
ভারতের দিল্লিতে শুরু হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ২০টি অর্থনীতির জোট জি-২০ সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের দুই দিনব্যাপী সম্মেলন। গতকাল বুধবার রাতে নৈশভোজের মধ্য দিয়ে শুরু এ আয়োজন। আজ বৃহস্পতিবার সম্মেলনের মূল আলোচনা পর্ব হবে। অতিথি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেন এ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
গত বছরের ডিসেম্বরে ভারত জি-২০ জোটের সভাপতির দায়িত্ব পায়। আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে এই সম্মেলনে যোগদানের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশেষ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছেন।
বিশে্বর ১৯টি ধনী দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমন্বয়ে জি-২০ গঠিত। সদস্য দেশগুলো হলো আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, মেক্সিকো, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র।
৯টি অতিথি দেশ হলো বাংলাদেশ, মিসর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ, ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাউরো ভিয়েইরা, মরিশাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালেন গানু, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু ও অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়ং মঙ্গলবার দিল্লি পৌঁছেছেন। আর গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বায়েরবোক, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভার্লি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি/ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ ভোরেলের পৌঁছানোর কথা।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের প্রতিটি কাউন্টারে দিনে গড়ে টিকিট বিক্রি হয় প্রায় ৬০ হাজার টাকার। আর বৃহস্পতি ও শনিবার তা বেড়ে যায় এক লাখ টাকা পর্যন্ত। গতকাল বুধবার বিক্রি হয়েছে আগামী রবিবারের যাত্রার টিকিট এবং টাকায় গড়মূল্য ছিল প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এ তথ্য কাউন্টারের বুকিং সহকারীদের কাছ থেকে নেওয়া।
তবে নিবন্ধনের কারণে যে টিকিট বিক্রি কিছুটা কমে যাবে এ কথা পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলমের কথায়ও উঠে এসেছে। তিনি নিবন্ধন ইস্যুতে সম্প্রতি দেশ রূপান্তরকে বলেছিলেন, আগামী দুই মাস হবে অন্তর্বর্তীকালীন সময়। এ সময়ে টিকিট বিক্রিতে কিছুটা ভাটা কিংবা মানুষ নতুন এ পদ্ধতি মানতে চাইবে না। কিন্তু না মেনে উপায় নেই। নিবন্ধন ছাড়া মেশিন থেকে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে না।
গতকাল সকাল থেকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের ৫ নম্বর কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করেছেন বুকিং সহকারী আরিফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘অনেক যাত্রী নিবন্ধন ছাড়াই আগের নিয়মে টিকিট সংগ্রহ করতে এসেছেন। তখন আমরা রেলওয়ের হেল্প ডেস্ক থেকে নিবন্ধন সম্পন্ন করে লাইনে দাঁড়াতে বলি। যারা নিবন্ধন করতে পেরেছেন তারা টিকিট সংগ্রহ করতে পেরেছেন। আবার অনেকে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আনেনি বলে ফিরে গেছেন। এ জন্য আমাদের কাউন্টারে কোনো ভিড় ছিল না, হেল্প ডেস্কেই ভিড় বেশি দেখা যায়।’
এ সময় একাধিক বুকিং সহকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফেরত যাওয়া যাত্রীদের হার কিন্তু কম ছিল না। আর এর প্রভাব পড়েছে টিকিট বিক্রির টাকায়। ছয়টি কাউন্টারে গড়ে ৩০ হাজার টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে। অন্যান্য সময় তা ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার পর্যন্ত টিকিট বিক্রি হয়ে থাকে।
নতুন এ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লাগবে বলে উল্লেখ করে পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আবিদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে নতুন কিছু চালু হতে সময় নেই। এখানেও এর ব্যতিক্রম হবে না। তবে আমাদের হেল্প ডেস্কের কারণে যাত্রীরা স্টেশনে এসে নিবন্ধন করতে পারছে। এ জন্য কাউন্টারের তুলনায় হেল্প ডেস্কে ভিড় বেশি দেখা গেছে।’
রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সারা দেশেই প্রথম দিনে সাড়া কিছুটা কম হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে বলে রেলওয়ে কর্তাদের ধারণা।
এদিকে গতকাল চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে টিকিট বিক্রির কার্যক্রম উদ্বোধন করেন পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম। এ সময় তিনি বলেন, টিকিট যার ভ্রমণ তার নিশ্চিত করতে এ নিবন্ধন প্রক্রিয়া। এতে একজনের টিকিট দিয়ে আরেকজন ভ্রমণ করতে পারবে না। এতে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য কমে যাবে।
১ মার্চ থেকে নিবন্ধনধারী ছাড়া কেউ ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে পারবে না। এ জন্য প্রত্যেক যাত্রীকে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে BR-Space-NID number- Space- Date of Birth (সাল, মাস, দিন ফরম্যাটে) লিখে ২৬৯৬৯ নম্বরে সেন্ড করতে হবে। ফিরতি এসএমএসে নিবন্ধন সফল না ব্যর্থ হয়েছে তা জানা যাবে। বিদেশি নাগরিকরা পাসপোর্ট নম্বর ও ছবি দিয়ে নিবন্ধন আপলোড করবে। ১২-১৮ বছর বয়সীরা জন্ম নিবন্ধন সনদ আপলোড করে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারবে। নিবন্ধন হয়ে যাওয়ার পর রেলওয়ে অ্যাপসের মাধ্যমে টিকিট কাটা যাবে। একই সঙ্গে যদি কেউ কাউন্টারে গিয়ে সংগ্রহ করতে চায় তিনি মোবাইল নম্বর বললে বুকিং সহকারী সেই নম্বরের বিপরীতে এনআইডি নম্বর ও নাম পেয়ে যাবে এবং যাত্রীকে টিকিট দেবে। তখন যে টিকিট প্রিন্ট করা হবে সেই টিকিটে যাত্রীরা নাম ও এনআইডি নম্বর থাকবে।
১০০ পস মেশিন হস্তান্তর : গতকাল রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এনআইডির মাধ্যমে নিবন্ধন করে রেলওয়ের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেটিং চালু ও টিকিট চেকিং ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশনে ‘পস মেশিন’ হস্তান্তর করা হয়েছে। গতকাল রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন এ মেশিন হস্তান্তর করেন।
বাসস জানায়, এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রেলপথমন্ত্রী বলেছেন, এখন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে নিবন্ধন ছাড়া টিকিট কেনা করা যাবে না। তিনি বলেন, প্রথম পর্যায়ে শুধু আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটের জন্য এ ব্যবস্থা চালু হলেও পর্যায়ক্রমে লোকাল ট্রেনেও এটি কার্যকর করা হবে।
‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ‘স্মার্ট রেলওয়ে’ গঠনের অংশ হিসেবে এ ব্যবস্থা চালু করা হলো উল্লেখ করে নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আমরা যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য একাধিক কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। এতদিন টিকিট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যে অভিযোগ ছিল, তা থেকে বের হওয়ার জন্যই ‘টিকিট যার ভ্রমণ তার’ কার্যক্রম আমরা শুরু করেছি, যা আজ (গতকাল) থেকে কার্যকর হচ্ছে।’
রেলপথমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে অন্যের টিকিটে ভ্রমণ করলে বিনা টিকিটের যাত্রী হিসেবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া টিটিইদের কাছে পস মেশিন সরবরাহ করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে তারা বিনা টিকিটের যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করবে এবং এ টাকা সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হবে। এখন থেকে অনলাইনে টিকিট বাতিলের জন্য আর কাউন্টারে যেতে হবে না, অনলাইনেই টিকিট বাতিল করা যাবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদত আলী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
যেন ইতিহাসের এক জীবন্ত সংগ্রহশালা। নাম হেরিটেজ আর্কাইভস। স্থানীয় ইতিহাসের অনন্য এ সংগ্রহশালায় রয়েছে ১৮৭২ সালে করা প্রথম আদমশুমারি রিপোর্ট, কিংবা সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট বা ভূমি জরিপের রিপোর্ট অথবা সরকারি বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখা দুষ্প্রাপ্য সব রিপোর্ট। এ ছাড়াও রয়েছে বই-পুস্তক, সাময়িকী, পত্রিকা, ছোট কাগজ, এমফিল-পিএইচডির গবেষণা জার্নাল, লিফলেট, পোস্টার, বুলেটিন, মেনিফেস্টো, স্মরণিকা, ফেস্টুন, ব্যঙ্গচিত্র, স্মারকচিহ্ন, পারিবারিক সরঞ্জাম ও জীবনীগ্রন্থের বিপুল সংগ্রহ। দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের উপকরণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ব্যতিক্রমী এ সংগ্রহশালাটি ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইতিহাস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. মাহবুবর রহমান।
তিনি তার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন কাজলার জামরুলতলা এলাকার বাসাতেই গড়ে তুলেছেন সংগ্রহশালাটি। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তিনতলা সংগ্রহশালাটির নিচতলায় রয়েছে বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিদের জীবনী সংক্রান্ত অন্তত ৫ হাজার ২০০ গ্রন্থ। যার মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর জীবনীর ওপর লেখা ৬০০, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ওপর ৩৫০ এবং কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনীর ওপর ২৫০ গ্রন্থ। নিচতলায় আরও রয়েছে দেশের ৬৪টি জেলা নিয়ে লেখা প্রায় ১২ হাজার বই। রয়েছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, তেল-গ্যাসসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের গ্রন্থ, ডকুমেন্টস, লিফলেট, পোস্টারের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের ম্যাগাজিন।
সংগ্রহশালাটিতে ৭/৩ ফুট আয়তনের ১৭৮টি বইয়ের তাকে আরও রয়েছে কবি আবু বকর সিদ্দিক, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এবং প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের দেওয়া বই-পুস্তকের কর্নার। ৪০০টি বিষয়ের ওপর সংগ্রহ করা সংগ্রহশালাটিতে রয়েছে প্রায় তিন হাজার শিরোনামে ৩৫ হাজারের মতো সাময়িকী, পত্রপত্রিকা এবং ৩ হাজার ২০০ ছোট কাগজ। আরও রয়েছে স্বল্প ভাড়ায় সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপ করার জন্য একটি সেমিনার কক্ষ এবং দূর-দূরান্ত থেকে আসা গবেষকদের জন্য থাকা ও রান্নার ব্যবস্থা।
সংগ্রহশালাটির তৃতীয়তলায় রয়েছে পরিবারের ব্যবহারের তালিকা থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া জিনিসপত্র সংবলিত একটি পারিবারিক আর্কাইভস কর্নার। যেখানে স্থান পেয়েছে পরিবারের কাজে বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত হুঁকা, হারিকেন, কুপি, কলের গান, টেলিফোন সেট, রেডিও, কলম, দোয়াত, টাইপরাইটার, সাইক্লোস্টাইল মেশিন, ক্যামেরা, টেপ রেকর্ডার, জাঁতা, খড়ম, পয়টা, পান বাটা, কাঁসার বাসনপত্র, মাটির জিনিসপত্র, কৃষি যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন জাতের ধান, মুদ্রা, বিয়ের কার্ড, বিয়ের শাড়ি, আমন্ত্রণপত্র ইত্যাদি।
সমৃদ্ধ এ সংগ্রহশালাটি প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অধ্যাপক মাহবুবর রহমান জানান, স্থানীয় ইতিহাসের ওপর পিএইচডি করতে গিয়ে দেখেন একই জায়গায় স্থানীয় ইতিহাসের ওপর পূর্ণাঙ্গ কোনো তথ্য নেই। পরে নব্বইয়ের দশকে নেদারল্যান্ডসের একটি আর্কাইভ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি বাংলাদেশেও একটি হেরিটেজ আর্কাইভস গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর ১৯৯৮ সাল থেকে লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার সংগ্রহ করতে শুরু করেন তিনি। ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় এবং রাবির ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও বন্ধুবান্ধবদের সহযোগিতায় সংগ্রহ করতে করতে ২০০২ সালে নিজের বাসায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘হেরিটেজ : বাংলাদেশের ইতিহাসের আর্কাইভস’ নামের এ সংগ্রহশালা।
অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, সংগ্রহশালাটি এতটাই সমৃদ্ধ যে, একজন গবেষক দেশের কোথাও না গিয়ে মাত্র সাত দিন সংগ্রহশালাটিতে বসলে বাংলাদেশের যেকোনো বিষয়ে একটি গবেষণা প্রবন্ধ লিখতে পারবেন। সংগ্রহশালাটি শুক্রবার বাদে প্রতিদিন চার ঘণ্টা গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। এখানে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চারজন গবেষক আসেন। এর মধ্যে রাবির ফোকলোর, চারুকলা, নৃবিজ্ঞান এবং ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীরাই বেশি আসেন গবেষণা কাজে। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের অনেক গবেষক এখানে এসে গবেষণা করেন। আর হেরিটেজ আর্কাইভস থেকে প্রতি বছর ‘স্থানীয় ইতিহাস’ নামে একটি গবেষণা জার্নাল প্রকাশিত হয়।
অধ্যাপক মাহবুবর রহমান জানান, ২০১১ সালে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত হেরিটেজ আর্কাইভ পরিদর্শনে এসে অভিভূত হন। পরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হেরিটেজ আর্কাইভসের জন্য তিনটি ফ্লোর নির্মাণ করে দেন তিনি। ফলে বইপত্র রাখার স্থানের এখন আর তেমন অভাব নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনও ২০২০ সালের ১৪ নভেম্বর হেরিটেজ আর্কাইভস পরিদর্শন করেন।
সংগ্রহশালাটি সংরক্ষণের জন্য দেশের বিত্তবানদের কাছে সহযোগিতার আবেদন জানিয়ে অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে সংগ্রহশালাটি একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। হেরিটেজ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান আমি নিজেই। আমার ব্যক্তিগত অনুদানে এটি চলে। বর্তমানে সংগ্রহশালাটি দেখভাল করার জন্য ছয়জন স্থায়ী কর্মী আছেন। সবমিলিয়ে সংগ্রহশালাটি পরিচালনায় মাসে ৫০ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়। সংগ্রহশালার নিজস্ব কোনো আয়ের উৎস নেই। তাই সমাজের বিত্তবান মানুষরা যদি আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করে তাহলে সংগ্রহশালাটিকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব হবে। এ জন্য সবার সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।’
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাবিপ্রবি আবাসিক হল থেকে এক বৈধ শিক্ষার্থীকে বের করে দেওয়ার অভিযোগে দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে হল থেকে সাময়িক বহিষ্কর ও একজনকে হলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
গতকাল বুধবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমান।
বহিষ্কৃত দুই ছাত্রলীগ কর্মী হলেন, নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের সাদ্দাম হোসেন পিয়াস ও সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের আশিকুর রহমান। এছাড়া আরেক ছাত্রলীগ কর্মী ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী ইফতেখার আহম্মেদ রানাকে হলে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। হলের বৈধ শিক্ষার্থী না হওয়ায় তার হলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। বহিষ্কৃতরা ছাত্রলীগ নেতা সুমন মিয়ার অনুসারী।
বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় তাদের হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া আরেকজন হলের বৈধ ছাত্র না হওয়ায় তাকে হলে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
এদিকে এ ঘটনাটির অধিক তদন্তের জন্য বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এ জেড এম মঞ্জুর রশিদকে আহ্বায়ক করে তিন কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেইশন এন্ড কমিউনিকেইশন টেকনোলজির সহকারী অধ্যাপক আহসান হাবীব, বন ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাইফুজ্জামান ভূঁইয়া।
উল্লেখ্য, গত ২২ ফেব্রেুয়ারি শাহপরান হলের এক আবাসিক ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী মো. দেলোয়ার হোসেনকে হল থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠে সাদ্দাম হোসেন পিয়াসসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় হলের প্রভোস্ট বরাবর একটি অভিযোগ পত্র জমা দেন ভুক্ত ভোগী শিক্ষার্থী। পরে ঘটনাটি তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট জমা দেয় হল কর্তৃপক্ষ।
টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় ওরসগামী একটি পিকআপ উল্টে তিন নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৮ জন। গতকাল বুধবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কের আনালিয়াবাড়ী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া লালমনিরহাটে ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার দুই যাত্রী নিহত হয়েছেন। কুমিল্লার মুরাদনগরে মাটিবাহী ট্রাক্টরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মোটরসাইকেল আরোহী দুজন, মাগুরায় স্থানীয়ভাবে নির্মিত নাটা গাড়ির ধাক্কায় এক যুবক এবং দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে কুকুরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উল্টে গিয়ে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের চালক নিহত হয়েছে। বিস্তারিত প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে
টাঙ্গাইলে পিকআপ উল্টে ৩ নারী নিহত : কালিহাতী উপজেলায় পিকআপ উল্টে নিহত নারীরা হলেন জামালপুর সদর উপজেলার গান্দাইল এলাকার মৃত গাদুগানের মেয়ে শাহারা ওরফে শাহানা বেগম (৬০), পেচামানিক এলাকার মাহতাব আলীর মেয়ে নুর জাহান (৫০) এবং টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার গৌরাং এলাকার মৃত জাবেদ আলীর মেয়ে ফিরোজা বেগম (৬০)। এ দুঘর্টনায় আহতরা সবাই জামালপুর সদর উপজেলার গান্দাইল ও পেচামানিক এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, জামালপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি পিকআপ ২০ যাত্রী নিয়ে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে ওরসে যাচ্ছিল। পিকআপটি কালিহাতী উপজেলার আনালিয়াবাড়ী এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিন নারী নিহত হন। আহত অন্তত ১৮ জনকে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ওসি মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহগুলো পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
লালমনিরহাটে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত ২ : লালমনিরহাটের ট্রাকের ধাক্কায় অটোরিকশার দুই যাত্রী নিহত হয়েছে। এতে আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়কে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের বুড়িরবাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার ইউনিয়নের জমিদারবাড়ি এলাকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে নবিউল ও অটোচালক সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের খেদাবাগ এলাকার মজিবরের ছেলে রেজাউল করিম (৫০)।
লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, লালমনিরহাট থেকে একটি অটোরিকশা সাত-আটজন যাত্রী নিয়ে লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়ক হয়ে বড়বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। পথে মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের বুড়িরবাজার এলাকায় অটোরিকশাটিকে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাক ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশার চালক ও যাত্রী রবিউল ঘটনাস্থলেই মারা যান। লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে আহত অন্যদের চিকিৎসা চলছে। ট্রাকটি আটক করে পুলিশের হাতে দিয়েছে স্থানীয়রা।
মুরাদনগরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ২ : কুমিল্লার মুরাদনগরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় এক প্রবাসী ও মোটরসাইকেল মিস্ত্রি নিহত হয়েছে। গতকাল রাত ৮টার দিকে মুরাদনগর-ইলিয়টগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের জাহাপুর ইউনিয়নের শুশুণ্ডা এলাকায় মাটিবাহী ট্রাক্টরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার বজরিখোলা গ্রামের মৃত ইসমাইল মুন্সির ছেলে রুমানিয়া প্রবাসী রিয়াদুল হাসান রাসেল (২৬) ও কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার লক্ষীপুর (ইলিয়টগঞ্জ) গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে মোটরসাইকেল মিস্ত্রি মোশারফ হোসেন (২৬)।
নিহত রিয়াদুলের খালাতো ভাই মহসিন জানান, রিয়াদুল রুমানিয়া প্রবাসী। তিনি দুই মাস আগে ছুটিতে দেশে আসে। দুপুরে রিয়াদুল ও তিনি মোটরসাইকেলে মুরাদনগরে একটি চাকরির বিষয়ে কথা বলতে যান। কাজ শেষে ফেরার পথে তাদের মোটরসাইকেলটি নষ্ট হয়ে যায়। পরে রিয়াদুল ফোন করে ইলিয়টগঞ্জ থেকে তার বন্ধু মোটরসাইকেল মিস্ত্রি মোশারফকে ডেকে আনে। এরপর তারা মোটরসাইকেলের কিছু সরঞ্জাম আনতে বাখরাবাদ বাজারের উদ্দেশে রওনা দেয়। তাদের দেরি দেখে তিনি রিয়াজুলের মোবাইলে ফোন দিলে কেউ একজন সেটি রিসিভ করে জানায় তারা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে।
মাগুরায় নাটা গাড়ির ধাক্কায় যুবক নিহত : মাগুরা শহরের দোয়ারপাড় সিদ্দিকের মোড়ে নাটা গাড়ির ধাক্কায় রিপন শেখ (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। গতকাল বেলা ১২টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। রিপন খুলনার ফুলতলা এলাকার নুর মহম্মদ শেখের ছেলে। তিনি একটি ফুড কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে মাগুরা শহরের স্টেডিয়াম পাড়ায় বসবাস করতেন।
নিহতের স্ত্রী লাভলি বেগম ও সদর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ১২টার দিকে দোয়ারপাড় এলাকার সিদ্দিকের মোড়ে দোকানে খাদ্যপণ্য ডেলিভারি দেওয়ার জন্য কোম্পানির ভ্যানের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন রিপন। এ সময় দ্রুতগতির একটি নাটা গাড়ি ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নাটা চালক পালিয়ে গেলেও গাড়িটি জব্দ করেছে পুলিশ।
হিলিতে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক উল্টে চালক নিহত : দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলিতে কুকুরের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক উল্টে গিয়ে এর চালক মিজানুর রহমান (৩২) নিহত হয়েছেন। গতকাল দুপুরে উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া সড়কের খট্টা মাধবপাড়া ইউনিয়নের হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের বটতলী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত মিজানুর উপজেলার খট্টাগ্রামের আইনুল ইসলামের ছেলে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুরের দিকে মিজানুর রহমান ইজিবাইক চালিয়ে বাড়ি থেকে ডাঙ্গাপাড়া বাজারের দিকে যাচ্ছিল। পথে হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের বটতলী এলাকায় কুকুরের সঙ্গে ইজিবাইকের ধাক্কা লাগে। এতে ইজিবাইকটি উল্টে গিয়ে অটোবাইকের নিচে চাপা পড়ে মিজানুর ঘটনাস্থলেই মারা যান।
হাকিমপুর থানার ওসি আবু সায়েম মিয়া বলেন, কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
লালমনিরহাটে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-এবিটির পাঁচ জঙ্গিকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে আদালত তাদের প্রত্যেকের ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাস করে কারাদ- দিয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে লালমনিরহাট আদালতের বিশেষ ট্রাইবুন্যাল-১-এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মো. মিজানুর রহমান এ রায় দেন।
সাজাপ্রাপ্তরা হলেন কালীগঞ্জ উপজেলার উত্তর মুশরত মদাতী এলাকার হাসান আলী ওরফে লাল, তার ভাই আবু নাঈম মিস্টার, একই এলাকার আসমত আলী ওরফে লাল্টু আলী হোসেন ও একই উপজেলার চরভোটমারী এলাকার শফিউল ইসলাম সাদ্দাম।
লালমনিরহাট আদালত পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হাই সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৮ সালে ৩০ অক্টোবর রংপুর র্যাব ১৩-এর একটি দল অভিযান চালিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলার উত্তর মুশরত মদাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে গোপন বৈঠককালে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পাঁচ সক্রিয় সদস্যকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল, চারটি গুলি, দুটি ম্যাগাজিন, গান পাউডার, বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম এবং বেশ কিছু লিফলেট ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কালীগঞ্জ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা করেন র্যাব-১৩-এর এসআই সুবির বিক্রম দে।
নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নাম পরিবর্তন করে আনসার আল ইসলাম নামে সক্রিয়। জঙ্গি সংগঠনটির পাঁচ সদস্যের সাজা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লালমনিরহাট দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আকমল হোসেন আহমেদ।
দুর্নীতি দমন কমিশনার (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আব্দুল্লাহ বলেছেন, নির্বাচনের বছরে দুদক চোখ-কান খোলা রাখবে। আইন অনুসারে আমাদের যেটুকু অংশ, আমরা তা নিরপেক্ষভাবে পালনের চেষ্টা করব। আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি।
মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সন্সেলনে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান ও মো. জহুরুল হক এবং দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের বছরে সব প্রার্থীর হলফনামায় যে সম্পদ বিবরণী থাকে তা খতিয়ে দেখবে দুদক। এ বছর চোখ-কান খোলা রাখবে। সমস্ত প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করবে। আগামী বছরে দুদকের কাজে আরো গতিশীলতা আনার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সোমবার রাতে বার্ষিক প্রতিবেদনটি (২০২২) রাষ্ট্রপতির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়ে কিছু দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থান নিতে বলেছেন। দুদক স্বচ্ছতার সঙ্গে সাধ্যমতো কাজ করে যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবগত করা হয়েছে।
ফাঁদ মামলা কেন কমেছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যতটুকু তথ্য পেয়েছি, সেই অনুসারে ফাঁদ মামলা হয়েছে। আমরা শতভাগ সফল হতে পারিনি। বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় গত বছর সবচেয়ে বেশি মামলা দায়ের করেছি। ওই বছর এফআরটি কম হয়েছে। মামলা বেশি হয়েছে, এফআরটি কমেছে। সাজার হার বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে দুদক ঠিকমতো কাজ করছে না, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, মামলা, তদন্ত, অনুসন্ধান সব কিছুই বেড়েছে। আমাদের তথ্য কথা বলবে। তারা তাদের বক্তব্য দিয়েছে। আমরা তথ্য দিলাম, এগুলো সংরক্ষিত আছে। আপনারাই বিবেচনা করবেন।
এ সময় বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মামলাগুলো চলমান। এ নিয়ে আর কোনও প্রশ্নের জবাব দিতে রাজি হননি তিনি।
সম্প্রতি আলোচিত দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানের ‘অর্থপাচার’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দুদক চেয়ারম্যান জানান, এমন কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই, পেলে কাজ করবে দুদক।
এদিকে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান বলেন, দেশের টাকা বাইরে চলে গেছে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়তো কাজ করতে পারেনি দুদক। পাচারকৃত অর্থ নিয়ে কাজ করে আরো অনেকগুলো সংস্থা। শুধু দুদকের একার কাজ নয় এটি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি টাকা ফিরিয়ে আনার।
দুদকের অসন্তুষ্টির জায়গা কোনটি এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক বড় বড় দুর্নীতি বিশেষ করে দেশের টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। অনেক দুর্নীতিবাজ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, ব্যবসার আড়ালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বিদেশে নিয়ে গেছে। এই বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমাদের মাত্র একটি অপরাধের এখতিয়ার আছে। বাকি ২৬টি অপরাধের বিষয়ে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের এখতিয়ার। কিন্তু জনগণের মনে এখনো ভ্রান্ত ধারণা দুদক কী কাজ করে। কিন্তু আমাদের অংশে আমরা কাজ করি ও শতভাগ সাফল্য রয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশেরে এক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরে দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, দেশে অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বাড়ে নাই, বরং কমেছে। তবে আভ্যন্তরীণ দুর্নীতি বন্ধ করতে পারিনি। মামলা পরিচালনা ক্ষমতা কমেছে এটা মিথ্যা কথা। কারণ মানিলন্ডারিং মামলায় ১০০ ভাগ সাফল্য, অন্যান্য মামলায় সাজার পরিমাণ ৬৭ থেকে ৭০ ভাগ আমাদের পক্ষে। আমাদের সক্ষমতা কমেছে কে এটা বলেছে। এ কথা আমি বিশ্বাস করি না।
দুদকের ২০২২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরে দুদকে জমা পড়ে ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগ। এসব যাচাই-বাছাই শেষে অনুসন্ধানের জন্য সংস্থাটি হাতে নিয়েছে ৯০১টি অভিযোগ, যা মোট অভিযোগের ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৯৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ অভিযোগই অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিতে পারেনি দুদক। ১৯ হাজার ৩৩৮টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ১৫২টি অভিযোগ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে চার্জশিট অনুমোদন হয়েছে ২২৪টি, মামলা হয়েছে ৪০৬টি, ফাঁদ মামলা হয়েছে মাত্র ৪টি।
২০২১-২২ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় সাজা, নিষ্পত্তি ও খালাসের পরিমাণ বেড়েছে। এরমধ্যে গতবছর সংস্থাটির ৩৪৬টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে কমিশন আমলের ৬৪ দশমিক ১৭ শতাংশ ও ব্যুরো আমলের ৩৫ দশমিক ৯০ মামলার আসামির সাজা হয়েছে। ২০২২ সালের দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। উপস্থাপনকালে এই তথ্য জানানো হয়।
ছেলে ইজহান মালিককে সঙ্গে নিয়ে ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরবে রয়েছেন ভারতের সাবেক টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে মনিদা শরীফে তোলা নিজের একাধিক ছবি পোস্ট করেন সানিয়া। ভিডিও পোস্ট করেছেন ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে।
ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা প্রথম ছবিতেই দেখা যাচ্ছে সানিয়া তাকিয়ে আছেন তার ছেলের দিকে। সানিয়ার পরনে কালো রঙের বোরকা।
ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে সানিয়া লিখেছেন, ‘আলহামদুল্লিাহ। আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করুন।’
সানিয়ার পোস্ট করা ছবিগুলোর কয়েকটিতে পরিবারের অন্য সদস্যরাও রয়েছেন। তবে তার স্বামী পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে কোনোটাতেই দেখা যায়নি।
শুরুতেই হোঁচট খেল এক বছরে বিসিএস পরীক্ষা আয়োজনের বর্ষপঞ্জি। প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পেরে বাধ্য হয়ে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পিছিয়েছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রিলিমিনারির রেশ ধরে পেছাতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার সূচিও।
অথচ এই বিসিএস দিয়েই বিজ্ঞাপন প্রকাশ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ এক বছরে শেষ করার ছক এঁকেছিল সাংবিধানিক সংস্থাটি। এ অবস্থায় বর্ষপঞ্জিতেও পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বর্ষপঞ্জি ৩০ নভেম্বর শুরু না করে ১ জানুয়রি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ৪৬তম বিসিএস থেকে পরিবর্তিত এক বর্ষপঞ্জিতেই বিসিএস শেষ করার নতুন পরিকল্পনার খসড়া করা হয়েছে।
পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন এক প্রশ্নের জবাবে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়। আমরা ৪৬তম বিসিএস থেকে বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করব।’
২০২০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই সোহরাব হোসাইন এক বছরের মধ্যে একটি বিসিএস শেষ করার কথা বলেছিলেন। চাকরি জীবনে খ্যাতিমান এই আমলা এগিয়েছিলেনও বহুদূর। তিনি যখন চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন, তখন ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩ বিসিএস চলমান ছিল। এর মধ্যে ৪০-এর সুপারিশ হয়ে গেছে। তারা ইতিমধ্যে চাকরিতে যোগ দিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কাজ করছেন। ৪১তম বিসিএসের অর্ধেক মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। মহামারির সময় চিকিৎসক নেওয়ার জন্য ৪২তম বিশেষ বিসিএস আয়োজন করা হয় এবং অল্প সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। আর ১৫ দিনের মধ্যেই ৪৩তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ শেষ হবে। ৪৪তম বিসিএসের খাতা দেখার কাজ চলছে। বর্তমান চেয়ারম্যানের মূল টার্গেট ছিল এক বছরের মধ্যে ৪৫তম বিসিএস শেষ করা। সেই বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞাপনে বলে দেওয়া হয়েছিল মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র ছাপানোর জটিলতায় সূচি অনুযায়ী প্রিলিমিনারি নিতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপাতে না পারার কারণ জানতে চাইলে একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পিএসসি সচরাচর বিজিপ্রেস থেকেই প্রশ্নপত্র ছাপাত।
বিসিএস বর্ষপঞ্জি কিন্তু কয়েক বছর আগে সেখান থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ ওঠায় বিজিপ্রেস থেকে সরে আসে পিএসসি। তারা একটা বিশেষ জায়গা থেকে এ প্রশ্নপত্র ছাপায়। ৪৫তম বিসিএসে ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। ৬ সেট প্রশ্ন ছাপাতে হয়। সেই হিসাবে প্রায় ২১ লাখ প্রশ্নপত্র ছাপানোর প্রক্রিয়া সময়মতোই শুরু করে পিএসসি। দরসহ বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার কাজ আটকে যায়। চেষ্টা করেও কিছু বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় প্রশ্নপত্র ছাপাতে পারেনি পিএসসি।
প্রশ্নপত্র ছাপানোর বিষয়ে শেষ পর্যন্ত মতৈক্য হলেও শিগগিরই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নিতে পারছে না। ২৩ বা ২৪ মার্চ রোজা শুরু হবে। রোজায় এ বিশাল পরীক্ষা আয়োজনের কোনো রেওয়াজ নেই। পিএসসিও চায় না নতুন করে এর নজির তৈরি করতে। কাজেই মে মাসের আগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। এদিকে মে মাসজুড়ে থাকবে এসএসসি পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ না হলে প্রিলিমিনরি নেওয়া সম্ভব হবে না। কারণ বিভাগীয় শহরের অনেক স্কুলে উভয় পরীক্ষার সিট পড়ে। সেই হিসেবে জুন মাসের আগে প্রিলিমিনারি নিতে পারছে না পিএসসি। এতে করে চার মাস পিছিয়ে যাবে ৪৫তম বিসিএসের সব ধরনের পরীক্ষা।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিএসসি একটি বিসিএস পরীক্ষা আয়োজন করতে দীর্ঘ সময় নিচ্ছে। একটা বিসিএসে আড়াই থেকে সাড়ে তিন বছর লেগে যাচ্ছে। এ থেকে পিএসসিকে বের হয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে ছেলেমেয়েরা কাজবিহীনভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা তরুণ-তরুণী পরিবারের ভরসাস্থল। তাদের দিকে চেয়ে থাকে পুরো পরিবার। বেকারত্বের বিষয়টি পিএসসিকে গভীরভাবে উপলব্ধি করতে হবে। তাহলেই অল্প সময়ে পরীক্ষা নেওয়া থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারবে। আগে অল্প দিনের মধ্যে সুপারিশ করতে পারলে এখন কেন পারবে না? আগের চেয়ে পিএসসির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে।
এই সংকট থেকে কীভাবে বের হয়ে আসার চিন্তা করছে জানতে চাইলে কমিশনের একজন সদস্য বলেন, পিএসসি এই সংকট থেকে শিক্ষা নিয়েছে। পরের অর্থাৎ ৪৬তম বিসিএস থেকে যেন এক বছরের মধ্যেই বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ করা পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি শেষ করা যায়, সেই চেষ্টা এখনই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। একটা বিসিএস সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য সাধারণত প্রিলিমিনারি পরীক্ষার এক মাস আগে পিএসসির একজন সদস্যকে ওই বিসিএসটি সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু ৪৬তম বিসিএসের দায়িত্ব এখনই একজন সদস্যকে দেওয়া হয়েছে। ওই বিসিএস সমন্বয় করবেন কমিশনের সদস্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ফয়েজ আহমেদ।
কমিশনের সদস্য ও পিএসসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিএসসির সদস্যরা একমত হয়েছেন ৩০ নভেম্বর বিজ্ঞাপন প্রকাশ না করে ১ জানুয়ারি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করা হবে। এতে প্রচলিত ক্যালেন্ডার ইয়ার ঠিক থাকবে। এখন প্রশ্ন উঠেছে এই বর্ধিত সময়ে যাদের চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাবে তাদের কী হবে। সেই সমস্যাটিও আলোচনা করে মোটামুটি সেরে রেখেছেন সদস্যরা। ৪৬তম বিসিএসে যারা বয়সের ফেরে পড়বেন তাদের বিশেষ বিবেচনায় পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। খুব শিগগির ওই বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন শুরু হবে। এখন সমস্যা দেখা দিয়েছে সিলেবাস নিয়ে। সিলেবাস পরিবর্তনের জন্য পিএসসি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। চলমান থাকলেও সেই কাজ ৪৬ বিসিএসের আগে শেষ হবে না। কাজেই এক বছর আগেই প্রশ্নপত্র ছাপানোর কাজেও কোনো জটিলতা দেখছেন না পিএসসির সদস্যরা।
কিছুদিন ধরে পিএসসি সংস্কার প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। সিলেবাসে পরিবর্তন আনা সেই সংস্কারেরই অংশ। পিএসসি সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে চায়। মুখস্থ বিদ্যাধারীদের দূরে সরিয়ে রাখার জন্যও তারা সিলেবাসে আমূল বদল আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সংস্কার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই পিএসসি মৌখিক পরীক্ষায়ও পরিবর্তন এনেছে। কোনো চাকরি প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষায় তার জেলার নাম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জিজ্ঞেস করা যাবে না। এ ধরনের প্রশ্নে স্বজনপ্রীতি হয় বলে পিএসসি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বিসিএস পরীক্ষার আবেদন থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য গোপন রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিএসসি। পিএসসির কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য পর্যন্ত চাকরি প্রার্থীর কোনো ব্যক্তিগত তথ্য জানতে পারবেন না। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার উভয় পরীক্ষার প্রার্থীদের তথ্য গোপন রাখার বাধ্যবাধকতা আরোপ করে গত ৫ জানুয়ারি অফিস আদেশ জারি করেছে পাবলিক সার্ভিস কমিশন সচিবালয়। আদেশে বলা হয়েছে, ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি প্রযুক্তিনির্ভর করার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি থেকে শুরু করে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত প্রার্থীর সব তথ্য ‘কোডেড ফরম্যাটে’ থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষার জন্য আলাদা আলাদা কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি সব তথ্যের কোডিং ও ডি-কোডিংয়ের পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করবে। কোনো প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রয়োজন হলে কমিশনের চেয়ারম্যানের অনুমোদন নিয়ে ডি-কোডিং করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে ওই অফিস আদেশে।
৪৫তম বিসিএসে আবেদন করেছেন ৩ লাখ ৪৬ হাজার প্রার্থী। গত বছরের ৩০ নভেম্বর পিএসসির ওয়েবসাইটে ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। ১০ ডিসেম্বর আবেদন শুরু হয়ে শেষ হয় ৩১ ডিসেম্বর। এই বিসিএসে মোট ২ হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে ১ হাজার ২২ জনকে। ক্যাডারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ হবে চিকিৎসায়। সহকারী ও ডেন্টাল সার্জন মিলিয়ে ৫৩৯ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। চিকিৎসার পর সবচেয়ে বেশি শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগ পাবেন ৪৩৭ জন। এরপর পুলিশে ৮০, কাস্টমসে ৫৪, প্রশাসনে ২৭৪ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
স্কোর কার্ডে জ্বলজ্বল করছে, বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। তবুও যেন বিশ্বাস হচ্ছে না! বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হারিয়ে বাংলাওয়াশ, তাও টি-টোয়েন্টিতে। ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও বলেছেন, তাদের সুদূরতম কল্পনাতেও ছিল না এই ফল। লক্ষ্য ছিল ভালো ক্রিকেট খেলা, সে তো সবসময়ই থাকে। তবে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ডকে ঠিক পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজেই ৩-০-তে হারিয়ে দেওয়াটা যে স্বপ্নেরও সীমানা ছাড়িয়ে।
স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান ঘুচিয়ে দিয়েছে মেহেদী হাসান মিরাজের একটা থ্রো। ইংল্যান্ডের ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। আগের বলেই পেয়েছেন ডাভিড মালানের উইকেট। নতুন আসা ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট। বলে ব্যাট লাগিয়েই ছুটলেন ডাকেট, অন্যপ্রান্ত থেকে জস বাটলার এসে স্ট্রাইকিং প্রান্তে পৌঁছানোর আগেই পয়েন্ট থেকে মিরাজের অসাধারণ থ্রো ভেঙে দেয় স্টাম্প। পরপর দুই বলে আউট দুই সেট ব্যাটসম্যান। তাতে রঙ বদলে যায় ম্যাচের। ১ উইকেটে ১০০ রান থেকে ৩ উইকেটে ১০০ রানে পরিণত হয় ইংল্যান্ড, দুই প্রান্তে তখন দুই নতুন ব্যাটসম্যান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি টি-টোয়েন্টির চ্যাম্পিয়নরা। পুরস্কার বিতরণ মঞ্চে তাই আক্ষেপ করেই জস বাটলার বললেন, ‘পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারানোটা খুব বাজে হয়েছে, যা শেষ পর্যন্ত আমাদের ম্যাচটা হারিয়েছে। আমি কেন যে ডাইভ দিলাম না এ নিয়ে খুব আফসোস হচ্ছে।’
২৪০ বলের ম্যাচে শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে আসলে ওই দুটো বলের ঘটনাই। মালান যেভাবে খেলছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই হবে। ঢাকা লিগ ও বিপিএল খেলে যাওয়া মালান জানেন এই উইকেটে রান তোলার কৌশল, যা দেখিয়েছেন প্রথম ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো শতরানের ইনিংস খেলে। কালও মনে হচ্ছিল মালানই তীরে তরী ভিড়িয়ে নেবেন, কিন্তু মোস্তাফিজের অল্প একটু বাড়তি লাফিয়ে ওঠা বলে পুল করতে গিয়ে গড়বড় করে ফেললেন এ বাঁহাতি। ক্যাচ দিলেন উইকেটের পেছনে যেটা তালুবন্দি করতে ভুল করেননি লিটন দাস। পরের বলে বাটলারের পড়িমরি করে ছুটেও রান সম্পূর্ণ করতে না পারা, মিরাজের দারুণ থ্রোর কাছে পরাস্ত হওয়া। এ দুটো বলই আসলে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে ইংল্যান্ডের। অথচ একটা সময় মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের ছুড়ে দেওয়া ১৫৯ রানের লক্ষ্য ভালোভাবেই উতরে যাবে ইংলিশরা। টস জিতে আগে বোলিং নেন বাটলার। লিটন ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আদিল রশিদ, রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ দেন ২২ বলে ২৪ রান করা রনি। অবশ্য তার ইনিংসের ইতি ঘটতে পারত আগেই, রনির ক্যাচটা ফেলে দিয়েছিলেন রেহান আহমেদ। জীবন পেয়েছেন লিটনও, তার ক্যাচ ছেড়েছেন বেন ডাকেট। ১৪তম ওভারের প্রথম বলে লিটন ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডিপ-মিডউইকেটে, কিন্তু ডাকেট বলটা হাতে জমাতে পারেননি। দুবারই দুর্ভাগা বোলারটির নাম জোফরা আর্চার।
৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেলে আউট হন লিটন, নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান করে। শেষ ৫ ওভারে রান তোলার গতিটা কমে আসে বাংলাদেশের। ১৫ ওভার পর যেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১ উইকেটে ১৩১, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ২ উইকেটে ১৫৮ রানে। শেষ ৩০ বলে ৯ উইকেট হাতে রেখে বাংলাদেশ তোলে মাত্র ২৭ রান তখন মনে হচ্ছিল বেশ ভালো ব্যাটিং উইকেটে অন্তত ২০-২৫টা রান কম হয়েছে বাংলাদেশের।
ব্যাটিংয়ের শেষটা আর বোলিংয়ের শুরুটা, দুটো পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত তানভীর ইসলাম ফিল সল্টকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন শুরুতেই। তাসকিন আহমেদের বলে ডাভিড মালানের বিপক্ষে মাঠের আম্পায়ার এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত দিলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি। বাটলারকে নিয়ে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদের ব্যাটে ইংল্যান্ড ছিল জয়ের দিশাতেই কিন্তু পরপর দুই বলে দুই সেট ব্যাটসম্যানের বিদায়ে বিপদে পড়া ইংল্যান্ড আর বেরিয়ে আসতে পারেনি হারের বৃত্ত থেকে। একে একে মইন আলি (৯), বেন ডাকেট (১১) ও স্যাম কারেনের (৪) উইকেট হারিয়ে বাড়তে থাকা রান রেটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আর পারেনি টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ওভারে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২৭ রান, ক্রিস ওকস প্রথম দুই বলে দুটি চার মারলেও পরের বলগুলোতে আর পাননি বাউন্ডারির দেখা। ইংল্যান্ড থেমে যায় ৬ উইকেটে ১৪২ রানে, ১৬ রানের জয়ে সিরিজ ৩-০-তে জিতে নেয় বাংলাদেশ।
দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তবে তার সঙ্গে মিশে আছে ঘরের মাঠে পছন্দসই উইকেট বানিয়ে জেতার সমালোচনাও। এবারের সিরিজ জয়ে সেই কালিমা নেই, বরং আছে বিশ্বজয়ীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জেতার গর্ব। সাকিব তাই নির্দ্বিধায় বললেন, ‘সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে অবদান রাখা, বোলিংয়ে, ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটি ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছে।’
ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং তিন বিভাগেই ভালো করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিনটি ম্যাচ জিতল বাংলাদেশ। সেটাও টি-টোয়েন্টিতে, যে সংস্করণে বাংলাদেশের সাফল্য খুব একটা নেই। সাকিব এ সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। যেখানে ভালো করা ক্রিকেটাররাই ভালো করেছেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। তাতেই এসেছে অবিস্মরণীয় এই জয়, যে অর্জন টি-টোয়েন্টির বাংলাদেশকে চেনাল নতুন করে।
দেশে সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে পড়ালেখার খরচে আকাশপাতাল পার্থক্য। একটি সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সময় একজন শিক্ষার্থীকে শুধু ভর্তি ফি হিসেবে এককালীন গড়ে ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। কিন্তু একটি বেসরকারি কলেজে দিতে হবে ২১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এর মধ্যে ভর্তি ফি ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ও ইন্টার্নশিপ ফি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ খরচ সরকারি মেডিকেলের চেয়ে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ১৪২ গুণ বেশি।
একইভাবে এ বছর একজন বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে টিউশন ফি দিতে হবে। এ জন্য তার পাঁচ বছরে খরচ হবে ৬ লাখ টাকা। অথচ সরকারি কলেজে এ ফি বছরে গড়ে ৭ হাজার টাকা করে পাঁচ বছরে মোট ৩৫ হাজার টাকা। সে হিসাবে এ ক্ষেত্রে একজন বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীকে সব মিলে গড়ে পাঁচ বছরে ৫৪ গুণ বেশি টাকা গুনতে হবে।
এ বছর ইতিমধ্যেই সরকার বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি, ইন্টার্নশিপ ও মাসিক টিউশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সে হিসাবে দেখা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজে গত বছরের তুলনায় ভর্তি ফি ১৭ শতাংশ বাড়িয়েছে সরকার। গত বছর ভর্তি ফি ছিল ১৬ লাখ ২০ হাজার ও মাসিক টিউশন ফি ছিল ৮ হাজার টাকা। এবার ভর্তি ফি ৩ লাখ ২৪ হাজার বাড়িয়ে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার এবং মাসিক টিউশন ফি ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করেছে। সে হিসাবে এ বছর একজন শিক্ষার্থীকে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে এবং পাঁচ বছরে টিউশন ফি দিতে মোট ব্যয় হবে ২৭ লাখ ২৪ হাজার টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টাকা বেশি। অর্থাৎ মোট ব্যয় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এবং সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে শিক্ষা ব্যয়ের এ তারতম্য দেখা গেছে।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে সরকারের বেঁধে দেওয়া ভর্তি ফি ‘অত্যধিক’ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও চিকিৎসা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. রশিদন্ডই-মাহবুব। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি খাতে কোনো শিক্ষাই সস্তা না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এ ব্যয় সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা কঠিন। প্রাইভেট সেক্টরে যারা ভর্তি হয়, অর্থনৈতিকভাবে তারা সাধারণ না। আর ৬০ শতাংশ মেধাবী তারা সরকারি মেডিকেলে গেছে। সমস্যা হচ্ছে তাদের যারা মেডিকেলে পড়তে চায়, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, তাদের জন্য। এই গ্রুপটাকে যদি সরকার নিতে চায়, তাহলে উন্নত বিশ্বের মতো এখানেও তাদের সরকার থেকে লোন দিতে হবে। এর বিকল্প নেই।’ তবে এ ফি যৌক্তিক বলে মনে করছেন ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এখনকার প্রেক্ষাপটে বেসরকারি ফি খুব বেশি না। আশপাশের দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এ খরচ অনেক কম। ভারতে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে ১ কোটি থেকে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়। এখানে ৩৫ লাখ টাকা লাগে। সে তুলনায় আমাদের এখানে অনেক কম। তাই বিদেশি শিক্ষার্থীদের চাপ বেশি। যে ৪৫ শতাংশের কথা বলা হয়, তার বেশিরভাগই ভারতীয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটান থেকেও শিক্ষার্থী আসে।’
বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফিতে শৃঙ্খলা আনতে পাঁচ বছর পর এবার ফি বাড়ানো হলো বলে জানান স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি ফি ৩ লাখ টাকার মতো বেড়েছে। ২০১৮ সালে সর্বশেষ ফি বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে বেসরকারি মেডিকেলের খরচও বেড়েছে। আমরা চেয়েছি বেসরকারি কলেজগুলো যেন নির্দিষ্ট ফি নেয়। পেছনের তালিকা থেকে ভর্তি করানোর লোভ দেখিয়ে যেন বেশি ফি নিতে না পারে। সে জন্যই তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভর্তিতে যেন গোপন কোনো লেনদেন না হয়, সে জন্য ফি বাড়ানো হয়েছে।’
গত রবিবার এ বছরের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ বছর সরকারি ও বেসরকারি ১০৮টি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারবে ১১ হাজার ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজে আসন ৪ হাজার ৩৫০টি এবং ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ৬ হাজার ৭৭২টি। মেরিট লিস্টের বাইরে জেলা কোটায় ৮৪৮, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৮৭ এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটায় ৩১ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন।
সরকারি মেডিকেল কলেজে ২৭ মার্চ থেকে ভর্তি শুরু হয়ে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। এই ভর্তি শেষ হলে বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি শুরু হবে।
এবার আয় ২ হাজার কোটি টাকা : এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন ৬ হাজার ৭৭২টি। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৩ হাজার ৪৭টি আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ। কিন্তু বাস্তবে দেড় হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে দেখা যায় না। সে হিসাবে এ বছর বেসরকারি মেডিকেল কলেজে দেশের ৫ হাজার ২৭২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হবেন। এসব শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে ভর্তির সময় এককালীন ভর্তি ফি ও ইন্টার্নশিপ ফি হিসেবে ২১ লাখ ২৪ হাজার এবং প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হিসেবে পাঁচ বছরে ৬ লাখ টাকা টিউশন ফি দিতে হবে। সে হিসাবে মোট আয় হবে ১ হাজার ৪৩৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
অন্যদিকে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি কলেজ কর্র্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে। এ বছর বড় মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে। সে হিসেবে দেড় হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী থেকে আয় হবে ৭৫০ কোটি টাকা।
অর্থাৎ এই শিক্ষাবর্ষে দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থী মিলে ৭১টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আয় হবে ২ হাজার ১৮৬ কোটি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা।
বিদেশিদের ফি ৫০ লাখ টাকা : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজ কর্র্তৃপক্ষ ফি নির্ধারণ করে। তবে বৈশ্বিক মন্দার কারণে এবার ফি খুব একটা বাড়ানো হয়নি। ৩৫ লাখ টাকার মতো ফি নির্ধারণ করা আছে। একটা কলেজ সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ আসনে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে পারবে। কিন্তু ৭১টা বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে সর্বোচ্চ ৪-৫টা মেডিকেল কলেজে ৪৫ শতাংশ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায়। ১৫-২০টাতে কোনো বিদেশি শিক্ষার্থীই নেই।
তবে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো একজন বিদেশি শিক্ষার্থীর জন্য মোট ফি ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করেছে এবং এই টাকা ভর্তির সময় এককালীন দিতে হবে বলে জানিয়েছেন কলেজের কর্মকর্তারা।
এ ব্যাপারে হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. দৌলতুজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমরা শিক্ষার্থীদের অফার লেটার দিচ্ছি। তারা টাকা জমা দিচ্ছে। গত বছর ৫০ জন নিয়েছিলাম। এবার এরকম বা কিছু কম নেব। ওদের ফি ৫০ লাখ টাকা সবমিলে।’
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বলা হয়েছে, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি টিউশন ও ইন্টার্নশিপ ফিসহ মোট ফি ৫০ লাখ টাকা।
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কলেজগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ভর্তি করায়। আমরা গত বছর ৩৯ জন নিয়েছি। সাধারণত ভর্তি ফি ৩০-৪০ লাখ টাকার মধ্যেই থাকে।’
সরকারি মেডিকেলে ঢাকার বাইরে ফি বেশি : অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. জামাল জানান, সরকারি মেডিকেলের ফি খুবই কম। যেসব মেডিকেলে খরচ বেশি, হোস্টেল খরচ বেশি, তারা ১৫ হাজার টাকা নেয়। তবে ঢাকার বাইরের মেডিকেল কলেজে ভর্তি ফি ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয় বলে বেশ কিছু কলেজ থেকে জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. এবিএম মাকসুদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারি মেডিকেল কলেজে এ বছরের ভর্তি ফি এখনো নির্ধারণ হয়নি। গত বছর ১০-১১ হাজার টাকা ছিল। তবে কোনো কোনো মেডিকেল কলেজ ১৫-২০ হাজার টাকা নেয়। সব মেডিকেল কলেজে একই ফি নির্ধারণের একটা চেষ্টা গত বছর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর করেছিল। কিন্তু সেটা এখনো হয়নি। ঢাকায় ১০-১৫ হাজার টাকার মধ্যেই থাকে।’
কিশোরগঞ্জের সরকারি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘গত বছর ভর্তি ফি ২০ হাজার টাকার মতো ছিল। একেক কলেজে একেক রকম ভর্তি ফি। ছোট কলেজগুলোতে ছাত্র কম, সেখানে একটু বেশি। বড় মেডিকেল কলেজে ছাত্র বেশি, সেখানে ভর্তি ফি একটু কম হয়। ছোট মেডিকেলে ৫০-৫২টা সিট ও বড় কলেজে ২৩০টার মতো।’
একই কলেজের এক ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থী বলেন, ২০১৭ সালে ভর্তি ফি ছিল ১৮ হাজার। ছয় মাস পরপর ২১০০ টাকা দিতাম পরীক্ষার ফির জন্য।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, তারা ২০১৮ সালে ভর্তি হয়েছেন। তখন ভর্তি ফি ছিল ১০ হাজার টাকা। মাসে মাসে কোনো টিউশন ফি নেই। তবে প্রতি বছর ফাইনাল পরীক্ষার (ইয়ার চেঞ্জ) সময় ৬-৭ হাজার টাকা লাগে। হোস্টেলে খাওয়ার খরচ নিজেদের। খাওয়া ও বইপত্র কিনতে ৭ হাজারসহ মাসে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।