
দুই যুগ আগে মাদাগাস্কারের নদী অববাহিকার চিরহরিৎ বনাঞ্চলে দেখা মিলত বাবুইয়ের মতো ছোট্ট এক প্রজাতি পাখির। বাবুইয়ের মতোই বাসা বাঁধার কৌশল তার। আর নদীর জলতরঙ্গের মতোই ছন্দময় গলা। মিষ্টি গলার সুরেলা ডাকের কারণে ডাস্কি তেতরাকা নামে পাখিটি দ্বীপ দেশটিতে পরিচিতি পেয়েছে গানের পাখি হিসেবে। তবে জলপাই-রঙা শরীর আর হলদে গলার পাখিটি ১৯৯০ সালের পর সেখানে আর দেখা যায়নি। প্রাণী বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ পাখিটিকে ফেলে দিয়েছিলেন বিলুপ্তির তালিকায়। তবে যারা আশা ছেড়ে না দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে পাখিটির খোঁজ করেছেন, তারা শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছেন। গত ডিসেম্বর মাসে তিনটি ডাস্কি তেতরাকা পাখির খোঁজ পেয়েছে একদল গবেষক। আর গত সপ্তাহে তারা গানের পাখির ফিরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন।
বিবিসি বলছে, দ্য পেরেগ্রেইন ফান্ডের মাদাস্কার কর্মসূচির আওতায় পরিচালিত এক গবেষণায় সন্ধান মিলেছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিটির। গবেষকরা গত ডিসেম্বর মাসে দেশটির মাসোয়ালা উপসাগরীয় অঞ্চলে দুটি পাখির দেখা পান। পরে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আন্ডাপা এলাকায় দেখা যায় আরেকটি পাখি।
বিবিসি বলছে, গবেষকদের নথি অনুসারে ১৯৯৯ সালে শেষবার দেখা গিয়েছিল ডাস্কি তেতরাকা প্রজাতির এ পাখিকে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাও বিশ্বের বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা ১০ প্রাণীর তালিকায় ফেলেছিল একে।
দ্য পেরেগ্রেইন ফান্ডের মাদাস্কার কর্মসূচির পরিচালক ও গবেষক দলের প্রধান লিলি-অ্যারিসন রেনে দে রোনাল্ড বলেন, মাদাগাস্কার জীববৈচিত্র্য আসলেই অনন্য। এখানে এখনো অনেক কিছু আবিষ্কার হওয়ার বাকি আছে।
তিনি বলেন, ডাস্কি তেতরাকা শুধু মাদাগাস্কারেই পাওয়া যেত। তবে গত দুই যুগে অনেকে ধরে নিয়েছিলেন ডাস্কি তেতরাকা পুরোপুরি হারিয়ে গেছে প্রকৃতি থেকে। তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল, এই ভূখণ্ডের বৈচিত্র্যময় প্রকৃতিতে কোথাও হয়তো ঠিকই খুঁজে পাওয়া যাবে সুরেলা গলার পাখিটিকে। আর আমরা শেষ পর্যন্ত পেয়েছি। এখন তার জীবন সম্পর্কে আরও ভালোভাবে জানতে পারব। শুধু তা-ই নয়, এ আবিষ্কার মাদাগাস্কারের বাস্তুসংস্থানেরও বিষয় ধারণা দেবে।
রেনে দে রোনাল্ড জানান, এর আগে ২০০৬ সালে তিনি যখন শিক্ষার্থী তখনো হারিয়ে যাওয়া লাল প্যাঁচা ও বিরল প্রজাতির ইগল পুনঃআবিষ্কার করেছিলেন। তখন আন্ডাপা এলাকার বনাঞ্চল ছিল ঘন। কিন্তু এবার দেখা যায় বনের অনেক এলাকাই খালি হয়ে গেছে।
অবশ্য আমেরিকান বার্ড কনজারভেন্সির পক্ষীবিশারদ জন মিত্তারমেরেজ মনে করেন, পাখিটি তার স্বভাবের কারণেই দীর্ঘ সময় মানুষের চোখের আড়ালে থেকেছে। তার ভাষ্য, নদী এলাকা থাকার কারণেই ডাস্কি তেতরাকাকে বনের গভীরে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার পরও আবিষ্কারটি গুরুত্বপূর্ণ। গানের পাখির ফিরে আসা প্রকৃতির জন্য ভালো বিষয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক পন্থায় অধিকার আদায়সহ তাদের মেধা বিকাশের বিভিন্ন কার্যক্রম হয়ে থাকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের মাধ্যমে। কিন্তু গত ৩৩ বছর ধরে অচল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। এতে থমকে আছে শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের কেন্দ্রীয় সংগঠনের কার্যক্রম। আবার দেশের স্বায়ত্তশাসিত চার বিশ্ববিদ্যালয়ে বাজেট অনুমোদন, বার্ষিক প্রতিবেদন পাস, আইন ও নীতিমালা সংশোধন ও অনুমোদনসহ যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সর্বোচ্চ ফোরাম সিনেট। ‘১৯৭৩-এর অধ্যাদেশ’ অনুযায়ী বছরে অন্তত একবার সিনেট অধিবেশনের বিধান রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। কিন্তু গত অর্ধযুগ ধরে সেটাও হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়টিতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, ছাত্র সংসদ না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কথা বলার যেমন কেউ নেই, ঠিক অপর দিকে সিনেট না থাকায় সমালোচনা ও জবাবদিহিতার জায়গা থেকে বেঁচে যাচ্ছে প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৬২ সালে যাত্রা শুরু করে রাকসু নামে। এখন পর্যন্ত ১৪ বার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় রাকসুর ১৯৮৯-৯০ মেয়াদের জন্য। পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালে রাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রশাসন সরব হলেও পরের বছরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে চাপা পড়ে যায় রাকসু সংলাপ।
এদিকে এই দীর্ঘ সময় ধরে রাকসু নির্বাচন না হলেও থেমে নেই রাকসুর চাঁদা। রাকসুর জন্য প্রতি বছর প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ভর্তির সময় গুনতে হয় ১৫ টাকা।
রাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যায়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমাদের অধিকার নিয়ে কথা বলার এখন কেউ নেই। ফলে আন্দোলন করে দাবি তুললেও সেটা প্রশাসনের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। সংস্কৃত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন আশরাফি বলেন, রাকসু সব শিক্ষার্থীর একটি অধিকারের জায়গা। শিক্ষার্থীদের একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া কখনই প্রশাসনের কাছ থেকে ন্যায্য দাবি আদায় সম্ভব না।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ঠিক রেখে মেধাবী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে দ্রুত সময়ের মধ্যে রাকসু নির্বাচন চাচ্ছেন ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা।
দ্রুত রাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, রাকসু নির্বাচনের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিভিন্নভাবে দাবি জানিয়ে আসছি। রাকসু না থাকলেও আমরা সব সময় শিক্ষার্থীদের পাশে থাকি। কিন্তু রাকসু থাকলে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করতে আরও সুবিধা হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে আমি মনে করি এটিই রাকসু নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময়। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে রাকসু নির্বাচন চাই।
রাবি শাখা ছাত্রদল রাকসু নির্বাচন চায় জানিয়ে সংগঠনটির আহ্বায়ক সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে রাকসু নির্বাচন চাই এবং নির্বাচনে আমরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণও করব।
এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়ন, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীসহ স্বেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো সবাই চাচ্ছে খুব দ্রুত রাকসু নির্বাচন দিয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জায়গাটা ফিরিয়ে দিতে।
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার ল্যাঙ্গুয়েজ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, অবশ্যই রাকসু নির্বাচন দরকার। রাকসু না থাকলে আমাদের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব কে করবে?
রাকসু নির্বাচনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, রাকসু নির্বাচন করতে হলে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যদি সকলে মিলে একটা পরিবেশ আমরা তৈরি না করতে পারি তাহলে একটা ভয় কাজ করে যে, এখানে একটা অশান্ত পরিবেশ তৈরি হবে। আর অশান্ত পরিবেশ তৈরি হলেই তার ইফেক্ট বহুদিন ধরে পড়তে থাকবে। কারণ রাকসু নির্বাচন মানেই ছাত্রভিত্তিক নির্বাচন। সেখানে সবার প্রতি সম্মানবোধ ও সহনশীলতা দরকার আছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের থেকে শিক্ষার্থীদেরই এগিয়ে আসতে হবে।
অর্ধযুগ ধরে হয় না সিনেট অধিবেশন : এদিকে গত অর্ধযুগ ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) হয়নি কোনো সিনেট অধিবেশন। সিনেটের আচার্য, সরকার, স্পিকার মনোনীতসহ অধিকাংশ সদস্য পদই শূন্য অথবা মেয়াদোত্তীর্ণ। আবার রাকসু অচল থাকায় গত ৩৩ বছর ধরে সেখানে নেই কোনো ছাত্র প্রতিনিধি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১৪ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালের ১৮ মে সিনেট অধিবেশন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মিজানউদ্দিন। পরের বছরের ১৯ মে সিনেটের ২২তম অধিবেশনও হয় তার সভাপতিত্বে। তবে এরপর পূর্ণ মেয়াদ পার করলেও কোনো সভা আহ্বান করেননি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার এক বছর পার করে ফেললেও সিনেট সভা করতে পারেননি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের ২০ ধারা অনুযায়ী, সিনেটের সদস্য ১০৫ জন। তাদের মধ্যে উপাচার্য পদাধিকার বলে সভাপতি, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ সদস্য এবং রেজিস্ট্রার হন সচিব। রাবির সিনেটে এই চারজনের বাইরে সব সদস্য পদের মেয়াদই শেষ হয়েছে।
১৯৯৪ সালে সর্বশেষ রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচন হয়। নির্বাচিত সেই ২৫ সদস্যের মেয়াদও শেষ হয়েছে দুই যুগের বেশি আগে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৩ এপ্রিল নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে সদস্য হন ৩৩ জন। তাদের মেয়াদও শেষ হয়েছে এক বছরের বেশি আগে। আর রাবি সিনেটে এক বছর মেয়াদের ছাত্র প্রতিনিধি নেই তিন দশক আগে থেকেই। ১৯৮৯-৯০ সালে সর্বশেষ এখানে রাকসু নির্বাচন হয়।
এ বিষয়ে সিনেটের সাবেক সদস্যদের অভিযোগ, উপাচার্যরা নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতেই অধিবেশন ডাকেন না। তারা জানান, সিনেট অধিবেশনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। জবাবদিহি করতে হয়, সমালোচিত হতে হয়। সেজন্য তারা এটি এড়িয়ে চলেন।
সিনেটের নির্বাচিত রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট মো. মাসউদুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বাজেট তৈরি করা, উপাচার্য নির্বাচনের জন্য প্যানেল তৈরি করা, বিভিন্ন ইনস্টিটিউট অনুমোদন দেওয়াসহ নানা ধরনের কাজ সিনেটের মাধ্যমে হয়ে থাকে। সিনেট না হওয়ার ফলে একটা প্রধান ক্ষতি হচ্ছে সরকারের ইচ্ছামতো একজনকে উপাচার্য দিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এটা হওয়ার কথা ছিল সিনেটে প্যানেলের মাধ্যমে তিনজনের একটি তালিকা আচার্য বরাবর যাবে এবং তিনি সেখান থেকে একজনকে বেছে নেবেন। সেটা বন্ধ হয়ে গেছে। দ্বিতীয় ক্ষতি, উপাচার্য বাজেট ইচ্ছামতো পাঠাচ্ছেন।
সিনেট সদস্য ও রাবির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক খালেকুজ্জামান বাজেট এবং উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে দেশ রূপান্তরকে একই কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন, সিনেটে নির্বাচিত হয়েও আমাদের কোনো দিন ডাকেননি এই উপাচার্য। শুধু স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠানে ডেকেছিলেন।
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম দেশ রূপান্তর বলেন, সিনেটের বেহাল দশা বহুকাল আগে থেকেই। এখন এটার জন্য নির্বাচন দরকার। এ ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রার গ্র্যাজুয়েট প্রয়োজন। আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। সিনেট পূর্ণাঙ্গ করতে হলে ছাত্রদের প্রতিনিধি রাখতে হয়। তাই রেজিস্ট্রার গ্র্যাজুয়েটদের নির্বাচন হওয়া দরকার। সিনেট প্রতি বছরই একটা হওয়া দরকার। কারণ আর্থিক বিষয়গুলো পাস হয় সিনেটে। আশা করছি খুব দ্রুতই সিনেট কার্যকর করতে পারব।
দেশে প্রতিদিনই রেললাইনে ট্রেনে কাটা পড়ে কিংবা ধাক্কায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। এসব মৃত্যুকে দুর্ঘটনাজনিত কিংবা আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করে অপমৃত্যুর মামলা করে দায় সারছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এমনকি লাশ উদ্ধার হলেও অনেককেই শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। কারণও চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।
প্রযুক্তিগত সমক্ষমতার অভাবে কারণ অজানা থেকে যাচ্ছে বলে জানান রেলওয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা।
রেল পুলিশের তথ্য অনুয়ায়ী, গত পাঁচ বছরে (২০১৮-২২) সারা দেশে রেললাইন থেকে ৪ হাজার ৫২৩টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম অঞ্চলে উদ্ধার হয়েছে ১২৯টি মরদেহ। এর মধ্যে পরিচয় শনাক্ত করা গেছে ৮৯টি। বাকি ৩৯ জনের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
চট্টগ্রামের রেলওয়ে পুলিশ কর্মকর্র্তারা বলছেন, পরিচয় শনাক্ত করতে না পারা ৩৯টি মরদেহের ডিএনএ নমুনা তারা সংরক্ষণ করে রেখেছেন। তাদের দাবি, রেললাইন থেকে মরদেহ উদ্ধারের পর যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ঘটনাগুলোর তদন্ত করা হয়।
তবে পরিচয় গোপন রেখে রেল পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলছেন, রেললাইনে মৃত্যুর একটি বড় অংশের কারণ চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। অপমৃত্যুর মামলা করে দায় সারা হচ্ছে। রেল পুলিশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা না থাকায় পরিচয়ও শনাক্ত করা যাচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার আন্তরিকতার ঘাটতির কারণেও অজানা থেকে যাচ্ছে মৃত্যুর সঠিক কারণ।
রেল পুলিশের এক কর্মকর্তার ভাষ্য, ‘রেললাইন থেকে লাশ উদ্ধার হলে স্বাভাবিকভাবে দুর্ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে অপমৃত্যুর মামলা করবে রেল পুলিশ। এ কারণে হত্যার পর আলামত নষ্ট করতে রেললাইনে লাশ ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। কারণ ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর বিষয়টি দুর্ঘটনা ধরে নিয়ে তদন্ত করে পুলিশ। কোনো অভিযোগকারী না থাকায় হত্যাকা- ধরে নিয়ে তদন্ত করে না।’
গত বছর চট্টগ্রাম অঞ্চলের রেললাইন থেকে ১২৯টি মরদেহ উদ্ধারের পর প্রতিটি ঘটনার তদন্ত হয়েছে বলে দাবি করেন চট্টগ্রামের রেলওয়ে পুলিশ সুপার প্রকৌশলী হাছান চৌধুরী। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘লাশ উদ্ধারের পর হত্যার শিকার হয়েছেন এমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। সব ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।’
চট্টগ্রামের রেল পুলিশের শীর্ষ এই কর্মকর্তা জানান, ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে চট্টগ্রাম এলাকায় ৫৩, লাকসাম এলাকায় ৬৯ ও চাঁদপুর এলাকা থেকে ৭টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রেললাইনে মৃত্যুর কারণ হিসেবে যেসব বিষয় উঠে এসেছে সেগুলো হলো রেললাইনের ওপর দিয়ে অসতর্ক চলাফেরা, কানে হেডফোন বা মুঠোফোনে কথা বলা, রেললাইনে বসে আড্ডা দেওয়া, রেলক্রসিং গেটম্যানের নির্দেশ অমান্য করা, ঝুঁকিপূর্ণভাবে ট্রেনে ভ্রমণ করা ইত্যাদি।
রেল পুলিশ সুপার (চট্টগ্রাম) জানান, দুর্ঘটনা রোধে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ, পাথর নিক্ষেপ বন্ধে জনসচেতনতামূলক বিট পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে রেলওয়ের চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ। এ ছাড়া রেল ক্রসিং পারাপারে সতর্ক হওয়ার বিষয়েও জনসচেতনতামূলক বিট পুলিশিং কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।
রেল পুলিশ থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে ২০১৮ সালে ১ হাজার ২; ২০১৯ সালে ৯৮০; ২০২০ সালে ৭১৩; ২০২১ সালে ৭৭৮ ও ২০২২ সালে ১ হাজার ৫০ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে ৩১১ শিক্ষার্থী, ৩৭০ জন চাকরিজীবী ও ২ হাজার ৬৪ জন শ্রমজীবী ছিলেন।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিহতদের ৩ হাজার ৪৫৮ জন পুরুষ ও ১ হাজার ৬৫ জন নারী। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ১৯ থেকে ৫০ বছর বয়সীরা, সংখ্যায় তা ২ হাজার ৯৯৩ জন। আবার নিহত ৩৫৩ জনের বয়স ১৮ বছর বা এর চেয়ে কম। পঞ্চাশোর্ধ্ব ছিল ১ হাজার ১৭৭ জন।
জানতে চাইলে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী (অপারেশন) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রেললাইনে ১৪৪ ধারা জারি থাকে। রেললাইন থেকে লাশ উদ্ধারের ঘটনা পুলিশের পাশাপাশি রেল কর্তৃপক্ষও মনিটর করে। তবে দুর্ঘটনা এড়াতে মানুষকে সচেতন হতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্টেশন এবং যেসব জনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্য দিয়ে রেলপথ গেছে, সেসব স্থানে পুলিশের পাশাপাশি আমরাও নানাভাবে প্রচারণা চালাচ্ছি।’
চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের পদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ ও ২০ সালে চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লা থেকে তিনটি মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা করে পুলিশ। পরে তদন্ত করে দেখা যায়, হত্যার পর লাশগুলো রেললাইনে ফেলে যায় খুনিরা। তিনি জানান, এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে কুমিল্লা সদর এলাকায় রেললাইন থেকে শরিফুল ইসলাম নামের এক তরুণের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শরিফুলের বাবা সিরাজুল ইসলাম হত্যা মামলা করতে চাইলেও রেলওয়ে থানা-পুলিশ অপমৃত্যু মামলা নেয়। শরিফুলের বাবার করা মামলার সূত্র ধরে আদালতের নির্দেশে ২০১৯ সালে ঘটনাটি তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এই সংস্থার তদন্তে বেরিয়ে আসে, প্রেমঘটিত কারণে শরিফুলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে লাশ রেললাইনে ফেলে যায় খুনিরা। পরে শরিফুলের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে পিবিআই।
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রেললাইনে লাশ পাওয়া গেলে ময়নাতদন্ত ও সুরতহাল তৈরি করা ছাড়া স্বজনদের লাশ হস্তান্তর করা হয় না। কারণ সব ঘটনা যে দুর্ঘটনা, এমনটিও নয়।’
দেশে দুই কোটিরও বেশি কিডনি রোগী আছেন। প্রতি বছর ৩৫-৪০ হাজার মানুষের কিডনি সম্পূর্ণ বিকল হচ্ছে। এসব রোগীর বেঁচে থাকার জন্য ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন প্রয়োজন। কিন্তু কিডনি চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ায় শতকরা ১০ জন এর ব্যয় বহন করতে পারেন। চিকিৎসা করতে গিয়ে অনেক পরিবার আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যায়। গতকাল শনিবার এক গোলটেবিল বৈঠকে এসব তথ্য জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
বৈঠকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, সবার জন্য কিডনি স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হলে ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন বীমার আওতায় আনতে হবে।
গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়। কিডনিবিষয়ক বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) এ গোলটেবিলের আয়োজন করে।
বৈঠকে ক্যাম্পস প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, কিডনি রোগীরা দুর্যোগের সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। আমরা জানি কিডনি রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক। বিশ্বে ৮৫ কোটি লোক কিডনি রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে দুই কোটিরও অধিক কিডনি রোগী। দেশে প্রতি বছর ৩৫-৪০ হাজার লোকের কিডনি সম্পূর্ণ বিকলের শিকার হয়। তাদের বেঁচে থাকার জন্য ডায়ালাইসিস ও কিডনি সংযোজন প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, ডায়ালাইসিস সাধারণত সপ্তাহে ২-৩ দিন করতে হয়। দুর্যোগের কারণে ডায়ালাইসিস বন্ধ হলে মৃত্যু এগিয়ে আসবে। আবার দুর্যোগের সময় আঘাত, রক্তক্ষরণ, দুর্যোগ-পরবর্তী ডায়রিয়া ইনফেকশন এসব কারণে তীব্রমাত্রার আকস্মিক কিডনি বিকল হতে পারে। যার জন্য ডায়ালাইসিস প্রয়োজন। তাই কিডনি রোগীরা দুর্যোগের সময় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। ডা. এম এ সামাদ বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় কিডনি রোগীদের পূর্বপ্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি। যেমন প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রস্তুত রাখা। বিকল্প ডায়ালাইসিস সেন্টার সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা নিয়ে রাখা। সাহায্যকারী নেটওয়ার্ক তৈরি করে রাখা। ডায়ালাইসিস পেতে বিলম্ব হলে সাময়িক খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, যেমন পানি কম, মাছ-মাংস কম, পটাশিয়ামযুক্ত খাবার যেমন ফল ও সবজি পরিহার করা।
গোলটেবিল বৈঠকে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মিজানুর রহমান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার আলী আহাম্মেদ খান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী, কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন-উর-রশিদ ও বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।
দেশে রাজনীতির মাঠ সব দলের জন্য উন্মুক্ত বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সবার জন্য রাজনৈতিক অঙ্গন একদম মুক্ত করে দিয়েছি। যে যেমন পারছেন তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। আমরা কিছু বাধা দিচ্ছি না। আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও নতুন প্রাইম মিনিস্টার (প্রধানমন্ত্রী), নতুন সংসদ নির্বাচিত হবে। ইলেকশন কমিশন সেই ব্যবস্থাটা করবেন এটাই আমরা মনে করি।’
গতকাল শনিবার যশোরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনো বিশ্বাস করে না যে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবে। আওয়ামী লীগ কখনোই বিশ্বাস করে না যে, পেশিশক্তির মাধ্যমে, বন্দুকের নলের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব সময় চিন্তা করে জনগণই তার শক্তি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী ১০ বছর পরে আমাদের চরম দরিদ্রতা কেমন ছিল তা জাদুঘরে গিয়ে দেখে আসতে হবে; তা সম্ভব হয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতার কারণে। আমরা সবাই যদি একসঙ্গে চলি তবে আমাদের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না। কেউ বাইরে থেকে এসে সবক দেবে তা হবে না, আমরা নিজেরা চলতে পারি।’
দেশের সব কটি থানা আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘ইতোমধ্যে ১০১টি থানার ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে এবং আরও ৫০টি থানার ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন। এ ছাড়া যশোরের পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ ৯টি কার্যালয় নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা এখানে থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসডিজি অর্জন করতে হলে সাসটেইনেবল পিস (শান্তি) দরকার। আর সে জন্য সাসটেইনেবল নিরাপত্তা দরকার।’
যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আমিনুল ইসলাম খান, পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মঈনুল হক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিকেলে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে ই-গেট (ইলেকট্রনিক ফটক) সেবা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগের আয়োজনে বেনাপোল বল্ডফিল্ড মাঠে সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির আন্দোলনের গতি কমে গেছে, গলার জোর বেড়ে গেছে। তারা বলেছিল ১০ তারিখ দেশ দখল করবে, পরের দিন খালেদা জিয়া দেশ চালাবে, তারেক রহমানের ডাকে তাদের নেতাকর্মীরা হান্ডি, পাতিল, লোটা-কম্বল নিয়ে সাত দিন ধরে এক এক সমাবেশের নামে পিকনিক করেছে। তারা লাল কার্ড থেকে নীরব পদযাত্রার আয়োজন করেছে। আর আজকে শুনলাম নিরীহ মানববন্ধন করবে।
তিনি বলেন, বিএনপি লুটপাটের কথা তুলে আমাদেরকে বর্গি বলে। আপনারা কি হাওয়া ভবনের কথা ভুলে গেছেন? আপনারা কি ভুলে গেছেন আমেরিকা ও সিঙ্গাপুরে বিএনপির পাচার করা হাজার হাজার কোটি টাকার কথা? মনে রাখবেন, বর্গির চেয়েও ভয়ংকর বিএনপি নামক লুটেরা দল। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা গিলে খাবে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ এমপির শোকসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রামে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে বিভিন্ন সংঘর্ষের ঘটনার উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, তাদের তরুণ তুর্কিদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। পত্র-পত্রিকায় দুই গ্রুপের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার খবর দেখে আমরা লজ্জা পাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপকর্মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা অপরাধী তাদের শাস্তি দিচ্ছেন। আবরার হত্যায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের শাস্তি হয়েছে। শেখ হাসিনা কাউকে ছাড় দেন না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো রাজনৈতিক শক্তি আমাদের হারাতে পারবে না। তাই নিজেরা নিজেদের শত্রু হবেন না।
প্রয়াত মোছলেম উদ্দিন আহমদের কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মোছলেম উদ্দিন দলের একজন নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। মৃত্যুর তিন দিন আগে ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন আমি দেখতে গিয়েছিলাম। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমি চট্টগ্রামে যাব। আওয়ামী লীগের সদস্য সংগ্রহ অভিযান করব। আমাকে সময় দিতে হবে। এককথায় তিনি আওয়ামী লীগের প্রতি একান্ত অনুগত ছিলেন।’
শোকসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আগামী নির্বাচনে না এলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বিএনপি। তবে বিএনপি নির্বাচনে না এলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আব্দুস সাত্তারের মতো বিএনপির অনেক আব্দুস সাত্তার তৈরি হয়ে আছে নির্বাচনে আসার জন্য। এ বিষয়টিও মাথায় রাখার জন্য বিএনপি নেতাদের অনুরোধ জানাই।
চট্টগ্রাম নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন হলে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ যৌথভাবে এই শোকসভার আয়োজন করে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় শোকসভায় প্রধান আলোচক ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি।
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতেছেন গ্যারেথ বেল। তাই এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে ওয়েলসের সাবেক অধিনায়কের। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে মুখোমুখি হবে ম্যানচেস্টার সিটি ও ইন্তার মিলান। বেলের বাজি সিটির পক্ষে।
ইংলিশ ক্লাব সাউদাম্পটন ও টটেনহামে খেলার সময় ম্যানসিটির বিপক্ষে খেলেছেন বেল। আজ রাতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের ফলাফলের সঙ্গে ম্যাচসেরা কে হবেন সেই মতামতও দিয়েছেন বেল। ইন্সটাগ্রামে বেল বলেন, 'ম্যানসিটি ৫-০ তে হারাবে ইন্তার মিলানকে।’
বেলের মতে, ম্যাচসেরা হবেন সিটি মিডফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইনে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ৩৩ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবল থেকে অবসর নেন বেল। তার আগে কাতার বিশ্বকাপে খেলে বিশ্ব ফুটবল মঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে গেছেন।
মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপ শিরোপা জিতেছে পেপ গার্দিওলার দল। আজ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতলে ট্রেবল হবে তাদের। ২০২১ এ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে চেলসির কাছে হেরেছিল ম্যানসিটি।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুটা প্রত্যাশামতো পায়নি অস্ট্রেলিয়া। তবে মিডল অর্ডাররা দিয়েছেন আস্থার প্রতিদান। তাতে ভারতকে ৪৪৪ রানের লক্ষ্য দেয় অসিরা। এই রান তাড়া করলেই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন শিরোপাজয়ী হবে ভারত। রান টপকালে শুধু জয়ই হবে না, হবে রেকর্ডও। তাই শেষ দিনে বিরাট কোহলি ও অজিঙ্কা রাহানের পানে তাকিয়ে থাকবে ভারত।
টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হতে হলে বিশ্বরেকর্ডটাই করতে হবে ভারতকে। করতে হবে টেস্টের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। আর না হলে ড্রয়ের জন্য মরিয়া হয়ে ওভালে পঞ্চম দিনের পিচে মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে কোহলি-রাহানেদের। এ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই ভারতের সামনে।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে নেমে লন্ডনের ওভালে আজ চতুর্থ দিন শেষে ভারত তুলেছে ৩ উইকেটে ১৬৪ রান। দুই বছরের জন্য টেস্ট শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট পেতে রবিবার পঞ্চম তথা শেষ দিনে ভারতের দরকার ২৮০ রান, অস্ট্রেলিয়ার চাই ৭ উইকেট। শেষ দিনের শুরুটা করবেন অজিঙ্কা রাহানে (২০*), সঙ্গে বিরাট কোহলি (৪৪*)।
টেস্টের শেষ ইনিংসে ব্যাট করা সবসময়ই কঠিন। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করে উইন্ডিজের ওই জয় এখনো সাদা পোশাকে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। সে হিসেবে ওভালে ভারতের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথটা অনেক কঠিন।
রেকর্ড গড়ার লক্ষ্যে ভারতের শুরুটা হয়েছিল ওয়ানডে মেজাজে। প্রথম ৭ ওভারে দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুবমান গিল করেন ৪১ রান। গ্রিনের বিতর্কিত এক ক্যাচে বোল্যান্ডের বলে গিল আউট হলেও খেলার ধরন পাল্টাননি রোহিতরা।
১৯ ওভারে ৯১ রান তোলা ভারত ২০তম ওভারে হারায় রোহিতকে। এই ইনিংস খেলার পথে ওপেনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৩ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন রোহিত।
রোহিতের আউটের পর যখন সবাই ভাবছিলেন, উইকেটে থাকা চেতেশ্বর পূজারা তাঁর চিরাচরিত ধরন মেনে রয়েসয়ে ব্যাটিং করবেন। তবে পূজারা আউট হন নিজের চরিত্রের বাইরে গিয়ে কামিন্সের বলে আপার কাট খেলতে গিয়ে।
এর আগে ৪ উইকেটে ১২৩ রান তুলে গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে অস্ট্রেলিয়া। আজ চতুর্থ দিন সকালটা দুর্দান্ত শুরু করেন ভারতের পেসাররা। কাল ৪১ রানে অপরাজিত থাকা লাবুশেন চতুর্থ দিনে কোনো রান যোগ না করেই আউট হন উমেশ যাদবের দলে। স্লিপে চেতেশ্বর পূজারার হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১২৬ বলে ৪ চারে ৪১ রান করেছেন লাবুশেন। অ্যালেক্স ক্যারি (৬৬*) ও বোলার মিচেল স্টার্কের (৪১) ৯৩ রানের জুটিতে দারুণ পুঁজি গড়ে ফেলে অজিরা। সুবাদে ৮ উইকেটে ২৭০ রান করে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করা সহজ হয় দলটির। হয়তো জয়ের পথটাও তৈরি হলো ওই জুটিতে।
সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার হয়ে খেলেন বলেই লাতিন দেশটিকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যত উৎসাহ–উদ্দীপনা। এর আগেও বাংলাদেশের মানুষ ম্যারাডোনা–প্রীতি থেকে আর্জেন্টিনার প্রতি ভালোবাসা দেখিয়েছেন। কিন্তু এবার কাতার বিশ্বকাপে অতীতের সেই ভালোবাসা বা উদ্দীপনাকে চরমভাবে হার মানিয়েছে। আর এর কারণ ওই একটাই, মেসি।
মেসি যে ইউরোপের ফুটবলের পাট চুকিয়ে মেজর লিগ সকারের দল ইন্টার মায়ামিতে যাচ্ছেন, সেই ঘোষণা আসে গত বুধবার। এখনও নাম লেখাননি, কবে থেকে মায়ামির হয়ে মাঠে নামবেন, সেটাও নিশ্চিত নয়। শুধু মেসি ইন্টার মায়ামিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইন্টার মায়ামির অনুসারীর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে।
গুগলে ফ্লোরিডাভিত্তিক এই ক্লাবটিকে খোঁজা শুরু করে সারা বিশ্বের মেসি–সমর্থকেরা। গুগলে গত ৭ দিনে সবচেয়ে বেশি মায়ামিকে খোঁজা হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই। গুগলে এই খোঁজার দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে মেসির নিজের দেশ আর্জেন্টিনার চেয়েও। কেউ কেউ বলতে পারেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যা আর্জেন্টিনার চেয়ে বেশি ১৪ কোটি। সেই বিবেচনায় এটাই তো হওয়ার কথা।
মূলত গুগল ট্রেন্ডে কোনো ওয়েব সার্চের সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তার মানদণ্ড হচ্ছে ১০০। বাংলাদেশ এখানে পেয়েছে এক শই। শনিবার বিকেল ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত আর্জেন্টিনা পেয়েছে ৮৪।
গুগল ট্রেন্ডের এই তালিকায় বাংলাদেশ আর্জেন্টিনার পরের নামটা নেপালের। তারা পেয়েছে ৮২। চার নম্বরে আছে হাইতি (৮১), আর পাঁচে আইভরি কোস্ট (৭৩)। এই তালিকায় সেরা দশে আছে ইরাক, ইয়েমেন, কঙ্গো, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া। মেসিকে নিজেদের লিগে নিতে চাওয়া সৌদি আরব আছে এই তালিকার ১৪ নম্বরে।
যুক্তরাষ্ট্র আছে ৫১ নম্বরে। এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ নিজেদের দেশের ক্লাব সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের ভালোই জানাশোনা থাকার কথা। তা ইন্টার মায়ামি ক্লাব হিসেবে যতই নতুন হোক না কেন।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ১২ বছরে ৭ বারই চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। পেপ গার্দিওলার অধীনেই ৫ বার। কিন্তু ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছে তারা। দুবছর আগে ফাইনালে উঠলেও পারেনি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে। অবশেষে গেঁরো খুলতে পারল তারা। ইন্তার মিলানকে হারিয়ে ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসরের শিরোপা জিতেছে তারা।
ইস্তানবুলের ফাইনালে ইতালীয় ক্লাবকে ১-০ গোলে হারিয়ে এই আসরের নতুন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। একমাত্র গোলটি করেছেন ৬৮ মিনিটে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রদ্রি।
প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতে এবারের মৌসুমে ট্রেবলও পূরণ করে নিল সিটি। এর আগে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ও এফএ কাপের শিরোপা জিতেছিল তারা। তাদের আগে একমাত্র ইংলিশ ক্লাব হিসেবে ট্রেবল জিতেছিল তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। আর কোচ হিসেবে দুবার ট্রেবল জয়ের নতুন রেকর্ডও গড়লেন গার্দিওলা। এর আগে বার্সেলোনার কোচ হিসেবে প্রথমবার ট্রেবল জিতেছিলেন তিনি।
২০২১-র ফাইনালে রদ্রিকে না খেলানো নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল গার্দিওলার। দুই বছর পর আরেকটি ফাইনালে সিটির জয়ের মূলনায়ক সেই রদ্রি। ডিফেন্সিভ এই মিডফিল্ডার গোল নিয়ে অতো ভাবেন না। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১১ ম্যাচ খেলে একটা গোল ছিল তারা। সেটি ছিল এবারের আসরের কোয়ার্টার ফাইনালে ঘরের মাঠে বায়ার্ন মিউনিখকে ৩-০ গোলে হারানো ম্যাচের প্রথমটি। সেই গোলের পেছনে অবদান ছিল যার সেই বার্নার্দ সিলভা ইস্তানবুলে গোলশূণ্য প্রথমার্ধের পর ৬৮ মিনিটে ইন্তার গোললাইনের কাছ থেকে বল ফিরিয়ে দেন বক্সের মাথায়। অরক্ষতি রদ্রির কথা কেউ ভাবেইনি। ডান পায়ের চতুর শটে দুই ডিফেন্ডারের পা এড়িয়ে ডান দিকে জালে জড়ায় বল (১-০)।
এর পরপরই সমতা ফেরানোর সম্ভাবনা তৈরি করেছিল ইন্তার। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের, দিমারকোর হেড বাধা পায় পোস্টে। ২০২১'র ফাইনালে মতো এবারো চোটে পড়ে মাঠ ছাড়েন সিটির মধ্যমাঠের প্রাণ ডি ব্রুইনে। ৩৬ মিনিটেই মাঠে নামা ফিল ফোডেন ইন্তারের আক্রমণ ভাগে বার বার হানা দিয়েছেন। তবে সিটির আর গোল পায়নি। বরং গোল খেতে পারতো তারা। কিন্তু গোলরক্ষক এডারসনের দক্ষতায় দুবার নিশ্চিত বেচে যায়। রবিন গোসেনের ক্রস থেকে একেবারে ফাঁকায় থেকে হেড নেওয়ার সুযোগ পান লুকাকু। কিন্তু নেন গোলরক্ষক বরাবর। কোনো মতে পা দিয়ে ঠেকিয়ে সে যাত্রা দলকে রক্ষা করেন এডারসন।
ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে এডারসনের আরও একটি দুর্দান্ত সেভ। কর্নার থেকে গোসেনের নেওয়া হেড ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি। এরপর রেফারি শেষ বাঁশি বাজালে উল্লাসে মাতে সিটিজেনরা।
সাধারণত প্রাথমিক স্তরে একটি দেশে এক ধরনের শিক্ষাব্যবস্থাই চালু থাকে। তবে কোনো কোনো দেশে এক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যেও পাঠক্রমে (কারিকুলামে) ভিন্নতা থাকে সেটা সর্বোচ্চ দুই বা তিন ধরনের হয়ে থাকে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা শেষে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ঠিক করে দেয় শিক্ষার্থীরা কী ধরনের শিক্ষাগ্রহণ করবে।
বাংলাদেশে প্রথম শ্রেণি থেকেই হরেক রকমের শিক্ষাব্যবস্থা এবং হরেক পরীক্ষা চালু আছে। এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষা ১২ রকমে দেওয়া যায়। ফলে এক সনদের জন্য ১২ রকমের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আর শিক্ষা-প্রশাসনের পক্ষে শৃঙ্খলা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।
প্রচলিত বা সাধারণ স্কুলগুলোতে যারা পড়ালেখা করে তারা ‘সাধারণ’ এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে থাকে। আর মাদ্রাসায় যারা পড়ে তারা দেয় দাখিল পরীক্ষা। দাখিল ভোকেশনাল নামেও একটি পরীক্ষা দেওয়া যায়। কারিগরিতে যারা পড়ে তারা দেয় এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষা। এসএসসি পরীক্ষা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায়। প্রাইভেট এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাও আছে। মাধ্যমিকে যেসব বিদ্যালয়ে ইংরেজি ভার্সন রয়েছে, সেখানে ইংরেজি ভাষায় এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া যায়।
ইংলিশ মিডিয়ামে (ইংরেজি ভার্সন নয়) যারা পড়ে, তাদের এসএসসি সমমানের পরীক্ষার নাম ‘ও’ লেভেল। সে ব্যবস্থাতেও এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামের স্কুলে পৃথক পড়ালেখা। আর সারা দেশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে কওমি মাদ্রাসা; এ শিক্ষাকেও সরকার স্বীকৃতি দিয়েছে। কওমি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে দাওরায়ে হাদিস পাস করা শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হয়েছে। কওমিতে হাফেজি ও মাওলানা (টাইটেল) ধারায় পড়ালেখার সুযোগ রয়েছে।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক এম তারিক আহসান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় বিভিন্ন ধারা থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে এ ধারাগুলো যদি একটা ফ্রেমওয়ার্ক ও মনিটরিংয়ে না থাকে, তাহলে বিশৃঙ্খলা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় বিভিন্ন ধারাকে একটা ফ্রেমওয়ার্কে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়েছে; অর্থাৎ সবার জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিষয় রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদান ও মূল্যায়ন করা হচ্ছে কি না তা শিক্ষার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে মনিটরিং করতে হবে।’
তারিক আহসান বলেন, ‘কওমিতে অনেক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে, এটা ঠিক। তবে সরকার তাদের কিছু ডিগ্রিকে সাধারণ শিক্ষার সমমান দিচ্ছে। এই শিক্ষাকেও একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মূল ধারায় নিয়ে আসতে হবে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাধারণ এসএসসি ও ইংরেজি ভার্সনের এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আছে ৯টি শিক্ষা বোর্ড। মাদ্রাসায় দুই ধরনের দাখিলের জন্য রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। কারিগরি শিক্ষার জন্য আছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। উন্মুক্ত বিশ^বিদ্যালয়ের মাধ্যমেও দেওয়া যায় এসএসসি পরীক্ষা। শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনেই প্রাইভেট এসএসসি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
ইদানীং ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। বিভাগীয় এবং জেলা শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। এসবের বেশিরভাগের নিবন্ধন নেই। তারা এডেক্সেল ও কেমব্রিজ কারিকুলামে পরীক্ষা দিলেও তাদের কোনো নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ নেই। শিক্ষা বোর্ডগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণ করে না।
অনেক আগে থেকেই আমাদের দেশে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষা চালু রয়েছে। করোনার পর দেশে সাধারণ স্কুলের সংখ্যা কমলেও কওমি মাদ্রাসার সংখ্যা বেড়েছে। শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। তাদের পরীক্ষার জন্য তারা নিজেরাই একাধিক বোর্ড বানিয়েছে। এগুলোতে সরকারের তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসিক বিষয়গুলো সবাই অনুসরণ করে। কারিগরি ও মাদ্রাসায় আলাদা কিছু বিষয় যুক্ত রয়েছে। আমি বলব, বিভিন্ন ধারা বলে কিছু নেই। তবে ব্যতিক্রম ইংলিশ মিডিয়াম। আমাদের দেশের ইংলিশ মিডিয়ামে সাধারণত ব্রিটিশ কারিকুলামে পড়ানো হয়। সেখানেও আমরা বাংলাদেশ স্টাডিজ নামে একটি বিষয় যুক্ত করেছি। ওই কারিকুলামের শিক্ষার্থীরা যেন দেশপ্রেম ভুলে না যায় এবং নিজের ভাষা-সংস্কৃতির প্রতি বিরূপ মনোভাবের না হয়। আরেকটি বড় ব্যতিক্রম কওমি মাদ্রাসা। সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়।’
যারা খুব দরিদ্র তারা সাধারণত কওমি শিক্ষায় যায়। সেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা থাকে। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত তারা সাধারণ স্কুলে লেখাপড়া করে। উচ্চবিত্তরা সাধারণত তাদের সন্তানদের ইংলিংশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ালেখা করান। ইদানীং মধ্যবিত্তরাও ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ও ইংরেজি ভার্সনের স্কুলে ঝুকছে। যারা পড়ালেখায় পিছিয়ে তারা সাধারণত কারিগরি শিক্ষায় যায়। আর যেসব অভিভাবক ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষার মিশ্রণ চান, তারা সাধারণত তাদের সন্তানদের আলিয়া মাদ্রাসায় পাঠান।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, দেশে একাধিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য বাড়ছে। আবার শিক্ষাকাঠামোর নিয়ন্ত্রণ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকছে না। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী তার পছন্দের বাইরের শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ালেখা করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ফলে মাধ্যমিকে ঝরেপড়া কমছে না। আবার উচ্চশিক্ষায় গিয়েও অনেকে তাল মেলাতে পারছে না। অনেকে তার উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা তেমন কাজে লাগাতে পারছে না।
ব্রিটেনে সাধারণত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সবার একই রকমের শিক্ষা। এরপর শিক্ষার্থীদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একদল যায় কারিগরি শিক্ষায়। অন্যদল যায় সাধারণ শিক্ষায়। যদিও দুই ভাগেই কিছু ট্রেড কোর্স থাকে। কে কোন ধরনের শিক্ষায় যাবে তাতে অভিভাবকদের কিছু বলার নেই। শিক্ষকরাই বিবেচনা করে শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষাব্যবস্থা নির্ধারণ করেন।
কোনো দেশের উন্নয়নের মূল হচ্ছে কারিগরি শিক্ষার প্রসার। এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে। কারিগরিতে এখনো মেধাবী শিক্ষার্থীরা যাচ্ছে না। সরকার ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থীকে কারিগরিতে নিতে পেরেছে বললেও তাতে নানা ফাঁকি রয়েছে। কওমি মাদ্রাসা ও ইংলিশ মিডিয়ামে শিক্ষার্থী বাড়লেও কারিগরিতে সেভাবে শিক্ষার্থী বাড়ছে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশে^র বেশিরভাগ দেশেই শিক্ষাব্যবস্থা চলে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায়। অর্থাৎ উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীর পড়ালেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলেই সময় কাটায়। আমাদের দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পড়ালেখা করা যায়। তবে টিউশন ফি ও বই ছাড়াও শিক্ষার্থীদের নানা খরচ থাকে, যা পরিবারকে বহন করতে হয়। মাধ্যমিক থেকে পুরোপুরিই পড়তে হয় অভিভাবকদের খরচে। ফলে অভিভাবকদের পছন্দে ও বাণিজ্যিক কারণে নানা ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এর থেকে সরকার কোনোভাবেই বের হতে পারছে না। বের হওয়ার পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে দেশি-বিদেশি শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার কথা বলা হয়েছিল; অর্থাৎ সবাইকে কিছু কোর সাবজেক্ট পড়তে হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। সবাই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে আচ্ছন্ন। মতভেদও রয়েছে। আমাদের বুঝতে হবে, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা যায়, কারণ সেখানে পড়তে পয়সা লাগে না। আমাদের হাজার হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। আমরা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারীকরণ করেছি। কিন্তু রাষ্ট্র শিক্ষার্থীদের পুরো দায়িত্ব নিচ্ছে না। যত দিন রাষ্ট্র দায়িত্ব নেবে না, তত দিন সব ধরনের শিক্ষাকে এক প্ল্যাটফরমে আনা কঠিন।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর (৪১) ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মৃত্যুর আগে তিনি চিরকুট লিখে গেছেন। তবে সেখানে কি লেখা আছে তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মহাখালীর আমতলী এলাকার বাসা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়ায় মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ। বিষয়টি দেশ রূপান্তরকে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের ধারণা, অর্পিতা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ বাসা থেকে লাশটি উদ্ধার করে। পরে স্বজনের অনুরোধে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়।
জানা গেছে, লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতেন অর্পিতা। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা ফাতেমা কবিরের মৃত্যুর কারণে তিনি দেশে আসেন। এরপর দেশেই ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্থ ছিলেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার লণ্ডনে ফেরার কথা ছিল। মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া একটি চিরকুটে (সুইসাইড নোট) তিনি আত্মহত্যার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
মেয়ের মৃত্যুতে শোকে বিবহবল লেখক–কলামিস্ট শাহরিয়ার কবির গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। তবে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল বলেন, রাজধানীর মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অর্পিতাকে তাঁর মায়ের কবরে দাফন করা হয়েছে। রবিবার তাঁর কুলখানি অনুষ্ঠিত হবে।
বাসায় তেলাপোকা মারার ওষুধ দেওয়ার পর বিষক্রিয়ায় মারা গেছে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের দুই ছেলে। তার মেয়ে এখনো অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত শনিবার ‘ডিসিএস অরগানাইজেন লিমিটেড’ নামের একটি পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী। প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা বাসায় ওষুধ দিয়ে ছয় ঘণ্টা পরে ঢুকে ঘর পরিষ্কার করতে বলেছিলেন। পরিবারটি ৯ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢুকে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। এ সময় তাদের সবারই পেট খারাপ, বমির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
ওই পরিবারের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, সেই পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি পোকামাকড় নিধনের জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করেছিল, যেটা থেকে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। সেই গ্যাসের বিষক্রিয়াতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের ৫ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এদিকে রাজধানীতে গত পাঁচ বছরে এই বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চমাত্রার এই কীটনাশক বাসায় ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অথচ বিভিন্নভাবে সাধারণ কীটনাশক হিসেবে দেদার বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে।
সূত্র বলছে, রাজধানীসহ সারা দেশে কয়েক শতাধিক পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির প্রায় ৯৫ ভাগের কোনো অনুমোদন নেই। কৃষি ও পরিবেশ অধিদপ্তরের এসব দেখভাল করার কথা থাকলেও তারাও খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না।
পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সেবা নিন প্ল্যাটফর্ম লি.-এর চেয়ারম্যান শামসুল আলম বলেন, দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। অধিক মুনাফার আশায় তারা এক ধরনের নিষিদ্ধ ট্যাবলেট ব্যবহার করে। আবার অনেকে লিকুইড কেমিক্যাল ব্যবহার করে। কিন্তু কোন মাত্রায় এসব ব্যবহার করতে হয় তার প্রশিক্ষণ নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়া উচিত।
রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায় অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে। ফুটপাত থেকে শুরু করে দেয়াল লিখন ও অনলাইনের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে চটকদার বিজ্ঞাপন। অথচ চাষাবাদ ছাড়া অন্য কাজে যার ব্যবহার নিষিদ্ধ। বদ্ধ ঘরে এই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করলে যে কারও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মাইকিং করে এসব কীটনাশক বিক্রি করছিলেন কাঞ্চন মিয়া। এ ধরনের কীটনাশক বিক্রির অনুমতি তার আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুমতি লাগে না। দশ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। কেউ তো কিছু বলে না। কোথা থেকে এসব পণ্য সংগ্রহ করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশিরভাগ পুরান ঢাকা থেকে সংগ্রহ করি। গাজীপুর সাভার থেকেও এসে দিয়ে যায়। এসব ব্যবহারে মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে তা জানেন না বলে জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কীটনাশক জাতীয় একপ্রকার ওষুধের জেনেটিক বা গ্রুপ নাম হলো অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড। বাজারে অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট আকারে ফসটক্সিন, সেলফস, কুইকফস, কুইকফিউম, ডেসিয়াগ্যাস এক্সটি ইত্যাদি নামে পাওয়া যায়। অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট গ্যাস ট্যাবলেট নামেও পরিচিত। বাতাসের সংস্পর্শে এসে জীবনবিনাশী ভয়াবহ টক্সিক গ্যাস ফসফিন উৎপাদন করে। এই ট্যাবলেট সাধারণত গুদামজাত শস্যের পোকা দমন, ধান ক্ষেতের পোকা দমন, কলাগাছের পোকা দমন ও ইঁদুর দমনে ব্যবহার হয়ে থাকে। গত এক দশকে দেশে এই বিষাক্ত কীটনাশক মানুষের বাসাবাড়িতে ব্যবহার বাড়ছে। দেশের বাজারে ট্যাবলেট আকারে সহজলভ্য। রাজধানীতে ছারপোকা দমনে প্রায় যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে এই ট্যাবলেট।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে বালাইনাশক গ্রহণ করলে সেটা দ্রুত ফুসফুসে শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ বালাইনাশক শ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয় তাহলে নাক, গলা ও ফুসফুস মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারের যে দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব বিষয়ে তাদের পক্ষ থেকে কোন কোন কীটনাশক কোন মাত্রায় কোন কোন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে সেটি নির্দিষ্ট করে নিশ্চিত করতে হবে। আমদানির সময়ও বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। অথবা দেশেই যদি তৈরি করতে হয় তাহলে যথাযথ কর্র্তৃপক্ষের লাইসেন্স নিয়ে উৎপাদন করতে হবে। এটির গুণগত মান থাকছে কি না তারও পরীক্ষা করতে হবে।
পরিবেশ গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি ওই বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল প্রতিষ্ঠানটি অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ব্যবহার করেছে। যদিও আমরা এ বিষয়ে নিশ্চিত না। আমার মতে এটা আরও বেশি তদন্ত করা উচিত। সরকারের যে প্রতিষ্ঠান এসব বিক্রির অনুমোদন দেয় তাদের এই তদন্ত করে জানানো দরকার কী ধরনের কেমিক্যাল সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল। কারণ পেস্ট কন্ট্রোলের নামে কী ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় এটা জানাটা জরুরি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোন ধরনের কীটনাশক কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার কোনো নীতিমালা নেই। কীটনাশকগুলো সাধারণ কৃষিজমিতে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা শহরে এরকম বিষ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা উচিত। তাছাড়া রাস্তাঘাটে এসব জিনিস অহরহ বিক্রি হচ্ছে। এসবও তদন্তের আওতায় আনতে হবে।
আরও এক কর্মী গ্রেপ্তার : দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় টিটু মোল্লা নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি বালাইনাশক কোম্পানিটির কর্মকর্তা। গত সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি আবুল বাসার মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় করা মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবিরের মেয়ে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) রাতে বনানীর বাসা থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
শুক্রবার সকালে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বনানীর একটি বাসা থেকে অর্পিতা শাহরিয়ার কবির মুমুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যা ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল। পরে রাতেই পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে স্ত্রী হারান শাহরিয়ার কবির।
নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বৈঠক করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। এরপর দুপুরে বৈঠক করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে। এই বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ তিন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এখানে মূলত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দেশের রাজনীতিতে যে উত্তাপ দেখা দিয়েছে তা নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, তাদের এ বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মূলত শ্রম আইন নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শ্রম আইন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরামর্শ ছিল। বৈঠকে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এ মাসেই জেনেভা যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরে বেলা ১টা ১০ মিনিটে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন বিএনপি মহাসচিব। এরপর বেলা আড়াইটার দিকে তিনি দূতাবাস থেকে বের হন। রাতে মির্জা ফখরুল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসানীতি ঘোষণা করেছে তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এই নীতি দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে আমরা মনে করি বলে রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রদূতকে আমি জানিয়েছি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ছাড়া আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। দেশের জনগণও তাই মনে করে। এ ছাড়া নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার নিয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমাদের কোনো আলাপ হয়নি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সম্প্রতি আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছিলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন।” তার এমন বক্তব্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠলে পরে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয় আইন মন্ত্রণালয়। এরপর গতকাল মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কীভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশের সংবিধানে কী আছে তা-ও জানতে চেয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।’
আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব প্রকাশ্যে চলে এসেছে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আরও বেশি দৌড়ঝাঁপ শুরু করছেন। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্ষমতাসীনদের দূরত্ব এখন স্পষ্ট। আলোচনা আছে, সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পশ্চিমা এ দেশটি হঠাৎ আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের মতপার্থক্য ছিল না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করছে দেশটি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ নিয়ে কোনো দ্বিমত করেনি। এরই মধ্যে, ভিসানীতি ঘোষণা করে সরকারকে বড় চাপ দেওয়ার পূর্বাভাস দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপি একে অন্যকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তবে ভিসানীতি যে সরকারের ও আওয়ামী লীগের ওপরই বেশি চাপ তৈরি করেছে, সেটা ভেতরে-বাইরে আলোচনা আছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায় ও কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছে, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র তাদের অবস্থান পাল্টে নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে সংবিধানের বাইরে যেতে হবে সরকারকে এমন প্রস্তাব দিতে চলেছে। ওই সূত্রগুলো দাবি করেছে, গত মাসের শেষের দিকে অথবা চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বাসভবনে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পিটার হাস ওই বৈঠকে রাজনৈতিক সমঝোতায় না আসলে সব দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সরকারের আদলে একটা কিছু করার বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছেন। তা না হলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে সংবিধানসম্মত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব করেন। এ প্রস্তাব সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও দেওয়া হয়েছে। আনিসুল হকের সঙ্গে শ্রম আইন নিয়েও দীর্ঘ আলাপ করেন এ রাষ্ট্রদূত।
আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের ওই প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গেলে তাতে বড় আপত্তি তোলা হয়। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না এটা ধরেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর বার্তা দেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। তারা স্বীকার করেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ক্রমেই আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। তবে নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের অসহযোগিতা করবে ধরে নিয়েই সরকারি দল আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিটার হাস সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও নির্ধারিত-অনির্ধারিত বৈঠক করা শুরু করেছেন। গত সোমবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে পিটার হাসকে উদ্দেশ্য করে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, রাষ্ট্রদূতরা সীমা লঙ্ঘন করলে আইনি ব্যবস্থা নেবে সরকার।
আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় হয়ে ওঠার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘নাহি ছাড়ি’ অবস্থান আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।
সরকারের দুই মন্ত্রীও দেশ রূপান্তরের কাছে স্বীকার করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের বিপক্ষে যেতে শুরু করেছে। ‘অন্যায় হস্তক্ষেপ’ বেড়েছে পিটার হাসের।
আওয়ামী লীগের কূটনীতিসম্পৃক্ত এক নেতা বলেন, সরকার বিকল্প হিসেবে শক্তিশালী দেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ করে চলেছে। বিকল্প দেশের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠলে নির্বাচন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে মাইনাস করে চলার এক ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হবে। এ কৌশলে নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্রর সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করা হবে নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর আরেক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ভিসানীতি মূলত সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। অনেকেই ভিসানীতিকে সব গেল বলে ধরে নিয়ে অবস্থান টলমলে করে তুলতে চায়। এরকম অবস্থা আওয়ামী লীগকে একটু চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা যেন সাহস হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করার কৌশল গ্রহণ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ কি তাদের অবস্থান থেকে সরতে শুরু করবে? আবার প্রশ্নও আছে যে, নির্বাচন কি হবে? জাতীয় সরকার আসবে খুব শিগগিরই, এমন গুঞ্জনও রয়েছে জোরালোভাবে। শুধু তাই নয়, বাতিল হওয়া নির্বাচন পদ্ধতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। যদিও এসবে কোনো ভিত্তি রয়েছে মনে করেন না আওয়ামী লীগ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি করেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। এ ইস্যুতে কোনো শক্তির সঙ্গেই আপস করবেন না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দলটির সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, কোনো দেশের চাওয়ায় বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন হবে না। দেশের মানুষের চাওয়া অনুযায়ী সংবিধানসম্মতভাবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তিনি বলেন, সবার মতো করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে বদ্ধপরিকর।
কূটনীতিসম্পৃক্ত আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের আরেক নেতা বলেন, দৃশ্যত যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সরকারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে মনে করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে পশ্চিমা এ দেশটি তার চূড়ান্ত অবস্থান পরিষ্কার করবে না বলে তারা মনে করছেন। ওই নেতা বলেন, সেপ্টেম্বরে ভারত সফর রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মূলত সেই সফরেই বোঝা যাবে সরকার কোনদিকে যাবে। এ নেতা আরও বলেন, ‘আমাদের ডিপ্লোম্যাসি (পররাষ্ট্রনীতি) পরস্পরের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের নীতি। কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী দেশি-বিদেশি অনেক নেতাকে ছাড়িয়ে গেছেন। সেই আস্থা-বিশ্বাসও প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের রয়েছে।’
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিষ্কার হয়ে না ওঠায় সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করতেন, দেশটিকে তারা বোঝাতে পেরেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালোচনা প্রমাণ করে না যে, ক্ষমতাধর দেশটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের বোঝাপড়া ঠিক আছে। যুক্তরাষ্ট্র ভিসানীতি ঘোষণার পরই দেশটির অবস্থান আওয়ামী লীগের পক্ষে আছে এমন কথা কেউ আর বিশ্বাস করছে না।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমেরিকাকে মাইনাস ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের দুই নেতা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আগের চেয়ে বেশি স্পষ্ট হয়ে ওঠায় রাজনীতিতে তারা ‘ব্যাকফুটে’ চলে যাচ্ছেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমি একটাই বুঝি, একটাই জানি, আগামী নির্বাচন সংবিধানসম্মতভাবেই হবে। এ জায়গা থেকে একটুও নড়বে না সরকার।’