
যেন ইতিহাসের এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। নাম হেরিটেজ আর্কাইভস। স্থানীয় ইতিহাসের অনন্য এ সংগ্রহশালায় রয়েছে ১৮৭২ সালে করা প্রথম আদমশুমারি রিপোর্ট, কিংবা সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট বা ভূমি জরিপের রিপোর্ট অথবা সরকারি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখা দুষ্প্রাপ্য সব রিপোর্ট। এ ছাড়াও রয়েছে বই-পুস্তক, সাময়িকী, পত্রিকা, ছোট কাগজ, এমফিল-পিএইচডির গবেষণা জার্নাল, লিফলেট, পোস্টার, বুলেটিন, মেনিফেস্টো, স্মরণিকা, ফেস্টুন, ব্যঙ্গচিত্র, স্মারকচিহ্ন, পারিবারিক সরঞ্জাম ও জীবনীগ্রন্থের বিপুল সংগ্রহ। দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উপকরণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ব্যতিক্রমী এ সংগ্রহশালাটি ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান।
তিনি তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলার জামরুলতলা এলাকার বাসাতেই গড়ে তুলেছেন সংগ্রহশালাটি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা সংগ্রহশালাটির নিচতলায় রয়েছে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী সংক্রান্ত অন্তত ৫ হাজার ২০০ গ্রন্থ। যার মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর লেখা ৬০০, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর ৩৫০ এবং কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনীর ওপর ২৫০ গ্রন্থ। নিচতলায় আরও রয়েছে দেশের ৬৪টি জেলা নিয়ে লেখা প্রায় ১২ হাজার বই। রয়েছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, তেল-গ্যাসসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের গ্রন্থ, ডকুমেন্টস, লিফলেট, পোস্টারের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের ম্যাগাজিন।
সংগ্রহশালাটিতে ৭/৩ ফুট আয়তনের ১৭৮টি বইয়ের তাকে আরও রয়েছে কবি আবু বকর সিদ্দিক, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এবং প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের দেওয়া বই-পুস্তকের কর্নার। ৪০০টি বিষয়ের ওপর সংগ্রহ করা সংগ্রহশালাটিতে রয়েছে প্রায় তিন হাজার শিরোনামে ৩৫ হাজারের মতো সাময়িকী, পত্রপত্রিকা এবং ৩ হাজার ২০০ ছোট কাগজ। আরও রয়েছে স্বল্প ভাড়ায় সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপ করার জন্য একটি সেমিনার কক্ষ এবং দূর-দূরান্ত থেকে আসা গবেষকদের জন্য থাকা ও রান্নার ব্যবস্থা।
সংগ্রহশালাটির তৃতীয়তলায় রয়েছে পরিবারের ব্যবহারের তালিকা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জিনিসপত্র সংবলিত একটি পারিবারিক আর্কাইভস কর্নার। যেখানে স্থান পেয়েছে পরিবারের কাজে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত হুঁকা, হারিকেন, কুপি, কলের গান, টেলিফোন সেট, রেডিও, কলম, দোয়াত, টাইপরাইটার, সাইক্লোস্টাইল মেশিন, ক্যামেরা, টেপ রেকর্ডার, জাঁতা, খড়ম, পয়টা, পান বাটা, কাঁসার বাসনপত্র, মাটির জিনিসপত্র, কৃষি যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন জাতের ধান, মুদ্রা, বিয়ের কার্ড, বিয়ের শাড়ি, আমন্ত্রণপত্র ইত্যাদি।
সমৃদ্ধ এ সংগ্রহশালাটি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অধ্যাপক মাহবুবর রহমান জানান, স্থানীয় ইতিহাসের ওপর পিএইচডি করতে গিয়ে দেখেন একই জায়গায় স্থানীয় ইতিহাসের ওপর পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য নেই। পরে নব্বইয়ের দশকে নেদারল্যান্ডসের একটি আর্কাইভ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি বাংলাদেশেও একটি হেরিটেজ আর্কাইভস গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ১৯৯৮ সাল থেকে লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার সংগ্রহ করতে শুরু করেন তিনি। ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় এবং রাবির ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও বন্ধুবান্ধবদের সহযোগিতায় সংগ্রহ করতে করতে ২০০২ সালে নিজের বাসায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘হেরিটেজ : বাংলাদেশের ইতিহাসের আর্কাইভস’ নামের এ সংগ্রহশালা।
অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, সংগ্রহশালাটি এতটাই সমৃদ্ধ যে, একজন গবেষক দেশের কোথাও না গিয়ে মাত্র সাত দিন সংগ্রহশালাটিতে বসলে বাংলাদেশের যেকোনো বিষয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধ লিখতে পারবেন। সংগ্রহশালাটি শুক্রবার বাদে প্রতিদিন চার ঘণ্টা গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। এখানে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চারজন গবেষক আসেন। এর মধ্যে রাবির ফোকলোর, চারুকলা, নৃবিজ্ঞান এবং ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরাই বেশি আসেন গবেষণা কাজে। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের অনেক গবেষক এখানে এসে গবেষণা করেন। আর হেরিটেজ আর্কাইভস থেকে প্রতি বছর ‘স্থানীয় ইতিহাস’ নামে একটি গবেষণা জার্নাল প্রকাশিত হয়।
অধ্যাপক মাহবুবর রহমান জানান, ২০১১ সালে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত হেরিটেজ আর্কাইভ পরিদর্শনে এসে অভিভূত হন। পরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হেরিটেজ আর্কাইভসের জন্য তিনটি ফ্লোর নির্মাণ করে দেন তিনি। ফলে বইপত্র রাখার স্থানের এখন আর তেমন অভাব নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনও ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর হেরিটেজ আর্কাইভস পরিদর্শন করেন।
সংগ্রহশালাটি সংরক্ষণের জন্য দেশের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতার আবেদন জানিয়ে অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে সংগ্রহশালাটি একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। হেরিটেজ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আমি নিজেই। আমার ব্যক্তিগত অনুদানে এটি চলে। বর্তমানে সংগ্রহশালাটি দেখভাল করার জন্য ছয়জন স্থায়ী কর্মী আছেন। সবমিলিয়ে সংগ্রহশালাটি পরিচালনায় মাসে ৫০ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়। সংগ্রহশালার নিজস্ব কোনো আয়ের উৎস নেই। তাই সমাজের বিত্তবান মানুষরা যদি আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করে তাহলে সংগ্রহশালাটিকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব হবে। এ জন্য সবার সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।’
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের প্রতিটি কাউন্টারে দিনে গড়ে টিকিট বিক্রি হয় প্রায় ৬০ হাজার টাকার। আর বৃহস্পতি ও শনিবার তা বেড়ে যায় এক লাখ টাকা পর্যন্ত। গতকাল বুধবার বিক্রি হয়েছে আগামী রবিবারের যাত্রার টিকিট এবং টাকায় গড়মূল্য ছিল প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এ তথ্য কাউন্টারের বুকিং সহকারীদের কাছ থেকে নেওয়া।
তবে নিবন্ধনের কারণে যে টিকিট বিক্রি কিছুটা কমে যাবে এ কথা পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলমের কথায়ও উঠে এসেছে। তিনি নিবন্ধন ইস্যুতে সম্প্রতি দেশ রূপান্তরকে বলেছিলেন, আগামী দুই মাস হবে অন্তর্বর্তীকালীন সময়। এ সময়ে টিকিট বিক্রিতে কিছুটা ভাটা কিংবা মানুষ নতুন এ পদ্ধতি মানতে চাইবে না। কিন্তু না মেনে উপায় নেই। নিবন্ধন ছাড়া মেশিন থেকে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে না।
গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ৫ নম্বর কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করেছেন বুকিং সহকারী আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘অনেক যাত্রী নিবন্ধন ছাড়াই আগের নিয়মে টিকিট সংগ্রহ করতে এসেছেন। তখন আমরা রেলওয়ের হেল্প ডেস্ক থেকে নিবন্ধন সম্পন্ন করে লাইনে দাঁড়াতে বলি। যারা নিবন্ধন করতে পেরেছেন তারা টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছেন। আবার অনেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আনেনি বলে ফিরে গেছেন। এ জন্য আমাদের কাউন্টারে কোনো ভিড় ছিল না, হেল্প ডেস্কেই ভিড় বেশি দেখা যায়।’
এ সময় একাধিক বুকিং সহকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেরত যাওয়া যাত্রীদের হার কিন্তু কম ছিল না। আর এর প্রভাব পড়েছে টিকিট বিক্রির টাকায়। ছয়টি কাউন্টারে গড়ে ৩০ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য সময় তা ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার পর্যন্ত টিকিট বিক্রি হয়ে থাকে।
নতুন এ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লাগবে বলে উল্লেখ করে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আবিদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে নতুন কিছু চালু হতে সময় নেই। এখানেও এর ব্যতিক্রম হবে না। তবে আমাদের হেল্প ডেস্কের কারণে যাত্রীরা স্টেশনে এসে নিবন্ধন করতে পারছে। এ জন্য কাউন্টারের তুলনায় হেল্প ডেস্কে ভিড় বেশি দেখা গেছে।’
রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা দেশেই প্রথম দিনে সাড়া কিছুটা কম হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে বলে রেলওয়ে কর্তাদের ধারণা।
এদিকে গতকাল চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় তিনি বলেন, টিকিট যার ভ্রমণ তার নিশ্চিত করতে এ নিবন্ধন প্রক্রিয়া। এতে একজনের টিকিট দিয়ে আরেকজন ভ্রমণ করতে পারবে না। এতে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য কমে যাবে।
১ মার্চ থেকে নিবন্ধনধারী ছাড়া কেউ ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারবে না। এ জন্য প্রত্যেক যাত্রীকে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে BR-Space-NID number- Space- Date of Birth (সাল, মাস, দিন ফরম্যাটে) লিখে ২৬৯৬৯ নম্বরে সেন্ড করতে হবে। ফিরতি এসএমএসে নিবন্ধন সফল না ব্যর্থ হয়েছে তা জানা যাবে। বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট নম্বর ও ছবি দিয়ে নিবন্ধন আপলোড করবে। ১২-১৮ বছর বয়সীরা জন্ম নিবন্ধন সনদ আপলোড করে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবে। নিবন্ধন হয়ে যাওয়ার পর রেলওয়ে অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কাটা যাবে। একই সঙ্গে যদি কেউ কাউন্টারে গিয়ে সংগ্রহ করতে চায় তিনি মোবাইল নম্বর বললে বুকিং সহকারী সেই নম্বরের বিপরীতে এনআইডি নম্বর ও নাম পেয়ে যাবে এবং যাত্রীকে টিকিট দেবে। তখন যে টিকিট প্রিন্ট করা হবে সেই টিকিটে যাত্রীরা নাম ও এনআইডি নম্বর থাকবে।
১০০ পস মেশিন হস্তান্তর : গতকাল রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এনআইডির মাধ্যমে নিবন্ধন করে রেলওয়ের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেটিং চালু ও টিকিট চেকিং ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশনে ‘পস মেশিন’ হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন এ মেশিন হস্তান্তর করেন।
বাসস জানায়, এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রেলপথমন্ত্রী বলেছেন, এখন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে নিবন্ধন ছাড়া টিকিট কেনা করা যাবে না। তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে শুধু আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটের জন্য এ ব্যবস্থা চালু হলেও পর্যায়ক্রমে লোকাল ট্রেনেও এটি কার্যকর করা হবে।
‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ‘স্মার্ট রেলওয়ে’ গঠনের অংশ হিসেবে এ ব্যবস্থা চালু করা হলো উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আমরা যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য একাধিক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এতদিন টিকিট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে অভিযোগ ছিল, তা থেকে বের হওয়ার জন্যই ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ কার্যক্রম আমরা শুরু করেছি, যা আজ (গতকাল) থেকে কার্যকর হচ্ছে।’
রেলপথমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে অন্যের টিকিটে ভ্রমণ করলে বিনা টিকিটের যাত্রী হিসেবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া টিটিইদের কাছে পস মেশিন সরবরাহ করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে তারা বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করবে এবং এ টাকা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হবে। এখন থেকে অনলাইনে টিকিট বাতিলের জন্য আর কাউন্টারে যেতে হবে না, অনলাইনেই টিকিট বাতিল করা যাবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদত আলী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাবিপ্রবি আবাসিক হল থেকে এক বৈধ শিক্ষার্থীকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কর ও একজনকে হলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গতকাল বুধবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমান।
বহিষ্কৃত দুই ছাত্রলীগ কর্মী হলেন, নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের সাদ্দাম হোসেন পিয়াস ও সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের আশিকুর রহমান। এছাড়া আরেক ছাত্রলীগ কর্মী ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ইফতেখার আহম্মেদ রানাকে হলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। হলের বৈধ শিক্ষার্থী না হওয়ায় তার হলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। বহিষ্কৃতরা ছাত্রলীগ নেতা সুমন মিয়ার অনুসারী।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় তাদের হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া আরেকজন হলের বৈধ ছাত্র না হওয়ায় তাকে হলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
এদিকে এ ঘটনাটির অধিক তদন্তের জন্য বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ জেড এম মঞ্জুর রশিদকে আহ্বায়ক করে তিন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেইশন এন্ড কমিউনিকেইশন টেকনোলজির সহকারী অধ্যাপক আহসান হাবীব, বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইফুজ্জামান ভূঁইয়া।
উল্লেখ্য, গত ২২ ফেব্রেুয়ারি শাহপরান হলের এক আবাসিক ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী মো. দেলোয়ার হোসেনকে হল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠে সাদ্দাম হোসেন পিয়াসসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় হলের প্রভোস্ট বরাবর একটি অভিযোগ পত্র জমা দেন ভুক্ত ভোগী শিক্ষার্থী। পরে ঘটনাটি তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট জমা দেয় হল কর্তৃপক্ষ।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় ওরসগামী একটি পিকআপ উল্টে তিন নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৮ জন। গতকাল বুধবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের আনালিয়াবাড়ী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া লালমনিরহাটে ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন। কুমিল্লার মুরাদনগরে মাটিবাহী ট্রাক্টরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মোটরসাইকেল আরোহী দুজন, মাগুরায় স্থানীয়ভাবে নির্মিত নাটা গাড়ির ধাক্কায় এক যুবক এবং দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে কুকুরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উল্টে গিয়ে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের চালক নিহত হয়েছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে
টাঙ্গাইলে পিকআপ উল্টে ৩ নারী নিহত : কালিহাতী উপজেলায় পিকআপ উল্টে নিহত নারীরা হলেন জামালপুর সদর উপজেলার গান্দাইল এলাকার মৃত গাদুগানের মেয়ে শাহারা ওরফে শাহানা বেগম (৬০), পেচামানিক এলাকার মাহতাব আলীর মেয়ে নুর জাহান (৫০) এবং টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার গৌরাং এলাকার মৃত জাবেদ আলীর মেয়ে ফিরোজা বেগম (৬০)। এ দুঘর্টনায় আহতরা সবাই জামালপুর সদর উপজেলার গান্দাইল ও পেচামানিক এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, জামালপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি পিকআপ ২০ যাত্রী নিয়ে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে ওরসে যাচ্ছিল। পিকআপটি কালিহাতী উপজেলার আনালিয়াবাড়ী এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিন নারী নিহত হন। আহত অন্তত ১৮ জনকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
লালমনিরহাটে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ২ : লালমনিরহাটের ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার দুই যাত্রী নিহত হয়েছে। এতে আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়কে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের বুড়িরবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার ইউনিয়নের জমিদারবাড়ি এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে নবিউল ও অটোচালক সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের খেদাবাগ এলাকার মজিবরের ছেলে রেজাউল করিম (৫০)।
লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, লালমনিরহাট থেকে একটি অটোরিকশা সাত-আটজন যাত্রী নিয়ে লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়ক হয়ে বড়বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। পথে মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের বুড়িরবাজার এলাকায় অটোরিকশাটিকে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশার চালক ও যাত্রী রবিউল ঘটনাস্থলেই মারা যান। লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে আহত অন্যদের চিকিৎসা চলছে। ট্রাকটি আটক করে পুলিশের হাতে দিয়েছে স্থানীয়রা।
মুরাদনগরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২ : কুমিল্লার মুরাদনগরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক প্রবাসী ও মোটরসাইকেল মিস্ত্রি নিহত হয়েছে। গতকাল রাত ৮টার দিকে মুরাদনগর-ইলিয়টগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের জাহাপুর ইউনিয়নের শুশুণ্ডা এলাকায় মাটিবাহী ট্রাক্টরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার বজরিখোলা গ্রামের মৃত ইসমাইল মুন্সির ছেলে রুমানিয়া প্রবাসী রিয়াদুল হাসান রাসেল (২৬) ও কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার লক্ষীপুর (ইলিয়টগঞ্জ) গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে মোটরসাইকেল মিস্ত্রি মোশারফ হোসেন (২৬)।
নিহত রিয়াদুলের খালাতো ভাই মহসিন জানান, রিয়াদুল রুমানিয়া প্রবাসী। তিনি দুই মাস আগে ছুটিতে দেশে আসে। দুপুরে রিয়াদুল ও তিনি মোটরসাইকেলে মুরাদনগরে একটি চাকরির বিষয়ে কথা বলতে যান। কাজ শেষে ফেরার পথে তাদের মোটরসাইকেলটি নষ্ট হয়ে যায়। পরে রিয়াদুল ফোন করে ইলিয়টগঞ্জ থেকে তার বন্ধু মোটরসাইকেল মিস্ত্রি মোশারফকে ডেকে আনে। এরপর তারা মোটরসাইকেলের কিছু সরঞ্জাম আনতে বাখরাবাদ বাজারের উদ্দেশে রওনা দেয়। তাদের দেরি দেখে তিনি রিয়াজুলের মোবাইলে ফোন দিলে কেউ একজন সেটি রিসিভ করে জানায় তারা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে।
মাগুরায় নাটা গাড়ির ধাক্কায় যুবক নিহত : মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় সিদ্দিকের মোড়ে নাটা গাড়ির ধাক্কায় রিপন শেখ (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল বেলা ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রিপন খুলনার ফুলতলা এলাকার নুর মহম্মদ শেখের ছেলে। তিনি একটি ফুড কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে মাগুরা শহরের স্টেডিয়াম পাড়ায় বসবাস করতেন।
নিহতের স্ত্রী লাভলি বেগম ও সদর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ১২টার দিকে দোয়ারপাড় এলাকার সিদ্দিকের মোড়ে দোকানে খাদ্যপণ্য ডেলিভারি দেওয়ার জন্য কোম্পানির ভ্যানের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন রিপন। এ সময় দ্রুতগতির একটি নাটা গাড়ি ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নাটা চালক পালিয়ে গেলেও গাড়িটি জব্দ করেছে পুলিশ।
হিলিতে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক উল্টে চালক নিহত : দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে কুকুরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক উল্টে গিয়ে এর চালক মিজানুর রহমান (৩২) নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া সড়কের খট্টা মাধবপাড়া ইউনিয়নের হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের বটতলী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মিজানুর উপজেলার খট্টাগ্রামের আইনুল ইসলামের ছেলে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুরের দিকে মিজানুর রহমান ইজিবাইক চালিয়ে বাড়ি থেকে ডাঙ্গাপাড়া বাজারের দিকে যাচ্ছিল। পথে হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের বটতলী এলাকায় কুকুরের সঙ্গে ইজিবাইকের ধাক্কা লাগে। এতে ইজিবাইকটি উল্টে গিয়ে অটোবাইকের নিচে চাপা পড়ে মিজানুর ঘটনাস্থলেই মারা যান।
হাকিমপুর থানার ওসি আবু সায়েম মিয়া বলেন, কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
লালমনিরহাটে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-এবিটির পাঁচ জঙ্গিকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে আদালত তাদের প্রত্যেকের ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাস করে কারাদ- দিয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে লালমনিরহাট আদালতের বিশেষ ট্রাইবুন্যাল-১-এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মিজানুর রহমান এ রায় দেন।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন কালীগঞ্জ উপজেলার উত্তর মুশরত মদাতী এলাকার হাসান আলী ওরফে লাল, তার ভাই আবু নাঈম মিস্টার, একই এলাকার আসমত আলী ওরফে লাল্টু আলী হোসেন ও একই উপজেলার চরভোটমারী এলাকার শফিউল ইসলাম সাদ্দাম।
লালমনিরহাট আদালত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হাই সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৮ সালে ৩০ অক্টোবর রংপুর র্যাব ১৩-এর একটি দল অভিযান চালিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলার উত্তর মুশরত মদাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে গোপন বৈঠককালে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পাঁচ সক্রিয় সদস্যকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল, চারটি গুলি, দুটি ম্যাগাজিন, গান পাউডার, বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং বেশ কিছু লিফলেট ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন র্যাব-১৩-এর এসআই সুবির বিক্রম দে।
নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নাম পরিবর্তন করে আনসার আল ইসলাম নামে সক্রিয়। জঙ্গি সংগঠনটির পাঁচ সদস্যের সাজা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আকমল হোসেন আহমেদ।
খুলনা বিভাগের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। খুলনা নগরীর একটি নার্সিং হোমের অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে চিকিৎসকের ওপর এক পুলিশ কর্মকর্তা ও তার সঙ্গীদের মারধরের অভিযোগে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) খুলনা শাখা এ কর্মসূচির ডাক দেয়। গতকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতি চলবে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত।
কর্মবিরতির ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতাল, শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল ও খুলনা জেনারেল হাসপাতালসহ সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে যান। এ সময় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।
এদিকে চিকিৎসকের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা অনড় অবস্থানে রয়েছেন। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবিতে গতকাল বেলা ১১টায় চিকিৎসকরা খুমেক হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেন। এ ছাড়া রোগীর স্বজনদের হামলায় আহত চিকিৎসক শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শেখ নিশাত আবদুল্লাহ বাদী হয়ে গতকাল সকালে সাতক্ষীরায় কর্মরত পুলিশের সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) নাঈমুজ্জামান শেখসহ অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় মামলা করেছেন। অন্যদিকে হামলাকারী পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে শীলতাহানির অভিযোগ এনে চিকিৎসক ডা. নিশাত আবদুল্লাহ ও হক নার্সিং হোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. নুরুল হক ফকিরের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করা হয়েছে। এএসআই নাঈমুজ্জামান শেখের স্ত্রী নুসরত আরা ময়না বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার রাতে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে চিকিৎসক শেখ নিশাত আবদুল্লাহর ওপর হামলার প্রতিবাদে কর্মবিরতির ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা।
গতকাল বেলা ১১টার দিকে খুমেক হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের বিরাট জটলা। বহির্বিভাগে কোনো চিকিৎসক নেই। সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন রোগীরা। চিকিৎসক না আসায় তারা চিকিৎসাসেবা নিতে পারেননি। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন রোগীরা।
ডুমুরিয়া থেকে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল ১০টার আগে মাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে আইছি। ভেবেছিলাম ডাক্তার দেখিয়ে চলে যাব। কিন্তু এসে দেখি যারা সেবা দেবেন তারাই ধর্মঘট ডেকেছেন। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে এখন চলে যাচ্ছি’।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ জানান, খুলনা জেনারেল হাসপাতাল ও জেলার ৯টি উপজেলায় ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ জেলায় ১৫৪টি ক্লিনিক রয়েছে। চিকিৎসকরা গতকাল হাসপাতালের বহির্বিভাগে দায়িত্ব পালন করেননি। তবে আন্তঃ ও জরুরি বিভাগে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিএমএ খুলনা শাখার সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডা. নিশাত বর্তমানে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বাদী হয়ে মামলা করেন। তবে এ মামলায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। আসামি গ্রেপ্তার হলে আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করব।’
সোনাডাঙ্গা থানায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা হয়েছে জানিয়ে থানাটির ওসি মোহাম্মদ মমতাজুল হক বলেন, ‘দুটি মামলাতেই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
রোজার মাসে খাবারের জন্য শরীফুল আলমের বাজেট ১২ হাজার টাকা। পাঁচ দিনের বাজার করতে গিয়ে তিনি দেখেন, মাছ কিনলে মুরগি কেনা যায় না, মুরগি কিনলে মাছ বাদ দিতে হয়। গরুর মাংস তো বিলাসী খাবার, তাই সে দোকানে নজরই দেননি তিনি। পাঁচ দিনের মধ্যে তিন দিনই তার পরিবারকে মাছ-মাংসের মতো প্রোটিন খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। আর ইফতারিতে উচ্চ মূল্যের বিদেশি ফল বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত তিনি আগেই নিয়েছেন। শুধু শরিফুলই নন, বাজার করতে আসা নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্ন আয়ের সব ভোক্তারই একই গল্প। তারা বলছেন, এবারের রমজানে কম খেয়েই রোজা রাখতে হবে।
গত এক বছরে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। প্রায় একই হারে বেড়েছে পাকিস্তানি ককসহ অন্যান্য মুরগির দাম। সব ধরনের মাছের দাম গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
একটু সাধারণ হিসাব করা যাক। চারজনের একটি পরিবার যদি মাছ, মাংস বাদ দিয়ে সাহরিতে গড়ে ২০০ টাকা, সন্ধ্যা রাতের খাবারে যদি গড়ে ১৫০ টাকা আর ইফতারিতে ফল যোগ না করে গড়ে যদি ১০০ টাকা খরচ করেন তবে মাসে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টাকা। আর যদি মাছ-মাংস যোগ হয় তাহলে সাহরিতে ন্যূনতম ৩০০, রাতের খাবারে ৩০০ ও ইফতারিতে ফল যোগ করলে গড়ে ২০০ টাকা খরচ করলে মাসে খরচ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। এ হিসাব চারজনের একটি পরিবারের সর্বনিম্ন হিসাব। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গত অক্টোবরের হিসাবে বলা হয়েছে, চারজনের একটি পরিবারে খাবার তালিকায় মাছ-মাংস যোগ করলে মাসে খরচ হবে ২২ হাজার ৪২১ টাকা। এটি শুধু খাবারের খরচ। যদি কোনো পরিবার মাছ-মাংস যোগ না করেন তাতে মাসিক খরচ দাঁড়ায় ৯ হাজার ৫৯ টাকা।
সিপিডির গবেষণা সেলের কর্মকর্তারা দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, চলতি মাসে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে। পরিবারপ্রতি এ মাসে খরচ আরও বেড়ে গেছে। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর পরামর্শ দিচ্ছি আমরা। কিছু ক্ষেত্রে ট্যাক্স ভ্যাট পুরোপুরি উঠিয়ে দিলে সেখানে সবাই উপকৃত হবে।
সিপিডির অক্টোবরের হিসাবই যদি ধরা হয়, তাহলে এবারের রোজায় খাবারের তালিকা ছোট করা ছাড়া উপায় নেই ভোক্তাদের। ২২ হাজার টাকার সঙ্গে যদি বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ, গ্যাস বিল ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ভাড়াসহ গড়ে ১৫ হাজার টাকা ধরলে চারজনের একটি পরিবারের খরচ দাঁড়ায় ৩৭ হাজার টাকা।
অবশ্য সিপিডির এ তথ্য যখন প্রকাশ করা হয়, তখন মুরগির মাংসের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, এখন তা ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে। গরুর মাংসের দাম ছিল ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়, এখন তা ৭৫০ টাকায়। চিনির দাম ছিল ৯৮ টাকায় এখন তা ১২২ টাকায়। অর্থাৎ সব পণ্যেরই দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
দেশ রূপান্তরের সঙ্গে কথা হয় কয়েকজন ভোক্তার। বেসরকারি স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিন থাকেন রাজধানীর বাড্ডায়। থাকেন ৩ কামরা একটি ফ্ল্যাটে। তার মাসিক খরচ ৩১-৩২ হাজার টাকা। এর মধ্যে শুধু মাত্র বাসা ভাড়ায় খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। একমাত্র সন্তানের পড়া ও পরিবারের ভরণ-পোষণে খরচ হয় আরও ১৩-১৫ হাজার টাকা। বাদ বাকি খরচ আরও ২ হাজার। তবে এই শিক্ষক মাসে আয় করেন ২৮-৩০ হাজার টাকা। মাসিক আয় হিসেবে তার অতিরিক্ত খরচ হয় ২-৩ হাজার টাকা।
এ শিক্ষক খরচের সমন্বয় করতে সঞ্চয়ও ভেঙেছেন ইতিমধ্যে। তাতেও তার বাড়তি খরচের টাকা প্রতি মাসে ঋণের খাতায় যোগ হয়। উপায়ান্তর না দেখে পরিচয় গোপন করে মাঝেমধ্যে রাইড শেয়ার দিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত কাজে এসেছিলাম মহাখালীতে। ভাবলাম একই সঙ্গে রোজার বাজার করে বাসাই ফিরি। তবে বাজারে প্রবেশ করে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ব্যাগ দেখিয়ে বলেন, ১ কেজি করে মুরগি, মাছ ও ছোলাসহ আরও দুএকটি পণ্য কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। দামের অবস্থা দেখে বুঝা যাচ্ছে চাহিদা মতো বাকি সদাইগুলো বাসায় নিয়ে যেতে পারব না। আর নয়তো অর্ধেকের ওপর ভরসা রাখতে হবে।
শুধু স্কুল শিক্ষক শিহাবউদ্দিনই নন, গেল কয়েক মাসে দ্রব্যমূল্যের ভয়াবহ অবস্থার কারণে মধ্য ও নিম্নমধ্য আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে নিত্যপণ্যের বাজার। মাছ-মাংস থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দামও মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। গরিবের মাছ বলে খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়াও এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। গত ৩-৪ মাস আগেও পাঙ্গাস ১৪০-১৪৫ টাকা ও তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হয়েছিল ১৩৫-৪০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাছের মধ্যে মান ভেদে রুই মাছ ২৯০-৩৮০ টাকা, সরপুঁটি ২০০-৪০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, শোল মাছ ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন মাছ ব্যবসায়ীরা।
দ্রব্যমূল্য যে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে, তা শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল মজুমদারও বলছেন। গত বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের কোনো মিল নেই। এক শ্রেণির ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ব্যবসা করছে। ডলারের দাম বাড়ার অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবেই দেখা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এ বছর ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে দেশের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। যদিও গত মঙ্গলবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, চলতি মার্চে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে। চৈত্রের খরা ও রোজায় মানুষের অতিরিক্ত মজুদের কারণে এ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে শঙ্কার কথা বলেছেন তিনি।
বিবিএসের চিত্রেই আবার ফেরা যাক। গত বছর চিনির কেজি ছিল ৮২ টাকা, সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ১২২ টাকায়। যদিও বাজারের চিত্র ব্যতিক্রম। গরুর মাংস গত বছরের মার্চে কেজি ছিল ৬১০ টাকা, কিন্তু বছর ঘুরতেই এ পণ্যের দাম এখন ৭৫০ টাকা। মানুষ বেশি দামে গরুর মাংস কিনতে না পেরে কিছুদিন আগেও ভরসা করত ব্রয়লার মুরগির ওপর, যার দাম এখন ২৬০ থেকে ২৮০ টাকার মধ্যে।
রমজানের ইফতারিতে বেশি চাহিদা থাকে ফলের ওপর। কিন্তু সেই ফলের দামও লাগামছাড়া। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ফলের ওপর শুল্কারোপ বাড়িয়ে দেয় সরকার। ফলে গত কয়েক মাস ধরেই ফলের দাম অনেক বেশি।
সাহরিতে রোজাদারের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর অন্যতম উপাদান দুধ। গত বছরের মার্চে দুধের লিটার কিনতে হয়েছিল ৭০ টাকায়, এ বছর তা ৯০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম শফিকুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, দ্রব্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একটা প্রভাব রয়েছে। তবে আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছি বাজার নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য। তিনি বলেন, রমজানের ভোক্তা পর্যায়ে ভোগান্তি কমাতে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছি। মাঠ পর্যায়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। যেখানে অনিয়ম পাচ্ছি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. গোলাম মোয়াজ্জেম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কিছুটা দায়ী। কিন্তু পুরোপুরি না। সম্পূর্ণ দায় এ যুদ্ধের ওপর চাপানো ঠিক না। ভোক্তাদের দায় বেড়েছে, তাদের ওপর চাপও বেড়েছে।
সিন্ডিকেশন করে মুরগির বাচ্চা ও ব্রয়লার মুরগির দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে মাত্র ৫২ দিনে বড় উৎপাদকদের একটি চক্র ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্য একটি সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন গতকাল বৃহস্পতিবার এ অভিযোগ করে। এদিকে মুরগির দাম নিয়ে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। অন্য এক মতবিনিময় সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানিয়েছেন, মুরগি ও গরুর মাংসের দাম না কমালে তা তারা বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবেন। রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সরকারি তদারকি না থাকায় হরিলুট চলছে পোলট্রি সেক্টরে। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন। কিন্তু অস্বাভাবিক দাম ও প্রান্তিক খামারি পর্যায়ে উৎপাদন কমায় এখন দুই থেকে আড়াই হাজার টন সরবরাহ হচ্ছে। প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ আগে কম থাকলেও এখন প্রতি কেজিতে ১৬০-১৬৫ টাকা এবং করপোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ ১৩০-১৪০ টাকা। কিন্তু পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত।
সংগঠনটি জানিয়েছে, ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজিতে যদি অতিরিক্ত ৬০ টাকা মুনাফা ধরা হয় তবে প্রতিদিন অন্তত ২ হাজার টনে ১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত ৫২ দিনে শুধু ব্রয়লার মুরগি থেকে ৬২৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সিন্ডিকেট। এ ছাড়া এক দিনের মুরগির বাচ্চা প্রতিদিন উৎপাদন হয় ২০ লাখ। একটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন খরচ ২৮ থেকে ৩০ টাকা। যা জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা বিক্রি হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত সেই বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা মেসেজ করলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রয় হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। প্রতি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরা হলে আলোচ্য সময়ে মুরগির বাচ্চা বিক্রি থেকে ৩১২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্রয়লার মুরগি ও বাচ্চা বিক্রি থেকেই ৫২ দিনে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শীর্ষ কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠান।
পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, পোলট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে করপোরেট গ্রুপ। তারাই আবার আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করে এবং চুক্তিভিক্তিক খামার করেন। এতে বাজার এসব প্রতিষ্ঠানের দখলে চলে যাচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম কমল ৪০ টাকা : ব্রয়লার মুরগির বাজার নিয়ন্ত্রণে শীর্ষ উৎপাদনকারী ফার্মগুলো নতুন এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোজার মাসে ভোক্তা পর্যায়ে অস্বস্তি কমাতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি খামারি পর্যায়ে ১৯০-১৯৫ টাকা দরে বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। যা গেল কয়েক সপ্তাহে ২২০-২৩০ টাকায় বিক্রি হয়ে আসছে। হাতবদল হয়ে এসব মুরগি ভোক্তাপর্যায়ে এসে বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকায়।
‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত এই চার প্রতিষ্ঠানকে গতকাল তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচনার পর ওই চার কোম্পানি ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় ৪০ টাকা কমানোর সিদ্ধান্তের কথা জানায়।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকারের কনফারেন্স কক্ষে কাজী ফার্মস, প্যারাগন পোলট্রি অ্যান্ড হ্যাচারি, আফতাব বহুমুখী ফার্মস ও সিপি বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক হয়।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, গতকাল আমরা ২৭০-২৮০ টাকায় ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখেছি। এ দাম অযৌক্তিক। এটা ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না। ফার্ম পর্যায়ে ২২০-২৩০ টাকা দরে ব্রয়লারের কেজি বিক্রি হচ্ছে। হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে এ অবস্থা। ব্রয়লার মুরগি এসএমএসের মাধ্যমে নিলাম হচ্ছে। আমি তাদের আহ্বান করেছি, আপনারা এ রমজান মাসে একটু কম লাভ করেন। তারা একমত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, খামার থেকে আসা ব্রয়লার মুরগি হাতবদলে যেন দাম খুব বেশি না বাড়ে, সে বিষয়ে সংস্থাটি নজর রাখবে। ব্রয়লারের দাম কমাতে প্রয়োজনে বর্ডার উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
এ সময় কাজী ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানান, তারা রমজানে ২২০ টাকা থেকে কমিয়ে ব্রয়লার বিক্রি করবেন ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায়। এ বিষয়ে একমত পোষণ করছে আফতাব, প্যারাগন ও সিপি কোম্পানি।
রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে : মুরগি ও গরুর মাংসের দাম বাড়ায় শঙ্কা প্রকাশ করেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে আগামী দুই-তিন মাসের জন্য মুরগি ও গরুর মাংস বিদেশ থেকে আমদানি করার সুপারিশ করবে সংগঠনটি। গতকাল এফবিসিসিআই বোর্ডরুমে ‘রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি, মজুদ, সরবরাহ ও বাজার পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় সভায়’ এ কথা জানানো হয়। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন জানান, রমজানের নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশীয় উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের টিকিয়ে রাখার জন্য সরকার কিছু পণ্যে বাড়তি শুল্ক আরোপ ও কিছু পণ্য আমদানি বন্ধ রেখেছে। এ সুযোগে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ইচ্ছেমতো দাম বাড়ালে হবে না। ভোক্তার ওপর এত চাপ দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় বেশি খেজুর আছে। পর্যাপ্ত রয়েছে ছোলা, পামঅয়েল, সয়াবিনসহ অন্যান্য পণ্য। আমরা চাই না ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের হেনস্তা করুক। পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও মজুদ বিষয়ে সরকারের নিয়মনীতি রয়েছে। এসব বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বাজার কমিটিগুলো উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে আমাদের জানান, আমরা সহযোগিতা করব।
জসিম উদ্দিন বলেন, এখন গরু ও পোলট্রির দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। দেশীয় এ খাত বাঁচাতে এতদিন মাংস আমদানি বন্ধ ছিল। এখন তারা যদি সঠিক মূল্যে গরুর মাংস ও ব্রয়লার মুরগি দিতে না পারে তাহলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলব, বাজার ঠিক রাখতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার জন্য। আমদানি করলে যদি বাজারে দাম কমে যায়, তাহলে আমদানি করতে হবে। মানুষ যদি ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে না পারে, তাহলে ইন্ডাস্ট্রির কথা চিন্তা করে লাভ নেই।
এফবিসিসিআই সভাপতি ব্যবসায়ীদের বলেন, এবার সরকার বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে কঠোরভাবে। কোনো বাজারে বেশি মূল্য রাখা হলেই সেই বাজার কমিটি বাতিল করবে সরকার। একই সঙ্গে দাম বেশি নেওয়া প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সও বাতিল করা হবে। আমরা চাই না, রোজায় কোনো ব্যবসায়ীর লাইসেন্স বাতিল হোক, কাউকে আটক করা হোক।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সমস্যা থাকতে পারে। সমস্যাটি আমাদের জানাবেন। আমরা কথা বলব। আমাদের টিমও বাজার মনিটরিংয়ে থাকবে। আশা করব আপনারা কেউ বেশি মুনাফা করবেন না।
কয়েক দফা বাড়ার পর রমজানের প্রথম দিন কিছুটা কমেছে মুরগির দাম। শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনটা দেখা গেছে। এ ছাড়াও গতকাল শীর্ষ চার পোল্ট্রি উৎপাদন প্রতিষ্ঠানকে তলব করে ভোক্তা অধিকার। পরে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয় মুরগির দাম।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কমে ২৪৫-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালির দাম ২০ টাকা কমে ৩৬০ টাকায়, আর দেশি মুরগি ৬৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমেছে। তারা জানান, আগের তুলনায় তাদের বিক্রি কমে গেছে। এ অবস্থায় দাম আরও কমতে পারে বলে জানান তারা।
আর ক্রেতারা বলছেন, এখনও তাদের নাগালের বাইরেই রয়ে গেছে মুরগি ও ডিম।
এদিকে, বাজার তদারকিতে সকাল থেকে অভিযানে নেমেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। রোজার প্রথম দিন শুক্রবার (২৪ মার্চ) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযানে নামে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। সকাল সাড়ে ১০টায় এ বাজারের কিচেন মার্কেটে অভিযান শুরু করেন সংস্থার সদস্যরা। অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। উপস্থিত আছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান আব্দুল জব্বার মণ্ডলসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা।
এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুরগির দাম সমন্বয়ের জন্য ডাকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেখানে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, 'মুরগির দাম ২০০ টাকার বেশি হতে পারে না।'
ব্রাজিলের সমুদ্রতীরবর্তী শহর রিও ডি জেনেইরোর কাছে একটি অপরাধী চক্রের প্রধানের গ্রেপ্তারে অভিযানের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার রিও ডি জেনেইরোর উত্তর-পূর্বে অবস্থিত সাও গনসালো শহরের শ্রমিকদের আবাসিক এলাকা সালগেইরোতে এ ঘটনা ঘটে বলে পুলিশ জানায়। পুলিশের দাবি, নিহতরা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী।
ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পারার মাদক-নেতা অভিযুক্ত লিওনার্দো কোস্তা আরাউজো সালগেইরোতে লুকিয়ে আছে- এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালায় পুলিশ। সংঘর্ষে নিহতদের মধ্যে আরাউজোও আছেন। পারার বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার নিহতের ঘটনায় তার হাত আছে বলেও অভিযোগ।
পুলিশ জানিয়েছে, আরাউজোকে গ্রেপ্তারে বৃহস্পতিবার চালানো এই অভিযানে হেলিকপ্টার ও সাঁজোয়া যান ব্যবহার করা হয়।
রিও শহরের পুলিশ প্রায়ই এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করে। শহরটির গভর্নর ক্লডিও কাস্টো সোশালে এক পোস্টে লেখেন, আমরা আমাদের এই শহরকে অন্য কোনো এলাকা থেকে আসা দুর্বৃত্তদের অভয়াশ্রম হতে দেব না।
এ ঘটনায় অপরাধী চক্রের স্থানীয় তিনজন সোর্সও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।