
ফলাফলের প্রজ্ঞাপন (গেজেট) হওয়ার পরও প্রয়োজনে নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা চেয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রস্তাবে সায় দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা জানান, জাতীয় নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনী আনার যে প্রস্তাব ইসি দিয়েছিল, তার সঙ্গে একমত পোষণ করেছে আইন মন্ত্রণালয়। এটি সংসদে পাস হলে কোনো নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরও অনিয়ম প্রমাণিত হলে ইসি ওই নির্বাচন বাতিল করতে পারবে।
গতকাল নির্বাচন ভবনে রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের বলেন, ‘দু-একটা জায়গায় আরও চিন্তাভাবনা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় বলেছিল। তার মধ্যে একটা ছিল ইভিএমে আঙুলের ছাপ যে মেলে না, এতে ১ শতাংশ ভোটারকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার আঙুলের ছাপ ব্যবহারের বিষয়টি নির্ধারিত করা, এটা আমরাও চাচ্ছিলাম। আইনে এও চলে আসুক যে ১ শতাংশের বেশি অ্যালাউ করা হবে না। উনারা (আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা) জানালেন যে, এটা বিধিমালা দিয়ে কাভার করা সম্ভব। এই একটা পয়েন্টে উনারা আপত্তি করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আরেকটা বিষয় হচ্ছে, নির্বাচনের গেজেট হওয়ার পর অনিয়ম হলে আরপিওতে কোনো কিছু করার ক্ষমতা নেই। বন্ধ করাসহ অন্য উপায় অবলম্বনের জন্যই সংশোধনীর প্রস্তাবটা আমরা দিয়েছিলাম। ফলাফল ঘোষণার পরও যেন ক্ষমতাটা কমিশনের হাতে থাকে।’
রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘আমি জয়েন করার কিছুদিন পরই একটা ফাইল এলো। এতে দেখলাম যে ময়মনসিংহের দুর্গাপুরে একটা নির্বাচনে বোধহয় ব্যালট ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। তখন কমিশন গেজেট হওয়ার পর ভোট বাতিল করেছিল। কিন্তু হাইকোর্ট বলে দিয়েছিলেন যে, গেজেট হওয়ার পর কমিশনের করার কিছু থাকে না। এ জন্য কমিশনের হাতে ক্ষমতা যেন থাকে এ প্রস্তাব করেছিলাম আমরা। উনারা জানতে চাইলে আমরা এ ঘটনাটির ব্যাখ্যা দিয়েছিলাম। তখন কোর্ট কমিশনের কাছে ব্যালট চাইল, কিন্তু এটি তো তখনো উদ্ধার হয়নি। তো যেটা উদ্ধার হয়নি, সেটা কীভাবে কোর্টকে দেবে। এ ক্ষেত্রে তো কমিশনের কিছু করার থাকবে না। এরকম পরিস্থিতি যদি সামনে আসে কমিশনের হাতে অবশ্যই একটা ক্ষমতা থাকা উচিত, যে ওই নির্বাচনটা বন্ধ করে দেওয়া যায়। কারণ যিনি বঞ্চিত হয়েছেন বলে মনে করেন, তার তো ক্ষতিপূরণের জায়গা নেই। এ কারণে আমরা সংশোধন আনার প্রয়োজন মনে করেছি। তিনি আইনের আশ্রয় নিতেই পারেন, এটা উনার রাইট।’
তিনি আরও বলেন, ‘আইন মন্ত্রণালয়ের যারা বৈঠকে ছিলেন তারা আমাদের জাস্টিফিকেশনে খুশি। তারা বলছেন আর কোনো অসুবিধা নেই। এখন কেবিনেটে যাবে। পাস হবে সংসদে। এটাই উনারা পাঠাবেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে এ কমিশনার বলেন, ‘প্রত্যেকটা নির্বাচনে আমরা বলেই দেব কত শতাংশ ভোটারের আঙুলের ছাপ না মিললে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তার আঙুলের ছাপ ব্যবহার করে ইভিএমের ব্যালট ইউনিট ওপেন করতে পারবেন। কেননা, যার আঙুল নেই তাকে তো ভোট দেওয়ার সুযোগটা দিতে হবে।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসিনি। প্রত্যেক ভোটের আগে আমরা সার্কুলার দিয়ে দিতে পারব। কমিশন যখন সার্কুলার দেয় সেটাও কিন্তু আইন। আমরা আরপিওতে পাচ্ছি না, তবে বিধি দিয়ে করতে পারব। আমরা সার্কুলার দিয়েই আগে করেছি। একটা পরিপত্র দিয়ে দিলেই হবে।’
ভোটে সাংবাদিকদের দূরে রাখার বিষয়ে এ কমিশনার বলেন, ‘সাংবাদিকদের দূরে রাখতে চাই না। রংপুরে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। সেটা আমরা দিইনি। কোথা থেকে যে হলো আমি নিজেও জানি না। হয়তো আগের কোনো নির্দেশনাই গেছে। সম্ভবত মোটরসাইকেল চলাচলের বিষয়টি নিয়ে বিষয়টা শুরু হয়েছিল। আমরা আপনাদের জন্য আরপিওতে ব্যবস্থা রাখছি। যন্ত্র-ফন্ত্র কেড়ে নিলে শাস্তির প্রস্তাব করেছি।’
দেশের ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ জানে না তাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, অর্থাৎ ১০০ রোগীর মধ্যে ৬২ জনই জানে না তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। গত বছরের এপ্রিলে প্রকাশিত বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার একটি গবেষক দলের এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এমন তথ্য জানিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাদা সেলিম দেশ রূপান্তরকে বলেন, সারা দেশের বিভিন্ন শহরে এই গবেষণা করা হয়। তাতে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ রোগী তাদের ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন না। অথচ এসব রোগীর কিছুদিন পর কিডনি ও চোখ নষ্ট হবে, হার্ট অ্যাটাক হবে, স্ট্রোক হবে। কাজেই তাদের চিকিৎসা শুরু করতে হবে। কিন্তু যেহেতু তার রোগ সম্পর্কে জানে না, তাই সে চিকিৎসাও করাবে না।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, মানুষকে জানতে হবে ডায়াবেটিস একবার হলে আপাতত নিরাময়যোগ্য নয়, রোগটি প্রতিরোধ করতে, নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কিন্তু তারা তো জানেই না তারা রোগী। তাহলে তারা প্রতিরোধ করবে কীভাবে? এই দুটো কারণে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতনতা খুব প্রয়োজন। সচেতন হতে হলে আগে টেস্ট করে নিতে হবে রোগ আছে কি না।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, চার বছর আগে ঢাকা শহরে ১ লাখের বেশি লোকের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছিল সমিতি। যেসব মানুষ জানে না তার ডায়াবেটিস আছে, তাদের নমুনা নেওয়া হয়েছিল। তাতে দেখা গেছে, ২৬ শতাংশ লোকের ব্লাডে সুগার আছে; অর্থাৎ তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। কিন্তু তারা সেটা জানে না।
এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের গ্লোবাল সার্ভে অনুযায়ী, বিশ্বে যত ডায়াবেটিস রোগী আছে, তাদের ৫০ শতাংশই জানে না যে তাদের এই রোগ আছে। কারণ এটা একটা নীরব ঘাতক। এটা আস্তে আস্তে ক্ষতি করা শুরু করে।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ডায়াবেটিস সচেতনতা দিবস পালন করছে প্রতিষ্ঠানটি। দিবসটি উপলক্ষে সমিতির অন্যান্য অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত অধিভুক্ত সমিতিগুলো দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ সর্বক্ষণ : সুস্থ দেহ, সুস্থ মন’।
বাংলাদেশে কত মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত : এ ব্যাপারে ডা. শাহজাদা সেলিম জানান, ২০২০ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন ২০২১ সালে যে হিসাব প্রকাশ করেছিল, তাতে বাংলাদেশে ১ কোটি ৩১ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে উল্লেখ করা হয়। এরপর বারডেম একটা গবেষণা করে। সেখানে মোট জনসংখ্যার ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বলে উল্লেখ করা হয়। সেই হিসাবে বাংলাদেশে ৩ কোটির বেশি ডায়াবেটিস রোগী। ফলে প্রকৃত রোগীর সংখ্যা কত, তা এখনো সুস্পষ্ট নয়। রোগীর প্রকৃত সংখ্যাটা জানা জরুরি।
কেন হচ্ছে, কী ঝুঁকি : দুটি বিষয় বাংলাদেশে ডায়াবেটিসে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করেছে বলে মনে করেন ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহজাদা সেলিম। তিনি বলেন, একটি হলো কম বয়সীদের বেশির ভাগের ডায়াবেটিস হচ্ছে। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে এ রকম নেই। টাইপ-২ ধরনের ডায়াবেটিস সাধারণত একটু বেশি বয়সীদের হয়। কিন্তু আমাদের এখানে ৭, ১০ ও ১২ বছর বয়সী, অর্থাৎ কম বয়সীদের হচ্ছে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সম্পর্কে এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, ৫০ বছর বয়সেও যদি কারও ডায়াবেটিস হয় এবং ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে পুরুষদের ক্ষেত্রে সাড়ে ৫ বছর ও নারীদের ক্ষেত্রে সাড়ে ৬ বছর আয়ু কমে যায়। সে হিসাবে আমাদের দেশের কম বয়সীরা ১২-১৫ বছর আগেই মারা যাবে। অথচ দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে তারা আরও অনেক দিন বাঁচত।
বাংলাদেশের মানুষ প্রচুর খায় : ডায়াবেটিস ঝুঁকির মূল কারণ তীব্র ঝুঁকিপূর্ণ খাদ্যাভ্যাস বলে মত দেন ডা. শাহজাদা সেলিম। তিনি বলেন, ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে সুগার বেড়ে যায়। সুগার একটা কার্বো-হাইড্রেট শর্করা; অর্থাৎ যেসব খাবার থেকে সুগার হয়, সেই খাবারগুলোই ডায়াবেটিসের প্রধান শত্রু। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে ভাত, রুটি, পাউরুটি, সেমাই, পায়েস, রসগোল্লা, চমচম, খেজুর, আম ইত্যাদি।
গত বছরের শুরুতে আমেরিকার বিখ্যাত একটি জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য জানিয়ে বিএসএমএমইউ ও বারডেমের চিকিৎসকরা বলেন, বাংলাদেশের যেসব মানুষের ডায়াবেটিস নেই, তারা সারা দিন যে পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে, সেখানকার শর্করা থেকে পায় ৮০-৯০ শতাংশ ক্যালরি। অথচ ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রতিদিন দরকার ৪০-৫০ শতাংশ ক্যালরি। এই অতিরিক্ত খাবার রূপান্তর হয়ে সুগার হচ্ছে ও রক্তে মিশছে।
এ ব্যাপারে ডা. শাহজাদা সেলিম বলেন, ‘আমাদের দেশে আরেকটা মারাত্মক ঝুঁকি হচ্ছে, আমরা প্রচুর খাই। অন্যান্য দেশে একবারে প্রচুর খায় না, তারা দিনে খন্ডিতভাবে খায়। খাওয়ার পর ব্লাড সুগার প্রচুর বেড়ে যাচ্ছে। ফলে যার ডায়াবেটিস নেই, তিনিও দ্রুত ডায়াবেটিসের দিকে যাচ্ছেন।’
কম খাওয়া ও বেশি হাঁটার পরামর্শ : ডায়াবেটিস থেকে রক্ষা পেতে মুখের কাজ কম করার ও পায়ের কাজ বেশি করার পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, মানুষ সতর্ক হয়ে যত কম খাবে এবং যত বেশি হাঁটাচলা করবে, তত বেশি এই রোগ থেকে রক্ষা পাবে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমাদের দেশে একজন সুস্থ সবল মানুষের বছরে অন্তত দুইবার চিকিৎসকের কাছে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানো উচিত। সেটা হচ্ছে না। কারও যদি তার রোগ সম্পর্কে জানা না থাকে বা অন্য রোগ দ্বারা আক্রান্ত না হয়, তা হলে সে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে যায় না। আমাদের শারীরিক শ্রম কমে যাচ্ছে। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বা বাড়ন্ত শিশু বা কিশোর কর্মহীন জীবন যাপন করছে, প্রচুর শর্করা খাচ্ছে। এতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ছে।’
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বিশ্বের সর্ববৃহৎ : আজ ৬৭তম প্রতিষ্ঠা দিবস বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির। এ ব্যাপারে মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘১৯৫৬ সালের এই দিনে প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ডা. মো. ইব্রাহিম ডায়াবেটিক সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। সমিতি প্রতিষ্ঠার কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, একজন চিকিৎসক হয়েও তিনি ডায়াবেটিস ভালো করতে পারছেন না। একবার ডায়াবেটিস হলো তো আর ভালো হবে না, নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। নিয়ন্ত্রণ করতে হলেও রোগীকে শিক্ষা দিতে হবে। রোগী ও পরিবেশকে সচেতন করতে হবে। এ কাজগুলোর জন্য একটা সমিতি দরকার, যারা ধারাবাহিকভাবে কাজগুলো করবে।’
এই বিশেষজ্ঞ জানান, সারা বিশ্বে ১৭০টি দেশে ২৬০টি ডায়াবেটিক সমিতি আছে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমিতি। কারণ বিশে^র আর কোনো ডায়াবেটিক সমিতি রোগীদের চিকিৎসা করে না। তারা সচেতন করে। কিন্তু বাংলাদেশের সমিতি প্রথম দিন থেকেই রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে। দেশের ৬০ লাখ ডায়াবেটিস রোগী বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত সেবা নিচ্ছেন। প্রতি বছর এই সংখ্যা ৪-৫ লাখ করে বাড়ছে। চিকিৎসার পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করতে নানা কর্মসূচি পালন করছে সমিতি।
সমিতির কর্মসূচি : বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি দিবসটি উপলক্ষে রাজধানীতে সকাল সাড়ে ৮টায় শাহবাগে বারডেম হাসপাতালের নিচে সচেতনতামূলক সেøাগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করবে। দুপুর ১২টায় বারডেম অডিটোরিয়ামে (তিনতলা) রয়েছে আলোচনা সভা। সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত বারডেম ক্যাম্পাস এবং এনএইচএন ও বিআইএইচএসের বিভিন্ন কেন্দ্রসংলগ্ন স্থানে বিনা মূল্যে ডায়াবেটিস নির্ণয় করা হবে। হ্রাসকৃত মূল্যে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে (চারতলা) অনুষ্ঠেয় হার্ট ক্যাম্পে সাশ্রয়ীমূল্যে হৃদরোগীদের সেবা দেওয়া হবে।
বাংলা ভাষাভাষী মানুষের প্রাণের অমর একুশে বইমেলার এবারের আসর শেষ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। করোনা মহামারীর মধ্যে আগের দুই বছর সংক্ষিপ্ত পরিসরে হলেও এবারের মাসব্যাপী বইমেলায় ফিরেছিল প্রাণের স্পন্দন। পাঠক, দর্শক ও প্রকাশকদের আনাগোনায় মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। মেলার শুরুর দিকে দর্শনার্থীর তুলনায় বই বিক্রি কম হলেও শেষ দিকে বদলায় সে অবস্থা। গতকাল সোমবার শেষের আগের দিনও তালিকা ধরে ধরে বই কিনেছেন পাঠক। এদিকে গতকাল অমর একুশে বইমেলার ২৭তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৫৮টি। এদিন বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশ্ববাঙালির সাহিত্য’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। তাতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আলম খোরশেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, আল মামুন এবং জসিম মল্লিক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
আলম খোরশেদ বলেন, বিশ্ববাঙালি বলতে পুরো বিশ্বের বাঙালি সম্প্রদায়কেই বোঝানো হয়, যার মধ্যে বাঙালির সর্ববৃহৎ দুই ঠিকানা বাংলাদেশ ও ভারত অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া যেসব সাহিত্যিক দেশান্তরি হয়ে বিদেশে বসবাস করছেন এবং যারা বিদেশে অভিবাসনের পর সাহিত্য রচনা শুরু করেছেন, তাদের সবার সাহিত্যকেই বিশ্ববাঙালির সাহিত্য বলা যায়। তাদের মধ্যে কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, গবেষক, শিশুসাহিত্যিক, মুক্তিযুদ্ধ গবেষক, ভ্রমণ সাহিত্যিক, অনুবাদক, বিজ্ঞান লেখকসহ সব ধরনের লেখকই রয়েছেন। তাদের লেখায় প্রবাস জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, উপলব্ধি, স্বদেশের স্মৃতি-আখ্যান, অভিবাসী জীবনের সংগ্রাম, সংকট ও স্বপ্নের কথা প্রকাশিত হয়।
আলোচকরা বলেন, বিশ্ববাঙালির সাহিত্যে প্রতিনিধিত্বকারী অনেক কবি, লেখক ও সাহিত্যিক বিশ্বের নানা প্রান্তে বসবাস করছেন। তাদের সাহিত্যের বহুমাত্রিকতা আমাদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলা ভাষায় রচিত গ্রন্থের প্রতি প্রবাসী বাঙালিদের যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের বাঙালিদের মধ্যেও বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ^বাঙালির সাহিত্যকে বেগবান করার ক্ষেত্রে অভিবাসী সাহিত্যিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। পরে ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন জাহিদ মুস্তাফা, মুমিত আল রশিদ, ফরিদ আহমদ দুলাল ও আরেফিন রব।
গতকাল শেষ বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত মেলা ঘুরে দেখা যায়, পাঠক-লেখকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিন পাঠকরা তালিকা ধরে বই কিনেছেন।
মেলার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে ওপার বাংলার জনপ্রিয় কবি রুদ্রো গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘মেলা মানেই আমার কাছে একটি জাতীয় উৎসবের মতো। একটা নিকট ভালোবাসার টানে বাংলাদেশে ছুটে আসি। আবারও তার বিকল্প কিছু হয়নি। শুধু বাণিজ্যিক স্তরকে বাদ দিলেও এবারের মেলায় পরিপূর্ণতা রয়েছে।’
ভিন্ন মতের লেখকদের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে গোস্বামী বলেন, ‘ভিন্ন মতের প্রকাশক ও লেখকদের মাঝে রাজনৈতিক বিরোধ না হওয়াই উচিত। আর যদি সৃজনশীলতার বাইরে রাজনৈতিক কোনো প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়, সেটি একান্তই রাষ্ট্রের বিষয়। তবে মানুষ হিসেবে ভুল সবার হয়। নিশ্চয়ই কোনো কারণ থেকে ভিন্ন মতের কোনো লেখকের লেখা বই নিষিদ্ধ করা হয়ে থাকে।
পাঞ্জেরী প্রকাশনীর ইনচার্জ ইফতেখার আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের সম্মিলিত শক্তি অনুধাবনের একটা মাধ্যম। পাঠক আসবেন, মেলা ঘুরবেন, আড্ডায় মাতবেন, পছন্দের লেখকের বই কিনবেন। তবে এবারের মেলায় জায়গা সংকট ছিল; বিশেষ দিনগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় অনেক বেশি হয়েছে। ফলে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখতে তাদের অনেকের অসুবিধা চোখে পড়েছে। কিন্তু আমি সৃজনশীল সাহিত্যের পক্ষে।’
বই বিক্রি কেমন হয়েছে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, ‘অন্যান্য বছরের তুলনায় মেলায় দর্শনার্থীদের সংখ্যা বাড়লেও বিক্রি বাড়েনি। অধিকাংশ লোক মেলায় আসছেন, বই দেখছেন এবং সেলফি তুলে চলে যাচ্ছেন। এতে করে আমাদের মাঝে লোক দেখানোর প্রবণতা ও সেলফি কালচার অনেক বেশি ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ দিনগুলোতে যে পরিমাণের দর্শনার্থী ছিল একটা করে বই কিনলে সব স্টল ফাঁকা হয়ে যেত।’
এদিকে এবারের বইমেলার শুরুর দিকে স্টল বরাদ্দ না দেওয়া, মেলা চলাকালে অনেক বই নিষিদ্ধ করা ও মানহীন বইয়ে মেলা সয়লাভ নিয়ে পাঠক মহলে কিছুটা ক্ষোভ দেখা গেছে। তারা বলছেন, ভিন্ন মত প্রকাশের লেখা প্রকাশ ও মেলায় মানহীন বই প্রকাশের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির সতর্কতা জরুরি।
হুমায়ুন আজাদকে স্মরণ
বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর মৌলবাদী চক্রের সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীতে ‘হুমায়ুন আজাদের দিবসের ডাক: পাইরেসিমুক্ত বইমেলা চাই’ প্রতিপাদ্যে একুশে বইমেলায় গতকাল বিকেল ৫টায় তাকে স্মরণ করা হয়। লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের যৌথ উদ্যোগে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের তথ্যকেন্দ্রের সামনে আয়োজিত এ সভার শুরুতে তার স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সভায় বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কবি আসলাম সানী, কবি মোহন রায়হান, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, হুমায়ুন আজাদের ভাই সাজ্জাদ কবীর, বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন আগামী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ওসমান গনি। বক্তারা বলেন, হুমায়ুন আজাদের হত্যাচেষ্টার বিচার অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং তার আদর্শে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ-রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই তাকে যথাযোগ্যভাবে স্মরণ করা হবে।
গতকাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন রোকেয়া ইসলাম, শেখর বরণ, সৌম্য সালেক, খসরু পারভেজ, সুবর্ণ আদিত্য, জান্নাতুল ফেরদৌসী এবং থিউফিল নকরেক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন সাইমুন আনজুম ইভান, সিদ্দিকুর রহমান পারভেজ, অনন্যা রেজওয়ানা ও ফারহানা তৃর্ণা। এ ছাড়া ছিল মিলন কান্তি দের রচনা ও নির্দেশনায় দেশ অপেরা যাত্রাপালার পরিবেশনা ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে’। সংগীত পরিবেশন করেন ডা. রেজাউর রহমান, মো. আলী হোসাইন, মীর তারিকুল ইসলাম, পল্লবী সরকার মালতী, ঝরনা রায় ভাবনা, মুন্নি কাদের, আঁখি আলম, আরিফ বাউল, কামাল আহমেদ, মো. আরিফুর রহমান চৌধুরী। যন্ত্রানুষঙ্গে ছিলেন গৌতম মজুমদার (তবলা), ডালিম কুমার বড়ুয়া (কিবোর্ড), মো. হাসান আলী (বাঁশি) এবং মো. ফারুক (অক্টোপ্যাড)।
আজকের সমাপনী অনুষ্ঠান: বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অমর একুশে বইমেলা ও অনুষ্ঠানমালার সমাপনী দিন। মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৫টায় সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা ভাষণ দেবেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২৩’-এর সদস্য-সচিব ডা. কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
অনুষ্ঠানে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সাহিত্য পুরস্কার ২০২২, কবি জসীমউদদীন সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩ এবং অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ উপলক্ষে বিভিন্ন গুণিজন স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হবে।
গুণিজন স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩
অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর সমাপনী অনুষ্ঠানে ২০২২ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য আগামী প্রকাশনীকে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করা হবে। ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে শৈল্পিক ও গুণমান বিচারে সেরা বই বিভাগে আহমদ রফিক রচিত বিচ্ছিন্ন ভাবনা প্রকাশের জন্য জার্নিম্যান বুকস, মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ রচিত বাংলা একাডেমি আমার বাংলা একাডেমি বইয়ের জন্য ঐতিহ্য এবং হাবিবুর রহমান রচিত ঠার : বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা প্রকাশের জন্য পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.-কে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হবে। ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থ প্রকাশের জন্য ময়ূরপঙ্খীকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০২৩ প্রদান করা হবে।
২০২৩ সালের অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্য থেকে নান্দনিক অঙ্গসজ্জায় সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুথিনিলয় (প্যাভিলিয়ন), নবান্ন প্রকাশনী (২-৪ ইউনিট), উড়কি (১ ইউনিট) -কে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৩ প্রদান করা হবে।
সন্ধ্যায় উদ্যানে সমাপনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের প্রাণের মেলা।
হালের জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন এবারের মেলায় এনেছেন দুটি উপন্যাস। এর একটি হলো ‘শঙ্খচূড়’, প্রকাশনা অন্যপ্রকাশ। উপন্যাসটি ইতিহাস আশ্রিত। বর্তমান ক্ষমতাকাঠামো, রাজনীতি, ক্ষমতার কেন্দ্র ও প্রান্তের দ্বন্দ্ব এবং দ্বৈরথের সঙ্গে এর ঘটনাবলির সাদৃশ্য রয়েছে।
অপর উপন্যাস ‘সে এসে বসুক পাশে’ প্রকাশ করেছে অন্যধারা। এটি সমসাময়িক সম্পর্ক, সম্পর্কের সংকট ও নানাবিধ সমীকরণ নিয়ে লেখা। নিজের লেখালেখির বিষয়ে সাদাত বলেন, ‘আমি চারপাশের ঘটনা এবং আমার কল্পনাজগতের সঙ্গে তার সংস্রবকে অবচেতনে ধারণ করি। আর এর মধ্যে যা প্রকাশিত হওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি উন্মুখ হয়ে ওঠে বা প্রবল হয়ে ওঠে বলে মনে হয়, সেটিই প্রকাশ করি বা লেখি।’
এবারের বইমেলা ব্যক্তিগতভাবে তার জন্য ‘দারুণ’ জানিয়ে এই কথাসাহিত্যিক বলেন, ‘করোনাকালের সংকট কাটিয়ে যেন পুনরুজ্জীবিত এক বইমেলা উপভোগ করছি। তবে কাগজের দাম প্রভাব ফেলেছে পাঠকের ক্রয়ক্ষমতা এবং একই সঙ্গে প্রকাশকদের বই প্রকাশের সক্ষমতায়ও। এবার অনেক কম বই প্রকাশ পেয়েছে।’
নিজের লেখালেখির প্রভাব পাঠকের ওপর দেখতে পান জানিয়ে সাদাত আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, অবচেতনেই প্রিয় লেখকের লেখা, ভাবনা পাঠককে প্রভাবিত করে। অনুভূতিকে স্পর্শ করে।’
পাঠকের সঙ্গে নিজের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে সাদাত বলেন, ‘একবার কলকাতা বইমেলায় গেলাম। জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি থেকে এক প্রৌঢ় দম্পতি এসেছেন স্টলে। তারা এসে আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, “সাদাত হোসাইন আছেন?” প্রকাশক আমাকে দেখিয়ে বললেন, “ইনি সাদাত হোসাইন।” কিন্তু তারা কিছুতেই বিশ্বাস করছেন না। বারবার বলছেন, “আরেহ, এ নাহ্। অন্দরমহল, মানবজনম বই লিখেছেন, বয়স্ক কোনো লেখক হবেন। আর এটুকু ছেলে ওই বই কীভাবে লিখবে!” তারা যখন সত্যি সত্যি বুঝলেন যে আমিই লেখক, তখন জড়িয়ে ধরলেন। বইয়ের চরিত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করলেন, কাঁদলেন, আশীর্বাদ করলেন। আরেকবার কুনাল ভট্টাচার্য নামে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক, কানে শোনেন না। তাকে বাড়ি থেকে কেউ একা বের হতে দেয় না। কলকাতা থেকে অনেক দূরে থাকেন। উনি আমার এক প্রোগ্রামে আমার সঙ্গে দেখা করবেন বলে লুকিয়ে বাড়ি থেকে চলে এসেছিলেন।’
সাদাত হোসাইন আরও বলেন, ‘ফেসবুকের যুগেও বই থেকে প্রকাশনীর ঠিকানা নিয়ে শত শত পাঠক যে প্রকাশনীর ঠিকানায় চিঠি পাঠান...বইমেলায় অটোগ্রাফ নিতে এসে এমন সব কাণ্ড করেন, কখনো বিব্রতও হতে হয়। তবে একজন লেখকের জন্য পাঠকের ভালোবাসার চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কিছু নেই, বড় পুরস্কারও কিছু নেই।’
সাদাত হোসাইনের জন্ম ১৯৮৪ সালের ২১ মে, মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার কয়ারিয়া গ্রামে। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন।
তার লেখা আলোচিত উপন্যাসগুলো হলো ‘আরশিনগর’, ‘অন্দরমহল’, ‘মানবজনম’, ‘নিঃসঙ্গ নক্ষত্র’, ‘নির্বাসন’, ‘ছদ্মবেশ’, ‘মেঘেদের দিন’, ‘অর্ধবৃত্ত’। এ ছাড়া লিখেছেন কবিতার বই। সাদাত চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গেও যুক্ত।
তিনি জিতেছেন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকার পুরস্কার, এসবিএসপি-আরপি ফাউন্ডেশন সাহিত্য পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গের চোখ সাহিত্য পুরস্কার, শুভজন সাহিত্য সম্মাননা ও এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার।
‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ এই স্লোগানে আগামী ১ মার্চ থেকে নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে রেলওয়ে ভ্রমণ। কাল থেকে যারা টিকিট কাটতে যাবেন তাদের অবশ্যই অনলাইনে নিবন্ধন থাকতে হবে। অনিবন্ধিত কেউ ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন না। একই সঙ্গে টিকিটের গায়ে যেহেতু যাত্রীর নাম লিপিবদ্ধ থাকবে তাই এই টিকিট দিয়ে অন্য কেউ ভ্রমণ করতে পারবেন না। রেলের টিকিট কালোবাজারি বন্ধে রেলওয়ের পক্ষ থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এদিকে রেলওয়ের এ উদ্যোগকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ায় গরম আলোচনা চলছে। কেউবা এর পক্ষে বলছেন, আবার কেউবা এর বিপক্ষে। তবে প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের বদলে নিয়ে যেতে হবে এই ধারণায় এক সময়ের হাতে লেখা টিকিট থেকে কম্পিউটারাইজ টিকিটের পর অনলাইন টিকিট চালু হয়েছিল। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নিবন্ধন প্রথা। জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। আর শুধু নিবন্ধিত ব্যক্তিরাই অনলাইনে বা কাউন্টারে গিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে পারবে।
নতুন এই পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু পরিবর্তন হয়। রেলওয়ের টিকেটিং সিস্টেমও এমন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। টিকিট যার ভ্রমণ তার নিশ্চিত করতে নিবন্ধন প্রথা চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট আর কালোবাজারির হাতে যাবে না। নির্ধারিত মূল্যে যাত্রীরা টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।’
কিন্তু এক সপ্তাহের কম সময়ের মধ্যে এই নতুন প্রথা চালু করা এবং তা বাস্তবায়ন কঠিন হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথম দুই মাস একটু চ্যালেঞ্জিং হবে। তবে মাঠপর্যায়ে তা তদারকি করার জন্য আমাদের টিম থাকবে। যাত্রীরা কয়েক মাসে অভ্যস্ত হয়ে গেলে আর সমস্যা হবে না।’
কীভাবে সংগ্রহ করা যাবে টিকিট : মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে BR-Space-NID number- Space- Date of Birth (সাল, মাস, দিন ফরম্যাটে) লিখে ২৬৯৬৯ নম্বরে সেন্ড করতে হবে। ফিরতি এসএমএসে নিবন্ধন সফল না ব্যর্থ হয়েছে তা জানা যাবে। বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট নম্বর ও ছবি দিয়ে নিবন্ধন আপলোড করবেন। ১২-১৮ বছর বয়সীরা জন্মনিবন্ধন প্রদান ও জন্মনিবন্ধন সনদ আপলোড করে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবে। রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান, নিবন্ধন হয়ে যাওয়ার পর রেলওয়ে অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কাটা যাবে। একই সঙ্গে যদি কেউ কাউন্টারে গিয়ে সংগ্রহ করতে চান তিনি মোবাইল নম্বর বললে বুকিং সহকারী সেই নম্বরের বিপরীতে এনআইডি নম্বর ও নাম পেয়ে যাবেন এবং যাত্রীকে টিকিট দেবেন। তখন যে টিকিট প্রিন্ট করা হবে সেই টিকিটে যাত্রীর নাম ও এনআইডি নম্বর থাকবে।
একজন যাত্রী কয়টা টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন এমন প্রশ্নের জবাবে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আগের নিয়ম অনুযায়ী চারটি করে টিকিট কাটতে পারবেন। তবে এই চারজনের যেকোনো একজনের সঙ্গে এনআইডির ফটোকপি থাকতে হবে যার নাম টিকিটের গায়ে লেখা থাকবে। যদি অন্য কারও টিকিট যাত্রীর কাছে পাওয়া যায় তাকে জরিমানা করা হবে।
এদিকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আগামী ১ মার্চ থেকে এই পদ্ধতিতে টিকিট বিক্রি করা হবে। তবে যেহেতু যাত্রার পাঁচ দিন আগে টিকিট বিক্রি শুরু হয় সে হিসেবে ১ মার্চ থেকে ৫ মার্চের টিকিট এ পদ্ধতিতে বিক্রি করা হবে। তাহলে বুঝা যাচ্ছে টিকিট যার ভ্রমণ তার প্রকৃতপক্ষে শুরু হবে ৫ মার্চ থেকে।
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে জেলেখা বেগম নামে এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে তার বয়স্ক ভাতার কার্ড বাতিল করা হয়েছে। বিগত ৫ মাস যাবৎ তিনি বয়স্ক ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে তার নাম পরিবর্তন করে আমিনা নামে অন্যজনকে বয়স্ক ভাতার কার্ড বরাদ্দ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মেম্বার বাদশার বিরুদ্ধে।
রানীশংকৈল উপজেলার নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলেখা বেগম নন্দুয়ার ইউনিয়নের সাতঘরিয়া গ্রামের আ. রহিমের স্ত্রী। পূর্বের চেয়ারম্যান ওই বৃদ্ধার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেন।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি ভাতার কার্ড পাওয়ার পর থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর ১৫০০ টাকা করে পেয়েছিলাম। কিন্তু গত তারিখে আমার টাকার কোনো মেসেজ না আসায় আমি উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি আমাকে মৃত দেখিয়ে আমিনা নামে ভাতার কার্ড করে দিয়েছেন মেম্বার বাদশাহ।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি এ বিষয়ে আরও বলেন, আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার বাদশাহ আমাকে মৃত দেখিয়ে আরেকজনের নামে কিভাবে টাকা খেয়ে ভাতার টাকা পরিবর্তন করে দেয়! আমি জীবিত থাকার পরও মেম্বার আমাকে মৃত দেখাল। আমি গরিব মানুষ। আমার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। এই টাকা দিয়ে ওষুধ খেয়ে বেঁচে আছি। আমি এর বিচার চাই।
মেম্বার বাদশাহ বলেন, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। সামনের দিকে সর্তকতার সাথে কাজ করব।
নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী বলেন, জীবিত মানুষ মৃত দেখিয়ে ভাতার কার্ড পরিবর্তনের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে মেম্বার যদি করে থাকেন তাহলে খুবই খারাপ করেছেন।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি, জেলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ এ মৃত্যু বরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওয়েবসাইটে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত দেখাতে পারবে না- সাংবাদিকের এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমাদের এভাবেই হয়। আমরা এভাবেই করে থাকি, প্রত্যায়নপত্র দেখে প্রতিস্থাপন করে থাকি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়নটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের ফাইলে সংরক্ষণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুতর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেব।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে আজ রোববার ঢাকা ছাড়া সব মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচি করবে বিএনপি। আজকের পদযাত্রা কর্মসূচির মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী সরকারবিরোধী কর্মসূচির প্রথম ধাপ শেষ হচ্ছে দলটির।
এর আগে, গত ২৩ মে দেশের ১১টি মহানগরে ‘পদযাত্রা’ করে বিএনপি। ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন।
সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের ১০ দফাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ ও অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ দাবিতে এই কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আজ রোববার (২৮ মে) পদযাত্রা করবে ৬ দলীয় জোট (দল ও সংগঠন) গণতন্ত্র মঞ্চ। এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ থেকে এই পদযাত্রা শুরু হবে, যা শেষ হবে বাড্ডায়।
গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রোববার ১১টায় রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে বাড্ডা পর্যন্ত গণতন্ত্র মঞ্চের ঢাকা উত্তরের পদযাত্রা শুরু হবে। অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে এ পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। মালিবাগ রেলগেটে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হবে।
পদযাত্রায় অংশ নেবেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারীসহ গণতন্ত্র মঞ্চের কেন্দ্রীয় নেতারা।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব শান্তির পক্ষে সোচ্চার ছিলেন এবং মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ে আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন।
বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ কথা বলেন।
ড. মোমেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমাদের বিদেশস্থ সকল মিশনে উদযাপন করছি। জুলিও কুরি পদক ছিল জাতির পিতার কর্মের স্বীকৃতি এবং বাংলাদেশের জন্য প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মান।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে কারাবরণ করেন বঙ্গবন্ধু। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য, সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালির ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন বঙ্গবন্ধু মেনে নিতে পারেননি। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলার নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে স্বাধীনতার ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলার মানুষ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বৈরীতা নয়”- এই বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তার শান্তির বার্তা নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘে এক নম্বর শান্তিরক্ষী দেশের মর্যাদা পেয়েছে। দেশে দেশে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ চালু করেছে।
‘বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনে আমাদের অঙ্গীকার হবে বিশ্বে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে কাজ করে যাওয়া। তাহলেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অর্জিত হবে’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদকে ভূষিত করে।
অপারেশন ছাড়াই সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আব্দুল মোতালেব হোসেন (৩৫) নামের এক মানসিক রোগীর পেট থেকে ১৫টি কলম বের করেছেন চিকিৎসক।
এ কাজ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক। তাদের এই সাফল্যে রীতিমত হৈচৈ পড়ে গেছে নেট দুনিয়ায়।
এ বিষয়ে আব্দুল মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, তার ছেলে মোতালেব খুব ভাল ছাত্র ছিল। ২টি লেটার মার্ক নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। এরপর খারাপ সঙ্গদোষে সে আস্তে আস্তে মাদকাসক্ত হয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। এরপর থেকে পথে ঘাটে ঘুরে বেড়ানোর সময় কুড়িয়ে পাওয়া কলমগুলি খাদ্য মনে করে খেয়ে ফেলে। বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। গত এক বছর ধরে তার শরীরে জ্বর ও পেটে ব্যথা শুরু হয়। অনেক চিকিৎসার পরও তা ভালো হচ্ছিল না। অবশেষে গত ১৬ মে তাকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম. মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। এখানে অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর তার অসুখের কারণ ধরা পড়ে। পরে চিকিৎসকরা তার পেটের ভিতর থেকে বিনা অপারেশনে কলমগুলো বের করে।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালটেন্ট ডা. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, মোতালেব হোসেন প্রথমে পেটে ব্যথা নিয়ে মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়। মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা এক্সরে ও আল্ট্রাসনোগ্রাম করেও পেটে কি সমস্যা সেটা শনাক্ত করতে পারছিলেন না। ফলে রোগীটিকে আমার কাছে রেফার্ড করেন। এন্ডোস্কপির মাধ্যমে পরীক্ষা করে তার পেটের ভেতর ১৫টি কলম দেখে প্রথমে চমকে যাই। এটা কীভাবে সম্ভব। পরে এন্ডোস্কপির মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই আমরা কলমগুলো বের করার সিদ্ধান্ত নেই। তিনি আরও বলেন, কাজটি আমাদের জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কলমগুলো একে একে পাকস্থলীতে সেট হয়ে গিয়েছিল। কলমগুলো বের করতে আমাদের প্রথমে মাথায় চিন্তা ছিল যেন, কলমগুলোর কারণে কোনোভাবেই শ্বাসনালিতে গিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ না হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তক্ষরণের একটা চিন্তাও মাথায় ছিল। অতঃপর প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আমরা কলমগুলো বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হই।
শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, এন্ডোস্কপি করা ব্যক্তি মানসিক অসুস্থ হওয়ায় তার কলম খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এভাবে খেতে খেতে সে অনেক কলম খেয়ে ফেলে। কলমগুলো তার পেটের মধ্যে জমা হয়েছিল। আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তার পেটের ভিতর ১৫টি কলম থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হই। এবং অপারেশন ছাড়াই এন্ডোস্কপির মাধ্যমে তার পেটের ভেতর থেকে একে একে ১৫টি আস্ত কলম বের করে আনি। বর্তমানে রোগীটি সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকদের অধীনে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ আছেন।
তিনি আরও বলেন, এন্ডোস্কপির মাধ্যমে মানুষের পেট থেকে কলম বের করার মতো ঘটনা বাংলাদেশে এটাই প্রথম। তাও আবার একটি-দু‘টি নয় ১৫টি কলম। এর আগে ঢাকা মেডিকেলে এক ব্যক্তির পেট থেকে এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি মোবাইল বের করেছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এমন সাফল্য এটাই প্রথম। আমরা অত্যাধুনিক ভিডিও এন্ডোস্কপি মেশিনের মাধ্যমে এবং আমাদের দক্ষ ডাক্তার দ্বারা অপারেশন ছাড়াই শুধু এন্ডোস্কপির মাধ্যমে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পেট থেকে ১৫টি কলম বের করে আনতে সক্ষম হয়েছি। শুধু এটাই নয়, আমরা বিনা অপারেশনে পেটের পাথর, কিডনিতে পাথর থেকে শুরু করে অনেক কিছুই অপারেশন ছাড়াই সেগুলো অপসারণের কাজ করে যাচ্ছি।
বিরতি কাটিয়ে আবারও আন্তর্জাতিক ফুটবলে ফিরছে আর্জেন্টিনা। গত মার্চে ঘরের মাঠে সবশেষ আকাশী-নীলদের দেখা গিয়েছিল তিন মাস পর আগামী জুনে তারা আসছে এশিয়া সফরে। সফরকালে ইন্দোনেশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচও খেলবেন লিওনেল মেসিরা।
আগামী ১৫ জুন বেইজিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামবে আর্জেন্টিনা। চারদিন পর ১৯ জুন জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার মুখোমুখি হবেন তারা। সেই ম্যাচ দুটিকে সামনে রেখে আজ দল ঘোষণা করেছেন দেশটির কোচ লিওনেল স্কালোনি। লিওনেল মেসিকে অধিনায়ক করে ২৭ সদস্যের দল ঘোষণা করা হয়েছে।
বিশ্বকাপজয়ী খেলোয়াড়দের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু নাম। এই দলে এই দলে চমক হিসেবে রয়েছে আলেজান্দ্রো গার্নাচো। যিনি বিশ্বকাপের পর আর্জেন্টিনার প্রথম প্রীতি ম্যাচের দলে ছিলেন। তবে চোটের কারণে অভিষেকের সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে আলো ছড়িয়েছেন গার্নাচো। গত বছরের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মূল দলে জায়গা হয় তার। এখন পর্যন্ত ক্লাবটির হয়ে ৩৫ ম্যাচ খেলেছেন এই লেফট উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত নিজে করেছেন ছয়টি গোল, করিয়েছেন আরও ছয়টি। এমন পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি স্কালোনির। তাই জাতীয় দলে জায়গা পেতে বেগ পেতে হয়নি।
দলের তৃতীয় গোলকিপার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন ওয়াল্টার বেতিনেজ। এছাড়া বেশ কয়েক বছর পর দলে ফিরেছেন লিওনার্দো বলের্দি। ফরাসি ক্লাব মার্সেইয়ের হয়ে চলতি মৌসুমে তিনি দুর্দান্ত খেলছেন। তবে স্কোয়াডের মাঝ মাঠের ফুটবলারদের নিয়ে কোনো চমক নেই।
তবে এই স্কোয়াডে নেই লাউতারো মার্তিনেজের নাম। গোড়ালির চোটের কারণে এই দুই প্রীতি ম্যাচে তাকে পাচ্ছে না আর্জেন্টিনা। তবে তার জায়গায় মাঠ মাতাতে দেখা যাবে জিওভানি সিমিওনেকে।
আর্জেন্টিনার ২৭ সদস্যের দল
গোলরক্ষক:
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), জেরনিমো রুলি (আয়াক্স), ওয়াল্টার বেনিটেজ (পিএসভি)।
ডিফেন্ডার:
নাহুয়েল মোলিনা (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), গঞ্জালো মন্তিয়েল (সেভিয়া), জার্মান পেজেল্লা (রিয়েল বেটিস), ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো (টটেনহ্যাম হটস্পার), লিওনার্দো বলের্দি (অলিম্পিক মার্সেই), নিকোলাস ওতামেন্ডি (বেনফিকা), ফ্যাকুন্ডো মদিনা (আরসি লেন্স), নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (লিয়ন), মার্কোস অ্যাকুনা (সেভিলা)।
মিডফিল্ডার:
লিয়ান্দ্রো পেরেদেস (জুভেন্তাস), এনজো ফার্নান্দেজ (চেলসি), গুইডো রদ্রিগেজ (রিয়েল বেটিস), রদ্রিগো ডি পল (অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ), এজেকিয়েল পালাসিওস (বেয়ার লেভারকুসেন), অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার (ব্রাইটন), থিয়াগো আলমাদা (আটলান্টা ইউনাইটেড), জিওভানি লো সেলসো (ভিলারিয়াল)।
ফরোয়ার্ড:
লুকাস ওকাম্পোস (সেভিয়া), অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া (জুভেন্তাস), লিওনেল মেসি (পিএসজি), জুলিয়ান আলভারেজ (ম্যানচেস্টার সিটি), জিওভানি সিমিওনে (নাপোলি), আলেজান্দ্রো গার্নাচো (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড), নিকোলাস গঞ্জালেজ (ফিওরেন্টিনা)।
নতুন পে-স্কেল কিংবা মহার্ঘ ভাতা নয়, সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি বা ইনক্রিমেন্ট অনুযায়ী। তাদের বেতন প্রতি বছর যতটা বাড়ার কথা এবার তার চেয়ে বেশি বাড়বে। আর তা চলতি বছরের মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে বাড়ানো হবে। অর্থাৎ আগামী অর্থবছরে সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত ইনক্রিমেন্ট ৫ শতাংশের বাইরে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত প্রায় এক বছর ধরে দ্রব্যমূল্য বাড়ার কারণে সাধারণ মানুষ কষ্টে আছেন। সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগের একমাত্র আয় বেতন-ভাতা। বৈশি^ক মন্দার কারণে সরকারও খানিকটা সংকটে আছে। এ পরিস্থিতিতে পে-স্কেল দেওয়ার মতো বড় ধরনের ব্যয় বাড়ানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলে সরকারের ওপর চাপ বেশি হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে সরকারি কর্মরতদের খানিকটা স্বস্তি দিতে কোন খাতে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় এমন প্রস্তাব চাওয়া হয়। একই সঙ্গে বাজেটবিষয়ক বিভিন্ন বৈঠকে সরকারি নীতিনির্ধারকরাও এ বিষয়ে আলোচনা করেন। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপন করে। চলতি মাসে গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে কত বাড়তি ব্যয় হবে তা হিসাব করে পরের বৈঠকে উপস্থাপন করতে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বড় ধরনের ব্যয় না বাড়িয়ে একটা উপায় বের করতেও বলেন। শেষ পর্যন্ত ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যা চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নিজেই জানিয়েছেন।
বর্তমানে সরকারি কর্মচারীরা ২০১৫ সালের বেতন কমিশন অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এ বেতন কমিশন প্রণীত হয়েছিল। এ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, আর নতুন বেতন কমিশন গঠন করা হবে না। প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট বা বেতন বাড়ানো হবে। এ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী তা হয়ে আসছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি কর্মচারী ১৪ লাখ। বিভিন্ন করপোরেশন এবং এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়ে হিসাব করলে প্রায় ২২ লাখ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টের বাইরে আরও কতটা বাড়ানো যায় তা হিসাব করে নির্ধারণ করা হবে। এ কাজ করতে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পর আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। এ কমিটি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সমন্বয় করে যাচাই-বাছাই শেষে ইনক্রিমেন্টের হার সুপারিশ করবে। এ ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে বিদ্যমান ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে প্রতি মাসে বেতন বাড়ানো হবে, নাকি গড় মূল্যস্ফীতির হার বিবেচনা করে ইনক্রিমেন্টের হার বাড়ানো হবে, তা খতিয়ে দেখা হবে। ২০তম গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত সবার জন্য একই হারে বেতন বাড়নো হবে কি না, তা আরও খতিয়ে দেখা হবে। চূড়ান্ত হিসাব অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর দাপ্তরিক প্রক্রিয়া শেষে প্রকাশ করা হবে। যে তারিখেই প্রকাশ করা হোক না কেন, আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকরী ধরা হবে।
এখানে মহার্ঘ ভাতা ১০ শতাংশ দেওয়া হলে এ হিসাবে ৪ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। ১৫ শতাংশ দেওয়া হলে ৬ হাজার কোটি এবং ২০ শতাংশ দেওয়া হলে ৮ হাজার কোটি টাকা যোগ করতে হবে। অর্থাৎ মহার্ঘ ভাতা দেওয়া হলে আগামী অর্থবছরে সরকারের ব্যয় বাড়বে। আর এতে সরকার ব্যয় কমিয়েও সরকারি কর্মকর্তাদের সন্তুষ্টিতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো পথে হেঁটেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতা বাবদ রাখা হয়েছে ছিল ৭৪ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা। খরচ না হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ১ হাজার ৯৩ কোটি টাকা কমানো হয়েছে। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বাজেট হওয়ার কথা আছে। এ বাজেট সরকারি কর্মরতদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ ৭৭ হাজার কোটি টাকা রাখা হতে পারে। সরকারি কর্মকর্তাদের অনেক পদ এখনো খালি আছে। এতে ইনক্রিমেন্ট বাড়ানো হলেও সরকারের ব্যয়ে বড় ধরনের চাপ বাড়বে না।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন জায়েদা খাতুন।
তিনি ঘড়ি প্রতীকে মোট ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট।
বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) রাতে রির্টানিং কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।
নির্বাচনের অন্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ ৭ হাজার ২০৬ ভোট, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট, স্বতন্ত্রপ্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মো. হারুন-অর-রশীদ ২ হাজার ৪২৬ ভোট এবং হাতি প্রতীকের সরকার শাহনূর ইসলাম ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) নির্মিত হয়েছে বিশেষ কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান ‘ও ভোরের পাখি’। ঈমাম হোসাইনের প্রযোজনায় এটি উপস্থাপনা করেছেন তামান্ন তিথি। অনুষ্ঠানটিতে আবৃত্তি করেছেন আশরাফুল আলম, মীর বরকত, রফিকুল ইসলাম, পলি পারভিন, শাকিলা মতিন মৃদুলা, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, আসলাম শিশির, সংগীতা চৌধুরী, আহসান উল্লাহ তমাল। প্রচারিত হয় ২৫ মে সকাল সাড়ে ৯টায়।
এছাড়াও নির্মিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’। অনুষ্ঠানটিতে গান, কবিতা ও আলোচনার সমন্বয়ে কবিকে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানটিতে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। ইয়াসমিন মুসতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, শেলু বড়ুয়া, ছন্দা চক্রবর্ত্তী ও ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়ের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন প্রফেসর মুন্সী আবু সাইফ। মনিরুল হাসানের প্রযোজনায় অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হচ্ছে ২৫ মে দুপুর ১ টা ০৫ মিনিটে। আরও প্রচারিত হবে সংগীতানুষ্ঠান ‘দোলনচাঁপা’ ও ‘সন্ধ্যামালতী’। রাত ৯টায় প্রচারিত হবে নাটক ‘বনের পাপিয়া’ (পুনপ্রচার)।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট শেষ হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় এ সিটির ৪৮০টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ শুরু হয়, যা একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলে।
দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এখন পর্যন্ত ৪৫০টি কেন্দ্রের প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে আজমত উল্লা খান পেয়েছেন ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৯ ভোট এবং টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজার ৪১৩ ভোট।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। মোট ভোটকেন্দ্র ৪৮০টি, মোট ভোটকক্ষ ৩ হাজার ৪৯৭টি।
গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুনের মধ্যে। দুজনই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। অপরদিকে ভোটের পরিবেশ ভালো বলে জানান আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহনূর ইসলাম রনি।
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার পরও বিসিএস পরীক্ষায় নারীদের চাকরি পাওয়ার হার প্রায় একই রয়েছে। ১০ শতাংশ কোটা থাকা অবস্থায় তারা যে পরিমাণ চাকরি পাচ্ছিলেন, কোটা তুলে দেওয়ার পরও প্রায় একই হারে চাকরি পাচ্ছেন। সাধারণ ক্যাডার বা কারিগরি ক্যাডারে পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারগুলোতে এগিয়ে গিয়ে বিসিএসে মোট চাকরি পাওয়ার হারে প্রায় একই অবস্থান ধরে রেখেছেন নারীরা।
অথচ কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, কোটা তুলে দিলে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণের গ্রাফ নিম্নমুখী হবে। আসলে তা হয়নি। কোটা তুলে দেওয়ার পরও তারা প্রায় সমানতালে এগিয়ে চলছেন।
৪০তম বিসিএস দিয়ে চাকরিতে ঢুকে বর্তমানে ঢাকা বিভাগে কর্মরত একজন নারী কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, যে বয়সে ছেলেরা চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা করে সেই বয়সে অধিকাংশ নারীকেই বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করতে হয়। সংসার করে, সন্তান লালনপালন করে নারীরা ভালো প্রস্তুতি নিতে পারে না। ফলে অনেক মেধাবী নারী প্রতিযোগিতায় উতরে যেতে পারেন না। অনেক নারী পারিবারিক কারণে বিয়ের পর চাকরির আবেদনই করেন না। বিয়ের পর পরীক্ষায় অংশ নিতে বাধা আসে। এসব কাটিয়ে উঠে চাকরিতে প্রবেশ করা কঠিন। আর বিসিএসের চাকরি মানেই বদলিযোগ্য। সংসার-সন্তান রেখে বদলিকৃত পদে যোগ দেওয়া কঠিন বিষয়। সবকিছু মিলিয়ে নারীদের জন্য এ চাকরি সহজ নয়। একজন পুরুষ বেকার নারী বিয়ে করে, কিন্তু একজন নারী বেকার পুরুষ বিয়ে করে না। এ বিষয়টাও ছেলেদের প্রস্তুত হতে সাহায্য করে। এ বাস্তবতা থেকেও পুরুষ প্রতিযোগী বেশি হয়। অন্যদিকে যোগ্য হলেও অনেক নারী প্রতিযোগিতাই করে না।
একজন নারী ইউএনও বলেন, পরীক্ষার হলে বা মৌখিক পরীক্ষার সময় অনেক নারীকে দুগ্ধপোষ্য সন্তানকে সঙ্গে আনতে হয়। এগুলোও অনেক সময় নারীকে চাকরির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করে। ঘরে ঘরে বাধা পায় নারীর অগ্রযাত্রার নানা চেষ্টা। নগর-জীবনে নারীর অস্তিত্ব অনেকটা স্বচ্ছন্দের। কিন্তু নগরসভ্যতার বাইরে বিশাল বিস্তৃত গ্রামীণ জনজীবনে পুরুষতন্ত্রের নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত বেষ্টনী এখনো নারীকে ধরাশায়ী করে রাখে। হাজার হাজার বছর ধরে পৃথিবীর পথ হাঁটছে নারী-পুরুষ। তবু তাদের মধ্যে ভারসাম্য নেই।
কোটা না থাকার পরও নারীরা তাদের অবস্থান কীভাবে ধরে রাখলেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ শাইখ ইমতিয়াজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নারী শিক্ষায় বাংলাদেশের অর্জন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। প্রাথমিকের পর মাধ্যমিকেও মেয়েরা অনেক এগিয়েছে। উচ্চশিক্ষায়ও মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। সবকিছু মিলে বিসিএসে এর প্রতিফল ঘটেছে। যে পরিমাণ মেয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছে, সেই তুলনায় চাকরিতে প্রবেশের হার বেশি। উচ্চশিক্ষায় যায় হয়তো ৮০ ভাগ ছেলে। আর মেয়েদের মধ্যে উচ্চশিক্ষায় যাওয়ার হার ৩০ বা ৩৫ শতাংশ। তাদের মধ্যে ২৬ বা ২৭ শতাংশ মেয়ে বিসিএস দিয়ে চাকরি পাচ্ছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে মেয়েরা অনেক ভালো করছে।’
এক প্রশ্নের জবাব ড. ইমতিয়াজ বলেন, ‘মেয়েদের কাছে শিক্ষা এখনো অপরচুনিটি (সুযোগ) আর ছেলেদের কাছে অধিকার। মেয়েরা যখন এ সুযোগটা পায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কাজে লাগাতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘পরিবারের ছেলেসন্তানের জন্য যে বিনিয়োগ, মেয়েসন্তানের জন্য এখনো তার চেয়ে অনেক কম। এখনো মনে করা হয় মেয়ে তো অন্যের ঘরে চলে যাবে। অথচ মজার বিষয় হচ্ছে, পরিবারের দায়িত্ব উচ্চশিক্ষিত ছেলের তুলনায় উচ্চশিক্ষিত মেয়ে অনেক বেশি বহন করে। এসব প্রতিবন্ধকতা হাজার বছরে তৈরি হয়েছে। এগুলো দূর হতে আরও সময় লাগবে।’
অন্যান্য কোটার মতো প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ছিল। নারীরা যোগ্যতা অনুযায়ী মেধা কোটায়ও নিয়োগ পেতেন। তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ১৫ শতাংশ নারী কোটা রয়েছে এখনো। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক জেলা কোটার পাশাপাশি ৬০ শতাংশ নারী কোটা সংরক্ষিত রেখে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে নারীরা সরকারি চাকরিতে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে মেধা কোটায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নিয়োগ লাভের পাশাপাশি সংরক্ষিত কোটায়ও নিয়োগ লাভের সুবিধা পেয়ে থাকেন।
শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রীর হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে এক দশকের বেশি সময় ধরে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর হার বেশি। কলেজ পর্যায়ে ছাত্র ও ছাত্রীর হার প্রায় সমান। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীর হার ৩৬ শতাংশের বেশি।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার। ৪০তম সাধারণ বিসিএস হচ্ছে কোটামুক্ত প্রথম বিসিএস। ধাপে ধাপে বাছাই করে গত বছর ৩০ মার্চ এই বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশ করে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রায় ১৩ মাস পর গত মাসে সেই সুপারিশের বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে পিএসসি। সেখানে বলা হয়েছে, ৪০তম বিসিএসে মোট ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন। যা কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসে ২৬ দশমিক ৯১ ও ৩৭তমে ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ছিল। গত ১ নভেম্বর এ বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছেন।
পিএসসির একজন সাবেক চেয়ারম্যান বলেছেন, কোটামুক্ত একটি সাধারণ বিসিএসে ২৬ দশমিক ০৩ শতাংশ নারী চূড়ান্তভাবে সুপারিশ পেয়েছেন এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীদের শক্ত সক্ষমতা প্রকাশ করে। কারণ এর আগে কোটাযুক্ত ৩৮তম বিসিএসের তুলনায় মাত্র দশমিক ৮৮ শতাংশ কম। অর্থাৎ কোটা তুলে দেওয়ার পরও নারীরা ১ শতাংশও পিছিয়ে পড়েননি। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে, প্রত্যেক বিসিএসে নারীদের আবেদনের হার অর্থাৎ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের হার পুরুষের তুলনায় কম অর্থাৎ গড় হার কম। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতেও নারী প্রার্থীদের পুরুষের তুলনায় অনেক কম চোখে পড়ে। এমনকি কোনো কোনো কক্ষে নারী প্রার্থী থাকেই না। একই সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ধাপগুলো অতিক্রম করার ক্ষেত্রে নারীদের অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। ৪০তম বিসিএসে যোগ্য আবেদনকারী নারী ছিলেন ৩৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তাদের মধ্যে ১৯ দশমিক ১৯ শতাংশ নারী প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হন। অথচ পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। যোগ্য আবেদনকারী পুরুষ ছিলেন ৬১ দশমিক ৬২ শতাংশ। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ পুরুষের হার ৮০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারে ২১ দশমিক ০৮ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৪ দশমিক ১৪ ও ২৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
৪০তম বিসিএসের কারিগরি ক্যাডারে ২৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। এই হার ৩৮ ও ৩৭তম বিসিএসে ছিল যথাক্রমে ২৯ দশমিক ৫৩ ও ২৫ দশমিক ২ শতাংশ।
সাধারণ এবং কারিগরি ক্যাডারে নারীরা পিছিয়ে পড়লেও শিক্ষার মতো পেশাগত ক্যাডারে এগিয়েছেন। ৪০তম বিসিএসে ২৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ নারী সুপারিশ পেয়েছেন। যা ৩৮তমে ২৬ দশমিক ৩০ এবং ৩৭তমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ ছিল।
পুরোপুরি মেধার ভিত্তিতে নেওয়া ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারেও নারীরা পিছিয়েছেন। জেলা কোটাও না থাকায় নাটোর, ভোলা, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি থেকে প্রশাসন ক্যাডারে কেউ সুপারিশ পাননি।
গত বছর প্রকাশিত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সরকারি চাকরিজীবীদের তথ্যসংক্রান্ত ‘স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, সিভিল প্রশাসনের ১৪ লাখ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে ২৬ শতাংশ নারী। সরকারি দপ্তরের মধ্যে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করেন সবচেয়ে কমসংখ্যক নারী। মন্ত্রণালয়ের মোট জনবলের ১৯, অধিদপ্তরের ৩১, বিভাগীয় কমিশনার ও ডেপুটি কমিশনারের কার্যালয়ের ১২ এবং আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ১২ শতাংশ কর্মী নারী।