
নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশীদ খানকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় সন্দেহভাজন ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ঘটনার মূল অভিযুক্ত আরিফ সরকার ও মহসিন মিয়া নামে দুজনকে ঢাকায় আটক করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পুলিশের দাবি, ঘটনার নেপথ্যে ৩ কোটি টাকার হাট ইজারা নিয়ে বিরোধ থাকতে পারে। তবে স্বজনদের দাবি, চেয়ারম্যানকে গুলির নেপথ্যে স্থানীয় রাজনীতির বিরোধ।
আটকরা হলেন আরিফ সরকারের বড় ভাই শিবপুর থানার পুটিয়া কামারগাঁও এলাকার ফরিদ সরকার (৬৩), সৈয়দনগর এলাকার মো. সাব্বির (৩২), পূর্ব সৈয়দনগর এলাকার মনসুর আহমেদ রানা (৪৩) ও কামারগাঁও এলাকার মোমেন মোল্লা (৫৯)। আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিবপুর থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার। তবে এ ঘটনায় এখনো থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি চেয়ারম্যানের পরিবার।
শনিবার সকালে হারুনুর রশীদ খানের বাসায় প্রবেশ করে তিনজন। কথা বলা শেষে নিজের কক্ষে প্রবেশের সময় পেছন থেকে দুই রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায় তারা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হারুনুর রশীদ খানের অস্ত্রোপচার হয়েছে। ৭২ ঘণ্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে তাকে। তার ভাতিজা রাব্বি খান জানান, তিনি এখন শঙ্কামুক্ত হলেও আর আগের মতো হাঁটতে পারবেন না। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসীদের ছোড়া দুটি গুলির মধ্যে একটি তার মেরুদ-তে বিঁধে তা ছিঁড়ে গেছে। এ বয়সে এটি আর জোড়া লাগা সম্ভব নয়। যতদিন বেঁচে থাকবেন তিনি, ততদিন তাকে হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করতে হবে।
স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হারুনুর রশীদের বিরোধিতা করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর হয়ে কাজ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। এমপির বিরোধিতার পরও তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর থেকেই তাদের সম্পর্কের টানাপড়েন চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় টানা ২৫ বছর দায়িত্ব পালন করা হারুনুর রশীদকে। এ ঘটনার জন্যও দায়ী করা হয় স্থানীয় সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহনকে।
চেয়ারম্যানের ভাতিজা নরসিংদী জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইফতেখার উদ্দিন খান নিপুণ বলেন, ‘যাদের মদদে দল থেকে চাচাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল তাদের মদদেই তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। যাদের নাম আলোচনায় আসছে তারা হলো ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী। তারা অর্থের বিনিময়ে কার নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছে। চাচার তুমুল জনপ্রিয়তাই ঈর্ষান্বিত হয়ে তারা ওনার বড় ভাই কিরণ খানের মতো ওনাকেও হত্যা করতে চেয়েছে।’
তবে পুলিশের বিভিন্ন সূত্র জানায়, উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলি করার ঘটনায় সিসি টিভির ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায় এরই মধ্যে তিনজনকে শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশের দাবি, স্থানীয় হাটের ইজারা নিয়ে বিবাদে শনিবারের এ ঘটনা ঘটে। দেশের অন্যতম বড় গরুর হাট শিবপুরের পুটিয়ায় চলতি বছর ৩ কোটি টাকার ইজারা নিয়ে এ বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে।
শিবপুর মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ খানকে গুলির ঘটনায় থানা পুলিশ গতকাল দুপুর পর্যন্ত চারজনকে আটক করেছে। আটকদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পালপাড়া বাজার রোডের পাশের একটি নির্জন বাড়ি থেকে হামলার ঘটনায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ করা করেছে। ঘটনার মূল অভিযুক্ত আরিফ সরকারসহ দুজনকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আটক করেছে বলে জেনেছি। ওসি আরও বলেন, এ ছাড়া এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় অভিযোগ করা হয়নি। আমরা আহত উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি সুস্থ হয়ে অভিযোগ দায়ের করবেন।
এদিকে প্রবীণ এ রাজনীতিকের ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে পুরো জেলায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সরকারদলীয় নেতাকর্মীসহ সুশীল সমাজের লোকজনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও সাবেক এমপি সিরাজুল ইসলাম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দল ক্ষমতায় অথচ আমরা গুলিবিদ্ধ হই। শিবপুর থেকে চিরতরে এই অপরাজনীতি দূর করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তা চাঁদের আলোর মতো পরিষ্কার। আমরা চাই পুলিশ তাদের আটক করে আইনের আওতায় আনুক।
১৯৮৬ সালে উপজেলা চেয়ারম্যানের বড় ভাই আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি রবিউল আওয়াল কিরন খানকেও সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করেছিল। ৩৭ বছর পরও সেই হত্যা মামলার কোনো কিনারা হয়নি।
দেশে বর্তমানে সচল রয়েছে প্রায় ১৮ কোটি ৮ লাখ মোবাইল সিম। এর ৭ কোটি ৯৩ লাখ সিমই গ্রামীণফোনের; অর্থাৎ মোবাইল ব্যবহারকারীদের ৪২ শতাংশই গ্রামীণফোনের গ্রাহক। গত বৃহস্পতিবার প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্কে বিপর্যয় ঘটেছিল। এতে বিভিন্ন স্থানে বন্ধ ছিল কল করা বা কল আসা। ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ ছিল। কোটি কোটি গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়েন। মোবাইল সিমের সঙ্গে যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান জড়িত, তারাও বিপাকে পড়েন।
মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের তথ্যানুযায়ী, প্রতিদিন গ্রামীণফোনে প্রায় ৯০ কোটি কল আসা-যাওয়া করে। প্রতি ঘণ্টায় কল আসা-যাওয়ার পরিমাণ ৩ কোটি ৭৫ লাখ। সোয়া দুই ঘণ্টায় প্রায় ৮ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার কল আসা-যাওয়ার কথা। যেহেতু কোথাও সোয়া দুই ঘণ্টার আগেই নেটওয়ার্ক ফিরেছে, তাই বৃহস্পতিবার ওই সময়ে কমপক্ষে ৬ কোটি কল বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকতে পারে। আর মোবাইল সিমনির্ভর আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কত টাকার লেনদেন বাধাগ্রস্ত হয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে জানা না গেলেও ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার মতো হবে।
মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রথমত, যদি টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জে ফাইবার কেব্্ল বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকে, তাহলে সারা দেশে নেটওয়ার্ক বিপর্যয় হলো কেন? দ্বিতীয়ত, গ্রামীণফোন ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ ফাইবার কানেকশনের মাধ্যমে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে থাকে। ধরে নিলাম সাময়িক সময়ের জন্য ফাইবার কানেকশন বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তাহলেও তারা মাইক্রোওয়েভ দিয়ে সার্ভিস দিতে পারত। কিন্তু সেটা হয়নি। কমিশনের উচিত হবে, একটা তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রকৃত কারণ জানা। তাহলে ভবিষ্যতে গ্রাহকরা এমন ভোগান্তিতে পড়বেন না।’
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক বিপর্যয়ের পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন গ্রাহকরা। বিভ্রাটের এই সময়টায় ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণফোন ব্যবহারকারীরা মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাননি। ইন্টারনেট সেবাও পাওয়া যাচ্ছিল না। জরুরি যোগাযোগ করতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েন গ্রাহকরা। অনেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। অনেকের ব্যবসায়িক যোগাযোগ বা পেশাগত দায়িত্ব পালনও বাধাগ্রস্ত হয়।
জানতে চাইলে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরাসরি মোবাইল সিমের পাশাপাশি অ্যাপের মাধ্যমেও আমাদের লেনদেন করা যায়। যখন গ্রামীণফোনের নেটওয়ার্ক ছিল না, তখন ওয়াই-ফাই সংযোগের মাধ্যমে আমাদের অ্যাপ চলেছে। তবে দুই ঘণ্টার বেশি দেশের কোথাও কোথাও নেটওয়ার্ক না থাকায় মোবাইল অপারেটর কোম্পানি যেভাবে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমরাও সেভাবে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তবে এ ব্যাপারে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।’
তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়নকাজের জন্য আমাদের দেশের রাস্তাঘাট প্রায়ই খোঁড়া হয়। গত বৃহস্পতিবারের মতো ভবিষ্যতেও ফাইবার কাটা পড়ার আশঙ্কা আছে। এখন মানুষ মোবাইল ফোন কল ও ইন্টারনেটের ওপর অনেক নির্ভরশীল। উন্নয়নকাজের সময় মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সঠিক সমন্বয় করে নেওয়া দরকার। মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোরও একাধিক ব্যাকআপ রাখা উচিত। ব্যাকআপেরও বিকল্প থাকা উচিত। ভবিষ্যতের জন্য আরও সতর্ক হতে হবে।
গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস খায়রুল বাশার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একসঙ্গে একই ব্যাকবোনের তিনটা ফাইবার কাটা পড়েছিল। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি, যত দ্রুত সম্ভব রিকভার করতে এবং আমরা সেটা পেরেছি। ছোটখাটো ফাইবার কাটা পড়ার ঘটনা নিয়তই ঘটছে। সমস্যা ছোট হওয়ায়, তা কেউ টের পায় না। বৃহস্পতিবারের ঘটনাটা বড় ছিল। তাই কিছু সময়ের জন্য নেটওয়ার্ক বিভ্রাট হয়েছিল। গ্রামীণফোন সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ‘ভিডব্লিউডিএম’ ব্যবহার করে। আগামীতে আমাদের সেবার মান ও প্রযুক্তি কীভাবে আরও ভালো করা যায়, তার চেষ্টা আমাদের আছে।’
গ্রাহকসংখ্যায় শীর্ষে থাকলেও গ্রামীণফোনের সেবার মান নিয়ে অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের। কলড্রপ, মিউট কল, যথাযথ ইন্টারনেট সেবা না পাওয়া, চমকপ্রদ প্যাকেজ ঘোষণার আড়ালে সঠিক সেবা না পাওয়া প্রভৃতি।
গত বৃহস্পতিবার নেটওয়ার্ক বিপর্যয়ের পর ওই দিনই টেলিযোগাযোগ খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তরফে ব্যাখ্যা চেয়ে জরুরি চিঠি পাঠানো হয়েছিল গ্রামীণফোনের সিইওকে। ইতিমধ্যেই জবাব দিয়েছে গ্রামীণফোন। জবাব পর্যালোচনা করছে বিটিআরসি।
মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাকি আর মাত্র এক দিন। বাজছে ভাঙনের সুর। লেখক-পাঠক, প্রকাশক-বিক্রেতা, সাহিত্যিক-বইপ্রেমীদের মধ্যে দেখা যায় তার আভা।
গতকাল রবিবার মেলার বিভিন্ন স্টলে, নজরুল মঞ্চে, মূলমঞ্চসহ মেলাজুড়েই ছিল বিদায়ের সুর। এক মাসের জন্য সাজানো বিভিন্ন নকশা ও আলপনাতেও দেখা গেছে শেষ হয়ে যাওয়ার মৌনতা। গতকাল অনেককেই এবারের মতো মেলা থেকে বিদায় শুভেচ্ছা জানাতে শোনা যায়। যারা হয়তো সামনের দুটি দিনে মেলায় আসবেন না তারা পরিচিতজনদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নিচ্ছেন।
এদিকে শেষবেলায় জমে উঠেছে মেলা। বইপ্রেমীরা ছুটছেন স্টল থেকে স্টলে। পছন্দের লেখকের বই কিনতে ছুটছে এক স্টল থেকে অন্য স্টলে। প্রকাশকরাও পার করছেন ব্যস্ত সময়। প্রতিটি স্টলের বিক্রয়কর্মীদের যেন দম ফেলার সময় নেই। গতকাল ছিল মেলার ২৬তম দিন। এদিন বিকেল বেলায় মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশ ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি স্টলে বইপ্রেমীদের লম্বা ভিড়। প্রায় সবার হাতেই বইয়ের একাধিক ব্যাগ। এদিন মেলায় আসা বইপ্রেমীদের প্রায় সবাই বই কিনেই বাড়ি ফিরেছেন। কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেজাউল আলম সোহেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, সারা বছরই বই কেনা হয়। কিন্তু মেলা থেকে বই কেনার অন্যরকম আনন্দ রয়েছে। প্রথম দিকে মেলায় এসে বইয়ের ক্যাটালগ সংগ্রহ করেছি। সেখান থেকে বাছাই করে ১৫টি বই কিনেছি। এদিকে শেষবেলার বিক্রিতে প্রকাশরাও খুশি।
গতকালও মেলার চিত্র ছিল অন্য সব দিনের মতোই। বেলা ৩টায় মেলার প্রবেশদ্বার উন্মুক্ত হওয়ার আগে থেকেই ছিল মেলার দুপাশের প্রবেশপথ ও এর আশপাশে ভিড়। মেলার দ্বার উন্মুক্ত হওয়ার পর যথারীতি ধীরে ধীরে ভিড় বাড়তে থাকে। বিকেলের দিকে শিশুই বেশি এসেছে বাবা-মায়ের হাত ধরে। সন্ধ্যার আগেই মেলা তার পূর্ণরূপ লাভ করে।
নতুন বই : গতকাল ছিল অমর একুশে বইমেলার ২৬তম দিন। মেলা শুরু হয় বেলা ৩টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। নতুন বই এসেছে ১৫৫টি।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় সাহিত্যের বৈভব ও জেলা সাহিত্যমেলা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাইমন জাকারিয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মুন্সি আবু সাইফ, সাহেদ মন্তাজ এবং মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির বহুমাত্রিক ধারা-উপধারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক সাহিত্যের বাইরে বিভিন্ন জেলায় জেলায়। কিন্তু ঢাকার বাইরে চর্চিত সাহিত্যের সৃষ্টিশীল বৈভবকে পর্যবেক্ষণ ও সংকলন করার প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ বাংলাদেশে অতীতে কখনো গৃহীত হয়নি। স্থানীয় সাহিত্যস্রষ্টাদের সৃষ্টিকর্মকে মূল্যায়ন ছাড়া সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের সাহিত্যের ইতিহাস রচনা করা সম্ভব নয়। এসব দৃষ্টিভঙ্গিকে সামনে নিয়েই বাংলা একাডেমি জেলা সাহিত্যমেলার রূপরেখা প্রণয়ন করে এবং তা সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রতিটি অঞ্চলের জেলা প্রশাসনকে প্রেরণ করে।
আলোচকরা বলেন, সাহিত্য জনমানুষের কথা বলে। স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে হবে। এ জন্য জেলা সাহিত্যমেলা বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। জেলা সাহিত্যমেলায় অংশ নিয়ে স্থানীয় লেখক, সাহিত্যিকরা নিজেদের মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপন করতে পেরেছেন। এর মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ে সাহিত্য উপকরণাদি সংরক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জেলা সাহিত্যমেলার নিয়মিত আয়োজন দেশের শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চাকে বেগবান করবে।
সভাপতির বক্তব্যে সেলিনা হোসেন বলেন, আঞ্চলিকতাকে অবলম্বন করেই বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধ হয়েছে। তাই স্থানীয় সাহিত্যকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এ লক্ষ্যে আয়োজিত জেলা সাহিত্যমেলা আমাদের সাহিত্যের দিগন্ত প্রসারিত করবে।
গতকাল লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন সোহেল আমিন বাবু, হরষিত বালা, আসাদুজ্জামান আসাদ, মাহফুজা অনন্যা এবং মোহাম্মদ আলমগীর আলম।
আজকের অনুষ্ঠানসূচি : আজ সোমবার বইমেলার ২৭তম দিন। মেলা চলবে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ববাঙালির সাহিত্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন আলম খোরশেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন এএফএম হায়াতুল্লাহ, আ-আল মামুন, জসিম মল্লিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
শেষ হয়ে আসছে বইমেলা। তবু প্রাণের মেলায় শেষ নেই পাঠকের আনন্দময় স্পন্দন। তেমনি এক পাঠক মুজাহিদ ইসলাম আদনান। শেষ সময়ে লক্ষ্মীপুর থেকে পছন্দের লেখকের বই সংগ্রহ করতে মেলায় এসেছেন। জানতে চাইলে আদনান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অমর একুশে বইমেলা মানেই নতুন বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, বন্ধুদের সঙ্গে মেলার আনন্দ ভাগাভাগি করা অন্য রকম এক আনন্দ।’
গতকাল বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণে তিনি বলেন, ‘মেলার পরিবেশ দারুণ। তবে মনে হচ্ছে, প্যাভিলিয়নগুলো একটু জায়গা সংকটে ভুগছে। শিশু চত্বরে এক চেটিয়া প্রাণের উচ্ছ্বাস এবং অন্ধকারে ধুঁকছে লিটল ম্যাগ চত্বর।’
কেমন বই চান জানতে চাইলে আদনান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রোমান্টিক কবিতার বই বেশি বেশি চাই। এবারে মেলায় প্রচুর কবিতার বই এসেছে। তবে সেসব কবিতার মান নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে। যতটা সম্ভব কবিতার বই দেখেছি, সবগুলোতেই “আমি-তুমি”র ছড়াছড়ি।’
নতুন লেখকদের বিষয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ লেখক মানসম্মত গল্প উপহার দিতে পারেননি। আমাদের মাঝে এখন পর্যন্ত সেই সব গুণী লেখক সাবেক হয়েছেন, তাদের জায়গায় নতুনদের আসতে হবে। এর জন্য তাদের লেখার গঠনমূলক সমালোচনা করতে হবে পাঠকদের।’
পাঠক হিসেবে মেলার প্রত্যাশা কতটা পূর্ণ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মেলা একজন পাঠকের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রাঙ্গণ আসে আবার সময় হলে ফিরে যায়। তবে লেখক-প্রকাশকের নিরলস শব্দযুদ্ধ তার সঠিক রাস্তা দেখে পাঠকের পথ অনুসরণ করে। পাঠক যখন বাছাইকৃত বই তার ঘরে নিয়ে ফেরেন, তখনই মেলার প্রত্যাশা পূরণ হয়।’
কথাসাহিত্যিক ও অনুবাদক জিয়া হাশান এবার বইমেলায় নিয়ে এসেছেন নাৎসি গণহত্যার স্মৃতিচারণামূলক বই ‘সেই রাত’। এটি অনুবাদ বই। প্রকাশ করেছে কথাপ্রকাশ। বইটির মূল লেখক এলি উইজেল। তিনি তার কিশোর বয়সে নাৎসি বন্দিশিবিরে দীর্ঘদিন আটক ছিলেন। সেখানেই তিনি মা ও ছোট বোনকে হারান। আর তার বাবা নাৎসিদের নিপীড়নের শিকার হয়ে ধুঁকে ধুঁকে প্রায় চোখের সামনে মারা যান। বইটিতে সাবলীল ভাষায় গল্পের মতো করে পুরো ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে।
পাঠক নিয়ে জিয়া হাশান বলেন, ‘এমনিতে সাহিত্যের পাঠক সব সময়ই কম। এখন আবার বইমেলায় প্রচুর মোটিভেশনাল বই প্রকাশিত হয়, এতে সাহিত্যের পাঠক আরও কমে গেছে বলে আমার ধারণা। আবার আগে কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা প্রচুর সাহিত্যের বই পড়ত কিন্তু ভবিষ্যতের চাকরির পেছনে ছুটতে গিয়ে তারা এখন পরিসংখ্যানগত কিংবা তথ্যমূলক বইয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে।’
নিজের বইয়ের পাঠক বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিজের পাঠকদের চেনা খুব সহজ ব্যাপার নয়। তবে যাদের কাছ থেকে লেখালেখির ফিডব্যাক পাই, তা থেকে কিছুটা বুঝতে পারি যে আমার বইপত্র কিছুটা অগ্রসর পাঠকরা পড়েন। একেবারে সাধারণ পাঠকরা বোধ হয় লেখাগুলো ধরতে পারে না।’
পাঠকের কথা বিবেচনা করে লেখেন না জানিয়ে জিয়া হাশান বলেন, লিখতে লিখতে একসময় যখন নিজস্ব পাঠক গড়ে ওঠে, তখন অনেক লেখককে দেখি পাঠকদের কথা বিবেচনা করে নিজের আখ্যান সাজান। আমার সে ধরনের কোনো প্রয়াস এখনো শুরু হয়নি।’
পাঠকের ওপর নিজের লেখার প্রভাব বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এমন কোনো প্রভাব এখনো নজরে আসেনি। তার জন্য আরও সময়ের দরকার বলে আমার মনে হয়।’
পাঠকের সঙ্গে স্মৃতির ঘটনা জানতে চাইলে জিয়া হাশান বলেন, ‘আমার একটা গল্প আছে “প্রাণ প্রোডাক্ট” নামে। ভালো ও মানসম্পন্ন ইটের প্রোডাক্ট পাওয়ার আশায় একটা ভাটার ভেতরে একটা প্রাণ বলি দেওয়ার আয়োজন করা হয়। এ নিয়ে গল্পটা। সেটা কলকাতার একটা ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়ার কিছুদিন পর ফেসবুকে এক পাঠক আমার কাছে জানতে চান যে আমাদের গ্রামের ইটের ভাটায় কয়েক বছর আগে এ রকম একটা ঘটনা ঘটেছে। আপনি ওপার বাংলায় বসে এপার বাংলার গল্প কীভাবে লিখলেন?’
জিয়া হাশানের বইয়ের তালিকা ‘সোনায় সোহাগা কাহিনি’ (গল্পগ্রন্থ); ‘চোর দেখার ফাঁদ’ (কিশোর গল্পগ্রন্থ); ‘শোনো বাতাসের সুর’ (হারুকি মুরাকামির উপন্যাসের অনুবাদ); ‘পরমপোলা’ (উপন্যাস) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে স্বামী-স্ত্রীসহ পাঁচজন দগ্ধ হয়েছেন। গতকাল রবিবার বেলা দেড়টায় ফতুল্লার রামারবাগ এলাকায় শাহানাজ বেগমের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। দগ্ধ পাঁচজনকেই রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাসটিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আল আমিন হোসেন (৩০) নামের এক গার্মেন্টস কর্মী এবং তার স্ত্রী সুখী আক্তারের (২৫) অবস্থা সংকটজনক। তাদের প্রায় পুরো শরীর দগ্ধ হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আল আমিন স্থানীয় মোতালেব মনোয়ারা গার্মেন্টসে আর স্ত্রী সুখী মেট্রো গার্মেন্টসে চাকরি করেন। তারা ওই বাড়ির নিচতলার একটি রুমে ভাড়া থাকেন। গতকাল দুপুরে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে খাবার গরম করার জন্য রান্নাঘরে যান সুখী। সেখানে দেশলাই জ্বালাতেই বিকট বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে রুমের দরজা-জানালা উড়ে যায়। পাশের বাড়ির চারটি রুমের জানালা ভেঙে চূর্ণ হয়ে যায়।
এতে তাদের দুজনের প্রায় পুরো শরীর পুড়ে যায়। পাশের রুমে থাকা আলেয়া বেগম (৬০), তার ছেলে জামাল হোসেন (৪০) এবং পাশের রুমে রাজমিস্ত্রির কাজ করা রফিক মিয়াও (৪৫) দগ্ধ হন। ওই সময় বাড়ির বাইরে থাকা কয়েকজন সামান্য আহত হন। তাদের স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক ফখর উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, তাৎক্ষণিক বিস্ফোরণের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাচ্ছে না। তদন্ত করে জানানো হবে।
এদিকে আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিনিধি বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. এস এম আইউব হোসেনের বরাতে জানান, দগ্ধদের মধ্যে সুখী ও আল আমিনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের শরীরের যথাক্রমে ৯৮ ও ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। বাকিরা সামান্য দগ্ধ হয়েছেন। তারা ঝুঁকিমুক্ত।
আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসা আল আমিনের চাচাতো ভাই মো. রাসেল জানান, আল আমিনের বাড়ি পটুয়াখালী সদর আলিয়াপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মো. শহিদ। আল আমিন ও সুখীর একমাত্র ছেলে গ্রামের বাড়িতে থাকে। দগ্ধ আলেয়া বেগম জানান, রান্নাঘরটিতে বেশ কয়েক দিন ধরে গ্যাস লিকেজের শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। এ জন্য চুলায় গ্যাস বের হতো না। লিকেজ হওয়া গ্যাস থেকেই বিস্ফোরণ হয়েছে বলে তার ধারণা।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতিতে জোর করে হারানো হয়েছে।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
এই নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি হলে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন তিনি। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্য দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করার তথ্য মিলবে তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এ সিটি ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত, ওই সূত্র দাবি করে। সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
নানা অব্যবস্থাপনায় এগোচ্ছে না প্রাথমিক শিক্ষা। প্রায় শতভাগ শিশু ভর্তির আওতায় এসেছে অনেক আগে। এরপর মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতের কাজ অনেকটাই আটকে আছে। খোদ সরকারি সংস্থার গবেষণায় উঠে এসেছে প্রাথমিকে চরম দুরবস্থার কথা। গবেষয়ণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, কাক্সিক্ষত মানের চেয়ে শিশুরা অনেক পিছিয়ে আছে। কিছু শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু কাজ করার চেষ্টা করলেও কথায় কথায় তাদের ওপর নেমে আসছে শাস্তির খড়গ। মানের উন্নয়ন না হলেও ঠিকই অধিদপ্তরে বসে ছড়ি ঘোরাচ্ছেন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় সম্প্রতি এই গবেষণা করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সেখানে দেখা যায়, করোনা সংক্রমণের আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা গড়ে ইংরেজি বিষয়ে যতটা শিখত, করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে তা সাড়ে ১২ শতাংশ কমে গেছে। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের হার কমেছে প্রায় সাড়ে ১৬ শতাংশ। আর তৃতীয় শ্রেণির বাংলায় কমেছে ১৫ শতাংশের মতো।
গবেষণার তথ্য বলছে, করোনার আগে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে শিখন অর্জনের গড় হার ছিল প্রায় ৪৯ শতাংশ। করোনাকালে বন্ধের প্রভাবে এই হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশ। একই শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ^পরিচয় বিষয়ে শিখন অর্জনের গড় হার ৫১ শতাংশের বেশি, যা আগে ছিল ৬৮ শতাংশের মতো। পঞ্চম শ্রেণির বাংলা, গণিত ও বিজ্ঞানেও ক্ষতি বেড়েছে।
এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ঘাটতি পূরণে এ ধরনের গবেষণার দরকার ছিল। আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখেই তা করা হয়েছে। আমরা এই গবেষণা প্রতিবেদন দু-এক দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। আমরা অন্তত এক বছরের জন্য রেমিডিয়াল ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছি। মন্ত্রণালয় সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রাথমিক শিক্ষা দিন দিন পিছিয়ে পড়লেও সেদিকে তেমন একটা নজর নেই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তারা ব্যস্ত আছে লাখ লাখ শিক্ষক এবং মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে। কেউ কথা বললেই তার ওপর নেমে আসছে শাস্তি। ফলে শিক্ষকরাও দিন দিন তাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন; কোনো রকমে দিন পার করছেন।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় উদ্ভাবনী ও অনন্য অবদানের জন্য ২০১৯ সালে সারা দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচিত হন রাজবাড়ী জেলার স্বাবলম্বী ইসলামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। একই বছর রাজধানীর মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষিক নির্বাচিত হন। সাধারণত আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী এসব শিক্ষকের হাতে পদক তুলে দেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি সেরা শিক্ষার্থীদের পদক দেওয়া হয় একই অনুষ্ঠানে। কিন্তু করোনাকালে তাদের হাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষক পদক তুলে দেওয়া যায়নি। গত ১২ মার্চ রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে তাদের হাতে এ পদক তুলে দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। তাই অনুষ্ঠানের কয়েক দিন আগে স্বাভাবিকভাবে তারা দাবি তুলেছিলেন, দেরি হলেও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে তারা পদক নেবেন; যা তাদের সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করবে। কিন্তু সেটা না হওয়ায় তারা প্রতিমন্ত্রীর হাত থেকে ঠিকই পদক নেন। তবে এর ৬৮ দিনের মাথায় এই শ্রেষ্ঠ শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবি তোলায় চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। একই ঘটনায় জয়পুরহাটের হিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মাহবুবুর রহমানকেও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। কারণ তার বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এ পদক নিতে ১১ মার্চ ঢাকা এসেছিল। ওই শিক্ষকও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক নেওয়ার দাবিকে সমর্থন করেছিলেন। সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও তাদের কাউকে শোকজ করা হয়নি; যা বিধিবহির্ভূত বলছেন শিক্ষকরা।
জানতে চাইলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. আবদুল আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সাময়িক বরখাস্তের পরবর্তী যে প্রক্রিয়া আছে, সেদিকেই আমরা যাব।’ এর বেশি কিছু তিনি বলতে রাজি হননি। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াতের সঙ্গে এসব ব্যাপারে কথা বলার জন্য গতকাল একাধিকবার চেষ্টা করলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পদক নেওয়া একজন শিক্ষকের জীবনে সেরা প্রাপ্তি। এ জন্য শিক্ষকদের দাবি থাকতেই পারে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। শিক্ষকদের যেভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক হয়নি বলে আমার মনে হয়। এর প্রভাব অন্যান্য শিক্ষকের মধ্যেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।’
শুধু তা-ই নয়, করোনাকালে বন্ধ থাকা প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখতে কিছু শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা স্বউদ্যোগে কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্ম চালু করেন; যাতে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষকদের মধ্যে আলোচনাসহ নানা কাজ করা হয়। এতে প্রতিটি ফেসবুক গ্রুপে লাখ থেকে হাজারো শিক্ষক যুক্ত হয়েছেন। এখনো সেসব গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু সেই গ্রুপগুলোকেই এখন শায়েস্তা করার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহারের অজুহাত দেখিয়ে অনলাইনে যুক্ত থাকা অনেক শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাকেই দেওয়া হচ্ছে কারণ দর্শানো নোটিস (শোকজ)। সরকার যেখানে শিক্ষকদের ডিজিটালি আপডেট হওয়ার কথা বলছে, সেখানে প্রায় অনেকটাই উল্টো পথে হাঁটছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে আসন গেড়ে বসেছেন কিছু কর্মকর্তা। অনেকেই ৬ থেকে ১২ বছর ধরে একই দপ্তরে চাকরি করছেন। তাদের যে দায়িত্বই থাক না কেন যত লাভজনক কাজ আছে, সেগুলোতেই তারা হাত দিচ্ছেন। যোগ্য কর্মকর্তাকে অধিদপ্তরে আনলে তাদের সরে যেতে হবে, এ জন্য তারা নানাভাবে ঊর্ধ্বতনদের ভুল বুঝিয়ে মাঠপর্যায়ে শাস্তি দিয়ে সবাইকে ভীত করে তুলছেন। এতে পিছিয়ে পড়ছে প্রাথমিক শিক্ষার মান।
প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকার পর গত মার্চ-এপ্রিলে অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি করা হয়। যদিও নিয়ম ছিল, অনলাইনে নির্দিষ্ট মানদন্ড পূরণ ছাড়া কেউ বদলি হতে পারবেন না। কিন্তু তা মানেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিয়ম ভেঙে কয়েক শো শিক্ষকের বদলির আদেশ জারি করা হয়। আর এই বদলি-পদায়নে বড় অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে বলে দাবি শিক্ষকদের; যা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে। আবার অনেক জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বদলিতেও সমন্বয়হীনতা দেখা দিচ্ছে। কাউকে ক্ষোভের বশবর্তী হয়েও অনেক দূরে বদলি করে দেওয়া হচ্ছে। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন।
জানা যায়, চলতি বছর থেকে প্রথম শ্রেণিতে চালু হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রম। আর আগামী বছর থেকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে এবং ২০২৫ সাল থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হবে। কিন্তু তা পড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নেই অধিদপ্তরের। শিক্ষকদের নামমাত্র প্রশিক্ষণেই দায়িত্ব শেষ করা হয়েছে। আসলে এই শিক্ষাক্রম শিক্ষার্থীরা কতটুকু আত্মস্থ করতে পারছে বা এ জন্য আর কী করা প্রয়োজন, সে ব্যাপারে তেমন নজর নেই।
এ ছাড়া এখনো প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বেতন পান ১১তম গ্রেডে ও সহকারী শিক্ষকরা পান ১৩তম গ্রেডে। দুই ধরনের প্রায় চার লাখ শিক্ষকই ১০ম গ্রেডে বেতনের দাবি করে আসছেন। এ ছাড়া সহকারী থানা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারাও দীর্ঘদিন ধরে নবম গ্রেডের দাবি করছেন। আর মাঠে কাজ করা এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তার পদোন্নতিও নেই বললেই চলে। কিন্তু এগুলো সমাধানেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের; যা প্রাথমিকের মান উন্নীতের ক্ষেত্রে বড় অন্তরায় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
প্রবীণ শিক্ষক নেতা মো. সিদ্দিকুর রহমান আরও বলেন, ‘এখনো মফস্বলে বা দুর্গম অঞ্চলের অনেক স্কুলেই এক-দুজন শিক্ষক। অনেক স্কুলে শিক্ষকের পদ তিন-চার বছর ধরে শূন্য। শিক্ষক না থাকলে এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপরও পড়ে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিকে সাধারণত দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা আসে। তাদের একটু আলাদা যতœ নেওয়া প্রয়োজন। সেগুলোও হচ্ছে না। শিক্ষকরাও তাদের বেতন-ভাতায় সন্তুষ্ট নন। সব মিলিয়ে আমরা প্রাথমিক শিক্ষায় কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে পারছি না।’
ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থী আজমত উল্লা খানকে।
গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনে উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) গত ১৫ মে থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় ওই শূন্য আসনে আজমতকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।
গাজীপুরের দ্বিধা-বিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতি জোর করে হারানো হয়েছে।
গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে গাজীপুরের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের ব্যাপারগুলো শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বোঝান পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে রাজনীতি শেষ হয়ে গেছে এমন নয়।
সূত্রটি আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তার যেমন শাস্তি দেন তেমনি যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা জাহাঙ্গীরের ভোটকে ঘিরে যে নাটকীয় আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলাধুলায় মেতেছে সে আজমতকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ভাবছেন আরও ওপরে।
প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালিগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। আজমতও টঙ্গী কালিগঞ্জের। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া এই জেলার বাসিন্দা আজমত। গাজীপুরের অনেক মানুষ ওই আসনে বসবাসও করেন। এসব মিলিয়ে আজমত প্রায়োরিটি পেতে যাচ্ছেন ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে।
আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।