
কারাগারের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘জেলে আমাদের কী অবস্থায় রাখা হয়েছিল তা কখনো বলি না। এবার আমাকে ও মির্জা আব্বাসকে কোয়ারেন্টাইনের নামে চার দিন কনডেম সেলে রাখা হয়েছিল, যেখানে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়।’ গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কারাগারের তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
গত বছরের ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনার পর গত ৯ ডিসেম্বর রাত ৩টার দিকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল উত্তরার বাসা থেকে মির্জা ফখরুলকে আটক করে। ডিবির কর্মকর্তারা ‘ওপরের নির্দেশ’ আছে বলে তাকে নিয়ে যান। পরের দিন দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ঢাকার নয়াপল্টনে পুলিশের ওপর হামলার উসকানি ও পরিকল্পনার মামলায় মির্জা ফখরুল এবং দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে তারা কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর সময় আমাকে এবং মির্জা আব্বাসকে যখন জেলে নিয়ে গেল তখন দুই ঘণ্টা আমাদের অফিসে বসিয়ে রাখা হলো। অফিসে বসিয়ে রাখার কারণটা হচ্ছে তারা আমাদের কোয়ারেন্টাইনের নাম করে একটা কনডেম সেলে দেবে। ওটা ছিল ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জেল। আপনারা অনেকেই জানেন যে সেই সেলের অবস্থা কী। সেখানে কোনো বেড থাকে না, খাট থাকে না, মেঝেতে থাকতে হয়। ওই সাত ফিট বাই আট ফিট সেলের মধ্যে একটা হাফ...বুক পর্যন্ত দেয়াল দিয়ে টয়লেটের ব্যবস্থা থাকে। যে টয়লেটগুলোতে শুধুমাত্র ইন্ডিয়ান প্যানের ফ্ল্যাশ আছে, বেসিন পর্যন্ত নেই। আমাদের একজনকে একটা সেল দিয়েছে। অন্য যারা ছিল তাদের একটা সেলে ৭-৮ জন করে রেখেছে। অমানবিক চরম অমানবিক।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে আমরা ডিভিশন পাব, আমি আজ পর্যন্ত অনেকবার জেলে গিয়েছি, তখন অফিস থেকে সোজা সেলে নিয়ে যেত। এবার আমাকে ও মির্জা আব্বাসকে ওখানে জোর করে নিয়ে গেল। জোর করেই বলা যায় এবং চার দিন ওখানে রাখা হলো। অথচ প্রথম দিনই আদালত যে আদেশ দিয়েছে সেই আদেশেই বলা ছিল আমাদের যেন কারাবিধি অনুযায়ী ট্রিট করা হয়। কারাবিধিতে কিন্তু উই আর অ্যান্টাইটেল টু ডিভিশন। সাবেক এমপি-মন্ত্রী হিসেবে। সেটা তারা করেনি। চার দিন বলা যেতে পারে অমানবিক। আমাদের সঙ্গে ৪৫০ জন ছিলেন। তাদের ১০-১২ দিন একটা ঘরের মধ্যে ৭-৮ জনকে রেখেছে। একটা ছিল শাপলা বিল্ডিং। তাদের ১০ দিন ওই বিল্ডিংয়ের বাইরে বের হতে দেয়নি। তিন দিন সেলের বাইরে বের হতে দেয়নি। সেখানে জেলারকে বলা হয়েছে জেল কাকে বলে শিখিয়ে দাও (আমাদের)। এই একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে। সিসি ক্যামেরা তো সবখানে, প্রাইভেসি বলতে মানুষের কোনো কিছু থাকে না সেখানে।’
মামলা করে মাঠ থেকে বিএনপিকে সরানো যাবে না : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচনের আগে সরকার হামলা করে, মামলা দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঠ থেকে বের করে দিতে চায়। কিন্তু এবার আর সেটা পারবে না। বিএনপি মাঠে নেমে গেছে। আন্দোলন এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে যাবে। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারের পতন হবে।’ গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমান সরকার অনির্বাচিত, অবৈধ, ফ্যাসিস্ট সরকার। ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য এবং বিএনপিকে নেতৃত্বহীন করার লক্ষ্যে আবার তারা পুরনো খেলায় মেতে উঠেছে। মিথ্যা, গায়েবি মামলা, গ্রেপ্তার, ঘরে ঘরে তল্লাশি এবং হয়রানি করে নির্যাতন-নিপীড়নের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। পঞ্চগড়ের ঘটনা ঘটিয়ে অতীতের মতো বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করতে বাড়ি বাড়ি অভিযান চালাচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের কৌশল। তিনি বলেন, ‘দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ নেতাকর্মীদের কারাগারে অমানবিক নির্যাতন শুরু করেছে। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বুকে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ রুহুল কবির রিজভী ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফুসফুসে জটিলতা, হার্টের অসুখসহ বিভিন্ন মারাত্মক অসুখে শারীরিকভাবে অসুস্থ একজন মানুষ। এমন এক পরিস্থিতিতে কেরানীগঞ্জ কারাগার থেকে পুরান ঢাকার আদালতে আসার দীর্ঘ পথ প্রিজন ভ্যানে তাকে আনা-নেওয়া করা হচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘বর্তমান অনৈতিক সরকার ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে মানবিকতাবোধও হারিয়ে ফেলেছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নির্মূল করতে নিষ্ঠুর আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে মিথ্যা মামলার মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়ে সারা দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে। কারাগারগুলোতে এখন তিলধারণের ঠাঁই নেই।’
বিকেলে সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১৭তম কারাবন্দী দিবস উপলক্ষে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এক-এগারোর প্রেক্ষাপটে একটি সাংবিধানিক সরকারকে উৎখাত করা হয়েছিল, ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সেটা গর্বের সঙ্গে স্বীকার করেছিল। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারানোর ভয়ে প্রতিনিয়ত দুঃস্বপ্ন দেখছে, বিএনপির ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নিজেদের স্বার্থে সংবিধান কেটেছেঁটে শেষ করে ফেলেছে সরকার, একে সংশোধন করতে হবে। মানুষ রাস্তায় নেমেছে, নিশ্চয়ই অতিদ্রুত এই সরকারকে সরানো হবে। মামলা দিয়ে বিএনপিকে ঠেকাতে পারবে না।’
সংগঠনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান খোকনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিএনপি নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, বিএনপির শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জহির উদ্দিন স্বপন, কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ।
আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের এক সপ্তাহ পার হলেও চট্টগ্রামের বাজারে কমেনি চিনির দাম। বরং মিল থেকে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় রমজানে বাড়তি চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে চিনির বাজার অস্থির হয়ে উঠতে পারে বলে শঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গিয়ে দেখা যায়, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চিনি মণপ্রতি ৩ হাজার ৯৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও একই দরে বিক্রি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
গত ২৬ জানুয়ারি প্রতি কেজি খোলা চিনির দাম ১০৭ ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ১১২ টাকা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন। দাম নির্ধারণের পর কয়েক দিন বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের লোকজনের দৌড়ঝাঁপ দেখা গেলেও পরে তাতে ভাটা পড়ে। এখন খুচরা বাজারে খোলা চিনি ১১০ ও প্যাকেটজাত চিনি কোম্পানিভেদে ১২০-১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দেশের পাঁচটি শিল্প গ্রুপের হাতে রয়েছে চিনির বাজারের নিয়ন্ত্রণ। এরা হলো সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, আবদুল মোনেম গ্রুপ, দেশবন্ধু গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপ। এরা বিদেশ থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে পরিশোধন করে বাজারে ছাড়ে। তারা সরবরাহ কমালে বাজারে সংকট সৃষ্টি হয়। চাহিদানুযায়ী সরবরাহ না থাকলেই বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। মিলারদের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের একাধিক সিন্ডিকেট চিনি গুদামজাত করে বাজারে সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ায়, এমন অভিযোগও আছে।
খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি ও তৈয়বিয়া ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সোলায়মান বাদশা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পণ্যের সাপ্লাই চেইন ঠিক থাকলে সেই পণ্যের বাজার ঠিক থাকে। বর্তমানে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী চিনির সরবরাহ নেই। পরিশোধিত চিনির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে চিনির ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) নেওয়ার পাঁচ-ছয় দিন পর সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলার সংকট, পণ্য আমদানির জন্য এলসি-জটিলতা এসবের নেতিবাচক প্রভাব বাজারে রয়েছে। ফলে সরকার শুল্ক হ্রাসের ঘোষণা দিলেও বাজারে এর প্রভাব এখন পর্যন্ত পড়েনি।’
তিনি বলেন, ‘চিনির মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার আমদানিকৃত চিনির ওপর শুল্ক কমিয়েছে। আমদানির চিনি যথাসময়ে খালাস ও পরিশোধন করে বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে কি না তার কঠোর মনিটরিং দরকার। বাজারে চিনির সরবরাহ পর্যাপ্ত না হলে আসন্ন রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখা কঠিন হবে।’
নগরীর একাধিক বাজার ঘুরে দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখনো আগের দামে চিনি কিনতে হচ্ছে তাদের। আসকার দীঘিরপাড় বাজারের মুদি দোকান সুধীর স্টোরের মালিক সুধীর দেব দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘খাতুনগঞ্জ থেকে পাঁচ কেজির বস্তা ৫ হাজার ৪০০ টাকায় কিনে আনতে হয়েছে। খুচরায় কেজি ১১০ টাকায় বিক্রি করছি। আর প্যাকেটজাত চিনি (এসিআই) বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা কেজিতে। পরিবেশকরা প্যাকেটজাত চিনির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে।’
রবিবার বিকেলে কাজির দেউড়ি বাজার থেকে ১১০ টাকা কেজিতে চিনি কেনেন একটি কেজি স্কুলের শিক্ষক আবদুস সালাম। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘সরকার শুল্ক হ্রাস করুক আর প্রত্যাহার করুক এর সুফল ভোগ করবে ব্যবসায়ীরা। আমরা ভোক্তারা সবসময় ভুক্তভোগী হয়েই থাকব। সরকার তেল, চিনি প্রভৃতির দাম নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু সেই দামে বাজারে পণ্য পাওয়া যায় না। এসব দেখার দায়িত্বে সরকারি যে সংস্থা রয়েছে তারা কী করছে তা দেখার কেউ নেই।’
রমজান উপলক্ষে চিনির বাজার স্বাভাবিক রাখতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজস্ব বোর্ডের জারিকৃত পরিপত্রে সব ধরনের চিনির আমদানি শুল্ক পুরোপুরি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানি) সালানা জলসা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, হামলা, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনার পর গতকাল সোমবার সকাল থেকে জেলা শহরের পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক ছিল। সকাল ৯টার পর থেকেই শহরে মানুষজনের উপস্থিতি বাড়তে শুরু করে। খুলতে শুরু করে দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। জেলা শহর ও শহরের উপকণ্ঠে আহমদিয়া সম্প্রদায় অধ্যুষিত আহমদনগর এলাকায় ছিল পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের টহল এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কড়া নজরদারি। এ ছাড়া গত শুক্রবারের ওই সহিংসতার পর থেকে এখন পর্যন্ত হওয়া ছয়টি মামলায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
তবে উদ্বেগ আর আতঙ্ক কাটেনি আহমদিয়াদের। পঞ্চগড়ের দুটি গ্রামে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। যাদের প্রায় সবাই শুক্রবারের সহিংসতায় হতবাক। আতঙ্কিত শিশুরা। আগুন দেখলে অনেকেই চমকে উঠছেন। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন যাপন করছে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের নারী, পুরুষ ও শিশুরা। সবার মধ্যে একটাই আতঙ্ক, আর তা হলো যদি আবার এসে হামলা করে। বাড়িতে থাকতে নিরাপদ বোধ করছে না কেউই। অবশ্য আগুন আর ভাঙচুরের কারণে বাড়িতে থাকার মতো পরিস্থিতিও নেই। অনেকেই নিজেদের বাড়ি ছেড়ে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত আহমদিয়ারা কারও সাহায্য-সহযোগিতা চান না। তারা শুধু নিরাপদে বসবাসের নিশ্চয়তা চান, নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা চায়। গতকাল সকালে পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন আহমদনগরে আহমদিয়াদের ক্ষতিগ্রস্ত জনবসতি পরিদর্শনে গেলে তার কাছে এমন দাবি জানান তারা। মন্ত্রীর কাছে তারা সহিংসতায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারেরও দাবি জানান। এ সময় রেলমন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ পরিবারের মধ্যে একটি করে শাড়ি, লুঙ্গি ও কম্বল দেন। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেক পরিবারকে চালসহ রেলমন্ত্রীর নিজস্ব তহবিল থেকে পরিবারপ্রতি এক হাজার করে টাকা দেওয়া হয়। পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আবদুল আলীম, জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদাসহ পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আহমদনগরের প্রায় সব বাসিন্দার চোখে-মুখে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার ছাপ। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের সদস্য মাহমুদ আহমাদ সুমন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আহমদনগরে ৬০ থেকে ৭০ বছর ধরে সম্প্রীতির সঙ্গে সবাই বসবাস করে আসছে। আমরাও এখানে স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করেছি, একই সঙ্গে খেলাধুলা করেছি। কখনো কোনো বিরোধ হয়নি। তিন-চার বছর ধরে একটা উচ্ছৃঙ্খল মহল ঢাকা থেকে বা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এখানে মানুষজনকে উসকে দিয়ে এই কাজগুলো করাচ্ছে। এই মূলহোতাদের আইনের আওতায় আনা উচিত।’
গত শুক্রবার বিকেলে পঞ্চগড় সদর উপজেলার আহমদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ লোকজন। সেই আগুন জ্বলতে থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। এই সহিংসতায় দুই তরুণ নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
আহমদিয়া সম্প্রদায়ের আহমদ জাফর বলেন, ‘সেদিনের বীভৎসতায় আমার সাত বছরের ছেলে এখনো আঁতকে ওঠে। পুলিশ দেখলে ভয়ে কেঁদে ফেলে। এমন অবস্থা আমাদের প্রত্যেক পরিবারের। আমরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাই।’ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের গণসংযোগ ও প্রেস বিভাগের প্রধান আহমদ তবশির চৌধুরী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা কারও সাহায্য-সহযোগিতা চাই না। আমরা শুধু নিরাপদে বসবাস করতে চাই। নিজেদের জানমালের নিরাপত্তা চাই।’
মামলা ও গ্রেপ্তার : শুক্রবারের সহিংসতার ঘটনায় আলাদা ছয়টি মামলা করা হয়েছে। পঞ্চগড় সদর থানায় গুজব, হামলা ভাঙচুর, লুটপাট, সরকারি কাজে বাধাদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশের পক্ষ থেকে চারটি, র্যাবের পক্ষ থেকে একটি এবং আহমদিয়া মুসলিম জামাতের পক্ষে একটি মামলা করা হয়। এসব মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় ৮ হাজার ২০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৮৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বিভিন্ন অভিযোগে ছয়টি মামলা হয়েছে। আরও মামলা প্রক্রিয়াধীন। এ ঘটনায় কমবেশি ২০টির মতো মামলা হবে এবং তদন্তসাপেক্ষে ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।’
ইন্টারনেটসেবা চালু : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানো বন্ধে পঞ্চগড়ে গত শনিবার রাত থেকে সব ধরনের ইন্টারনেটসেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এতে করে দুর্ভোগে পড়েন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। গতকাল সকাল ১০টার পর থেকে এই সেবা ফের চালু করা হয়েছে।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী গাড়ির চাপায় আবারও একজন নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর সেকশনে মুক্তবাংলা শপিং সেন্টারের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ময়লার গাড়ির চাপায় নিহত ওই ব্যক্তির নাম আবু তৈয়ব (৩০)। গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুরে।
শাহআলী থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, সকাল ১০টার দিকে মুক্তবাংলা শপিং সেন্টারের পাশে সনি সিনেমা হল মোড় দিয়ে আবু তৈয়ব মোটরসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় ডিএনসিসির একটি ময়লার গাড়ি তার মোটরসাইকেল চাপা দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আবু তৈয়বের মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ডিএনসিসির গাড়িটি শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলেও জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এর আগে গত বছর ২ এপ্রিল রাতে খিলগাঁওয়ে ডিএসসিসির ময়লার গাড়ির ধাক্কায় এক নারী নিহত হন। ওই বছরের ২৩ জানুয়ারি মহাখালীর উড়াল সড়কের কাছে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় আরেক নারীর মৃত্যু হয়। একই বছরের জুলাইয়ে মিরপুরে পুলিশ স্টাফ কলেজের সামনে ময়লার গাড়ির চাপায় এক তরুণ নিহত হন। তার আগে ২০২১ সালের ২৪ নভেম্বর গুলিস্তানে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান নটর ডেম কলেজের এক ছাত্র। পরদিন পান্থপথ এলাকায় সংবাদকর্মী আহসান কবির খানের মৃত্যু হয় ময়লার গাড়ির ধাক্কায়। ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর ওয়ারীতে ময়লার গাড়ির ধাক্কায় স্বপন কুমার সরকার নামে আরেকজন নিহত হন।
মোটরসাইকেল আরোহী তিন কলেজছাত্র বাসচাপায় নিহত : সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে ভোরে মোটরসাইকেলে করে বেরিয়েছিলেন তিন বন্ধু। এক মোটরসাইকেলে চড়েই তারা যাচ্ছিলেন রাজশাহীর দিকে। কিন্তু সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কেই থেমে গেছে তাদের জীবনের পথচলা। গতকাল ভোরে অজ্ঞাত একটি বাসচাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন নাটোর সিটি কলেজের তিন শিক্ষার্থী।
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল তাড়াশ উপজেলায় হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের মান্নাননগর এলাকার ওই দুর্ঘটনায় নিহত আলমগীর হোসেন (২২), সুজন (২১) ও সিয়াম (২১) নাটোর সিটি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের মধ্যে আলমগীর বেলকুচি উপজেলার ফুলঘাগড়াখালী এলাকার আবদুল বারেক সরকারের ছেলে আর সুজন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার নন্দনপুর এলাকার হেলাল উদ্দিনের ছেলে। সিয়ামের বিস্তারিত পরিচয় মেলেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে একটি মোটরসাইকেলে করে এই তিন কলেজছাত্র রাজশাহীর দিকে যাচ্ছিলেন। পথে উপজেলার হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের মান্নাননগরে পৌঁছালে একটি বাস তাদের মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি বদরুল কবীর বলেন, তিনজনের লাশ থানায় আনা হয়েছে। তাদের পরিবারের সদস্যরা এসেছেন। আইনি কার্যক্রম শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাগেরহাটে দুই পরিবহনশ্রমিক নিহত : বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় ট্রাক ও পিকআপচালকের দুই সহকারী নিহত হয়েছেন। গতকাল সকালে বাগেরহাট-মাওয়া মহাসড়কের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের কাকডাঙা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। নিহতরা হলেন খুলনা মহানগরের খালিশপুর এলাকার নুর হোসেনের ছেলে ইমন হাসান (২১) এবং বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বারাশিয়া গ্রামের ওহিদ শেখের ছেলে রিয়াদ শেখ (২২)। এর মধ্যে ইমন হাসান বালুভর্তি ট্রাকের চালকের সহকারী এবং রিয়াদ শেখ পিকআপের চালকের সহকারী ছিলেন।
বাগেরহাটের মোল্লাহাট হাইওয়ে থানার ওসি মেহেদী হাসান বলেন, গতকাল সকালে গোপালগঞ্জ থেকে খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বালুভর্তি একটি ট্রাক বাগেরহাট-মাওয়া মহাসড়কের ফকিরহাট উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের কাকডাঙা এলাকায় পৌঁছানোর পর চাকা ফেটে গেলে ট্রাকটি দাঁড়িয়ে যায়। এ সময় পেছন থেকে আসা অপর একটি মাছবাহী পিকআপ ওই ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলে ট্রাকের সহকারী ও পিকআপের সহকারী দুজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
নওগাঁয় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় যুবক নিহত : নওগাঁর বদলগাছীতে ভটভটি ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত জাহিদুল ইসলাম (২২) মহাদেবপুর উপজেলার সারতা এলাকার রুবেল আলীর ছেলে। এ ঘটনায় আরেক যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন।
পুলিশের বরাতে নওগাঁ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, গতকাল সকাল ১০টার দিকে বদলগাছী উপজেলার মাতাজী-হাপানিয়া রোডের ভুবন এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে।
বদলগাছী থানার ওসি আতিয়ার রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, জাহিদুল ইসলাম মোটরসাইকেলে মহাদেবপুর থেকে মাতাজীর দিকে যাচ্ছিলেন। পথে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি গরুবোঝাই ভটভটির সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী জাহিদুল ইসলামের মৃত্যু হয়।
হবিগঞ্জে বাসের ধাক্কায় প্রাণ গেল পথচারীর : হবিগঞ্জের মাধবপুরে বাসের ধাক্কায় মিন্নত আলী নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, মাধবপুর মাওলানা আসাদ আলী ডিগ্রি কলেজের সামনে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সেতুর ওপর একটি ঢাকাগামী বাস মিন্নত আলীকে ধাক্কা মারলে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। নিহত মিন্নত আলী উপজেলার আন্দিউড়া ইউনিয়নের মীরনগর গ্রামের মৃত আকতার মিয়ার ছেলে।
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর ১২ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছেন। গত রবিবারের এই অগ্নিকাণ্ডে রোহিঙ্গাদের দুই হাজারের বেশি ঝুপড়ি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে কারও প্রাণ না গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ভস্মীভূত এই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসাসেবার সংকট দেখা দিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, আগুন লাগার পর রবিবার রাতে খাবারের অভাবে অসংখ্য রোহিঙ্গা অভুক্ত ছিলেন।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পুড়ে যাওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখা গেছে, ক্যাম্পের চারদিকে শুধু পোড়া কটু গন্ধ। পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্র পরিষ্কারে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন রোহিঙ্গারা। কেউবা করছিলেন অস্থায়ী তাঁবু তৈরি, আবার কেউ কেউ ঘুরে দাঁড়িয়ে ফের ঝুপড়ি ঘর তৈরির চেষ্টায় ছিলেন। অনেকে আবার জায়গার দখল ধরে রাখতে পুড়ে যাওয়া ঘরের ওপরই বসে ছিলেন।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-১ ব্লকের বাসিন্দা হাজেরা খাতুন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুপুরে চারদিক থেকে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ (আল ইয়াকিন) আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লুটপাট চালায়। আমাদের সব শেষ হয়ে গেছে। গতকাল (রবিবার) রাত থেকে আজ সকাল পর্যন্ত কিছু খেতে পারিনি। তবে আজ (গতকাল) দুপুরে দুটো ভাতের প্যাকেট পেয়েছি।’
একই ক্যাম্পের ডি-১ ব্লকের মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ‘দুপুরে নামাজের পর একটু দূরে আগুন লেগেছে বলে সংবাদ পাই। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগে সব শেষ হয়ে গেছে।’
ডি-ব্লকের মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) ফরিদুল আলম জানান, তার ব্লকে ৭৮টি ঝুপড়ি ঘর ছিল। যার সবগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
রোহিঙ্গা নেতা আবদুল করিম, সেলিম ও সৈয়দ উল্লাহ জানান, তিনটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আটটি ব্লক সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে দুই হাজারের বেশি ঝুপড়ি পুড়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গারা বলেন, ক্যাম্পে একাধিক সন্ত্রাসী গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তারা নিজদের মধ্যে প্রায়ই গোলাগুলি করছে। এতে হতাহত হচ্ছেন অনেকেই। পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসা সদস্যরা এই ক্যাম্প ধ্বংস করতে চেয়েছিল। অবশেষে সেটা বাস্তবে রূপ পেল। তাদের কারণে রোহিঙ্গাদের খোলা আকাশের নিচে থাকতে হচ্ছে। এর আগেও এই ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল।
রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, রবিবার বালুখালীর আশ্রয়শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আগে থেকেই আঁচ করতে পেরেছিলেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। ঘটনার দুদিন আগে আশ্রয়শিবিরে একটি অডিও ভাইরাল হয়। সেখানে আশ্রয়শিবিরে আগুন লাগানোর কথা বলা হয়। গত রবিবার বিকেলে ভাইরাল হয় আরেকটি ভিডিও। ভিডিওতে কিছু রোহিঙ্গাকে আশ্রয়শিবিরের ঘরে আগুন লাগাতে দেখা গেছে। এই দুটি অডিও-ভিডিও প্রচার করে আরসা। তাতেই অনেকে ধরে নেন ঘটনা পরিকল্পিত।
তবে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে আগুনের প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এই অগ্নিকাণ্ডে জড়িত সন্দেহ এক রোহিঙ্গাকে আটক করেছে আর্মড পুলিশ ও পুলিশ। আটক যুবককে জিজ্ঞাসাবাদের পর বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানিয়েছেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। এ প্রসঙ্গে উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আটক যুবকের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি। এখনো সে পুলিশের হেফাজতে।’
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডে দুই হাজারের বেশি ঘর পুড়ে গেছে। এর মধ্যে শতাধিক দোকান, ২০টির বেশি বেসরকারি সংস্থার হাসপাতাল-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, রোহিঙ্গা শিশুদের পাঠদানকেন্দ্র, ত্রাণ বিতরণকেন্দ্র, ৩৫টি মসজিদ-মাদ্রাসা রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের মধ্যে শুকনো খাবারের পাশাপাশি অতি প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করা হচ্ছে।’
অগ্নিকাণ্ডের পর গৃহহীন হয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের থাকার ব্যবস্থা করতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইএমও) কাজ শুরু করেছে। এ ছাড়া রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের তাঁবু, রশি ও ত্রিপল সরবরাহ করতে দেখা গেছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ও ওয়ার্ল্ড ভিশনের যৌথ উদ্যোগে দুপুর ও রাতের খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। আগামী ১০ দিন ১৮ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে দুবেলা খাবার বিতরণ করবে ওয়ার্ল্ড ভিশন। আইএমও ও ব্র্যাক মিলে প্রতিদিন ২৮ হাজার লিটার সুপেয় পানি সরবরাহ করবে বলে জানা গেছে। পুড়ে যাওয়া ক্যাম্পে ৫টি মেডিকেল টিম রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। যেখানে ৯০ জন কমিউনিটি হেলথকর্মী কাজ করছেন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণ করছেন।
তদন্ত কমিটি গঠন : রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন লাগার কারণ খুঁজে বের করতে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রধান কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান জানান, তাকে প্রধান করে গঠিত কমিটিতে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিস, এপিবিএন, পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিরা রয়েছেন। গতকাল সকাল থেকে তদন্ত কমিটি অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কারণ বের করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।
গত রবিবার বিকেল ৩টার দিকে বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ব্লকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের চেষ্টায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
কার্বন নির্গমন কমাতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের চাপ বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। কয়লা, তেল বা গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির বদলে বিকল্প শক্তি হিসেবে সৌরবিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। বিশ্বের নানা দেশে নানা উপায়ে বসানো হচ্ছে সোলার প্যানেল। তবে সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে পর্তুগালের এক প্রকল্প অভিনব সমাধানসূত্র তুলে ধরেছে বিশ্বের সামনে। জলবিদ্যুতের এক বাঁধের জলাশয়ে ভাসমান সোলার প্যানেল বসিয়ে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পর্তুগালের আলকেভা জলাশয়ে ইউরোপের সবচেয়ে বড় ভাসমান সোলার পার্কটির আয়তন প্রায় ছয়টি ফুটবল মাঠের সমান। ইডিপি নামের একটি জ্বালানি কোম্পানি সোলার পার্কটি তৈরি করেছে। পাঁচ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ ক্ষেত্রটি তৈরিতে সময় লেগেছে সাত বছর।
ইডিপির গ্রুপ ডিরেক্টর মিগেল পাতেনা বলেন, এটা পুরোপুরি কাজ করছে এবং সবাই এর সম্ভাবনা পুরোপুরি উপলব্ধি করছে। শুধু জ্বালানি বিক্রিই আমাদের টিমের কাছে আসল লক্ষ্য নয়। যতটা সম্ভব কম সম্পদ ব্যবহার করে টেকসই প্রক্রিয়াই প্রধান বিষয়।
তিনি বলেন, ভাসমান সোলার পার্কের একটা বাড়তি সুবিধা রয়েছে। কারণ সেগুলো এমন জায়গা দখল করে, যেটি অন্য কোনোভাবে ব্যবহার করা সম্ভব নয়। পানিতে থাকার কারণে জমির তুলনায় আরও কার্যকরভাবে জ্বালানি উৎপাদন করা যায়। প্যানেল বেশি গরম হয় না, ফলে বেশি দিন টেকে।
যতটা সম্ভব জ্বালানি উৎপাদন করতে হলে প্যানেলগুলো পরিষ্কার রাখা জরুরি। সেই কাজ করার সময় ব্যালেন্সের ক্ষমতা ও ধৈর্য অত্যন্ত জরুরি। মিগেল পাতেনা মনে করেন, ‘সৌরশক্তি এখনো পুরোপুরি বিকল্প হয়ে ওঠেনি, বরং অন্যান্য উৎসের পাশাপাশি সম্পূরক হিসেবে কাজে লাগানো হচ্ছে। আরও অগ্রসর হয়ে পরিবর্তন ও কার্বন নির্গমন পুরোপুরি বন্ধ করার প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে এটা একটা সমাধানসূত্র।
আলকেভার সৌর প্ল্যান্টে ইউরোপের সবচেয়ে বড় কৃত্রিম হ্রদের ১ শতাংশও ঢাকা পড়ছে না। তাই কোম্পানিটি হ্রদের ওপর আরও বড় আকারের ভাসমান প্যানেল তৈরির পরিকল্পনা করছে।
২০৩০ সালের মধ্যে পর্তুগাল শতভাগ পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে, এই উদ্যোগ তারই অংশ উল্লেখ করে মিগেল পাতেনা বলেন, ‘এটা পর্তুগালের জন্য একটা মাপকাঠি এবং বাকি বিশ্বের জন্যও একটা দৃষ্টান্ত। আমাদের প্রকল্পই প্রথম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র ব্যবহার করছে এবং বিশেষ করে এশিয়ার জন্য মাপকাঠি হয়ে উঠছে। এশিয়ায় এমন প্রকল্পকে ঘিরে গভীর আগ্রহ রয়েছে, কারণ সেখানেও বিশাল বাঁধ রয়েছে এবং জ্বালানি সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। তারাও এমন ধরনের প্রকল্প বড় আকারে শুরু করবে। অর্থাৎ বিশ্বজুড়ে এমন ভাসমান সোলার পার্ক ছড়িয়ে পড়বেÑ এমনটা প্রত্যাশা করা যায়।
উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে দুই বছর আগে শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। এ বছর তৃতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা গুচ্ছ ভর্তি। স্বাভাবিকভাবেই তিন বছরে অনেকটাই গুছিয়ে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু তা তো হয়নি, বরং আরও অনেকটা অগোছালো হয়ে উঠেছে। এমনকি গুচ্ছে থাকা বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয় এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। আর অনেকটা জোর করেই তাদের গুচ্ছে রাখার চেষ্টা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ফলে গুচ্ছ ভর্তি নিয়েই টানাপড়েন সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, জোর করে হয়তো এ বছর ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে রেখে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এর ফল ভালো হবে না। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে তাদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল যে সিদ্ধান্ত নেয়, সেই অনুযায়ীই এগুনো উচিত।
জানা যায়, গত বছরের এইচএসসির ফল প্রায় সাত মাস দেরিতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ হয়। অথচ এর আগেই তাদের প্রথমবর্ষের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দ্রুত ভর্তি পরীক্ষা শেষ করার তাগিদ দিয়েছিল ইউজিসি। ইতিমধ্যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে। কিন্তু গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা দফায় দফায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সঙ্গে বৈঠক করেও সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। এতে শিক্ষার্থীদের বড় ধরনের সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দুই-একটি বিশ্ববিদ্যালয় যেসব কারণ দেখিয়ে গুচ্ছ থেকে সরে আসতে চাচ্ছে তা যুক্তিসংগত নয়। আমাদের প্রত্যাশা, তারা গুচ্ছে থাকবেন। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে রাষ্ট্রপতি নিজেই গুচ্ছ ভর্তি শুরু করার তাগিদ দিয়েছিলেন। যারা গুচ্ছে এসেছিলেন তাদের এখন দায়িত্ব হয়ে পড়েছে, এখানে থাকা। আর গুচ্ছে গত দুই বছর যেসব ত্রুটি ছিল, সেসব ইতিমধ্যেই সমাধান করা হয়েছে। ফলে এ বছর অনেকটাই ত্রুটিমুক্ত হবে গুচ্ছ ভর্তি।’
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহর সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। সেখানে আলোচনা হয়েছে, নতুন পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছে, তাই বলে এখান থেকে পিছু হটার বা বের হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ বছরও গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ই গুচ্ছে থাকছে। তবে আগামী বছর থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ইউনিক পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হবে বলে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সভায় গুচ্ছে থাকার আলোচনা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাস্তব চিত্র ভিন্ন। গুচ্ছে থাকা বড় দুই বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কোনোভাবেই গুচ্ছে থাকতে চান না। প্রয়োজনে তারা বড় ধরনের আন্দোলনে যেতেও পিছপা হবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আর আরও কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজছে।
সূত্র জানায়, এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন গ্রহণ শুরুর কথা ছিল। আর জুলাইয়ের শেষ নাগাদ যাতে ক্লাস শুরু করা যায় সে ব্যাপারে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শেষ পর্যন্ত গুচ্ছে থাকবে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দেওয়ায় এখনো ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু বা চূড়ান্ত পরিকল্পনা করতে পারছে না গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি।
গত ১৫ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের বিশেষ সভায় নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে হিসাবে আগামী ২ এপ্রিলের মধ্যে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি গঠন ও ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আল্টিমেটাম বেঁধে দিয়ে উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে শিক্ষকরা আন্দোলন ও কর্মসূচির মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে দাবি আদায় করার ঘোষণা দিয়েছেন।
শিক্ষকরা বলছেন, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের পরও যদি গুচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থাকে তাহলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৫ সালের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। এই অবস্থায় গুচ্ছে থাকতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন সংশোধন করতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সব বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছে থাকবে সে কথা বলেই আমাদের গুচ্ছে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো না আসায় আমরা আমাদের স্বকীয়তাই হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি। আর গুচ্ছে হাজারো ত্রুটি। এতে দীর্ঘসূত্রতা ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির পাশাপাশি সারা বছর ধরে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়। ফলে গুচ্ছে ভালো ছেলেমেয়েরা আসছে না। অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজস্ব প্রক্রিয়ায় ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার জন্য আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত আল্টিমেটাম দিয়েছি। এরমধ্যে ফল না এলে আমাদের আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া পথ থাকবে না।’
২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নিজস্ব পদ্ধতিতে নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শিক্ষক সমিতি। গত ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টির ১২৫তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভায় সর্বসম্মতভাবে গুচ্ছে না যাওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সভায় কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, অনতিবিলম্বে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা, ১ জুলাই নতুন বর্ষের ক্লাস শুরু করা, আবেদনের জন্য ন্যূনতম ফি নির্ধারণ এবং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে ভর্তি পরীক্ষার পর শুধু ভর্তি হওয়ার জন্যই ক্যাম্পাসে আসবে এবং বাকি কার্যক্রম অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে।
গত ২৮ মার্চ শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভা থেকে আগামী ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভা আহ্বানের জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. তপন কুমার জোদ্দার বলেন, ‘অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে। ইতিমধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন বর্ষের ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভা আহ্বান করে দ্রুত ভর্তি কার্যক্রম শুরু করার জন্য ভিসি (উপাচার্য) স্যারকে অনুরোধ জানিয়েছি। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের বাইরে আমরা যাব না।’
জানা যায়, সাধারণ ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছের নাম দেওয়া হয়েছে জিএসটি (জেনারেল, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি)। প্রকৌশল গুচ্ছে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কৃষি গুচ্ছের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়েও আলাদা ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত চার বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর) গুচ্ছ ভর্তিতে আসেনি। এ তালিকায় আছে বিশেষায়িত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।
এ ছাড়া বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিও আলাদা পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। অ্যাফিলাইটিং বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজে সাধারণত ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া জিপিএ’র ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।
গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও পরে আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের নিজেদের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি করছে। এতে একই শিক্ষার্থীর নাম একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় আসছে। কিন্তু ওই শিক্ষার্থী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ায় অন্যদের ফের মেধা তালিকা প্রকাশ করতে হচ্ছে। এভাবে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই পাঁচ-সাতবার মেধা তালিকা প্রকাশের পরও তাদের আসন শূন্য থাকছে। এমনকি গত বছর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুচ্ছভুক্ত একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের আসন পূর্ণ করতে পারেনি।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গুজরাট লায়ন্স ও চারবারের চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যাচ দিয়ে শুক্রবার মাঠে গড়াবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) ষোড়শ আসর।
আহমেদাবাদে আইপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়। দশ দলকে নিয়ে আট সপ্তাহে ১২টি ভেন্যুতে এবারের আসরের খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। মোট ম্যাচের সংখ্যা ৭৪টি।
গেল বছর আইপিএলে নতুন দুটি দল যুক্ত হয়- গুজরাট ও লখনউ সুপার জায়ান্টস। টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দারুণ ক্রিকেট খেলে তারা। লিগ পর্ব শেষে টেবিলের শীর্ষে ছিল হার্ডিক পান্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন গুজরাট। রাজস্থান রয়্যালসের সাথে পয়েন্ট সমান হলেও রান রেটে পিছিয়ে তৃতীয় হয় লখনউ।
কিন্তু টুর্নামেন্টের ফাইনালে ঠিকই জায়গা করে নেয় গুজরাট। ফাইনালে রাজস্থানকে হারিয়ে শিরোপা জিতে গুজরাট। এবারও শিরোপা ধরে রাখার মিশন গুজরাটের। যথারীতি দলকে নেতৃত্ব দিবেন পান্ডিয়া।
টুর্নামেন্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চারবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই। ধোনির নেতৃত্বেই রেকর্ড নয়বার ফাইনালে খেলেছে তারা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দুই বছর আগে অবসর নিলেও এখনও আইপিএল খেলছেন ৪১ বছর বয়সী ধোনি। চেন্নাই দলের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে ধোনির উপর। ধরনা করা হচ্ছে এবারের আইপিএল ধোনির ক্যারিয়ারের শেষ আইপিএল।
আইপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পাঁচবার শিরোপা জয়ের রেকর্ডের মালিক মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। গেল বছর টেবিলের তলানিতে থেকে আসর শেষ করে রোহিত শর্মার দল। দ্বিতীয় সফল দল চেন্নাইও ভালো করতে পারেনি। দশ দলের মধ্যে নবম ছিল চেন্নাই। মুম্বাই শেষ করেছিল সবার শেষে থেকে। এবার এই দুই দলের ওপরই আলাদা নজর থাকবে সবার।
আগামী ২৮ মে ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে আইপিএলের এবারের আসরের।
চলতি অর্থবছর বাজেট বাস্তবায়নে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু আট মাস পেরোলেও এই খাত থেকে কোনো ঋণ নিতে পারেনি সরকার। উল্টো পরিশোধ করতে হয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি। সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ না পেয়ে ব্যাংকের দিকে ঝুঁকছে। এতে চাপ বাড়ছে ব্যাংকের ওপর। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের নানা নীতির কারণে এই খাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। যদিও সরকারের ঋণের বোঝা থেকে বাঁচাতে এমন পদক্ষেপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন অনেকেই।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৫৫ হাজার ৮৬২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে সরকার। আর এই খাতের মোট পরিশোধ করেছে ৫৯ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ আট মাসে ৩ হাজার ৫১০ কোটি টাকা অতিরিক্ত পরিশোধ করতে হয়েছে সরকারকে।
ব্যাংকাররা বলছেন, দেশের সাধারণ মানুষের সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ উল্টোপথে হাঁটছে। সুদের হার হ্রাস ও নানা কড়াকড়ির কারণে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে সুদ-আসল পরিশোধে বেশি টাকা চলে যাচ্ছে। আর সে কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ অন্যান্য খরচ মেটাতে এই খাত থেকে কোনো ঋণ নিতে পারছে না সরকার। উল্টো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল পরিশোধ করতে হচ্ছে। আর এতে বেড়ে যাচ্ছে সরকারের ব্যাংকঋণের পরিমাণ।
গত ফেব্রুয়ারিতে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ১০৫ কোটি টাকার। তবে মূল ও মুনাফা বাবদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৭ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা। সুতরাং বিক্রির চেয়ে পরিশোধের পরিমাণ ৪৪০ কোটি টাকা বেশি। অথচ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতেও নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা।
উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে এবার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া বাড়িয়েছে সরকার। এরই মধ্যে সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েও ফেলেছে। আর পুরোটাই নেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারকে এই টাকার জোগান দেওয়ায় মূল্যস্ফীতির ওপরও চাপ বেড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, তিনটি কারণে সঞ্চয়পত্র থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। প্রথম কারণ হলো এখন মানুষের হাতে টাকা কম। ফলে সংসার চালাতে সঞ্চয়ে হাত দিচ্ছেন। দ্বিতীয় হলো পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগে আয়কর রিটার্নের সিøপ জমা করতে হচ্ছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের অনেকেই এ ঝামেলায় যেতে চান না। তৃতীয়ত, বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে। ফলে যাদের আগে থেকে বেশি বিনিয়োগ ছিল, তারা মেয়াদপূর্তিতে নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। এ ছাড়া প্রবাসী বন্ডে বিনিয়োগ সীমা কমিয়ে আনা ও এনআইডি শর্তের কারণে সেখানে কম বিনিয়োগ হয়েছে। যদিও সম্প্রতি প্রবাসী বন্ডের বিনিয়োগ সীমা ও এনআইডি শর্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, গত সেপ্টেম্বর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রির চেয়ে বেশি ভাঙানো হয়েছে। গত ডিসেম্বরে নিট বিক্রির পরিমাণ ঋণাত্মক ধারায় ছিল প্রায় ১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। এ ছাড়া নভেম্বরে ৯৭৮ কোটি ৩৯ লাখ, অক্টোবরে ৯৬৩ কোটি ১৬ লাখ ও সেপ্টেম্বরে প্রায় ৭৩ কোটি টাকা ঋণাত্মক ধারায় ছিল। যদিও অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগের পরিমাণ কিছুটা ইতিবাচক ধারায় ছিল। এর মধ্যে গত আগস্টে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল আট কোটি টাকা। আর জুলাইয়ে ছিল ৩৯৩ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরেও সঞ্চয়পত্র থেকে তুলনামূলক কম ঋণ পেয়েছিল সরকার। পুরো অর্থবছরে ৩২ হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে নিট ঋণ আসে ১৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা। অথচ করোনার পরও ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ হয়েছিল প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকা। এটি তার আগের অর্থবছরে ছিল মাত্র ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।
সঞ্চয়পত্র থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় এবার ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়া বাড়িয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। তবে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ না পাওয়ায় ব্যাংক থেকে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ নিতে হতে পারে। যদিও ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট থাকায় সরকারকে অভ্যন্তরীণ ঋণের পুরোটাই জোগান দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে ৪৫ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। একই সময় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ না নিয়ে উল্টো আগের নেওয়া ঋণের প্রায় ৪ হাজার ৪৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে সরকারের নিট ব্যাংক ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরেও ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল সরকার। ওই অর্থবছরে সরকারের ঋণ নেওয়ার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এটি তার আগের তিন অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল।
বৃহস্পতি ও শুক্রবার ভক্ত পুণ্যার্থীদের সংখ্যা বেশি থাকে। এ দুইদিন ইফতারের আয়োজনও থাকে বড়। ইফতারের প্রায় আধা ঘণ্টা আগে থেকে স্বেচ্ছাসেবকরা পুণ্যার্থী ও মুসাফিরদের মধ্যে ইফতার বিতরণের কাজ শুরু করেন। নারী ও পুরুষ ভক্তদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। গতকাল সিলেটে হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজারে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
ছাতক থেকে আসা মোজাহিদ আলী বলছিলেন, দরগাহে ইফতার করা মানে হলো বাবা শাহজালালের বাড়িতে ইফতার করা। গত ১০ বছর ধরে তিনি একদিনের জন্য হলেও দরগাহে ইফতার করতে আসেন।
জনশ্রুতি আছে সিলেটের শাহজালালের (রহ.) দরগাহে ৭০০ বছর ধরে পবিত্র রমজান মাসজুড়ে ভক্ত ও পুণ্যার্থীদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়।
ইফতারের প্রচলন কবে কীভাবে শুরু হয় জানতে চাইলে মাজারের খাদেম সামুন মাহমুদ খান বলছিলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমি এখানে ইফতারের আয়োজন দেখে আসছি। যা এখনো চলমান।’ তিনি জানান, মাজারের মেহমানখানার নিচতলায় নারী ও ওপরের তলায় পুরুষদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। গড়ে ২৫০-৩০০ জন ইফতারে অংশ নেন। ইফতারের আয়োজনে থাকে খেজুর, শরবত, গরুর মাংস দিয়ে আখনি, ভুনা খিচুড়ি, ছোলা, শাকের বড়া, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপিসহ নানা পদ। এর বাইরে বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে রাতে অতিথির সংখ্যা বেশি হলে সাহরিরও আয়োজন করা হয়।
ইফতারের টাকার জোগানের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রবীণ এ খাদেম জানান, শাহজালালের (রহ.) মাজারে আগত ভক্তরা ইফতারের জন্য টাকা পাঠান। এর বাইরে যে টাকা লাগে সেটার জোগান আসে মাজারের মোতাওয়াল্লি ফতেহউল্লাহ আল আমানের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে।
ইতিহাসের উদ্ধৃতি দিয়ে বুরহান উদ্দিন নামের এক ভক্ত বলছিলেন, ‘বাবা শাহজালাল রমজান মাসে তার সঙ্গীদের নিয়ে একসঙ্গে বসে ইফতার করতেন। তার ইন্তেকালের পর তার অনুসারীরা একইভাবে ইফতার করতেন। সেই ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছে মাজার কর্তৃপক্ষ।’ তিন জানান, ইফতার করার জন্য প্রতিদিন নগর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন আসেন।
কথা হয় নরসিংদী থেকে আসা স্কুল শিক্ষক সীমা বেগমের সঙ্গে। সন্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার আগের হজরত শাহজালালের (রহ.) দোয়া নিতে স্বামীসহ আসছেন। ইফতারের আয়োজনে সন্তুষ্টির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সিলেটের মানুষ অতিথিপরায়ণ বলে শুনিছি। আজ তার প্রমাণ পেলাম।’
দরগাহ মসজিদের ভেতরে ও বাইরেও ছিল ইফতারের আয়োজন। যদিও এখানে রোজাদারদের ইফতারের ব্যবস্থা মাজার কমিটি করে না। মুসল্লিদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খেয়ে মুসল্লিরা ইফতার করেন।
আব্দুর রহিম নামে এক মুসল্লি জানান, সবাই মিলে একসঙ্গে ইফতার করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। উপশহরের বাসা থেকে তিনি ইফতার নিয়ে এখানে এসেছেন।
মাজারে থাকা শাহজালাল (রহ.)-এর স্মৃতিফলকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি ১২৭১ সালে ইয়েমেনে জন্মগ্রহণ করেন। ভারতবর্ষে ইসলাম প্রচারের বিষয়টি তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন, পরে তার মামা ও ওস্তাদ সৈয়দ আহমদ কবিরের নির্দেশে ৩৬০ জন সঙ্গীসহ (৩৬০ আউলিয়া) ১৩০৩ সালের দিকে সিলেট এসে ইসলাম প্রচারের কাজ শুরু করেন। পরে তিনি সিলেট ও তার আশপাশের এলাকায় এবং তার সঙ্গীরা সিলেটসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের কাজে ছড়িয়ে পড়েন। ধারণা করা হয়, হজরত শাহজালাল (রহ.) ১৩৪১ সালে মারা যান। তাকে সিলেটের দরগাহ মহল্লা এলাকায় সমাহিত করা হয়। এরপর তার সমাধিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে মাজার।
হজরত শাহজালালের (রহ.) মাজার জিয়ারত করতে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বিপুলসংখ্যক পুণ্যার্থী আসেন। তার সমাধিকে কেন্দ্র করে এর চারপাশে কবরস্থান গড়ে উঠেছে। যেখানে সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার মানুষকে সমাহিত করা হয়। অনেকেই মারা যাওয়ার আগে এখানে কবর দেওয়ার জন্য স্বজনের কাছে অসিয়ত করে যান।
দরগার প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই মূল মাজারের সিঁড়ি ঘেঁষে চোখে পড়ে নারীদের নামাজের জন্য পৃথক ব্যবস্থা। মাজারে আগত নারী ভক্তরা এখানে নফল নামাজ পড়েন এবং ইবাদত বন্দেগি করেন।
মাজারের ডেগ : ডান দিকে চোখে পড়ে কিছু নারী-পুরুষের সমাগম। সামনে এগিয়ে গিয়ে জানতে পারি ছোট একটা কক্ষে থাকা তিনটি বড় ডেগকে (পাতিল) ঘিরেই এ সমাগম। তারা মানত পূরণে মাজারে যে অর্থ দান করেন তা এসব ডেগে ফেলেন।
মাজারের উত্তর দিকে একটি পুকুর রয়েছে। যেখানে রয়েছে বড় বড় গজার মাছ। মাজারে আগতরা মাছ দেখেন এবং তাদের খাবার দেন। কথিত আছে শাহজালাল (রহ.) তার সঙ্গীদের নিয়ে সিলেটে আসার সময় গজার মাছ নিয়ে আসেন।
শত শত বছর ধরে মাজার প্রাঙ্গণে রয়েছে জালালি কবুতর। ধর্মপ্রাণ সিলেটের মানুষের বিশ্বাস এই কবুতর হারিয়ে যেতে পারে না।
জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, শাহজালালকে (রহ.) নিয়ে দিল্লির নিজামউদ্দীন আউলিয়ার কাছে তার এক শিষ্য কুৎসা রটনা করলে তিনি তাকে দরবার থেকে বিতাড়িত করেন। এরপর শাহজালালকে (রহ.) দেখা করার জন্য খবর পাঠান। তখন শাহজালাল (রহ.) একটি বাক্সে প্রজ্বালিত অঙ্গারের সঙ্গে কিছু তুলা পাঠান, যা ছিল একটি আধ্যাত্মিক নিদর্শন। এরপর তাদের সাক্ষাৎ হয় এবং ফিরে আসার সময় ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ নিজামুদ্দীন আউলিয়া তাকে একজোড়া সুরমা রঙের কবুতর উপহার দেন, যা আজকের জালালি কবুতর বা জালালি কইতর নামে পরিচিত।
দরগাহের পেছনের দিকে রয়েছে একটি কূপ। কথিত আছে এই কূপের পানি হজরত শাহজালাল (রহ.) ব্যবহার করতেন। কূপের মধ্যে সোনালি রঙের কই ও মাগুর মাছ দেখতে পাওয়া যায়, যা অনেকে সোনার মাছ বলেও প্রচার করে।
মাজারে আগতদের একটা বড় অংশ আসেন বিভিন্ন মানত নিয়ে। ভক্তদের বিশ্বাস এখানে এসে দোয়া করলে সেই দোয়া কবুল হয়। মজনু বিবি নামের এক ভক্ত জানান, তিনি প্রায়ই মাজারে আসেন। এখানে এসে বাবার (হজরত শাহজালাল) অসিলায় আল্লাহর দরবারে মনের আশা জানান। এবার এসেছেন একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। তার ছোট মেয়ের বিয়ে হয়েছে ৫ বছর, কিন্তু কোনো সন্তান হচ্ছে না। তাই মাজারে এসেছেন।
ইফতার শেষে মাজার থেকে বের হওয়ার সময় নজরে এলো লাল রঙের জামা পরা কিছু লোক। স্থানীয় লোকজন তাদের ফকির হিসেবে জানে। তাদেরই একজন ইব্রাহিম শাহ। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের এ বাসিন্দা বলছিলেন, তিন বিয়ে করেননি। মা মারা যাওয়ার পর থেকে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ নেই। মাজারেই থাকেন, যা খাবার জুটে তাই খেয়ে দিন কাটে।
সরকারবিরোধী যেসব রাজনৈতিক দল নিয়ে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্যে ঐক্য কতটা থাকবে তা নিয়ে শঙ্কায় আছে বিএনপি। এর মধ্যে ঘটে যাওয়া দু-একটি ঘটনার কারণে নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলনের মাঠে থাকা দলটির মধ্যে এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা মনে করছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করবে। এ ষড়যন্ত্র ছোট দলগুলো কতটা মোকাবিলা করতে পারবে তা নিয়ে চিন্তিত তারা।
২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির শরিক দুটি দল জোট থেকে বেরিয়ে যায়। সম্প্রতি ফরহাদ মজহার ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান (বহিষ্কৃত) শওকত মাহমুদের আমন্ত্রণে ছোট দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা তাদের ডিনারে অংশ নেওয়ায় এ আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে যেসব রাজনৈতিক দল রাজপথে আন্দোলন করছে তাদের আন্দোলন থেকে সরিয়ে নানা প্রলোভনে অথবা ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচনে নিতে পারে। ছোট দলগুলোর শীর্ষ নেতারা সরকারের প্রলোভন কিংবা ভয়ভীতি কীভাবে মোকাবিলা করবে তা নিয়ে আমাদের শঙ্কা রয়েছে। তবে আমরা সতর্ক থাকব। ছোট দলগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখব। তাদের পাশে থাকব।’
গত ১৬ মার্চ রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে ফরহাদ মজহার ও শওকত মাহমুদের নেতৃত্বে ‘ন্যাশনাল কমিটি ফর সিভিল রাইটস/জাতীয় ইনসাফ কায়েম কমিটি’ নামে নাগরিক অধিকারবিষয়ক একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্র্বর্তীকালীন একটি জাতীয় সরকার গঠন করে সেই সরকারকে বাংলাদেশের নতুন সংবিধান প্রণয়ন এবং তার অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানায় সংগঠনটির আহ্বায়ক কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার, সদস্য সচিব সাংবাদিক শওকত মাহমুদ। সেখানে সংগঠনের সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ ইনসাফ কায়েম কমিটির পক্ষে প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, ‘সরকারের পদত্যাগের পর অন্তর্র্বর্তী জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। তারা নতুন সংবিধান প্রণয়ন করবে এবং তাদের অধীনে জাতীয় নির্বাচন করতে হবে।’
সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের দাওয়াত দেওয়া হয়। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির নেতাদের শওকত মাহমুদের আমন্ত্রণে ওই কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিএনপি নেতারা অংশ না নিলেও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, লেবার পার্টির চেয়ারপারসন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান পার্টিতে অংশ নেন।
এ অনুষ্ঠানের পর শওকত মাহমুদকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
১২ দলীয় জোটের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শওকত মাহমুদের পার্টিতে অংশ নেওয়ায় ১২ দলীয় জোট থেকে বের করে দেওয়া হয় লেবার পার্টিকে।’
তবে দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্যের কারণে ১২ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে গেছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি।’ তারা বিএনপি ঘোষিত যুগপৎ আন্দোলনে এককভাবে কর্মসূচি পালন করবে বলেও জানিয়েছে।
তবে জোটের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর এক নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে শওকত মাহমুদের পার্টিতে অংশ নেওয়ায় বাংলাদেশ লেবার পার্টিকে জোট থেকে সরে যেতে বলা হয়েছে।’
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক দুটি নেতার জাতীয় ইনসাফ কমিটির অনুষ্ঠানে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এ জোটের আরেক শরিক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এম সাইফুল হক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইনসাফ কমিটি আমাকেও দাওয়াত দিয়েছিল। আমাকে ফোন করেছিল। কিন্তু আমি যাইনি। সেখানে যাওয়াটা আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়নি। আমার ধারণা মঞ্চের যে দুজন নেতা গিয়েছেন তারা হয়তো সৌজন্যতার খাতিরে গেছেন। অন্য কোনো উদ্দেশ্য তাদের ছিল না বলে মনে করি।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ইনসাফ কমিটির আমন্ত্রণে যারা গেছেন তাদের কারও নাম মঞ্চ থেকে ঘোষণা করা হয়নি। কিংবা তাদের বক্তব্য দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। সৌজন্যতার খাতিরে তারা গিয়ে থাকতে পারেন। বিশেষ করে এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ সেখানে গেলেও পরে ডিনারে অংশ না নিয়ে চলে গেছেন।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমার আমন্ত্রণ ছিল। কিন্তু সেখানে যাইনি। সেখানে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির আলাপ হলে ভালো হতো।’
গণতন্ত্র মঞ্চের শরিক একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সরকারের ঘনিষ্ঠ কিংবা স্বতন্ত্র কেউ কোনো অনুষ্ঠান করলে তাতে অংশ নেওয়া ঠিক হবে কি না তা নিয়ে নিজেদের মধ্যেও বৈঠক করা দরকার। আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হবে। ফরহাদ মজহার ও শওকত মাহমুদের ইনসাফ কমিটির অনুষ্ঠানের আগে বিএনপি কী চায় বা না চায় সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি। জানালে ভালো হতো।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও যুগপৎ আন্দোলন সংগ্রাম সমন্বয়ে বিএনপি গঠিত লিয়াজোঁ কমিটির এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় বিএনপি সতর্ক থাকবে সবসময়। পাশাপাশি শরিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করা হবে। যাতে করে সরকারের দিক থেকে কোনো প্রলোভন কিংবা ভয়ভীতি দেখানো হলে সম্মিলিতভাবে তা মোকাবিলা করা যায়।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের এক নেতাকে রড দিয়ে পিটিয়ে মাথা ফাটানোর অভিযোগে পাঁচ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন আইন ও বিচার বিভাগের ইমরুল হাসান অমি, বাংলা বিভাগের আহমেদ গালিব, দর্শন বিভাগের কাইয়ূম হাসান ও আরিফুল ইসলাম এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভিরুল ইসলাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং মীর মশাররফ হোসেন হলে থাকেন।
এদের মধ্যে অমি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক, গালিব ও কাইয়ূম সহসম্পাদক, আরিফুল ইসলাম কার্যকরী সদস্য এবং তানভিরুল কর্মী বলে পরিচিত। বহিষ্কৃতরা হলে অবস্থান করতে পারবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা সভা শেষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলামকে রড দিয়ে পেটানো হয়। আহত সাইফুলকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সাইফুলের মাথায় তিনটি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার পলাশ চন্দ্র দাশ।
ভুক্তভোগী সাইফুল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
জানা গেছে, এ মারধরের ঘটনার পাশাপাশি গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটি গত রোববার (১৯ মার্চ) সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের মধ্যে পাল্টাপাল্টি দুটি মারধরের ঘটনারও তদন্ত করবে।
তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন ১৯ নম্বর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আলবেরুনী হলের প্রাধ্যক্ষ সিকদার মোহাম্মদ জুলকারনাইন, শহীদ রফিক-জব্বার হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শাহেদ রানা, জাহানারা ইমাম হলের প্রাধ্যক্ষ মোরশেদা বেগম এবং সদস্যসচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার মাহতাব উজ জাহিদ।
শৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে রাত ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মারধর এবং সাম্প্রতিক ঘটনা বিবেচনায় চিহ্নিত পাঁচজনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি জেলার ডিসিকে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের ‘স্যার’ সম্বোধন না করা নিয়ে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই বিতর্ক আজও চলছে। যদিও দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় জনসাধারণের কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে চেয়েছেন। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনা-বিতর্কের জন্মও হয়েছে।
তবে এবারের ঘটনাকে কিছুটা ব্যতিক্রম বলতে হয়। খোদ একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককে ডিসি প্রশ্ন করেন তাকে কেন ‘স্যার’ ডাকা হলো না। আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা হলো শিক্ষককে সবাই স্যার ডাকবেন; তিনি আরেকজন শিক্ষক ব্যতীত কাউকে স্যার ডাকবেন না।
প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জনসাধারণ স্যার ডাকতে বাধ্য নন। সেখানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককেই কি না জিজ্ঞেস করা হলো ডিসিকে কেন স্যার ডাকা হলো না!
ঘটনাটা রংপুরের হলেও সুদূর ঢাকা থেকে যতটা বোঝা যায়, এখানে একটা জেন্ডার ইস্যু আছে। এ ঘটনায় দেশ রূপান্তরে প্রকাশিত সংবাদে ওই নারী ডিসির মন্তব্য হলো, তিনি জানতে চেয়েছেন একজন পুরুষ হলে কি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতেন?
এ প্রশ্ন গুরুতর। আমাদের সমাজের জন্য স্বাভাবিক। তারপরও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের জাজমেন্টাল না হয়ে স্বাভাবিক কাজ করে যাওয়াটাই প্রাথমিক দায়িত্ব।
একই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্নে আলোচনা হচ্ছে এবারের বিতর্ক নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় বা যে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যে শিক্ষার্থীরা ‘স্যার’ ডাকে-তা কতটা যৌক্তিক কিংবা গ্রহণযোগ্য।
বেশ কয়েকজন পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মত দিয়েছেন স্যার ডাকা জরুরি না। তারা স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার (২৪ মার্চ) দেশ রূপান্তরে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি কয়েকজন শিক্ষকের ফেসবুক মন্তব্য নিয়ে তৈরি করা। তাদের মন্তব্যের সূত্র ধরে দেশ রূপান্তরের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আরো কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে চাওয়া হয়।
তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল, আমাদের সাহিত্যে বা সমাজের ইতিহাসে দেখেছি যে যারা শিক্ষাদান করেন বা পাঠদান করেন, তাদের পণ্ডিত, মাস্টার মশাই, ওস্তাদ, হুজুর এসব নামে সম্বোধন করা হতো, সেটা হঠাৎ স্যার হয়ে গেল কেন?
এ ছাড়া বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ‘স্যার’ শব্দটি কোন কোন ক্ষমতা বা অর্থকে তার নিজের সঙ্গে ধারণ করে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘স্যার’ সম্বোধন কোন তাৎপর্য বহন করে?
এসব বিষয়ে শিক্ষকেরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে তাদের কথায় মিলও আছে।
যেমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক স্বাধীন সেন বলেছেন, ‘স্যার সম্বোধন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা ঔপনিবেশিক ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্য দিয়ে পেয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে আমার কাছে স্যার সম্বোধন শোনা বা স্যার সম্বোধনে কাউকে ডাকা ততক্ষণ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ না যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সম্বোধন প্রভুত্ব, উচ্চমন্যতা ও ক্ষমতার স্তরবিন্যাসকে প্রকাশ না করে। ভাষা, বিশেষ করে সম্বোধন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। শ্রেণি, লিঙ্গ, ক্ষমতার সম্পর্ক সম্বোধনের মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হতে পারে, হয়। স্যার ডাকা কিংবা স্যার ডাক শোনার বাসনা আমাদের দেশে নিতান্তেই নৈমিত্তিক ও স্বাভাবিক হিসেবে পরিগণিত হয়।
কারণ প্রভুত্ব ও দাসত্বের যে অদৃশ্য সম্পর্ক তার মধ্য থেকে ‘স্যার’ সম্বোধন দাপট আর আনুগত্যের প্রচ্ছন্ন সম্পর্ককে জারি রাখে, প্রকাশ করে আর প্রতিষ্ঠিত করে। স্যার ডাক শুনতে চাওয়ার বাসনাকে তাই ক্ষমতা সম্পর্কের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখা যায় না।
আবার ভাষা ব্যবস্থায় জুতসই শব্দ ব্যবহারের রীতি ও অভ্যাস না থাকায় আধিপত্যবাদী ভাষা দিয়ে আধিপত্য প্রতিরোধের চেষ্টা করি। পদমর্যাদায় ওপরে থাকা নারীদের পুরুষেরা আপা বা ম্যাডাম ডেকে তথাকথিত নৈকট্যের নামে অনেকে হেনস্তা করতে পারে, নির্দেশনা অমান্য করতে পারে, সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে ফেলতে পারে। তখন লিঙ্গ নিরপেক্ষভাবে স্যার সম্বোধনটি তাৎক্ষণিকভাবে আপৎকালীন মোকাবিলার জন্য ব্যবহার হয় অনেক ক্ষেত্রে।
কিন্তু পরিশেষে, স্যার সম্বোধনটি আধিপত্য ও অধীনস্থতার সম্পর্ক থেকে মুক্ত থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপনিবেশ পূর্বকালেও আধিপত্য বা উচ্চ মর্যাদা বা দরবারি কেতা হিসেবে নানা ধরনের সম্ভাষণ, রীতি ও এমনকি শরীরী অভিব্যক্তি প্রচলিত ছিল। কিন্তু সেই প্রচলন সর্বজনীন যেমন ছিল না, তেমনই সুনির্দিষ্টভাবে মেনে চলাও হতো না। রাজা বা সম্রাট বা অভিজাতবর্গকে লিখিত দলিলে বা দরবারি রীতিনীতির লিখিত রূপে যেভাবে সম্ভাষণ করা হতো, বাস্তব জনপরিসরে সেই সম্ভাষণ অনেক পরিবর্তনশীল ও নমনীয় ছিল।
তার বক্তব্য, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আইডিয়া সেখানে বৈষম্য ও পদমর্যাদার প্রসঙ্গটি গৌণ হওয়ার কথা ছিল। অন্ততপক্ষে স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। একটি সাংগঠনিক কাঠামো বা ব্যবস্থাতে উচ্চ ও নিচ পদ থাকে। সেই পদাধিকারীগণ নানাভাবে নানা কাজে নিয়োজিত থাকেন। কিন্তু এখনকার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশিরভাগে আমলাতান্ত্রিক করণ কেবল স্বাভাবিক বিবেচিত হয় না, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ তেমন স্তরবিন্যাস ও পদানুক্রম প্রত্যাশা করেন।
তিনি মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর সবচেয়ে আরাধ্য চাকরি হলো সিভিল সার্ভিস। তাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কেন সরকারি চাকরিজীবী হতে চান তার পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। ঔপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থা যে কেরানি তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল বা যে প্রজা উৎপাদনের জন্য শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করেছিল, যে প্রজাগণ মনেপ্রাণে ব্রিটিশ হবে, সেই শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যাবলি আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অনুসরণ করছি। তাহলে স্যার সম্বোধনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা স্তরে প্রভুত্ব বা উচ্চ মর্যাদা প্রকাশ করার জন্য ব্যবহৃত হওয়াটা বিস্ময়কর কিছু না।
স্বাধীন সেন দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোগত পরিবর্তন না করে, অনুগত অনুসারী শিক্ষক তৈরির কারখানা হিসেবে ‘স্যার’ বা ‘ম্যাডাম’ বা ‘ভাই’ - যেকোনো সম্বোধনই দাপট, দম্ভ, প্রভুত্বর অভিব্যক্তি হয়ে উঠতে পারে। আমি মনে করি, মার্কিন দেশীয় কিংবা ইউরোপীয় তরিকায় অধ্যাপক অমুক বা তমুক সম্বোধন, বা কেবল নাম ধরে শিক্ষককে সম্বোধন করাটা তখনই ক্ষমতা সম্পর্ককে প্রতিনিয়ত নমনীয় রাখতে পারে যখন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতামূলক এবং অব্যাহতভাবে আত্মসমালোচনামূলক ব্যবস্থা জারি থাকে।
তার কথায়, পরীক্ষা পদ্ধতি, শ্রেণি কক্ষে পাঠদানের পদ্ধতি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে যোগাযোগের ধরন ও প্রকৃতি যদি প্রতিনিয়ত আত্মসমালোচনা করে স্বাধীনভাবে চিন্তার উপযুক্ত করার পরিসর নির্মাণের উদ্দেশ্যে পরিচালিত না হয় তাহলে যেকোনো সম্বোধনই নিপীড়নমূলক ও প্রভুত্বকামী হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন দুনিয়াতেও এমন বৈষম্য ও অসমতার উদাহরণ কম নেই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন পরিবারের ধারণাটি বেশ জনপ্রিয়। শিক্ষকগণ নিজেদের শিক্ষার্থীদের বাবা, মা বা অভিবাবক হিসেবে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন। একটি সংহতি মূলত পরিচয়বাদী বয়ানে আমরা অমুক বিভাগ পরিবার, তমুক হল পরিবার, অমুক ব্যাচের পরিবার ইত্যাদি অভিধা অহরহ শুনতে পাই।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষার্থীরা রিকশাচালক, দোকানদার, বা অন্যান্য পেশাজীবীদের মামা বা খালা সম্বোধনে ডাকেন। এসব ডাকের মধ্যে অবশ্যই একটা পর্যায় পর্যন্ত মানবিক একটা করুণা ও ভালোবাসার অনুভূতি থাকে। কিন্তু যেকোনো সময় এই জ্ঞাতি সম্পর্কসূচক পদাবলি নিপীড়ন, আনুগত্য নিশ্চিতকরণ, অন্যায় আড়ালকরণ বা মর্যাদা জোরজবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। মনে রাখা জরুরি যে, অনেক সময় প্রভু ও দাসের সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে, রাজা ও প্রজার সম্পর্কও মানবিক হয়ে উঠতে পারে। দাস বা প্রজা সামান্য দয়া, বা মানবিকতায় তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে পারেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বা যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শিক্ষককে’ স্যার সম্বোধন বাধ্যবাধকতামূলক হওয়ার কোনো কারণ নাই। একটা সময় গুরুমুখী শিক্ষাও কিন্তু যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণমূলক আর অধিপতিশীল ছিল, তা যতই আমরা ঐতিহ্যের বড়াই করি না কেন। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে, নিঃসংকোচে আর সর্বক্ষেত্রে শিক্ষকদের প্রশ্ন করতে না-পারেন সেই বিদ্যায়তন তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত না। শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষার্থী বাহাজ করবেন, মতান্তর হবে। নিরন্তর একে অপরের চিন্তা করার সামর্থ্যকে সমতার ভিত্তিতে প্রসারিত করতে থাকবেন। পরীক্ষার নম্বরের ভয় থাকবে না। কারণ পরীক্ষার পদ্ধতি বা মূল্যায়নের পদ্ধতির সংস্কার করা হবে। শিক্ষককে শিক্ষার্থী চোখে চোখ রেখে বলতে পারবেন যে, স্যার বা অধ্যাপক অমুক, আপনি ভুল বলছেন। আপনার মতামতের বা তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না। এই অনুশীলন যেকোনো সম্বোধন বজায় রেখেই চলতে পারে। সম্বোধন ছাড়া কেবল নাম ধরে ডেকেও চলতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষক হিসেবে আমার অনুভব এমনই। আমি এমন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ও পড়ানোর স্বপ্ন দেখি।
তিনি বলেন, স্যার সম্বোধনটির ঐতিহাসিক ও জন্মগত আধিপত্য ও প্রভুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক বিবেচনা করে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যার সম্বোধনটি বিলুপ্ত করা হোক।
স্বাধীন সেন বলেন, স্যারের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে তর্ক করা, দ্বিমত করা আর পরীক্ষার খাতায় স্যারের মতামতের সমালোচনা লিখে ভালো নম্বর পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার ঐতিহ্যের মধ্যেই তৈরি হয়। অবশ্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আদৌ জ্ঞানচর্চা হয় কিনা সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
এ বিষয়ে দেশ রূপান্তর যোগাযোগ করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষক বিষয়টি আলোচনায় নিয়ে আসেন তার সঙ্গে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ওমর ফারুক। তিনি শিক্ষকদের স্যার ডাকার প্রসঙ্গকে ভিন্ন খাতে ঘটনাটিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা বলে মনে করেন।
তার বক্তব্য, ‘শিক্ষার্থীরা আমাদের দেশের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য থেকে ক্লাসরুমে শিক্ষকদের স্যার বলে ডাকে। আমার জানামতে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এমনকি স্কুল পর্যায়ে স্যার ডাকতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করা হয় না। এখন যে বিষয়ে কোনো বাধ্য করার বিষয় নেই, বিতর্ক নেই সেই বিষয়ে কথা বলে আমরা মূল বিষয়টা হালকা করে ফেলছি কি না সেটাও ভাবতে হবে।
তিনি বলেন, আমাকে যদি ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থীর স্যার ডাকতে ইচ্ছে হয় ডাকবে, ডাকতে ইচ্ছে না হলে ডাকবে না। শিক্ষার্থীরা কী বলে শিক্ষকদের ডাকবে সেটা নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই। তারা যা বলে সম্বোধন করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে আমাকে তাই বলে ডাকবে।
ওমর ফারুকের বক্তব্য, শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে যদি কোন দ্বন্দ্ব তৈরি হয়, তাহলে সমাজের মানুষ, রাষ্ট্র, আইন ঠিক করবে কি করা উচিৎ। কিন্তু এ বিষয়ে তো কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেটা নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব নেই সেটা নিয়ে আমরা কেন দ্বন্দ্ব তৈরি করছি। আর এটা করতে গিয়ে আমরা কি মূল বিষয় থেকে সরে যাচ্ছি না।
ওমর ফারুক এখানে মূল বিষয় বলতে বুঝিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা স্যার ডাকতে সেবাগ্রহিতাদের বাধ্য করেন তা। তবে আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল শিক্ষকদের স্যার ডাকা নিয়ে বিতর্ক অনুসন্ধান করা।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও অর্থনীতির শিক্ষক আনু মুহাম্মদ দেশ রূপান্তরকে জানান, শিক্ষকতা জীবন থেকে অবসরে চলে গেলেও তাকে স্যার ডাকেন অনেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেকে তাকে স্যার ডাকেন।
তিনি বলেন, স্যার ডাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাইতে বাইরের মানুষদের সংখ্যাই বেশি হবে। তবে ভাই ডাকও আমি অনেক শুনি। এগুলোতে আমার কোনো সমস্যা নাই। ‘আনু স্যার’ যেভাবে ডাকে অনেকে সেটা নাম ধরে ডাকাই মনে হয়। তবে আমি আমার শিক্ষকদের স্যারই বলি, শুধু শিক্ষকদেরই, স্যার বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। এই স্যার বস নয়, শিক্ষক।
তার মন্তব্য, সবাই নাম ধরে ডাকলে ভালোই লাগবে। অনেক বাচ্চা ছেলেমেয়েরা এখনও ডাকে।
নৃবিজ্ঞানী ও লেখক সায়েমা খাতুন অবশ্য ইতিহাসের গোড়া ধরেই টান দিয়েছেন। তিনি স্যার অথবা পণ্ডিত যা-ই ডাকা হোক না কেন তাকে পুরুষতান্ত্রিক হিসেবে বোঝাতে চেয়েছেন।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, যেহেতু ভাষা বাস্তবতা তৈরি করে, আমাদের কলোনিয়াল লিগেসির বাস্তবতায় স্যার বা ম্যাডাম শ্রেণি ক্ষমতা ও পদমর্যাদার প্রকাশক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষমতা সম্পর্কের সঙ্গেই এটা চলবে বা বদলাবে। নারী শিক্ষক পণ্ডিত মশাই, ওস্তাদ, হুজুর, মাস্টার বলে সম্বোধিত হয় নাই। কেননা নারীকে শিক্ষক বা পণ্ডিত বলে গ্রহণে সমাজ প্রস্তুত ছিল না। সেই প্রস্তুতির সঙ্গে ভাষাও প্রস্তুত করতে হবে আমাদের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক এবং বুদ্ধিজীবী আ-আল মামুনের কাছেও এ প্রতিবেদক বিষয়টি জানতে চেয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এটা পরিষ্কার শিক্ষকদের ওস্তাদজি, গুরুজি, গুরু এগুলো বলার একটা অভ্যাস ছিল। খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, উপনিবেশ শাসনের আগে উপমহাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা এমন ছিল যে এখানে যারা শিক্ষাদানের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তারা এর বিনিময়ে কোনো টাকা নিতেন না। সমাজ তাকে যেভাবে আশ্রয় দিত, তিনি বা তারা সেভাবে থাকতেন। লেনদেন বা টাকা দিয়ে পড়ানোর বিষয়টা তখন একদম ছিল না। ফলে সে সমাজ ব্যবস্থায় গুরুজি, ওস্তাদজিদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। উপনিবেশ যুগে এসে স্যার শব্দটা আসলো বটে, কিন্ত স্যার শব্দটা এমনভাবে আসলো যে এটা ক্ষমতা কাঠামোর একটা অংশে পরিণত হলো।
তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে দেখেছি, সেখানে জুনিয়ররা অনেকে হয়তো স্যার বলে কিন্ত সেখানে সেখানে শিক্ষকদের দাদা বা দিদি বলাটা বহুল প্রচলিত। কলকাতায় শিক্ষকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যতটা সহজ বাংলাদেশে কিন্ত সম্পর্ক টা ততটা সহজ না।
শিক্ষকদের স্যার বলা না বলায় কিছু যায় আসে না। তবে না বলাই ভালো বলে মনে করেন এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যদি ওই রকম একতা সম্পর্কের ভেতর যেতে পারে, যেখানে উপনিবেশ আমলের স্যার শব্দটা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তাহলে তো খুব ভালো হয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ক্ষমতার পরিমাপ হিসেবে যেখানে স্যার ব্যবহার হয়, শিক্ষকদের সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত। শিক্ষকরা যদি বিষয়টা উপলব্ধি করতে পারেন তাহলে খুব ভালো হয়।
আ-আল মামুন বলেন, আপনি দেখবেন শিক্ষকদের সঙ্গে এখন শিক্ষার্থীদের সহজ সম্পর্ক নেই। এখন অনেকটা প্রভু বা আনুগত্যের একটা সম্পর্কে এসে এটা দাঁড়িয়েছে। যেটা গ্রহণযোগ্য নয়। আমি যেমন অনেক সহজে মিশি স্টুডেন্টদের সাথে। ওরা কি বলল না বলল সেটা নিয়ে আমি চিন্তা করি না। বরং তাদের সাথে বন্ধুর মতো মিশি। এর ফলে আমাদের সম্পর্কটা অনেক সহজ থাকে।
কেবল স্যার বাদ দিয়ে অন্য কোন কিছু দিয়ে সম্বোধন করলেই কি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে আ-আল মামুন বলেন, মূল বিষয়টা বুঝতে হবে। বিষয়টা এমন নয় যে স্যার বললেই কেবল দূরত্ব থাকে আর দাদা ভাই বা মিস্টার বললেই সব সংকট দূর হয়ে যাবে। কেবল স্যার না বললেই যে ছাত্র-শিক্ষকের প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক সেটা শেষ হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়। এখন ইস্যুটি ভাইরাল হওয়ার ফলে শিক্ষকরা উৎসাহের সাথে ফেসবুকে 'শিক্ষার্থীদের স্যার ডাকতে নিরুৎসাহিত করছি' বললেই ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করা হয়ে যাবে না। এই পপুলারিজম থেকেও বের হয়ে আসতে হবে। যারা ফেসবুকে লিখছেন তাদের কেউ কিন্তু এটা বলছেন না যে তারা ক্ষমতাকাঠামো পুরোপুরি অস্বীকার করছেন। তারা কিন্তু ক্ষমতার চর্চা ঠিকই করেন।
তিনি বলেন, ইউরোপে বিশ্ববিদ্যালয়ে কারা পড়তে আসে, যারা পরবর্তীতে শিক্ষা নিয়ে কাজ করবে, বা অন্য কোন বিশেষ শাখা নিয়ে গবেষণা করতে চান কেবল তারা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আসেন। আর যারা এমনিতে পড়াশোনা করবে তারা বিভিন্ন ধরনের প্রফেশনাল ট্রেনিং নেন, কোর্স করেন তারা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন না বা যেতে হচ্ছে না। এর ঠিক বিপরীত সিস্টেম বাংলাদেশে। এখানে যেটা ঘটে তা পুরো গোলমেলে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় , আমাদের দেশের সাংবাদিকতা বিভাগের বিষয়ে সবার ধারণা আমাদের প্রধান কাজ মনে হয় সাংবাদিক তৈরি করা। এমনকি সরকার ও তাই মনে করছে। কিন্তু আমাদের তো মূল কাজ হওয়া উচিত মিডিয়াকে স্টাডি করা, তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ, মিডিয়া নিয়ে গবেষণা করা। সরকার মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশকে কর্মী সরবরাহ করা হবে।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষক ক্ষমতার চর্চা, বিশেষ করে শিক্ষক রাজনীতি বা অন্য কোন ক্ষমতার চর্চা করেন, তারা প্রত্যাশা করেন যে জুনিয়র শিক্ষকেরা তাদের স্যার ডাকবে। শিক্ষকদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে অনেক ভুল ধারণা রয়েছে। অনেক জুনিয়র শিক্ষক হয়তো জানেন ই না যে একজন শিক্ষক হিসেবে তার কি কি অধিকার আছে। তিনি অন্য যে কোন শিক্ষকের সমান এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একজন শিক্ষক বুঝতেও দেওয়া হয় না। জুনিয়র যদি সম্মান না করে সিনিয়র শিক্ষকেরা তাদের বিভিন্ন সমস্যায় ফেলে দেন। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া, দুর্নাম রটনা করা ও মিটিংয়ে হয়রানি করা হয়। আমাদের দেশে আলোকিত শিক্ষক কম। সবাই তথাকথিত শিক্ষক অনেকটা সরকারি আমলাদের মতো। আমলাদের যেমন ক্ষমতার চর্চা ও প্রয়োগ করার মানসিকতা তেমনি শিক্ষকরাও একই চিন্তা বহন করছেন। ফলে এই স্যার ডাক শোনার বাসনা তাদের মনে কাজ করে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অধীনতার দাবি করে। আমাকে স্যার বা ভাই বলুক এতে শিক্ষার্থীদের সাথে বা অন্য কোন শিক্ষকের সাথে সম্পর্কের কোন তফাত হয় না।
তিনি বলেন, আমি ক্ষমতা কাঠামোকে অস্বীকার করে তাদের সাথে বন্ধুর মত মিশি। আমার বাসায় নিয়ে আসি এবং বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে চাই। বর্তমান এই ভাইরাল ইস্যুর জন্য অনেকেই হয়তো স্যারের পরিবর্তে ভাই ডাকতে বলবে, আবার ক্ষমতার চর্চা করবে। যা বিপরীতমুখী এবং এর ফলে ক্ষমতা কাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। ফলে এখন এটা ভাবতে হবে, ক্ষমতার চর্চার মানসিকতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।
তিনি কথা শেষ করেন এই বলে, এখন আমাদের সমাজে তথাকথিত ভিআইপির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। এটা এমন মহামারি আকার ধারণ করছে যে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও এই তথাকথিত ভিআইপিদের ছড়াছড়ি। তাদেরকে প্রোটোকল দেওয়া হয়। এই যে একটা মোহ এখান থেকে কেউ বের হতে চান না। অথচ একটা দেশে ভিআইপি বলে কেউ থাকতে পারে না। আমাদের রাষ্ট্র কাঠামো ও আমলাতন্ত্র এ প্রবণতাকে টিকিয়ে রাখছে। গত ১০/১২ বছরে আমাদের সমাজে স্যার শুনতে চাওয়ার মানসিকতার লোকের সংখ্যা কিন্তু কয়েকগুণ বেড়েছে। এই প্রাদুর্ভাব আগে এত ছিল না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, স্যার বলার মধ্যে দিয়ে আমরা নিজেদের এক্সক্লুসিভ কোনো প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করতে চাই। সেই প্রবণতা থেকে স্যার ডাক শুনে একটা দাপট বোঝাতে চাই। এটা পুরোপুরি ঔপনিবেশিক চর্চা। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসকেরা চলে গেলেও, আমাদের মাথার মধ্যে সেই শাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো পুরো মাত্রায় বিদ্যমান।
তার মতে, এটাকে আমরা আধিপত্যের প্রতীকে পরিণত করেছি। ব্রিটিশরা নিজেরা স্যার না বললেও তারা যেখানে শাসন করেছে, আধিপত্য দেখিয়েছে, সেখানে তারা স্যার বলাটা অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে দিয়ে গেছে। আমি ব্রিটেনে পড়াশোনাকালীন শিক্ষার্থীদের কখনো কোনো শিক্ষককে স্যার বলতে শুনিনি বা দেখিনি। তারা মি. প্রফেসর বা নাম ধরেই ডাকতো।
তানজিম উদ্দিন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমলাতন্ত্র। আমাদের আমলাতন্ত্র কিন্তু পুরোপুরি ঔপনিবেশিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠিত। শাসক এবং শোষিতের যে কাঠামো এখনো তাই রয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষের যে মানসিকতা থাকা উচিত আমাদের কিন্তু তা গড়ে ওঠেনি। আমাদের মধ্যে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র একইভাবে, একই পদ্ধতিতে এখনো রয়ে গেছে। কেবল আমলাতন্ত্র নয় সামাজিক অবস্থানেও স্যার বলা দিয়ে একটা আধিপত্য দেখানো হয়। স্যার দিয়ে আমি যে অধিপতি সেটা বোঝাতে চাই।
তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এটা থেকে কোনোভাবে মুক্ত নয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় তো সমাজ ব্যবস্থার অংশ। আর এই সংকটটা বর্তমানে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনো মনে করি না স্যার বলাটা একান্ত জরুরি। বরং আমার শিক্ষার্থীরা যদি আমাকে প্রফেসর তানজিম বলে ডাকেন এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং আমি উৎসাহ দেব।
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন দেশ রূপান্তরের সহসম্পাদক আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।)
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। তাকে প্রায়ই বিভিন্ন ভাইরাল ইস্যু নিয়ে ফেসবুক লাইভে কথা বলতে দেখা যায়। যুবলীগে পদ পেয়েও পরে অব্যাহতি পেয়েছেন। সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে দেশ রূপান্তরের সাথে মুখোমুখী হয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল তোফায়েল।
সামাজিক যোগাযাগ মাধ্যমে আপনি যে ভিডিও আপলোড করেন এর প্রধান উদ্দেশ্য কি টাকা ইনকাম করা?
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে টাকা ইনকামের সুযোগ আসার কয়েক বছর আগে থেকেই আমি ভিডিও আপলোড করি। আমার প্রথম যে কয়েকটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল তখন মনিটাইজেশন নামে কোন শব্দের সাথে আমরা পরিচিত ছিলাম না। আমার ফেসবুক থেকে যে ইনকাম হয়, ব্যারিস্টারি থেকে যে আয় হয় এবং বিদেশে থাকা আমার পরিবারের মানুষেরা যে টাকা পাঠান তার সব আমি মানুষের জন্য খরচ করি। এর প্রমাণ হিসাবে দেশে বিদেশে আমার নামে কিংবা আমার পরিবারের কারও নামে কোন ফ্ল্যাট নেই।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া স্যার ইস্যু নিয়ে আপনার অবস্থান কি?
স্যার ম্যাডাম মহোদয় এইগুলো নাম নাম মাত্র। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কাজে কতটুকু এগোলাম আমরা। একজন মানুষ যে কাজে সরকারী অফিসে যান সেই কাজ টা যদি ঠিক মত হয় তাহলে কি নামে ডাকলেন সেটা কোন সমস্যা বলে আমার কাছে মনে হয়না। এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা কেবল সময়ের অপচয় মাত্র।
আপনি নমিনেশন চাইবেন আওয়ামী লীগ থেকে?
আমি আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন চাইব। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নির্বাচন করব। না হলে দল যাকে নমিনেশন দেবে আমি তার হয়ে কাজ করব।
যুবলীগ থেকে আপনাকে বহিষ্কারের পর আপনার কেমন লেগেছিল, আপনার অবস্থানে কি আপনি অনড়?
আমার কাছে একদম খারাপ লাগেনি। নেতা যাকে ইচ্ছে নিতে পারেন, আবার প্রয়োজন না হলে ফেলে দিতে পারেন। আমাকে যখন যুবলীগে নেওয়া হয়েছিল, তখন হয়তো আমাকে প্রয়োজন ছিল, এখন মনে হয় হয়তোবা আমি যেভাবে কাজ করি তা উনাদের পছন্দ না। তবে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম সে বিষয়ে আমি অনড়। একজন ওসি কখনো নির্দিষ্ট এমপি কে খুশি করার জন্য স্লোগান দিতে পারেন না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আপনাকে কথা বলতে কম দেখা যাচ্ছে কেন ?
দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি তা বিশ্ব পরিস্থিতির অংশ। শ্রীলংকা, পাকিস্তানের মত দেশ দেউলিয়া হয়ে গেছে। আমরা টিকে আছি। আমাদের অধিকাংশ জিনিস আমদানি করতে হয়। তাই এ সমাধান আমাদের হাতে নেই। তবে আমি দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি নিয়ে কথা না বললেও দুর্নীতি নিয়ে কিন্তু প্রতিদিন কথা বলতেছি। দুর্নীতি আর টাকা পাচার যদি বন্ধ করা যেত তাহলে জিনিস পত্রের দাম এত বাড়ত না। তাই বলতে পারেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা আমার অন্য সবকিছুকে কাভার করে।
শোনা যায় অনেকেই রাজনীতি করে কানাডায় বাড়ি কিনছেন, এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?
রাজনীতিকে এখন ওনারা ধারণ করেন না। এমপি পদ টাকে তারা আরও সম্পদ উপার্জনের সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করছেন। ওনারা মনে করেন পরেরবার এমপি মন্ত্রী হতে পারেন বা না পারেন টাকা বানিয়ে ফেলি যাতে আর অসুবিধা না হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে বানানো ভিডিও সরিয়ে ফেলতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছেন।এটা কি আপনার পরাজয়?
সালাম মুর্শেদিকে নিয়ে আমি অনেকগুলো ভিডিও বানিয়েছি। এর মধ্যে মাত্র ২টা ভিডিও সড়াতে হয়েছে। মামলা চলাকালীন সময়ে মামলার মেরিট যেন নষ্ট না হয় এর জন্য ভিডিও সড়াতে বলা হয়েছে। এটাকে আমি পরাজয় মনে করি না।
বর্তমান সরকারকে অনেকে অনির্বাচিত বলেন, এ বিষয়ে আপনার অবস্থান কি?
সংবিধান মেনে একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। প্রক্রিয়া নিয়ে অনেকের প্রশ্ন থাকতে পারে। রাজনৈতিক বিষয়ে যা ঘটেছে বা ঘটছে তা সবাই দেখতে পাচ্ছেন। এ নিয়ে আমার আলাদা করে বলার কিছু নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে আপনার অবস্থান কি?
পারস্পরিক আস্থার অভাব হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের রাজনীতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ওপর বিশ্বাস কতটুকু সেটাও ভেবে দেখতে হবে। একটা সময় আওয়ামী লীগ এই দাবিতে আন্দোলন করেছিল তখন কিন্ত বিএনপি এই দাবি মেনে নেয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলেই যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বিষয়টা এমন নয়।
রাজনীতির চেয়ে সামাজিক ইস্যুতে আপনাকে বেশি কথা বলতে দেখা যায়। এটা কি সুবিধাজনক অবস্থান?
একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই আমার রাজনীতিতে আসা। আমার বাবা বা অন্য কেউ এমপি মন্ত্রী নয়। যে আমি এমনি এমনি রাজনীতিতে আসছি। আমি সামাজিক কাজ করতে করতে এ জায়গায় আসছি। আমি যদি রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করি তখনও দেখবেন আমি সামাজিক বিষয় নিয়ে কথা বলব কাজ করব।
সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আপনার অবস্থান?
একটা ভিডিওতে তিন লাখ টাকা সাকিবকে দেওয়া নিয়ে আমার মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সোনারগাঁ হোটেলের লবিতে সাকিব আমাকে মারতে আসেন। আমি মনে করি, সাকিবকে কোটি মানুষ অনুসরণ এখন তিনি যদি জুয়ার এম্বাসেডর হন টাকার লোভে মার্ডারের আসামীর দাওয়াতে যান তাহলে আমাদের দুর্ভাগ্য।
ফুটবল ফেডারেশন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
আমি সরাসরি বলব বাংলাদেশের ফুটবল ধ্বংস করার কারিগর কাজী সালাউদ্দীন ও আব্দুস সালাম মোর্শেদি। তারা ফুটবল কে এগিয়ে নিয়ে যেতে না পারলেও নিজেরা এগিয়ে গিয়েছেন। ফুটবলকে সিঁড়ি করে তারা নিজেকে সমৃদ্ধ করছেন।
ফুটবল নিয়ে অনেক আগ্রহ আপনার , অগ্রগতি কতদূর?
আমার ক্লাবের অগ্রগতি অনেক। গত দেড় বছরে ১২ জন খেলোয়াড় ঢাকার বিভিন্ন লীগে খেলছেন। ৩ জন খেলোয়ার ব্রাজিলে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন। পাশাপাশি সি টিমে থাকা ২/৩ জন ( যাদের বয়স ১২-১৩) আগামীতে জাতীয় দলে খেলবেন এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে বলে দিতে পারি।
বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করায় বিদ্যুৎ বিভাগের ১২টি প্রতিষ্ঠান নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে কর্মীদের ‘ইনসেনটিভ বোনাস’ প্রদান করলেও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ক্ষেত্রে এ সুবিধা দিতে অপারগতা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রতি অর্থবছরে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো কী কী কাজ করবে তা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে অন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা দলিল হলো বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করার পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই এ চুক্তি করা হয়।
সূত্রমতে, বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সংস্থা ও কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য গত ২৯ ডিসেম্বর এক সভায় ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী তা অনুমোদন দেয়। গত ২ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী সচিব মোহাম্মদ লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এপিএ অর্জনের সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শতকরা ৯৯ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে প্রথম হয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড। প্রতিষ্ঠানটিকে তার কর্মীদের ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ডিপিডিসি এবং ওজোপাডিকোকে ১ দশমিক ৫টি ইনসেনটিভের সুপারিশ করা হয় যাদের প্রাপ্ত নম্বর যথাক্রমে ৯৬ দশমিক ৬৯ এবং ৯৫ দশমিক ২৩। নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড এবং পিজিসিবি এ চারটি প্রতিষ্ঠানকে ১ দশমিক ২৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের সুপারিশ করা হয়েছে। ১টি ইনসেনটিভ বোনাসপ্রাপ্তরা হলো বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (৯২.০৮), নেসকো (৯২.২৫) এবং আরপিসিএল (৯৩)। এ ছাড়া ডেসকো, ইজিসিবি এবং বি-আর পাওয়ারজেন শূন্য দশমিক ৫টি ইনসেনটিভ বোনাসের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের পরিচালনা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে সুপারিশ অনুযায়ী কর্মীদের বোনাস প্রদান করে। তবে পিডিবির কর্মীরা এখনো ইনসেনটিভ বোনাস পাননি। আদৌ তা পাবেন কি না তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
ইনসেনটিভ বোনাস পরিশোধের অনুমোদনের প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২ জানুয়ারি পিডিবির সচিব মোহাম্মদ সেলিম রেজা বিদ্যুৎ বিভাগে চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়, ১টি ইনসেনটিভ বোনাস হিসেবে পিডিবির প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ পিডিবির রাজস্ব বাজেটে সংস্থান আছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর পর গত ২১ মার্চ তা নাকচ করে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগ তাদের চিঠিতে বলেছে, এপিএ অর্জনের জন্য কর্মসম্পাদন সূচক রয়েছে, যা সরকারের প্রতিটি সংস্থার ‘রুটিন’ কাজ। রুটিন কাজের জন্য ইনসেনটিভ বোনাস দাবি করা যৌক্তিক নয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশে অনেক সংস্থা আছে, যাদের বেতনভাতাসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় সরকারের অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব সংস্থা বা দপ্তরগুলো এপিএ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে থাকে। এখন যদি পিডিবিকে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বোনাস দেওয়া হয়, তাহলে প্রতিটি সংস্থা থেকে একই দাবি আসবে। এতে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘিœত হতে পারে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পিডিবির ২০২১-২২ অর্থবছরের এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিপরীতে ইনসেনটিভ বোনাস প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করা হলো।
বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক সচিব ফাওজুল কবির খান দেশ রূপান্তরকে বলেন, বিদ্যুৎ খাতের অগ্রগতি সন্তোষজনক না। তারপরও এ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কোম্পানি বা সংস্থাকে ইনসেনটিভ বোনাস দেওয়া যেতে পারে তাদের কাজের পারফরম্যান্স বিবেচনায়। শুধু পুরস্কার দিলেই হবে না। পাশাপাশি কেউ যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই কাজের গতি বাড়বে। বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে যদি ইনসেনটিভ বোনাসের কথা উল্লেখ থাকে তাহলে তারা যদি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে তবে এটা তাদের প্রাপ্য।
এ বিষয়ে পিডিবির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা দেশ রূপান্তরকে বলেন, এর আগেও তারা এপিএর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে বোনাস পেয়েছেন। এবারও বোনাসের আশায় বাড়তি কাজ করেছেন। হঠাৎ বোনাস না পাওয়ার খবর শুনে সবার ভেতর চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
প্রতিষ্ঠানের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সব কোম্পানি এমনকি পিডিবির সমমনা প্রতিষ্ঠান আরইবি তাদের পরিচালনা পর্যদের সিদ্ধান্তে অন্তত এক মাস আগে এ বোনাস প্রদান করেছে। তাদের কর্মীদের ওই টাকা খরচও হয়ে গেছে। আর আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাওয়ার নিয়ম রক্ষা করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছি। অন্যরা পেলেও পিডিবির কর্মীরা কেন বঞ্চিত হবে? সবার জন্য একই নিয়ম থাকা দরকার।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য আমাদের অনেক সময় অফিসের নির্ধারিত সময়ের বাইরেও কাজ করতে হয়। এ জন্য অনেক সময় পরিবারকে সময় দিতে পারি না। এরপরও যদি বোনাস থেকে বঞ্চিত করা হয় তাহলে কর্মীরা বাড়তি কাজ করতে উৎসাহ হারাবে।’
ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ভাড়া ৫৩ হাজার টাকা। এ রুটের অন্যসব এয়ারলাইনস আরও কম দামে যাত্রী বহন করলেও বিমান করে না। খালি যাবে, তাও কম ভাড়ায় যাত্রী নেয় না বিমান।
ঢাকা থেকে বিমান কত বেশি ভাড়া নেয় তা স্পষ্ট বোঝা যায় নিকটতম প্রতিবেশী শহর কলকাতার দিকে চোখ বোলালে। কলকাতার নেতাজি সুভাষ বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের তিন ভাগের এক ভাগ ভাড়া দিয়ে কুয়ালালামপুর যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে উড়ে যাওয়া এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমানের ভাড়া বেশি। বিমানের ভাড়া শুধু বেশিই নয়, এই এয়ারলাইনস ভাড়া বাড়ানোর নেতৃত্ব দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমে বিমান ভাড়া বাড়ায় পরে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য এয়ারলাইনসগুলো সেই সুযোগ নেয়।
অন্য এয়ারলাইনসের তুলনায় বিমানের ভাড়া বেশি এ অভিযোগ ছিল মূলত জনশক্তি রপ্তানিকারক ও ট্রাভেল এজেন্টদের। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছেন সাধারণ যাত্রীরাও। কুয়ালালামপুর, রিয়াদ বা জেদ্দার মতো বাংলাদেশি শ্রমিকপ্রবণ শহরগুলোতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ব্যবহারকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, দেশের বেসরকারি টেলিভিশন এমনকি খবরের কাগজগুলোতে যেচে এসে বলে যাচ্ছেন বিমান অনেক বেশি ভাড়া নিচ্ছে।
কীভাবে বিমান ভাড়া বাড়ায় জানতে চাইলে একজন জনশক্তি রপ্তানিকারক জানান, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অর্থনীতিতে কী ভূমিকা রাখে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তাদের কর্মস্থলে পাঠাতে বা ফিরিয়ে আনতে বিমানের বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই। বিমান কোনো দিন কোনো ঘোষণায় বলেনি ‘এ উদ্যোগটি শুধু রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য’। এই শ্রমজীবীদের জন্য বিমানের কোনো ছাড় নেই। বরং যখন যে ‘আদম বাজার’ চাঙ্গা হয় তখন সেখানে ভাড়া বাড়িয়ে দেয় বিমান। বর্তমানে মালয়েশিয়ায় প্রচুর শ্রমিক যাচ্ছে। সেখানে ভাড়া বাড়িয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিক এবং ওমরাহর কারণে জেদ্দার টিকিটই পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তা অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়।
এ অবস্থা থেকে বিমান কীভাবে বের হয়ে আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিমান নানা পলিসি নিতে পারে। বিকল্প রুট চালু করতে পারে। ট্রানজিট দিয়ে যাত্রীদের গন্তব্যে নিতে পারে। এতে যাত্রীরা কম দামে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ যাত্রী যেহেতু শ্রমজীবী তাই তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ। কত সময় ট্রানজিট নিয়ে গেল তা মুখ্য নয়। ঠিক এ জায়গাটিতেই এগিয়ে আছে আমাদের নিকটবর্তী শহর কলকাতা। ঢাকার তুলনায় অনেক কম দামে কলকাতার যাত্রীরা গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন। সেখান থেকে পরিচালিত এয়ারলাইনসগুলো সরাসরি বা এক-দুটি ট্রানজিট দিয়ে অনেক কমে যাত্রী বহন করে। বিমান কেন পারে না সেই প্রশ্নটি কেউ তুলছে না।
এক সপ্তাহ পর আগামী ৪ এপ্রিল ফ্লাই (যাত্রা) করার জন্য গতকাল সোমবার দুপুরে ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটের বিমান টিকিটের দাম ছিল ৫৩ হাজার ২৭ টাকা। থাই এয়ারওয়েজ ৪১ হাজার ৭৬ টাকায়, ইন্ডিগো এয়ার ৪৩ হাজার ৬৪৪, ইউএস-বাংলা ৪৭ হাজার ১৯, এয়ার এশিয়া ৪৯ হাজার ৪৪৫, মালিন্দো এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৯০ এবং মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৬১ হাজার ৪৭২ টাকা।
অথচ কলকাতা থেকে এয়ার এশিয়া একই দিনে একই গন্তব্যে নন-স্টপ ফ্লাইটে মাত্র ১৭ হাজার ৩৭৯ টাকায় পৌঁছে দেওয়ার অফার ছিল অনলাইনে। এয়ারক্রাফটের মানভেদে একই দিনে বিভিন্ন সময়ে টিকিটটির দাম ২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত ছিল। ইন্ডিগো এয়ার চেন্নাইয়ে একটি স্টপেজ দিয়ে ২০ হাজার ৩৩৭ টাকায় অফার দেয়। কলকাতা থেকে কুয়ালালামপুরে যাওয়ার জন্য এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম ছিল ২৯ হাজার ৬৩৯ টাকা। মুম্বাই এবং সিঙ্গাপুরে দুই স্টপেজ দিয়ে এয়ারলাইনসটি এ ভাড়া নির্ধারণ করে। মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস মুম্বাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে কলকাতা থেকে ৫৪ হাজার ৩২৬ টাকায় যাত্রীদের নিয়ে যায় কুয়ালালামপুর।
ঢাকা রিয়াদ রুটে আগামী ৩ এপ্রিলের এয়ার অ্যারাবিয়ার ভাড়া ৫৪ হাজার ৯৫১ টাকা। শারজায় একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কলম্বোতে একটি স্টপেজ দিয়ে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস রিয়াদ নিয়ে যাবে ৫৬ হাজার ৫৪৫ টাকায়। জাজিরা কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকায়, গালফ এয়ার বাহরাইনে এক স্টপেজ দিয়ে ৬৭ হাজার ৬৭৭ টাকায়, সৌদিয়া এয়ারলাইনস ৭১ হাজার ৭১১ টাকায় সরাসরি, কুয়েত এয়ারওয়েজ কুয়েত সিটিতে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৩ হাজার ২৪৭ টাকায়, ওমান এয়ার মাস্কটে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৩২ টাকায়, ফ্লাই দুবাই দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৭৪ হাজার ২৬৩ টাকায়, কাতার এয়ারওয়েজ দোহায় এক স্টপেজ দিয়ে ৮২ হাজার ৫৫৭ টাকায়, এমিরেটস দুবাইয়ে এক স্টপেজ দিয়ে ৮৪ হাজার ২৩১ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে। আর ঢাকা-রিয়াদ রুটে বিমানের ভাড়া ১ লাখ ৫৫ হাজার ১৪৭ টাকা। ৩ এপ্রিল কলকাতা থেকে রিয়াদ যাওয়ার ভাড়াও ঢাকা রিয়াদের তুলনায় অনেক কম।
কলকাতা থেকে মাত্র ৩৫ হাজার ৩২৪ টাকায় রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। মুম্বাইতে মাত্র একটি স্টপেজ দিয়ে তারা যাত্রীদের সেখানে পৌঁছে দিচ্ছে। ওইদিন সময়ভেদে তাদের ভাড়া ৪১ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠানামা করছে। এক স্টপেজ দিয়ে ফ্লাই দুবাই নিয়ে যাচ্ছে ৪১ হাজার ৫৬০ টাকায়। ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ভাড়া ৪১ হাজার থেকে ৪২ হাজার টাকা। এয়ার ইন্ডিয়া দিল্লিতে একটি স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪১ হাজার ৪১৯ টাকা। গালফ এয়ার মুম্বাই এবং বাহরাইনে দুই দফা স্টপেজ দিয়ে নিচ্ছে ৪৫ হাজার ৫৮৭ টাকা। ইন্ডিগো এয়ার দিল্লিতে এক স্টপেজ দিয়ে ভাড়া নিচ্ছে ৪৮ হাজার ১৮৭ টাকা। দুবাইতে এক দফা বিরতি দিয়ে এমিরেটস কলকাতা থেকে রিয়াদের ভাড়া নিচ্ছে ৫৪ হাজার ৬৪৬ টাকা। কাতার এয়ারওয়েজ ৫৯ হাজার ১৩৮ টাকায় এবং এমিরেটস ৬০ হাজার ১০৮ টাকায় একটি বিরতি দিয়ে কলকাতা থেকে রিয়াদ নিয়ে যাচ্ছে।
এসব রুটে বিমানের উচ্চমূল্য নির্ধারণই ভাড়া বৃদ্ধির মূল কারণ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এর সঙ্গে আছে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট কমানো এবং উচ্চ দামের সুযোগ নিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারসাজি এবং ২০২৩ সালে ডলারের বর্ধিত বিনিময় দর। জেট ফুয়েলের দাম বৃদ্ধিও টিকিটের দাম বৃদ্ধির কারণ।
বিমানের এমডি শফিউল আজিম বিমান ভাড়া বৃদ্ধিতে নেতৃত্ব দেওয়ার বিষয়টি না মানলেও রিক্রুটিং এজেন্ট, ট্রাভেল এজেন্ট বা হজ এজেন্সির তরফ থেকে বরাবরই এ অভিযোগ করা হচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া দেশ রূপান্তরকে বলেন, যখন বিমান ভাড়া বাড়ায় তখন অন্য এয়ারলাইনসগুলোও ভাড়া বাড়ায়। বিমান যখন বাড়ায় তখন কোনো সীমা মানে না। তারা ইচ্ছামতো ভাড়া বাড়ায়।
৩৫ বছরের পেশাজীবনের কথা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিমানের ভাড়ার সঙ্গে কুলাতে পারছি না। একজনকে বাইরে পাঠানোর সব খরচ অনুমান করা যায়, বিমান ভাড়া ছাড়া। কারণ ৫ ডলারের ভিত্তিভাড়া তারা ৩০ ডলার থেকে শুরু করে। বিমান ধারাবাহিকভাবে জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কথা বলে। কিন্তু জ্বালানি খরচ কমছে। যখন কমে তখন বিমান ভাড়া কমায় না। বিমান যেভাবে ভাড়া বাড়ায় তাতে ব্যবহারকারীদের নাভিশ্বাস উঠেছে। এ অবস্থায় সরকারের হস্তক্ষেপ দরকার বলে তিনি মনে করেন।
বিমানের ভাড়া প্রায় মহামারীর সময়ের মতো অবস্থায় চলে গেছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্টরা । বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে শ্রম আমদানিকারক দেশের গন্তব্যগুলোতে ভাড়া বেড়েছে। ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিট পাওয়াই সৌভাগ্য। এ মাসের শুরুতে যে ভাড়া ছিল ৫০ হাজার তা এখন ৮০ হাজারেও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিমান ভাড়া বৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি খেসারত দিচ্ছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি)-ওয়েবসাইট তথ্য দিচ্ছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ২ লাখ ১৩ হাজার শ্রমিক বিদেশে গেছে। যাদের বেশিরভাগই গেছেন মালয়েশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
গত বছরের শেষদিকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলা হয়। বাজার নতুন করে শুরু হওয়ার পর ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে টিকিটের দাম আকস্মিকভাবে বেড়েছে। ব্যাংকক, কলম্বো বা অন্যান্য শহরে ট্রানজিট ফ্লাইট দিয়েও অনেক এয়ারলাইন কুয়ালালামপুরে যাত্রী বহন করছে। এতে টিকিটের দাম কমেছে ৩০-৪০ হাজার টাকা।
এবার হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। এ টাকা বাড়িয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পর সংশ্লিষ্টরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। হজযাত্রী এবং হাবের ধারাবাহিক বিরোধিতা উপেক্ষা করে বিমান ভাড়া বাড়িয়ে যচ্ছে। এবারও বাড়িয়েছে। গত ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হজবিষয়ক এক সভায় হাবের সিনিয়র সহসভাপতি ইয়াকুব শরাফতি হজে বিমান ভাড়া কমানোর অনুরোধ করেন। কিন্তু সেখানে উপস্থিত বিমানের এমডি ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই বলে জানান। বৈঠকে হজে কেন বিমান ভাড়া বাড়নো হলো তার যৌক্তিকতা জনসমক্ষে তুলে ধরার নির্দেশনা দেওয়া হয় এমডিকে।
ইয়াকুব শরাফতি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেছি হজের বিমান ভাড়া কমানোর জন্য। বিমান কোনোভাবেই কমাতে রাজি হয়নি।’
বিমানের বর্ধিত ভাড়ার সুযোগে সৌদিয়া দেশ থেকে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে যাচ্ছে। কারণ বিমান যে ভাড়া নির্ধারণ করে সৌদিয়াও একই ভাড়ায় হজযাত্রী বহন করে। হজের চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি হজযাত্রীদের অর্ধেক বহন করবে সৌদি আরবের এয়ারলাইনস।
আটাবের সাবেক মহাসচিব মাজহার ইসলাম ভূঁইয়া জানান, প্রধান এয়ারলাইনসগুলোর পাশাপাশি এয়ার অ্যারাবিয়ান, ফ্লাই দুবাই, সালাম এয়ারের মতো বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলো তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের তুলনায় কম ভাড়া নেওয়ার কথা। অথচ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে বেশি নিচ্ছে। বাজেট ক্যারিয়ার বলে পরিচিত সংস্থাগুলোও তাদের প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে মাত্র ৫০০ বা ১০০০ টাকা কম নিচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম প্রতিযোগীদের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। অথচ সরকারের কাছে তাদের প্রজেকশন ছিল তারা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে অর্ধেক মূল্যে যাত্রী নেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার মনিটরিং কম থাকায় তারা ইচ্ছেমতো ভাড়া নিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।