
হালের জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন এবারের মেলায় এনেছেন দুটি উপন্যাস। এর একটি হলো ‘শঙ্খচূড়’, প্রকাশনা অন্যপ্রকাশ। উপন্যাসটি ইতিহাস আশ্রিত। বর্তমান ক্ষমতাকাঠামো, রাজনীতি, ক্ষমতার কেন্দ্র ও প্রান্তের দ্বন্দ্ব এবং দ্বৈরথের সঙ্গে এর ঘটনাবলির সাদৃশ্য রয়েছে।
অপর উপন্যাস ‘সে এসে বসুক পাশে’ প্রকাশ করেছে অন্যধারা। এটি সমসাময়িক সম্পর্ক, সম্পর্কের সংকট ও নানাবিধ সমীকরণ নিয়ে লেখা। নিজের লেখালেখির বিষয়ে সাদাত বলেন, ‘আমি চারপাশের ঘটনা এবং আমার কল্পনাজগতের সঙ্গে তার সংস্রবকে অবচেতনে ধারণ করি। আর এর মধ্যে যা প্রকাশিত হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি উন্মুখ হয়ে ওঠে বা প্রবল হয়ে ওঠে বলে মনে হয়, সেটিই প্রকাশ করি বা লেখি।’
এবারের বইমেলা ব্যক্তিগতভাবে তার জন্য ‘দারুণ’ জানিয়ে এই কথাসাহিত্যিক বলেন, ‘করোনাকালের সংকট কাটিয়ে যেন পুনরুজ্জীবিত এক বইমেলা উপভোগ করছি। তবে কাগজের দাম প্রভাব ফেলেছে পাঠকের ক্রয়ক্ষমতা এবং একই সঙ্গে প্রকাশকদের বই প্রকাশের সক্ষমতায়ও। এবার অনেক কম বই প্রকাশ পেয়েছে।’
নিজের লেখালেখির প্রভাব পাঠকের ওপর দেখতে পান জানিয়ে সাদাত আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, অবচেতনেই প্রিয় লেখকের লেখা, ভাবনা পাঠককে প্রভাবিত করে। অনুভূতিকে স্পর্শ করে।’
পাঠকের সঙ্গে নিজের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে সাদাত বলেন, ‘একবার কলকাতা বইমেলায় গেলাম। জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি থেকে এক প্রৌঢ় দম্পতি এসেছেন স্টলে। তারা এসে আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, “সাদাত হোসাইন আছেন?” প্রকাশক আমাকে দেখিয়ে বললেন, “ইনি সাদাত হোসাইন।” কিন্তু তারা কিছুতেই বিশ্বাস করছেন না। বারবার বলছেন, “আরেহ, এ নাহ্। অন্দরমহল, মানবজনম বই লিখেছেন, বয়স্ক কোনো লেখক হবেন। আর এটুকু ছেলে ওই বই কীভাবে লিখবে!” তারা যখন সত্যি সত্যি বুঝলেন যে আমিই লেখক, তখন জড়িয়ে ধরলেন। বইয়ের চরিত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করলেন, কাঁদলেন, আশীর্বাদ করলেন। আরেকবার কুনাল ভট্টাচার্য নামে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক, কানে শোনেন না। তাকে বাড়ি থেকে কেউ একা বের হতে দেয় না। কলকাতা থেকে অনেক দূরে থাকেন। উনি আমার এক প্রোগ্রামে আমার সঙ্গে দেখা করবেন বলে লুকিয়ে বাড়ি থেকে চলে এসেছিলেন।’
সাদাত হোসাইন আরও বলেন, ‘ফেসবুকের যুগেও বই থেকে প্রকাশনীর ঠিকানা নিয়ে শত শত পাঠক যে প্রকাশনীর ঠিকানায় চিঠি পাঠান...বইমেলায় অটোগ্রাফ নিতে এসে এমন সব কাণ্ড করেন, কখনো বিব্রতও হতে হয়। তবে একজন লেখকের জন্য পাঠকের ভালোবাসার চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু নেই, বড় পুরস্কারও কিছু নেই।’
সাদাত হোসাইনের জন্ম ১৯৮৪ সালের ২১ মে, মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন।
তার লেখা আলোচিত উপন্যাসগুলো হলো ‘আরশিনগর’, ‘অন্দরমহল’, ‘মানবজনম’, ‘নিঃসঙ্গ নক্ষত্র’, ‘নির্বাসন’, ‘ছদ্মবেশ’, ‘মেঘেদের দিন’, ‘অর্ধবৃত্ত’। এ ছাড়া লিখেছেন কবিতার বই। সাদাত চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গেও যুক্ত।
তিনি জিতেছেন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকার পুরস্কার, এসবিএসপি-আরপি ফাউন্ডেশন সাহিত্য পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গের চোখ সাহিত্য পুরস্কার, শুভজন সাহিত্য সম্মাননা ও এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার।
দেশের ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ জানে না তাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, অর্থাৎ ১০০ রোগীর মধ্যে ৬২ জনই জানে না তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। গত বছরের এপ্রিলে প্রকাশিত বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষক দলের এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এমন তথ্য জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাদা সেলিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন শহরে এই গবেষণা করা হয়। তাতে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ রোগী তাদের ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন না। অথচ এসব রোগীর কিছুদিন পর কিডনি ও চোখ নষ্ট হবে, হার্ট অ্যাটাক হবে, স্ট্রোক হবে। কাজেই তাদের চিকিৎসা শুরু করতে হবে। কিন্তু যেহেতু তার রোগ সম্পর্কে জানে না, তাই সে চিকিৎসাও করাবে না।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, মানুষকে জানতে হবে ডায়াবেটিস একবার হলে আপাতত নিরাময়যোগ্য নয়, রোগটি প্রতিরোধ করতে, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কিন্তু তারা তো জানেই না তারা রোগী। তাহলে তারা প্রতিরোধ করবে কীভাবে? এই দুটো কারণে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা খুব প্রয়োজন। সচেতন হতে হলে আগে টেস্ট করে নিতে হবে রোগ আছে কি না।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চার বছর আগে ঢাকা শহরে ১ লাখের বেশি লোকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছিল সমিতি। যেসব মানুষ জানে না তার ডায়াবেটিস আছে, তাদের নমুনা নেওয়া হয়েছিল। তাতে দেখা গেছে, ২৬ শতাংশ লোকের ব্লাডে সুগার আছে; অর্থাৎ তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। কিন্তু তারা সেটা জানে না।
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের গ্লোবাল সার্ভে অনুযায়ী, বিশ্বে যত ডায়াবেটিস রোগী আছে, তাদের ৫০ শতাংশই জানে না যে তাদের এই রোগ আছে। কারণ এটা একটা নীরব ঘাতক। এটা আস্তে আস্তে ক্ষতি করা শুরু করে।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস পালন করছে প্রতিষ্ঠানটি। দিবসটি উপলক্ষে সমিতির অন্যান্য অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত অধিভুক্ত সমিতিগুলো দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সর্বক্ষণ : সুস্থ দেহ, সুস্থ মন’।
বাংলাদেশে কত মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত : এ ব্যাপারে ডা. শাহজাদা সেলিম জানান, ২০২০ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন ২০২১ সালে যে হিসাব প্রকাশ করেছিল, তাতে বাংলাদেশে ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর বারডেম একটা গবেষণা করে। সেখানে মোট জনসংখ্যার ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে উল্লেখ করা হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশে ৩ কোটির বেশি ডায়াবেটিস রোগী। ফলে প্রকৃত রোগীর সংখ্যা কত, তা এখনো সুস্পষ্ট নয়। রোগীর প্রকৃত সংখ্যাটা জানা জরুরি।
কেন হচ্ছে, কী ঝুঁকি : দুটি বিষয় বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে মনে করেন ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাদা সেলিম। তিনি বলেন, একটি হলো কম বয়সীদের বেশির ভাগের ডায়াবেটিস হচ্ছে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে এ রকম নেই। টাইপ-২ ধরনের ডায়াবেটিস সাধারণত একটু বেশি বয়সীদের হয়। কিন্তু আমাদের এখানে ৭, ১০ ও ১২ বছর বয়সী, অর্থাৎ কম বয়সীদের হচ্ছে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সম্পর্কে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, ৫০ বছর বয়সেও যদি কারও ডায়াবেটিস হয় এবং ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে পুরুষদের ক্ষেত্রে সাড়ে ৫ বছর ও নারীদের ক্ষেত্রে সাড়ে ৬ বছর আয়ু কমে যায়। সে হিসাবে আমাদের দেশের কম বয়সীরা ১২-১৫ বছর আগেই মারা যাবে। অথচ দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে তারা আরও অনেক দিন বাঁচত।
বাংলাদেশের মানুষ প্রচুর খায় : ডায়াবেটিস ঝুঁকির মূল কারণ তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বলে মত দেন ডা. শাহজাদা সেলিম। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে সুগার বেড়ে যায়। সুগার একটা কার্বো-হাইড্রেট শর্করা; অর্থাৎ যেসব খাবার থেকে সুগার হয়, সেই খাবারগুলোই ডায়াবেটিসের প্রধান শত্রু। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে ভাত, রুটি, পাউরুটি, সেমাই, পায়েস, রসগোল্লা, চমচম, খেজুর, আম ইত্যাদি।
গত বছরের শুরুতে আমেরিকার বিখ্যাত একটি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য জানিয়ে বিএসএমএমইউ ও বারডেমের চিকিৎসকরা বলেন, বাংলাদেশের যেসব মানুষের ডায়াবেটিস নেই, তারা সারা দিন যে পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে, সেখানকার শর্করা থেকে পায় ৮০-৯০ শতাংশ ক্যালরি। অথচ ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রতিদিন দরকার ৪০-৫০ শতাংশ ক্যালরি। এই অতিরিক্ত খাবার রূপান্তর হয়ে সুগার হচ্ছে ও রক্তে মিশছে।
এ ব্যাপারে ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘আমাদের দেশে আরেকটা মারাত্মক ঝুঁকি হচ্ছে, আমরা প্রচুর খাই। অন্যান্য দেশে একবারে প্রচুর খায় না, তারা দিনে খন্ডিতভাবে খায়। খাওয়ার পর ব্লাড সুগার প্রচুর বেড়ে যাচ্ছে। ফলে যার ডায়াবেটিস নেই, তিনিও দ্রুত ডায়াবেটিসের দিকে যাচ্ছেন।’
কম খাওয়া ও বেশি হাঁটার পরামর্শ : ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে মুখের কাজ কম করার ও পায়ের কাজ বেশি করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, মানুষ সতর্ক হয়ে যত কম খাবে এবং যত বেশি হাঁটাচলা করবে, তত বেশি এই রোগ থেকে রক্ষা পাবে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমাদের দেশে একজন সুস্থ সবল মানুষের বছরে অন্তত দুইবার চিকিৎসকের কাছে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো উচিত। সেটা হচ্ছে না। কারও যদি তার রোগ সম্পর্কে জানা না থাকে বা অন্য রোগ দ্বারা আক্রান্ত না হয়, তা হলে সে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে যায় না। আমাদের শারীরিক শ্রম কমে যাচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বা বাড়ন্ত শিশু বা কিশোর কর্মহীন জীবন যাপন করছে, প্রচুর শর্করা খাচ্ছে। এতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ছে।’
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বিশ্বের সর্ববৃহৎ : আজ ৬৭তম প্রতিষ্ঠা দিবস বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির। এ ব্যাপারে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৫৬ সালের এই দিনে প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহিম ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। সমিতি প্রতিষ্ঠার কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, একজন চিকিৎসক হয়েও তিনি ডায়াবেটিস ভালো করতে পারছেন না। একবার ডায়াবেটিস হলো তো আর ভালো হবে না, নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। নিয়ন্ত্রণ করতে হলেও রোগীকে শিক্ষা দিতে হবে। রোগী ও পরিবেশকে সচেতন করতে হবে। এ কাজগুলোর জন্য একটা সমিতি দরকার, যারা ধারাবাহিকভাবে কাজগুলো করবে।’
এই বিশেষজ্ঞ জানান, সারা বিশ্বে ১৭০টি দেশে ২৬০টি ডায়াবেটিক সমিতি আছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমিতি। কারণ বিশে^র আর কোনো ডায়াবেটিক সমিতি রোগীদের চিকিৎসা করে না। তারা সচেতন করে। কিন্তু বাংলাদেশের সমিতি প্রথম দিন থেকেই রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে। দেশের ৬০ লাখ ডায়াবেটিস রোগী বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত সেবা নিচ্ছেন। প্রতি বছর এই সংখ্যা ৪-৫ লাখ করে বাড়ছে। চিকিৎসার পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে নানা কর্মসূচি পালন করছে সমিতি।
সমিতির কর্মসূচি : বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীতে সকাল সাড়ে ৮টায় শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের নিচে সচেতনতামূলক সেøাগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করবে। দুপুর ১২টায় বারডেম অডিটোরিয়ামে (তিনতলা) রয়েছে আলোচনা সভা। সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বারডেম ক্যাম্পাস এবং এনএইচএন ও বিআইএইচএসের বিভিন্ন কেন্দ্রসংলগ্ন স্থানে বিনা মূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয় করা হবে। হ্রাসকৃত মূল্যে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে (চারতলা) অনুষ্ঠেয় হার্ট ক্যাম্পে সাশ্রয়ীমূল্যে হৃদরোগীদের সেবা দেওয়া হবে।
বাংলা ভাষাভাষী মানুষের প্রাণের অমর একুশে বইমেলার এবারের আসর শেষ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। করোনা মহামারীর মধ্যে আগের দুই বছর সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও এবারের মাসব্যাপী বইমেলায় ফিরেছিল প্রাণের স্পন্দন। পাঠক, দর্শক ও প্রকাশকদের আনাগোনায় মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। মেলার শুরুর দিকে দর্শনার্থীর তুলনায় বই বিক্রি কম হলেও শেষ দিকে বদলায় সে অবস্থা। গতকাল সোমবার শেষের আগের দিনও তালিকা ধরে ধরে বই কিনেছেন পাঠক। এদিকে গতকাল অমর একুশে বইমেলার ২৭তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৫৮টি। এদিন বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশ্ববাঙালির সাহিত্য’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। তাতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আলম খোরশেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, আল মামুন এবং জসিম মল্লিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
আলম খোরশেদ বলেন, বিশ্ববাঙালি বলতে পুরো বিশ্বের বাঙালি সম্প্রদায়কেই বোঝানো হয়, যার মধ্যে বাঙালির সর্ববৃহৎ দুই ঠিকানা বাংলাদেশ ও ভারত অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া যেসব সাহিত্যিক দেশান্তরি হয়ে বিদেশে বসবাস করছেন এবং যারা বিদেশে অভিবাসনের পর সাহিত্য রচনা শুরু করেছেন, তাদের সবার সাহিত্যকেই বিশ্ববাঙালির সাহিত্য বলা যায়। তাদের মধ্যে কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, গবেষক, শিশুসাহিত্যিক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, ভ্রমণ সাহিত্যিক, অনুবাদক, বিজ্ঞান লেখকসহ সব ধরনের লেখকই রয়েছেন। তাদের লেখায় প্রবাস জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, উপলব্ধি, স্বদেশের স্মৃতি-আখ্যান, অভিবাসী জীবনের সংগ্রাম, সংকট ও স্বপ্নের কথা প্রকাশিত হয়।
আলোচকরা বলেন, বিশ্ববাঙালির সাহিত্যে প্রতিনিধিত্বকারী অনেক কবি, লেখক ও সাহিত্যিক বিশ্বের নানা প্রান্তে বসবাস করছেন। তাদের সাহিত্যের বহুমাত্রিকতা আমাদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা ভাষায় রচিত গ্রন্থের প্রতি প্রবাসী বাঙালিদের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের বাঙালিদের মধ্যেও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ^বাঙালির সাহিত্যকে বেগবান করার ক্ষেত্রে অভিবাসী সাহিত্যিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পরে ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন জাহিদ মুস্তাফা, মুমিত আল রশিদ, ফরিদ আহমদ দুলাল ও আরেফিন রব।
গতকাল শেষ বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মেলা ঘুরে দেখা যায়, পাঠক-লেখকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিন পাঠকরা তালিকা ধরে বই কিনেছেন।
মেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে ওপার বাংলার জনপ্রিয় কবি রুদ্রো গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেলা মানেই আমার কাছে একটি জাতীয় উৎসবের মতো। একটা নিকট ভালোবাসার টানে বাংলাদেশে ছুটে আসি। আবারও তার বিকল্প কিছু হয়নি। শুধু বাণিজ্যিক স্তরকে বাদ দিলেও এবারের মেলায় পরিপূর্ণতা রয়েছে।’
ভিন্ন মতের লেখকদের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গোস্বামী বলেন, ‘ভিন্ন মতের প্রকাশক ও লেখকদের মাঝে রাজনৈতিক বিরোধ না হওয়াই উচিত। আর যদি সৃজনশীলতার বাইরে রাজনৈতিক কোনো প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়, সেটি একান্তই রাষ্ট্রের বিষয়। তবে মানুষ হিসেবে ভুল সবার হয়। নিশ্চয়ই কোনো কারণ থেকে ভিন্ন মতের কোনো লেখকের লেখা বই নিষিদ্ধ করা হয়ে থাকে।
পাঞ্জেরী প্রকাশনীর ইনচার্জ ইফতেখার আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের সম্মিলিত শক্তি অনুধাবনের একটা মাধ্যম। পাঠক আসবেন, মেলা ঘুরবেন, আড্ডায় মাতবেন, পছন্দের লেখকের বই কিনবেন। তবে এবারের মেলায় জায়গা সংকট ছিল; বিশেষ দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় অনেক বেশি হয়েছে। ফলে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখতে তাদের অনেকের অসুবিধা চোখে পড়েছে। কিন্তু আমি সৃজনশীল সাহিত্যের পক্ষে।’
বই বিক্রি কেমন হয়েছে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় মেলায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়লেও বিক্রি বাড়েনি। অধিকাংশ লোক মেলায় আসছেন, বই দেখছেন এবং সেলফি তুলে চলে যাচ্ছেন। এতে করে আমাদের মাঝে লোক দেখানোর প্রবণতা ও সেলফি কালচার অনেক বেশি ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ দিনগুলোতে যে পরিমাণের দর্শনার্থী ছিল একটা করে বই কিনলে সব স্টল ফাঁকা হয়ে যেত।’
এদিকে এবারের বইমেলার শুরুর দিকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়া, মেলা চলাকালে অনেক বই নিষিদ্ধ করা ও মানহীন বইয়ে মেলা সয়লাভ নিয়ে পাঠক মহলে কিছুটা ক্ষোভ দেখা গেছে। তারা বলছেন, ভিন্ন মত প্রকাশের লেখা প্রকাশ ও মেলায় মানহীন বই প্রকাশের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির সতর্কতা জরুরি।
হুমায়ুন আজাদকে স্মরণ
বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর মৌলবাদী চক্রের সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীতে ‘হুমায়ুন আজাদের দিবসের ডাক: পাইরেসিমুক্ত বইমেলা চাই’ প্রতিপাদ্যে একুশে বইমেলায় গতকাল বিকেল ৫টায় তাকে স্মরণ করা হয়। লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের যৌথ উদ্যোগে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের তথ্যকেন্দ্রের সামনে আয়োজিত এ সভার শুরুতে তার স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি আসলাম সানী, কবি মোহন রায়হান, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, হুমায়ুন আজাদের ভাই সাজ্জাদ কবীর, বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গনি। বক্তারা বলেন, হুমায়ুন আজাদের হত্যাচেষ্টার বিচার অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং তার আদর্শে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ-রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই তাকে যথাযোগ্যভাবে স্মরণ করা হবে।
গতকাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন রোকেয়া ইসলাম, শেখর বরণ, সৌম্য সালেক, খসরু পারভেজ, সুবর্ণ আদিত্য, জান্নাতুল ফেরদৌসী এবং থিউফিল নকরেক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন সাইমুন আনজুম ইভান, সিদ্দিকুর রহমান পারভেজ, অনন্যা রেজওয়ানা ও ফারহানা তৃর্ণা। এ ছাড়া ছিল মিলন কান্তি দের রচনা ও নির্দেশনায় দেশ অপেরা যাত্রাপালার পরিবেশনা ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে’। সংগীত পরিবেশন করেন ডা. রেজাউর রহমান, মো. আলী হোসাইন, মীর তারিকুল ইসলাম, পল্লবী সরকার মালতী, ঝরনা রায় ভাবনা, মুন্নি কাদের, আঁখি আলম, আরিফ বাউল, কামাল আহমেদ, মো. আরিফুর রহমান চৌধুরী। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন গৌতম মজুমদার (তবলা), ডালিম কুমার বড়ুয়া (কিবোর্ড), মো. হাসান আলী (বাঁশি) এবং মো. ফারুক (অক্টোপ্যাড)।
আজকের সমাপনী অনুষ্ঠান: বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলা ও অনুষ্ঠানমালার সমাপনী দিন। মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ভাষণ দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৩’-এর সদস্য-সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
অনুষ্ঠানে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২, কবি জসীমউদদীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ এবং অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ উপলক্ষে বিভিন্ন গুণিজন স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হবে।
গুণিজন স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩
অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০২২ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য আগামী প্রকাশনীকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করা হবে। ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে আহমদ রফিক রচিত বিচ্ছিন্ন ভাবনা প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুকস, মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ রচিত বাংলা একাডেমি আমার বাংলা একাডেমি বইয়ের জন্য ঐতিহ্য এবং হাবিবুর রহমান রচিত ঠার : বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.-কে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হবে। ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খীকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করা হবে।
২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুথিনিলয় (প্যাভিলিয়ন), নবান্ন প্রকাশনী (২-৪ ইউনিট), উড়কি (১ ইউনিট) -কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হবে।
সন্ধ্যায় উদ্যানে সমাপনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের প্রাণের মেলা।
‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ এই স্লোগানে আগামী ১ মার্চ থেকে নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে রেলওয়ে ভ্রমণ। কাল থেকে যারা টিকিট কাটতে যাবেন তাদের অবশ্যই অনলাইনে নিবন্ধন থাকতে হবে। অনিবন্ধিত কেউ ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন না। একই সঙ্গে টিকিটের গায়ে যেহেতু যাত্রীর নাম লিপিবদ্ধ থাকবে তাই এই টিকিট দিয়ে অন্য কেউ ভ্রমণ করতে পারবেন না। রেলের টিকিট কালোবাজারি বন্ধে রেলওয়ের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে রেলওয়ের এ উদ্যোগকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় গরম আলোচনা চলছে। কেউবা এর পক্ষে বলছেন, আবার কেউবা এর বিপক্ষে। তবে প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বদলে নিয়ে যেতে হবে এই ধারণায় এক সময়ের হাতে লেখা টিকিট থেকে কম্পিউটারাইজ টিকিটের পর অনলাইন টিকিট চালু হয়েছিল। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নিবন্ধন প্রথা। জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। আর শুধু নিবন্ধিত ব্যক্তিরাই অনলাইনে বা কাউন্টারে গিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবে।
নতুন এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু পরিবর্তন হয়। রেলওয়ের টিকেটিং সিস্টেমও এমন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। টিকিট যার ভ্রমণ তার নিশ্চিত করতে নিবন্ধন প্রথা চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট আর কালোবাজারির হাতে যাবে না। নির্ধারিত মূল্যে যাত্রীরা টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।’
কিন্তু এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে এই নতুন প্রথা চালু করা এবং তা বাস্তবায়ন কঠিন হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথম দুই মাস একটু চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে মাঠপর্যায়ে তা তদারকি করার জন্য আমাদের টিম থাকবে। যাত্রীরা কয়েক মাসে অভ্যস্ত হয়ে গেলে আর সমস্যা হবে না।’
কীভাবে সংগ্রহ করা যাবে টিকিট : মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে BR-Space-NID number- Space- Date of Birth (সাল, মাস, দিন ফরম্যাটে) লিখে ২৬৯৬৯ নম্বরে সেন্ড করতে হবে। ফিরতি এসএমএসে নিবন্ধন সফল না ব্যর্থ হয়েছে তা জানা যাবে। বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট নম্বর ও ছবি দিয়ে নিবন্ধন আপলোড করবেন। ১২-১৮ বছর বয়সীরা জন্মনিবন্ধন প্রদান ও জন্মনিবন্ধন সনদ আপলোড করে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধন হয়ে যাওয়ার পর রেলওয়ে অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কাটা যাবে। একই সঙ্গে যদি কেউ কাউন্টারে গিয়ে সংগ্রহ করতে চান তিনি মোবাইল নম্বর বললে বুকিং সহকারী সেই নম্বরের বিপরীতে এনআইডি নম্বর ও নাম পেয়ে যাবেন এবং যাত্রীকে টিকিট দেবেন। তখন যে টিকিট প্রিন্ট করা হবে সেই টিকিটে যাত্রীর নাম ও এনআইডি নম্বর থাকবে।
একজন যাত্রী কয়টা টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন এমন প্রশ্নের জবাবে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগের নিয়ম অনুযায়ী চারটি করে টিকিট কাটতে পারবেন। তবে এই চারজনের যেকোনো একজনের সঙ্গে এনআইডির ফটোকপি থাকতে হবে যার নাম টিকিটের গায়ে লেখা থাকবে। যদি অন্য কারও টিকিট যাত্রীর কাছে পাওয়া যায় তাকে জরিমানা করা হবে।
এদিকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আগামী ১ মার্চ থেকে এই পদ্ধতিতে টিকিট বিক্রি করা হবে। তবে যেহেতু যাত্রার পাঁচ দিন আগে টিকিট বিক্রি শুরু হয় সে হিসেবে ১ মার্চ থেকে ৫ মার্চের টিকিট এ পদ্ধতিতে বিক্রি করা হবে। তাহলে বুঝা যাচ্ছে টিকিট যার ভ্রমণ তার প্রকৃতপক্ষে শুরু হবে ৫ মার্চ থেকে।
ফলাফলের প্রজ্ঞাপন (গেজেট) হওয়ার পরও প্রয়োজনে নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা চেয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তাবে সায় দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা জানান, জাতীয় নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনী আনার যে প্রস্তাব ইসি দিয়েছিল, তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছে আইন মন্ত্রণালয়। এটি সংসদে পাস হলে কোনো নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরও অনিয়ম প্রমাণিত হলে ইসি ওই নির্বাচন বাতিল করতে পারবে।
গতকাল নির্বাচন ভবনে রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘দু-একটা জায়গায় আরও চিন্তাভাবনা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় বলেছিল। তার মধ্যে একটা ছিল ইভিএমে আঙুলের ছাপ যে মেলে না, এতে ১ শতাংশ ভোটারকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার আঙুলের ছাপ ব্যবহারের বিষয়টি নির্ধারিত করা, এটা আমরাও চাচ্ছিলাম। আইনে এও চলে আসুক যে ১ শতাংশের বেশি অ্যালাউ করা হবে না। উনারা (আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা) জানালেন যে, এটা বিধিমালা দিয়ে কাভার করা সম্ভব। এই একটা পয়েন্টে উনারা আপত্তি করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটা বিষয় হচ্ছে, নির্বাচনের গেজেট হওয়ার পর অনিয়ম হলে আরপিওতে কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই। বন্ধ করাসহ অন্য উপায় অবলম্বনের জন্যই সংশোধনীর প্রস্তাবটা আমরা দিয়েছিলাম। ফলাফল ঘোষণার পরও যেন ক্ষমতাটা কমিশনের হাতে থাকে।’
রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আমি জয়েন করার কিছুদিন পরই একটা ফাইল এলো। এতে দেখলাম যে ময়মনসিংহের দুর্গাপুরে একটা নির্বাচনে বোধহয় ব্যালট ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। তখন কমিশন গেজেট হওয়ার পর ভোট বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্ট বলে দিয়েছিলেন যে, গেজেট হওয়ার পর কমিশনের করার কিছু থাকে না। এ জন্য কমিশনের হাতে ক্ষমতা যেন থাকে এ প্রস্তাব করেছিলাম আমরা। উনারা জানতে চাইলে আমরা এ ঘটনাটির ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম। তখন কোর্ট কমিশনের কাছে ব্যালট চাইল, কিন্তু এটি তো তখনো উদ্ধার হয়নি। তো যেটা উদ্ধার হয়নি, সেটা কীভাবে কোর্টকে দেবে। এ ক্ষেত্রে তো কমিশনের কিছু করার থাকবে না। এরকম পরিস্থিতি যদি সামনে আসে কমিশনের হাতে অবশ্যই একটা ক্ষমতা থাকা উচিত, যে ওই নির্বাচনটা বন্ধ করে দেওয়া যায়। কারণ যিনি বঞ্চিত হয়েছেন বলে মনে করেন, তার তো ক্ষতিপূরণের জায়গা নেই। এ কারণে আমরা সংশোধন আনার প্রয়োজন মনে করেছি। তিনি আইনের আশ্রয় নিতেই পারেন, এটা উনার রাইট।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয়ের যারা বৈঠকে ছিলেন তারা আমাদের জাস্টিফিকেশনে খুশি। তারা বলছেন আর কোনো অসুবিধা নেই। এখন কেবিনেটে যাবে। পাস হবে সংসদে। এটাই উনারা পাঠাবেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে এ কমিশনার বলেন, ‘প্রত্যেকটা নির্বাচনে আমরা বলেই দেব কত শতাংশ ভোটারের আঙুলের ছাপ না মিললে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তার আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে ইভিএমের ব্যালট ইউনিট ওপেন করতে পারবেন। কেননা, যার আঙুল নেই তাকে তো ভোট দেওয়ার সুযোগটা দিতে হবে।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসিনি। প্রত্যেক ভোটের আগে আমরা সার্কুলার দিয়ে দিতে পারব। কমিশন যখন সার্কুলার দেয় সেটাও কিন্তু আইন। আমরা আরপিওতে পাচ্ছি না, তবে বিধি দিয়ে করতে পারব। আমরা সার্কুলার দিয়েই আগে করেছি। একটা পরিপত্র দিয়ে দিলেই হবে।’
ভোটে সাংবাদিকদের দূরে রাখার বিষয়ে এ কমিশনার বলেন, ‘সাংবাদিকদের দূরে রাখতে চাই না। রংপুরে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সেটা আমরা দিইনি। কোথা থেকে যে হলো আমি নিজেও জানি না। হয়তো আগের কোনো নির্দেশনাই গেছে। সম্ভবত মোটরসাইকেল চলাচলের বিষয়টি নিয়ে বিষয়টা শুরু হয়েছিল। আমরা আপনাদের জন্য আরপিওতে ব্যবস্থা রাখছি। যন্ত্র-ফন্ত্র কেড়ে নিলে শাস্তির প্রস্তাব করেছি।’
রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেলের আলো ঝলমলে অডিটোরিয়ামে দেশি-বিদেশী মডেল ভাড়া করে এনে সাড়ম্বরে ঘোষণা করা হয়েছিল প্রথম ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক নারী ফুটবল আসর ওমেন্স সুপার লিগের। সিনে জগতের তারকাদের সঙ্গে মঞ্চে র্যাম্প করতে করতে প্রত্যাশার ঘুড়িটা দূর আকাশে উড়িয়েছিলেন সাবিনা-সানজিদারা। দেশের ফুটবলের বড় বিজ্ঞাপন এখন তারা। ফুটবলপ্রেমীদের তাদের নিয়ে অসীম আগ্রহকে পুঁজি করে কে-স্পোর্টস আর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন চেয়েছিল ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট করে ফায়দা লুটতে। তবে দিন যত গড়িয়েছে, মেয়েদের স্বপ্ন ধূসর হয়েছে। এখন তো তা মিলিয়ে গেছে বহুদূরে।
কে-স্পোর্টস-বাফুফের কর্তারা বুঝেছেন, তাদের লেখা চিত্রনাট্য আর বাস্তবতায় বড্ড ফাঁরাক। তাই তারা বারবার টুর্নামেন্ট শুরুর তারিখ দিয়েও আলোচিত টুর্নামেন্টকে মাঠে নিয়ে যেতে পারেননি। সর্বশেষ ১০ জুন আসর শুরুর ঘোষণা দিয়েছিলেন খোদ বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সেটাও মিথ্যে হয়ে গেছে। তাই হতাশা ছাঁপিয়ে নারী ফুটবলারদের মনে ভর করেছে রাজ্যের ক্ষোভ।
কে-স্পোর্টস আর বাফুফের কর্তারা ভেবেছিলেন এমন একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করতে হামলে পড়বে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো। গত বছর নেপালে সাফ শিরোপা জয়ের পর মেয়েদের নিয়ে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল, সেটাই আসলে স্বপ্নবাজ করে তোলে সালাউদ্দিন-মাহফুজা আক্তার-ফাহাদ করিমদের। তবে হয়েছে উল্টো। সেটাই যে হওয়ার কথা! কে-স্পোর্টস কিংবা বাফুফে, দুটি প্রতিষ্ঠানই যে এখন ভীষণভাবে ইমেজ সঙ্কটে ভুগছে। এর মাঝে অগোচরে একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, যেটা কখনই প্রত্যাশিত ছিল না। কে-স্পোর্টস আর বাফুফের দেখানো স্বপ্নে বুদ হয়ে গিয়েছিলেন ফুটবলাররা। এমন একটা টুর্নামেন্টে খেলতে মুখিয়ে ছিলেন তারা। এমনিতে ঘরোয়া ফুটবল খেলে সেভাবে পারিশ্রমিক জুটে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে হলে একটা আকর্ষণীয় পারিশ্রমিকের হাতছানি ছিল। তারচেয়েও বেশি ছিল নানা দেশের নামী-দামী ফুটবলারদের সঙ্গে ড্রেসিং রুম শেয়ার করার সুবর্ণ সুযোগ। দারুণ একটা স্বপ্ন বাস্তবায়নে মুখ বুজে মেয়েরা কঠোর পরিশ্রম করে গেছেন দিনের পর দিন। এর মাঝেই তারা দেখেছেন বাবার মতো কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের বিদায়। বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ন্যায্য দাবী পুরোপুরি পূরণ না হওয়ার পরও তারা বাফুফের কঠোর অনুশাসন মেনে দুঃসহ গরমে সকাল-বিকাল ঘাম ঝড়িয়েছেন। এরপর যখন দেখলেন এই স্বপ্ন বারবার হোচট খাচ্ছে কে-স্পোর্টসের ব্যর্থতা আর বাফুফের অদূরদর্শীতায়, তখন আর মুখ বুজে থাকতে পারলেন না। হতাশার কথা জানাতে গিয়ে অগোচরে তাদের কণ্ঠ থেকে বের হয়ে এসেছে ক্ষোভের আগুন।
অবস্থা বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি বৃহস্পতিবার ক্যাম্প বন্ধ ঘোষণা করে বাফুফে। সিনিয়র খেলোয়াড়দের দেওয়া হয় পাঁচ দিনের ছুটি। বৃহস্পতিবার রাতে বাসে করে সাতক্ষীরাগামী সাফজয়ের অগ্রনায়ক সাবিনা খাতুন দেশ রূপান্তরকে মুঠোফোনে বলছিলেন, 'ওমেন্স সুপার লিগ স্রেফ আমাদের আবেগ নিয়ে খেললো।' একটু থেমে আবার বলতে শুরু করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, 'প্রথমত সাফের পর কোন খেলা নেই। তারপর এই লিগ মেয়েদের নিয়ে দুই দফা এত কিছু করলো, এত আশা দিলো, মেয়েরা খেলার জন্য মুখিয়ে ছিল। আর সব থেকে বড় ব্যাপার বিদেশী খেলোয়াড় যারা দক্ষিণ এশিয়ার, তাদের নিয়ে আমি নিজেও কাজ করছিলাম। তাদের কাছে এখন আমার সম্মান কই থাকলো! বারবার তারিখ পরিবর্তন করা হয়েছে। মেয়েরা অনেক আশায় ছিল। কিন্তু... । এটা নিয়ে অবশ্য মেয়েরা অনেক আগেই আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এখন আমিও কোন আশা দেখছি না।'
সতীর্থদের সংগে ময়মনসিংহের কলসিন্দুরে বাড়ির যেতে যেতে জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা বলছিলেন, 'আসলে কিছু বলার ভাষাই হারায় ফেলেছি। একটা টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল। এর জন্য আমরা কঠোর অনুশীলণ করছিলাম। আশা ছিল খেলবো। এখন সেটা হচ্ছে না বলে খুব কষ্ট লাগছে। যখন শুনলাম লিগটা হবে না, তখন মনের অবস্থা কেমন হতে পারে, বুঝতেই পারছেন।'
সাফের পর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি সিনিয়র ফুটবলাররা। এ নিয়ে ভীষণ হতাশ সানজিদা বলেন, 'নয়টা মাস ধরে অপেক্ষায় আছি খেলার। প্রীতি ম্যাচ বলেন কিংবা কোন টুর্নামেন্ট, একটা ম্যাচও আমরা খেলতে পারিনি সাফের পর। অথচ আমাদের সঙ্গে যারা সাফে খেলেছে, তারা প্রায় সবাই পাঁচটা-ছয়টা করে প্রীতি ম্যাচ খেলে ফেলেছে এর মধ্যে।' মেয়েদের সিঙ্গাপুরে গিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল, মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাই খেলার কথা ছিল। অথচ বাফুফে অর্থ সঙ্কটসহ নানা অযুহাতে তাদের খেলতে পাঠায়নি। সানজিদা বললেন, 'আমরা আসলে হতাশ হতেও ভুলে গেছি। বারবার টুর্নামেন্টে খেলার কথা বলা হয়, আবার সেটা বাতিল হয়। এরকমটা হতে হতে আসলে আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি।'
হতাশা, বঞ্চনায় বাফুফের চাকুরি থেকে পদত্যাগ করেছেন নারী দলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। প্রিয় কোচের জন্য কষ্ট পান সানজিদা, 'ছোটন স্যারের হাত ধরেই আমার এখানে আসা। তার কাছেই আমার ফুটবলার হয়ে গড়ে ওঠা। তিনি চলে গেছেন। এতে খুব কষ্ট পাই। তিনি আমাদের অনেক আদর-যত্ন করতেন। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক যেমন হয়, ঠিক তেমন সম্পর্ক ছিল।'
১৩ জুন সাবিনা-সানজিদাদের ক্যাম্পে ফেরার নির্দেশ দিয়েছে বাফুফে। বিকল্প নেই বলে তারা হয়তো ফিরবেন। তবে ফেরার সময় তাদের চোখে থাকবে না বড় কোন স্বপ্ন। সেটা দেখাই বারণ। কে-স্পোর্টস আর বাফুফে মিলে যে মেয়েদের সব স্বপ্ন গলা টিপে মেরে ফেলেছে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মেয়ের জামাতাকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহার, কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশনসহ অন্যান্য প্রটোকল দেওয়ার একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
অনেকেই চিঠিটি শেয়ার করে সমালোচনা করছেন। কেউ বলছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই বলে কথা! কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, মন্ত্রীর মেয়ের জামাই প্রটোকল কোন হিসেবে পান? আবার কেউবা বলছেন, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে!
জানা যায়, গত ৬ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে ৭ জুন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালককে চিঠিটি পাঠানো হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে চিঠিটির সত্যতাও পাওয়া যায়।
মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব ড. অমিতাভ চক্রবর্ত্তী স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাতা মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ৯ জুন শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট নম্বর ইকে ৫৮৬ যোগে দুবাই থেকে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন। তাকে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ ব্যবহারের অনুমতিসহ মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার মশিউর রহমানকে কাস্টমস ব্যাগেজ, ইমিগ্রেশন এবং বিমানবন্দরের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা পালনের জন্য বোর্ডিং ব্রিজ পাস দেওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিমানবন্দর পরিচালককে নির্দেশ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ব্যবহারের জন্য পৃথক লাউঞ্জ রয়েছে। যেটাকে ভিআইপি লাউঞ্জ বলা হয়। ভিআইপি লাউঞ্জ কারা ব্যবহার করতে পারবেন এমন একটি স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।
লাউঞ্জ রজনীগন্ধা, বকুল, দোলনচাঁপা ও চামেলি নামে বিমানবন্দরে ৪টি ভিআইপি লাউঞ্জ রয়েছে। রজনীগন্ধা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ভিআইপিরা ব্যবহার করেন। বকুল ব্যবহার করেন অতিরিক্ত সচিব বা তার পদমযার্দার ও সমমর্যাদার ব্যক্তিরা। দোলনচাঁপা ব্যবহার করেন সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর চামেলি দিয়ে একুশে পদক পাওয়া ব্যক্তি, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা প্রবেশ ও বের হতে পারেন।
আজ ৯ জুন (শুক্রবার)। ভাগ্যরেখা অনুযায়ী আপনার আজকের দিনটি কেমন কাটতে পারে? ব্যক্তি, পারিবারিক ও কর্মক্ষেত্র সম্পর্কে কী বলছে জ্যোতিষশাস্ত্র? এ বিষয়গুলো সম্পর্কে যারা দিনের শুরুতেই কিছুটা ধারণা নিয়ে রাখতে চান তারা একবার পড়ে নিতে পারেন আজকের রাশিফল।
মেষ : ২১ মার্চ-২০ এপ্রিল
জাতক এ সপ্তাহে শত বছরের পুরনো কেনো বস্তুর সন্ধান লাভ করবেন। কষ্টিপাথরের মূর্তি, অলংকার বা কোনো অমূল্য ধর্ম গ্রন্থের সন্ধান পেতে পারেন।
বৃষ : ২১ এপ্রিল-২০ মে
জাতকের এ সময়টায় সন্তান, স্ত্রী অথবা বন্ধু-বান্ধবীর কারণে প্রভূত ক্ষতি হতে পারে। মূল্যবান দ্রব্যাদির বিষয়ে একটু সাবধান হোন।
মিথুন : ২১ মে-২০ জুন
আপনার এ সপ্তাহে অর্থ ভাগ্য ভালো। জাতকের মঙ্গল লগ্ন কোনো প্রতিযোগিতামূলক জীবিকায় প্রলুব্ধ করবে। যেমন, নেভি, আর্মি বা বৈমানিক ইত্যাদি।
কর্কট : ২১ জুন-২০ জুলাই
জাতকের হঠাৎ কোনো দলিল-দস্তাবেজ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লোভ নয়, মালিককে ফিরিয়ে দেওয়াই মানুষের কাজ।
সিংহ : ২১ জুলাই-২০ আগস্ট
মঙ্গল ও রবির অবস্থানগত কারণে সিংহের ক্রোধ জাগ্রত হতে পারে। মেয়েরা রাগ করে বিপথে যাবেন না। অযথা আপনার অমূল্য বাচ্চাদানি বিনষ্ট হবে।
কন্যা : ২১ আগস্ট-২২ সেপ্টেম্বর
জাতকের এ সপ্তাহটা শুভ। তবে অযথা প্রশাসনের বিরুদ্ধ কোনো কাজে জড়াবেন না।
তুলা : ২৩ সেপ্টেম্বর-২২ অক্টোবর
জাতকের গ্রহগণ সৌভাগ্যের দ্বার মেলে ধরবে। সহসা দয়িতার কারণে অর্থপ্রাপ্তি হতে পারে।
বৃশ্চিক : ২৩ অক্টোবর-২০ নভেম্বর
নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ইন্দ্রিয় তাড়নায় জাতক অবৈধকর্মে লিপ্ত হতে পারেন। অনুঢ়ারা অর্থোপার্জনে আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতা লাভ করবেন।
ধনু : ২১ নভেম্বর-২০ ডিসেম্বর
জাতকের অর্থ ও বন্ধু জুটবে। বিদেশ ভ্রমণ যোগ বিদ্যমান। তবে ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
মকর : ২১ ডিসেম্বর-১৯ জানুয়ারি
জাতকের জন্মকু-ুলীতে শনি কেন্দ্রস্থ হওয়ার ফলে, ক্রোধ বিপদ ডেকে আনবে। দুর্ঘটনায় রক্তপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অতএব ক্রোধ সম্বরণ করুন।
কুম্ভ : ২০ জানুয়ারি-১৮ ফেব্রুয়ারি
জাতক জীবনে প্রতিপত্তি লাভ করবেন। সৃষ্টিশীল কাজে সুনামের যোগ রয়েছে। রাজদ্বারে স্বীকৃতি পাবেন।
মীন : ১৯ ফেব্রুয়ারি-২০ মার্চ
জাতক অপরিচিত নারী দ্বারা প্রলোভনের শিকার হতে পারেন। নিজেকে যতই স্মার্ট ভাবুন না কেন, পথিনারী বিবর্জিতা, ভ্রমণে নারীসঙ্গ পরিহার করুন।
আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভা আজ শুক্রবার। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের (বিএবি) প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
তিনি ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান।
‘বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও শুক্রবার (৯ জুন) বিএবি’র উদ্যোগে ‘বিশ্ব অ্যাক্রেডিটেশন দিবস ২০২৩’ পালিত হচ্ছে জেনে সন্তোষ প্রকাশ করে মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, অ্যাক্রেডিটেশন ও বাণিজ্য পারস্পরিক আস্থার সূত্রে গাঁথা।
তিনি বলেন, মান নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিধি-বিধান, মেট্রোলজি, নিরপেক্ষ ও স্বীকৃত সাযুজ্য নিরূপণ ব্যবস্থা একটি দেশের গুণগত মান অবকাঠামোর প্রাথমিক ভিত্তি, যা ব্যবসায়ী ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যক্রমকে সহজতর করার পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে সহায়তা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যে কারিগরি বাধা অপসারণে অ্যাক্রেডিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় মান ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ভোক্তা ও উৎপাদকের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে অ্যাক্রেডিটেশন বিশ্ব বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ প্রেক্ষিতে দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য-‘অ্যাক্রেডিটেশন : সাপোটিং দ্যা ফিউচার অব গ্লোবাল ট্রেড’ যথার্থ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বিএবি অ্যাক্রেডিটেশন সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখছে। সংস্থাটি আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অ্যাক্রেডিটেশন কার্যক্রম পরিচালনা করবে এবং দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণে কার্যকর ভূমিকা রাখবে- এটাই সকলের প্রত্যাশা।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’
নিজের বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা জ্বলে উঠলেন সার্জিও রামোস। শুরুতেই পেয়ে যান গোলের দেখা। কিলিয়ান এমবাপ্পে আছেন তার আগের মতোই। তিনিও ডাবল লিড এনে দেন। তবে বিদায়ী ম্যাচে নিষ্প্রভ রইলেন লিওনেল মেসি। তাতেই কিনা শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া ম্যাচটি হার দিয়ে শেষ করেছে পিএসজি।
লিগ ওয়ানের শেষ ম্যাচে ক্লেরমো ফুতের সঙ্গে ৩-২ গোলে হেরে গেছে প্যারিসিয়ানরা। তাতে রাঙানোর বদলে বিষাদভরা বিদায় হলো মেসি-রামোসদের।
আগেই লিগ শিরোপা নিশ্চিত করা পিএসজি মৌসুমে নিজেদের এই শেষ ম্যাচে দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। হুগো একিতেকে ও আশরাফ হাকিমিকে ফেরান কোচ ক্রিস্তফ গালতিয়ের।
শুরুতে গুছিয়ে উঠতে সময় লেগেছে পিএসজির। প্রথম ১০ মিনিটের পর ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২১ মিনিটের মধ্যে এগিয়ে গিয়েছিল ২-০ গোলে। রামোস ১৬ মিনিটে হেড থেকে এবং তার ৫ মিনিট পর কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে গোল করেন।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে ক্লেরম ফুতের পাল্টা লড়াই শুরু করতে সময় নিয়েছে মাত্র ৩ মিনিট। ২৪ মিনিটে গোল করেন ক্লেরমঁর গাস্তিয়েন। এর প্রায় ১২ মিনিট পরই পেনাল্টি থেকে গোল করার সুযোগ নষ্ট করেন ক্লেরমঁ স্ট্রাইকার কেয়ি। পরে অবশ্য ৬৩ মিনিটে তাঁর গোলেই জিতেছে ক্লেরমঁ। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ক্লেরমঁর হয়ে সমতাসূচক গোলটি জেফানের।
বিরতির পর গোলের দারুণ একটি সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। ৫৪ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে এমবাপ্পে ঢুকে পড়েন ক্লেরমঁর বিপদসীমায়। তাঁর ক্রস পেয়ে যান ডান প্রান্ত দিয়ে দৌড় বক্সে ঢোকা মেসি। সামনে গোলকিপার একা, কিন্তু মেসি অবিশ্বাস্যভাবে বলটা পোস্টের ওপর দিয়ে মারেন।
সতীর্থ গোলকিপার সের্হিও রিকোর সুস্থতা কামনা করে বিশেষ জার্সি পরে মাঠে দাঁড়িয়েছিলেন মেসি-এমবাপ্পেরা। ঘোড়ায় চড়তে গিয়ে দূর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছেন রিকো। ম্যাচে বিশেষ জার্সি পরে খেলেছে পিএসজি। মেসি-রামোসদের জার্সির পেছনে রিকোর নাম লেখা ছিল।
৩৮ ম্যাচে ৮৫ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষে থেকে মৌসুম শেষ করল পিএসজি। ৮৪ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লেঁস। তৃতীয় মার্শেইয়ের সংগ্রহ ৭৩ পয়েন্ট। ৬৮ পয়েন্ট নিয়ে চারে ইউরোপা লিগ নিশ্চিত করা রেঁনে।
এক যুগের ব্যবধানে ঘটা সহিংসতার দুটি ঘটনায় করা তিন শতাধিক মামলা দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর তদন্ত করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মামলাগুলো ২০০১ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা এবং ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের করা হয়েছিল। পাশাপাশি যেসব মামলা বিচারাধীন আছে সেগুলোও দ্রুত নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পুুলিশের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ ও দুদক সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, নতুন করে তদন্ত করার সময় অহেতুক নিরপরাধ লোকজন যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়ার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। মামলায় যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে আরও গভীরে গিয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ২০০১ ও ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংসতা মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানান, রাজনৈতিক কারণে মামলা জিইয়ে রাখা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। সব সরকারের আমলেই এসব করা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছিল এই নিয়ে দেশে বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাসহ অনেকেই আসামি হয়েছেন। ২০১৩-২০১৫ সালে সহিংতার ঘটনা মামলা হয়েছে এসব মামলা দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন ও যেসব মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে সেগুলোর দ্রুত বিচারকাজ সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ওইসব মামলা আদালতে ঝুলছে। এতে ভুক্তভোগীরা বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের তাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে।
সহিংসতা মামলার পাশাপাশি গত ১০ বছরের ব্যবধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ‘ভিআইপি অভিযোগগুলো’ অনুসন্ধান করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এই নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, আন্দোলনের নামে বিএনপি ও জামায়াত ২০১৩-২০১৫ সালে তান্ডবলীলা চালিয়েছে। ২০০১ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক অত্যাচার করা হয়েছিল। ওইসব মামলার বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্দোলনের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সারা দেশেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলা কী অবস্থায় আছে তাও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করে যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালিয়েছিল, তাদের বিচার করা হবে। এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তবে নিরপরাধ কাউকে আমরা হয়রানি করছি না। ভবিষতেও করব না।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, দেশকে অস্থিতিশীল করতে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তাদের দমন করতে শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে হবে না। এতে সাধারণ জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। আন্দোলনের নামে তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলা আদালতে রয়েছে সেগুলোর বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
একই কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, হামলায় পেশিশক্তি যেমন থাকে, রাজনৈতিক শক্তিও থাকে। সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিগির তোলা হয় তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়। বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। যারা এসব অপকর্ম করছে তাদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি যেসব মামলার তদন্ত শেষ হয়নি তা সঠিকভাবে তদন্ত করতে হবে। ঢালাওভাবে রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করা যাবে না।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এখনো বেশ কিছু মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। তাছাড়া জ্বালাও-পোড়াওয়ের অনেক মামলার তদন্ত শেষ হয়নি। সবমিলিয়ে অন্তত তিন শতাধিক মামলা হবে। এসব মামলা সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুুলিশের সব ইউনিটকে বার্তা দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে বিচার না হওয়ায় আবারও একটি মহল দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, স্পর্শকাতর মামলায় দীর্ঘদিনে বিচারকাজ শেষ না হওয়ার কারণে বাদীপক্ষের মধ্যে এক ধরনের হতাশার সৃষ্টি হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আসামিপক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। আর এসব কারণে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঝুলে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তবে অহেতুক কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোকে।
পুলিশ সূত্র জানায়, ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার কারণ উদঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করতে ‘হিউম্যান রাইট ফর পিস’ নামের একটি মানবাধিকার সংগঠন হাইকোর্টে রিট আবেদন করে। ২০০৯ সালের ৬ মে এসব নির্যাতনের অভিযোগ তদন্তের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ মো. সাহাবুদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। কমিশন দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ২০১১ সালের ২৪ এপ্রিল তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের কাছে একটি প্রতিবেদন দেয়। তদন্তকালে কমিশন ৫ হাজার ৫৭১টি অভিযোগ পেয়েছিল। বিএনপি ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাসহ অন্তত ১৮ হাজার নেতাকর্মী জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সহিংসতার পর বরিশাল বিভাগে ২ হাজার ১৮৯টি, ঢাকায় ১৮৪টি, চট্টগ্রামে ৩৫০টি, রাজশাহীতে ১১৭টি এবং খুলনায় ৪০৫টি হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া হামলায় খুলনা বিভাগে ৭৩, ঢাকা বিভাগে ৯২, রাজশাহী বিভাগে ৫৩, চট্টগ্রাম বিভাগে ৯৭, বরিশাল বিভাগে ৩৮ এবং সিলেট বিভাগে ২ জন হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে। তারমধ্যে ভোলা, বরিশাল, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, যশোর, নাটোর, রাজবাড়ী, পাবনা, ফেনী, রাজশাহী, ঝিনাইদহ, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, দৌলতখান, চরফ্যাশন, লালমোহন, বোরহানউদ্দিন, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা এবং মৌলভীবাজার জেলায় হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড বেশি ঘটে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ২২১টি। এর মধ্যে ৫৭টি মামলা তদন্তাধীন। বাকিগুলোতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র আরও জানায়, ২০১৩-১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে পেট্রলবোমা হামলায় দেশজুড়ে মারা গেছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। তারমধ্যে আগুনেই পুড়ে মারা গেছে ৪০ জনের মতো। এ সময় রেললাইন পর্যন্ত উপড়ে ফেলাসহ সরকারি সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ওই সময় মামলা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার। বেশির ভাগ মামলার তদন্ত হয়েছে। ৪৫০টি মামলা বিচারধীন। এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আসামি। তারা কৌশলে বারবার শুনানির তারিখ নেয়, যে কারণে মামলা পিছিয়ে যায়। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, কয়েকটি তারিখ দেওয়ার পর মামলাগুলো নিষ্পত্তি করা হবে।
এছাড়া ৩১২টি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। তদন্ত শেষ করে দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে নাশকতা মামলার দায়িত্বে থাকা এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ মামলার আসামি এলাকায় থাকেন না। তাদের নাম-ঠিকানা খুঁজে বের করে অভিযোগপত্র দেওয়া তদন্তকারী কর্মকর্তার পক্ষে খুব কঠিন হয়ে যায়। আর যেসব মামলায় আদালতে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে, সেগুলোরও বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। তাছাড়া পলাতক আসামিদের বিষয়ে কিছু আইনি জটিলতার কারণেই দীর্ঘসূত্রতা হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুনরায় নাশকতা ঘটানো হতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা। এই নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তার জানামতে, মামলাগুলো নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা একাধিক সভা করেছেন।
দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে জানান, গত দশ বছরে দুদকে ‘অনেক ভিআইপির’ বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। অনুসন্ধানের জন্য আলাদা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।