
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অমীমাংসিত ইস্যুটি সামনে এলেই সবার আগে আসে তিস্তার পানিবণ্টন প্রসঙ্গ। এক দশক আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ঢাকা সফরে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে দুই দেশ একমত হয় এবং কীভাবে পানিবণ্টন হবে সেটিও চূড়ান্ত হয়েছে। এখন এ চুক্তিটি সইয়ের অপেক্ষা। গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে ঢাকার আশা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তির ক্ষণ গুনছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের আওতায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ বিভাগ আরও দুটি খাল খননের জন্য প্রায় এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করেছে বলে দেশটির গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
পানি বিশেষজ্ঞ ও কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এমনিতেই শুষ্ক মৌসুমে দেশের উত্তরাঞ্চলে পানির প্রবাহ থাকে না। আবার চুক্তি না থাকায় পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া যায় না। আর এখন পশ্চিমবঙ্গ যদি দুটি খাল খনন করে তাহলে রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর কৃষি মারাত্মক হুমকি মুখে পড়বে। দ্রুত এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দিল্লির সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। ভারতীয় গণমাধ্যমে খাল খননে জমি অধিগ্রহণের খবর প্রকাশিত হওয়া পর থেকেই রংপুর ও উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের মধ্যে উদ্বেগ ও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা নদীসংলগ্ন গান্নারপাড়া এলাকার চাষি আতাউর রহমান রহমান আতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এমনিতেই এখন তিস্তা হেঁটে পার হওয়া যায়। আবার আগামীতে তিস্তার পূর্ব তীরে দুটি খাল খনন করে পানি আটকে দিলে হামরা মরি যামো। কোনো আবাদ-সুবাদ হবার নয়। হামরা কী করি খামু। সরকার তো হামাকগুলাক দেখে না।’
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সেচ সম্প্রসারণের নীতি তাদের জন্য যতটা ভালো বাংলাদেশের জন্য ততটাই উদ্বেগের বলে মনে করেন জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত। তিনি গতকাল রবিবার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের কৃষি ও সেচের জন্য এটা অবশ্যই আতঙ্কের। এমনিতেই তারা শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রত্যাহার করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে তিস্তার অববাহিকায় বাংলাদেশ ও ভারতের যে দুটি ব্যারেজ প্রকল্প রয়েছে, সেখানে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পানির চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। সেই সময় নদীতে কিছুটা পানি থাকে। আর বাংলাদেশ তখন কিছুটা পানি পায়। এখনই ভারত তাদের পুরো সেচ প্রকল্পের জন্য পানি প্রত্যাহারের পর তলানিটুকু আমরা পাই। আর খাল খনন করলে ভারত যদি তলানির পুরো পানি প্রত্যাহার করে তাহলে বাংলাদেশ কিছুই পাবে না। আর এতে করে আমনের মৌসুমে বাংলাদেশ ক্ষতির মুখে পড়বে। রংপুর, বগুড়া, জয়পুরহাটসহ তিস্তা প্রকল্পের এলাকা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। একইভাবে মহানন্দা অববাহিকাও ক্ষতির মুখে পড়বে। এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যাহত হবে।’
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব তুলে ধরে ড. আইনুন নিশাত বলেন, ‘এ খাল খননের সঙ্গে যুক্ত হবে জলবায়ু পরিবর্তন। এ দুই কারণে বাংলাদেশের পানির প্রাপ্যতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। দেখা যাবে শুকনো মৌসুমে পানি আরও কমে যাবে। ভারত হলো উজানের দেশ। তারা যদি সেই জোরে পানি প্রত্যাহার করা শুরু করে তা হবে অত্যন্ত লজ্জাজনক।’
তিনি মনে করেন, এটা উজানের দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক আইনের নিয়মের পরিপন্থী। ভারতীয় আইনও তা সমর্থন করে না। তাই সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো উদ্যোগ নেওয়া দরকার। কারণ পশ্চিমবঙ্গ তাদের স্বার্থ দেখছে। বাংলাদেশের স্বার্থ তো তারা দেখবে না।
এ প্রসঙ্গে ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের’ সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ভারত সরকার পূর্বের দ্বন্দ্ব মীমাংসা না করে নতুন করে আগুনে ঘি ঢালার মতো বাংলাদেশের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি করল। পশ্চিমবঙ্গ তিস্তা ও জলঢাকা নদী থেকে পানি সরাতে কোচবিহার থেকে চ্যাংড়াবান্ধা পর্যন্ত দুটি খাল খননের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। এতে করে আগামীতে তিস্তা সেচ প্রকল্প আর চলবে না, ধরলাও মরে যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভারতের একতরফা সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ১১ মার্চ রংপুর সিটি করপোরেশনের হলরুমে সভা ডাকা হয়েছে। সেখান আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং নদী রক্ষাবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক অধ্যাপক ড. আবু ছালেহ মোহাম্মদ ওয়াদুদুর রহমান (তুহিন ওয়াদুদ) দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী উজানে নদীবিষয়ক কিছু কাজ করতে হলে ভাটির দেশের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে করতে হয়। কিন্তু ভারত আন্তর্জাতিক আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে উপরন্তু একতরফা পানি প্রত্যাহার করে। এতে বাংলাদেশ এলাকা ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। নতুন করে আবার পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাদের তিস্তার আওতা বৃদ্ধি করছে। এতে করে পানি না পাওয়ার কারণে যে ক্ষতি হবে, সেই ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশের জন্য এখনই কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১১) আগুনে পুড়েছে দুই হাজারের বেশি ঝুপড়ি ঘর। গতকাল বিকেল ৩টার দিকে লাগা এই আগুন ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আসে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে। আগুনে তাৎক্ষণিক হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে গৃহহীন হয়ে কমপক্ষে ১২ হাজার রোহিঙ্গা খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিয়েছে। আগুনে রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর ছাড়াও অন্তত ২০টি বেসরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠদানের লার্নিং সেন্টার ও ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্র পুড়ে গেছে।
এদিকে এই অগ্নিকাণ্ডকে নাশকতামূলক বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১৪-১৫ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা কিশোরকে দেশলাইসহ আটক করা হয়েছে। তাকে ঘরে আগুন দিতে দেখেছেন অনেকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাবে, এটি পরিকল্পিত বা নাশকতামূলক অগ্নিকাণ্ড কি না। আটক ওই কিশোরের নামপরিচয় তাৎক্ষণিক জানায়নি স্থানীয় প্রশাসন।
জানা গেছে, বিকেল ৩টার দিকে বালুখালীর ১১ নম্বর ক্যাম্পের বি-ব্লকের একটি ঘর থেকে আগুনের সূত্রপাত। মুহূর্তেই তা ৯, ১০, ১২ নম্বর ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে একে একে ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের সদস্যরা আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে র্যাব, পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলামও ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের কক্সবাজার স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক অতীশ চাকমা। উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুই হাজারের মতো ঘর পুড়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত কোনো হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি।’
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজীবও একই ধরনের তথ্য দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার পর কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে দিগবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জি-ব্লকের বাসিন্দা নুরজাহান বলেন, ‘আগুনে পুড়ে সব ছাই হয়ে গেছে। কোনো রকমে প্রাণে বেঁচেছি।’
ওই ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা গোলমেহের বলেন, ‘কীভাবে আগুন লেগেছে বলতে পারছি না। দুপুরে ক্যাম্পে গোলাগুলির শব্দ শুনেছি। এখানে শান্তি নেই। প্রতিদিন গোলাগুলি হয়। আজ আবার আগুনে সব পুড়ে গেল।’
ক্যাম্পটির আরেক বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আগুনে পুড়ে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। এসব ক্যাম্পে বারবার আগুন লাগার পেছনে রহস্য রয়েছে। সে রহস্য জানা কঠিন। আর ক্যাম্পে আগুন লাগাও থামে না।’
ঘটনাস্থলে থাকা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আগুনে ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ায় ১২ হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। তাদের আমরা বিভিন্ন সেন্টার ও মসজিদে নিয়ে যাচ্ছি। এনজিওগুলোর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের মধ্যে শুকনো খাবার বিতরণ করা হবে। আর আগুন লাগার কারণ বের করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ এবিপিএনের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘বিকেল ৩টার দিকে হঠাৎ করে আগুন দেখা যায়। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ক্যাম্পের ঘরগুলো পাশাপাশি হওয়ায় আগুন ১২, ১১, ১০ ও ৯ নম্বর ক্যাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে তা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও সন্দেহজনক একজনকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত বলা যাবে।’ এর আগে ২০২১ সালের ২২ মার্চ একই ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই সময় ১১ জন প্রাণ হারান, আহত হন পাঁচ শতাধিক। পুড়ে যায় ৯ হাজারের বেশি ঘর।
একদিকে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বাড়ছে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা, অন্যদিকে সাগর নিংড়ে সম্পদ আহরণ করায় হুমকিতে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য। বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে সাগর-মহাসাগর বাঁচাতে দীর্ঘদিন বৈশ্বিক ঐকমত্যেও পৌঁছানো যাচ্ছিল না। ১০ বছরের বেশি আলোচনা-দরকষাকষির পর অবশেষে সমুদ্র রক্ষায় এক ঐতিহাসিক চুক্তিতে পৌঁছাল বিশ্ব। এ চুক্তির নাম হাই সিস ট্রিটি। এ চুক্তিতে সমুদ্রের পরিবেশ রক্ষা ও পুনরুদ্ধারে সাগর-মহাসাগরের ৩০ শতাংশকে ২০৩০ সালের মধ্যে সংরক্ষিত এলাকায় পরিণত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দেশগুলো।
টানা ৩৮ ঘণ্টা আলোচনার পর গত শনিবার সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে চুক্তিটির ব্যাপারে সবাই সম্মতি জানিয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। জাতিসংঘের মহাসাগরবিষয়ক দূত রেনা লি সদর দপ্তরে বিশ্ব প্রতিনিধিদের সামনে দীর্ঘ করতালির মধ্যে উচ্চৈঃস্বরে ঘোষণা করেন ‘আমাদের প্রচেষ্টা অবশেষে লক্ষ্যে পৌঁছেছে’।
নতুন এ চুক্তিতে সমুদ্রের যেসব এলাকা সংরক্ষিত হিসেবে বিবেচিত হবে সেখানে মাছ ধরা, নৌযান চলাচলের রুট এবং খনন কাজের সীমা, ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০০ মিটার বা তার নিচের সমুদ্র তলদেশ থেকে কখন খনিজ পদার্থ নেওয়া যাবে, তা ঠিক করে দেওয়া হবে। সমুদ্রে খননকাজ সেখানকার প্রাণীদের প্রজননে ব্যাঘাত, শব্দদূষণ সৃষ্টি এবং সামুদ্রিক জীবনকে বিষিয়ে তুলতে পারে জানিয়ে পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলো দীর্ঘদিন ধরেই সমুদ্রে খনন প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল।
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত মাছ ধরা ও জাহাজ চলাচলের কারণে সংরক্ষিত এলাকার বাইরে থাকা সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণিকূল ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে আছে। এর মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার মুখে রয়েছে বলে বৈশ্বিক সামুদ্রিক প্রজাতি নিয়ে হওয়া সর্বশেষ পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে।
সমুদ্র রক্ষায় সর্বশেষ যে আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছিল, সেই ইউএন কনভেনশন অন দ্য ল অব দ্য সি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ৪০ বছর আগে, ১৯৮২ সালে। ওই চুক্তি হাই-সি ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করলেও, এর মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ সুরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। হাই-সি হচ্ছে আন্তর্জাতিক জলসীমা, যেখানে সব দেশের জাহাজ চালানো ও গবেষণার অধিকার রয়েছে।
রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হওয়া ভবনে উদ্ধারকাজ চলার মধ্যে কাছেই ফের সংঘর্ষে জড়িয়েছে ঢাকা কলেজ ও ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা। গতকাল রবিবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেমে থেমে এ সংঘর্ষ চলে। এতে ঢাকা কলেজের তিন ছাত্র আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তারা হলেন মো. তাহসিন (১৮), মো. বাইজিদ (১৮) ও মাহতাব (২২)।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার আইডিয়াল কলেজের দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের জেরে ওই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। এ ছাড়াও ঢাকা কলেজের একটি বাসে ঢিল ছোড়া নিয়েও দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। এর জেরেই গতকালের সংঘর্ষ হয়।
জানা গেছে, গতকাল প্রথম দফায় সংঘর্ষের পর বেলা ৩টার দিকে ঢাকা কলেজের ৫০-৬০ শিক্ষার্থী লাঠিসোঁটা নিয়ে আইডিয়াল কলেজের দিকে যান। পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। এ সময় সড়কের পূর্বপাশে পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় মিরপুর রোডসহ আশপাশের সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
এদিকে সংঘর্ষের পর ঢাকা কলেজ তিন দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণবশত সোমবার (আজ) কলেজের সব ক্লাস স্থগিত থাকবে। এ ছাড়া ‘শুভ দোলযাত্রা’ উপলক্ষে ৭ মার্চ এবং পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে ৮ মার্চ কলেজের সব ক্লাস বন্ধ থাকবে।
ঢাকাসহ সারা দেশে তীব্র দাবদাহ চলছে। দফায় দফায় বিদ্যুৎ থাকছে না বাসা-বাড়ি, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র। এ নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলা করার চেষ্টায় আছে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তথ্য এসেছে। আর ওই তথ্য পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর নড়েচড়ে বসেছে। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ শীর্ষ কর্তারা বৈঠক করেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সোমবার পুলিশের সব রেঞ্জ অফিস ও ইউনিট প্রধানদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বিশেষ বার্তা পেয়ে ইউনিট প্রধান, রেঞ্জ ডিআইজি ও ৬৪ জেলার পুলিশ সুপাররা আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কঠোর নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে কাজও শুরু করে দিয়েছে পুলিশ।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুতের সমস্যা দ্রুত সমাধান করতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা করছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে যেকোনো পরিস্থিতি এড়াতে আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলো নিরাপত্তার আওতায় আনা হচ্ছে। এই জন্য আমরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, সোমবার পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পুলিশের সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিদ্যুৎ স্টেশনে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি নজরদারি বাড়াতে চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটি মহল লোডশেডিংয়ের অজুহাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। যেসব এলাকায় বেশি বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।
কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার দেশ রূপান্তরকে জানিয়েছেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠি পাওয়ার পর আমরা বিশেষ বৈঠক করছি। এলাকায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করছে তা সত্য। এ জন্য আমরা বেশ সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ অফিস ও স্টেশনগুলোর বিষয়ে থানার ওসিদের দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, লোডশেডিংয়ের অজুহাত তুলে বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে একটি বিশেষ মহল। প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বাড়তি পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে থানার ওসিদের নানা দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন জেলার পুলিশ সুপাররা। এমনকি বাড়তি ফোর্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তা ছাড়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোও নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে।
বিদ্যুৎ অফিসের পাশাপাশি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার বলয় গড়ে তুলতে ৫০ থানার ওসিদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
খন্দকার গোলাম ফারুক দেশ রূপান্তরকে জানান, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে যাতে কেউ অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। বিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো বাড়তি নিরাপত্তার আওতায় আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে সবাইকে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বিদ্যুৎসহ যেকোনো সমস্যা নিয়ে কোন মহল যাতে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আশা করি বড় ধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না। তারপরও পুলিশ সতর্ক আছে।
সূত্র জানায়, লোডশেডিংকে পুঁজি করে কেউ যাতে অপ্রীতিকর কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ নিতে না পারে, সে বিষয়ে নজর রাখতে বলা হয়েছে। নির্দেশনার পর সারা দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র, বিদ্যুৎ অফিস, সাবস্টেশনসহ কেপিআই স্থাপনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আগের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে। গোয়েন্দা কার্যক্রম ও পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সমিতি বা কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকেও পুলিশকে চিঠি দিয়ে বাড়তি নিরাপত্তাও চাওয়া হয়েছে।
সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে প্রেম এরপর বিয়ে। দেড় বছরের দাম্পত্য জীবনে আট মাস ধরে চিত্রনায়িকা পরীমণি ও শরিফুল রাজের বনিবনা হচ্ছে না বলেই শোনা যাচ্ছে। চলছে টানাপোড়েন এবং সেই সংসার এখন ভাঙনের পথে। রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর রাজের সঙ্গে পরীমণির মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। সব ছাপিয়ে যা এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
রবিবার একটি গণমাধ্যমের ‘লাইভ’ অনুষ্ঠানে এসে শরিফুল রাজ জানান, আপাতত তারা সেপারেশনে আছেন এবং তাদের আর একসাথে হওয়ার কোন সুযোগ নেই। পরীকে তিনি শ্রদ্ধা করেন জানিয়ে সবশেষে পরীমণির উদ্দেশ্যে রাজ বলেন, ‘বেবি, আই লাভ ইউ। যা-ই হোক না কেন, আনন্দে থেকো। আমরা আমাদের সন্তানকে ভালো রাখব।’
রাজের এমন মন্তব্যের উত্তর দিতে সোমবার রাতে গণমাধ্যমটির লাইভে এসে রাজের উদ্দেশ্যে পরীমণি বলেন, ‘গরু মেরে জুতা দান করার কোনো দরকার নেই। কেউ রেসপেক্ট করলে সেটা তার কার্যকলাপ দেখেই বোঝা যায়, মুখ ফুটে বলতে হয় না। আমাকে পাবলিকলি অপমান করে এরপর রেসপেক্ট দেখানোর কোনো দরকার নেই। আর আমার বাচ্চাকে নিয়ে এসব ইমোশনালি কোনো কথা শুনতে চাই না। এসব ইমোশনালি কথা মানুষকে গিলিয়ে লাভ নেই। মানুষ বুঝে।’
ফাঁস হওয়া ভিডিওগুলো পরী বলেন, ‘এত বছর ধরে তারা বন্ধু অথচ আমি জানতাম না। এসব সামনে আসার পর জানতে পারলাম। আর রাজ যতটা তার বন্ধুদের ইমেজ নিয়ে কনসার্ন তার পরিবার নিয়ে এতটাও কনসার্ন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এমনিতে অনেক শান্তশিষ্ট। অনেকটা সাপের মতো, লেজে পাড়া না দিলে চুপচাপ থাকি কিন্তু আমার লেজে পাড়া দিলেই আমি ফুঁস করে উঠি আর তখন কামড় দিবই।’
সবশেষে পরী বলেন, ‘আমি চাই এসবের শেষ হোক। আমি আজকে এখানে এসে এসব বলতাম না। তুমিই (রাজ) আমাকে বাধ্য করেছ। এরকম অসুস্থ মানুষের সঙ্গে আমি আর থাকতে চাই না। আমি চাই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ আমাকে ডিভোর্স দিক।’
বছরে ৪০ কোটি ডলার পারিশ্রমিকের প্রস্তাব নিয়ে লিওনেল মেসির সংগে যোগাযোগ করছে আলো হিলাল। তারা মংগলবার চুক্তির ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে বলে জানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মেসি তাদেরকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রস্তাবটা পিছিয়ে দিতে বলেছেন বলে খবর দিয়েছে ফুটবল বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল গোল ডটকম।
তবে সৌদি ক্লাব এ-ই প্রস্তাব এখনই গ্রহন না করলে আগামী বছর তা একই রকম থাকবে না বলে জানিয়েছে।
মেসি আসলে তার শৈশবের ক্লাবে আরো অন্তত এক বছর খেলতে চান। তাতে তার পারিশ্রমিক সৌদি ক্লাবের প্রস্তাবের ধারে কাছে না হলেও ক্ষতি নেই। জানা গেছে, বার্সা তাকে এক বছরে ১৩ মিলিয়েন ডলার পারিশ্রমিক প্রস্তাব করতে যাচ্ছে।
লা লিগা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ায় মেসিকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেবে বার্সা। ধারনা করা হচ্ছে বুধ-বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ ব্যাপারে একটা স্পষ্ট চিত্র পাওয়া যাবে।
অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। গতকাল সোমবার দুপুরে কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। কয়লা সংকটে গত ২৫ মে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট বন্ধ হয়। ২০২০ সালে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার পর এবারই প্রথম কয়লা সংকটে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন বন্ধ হলো।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগের এই বিদ্যুৎ প্রতিষ্ঠানটিকে কয়লা ক্রয়ে ঋণ দিয়ে আসছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল পর্যন্ত কয়লার ৩৯০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় সিএমসি। পরে ১০০ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হলে কয়লা আমদানির এলসি খোলার শর্ত দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। গতকাল পর্যন্ত ৯৮ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এ মাসের শেষদিকে কয়লা দেশে আসার কথা রয়েছে।
কয়লার অভাবে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এক মাসে লোকসান হবে অন্তত ৩০০ কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি লোডশেডিংয়ের কারণে জনদুর্ভোগ ও কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলে পুরো ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
এদিকে উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের বাইরে শুধু কয়লাবাবদ পিডিবির কাছে কেন্দ্রটির বকেয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে থাকা এ বকেয়ার টাকা পরিশোধের জন্য দফায় দফায় চিঠি দিয়েও তা পরিশোধ করা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের অবহেলার কারণেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো নিজেদের দায় অস্বীকার করে বলছে, বৈশি^ক মন্দার পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদিত বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি কেন্দ্রভাড়া বাবদ প্রতি মাসে পিডিবিকে ২৪৭ কোটি টাকা দিতে হবে। এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন না করলেও নির্ধারিত কেন্দ্রভাড়া পরিশোধ করতে হবে পিডিবিকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট। গড়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিক্রয়মূল্য ছিল ৫ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ৬ টাকার মতো।
প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফার প্রকৃত জানা না গেলেও নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে জানান, সব ধরনের ব্যয় বাদ দিয়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে তাদের নিট মুনাফা হতো ৫ থেকে ৬ শতাংশ। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড়মূল্য সাড়ে ৫ টাকা এবং মুনাফা সাড়ে ৫ শতাংশ বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এক মাসে মুনাফার পরিমাণ প্রায় ৩০ কোটি টাকা। কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এ মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে বিসিপিসিএল। এদিকে কয়লা কেনার জন্য সাড়ে ৬ শতাংশ সুদে ঋণ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। গত ছয় মাসের বেশি সময় কয়লার বিল বকেয়া থাকায় সুদের পরিমাণও বেড়ে যাবে। বাড়তি এ সুদের অর্থ বিসিপিসিএলকেই পরিশোধ করতে হবে।
বর্তমানে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতি ইউনিটের গড়মূল্য প্রায় ১১ টাকা ৫০ পয়সা। যদিও পিডিবি এ বিদ্যুৎ লোকসান দিয়ে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করছে ৮ টাকা ১০ পয়সায়। পায়রা থেকে এক মাস বিদ্যুৎ কিনতে না পারলে পিডিবির লোকসান আরও বাড়বে।
সূত্রমতে, কয়লা দেশে পৌঁছানো এবং কেন্দ্র চালু করতে সব মিলে অন্তত এক মাসের মতো সময় লাগবে। কোনো কারণে যদি কয়লা আসতে আরও দেরি হয়, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বিশে^র সেরা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম। এক সুইচে চালু করার পর নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বৈশি^ক কারণে ডলার সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্টদায়ক। তবে এ সময়ে আমরা বসে না থেকে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজটি করে ফেলব, যাতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা না লাগে।’
কেন্দ্রটি বন্ধের ফলে কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হবে তা জানতে চাইলে প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা দেশ রূপান্তরকে বলেন ‘আমরা এমনিতেই বকেয়া বিল পাচ্ছি না। এটাই বড় ক্ষতি। অন্যান্য ক্ষতির পাশাপাশি কেন্দ্রটি বন্ধের কারণে সাশ্রয়ী দামে দেশের মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এ কেন্দ্র থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ সাড়ে ৫ থেকে ৬ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দিতে না পেরে কমফোর্ড ফিল করছি না।’
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কেন্দ্র ভাড়ার পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে মানুষের ভোগান্তি এবং কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিলেও এ ক্ষতির পরিমাণ অপূরণীয়। আর লোডশেডিং না দিয়ে সরকার যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়, তাহলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো ছাড়া কোনো উপায় নেই এই মুহূর্তে। সে ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটে ৪ টাকার ওপর লোকসান হবে।’ তিনি বলেন, ‘ডলার ছাড় ঠিকই হচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার আগেই ডলার ছাড় করা উচিত ছিল। এতে বিরাট ক্ষতি হলো। এ ক্ষেত্রে দুটো বিষয় হতে পারে। একটি হলো যারা ডলার ছাড় করছেন তারা বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্ব বুঝতে পারছেন না অথবা দেশের পরিস্থিতি আসলেই ভয়াবহ। তবে দেশের উন্নয়নে বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে অবশ্যই প্রাধান্য দেওয়া উচিত।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জাকির হোসেন চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ডলার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের। আর বাংলাদেশ ব্যাংককে রিজার্ভ থেকে ডলার দেওয়া হয় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে। এ ক্ষেত্রে খাতের গুরুত্ব বুঝে ডলার ছাড় করা হয়। তবে দেশের প্রয়োজনে ডলার ছাড় করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো ধরনের গাফিলতি নেই।’
রাজধানীর বাংলামোটরে যাত্রী ছাউনির নিচে খালি গায়ে বসে আছেন মোক্তার হোসেন। বারবার তোয়ালে দিয়ে গাম মুছতে দেখা যায় তাকে। মোক্তার জানান, কাতার যাবেন তাই মেডিকেল করাতে ঢাকায় এসেছেন। গত সপ্তাহে সিরিয়াল দিলেও এখন স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়নি। তাই প্রতিদিন সকালে এসে বসে থাকেন এখানে। হোটেলে গিয়ে যে একটু শান্তিতে বিশ্রাম নেবেন, তারও উপায় নেই লোডশেডিংয়ের কারণে।
মোক্তারদের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন পাশে বসে থাকা রিকশাচালক আমির হোসেন বলেন, গরমের কথা আর কইয়েন না। সকাল থেকে তিন ট্রিপ মারতে জীবন বাইর হইয়া গ্যাছে। মনে হয় শইল্লের (শরীরের) সব পানি বাইর হইয়া গেছে। দুই-তিন বোতল পানি খাইছি। তারপরেও শরীর দুর্বল লাগে। মাথাডাও ঘুরতাছে। আজকে আর রিকশা চালাইতে পারব না। তিনি জানান, সাধারণত দিনে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় করেন রিকশা চালিয়ে। কিন্তু সোমবার তার আয় হয়েছে ৩২০ টাকা।
চলতি বছরের মে মাসের শুরুটাই হয়েছিল প্রচণ্ড গরমের মধ্য দিয়ে। এরপর ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে কক্সবাজার ও এর আশপাশের এলাকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। তবে সারা দেশে বৃষ্টিপাত হয় এর দুদিন পর থেকে। কয়েক দিন বৃষ্টির পর আবার শুরু হয় প্রচণ্ড গরম; যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ফলে শুষ্ক প্রকৃতিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জীবন। সূর্যের বিচ্ছুরণে মধ্যবেলায় প্রকৃতি নেয় অগ্নিরূপ। এর মধ্যে আকাশে নেই মেঘের দেখা। বাতাসের গতিও কম। যেটুকু বাতাস রয়েছে তাতেও যেন আগুনের হল্কা। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হচ্ছে কম।
এদিকে দেশ জুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে গত রবিবার দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয় চার দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের সব খেলাও স্থগিত করা হয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরে দেশের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে স্থানভেদে ৪ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। গতকালও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় দিনাজপুরে, ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, রাজধানীসহ দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। সপ্তাহ জুড়েই এ তাপপ্রবাহ থাকতে পারে। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব বাংলাদেশের দিকে কম থাকায় তীব্র তাপপ্রবাহ অনুভূত হচ্ছে। তবে মৌসুমি বায়ু এ মাসের মাঝামাঝি সময় প্রবাহিত হবে।
এর আগে আবহাওয়া অফিস জানায়, এপ্রিল মাসে ৮৬ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। মে মাসে কম হয়েছে ৪৬ শতাংশ। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আগে মার্চ-এপ্রিল-মে পর্যন্ত তাপপ্রবাহ হলেও, এখন তা অক্টোবর পর্যন্ত হচ্ছে। এক যুগ ধরেই এ পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেচ্ছা বলেন, ‘আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহে দেশের কিছু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে। ১২ জুন কিছু এলাকায় বৃষ্টি হলেও সারা দেশ থেকে যে তাপপ্রবাহ চলে যাবে বিষয়টা এমন নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যে মৌসুমি বায়ু সেটা আসতে একটু দেরি হচ্ছে ফলে বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে। একদিকে বাতাসের গতিবেগ কম, অন্যদিকে বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্য বেশি। ফলে মানুষ বেশি অস্বস্তি অনুভব করছে।’
আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ড. মোহন কুমার দাশ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশেষ করে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, নেপালের একটি অংশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এ পুরো অংশটি এক-একটি হিট ইঞ্জিন। এসব দেশের তাপমাত্রা কোথাও কোথাও ৪১-৪৫ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘একদিকে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি অন্যদিকে ভৌগোলিক পরিপ্রেক্ষিতে তাপপ্রবাহ বাড়ছে। কিন্তু এই তাপ শুষে নেওয়ার যে উপাদান জলাশয়, মাটি বা গাছপালা তা কিন্তু কমছে। ফলে যেটুকু তাপ উৎপন্ন হচ্ছে, মানুষ তার বেশি অনুভব করছে। শহরের এ উপাদানগুলো যদি পর্যাপ্ত থাকত তাহলে হয়তো গরম অনুভব হতো কিন্তু ক্লান্তি লাগত না। ঐতিহাসিকভাবে তাপমাত্রা ছিল, এখনো আছে। কিন্তু দমবন্ধ একটা পরিবেশ তৈরি করছি। ফলে জীবনব্যবস্থায়ও এক ধরনের প্রভাব তৈরি করছে।’
আবহাওয়ার এমন চরম ভাবাপন্ন হওয়ার জন্য তিন ধরনের কারণ রয়েছে বলে মনে করেন আবহাওয়া বিশ্লেষকরা। বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৪ ডিগ্রি বেড়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় ও আঞ্চলিক প্রভাবও রয়েছে। এ তিনটি বিষয় একত্রে কাজ করায় বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা শহরে ১৫ লাখ ইঞ্জিনচলিত গাড়ি রয়েছে। দিনরাত চলাচল করছে। এরও একটা প্রভাব রয়েছে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে। স্থানীয় পর্যায়ে বিল্ডিং বাড়িয়ে দিয়েছি, জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের কলকারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ইটের ভাটাগুলো চলমান। জলাধার ভরাট করে ফেলেছি। বায়ুদূষণ হচ্ছে। দেশের উল্লেখযোগ্য বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। দিন দিন শহরাঞ্চলের গাছপালার পরিমাণ কমে গিয়ে সংকটাপন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এখনই যদি দূষণের পরিমাণ কমানোর উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে তাপমাত্রা বাড়বে। তবে তার জন্য কয়েক বছর অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।’
নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ১৩ ধরনের জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের ওপর থেকে বিদ্যমান ৫ শতাংশ আগাম কর প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। অন্যদিকে উৎপাদন পর্যায়ে তরল করা পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে পেট্রোল, অকটেন ও ডিজেল আমদানিতে প্রতি লিটারে ১৩ দশমিক ৭৫ টাকা করে শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া অন্যান্য জ্বালানি জেট ফুয়েল, ফার্নেস অয়েল, লুব বেইজ অয়েল, কেরোসিনের ক্ষেত্রে প্রতি টনে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এত দিন এসব জ্বালানি তেল আমদানির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ ছিল।
আমদানি করা পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণে ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্যের ট্যারিফ মূল্য ও ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাত দুটি হেডিংয়ের আওতায় ১২টি এইচএস কোডের বিপরীতে ট্যারিফ মূল্য এবং একটি হেডিংয়ের আওতায় একটি এইচএস কোডের বিপরীতে ন্যূনতম মূল্য বহাল আছে।
পেট্রোলিয়াম ও এর উপজাতগুলোর মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিনিয়ত ওঠানামা করার কারণে অতি প্রয়োজনীয় এই পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ সুপারিশ করা হয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডারের বিষয়ে বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, এলপিজি সিলিন্ডার তৈরির কাঁচামাল ইস্পাতের পাত (স্টিল শিট) ও ওয়েল্ডিংয়ের তার আমদানির করছাড় সুবিধা তুলে নেওয়া হয়েছে। এলপিজি সিলিন্ডার উৎপাদনকারীরা কাঁচামালে শুল্ককর ছাড় ১২ বছর ধরে ভোগ করে আসছে। তাই রাজস্ব আহরণের স্বার্থে শুধু দুটি উপকরণে ছাড় তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য করছাড়ের মেয়াদ ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে বলে।
পেট্রোলিয়াম তেল এবং বিটুমিনাস খনিজ থেকে প্রাপ্ত তেলের ওপর বিদ্যমান শুল্ক ৫ শতাংশ। নতুন বাজেট অনুযায়ী এসবের প্রতি ব্যারেলের দাম ১ হাজার ১১৭ টাকা (লিটার প্রতি ৭.০২ টাকা) হতে পারে। প্রতি টন ফার্নেস অয়েলের সুনির্দিষ্ট শুল্ক ৯ হাজার ১০৮ টাকা (লিটার প্রতি ৯.১০ টাকা) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য নতুন অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে ৩৩ হাজার ৮২৫ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং জ্বালানি খাতে ৯৯৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা নতুন বাজেটে এই বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে বরাদ্দ ছিল ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৭ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল বাজেট বক্তৃতায় বলেন, উৎপাদন ও বিতরণ সক্ষমতা সম্প্রসারণের ফলে দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২০০৯ সালে ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট থেকে বর্তমানে ২৬ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। জ্বালানির ব্যবহার বহুমুখীকরণের জন্য গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি কয়লা, তরল জ্বালানি, দ্বৈত জ্বালানি, পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট ও পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা-সুপার ক্রিটিক্যাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে মোট ১২ হাজার ৯৪ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন এবং ২ হাজার ৪১৬ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন আছে। এছাড়া, ১০ হাজার ৪৪৩ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও ৩৪টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে পাশর্^বর্তী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ভারত থেকে ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পাশাপাশি ঝাড়খ-ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৭৪৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। নেপালের জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হতে যাচ্ছে শিগগিরই। তিনি বলেন, ‘সব মিলিয়ে আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ পরিচ্ছন্ন জ্বালানি থেকে সংগ্রহ করতে চাই। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, ৬০ লাখ সোলার সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে অফ গ্রিড এলাকায় বসবাসকারী জনগণকে বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে ডিজেলচালিত পাম্পের জায়গায় সৌরচালিত পাম্প স্থাপন করার অংশ হিসেবে সেচকাজে ইতিমধ্যে ২ হাজার ৫৭০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ৮৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। সর্বোপরি, রাশিয়ার সহায়তায় রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।’
উৎপাদিত বিদ্যুৎ জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে গত ১৪ বছরে ৬ হাজার ৬৪৪ সার্কিট কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সঞ্চালন লাইন ১৪ হাজার ৬৪৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া বিতরণ লাইন ৩ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ৬ লাখ ৬৯ হাজার কিলোমিটারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদ্যুতের সিস্টেমলস ১৪ শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশে। ২০৩০ সালের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের পরিমাণ ২৮ হাজার কিলোমিটারে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধের লক্ষ্যে গত ৫ বছরে প্রায় ৫৩ লাখ প্রি-পেইড স্মার্ট মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী কামাল বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায়, জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ৮ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন থেকে বৃদ্ধি করে ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই মজুদ ক্ষমতা ৩০ দিনের পরিবর্তে ৬০ দিনে বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি উদ্বোধন করা ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী পাইপলাইনের মাধ্যমে আমদানি করা জ্বালানি তেল (ডিজেল) দেশের উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় এবং সৈয়দপুরে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, ‘একমাত্র তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিশোধন ক্ষমতা ১৫ লাখ টন থেকে ৪৫ লাখ টনে উন্নীত করার চেষ্টা চলছে। পায়রা সমুদ্রবন্দর এলাকায় একটি বৃহৎ সমন্বিত তেল শোধনাগার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের সিদ্ধান্ত আছে। সম্প্রতি ভোলার ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে প্রায় ২০০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুদ আবিষ্কৃত হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় প্রতিদিন গ্যাসের উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানি বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানোর পর দৈনিক গ্যাস উৎপাদন ৯৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট বেড়েছে। ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ৪৬টি কূপ খনন করা হবে। এতে অতিরিক্ত ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য বিপুল বিনিয়োগ প্রয়োজন হওয়ায় আমরা বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি এবং স্পট মার্কেট থেকেও কেনা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে প্রতিদিন ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
বাজেট বক্তৃতায় আরও বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৫৮ কিলোমিটার গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য এলাকায় ২১৪ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চলছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পায়রা ও ভোলা থেকে গ্যাস সঞ্চালনের জন্য আরও ৪২৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর পাশাপাশি অপচয় রোধে প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের কাজও চলছে।
চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক বাজেট আকারে ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ বড় হলেও আগামী বছরের শিক্ষা-বাজেট দশমিক ৪৪ শতাংশ কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা বেড়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে মোট বাজেটের ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। শুধু শিক্ষা খাত হিসাব করলে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষায় বরাদ্দ ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। টাকার অঙ্কে তা ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষায় বরাদ্দ ছিল ১২ দশমিক ০১ শতাংশ বা ৮১ হাজার ৪৪৯ কোটি টাকা।
ইউনেস্কো, শিক্ষাবিদ বা অংশীজনরা অনেক দিন ধরেই শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৪ শতাংশ বরাদ্দের কথা বলছেন। এটাকে তারা বরাদ্দ হিসেবে না দেখে আগামী দিনের বিনিয়োগ হিসেবে দেখতে বলছেন। গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষায় বরাদ্দ ১২ শতাংশের আশপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল। জিডিপির হিসাবে তা ছিল ২ শতাংশের কাছাকাছি। চলতি অর্থবছরে শিক্ষা খাতে মোট বরাদ্দ জিডিপির ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়াচ্ছে জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধূরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আগামী বাজেটে যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে, তার সঙ্গে শিক্ষায় বরাদ্দের সংগতি নেই। বাজেটে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে। এজন্য দক্ষ ও শিক্ষিত জনগোষ্ঠী প্রয়োজন। কিন্তু এ জনগোষ্ঠী তৈরির জন্য প্রয়োজন শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ। বরাবরের মতো এবারও শুভংকরের ফাঁকি লক্ষ করছি। শিক্ষার সঙ্গে প্রযুক্তি মিলিয়ে আকার বড় করা হলেও চলতি অর্থবছরের চেয়েও বরাদ্দ কমেছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও বাজেটে দিকনির্দেশনা দেখছি না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় জিডিপির ২ শতাংশের নিচে বরাদ্দ কাক্সিক্ষত নয়। আগামী অর্থবছরে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলে ভালো হতো। কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত ছিল। সেটা আগামী অর্থবছরের বাজেটে দেখা যায়নি।’
তিনি বলেন, ‘আগামী বছরের বাজেটে মিড ডে মিলের জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলা হয়েছে, যা খুবই ভালো। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের যথাযথ প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। শিক্ষায় বরাদ্দের সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।’
আগামী অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে তা ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৪২ হাজার ৮৩৮ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ১০ হাজার ৬০২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জন্য ৩৯ হাজার ৯৬১ কোটি এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের জন্য ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল সরকার।
বাজেট ঘিরে প্রতি বছরই বেসরকারি শিক্ষকদের অন্যতম দাবি থাকে শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া ও শতভাগ উৎসব-ভাতা প্রদান। নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রাখাও তাদের অন্যতম দাবি। কিন্তু সেসব বিষয়ে বাজেটে স্পষ্ট কিছু উল্লেখ নেই। তবে এমপিওভুক্তির জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে আগামী অর্থবছরে ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটক-টেলিছবি নির্মাণ করেছেন শিহাব শাহীন, উপহার দিয়েছেন হিট প্রোডাকশন। নিজেকে শুধু রোমান্টিক জনরায় আটকে না রেখে কাজ করেছেন বহুমাত্রিক ঘরানায়। নিজেকে প্রমাণ করেছেন সব্যসাচী নির্মাতা হিসেবে। নিজেকে শুধু টেলিভিশনেই আটকে রাখেননি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও পাল্টেছেন প্লাটফর্ম এবং সেখানেও দেখিয়েছেন নিজের মুন্সিয়ানা।
সর্বশেষ গেল ঈদে তুমুল সাড়া ফেলেছে তার নির্মিত স্পিন অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। সাফল্যের পর কিছুদিন আগেই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এর সাকসেস পার্টি যেখানে উপস্থিত ছিলেন টিমের কলাকুশলী থেকে শুরু করে অন্যান্য নির্মাতা ও শিল্পীরা। সেই ধারাবাহিকতায় এবার তিনি নিয়ে আসছেন সিরিজটির সিক্যুয়াল। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে একাধিক সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে আসছেন জনপ্রিয় নির্মাতা।
শিহাব শাহীন বলেন, ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ নিয়ে এতটা প্রত্যাশা ছিল না কিন্তু সে সাড়া পেয়েছি তা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। দর্শকরাই কাজটিকে গ্রহণ করেছেন আর তাই এখন এর সিক্যুয়াল নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছি। স্পিন অফে দেখিয়েছি অ্যালেন স্বপনের পেছনের গল্প। সিন্ডিকেটে তাকে আমরা দেখিয়েছিলাম ২০২২ সালে, সে ঢাকায় আসার পর এর মাঝের সময়টার গল্পই থাকবে সিক্যুয়ালে। যেটার সংযোগ থাকতে পারে ‘সিন্ডিকেট ২’-তে। ঈদের পরপর এটার শুট করার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সিক্যুয়াল ছাড়াও আরও বেশ কিছু সিরিজ ও ফিল্ম নিয়ে সবকিছু চূড়ান্ত হয়েছে বলেও জানান এ নির্মাতা। তিনি বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকির তত্ত্বাবধানে ওটিটি প্লাটফর্ম চরকির ‘মিনিস্ট্রি অফ লাভ’ সিরিজের একটা কনটেন্ট করবো। এখনও কাস্টিং চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া হইচইয়ের একটি সিরিজ ও বিঞ্জের একটি ফিল্ম করা হবে। নাম চূড়ান্ত হয়নি। তবে দুটোতেই জিয়াউল ফারুক অপূর্ব থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
মাঝে শোনা গিয়েছিল, আফরান নিশোকে নিয়ে ‘সিন্ডিকেট ২’ নাকি হবে না, এটা কতটুকু সত্য? এমন প্রশ্নে শিহাব শাহীন বলেন, এটা ভূয়া তথ্য। ডিসেম্বরের শেষ দিকে ‘সিন্ডিকেট ২’ করবো তার আগে সেপ্টেম্বরে শুরু করবো ‘রসু খাঁ’।
জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমাচ্ছেন শিহাব শাহীন। দেশে ফিরবেন মাসের শেষ নাগাদ এরপর কাজে নামবেন।
স্বাস্থ্য খাতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ বেড়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এই খাতে এবার বরাদ্দ ১ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা বা ৩ দশমিক ২২ শতাংশ বাড়লেও মোট বাজেটের তুলনায় তা কমেছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে খাতটিতে বরাদ্দ ছিল মোট বাজেটের ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আগামী বাজেটে তা ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় সংসদে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ৩৮ হাজার ৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৯ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় মাত্র ১৫০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে পরিচালন ব্যয় ১৭ হাজার ২২১ কোটি টাকা ও উন্নয়ন ব্যয় ১২ হাজার ২১০ কোটি টাকা। এছাড়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে ৮ হাজার ৬২১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই বরাদ্দ থেকেই নতুন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার ব্যয় নির্বাহ করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল হামিদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, এবার টাকার অঙ্কে গত বছরের তুলনায় (বর্তমান ২০২২-২৩ অর্থবছর) ১ হাজার একশ কোটির মতো বেড়েছে। কিন্তু বাজেট শেয়ারে সেটা কমেছে। সামগ্রিক বাজেটের গ্রোথ বা বৃদ্ধি ১২ শতাংশ, কিন্তু স্বাস্থ্যের বাজেটের বৃদ্ধি ৩ শতাংশ। তারমানে রাষ্ট্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব কমেছে। সেই কারণে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ বলেন, এবার কমার যৌক্তিক কারণ আছে। সেটা হলো স্বাস্থ্য বিভাগের সেক্টর প্রোগ্রামে উন্নয়ন বাজেট থেকে অর্থ আসে। সেই সেক্টর প্রোগ্রাম এই অর্থবছরে শেষ হয়ে প্রস্তাবিত অর্থবছর থেকে নতুন সেক্টর প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সেক্টর প্রোগ্রাম সময়মতো বাস্তবায়ন করতে না পারায় সেটার সময় আরও এক বছর বাড়ানো হয়েছে। এই এক বছরের জন্য নতুন বাজেট থাকে না, পুরনো বাজেট থেকেই ব্যয় করতে হয়। ফলে বরাদ্দ না বাড়িয়ে পাঁচ বছরের বাজেট যদি ছয় বছরে গিয়ে ঠেকে, তাহলে প্রতি বছর টাকা কমে যায়। মূলত এ কারণে এবার টাকা কমে গেছে।
সরকার স্বাস্থ্য খাতে এবারও কিছু থোক বরাদ্দ রাখতে পারত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির এই শিক্ষক। তিনি বলেন, কভিড ছাড়াও আমাদের অনেক জরুরি খাত আছে। এখন ডেঙ্গু চলছে। এটি ইমার্জেন্সি হয়ে যাবে। ফলে এটার জন্য যে ফান্ড দেওয়া আছে হাসপাতালে, রোগী বাড়লে সেটা দিয়ে হবে না। এরকম ইমার্জেন্সি আরও আসতে পারে। এরকম একটা থোক বরাদ্দ রাখলে স্বাস্থ্যের ইমার্জেন্সিতে সেখান থেকে ব্যয় করা যেত। কিন্তু সেটাও নেই। তার মানে কভিডের শিক্ষা থেকে আমরা কিছুই শিখিনি। প্রস্তাবিত বাজেটে সেটার প্রতিফলন নেই।
সামগ্রিকভাবে বাজেটে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন এই স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, এতে স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধসহ সামগ্রিকভাবে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
যদিও এবারের বাজেটে ওষুধ, চিকিৎসাসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসা আরও সুলভ করার জন্য ক্যানসার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ, আইভি ক্যানুলা উৎপাদনের অন্যতম প্রধান উপাদান সিলিকন টিউবসহ আরও কিছু বিদ্যমান ওষুধের কাঁচামাল আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। তামাক জাতীয় পণ্য যেমন তরল নিকোটিন, ট্রান্সডারমাল ইউস নিকোটিন পণ্যের বিপরীতে ১৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।