
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাকে কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জড়িত ছিল বলে দাবি করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক এক সভা শেষে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন কথা বলেন।
এদিকে একই ধরনের কথা বলেছেন আরও দুই মন্ত্রী। তাদের মধ্যে তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, পঞ্চগড়ের ঘটনা সারা দেশে বিএনপির বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারার অংশ। আর রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, তৌহিদি জনতার ব্যানারে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা পঞ্চগড়ে আহমদিয়াদের গ্রামে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। গতকাল পঞ্চগড়ে আহমদিয়াদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পরিদর্শনে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়াদের ওপর হামলা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আহমদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। প্রতিবারই তারা দুদিনব্যাপী একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান করে। এবারও সেই অনুষ্ঠান করতে যাওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর অ্যাকটিভিস্ট ও বিএনপি নেতারা একসঙ্গে জড়িত হয়ে তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে তাদের ঘরবাড়িতে আগুন ধরায়। যেখানে অনুষ্ঠান হচ্ছিল, সেখানেও আগুন ধরায়। এতে একজন কাদিয়ানি সদস্য মারা যায়। মারামারি করতে গিয়ে একজন জামায়াতের সদস্যও আহত হয়ে মারা যায়।’
এই সহিংসতার ঘটনায় সাতটি মামলা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এ ঘটনায় ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বিএনপি নেতা ফজলে রাব্বি আছেন। তিনি স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে সমাবেশটি বন্ধ করতে এসেছিলেন। ঘটনাগুলোর নেপথ্যে তিনিও নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেখানে র্যাবের এক সদস্যও আহত হয়েছেন। তার মাথায় বেশ কয়েকটি সেলাই দিতে হয়েছে। র্যাবের একটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী বেশ ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। সেখানকার পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক আছে। যারাই মামলা দিচ্ছে, মামলা নেওয়া হচ্ছে।’
পঞ্চগড়ের ঘটনা বিএনপির পাঁয়তারার অংশ বললেন তথ্যমন্ত্রী : তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি এবং তাদের মিত্ররা পুরো দেশে নানাভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরির পাঁয়তারার মধ্যে আছে। সাম্প্রদায়িক যে উগ্র গোষ্ঠীকে নিয়ে বিএনপি রাজনীতি করে, তারা নানা ধরনের ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে। পঞ্চগড়ের ঘটনাও বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়।’ গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে তো বিএনপি। পঞ্চগড়ে যে ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে, সেখানে যারা কাদিয়ানিদের জলসাতে হামলা চালিয়েছে তারা কারা সেটা তো পুলিশের খাতায় আছে। তাদের বেশিরভাগই ছিল বিএনপির সমর্থক। তারাই সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, হামলা চালিয়েছে এবং সে হামলায় দুজন মৃত্যুবরণ করেছে। মির্জা ফখরুল সাহেব নিজেদের দায়টা এড়ানোর জন্য দুদিন পর রবিবার বক্তব্য রেখেছেন। আসলে এ ঘটনার জন্য বিএনপি-জামায়াতের সমর্থকরাই মূলত দায়ী।’
হামলা ছিল পরিকল্পিত দাবি রেলপথ মন্ত্রীর : রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ‘একটি গোষ্ঠী সব সময় ধর্মকে ব্যবহার করে আসছে। তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে নানা ফৌজদারি অপরাধ ঘটাচ্ছে। পঞ্চগড়ে তৌহিদি জনতার ব্যানারে বিএনপি-জামায়াত যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তা একাত্তরের নৃশংসতাকেও হার মানায়। বিএনপি-জামায়াত নানা নামে-বেনামে গুপ্ত হামলা করে মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।’ গতকাল আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষজনকে খাদ্য ও মানবিক সহায়তাদান এবং আগুন ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি পরিদর্শনকালে এসব কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘হামলাকারীরা পূর্বপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছে। তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা দেওয়ার দ্বায়িত্ব সরকারের। তবে এত বড় ঘটনা ঘটার আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন কোনো তথ্য পেল না? এখানে তাদের কোনো গাফিলতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
ধর্মীয় সম্প্রীতির এই দেশে ধর্মকে ব্যবহার করে একটি মহল রাজনীতি করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘তাদের এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কোনো অশুভ শক্তি যেন ধর্মের নামে দেশকে অস্থিতিশীল করতে না পারে সে বিষয়ে ধর্মীয় ও সামাজিক নেতাদের দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করতে হবে।’
আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের এক সপ্তাহ পার হলেও চট্টগ্রামের বাজারে কমেনি চিনির দাম। বরং মিল থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় রমজানে বাড়তি চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে চিনির বাজার অস্থির হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চিনি মণপ্রতি ৩ হাজার ৯৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও একই দরে বিক্রি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
গত ২৬ জানুয়ারি প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১০৭ ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ১১২ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। দাম নির্ধারণের পর কয়েক দিন বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের লোকজনের দৌড়ঝাঁপ দেখা গেলেও পরে তাতে ভাটা পড়ে। এখন খুচরা বাজারে খোলা চিনি ১১০ ও প্যাকেটজাত চিনি কোম্পানিভেদে ১২০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দেশের পাঁচটি শিল্প গ্রুপের হাতে রয়েছে চিনির বাজারের নিয়ন্ত্রণ। এরা হলো সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, আবদুল মোনেম গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপ। এরা বিদেশ থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে পরিশোধন করে বাজারে ছাড়ে। তারা সরবরাহ কমালে বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়। চাহিদানুযায়ী সরবরাহ না থাকলেই বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। মিলারদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের একাধিক সিন্ডিকেট চিনি গুদামজাত করে বাজারে সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ায়, এমন অভিযোগও আছে।
খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি ও তৈয়বিয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সোলায়মান বাদশা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পণ্যের সাপ্লাই চেইন ঠিক থাকলে সেই পণ্যের বাজার ঠিক থাকে। বর্তমানে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী চিনির সরবরাহ নেই। পরিশোধিত চিনির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে চিনির ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) নেওয়ার পাঁচ-ছয় দিন পর সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট, পণ্য আমদানির জন্য এলসি-জটিলতা এসবের নেতিবাচক প্রভাব বাজারে রয়েছে। ফলে সরকার শুল্ক হ্রাসের ঘোষণা দিলেও বাজারে এর প্রভাব এখন পর্যন্ত পড়েনি।’
তিনি বলেন, ‘চিনির মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার আমদানিকৃত চিনির ওপর শুল্ক কমিয়েছে। আমদানির চিনি যথাসময়ে খালাস ও পরিশোধন করে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে কি না তার কঠোর মনিটরিং দরকার। বাজারে চিনির সরবরাহ পর্যাপ্ত না হলে আসন্ন রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখা কঠিন হবে।’
নগরীর একাধিক বাজার ঘুরে দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনো আগের দামে চিনি কিনতে হচ্ছে তাদের। আসকার দীঘিরপাড় বাজারের মুদি দোকান সুধীর স্টোরের মালিক সুধীর দেব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাতুনগঞ্জ থেকে পাঁচ কেজির বস্তা ৫ হাজার ৪০০ টাকায় কিনে আনতে হয়েছে। খুচরায় কেজি ১১০ টাকায় বিক্রি করছি। আর প্যাকেটজাত চিনি (এসিআই) বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা কেজিতে। পরিবেশকরা প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।’
রবিবার বিকেলে কাজির দেউড়ি বাজার থেকে ১১০ টাকা কেজিতে চিনি কেনেন একটি কেজি স্কুলের শিক্ষক আবদুস সালাম। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সরকার শুল্ক হ্রাস করুক আর প্রত্যাহার করুক এর সুফল ভোগ করবে ব্যবসায়ীরা। আমরা ভোক্তারা সবসময় ভুক্তভোগী হয়েই থাকব। সরকার তেল, চিনি প্রভৃতির দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু সেই দামে বাজারে পণ্য পাওয়া যায় না। এসব দেখার দায়িত্বে সরকারি যে সংস্থা রয়েছে তারা কী করছে তা দেখার কেউ নেই।’
রমজান উপলক্ষে চিনির বাজার স্বাভাবিক রাখতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজস্ব বোর্ডের জারিকৃত পরিপত্রে সব ধরনের চিনির আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনার পর গতকাল সোমবার সকাল থেকে জেলা শহরের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। সকাল ৯টার পর থেকেই শহরে মানুষজনের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করে। খুলতে শুরু করে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। জেলা শহর ও শহরের উপকণ্ঠে আহমদিয়া সম্প্রদায় অধ্যুষিত আহমদনগর এলাকায় ছিল পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের টহল এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কড়া নজরদারি। এ ছাড়া গত শুক্রবারের ওই সহিংসতার পর থেকে এখন পর্যন্ত হওয়া ছয়টি মামলায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তবে উদ্বেগ আর আতঙ্ক কাটেনি আহমদিয়াদের। পঞ্চগড়ের দুটি গ্রামে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। যাদের প্রায় সবাই শুক্রবারের সহিংসতায় হতবাক। আতঙ্কিত শিশুরা। আগুন দেখলে অনেকেই চমকে উঠছেন। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন যাপন করছে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নারী, পুরুষ ও শিশুরা। সবার মধ্যে একটাই আতঙ্ক, আর তা হলো যদি আবার এসে হামলা করে। বাড়িতে থাকতে নিরাপদ বোধ করছে না কেউই। অবশ্য আগুন আর ভাঙচুরের কারণে বাড়িতে থাকার মতো পরিস্থিতিও নেই। অনেকেই নিজেদের বাড়ি ছেড়ে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত আহমদিয়ারা কারও সাহায্য-সহযোগিতা চান না। তারা শুধু নিরাপদে বসবাসের নিশ্চয়তা চান, নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা চায়। গতকাল সকালে পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন আহমদনগরে আহমদিয়াদের ক্ষতিগ্রস্ত জনবসতি পরিদর্শনে গেলে তার কাছে এমন দাবি জানান তারা। মন্ত্রীর কাছে তারা সহিংসতায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারেরও দাবি জানান। এ সময় রেলমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ পরিবারের মধ্যে একটি করে শাড়ি, লুঙ্গি ও কম্বল দেন। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে চালসহ রেলমন্ত্রীর নিজস্ব তহবিল থেকে পরিবারপ্রতি এক হাজার করে টাকা দেওয়া হয়। পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আবদুল আলীম, জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদাসহ পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আহমদনগরের প্রায় সব বাসিন্দার চোখে-মুখে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার ছাপ। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্য মাহমুদ আহমাদ সুমন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আহমদনগরে ৬০ থেকে ৭০ বছর ধরে সম্প্রীতির সঙ্গে সবাই বসবাস করে আসছে। আমরাও এখানে স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করেছি, একই সঙ্গে খেলাধুলা করেছি। কখনো কোনো বিরোধ হয়নি। তিন-চার বছর ধরে একটা উচ্ছৃঙ্খল মহল ঢাকা থেকে বা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে মানুষজনকে উসকে দিয়ে এই কাজগুলো করাচ্ছে। এই মূলহোতাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।’
গত শুক্রবার বিকেলে পঞ্চগড় সদর উপজেলার আহমদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ লোকজন। সেই আগুন জ্বলতে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। এই সহিংসতায় দুই তরুণ নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আহমদ জাফর বলেন, ‘সেদিনের বীভৎসতায় আমার সাত বছরের ছেলে এখনো আঁতকে ওঠে। পুলিশ দেখলে ভয়ে কেঁদে ফেলে। এমন অবস্থা আমাদের প্রত্যেক পরিবারের। আমরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাই।’ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের গণসংযোগ ও প্রেস বিভাগের প্রধান আহমদ তবশির চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা কারও সাহায্য-সহযোগিতা চাই না। আমরা শুধু নিরাপদে বসবাস করতে চাই। নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা চাই।’
মামলা ও গ্রেপ্তার : শুক্রবারের সহিংসতার ঘটনায় আলাদা ছয়টি মামলা করা হয়েছে। পঞ্চগড় সদর থানায় গুজব, হামলা ভাঙচুর, লুটপাট, সরকারি কাজে বাধাদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে চারটি, র্যাবের পক্ষ থেকে একটি এবং আহমদিয়া মুসলিম জামাতের পক্ষে একটি মামলা করা হয়। এসব মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৮ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিভিন্ন অভিযোগে ছয়টি মামলা হয়েছে। আরও মামলা প্রক্রিয়াধীন। এ ঘটনায় কমবেশি ২০টির মতো মামলা হবে এবং তদন্তসাপেক্ষে ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।’
ইন্টারনেটসেবা চালু : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানো বন্ধে পঞ্চগড়ে গত শনিবার রাত থেকে সব ধরনের ইন্টারনেটসেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এতে করে দুর্ভোগে পড়েন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। গতকাল সকাল ১০টার পর থেকে এই সেবা ফের চালু করা হয়েছে।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় আবারও একজন নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর সেকশনে মুক্তবাংলা শপিং সেন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লার গাড়ির চাপায় নিহত ওই ব্যক্তির নাম আবু তৈয়ব (৩০)। গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুরে।
শাহআলী থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, সকাল ১০টার দিকে মুক্তবাংলা শপিং সেন্টারের পাশে সনি সিনেমা হল মোড় দিয়ে আবু তৈয়ব মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় ডিএনসিসির একটি ময়লার গাড়ি তার মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আবু তৈয়বের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ডিএনসিসির গাড়িটি শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এর আগে গত বছর ২ এপ্রিল রাতে খিলগাঁওয়ে ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় এক নারী নিহত হন। ওই বছরের ২৩ জানুয়ারি মহাখালীর উড়াল সড়কের কাছে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় আরেক নারীর মৃত্যু হয়। একই বছরের জুলাইয়ে মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজের সামনে ময়লার গাড়ির চাপায় এক তরুণ নিহত হন। তার আগে ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর গুলিস্তানে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান নটর ডেম কলেজের এক ছাত্র। পরদিন পান্থপথ এলাকায় সংবাদকর্মী আহসান কবির খানের মৃত্যু হয় ময়লার গাড়ির ধাক্কায়। ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর ওয়ারীতে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় স্বপন কুমার সরকার নামে আরেকজন নিহত হন।
মোটরসাইকেল আরোহী তিন কলেজছাত্র বাসচাপায় নিহত : সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে ভোরে মোটরসাইকেলে করে বেরিয়েছিলেন তিন বন্ধু। এক মোটরসাইকেলে চড়েই তারা যাচ্ছিলেন রাজশাহীর দিকে। কিন্তু সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কেই থেমে গেছে তাদের জীবনের পথচলা। গতকাল ভোরে অজ্ঞাত একটি বাসচাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন নাটোর সিটি কলেজের তিন শিক্ষার্থী।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল তাড়াশ উপজেলায় হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের মান্নাননগর এলাকার ওই দুর্ঘটনায় নিহত আলমগীর হোসেন (২২), সুজন (২১) ও সিয়াম (২১) নাটোর সিটি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের মধ্যে আলমগীর বেলকুচি উপজেলার ফুলঘাগড়াখালী এলাকার আবদুল বারেক সরকারের ছেলে আর সুজন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার নন্দনপুর এলাকার হেলাল উদ্দিনের ছেলে। সিয়ামের বিস্তারিত পরিচয় মেলেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে একটি মোটরসাইকেলে করে এই তিন কলেজছাত্র রাজশাহীর দিকে যাচ্ছিলেন। পথে উপজেলার হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের মান্নাননগরে পৌঁছালে একটি বাস তাদের মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি বদরুল কবীর বলেন, তিনজনের লাশ থানায় আনা হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যরা এসেছেন। আইনি কার্যক্রম শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাগেরহাটে দুই পরিবহনশ্রমিক নিহত : বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাক ও পিকআপচালকের দুই সহকারী নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে বাগেরহাট-মাওয়া মহাসড়কের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের কাকডাঙা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। নিহতরা হলেন খুলনা মহানগরের খালিশপুর এলাকার নুর হোসেনের ছেলে ইমন হাসান (২১) এবং বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বারাশিয়া গ্রামের ওহিদ শেখের ছেলে রিয়াদ শেখ (২২)। এর মধ্যে ইমন হাসান বালুভর্তি ট্রাকের চালকের সহকারী এবং রিয়াদ শেখ পিকআপের চালকের সহকারী ছিলেন।
বাগেরহাটের মোল্লাহাট হাইওয়ে থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, গতকাল সকালে গোপালগঞ্জ থেকে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বালুভর্তি একটি ট্রাক বাগেরহাট-মাওয়া মহাসড়কের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের কাকডাঙা এলাকায় পৌঁছানোর পর চাকা ফেটে গেলে ট্রাকটি দাঁড়িয়ে যায়। এ সময় পেছন থেকে আসা অপর একটি মাছবাহী পিকআপ ওই ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে ট্রাকের সহকারী ও পিকআপের সহকারী দুজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
নওগাঁয় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবক নিহত : নওগাঁর বদলগাছীতে ভটভটি ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত জাহিদুল ইসলাম (২২) মহাদেবপুর উপজেলার সারতা এলাকার রুবেল আলীর ছেলে। এ ঘটনায় আরেক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন।
পুলিশের বরাতে নওগাঁ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল সকাল ১০টার দিকে বদলগাছী উপজেলার মাতাজী-হাপানিয়া রোডের ভুবন এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
বদলগাছী থানার ওসি আতিয়ার রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, জাহিদুল ইসলাম মোটরসাইকেলে মহাদেবপুর থেকে মাতাজীর দিকে যাচ্ছিলেন। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি গরুবোঝাই ভটভটির সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী জাহিদুল ইসলামের মৃত্যু হয়।
হবিগঞ্জে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল পথচারীর : হবিগঞ্জের মাধবপুরে বাসের ধাক্কায় মিন্নত আলী নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, মাধবপুর মাওলানা আসাদ আলী ডিগ্রি কলেজের সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সেতুর ওপর একটি ঢাকাগামী বাস মিন্নত আলীকে ধাক্কা মারলে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। নিহত মিন্নত আলী উপজেলার আন্দিউড়া ইউনিয়নের মীরনগর গ্রামের মৃত আকতার মিয়ার ছেলে।
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ১২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন। গত রবিবারের এই অগ্নিকাণ্ডে রোহিঙ্গাদের দুই হাজারের বেশি ঝুপড়ি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে কারও প্রাণ না গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ভস্মীভূত এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসেবার সংকট দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, আগুন লাগার পর রবিবার রাতে খাবারের অভাবে অসংখ্য রোহিঙ্গা অভুক্ত ছিলেন।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পের চারদিকে শুধু পোড়া কটু গন্ধ। পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র পরিষ্কারে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন রোহিঙ্গারা। কেউবা করছিলেন অস্থায়ী তাঁবু তৈরি, আবার কেউ কেউ ঘুরে দাঁড়িয়ে ফের ঝুপড়ি ঘর তৈরির চেষ্টায় ছিলেন। অনেকে আবার জায়গার দখল ধরে রাখতে পুড়ে যাওয়া ঘরের ওপরই বসে ছিলেন।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-১ ব্লকের বাসিন্দা হাজেরা খাতুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুপুরে চারদিক থেকে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ (আল ইয়াকিন) আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লুটপাট চালায়। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। গতকাল (রবিবার) রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত কিছু খেতে পারিনি। তবে আজ (গতকাল) দুপুরে দুটো ভাতের প্যাকেট পেয়েছি।’
একই ক্যাম্পের ডি-১ ব্লকের মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘দুপুরে নামাজের পর একটু দূরে আগুন লেগেছে বলে সংবাদ পাই। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে সব শেষ হয়ে গেছে।’
ডি-ব্লকের মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) ফরিদুল আলম জানান, তার ব্লকে ৭৮টি ঝুপড়ি ঘর ছিল। যার সবগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
রোহিঙ্গা নেতা আবদুল করিম, সেলিম ও সৈয়দ উল্লাহ জানান, তিনটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আটটি ব্লক সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে দুই হাজারের বেশি ঝুপড়ি পুড়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা বলেন, ক্যাম্পে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তারা নিজদের মধ্যে প্রায়ই গোলাগুলি করছে। এতে হতাহত হচ্ছেন অনেকেই। পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসা সদস্যরা এই ক্যাম্প ধ্বংস করতে চেয়েছিল। অবশেষে সেটা বাস্তবে রূপ পেল। তাদের কারণে রোহিঙ্গাদের খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে। এর আগেও এই ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল।
রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, রবিবার বালুখালীর আশ্রয়শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। ঘটনার দুদিন আগে আশ্রয়শিবিরে একটি অডিও ভাইরাল হয়। সেখানে আশ্রয়শিবিরে আগুন লাগানোর কথা বলা হয়। গত রবিবার বিকেলে ভাইরাল হয় আরেকটি ভিডিও। ভিডিওতে কিছু রোহিঙ্গাকে আশ্রয়শিবিরের ঘরে আগুন লাগাতে দেখা গেছে। এই দুটি অডিও-ভিডিও প্রচার করে আরসা। তাতেই অনেকে ধরে নেন ঘটনা পরিকল্পিত।
তবে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে আগুনের প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এই অগ্নিকাণ্ডে জড়িত সন্দেহ এক রোহিঙ্গাকে আটক করেছে আর্মড পুলিশ ও পুলিশ। আটক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। এ প্রসঙ্গে উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আটক যুবকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি। এখনো সে পুলিশের হেফাজতে।’
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজারের বেশি ঘর পুড়ে গেছে। এর মধ্যে শতাধিক দোকান, ২০টির বেশি বেসরকারি সংস্থার হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠদানকেন্দ্র, ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র, ৩৫টি মসজিদ-মাদ্রাসা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের মধ্যে শুকনো খাবারের পাশাপাশি অতি প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা হচ্ছে।’
অগ্নিকাণ্ডের পর গৃহহীন হয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের থাকার ব্যবস্থা করতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইএমও) কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের তাঁবু, রশি ও ত্রিপল সরবরাহ করতে দেখা গেছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ও ওয়ার্ল্ড ভিশনের যৌথ উদ্যোগে দুপুর ও রাতের খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। আগামী ১০ দিন ১৮ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে দুবেলা খাবার বিতরণ করবে ওয়ার্ল্ড ভিশন। আইএমও ও ব্র্যাক মিলে প্রতিদিন ২৮ হাজার লিটার সুপেয় পানি সরবরাহ করবে বলে জানা গেছে। পুড়ে যাওয়া ক্যাম্পে ৫টি মেডিকেল টিম রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। যেখানে ৯০ জন কমিউনিটি হেলথকর্মী কাজ করছেন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণ করছেন।
তদন্ত কমিটি গঠন : রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগার কারণ খুঁজে বের করতে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান জানান, তাকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস, এপিবিএন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা রয়েছেন। গতকাল সকাল থেকে তদন্ত কমিটি অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কারণ বের করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
গত রবিবার বিকেল ৩টার দিকে বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ব্লকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের চেষ্টায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
কার্বন নির্গমন কমাতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের চাপ বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। কয়লা, তেল বা গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে বিকল্প শক্তি হিসেবে সৌরবিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। বিশ্বের নানা দেশে নানা উপায়ে বসানো হচ্ছে সোলার প্যানেল। তবে সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে পর্তুগালের এক প্রকল্প অভিনব সমাধানসূত্র তুলে ধরেছে বিশ্বের সামনে। জলবিদ্যুতের এক বাঁধের জলাশয়ে ভাসমান সোলার প্যানেল বসিয়ে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্তুগালের আলকেভা জলাশয়ে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ভাসমান সোলার পার্কটির আয়তন প্রায় ছয়টি ফুটবল মাঠের সমান। ইডিপি নামের একটি জ্বালানি কোম্পানি সোলার পার্কটি তৈরি করেছে। পাঁচ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ ক্ষেত্রটি তৈরিতে সময় লেগেছে সাত বছর।
ইডিপির গ্রুপ ডিরেক্টর মিগেল পাতেনা বলেন, এটা পুরোপুরি কাজ করছে এবং সবাই এর সম্ভাবনা পুরোপুরি উপলব্ধি করছে। শুধু জ্বালানি বিক্রিই আমাদের টিমের কাছে আসল লক্ষ্য নয়। যতটা সম্ভব কম সম্পদ ব্যবহার করে টেকসই প্রক্রিয়াই প্রধান বিষয়।
তিনি বলেন, ভাসমান সোলার পার্কের একটা বাড়তি সুবিধা রয়েছে। কারণ সেগুলো এমন জায়গা দখল করে, যেটি অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। পানিতে থাকার কারণে জমির তুলনায় আরও কার্যকরভাবে জ্বালানি উৎপাদন করা যায়। প্যানেল বেশি গরম হয় না, ফলে বেশি দিন টেকে।
যতটা সম্ভব জ্বালানি উৎপাদন করতে হলে প্যানেলগুলো পরিষ্কার রাখা জরুরি। সেই কাজ করার সময় ব্যালেন্সের ক্ষমতা ও ধৈর্য অত্যন্ত জরুরি। মিগেল পাতেনা মনে করেন, ‘সৌরশক্তি এখনো পুরোপুরি বিকল্প হয়ে ওঠেনি, বরং অন্যান্য উৎসের পাশাপাশি সম্পূরক হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে। আরও অগ্রসর হয়ে পরিবর্তন ও কার্বন নির্গমন পুরোপুরি বন্ধ করার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে এটা একটা সমাধানসূত্র।
আলকেভার সৌর প্ল্যান্টে ইউরোপের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম হ্রদের ১ শতাংশও ঢাকা পড়ছে না। তাই কোম্পানিটি হ্রদের ওপর আরও বড় আকারের ভাসমান প্যানেল তৈরির পরিকল্পনা করছে।
২০৩০ সালের মধ্যে পর্তুগাল শতভাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, এই উদ্যোগ তারই অংশ উল্লেখ করে মিগেল পাতেনা বলেন, ‘এটা পর্তুগালের জন্য একটা মাপকাঠি এবং বাকি বিশ্বের জন্যও একটা দৃষ্টান্ত। আমাদের প্রকল্পই প্রথম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবহার করছে এবং বিশেষ করে এশিয়ার জন্য মাপকাঠি হয়ে উঠছে। এশিয়ায় এমন প্রকল্পকে ঘিরে গভীর আগ্রহ রয়েছে, কারণ সেখানেও বিশাল বাঁধ রয়েছে এবং জ্বালানি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। তারাও এমন ধরনের প্রকল্প বড় আকারে শুরু করবে। অর্থাৎ বিশ্বজুড়ে এমন ভাসমান সোলার পার্ক ছড়িয়ে পড়বেÑ এমনটা প্রত্যাশা করা যায়।
বেলজিয়ামের নতুন অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে সম্মানতি বোধ করছেন ম্যানচেস্টার সিটি তারকা কেভিন ডি ব্রুইনা।
গত বছর বিশ্বকাপের পর রিয়াল মাদ্রিদ তারকা এডেন হ্যাজার্ড জাতীয় দলকে বিদায় জানান। বেলজিয়াম কোচ ডোমেনিকো টেডেসকো প্লেমেকার ডি ব্রুইনাকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেন। বিশ্বকাপের পর বেলজিয়ামের কোচের পদে রবার্তো মার্টিনেজের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন টেডেসকো।
গত জানুয়ারিতে ৩২ বছরে পা রেখেছেন ব্রুইনা। আরটিএল-টিভিআই টেলিভিশনে বেলজিয়ামের নেতৃত্ব পাওয়া নিয়ে ডি ব্রুইনা বলেছেন, ‘এভাবে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা সত্যিই সম্মানের। আমার বয়স প্রায় ৩২ হয়ে গেছে। আমি কখনই আন্তর্জাতিক অবসরের চিন্তা করিনি। আমি বিশ্বাস করি এখনো দলকে কিছু দেবার সক্ষমতা আমার আছে। এই সুযোগে তরুণদেরও সহযোগিতা করতে চাই।’
সুইডেনের বিরুদ্ধে শুক্রবার ইউরো বাছাইপর্বে অধিনায়ক হিসেবে ডি ব্রুইনার অভিষেক হতে যাচ্ছে। মাদ্রিদ গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া ও চেলসি রোমেলু লুকাকু ডি ব্রুইনার সহ-অধিনায়ক হিসেবে কাজ করবেন।
চতুর্থ পর্বে মাস্টারদা সূর্য সেনকে নিয়ে লিখেছেন ইসমত শিল্পী
সূর্য সেনের স্বাধীনতার স্বপ্ন
স্বাধীনতার মাস মার্চেই বিপ্লবী সূর্য সেনের জন্ম। ১৮৯৪ সালের ২২ মার্চ তিনি চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোয়াপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন।
মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের একজন অন্যতম নেতা এবং ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’র প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ১৯৩০ সালে তিনি চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন কওে সেখানে বিপ্লবী সরকার গঠন করেন। ১৯৩৩ সালে তাকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিচারে তাঁর ফাঁসি হয়।
বালক বয়সেই সূর্য সেন বুঝতে পেরেছিলেন যে, সাত সমুদ্র তেরো নদীর ওপার থেকে ছুটে আসা ইংরেজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে। জাস্টিস কিংসফোর্ডকে হত্যাচেষ্টার জন্য ক্ষুদিরামের ফাঁসি সূর্য সেনের হৃদয় ও মনকে দারুণভাবে আলোড়িত করে। কলেজে পড়ার সময়ই ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য তিনি বিপ্লবী সংগ্রামে যোগ দেন। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে পড়ার সময় শিক্ষক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী তাকে বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন। ইংরেজদের শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তির পথ খুঁজে বের করার জন্য সূর্য সেনের হৃদয়-মন তৈরি হয়। তিনি সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এ দেশ থেকে ইংরেজ তাড়ানোর অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা নেন।
সে সময় চট্টগ্রামে একটি গোপন বিপ্লবী দল ছিল। ১৯১৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে এই বিপ্লবী দলের কয়েকজন ছাড়া প্রায় সবাইকে গ্রেপ্তার করে সরকার জেল দেয়। বিপ্লবের জন্য স্বচ্ছ চিন্তা, জ্ঞান, বুদ্ধি ও মেধা অন্যদের তুলনায় বেশি থাকায় তিনি কিছু দিনের মধ্যেই দলের একজন নেতা হয়ে ওঠেন। চট্টগ্রামের বিভিন্ন অস্ত্রাগার লুণ্ঠন তার বুদ্ধি-পরামর্শ-নেতৃত্বেই সংঘটিত হয়েছিল।
সূর্য সেনের বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, দুঃসাহসী অভিযান, সঠিক নেতৃত্ব¡ এই উপমহাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিল। দেশের তরুণ ও যুবশক্তি তার আত্মাহুতিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মরণপণ স্বাধীনতা সংগ্রামে দলে দলে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সূর্য সেনের বাহিনী কয়েক দিনের জন্য ব্রিটিশ শাসনকে চট্টগ্রাম এলাকা থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। সূর্য সেনের অন্যতম সাথী বিপ্লবী অনন্ত সিংহের ভাষায়, ‘কে জানত যে আত্মজিজ্ঞাসায় মগ্ন সেই নিরীহ শিক্ষকের স্থির প্রশান্ত চোখ দুটি একদিন জ্বলে উঠে মাতৃভূমির দ্বিশতাব্দীব্যাপী অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হবে? ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহ দমনের জন্য বর্বর অমানুষিক অত্যাচারের প্রতিশোধ, জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ! কে জানত সেই শীর্ণ বাহু ও ততোধিক শীর্ণ পদযুগলের অধিকারী একদিন সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ রাজশক্তির বৃহত্তম আয়োজনকে ব্যর্থ করে তার সব ক্ষমতাকে উপহাস করে বছরের পর বছর চট্টগ্রামের গ্রামে গ্রামে বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে তুলবে?’
সূর্য সেন পরে ছাত্রদের মাঝে বিপ্লবের মন্ত্র ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষকতার পেশা গ্রহণ করেন। চরিত্রের মাধুর্য দিয়ে বুঝিয়ে-সুজিয়ে দলে দলে যুবকদের তার বিপ্লবী দলে টেনে আনেন। তিনি দেশপ্রেমের শিখাকে প্রত্যেকের অন্তরে জ্বেলে দেন। ছাত্রদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ মেলামেশার কারণে নিজের স্কুল ও শহরের বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ছাত্ররা একান্ত আপনজনের মতো তাকে ‘মাস্টারদা’ বলে ডাকতে শুরু করে।
১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে মাস্টারদার স্ত্রী পুষ্পকুন্তলা হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে মারা যান। এ সময় মাস্টারদা জেলে ছিলেন। পরে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।
১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে মাত্র কয়েকজন যুবক রাত সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রাম পাহাড়ের ওপর অবস্থিত অস্ত্রাগারটি আকস্মিকভাবে আক্রমণ করে দখল করে নেন এবং সব অস্ত্র লুণ্ঠন ও ধ্বংস করে ফেলেন। সূর্য সেন সেই রাতে ঘোষণা করেন, চট্টগ্রাম এই মুহূর্তে দুইশ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করেছে। এই মুহূর্তে চট্টগ্রাম স্বাধীন।
মাস্টারদার নেতৃত্বে চট্টগ্রাম শহর ৪৮ ঘণ্টার জন্য ইংরেজ শাসনমুক্ত ও স্বাধীন ছিল। জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ শেষ হওয়ার পরও তারা টানা তিন বছর গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছিলেন। ব্রিটিশ সৈন্যদের দৃষ্টি থেকে মাস্টারদাকে আড়ালে রাখার উদ্দেশ্যেই বিপ্লবীরা এই যুদ্ধ চালিয়েছিলেন।
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনাধীন পরাধীন ভারতের স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা। সূর্য সেন ছাড়াও এই দলে ছিলেন গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, নির্মল সেন, অনন্ত সিং, অপূর্ব সেন, অম্বিকা চক্রবর্তী, নরেশ রায়, ত্রিপুরা সেনগুপ্ত, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য, শশাঙ্ক শেখর দত্ত, অর্ধেন্দু দস্তিদার, হরিগোপাল বল, প্রভাসচন্দ্র বল, তারকেশ্বর দস্তিদার, মতিলাল কানুনগো, জীবন ঘোষাল, আনন্দ গুপ্ত, নির্মল লালা, জিতেন দাসগুপ্ত, মধুসূদন দত্ত, পুলিনচন্দ্র ঘোষ, সুবোধ দে, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এবং কল্পনা দত্ত। ছিলেন সুবোধ রায় নামের এক ১৪ বছরের বালক।
বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তারের হাত থেকে অলৌকিকভাবে রক্ষা পেয়েছেন মাস্টারদা। চট্টগ্রামের কাছেই গইরালা গ্রামে এক বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন মাস্টারদা। এক জ্ঞাতির বিশ্বাসঘাতকতায় ব্রিটিশ সৈন্যরা তার সন্ধান পেয়ে যায়। মাস্টারদা গ্রেপ্তার হন ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। ১৯৩৪ সালে ফাঁসির আগেই স্বাধীনতার স্বপ্নের কথা বলেছিলেন সূর্য সেন। ১৯৩৪ সালে ১২ জানুয়ারি ভোর ১২.৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর হয়। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার আগে সঙ্গীদের উদ্দেশে তিনি লিখে যান, ‘আমি তোমাদের জন্য রেখে গেলাম মাত্র একটি জিনিস, তা হলো আমার একটি সোনালি স্বপ্ন। স্বাধীনতার স্বপ্ন। প্রিয় কমরেডস, এগিয়ে চলো, সাফল্য আমাদের সুনিশ্চিত।’
কোনো জেলায় কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন রয়েছে কি না তা জানতে তালিকা তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, প্রত্যেক ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করা আমার সরকারের লক্ষ্য হওয়ায় আমি প্রত্যেককে বাড়ি দেব। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই প্রতিটি মানুষ বাড়ি, আশ্রয় এবং জীবিকার সুযোগ পাবে। তারা আর সমাজের বোঝা হয়ে থাকবে না। আমরা চাই প্রত্যেকে নিজের পায়ে দাঁড়াবে এবং যথাযথ সম্মানের সঙ্গে বসবাস করবে।’
গতকাল প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের চতুর্থ ধাপে বাড়ি হস্তান্তরের সময় এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি সাতটি জেলা ও ১৫৯টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। জেলাগুলো হলো মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা।
এর আগে তিনি পঞ্চগড় ও মাগুরার সব উপজেলাসহ ৫২টি উপজেলাকে গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। তিনি গতকাল ৯টি জেলা এবং ২১১টি উপজেলা গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করেন। খবর বাসসের।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভূমিহীনদের ঘর দেওয়ার সবচেয়ে বড় অর্জন হলো দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। জাতির পিতা দেশকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত করে বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে একটি উন্নত ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন দিতে চেয়েছিলেন। যার জন্য তার সরকার অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাংলাদেশে কেউ গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না বলে তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে গৃহহীনদের জন্য পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু করেন। বঙ্গবন্ধুর পদচিহ্ন অনুসরণ করে তিনি বলেন, তার সরকার ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের বাড়িঘর ও জমির মালিকানা দেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোহাম্মদ তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া। অনুষ্ঠানে বাড়িপ্রাপ্তদের পরিবর্তিত জীবনযাত্রার ওপর একটি ভিডিও-প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সরকার প্রধান বলেন, ‘কেউ ঠিকানা ছাড়া থাকবে না। আমরা তাদের শুধু ঘরই দিইনি, বিশুদ্ধ খাবার পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করে দিয়েছি। তাদের জীবিকার জন্য ঋণও দিয়েছি। তারা এখন দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে।’ তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা ঘোষণা করেছিলেন, একজন ব্যক্তি ১০০ বিঘা জমির অধিকারী হতে পারবে এবং এর অতিরিক্ত পরিমাণ জমি কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।
বাংলাদেশকে বিমান যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র গড়তে রোডম্যাপ জরুরি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভৌগোলিক-কৌশলগত সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশকে বিমান যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে একটি রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। গতকাল ঢাকায় প্রথম অ্যাভিয়েশন সামিটের উদ্বোধন অধিবেশনে দেওয়া এক ভিডিও ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সহযোগিতায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ অ্যাভিয়েশন সামিট-২০২৩’-এর আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী এই শীর্ষ সম্মেলনকে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। কারণ, দেশটির এই অঞ্চলে একটি বিমান যোগাযোগের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হওয়ার আকাক্সক্ষা রয়েছে।
বাংলাদেশকে বিমান যোগাযোগের একটি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে শেখ হাসিনা যাত্রী ও মালামাল উভয়ের জন্যই একটি উন্নত ও টেকসই বাজার সৃষ্টির পাশাপাশি সহায়ক পরিবেশ তৈরির জন্য সরকারি সংস্থা, এয়ারলাইনস ও সংশ্লিষ্ট অন্য সব পক্ষকে যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘সরকার ই-ভিসা সিস্টেম চালু করতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে ও পর্যটনে আসা যাত্রীদের সুবিধা দেবে ও ভিসা প্রক্রিয়া দ্রুত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের যুবকদের অবশ্যই পাইলট, বিমান প্রকৌশলী, মেকানিক, ক্রু ও আরও অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ থাকতে হবে।’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, তার সরকারের প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি দেশের বিমানশিল্পে লোকবলের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এই বিমানশিল্প এরই মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উদাহরণ সৃষ্টির মাধ্যমে নেতৃত্ব দিতে হবে।
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী ও ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী বক্তব্য দেন।
রাজধানীর মালিবাগ রেলগেটে ট্রেনের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষের ঘটনায় ২ ঘণ্টা পর চালু হয়েছে রেল যোগাযোগ।
ইঞ্জিন পরীক্ষার পর পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি রাত ১১টার দিকে ছেড়ে যায়। এতে সড়কের ২ পাশের যান চলাচলও স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে।
বুধবার রাত ৯টার পর মালিবাগ লেভেল ক্রসিংয়ে পঞ্চগড়গামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনটি সোহাগ পরিবহনের একটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাসে ধাক্কা দেয়। এতে বাসের সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, এ ঘটনায় তিন জন আহত হন। দুর্ঘটনার সময় বাসটিতে কোনো যাত্রী ছিল না। ট্রেনের গতিও কম ছিল।
মাদারীপুরের শিবচরে সড়ক দুর্ঘটনার কামরুজ্জামান ফকির (৩৫) নামে এক পল্লি চিকিৎসক নিহত হয়েছেন। এ সময় জাহিদ (২৮) নামে আরেকজন আহত হন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর ৬টার দিকে উপজেলার শেখপুর বাজারসংলগ্ন মির্জারচর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত কামরুজ্জামান মাদারীপুর সদর উপজেলার আদিত্যপুর গ্রামের আবদুর রব ফকিরের ছেলে।
হাসপাতালে, ফায়ার সার্ভিস ও নিহতের আত্মীয় সূত্রে জানা যায়, ভোরে কামরুজ্জামান তার আপন ভায়রা জাহিদকে নিয়ে তাবলিগ জামাতে অংশ নিতে গাজীপুরের টঙ্গী যাওয়ার উদ্দেশে শিবচরের পাঁচ্চর বাসস্ট্যান্ডের দিকে রওনা হন। পাঁচ্চর থেকে বাসযোগে টঙ্গী যাওয়ার কথা ছিল তার। এ সময় তার মোটরসাইকেলটি শিবচর-মাদারীপুর আঞ্চলিক সড়কে শিবচরের শেখপুর মির্জারচর নামক স্থানে আসলে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে মোটরসাইকেল থাকা দুজন গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা কামরুজ্জামানকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যাওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আহত জাহিদকে উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।
শিবচর ফায়ার সার্ভিসের লিডার তরুনুর রশিদ খান বলেন, ভোরে আমরা খবর পেয় ঘটনাস্থলে যাই। সেখান থেকে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। পরে ডাক্তার তাকে মৃত্যু ঘোষণা করেন।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সর কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, সকালে রোগীকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন উদ্ধার করে এখানে নিয়ে আসে। পরে আমরা পরীক্ষা করে দেখতে পাই হাসপাতালে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
নতুন একটি সাবান বাজারের জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডকে পেছনে ফেলে দিয়েছিল। সব ব্র্যান্ডের সাবানের বিক্রি নেমে গিয়েছিল প্রায় শূন্যের কোঠায়। নতুন সেই সাবান এক নম্বরে উঠে এলো শুধু একটি ট্যাগলাইন বা স্লোগানের বদৌলতে। সেই স্লোগানটি ছিল ‘শতভাগ হালাল সাবান’। গোসলে সাবান লাগে, তাতে খাওয়ার বিষয় নেই, কিন্তু বাঙালিকে হালাল সাবানে গোসল করার কথা মাথায় ঢুকিয়ে সাবানের বাজার দখল করে ফেলার এ অভিনব মার্কেটিং আইডিয়া এসেছিল যারা মাথা থেকে, তিনি সৈয়দ আলমগীর। সেই আলোচিত বিপণন-ঘটনা এখন পড়ানো হয় বিপণন শিক্ষার্থীদের, বিখ্যাত বিপণন লেখক ফিলিপ কটলার তার বইয়ে ব্যবহার করেছেন সৈয়দ আলমগীরের এই ‘হালাল-সাবান কেইস’।
বাংলাদেশের বিপণন জগতের এই সুপারস্টার সৈয়দ আলমগীর তার বিপণন জীবনে শুরু করেছেন এক নতুন যাত্রা। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ভোগ্যপণ্য (এফএমসিজি) বিভাগের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি আকিজ ভেঞ্চার্সের গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৯ সালে চ্যানেল আই এবং বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম তাকে ‘মার্কেটিং সুপারস্টার’ খেতাব দেয়। দেশ-বিদেশের বহু পুরস্কার পাওয়া এই বিপণন ব্যক্তিত্ব ইউনিসেফের প্রাইভেট সেক্টর অ্যাডভাইজরি বোর্ডেরও সদস্য।
সৈয়দ আলমগীরকে নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মার্কেটিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মিজানুর রহমান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে বিপণন অঙ্গনে অসামান্য সব আইডিয়া নির্ভর কাজ করে যাচ্ছেন আলমগীর। পরবর্তী প্রজন্মের হাজার হাজার বিপণনকর্মী তৈরি করেছেন তিনি, যারা দেশের বিপণন অঙ্গনের চেহারাই বদলে দিচ্ছে। সৈয়দ আলমগীর একই সঙ্গে নানা জায়গায় মার্কেটিং বিষয়ে শিক্ষকতাও করেছেন। ফলে একই সঙ্গে একাডেমিক এবং প্রায়োগিক দুই জায়গায় তিনি দক্ষতার সঙ্গে অসামান্য অবদান রাখছেন।’
নবযাত্রায় দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিপণন গুরুর সঙ্গে আলাপ হয় এই প্রতিবেদকের। আগে থেকে ঠিক করে রাখা সময়ে মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ভবনে গিয়ে দেখা গেল, শুভেচ্ছার ফুলে ভরা ঘরে একটি কলি হয়ে বসে আছেন সৈয়দ আলমগীর।
চা খেতে খেতে জানালেন, খুবই সচেতনভাবে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ) থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ) শেষ করে বিপণন পেশায় এসেছিলেন তিনি। বলছিলেন, সব সময় শিখতে উন্মুখ তিনি, এমনকি এখনো সহকর্মীদের থেকে শেখেন।
সফল এই বিপণন ব্যবস্থাপক বলছিলেন, ‘বিপণনে সফল হতে হলে সব সময় শিখতে হবে, চিঠি কীভাবে ভাঁজ করবেন, সেটারও একটা রীতি আমাকে শিখিয়েছে “মে অ্যান্ড বেকার”। বছরের কোন সময় টাই পরতে হবে, সেটাও শেখার ব্যাপার আছে। সবচেয়ে বেশি শিখতে হবে শৃঙ্খলা আর সময়ানুবর্তিতা। আর তার সঙ্গে সঙ্গে লাগবে নতুন ধারণা, নিউ আইডিয়া।’
সৈয়দ আলমগীরের আইডিয়ার বিশ্বজয়েরই উদাহরণ হালাল সাবানের ঘটনা। এর প্রভাব এখন কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে বলছিলেন, ‘হালাল সাবানের ক্যাম্পেইন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খেয়াল করেছি দেশে ইউনিলিভারের লাক্সসহ প্রায় সব সাবানের বিক্রি অদ্ভুতভাবে কমে গেছে। সাবানের মার্কেট শেয়ারের অধিকাংশটাই দখল করে ফেলেছে অ্যারোমেটিক হালাল সাবান। ইউনিলিভারের শেয়ার প্রায় ধসে গিয়েছিল। শুধু তা-ই নয়, মার্কেট ডিজাস্টারের জন্য ইউনিলিভারের উচ্চ ও মধ্যপর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তার চাকরি চলে যায়। পরে ভারত থেকে উচ্চপর্যায়ের ম্যানেজমেন্ট কমিটি আসে পরস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য। তাদেরও বেশ কয়েক বছর লেগে যায় এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে।’
এই সাফল্যের পাশাপাশি সৈয়দ আলমগীর বলছিলেন, ‘আমি যেসব প্রতিষ্ঠানেই কাজ করেছি তাদের আধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। যমুনায় না গেলে পেগাসাস কেডস ও শতভাগ হালাল সাবান আমি করতে পারতাম না। এসিআইয়ে আসা খুব ভালো সিদ্ধান্ত ছিল। এর কনজ্যুমার ব্র্যান্ডস বিভাগ খুব ছোট ছিল। এখন অনেক বড় হয়েছে। এখানে এসে আমি লবণের দেশসেরা ব্র্যান্ডটি তৈরি করেছি। জার্মানিতে একটি বাসায় গিয়ে দেখলাম, লবণ ধবধবে সাদা ও ঝরঝরা। সেখান থেকে মাথায় এলো, বাংলাদেশের লবণ কেন ঝরঝরা নয়। দেশে এসে বিষয়টি নিয়ে এসিআইয়ের চেয়ারম্যান এম আনিস উদ দৌলার সঙ্গে আলাপ করলাম। এরপর এসিআই আনল ধবধবে সাদা ও মিহিদানার ঝরঝরে লবণ। প্রক্রিয়াজাত করতে খরচ বেশি বলে দাম একটু বেশি ধরতে হলো। তাই বাজার পাওয়া কঠিন হলো। লবণের স্লোগান দিলাম, “মেধা বিকাশে সহায়তা করে”। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘কেডসের একটি তুমুল জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ছিল পেগাসাস। বাংলাদেশে কেডসের ব্র্যান্ড আমার হাতেই তৈরি।’
নতুন যাত্রায় লক্ষ্য কী জানতে চাইলে সৈয়দ আলমগীর বললেন, মেঘনার তো প্রচুর পণ্য। আমি চাইব এ দেশের মানুষ ঘরে ঘরে মেঘনার পণ্য ব্যবহার করুক। সেটাই আপাতত লক্ষ্য।’
সফল বিপণন কর্মী হতে হলে কী করতে হবে, আগ্রহীরা জানতে চাইলে কী বলবেন? জবাবে সৈয়দ আলমগীর বলেন, ‘তরুণরা যখন যে কাজটি করবে, সেটি মনোযোগ দিয়ে করতে হবে। পড়াশোনার সময় পড়াশোনা। চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজের কাজটি। নো শর্টকাটস। আর আরেকটি বিষয় হলো, মানুষকে জানতে হবে। ক্রেতার সম্পর্কে না জানলে ভালো ব্যবস্থাপক হওয়া যায় না। আকাক্সক্ষাটাও একটু কমিয়ে রাখতে হবে। নিজের কাজ দক্ষতার সঙ্গে করলে সাফল্য আসবেই। মানুষ পারে না এমন কিছুই নেই। শুধু চেষ্টা আর সঠিক স্ট্র্যাটেজি (কৌশল) দরকার।’
প্রচণ্ড নিয়মানুবর্তী সৈয়দ আলমগীর এরপর দেখালেন অপেক্ষা করে আছে অনেকে দরজার বাইরে, দীর্ঘসময় নিয়ে আলাপ করবেন কথা দিলেন, ঈদসংখ্যার বিশেষ সাক্ষাৎকারের জন্য।
ধন্যবাদ দিয়ে চলে আসতে আসতেও মাথায় ঘুরছিল সৈয়দ আলমগীর আর তার কথা- মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। নো শর্টকাটস টু সাকসেস।
প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমান। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সহকারী অধ্যাপক। হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্যে এসে পরিচিত হন প্রফেসর হজরত হিসেবে। প্রফেসর মানে অধ্যাপক। একজন অধ্যাপক কেমন করে হজরত (নামের আগে সম্মানার্থে ব্যবহৃত শব্দবিশেষ, সম্মানসূচক সম্বোধন) হয়ে ওঠেন- এ এক অবিশ্বাস্য গল্প। লিখেছেন মুহাম্মাদ আদম আলী
একজন মানুষের দুনিয়াবিমুখতা, ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ঐকান্তিক পরিশ্রম, আলেমদের প্রতি সম্মানবোধ ও ভালোবাসা, শরিয়ত ও সুন্নতের ওপর সার্বক্ষণিক আমলের আপ্রাণ চেষ্টা কতটা নিবিড় ও আন্তরিক হতে পারে তা প্রফেসর মুহাম্মাদ হামীদুর রহমানকে না দেখলে, তার সম্পর্কে না জানলে, তার সান্নিধ্যে না গেলে বলে কিংবা লিখে বোঝানো যাবে না। তার উদাহরণ বর্তমান সমাজে এক ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত। আলেমদের সোহবত তাকে এমন উচ্চতায় আসীন করেছে, অনেক আলেমদের জন্যও তিনি পরিণত হয়েছেন এক বাস্তব আদর্শে। অসংখ্য আলেম তাকে আধ্যাত্মিক রাহবার (পথপ্রদর্শক ও পীর) হিসেবে মানেন, তার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছেন। তাকে দেখে অনেক বুজুর্গ এমনও মন্তব্য করেছেন, তার সান্নিধ্যে সাহাবিদের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রফেসর হজরত ৯ জানুয়ারি ১৯৩৮ সালে মুন্সীগঞ্জের নয়াগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরে প্রাইমারি স্কুলে পড়েছেন। এ সময় মক্তবে গিয়েছেন। গ্রামের বাড়ির কাছেই ছিল মক্তব। মক্তবের উস্তাদ মরহুম মাওলানা মাকবুল হুসাইন (রহ.)-এর কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। শৈশব থেকেই তার পিতা ইয়াসিন (রহ.) তাকে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মক্তবের উস্তাদদের খেদমতে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের সান্নিধ্যেই হজরতের মনে দ্বীনি অনুভূতি সঞ্চার হতে থাকে। এমনিতে তার বাবা ম্যাট্রিক পাস করে সরকারি চাকরি করতেন রেলওয়ে বিভাগে। কিন্তু কোরআন মাজিদের আশেক ছিলেন। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে কোরআন তেলাওয়াত করতেন। বাসায় ফিরে বিকেলেও কোরআন পড়তেন। কোরআনের প্রতি পিতার এই ভালোবাসা সন্তানের মনেও আসন গেড়ে বসে।
ইসলামিয়া হাইস্কুল থেকে ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতেই বাবাকে হারান। তারপর হজরতের জীবন কঠিন হয়ে ওঠে। সংসারে বাবাই ছিলেন একমাত্র আয়ের উৎস। তার ইন্তেকালে সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটনের বোঝা। ঢাকার নিমতলীতে যে বাসায় মা এবং তার আরও দুই ভাইকে নিয়ে থাকতেন, সেখানেও বেশিদিন থাকতে পারেননি। গ্রামে চলে যেতে হয়।
১৯৫৭ সালে কলেজ পাস করে ভর্তি হন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমানে বুয়েট)। এ সময় হজরতের সংসার চলত বাবার পেনশনের টাকায়। অনেক কষ্টে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন। তারপর শুরু করেন কর্মজীবন। প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন এবং পরে ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে চাকরি করেন। এ সময় বাসা ভাড়া নেন আজিমপুরে। আর তখনই পরিচয় হয় হজরত মাওলানা আবদুল্লাহ (রহ.)-এর সঙ্গে। তিনি অনেক বড় আলেম ছিলেন। তার কাছে নানা বিষয়ের জ্ঞান লাভ করেন। বিশেষ করে কোরআন মাজিদের ক্ষেত্রে হজরতের পারদর্শিতা মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের সঙ্গে থাকার বরকতে অর্জিত হয়েছে।
১৯৬৫ সালে হজরত কোম্পানি থেকে ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ড যান। প্রায় ৯ মাস সেখানে ছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে ফিরে হজরতের দ্বীনি অনুভূতি অনেক বেড়ে যায়, তিনি দাড়ি রেখে দেন। হজরতের মা খুব পরহেজগার নারী ছিলেন। কোরআন তেলাওয়াত নিয়ে দিন-রাত পড়ে থাকতেন, তাহাজ্জুদ পড়তেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিয়ে করেন। তিনি ৫ ছেলে ও ২ মেয়ের জনক। ছেলেরা সবাই হাফেজ ও আলেম।
ইংলিশ ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে হজরতের ব্যাপক পরিচিতি ছিল, সুনাম ছিল। বছর না ঘুরতেই তিনি কোম্পানির জন্য একটা সম্পদ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালের শুরুর দিকে কোম্পানির প্রোডাক্ট সেলের জন্য ঘুষের প্রচলন শুরু হলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। এক পর্যায়ে লোভনীয় চাকরিটি ছেড়ে দেন।
পরে অনেক কম বেতনে ১৯৬৯ সালে তিনি বুয়েটে যোগ দেন। পদবি সহকারী অধ্যাপক। তিনি মাস্টার্স ও পিএইচডি করেননি। সুতরাং তার প্রমোশন হয়নি। এ সময় তিনি তাবলিগে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। ইতিমধ্যে বড় ছেলেকে মাওলানা আবদুল্লাহ হুজুরের মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কোথাও যেন একটা অপূর্ণতা ছিল। কারণ, আল্লাহ তাকে যে কাজের জন্য দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, সেটি যেন এখনো হাতের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। শিগগিরই সেটিও পূর্ণ হয়ে যায়। তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সোহবত লাভে ধন্য হন।
প্রফেসর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন ১৯৭৪ সালে। বায়াতের পর হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) অপূর্ব একটি নসিহত করেন। তাহলো- ‘চোখের গোনাহ থেকে বাঁচেন।’ এই এক কথায় হজরতের আমল শুরু হয়ে যায়। এর আগে তাবলিগে সময় লাগানোর কারণে কথাটি বহুবার শুনেছেন। কিন্তু আমলের সুযোগ হয়নি। হাফেজ্জী হুজুরের নসিহতের পর এ আমল শুরু করেন। বায়াত হওয়ার পাঁচ বছর পর তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর খেলাফত লাভ করেন।
১৯৮০ সালে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর সঙ্গে হজের সফর করেন। মদিনায় একদিন ভোররাতে তাহাজ্জুদের নামাজের সময় হয়েছে। যথারীতি হাফেজ্জী হুজুর অজু করে প্রস্তুতি নিয়েছেন মসজিদে যাওয়ার। হাফেজ্জী হুজুরের একটা লাঠি ছিল, ওই সময় লাঠিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে তাহাজ্জুদের সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি যেতে হবে। একটু খোঁজ করেই হাফেজ্জী হুজুর হজরতকে বললেন- ‘থাক, লাগব না লাঠি। আপনিই আমার জিন্দা লাঠি।’ দেশে ফিরেও এই কথা বলেছেন, ‘হামীদুর রহমান আমার জিন্দা লাঠি।’ তখন থেকেই হজরতের নাম হয়ে যায়- ‘জিন্দা লাঠি।’
প্রফেসর হজরত ১৯৮৫ সালে হাফেজ্জী হুজুরের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেন। এ সফরে যাওয়ার আগে তিনি ছুটি পাননি। অনেক অনুরোধের পরও বুয়েট কর্র্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দেয়নি। এ জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। ইংল্যান্ড সফরের শেষ দিকে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) হজরতকে বললেন, ‘আপনি আমার জন্য চাকরি ছেড়ে দিলেন? দেশে গিয়ে কী করবেন?’ হজরত বললেন, ‘হুজুর! আমি আল্লাহর খুশির জন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার তো কোনো ভয় লাগে না।’ কথার জবাব দেওয়া হয়ে গেল। এখন একটুখানি থেমে হাফেজ্জী হুজুর বললেন, ‘এবার দরসিয়াতের (কওমি নেসাবে) কিতাবগুলো পড়ে ফেলেন। নিজে আলেম হন। নিজে মাদ্রাসা করে পড়ান।’ চিন্তা করলে অবাক হতে হয়, আল্লাহর অলি কী জিজ্ঞেস করলেন, আর কী সমাধান দিলেন?
প্রফেসর হজরত আপন পীর ও শায়খের এই নসিহত পুরোপুরি আদায় করতে পারেননি বলে আফসোস করেন। মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন ঠিকই, কিন্তু দরসিয়াতের কিতাবগুলো পড়তে পারেননি। এজন্য এখনো এই বৃদ্ধ বয়সে সময়-সুযোগ হলে কারও কাছে দরসিয়াতের কিতাব পড়ার চেষ্টা করেন।
প্রফেসর হজরত প্রফেশনালি খুব খ্যাতি অর্জন করেছেন। সরকারি পর্যায়ে গঠিত বিভিন্ন কমিটিতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে বৈষয়িকভাবে আর ব্যস্ত হতে চাননি। তিনি দুনিয়ার যশ-খ্যাতির তুলনায় আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন, তিনি সফলও হয়েছেন। দুনিয়াতে এর নমুনাও প্রকাশ পেয়েছে। হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর ইন্তেকালের পর তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানভি (রহ.)-এর সর্বশেষ খলিফা মুহিউস সুন্নাহ মাওলানা আবরারুল হক (রহ.)-এর কাছে বায়াত হন এবং খেলাফত লাভ করেন।
২০১২ সালে তিনি আমেরিকায় দীর্ঘ সফর করেন। এ সময় নিউইয়র্ক, বাফেলো, নায়াগ্রা, মিশিগান, আটলান্টা, ফ্লোরিডা, লস এঞ্জেলেস, সান ফ্রান্সিসকো, ডালাস, হিউস্টন এবং অস্টিনে হজরতের প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে তিনি ইংরেজিতে বয়ান করেন। তার ইংরেজি বলার দক্ষতা অসাধারণ। পরে ২০১৪ সালে নিউজিল্যান্ড এবং ২০১৫ সালে কানাডা সফর করেন। কিন্তু অসুস্থতার জন্য এরপরে আর বিদেশ সফর করতে পারেননি। তার বিদেশ সফর নিয়ে মাকতাবাতুল ফুরকান থেকে তিনটি সফরনামা বের করা হয়েছে। এ ছাড়া একই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান থেকে তার অপূর্ব জীবনী, বয়ান, মালফুযাত ও অন্যান্য বিষয়ে আরও ১৬টি বই প্রকাশিত হয়েছে।
হজরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.) ছিলেন কোরআনের মানুষ। তার জিহ্বা সর্বদা নড়ত, জিকির না হলে কোরআন তেলাওয়াত। গ্রামে-গঞ্জে মক্তব প্রতিষ্ঠার মিশন নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। প্রফেসর হজরত এটা উত্তরাধিকার সূত্রে লাভ করেছেন। তিনিও মক্তব প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের আনাচে-কানাচে ছুটে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন দুই জনের কাঁধে ভর দিয়ে তাকে দাঁড়াতে হয়, তখনো তিনি ছুটে চলছেন। গাড়িতে শুয়ে শুয়ে সফর করেন। মুখে কথা বলতে কষ্ট হয়। শারীরিক সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু হাফেজ্জী হুজুরের সান্নিধ্য তার অন্তরে কোরআনের যে মহব্বত আসন গেড়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র দুর্বলতা আসেনি। এক অপার্থিব রুহানি শক্তিতে তিনি পথ চলেন। এ পথ তিনি আমৃত্যু চলবেন, তার ছায়া আমাদের ওপর আরও দীর্ঘ হোক- দয়াময় আল্লাহর কাছে এই প্রাথর্না করি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলি প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ‘সততার বুলি’ আওড়ান। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো বদলি হয় না এ কথাই জোর দিয়ে বলেন তারা।
দেশ রূপান্তরের অনুসন্ধানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদলির বিষয়ে জানা গেছে ভয়ংকর তথ্য। ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর অনলাইন-বদলির সুযোগ না থাকলেও, টাকা হলেই বদলি হওয়া যায়। আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে জারি করা হচ্ছে আদেশ। এসব আদেশ অবশ্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয় না। নিয়মিত রাজধানীসহ সারা দেশে শিক্ষক বদলি করা হচ্ছে। তারা যোগদানও করেছেন। অনলাইন প্রক্রিয়ার বাইরেই এসব হচ্ছে।
গত তিন মাসে অনলাইন-ছাড়াই শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এমন আটটি বদলির আদেশের কপি দেশ রূপান্তরের হাতে রয়েছে। কয়েকজনের যোগদানপত্রও দেশ রূপান্তরের কাছে আছে। বদলির এসব আদেশের বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। কোনো কারণে তার ছুটিতে থাকার সময় দায়িত্বে থাকা পরিচালক মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত কিছু আদেশও রয়েছে।
যেহেতু অনলাইন ছাড়া শিক্ষক বদলি বন্ধ, তাই আগের কোনো তারিখে বদলির অনুমোদন দেখিয়ে এখন শুধু আদেশ জারি করা হচ্ছে। বদলির আদেশ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়ার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। গত তিন মাসের কোনো বদলির আদেশ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়নি। যারা বদলি হচ্ছেন তারা সশরীরে অধিদপ্তরে এসে আদেশপত্র নিয়ে যাচ্ছেন। সরাসরি বদলির আদেশ জারির বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছেও কিছু আদেশের কপি এসেছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আমাকে জানিয়েছেন, এসব বদলির আদেশ গত বছর ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারির আগেই অনুমোদন করানো ছিল। পরে বদলির আদেশ জারি হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আদেশের সংখ্যা বেশি নয়। ১০-২০টি হতে পারে। সংশোধিত নির্দেশিকা জারির পর সরাসরি নতুন কোনো বদলির ফাইল অনুমোদনের সুযোগ নেই। এখন বদলি করতে হলে অনলাইন আদেশের মাধ্যমেই করতে হবে।’
সচিব বলেন, ‘অনলাইনে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বদলি শুরু হলেও তাতে কিছু সমস্যা ছিল। সমস্যা কাটিয়ে গত ২২ ডিসেম্বর সংশোধিত বদলির নির্দেশিকা জারি হয়েছে। এরপর আর অনলাইনের বাইরে বদলির সুযোগ নেই।’
গাজীপুরের কাপাসিয়ার ঝাউয়াদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদের বদলির আদেশ জারি হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। তিনি একই উপজেলার উত্তর পেলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়েছেন। তার বদলির আদেশটি মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি যোগদানও করেছেন তিনি। আগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মূলাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংযুক্ত ছিলেন। গত ৮ ডিসেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক আদেশে সব সংযুক্তির আদেশ বাতিল হয়। তিনি অনলাইন-ছাড়াই বদলির আদেশ করিয়ে নিয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ফরহাদ গাজীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অন্যতম সহযোগী। স্কুলে তেমন ক্লাস নেন না। সারাক্ষণ ডিপিইওর অফিসে থাকেন। শিক্ষক নেতার পরিচয়ে তদবিরবাণিজ্য করেন। জেলার আট-নয় হাজার শিক্ষকের কাছ থেকে নানা অজুহাতে প্রায়ই চাঁদা আদায় করেন। সহকারী শিক্ষক হয়েও মাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী হাসান আলীর মাধ্যমে তার বদলির আদেশ করিয়েছেন বলে গল্প করেন। এ কাজে তিন-চার লাখ টাকার লেনদেনের কথাও বলেন। হাসান আলীকে প্রায়ই প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেখা যায়। তিনি মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের আশপাশেই থাকেন।
গত ১৩ মার্চ চাঁদপুরের কচুয়ার নোয়ার্দ্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রাজধানীর সূত্রাপুরের শহীদ নবী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী। তার সরাসরি বদলির আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা। সম্প্রতি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের দিগচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতেমা বেগমও রাজধানীর মিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে এসেছেন।
গত ১৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর বনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক খাদিজা আক্তার। তার বদলির আদেশে স্বাক্ষর রয়েছে মো. হামিদুল হকের।
সানকিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাদিজা আক্তার আমার স্কুলে ১৯ মার্চ যোগ দিয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, অনলাইনে আগে আবেদন করা ছিল। পরে অধিদপ্তর থেকে সরাসরি বদলির আদেশ করিয়ে নিয়ে এসেছেন।’
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার তিলকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোসাফিকুর রহমান গত ১০ মার্চ বদলি হয়ে যান একই জেলার সদর উপজেলার সেনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তার আদেশটিও মনীষ চাকমা স্বাক্ষরিত।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদরের আজমতপুর পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন সহকারী শিক্ষক তাসমিনা নার্গিস। একই তারিখে স্বাক্ষরিত আরেকটি আদেশে সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার ময়মনসিংহের নান্দাইলের গলগ-া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চকনজু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। এসব বদলির আদেশ মো. হামিদুল হক স্বাক্ষরিত।
গত ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ সদরের কুঠুরাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে একই উপজেলার গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসেন সহকারী শিক্ষক আবিদা সুলতানা। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেছেন মনীষ চাকমা।
গাঙ্গিনার পাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাকলী গোস্বামী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে বলতে পারব না। তবে আবিদা সুলতানা বলেছে, অনলাইনে হয়েছে। আমার স্কুলে তিনি ২ জানুয়ারি যোগ দিয়েছেন।’
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার রাজাগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গত ২৮ ডিসেম্বর সহকারী শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন একই উপজেলার বড় বিলারপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হন। আদেশটিতে স্বাক্ষর করেন মনীষ চাকমা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কুমার ঘোষ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘কীভাবে বদলি হয়েছে, তা বলতে পারব না। তবে সাবিনা ইয়াসমিন যোগ দিয়েছেন।’
দেশের কোনো জায়গা থেকে রাজধানীতে প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলি খুবই কঠিন। রাজধানীতে বদলির জন্য শিক্ষকরা ছয়-সাত লাখ টাকা খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। আর অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর দেশের অন্য জায়গায়ও বদলির রেট বেড়ে গেছে। এ জন্য তিন-চার লাখ টাকার লেনদেন হয় বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ রাখা হয় সরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলিও। এরপর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ শুরু করে। ঘোষণা দেওয়া হয়, অনলাইনের বাইরে কোনো ধরনের বদলি কার্যক্রম চলবে না। ওই সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই অক্টোবরের মধ্যে বদলিকৃত স্কুলে যোগদান শেষ করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথম দফায় বদলি হওয়া শিক্ষকদের সবাই যেহেতু অক্টোবরের মধ্যে যোগদান শেষ করেছেন, অতঃপর গত ফেব্রুয়ারির আগে আর কোনো বদলির আবেদনের সুযোগ ছিল না। দ্বিতীয় দফায় ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত একই জেলার মধ্যে বদলির আবেদন নেওয়া হয়। কারা বদলি হলেন তা প্রকাশ করা হয় ৯ মার্চ। গত ১৪ ও ১৫ মার্চ একই বিভাগের মধ্যে বদলির জন্য অনলাইন আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। আর এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে অনলাইনে বদলির আবেদন গ্রহণ এখনো শুরু হয়নি। মন্ত্রণালয় বলেছে, শিগগির তা শুরু হবে। ফলে এসবের বাইরে যে বদলি হয়েছে সেসব কোনোভাবেই অনলাইন বদলির মধ্যে পড়ে না।
অনলাইন বদলির আদেশের একাধিক কপিও দেশ রূপান্তরের কাছে রয়েছে। একই উপজেলার মধ্যে বদলির আদেশ উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। আর একই জেলার মধ্যে বদলির আদেশ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে যেসব বদলির আদেশ জারি হয়েছে সেসব ‘অনলাইন বদলি’ নয়। মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে অনলাইনের বাইরে বদলি বন্ধ করেছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত ও পরিচালক (পলিসি অ্যান্ড অপারেশন) মনীষ চাকমাকে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার একাধিকবার ফোন দিয়ে এবং এসএমএস করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির কাজ হবে পুরোপুরি অনলাইনে। বদলিপ্রত্যাশী শিক্ষক অনলাইনে আবেদন করার পর সেটি প্রাথমিকভাবে যাচাই করবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে যাচাই করে আবেদনটি পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি যাচাই করে পাঠাবেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। এরপর সফটওয়্যারের মাধ্যমে বদলি নির্ধারণ করা হবে। এরপর আবার ডিপিইও সেটি মঞ্জুর করে পাঠাবেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে। তিনি তখন বদলির আদেশ জারি করবেন এবং শিক্ষক সেটি অনলাইনেই জেনে যাবেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ হয় উপজেলাভিত্তিক। তাই সাধারণ নিয়মে উপজেলার মধ্যেই শিক্ষকদের বদলি হতে হবে। বিশেষ কারণে উপজেলা বা জেলা পরিবর্তনেরও সুযোগ আছে।
একাত্তরের যুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, বিশেষ করে নজরুল ছিলেন বাঙালির সংগ্রামী চৈতন্যের অগ্নিস্রোত। কথা না-থাকলেও সেই দুর্বার সময়ে বিষণœতার কবি জীবনানন্দ দাশ ওই অগ্নিবলয়ের ভেতর ঢুকে গেলেন। কেন ঢুকলেন তা বিচার করতে চাইলে বাঙালি সংস্কৃতি এবং মানসচৈতন্যের দিকে তাকাতে হবে। কল্পনাবিলাসী, আবেগপ্রবণ, ভাবুক, দুঃখবাদী, বিষন্ন, প্রকৃতিমুগ্ধ, কৃষিভিত্তিক জীবনবিলাসী বাঙালি রক্তাক্ত বিদ্রোহের ভেতরও ‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক’ আর ‘দু’দণ্ড শান্তি’-এর মতো ‘নাটোরের বনলতা সেন’কে কেন বারবার স্মরণ করত? এ প্রশ্ন অনিবার্য। আশ্চর্য এই যে, ভাববাদী রোমান্টিকরা তো বটেই, চরম বস্তুবাদী রিয়ালিস্টিক পাঠকও জীবনানন্দকে এড়িয়ে যেতে পারে না। কোন জাদুতে? জীবনানন্দ নিজেই কি ম্যাজিক বা ম্যাজিশিয়ান, তার শব্দ, চিত্রকল্প, উপমা, কাব্যভাব কি ম্যাজিক? জীবনানন্দ মুগ্ধতা কি ক্রমবিবর্তনের ভেতর দিয়ে বাঙালির বাঙালি হয়ে ওঠার নানা উপাদান অর্থাৎ চারিত্রিক এবং সাংস্কৃতিক নানা দুর্বলতার ফল মাত্র? বাঙালির মানসচেতনার সীমাবদ্ধতার কথা সত্যি জানতেন জীবনানন্দ। তিনি নিজেও যে একই গোত্রের। তার কবিতার শব্দ-প্রযুক্তিবিদ্যা, ধ্বনিমাধুর্য প্রবাহ, রূপকল্পের আবেগী ব্যবহার, অতীন্দ্রিয়ের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ব্যবহার বাঙালিকে বিস্মিত করেছে।
দারিদ্র্য, শোষণ, বঞ্চনা, দীর্ঘ উপনিবেশিক শাসন, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘরে ও বাইরে চিরক্লান্ত, আশাশূন্য, বিধ্বস্ত এবং ঘোর অবসাদাক্রান্ত বাঙালিকে জীবনানন্দের কবিতা গভীর আত্মমুখী আঁধারে ডুবিয়ে দেয়। সমকালের, সমাজের, রাষ্ট্রের, পরিবার এবং ব্যক্তির অন্তর্নিহিত রোগ, অসহায়ত্বকে ধরতে পেরেছিলেন জীবনানন্দ। নিজের জীবনের ওপর পরীক্ষাও করেছেন। তার অকাল মৃত্যুও ভেতর গোপন অদৃশ্য ব্যাধির ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে নিশ্চয়ই।
জীবনানন্দের কবিতার ভেতরই জটিল রহস্য রয়েছে। তার কবিতা ক্লান্ত-বিধ্বস্ত সমাজ ও ব্যক্তিকে আশ্রয় নিয়ে ‘দু’দণ্ড শান্তি’ নিতে উসকে দেয়। মানুষের মগজে, স্নায়ুতন্ত্রীতে মাদকের মতো ‘প্রশান্তির জগৎ’ তৈরি করে। যে কাব্য সমালোচকরা তার কাব্যে জীবনবিমুখতা, আত্মপলায়নপরতা কিংবা অবক্ষয়ী মূল্যবোধের চর্চার অভিযোগ এনেছেন, তাদের সব যুক্তিকে বাতিল করা যায় না। এ কথাও সত্য যে, তাকে নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু গুরুত্ব লঘু করা না। কেন যায় না তা নিয়ে আমরা তর্কে যাব না, কেননা আমাদের উদ্দেশ্য সেটা নয়, উদ্দেশ্য বরং একাত্তরের যুদ্ধের প্রেক্ষিতে তাকে নিয়ে বাঙালির আবেগ এবং চর্চার সীমানাটা খুঁজে দেখা। এ দেখাটা স্বাধীন দেশের বাঙালির জন্য জরুরি।
সাহিত্যের দহলিজে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে, বুদ্ধিজীবী মহলে জীবনানন্দ চর্চা পূর্ববঙ্গে পঞ্চাশের দশকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ও চর্চার সঙ্গে জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’ চর্চারও একটা যোগসূত্র দেখা যায়। ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনের কিছু আগে বা পরে জীবনানন্দের কাব্যসমগ্র রণেশ দাশগুপ্তের সম্পাদনায় বাংলাবাজার থেকে বের হয়। ব্যাপক সাড়াও ফেলে। জীবনানন্দ অনুসন্ধানের আগে আমরা জেনে নিতে চাই তার শিল্পের মননজগৎ তৈরির পেছনের সামাজিক, রাষ্ট্রিক এবং আন্তর্জাতিক কার্য-কারণগুলো। জীবনানন্দের কাব্যসাধনা এবং তার বিকাশ ও পরিণতি ঘটে দুই মহাযুদ্ধের মধ্যবর্তী থেকে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ চলাকালীন, সময়ের সেই প্রভাবেই তিনি আন্দোলিত হয়েছেন।
বাংলায় উপনিবেশিক শাসন-শোষণ, জমিদারতন্ত্র, হিন্দু বর্ণবাদ, হিন্দুধর্ম আর ব্রাহ্মধর্মে সংঘাত, হিন্দুধর্মের শাক্ত আর বৈষ্ণব মতবাদীদের পরস্পর বিদ্বেষ, দেবী কালী আর অবতার কৃষ্ণের বিবাদ সমাজ অভ্যন্তরে তৈরি করে অস্থিরতা। সেই ইতিহাসই পরবর্তীকালে দেখিয়ে দেয় কেমন করে ভাঙন ধরে হিন্দুধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া একেশ্বরবাদী, পৌত্তলিকতা-বিরোধী নতুন ধর্ম ব্রাহ্মবাদেও। শরৎচন্দ্রের গল্প-উপন্যাসে এর বর্ণনা আছে। বরিশালের ব্রাহ্মসন্তান জীবনানন্দ দাশও এ থেকে মুক্ত ছিলেন না। ব্রাহ্ম হওয়ার কারণে হিন্দুপ্রধান কলকাতা শহরে জীবনানন্দের জীবন-জীবিকাও সংকটে পড়ে। কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনা করতে গিয়ে তা তিনি হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন। ব্রাহ্ম রবীন্দ্রনাথের সংস্পর্শেও তিনি শান্তি পাননি। ব্যক্তির এই সামাজিক হতাশা তার কাব্যে সংক্রমিত হয়। একটা কথা উল্লেখ করতেই হয় যে, সাতচল্লিশের আগে ও পরে পূর্ববঙ্গের ‘বাঙাল’ আর দেব-দেবী বিদ্বেষী ব্রাহ্মদের জন্য মহানগর কলকাতা এক দুর্ভোগের স্থান হয়ে ওঠে।
বাংলা তো বিশ্বমানচিত্রের বাইরে নয়, বিশ্বেরই সে অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিশ্বের যে কোনো কম্পনই তাকে ছুঁয়ে যাবে। বিশ্বপুঁজির মহাসংকটের নগ্ন প্রকাশ ঘটে প্রথম মহাযুদ্ধের ভেতর দিয়ে। তথাকথিত উন্নত ইউরোপ তো বটেই, উপনিবেশিক অনুন্নত দেশগুলোতেও মানুষের হতাশা, ভয়ংকর ভীতি ও ধ্বংসস্তূপের ভেতর মৃত্যুর প্রেতছায়ার মতো ছড়িয়ে পড়ে। এর কম্পন-প্রকম্পন থামতে না থামতেই এসে যায় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। আরও জটিল, আরও বহুমাত্রিক বিভীষিকা নেমে আসে বিশ্বে। বঙ্গ-ভারতের গণমানসে মুক্তির স্পৃহা জেগে ওঠে। উপনিবেশিক শোষণ আর দেশীয় উৎপীড়ন থেকে মানুষ মুক্তি চায়। কমিউনিস্ট পার্টি এবং সশস্ত্র লড়াই সামনে এসে দাঁড়ায়। শাসকরা দেশীয় বুর্জোয়ারা রাজনৈতিক দলের উদ্ভব ঘটায় স্বাধীনতা, আজাদী, স্বরাজের নামে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ব্যাপক ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া মানবসভ্যতা নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বিশ্ব সমাজতন্ত্র গড়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে। সেটা বুঝতে পেরে পুঁজিবাদী শক্তি ইউরোপের দেশে দেশে ব্যক্তির মুক্তি, সামাজিক মুক্তি এবং জাতীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে নানারকম নতুন নতুন দর্শনের উদ্ভব ঘটানোর জন্য একদল দার্শনিককে কাজে নামিয়ে দেয়। জীবনবিমুখ অতীন্দ্রিয়বাদী দর্শনকে কবর থেকে টেনে তুলে আনে। ফরাসি বিপ্লবের দার্শনিক ভলতেয়ারের ভাবশিষ্যরাই বিস্ময়করভাবে আত্মসমর্পণ করে সোরেন কিয়ের্কগার্ড-এর বাতিল অস্তিত্ববাদের প্রেতের কাছে। তারা উচ্চকণ্ঠ হলেন বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদের বিরুদ্ধে। ঘোষণা করলেন যে, হতাশা, বিষন্নতা, বিষাদ, দুঃখবাদ আর আত্মবিচ্ছিন্নতার ভেতর লুকিয়ে রয়েছে মানব জীবনের সুখ-আনন্দ-পরম শান্তি।
দর্শনচর্চাকারী মাত্রই জানেন যে, কিয়ের্কগার্ড দর্শনের মৌল উপাদান হলো এই ধারণা যে, মানব অস্তিত্বের প্রকৃত রূপ নিঃসঙ্গতা, কোনো মানুষই এই নিঃসঙ্গতাকে ডিঙিয়ে যেতে পারে না। হেগেলের যুক্তিবাদকে খণ্ডন করে কিয়ের্কগার্ড দাবি করেন ঈশ্বরই হচ্ছে একমাত্র পথ। ব্যক্তিমানুষকে ঈশ্বরের সামনে দাঁড়াতে হবে পাপবোধ, আত্মগ্লানি, অনুতাপ, নৈরাশ্য, যন্ত্রণা, সামাজিক শোষণ-উৎপীড়ন, হিংসা, হিংস্রতা থেকে মুক্তির জন্য। ব্যক্তির দুঃখ ভোগ যত বৃদ্ধি পাবে, ততই ব্যক্তির চেতনায় ধর্ম ও ঈশ্বরভাব জাগ্রত হবে। এতেই তার আত্মার মুক্তি ঘটবে।
কিয়ের্কগার্ডের জন্য দর্শনচর্চার উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করে দেয় প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা এবং মানুষের অবসাদ-নৈরাশ্য। সেই ব্যাধি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপ হয়ে সারা বিশ্বে। জীবনানন্দ দাশ ইংরেজি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। সেই ভাষাই তার সংযোগ ঘটায় কিয়ের্কগার্ড দর্শনের সঙ্গে। রুশ বিপ্লব এবং বস্তুবাদী দর্শন তাকে আন্দোলিত করে না। তার বিশ্বাসের সাক্ষ্য রেখে গেছেন তিনি নিজের লেখায়। ‘আধুনিক কবিতা : কবিতার কথা’ তার দলিল। দ্বিধাশূন্য জীবনানন্দ বলছেন, ‘কিয়ের্কগার্ড প্রভৃতি দার্শনিকের অস্তিত্ববাদ যা প্রমাণ করেছে সেটা মানুষের প্রাণধর্মে টিকে থাকার... দার্শনিক তথ্য হিসেবে মানুষকে সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন... তার সাহিত্যিক শিষ্যদের রীতির চেয়ে আরও নিপুণ ও নির্ভুল প্রয়োগে, মানুষের জীবনের এই অন্তর্নিঃসহায়তার কথা ফুটে উঠেছে...।’ সহজ কথায়, এটা নির্মম সত্য যে, জীবনানন্দ বাঙালি পাঠকদের ঘাড়ে তার নিজস্ব অন্তর্নিঃসহায়তার বোঝা চাপিয়ে দিতে সচেষ্ট ছিলেন।
কেবল কিয়ের্কগার্ড নয়, ফ্রেডারিখ নিটসে, পাস্কাল, মনোবিজ্ঞানী অ্যালফ্রেড অ্যাডলার এবং আরও অনেকে বিজ্ঞানবিরোধী, প্রতিক্রিয়াশীল দর্শন যুদ্ধবিধ্বস্ত নৈরাশ্যবাদী ক্লান্ত মানুষের সামনে তুলে রেখে গেছেন। আশ্চর্যজনকভাবে তারা বিশ্বাস করতেন বুদ্ধি, মুক্তি, বিজ্ঞান নয়; বরং মানুষের বিশ্বাস, তার অনুভূতিই জীবন বাস্তবতার আসল সত্য। জীবনানন্দ যখন এসব চর্চা শুরু করেন তার আগেই সারা ইউরোপে যুক্তিবাদ আর বিজ্ঞানবাদের বিরুদ্ধে প্রগতিবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছে। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল পুঁজিবাদকে মরণসংকট থেকে রক্ষা করা।
যুদ্ধ, ধ্বংস, চূড়ান্ত শোষণ, মানবতার মহাবিপর্যয় না ঘটিয়ে ব্যাধিতে আক্রান্ত যে পুঁজিবাদ টিকতে পারে না, এই বাস্তবতার ভেতর দার্শনিক রুশোর দর্শনে কথিত সেই ‘ঘধঃঁৎধষ গধহ’ সার্ত্রে-এর বিশ্বাসে কোনো রূপ নেয়? সার্ত্রে ব্যক্তিমানুষকে তার বাস্তব স্থান আর সময়কালের সূত্র থেকে বিচ্ছিন্ন করে মুক্ত ব্যক্তিসত্তার কল্পনার দিকে টেনে নেন। তিনি বিশ্বাস করতেন ব্যক্তিমানুষ রাষ্ট্র ও সমাজের বন্ধন থেকে কোনোভাবেই মুক্ত বা স্বাধীন হতে পারে না। সমাজতন্ত্র বা সাম্যবাদও ব্যক্তিমানুষকে তার প্রত্যাশিত মুক্তি এনে দিতে পারে না। ব্যক্তিমানুষ চূড়ান্তভাবেই নিঃসঙ্গ; পৃথিবীর বিপক্ষেও সে। একেবারেই একা।
সার্ত্রের ভাববাদী দর্শন ব্যক্তিমানবসত্তা সম্পর্কে কী বলে? অতলান্তিক কালস্রোতে ভাসমান মানুষ মুহূর্তকালের ভেতরই শূন্যতায় আক্রান্ত হয়। এই শূন্যতা তাকে আতঙ্কের ভেতর ঠেলে দেয় এবং দাঁড় করিয়ে দেয় বিমূর্ত এক সত্তার সামনে। সেই সত্তাটি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়, বরং অতীন্দ্রিয়। স্বাধীনতা যেহেতু অসীম এবং নিরঙ্কুশ তাই প্রতিকূল সমাজে ব্যক্তিমানুষ এতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। এমন বিশ্বাসের ভেতর সার্ত্রে মনে করতেন উৎকণ্ঠা থেকে মানুষের মুক্তি নেই। ব্যক্তিমানুষ কখনো সমষ্টি বা সঙ্ঘের সঙ্গে মিলিত হতে পারে না, মিলিত হওয়ার চেষ্টাটা কেবলই দুঃস্বপ্ন। সার্ত্রের ভাবশিষ্যরা তো এই দর্শনই তাদের সাহিত্যের নানা শাখায় প্রয়োগ করেছেন।
সার্ত্রে কেবল ইউরোপ নয়, ইংরেজি ভাষাকে বাহন করে বঙ্গভারতে শিক্ষিত শ্রেণির একাংশের চেতনায় প্রবেশ করেন। জীবনানন্দ কিন্তু তাদেরই দলে। সার্ত্রে চিরন্তন সত্যবাদ, ঐতিহ্যবাদ, ধর্মবাদ এবং বুর্জোয়া নৈতিকতাবাদের বিরোধিতা করে বৈজ্ঞানিক বস্তুবাদের পক্ষ নিলেও সামাজিক শ্রেণি ও শ্রেণি দ্বন্দ্বের বাস্তবতাকে অনুধাবন করতে সম্মত হননি। বস্তুজগৎ এবং মানবমনের দ্বন্দ্বের বাস্তবতাকে তিনি অবজ্ঞা করেছেন। তার দাবি ছিল, ‘No general ethics can shwo you what is to be done’ এবং ‘ও I have got to limit myself to what I see’
মানব অস্তিত্বরক্ষার সুনির্ধারিত কোনো অর্থ বা কারণ সার্ত্রের বিশ্বাসের দর্শনে নেই। তিনি এই সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন যে, চরম অস্তিত্ব সংকটে নিপতিত মানুষ অন্ধের মতো আশ্রয় সন্ধানে আবর্তিত হবে। নিঃসঙ্গতা, আতঙ্ক, উদ্বেগ তার নিত্যসঙ্গী। জীবন ও জগৎ তার কাছে অনিয়ন্ত্রিত অন্ধকার হেঁয়ালি এবং যুক্তিশূন্য। তার গল্পের নায়ককে তাই উচ্চারণ করতে হয়, ‘The nausea is not inside me, I feel it out There... I am the one who is within it......’
বিস্ময়কর এটাই যে, অস্তিত্ববাদী এই দর্শনকে মহাযুদ্ধে বিধ্বস্ত মানুষদের একাংশ বরণ করে নেয়। পুঁজিবাদী অর্থনীতি এবং ভয়াবহ যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত মানবতা, অবক্ষয়ী নৈতিকতার ভেতর মনোলোকের এই অন্তঃসারশূন্যতা ব্যক্তিমানুষকে মহাশূন্যে ভাসমান মৃত গ্রহের ভগ্ন অণুর মতো ঘিরে ধরে। সে সময়ের কবিরা তো মানবচেতনার আশা-প্রত্যাশা আর নতুন স্বপ্নের বদলে দেখতে পেলেন চরাচরের চারদিকে কেবলই নির্জন শূন্যতা আর মৃত্যু। কাফ্কার মতো সংবেদনশীল শিল্পীও লিখলেন, ‘ÔI am separated from all things by a hollwo space...’। আলবেয়ার কামুও একই পথের পথিক। স্যামুয়েল বেকেট তো বলেই ফেললেন, ‘...I was born or not, have lived or not, am dead or merely dying...’। ইউরোপের অনেক কবি-সাহিত্যিক আত্মনিমগ্নতার ওই অন্ধকারে ডুব দেন।
আর ওই যে অস্তিত্ববাদী দর্শনের অভিঘাতে ইউরোপে জন্মাল Sur-realism, Dadaism, Futurism, বিশেষ করে পরাবাস্তববাদ। এর প্রভাব বাঙালি মননেও পড়ে। কলকাতার অনেক পরে, কবরে ভূত হয়ে যাওয়ার পর পরাবাস্তববাদ ঢাকাতেও উঁকি মারে। বাঙালি যখন গণতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসনের প্রশ্নে লড়াই করছে, তখনই এই ভূত ঢাকায় এসে হাজির। বাংলাদেশের কাব্যদর্শনের এই দেউলিয়াপনার বাইরে মনুষ্যত্বের পক্ষে, মুক্তির প্রশ্নে একদল কবির আবির্ভাব ওই পরাবাস্তব প্রেতাত্মাকে পরাভূত করেছিল। ভাষা আন্দোলন, সামরিক শাসন, গণতন্ত্র-গণ-অভ্যুত্থান এবং একাত্তরের যুদ্ধবিষয়ক কবিতার দিকে তাকালে এটা স্পষ্ট ধরা পড়ে।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও লেখক
রংপুরের জেলা প্রশাসককে 'স্যার ডাকতে বাধ্য করার' অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক।
বুধবার (২২ মার্চ) রাত ৮টা থেকে তিনি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান শুরু করেন বলে জানা গেছে।