পরিশোধের তথ্য খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গোয়েন্দারা। প্রথম ধাপে এক হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব প্রতিষ্ঠানের অডিট ও ব্যাংকিং লেনদেনের সঙ্গে ভ্যাট রিটার্নের তথ্য মিলিয়ে দেখা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য মিলিয়ে দেখা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩০৯ প্রতিষ্ঠানের হিসাবেই গরমিল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বেশিরভাগের ভ্যাট রিটার্নের তথ্যের সঙ্গে ব্যাংক লেনদেন ও প্রকৃত অডিটের তথ্যের মিল পাওয়া যায়নি। কিছু প্রতিষ্ঠান উৎসে ভ্যাটের সঙ্গে ব্যয়ের হিসাবে মিথ্যা তথ্য দিয়েও ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান কড়ায় গন্ডায় ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করেও সরকারি কোষাগারে একটি অর্থও জমা দেয়নি। সব মিলিয়ে রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ ১ হাজার ৪১ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরেও (২০২০-২০২১) একইভাবে ২৩৩টি প্রতিষ্ঠানের ১ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি উদঘাটন করা হয়েছে।
তদন্তে মেসার্স আলপনা সোয়েটার লিমিটেডের ভ্যাট ফাঁকির পরিমাণ ৩ কোটি ৫৬ হাজার টাকা, জনতা ফেব্রিক্স, টংমুর ইলেকট্রনিক্সের ২ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, জানশন জুতা ফ্যাক্টরি লিমিটেডের ৫ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, রুহিতা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ৪ কোটি ২ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, আনিকা ফেব্রিক্স লিমিটেডের ৯৯ লাখ ৪ হাজার টাকা, মেসার্স রাব্বানী এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ৬ কোটি ১১ লাখ টাকা, মেসার্স ওরিয়ন কোম্পানি লিমিটেডের ৮ কোটি টাকা, মেসার্স নূর অপটিক্স লিমিটেডের ৫৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, স্বপ্ননীড় আবাসিক কোম্পানি লিমিটেডের ১৫ কোটি টাকা, আদ্রিতা আবাসন প্রকল্প লিমিটেডের ৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, জয়িতা সোয়েটার লিমিটেডের ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকাসহ প্রায় তিনশ প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ভ্যাট ফাঁকির ৩০৯ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় সিগারেট, সিরামিক, মোবাইল, অটোমোবাইল, তৈরি পোশাক খাত ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠান, জাহাজ নির্মাণ, জাহাজ ভাঙা, ওষুধ, ইলেট্রনিক্স, কোমল পানীয়, ব্যাংক, সিরামিক, টয়লেট সোপ, প্রাকৃতিক গ্যাস, আবাসন, ইলেট্রনিক্স, জুতা-স্যান্ডেল, খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী, পোশাক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান, ওষুধ বিক্রয়কারী, ডায়াগস্টিক ও ক্লিনিক বেশি।
অনলাইন ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। এর আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল সাড়ে সাত লাখ। এনবিআর থেকে প্রাথমিকভাবে পাঁচটি ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। পরে ধাপে ধাপে সব ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে ভ্যাট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ভ্যাট পরিশোধ করে থাকে। আর এখানেই বিপত্তি। অনেক প্রতিষ্ঠান ভালো বেচাকেনা করলেও এখনো অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন নেয়নি।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, অনলাইনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাট রিটার্নের তথ্যের সঙ্গে প্রকৃত অডিটের ও ব্যাংক লেনদেনের বিবরণ মিলিয়ে দেখা হলে ভ্যাট ফাঁকি কমে যাবে। এজন্য অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ, রিটার্ন ও অডিট জমা বাধ্যতামূলক করতে হবে। কোনো গরমিল পাওয়া গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ের লাইসেন্স স্থগিত হয়ে যাবে। এতে এনবিআর কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কিছুই করার থাকবে না। ভবিষ্যতে এনবিআর সে পথেই যাচ্ছে। তবে যাওয়ার গতি আরও বাড়াতে হবে।
ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির শেষ ছুটির দিন গতকাল শনিবার অমর একুশে বইমেলায় বইপাগল পাঠক-লেখকদের পদচারণে মুখরিত ছিল। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে চিরচেনা রূপ ফিরে পায় অমর একুশে বইমেলা। গতকাল শনিবার সকাল থেকেই মেলায় প্রবেশের সব পথে ছিল দীর্ঘ লাইন। সকালের শিশুপ্রহরে শিশুসহ সব বয়সী মানুষের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। তবে অপেক্ষার মধ্যেও বইপ্রেমীদের কোনো বিরক্তি ছিল না, ছিল না কোনো ক্লান্তি। লেখক-পাঠকের আনাগোনায় মুখর হয়ে ওঠে মেলার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণ। বিভিন্ন স্টল ঘুরে নিজেদের পছন্দের বই কিনতে দেখা গেছে পাঠকদের। বিক্রেতারা বলেছেন, মেলার শুরু থেকেই পাঠকদের আনাগোনা থাকলেও শেষ ছুটির দিনে ভিড় বেশি। তাই বিক্রিও হচ্ছে প্রত্যাশা অনুয়ায়ী।
দেশ পাবলিকেন্সের স্বত্বাধিকারী অচিন্ত্য চয়ন বলেন, ‘এবারের মেলা আগের মেলার চেয়ে অনেক ভালো হয়েছে। করোনার পরে আমরা সুন্দর একটি মেলা করলাম। মেলায় এবার প্রচুর দর্শনার্থী এসেছিল এবং তারা বই কিনছেন। আমরা এবারের মেলায় সন্তুষ্ট।’
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, বইমেলায় গতকাল ছিল শেষ শিশুপ্রহর। দিনের শুরুতে মেলা সত্যিই অন্য রকম ছিল খুদে পাঠকদের কারণে। বড়দের ভিড় ও ধাক্কাধাক্কি নেই। মা-বাবার হাত ধরে মনের খুশিতে শিশুদের ঘুরে বেড়ানো। বায়না ধরে বই কেনা। বিকেলে ছুটির দিনে যেমন বরাবর হয়, যা প্রত্যাশা থাকে, তার ব্যতিক্রম হয়নি। চারদিকে মানুষ আর মানুষ। বড় প্যাভিলিয়ন থেকে শুরু করে ছোট ছোট স্টল সর্বত্রই বইপ্রেমীদের ঢল। সবাই বইয়ের ব্যাগ হাতে নিয়ে বের হচ্ছেন।
বই কিনছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইমন রহমান। তিনি বলেন, ‘বইমেলা বাঙালির প্রাণের মেলা। ভালোবাসা আর প্রাণের টানে আমরা প্রতিবছরই বইমেলায় ছুটে আসি পছন্দসই বই কিনতে। মেলা আর মাত্র দুই দিন আছে, তাই এখন পছন্দের বইগুলো কিনছি।’
নতুন বই : গতকাল ছিল বইমেলার ২৫তম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। নতুন বই এসেছে ১৮৫টি। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত মেলায় ছিল শিশুপ্রহর।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কোভিড-১৯: ভাষার বৈশ্বিকতা ও বাংলাদেশের সাহিত্য এবং কোভিড-১৯: সংস্কৃতির সংকট ও রূপান্তর’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাকিম আরিফ এবং মোহাম্মদ শেখ সাদী। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন পারভেজ হোসেন, হামীম কামরুল হক, কে এইচ মাসুদ সিদ্দিকী এবং আবুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রফিকউল্লাহ খান।
প্রাবন্ধিকদ্বয় বলেন, ২০২০ সালে বৈশ্বিক বিস্তৃতিতে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ এমনই এক অতিমারি রোগ, যা মানুষের সৃজনশীলতাকে নানামাত্রায় স্পর্শ করেছে। এই অতিমারির কারণে বাংলা ভাষাসহ সারা বিশ্বের ভাষাসমূহে নতুন শব্দমালা ও পরিভাষার উদ্ভব ঘটেছে। পাশাপাশি কভিডকালীন বন্দি সময়ে বাংলা সাহিত্যে কভিডকেন্দ্রিক সাহিত্যকর্ম রচিত হয়েছে। অতিমারির সময়টিতে আমাদের জীবনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন সংস্কার। ফলে ধীরে ধীরে সংস্কৃতিও রূপান্তরিত হচ্ছে।
আলোচকরা বলেন, কোভিডকাল আমাদের জীবনে নতুন অভিজ্ঞতার সঞ্চার করেছে, আমাদের চিন্তায় এবং জীবনযাত্রায় এনেছে পরিবর্তন। এ সময় আর্থসামাজিক ক্ষেত্রের মতো শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিও অতিক্রম করেছে সংকটময় মুহূর্ত। করোনা আমাদের মনে যে প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে, তা থেকে সারা বিশ্বের সাহিত্যে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। বাংলা সাহিত্যও এর ব্যতিক্রম নয়। সমকালীন বাস্তবতার ভাষ্যকার শিল্পী ও সাহিত্যিকরা তাদের সাহিত্যে করোনার নানামুখী অভিঘাতকে চিত্রিত করেছেন। করোনার ভয়াল অভিঘাতে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও জীবন-সংস্কৃতি যেমন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে, তেমনি ভবিষ্যৎ সংকট মোকাবিলার নানা পথ আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে রফিকউল্লাহ খান বলেন, ‘করোনার সংকটময় কালে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশও মুখোমুখি হয়েছে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির। সে-সময় আমরা বিচ্ছিন্নতার অভিজ্ঞতা লাভ করেছি, আমাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি নানাভাবে রূপান্তরিত হয়েছে। তথাপি বাংলাদেশের মানুষ সাহসিকতার সঙ্গেই করোনা সংকট মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে।’
আজকের অনুষ্ঠানসূচি : ২৬ ফেব্রুয়ারি রবিবার, অমর একুশে বইমেলার ২৬তম দিন। মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে স্থানীয় সাহিত্যের বৈভব ও জেলা সাহিত্যমেলা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন সাইমন জাকারিয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মুন্সি আবু সাইফ, সাহেদ মন্তাজ এবং মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন মুহম্মদ নূরুল হুদা।
সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী আফরিন ফারিয়া। শেষ সময়ে নির্বাচিত লেখকের বই কিনতে বন্ধুদের সঙ্গে মেলায় এসেছেন। জানতে চাইলে ফারিয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা উপন্যাস আমার খুব পছন্দ! তার লেখা উপন্যাসগুলো আমাকে খুব উজ্জীবিত করে!
গতকাল শনিবার বিকেলে দেশ রূপান্তরের সঙ্গে এ পাঠকের আলাপ হলে তিনি এসব কথা বলেন।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভ্রমণ সাহিত্য আমার ভালো লাগে। নতুন নতুন অনেক কিছু শেখা যায়। যেগুলো লেখকরা নিজের ভাষায় নিজের ভঙ্গিতে প্রকাশ করে পড়ার তৃপ্তিটা বাড়িয়ে দেয়।
মেলার শেষ সময়ে এসে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মেলা তো মেলাই, এখানে খারাপ লাগার কোনো প্রশ্নই আসে না। বরঞ্চ ক্রমে ক্রমে ভালোলাগাটা আসলে বাড়তে থাকবে প্রতি বছর। বই যারা ভালোবাসে তাদের জন্য এই জায়গাটা বরাবরের মতো ভালোলাগার জায়গা।
মেলার স্পেস নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, যদিও মেলার স্থান যথেষ্ট, তারপরও যদি জায়গাটা আরেকটু প্রসারিত করা যেত তাহলে আরও কিছু নতুন স্টল হয়তো বসতে পারত আর আমরাও আরও নতুন কিছু বই পেতাম।
পড়ার ক্ষেত্রে কোন বিষয়কে প্রাধান্য দেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকের লেখা পড়া হয়। তবে কিছু না কিছু আমি নতুন করে শিখি। যথেষ্ট সরল আবরণে লেখা হলে তা পড়ে বেশি আনন্দ পাওয়া যায়। কঠিন বাস্তবতার কাহিনী সুন্দর করে উপস্থাপন করলে শেষ না হওয়া অবধি বই রেখে ওঠা যায় না।
বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে অংশগ্রহণকারীদের একজন ফেরদৌসি লিনু হক। তিনি লেখালেখি করেন লিনু হক নামে। এবারের বইমেলায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার দুটো বই প্রকাশিত হয়েছে। একটি ‘অবরুদ্ধ নগরের গেরিলা ৭১’, প্রকাশ করেছে অঙ্কুর প্রকাশনী। অপর বইটি ‘মুক্তিযুদ্ধের মানচিত্রে বাংলার নারী’, প্রকাশক অণিমা গ্রন্থ বিলাস।
নিজের বই বিষয়ে লিনু হক বলেন, ‘আমার বই যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে। মুক্তিযুদ্ধে আগ্রহীরা আমার বইয়ের পাঠক। আমি মূলত লিখি আগামী প্রজন্মের জন্য। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শেকড়। আমরা ক্রমাগত শেকড় থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। শেকড়বিহীন মানুষ শূন্য লতার মতো। একসময় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। প্রজন্মকে শেকড়ে ফিরিয়ে নেওয়া আমার লেখার উদ্দেশ্য।’
নিজের লেখা বই নিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘একজন নতুন লেখক হিসেবে আমার প্রথম বইয়ের প্রচুর পাঠ-আলোচনা দেখেছি। আমি অন্তর্জালে লেখালেখি করি। লাইক-শেয়ার যত না দেখি, তার চেয়ে শুনেছি বেশি, “আপনার লেখা সবাই পড়ে”, আমি তার প্রমাণও পেয়েছি।’
লিনু হক বলেন, ‘আমার জন্ম পঞ্চাশের দশকে ঢাকার আজিমপুর কলোনিতে। বড় হওয়ার পর ঢাকায় আমাদের বাড়ি নিয়ে আমি একটি স্মৃতি লেখা লিখেছিলাম। প্রথমে অন্তর্জালে, পরে পেন্সিলে। অন্তর্জালে অনেকে এবং পেন্সিলে এক হাজারের বেশি মানুষ পড়েছে, প্রচুর মন্তব্য করেছে, অনেক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া মানুষকে খুঁজে পেয়েছি। দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ যারা এ স্মৃতির সঙ্গে জড়িত, তাদের মন্তব্য আমার কিছু ধূসর স্মৃতিকে উজ্জ্বল করে দিয়েছে। এটা আমার কাছে একটা বড় ঘটনা, বড় প্রাপ্তি।’
ঢাকার আজিমপুরের সরকারি কলোনিতে ১৯৫৭ সালের ১৫ জুন জন্ম লিনু হকের। স্কুলে যখন পড়েন, তখন উত্তাল ষাটের দশক। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন লিনু হক। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন সংগ্রামে। যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেওয়া, তথ্য দেওয়া, দেয়াল লিখন, লিফলেট বিতরণ, পাকিস্তানি শাসকের দালালদের হুমকি দিয়ে চিঠি দেওয়াসহ নানাভাবে তিনি মুক্তিসংগ্রামে যুক্ত ছিলেন।
‘মেয়ে বিচ্ছু আজিমপুরের মুক্তিযোদ্ধা কাহিনী’ তার আলোচিত বই।
চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়নি ২০ বছরেও। পঞ্চম অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। পাঁচ বছরে মামলার ৮২ জন সাক্ষীর মধ্যে জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে মাত্র ৪ জনের। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় চার বছরে মামলার তারিখ পড়েছে ২৩টি।
মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর বা সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ গতকাল শুক্রবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মামলা পরিচালনায় বাদীর সহযোগিতা মিলছে না।’
আদালত সূত্র জানাচ্ছে, চাঞ্চল্যকর এ মামলা পরিচালনায় বাদীপক্ষের এখন কোনো আইনজীবী নেই। মামলা পরিচালনা করছে রাষ্ট্রপক্ষ। তাদের (রাষ্ট্রপক্ষ) অভিযোগ, জামাল উদ্দিন হত্যা মামলাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে বাদী নিহত জামাল উদ্দিনের ছেলে চৌধুরী ফরমান রেজা লিটনের অনীহা দেখা যাচ্ছে। তাকে একাধিকবার আদালত থেকে সমন জারি করেও সাক্ষ্য দিতে আনা যাচ্ছে না।
গত দুদিন এই প্রতিবেদক বাদীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বাদীর পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, বছরের বেশির ভাগ সময় চৌধুরী ফরমান রেজা লিটন দেশের বাইরে থাকেন। মামলা পরিচালনায় তাদের আগ্রহে ভাটা পড়েছে। পরিবারের দাবি, জামাল উদ্দিন খুনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ অনোয়ারার বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম এবং তার ভাই মারুফ নিজামকে অব্যাহতির সুপারিশ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) অভিযোগপত্র দেওয়ার পর থেকে হত্যাকারীদের বিচারের আশা এক প্রকার ছেড়েই দিয়েছেন তারা।
আদালত সূত্র জানায়, বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন হত্যার প্রধান আসামি ফটিকছড়ি কাঞ্চনপুরের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম চৌধুরী। তিনি ২০ বছর ধরে পালিয়ে ছিলেন। গত জানুয়ারি মাসে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত।
১৬ আসামির মধ্যে সাতজন জামিনে আছেন। একজন কারাগারে। ছয়জন পলাতক। বাকি দুজন মারা গেছেন।
২০০৩ সালের ২৪ জুলাই ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন নগরের চকবাজার এলাকায় তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে চান্দগাঁওয়ের বাসায় যাওয়ার সময় অপহৃত হন।
জানা গেছে, জামাল উদ্দিন অপহরণের ঘটনাকে সাজানো নাটক বলে মন্তব্য করে পুলিশ প্রথমে মামলা নেয়নি। পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই বছর পর অপহরণের ‘অন্যতম হোতা’ আনোয়ারা সদর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন সদস্য মোহাম্মদ শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার দুই বছর পর ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট ফটিকছড়ি উপজেলার পাহাড়ি এলাকা থেকে জামাল উদ্দিনের কঙ্কাল উদ্ধার করে র্যাব। এর আগে প্রশাসনের পরামর্শ অনুযায়ী অপহরণকারী চক্রকে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকাও দেয় পরিবার। কিন্তু জামাল উদ্দিনকে মুক্তি দেওয়া হয়নি।
জামাল উদ্দিন অপহরণ ও হত্যা মামলাটি করা হয় নগরের চান্দগাঁও থানায়। তার পরিবারের অভিযোগ, ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা জামালকে হত্যা করেছে। ৯ পুলিশ কর্মকর্তা ৩ বছর ধরে মামলাটি তদন্ত করেন। ২০০৬ সালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্রে সরওয়ার জামাল নিজাম ও তার ভাই মারুফ নিজামসহ ২৪ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।
মামলার অন্যতম আসামি মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জামাল উদ্দিনকে অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও হত্যার পর লাশ গুমের ঘটনায় জড়িতদের সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয়। ২০১৪ সালে গ্রেপ্তার হওয়া আসামি সুলতান ড্রাইভার জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছিলেন, জামাল উদ্দিনকে কাঞ্চননগরের গহিন পাহাড়ে নিয়ে যান তিনি। গুলি করে হত্যার আগ পর্যন্ত তিনি, কালা মাহবুব, লম্বা মাহবুব ও টেংরা ওসমান জামাল উদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন।
সিআইডির তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিহত জামাল উদ্দিন ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহসভাপতি। সে সময় সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারা থেকে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি। মনোনয়ন ঠেকাতে এবং কোটি টাকা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। টাকা পেতে দেরি হওয়ায় খুন করা হয় তাকে।
সিআইডির অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে বাদী আদালতে নারাজি আবেদন করেন। অন্যদিকে মামলার আসামি কালা মাহবুবকে রাজসাক্ষী করায় আপত্তি জানিয়ে মারুফ নিজাম উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেন ২০০৭ সালে। ২০১১ সালে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন আসামিরা। আবেদনটি খারিজের আদেশ চট্টগ্রাম আদালতে এসে পৌঁছায় ২০১৬ সালে। ২০১৭ সালে আদালত সিআইডির অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এবং বাদীর নারাজি আবেদন খারিজ করে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চট্টগ্রামের একটি আদালত আসামিদের মধ্যে অভিযোগ গঠন করে।
২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর নগরের চকবাজার এলাকার এক দোকানদার সর্বশেষ এ মামলায় সাক্ষ্য দেন চট্টগ্রাম দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে। মামলাটি বিচারের জন্য ২০১৯ সালের মে মাসে পঞ্চম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে আসে।
বাদী চৌধুরী ফরমান রেজা লিটন কয়েক মাস আগে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমার বাবা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীদের আইনের আওতায় আনতে বছরের পর বছর আইনি লড়াই চালিয়েছি। কিন্তু তা আনা হয়নি। বিচারের আশা করে লাভ কী।’
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা আজ শুক্রবার। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান।
‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শুক্রবার (৯ জুন) বিএবি’র উদ্যোগে ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন ও বাণিজ্য পারস্পরিক আস্থার সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-বিধান, মেট্রোলজি, নিরপেক্ষ ও স্বীকৃত সাযুজ্য নিরূপণ ব্যবস্থা একটি দেশের গুণগত মান অবকাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি, যা ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রমকে সহজতর করার পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণে অ্যাক্রেডিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় মান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ভোক্তা ও উৎপাদকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটেশন বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ প্রেক্ষিতে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য-‘অ্যাক্রেডিটেশন : সাপোটিং দ্যা ফিউচার অব গ্লোবাল ট্রেড’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএবি অ্যাক্রেডিটেশন সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।
মাত্র এক বছরেই পাল্টে গেছে বাংলাদেশের চিত্র। শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়ে ঋণদাতা হিসেবে গর্ব করা দেশের মানুষের এখন নাকাল দশা। বিদেশি মুদ্রা বিশেষ করে ডলার সংকটের কারণে সরকার জরুরি অনেক পণ্য আমদানি করতে পারছে না। এতে সরবরাহজনিত সংকট তৈরি হয়ে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম।
একই কারণে জ¦ালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে যাওয়ায় ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে। গরম আর লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত মানুষ। হিটস্ট্রোকে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। বাধ্য হয়ে সরকার অনেক স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে। বিদ্যুতের পাশাপাশি গ্যাস সংকটে শিল্পোৎপাদন কমে ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে। এটিও পণ্যমূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ।
এমন পরিস্থিতিতে পরিকল্পনামন্ত্রীও স্বীকার করেছেন, নিত্যপণ্য আর বিদ্যুতে ভয়াবহ সংকটে আছে বাংলাদেশ।
সর্বশেষ মে মাসের মূল্যস্ফীতি গত ১২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। রেকর্ড মূল্যস্ফীতির কারণে জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। কিন্তু আয় বাড়েনি। ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সংগতি না মেলায় ধার করে চলতে হচ্ছে অনেককে। এখন গ্রামের চেয়ে শহরের মানুষের নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে খরচ করতে হচ্ছে বেশি। যেটি কয়েক মাস আগেও গ্রামে বেশি ছিল। ব্যয়ের চাপ সামলাতে অনেকেই শহর ছেড়ে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শুধু আমদানি পণ্যে নয়, দেশে উৎপাদিত পণ্য ঘিরেও নানান সিন্ডিকেট সক্রিয়। এসব সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সব পণ্য। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। এক বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চমূল্যে পণ্য কিনতে গিয়ে বেসামাল হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) বাজেট পরবর্তী আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে বলেন, বিশে^র প্রায় সব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। শুধু বাংলাদেশ এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম।
২০২১ সালের আগস্টে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল। করোনায় আমদানি কমে যাওয়ায় এবং অনেক ঋণপত্রে (এলসি) নিষ্পত্তি ছয় মাস থেকে এক বছর পিছিয়ে দেওয়ায় রিজার্ভ ওই পরিমাণে উন্নীত হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ সব পণ্যের দাম ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে ব্যাপক ঘাটতি তৈরি হয়। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এক বছরের মধ্যে ৩০ বিলিয়নের নিচে নেমে আসে। বেসরকারি খাতের স্বল্পমেয়াদি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ঋণ পরিশোধের চাপ এবং আমদানির পুরনো দায় পরিশোধের চাপে বেসামাল হয়ে পড়ে সরকার।
ফলে ২০২১ সালে যেখানে শ্রীলঙ্কাকে ধার দিয়েছিল বাংলাদেশ ২০২২ সালে সেই বাংলাদেশকেই ডলার ধারের জন্য আন্তর্জাতিক পরিম-লে হাত পাততে হয়েছে। নানা রকম শর্ত মেনে আইএমএফের কাছ থেকে ধার নিতে হয় বাংলাদেশকে। সংস্থাটির কাছ থেকে সাড়ে তিন বছরের কিস্তিতে ৪৭০ কোটি ডলার ধারের প্রথম কিস্তি পেলেও দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং আইএমএফের শর্তের কারণে রিজার্ভ ন্যূনতম পর্যায়ে রাখতে গিয়ে আমদানি সীমিত করে আনতে হয়েছে। অনেক আমদানির বিলও বকেয়া পড়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে নেমেছে যে, এখন জরুরি প্রয়োজনের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা, এলএনজির মতো জ¦ালানিও আনতে পারছে না।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) সর্বশেষ হিসাব বলছে, শিল্পের অবদান কমেছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে জিডিপিতে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭৯ শতাংশে। আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
সামগ্রিক এই সংকটের বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, জ¦ালানি সংকট সমাধানে যেগুলো ডেফার্ড পেমেন্ট আছে সেগুলো দিতে হবে। সেগুলো দিয়ে যে সাপ্লাই চেইন বন্ধ আছে সেগুলোকে সচল করতে হবে। এটাকে প্রথম অগ্রাধিকার দিতে হবে। দরকার হলে অন্য জায়গায় যে প্রকল্পগুলো আছে সেসব প্রকল্পে ধীরে যেতে হবে। প্রকল্পের টাকা এখানে নিয়ে আসতে হবে। কারণ আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হচ্ছে। ডলার খরচের ক্ষেত্রে জ¦ালানিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এখন জ¦ালানি না কিনে যদি রিজার্ভ বাড়ানোর চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে রপ্তানিকারকরা রপ্তানি করতে পারছেন না। কারণ তারা উৎপাদন করতে পারছেন না। তখন রপ্তানি আয়ও কমে যাবে। তখন রিজার্ভে অন্য সমস্যা আসবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদ্ধতি কী হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. মোস্তাফিজ বলেন, বাজারে খুব দ্রুত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজস্ব নীতি এবং মুদ্রানীতি দুটোই ব্যবহার করতে হবে। এখন টাকার সরবরাহ যা আছে তা কমাতে হবে। সুদহারকে বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে। আর যেসব জায়গায় প্রয়োজন আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট যৌক্তিকীকরণ করতে হবে। পেঁয়াজের বাজারে কী হলো সেটি তো দেখা গেছে। উৎপাদন কত, চাহিদা কত এগুলো ঠিক মতো পর্যালোচনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সময়মতো আমদানি করলে তো এটি এতটা বাড়ত না।
তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতির এমন পরিস্থিতিতে ফ্যামিলি কার্ড বাড়াতে হবে। খোলাবাজারে বিক্রি করে কিছুটা সামাল দিতে হবে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।